মুহাম্মাদ আবদুর রব - মাদানী নগর

৩৪৭৮. Question

কাপড়ে রাস্তার কাদা লাগলে কাপড় কি নাপাক হয়ে যাবে?

 

Answer

সাধারণ অবস্থায় রাস্তার কাদা পাক। তা কাপড়ে লাগলে কাপড় নাপাক হবে না। তবে যদি কাদায় নাপাকি দেখা যায় কিংবা নাপাকির গন্ধ অথবা রং প্রকাশ পায় তবে তা নাপাক। এটি কাপড়ে লাগলে ঐ জায়গা ধুয়ে নিতে হবে। 

-আলআশবাহ ওয়ান নাযাইর ১/১৯৯; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/২৩; ফাতহুল কাদীর ১/১৮৬; আততাজনীস ১/২৫৯

Sharable Link

আমিনুল ইসলাম - তুরাগ, ঢাকা

৩৪৭৯. Question

 রোগের কারণে জনৈক ব্যক্তির পেশাবের রাস্তার সাথে ক্যাথেটার (এক প্রকার নল) লাগিয়ে পেশাবের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফলে তা দিয়ে সর্বক্ষণ পেশাব ঝরতে থাকে। তাই প্রশ্ন হল, ক) ঐ ব্যক্তির পবিত্রতা অর্জনের উপায় কী?

খ) নামায শুরুর আগে ইউরিন ব্যাগটি কি খালি করে নেওয়া জরুরি? যদি খালি করে নেওয়া হয় তবুও প্রতি মিনিটে তাতে ফোঁটায় ফোঁটায় পেশাব জমা হবে। এর ফলে কি নামায আদায়ে কোনো সমস্যা হবে? আশা করি জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

ক) ক্যাথেটার লাগানোর পর থেকে ওয়াক্তের শেষ পর্যন্ত তা লাগানো থাকলে ঐ ব্যক্তি মাজুর গণ্য হবে। তাই ক্যাথেটার লাগানোর পর থেকে সে প্রতি ওয়াক্তে অযু করবে এবং ক্যাথেটার লাগানো অবস্থায় পেশাব ছাড়া অযু ভঙ্গের অন্য কোনো কারণ পাওয়া না গেলে যতক্ষণ ওয়াক্ত বাকি থাকবে ঐ অযু দিয়ে ফরযওয়াজিবসুন্নত ও নফল নামায আদায় করতে পারবে। ওয়াক্ত শেষ হওয়ার আগে পেশাব ঝরার কারণে অযু ভাঙ্গবে না। তবে অযু ভঙ্গের অন্য কোনো কারণ পাওয়া গেলে অযু নষ্ট হয়ে যাবে।

উত্তর : খ) নামায শুরুর আগে ইউরিন ব্যাগটি খালি করে নেওয়ার প্রয়োজন নেই। ওজরের কারণে ঐ ব্যাগসহ নামায আদায় করা জায়েয। 

-মাবসূত, সারাখসী ২/১৩৯; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩০৫; মারাকিল ফালাহ ৮০, ৮১; বাদায়েউস সানায়ে ১/১২৬; আলবাহরুর রায়েক ১/২১৫, ১/২১৭

Sharable Link

আবদুল খালেক - শাহজাহানপুর, ঢাকা

৩৪৮০. Question

 আমি যখন মুসাফির অবস্থায় থাকব তখন জামাতে নামায আদায় করা যাবে কি? যদি যায় তাহলে আমি যদি ইমামের সাথে শেষ দুই রাকাত পাই তাহলে কি বাকি দুই রাকাত আদায় করতে হবে? মুসাফির হিসেবে তো আমি ইমামের সাথে দুই রাকাত পেয়েই গেছি। মাসআলাটি জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

মুসাফিরের জন্য স্বাভাবিক অবস্থায় জামাতের সাথে নামায আদায় করাই নিয়ম। সফরের কোনো তাড়া না থাকলে মুসাফির জামাতেই নামায পড়বে। আর মুসাফির ব্যক্তি মুকীম ইমামের পিছনে ইক্তিদা করলে চার রাকাত বিশিষ্ট নামায চার রাকাতই পড়া জরুরি হয়ে যায়। এক্ষেত্রে ইমামের পিছনে পুরো চার রাকাত না পেলেও মাসবুকের ন্যায় ছুটে যাওয়া রাকাতগুলো ইমামের সালামের পর আদায় করে নিতে হবে। নতুবা নামায হবে না।

 

উল্লেখ্যমুসাফিরের জন্য চার রাকাত বিশিষ্ট ফরয নামায দুই রাকাত পড়ার হুকুম কেবল তখনই যখন সে একাকী নামায পড়বে বা নিজে ইমামতি করবে কিংবা অন্য কোনো মুসাফির ইমামের পিছনে ইক্তিদা করবে। মুকীম ইমামের পিছনে ইক্তিদা করলে ইমামের অনুসরণে তার উপরও চার রাকাত আদায় করা আবশ্যক হয়ে যায়। 

-তাবয়ীনুল হাকাইক ১/৫১৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৪২

Sharable Link

মুহাম্মাদ সুহাইব - মুন্সিগঞ্জ

৩৪৮১. Question

নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর জানতে চাই।

ক) খুতবার জন্য একটি মিম্বর এবং বয়ানের জন্য আরেকটি মিম্বর এভাবে দুটি মিম্বর স্থায়ীভাবে স্থাপন করার শরয়ী হুকুম কী? এটা সুন্নাহসম্মত কি না? আমাদের এলাকায় এক ব্যক্তির পরামর্শে বড় একটি মসজিদে এভাবে দুটি মিম্বর স্থাপন করা হয়েছে। যদি দুটি মিম্বর বানানো ঠিক না হয় তাহলে সাধারণ সময়ের বয়ানের জন্য চেয়ার ব্যবহার করার হুকুম কী?

