মুহাম্মাদ ইসমাইল - কাকরাইল

২৩২৪. Question

 

আমি একদিন পুকুরে গোসল করছিলাম। গোসল করার সময় লুঙ্গি সামান্য নিচু হলে শুধু নাভি দৃষ্টিগোচর হয়। এতে আমার পাশে থাকা এক চাচা বললেন, নাভি সতর, তা দেখলে হারামের গুনাহ হবে। আমি বললাম, আমি জানি নাভি সতর নয়। তার প্রতি দৃষ্টি পড়লে গুনাহ হবে না। সে বলল, সারা জীবন শুনে এলাম নাভির প্রতি দৃষ্টি পড়লে গুনাহ হয়। জানিয়ে বাধিত করবেন তার কথা কি সঠিক?


 

Answer

 

নাভি সতরের অন্তর্ভুক্ত নয়। আপনার চাচার বক্তব্যটি সঠিক নয়। পুরুষের সতর হল নাভির নিচ থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত। সুতরাং যদি কোনো পুরুষের শুধু নাভি খুলে যায় এবং নাভি সংলগ্ন নিচের অংশ ঢাকা থাকে তাহলে এতে সতর খোলার গুনাহ হবে না। 

হযরত আমর ইবনে শুআইব রাহ. তার পিতা থেকে, তিনি তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কোনো পুরুষ অপর পুরুষের সতরের দিকে তাকাবে না। পুরুষের সতর হল নাভির নিচ থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত। (সুনানে কুবরা, বায়হাকী, হাদীস : ৩২৩৫; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৪৯৭; সুনানে দারা কুতনী ১/৩২০ 

প্রকাশ থাকে যে, নাভি সতর না হলেও তা ঢেকে থাকে এভাবে পোষাক পরিধান করা উচিত। কেননা, নাভি সংলগ্ন নিচের অংশ সতর। নাভি খুলে গেলে নিচের অংশও কিছুটা খুলে যাওয়া স্বাভাবিক।

হযরত আবুল আলা রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত আলী রা. দেহের নিম্নাংশের পরিধেয় পোশাক নাভির উপর পরিধান করতেন।

 

-সুনানে কুবরা, বায়হাকী, হাদীস : ৩২৪৯; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ২৫৩৪৯; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৬৭৫৬; হেদায়া ১/৯২; নসবুর রায়া ১/২৯৬-৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/২২; ১৮/৯০; আলমুগনী ২/২৮৯; আলবাহরুর রায়েক ১/২৬৯; রদ্দুল মুহতার ১/৪০৪, ৬/৩৬৬

Sharable Link

ফাহিমা আক্তার - চাটখিল

২৩২৫. Question

 

আমাদের গ্রামের বাড়ির উঠান গোবর দ্বারা লেপ দেওয়া হয়। মাঝেমধ্যে তাতে ভিজা কাপড় শুকাতে দেই। জানার বিষয় হল, এতে কি ভিজা কাপড় নাপাক হয়ে যাবে?


 

Answer

গোবরের লেপযুক্ত শুকনো উঠানে যদি ভিজা কাপড় দেওয়া হয় এবং তাতে নাপাকির কোনো আলামত অর্থাৎ রং বা গন্ধ এর কোনোটি প্রকাশ না পায় তবে ঐ কাপড় নাপাক হবে না। আর যদি নাপাকির কোনো আলামত প্রকাশ পায় তাহলে কাপড় নাপাক হয়ে যাবে।

-ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৫; ফাতওয়া হিন্দিয়া ১/৪৭; রদ্দুল মুহতার ১/৩৪৬

Sharable Link

হাফেয মুহাম্মাদ মোজাহিদ - আলমপুর, হবিগঞ্জ

২৩২৬. Question

আমাদের এলাকায় কবরে লাশ রেখে প্রায় ২ হাত উঁচুতে বাঁশ দেওয়া হয়। লোকদের ধারণা, সওয়াল-জওয়াবের জন্য মুর্দাকে যখন বসানো হবে তখন বসতে গিয়ে যেন মাথা বাঁশে না লাগে। ভালোভাবে যেন বসতে পারে। আর গভীরতার ক্ষেত্রে কেউ বেশি গভীর করে কেউ কম। তাই জানতে চাই, ক) কবরের গভীরতার পরিমাণ কতটুকু হওয়া উচিত? খ) মুর্দা বসতে পারে এ পরিমাণ কবরে ফাঁকা রাখা ঠিক কি না?


Answer

ক) কবরের গভীরতা এ পরিমাণ হওয়া উচিত যেন লাশের দুর্গন্ধ না ছড়াং এবং হিংস্র পশুর আক্রমণ থেকেও লাশ হেফাযত থাকে। তাই অন্তত কোমর পরিমাণ গভীর করা উচিত। সম্ভব হলে পূর্ণ দেহ পরিমাণ গভীর করা উত্তম। খলীফাতুল মুসলিমীন উমর রা. ইন্তেকালের আগে তাঁর কবর একজন মানুষের দেহের দৈর্ঘ্য পরিমাণ গভীর করার অসিয়ত করেছিলেন। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৭/৩২৪)

খ) কবরে শায়িত ব্যক্তিকে বসানো, সওয়াল-জওয়াব করা এসব বরযখ নামক এক অদৃশ্য জগতে হবে। কাফন-দাফনের বিধানাবলির সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই। তাই বরযখে মাইয়্যিত কিভাবে বসবে, ফেরেশতারা কোথায় থাকবে ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আমাদের ভাবার প্রয়োজন নেই। আল্লাহর হুকুম ও কুদরতেই এসব কিছু হবে। সুতরাং কবরে বেশি ফাঁকা না রেখে বাঁশগুলো লাশের কাছাকাছি রাখা নিয়ম।

-শরহুল মুহাযযাব ৫/২৫১; আলমুগনী ৩/৪২৬; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৯০; রদ্দুল মুহতার ২/২৩৩; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলালমারাকী ৩৩; ইমদাদুল আহকাম ১/৮৩৯; খায়রুল ফাতাওয়া ৩/১৫৩

Sharable Link

মফীজুদ্দীন সরকার - শিয়ালবাড়ি, মিরপুর

২৩২৭. Question

 

কোনো কোনো এলাকায় দেখা যায়, রমযানের শেষ দশ দিনে এলাকাবাসী  কেউ এতেকাফ না করলে অন্য এলাকা থেকে কোনো দরিদ্র ব্যক্তিকে খানা ও পারিশ্রমিক দিয়ে এতেকাফ করানো হয়।

প্রশ্ন হল, ক) এরূপ করলে এলাকাবাসী সুন্নত তরকের গুনাহ থেকে বাঁচতে পারবে কি না?

