মুহাম্মাদ আবদুল কুদ্দুস - সুনামগঞ্জ

৪৫৫৯. Question

এক মহিলা জি¦নের আছর ও যাদু-টোনা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সর্বদা তেত্রিশ আয়াতের আমল করে থাকে। এখন জানার বিষয় হল, তার জন্য ঋতুশ্রাবকালে এই তেত্রিশ আয়াতের মানযিল পাঠ করার বিধান কী?

Answer

মাসিক শ্রাব চলা অবস্থায় তেত্রিশ আয়াতের মানযিল পাঠ করা যাবে না। কেননা এ অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত নিষিদ্ধ। তবে অন্য কেউ তেত্রিশ আয়াত পড়ে ঐ মহিলার উপর দম করতে পারবে। এছাড়া ঐ মহিলা হাদীসে বর্ণিত মাসনূন দুআগুলোও পড়তে পারবে।

-আলমুহীতুল বুরহানী ১/৪০২; আলমাবসূত, সারাখসী ৩/১৫২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৪৮০; আলবাহরুর রায়েক ১/১৯৯

Sharable Link

কামরুজ্জামান - সিলেট

৪৫৬০. Question

আমার এক বুঝমান নাবালেগ ভাগিনা কিছু দিন আগে সৌদি আরব থেকে এসেছে। সে আরবীভাষী হওয়ার কারণে একদিন ইমাম সাহেব তাকে জুমার খুতবা দেওয়ার কথা বলেন। সে রাজি হয়ে যায়। তাই এদিন সে খুতবা দেয়। আর ইমাম সাহেব নামায পড়ান। জানার বিষয় হল, বুঝমান এ নাবালেগের খুতবা পাঠ জায়েয হয়েছে কি না?

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ছেলেটি নাবালেগ হলেও যেহেতু সে বুঝমান তাই উক্ত খুতবা আদায় হয়েছে। তবে জুমার খুতবা এবং  নামায পড়ানো একই ব্যক্তি দ্বারা হওয়া উত্তম।

উল্লেখ্য, জুমার খুতবা গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল। তা বালেগ ও যোগ্য ব্যক্তিদের দ্বারাই হওয়া উচিত।

আরো উল্লেখ্য, বুঝমান নাবালেগের খুতবা সহীহ হয়ে গেলেও তার ইমামতি কোনোক্রমেই সহীহ নয়। ভবিষ্যতে এসব বিষয়ে সতর্ক থাকা আবশ্যক।

-আলমুহীতুল বুরহানী ১/৪৫৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২০৫; আলবাহরুর রায়েক ২/১৪৭; রদ্দুল মুহতার ২/১৪১

Sharable Link

ফয়জুল হাসান - সিলেট

৪৫৬১. Question

একদিন আমাদের মসজিদের হাফেজ সাহেব তারাবীর নামাযে সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করেও কোনো সিজদা করেননি। নামায শেষে আমি ইমাম সাহেবকে বিষয়টি বললাম। তিনি বললেন, রুকুতে  সিজদা আদায় করা হয়েছে। তার কথাটি আমার বোধগম্য হয়নি। তাই জানার বিষয় হল, রুকুতে সিজদা আদায় হবে কি না?

Answer

নামাযে সিজদার আয়াত পাঠ করলে পৃথক সিজদার মাধ্যমেই তা আদায় করা উচিত। তবে সিজদার আয়াত পড়ার পর সাথে সাথে রুকুতে চলে গেলে অথবা আয়াতে সিজদা তিলাওয়াতের পর অনুর্ধ্ব দুই আয়াত পড়ে রুকুতে চলে গেলে এবং রুকুতে সিজদায়ে তিলাওয়াত আদায়ের নিয়ত করে নিলে সিজদায়ে তিলাওয়াত আদায় হয়ে যায়। মুজাহিদ রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি নামাযে সূরা বনী ইসরাঈলের  (শেষে) সিজদার আয়াত ও তার পরবর্তী দুই আয়াত পড়ে রুকুতে চলে যেতেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, বর্ণনা ৪৪০২)

-কিতাবুল আছল ১/১৭৪; আল মাবসূত, সারাখসী ২/৮; আততাজনীস ওয়াল মাযীদ ২/১৩১; রদ্দুল মুহতার ২/১১২

Sharable Link

মুহিউস সুন্নাহ - জৈরতপুর, কেরাণীগঞ্জ

৪৫৬২. Question

সফর অবস্থায় আমরা দুই সাথী একদিন মসজিদে জামাত না পেয়ে নিজেরা জামাত করি। সফরে সবসময় কসর করলেও যেহেতু মসজিদে জামাতে নামায পড়লে পূর্ণ চার রাকাতই পড়া হয় এ হিসাবে আমিও চার রাকাত নামায পড়াই। ঘটনাক্রমে ভুলবশত প্রথম বৈঠক করিনি। তাই সাহু-সিজদা করে নামায শেষ করি। নামায শেষে আমার সাথীটি বলল, নামায সহীহ হয়নি। কেননা, মুসাফির ব্যক্তি চার রাকাত পড়ার ক্ষেত্রে প্রথম বৈঠক না করলে নামায নষ্ট হয়ে যায়। বিষয়টি আমার বোধগম্য হয়নি। কেননা আমি তো সাহু-সিজদা করেছি। তাই সে পুনরায় নামাযটি পড়লেও আমি পড়িনি। জানার বিষয় হল, তার কথাটি কি ঠিক? আমাদের ঐ দিনের যোহরের নামায সহীহ হয়েছে কি না?

Answer

আপনার সাথীর কথা সঠিক। আপনাদের ঐ দিনের যোহরের নামায সহীহ হয়নি। কেননা মুসাফিরের জন্য যোহর দুই রাকাত পড়া আবশ্যক এবং দুই রাকাতের পর যে বৈঠক করা হয় সেটাই শেষ বৈঠক। সুতরাং দুই রাকাত পর বসা আপনার জন্য ফরয ছিল। আর ফরয ছুটে গেলে সাহু সিজদা করলেও নামায শুদ্ধ হয় না। তাই আপনাকে ঐ দিনের যোহরের নামায কাযা করে নিতে হবে।

-আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৮৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২০০; বাদায়েউস সানায়ে ১/২৬০; আলবাহরুর রায়েক ২/১৩০; মাজমাউল আনহুর ১/২৪০

Sharable Link

মুহাম্মাদ আবু তাহের খান - রামপুরা, ঢাকা

৪৫৬৩. Question

এক ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর উক্ত গ্রামের স্থায়ী ইমাম  তার জানাযার নামায পড়িয়েছিলেন। এবং এতে মহল্লাবাসী ও দূরবর্তী ওলিগণ উপস্থিত ছিল। কিন্তু সে জানাযায় নিকটবর্তী ওলি উপস্থিত ছিল না এবং তার অনুমতিও ছিল না। এ অবস্থায় নিকটবর্তী ওলি দ্বিতীয়বার জানাযা পড়তে পারবে কি?

