নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক - কুমিল্লা

২৬৮১. Question

 

হায়েয চলাকালীন কাউকে কুরআন শিখানো জায়েয আছে কি এবং এক্ষেত্রে পূর্ণ আয়াত একত্রে তেলাওয়াত করা যাবে কি?


 

Answer

 

ঋতুস্রাব অবস্থায় মহিলাদের জন্য কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করা, শিক্ষা দেওয়া ও স্পর্শ করা কোনোটিই জায়েয নয়। 

আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ঋতুমতি মহিলা ও গোসল ফরয হয়েছে এমন ব্যক্তি যেন কুরআন মজীদ না পড়ে।-আলইলাল, ইবনে আবী হাতিম ১/৪৯ 

তাই যে সকল মহিলা কুরআন মজীদ শেখা-শেখানোর সাথে সম্পৃক্ত তারা অপবিত্রতার সময় তা থেকে বিরত থাকবে। প্রয়োজনে অন্য মহিলা দ্বারা কাজ সমাধা করে নিবে। যদি তাও সম্ভব না হয় তাহলে তারা কেবল শিার্থীদের পড়া শুনতে পারবে এবং প্রয়োজনের সময় দু-এক শব্দ বলে দিতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে পূর্ণ আয়াত একত্রে তিলাওয়াত করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।

 

-মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদীস : ১৩০৩; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১০৯০; আদ্দুররুল মুখতার ১/১৭২; আলবাহরুর রায়েক ১/১৯৯; ফাতহুল কাদীর ১/১৪৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৪৭৯; আলমুহীতুল বুরহানী ১/৪০১

Sharable Link

মুহাম্মাদ আবদুল কাদের - শ্রীপুর, গাজিপুর

২৬৮২. Question

 

আমি কিছুদিন পূর্বে গুরুতর আহত হই। এতে হাতসহ বিভিন্ন জায়গা জখম হয়। হাতের জখম সবসময় ব্যান্ডেজ করা থাকে। তাই অযুর সময় ব্যান্ডেজের উপর মাসেহ করি। নতুন ব্যান্ডেজ লাগিয়ে এক ঘণ্টা পর পর হাতের ব্যান্ডেজ পরিবর্তন করতে হয়। আমার জানার বিষয় হল, ব্যান্ডেজ পরিবর্তন করার কারণে কি অযু ভেঙ্গে যায়? জানিয়ে বাধিত করবেন।


 

Answer

ব্যান্ডেজের উপর মাসেহ করার পর ব্যান্ডেজ খুলে নতুন ব্যান্ডেজ লাগালে অযু বা মাসেহ কিছুই নষ্ট হয় না। তবে এত্রে নতুন ব্যান্ডেজের উপর মাসেহ করে নেওয়া উত্তম। হ্যাঁ, ক্ষত ভালো হয়ে যাওয়ার কারণে ব্যান্ডেজ খোলা হলে পূর্বের মাসেহ বাতিল হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে পূর্বের অযু বহাল রাখতে হলে মাসেহের স্থান ধুয়ে নিতে হবে।

-ফাতাওয়া খানিয়া ১/৫১; আলবাহরুর রায়েক ১/১৮৮; বাদায়েউস সানায়ে ১/৯১; রদ্দুল মুহতার ১/২৮০

Sharable Link

মুহাম্মাদ রায়হান - বগুড়া

২৬৮৩. Question

 

শুধু পানি দিয়ে বড় ইস্তিঞ্জা করার হুকুম কী? যদি ঢিলা থাকা সত্ত্বেও শুধু পানি দিয়ে ইস্তিঞ্জা করে তাহলে পবিত্রতার ক্ষেত্রে কোনো ক্ষতি হবে কি না?


Answer

ঢিলা-কুলুখ বা টয়লেট টিস্যু থাকা সত্ত্বেও ইস্তিঞ্জায় শুধু পানি ব্যবহার করে পবিত্রতা অর্জন করা জায়েয। তবে প্রথমে ঢিলা বা কুলুখ ব্যবহার করে এরপর পানি ব্যবহার করা উত্তম।

-আলবাহরুর রায়েক ১/২৪১; ফাতহুল কাদীর ১/১৮৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৪৮; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩৩৬

Sharable Link

মুহাম্মাদ আবদুর রশীদ - ঢাকা

২৬৮৪. Question

যদি কোনো ব্যক্তি ফরয গোসলে নাকের ভেতরে পানি প্রবেশ না করিয়ে শুধু আঙ্গুল ভিজিয়ে নাকের ভিতরটা তিনবার ভিজিয়ে নেয় তাহলে তার গোসল হবে কি না? এবং নাকের ভিতরে পানি প্রবেশ করানো ও তা পরিষ্কার করার পদ্ধতি কি?


