মুহাম্মাদ জুনায়েদ - মিরপুর, ঢাকা

৫১৯১. Question

আমরা জানি, পানি না থাকলে অথবা পানি ব্যবহার না করা গেলে ওযুর প্রয়োজন আছে- এমন কোনো ইবাদত করার জন্য তায়াম্মুম করতে হয়। কিন্তু অনেকসময় ওযুর প্রয়োজন নেই- এমন ইবাদতের জন্য পানি থাকা সত্তে¡ও আমি তায়াম্মুম করি। যেমন, দ্বীনী দরস প্রদান বা যিকির করা ইত্যাদি। আবার কখনো পানি থাকা সত্তে¡ও শুধু পবিত্র অবস্থায় থাকার উদ্দেশ্যেও তায়াম্মুম করে থাকি। জানার বিষয় হচ্ছে, আমার এভাবে তায়াম্মুম করা শরীয়তসম্মত হচ্ছে কি না? জানিয়ে উপকৃত করবেন।

Answer

আপনি যেসব ইবাদতের কথা উল্লেখ করেছেন, সেগুলোর জন্য পবিত্রতা অর্জন করা শর্ত না হলেও পবিত্র অবস্থায় তা আদায় করা উত্তম। এক্ষেত্রে পানি থাকলেও ওযু না করে তায়াম্মুম করার সুযোগ রয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওযু না থাকা অবস্থায় এক ব্যক্তি তাকে সালাম দিলে তিনি তায়াম্মুম করে তার সালামের জবাব দিয়েছেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৩৩৭)

তাই পানি থাকা সত্তে¡ও দ্বীনী কোনো বিষয়ে দরস দেওয়া বা যিকির করার জন্য তায়াম্মুম করা সহীহ আছে। আর সর্বদা পবিত্র অবস্থায় থাকাও প্রশংসনীয় কাজ। এর জন্যও তায়াম্মুম করা যেতে পারে। তবে এসব কাজ পবিত্রতার সাথে আদায় করার জন্য ওযু করাই যে সর্বোত্তম পদ্ধতি- তা তো বলার অপেক্ষা রাখে না।

মনে রাখতে হবে, যেসব ইবাদত পবিত্রতা ছাড়া আদায় করা যায় না তার জন্য এ ধরনের তায়াম্মুম যথেষ্ট নয়। পানি থাকা অবস্থায় এমন ইবাদতের জন্য ওযু করাই কর্তব্য। পানি না থাকলে তখন তায়াম্মুম করতে হবে।

-শরহুল মুনইয়া পৃ. ৮৩; আলবাহরুর রায়েক ১/১৫০; আদ্দুররুল মুখতার ১/২৪৩; আসসিআয়া ১/৫২৯

Sharable Link

আবদুল মালেক - চাঁদপুর

৫১৯২. Question

আমাকে এক হুজুর বলেছেন, ফজরের সুন্নতে সূরা কাফিরূন এবং সূরা ইখলাস পড়া সুন্নত। এ কথাটি কি সঠিক? দলীলসহ জানালে উপকৃত হব।

Answer

একাধিক বর্ণনা থেকে বোঝা যায়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন সময় ফজরের সুন্নতে প্রথম রাকাতে সূরা কাফিরূন এবং দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ইখলাস পড়েছেন। সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنّ رَسُولَ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ قَرَأَ فِي رَكْعَتَيِ الْفَجْرِ: قُلْ یٰۤاَیُّهَا الْكٰفِرُوْنَ، وَ قُلْ هُوَ اللهُ اَحَدٌ.

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের দুই রাকাত সুন্নতে- قُلْ یٰۤاَیُّهَا الْكٰفِرُوْنَقُلْ هُوَ اللهُ اَحَدٌ এ দুই সূরা পড়েছেন। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ৭২৬)

আরেক হাদীসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন-

رَمَقْتُ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ شَهْرًا فَكَانَ يَقْرَأُ فِي الرَّكْعَتَيْنِ قَبْلَ الفَجْرِ، بِـ قُلْ یٰۤاَیُّهَا الْكٰفِرُوْنَ  وَ قُلْ هُوَ اللهُ اَحَدٌ.

আমি এক মাস পর্যন্ত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে খেয়াল করে দেখেছি, তিনি ফজরের সুন্নতে قُلْ یٰۤاَیُّهَا الْكٰفِرُوْنَ قُلْ هُوَ اللّٰهُ اَحَدٌ এ দুই সূরা পড়েছেন। (জামে তিরমিযী, হাদীস ৪১৭)

উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. থেকেও অনুরূপ বর্ণনা রয়েছে। (সহীহ ইবেন খুযাইমা, হাদীস ১১১৪; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৬৩৯৫)

এ হাদীসের উপর ভিত্তি করে ফকীহগণ বলেছেন, ফজরের সুন্নতের দুই রাকাতে সূরা কাফিরূন এবং সূরা ইখলাস পড়া সুন্নত। তবে এটি সুন্নতে গায়রে মুআক্কাদাহ তথা মুস্তাহাব আমল। কেউ ভিন্ন সূরা পড়লে তাতেও কোনো সমস্যা নেই।

উল্লেখ্য, অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত আছে, তিনি অনেকসময় ফজরের সুন্নতের প্রথম রাকাতে সূরা বাকারার ১৩৬ নম্বর আয়াত এবং দ্বিতীয় রাকাতে সূরা আলে ইমরানের ৬৪ নম্বর আয়াত পড়তেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

أَكْثَرُ مَا كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ يَقْرَأُ فِي رَكْعَتَيِ الْفَجْرِ: قُوْلُوْۤا اٰمَنَّا بِاللهِ وَ مَاۤ اُنْزِلَ اِلَیْنَا وَ مَاۤ اُنْزِلَ اِلٰۤی اِبْرٰهٖمَ إِلَى آخِرِ الْآيَةِ. وَفِي الْأُخْرَى: قُلْ یٰۤاَهْلَ الْكِتٰبِ تَعَالَوْا اِلٰی كَلِمَةٍ سَوَآءٍۭ بَیْنَنَا وَ بَیْنَكُمْ إِلَى قَوْلِهِ: اشْهَدُوْا بِاَنَّا مُسْلِمُوْنَ.

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বেশির ভাগ সময় ফজরের সুন্নতের প্রথম রাকাতে قُوْلُوْۤا اٰمَنَّا بِاللهِ وَ مَاۤ اُنْزِلَ اِلَیْنَا وَ مَاۤ اُنْزِلَ اِلٰۤی اِبْرٰهٖمَ এ আয়াতটি শেষ পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় রাকাতে قُلْ یٰۤاَهْلَ الْكِتٰبِ تَعَالَوْا اِلٰی كَلِمَةٍ سَوَآءٍۭ بَیْنَنَا وَ بَیْنَكُمْ আয়াতটি اشْهَدُوْا بِاَنَّا مُسْلِمُوْنَ পর্যন্ত তিলাওয়াত করতেন। (সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস ১১১৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৭২৭)

অতএব ফজরের সুন্নত নামাযে মাঝে মাঝে এই দুই আয়াত পড়াও উত্তম।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৬১; ফাতহুল কাদীর ১/২৯৪; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৪২, ২/৪৮; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী পৃ. ৩৮৮; রদ্দুল মুহতার ১/৫৪৪, ২/২০

Sharable Link

সাইদ আহমাদ - আজিমপুর, ঢাকা

৫১৯৩. Question

গত ঈদের নামায পড়তে ঈদগাহে গিয়েছিলাম। অনেক মানুষ হয়েছিল। ইমাম সাহেবের বয়ানের পর নামায শুরু হওয়ার আগ মুহূর্তে আমার ওযু ভেঙে যায়। আমি ঈদগাহে মাঠের মধ্যখানে ছিলাম। তো মনে হল যে, এখন যদি ওযু করতে যাই তাহলে নামায হয়তো আর পাব না। কী করব তা ভেবে পাচ্ছিলাম না। তাই আমি নামাযের নিয়ত ছাড়া সবার সাথে এমনি রুকু সিজদা করি। প্রশ্ন হল, আমার এ কাজটি কি ঠিক হয়েছে? এমন অবস্থায় আমার করণীয় কী?