পুনশ্চ : উক্ত নিকটবর্তী ওলি মহল্লার ইমামের চেয়ে (যিনি জানাযা পড়িয়েছেন) যোগ্যতর বা তার সমমানেরও নন। সঠিক মাসআলা প্রামাণাদিসহ জানিয়ে উপকৃত করবেন। আল্লাহ তাআলা আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন- আমীন।

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে নিকটবর্তী ওলি দ্বিতীয়বার জানাযার নামায পড়ার অধিকারী হবেন না। কারণ নামাযের সময় তিনি উপস্থিত না থাকায় দূরবর্তী ওলীরা জানাযার নামায পড়ানোর হকদার ছিল। তাছাড়া মহল্লার মসজিদের ইমাম নিজেও জানাযা পড়ানোর একজন হকদার। অতএব মসজিদের ইমাম যেহেতু তাদের উপস্থিতিতেই জানাযা পড়িয়েছেন তাই যথা নিয়মেই ঐ মায়্যিতের জানাযা আদায় হয়ে গেছে। তাই দ্বিতীয়বার আর জানাযার নামায পড়ার সুযোগ নেই।

-বাদায়েউস সানায়ে ২/৫৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২২২; আততাজনীস ওয়াল মাযীদ ২/২৬৩, ২৬৫; আদ্দুররুল মুখতার ২/২২০, ২২২

Sharable Link

মুহাম্মাদ শাহাদত হোসেন - মিরপুর, ঢাকা

৪৫৬৪. Question

দীর্ঘদিন পূর্বে আমার গ্রামের বাড়ীতে প্রায় ১৬০ শতাংশ জমি ক্রয় করেছিলাম। উক্ত জমি ক্রয় করার পর জনৈক ব্যক্তি আমাকে কিছু টাকা পয়সার বিনিময়ে আমার ক্রয় করা জমিতে যাতায়াত অর্থাৎ চলাচলের জন্য রাস্তা দিবে বলেছিল। কিন্তু তিনি দীর্ঘদিন আমাকে ঘুরিয়ে এখন আর রাস্তার জমি আমাকে দিতে বা বিক্রি করতে অস্বীকার করছে। এছাড়াও আমার জমিতে যাতায়াতের জন্য আমি অন্যান্য জমির মালিকের সাথেও দীর্ঘদিন যাবৎ রাস্তার জায়গা ক্রয় করার জন্য অনেক চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। ফলে আমি আমার জমিতে যাতায়াত করতে পারছি না।

বর্তমানে আমার জমির পশ্চিম পাশ দিয়ে রাস্তার জন্য একটা জমি ক্রয় করা যায়। কিন্তু উক্ত অংশে ২ বছরের পুরনো বয়স্ক ব্যক্তির একটা কবর আছে। যদি আমি ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে উক্ত ব্যক্তির কবর ১০ বা ২০ ফুট দূরে স্থানান্তর করার অনুমতি পাই তবে আমি উক্ত জমি ক্রয় করে আমার জমিতে যাতায়াত বা বাড়ী-ঘর নির্মাণ বা অন্যান্য প্রয়োজন পুরো করতে পারি অথবা বিক্রি করতে পারি।

অতএব, উপরোক্ত বিষয়টি ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে পর্যালোচনা করে আমাকে কবর স্থানান্তরের বিষয়ে লিখিত ফতোয়া প্রদান করে একজন সাধারণ মুসলমানকে সহযোগিতা করার জন্য  বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।

Answer

শরীয়তসম্মত ওজর ছাড়া মুসলমানের কবর স্থানান্তর করা জায়েয নয়। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রেও আপনাদের জন্য কবরটি স্থানান্তর করা জায়েয হবে না। যতদিন লাশ একেবারে মাটি না হবে ততদিন কবরের সম্মান বাকি থাকে। অবশ্য জায়গাটি যদি ব্যক্তি মালিকানাধীন হয়, কবরের জন্য ওয়াকফকৃত না হয় তাহলে সেটি আপনি মালিকদের থেকে খরিদ করে নিতে পারেন। এবং ভবিষ্যতে যখন লাশ মাটির সাথে মিশে যাওয়ার প্রবল ধারণা হবে তখন কবর সমতল করে দিয়ে সে জায়গা রাস্তা বা অন্য কোন কাজেও ব্যবহার করতে পারবেন।

-তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫৮৯; ফাতহুল কাদীর ২/১০১; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী পৃ. ৩৩৬; শরহুল মুনয়া পৃ. ৬০৭; আলবাহরুর রায়েক ২/১৯৫; রদ্দুল মুহতার ২/২৩৭; ইমদাদুল আহকাম ৩/২৮৬

Sharable Link

আবদুস সাত্তার মোল্লা - ফরিদপুর

৪৫৬৫. Question

এ বছর রমযানে এক ব্যক্তিকে যাকাত দিতে গিয়ে একটি প্রশ্ন দেখা দেয়। তা হল, সে ব্যক্তির ব্যক্তিগত তেমন জায়গা জমি নেই। দেড় লক্ষ টাকা দিয়ে একটি জমি কটে রেখে চাষাবাদ করে। এ ছাড়া ঐ ব্যক্তির কোনো সম্পদ নেই এবং বর্তমানে সে অভাবগ্রস্ত। এ অবস্থায় তাকে যাকাত দেওয়া যাবে কি না?

Answer

লোকটি জমিওয়ালাকে যে দেড় লক্ষ টাকা প্রদান করেছে সেগুলো মূলত ঋণ। অর্থাৎ সে জমিওয়ালাকে দেড় লক্ষ টাকা ঋণ দিয়ে এর বিনিময়ে তার জমি ভোগ করছে। আর ঋণের টাকা নেসাব পরিমাণ হলে ঋণদাতার উপর এর যাকাত আদায় করা ফরয। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে তার ঐ দেড় লক্ষ টাকা থাকার কারণে তাকে যাকাত দেওয়া তো জায়েয নয়-ই; বরং সে নিজেই যাকাতের নেসাবের মালিক এবং তার উপর ঐ দেড় লক্ষ টাকার যাকাত আদায় করা ফরয। তবে যদি জমি কট বা রাহান না নিয়ে এ টাকা দিয়ে একটা  ফসলী জমি ক্রয় করে নেয় কিংবা থাকার জন্য এক টুকরো জমি কিনে নেয় এবং তার অন্য কোনো যাকাতযোগ্য সম্পদ না থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে তাকে যাকাত দেওয়া যাবে।

উল্লেখ্য, কাউকে ঋণ দিয়ে ঋণগ্রহিতার  থেকে বন্ধক হিসেবে নেওয়া বস্তু ঋণদাতার জন্য ভোগ করা জায়েয নয়। এটি সুদের অন্তর্ভুক্ত। এ থেকে বেঁচে থাকা জরুরি।

-আলমাবসূত, সারাখসী ২/১৯৪; আলবাহরুর রায়েক ২/২০৭, ২৪৪; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২৪৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/২৪৫

Sharable Link

উম্মে আয়মান - মোমেনশাহী

৪৫৬৬. Question

আমি একজন গৃহিনী। ২০০৭ সালের দিকে আমার বিয়ে হয়। আমার স্বামী প্রবাসী। বিয়ের সময় মহর হিসাবে ৬ ভরি স্বর্ণ পাই। এর পরের বছর আমার স্বামী আরো তিন ভরি স্বর্ণ এনে দেয়। কিন্তু তখন নেসাব পরিমাণ স্বর্ণের মালিক হলেও এরপর থেকে এতদিন পর্যন্ত অলংকারগুলোর যাকাত আদায় করা হয়নি। এখন  আমি যাকাত আদায় করতে শুরু করেছি। আমার জিজ্ঞাসা হল, বিগত দশ বছরের যাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে কোন্ সময়ের মূল্য ধর্তব্য হবে? কেনার সময় প্রতি ভরি অংলকার-এর দাম ছিল ২৫/৩০ হাজার টাকার মত। বর্তমান বিক্রয়মূল্য প্রায় ৪০ হাজার টাকা।

Answer

স্বর্ণের বিগত বছরের যাকাত যখন আদায় করবেন তখনকার বাজারদর অনুযায়ী যাকাত আদায় করতে হবে। সুতরাং বিগত বছরের সব যাকাত বর্তমানে  আদায় করতে চাইলে বর্তমান বাজার মূল্য হিসাবেই আদায় করতে হবে। কেননা যাকাত ওয়াজিব হচ্ছে স্বর্ণের উপর। আপনার কাছে যে স্বর্ণ আছে তার ২.৫% যাকাত দিতে হবে। সুতরাং যাকাত আদায়ের সময় স্বর্ণ দিবেন বা তখন স্বর্ণের যে মূল্য হয় তা আদায় করবেন।