Answer

ফরয গোসলে নাকের নরম স্থান পর্যন্ত পানি পৌঁছানো ফরয। শুধু আঙ্গুল দ্বারা নাকের ভিতরটা ভিজিয়ে নেয়া যথেষ্ট নয়। এর দ্বারা নাকে পানি পৌঁছানোর ফরয আদায় হবে না। আর নাকে প্রথমে পানি পৌঁছাবে। এরপর বাম হাতের কনিষ্ঠা আঙ্গুল দ্বারা নাকের ভিতরটা পরিষ্কার করে নিবে যেন কোনো অংশ শুকনা না থেকে যায়। এভাবে তিনবার নাকের নরম অংশ পর্যন্ত পানি প্রবেশ করাবে।

-সুনানে আবু দাউদ ১/১৯; সুনানে ইবনে মাজাহ ৩৩; আলবাহরুর রায়েক ১/২১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/২২২, ২৭৬; আদ্দুররুল মুখতার ১/১৫১, ১১৫

Sharable Link

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক - কুমিল্লা

২৬৮৫. Question

মহিলারা নামায আদায়ের সময় চুল খোঁপা করে রাখলে নামাযের কোনো সমস্যা হবে কি? যদি সমস্যা হয় তাহলে চুল কিভাবে রাখতে হবে?


Answer

মহিলাদের জন্য নামাযের সময় চুল খোঁপা করে রাখতে কোনো বাধা নেই। কেননা মহিলাদের জন্য শরীয়তের বিধান হল, তারা নামায আদায়ের সময় পরিপূর্ণভাবে চুল ঢেকে রাখবে। নামায অবস্থায় তারা চুল ছেড়ে বা বেঁধে-যেকোনোভাবে রাখতে পারেন। তবে চুল ছাড়া থাকলে অসতর্কতাবশত কখনো তা খুলে যেতে পারে। তাই নামাযে চুল খোঁপা করে রাখাই ভালো।

-শরহুল মুনইয়া ২১২; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪০৫; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৫; আলবাহরুর রায়েক ১/২৭০

Sharable Link

মুহাম্মাদ আবদুন নূর - জামিআ রাহমানিয়া আরাবিয়া

২৬৮৬. Question

আমরা জানি যে, আযানের মধ্যে হাইয়াআলাস সালাহ এবং হাইয়াআলাল ফালাহ বলার সময় ডানে-বামে চেহারা ফিরাতে হয়। আর তা এজন্য যে, যাতে সবাই আওয়াজ শুনতে পায়। বর্তমান সময়ে সাধারণত সকল মসজিদেই মাইক ব্যবহার করা হয়। আমি জানতে চাই যে, মাইকে আযান দেওয়ার সময়ও কি ডানে বামে চেহারা ফিরাতে হবে?


Answer

হ্যাঁ, মাইকে আযান দিলেও হাইয়াআলাস সালাহ এবং হাইয়াআলাল ফালাহ বলার সময় ডানে-বায়ে চেহারা ফিরানো উত্তম। কেননা, চেহারা ফিরানোর মধ্যে অন্যদের আওয়াজ শোনা বা না শোনার বিষয়টি ছাড়াও অন্য কোনো হেকমতও থাকতে পারে। তাই মাইকে আযান দিলেও এই সুন্নত আদায়ের লক্ষ্যে ডানে বামে চেহারা ফিরানো উচিত।

-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ২১৭২; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৭০; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/২৪৪; আলবাহরুর রায়েক ১/২৫৮

Sharable Link

মুহাম্মাদ আবু নুমান - শর্শদি মাদরাসা, ফেনী

২৬৮৭. Question

আমি একদিন রমযান মাসে বিতির নামাযে ভুলে দুআয়ে কুনূত না পড়ে রুকুতে চলে যাই। পরে পিছন থেকে মুক্তাদিরা লোকমা দিলে রুকু থেকে উঠে দুআয়ে কুনূত পড়ি এবং আবার রুকু করি। পরবর্তীতে সিজদা সাহু না দিয়েই নামায সমাপ্ত করি। এই অবস্থায় নামায সহীহ হয়েছে কি?

উল্লেখ্য, ভুলে রুকুতে যাওয়ার পর এক তাসবীহ পরিমাণ সময়ও বিলম্ব হয়নি; বরং রুকুতে যাওয়ার সাথে সাথেই আবার ফিরে আসি এজন্য সাহু সিজদা দেইনি। আর আমার যতটুকু মনে হয়েছিল আমার পিছনের মুক্তাদিগণও কেউ রুকুতে যায়নি।


Answer

প্রশ্নোক্ত অবস্থায় দুআ কুনূত না পড়ে রুকুতে চলে যাওয়ার দ্বারাই সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে সাহু সিজদা ওয়াজিব হওয়ার জন্য রুকুতে তিন তাসবীহ পরিমাণ বিলম্ব হওয়া শর্ত নয়।  কিন্তু যেহেতু সাহু সিজদা করা হয়নি তাই সকলকেই ঐদিনের বিতর নামায কাযা করে নিতে হবে।

প্রকাশ থাকে যে, দুআ কুনূত না পড়ে রুকুতে চলে যাওয়ার পর স্মরণ হলে দুআ কুনূতের জন্য রুকু থেকে ফিরে আসা ঠিক নয়। এক্ষেত্রে নিয়ম হল দুআয়ে কুনূতের জন্য ফিরে না এসে যথানিয়মে ঐ রাকাত পূর্ণ করে সাহু সিজদার মাধ্যমে নামায শেষ করা।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৩৪; রদ্দুল মুহতার ২/৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২৬; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৫৬; আলবাহরুর রায়েক ১/২৯৫