খ) মসজিদে খুতবার মিম্বর তিন সিঁড়ির চেয়ে বেশি করার কী হুকুম?

গ) জুমআর দিন খুতবার পূর্বে যে বয়ান হয় তার ক্ষেত্রে

إذا دخل أحدكم والإمام على المنبر فلا صلاة ولا كلام .

হাদীসটি প্রযোজ্য হবে কি না? জনৈক আলেম বলেছেন প্রযোজ্য হবে।

Answer

ক) এক মসজিদে একাধিক মিম্বর স্থাপন করা ঠিক নয়বরং এক মসজিদে একটি মিম্বার হওয়াই নিয়মসম্মত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববীতে একটি মিম্বারই স্থাপন করেছেন। উক্ত মিম্বারে তিনি জুমার খুতবা দিতেন এবং লোকদেরকে অন্যান্য সময়ে দ্বীনী তালীমওয়ায নসীহত করতেন। খুতবার জন্য পৃথক মিম্বার এবং বয়ানের জন্য ভিন্ন মিম্বার স্থাপন করেননি। 

অতএব আপনাদের মসজিদে খুতবার মিম্বার ব্যতিত অন্য মিম্বার স্থাপন করা ঠিক হয়নি।

আর স্থায়ীভাবে অতিরিক্ত মিম্বার বানানো সহীহ না হলেও ওয়াজ-নসীহতের জন্য স্থানান্তরযোগ্য চেয়ার মসজিদে নেয়া যাবে এবং তাতে বসে ওয়ায নসীহত ইত্যাদি করা যাবে। কেননা মসজিদের ভেতর চেয়ারে বসে আলোচনা করা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত আছে। -সহীহ মুসলিমহাদীস ৮৭৬

উত্তর : খ) মসজিদের মিম্বার তিন  তাক বিশিষ্ট হওয়া উত্তম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মিম্বারটি তিন তাক বিশিষ্ট ছিল।

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিততিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মিম্বারটি ছোট আকারের ছিল এবং তা তিন তাক বিশিষ্ট ছিল। (মুসনাদে আহমাদহাদীস ২৪১৯)

সুতরাং মসজিদের মিম্বার তিন তাকের বেশি হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়।

উত্তর : গ) প্রশ্নোক্ত হাদীসটি (অর্থ: তোমাদের কেউ যখন এমন সময় মসজিদে আগমন করে যখন ইমাম মিম্বারে আছে তাহলে সে যেন ঐ সময় কোন নামায না পড়ে এবং কথাবার্তা না বলে) জুমার খুতবার সাথে সম্পৃক্ত। খুতবার পূর্বের ওয়ায নসীহত ও আলোচনার সাথে এটি  সম্পর্কযুক্ত নয়। উক্ত নিষেধাজ্ঞা যে জুমআর খুতবার সাথে সম্পৃক্ত তা এ সম্পর্কিত অন্য হাদীসে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ হয়েছে। যেমন আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনযে ব্যক্তি ইমামের খুতবা প্রদান অবস্থায় পাশের ব্যক্তিকে বলল চুপ থাক সে একটি অনর্থক কাজ করল। -সহীহ বুখারীহাদীস ৯৩৪

এছাড়া মুআত্তা ইমাম মালেক-এ সালাবা রাহ. থেকে বর্ণিত আছেতিনি বলেন আমরা উমর ইবনুল খাত্তাব রা. মিম্বারে বসার পরও কথাবার্তা বলতাম। অতপর যখন খুতবার জন্য আযান হত এবং উমর রা. খুতবা আরম্ভ করতেন তখন আমরা কথা বলা বন্ধ করে দিতাম। -মুআত্তা ইমাম মালেকহাদীস ৩৪৩

 

তাই খুতবার সময়ের উক্ত বিশেষ নিষেধাজ্ঞাকে খুতবার পূর্বের বয়ানের জন্য প্রয়োগ করা ঠিক নয়। তবে যে কোনো দ্বীনী আলোচনা চলাকালে উপস্থিত শ্রোতাদের জন্য তা মনোযোগ সহকারে শোনা এবং আলোচক ও শ্রোতাদের বলা-শোনায় ব্যঘাত হয় এমন আচরণ থেকে বিরত থাকা যে জরুরী তাতো বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই দ্বীনী আলোচনা চলাকালীন কেউ নামায পড়লে বা ব্যক্তিগত ইবাদত করতে চাইলে মজলিস থেকে দূরে করবে। যেন মজমার আলোচনার ব্যঘাত না ঘটে।

Sharable Link

মুহাম্মাদ মারূফ - খিলগাও, ঢাকা

৩৪৮২. Question

আমাদের সমাজে একটি প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় যে, কোনো বড় ব্যক্তি মারা গেলে তার গায়েবানা জানাযা পড়া হয়ে থাকে। আমাদের এলাকার কয়েকজন আলেমকে জিজ্ঞাসা করা হলে তারা এ পদ্ধতিকে সঠিক বলেন। তারা বলেন যে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাবাশার বাদশাহ নাজাশীর গায়েবানা জানাযা পড়েছিলেন।