আর বিগত বছরের যাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে প্রথম বছর যাকাত বাবদ যে পরিমাণ অর্থ ওয়াজিব হয়েছে পরের বছরের হিসাব করার সময় সে পরিমাণ অর্থ বিয়োগ করে অবশিষ্ট সম্পদের ২.৫% যাকাত বাবদ আদায় করলেই চলবে। পরবর্তী বছরগুলোতেও এভাবে হিসাব করবে।

উল্লেখ্য, বিনা ওজরে যাকাত আদায়ে বিলম্ব করা গুনাহ। প্রতি বছরের যাকাত পরের বছরের মধ্যেই পরিশোধ করে দেওয়া উচিত।

-আলজামেউস সগীর পৃ. ১৫; বাদায়েউস সানায়ে ২/১১১; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/১৬৭; রদ্দুল মুহতার ২/২৮৬

Sharable Link

মুশফিকুর রহমান - দোহা, কাতার

৪৫৬৭. Question

মুহতারাম, আমরা তো জানি নাবালেগ সন্তানের সদকায়ে ফিতর আদায় করা  তাদের পিতার উপর ওয়াজিব। আমরা যারা প্রবাসে থাকি আমাদের নিজেদের সদকায়ে ফিতর বাংলাদেশে আদায় করলেও প্রবাসের মূল্য অনুযায়ীই দিয়ে থাকি। কিন্তু আমাদের নাবালেগ সন্তান, যারা দেশে থাকে তাদের সদকায়ে ফিতর কোন্ দেশের মূল্য অনুযায়ী আদায় করব? এ বিষয়টি নিয়ে অনেকদিন যাবৎ দ্বিধাদ্ব›েদ্ব ভুগছি। সঠিক উত্তরের আশায় আপনাদের শরণাপন্ন হলাম।

Answer

বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী অধীনস্তদের সদকায়ে ফিতর আদায়ের ক্ষেত্রেও তাদের পক্ষ থেকে যে আদায় করবে তার অবস্থানস্থল ধর্তব্য হবে। সুতরাং যারা প্রবাসে থাকেন তাদের নাবালেগ সন্তান দেশে থাকলেও প্রবাসের মূল্য হিসাবে সদকায়ে ফিতর আদায় করবেন।

-বাদায়েউস সানায়ে ২/২০৮; আলবাহরুর রায়েক ২/২৫০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৪৬২; ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ৬/২৮৯

Sharable Link

আমীনুল ইসলাম - রাজবাড়ী

৪৫৬৮. Question

আমি বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুলে চাকরি করি। কমিটি পরিচালিত স্কুলটির শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন প্রায়ই বাকি পড়ে থাকে। বর্তমান রমযানে যখন আমি যাকাতের হিসাব করছি তখন আমার বিগত তিন মাসের বেতন বাকি। যার পরিমাণ প্রায় পঞ্চাশ হাজার টাকা। মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাই, আমাকে এ বকেয়া বেতনের যাকাত দিতে হবে কি না?

Answer

তিন মাসের বকেয়া বেতন যেহেতু এখনো পাননি তাই আপনাকে এ টাকার যাকাত দিতে হবে না। বকেয়া বেতন হস্তগত হওয়ার পর তা যাকাতযোগ্য বলে গণ্য হবে এবং তখন থেকে বছরান্তে নেসাব পরিমাণ থাকলে তার যাকাত দিতে হবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ২/৯০; আলবাহরুর রায়েক ২/২০৭; জাওয়াহিরুল ফিকহ ৩/২৬১

Sharable Link

আবদুল মাজীদ - আকুয়া, মোমেনশাহী

৪৫৬৯. Question

আল্লাহর রহমতে আমি এ বছর আমার স্ত্রীসহ হজ্ব করেছি। হজে¦ যাওয়ার কিছুদিন আগে হজ্ব প্রশিক্ষণে গিয়েছিলাম। সেখানে আমাদেরকে বলা হয়েছে যে, উমরার সমস্ত কাজ শেষ করার পর এবং ১০ যিলহজ্ব কুরবানী করার পর হালাল হওয়ার জন্য প্রথমে কাফেলার একজন কোনো নাপিত বা হালাল ব্যক্তির কাছে মাথা মুণ্ডিয়ে হালাল হবেন। তারপর সেই ব্যক্তি অন্যদের মাথা মুণ্ডন করতে পারবেন। এভাবে যারা হালাল হয়ে গেছেন শুধু তারাই অন্যদের মাথা মুণ্ডন করবেন। আর হালাল হয়েছেন এমন কোনো পুরুষ তার স্ত্রী বা মাহরামের চুল কেটে দেবেন। তারপর সেই মহিলা অন্য মহিলাদের চুল কেটে দিতে পারবেন। মোটকথা প্রশিক্ষণে বলা হয়েছে, কেউ নিজে হালাল না হয়ে নিজের বা অন্য কারো চুল কাটতে পারবে না। এ কথা কি ঠিক? কেউ যদি হালাল না হয়ে নিজের বা অন্য কারো চুল কেটে দেয় তাহলে এর ফলে কি দম বা সদকা ওয়াজিব হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

কথাটি সঠিক নয়। উমরাকারী উমরার সকল কাজ শেষ করার পর এবং কিরান ও তামাত্তু হজ্ব আদায়কারী  হজ্বের কুরবানী করার পর আর ইফরাদ হজ্ব আদায়কারী জামরা আকাবায় কংকর মারার পর নিজে হলক বা কছর করার পূর্বেও অন্যের চুল কেটে দিতে পারবেন। এটি নাজায়েয নয়। এর ফলে কারো উপর দম বা সদকা কিছুই ওয়াজিব হবে না।

-সহীহ বুখারী, হাদীস ২৭৩১; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১৬১৩৯; মানাসিক, মোল্লা আলী কারী, পৃ. ২৩০; গুনয়াতুন নাসিক পৃ. ২৫৮

Sharable Link

মাওলানা মুস্তফা ইবরাহীম - রামগড়, খাগড়াছড়ি

৪৫৭০. Question

আমি হজ্বের বিভিন্ন বইয়ে পড়েছি যে, হলকের দিন কারো মাথায় চুল না থাকলেও মাথায় ক্ষুর ঘুরাতে হয়।

আমার মাথায় বিভিন্ন ধরনের গুটি থাকায় অনেক দিন যাবৎ আমি ডাক্তারের পরামর্শে ক্ষুর-কাঁচি কিছুই ব্যবহার করি না; বরং প্রতি দুই সপ্তাহ পর পর ঔষধ ব্যবহার করে চুল উঠিয়ে ফেলি। এখন হুযূরের কাছে জানতে চাই, আমার উক্ত রোগের কারণে কি মাথায় ক্ষুর না লাগানোর সুযোগ আছে?