খ) ঐ ব্যক্তির জন্য এতেকাফকালীন দিনগুলোর পারিশ্রমিক নেওয়া জায়েয হবে কি না?


 

 

Answer

ক) রমযান মাসের শেষ দশ দিন এতেকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা আলাল কিফায়াহ। যদি কোনো মসজিদে এক জনও ইতেকাফে বসে তাহলে এলাকাবাসী সুন্নত তরকের গুনাহ থেকে বেঁচে যাবে। আর যদি একজনও এতেকাফ না করে তাহলে ঐ এলাকার সকলেই গুনাহগার হবে।

খ) এতেকাফ একটি ইবাদত, যা বিনিময়যোগ্য নয়। তাই এতেকাফের জন্য পারিশ্রমিক নেওয়া জায়েয নয়। কাউকে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে এতেকাফ করালে সে এতেকাফ সহীহ হবে না। অতএব এ জাতীয় এতেকাফ দ্বারা এলাকাবাসী দায়িত্বমুক্ত হতে পারবে না।

-হেদায়া, ফাতহুল কাদীর ২/৩০৪; রদ্দুল মুহতার ২/৪৪২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৬৭; ইলাউস সুনান ১৬/১৭২-৭৩; রদ্দুল মুহতার ৬/৫৫

Sharable Link

মুহাম্মাদ অহীদুর রহমান - সদর দক্ষিণ, কুমিল্লা

২৩২৮. Question

জনৈক ব্যক্তি রোযা অবস্থায় চোখে ওষুধ লাগিয়েছে। এ কারণে তার রোযার কোনো ক্ষতি হয়েছে কি?


 

Answer

না, চোখে ওষুধ দিলে রোযার ক্ষতি হয় না। এক্ষেত্রে ওষুধের স্বাদ গলায় অনুভূত হলেও রোযা নষ্ট হবে না।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৪৮; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৪৪; রদ্দুল মুহতার ২/৩৯৫

Sharable Link

ডা. মুহাম্মাদ আবদুল মান্নান - হবিগঞ্জ, মালঞ্চ

২৩২৯. Question

 

বাজারে কুরবানীর গরু কিনতে গেলে দেখা যায়, কোনো কোনো গরুর জন্মগতভাবেই শিং থাকে না, তবে কুরবানীর বয়স হয়েছে। কোনো কোনো গরুর শিং-এর অগ্রভাগ ভাঙ্গা থাকে। জানার বিষয় হল, এ দু ধরনের গরু দ্বারা কুরবানী করলে তা সহীহ হবে কি না?


 

Answer

যে পশুর শিং ওঠেনি সে পশু দ্বারাও কুরবানী করা জায়েয। কুরবানী সহীহ হওয়ার জন্য শিং থাকা জরুরি নয়। তদ্রূপ যে পশুর শিংয়ের অগ্রভাগ ভেঙ্গে গেছে তা দ্বারাও কুরবানী করা জায়েয। হুজ্জিয়াহ ইবনে আদী বলেন, আমি আলী রা.কে জিজ্ঞাসা করলাম, শিং ভাঙ্গা পশু দ্বারা কুরবানী করার বিধান কী? তিনি বললেন, এতে অসুবিধা নেই।

-জামে তিরমিযী, হাদীস : ১৫০৩; আলবাহরুর রায়েক ৮/১৭৬; রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৩

Sharable Link

আমীনুল ইসলাম - নারায়ণগঞ্জ

২৩৩০. Question

শুনেছি, যিনি কুরবানী করবেন তার জন্য যিলহজ্বের ১লা তারিখ থেকে কুরবানী করার পূর্ব পর্যন্ত নখ, চুল না কাটা মুস্তাহাব। কথাটি কি সঠিক? হাদীসে কি এ ধরনের কথা আছে?


Answer

হ্যাঁ, কুরবানীকারীর জন্য ১লা যিলহজ্ব থেকে পশু কুরবানীর পূর্ব পর্যন্ত নখ, চুল না কাটার কথা হাদীসে এসেছে।

হযরত উম্মে সালামা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কুরবানী করতে ইচ্ছুক ব্যক্তি যেন যিলহজ্বের প্রথম দিন থেকে কুরবানী করার আগ পর্যন্ত নখ, চুল না কাটে। (সহীহ মুসলিম ২/১৬০; জামে তিরমিযী, হাদীস : ১৫২৩; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২৭৯১)

উল্লেখ্য, এই বিধান তখনি প্রযোজ্য হবে যখন অবাঞ্ছিত পশম ও নখ না কাটার সময় ৪০ দিন থেকে বেশি না হয়। কেননা, সহীহ হাদীসে আছে, আনাস রা. বলেন, গোঁফ কর্তন করা, নখ কাটা, বগল পরিষ্কার করা ও নাভির নিচের পশম পরিষ্কার করার বিষয়ে আমাদের জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল যে, আমরা যেন ৪০ দিনের বেশি বিলম্ব না করি।

-সহীহ মুসলিম ১/১২৯; হাশিয়াতুত তহতাবী আলালমারাকী ২৮৭; আহসানুল ফাতাওয়া ৪/৪৯৬

Sharable Link

মুহাম্মাদ আরমান - তাতীবাজার

২৩৩১. Question

আমাদের এলাকায় কিছু হিন্দু পড়শী আছে, যারা কুরবানীর গোশত নিতে চায়। তাদেরকে কুরবানীর গোশত দেওয়া যাবে কি না?