Sharable Link

মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ - ঢাকা

২৬৮৮. Question

অনেক সময় জানাযায় নামাযে বিলম্বে উপস্থিত হওয়ার কারণে এক বা একাধিক তাকবীর ছুটে যায়। এ অবস্থায় ইমাম সাহেবের সাথে শরিক হওয়ার পর দুআ পড়ার ব্যাপারে দ্বিধায় পড়ে যাই। শুরু থেকে পড়ব নাকি ইমামের অনুসরণ করব? কখনো কখনো ইমাম কোন তাকবীরে রয়েছে জানা যায় না। মেহেরবানি করে সঠিক পদ্ধতি জানিয়ে বাধিত করবেন।


Answer

জানাযার নামায শুরু হয়ে যাওয়ার পর কেউ জামাতে শরিক হলে নিয়ম হল, ইমাম সাহেব সর্বশেষ যে তাকবীর বলেছেন নবাগত ব্যক্তি ঐ সময়ের দুআই পড়বে। আর ইমাম কোন তাকবীর বলেছেন তা জানা না গেলে সানা থেকে শুরু করে ধারাবাহিকভাবে দুআগুলো পড়বে। অতপর ইমাম সালাম ফিরিয়ে ফেললে চার তাকবীরের যে কয়টি সে ইমামের সাথে পায়নি সেই কয় তাকবীরগুলো খাটিয়া জমিন থেকে উঠানোর আগে আগে একাকি পড়ে সালাম ফিরাবে।

-মারাকিল ফালাহ ৩২৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/২১৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৮০; শরহুল মুনইয়া ৫৮৭

Sharable Link

মুহাম্মাদ রাকিবুল ইসলাম - যাত্রাবাড়ি, ঢাকা

২৬৮৯. Question

রমযানের কাযা রোযা এবং শাওয়ালের ছয় রোযা একত্রে রাখলে উভয়টি আদায় হবে কি? এবং কাযা ও নফল রোযার সওয়াব পাওয়া যাবে কি?

অনুরূপভাবে মাগরিবের পরের দুই রাকাত সুন্নত আদায়ের সময় আওয়াবিনের দুই রাকাত নিয়ত করলে উভয় নামাযের সওয়াব হবে কি? দলিলসহ জানতে চাই।


Answer

রযমানের কাযা রোযা এবং শাওয়ালের ছয় রোযা একত্রে নিয়ত করলে শুধু রমযানের কাযা রোযা আদায় হবে। শাওয়ালের ছয় রোযা আদায় হবে না। এবং ছয় রোযার সওয়াবও পাওয়া যাবে না। শাওয়ালের ছয় রোযা রাখতে হলে পৃথকভাবে শুধু এর নিয়তে রোযা রাখতে হবে।

আর মাগরিবের দুই রাকাত সুন্নতের সাথে আওয়াবিনের নিয়ত করলে সুন্নতের পাশাপাশি আওয়াবিনেরও সওয়াব পাওয়ার কথা কোনো কোনো আলেম বলেছেন। তবে এমন না করে পৃথকভাবে পড়ে নেওয়াই ভালো।

-বাদায়েউস সানায়ে ২/২২৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৭; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৪০, ২/১৩; ফাতহুল কাদীর ২/২৪৮; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৪৪; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২০১

Sharable Link

মাহবুব - জামালপুর

২৬৯০. Question

আমাদের মসজিদের মুয়াযযিন সাহেব প্রতি বছর ইতিকাফে বসেন। এবারও তার ইতিকাফে বসার ইচ্ছা আছে। আমাদের মসজিদের বাইরে মুয়াযযিন সাহেবের কামরা। সে কামরায় মসজিদের মাইক আছে। আযান দিলে সেখানে গিয়ে দিতে হবে। প্রশ্ন হল, ইতিকাফ অবস্থায় মুয়াযযিন সাহেব আযান দেওয়ার জন্য তার কামরায় যেতে পারবে কি?


Answer

হ্যাঁ, আযান দেওয়ার জন্য মুয়াযযিনের কামরায় যাওয়া জায়েয। এ কারণে ইতিকাফ নষ্ট হবে না।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৮০; রদ্দুল মুহতার ২/৪৪৬; আলবাহরুর রায়েক ২/৩০৩

Sharable Link

নাফে আনাম - মিরপুর-১৪, ঢাকা

২৬৯১. Question

জনৈক ব্যক্তির ওপর হজ্ব ফরয হয়েছিল। কিন্তু হজ্ব করেনি। মৃত্যুর সময় অসিয়ত করে গেছে, যেকোনোভাবে যেন তার বদলি হজ্ব করানো হয়। মৃত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ ২৫/৩০ হাজার টাকার বেশি নয়। এই টাকা দিয়ে হজ্ব করানো অসম্ভব। এক্ষেত্রে সৌদি প্রবাসী কোনো ব্যক্তিকে দিয়ে হজ্ব করালে মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে বদলি হজ্ব আদায় হবে কি না?


Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু মৃতের এক তৃতীয়াংশ সম্পদ দ্বারা এদেশ থেকে বদলি হজ্বে প্রেরণ করা অসম্ভব তাই এক্ষেত্রে সৌদি থেকেও বদলি হজ্ব করানো যাবে।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৭৮; আলবাহরুর রায়েক ৩/৬৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৫৮-২৫৯

Sharable Link

আসিফ - ঢাকা

২৬৯২. Question

আমি গতবার হজ্ব করি। হজ্বের মূল কার্যক্রম শেষ করে বিদায়ী তাওয়াফ না করে আমার বিভিন্ন বন্ধুর বাসায় এক মাস থাকি। অতপর কোনো তাওয়াফ না করে দেশে ফিরে আসি। আমার জানার বিষয় হল-

ক) হজ্বের মূল কাজ সম্পন্ন করার পর কেউ যদি দেশে না ফিরে কোনো উদ্দেশ্যে মক্কায় কিছুদিনের জন্য থাকে তাহলে বিদায়ী তাওয়াফ জরুরি কি না?

খ) তার জন্য বিদায়ী তাওয়াফ জরুরি হলে তা কখন আদায় করবে?

গ) তাওয়াফ না করে ফিরে আসার কারণে বর্তমানে আমার করণীয় কী? দয়া করে প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়ে উপকৃত করবেন।

 


Answer

ক) হজ্বের যাবতীয় কার্যক্রম শেষ করার পর মক্কায় কিছুদিন অবস্থান করে দেশে ফেরার ইচ্ছা থাকলেও বিদায়ী তাওয়াফ করা ওয়াজিব। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হাজিরা বায়তুল্লাহর সাথে শেষ সাক্ষাৎ না করে যেন ফিরে না আসে।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৩২৭

 

খ) তাওয়াফে যিয়ারত (ফরয তাওয়াফ) আদায়ের পর থেকে যে কোনো সময় বিদায়ী তাওয়াফ আদায় করা যায়।তবে উত্তম হল, দেশে ফিরার আগ দিয়ে বিদায়ী তাওয়াফ করা।

হযরত উমর ইবনে আবদুল আযিয রাহ. একবার বিদায়ী তাওয়াফ আদায় করে এক অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যান। এরপর তিনি আবার বিদায়ী তাওয়াফ আদায় করেন।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১৬০৫৮

গ) প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যদি তাওয়াফে যিয়ারতের পর কোনো নফল তাওয়াফ করে থাকেন তাহলে উক্ত তাওয়াফ করার দ্বারাই বিদায়ী তাওয়াফের ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে বর্তমানে আপনাকে আর কিছুই করতে হবে না। কিন্তু ফরয তাওয়াফ করার পর যদি কোনো তাওয়াফ না করে থাকেন তাহলে যখন সুযোগ হয় নিজে উমরার উদ্দেশ্যে গিয়ে উমরার কাজ শেষ করে ছুটে যাওয়া তাওয়াফটি আদায় করে নিবেন। বিলম্বে করার কারণে কোনো দম ওয়াজিব হবে না। আর যদি এভাবে সেখানে গিয়ে তাওয়াফ করা সম্ভব না হয় তাহলে তিনি কারো দ্বারা হেরেম এলাকার মধ্যে একটি ছাগল/দুম্বা জরিমানা দম হিসেবে কুরবানি করতে পারেন।-ফাতহুল কাদীর ২/৩৯৭; রদ্দুল মুহতার ২/৫২৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৪৫৪-৪৫৫; বাদায়েউস সানায়ে ২/৩৩৪; আলবাহরুর রায়েক ২/৩৫১

Sharable Link

আবদুল কাদের - ঢাকা

২৬৯৩. Question

আমাদের এলাকার এক ব্যক্তি দুধ সম্পর্কীয় ভাতিজির মেয়ে অর্থাৎ আপন ভাইয়ের দুধ মেয়ের মেয়েকে বিয়ে করে। গ্রামের কিছু লোক বলছে, বিয়ে সঠিক হয়েছে। আর কেউ বলছে, সঠিক হয়নি। দয়া করে সঠিক সিদ্ধান্ত জানিয়ে উপকৃত করবেন।

উল্লেখ্য, তারা এ অবস্থায় কয়েক বছর যাবত সংসার করছে।


Answer

দুধ সম্পর্কীয় ভাতিজির মেয়ে মাহরামের অন্তর্ভুক্ত। তার সাথে বিয়ে জায়েয নয়। সুতরাং প্রশ্নোক্ত বিয়েটি সঠিক হয়নি। তাদের এখনি পৃথক হয়ে যাওয়া জরুরি এবং এত দিন অবৈধভাবে থাকার কারণে তাওবা-ইস্তিগফার করা জরুরি।

-সহীহ মুসলিম ১/৪৬৬; আলমাবসূত, সারাখসী ৪/১৯৯; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩৯৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৪/৯৩; আলবাহরুর রায়েক ৩/৯৫; রদ্দুল মুহতার ৩/৩১

Sharable Link

মুহাম্মাদ আবদুর রব - মাদারীপুর

২৬৯৪. Question

খালা শাশুড়ির সাথে দেখা-সাক্ষাত করা জায়েয আছে কি না?