Answer

ঈদের জামাত শুরু হওয়ার পর অথবা জামাতের আগ মুহূর্তে যদি কেউ এমন অবস্থায় পড়ে যে, এখন ওযু করতে গেলে পুরো নামায ছুটে যাওয়ার আশংকা থাকে এবং পরে অন্য কোনো ঈদের জামাতে শরীক হওয়াও সম্ভব না হয়। তাহলে ঐ ব্যক্তি তায়াম্মুম করে নামায পড়ে নেবে। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার জন্য এমনটি না করে নিয়ত ছাড়া এমনি রুকু সিজদা করা ভুল হয়েছে। এবং ঈদের নামায না পড়ার গোনাহ হয়েছে। এজন্য আল্লাহ তাআলার কাছে ইস্তেগফার করবেন।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৫৯১৯; কিতাবুল আছল ১/৯৭; বাদায়েউস সানায়ে ১/১৭৮; আলবাহরুর রায়েক ১/১৫৮; হালবাতুল মুজাল্লী ১/২৫৩; আলইখতিয়ার ১/৮৬; মাজমাউল আনহুর ১/৬৩১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩১

Sharable Link

ইকবাল হোসেন - মতলব, চাঁদপুর

৫১৯৪. Question

আমরা কয়েকজন সহকর্মী একবার সফরে ছিলাম। দীর্ঘ যাত্রার কারণে জুমার নামায জামাতের সাথে পড়তে পারিনি। পরবর্তীতে আমরা গাড়ি থেকে নেমে এক মসজিদের বারান্দায় যোহরের নামায জামাতের সাথে আদায় করি। আমাদের এক সাথী বললেন, এমতাবস্থায় যোহরের নামায একাকী পড়তে হয়। জানার বিষয় হচ্ছে, আমাদের যোহরের নামায পড়া কি সহীহ হয়েছে?

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যোহরের নামায আদায় হয়ে গেছে। তা পুনরায় পড়তে হবে না। যেখানে জুমা আদায় করা হয় এমন এলাকায় জুমার আগে-পরে জামাত করে যোহর পড়া ঠিক নয়। এক্ষেত্রে আযান ছাড়া একাকী যোহর পড়াই নিয়ম।

عَنِ الْحَسَنِ فِي قَوْمٍ فَاتَتْهُمَ الْجُمُعَةُ، قَالَ: يُصَلّونَ شَتّى.

হাসান বসরী রাহ. বলেন, যারা জুমার নামায জামাতের সাথে আদায় করতে পারেনি তারা তা একাকী আদায় করবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৫৪৪০)

-কিতাবুল আছল ১/৩১৪; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৪৭২; আলহাবিল কুদসী ১/২৪০; ফাতহুল কাদীর ২/৩৫; আলবাহরুর রায়েক ২/১৫৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৫৭

Sharable Link

উম্মে আবদুর রহমান - বসিলা, ঢাকা

৫১৯৫. Question

আল্লাহর রহমতে আমার মেয়ে এ বছর হিফয শেষ করেছে। আমরা ঘরের মহিলারা এবং ওর কয়েকজন চাচি নিয়ত করেছে, আমার মেয়ের পেছনে খতম তারাবীহ পড়বে। যাতে ওর হিফ্জ মজবুত হয়ে যায় এবং আমাদেরও খতম হয়ে যায়। কিন্তু আমার এক ভাশুর বলেছেন, মহিলাদের পেছনে তারাবীহ পড়া যায় না। এ বিষয়ে সঠিক মাসআলাটি জানালে উপকৃত হতাম।

Answer

মহিলার ইমামতি মাকরূহে তাহরীমী তথা নাজায়েয। তারাবীর নামাযের জামাতেরও একই হুকুম। মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বার এক বর্ণনায় এসেছে, হযরত আলী রা. বলেন-

لاَ تَؤُمّ الْمَرْأَةُ.

কোনো মহিলা যেন ইমামতি না করে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, বর্ণনা ৪৯৯৪)

অন্য এক বর্ণনায় এসেছে ইবনে আউন রাহ. বলেন-

كَتَبْتُ إلَى نَافِعٍ أَسْأَلُهُ، أَتَؤُمّ الْمَرْأَةُ النِّسَاءَ؟ فَقَالَ : لاَ أَعْلَمُ الْمَرْأَةَ تَؤُمّ النِّسَاءَ.

আমি নাফে রাহ.-কে পত্রলিখে জিজ্ঞেস করলাম- কোনো মহিলা কি অন্য মহিলাদের ইমামতি করতে পারবে? (উত্তরে) নাফে রাহ. বললেন, ‘আমার জানামতে কোনো মহিলা অন্য মহিলাদের ইমামতি করতে পারবে না। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, বর্ণনা ৪৯৯৫)

তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার মেয়ের ইমামতিতে ঐ তারাবীহের জামাতের আয়োজন করা ঠিক হবে না।

প্রকাশ থাকে যে, হাফেযা মহিলা কুরআনুল কারীম ইয়াদ রাখার জন্য নিয়মিত তিলাওয়াত করবে, অন্য হাফেযার সাথে দাওর করবে এবং তারাবীতে একাকী খতম করবে।

-কিতাবুল আছার, ইমাম মুহাম্মাদ, বর্ণনা ২১৭; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৩৪৮; ফাতহুল কাদীর ১/৩০৬; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৮৭; আলইখতিয়ার ১/২১০; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৫১; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৬৫

Sharable Link

আলবাব আহমদ - সিলেট

৫১৯৬. Question

একদিন যোহরের নামাযের সময় প্রথম রাকাতের দ্বিতীয় সিজদাটি ভুলে যাই। তৃতীয় রাকাতের সিজদা আদায় করার পর স্মরণ হলে সাথে সাথে ভুলে যাওয়া সিজদাটি আদায় করে নিই। প্রশ্ন হচ্ছে, এরপর কি এ ভুলের কারণে আমার উপর সিজদায়ে সাহু করা জরুরি ছিল?

Answer

হাঁ, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার জন্য সিজদায়ে সাহু করা জরুরি ছিল। কেননা এক্ষেত্রে আপনি সিজদাটি আদায় করলেও তা বিলম্বে আদায় করেছেন। আর এমন বিলম্বের কারণে সিজদায়ে সাহু করা ওয়াজিব।

-কিতাবুল আছল ১/২০৬; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪০১; আলবাহরুর রায়েক ২/৯৪; ফাতহুল কাদীর ১/৪৩৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২৭

Sharable Link

শাহজাদ পারভেজ - সিলেট

৫১৯৭. Question

কোনো কোনো লোককে দেখা যায় যে, চোখ বন্ধ করে নামায পড়ে। জিজ্ঞেস করলে বলে যে, এর দ্বারা নামাযে মন বসে, একাগ্রতা তৈরি হয়। এমন করা কি ঠিক?

Answer

নামাযে প্রয়োজন ছাড়া চোখ বন্ধ রাখা মাকরূহ তানযিহী। অবশ্য বিশেষ ক্ষেত্রে বা প্রয়োজনে অসুবিধা নেই। যেমন, ব্যথার কারণে চোখ খুলতে না পারা কিংবা একাগ্রতা বিনষ্টকারী কোনো কিছু নামাযীর সামনে চলে আসার কারণে এমনটি করলে মাকরূহ হবে না। তবে নামাযে চোখ বন্ধ রাখার অভ্যাস করে নেওয়া ঠিক নয়।

-বাদায়েউস সানায়ে ১/৫০৭; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ১/৩১০; আলইখতিয়ার ১/২১৫; আলবাহরুর রায়েক ২/২৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১৯৯; রদ্দুল মুহতার ১/৬৪৫

Sharable Link

মিসবাহুল ইসলাম - ঢালকানগর, গেণ্ডারিয়া, ঢাকা

৫১৯৮. Question

শীতকালে আমাদের এলাকায় কোনো কোনো যুবক এমন কাপড় পরিধান করে, যাতে বিভিন্ন প্রাণীর ছবি থাকে। কখনো কখনো এ ধরনের কাপড় নিয়ে তারা নামাযও পড়ে। প্রশ্ন হচ্ছে, এ কারণে নামাযের কোনো সমস্যা হবে কি না?