Answer

হ্যাঁ, হিন্দু বা অন্যান্য বিধর্মীকেও কুরবানীর গোশত দেওয়া জায়েয। হাসান বসরী রাহ. ও ফকীহ ইবরাহীম ইবনে খালেদ আবু ছাওর রাহ. বিধর্মীকে কুরবানীর গোশত দেওয়া জায়েয বলেছেন।

-ফিকহুল ইমাম আবু ছাওর ৪০২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০০

Sharable Link

আবদুল মালেক - মোমেনশাহী

২৩৩২. Question

 

কুরবানীর গরু কিনতে গেলে দেখা যায়, লোকেরা গরুর দাঁত দেখে। যদি বিশেষ দুটি দাঁত উঠে তাহলে পছন্দ হলে কেনে, অন্যথায় ঐ গরু কেনে না। তারা মনে করে, বিশেষ দুই দাঁত না উঠলে সেই গরু দিয়ে কুরবানী করা যায় না।

এখন আমার জানার বিষয় হল, গরু কুরবানীর উপযুক্ত হওয়ার জন্য দুটি দাঁত উঠা কি জরুরি? আর যদি নিশ্চিতভাবে জানা যায়, কোনো একটি গরুর দুই বছর হয়েছে, কিন্তু এখনও বিশেষ দুটি দাঁত উঠেনি তাহলে তা দিয়ে কুরবানী করলে সহীহ হবে কি না?


 

 

Answer

গরু কুরবানীর উপযুক্ত হওয়ার জন্য দুই বছর পূর্ণ হওয়া জরুরি। বিশেষ দাঁত উঠা জরুরি নয়। তবে যেহেতু বিশেষ দুটি দাঁত দুই বছর বয়স পূর্ণ হলেই উঠে থাকে তাই সাধারণত দুই দাঁত উঠাকে দুই বছর পূর্ণ হওয়ার আলামত মনে করা হয়। এ কারণেই মানুষ কুরবানীর পশু কিনতে গেলে তা পরীক্ষা করে। এতে আপত্তির কিছু নেই। তবে যদি কোনো গরুর ব্যাপারে নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে, দুই বছর পূর্ণ হলেও এখনও বিশেষ দুটি দাঁত উঠেনি তাহলে সেই গরু দ্বারা কুরবানী সহীহ হবে।

-সহীহ মুসলিম ২/১৫৫; বাযলুল মাজহূদ ১৩/১৮; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৪৮; ইমদাদুল ফাতাওয়া ৩/৬১১-১৩

Sharable Link

মুহাম্মাদ মা’সুম বিল্লাহ - মিরপুর

২৩৩৪. Question

 

কুরবানীর পশুর চামড়া বা এর টাকা পাওয়ার প্রকৃত হকদার কারা?

 

 

Answer

কুরবানীর পশুর চামড়ার মালিক কুরবানীদাতা। সে ইচ্ছা করলে তা ব্যবহারও করতে পারে। সে যদি চামড়াটি দান করে দিতে চায় তবে বিক্রি না করে আস্ত দান করাই উত্তম। বিক্রি করলে এর মূল্যের হকদার হয়ে যায় ফকীর-মিসকীন তথা যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত লোকজন। আর এদের মধ্যে আত্মীয়-স্বজনও দ্বীনদারগণ অগ্রাধিকারযোগ্য।

-রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৮-৯; শরহুল কানয, বদরুদ্দীন আইনী ২/২০৬

Sharable Link

সিরাজুল ইসলাম - নাটোর

২৩৩৫. Question

কেউ যদি একটি গরুতে একভাগ আকীকা আর বাকি অংশ কুরবানীর নিয়তে কুরবানী করে তবে তার আকীকা ও কুরবানী আদায় হবে কি না?


Answer

হ্যাঁ, গরু, উট, মহিষে সাত ভাগের এক ভাগ আকীকা ও বাকি অংশ কুরবানীর নিয়ত করলে আকীকা ও কুরবানী দুটোই আদায় হয়ে যাবে।

-রদ্দুল মুহতার ২/৫৪৩, ৬/৩২৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০৪; ইমদাদুল আহকাম ৪/২৮২

Sharable Link

মুহাম্মাদ হামীদুল্লাহ - হবিগঞ্জ, সিলেট

২৩৩৬. Question

করীম সাহেবের ওপর হজ্ব ফরয। অনেক দিন থেকে তিনি খুব অসুস্থ। যার কারণে তিনি নিজে হজ্ব করতে পারছেন না। তাই তিনি আরেক ব্যক্তিকে নিজের পক্ষ থেকে বদলী হজ্ব করার জন্য পাঠান। তিনি ঐ ব্যক্তিকে স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন, যেন সে ইফরাদ হজ্ব করে। এখন ঐ ব্যক্তির জন্য তামাত্তু হজ্ব করার কি অনুমতি আছে?


 

Answer

না। ঐ ব্যক্তির জন্য হজ্বে প্রেরণকারী ব্যক্তির নির্দেশ অমান্য করে তামাত্তু হজ্ব করার অনুমতি নেই। বরং তাকে ইফরাদ হজ্বই করতে হবে।

-কিতাবুল আসল ২/৫০৬; মাবসূত, সারাখসী ৪/১৫৬; বাদায়েউস সানায়ে ২/৪৫৭; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৩১০; আলবাহরুল আমীক ৪/২৩২৯; মানাসিক ৪৪৫

Sharable Link

হাফেয আসআদুদ্দীন - কানাইঘাট, সিলেট

২৩৩৭. Question

খালেদের বয়স ২৫ বছর। তার প্রয়োজন অতিরিক্ত কোনো সম্পদ নেই তার ওপর হজ্ব ফরয নয়। তার পিতা অনেক সম্পদশালী। বিগত বছর তিনি ছেলে খালেদকে নিয়ে হজ্বে যান এবং খালেদের হজ্ব বাবদ যত টাকা ব্যয় হয়েছে তা তিনি নিজ হাতেই খরচ করেন। ঐ টাকা খালেদের হাতে দিয়ে তাকে এর মালিক বানিয়ে দেননি।

এখন জানার বিষয় হল, এভাবে হজ্ব করার দ্বারা কি খালেদের ফরয হজ্ব আদায় হয়েছে? নাকি এক্ষেত্রে ফরয হজ্ব আদায় হওয়ার জন্য তাকে ঐ টাকার মালিক বানিয়ে দেওয়া জরুরি?


Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে খালেদ হজ্ব করার সময় নফল হজ্বের নিয়ত না করে থাকলে সেটি তার ফরয হজ্ব হিসেবেই আদায় হয়েছে। কেননা, ফরয আদায়ের জন্য হজ্বের খরচের মালিক হওয়া শর্ত নয়।

সুতরাং পরবর্তীতে সামর্থবান হলেও পুনরায় হজ্ব করা তার উপর ফরয হবে না।

-শরহু মুখতাসারিত তহাবী ২/৪৯৮; ফাতহুল কাদীর ২/৩২৯; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৯৪; মানাসিক ৪১; গুনইয়াতুন নাসিক ৩০-৩২; ইমদাদুল আহকাম ২/১৫৯

Sharable Link

ইঞ্জিনিয়ার মাহবুবুর রহমান - সাতক্ষিরা

২৩৩৮. Question

আমরা জানি, তাওয়াফ অবস্থায় অযু চলে গেলে অযু করে এসে সাত চক্করের অবশিষ্ট চক্কর দিলেই তাওয়াফ পূর্ণ হয়ে যায়। পুনরায় পুরো সাত চক্কর দিতে হয় না। সেদিন একজন বললেন, তাওয়াফ শুরুর প্রথম তিন চক্করের মধ্যে অযু চলে গেলে অযু করে এসে পুরো সাত চক্কর দিতে হবে। মাসআলা কী জানাতে অনুরোধ করছি।


Answer

তাওয়াফের তিন চক্কর বা এর কম আদায়ের পর অযু নষ্ট হয়ে গেলে অযু করে এসে পুনরায় শুরু থেকে সাত চক্কর পূর্ণ করা মুস্তাহাব। তবে এক্ষেত্রে অযু করে আসার পর অবশিষ্ট চক্করগুলো করে নিলেও তাওয়াফ আদায় হয়ে যাবে।

আর তাওয়াফের চার চক্কর বা এর বেশি আদায়ের পর অযু নষ্ট হলে উত্তম হল, অযু করে এসে পুনরায় প্রথম থেকে চক্কর শুরু না করে শুধু অবশিষ্ট চক্করগুলো আদায় করা। তবে এক্ষেত্রেও কেউ যদি পুনরায় প্রথম থেকে সাত চক্করই পূর্ণ করে তাহলে সেটিও সহীহ হবে।

সুতরাং প্রশ্নোক্ত ব্যক্তি যদি বিষয়টিকে মুস্তাহাব হিসেবে উল্লেখ করে থাকে তাহলে তার কথা ঠিক আছে।

-সহীহ বুখারী ১/২২০; ফাতহুল বারী ৩/৫৬৫; কিতাবুল আসল ২/৪০৩; মাবসূত, সারাখসী ৪/৪৮; ফাতহুল কাদীর ২/৩৮৯; আলবাহরুল আমীক ২/১১৫৭; গুনইয়াতুন নাসিক ১২৭

Sharable Link

মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ - রামপুরা, ঢাকা

২৩৩৯. Question

জনৈক মহিলা তাওয়াফ করার পর তার ঋতুস্রাব শুরু হয়ে যায়। ফলে সে এ অবস্থায় সাঈ করে নেয়। জানার বিষয় হল, তার সাঈ কি আদায় হয়েছে? সাঈর জন্য কি হায়েয থেকে পবিত্র হওয়া শর্ত?


Answer

ঐ মহিলার সাঈ আদায় হয়ে গেছে। কেননা, সাঈর জন্য হায়েয থেকে পবিত্র হওয়া শর্ত নয়। নির্ভরযোগ্য বর্ণনায় এসেছে, উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. ও উম্মে সালামা রা. বলতেন, কোনো মহিলার বাইতুল্লাহ শরীফ তাওয়াফ এবং তৎপরবর্তী দু রাকাত নামায আদায় করার পর ঋতুস্রাব শুরু হয়ে গেলে সে যেন সাফা-মারওয়া সাঈ করে নেয়। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৮/৪৪১)

বিশিষ্ট সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. এবং অনেক জলীলুল কদর তাবেয়ীগণ এই মত পোষণ করেছেন।

-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৮/৪৪১; মাবসূত, সারাখসী ৪/৫১; বাদায়েউস সানায়ে ২/৩১৯

Sharable Link

মুহাম্মাদ উম্মে ইসতিয়াক - মিরপুর-১০, ঢাকা

২৩৪০. Question

 

আমি ইহরাম অবস্থায় এমন একটি কাজ করেছি, যার কারণে দম ওয়াজিব হয়েছে। কিন্তু তখন অর্থ সংকটের কারণে তা আদায় করতে পারিনি। এ অবস্থায় দেশে চলে এসেছি। দম না দিয়ে দেশে চলে আসার কারণে কি আমার গুনাহ হয়েছে? এখন আমি কী করতে পারি?


 

 

Answer

দম আদায় না করে দেশে এসে যাওয়ার কারণে গুনাহ হয়নি। কেননা, জরিমানা দম বিলম্বে আদায় করারও অবকাশ আছে। তবে কোনো ওজর না থাকলে দম আদায়ে বিলম্ব না করাই উত্তম।

স্মর্তব্য, হজ্ব ও উমরার দম হেরেমের এলাকায় যবেহ করা জরুরি। হেরেমের বাইরে যবাই করলে তা দ্বারা দম আদায় হবে না। তাই নিজে কিংবা অন্য কারো মাধ্যমে সেখানেই যবাই করার মাধ্যমে দম আদায় করতে হবে।

-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৮/৬৯১; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৪৬৫; মানাসিক ৩৮৪, ৩৯২; বাদায়েউস সানায়ে ২/৩৯৭

Sharable Link

মুহাম্মাদুল্লাহ - কাওরান বাজার, ঢাকা

২৩৪১. Question

 

সৎমায়ের আপন বোনকে (খালাকে) বিবাহ করা জায়েয আছে কি?