Answer

খালা শাশুড়ি মাহরাম নয়। তার সাথে পর্দা করা জরুরি। দেখা-সাক্ষাত করা জায়েয় নয়।

-সহীহ বুখারী ২/৭৬৬; আলবাহরুর রায়েক ৩/৯৭; বাদায়েউস সানায়ে ২/৫৩৯; ফাতহুল কাদীর ৩/১২৪; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৩৮

Sharable Link

মুহাম্মাদ হাবীবুর রহমান - তিতুমীর কলেজ, মহাখালি

২৬৯৫. Question

আবদুল্লাহ আমার প্রতিবেশী। সামিয়া তার একমাত্র কন্যা। কিছুদিন আগে তার বিয়ে হয়েছিল পাশের থানার এক লোকের সাথে। অনুষ্ঠান শেষে কনে নিয়ে ফেরার সময় বরের মাইক্রোবাসটি সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়। বর ঘটনাস্থলেই মারা যায়। আর কনে সামিয়া কুদরতিভাবে বেঁচে যায়। এই দুর্ঘটনার তিনদিন পরই উভয় পরিবার সামিয়াকে তার মৃত স্বামীর ছোটভাই সালমানের সাথে বিয়ে দিতে সম্মত হয়। এখন জানতে চাই, এমতাবস্থায় কি সামিয়ার উপর ইদ্দত পালন করা জরুরি? ইদ্দতের সময়ের ভেতরে অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার অনুমতি আছে কি?


Answer

প্রশ্নোক্ত অবস্থায় স্বামীর মৃত্যুর কারণে সামিয়ার উপর চার মাস দশ দিন ইদ্দত পালন করা ওয়াজিব। আল্লাহ তাআলা কালামে পাকে ইরশাদ করেছেন, (তরজমা) আর তোমাদের মধ্যে যারা মারা যায় এবং স্ত্রীরদেরকে রেখে যায় এসব স্ত্রীগণ নিজেদেরকে চার মাস দশ দিন প্রতীক্ষায় রাখবে।-সূরা বাকারা (২) : ২৩৪

হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, উম্মুল মুমিনীন উম্মে হাবীবা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, আল্লাহ এবং পরকালে বিশ্বাসী কোনো নারীর জন্য বৈধ হবে না কারো মৃত্যুতে তিন দিনের বেশি শোক পালন করা। তবে যদি তার স্বামী মারা যায় তাহলে তার জন্য চার মাস দশ দিন শোক পালন করবে।-সহীহ বুখারী ১/১৭১; সহীহ মুসলিম ১/৪৮৭

অপর একটি বর্ণনায় এসেছে, সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, যে ব্যক্তি কোনো মহিলাকে বিবাহ করল এবং তার সাথে সহবাস করার আগেই মারা গেল আর মহিলার মোহরও ধার্য করা হয়নি তাহলে মহিলা পূর্ণ মোহর পাবে এবং তার উপর ইদ্দত পালন করা আবশ্যক হবে। আর সে মীরাসও পাবে।-সুনানে আবি দাউদ, হাদীস : ২১১৪; জামে তিরমিযী ১/১৩৬

সুতরাং উক্ত মহিলার ইদ্দত চলা অবস্থায় স্বামীর ভাই অথবা অন্য কারো সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া জায়েয হবে না। যদি ইদ্দত অবস্থায় বিয়ে করে তাহলে বিবাহ শুদ্ধ হবে না।

কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে, (তরজমা)  আর যতক্ষণ পর্যন্ত তারা ইদ্দতের নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষ না করে ততক্ষণ পর্যন্ত বিবাহের আকদ পাকা করার ইচ্ছাও করো না।

-সূরা বাকারা (২) : ২৩৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৩/২৫১, ২/৪৫৯; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩০৪; আলমুহীতুল বুরহানী ৫/২২৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৮০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৪/৬৬

Sharable Link

মুহাম্মাদ মুজিবুর রহমান - ইমাম, বাগডাসা লেন জামে মসজিদ নয়াবাজার, ঢাকা

২৬৯৬. Question

আমি ফোনের ব্যবসা করি। আমার এখানে অনেক ছাত্র কাস্টমার আছে। অধিকাংশ ছাত্রের বাড়িতেই যোগাযোগের জন্য আমার মোবাইল নাম্বারটি দেওয়া আছে। বাড়ি থেকে যোগাযোগের জন্য এ নাম্বারেই ফোন করে থাকে। আবার মাস শেষে যখন টাকা পাঠানোর প্রয়োজন হয় তখন তারা এ নাম্বারে রিচার্জ করে টাকা পাঠিয়ে দেয়। এভাবে আমার এই মোবাইল নাম্বারে অনেকেই টাকা পাঠায়। সেই রিচার্জের টাকা থেকে কিছু কেটে রাখি। এখন উক্ত টাকা থেকে কিছু টাকা কেটে রাখা বৈধ হবে কি না? শরয়ী দলিল-প্রমাণের আলোকে সঠিক সমাধান দানে হুজুরের মর্জি কামনা করছি।


Answer

ইলেক্ট্রনিক রিচার্জের মাধ্যমে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে টাকা প্রেরণ করা ঠিক নয়। কেননা এভাবে টাকা প্রেরণ করা সরকার কর্তৃক অনুমোদিত নয়। এছাড়া এটি রিচার্জের উদ্দেশ্যেরও পরিপন্থী। তাই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে টাকা প্রেরণের প্রয়োজন হলে রেমিট্যান্স নেটওয়ার্ক তথা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অথবা সমাজে স্বীকৃত অন্য যেসব আইনসম্মত পন্থা রয়েছে তার মাধ্যমে পাঠাবে। অতএব প্রশ্নোক্ত পদ্ধতিতে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে টাকা প্রেরণ করা ঠিক নয়। তবে যদি কেউ এভাবে কারো কাছে টাকা পাঠায় তাহলে সেক্ষেত্রে যার মোবাইলে পাঠাবে তার জন্য প্রাপকের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে ফী হিসেবে অল্প কিছু টাকা কেটে রাখা জায়েয হবে।