Answer

প্রাণীর স্পষ্ট ছবি, যা দৃশ্যমান- এমন কাপড় পরিধান করা মাকরূহ। এবং এ ধরনের কাপড় পরে নামায পড়াও মাকরূহ। এ থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক। তবে এমন কাপড় পরে নামায পড়া মাকরূহ হলেও নামায আদায় হয়ে যাবে। তা পুনরায় পড়তে হবে না।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৫৮; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ১/৩১২; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৩৯; আলহাবিল কুদসী ১/২০৯; হালবাতুল মুজাল্লী ২/২৯৬; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭

Sharable Link

আব্দুল্লাহ বিন ইসমাঈল - চতুল, কানাইঘাট, সিলেট

৫১৯৯. Question

আজ যোহরের নামাযের পর এক মুরব্বী আমাকে ডেকে বললেন, সিজদায় তোমার পা জমিন থেকে উঠে যায়। এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। কেননা দুই পা জমিন থেকে উঠে গেলে তো নামাযই হবে না। বিষয়টি আমার পুরোপুরি বুঝে আসেনি। কেননা এ বিষয়ে আমি ভিন্ন মন্তব্যও শুনেছি। সঠিক মাসআলা দলীলসহ বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব?

Answer

সিজদার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দুই পা জমিনে রাখা সুন্নতে মুআক্কাদা। আর সিজদার অধিকাংশ সময় ওযর ছাড়া দুই পা বা কোনো এক পা জমিন থেকে পৃথক রাখা মাকরূহে তাহরীমী। অবশ্য পা যদি অল্প সময়ের জন্যও জমিনে রাখে তাহলে নামায আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু পুরো সিজদার মধ্যে কোনো পায়ের সামান্য অংশও যদি একেবারেই জমিনে না লাগে তাহলে নামায হবে না।

-সহীহ বুখারী, হাদীস ৮১০; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১২৩; আততাজনীস ওয়াল মাযীদ ১/৪৪৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৫৫; আলবেনায়া শরহুল হেদায়া ২/২৭৫; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৭১; আলবাহরুর রায়েক ১/৩১৮; রদ্দুল মুহতার ১/৪৪৭, ৪৯৯; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ২৮৪

Sharable Link

রহমাতুল্লাহ - সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ

৫২০০. Question

একদিন মাদরাসার দফতরে একাকী ফযরের নামায পড়ছিলাম। সেখানে দুজন ছাত্র এসে আমার ইকতেদা করতঃ আমার সাথে নামাযে শরীক হয়ে যায়। আমি একাকী নামায আদায়কারী ব্যক্তি যেভাবে নামায পড়ে সেভাবেই নামায শেষ করি। নামায শেষে এদের একজন বলল, আপনার জন্য উচ্চ স্বরে কিরাত পড়া জরুরি ছিল। প্রশ্ন হল, এক্ষেত্রে সঠিক নিয়মটা কী? কেউ যদি উঁচু আওয়াজে না পড়ে, তাহলে কি তার নামায হবে?

Answer

একাকী নামায আদায়কারী ব্যক্তির পেছনে কেউ যদি ইকতেদা করে আর সে ঐ ব্যক্তির ইমামতির নিয়ত করে তাহলে তার উপর ইমামের বিধান আরোপিত হবে। অর্থাৎ উচ্চ স্বরে কিরাত বিশিষ্ট নামাযে জোরে কিরাত পড়া আবশ্যক হবে। এক্ষেত্রে কিরাত অবস্থায় কেউ শরীক হলে বাকি কিরাত তাকে উচ্চ স্বরেই পড়তে হবে। আর যদি একাকী নামায আদায়কারী ব্যক্তি শরীক হওয়া লোকটির ইমামতির নিয়ত না করে তাহলে তার উপর উচ্চ স্বরে কিরাত পড়া আবশ্যক হবে না। এক্ষেত্রে নি¤œ স্বরে কিরাত পড়লেও সকলের নামায সহীহ হয়ে যাবে। অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যদি ঐ ছাত্রদের ইমামতির নিয়ত করে থাকেন তাহলে আপনার উপর উচ্চ স্বরে কিরাত পড়া আবশ্যক ছিল। তা না করার কারণে সিজাদায়ে সাহু ওয়াজিব হয়েছিল। আর যদি ইমামতির নিয়ত না করে থাকেন তাহলে নি¤œ স্বরে কিরাত পড়ার দ্বারাও নামায সহীহ হয়ে গিয়েছে।

-শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৬১৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৭২; রদ্দুল মুহতার ১/৫৩২; জামেউর রুমূয ১/১৬৪

Sharable Link

কামরান আহমদ - বাইতুন নূর মাদরাসা, ঢাকা

৫২০১. Question

অনেকসময় নামাযে মাথা থেকে টুপি পড়ে যায়। এক্ষেত্রে করণীয় কী?

Answer

নামাযে টুপি পড়ে গেলে যদি এক হাত দ্বারা তা উঠিয়ে পরে নেওয়া সম্ভব হয় তাহলে টুপি উঠিয়ে পরে নেওয়াই উত্তম। আর যদি দুই হাত ব্যবহার করা ছাড়া উঠানো সম্ভব না হয় তাহলে সেক্ষেত্রে টুপি না উঠানোই উচিত। এতে নামাযের কোনো ক্ষতি হবে না।

প্রকাশ থাকে যে, দাঁড়ানো কিংবা রুকু অবস্থায় টুপি পড়ে গেলে তা উঠানোর চেষ্টা করবে না। আর সিজদা বা বৈঠকের সময় এমনটি হলে উপরোক্ত পন্থায় উঠিয়ে পরে নিবে।

-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/২০৩; শরহুল মুনইয়া পৃ. ৪৪২; দুরারুল হুক্কাম ১/১১১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১০২; রদ্দুল মুহতার ১/৬২৫

Sharable Link

আলি আসগর - না. গঞ্জ

৫২০২. Question

নামাযের মধ্যে সিজদার আয়াত পাঠের পর ভুলে যথাসময়ে সিজদা আদায় না করলে কী করণীয়? একজন হাফেজ সাহেব বললেন যে, নামায শেষ হওয়ার আগে যদি স্মরণ হয়ে যায় তাহলে তা আদায় করে নিবে এবং পরে সাহু সিজদা করবে। তার কথাটি কি ঠিক?

Answer

হাঁ, হাফেজ সাহেবের কথাটি সঠিক। নামাযে সিজদার আয়াত পাঠের পর ভুলে যথাসময়ে সিজদা আদায় না করার পর যদি নামাযের মধ্যেই বিষয়টি স্মরণ হয় তাহলে উত্তম হলো, স্মরণ হওয়ার সাথে সাথে সিজদাটি আদায় করে নিবে। এবং বিলম্বে সিজদা দেওয়ার কারণে নামায শেষে সাহু সিজদা করবে।

-কিতাবুল আছল ১/২০৫; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪০২; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৩৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৭৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২৬

Sharable Link

যাকির হুসাইন - রমনা, ঢাকা

৫২০৩. Question

নামাযের মধ্যে যদি কারো হাই আসে তবে সে কী করবে? নিজের হাত মুখের উপর রাখা কি যথেষ্ট? নাকি হাই আটকানোরও চেষ্টা করতে হবে? গতদিন জুমআর বয়ানে খতীব সাহেব বললেন যে, হাই আসার পর আটকানো সম্ভব হওয়া সত্তে¡ও কেউ যদি মুখের উপর হাত রাখে তাহলে সেটা মাকরূহ হবে। তার কথাটি কি সহীহ?