এখন জানার বিষয় হল, গায়েবানা জানাযা নামায বৈধ কি না? আর নাজাশীর ঘটনা দ্বারা গায়েবানা জানাযা প্রমাণিত হয় কি না? দয়া করে বিস্তারিত জানাবেন।

Answer

জানাযা নামায আদায়ের জন্য মৃতের লাশ সামনে উপস্থিত থাকা জরুরি। অনুপস্থিত লাশের গায়েবানা জানাযা নামায সহীহ নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবদ্দশায় তাঁর অসংখ্য সাহাবী মদীনার বাইরে শহীদ হয়েছিলেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম থেকে তাদের গায়েবানা জানাযা পড়ার প্রমান নেই। অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদের জানাযার ব্যাপারে খুবই আগ্রহী ছিলেন এবং তিনি ঘোষণাও দিয়েছিলেন যেতোমাদের যে কেউ মৃত্যুবরণ করলে তোমরা আমাকে জানাবে। কারণ আমার জানাযা নামায তার জন্য রহমত।-সহীহ ইবনে হিব্বানহাদীস ৩০৮৩

আর শুধু নাজাশীর জানাযা পড়াটা ব্যাপকভাবে গায়েবানা জানাযা জায়েয হওয়াকে প্রমাণ করে না। এছাড়া মুসনাদে আহমদ ও সহীহ ইবনে হিব্বানে নাজাশীর জানাযা সম্পর্কিত একটি হাদীস দ্বারা বোঝা যায় যেনাজাশীর লাশ কুদরতিভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনেই উপস্থিত ছিল।

ইমরান ইবনে হুসাইন রা. থেকে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনতোমাদের ভাই নাজাশী ইন্তেকাল করেছে। সুতরাং তোমরা তার জানাযা আদায় করো। ইমরান রা. বলেনঅতপর রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়ালেন। আর আমরা তাঁর পেছনে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ালাম। অতপর তিনি তার জানাযা পড়ালেন। আমাদের মনে হচ্ছিল যেনাজাশীর লাশ তাঁর সামনেই রাখা ছিল। -মুসনাদে আহমদহাদীস ২০০০৫;সহীহ ইবনে হিব্বানহাদীস ৩০৯৮

এছাড়া অনেক মুহাদ্দিসগণ নাজাশীর জানাযা সংক্রান্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেনএ ঘটনাটি বিশেষ এক প্রয়োজনের কারণে সংঘটিত হয়েছিল। তা হলনাজাশীর মৃত্যু হয়েছিল এমন এক ভূখণ্ডে যেখানে তার জানা পড়ার মতো কোনো (মুসলিম) ব্যক্তি ছিল না। তাই আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণ নিয়মের বাইরে তার জানাযা পড়িয়েছেন।

আল্লামা যায়লায়ী রাহ.আল্লামা ইবনে তাইমিয়াহআল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম ও আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী রাহ.  এ মতকে প্রাধান্য দিয়েছেন। (দেখুন : নাসবুর রায়া ২/২৮৩যাদুল মাআদ ১/৫০২ফয়যুল বারী ২/৪৭০

উলামায়ে কেরাম এ ঘটনার আরো অন্যান্য ব্যাখ্যাও প্রদান করেছেন।

যা হোকএটা ছিল নববী জীবনের স্বাভাবিক রীতি বহির্ভূত মাত্র একটি ঘটনা। এর উপর ভিত্তি করে ব্যাপকভাবে প্রচলিত গায়েবানা জানাযাকে বৈধ বলার সুযোগ নেই। কেননা অনুসৃত সুন্নাহর সাথে এটির কোনো মিল নেই।

এছাড়া যে লাশের কোথাও জানাযার ব্যবস্থা আছে এবং তার জানাযা হয়েছে বা হচ্ছে তার গায়েবানা জানাযা পড়ার একটি ঘটনাও হাদীসের কিতাবে পাওয়া যায় না। তাই এটি অবশ্যই পরিত্যাজ্য। 

-সহীহ বুখারী, হাদীস ৪০৯০; ফাতহুল কাদীর ২/৮০, ৮১; আলমাবসূত, সারাখসী ২/৬৮; বাদায়েউস সানায়ে ২/৪৮; মাজমাউল আনহুর ১/২৭২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৪; রদ্দুল মুহতার ২/২০৯; ইলাউস সুনান ৮/২৮৩

Sharable Link

মনির যশোরী - যশোর

৩৪৮৩. Question

(ক) গরীব মানুষের জমির ফসলে ওশর/খারাজ ওয়াজিব হবে কি না?

(খ) বিভিন্ন এলাকায় প্রথা আছে যে, গরুর শরীরে পোকা লাগলে ৭জন সুদখোরের নাম লিখে তাবিজ বেঁধে দিলে পোকা বের হয়ে যায়। ঠিক ঐ রকম আরেকটা প্রথা আছে যে, হাপানি রোগ থেকে নিরাময়ের জন্য গলায় ফাঁসি দিয়ে মারা যাওয়া মানুষের গলার সাথে ফাঁসির দড়ির যে অংশটুকু লাগে সেই দড়ির অংশ দিয়ে তাবিয বানানো হয়। এ ধরনের কাজকর্ম কুফর-শিরক হবে কি না? বা এ রকম কাজ শরীয়তের দৃষ্টিতে কতটুকু সঠিক আর কতটুকু বেঠিক?