Answer

ঔষধ ব্যবহারের মাধ্যমে চুল উঠালেও আপনি ইহরাম থেকে মুক্ত হয়ে যাবেন। তবে আপনার মাথায় যদি একেবারে চুল না থাকে এবং আপনি অসুস্থতার কারণে মাথায় ক্ষুর ঘুরাতেও সক্ষম না হন, তাহলে সেক্ষেত্রে কিছু করা ছাড়াই আপনি হালাল হয়ে যাবেন। ক্ষুর লাগানো বা ঔষধ ব্যবহার কোনোটিরই প্রয়োজন হবে না।

-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৬৪৫; বাদায়েউস সানায়ে ২/৩২৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/৫১৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৩১

Sharable Link

মুহাম্মাদ ইবরাহীম - নোয়াখালী

৪৫৭১. Question

আমাদের প্রতিবেশী এক ব্যক্তি তার  স্ত্রীকে বিশেষ একটি ঘটনার কারণে বলেছিল যে, ‘আগামী দু’বছর পর্যন্ত আমার অনুমতি ছাড়া তোমার আব্বা-আম্মার সাথে ফোনে অথবা সরাসরি কোনোভাবেই কথা বলতে পারবে না। বললে প্রত্যেকবার এক তালাক হবে। এভাবে তিনবার বললে তিন তালাক হয়ে যাবে।

পরবর্তীতে সামাজিকভাবে দুই পরিবারের মাঝে সমঝোতা হলে সে তার স্ত্রীকে তাদের সাথে কথা বলার অনুমতি দিয়ে দেয়।

এখন তার স্ত্রী জানতে চাচ্ছে, একবারে পূর্ণ দুই বছরের জন্য অনুমতি দিয়ে দেওয়াই যথেষ্ট, না প্রতিবার কথা বলার সময় পৃথক অনুমতি নিতে হবে?

উল্লেখ্য, কথা বলতে নিষেধ করার পর থেকে মাত্র দু’মাস অতিবাহিত হয়েছে। দু’বছর পূর্ণ হতে আরো দীর্ঘ সময় বাকি। এ দীর্ঘ সময়ে প্রতিবার কথা বলার সময় অনুমতি নেওয়া অনেক কঠিন। এ পরিস্থিতিতে শরীয়তের হুকুম কী? দয়া করে জানিয়ে উপকৃত করবেন।

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু স্ত্রীর কথা বলাটা স্বামীর অনুমতির সাথে শর্তযুক্ত ছিল তাই স্বামী যদি স্ত্রীকে বলে দেয় যে, তুমি যে কোনো সময় তোমার বাবা-মা’র সাথে কথা বলতে পারবে, তাহলে উক্ত শর্ত উঠে যাবে এবং এরপর থেকে স্ত্রী তার বাবা-মা’র সাথে যে কোনো সময় কথা বলতে পারবে। এভাবে অনুমতি দিয়ে দিলে পরবর্তীতে কথা বলার সময় আর অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন হবে না।

উল্লেখ্য যে, স্ত্রী কোনো অপরাধ করে থাকলেও তাকে এ ধরনের কঠিন শর্ত দেওয়া অন্যায় ও জুলুম। তাই স্বামীর জন্য তাওবা ইস্তিগফার করা আবশ্যক এবং স্ত্রীকে স্থায়ীভাবে তার মা-বাবার সাথে কথা বলার অনুমতি দিয়ে দেওয়া জরুরি।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৫/১০৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৪৩৯; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৭১

Sharable Link

মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম - পাবনা

৪৫৭২. Question

এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে প্রায় এক বছর পূর্বে তার এক আত্মীয়ের সাথে কথা বলতে নিষেধ করে এবং বলে, তার সাথে সরাসরি অথবা ফোনে যে কোনোভাবে কথা বললে তালাক হয়ে যাবে। এরপর প্রায় এক বছর পর্যন্ত তার স্ত্রী ঐ ব্যক্তির সাথে কোনো কথা বলেনি। কিছুদিন পূর্বে বিশেষ এক প্রয়োজনে শুধু একটি ম্যাসেজ পাঠায়। উদ্দেশ্য ছিল গুরুত্বপূর্ণ একটি সংবাদ পৌঁছানো। অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। এখন স্বামী-স্ত্রী উভয়ে বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত। ম্যাসেজ পাঠানোর কারণে তালাক হয়েছে কি না? যদি হয়ে থাকে তাহলে তাদের করণীয় কী?

বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে দ্রুত সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে স্ত্রীর ম্যাসেজ পাঠানোর কারণে কোনো তালাক পতিত হয়নি। কেননা তালাক হওয়ার জন্য শর্ত ছিল কথা বলা। তাই উক্ত স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক পূর্বের মত বহাল আছে।

উল্লেখ্য যে, তালাক হল বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্নকারী চ‚ড়ান্ত পদক্ষেপ। তাই সাধারণ কোনো বিষয় বা ঘটনাকে কেন্দ্র করে তালাক দেওয়া বা তালাকের শর্ত জুড়ে দেওয়া অন্যায়। এতে অনেক ক্ষেত্রে স্ত্রী-সন্তানের উপর জুলুমও করা হয়। তাই অত্যন্ত ভেবে চিন্তে আলেমদের সাথে পরামর্শ করে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া বা কথা বলা উচিত।

-আলমাবসূত, সারাখসী ৯/২৩; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৭৯১; ফাতাওয়া খানিয়া ২/১০৩; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়্যাহ ২/২০২

Sharable Link

অহীদুজ জামান - সদরপুর, ফরিদপুর

৪৫৭৩. Question

আমাদের গ্রামের এক চাষী মান্নত করেছে যে, তার পালিত একটি গাভীর তৃতীয়বার বাচ্চা হলে দুধ খাওয়া শেষে সেটিকে আটরশির মাজারে দিয়ে দেবে। এক ব্যক্তি তাকে বুঝিয়েছে- সেখানে দিলে তোমার কোনো লাভ হবে না। তার চেয়ে গাভীটি বিক্রি করে টাকা মসজিদের নির্মাণকাজে দান করে দাও। কিন্তু সে তাতে সম্মত হয়নি। পরবর্তীতে তার শর্ত অনুযায়ী তৃতীয়বার বাচ্চা দেওয়া ও দুধ শেষ হওয়ার পর গাভীটি মারা গেছে। এখন সে কীভাবে ঐ মান্নত পুরা করবে।

Answer

মাজারে কোনো কিছু দেওয়ার মান্নত করা নাজায়েয ও শিরক। তাই এমন মান্নত করলে তা মান্নতই হয় না। বরং তা যেহেতু শিরকী কাজ তাই তা আদায় না করা জরুরি।

স্মরণ রাখা দরকার, মান্নত হচ্ছে একটি ইবাদত, যা একমাত্র আল্লাহর নামেই করা যায়। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে- যেমন পীরের নামে, মাজারের নামে মান্নত করা শিরকের অন্তর্ভুক্ত। হাদীস শরীফে এসেছে-

مَنْ نَذَرَ أَنْ يُطِيعَ اللهَ فَلْيُطِعْهُ، وَمَنْ نَذَرَ أَنْ يَعْصِيَهُ فَلاَ يَعْصِهِ.

অর্থাৎ কেউ ভালো কাজের মান্নত করলে সে যেন তা পুরা করে। আর কেউ গুনাহের মান্নত করলে সে যেন তা পূর্ণ না করে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৬৯৬

সুতরাং ঐ ব্যক্তি যেহেতু গুনাহের মান্নত করেছে তাই তাকে এর জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের মান্নত করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

-আলবাহরুর রায়েক ২/২৯৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৩৯; আলমুগনী ১৩/৬৪৩

Sharable Link

হারিস আবদুল্লাহ - ফরিদপুর

৪৫৭৪. Question

কয়েক মাস আগে এক আকস্মিক বিপদের সম্মুখীন হয়েছিলাম, পরিস্থিতি এমন ছিল, কোনো অন্যায় না করেও আমাকে অপরাধী সাব্যস্ত হতে হয়েছে। তখন আমি মনে মনে এই নিয়ত করি যে, আল্লাহ তাআলা এ পরিস্থিতি থেকে হেফাজত করলে পাঁচ শত টাকা সদকা করব। পরে আল্লাহর মেহেরবানীতে সে বিপদ কেটে গেলেও আর টাকা সদকা করা হয়নি।

প্রশ্ন হল, মুখে না বলে শুধু মনে মনে নিয়ত করার কারণে সেটি কি মান্নত হয়ে গিয়েছে? এবং এখন কি আমার জন্য ঐ পরিমাণ টাকা সদকা করা ওয়াজিব?