Answer

হাঁ, প্রশ্নোক্ত কথাটি সহীহ। নামাযে কারো হাই আসলে যথাসম্ভব তা আটকানোর চেষ্টা করবে। হযরত আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

فَإِذَا تَثَاءَبَ أَحَدُكُمْ فَلْيَرُدّهُ مَا اسْتَطَاعَ.

কারো হাই আসলে সে যেন তা যথাসম্ভব আটকানোর চেষ্টা করে। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৬২২৬)

অবশ্য যদি আটকানো কষ্টকর হয় তাহলে হাত মুখের উপর রেখে দেবে। যতক্ষণ পর্যন্ত হাই আটকানো সম্ভব হয় ততক্ষণ হাত ব্যবহার করবে না।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৫৭; হালবাতুল মুজাল্লী ২/২৩১; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ১/৩১৪; আলবাহরুর রায়েক ২/৫২; আলইখতিয়ার ১/২১৫; হালবাতুল মুজাল্লী ২/২৩১; রদ্দুল মুহতার ১/৬৪৫

Sharable Link

আবদুল হাসীব - চাঁদপুর

৫২০৪. Question

দুই দিন আগে মসজিদে আছরের চার রাকআত সুন্নত পড়ছিলাম। ইত্যবসরে জামাত দাঁড়িয়ে গেলে দুই রাকাতের পর সালাম ফিরিয়ে জামাতে শরীক হয়ে যাই। প্রশ্ন হচ্ছে, এখন কি আমাকে অবশিষ্ট দুই রাকাত কাযা করত হবে? কেননা আমি তো চার রাকাতের নিয়তে দাঁড়িয়ে দুই রাকাত পড়েছি?

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে অবশিষ্ট দুই রাকাতের কাযা জরুরি নয়। কেননা সুন্নত ও নফল নামাযের ক্ষেত্রে চার রাকাতের নিয়তে নামায শুরু করলেও শুধু প্রথম দুই রাকাতই ওয়াজিব হয়। তৃতীয় রাকাত শুরু করার আগ পর্যন্ত অবশিষ্ট দুই রাকাত ওয়াজিব হয় না।

-কিতাবুল আছল ১/১৩৪; বাদায়েউস সানায়ে ২/৭; আলমুহীতুল বুরহানী ২/২১৯; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৪৩৫; মাজমাউল আনহুর ১/১৯৮

Sharable Link

আব্দুস সালাম - চরফ্যাশন, ভোলা

৫২০৫. Question

আমি মোবাইলে কথা বলছিলাম। এর মধ্যে আযান শুরু হয়ে যায়। কথা বলা শেষ না হওয়াতে আযানের জবাব দিতে পারিনি। প্রশ্ন হল, কোনো কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে যদি আযান চলাকালীন আযানের জবাব দেয়ার সুযোগ না হয় তাহলে কি আযান শেষ হওয়ার পর জবাব দেওয়া যাবে?

Answer

হাঁ, আযানের পর খুব বেশি বিলম্ব না হলে জবাব দেওয়ার অবকাশ আছে।

-আলবাহরুর রায়েক ১/২৬০; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩৯৭; তুহফাতুল মুহতাজ ২/১১০

Sharable Link

আতহার আলী - সিলেট

৫২০৬. Question

আমি মসজিদের মুআযযিন। গত রমযানের শেষ দশকে মসজিদে ইতিকাফ করেছিলাম। ইতিকাফের সময়ও আমাকে আযান দিতে হত। আযান দেওয়ার স্থানটি মসজিদের একটু বাইরে একটা রুমে। মসজিদ থেকে একটু বের হয়ে সেখানে যেতে হয়। এক ভাই আমার এ অবস্থা দেখে বললেন, আমার মসজিদ থেকে বের হয়ে সেখানে গিয়ে আযান দেওয়া বৈধ হয়নি।

হুযুরের নিকট জানতে চাচ্ছি, আমার জন্য মসজিদের বাইরে কামরায় গিয়ে আযান দেওয়া বৈধ হয়েছে কি না? আমার ইতিকাফ কি নষ্ট হয়ে গেছে?

Answer

প্রশ্নোক্ত ব্যক্তির কথা ঠিক নয়। আযানের জন্য বাইরে আযানস্থলে যাওয়ার দ্বারা আপনার ইতিকাফ নষ্ট হয়নি। কারণ ইতিকাফ অবস্থায় আযানের জন্য মসজিদের বাইরে যাওয়ার অনুমতি আছে।

-কিতাবুল আছল ২/১৯১; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ২/৪৭৫; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ১/২৪৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৬৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১২

Sharable Link

মুহাম্মাদ কামরুজ্জামান - কেরাণীগঞ্জ, ঢাকা

৫২০৭. Question

¤প্রতি করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া দেশের নাগরিকদের প্রবেশ ঠেকাতে হঠাৎ করেই ওমরাহ ভিসা স্থগিত করেছে সৌদি আরব। এতে বিভিন্ন দেশের অনেক উমরা ইচ্ছুক ব্যক্তি উমরা আদায় করতে পারছেন না। এদের মধ্যে কিছু ব্যক্তি উমরার ইহরাম বেঁধে ফেলার পর স্থগিতাদেশের সংবাদ জানতে পারেন। আমার জানামতে এমন ব্যক্তিগণ কারো মাধ্যমে হেরেম এলাকার ভেতর একটি দম জবাই করে ইহরাম থেকে মুক্ত হবেন এবং পরবর্তীতে উমরাটি কাযা করে নেবেন। কিন্তু জনৈক আলেম বলছেন, এক্ষেত্রে দম না দিয়ে রোযা রাখারও সুযোগ আছে। আমার জানার বিষয় হচ্ছে, তার বক্তব্য সঠিক কি না এবং উল্লেখিত অবস্থায় দম না দিয়ে সদকা করা বা রোযা রাখার মাধ্যমে ইহরাম থেকে মুক্ত হওয়ার সুযোগ আছে কি না? জানিয়ে উপকৃত করবেন।

Answer

প্রশ্নোক্ত আলেমের উক্ত বক্তব্য সঠিক নয়। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উমরার ইহরাম থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য হেরেমের এলাকাতে একটি দম জবাই করা আবশ্যক।  এক্ষেত্রে রোযা রাখা বা সদকা করার মাধ্যমে ইহরাম থেকে মুক্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আর পরবর্তীতে সুযোগ মতো উমরাটির কাযা করে নিতে হবে।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১৪৩৭১-২; মুখতাসারু ইখতিলাফিল উলামা ২/১৯৪; আলমাবসূত, সারাখসী ৪/১১৩; তুহফাতুল ফুকাহা ১/৪১৭; বাদায়েউস সানায়ে ২/৩৯৯; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৩০৬; আলবাহরুর রায়েক ৩/৫৪; মানাসিক, মোল্লা আলী আলকারী, পৃ. ৪২১

Sharable Link

মাহমুদ আমিন - রাজাপুর, লক্ষীপুর

৫২০৮. Question

আমার নানাজানের উপর আগ থেকে হজ¦ ফরয ছিল। তিনি হজে¦ যাবেন যাবেন করতে করতে দেরী হয়ে যায়। এর মাঝে হঠাৎ করে তিনি প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। যার দরুন তিনি হাঁটতে পারছিলেন না। নানা চাচ্ছেন তাড়াতাড়ি তার হজ¦টা যেন আদায় করা হয়। তাই এক ব্যক্তিকে তার পক্ষ থেকে বদলি হজ¦ করার জন্য পাঠান। সে নানাজানের পক্ষ থেকে হজ¦ আদায় করে আসে। এর প্রায় বছর খানেক পর আল্লাহর রহমতে নানা প্রায় পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেন। এখন তিনি একা একা চলা-ফেরা করতে সক্ষম। জানার বিষয় হল, নানা সুস্থ হওয়ার পর কি ঐ হজ¦ যথেষ্ট হবে, নাকি আবার করা লাগবে? তিনি চাচ্ছেন, আবার নিজে গিয়ে হজ¦ করবেন। এটা কি তার ফরয হিসেবে গণ্য হবে না নফল হিসেবে?