-আলবাহরুর রায়েক ৭/৩০০; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/৮০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৫/১৯৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৫২১; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৬৬; আলমাদখালুল ফিকহিল আম ১/১০৬

Sharable Link

মাহমুদুল হাসান - পল্লবী, ঢাকা

২৬৯৭. Question

আমি এক ব্যক্তির কাছ থেকে মুদারাবা ভিত্তিতে পাঁচ লক্ষ টাকা এনে একটি বইয়ের দোকান দিয়েছি। প্রাথমিকভাবে ব্যবসা পরিচিতির জন্য এ্যাডের পিছনে কিছু টাকা খরচ হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এ টাকাগুলো ব্যবসার খরচ ধরে ব্যবসার টাকা থেকে নিতে পারব কি না?


Answer

ব্যবসা পরিচিতির জন্য সাধারণ বিজ্ঞাপন ব্যবসার খরচ হিসেবে ধর্তব্য। তবে বর্তমানে বহুধরনের বিজ্ঞাপন আছে। এর কোনো সীমারেখা নেই। আর বহুমুখি মিডিয়ারও কোনো শেষ নেই। তাই মুদারাবা ভিত্তিতে পরিচালিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন নীতি কী হবে তা বিনিয়োগকারীর সাথে আলোচনা করে ঠিক করা কর্তব্য। অবশ্য ব্যবসার স্বার্থে জরুরি প্রয়োজন রয়েছে-এমন দু একটি বিজ্ঞাপন ন্যায্য মূল্যে প্রদান করার ইখতিয়ার মুযারিবের থাকবে। এর বেশি দিতে হলে বিনিয়োগকারীর অনুমতি নেওয়া আবশ্যক।

-আলমুগনী, ইবনে কুদামা ৭/১৬৪; রওযাতুত তালিবীন ৫/১৩৪; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়া, মাদ্দা : ১৪১৪

Sharable Link

মুহাম্মাদ ইরফান - কচুয়া, চাঁদপুর

২৬৯৮. Question

আমাদের একটি ধান মাড়ানোর মেশিন আছে। আমরা এই শর্তে লোকদের ধান মাড়ানোর কাজ করে থাকি যে, এর দ্বারা যত মণ ধান মাড়ানো হবে প্রতি মণে এক কেজি করে ধান দিতে হবে।

প্রশ্ন হল এ পদ্ধতিতে আমাদের ধান মাড়ানো জায়েয হচ্ছে কি না? আমাদের এলাকায় ধান মাড়ানোর প্রচলন এমনই। যদি জায়েয না হয় তাহলে জায়েয কোনো পন্থা আছে কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।


Answer

ধান মাড়ানোর প্রশ্নোক্ত চুক্তিটি জায়েয। তবে মাড়ানো ধান থেকেই পারিশ্রমিক দেওয়ার শর্ত করা যাবে না। বরং এভাবে চুক্তি করবে যে, আমাকে আমন বা ইরি এ জাতীয় নির্দিষ্ট প্রকার ধান নির্ধারিত পরিমাণ দিবে। এভাবে চুক্তি করার পর পরবর্তীতে ঐ মেশিনের মাড়ানো ধান থেকে দিলেও কোনো অসুবিধা নেই।

-বাদায়েউস সানায়ে ৪/৪৬; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৫৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪৪৪; ফাতাওয়া খানিয়া ২/৩৩০

Sharable Link

মুহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম - চান্দিনা, কুমিল্লা

২৬৯৯. Question

কুরবানীর পশুর কান বা লেজ কী পরিমাণ না থাকলে বা কাটা থাকলে এর দ্বারা কুরবানী সহীহ হয় না?


Answer

কুরবানীর পশুর কান বা লেজ অর্ধেক বা এরচেয়ে বেশি না থাকলে এর দ্বারা কুরবানী করা সহীহ নয়। যদি অর্ধেকের চেয়ে বেশি অংশ থাকে তাহলে এর দ্বারা কুরবানী করা সহীহ হবে।

-শরহু মাআনিল আছার ২/২৭১; কিতাবুল আসল ২/৪৯৪; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ৭/৩৫৫; ইলাউস সুনান ১৭/২৪০

Sharable Link

উবায়দুল্লাহ রিয়াদ - কেন্দুয়া, নেত্রকোণা

২৭০০. Question

এক ব্যক্তি কুরবানীর পশু ক্রয়ের পর ১২ যিলহজ্বের মধ্যে তা কুরবানী করতে পারেনি। এখন তার কী করণীয়? আর কেউ যদি পশু ক্রয়ই না করে এবং কুরবানীর সময় শেষ হয়ে যায় তখন তার কী করণীয়?