Answer

ক) দরিদ্র ব্যক্তির জমিও উশরি বা খারাজি হলে ঐ জমির ফসলের উপর উশর/খারাজ আসবে। উশর এবং খারাজের বিধান উৎপাদিত ফসল ও জমির সাথে সম্পর্কযুক্ত। এক্ষেত্রে জমির মালিক ধনী না গরীব তা লক্ষ্যণীয় নয়। এ কারণেই উশরখারাজ নাবালেগ এবং ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির জমির উপরও ওয়াজিব হয়। কিতাবুল আছল ২/১৩৪;মাবসূত সারাখসী ৩/৪

খ) প্রশ্নোক্ত প্রথাটি সম্পূর্ণ কুসংস্কার ও অলীক ধারণার অন্তর্ভুক্ত।  শরীয়তের বৈধ তাবিজ ও তদবীরের সাথে এসবের কোনো সম্পর্ক নেই। তাই এ থেকে বিরত থাকা উচিত। প্রাণীর রোগ-বালাই হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। -মাজমুউ ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া ১৯/৬৪শরহুন নববী আলা মুসলিম ১৪/১৮৩আকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম ৪/৩১৭

Sharable Link

কালামুল হাসান - বি. বাড়িয়া

৩৪৮৪. Question

আমি গত বছর হজ্ব করেছি। আলহামদু লিল্লাহ। সবগুলো আমল নিজে সুন্দরভাবে আদায় করেছি। কিন্তু ১০ যিলহজ্ব বড় জামারায় প্রচণ্ড ভিড়ের কারণে নিজে কংকর মারতে পরিনি। যে কারণে আমি স্বামীকে দিয়ে ঐ দিন কংকর নিক্ষেপ করাই। আর ১১ ও ১২ যিলহজ্বের কংকর নিজেই মারি।

দেশে আসার পর জানতে পারলাম, স্বামীকে দিয়ে কংকর মারানো নাকি বৈধ হয়নি। যদি তাই হয় তাহলে এখন আমার করণীয় কী?

Answer

জামারাতে (কংকর মারার স্থান) বর্তমানে কংকর মারার জন্য ব্যাপক প্রশস্ত ব্যবস্থা রয়েছে। তাই শুধু ভিড়ের অযুহাতে নিজে কংকর না মেরে অন্যকে দিয়ে তা নিক্ষেপের সুযোগ নেই। আর দিনে ভীড় থাকলেও রাতে তেমন ভিড় থাকে না। তাই রাতে খুব সহজেই কংকর মারা যায়।

 

অতএব উক্ত অবস্থায় অন্যকে দিয়ে কংকর মারানোর কারণে তা আদায় হয়নি। এ কারণে আপনার উপর জরিমানা দম ওয়াজিব হয়েছে। এখন আপনার কর্তব্য হলকারো মাধ্যমে হেরেমের এলাকায় ন্যূনতম এক বছর বয়সী একটি ছাগল বা দুম্বা অথবা ভেড়া যবাই করিয়ে দেয়া। 

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, ১৫৩৯৪; গুনইয়াতুন নাসিক ১৮৮; যুবদাতুল মানাসিক ১৮৪; হজ্ব ওয়া উমরা কে জাদীদ মাসাইল আওর উনকা হল, ইসলামিক ফিকহ একাডেমী, ভারত, ৫৯৯

Sharable Link

ফয়যুল্লাহ - ময়মনসিংহ

৩৪৮৫. Question

আমরা স্বামী-স্ত্রী হজ্ব করতে যাই। মক্কায় পৌঁছার পর ওমরার তাওয়াফ ও সায়ী আদায় করি। এরপর মাথা মুণ্ডিয়ে হালাল হব। তখন আমি নিজের মাথা মুণ্ডানোর আগে আমার স্ত্রীর চুল কেটে দিই। এরপর নিজের মাথা মুণ্ডন করি। আমার এ কাজের কারণে কি আমাকে কোনো জরিমানা আদায় করতে হবে?

Answer

নাএ কারণে আপনার উপর কোনো জরিমানা ওয়াজিব হয়নি। কেননা নিজের হালাল হওয়ার সময় হয়ে গেলে (অর্থাৎ ওমরার ক্ষেত্রে তাওয়াফ ও সায়ীর পর এবং হজ্বের ক্ষেত্রে দমে শোকর তথা হজ্বের কুরবানী করার পর) নিজের মাথার চুল কাটার আগে অন্যের চুল কেটে দেওয়া জায়েয আছে। এ কারণে জরিমানা ওয়াজিব হয় না। 

-মানাসিক, মোল্লা আলী আল ক্বারী পৃ. ২৩০

Sharable Link

মুহাম্মাদ মুতাসিম বিল্লাহ - মাইজদাপুর, নোয়াখালী

৩৪৮৬. Question

আমাদের দেশে কারো কারো থেকে শুনা যায় কাবা শরীফ দেখামাত্রই নাকি হজ্ব ফরয হয়ে যায়। এটা সঠিক কি না? আমি উত্তরটা জানার জন্য আপনাদের নিকট খুবই আগ্রহী। আর উমরাতে যারা যান তাদের জন্য কি হজ্ব করা ফরয? যদি তার সামর্থ্য না থাকে তাহলে তার কী করণীয়?