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার নানা যদি শারীরিক ও আর্থিকভাবে হজ¦ আদায় করতে সামর্থ্যবান হয়ে থাকেন তবে তিনি নিজে গিয়ে হজ¦ আদায় করবেন। এক্ষেত্রে তার পক্ষ থেকে আদায়কৃত হজ¦টি নফল বলে গণ্য হবে এবং বর্তমান হজ¦টি ফরয গণ্য হবে।

-শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ২/৪৮১; আলমাবসূত, সারাখসী ৪/১৫২; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ১/২৮৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৬৪৮; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ১/৪৯২

Sharable Link

মুহাম্মদ রাহাত করীম - চাটখিল, নোয়াখালী

৫২০৯. Question

পাঁচ বছর আগে আব্বুর সাথে ওমরা করার তৌফিক হয়। সেটা ছিল আমাদের প্রথম ওমরা। আমরা যখন তাওয়াফ ও সায়ী শেষ করে ইহরাম থেকে বের হওয়ার জন্য চুল কাটবো। তখন একটা বিষয় নিয়ে আমাদের মাঝে সংশয় দেখা দেয়। বিষয়টি হল, আমরা দুজনই তো ইহরাম অবস্থায় আছি। আর শুনেছি যে, এক মুহরিম আরেক মুহরিমের চুল কাটলে দম দিতে হয়। এজন্য  আব্বু মারওয়াতে এক ব্যক্তিকে, যে আগেই হালাল হয়ে গিয়েছিল অনুরোধ করলে সে কাঁচি দ্বারা আমাদের উভয়ের অল্প কিছু চুল কেটে দেয়। পরে আমরা হোটেলে এসে পূর্ণ মাথার চুল কাটি। প্রশ্ন হল, আমাদের এভাবে হালাল হওয়া সহীহ হয়েছে কি না? অল্পস্বল্প চুল কাটার দ্বারাও কি হালাল হওয়া যায়?

Answer

হজ¦ বা উমরা আদায়কারী হলকের আগ পর্যন্ত সকল কাজ আদায় করার পর নিজে হলক করার আগে অন্যের চুল কেটে দিতে পারবে। এর দ্বারা তার উপর কোনো ধরনের জরিমানা আসবে না। আর যদি মাথা মুণ্ডানো ছাড়া অন্য কাজ বাকি থাকে আর এ অবস্থায় অন্য কোনো ইহরামকারীর চুল কেটে দেয় তাহলে মুÐনকারীর উপর এক ফিতরা সমপরিমাণ সদকা করা ওয়াজিব। আর যার মাথা মুণ্ডানো হয়েছে তার কোনো আমল বাকি থাকলে তার উপর একটি দম ওয়াজিব।

লক্ষণীয় যে, মারওয়াতে অল্প চুল কাটার দ্বারা আপনারা ইহরাম থেকে হালাল হননি। পরে হোটেলে গিয়ে পূর্ণ মাথার চুল কাটার দ্বারাই হালাল হয়েছেন। কেননা চুল কাটা বা মাথা মুণ্ডানোর ক্ষেত্রে কমপক্ষে মাথার এক চতুর্থাংশের চুল কাটা বা মুণ্ডানো জরুরি। এর চেয়ে কম মুণ্ডালে বা চুল কাটলে হালাল হওয়া যায় না। চুল কাটার ক্ষেত্রে তা চুলের অগ্রভাগ থেকে আঙ্গুলের এক কর পরিমাণ হওয়া জরুরি। এর চেয়ে কম পরিমাণ চুল কাটা হলে ইহরাম থেকে হালাল হবে না।

প্রকাশ থাকে যে, চুল ছোট করার চেয়ে মাথা মুণ্ডানো উত্তম। আর উভয় ক্ষেত্রেই আংশিক চুল না কেটে পূর্ণ মাথা মুণ্ডানো বা পূর্ণ মাথার চুল ছোট করাই নিয়ম।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১৬১৩৯; মানাসিক, মোল্লা আলী আলকারী, পৃ. ২৩০; গুনয়াতুন নাসিক, পৃ. ১৭৩, ২৫৮; আলমাসালিক ফিল মানাসিক ১/৫৭৭

Sharable Link

তাইয়িব হাসান - ভালুকা, ময়মনসিংহ

৫২১০. Question

আমরা এক ভাই এক বোন। আমার এক মেয়ে জন্মগ্রহণ করেছে। তার বয়স বর্তমানে এক বছর। আর আমার বোনের এক ছেলে। তার বয়স ৫ বছর। আমাদের পরিবারে আমার মেয়ের জন্য যেহেতু আমার দুলাভাই এবং ভাগ্নেই গাইরে মাহরাম তাই আমরা চিন্তা করছি, আমার বোন যদি আমার মেয়ের দুধ মা হয়ে যায় তাহলে তার জন্য আর পর্দা করতে হবে না। কিন্তু আমার বোনের এখন কোন দুধের বাচ্চা নেই। আমার মেয়েকে আমার বোন দুধ পান করাতে হলে ওষুধ খেতে হবে। এভাবে ওষুধ খাওয়ার পর যদি বুকে দুধ আসে এবং আমার মেয়েকে তা খাওয়ায় তবে আমার দুলাভাই কি আমার মেয়ের দুধপিতা এবং আমার ভাগ্নে আমার মেয়ের দুধভাই বলে গণ্য হবে? মাসআলাটির সঠিক সমাধান জানিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন। আল্লাহ তাআলা আপনাদের উত্তম প্রতিদান দান করুন।

Answer

ওষুধ খেয়ে দুধ আসলেও সে দুধ আপনার মেয়েকে খাওয়ালে আপনার বোন আপনার মেয়ের দুধমা হয়ে যাবেন এবং এই বোনের ছেলেও আপনার মেয়ের দুধভাই হয়ে যাবে। কিন্তু এই দুধ খাওয়ানোর দ্বারা আপনার দুলাভাই আপনার মেয়ের দুধপিতা বলে গণ্য হবে না। কেননা কোনো ব্যক্তি দুধপিতা কেবল তখনই হবে যখন তার থেকে সন্তান হওয়ার কারণে দুধ হয়। অবশ্য আপন মায়ের স্বামী যেমন নিজের পিতা না হলেও মাহরামের অন্তর্ভুক্ত তেমনিভাবে দুধ মার স্বামী দুধ পিতা না হলেও মাহরামের অন্তর্ভুক্ত। কুরআন মাজীদে সূরা নিসার ২৩ ও ২৪ নম্বর আয়াতে যে চৌদ্দ শ্রেণীর মহিলার সাথে বিবাহ হারাম ঘোষণা করা হয়েছে এর এক প্রকার হল-

وَ رَبَآىِٕبُكُمُ الّٰتِیْ فِیْ حُجُوْرِكُمْ مِّنْ نِّسَآىِٕكُمُ الّٰتِیْ دَخَلْتُمْ بِهِنَّ.

অর্থাৎ এমন স্ত্রীর কন্যা, যেই স্ত্রীর সাথে সহবাস হয়েছে। [সূরা নিসা (৪) : ২৩]

এখানে স্ত্রীর কন্যাএর মাঝে স্ত্রীর আপন মেয়ে যেমন রয়েছে তেমনিভাবে স্ত্রীর দুধ মেয়েও এর অন্তর্ভুক্ত। উক্ত আয়াতের তাফসীরে ইমাম বাগাবী রাহ. বলেন-

وَيَحْرُمُ عَلَيْهِ أَيْضًا بَنَاتُ الْمَنْكُوحَةِ وَبَنَاتُ أَوْلَادِهَا، وَإِنْ سَفَلْنَ مِنَ الرّضَاعِ وَالنّسَبِ بَعْدَ الدّخُولِ بِالْمَنْكُوحَةِ.