Answer

কুরবানীর পশু ক্রয়ের পর ১২ যিলহজ্বের মধ্যে কুরবানী করতে না পারলে ঐ পশু জীবিত সদকা করে দিবে। আর কোনো ব্যক্তির উপর কুরবানী ওয়াজিব হওয়া সত্ত্বেও যদি সে কুরবানীর পশু ক্রয় না করে এবং কুরবানীও না করে থাকে তাহলে এভাবে কুরবানীর সময় শেষ হয়ে গেলে তার উপর কুরবানীর যোগ্য একটি ছাগলের মূল্য সদকা করে দেওয়া ওয়াজিব। আর উভয় ব্যক্তি যথাসময়ে কুরবানী না করার কারণে তাওবা-ইস্তিগফার  করবে।

-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪২৩; রদ্দুল মুহতার ৬/৩২১; তুহফাতুল ফুকাহা ৩/৮৩; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০২

Sharable Link

আবুল বাশার - মির্জাপুর, টাঙ্গাইল

২৭০১. Question

আমাদের গ্রামের এক ব্যক্তি কুরবানী করার জন্য ঈদের দুদিন আগে হাট থেকে একটি গাভি ক্রয় করে আনে। ঘটনাক্রমে বাড়ির আরেকটা গাভির সাথে ঐ গাভির লড়াই লেগে ক্রয়কৃত গাভির একটি শিং ভেঙ্গে যায়। প্রশ্ন হচ্ছে, এমন শিং ভাঙ্গা গাভি দ্বারা কুরবানী করলে কুরবানী হবে কি না?


Answer

গাভিটির শিং যদি একেবারে গোড়া থেকে ভেঙ্গে যায়, যার দরুণ মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে যায় তাহলে এ পশু দ্বারা কুরবানী সহীহ হবে না। পক্ষান্তরে শিং ভাঙ্গার কারণে মস্তিষ্কে যদি আঘাত না পৌঁছে তাহলে সেই পশু দ্বারা কুরবানী জায়েয হবে।

উল্লেখ্য যে, কুরবানীদাতা যদি গরিব হয় অর্থাৎ কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার মতো নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক না হয় তাহলে এ ত্রুটিপূর্ণ গাভিটিই সে কুরবানী করতে পারে। তার জন্য ভিন্ন পশু কুরবানী করার প্রয়োজন নেই।

-মুসনাদে আহমদ ১/৯৫, হাদীস : ৭৩৪; জামে তিরমিযী ১/২৭৬, হাদীস : ১৫০৪; ইলাউস সুনান ১৭/২৩৭; রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৭

Sharable Link

মুহাম্মাদ নাসির - কুমিল্লা

২৭০২. Question

আমরা সহোদর তিনভাই মিলে প্রতি বছর একটি গরু কুরবানী করি। বড় ভাই এক ভাগ আর আমরা দুই ভাই তিন অংশ করে মোট ছয় ভাগ নিয়েছি। আমরা দুই ভাই সমান সমান টাকা দিয়ে অংশগ্রহণ করি। কিন্তু বড়ভাই আমাদের মধ্যে তুলনামূলক অসচ্ছল হওয়ায় তিনি তার অংশের পুরো টাকা দেন না। আমরা দুই ভাই বলেছি, আপনি যা পারেন দেন, বাকিটা আমরা দুজনে দিয়ে দিব। অবশ্য গোশত সকলের অংশ হারেই বণ্টন করা হয়। টাকা কম-বেশির কারণে তাতে ব্যবধান করা হয় না; বরং ধরে নেওয়া হয় যে, আমরা ছোট দুই ভাই বড় ভাইয়ের টাকার আংশিক আদায় করে দিই।

জানতে চাই, উল্লেখিত পদ্ধতিতে আমাদের কুরবানী কি সহীহ হচ্ছে?


Answer

হ্যাঁ, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনাদের কুরবানী সহীহ হয়েছে। গরু-মহিষে শরিকে কুরবানী দেওয়ার জন্য শর্ত হল, কারো অংশ এক সপ্তমাংশের কম না হওয়া। প্রশ্নোক্ত অবস্থায় বড় ভাই যদিও তার অংশের চেয়ে কম দিচ্ছেন কিন্তু অন্য দুই ভাই তার অংশের বাকিটা দিয়ে দিবেন বলে উল্লেখ করেছেন। তাই বড় ভাইয়ের অংশ এক সপ্তমাংশের কম হয় না।

-ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/২৯০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩১৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৭৮

Sharable Link

মাওলানা মাসউদ আযহার - ৫৩২/ই নয়াটোলা, মগবাজার

২৭০৩. Question

মুসলমানেরই এ কথা জানা যে, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম কুরআন মজীদের একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়াত। যার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা অপরিহার্য। এবং হাদীসের আলোকে আমরা এও জানি যে, কোনো গুরুত্বপূর্ণ ও মহৎ কাজ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম ব্যতীত অপূর্ণ ও বরকতশূন্য। এখন আমার জানার বিষয় হল, এমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় বিষয় ও কাজ আছে, যার গুরুত্ব ও প্রয়োজন সাময়িক। যথা-দাওয়াতনামা, পোস্টার, ব্যানার ইত্যাদি। নির্ধারিত সময় পার হওয়ার পর এসবের কোনো গুরুত্ব থাকে না বিধায় তা যেখানে সেখানে পড়ে থাকে। এমনকি অনেক সময় পদপিষ্টও হয়। অতএব এসব ক্ষেত্রে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম আরবী ভাষায় বা বাংলা উচ্চারণে লেখা যাবে কি?