 

Answer

হ্যাঁ, সৎ মায়ের বোনকে বিবাহ করা জায়েয আছে। কেননা, তারা পরস্পর মাহরাম নয়।

-সূরা নিসা : ৩৪; তাফসীরে তাবারী ৪/১২; ইমদাদুল আহকাম ২/২৪৭; মাজমুআতুল ফাতাওয়া লাখনভী ২/২৩

Sharable Link

মুহাম্মাদ আমজাদ হুসাইন - সাতকানিয়া, চট্টগ্রাম

২৩৪২. Question

আবদুল করীমের মা মারা গেলে তার পিতা এক বিধবা মহিলাকে বিবাহ করে। ঐ মহিলাটির পূর্বের স্বামী থেকে একটি মেয়ে ছিল, সেও এখন থেকে মায়ের সাথে বাড়িতে থাকে, মেয়েটি বড় হলে আবদুল করীম তাকে বিবাহ করতে চায়। এলাকার সাধারণ জনগণ বলল, তুমি তাকে কিভাবে বিবাহ করবে? সে তো তোমার সৎ বোন। জনগণের বাধা দেওয়া সত্ত্বেও আবদুল করীম ঐ মেয়েটিকে বিবাহ করে ঘর সংসার করছে।

এখন আমার জানার বিষয় হল, আবদুল করীম ও তার সৎ বোনের (সৎ মায়ের পূর্বের স্বামীর মেয়ে) মাঝে বিবাহ সহীহ হয়েছে কি না এবং বর্তমান ঘর সংসার করার কারণে তারা গুনাহগার হচ্ছে কি না? উল্লেখ্য, আবদুল করীমও ঐ মেয়েটির মাঝে কোনো দুধ সম্পর্কও নেই।


Answer

 প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ঐ মেয়েটির সাথে আবদুল কারীমের বিবাহ সহীহ হয়েছে। কারণ উভয়ের বাবা-মা ভিন্ন এবং তাদের মাঝে রক্তের সম্পর্ক নেই।

-সূরা নিসা : ২৪; রদ্দুল মুহতার ৩/৩২; আলমুগনী ৯/৫২৫; তানকীহুল ফাতাওয়া হামীদিয়া ১/১৬; ইমদাদুল আহকাম ২/২৫১

Sharable Link

মুহাম্মাদ মোশাররফ হুসাইন - বাঁশখালী, চট্টগ্রাম

২৩৪৩. Question

বিয়ের পর খেজুর ছিটানো কি সুন্নত? মসজিদে বিয়ে হলে এক্ষেত্রে

কি হুকুম?


 

Answer

বিয়ের আকদের পর খেজুর বা মিষ্টান্ন বিতরণ করার কথা কোনো কোনো বর্ণনায় পাওয়া যায় এবং তা ছিটিয়ে দেওয়ারও অবকাশ আছে। যদিও ছিটিয়ে দেওয়ার আলাদা কোনো ফযীলত বা ছওয়াব নেই।

বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত হাসান বসরী রাহ. এবং প্রসিদ্ধ তাবেয়ী হযরত শাবী রাহ. বিয়ের আকদের মজলিসে খেজুর বা মিষ্টান্ন জাতীয় জিনিস ছিটানোর অনুমতি দিতেন। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ১১/৯৮-১০০)

উল্লেখ্য, এ সংক্রান্ত আরো কিছু রেওয়ায়েত আছে, যেগুলো মুনকার, যা দলিলযোগ্য নয়। আর মসজিদে বিয়ে হলে খেজুর ছিটিয়ে না দেওয়াই উচিত। কেননা, এতে ক্ষেত্র বিশেষে হৈ চৈ, কাড়াকাড়ির কারণে মসজিদের আদব ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে এবং মসজিদ ময়লাও হয়ে যেতে পারে।

-শরহু মাআনিল আছার, তহাবী ২/৩০-১; মুসনাদে আহমদ ৪/৩৫, হাদীস : ১৮৯৭৬; ফাতাওয়া সিরাজিয়াহ ৭৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৫৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩৫৬; আলআওসাত ৮/৭৫৫; রওযাতুত তালিবীন ৭/৩৪২

Sharable Link

মুহাম্মাদ যুবায়ের - মালিবাগ, ঢাকা

২৩৪৪. Question

শুনেছি, হাদীসে নাকি আছে, শেষ যমানায় দালান-কোঠা, সম্পদ হবে গরীবদের। জানতে চাই, এটি হাদীস কি না? হাদীস হলে কোন কিতাবের হাদীস? মর্মসহ জানতে আগ্রহী।


Answer

হ্যাঁ, এ ধরনের কথা সহীহ হাদীসে আছে। আবু হুরাইরা রা. বলেন, (কিয়ামতের আলামত বর্ণনা করতে গিয়ে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতের একটি আলামত হল, বকরীর রাখালরা বড় বড় অট্টালিকা নিয়ে গর্ব করবে। (সহীহ বুখারী ১/১২; সহীহ মুসলিম ১/২৯)

উক্ত হাদীসের মর্ম হল, সমাজে তখন বড় ধরনের পরিবর্তন হবে। মূর্খ ও নিম্ন শ্রেণীর লোকেরা নেতৃত্বের আসনে সমাসীন হবে। দরিদ্র লোকেরা বড় বড় দালান-কোঠার মালিক হবে এবং এসব নিয়ে গৌরব করতে থাকবে।

-উমদাতুল কারী ১/২৮৯; তরজুমানুস সুন্নাহ ১/৫৬৬-৫৬৭

Sharable Link

মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল বারী - কুনিয়া, নেত্রকোণা