Answer

মুখে উচ্চারণ না করে শুধু মনে মনে নিয়ত করলে তা মান্নত হয় না। অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যেহেতু মুখে বলেননি তাই সেটি মান্নত হয়নি। সুতরাং ঐ পরিমাণ টাকা সদকা করা আপনার জন্য আবশ্যক নয়। তবে সদকা একটি ফযীলতপূর্ণ ইবাদত। তাই মান্নত না হলেও আপনি যেহেতু একটি নেক ইচ্ছা করেছেন তাই তা পূরণ করাই ভালো হবে।

-আহকামুল কুরআন, জাস্সাস ৩/৪৪২; আহকামুল কুরআন, ইবনে আরাবী ১/২৬৮; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৬; আলবাহরুর রায়েক ২/৩০৫

Sharable Link

নুরুল্লাহ - হযরতপুর, কেরাণীগঞ্জ

৪৫৭৫. Question

মুহতারাম, বর্তমানে দেখা যায় আমাদের দেশের প্রায় মসজিদই নামাযের সময় ছাড়া অন্য সময় তালা মেরে রাখা হয়। এ ব্যাপারে কোনো কোনো মসজিদ কর্তৃপক্ষ বলেন, সব সময় মসজিদ খোলা রাখলে মসজিদ ময়লা হয়ে যায় এবং মসজিদের আসবাবপত্র চুরি হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে। অথচ আমরা  অনেক সময় ব্যবসা-বাণিজ্য ও অফিস টাইমের ফাঁকে ফাঁকে কিছু অবসর সময় পাই। তখন আমাদের নামায, কুরআন তিলাওয়াত বা ফাজায়েলে আমল কিংবা অন্যান্য দ্বীনী বইপত্র পড়তে মনে চায়। কিন্তু মসজিদগুলো  তালাবদ্ধ থাকায় উপযুক্ত স্থান না পেয়ে আমরা এসব করতে পারি না। মাননীয় মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাই, উল্লেখিত সমস্যাকে সামনে রেখে এক্ষেত্রে শরয়ী সমাধান কী? আশা করি বিষয়টি খোলাসা করে জানাবেন।

Answer

মসজিদ মুসলমানদের ইবাদতের স্থান ও দ্বীন শিক্ষার অন্যতম জায়গা। মসজিদ শুধু নামাযের জন্য নয়; বরং যিকির-আযকার, কুরআন তিলাওয়াত ও দ্বীনী তালীমের জন্যও বটে।

হযরত আনাস ইবনে মালেক রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

إِنّمَا هِيَ لِذِكْرِ اللهِ عَزّ وَجَلّ، وَالصّلَاةِ وَقِرَاءَةِ الْقُرْآنِ.

অর্থাৎ মসজিদ হল নামায, যিকির ও কুরআন  পড়ার জন্য। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৮৫

তাই নিয়ম হল, ফরয নামাযের সময় ছাড়াও মসজিদকে প্রয়োজন মোতাবেক ইবাদত, তালীম ও যিকিরের জন্য উন্মুক্ত রাখা। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া মসজিদ বন্ধ রাখা ঠিক নয়। ইবনুল হুমাম রাহ. বিনা প্রয়োজনে মসজিদ বন্ধ রাখাকে- মানুষকে মসজিদ থেকে বাধা প্রদান করার অন্তর্ভুক্ত করেছেন এবং নিম্নোক্ত আয়াত দ্বারা দলীল পেশ করেছেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

وَ مَنْ اَظْلَمُ مِمَّنْ مَّنَعَ مَسٰجِدَ اللهِ اَنْ یُّذْكَرَ فِیْهَا اسْمُهٗ وَ سَعٰی فِیْ خَرَابِهَا .

তার চে’ বড় জালেম আর কে, যে আল্লাহর মসজিদসমূহে তাঁর নাম নিতে বাধা প্রদান করে এবং সেগুলো ধ্বংস সাধনে প্রয়াসী হয়। -সূরা বাকারা (২) : ১১৪

অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, সব সময় মসজিদ খোলা রাখলে মসজিদের মালামাল হেফাযতের বিষয়টি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। এ বিষয়টি বিবেচনা করে কোনো কোনো ফকীহ প্রয়োজনের কারণে নামাযের সময় ছাড়া অন্য সময় মসজিদ বন্ধ রাখাকে জায়েয বলেছেন। তাই এ ধরনের প্রয়োজনে অন্যান্য সময় মসজিদ বন্ধ রাখার অবকাশ আছে।

কিন্তু সেক্ষেত্রেও নামাযের পরপরই বন্ধ করবে না; বরং জামাত শেষ হয়ে যাওয়ার পরও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সময় খোলা রাখবে। যেন পরে আসা ব্যক্তিগণ ফরয আদায় করতে পারে। এবং জামাতের পরে যারা একটু সময় নিয়ে নফল ইবাদত করতে চায় তাদের জন্যও যেন সুযোগ থাকে।

এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, কোনো কোনো মসজিদে দেখা যায়, জামাত শেষ করার সামান্য পরেই মসজিদের মুআজ্জিন/খাদেমগণ মসজিদে অবস্থানরত মুসল্লীদের বের হয়ে যাওয়ার জন্য তাড়া দিতে থাকেন, যা কিছুতেই সমীচীন নয়।

আর যেখানে নামাযের নির্ধারিত সময় ছাড়া অন্য সময়েও ইবাদত ও দ্বীনী তালীমের উদ্দেশ্যে মুসল্লীদের মসজিদে ব্যাপক আসা-যাওয়া থাকে ঐসব মসজিদ খোলা রাখার ব্যবস্থা করা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। এজন্য প্রয়োজনে মালামাল হেফাযত করা ও মসজিদ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য অতিরিক্ত খাদেম নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। আর কোনো ক্ষেত্রে পুরো মসজিদ খোলা রাখা সম্ভব না হলে অন্তত মসজিদের কোনো অংশ অথবা বারান্দা (বাতি ও পাখাসহ) খোলা রাখার ব্যবস্থা করা আবশ্যক।

প্রাসঙ্গিকভাবে একথাও জেনে রাখা দরকার যে, মসজিদে যে দ্বীনী  কাজ করা হবে তা শরীয়তের আহকাম মোতাবেক হওয়া জরুরি এবং মসজিদ কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে হওয়া আবশ্যক। এক্ষেত্রে যেমন শরীয়তের কোনো বিধান লঙ্ঘন করা জায়েয নয় তেমনি মসজিদের বৈধ ও স্বীকৃত কোনো নিয়ম লঙ্ঘন করাও ঠিক নয়।

-ফাতহুল কাদীর ১/৩৬৭; শরহুল মুনয়া পৃ. ৬১৫; আলবাহরুর রায়েক ২/৩৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১০৯; রদ্দুল মুহতার ১/৬৫৬; রূহুল মাআনী ১০/৬৫

Sharable Link

নাজমা বেগম - রায়গড়, সিলেট

৪৫৭৬. Question

আমি গ্রামের দ্বীনদার পরিবারের মেয়ে। কিছুদিন আগে স্বামীর অসুস্থতার কারণে বিশাল অংকের টাকার প্রয়োজন দেখা দেয়। অনেকের কাছে  ঋণ চেয়েও পাইনি। এমতাবস্থায় এক আত্মীয় আমাকে একটি সামাজিক সংগঠনের সভাপতির কাছে নিয়ে যান। সভাপতি আমার অবস্থা জানার পর আমাকে বলেন, আমরা তো সুদ খাই না। তবে আমাদের ঋণ প্রদানের নিয়ম হল যে, পঞ্চাশ হাজারের বেশি কাউকে ঋণ দেওয়া হয় না। আর ঋণ গ্রহীতাকে তিন হাজার টাকা দামের একটি ফরম কিনতে হয়। কেননা আমাদের দাপ্তরিক কিছু ব্যয় রয়েছে। তাছাড়া ফরম বিক্রির মাধ্যমে আমরা অন্যান্য জনকল্যাণমূলক কাজের তহবিল সংগ্রহ করি। প্রয়োজনের তাগিদে আমি এভাবেই ঋণ নিয়ে আসি। জানার বিষয় হল, উপরোক্ত পন্থায় ঋণ নেওয়া জায়েয হয়েছে কি না?