খ) যেসব ক্ষেত্রে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম লেখার বিধান রয়েছে সেসব ক্ষেত্রে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম-এর পরিবর্তে ৭৮৬ অথবা বিসমিহী তাআলা লিখলে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম-এর সওয়াব অর্জিত হবে কি না? এ ব্যাপারে কুরআন-হাদীসের আলোকে, ফুকাহায়ে কেরাম ও মুফতী সাহেবদের অভিমত প্রমাণাদিসহ জানালে কুরআন মজীদের মর্যাদা রক্ষায় সচেতন হব এবং বিশেষভাবে উপকৃত হব।


Answer

ক) বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম কুরআন মজীদের স্বতন্ত্র একটি আয়াত। এর মর্যাদা ও সম্মানের প্রতি খেয়াল রাখা জরুরি। এর হুকুম কুরআন মজীদের অন্যান্য আয়াতের মতোই। তাই অযু ছাড়া তা স্পর্শ করা যাবে না। বিসমিল্লাহ লিখিত কাগজ কোনো অসম্মানের স্থানে ব্যবহার করাও জায়েয নয়। সুতরাং প্রশ্নোল্লেখিত দাওয়াতনামা, পোস্টার ও ব্যানার, যা নির্ধারিত সময়ের পর কোনো প্রয়োজন না থাকার দরুণ পথে-ঘাটে ও নর্দমায় পড়ে থাকার আশঙ্কা থাকে এমনকি অনেক সময় পদপিষ্ট হয়। এসব ক্ষেত্রে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম লেখা থেকে বিরত থাকা উচিত।  চাই তা আরবীতে লেখা হোক বা বাংলা উচ্চারণে।

একটি বর্ণনায় এসেছে, হযরত ওমর ইবনে আবদুল আযীয রাহ. দেয়ালে বিসমিল্লাহ লেখার কারণে স্বীয় পুত্রকে প্রহার করেছেন। অনুরূপ আরেকটি বর্ণনা বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. সম্পর্কেও উদ্ধৃত হয়েছে।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৪৬২৩, ৪৬২২; আলমাবসূত, সারাখসী ১/১৫; ফাতহুল কাদীর ১/২৫৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৮/৬৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩৩১; আলবাহরুর রায়েক ২/৩৭; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৪২৫; আদ্দুরর"ল মুখতার ১/৬৬৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩২৩; তাফসীরে তবারী ১/৭৮

খ) চিঠিপত্র ও গুর"ত্বপূর্ণ লিখনির শুর"তে পুরো বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম লেখা সুন্নত। আল্লাহর রাসূলের আমল ও উম্মতের মুতাওয়ারাছ আমল (অর্থাৎ খায়র"ল কুরূন থেকে অদ্যাবধি উম্মতের অবি""ছন্ন কর্মধারা) দ্বারা এটি প্রমাণিত। কুরআন মজীদে হযরত সুলায়মান আ.-এর চিঠির আলোচনা এসেছে, যাতে বিসমিল্লাহি দ্বারা শুর" করার কথা উল্লেখ রয়েছে।-সূরা নামল : ৩০

সহীহ হাদীসে এসেছে, হযরত মিসওয়ার ইবনে মাখরামা রা. ও হযরত মারওয়ান ইবনে হাকাম রা. থেকে বর্ণিত, হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সন্ধিপত্রের শুর"তে মুশরিকদের মুখপাত্র সুহাইল ইবনে আমর আপত্তি করে বলল, বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম ক? আমরা তা জানি না। আরবের প্রথা অনুযায়ী বিসমিকাল্লাহুম্মা লেখ। তদুত্তরে

সাহাবায়ে কেরামও বললেন, আল্লাহর শপথ! আমরা বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম ছাড়া সন্ধিপত্র লিখব না।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৭৮৩; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৩৮২৭

সুতরাং চিঠিপত্র, গুরুত্বপূর্ণ লিখনির শুরুতে বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম লেখা সুন্নত। এর পরিবর্তে অন্য কোনো শব্দ যেমন ৭৮৬ লিখলে ঐ সুন্নত আদায় হবে না এবং বিসমিল্লাহ-এর সওয়াবও পাওয়া যাবে না। আর বিসমিহী তাআলা লিখলে আল্লাহর নামে শুরু করার ফযীলত তো পাওয়া যাবে, কিন্তু বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম লেখার সুন্নাত আদায় হবে না।

প্রকাশ থাকে যে, লিফলেট, পোস্টার বা এ ধরনের কাগজের টুকরো, যেগুলো সাধারণত সংরক্ষণ করা হয় না সেসব কাগজে বিসমিল্লাহ লিখবে না; বরং তা আরম্ভ করার সময় শুধু মুখে বিসমিল্লাহ পাঠ করে নিলে চলবে।-শরহু মুসলিম, নববী ২/৯৮; শরহুল মুনইয়াহ প" : ২; রদ্দুল মুহতার ১/৯; আততাকরীর ওয়াত তাহবীর ১/৪; মাআরিফুস সুনান ১/২; আহসানুল ফাতাওয়া ৮/২৪; ফাতাওয়া উছমানী ১/১৬৩

Sharable Link