২৩৪৫. Question

প্রতিশ্রুত ইমাম মাহদী ও মাসীহ আ. ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি-এ সম্পর্কে সহীহ দলিল জানতে চাই। তাদের প্রত্যেকের পরিচয় ভিন্ন ভিন্ন করে জানালে আমাদের জন্য বুঝতে সহজ হবে।

উল্লেখ্য, কাদিয়ানী সম্প্রদায় ইমাম মাহদী ও মাসীহ আ. একই ব্যক্তি হওয়া সম্পর্কে সুনানে ইবনে মাজাহর বরাতে একটি হাদীস পেশ করে থাকে যে,

لا مهدي إلا عبيسى بن مريم

অর্থাৎ ঈসা ইবনে মারইয়ামই হলেন মাহদী। হাদীসটির তাৎপর্য ও ব্যাখ্যা জানতে চাই।


Answer

হযরত ঈসা আ. আল্লাহ তাআলার রাসূল। যিনি বনী ইসরাইলের নিকট প্রেরিত হয়েছিলেন। আখেরী নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আগে দুনিয়ায় তাঁর আগমন হয়েছে। কুরআন মজীদে তাঁর পরিচয় ও ঘটনা বিদ্যমান রয়েছে। পক্ষান্তরে মাহদী রা. এখনও আবির্ভূত হননি। কিয়ামতের পূর্বে তার আবির্ভাব হবে। তিনি নবী হবেন না। আখেরী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উম্মত হিসেবে দুনিয়ায় থাকবেন। হাদীস শরীফে তাঁর সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ হয়েছে।

কুরআন ও হাদীসের এ সকল দলিল থেকে সুস্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, হযরত ঈসা আ. ও মাহদী রা. ভিন্ন দুজন ব্যক্তি। তাদের সম্পর্কে কুরআন ও হাদীসে যা বলা হয়েছে তা জানা থাকলে এ বিষয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হওয়ার কোনো অবকাশ নেই। এখানে কুরআন ও হাদীস থেকে তাদের প্রত্যেকের পরিচয় ও কিছু বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হল।

ঈসা আ.-এর পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য

ক) তিনি মারইয়াম রা.-এর পুত্র।

কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, (তরজমা) সে মারইয়ামের পুত্র ঈসা। (সূরা মারইয়াম : ৩৪)

খ) ঈসা আ. আল্লাহ তাআলার কুদরতে পিতা ছাড়া শুধু নিজ মা (মারইয়াম) এর মাধ্যমে জন্মলাভ করেছেন।

কুরআন মজীদে আছে, (তরজমা)  তিনি (মারইয়ামকে) বললেন, আমি তো তোমার প্রতিপালকের প্রেরিত  তোমাকে এক পবিত্র পুত্র দান করার জন্য। মারইয়াম বলল, আমার পুত্র হবে কেমন করে, যখন আমাকে কোনো পুরুষ স্পর্শ করেনি এবং আমি নই কোনো ব্যভিচারিণী নারী? ফিরিশতা বলল, এভাবেই হবে। তোমার রব বলেছেন, আমার পক্ষে এটা একটা মামুলি কাজ। আমি এটা করব এজন্য যে, তাকে মানুষের জন্য (আমার কুদরতের) এক নিদর্শন বানাব এবং আমার নিকট হতে রহমতের প্রকাশ ঘটাব। (সূরা মারইয়াম : ১৯-২১)

গ) ঈসা আ. ছিলেন আল্লাহ তাআলার রাসূল। তিনি বনী ইসরাইলের নিকট প্রেরিত হয়েছিলেন। ইরশাদ হয়েছে, (তরজমা) স্মরণ কর সেই সময়কে যখন ঈসা ইবনে মারইয়াম বলেছিল, হে বনী ইসরাইল! আমি তোমাদের কাছে আল্লাহ তাআলার রাসূল হয়ে এসেছি। (সূরা সাফ্ফ : ৬)

অন্যত্র বলা হয়েছে, হে নবী! আমি তোমার প্রতি ওহী নাযিল করেছি সেইভাবে যেভাবে নাযিল করেছি নূহ ও তার পরবর্তী নবীগণের প্রতি। এবং আমি ওহী নাযিল করেছিলাম ইবরাহীম, ইসমাইল, ইসহাক, ইয়াকুব এবং তাদের বংশধরগণ-ঈসা, আইয়ুব, ইউনুস, হারুন ও সুলাইমানের প্রতি। (সূরা নিসা : ১৬৩)

ঘ) ঈসা আ.কে আল্লাহ তাআলা আকাশে উঠিয়ে নিয়েছেন। আখেরী যামানায় কিয়ামতের কিছুদিন পূর্বে আকাশ থেকে অবতরণ করবেন।

কুরআন মজীদে আছে, যখন আল্লাহ তাআলা বলেছিলেন, হে ঈসা! আমি তোমাকে সহীহ সালামতে ওয়াপস নিয়ে নিব। তোমাকে নিজের কাছে তুলে নিব। এবং যারা কুফুরি অবলম্বন করেছে তাদের (উৎপীড়ন) থেকে তোমাকে মুক্ত করব। (সূরা আলইমরান : ৫৫)

অন্য আয়াতে আছে, তারা বলে আমরা আল্লাহর নবী ঈসা ইবনে মারইয়ামকে হত্যা করেছি। অথচ তারা তাকে হত্যা করেনি, শুলেও চড়াতে পারেনি। বরং তাদের বিভ্রম হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে যারা এ সম্পর্কে মতভেদ করেছে তারা এ বিষয়ে সংশয়ে নিপতিত। এবং এ বিষয়ে অনুমানের অনুসরণ ছাড়া তাদের প্রকৃত কোনো জ্ঞানও ছিল না। সত্য কথা হচ্ছে তারা ঈসাকে হত্যা করেনি। বরং আল্লাহ তাআলা তাকে নিজের কাছে তুলে নিয়েছেন। (সূরা নিসা : ১৫৭)

ঙ) তিনি কিয়ামতের আগে আসমান থেকে অবতরণ করবেন। কিছুদিন দুনিয়ায় অবস্থান করবেন এবং দাজ্জালকে হত্যা করবেন।

আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কসম সেই সত্ত্বার, যার কুদরতী হাতে আমার প্রাণ, অতি নিকটবর্তী সময়ে তোমাদের মাঝে অবতরণ করবেন মারইয়ামের পুত্র (ঈসা)। (সহীহ বুখারী ১/৪৯০; জামে তিরমিযী, হাদীস : ২২৩৩)

চ) ঈসা আ. আকাশ থেকে অবতরণের পর ৪০ বছর দুনিয়াতে থাকবেন।

উম্মুল মুমিনীন আয়েশা সিদ্দীকা রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, ঈসা আ. আকাশ থেকে অবতরণ করে দাজ্জালকে হত্যা করবেন এবং ৪০ বছর দুনিয়াতে থাকবেন। (মুসনাদে আহমদ ৬/৭৫; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৩৮৬২৯)

ইমাম মাহদীর পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য

ক) ইমাম মাহদী ফাতেমা রা-এর বংশে জন্মগ্রহণ করবেন্

উম্মে সালামা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, মাহদী হবে ফাতেমার বংশধর। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৪২৮৩; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ৪০৮৬)

খ) মাহদী রা.-এর নাম হবে মুহাম্মাদ এবং তার পিতার নাম হবে আবদুল্লাহ।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যদি কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার মাত্র একদিনও বাকি থাকে তবুও-আল্লাহ তাআলা ঐ দিনকে দীর্ঘ করবেন এবং আমার বংশের এক ব্যক্তিকে  প্রেরণ করবেন। তার নাম আমার নামের সাথে এবং তার পিতার নাম আমার পিতার নামের সাথে মিলে যাবে। (অর্থাৎ তার নাম হবে মুহাম্মাদ ও তার পিতার নাম হবে আবদুল্লাহ)। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৪২৮১; জামে তিরমিযী, হাদীস : ২২৩০)

উপরোক্ত হাদীসে কিয়ামতের পূর্বে ইমাম মাহদীর আগমনের বিষয়টি এবং তার নাম ও বংশের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

গ) মাহদী রা. নবী হবেন না। তিনি হবেন একজন নেককার ও ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি। তিনি মুসলমানদের খলীফা হবেন।

আবু উমামা বাহেলী রা. থেকে বর্ণিত, এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে নেককার লোক বলে অভিহিত করেছেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ৪০৭৭)

উম্মে সালামা রা. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হাজরে আসওয়াদ ও মাকামে ইবরাহীমের মধ্যবর্তী স্থানে মানুষ তার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করবেন। (অর্থাৎ তার দিক নির্দেশনা অনুযায়ী চলার জন্য তার হাতে হাত রেখে শপথ করবে।)। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৪২৮৫)

ঘ) মাহদী রা. সাত বছর খেলাফতের দায়িত্ব পালন করবেন এবং দুনিয়াতে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করবেন।

আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, মাহদী আমার বংশের হবে। তার চেহারা উজ্জ্বল হবে। (তার দ্বারা) গোটা দুনিয়ায় ইনসাফ কায়েম হবে। যেমনিভাবে (ইতিপূর্বে) পুরো দুনিয়ায় অন্যায় প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। তিনি সাত বছর খেলাফতের দায়িত্ব পালন করবেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৪২৮৪)

উম্মে সালামা রা. থেকে বর্ণিত, এক হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, মাহদী (খলীফা হওয়ার পর) সাত বছর বেঁচে থাকবেন। এরপর মৃত্যুবরণ করবেন। মুসলমানগণ তার জানাযা পড়বে। (সুনানে আবু দাউদ, হা: ৪২৮৬)

উপরে ঈসা আ. ও মাহদী রা. সম্পর্কে কুরআন মজীদ ও হাদীস শরীফ থেকে যে তথ্যগুলো দেওয়া হল এগুলো থেকেই পরিষ্কার বোঝা যায় যে, ঈসা আ. ও মাহদী রা. ভিন্ন দুই ব্যক্তি। কিয়ামতের আগে মাহদী রা.-এর আবির্ভাব হবে এবং ঐ সময় ঈসা আ.ও আসমান থেকে অবতরণ করবেন। কিছুকাল তারা দুজন একত্রেও থাকবেন।

সুতরাং তাদেরকে এক ব্যক্তি দাবি করার অর্থ, দুজনের কোনো একজনকে অস্বীকার করা। অথচ ঈসা আ.-এর  দুনিয়ায় আসা, তাকে আসমানে উঠিয়ে নেওয়া এবং কিয়ামতের আগে আবার দুনিয়াতে আগমন করার বিষয়টি কুরআন মজীদ ও মুতাওয়াতির হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। তদ্রূপ কিয়ামতের আগে ইমাম মাহদীর আগমনও মুতাওয়াতির হাদীসে রয়েছে। তিনি ফাতেমা রা.-এর বংশধর হওয়া, একজন নেককার ও ন্যায়পরায়ণ শাসক হওয়া ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিবরণও সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।

জালালুদ্দীন সুয়ূতী রাহ. মাহদীর আগমন সংক্রান্ত হাদীসসমূহ সংকলন করে একটি আলাদা পুস্তিকাই লিখেছেন। যা তার আলহাভী লিলফাতাভী গ্রন্থের ২য় খন্ডে বিদ্যমান রয়েছে। তাতে ২১৩-২৪৭ পৃষ্ঠা পর্যন্ত মোট ৩০ পৃষ্ঠাব্যাপী ইমাম মাহদী সংক্রান্ত হাদীসসমূহ সংকলিত হয়েছে। এরপর সুয়ূতী রাহ. লিখেছেন আবুল হাসান মুহাম্মাদ ইবনে হুসাইন বলেন, ইমাম মাহদীর আগমন সংক্রান্ত হাদীসসমূহ মুতাওয়াতির।