অর্থাৎ নিজের স্ত্রীর মেয়ে যেমন তার জন্য হারাম তেমনি স্ত্রীর মেয়ের মেয়ে এবং তার অধস্তন সকল মেয়েরাও তার জন্য হারাম। চাই সে তার স্ত্রীর দুধ মেয়ে হোক বা আপন মেয়ে। সবাই তার জন্য হারাম। (তাফসীরে বাগাবী-মাআলিমুত তানযীল ১/৫৯৩)

অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার বোন আপনার মেয়েকে এভাবে দুধ পান করালে এর দ্বারা আপনার দুলাভাই আপনার মেয়ের দুধপিতা না হলেও নিজের স্ত্রীর দুধ মেয়ে হিসেবে সে তার মাহরাম হয়ে যাবে। তবে এর দ্বারা আপনার দুলাভাইয়ের অন্য কোনো আত্মীয় (যেমন, দুলাভায়ের পিতা, ভাই) আপনার মেয়ের মাহরাম সাব্যস্ত হবে না।

-কিতাবুল আছল ৪/৩৬৯; আলমুহীতুল বুরহানী ৪/৯৭; ফাতহুল কাদীর ৩/৩১৩, ৩১৪; আলবাহরুর রায়েক ৩/২২৬, ৩/২২৫-৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৪৩; রদ্দুল মুহতার ৩/২২১; আলজাওহারাতুন নাইয়িরা ২/২৭; দুরারুল হুক্কাম শরহু গুরারিল আহকাম ১/৩৫৬

Sharable Link

আদনান - ময়মনসিংহ

৫২১১. Question

১. সবিনয় নিবেদন এই যে, আমি স্ত্রীর উপর রাগ করে ঠাণ্ডা মাথায় একবার একথা বলি, ‘আমার ছোট ছেলের ২ বছর পূর্ণ হওয়ার সাথে সাথে তুমি তালাক। একথা আমি একা একা বলি শব্দ করে। আবার প্রচÐ রাগের মাথায় একা একা শব্দ করেও ঐ জাতীয় কথা আলাদা আলাদা দিনে কয়েকদিন বলি।

অতএব হুজুর সমীপে নিবেদন উপরিউক্ত কথাগুলোর ভিত্তিতে ফতোয়া জানিয়ে বাধিত করবেন।

২. আমার এবং আমার স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া লেগে থাকে। ঝগড়ার পর্যায়ে আমি আমার স্ত্রীকে এ কথা বলি-বেশি চিল্লাবা না; আর বেশি চিল্লাইলে তুমি আমার বউ থাকবা না।এ কথার পরও সে অনেক চিল্লিয়েছে। ঐ কথা বলার সময় দিলের নিয়ত কী ছিল তা বুঝতে পারছি না। অতএব, উপরিউক্ত কথার ভিত্তিতে মেহেরবানী করে ফতোয়া জানালে বাধিত থাকব।

Answer

১. আপনি যেহেতু আপনার স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করেই ঐ বাক্যটি (আমার ছোট ছেলের দুই বছর পূর্ণ হওয়ার সাথে সাথে তুমি তালাক) বলেছেন, তাই যেদিন আপনার ছোট ছেলের দুই বছর পূর্ণ হবে, সেদিন আপনার স্ত্রীর উপর এক তালাকে রাজয়ী পতিত হবে।

উল্লেখ্য, আপনার মৌখিক বর্ণনা অনুযায়ী আপনি প্রচÐ মানসিক চাপের কারণে ঐ বাক্যটি পরবর্তীতে বারবার উচ্চারণ করছিলেন এবং তা বলার সময় নতুন করে শর্তযুক্ত তালাক প্রদানের নিয়ত আপনার ছিল না। যদি কথাগুলো সঠিক হয় তবে ঐ বাক্যগুলো দ্বারা নতুন করে কোনো তালাক পতিত হবে না।

আরো উল্লেখ্য, তালাকে রাজয়ীর পর ইদ্দত শেষ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত (ঋতুমতী হলে পূর্ণ তিন ঋতু, আর অন্তঃসত্ত্বা হলে সন্তান ভমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত) আপনি চাইলে স্ত্রীকে পুনরায় গ্রহণ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে নতুন করে বিবাহ করতে হবে না।

আর আপনার মৌখিক বর্ণনা অনুযায়ী  যেহেতু ইতিপূর্বে স্ত্রীকে আরো একটি তালাক দিয়েছিলেন, তাই এ শর্তযুক্ত তালাকটি পতিত হওয়ার পর আপনি কেবল অবশিষ্ট এক তালাকের অধিকারী থাকবেন। কোনোভাবে এ তালাকটি হয়ে গেলে আপনাদের বৈবাহিক সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে শেষ হয়ে যাবে এবং পরস্পরের জন্য আপনারা হারাম হয়ে যাবেন। তখন নতুন করে বিবাহ করার সুযোগ থাকবে না। তাই ভবিষ্যতে তালাকের বিষয়ে খুবই সতর্ক থাকতে হবে। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ১৬০৬২; কিতাবুল আছল ৪/৪৭১, ২/২৯৭; কিতাবুল আছার, ইমাম আবু ইউসুফ, বর্ণনা ৬৯৩; আলমাবসূত, সারাখসী ৮/১৫৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৬/৭৯

২.  আর বেশি চিল্লাইলে তুমি আমার বউ থাকবা নাপ্রশ্নের এ কথার কারণে আপনার স্ত্রীর উপর কোনো তালাক পতিত হয়নি। তাই আপনাদের বিবাহ যথারীতি বহাল আছে।

প্রকাশ থাকে যে, শরীয়তে তালাকের বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। যা ইচ্ছায়-অনিচ্ছায়, রাগ বা স্বাভাবিক অবস্থায় এমনকি ঠাট্টাচ্ছলে দিলেও কার্যকর হয়ে যায়। তাই সামান্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে কথায় কথায় এ ধরনের ধমক দেওয়া ঠিক নয়। কেননা একটু অসতর্ক হলে বা শব্দের সামান্য হেরফেরের কারণে এ ধরনের বাক্য দ্বারা তালাক হয়ে যাওয়ার প্রবল আশংকা থাকে। তাই ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা আবশ্যক। -কিতাবুল আছল ৪/৪৫৬; বাদায়েউস সানায়ে ৩/১৭১; আলইখতিয়ার ৩/১৮০; আলবাহরুর রায়েক ৩/৩০৫

Sharable Link

মাহমূদুল হাসান - চর বেউথা, মানিকগঞ্জ

৫২১২. Question

স্বামী-স্ত্রী পর¯পরকে দুষ্টুমি করে ভাই বোন বলে সম্বোধন করলে কোনো সমস্যা আছে কি না? যেমন, স্ত্রী যদি তার স্বামীকে এই বলে ডাকে যে, ভাই এদিকে আসেন।

Answer

স্বামী-স্ত্রী পর¯পরকে ভাই বোন বলে সম্বোধন করা নিষেধ। এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে বোন বলে সম্বোধন করলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে এভাবে সম্বোধন করতে নিষেধ করেন (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১৯৫৩১)। তাই দুষ্টুমির ছলেও এভাবে সম্বোধন করা থেকে বিরত থাকবে।

উল্লেখ্য, এভাবে বলে ফেললে এর কারণে তাদের বৈবাহিক স¤পর্কের কোনো ক্ষতি হবে না।

-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২২১০; মাআলিমুস সুনান ৩/১৩৫; ফাতহুল কাদীর ৪/৯১; আলবাহরুর রায়েক ৪/৯৮; আননাহরুল ফায়েক ২/৪৫৩; রদ্দুল মুহতার ৩/৪৭০

Sharable Link

আবু হাম্মাদ - সদর, কুষ্টিয়া

৫২১৩. Question

আমার বড় ভাই এই বলে মান্নত করেন যে, আমার চাকরি হলে তিন দিন ইতিকাফ করব। পরবর্তীতে তার চাকরি হয়, কিন্তু মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি তার মান্নতকৃত ইতিকাফ আদায় করেননি। এভাবে তিনি গত সপ্তাহে ইন্তেকাল করেন। আমাদের জানার বিষয় হল, তিনি যেন  মান্নতের দায় থেকে মুক্ত হতে পারেন- এজন্য আমরা কী করতে পারি?