Answer

ঋণ গ্রহিতার নিকট ফরম বিক্রি করে অতিরিক্ত টাকা গ্রহণ করা সুস্পষ্ট  সুদ। সুদ গ্রহণের জন্য ফরম বিক্রির ছুতা ও হীলা অবলম্বন করা হয়েছে।

অতএব, এ পন্থায় অতিরিক্ত টাকা নেওয়া সম্পূর্ণ নাজায়েয ও সুদের অন্তর্ভুক্ত। আর সুদের আদান-প্রদান যেহেতু নাজায়েয তাই আপনার জন্য এ পন্থায় ঋণ গ্রহণ জায়েয হয়নি। আপনার করণীয় দ্রুত তাদের ঋণ পরিশোধ করে নিজেকে দায়মুক্ত করা। আর তাদের উচিত, হীলা-বাহানা করে সুদ গ্রহণ বন্ধ করা, আল্লাহ তাআলার কাছে তাওবা করা এবং বিগত দিনে যাদের কাছ থেকে এভাবে অতিরিক্ত টাকা গ্রহণ করা হয়েছে তা তাদের ফিরিয়ে দেওয়া। অবশ্য এক্ষেত্রে ঋণ দিতে গিয়ে যদি কোনো বাস্তব খরচ হয়ে থাকে তাহলে শুধু সে পরিমাণটুকুই ঋণ গ্রহীতার কাছ থেকে নিতে পারবে। আর জানা কথা যে, সে খরচ খুবই নগণ্য পরিমাণের।

-বাদায়েউস সানায়ে ৬/৫১৮; আননুতাফ ফিল ফাতাওয়া পৃ. ২৯৬; আদ্দুররুল মুখতার ৫/১৬৬; ইলাউস সুনান ১৪/৫১৪

Sharable Link

মাওলানা নজরুল ইসলাম - ঢাকা

৪৫৭৭. Question

আমি ঢাকা শহরে থাকি। গ্রামে আমার কিছু জমি রয়েছে। কিছুদিন আগে আমাদের এলাকার এক লোককে (সে জমির দালালির সাথে জড়িত) জমিটি কাঠা প্রতি ত্রিশ হাজার টাকা দামে বিক্রি করে দেওয়ার কথা বলি। এক্ষেত্রে তাকে নির্দিষ্ট পারিশ্রমিক দেব বলেও জানাই। সে অনেক গড়িমসি করে ছয়মাস পর অন্য এলাকার এক ব্যক্তির কাছে জমিটি বিক্রি করে দেয়। আমাকে কাঠা প্রতি ত্রিশ হাজার টাকা দামে ১০ কাঠায় ৩ লক্ষ টাকা দেয়। কিছুদিন পর অন্য মাধ্যমে আমি জানতে পারি যে, জমিটি সে কাঠা প্রতি ৩৭ হাজার টাকা দামে বিক্রি করেছে। বিষয়টি আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলে সে বলে, আপনি যা চেয়েছেন তা তো পেয়েছেন, তাহলে আমি বেশি দামে বিক্রি করলে আপনার সমস্যা কী? জানার বিষয় হল, এভাবে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করা জায়েয হয়েছে কি না? এখন এ টাকার হকদার কে, সে না আমি?

Answer

জমিটি যে দামে বিক্রি করেছে তা যদি ন্যায্যমূল্য হয়ে থাকে তবে আপনার চাওয়া দামের চেয়ে বেশিতে বিক্রি করা অন্যায় হয়নি। তবে এক্ষেত্রে  বেশি মূল্যে বিক্রি করলেও পুরো মূল্যই আপনার প্রাপ্য। অতিরিক্ত অংশটা তার নিয়ে নেওয়া জায়েয হয়নি। কেননা তার পারিশ্রমিক তো নির্ধারিতই আছে। সেটাই তার পাওনা। সুতরাং অবশিষ্ট টাকাগুলো আপনাকে দিয়ে দেওয়া লোকটির কর্তব্য।

-আলমুহীতুল বুরহানী ১৫/৮১; বাদায়েউস সানায়ে ৫/২৬; মাজাল্লাতুল আহাকামিল আদলিয়্যা, মাদ্দা ৫৭৮; দুরারুল হুক্কাম ১/৬৬২

Sharable Link

ইসমাঈল হুসাইন - জামেয়া দারুল হুদা, সিলেট

৪৫৭৮. Question

পাঁচ বছর আগে আমি একটি ব্যবসা শুরু করেছিলাম। তখন একজনের কাছ থেকে দুই লক্ষ টাকা এ চুক্তিতে নেই যে, সে পাঁচ বছর ব্যবসায় শরীক থাকবে। এ সময় প্রতি বছর তাকে লভ্যাংশের ২৫% দেওয়া হবে। পাঁচ বছর পর তাকে তার সব টাকা বুঝিয়ে দিয়ে দেওয়া হবে। সে তখন আর ব্যবসায় কোনো অংশীদার থাকবে না। কিন্তু এখন ব্যবসার লাভ ও মুনাফা দেখে সে তার টাকা নিয়ে চলে যেতে নারাজ। এক্ষেত্রে সে এক ব্যক্তির সাথে কথা বলেছে যে, তিনি বলেছেন, এ ধরনের শর্তারোপ করা শরীয়তসম্মত হয়নি। যৌথ ব্যবসায় এভাবে তার অংশীদারিত্ব বাতিল করা ঠিক হবে না। জানার বিষয় হল, তার এ কথাটি কি ঠিক? এখন আমার করণীয় কী?

Answer

যৌথমূলধনি কারবারে চুক্তির মেয়াদ উল্লেখ করা এবং ঐ মেয়াদের পর চুক্তি বাতিল হয়ে যাওয়ার শর্ত করা জায়েয ও শরীয়তসম্মত। ঐ ব্যক্তির কথা ঠিক নয়। অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে পাঁচ বছর পর মেয়াদ শেষে তার মূলধন ও বিগত দিনের লভ্যাংশ যথাযথভাবে হিসাব করে তাকে বুঝিয়ে দিতে কোনো অসুবিধা নেই।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৩৫৯; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৬১৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৩০২; ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ৬/২২৬

Sharable Link

ইবাদুর রহমান - ভোলা

৪৫৭৯. Question

জেনেশুনে এমন পরিবারকে ঘর ভাড়া দেওয়া জায়েয কি না, যারা ডিশলাইনসহ টিভি ব্যবহার করবে? এমন পরিবারকে ঘর ভাড়া দিলে ঘরের মালিক গুনাহগার হবে কি না? এবং তাদের থেকে প্রাপ্ত ভাড়া তার জন্য বৈধ হবে কি না?