Answer

কাবা শরীফ দেখলে কিংবা উমরা করতে গেলে হজ্ব ফরয হয়ে যায়’ এ ধারণা ঠিক নয়। কাবা শরীফ দেখা না দেখার সাথে হজ্ব ফরয হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। হজ্ব ফরয হওয়ার জন্য সামর্থ্য থাকা শর্ত। আল্লাাহ তাআলা বলেছেন, (তরজমা) যাদের নিকট এই ঘর (কাবা শরীফ) পর্যন্ত পৌঁছার সামর্থ্য আছে তাদের উপর এই ঘরের হজ্ব করা ফরয। -সূরা আলে ইমরান : ৯৭

 

তাই হজ্ব ফরয হওয়ার জন্য হজ্বের মৌসুমে হজ্বে যাওয়া-আসার খরচসহ সফরে থাকাকালীন দিনগুলোতে পরিবারের লোকদের স্বাভাবিক খরচের ব্যবস্থা থাকা জরুরি। এছাড়া বর্তমানে হজ্বের জন্য সৌদি সরকার কর্তৃক অনুমতি থাকা এবং বৈধ ভিসাও প্রয়োজন। উমরা ভিসায় গিয়ে হজ্ব করার অনুমতি থাকে না। তাই উমরা করতে গিয়ে হজ্বের জন্য থেকে যাওয়া আইনত নিষেধ। সুতরাং উমরা করতে যাওয়ার কারণে হজ্ব ফরয হবে না। 

-লুবাবুন নাসিক ৪২-৪৩; গুনইয়াতুন নাসিক ১৮, ২২; মাসালিক ১/২৬২; মানাসিক ৪২-৪৩, ৫৩

Sharable Link

নাজমুল ইসলাম - শরীয়তপুর

৩৪৮৭. Question

আমার খালাতো বোনের সাথে আমার বিয়ের কথাবার্তা বিগত এক বছর যাবৎ চলছে। এখন আমার মা বলছেন, আমি তাকে দুধ পান করিয়েছি। এ ব্যাপারে কোনো পুরুষ সাক্ষী নেই। সুতরাং আমি জানতে চাই, শরীয়তের দৃষ্টিতে আমার জন্য এই বিয়ে বৈধ হবে কি না? কুরআন-সুন্নাহর আলোকে জানালে কৃতজ্ঞ হব।

 

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে দুধ পান করার ব্যাপারে কোনো পুরুষ সাক্ষী না থাকলেও আপনার মা যেহেতু ঐ মেয়েকে দুধ পান করানোর কথা বলেছেন এবং এখনো মেয়েটির সাথে আপনার বিবাহ হয়নি তাই সতর্কতামূলক ঐ মেয়ের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ না হওয়াই আপনার কর্তব্য। 

-তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/৬৪৪; তানকীহুল ফাতাওয়াল হামীদিয়া ১/৩৪; মিনহাতুল খালেক আলাল বাহরির রায়েক ৩/২৩২; মাবসূত, সারাখসী ৫/১৩৮

Sharable Link

উম্মে আবদুল্লাহ - লক্ষীপুর

৩৪৮৮. Question

আমার বাচ্চার বয়স ২ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই একজন আলেমকে দুধ পান করানোর সময় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আড়াই বছর পর্যন্ত পান করানো যাবে। তারপর হারাম হবে। এখন জানতে পারলাম, ২ বছরের পর দুধ পান করানো যাবে না।

আমার জানার বিষয় হল, দুই বছরের পর দুধ পান করানোর কোনো সুযোগ আছে কি না? এবং ঐ আলেমের কথা সঠিক কি না? দয়া করে দলিলসহকারে জানালে কৃতজ্ঞ হব।

Answer

বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী সন্তানকে দুধ পান করানোর মেয়াদ চান্দ্র বছর হিসেবে দুই বছর। কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, (তরজমা) আর মায়েরা তাদের সন্তানদের পূর্ণ দুই বছর দুধ পান করাবে। (এ বিধান) তার জন্য যে দুধ পানের (মেয়াদ) পূর্ণ করতে চায়। -সূরা বাকারা : ২৩৩

আরেক আয়াতে ইরশাদ হয়েছেআর তার (সন্তান) দুধ ছাড়ানো হয় দু বছরে। -সূরা লুকমান : ১৪

সুতরাং দুই বছর পূর্ণ হওয়ার পর সন্তানকে আর দুধ পান করানো যাবে না। তাই আড়াই বছর পর্যন্ত পান করানো যাবে- এ কথা ঠিক নয়। 

-সূরা বাকারা : ২৩৩; তাফসীরে তবারী ৪৯৬২; মুখতাসারুত তহাবী ২২০; ফাতহুল কাদীর ৩/৩০৯; গুনইয়াতু যাবীল আহকাম শুরুম্বুলালীয়া ১/৩৫৫, ৩৫৬; আলবাহরুর রায়েক ৩/২২৩

Sharable Link

খুবাইব - ইসলামপুর, টঙ্গী

৩৪৮৯. Question

আমাদের এলাকার মসজিদের জায়গা অনেক। মোট জমির উত্তর দিকের অংশে অর্ধেকের বেশি জমিতে মূল মসজিদের দ্বিতল ভবন। মসজিদের স্থায়ী আয়ের জন্য জমির দক্ষিণ অংশে একটি পৃথক তিন তলা ভবন তৈরি করা হয়েছে। উক্ত ভবনের নিচ তলা ও দোতলায় দোকান ও মেস হিসেবে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। আর তৃতীয় তলায় মসজিদ কমিটির পরিচালনায় একটি হাফিজিয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কিন্তু মাদরাসার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই মাদরাসার পক্ষ থেকে মসজিদকে কোনো ভাড়া প্রদান করা হয়নি এবং তখন ভাড়া প্রদানের মতো আর্থিক সংগতিও মাদরাসার ছিল না। পরবর্তীতে মসজিদ-মাদরাসার নতুন কমিটি মাদরাসা ফ্লোরের ভাড়া ১০,০০০/- টাকা নির্ধারণ করে দেয় এবং মাদরাসা তা পরিশোধ করতে থাকে। কিন্তু মাদরাসার উক্ত ফ্লোরের প্রকৃত ভাড়া হবে ৩০,০০০/- টাকা। যা মাদরাসা পরিশোধ করতে সক্ষম নয়।