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার বড় ভাইয়ের পক্ষ থেকে তিনটি সদকাতুল ফিতর বা তার সমপরিমাণ টাকা গরিব-মিসকিনকে দিয়ে দিবেন।

-কিতাবুল আছল ২/১৮৮; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৮৯; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৮৩ ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১৪

Sharable Link

আতাউর রহমান - মোহাম্মাদপুর, ঢাকা

৫২১৪. Question

আমার এক পরিচিত ব্যক্তির নগদ টাকার প্রয়োজন হওয়ায় আমি তার মালিকানাধীন একটি ফ্লোর ছয় মাস মেয়াদের জন্য ভাড়া গ্রহণ করি এবং পুনরায় তার কাছেই ভাড়া দিই। ভাড়া নেওয়া ও দেওয়ার জন্য ভিন্ন ভিন্ন দুটি চুক্তিপত্র করা হয়। প্রথম চুক্তিপত্রে ফ্লোরটি দুই লক্ষ টাকার বিনিময়ে তার কাছ থেকে ভাড়া গ্রহণ করি এবং দুই লক্ষ টাকা ভাড়া নগদ পরিশোধ করি। দ্বিতীয় চুক্তিপত্রে ফ্লোরটি তার কাছে দুই লক্ষ ত্রিশ হাজার টাকার বিনিময়ে পুনরায় ভাড়া প্রদান করি। তিনি প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা কিস্তিতে ছয় মাসে মোট ত্রিশ হাজার টাকা পরিশোধ করেন এবং ভাড়ার অবশিষ্ট দুই লক্ষ টাকা ছয় মাস পর পরিশোধ করেন। জানতে চাচ্ছি, আমাদের এ লেনদেন সহীহ হয়েছে কি না এবং এ কারবারের মাধ্যমে প্রাপ্ত অতিরিক্ত ত্রিশ হাজার টাকা আমার জন্য নেওয়া বৈধ হয়েছে কি না? জানিয়ে উপকৃত করবেন।

Answer

কোনো জিনিস ভাড়া নিয়ে তা ভাড়াদাতার কাছেই পুনরায় ভাড়া দেওয়া বৈধ নয়। তাই প্রশ্নোক্ত চুক্তি থেকে ভাড়ার নামে প্রাপ্ত অতিরিক্ত ত্রিশ হাজার টাকা সুদ বলে গণ্য হবে। এ টাকা আপনার জন্য নেওয়া জায়েয হয়নি। তা ঐ ঋণগ্রহীতাকে ফেরত দিয়ে দিবেন।

উল্লেখ্য, প্রশ্নোক্ত কারবারটি সুদী কারবারেরই একটি অপকৌশল। একথা ¯পষ্ট যে, এক্ষেত্রে বাহ্যত ভাড়া দেওয়া-নেওয়ার কথা বলা হলেও বাস্তবে ভাড়াদাতা ও গ্রহীতা কারোরই ভাড়া দেওয়া-নেওয়া উদ্দেশ্য থাকে না; বরং উভয়েরই উদ্দেশ্য থাকে ঋণ আদান-প্রদান করা। আর ঋণদাতার উদ্দেশ্য থাকে ঋণের বিনিময়ে অতিরিক্ত অর্থ ভোগ করা। তাই মুসলমানদের এ ধরনের কর্মকাÐ থেকে বিরত থাকা দরকার।

-আদ্দুররুল মুখতার ৬/৯১; শরহুল মাজাল্লাহ, আতাসী ২/৬৮৪; দুরারুল হুক্কাম শরহু মাজাল্লাতিল আহকাম ১/৬৭২

Sharable Link

আবদুল্লাহ - জাজিরা, শরীয়তপুর

৫২১৫. Question

মুহতারাম! আজকাল দেখা যায় অনেকে ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করে অর্থ-উপার্জন করে। আর তা এভাবে যে, কারো ভিডিও এর যদি ভিউআর (Viewer) বেশি হয় তখন ইউটিউব কর্তৃপক্ষ তার সাথে চুক্তি করে তার ভিডিওগুলোর সাথে বিভিন্ন কোম্পানির এ্যাড যুক্ত করে দেয় এবং এর বিনিময়ে তাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দেয়। জানার বিষয় হচ্ছে, এভাবে অর্থ-উপার্জন করা বৈধ হবে কি না?

Answer

নিজের তৈরিকৃত ভিডিও-এর সাথে বিভিন্ন কোম্পানির বিজ্ঞাপন যুক্ত করার বিনিময়ে ইউটিউব থেকে অর্থ উপার্জনের বিষয়টি নিরাপদ নয়। কারণ ইউটিউব কখন কোন্ ধরনের এবং কোন্ কোম্পানির বিজ্ঞাপন দেবে তাতে ভিডিওদাতার এখতিয়ার থাকে না বরং এসব কিছু ইউটিউব নিয়ন্ত্রণ করে। সে তার ইচ্ছা মত যে কোনো বিজ্ঞাপন দিতে পারে। অথচ বাছ-বিচার ছাড়া যে কোনো বিজ্ঞাপন যুক্ত করেই অর্থ-উপার্জন বৈধ নয়। বরং অর্থ-উপার্জন বৈধ হওয়ার বিষয়টি নির্ভর করে কিছু শর্তাবলীর উপর যার কয়েকটি নি¤œরূপ :

১. যে বিষয়ের বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে সেটি বৈধ হওয়া।

২. বিজ্ঞাপনের চিত্র শরীয়ত পরিপন্থী না হওয়া।

৩. বিজ্ঞাপন ও এর ভাষা এবং উপস্থাপনের মধ্যে কোনো ধরনের ধোঁকা বা প্রতারণার আশ্রয় না নেয়া ইত্যাদি।

আর সাধারণত যেহেতু এসব শর্তাবলী রক্ষা করা ভিডিওদাতার পক্ষে সম্ভব হয় না, তাই এ ধরনের উপার্জন থেকে বিরত থাকা উচিত।

-কিতাবুল আছল ৪/২০; বাদায়েউস সানায়ে ৪৪৬; ফিকহুন নাওয়াযিল ৩/২৮৪

Sharable Link

আলী আকবার - সখীপুর, শরীয়তপুর

৫২১৬. Question

মুহতারাম! আমার জানার বিষয় হল, আমাদের এলাকায় প্রচলিত আছে, কাউকে ঋণ দেওয়ার সময় এভাবে চুক্তি করা হয় যে, ঋণদাতা ঋণগ্রহীতাকে বলে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে আপনার কাছ থেকে ১০ মন ধান কিনলাম। ধানের মৌসুমে ধান না দিয়ে ধানের মূল্য দিয়ে দিবেন। এক্ষেত্রে তারা ধানের পরিমাণ এমনভাবে নির্ধারণ করে, যাতে ধানের মৌসুমে ঐ পরিমাণ ধানের মূল্য ঋণের টাকার থেকে বেশি হয়। এভাবে চুক্তি করা শরীয়তসম্মত কি না?