 

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু বসবাসের জন্য ঘর ভাড়া নিচ্ছে তাই তাদেরকে ঘর ভাড়া দেওয়া যাবে এবং এর থেকে প্রাপ্ত ভাড়াও বৈধ হবে। তাতে টিভি বা ডিস লাইন ব্যবহার করলে এর দায়ভার ঘরের মালিকের উপর বর্তাবে না, বরং তা ভাড়াটিয়ার উপরই বর্তাবে। অবশ্য দ্বীনদার মুত্তাকী লোকের নিকট ভাড়া দেওয়াই উত্তম। তবে জেনে রাখা উচিত, টিভি ও ডিশ লাইনের ব্যবসার জন্য ঘর ভাড়া দেওয়া জায়েয হবে না।

-কিতাবুল আছল ৪/১৭; আলমুহীতুল বুরহানী ১১/৩৪৮; ফাতাওয়া খানিয়া ২/৩২৪

Sharable Link

মুযাক্কির আহমদ - সিলেট

৪৫৮০. Question

আমি আমার বন্ধুদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বিনামূল্যে রক্তদানের উদ্দেশ্যে একটি গ্রæপ করি এবং এর মাধ্যমে অনেককে আমরা এই সেবা দিয়ে আসছি। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়  যে, রক্ত দেওয়ার পর রোগীর পক্ষ থেকে আমাদেরকে এর বিনিময় দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তো এক্ষেত্রে কি আমাদের জন্য এই বিনিময় গ্রহণ করা জায়েয হবে?

Answer

রক্ত বিক্রি করা নাজায়েয। তাই রক্ত দিয়ে বিনিময়ে কোনো কিছু নেওয়া জায়েয হবে না। রক্ত দিলে সম্পূর্ণ বিনামূল্যেই দিতে হবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ৪/৩৩৮; আলবাহরুর রায়েক ৬/৭৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৩/৩৯; আহকামুল কুরআন, ইবনে আরাবী ১/৩৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৮/৪০৫

Sharable Link

আবু সালমান - সিলেট

৪৫৮১. Question

কিছুদিন আগে আমার বড় ভাইয়ের বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়। তখন আমাদের পক্ষ থেকে কনেকে কিছু সোনার অলংকার দেওয়া হয়। কিন্তু ঐ মুহূর্তে আমাদের কাছে নগদ অর্থ না থাকায় আমরা আমাদের পরিচিত এক জুয়েলারির দোকান থেকে বাকিতে ৫ ভরি স্বর্ণ ক্রয় করি এবং কিছুদিন পর মূল্য পরিশোধও করে ফেলি। জানার বিষয় হল, বাকিতে উক্ত স্বর্ণ ক্রয় করা কি সহীহ হয়েছে?

Answer

বাকিতে স্বর্ণ বা রূপা ক্রয় করা জায়েয। তাই আপনাদের উক্ত লেনদেন সহীহ হয়েছে।

-আলমাবসূত, সারাখসী ১৪/২৫; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৪৮৭; আলবাহরুর রায়েক ৬/১৩২

Sharable Link

মুহাম্মাদ তাকী আশরাফ - আকুয়া, মোমেনশাহী

৪৫৮২. Question

কিছুদিন পূর্বে নতুন বাড়ি নির্মাণ করেছি। কিন্তু টাকার সল্পতার কারণে গেট বানাতে পারছিলাম না। তখন আমার এক বন্ধুর সাথে এভাবে চুক্তি হয় যে, সে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে গেট বানিয়ে আমার কাছে তা ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি করবে। আর আমি তা ৫ মাসের মধ্যে পরিশোধ করে দিব। সে মর্মে আমরা একটি ওয়ার্কশপে গিয়ে গেটের সাইজ, স্টীল ও লোহার মান ইত্যাদি বিবরণ স্পষ্ট করে অর্ডার দেই। তারপর আমার বন্ধু দোকানদারকে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে নিজের নামে দোকানের মেমো লিখিয়ে গেট বানানোর পর আমাকে দিয়ে দেওয়ার জন্য বলে আসে। নির্দিষ্ট সময়ে গেট তৈরি হওয়ার পর আমি তা নিয়ে এসে বাসায় ফিট করি। এখন জানার বিষয় হল, আমাদের উক্ত চুক্তিটি বৈধ হয়েছে কি না?

Answer

ঐভাবে চুক্তি করার পর আপনার জন্য ওয়ার্কশপ থেকে সরাসরি নিয়ে এসে গেটটি লাগিয়ে ফেলা ঠিক হয়নি। কেননা এক্ষেত্রে আপনার বন্ধুর কর্তব্য ছিল গেটটি প্রস্তুত হওয়ার পর দোকানদার থেকে তা নিজে বুঝে নিয়ে আপনার নিকট বিক্রি করা। তিনি যেহেতু তা করেননি তাই গেটটির মালিক এখনো আপনার বন্ধুই রয়ে গেছে। এখন আপনার বন্ধুর করণীয় হল, গেটটি বুঝে নিয়ে তারপর আপনার কাছে তা নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করা।

-সহীহ বুখারী, হাদীস ২১৩৫; জামে তিরমিযী, হাদীস ১২৩৪; আলমাবসূত, সারাখসী ১৩/৯; বাদায়েউস সানায়ে ৫/৩৯৪; মাজাল্লাতু মাজমাইল ফিকহিল ইসলামী, সংখ্যা ৫, ২/১৫৯৯

Sharable Link

আফিফ মাহমুদ - রাজবাড়ী

৪৫৮৩. Question

অনেক সময় আমরা আশপাশের বাড়ি থেকে কবুতরের বাচ্চা কিনে থাকি। একবার আমার ছোট ভাই এক বাড়িতে গিয়ে দেখে কবুতরের বাচ্চাগুলো খুবই ছোটো, এখনো খাওয়ার উপযুক্ত হয়নি। কিন্তু সে বাড়ির লোকজনের তৎক্ষণাৎ টাকার প্রয়োজন থাকায় তখনই তারা সেগুলো বিক্রি করে টাকা রেখে দেয়। আমার ছোট ভাই তখন এই শর্তে টাকা দিয়ে আসে যে, আমি বাচ্চাগুলো এখনই নিব না। কয়েকদিন পর বড় হলে নিয়ে যাবো এবং এক সপ্তাহ পর গিয়ে সেগুলো নিয়ে আসে।

জানতে চাই এভাবে মালিকের বাড়িতে রেখে আসার শর্তে কবুতর কেনা বৈধ হয়েছে কি না?

Answer

বিক্রিত পাখি বিক্রেতার কাছে রেখে কিছুদিন লালন-পালন করে দিতে হবে- এমন শর্ত করা নাজায়েয। এমন শর্ত করার কারণে প্রশ্নোক্ত ক্রয় চুক্তিটি ফাসেদ হয়ে গেছে। হাদীস শরীফে এমন শর্তযুক্ত ক্রয়-বিক্রয়কে নিষেধ করা হয়েছে। তবে শর্তহীনভাবে ক্রয়-বিক্রয় করার পর বিক্রেতা যদি স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে তার বাসায় রাখতে সম্মত হয় তাহলে সেটি জায়েয হবে।

-আলমুজামুল আওসাত, তবারানী, হাদীস ৪৩৬১; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৩৭৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৯/৩৯৩; ফাতহুল কাদীর ৬/৭৮; শরহুল মাজাল্লা, আতাসী ২/৬০

Sharable Link

খালিদ ইমাম - বি. বাড়িয়া

৪৫৮৪. Question

গ্রামাঞ্চলে গাভী বর্গা দেওয়ার রেওয়াজ আছে। দুধ ও বাছুরে আধা-আধি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বর্গা দেওয়া হয়। একজন আলেম থেকে শুনেছি, এমন বর্গাচুক্তি জায়েয নয়। প্রশ্ন হল, কেউ এমন চুক্তি করে ফেললে সেক্ষেত্রে মালিক ও বর্গাগ্রহিতা কে কী পাবে?