উল্লেখ্য যে, মূল মসজিদের নিচ তলায় নামায আদায় হয়। শুক্রবারের জুমআ ও দুই ঈদের সময় নিচতলায় স্থান সংকুলান না হওয়ায় মসজিদের দোতলা ও ছাদে মুসল্লি­গণ জামাাতে শরিক হন।

বর্তমানে মাদরাসার বোর্ডগ্রুপ, নাজেরা এবং হিফয বিভাগে ছাত্রসংখ্যা ৬০ জন এবং শিক্ষক তিনজন। মাদরাসার জায়গায় ছাত্র সংকুলান না হওয়ায় বোর্ডগ্রুপ নাজেরা বিভাগের ছাত্রদের মসজিদের দোতলায় থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জুমা-ঈদের সময় মসজিদের দোতলা খালি করে দেওয়া হয়। ভবিষ্যতে মাদরাসার ভবনটিতে আরো এক তলা বৃদ্ধি করে মসজিদে অবস্থানকারী ছাত্রদের সেখানে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

আর অত্র মসজিদ-মাদরাসার নামে দীর্ঘদিন হতেই সরকারী অগ্রণী ব্যাংকে সঞ্চয়ী হিসাব রয়েছে। যেখান থেকে কিছু সুদ পাওয়া যায়। এখানে প্রায় ১,২০,০০০/- টাকারও বেশি সুদ জমা হয়েছে। যা কমিটির নিয়ন্ত্রণে আছে।

উল্লে­খ্য যে, বর্তমানে মসজিদ-মাদরাসার নামে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড এবং শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকে হিসাব খুলে লেনদেন করা হচ্ছে। যেখান থেকে মুনাফা বাবদ প্রাপ্ত অর্থ মসজিদ-মাদরাসায় খরচ করা হচ্ছে।

এখন জানার বিষয় হল,

ক) মসজিদের স্থায়ী আয়ের জন্য নির্মিত ভবনের একটি অংশে বিনা ভাড়ায় মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা সঠিক ছিল কি না? মাদরাসা প্রতিষ্ঠাকালে ভাড়া প্রদানের মতো আর্থিক অবস্থা মাদরাসার ছিল না।

খ) মাদরাসা প্রতিষ্ঠার প্রায় ৭ বছর পর থেকে প্রকৃত ভাড়া ৩০,০০০/- এর অধিক হওয়া সত্তে¡ও মাদরাসা থেকে ১০,০০০/- টাকা ভাড়া নেওয়া ঠিক হচ্ছে কি না?

গ) মসজিদের দোতলায় সাময়িকভাবে ছাত্রদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা ঠিক কি না?

ঘ) মসজিদ-মাদরাসার ব্যাংক হিসাবে যে সুদ জমা হয়েছে তা মসজিদ-মাদরাসায় স্বাভাবিক কাজে খরচ করা যাবে কি? ব্যাংক কর্তৃপক্ষ হিসাব পরিচালনার জন্য পরিচালনা ফি বাবদ কিছু অর্থ কেটে নেয়। এ টাকা সুদের অংশ থেকে কাটা যাবে কি না?

ঙ) সুদের টাকা মসজিদ-মাদরাসার বাথরুম তৈরির কাজে ব্যয় করা যাবে কি না?

চ) সুদের টাকা মাদরাসার লিল্লাহ ফান্ডে খরচ করা ঠিক হবে কি না?

ছ) উক্ত মসজিদটি সরকারী ওয়াকফ প্রশাসকের দপ্তরে নিবন্ধিত। উক্ত দপ্তরে প্রতি বছর কিছু চাঁদা পরিশোধ করতে হয়। সুদের টাকা দ্বারা উক্ত ফি পরিশোধ করা যাবে কি না?

জ) ইসলামী ব্যাংকগুলোর মুনাফা মসজিদ-মাদরাসার স্বাভাবিক কাজে ব্যবহার করা বৈধ হচ্ছে কি না?

Answer

ক ও খ) প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী মসজিদের আয়ের উদ্দেশ্যে নির্মিত ভবনটির তৃতীয় তলায় মসজিদ কর্তৃপক্ষের মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা জায়েয হয়েছে। কেননা কুরআন মাজীদ শেখা-শেখানোদ্বীনী ইলমের চর্চা মসজিদের মৌলিক উদ্দেশ্যাবলী ও কার্যক্রমের অংশ। বিখ্যাত ফকীহ আল্লামা ইবনে নুজাইম রাহ. আল বাহরুর রায়েকে বলেছেনমসজিদ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য হলনামায আদায় করাইতেকাফযিকর আযকারইলম শেখা,শেখানো এবং কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত করা। (আল বাহরুর রায়েক ২/৩৪)

তাই মসজিদের উক্ত উদ্দেশ্যাবলী ও কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কর্তৃপক্ষের জন্য মসজিদের মালিকানাধীন ভবনে হাফিজিয়া ও নুরানী মক্তব বিভাগ চালু করা উত্তম কাজ হয়েছে। আর মসজিদভিত্তিক এধরনের দ্বীনী মাদরাসা যেহেতু মসজিদেরই অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের ন্যায় তাই মাদরাসার আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে মাদরাসা থেকে ভাড়া না নেওয়া অন্যায় হয়নি।