Answer

না, প্রশ্নোক্ত চুক্তিটি শরীয়তসম্মত নয়। বরং এটি ঋণ প্রদান করে অতিরিক্ত গ্রহণের একটি বাহানা মাত্র। ধানের মূল্যের নামে নিলেও তা সুদি চুক্তির অন্তর্ভুক্ত। কারণ সকলেই বোঝে যে, ধানের নামে নিলেও এটি ঋণের টাকায় মুনাফা হিসাবেই নেওয়া হচ্ছে।

উল্লেখ্য, কেউ যদি অগ্রিম মূল্য প্রদান করে পরবর্তীতে ধান নিতে চায় (ধানের মূল্য নয়) তাহলে সেটি শরীয়তের (بيع  السلم) বাইয়ে সালাম বা আগাম বিক্রির পদ্ধতিতে হতে পারে। সেক্ষেত্রে ঐ সংক্রান্ত যাবতীয় শর্তাবলী পালন করে তা করা যেতে পারে।

-আহকামুল কুরআন, জাস্সাস ১/৪৬৭; বাদায়েউস সানায়ে ৬/৫১৮; আলমুগনী ৬/৪৩৬, ১১৬

Sharable Link

আবুল কাসিম - নারায়ণগঞ্জ

৫২১৭. Question

আমি পেনশনের টাকা দিয়ে হজ¦ করতে চাচ্ছি। টাকাটা উঠানোর পর তা দিয়ে জমি বন্ধক রাখতে পারছি না, আবার গরু কিনে বর্গাও দিতে পারছি না। কারণ, উভয়টাই নাকি নাজায়েয। আমি কি সংরক্ষণের জন্য টাকাটা ব্যাংকে রাখতে পারব? যদি পারা যায় তাহলে কোন্ ধরনের হিসাবে রাখা জায়েয হবে জানালে অনেক উপকার হয়।

Answer

হাঁ, হেফাযতের উদ্দেশ্যে ব্যাংকের সুদবিহীন কারেন্ট একাউন্টে টাকা রাখা যাবে। তবে মুনাফা ভোগের উদ্দেশ্যে সেভিংস কিংবা ফিক্স-ডিপোজিট ইত্যাদি একাউন্ট খোলা এবং তা থেকে মুনাফা ভোগ করা যাবে না। আর কোনো কারণে যদি কারেন্ট একাউন্ট খোলা সম্ভব না হয় এবং সেভিংস একাউন্ট খুলতে বাধ্য হয় তাহলে সেক্ষেত্রে ইসলামী নামের ব্যাংকগুলোতে সেভিংস একাউন্ট খোলা যেতে পারে। তবে তার থেকে প্রাপ্ত মুনাফা নিজে ভোগ না করে সাওয়াবের নিয়ত ছাড়া সদকা করে দিতে হবে।

-মাজাল্লাতু মাজমাইল ফিকহিল ইসলামী, সংখ্যা ৯, ১/৯৭১; মাওসূআতু ফাতাওয়াল মুআমালাতিল মালিয়া ১২/২৯

Sharable Link

সাইফুল ইসলাম - নকলা, শেরপুর

৫২১৮. Question

মুহতারাম! আমাদের দেশে জমি বন্ধক দেয়ার যে পদ্ধতি প্রচলিত তা কি জায়েয? পদ্ধতিটি হল, কোনো ব্যক্তি একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার বিনিময়ে কারো কাছ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ জমি বন্ধক নিয়ে থাকে। সাধরণত কত বছরের জন্য বন্ধক নেয়া হল তা উল্লেখ থাকে না। টাকাদাতা জমি ভোগ করতে থাকে। এভাবে দু-চার বছর চলে যায়। এরপর জমির মালিক টাকাদাতার মূল টাকা ফিরিয়ে দিয়ে নিজের জমি ফিরিয়ে নেয়। এ পদ্ধতি জায়েয কি না? যদি টাকাদাতা এরূপ শর্ত করে নেয় যে, বছরে বছরে তার টাকা থেকে ৫০০/১০০০ টাকা বা ৫% কিংবা ১০% টাকা কাটা যাবে তাহলে কি জায়েয হবে? বিষয়টা জটিল মনে হচ্ছে। একটু বিস্তারিত খুলে বললে শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে তার বিধান কী? যামানত? রাহান-বন্ধক? না কি? একটু খুলে বললে উপকার হয়।

Answer

ঋণ দিয়ে জমি বন্ধক রাখার প্রশ্নোক্ত পদ্ধতিটি জায়েয নয়। কেননা ঋণ দিয়ে বিনিময়ে বন্ধকী বস্তু থেকে উপকৃত হওয়া সম্পূর্ণ নাজায়েয। মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক-এর এক বর্ণনায় এসেছে, ইবনে সীরীন রাহ. বলেন, এক ব্যক্তি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর নিকট এসে বললেন, এক লোক আমার নিকট একটি ঘোড়া বন্ধক রেখেছে, অতঃপর আমি তাতে আরোহণ করেছি। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বললেন-

مَا أَصَبْتَ مِنْ ظَهْرِهَا فَهُوَ رِبًا.

তুমি উক্ত ঘোড়ার উপর যে পরিমাণ আরোহণ করেছ তা সুদ হয়েছে। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ১৫০৭১)

আর ঋণের অর্থ থেকে বছর প্রতি ৫০০/১০০০ টাকা কর্তন করার শর্ত করলেও তা জায়েয হবে না। কারণ বন্ধকী বস্তু থেকে উপকৃত হওয়ার জন্য নামমাত্র ভাড়া দিয়ে তার ভোগ-দখল একটি হিলা বা ছুতা মাত্র। সকলেই জানে যে, জমি মালিককে ঋণ না দেয়া হলে এত কম মূল্যে ভাড়া দিত না।

আর উক্ত লেনদেনে যে টাকা দেয়া হয় তা করয তথা ঋণ। আমানত নয়। আর সেই করয হাসিলের জন্যই বন্ধক নেয়া-দেয়া হয়ে থাকে।

-বাদায়েউস সানায়ে ৫/২১২; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ৪/২৩৬; রদ্দুল মুহতার ৬/৪৮২

Sharable Link

মুস্তাফিজুর রহমান - সাভার, ঢাকা

৫২১৯. Question

আমার ছেলের বয়স চার বছর। একদিন রাতে সে ঘুমিয়ে ছিল। ঘুম থেকে ওঠার পর আমরা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করলাম, ঘুমন্ত অবস্থায় কীভাবে যেন তার খৎনা করা হয়ে গেছে। কিন্তু খৎনা করার জন্য যে অতিরিক্ত চামড়াটুকু কেটে ফেলতে হয় তা পুরোপুরি কাটেনি; কিছু অংশ এখনো রয়ে গেছে। এমতাবস্থায় আমার ছেলের কি খৎনা আদায় হয়েছে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে খৎনার জন্য যতটুকু কাটা আবশ্যক প্রায় এ পরিমাণ যদি কাটা হয়ে যায় তাহলে তার খৎনা স¤পন্ন হয়ে গেছে বলে ধর্তব্য হবে। সেক্ষেত্রে অবশিষ্ট চামড়াটুকু কেটে ফেলার প্রয়োজন নেই। আর যদি খৎনার জন্য যতটুকু কাটা জরুরি তা কাটা না হয়ে থাকে তাহলে পরিপূর্ণভাবে খৎনা স¤পন্ন করতে হবে।

-ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৪০৯; আলবাহরুর রায়েক ৮/৫৫৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৬/৪৪৫; মিনহাতুস সুলূক, পৃ. ৪২৬; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৭৫১

Sharable Link

কামাল হোসেন - মানিকগঞ্জ

৫২২০. Question

কয়েক মাস আগে আমার স্ত্রীর আপন মা ইন্তেকাল করেন। এরপর আমার শ্বশুর পুনরায় বিবাহ করেছেন। আমরা এখন শ্বশুরবাড়ি গেলে বর্তমান শাশুড়ি অর্থাৎ আমার স্ত্রীর সৎ মা আমাদের জন্য বিভিন্ন এন্তেজাম করেন। প্রশ্ন হল, আমি কি আমার এই সৎ শাশুড়ির সাথে দেখা করতে পারব? তিনি কি আমার মাহরাম?

Answer

সৎ শাশুড়ি অর্থাৎ স্ত্রীর সৎ মা মাহরাম নয়। তার সাথে দেখা করা আপনার জন্য বৈধ হবে না। তবে পর্দার আড়াল থেকে সালাম ও সংক্ষিপ্ত কুশল বিনিময় করতে পারবেন।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১৬৬৭১; আলমুহীতুল বুরহানী ৪/১০৬; আলবাহরুর রায়েক ৩/৯৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৭৭; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৩৯

Sharable Link