Answer

প্রশ্নোক্ত গাভী-বর্গা পদ্ধতি শরীয়তসম্মত নয়। কেউ গাভী কিনে অন্যকে পালতে দিতে চাইলে তা ‘ইজারা’ তরীকায় হতে পারে। সেক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো লক্ষ রাখতে হবে।

ক. চুক্তির শুরুতেই পালনকারীর পারিশ্রমিক নির্ধারিত হতে হবে এবং সে এই নির্ধারিত পারিশ্রমিকই পাবে।

খ. গাভীর খাবার, রক্ষণাবেক্ষণ ও চিকিৎসা খরচ মালিক বহন করবে।

গ. গাভীর দুধ ও বাছুর গরু মালিকেরই থাকবে। এতে পালনকারীর কোনো অংশ থাকবে না।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৩৯৯; ফাতাওয়া বায্যাযিয়াহ ৫/৩৭; আলবাহরুর রায়েক ৮/৩৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৩/১১৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৩৩৫

Sharable Link

আমীনুল হক - আকুয়া, মোমেনশাহী

৪৫৮৫. Question

গত বছর হজ্বের সময় কাফেলার একজন থেকে আমি ২ হাজার রিয়াল কর্জ নিয়েছিলাম। পরবর্তীতে দেশে আসার পর রিয়ালের মূল্য কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন আমি কর্জ পরিশোধ করতে চাচ্ছি। জানার বিষয় হল, রিয়ালের কোন্ মূল্য ধরে তা পরিশোধ করতে হবে? বর্তমান মূল্য ধরে, নাকি কর্জ নেওয়ার সময়ের মূল্য ধরে?

Answer

আপনি যেহেতু রিয়াল কর্জ নিয়েছিলেন তাই ঐ ব্যক্তি আপনার কাছে রিয়ালই পাবে। এখন রিয়ালের পরিবর্তে টাকা দিতে চাইলে তার সম্মতি প্রয়োজন। সে সম্মত হলে যেদিন কর্জ পরিশোধ করবেন সেদিন রিয়ালের বাজারমূল্য হিসাবে আদায় করতে হবে।

-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩৩৪৫; আলমাবসূত, সারাখসী ১৪/৯; ইলাউস সুনান ১৪/২৫৫

Sharable Link

তাওসীফুর রহমান - কাওরান বাজার, ঢাকা

৪৫৮৬. Question

আমি একজন ব্যবসায়ী। ব্যবসার স্বার্থে অনেক সময় আগাম বিক্রয় চুক্তি করতে হয়। এক্ষেত্রে প্রায় অনেক ব্যবসায়ীকে দেখা যায় যে, তারা  ‘সিকিউরিটি’ হিসাবে বিক্রেতা থেকে কোনো কিছু বন্ধক রাখে। তাই আমি জানতে চাচ্ছি, এভাবে আগাম বিক্রয় চুক্তির ক্ষেত্রে আমার (ক্রেতার) জন্য বিক্রেতা থেকে চুক্তিকৃত পণ্য সরবরাহ করা পর্যন্ত ‘সিকিউরিটি’ হিসাবে কোনো কিছু বন্ধক রাখা কি বৈধ? জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

হাঁ, আগাম ক্রয়-বিক্রয়ের (বাইয়ে সালাম) ক্ষেত্রে ক্রেতার জন্য বিক্রেতা থেকে ‘সিকিউরিটি’ হিসাবে কোনো কিছু বন্ধক রাখা জায়েয আছে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা., আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. এবং ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. সায়ীদ ইবনুল মুসায়্যিব রাহ. ও শা‘বী রাহ. প্রমুখ সাহাবী ও তাবেয়ীগণ বলেন যে, বাইয়ে সালামে ক্রেতা-বিক্রেতা থেকে  বন্ধক রাখতে কোনো অসুবিধা নেই। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ১৪০৮৬, ১৪০৮৭, ১৪০৮৮, ১৪০৯০; মুছান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ২০৩৮২, ২০৩৮৫, ২০৪০০; সুনানে কুবরা-বায়হাকী ৬/১৯)

-কিতাবুল আছল ২/৩৮৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৪৪৯; শরহুল মাজাল্লা, আতাসী ৩/২১২

Sharable Link

আনোয়ারুল করীম - সদর, কুমিল্লা

৪৫৮৭. Question

কুমিল্লা মেডিক্যাল হাসপাতালের অদূরে আমার একটি ওষুধের দোকান আছে। ফার্মেসিটা অনেক পুরনো বিধায় বহু লোকের সাথে আমার পরিচয় আছে। সে সুবাদে কোনো কোনো রোগী ডাক্তারের কাছে যাওয়ার ব্যাপারে আমার কাছে পরামর্শ চায়। আমিও তাদের নির্দিষ্ট ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেই। এতে আমার লাভ এই হয় যে, সে ডাক্তারের কাছে রোগীদের পাঠানোর কারণে ডাক্তার আমাকে তার ফি’র ৫% দিয়ে থাকে।

এখন জানার বিষয় হল, এভাবে রোগীদেরকে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়ার বিনিময়ে প্রদত্ত কমিশনের টাকা গ্রহণ করা আমার জন্য বৈধ কি না?

Answer

রোগীকে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়াটা বিনিময়যোগ্য কাজ নয়। তাই আপনার জন্য কোনো রোগীকে ডাক্তারের কাছে পাঠিয়ে বিনিময়ে কোনো কমিশন বা অন্য কিছু গ্রহণ করা জায়েয নয়, বরং তা ঘুষের অন্তর্ভুক্ত।

উল্লেখ্য, মুসলমান পরস্পর ভাই ভাই। প্রত্যেক মুসলমানের মধ্যে তার ভাইয়ের জন্য কল্যাণকামিতা থাকা ইসলামের শিক্ষা ও দ্বীনের পরিচায়ক।

-শরহুল আশবাহ, হামাবী ৩/১২৯; ফাতাওয়া বায্যাযিয়াহ ৫/৪৮; রদ্দুল মুহতার ৬/৯৫; আলমুহীতুল বুরহানী ১১/৩৫৩

Sharable Link

আতীকুর রহমান - মিরপুর, ঢাকা

৪৫৮৮. Question

এক ব্যক্তির বোনকে তার স্বামী তালাক দিলে ঐ ব্যক্তি তার ঐ বোনের জন্য দশ কাঠা জমির অসিয়ত করে, যেন ঐ ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার এ বোনের ভরণ-পোষণে কোনো সমস্যা না হয়। পরবর্তীতে ঐ বোনের ভালো জায়গায় বিয়ে হয়। তাই এখন ঐ ব্যক্তির সন্তানাদিগণ ঐ অসিয়ত বাতিল করার জন্য ঐ ব্যক্তিকে চাপ প্রয়োগ করছে। জানার বিষয় হল, ঐ ব্যক্তির জন্য উক্ত অসিয়ত বাতিল করা জায়েয হবে কি?

Answer

অসিয়ত করার পর অসিয়তকারী চাইলে জীবদ্দশায় তার কৃত অসিয়ত সংশোধন বা বাতিল করতে পারে। তাই  প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তি চাইলে তার কৃত অসিয়ত বাতিল করতে পারবে। এতে তার কোনো গুনাহ হবে না।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৩১৪৪৯; বাদায়েউস সানায়ে ৬/৪৯৩; আলমুহীতুল বুরহানী ২২/৪২৮; ফাতহুল কাদীর ৯/৩৬৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৬/৯২; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৬৫৮

Sharable Link