অনুরূপ পরবর্তীতে মাদরাসা থেকে ভাড়া আদায় করার সময় তুলনামূলক কম ভাড়া নেয়াও অবৈধ হচ্ছে না। মাদরাসার ভাড়া অন্য তলার ভাড়ার সাথে সামঞ্জস্য রেখে নিতে হবে তা কর্তৃপক্ষের জন্য আবশ্যক নয়। অর্থাৎ এক্ষেত্রে কম ভাড়া নেয়া দোষণীয় নয়বরং ভাড়া কম নেয়ার অর্থ হবে মসজিদ তার জায়গা ব্যবহারের অনুমতি দিয়ে মাদরাসাকে সহযোগিতা করছে। যা মসজিদের উদ্দেশ্যেরই অন্তর্ভুক্ত।

গ) প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মাদরাসা ভবনে যেহেতু সকল ছাত্রের থাকার পর্যাপ্ত জায়গা হচ্ছে না তাই এমন প্রয়োজনের ক্ষেত্রে ছাত্রদের জন্য অস্থায়ীভাবে মসজিদে থাকা জায়েয হবে। তবে এক্ষেত্রে নিম্নের বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখা জরুরী:

১. মসজিদের আদব এহতেরাম পূর্ণরূপে বজায় রাখতে হবে।

২. মসজিদের পবিত্রতা ক্ষুণœ হয় এমন কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।

৩. শোরগোলহৈচৈ ইত্যাদি থেকে ছাত্রদেরকে নিবৃত রাখতে হবে।

৪. ছাত্ররা মসজিদে শোয়ার সময় ভারি তোশক/কাঁথা বিছিয়ে নিবে।

৫. খানা পরিবেশন যদি মাদরাসা ভবনে ব্যবস্থা করা সম্ভব হয় তাহলে সেখানে

করাটাই উত্তম হবে। আর যদি মসজিদেই করতে হয় তাহলে দস্তরখান বিছিয়ে এমনভাবে পরিবেশন করবে যেন মসজিদ ময়লা না হয় এবং পরিবেশন শেষে সাথে সাথে দস্তরখান উঠিয়ে মেঝে পরিষ্কার করে নিবে। উক্ত বিষয়গুলো নিশ্চিত করার জন্য সর্বদা সেখানে নেগরান উস্তায রাখতে হবে। -সহীহ মুসলিমহাদীস ২৮৫এলাাউস সুনান ৫/১৫৭-১৫৯

চ ও ছ) সুদী ব্যাংকের সঞ্চয়ী হিসাব সম্পূর্ণ সুদী চুক্তির অন্তর্ভুক্ত। উক্ত হিসাব খোলা এবং মূল টাকার অতিরিক্ত গ্রহণ করা দুটোই হারাম। মসজিদ আল্লাহ তাআলার ঘর। মসজিদের নামে সুদী হিসাব খোলা অধিকতর অন্যায় কাজ। মসজিদ কমিটির কর্তব্য হলঅনতিবিলম্বে ঐ সুদী হিসাব বন্ধ করে মূল টাকা উঠিয়ে নেয়া। আর মূল টাকার অতিরিক্ত যে সুদ জমা হয়েছে তা উঠানো হলে গরীব মিসকীনকে সদকা করে দিতে হবে। সুদের টাকা মসজিদ মাদরাসার কাজে লাগানো জায়েয হবে না। মসজিদ আল্লাহ তাআলার ঘর। মাদরাসা দ্বীনী ইলমের কেন্দ্র। এগুলো মুসলমানদের হালাল ও পবিত্র দান অনুদান দ্বারা নির্মিত ও পরিচালিত হবে। সুদের মত ঘৃণিত অর্থ মসজিদ মাদরাসার মত পবিত্র জায়গাতে ব্যয়ের চিন্তা করাও ঠিক নয়। এ টাকা মসজিদ মাদরাসার সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে যথা বাথরুম তৈরী বা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজেও ব্যবহার করা যাবে না। অনুরূপ উক্ত টাকা দ্বারা একাউন্ট পরিচালনা ফি আদায়শুল্ক আদায়ওয়াকফ নিবন্ধনের চাঁদা পরিশোধ করা থেকেও বিরত থাকতে হবে। কারণ এমনটি করার মানে হবে প্রকারান্তরে সুদী অর্থ দ্বারা উপকৃত হওয়া। -সূরা বাকারা (২) : ২৭৫তাফসীরে কুরতুবী ৩/২২৫২৩৭

জ) আমাদের  জানা মতে এ দেশে শরীয়া মোতাবেক পরিচালিত হওয়ার দাবীদার ইসলামী ব্যাংকগুলোর বর্তমান বিনিয়োগ পদ্ধতি ও লেনদেন  যথাযথভাবে শরীয়ার নীতিমালা অনুসরণ করে বাস্তবায়িত হয়না। তাই যতদিন এ সকল ব্যাংক যথাযথ শরীয়া অনুসরণের বিষয়টি বাস্তবিকভাবে নিশ্চিত না করবে ততদিন ইসলামী নামের ব্যাংকগুলোর একাউন্ট থেকে প্রাপ্ত মুনাফা ভোগ করা বা তা থেকে একাউন্টধারীর উপকৃত হওয়া কিছুতেই নিরাপদ হবে না।