হাফেয ইবনে হাজার রাহ. ফাতহুল বারীতে (৬/৫৬৯) লিখেছেন, আবুল হাসান মানাকেবুশ শাফেয়ী তে বলেছেন, ইমাম মাহদী নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উম্মত হবেন এবং ঈসা আ. তার পিছনে নামায পড়বেন। তার আগমন সংক্রান্ত হাদীসসমূহ মুতাওয়াতির।

সুতরাং ইমাম মাহদীকে অস্বীকার করার অর্থ, মুতাওয়াতির হাদীস দ্বারা প্রমাণিত অকাট্য বিষয়কে অস্বীকার করা। অতএব এ ধরনের চিন্তা ও বিশ্বাস থেকে বেঁচে থাকা জরুরি।

উল্লেখ্য, কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের প্রধান মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রকারের মিথ্যা দাবি করেছে। কোনো সময় নিজেকে নবী ও রাসূল, কোনো সময় আদম ও মারইয়াম হওয়ার দাবি করেছে। কখনো যুগের মুজাদ্দিদ হওয়ার দাবি করেছে। এমনিভাবে নিজেকে ঈসা ও মাহদী বলেও দাবি করেছে।

এমন আরো অনেক দাবি সে করেছে যেগুলো কুরআন ও হাদীসের দৃষ্টিতে সুস্পষ্ট মিথ্যা ও ঈমান পরিপন্থী।

মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী নিজের ব্যাপারে এ ধরনের দাবি করায় সে সময়ের সাধারণ লোকজনও বুঝতে পারত যে, লোকটি মিথ্যাবাদী। এক সময় যখন তাকে বলা হল, মাহদী ও মাসীহ তো দুজন। আপনি একত্রে ঐ দুজন হলেন কীভাবে? তখন সে ঐ মিথ্যা দাবির সমর্থনে উক্ত বর্ণনাটি পেশ করে। অথচ ইতিপূর্বে কুরআন ও হাদীস থেকে ঈসা আ. ও মাহদী রা.-এর যে পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে তা থেকে এ বিষয়টি সুস্পষ্ট যে, তারা দুজন ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি।

একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, গোলাম আহমদ কাদিয়ানী ঈসা বা মাহদী নয়। কারণ ঈসা আ. ও মাহদী রা.-এর বংশ পরিচয়ের সঙ্গে গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর বংশ পরিচয়ের কোনো মিল নেই।

গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর পিতার নাম গোলাম মুর্তজা। সে পাঞ্জাবের গুরদাসপুর জেলার কাদিয়ান নামক এলাকায় ১৮৩৯ মতান্তরে ১৮৪০ খৃস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করে।

পক্ষান্তরে ঈসা আ. পিতা ছাড়া আল্লাহর কুদরতে নিজ মা মারইয়ামের মাধ্যমে জন্মলাভ করেছেন। তিনি বনী ইসরাইলের নিকট নবী হিসেবে প্রেরিত হয়েছিলেন এবং আল্লাহ তাআলা তাকে জীবিত অবস্থায় আসমানে উঠিয়ে নিয়েছেন। কিয়ামতের আগে আসমান থেকে অবতরণ করবেন।

আর ইমাম মাহদী এখনো দুনিয়াতে আসেননি। তিনি ফাতেমা রা.-এর বংশে জন্মলাভ করবেন। তার নাম হবে মুহাম্মাদ। তার পিতার নাম  হবে আবদুল্লাহ। তাদের উভয়ের বংশ-পরিচয়, বৈশিষ্ট্য কুরআন ও হাদীস থেকে বিস্তারিতভাবে উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। অতএব গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর এ ধরনের দাবি ও বিশ্বাস মিথ্যা এবং ঈমান পরিপন্থী।

প্রসঙ্গ : সুনানে ইবনে মাজার হাদীস

গোলাম আহমদ কাদিয়ানী তার দাবি-(ঈসা আ. ও মাহদী রা. এক ও অভিন্ন ব্যক্তি) এর সপক্ষে সুনানে ইবনে মাজাহ-এর যে বর্ণনাটি বলে থাকে, হাদীস শাস্ত্রের ইমামগণ বর্ণনাটিকে শরীয়তের অন্যান্য অকাট্য দলিলের ভিত্তিতে মুনকার (অগ্রহণযোগ্য) বলেছেন। কেউ কেউ মাওযূও বলেছেন।

হাদীস বিশারদ ইমাম সাগানী রাহ. বলেছেন, উক্ত হাদীসটি মওযূ (জাল)। দেখুন : মীযানুল ইতিদাল ৪/১০৭; সিয়ারু আলামিন নুবালা ১২/৩৫১; আলফাওয়ায়িদুল মাজমূআ, শাওকানী ২/১২৭; আলমানারুল মুনীফ ১৪১

লক্ষ্যণীয় বিষয় এই যে, সুনানে ইবনে মাজাতেই ইমাম মাহদীর আগমন সম্পর্কে বেশ কয়েকটি সহীহ হাদীস বিদ্যমান রয়েছে। (দেখুন : সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ৪০৮৫, ৪০৮৬, ৪০৮৭)

সুতরাং হাদীস বিশারদগণের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যেটি অগ্রহণযোগ্য বা মওযূ বর্ণনা, তার উপর ভিত্তি করে একটি অকাট্য আকীদাকে কখনো অস্বীকার করা যায় না।

আল্লাহ তাআলা সকলকে ঈমান ও হেদায়েতের উপর অবিচল রাখুন এবং ঈমান বিনষ্টকারী সকল প্রকার ষড়যন্ত্র থেকে হেফাযত করুন। আমীন।

কাদিয়ানী সম্প্রদায় সম্পর্কে জানার জন্য আরো পড়তে পারেন :

ছুবুত হাজের হেঁ; আয়নায়ে কাদিয়ানিয়্যত, কাযিবাতে মির্জা, কাদিয়ানী কিউ কাফের হ্যায় (উর্দু)। কাদিয়ানী সম্প্রদায় : তত্ত্ব ও ইতিহাস, কাদিয়ানী ফিতনা ও মুসলিম মিল্লাতের অবস্থান, কাদিয়ানী মতবাদ ও উলামায়ে ইসলাম। 

Sharable Link