সুতরাং এ ধরনের ব্যাংক একাউন্ট থেকে প্রাপ্ত টাকাও মসজিদ মাদরাসার জেনারেল কাজে ব্যবহার করা ঠিক হচ্ছে নাবরং এগুলো গরীব মিসকীনকে বা কোন প্রতিষ্ঠানের গোরাবা ফান্ডে সদকা করে দেওয়া উচিত হবে। আপনাদের মাদরাসার গোরাবা ফান্ডেও চাইলে খরচ করতে পারবেন। তবে উত্তম হবে অন্যত্র দান করে দেওয়া।

মসজিদ-মাদরাসা পরিচালনা করতে হবে মুসলমানদের হালাল দান খয়রাতের মাধ্যমে। এক্ষেত্রে ব্যাংকের মুনাফাকে আয়ের উৎস বিবেচনা করা ঠিক হবে না। -সহীহ মুসলিমহাদীস ১৫৯৮শরহু মুসলিমনববী ১১/২৭ফাতহুল বারীইবনে হাজার ১/১৫৪আল মাআঈরুশ শারইয়্যাহ পৃ. ১১৭১৪৫

Sharable Link

মুহাম্মাদ হামীদুল ইসলাম - ঢাকা

৩৪৯০. Question

আমার সরিষার তেলের একটা ফ্যাক্টরী আছে। আমি প্রতিযোগিতায় অন্য সরিষার তেলের ফ্যাক্টরীর সাথে পাল্লা দিয়ে পারছি না। কারণ, তারা সরিষার তেলের সাথে পামঅয়েল, সয়াবিন ও রাইজ ব্রান্ড তেল মিক্স করে এবং কম দামে বিক্রি করে। আমার চেয়ে প্রতি টিনে (১৬ কেজি) একশত টাকা কমে বিক্রি করে। (উল্লেখ্য যে, তারা তেলের সাথে তেলই মিক্স করছে; তা অখাদ্য নয় এবং স্বাস্থ্যের জন্য কোন ক্ষতিকর নয়।) তাই আমার ফ্যাক্টরী বন্ধের দিকে চলে যাচ্ছে। তারপরও চালু রেখেছি । এখন আর চালু রাখতে পারছি না। গত আগস্ট মাসে আমার প্রায় সাতাইশ লক্ষ টাকা লোকসান হয়েছে। আমি আশঙ্কা করছি, এই মাসে আমাদের এই ফ্যাক্টরীতে প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ টাকা লোকসান হবে।

অতএব, মুফতী সাহেবের কাছে জানার বিষয় হল, আমিও সরিষার তেলের সাথে পামঅয়েল, সোয়াবিন ও রাইজ ব্রান্ড তেল মিক্স করে কমদামে বিক্রি করে বাজারে অন্যদের সাথে টিকে থাকতে পারি কি? অন্যথায় ফ্যাক্টরী টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না । ইসলামী আইনে এর সঠিক সমাধান কী? তা জানতে চাই।

Answer

ইসলামে আমানতদারীসততা ও সত্যবাদীতার গুরুত্ব অনেক বেশী। ব্যবসা-বানিজ্যের ক্ষেত্রেও বিশেষভাবে এগুলোর প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এসব গুণাবলীর সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য করা অধিক বরকতের কারণ। আর পরকালেও রয়েছে এর বড় পুরস্কার। পক্ষান্তরে ব্যবসায় মিথ্যাধোঁকাখেয়ানত ইত্যাদির আশ্রয় নেওয়া শরীয়তের দৃষ্টিতে যেমন নাজায়েয ও হারাম তেমনি দুনিয়াতেও এগুলো তাদের জন্য অনেক অকল্যাণ ও বেবরকতির কারণ।

দ্বিতীয়তঃ শরীয়তের বিধান অনুযায়ী ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে পণ্য ও মূল্য উভয়টি সুনির্ধারিত হওয়া জরুরী। এবং ক্রেতার সাথে যে নাম ও গুণগত মানের পণ্য বিক্রির কথা হবে  কিংবা পণ্যের গায়ে বিক্রেতা পণ্যের যে নাম ও গুণগত মান লিখে দিবে ক্রেতাকে পুরোপুরি ঐ মানের পণ্যই দেওয়া জরুরী। এক্ষেত্রে বিক্রেতা যদি বর্ণিত বা ঘোষিত পণ্য না দেয়অথবা তাতে মিশ্রণ করে কিংবা যা বলেছে তার থেকে নি¤œমানের পণ্য দেয় তবে তা সম্পূর্ণ নাজায়েয হবে।

সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ক্রেতাদেরকে সরিষার তেল বলে কিংবা তেলের টিন বা বোতলের গায়ে সরিষার তেললিখে বিক্রি করতে চাইলে খাঁটি সরিষার তেলই দিতে হবে। সরিষার তেলের সাথে পামওয়েল বা সয়াবিন ইত্যাদি মিশিয়ে সরিষার তেল হিসাবে তা বিক্রি করা জায়েয হবে না। এই মিশ্রণের কারণে স্বাস্থ্যগতভাবে তা ক্ষতিকর না হলেও এবং মূল্য কিছু কম নিলেও সরিষার তেল বলে তা বিক্রি করা যবে না। কেননা এর দ্বারা অন্য তেল মিশানোর বিষয়টি ক্রেতা থেকে গোপন করা হয়। যা ধোঁকা ও মিথ্যার অন্তর্ভুক্ত। তাই সরিষার তেলের সাথে পামঅয়েল ইত্যাদি মিশালে ক্রেতাকে বিষয়টি জানিয়ে বিক্রি করতে হবে। ক্রেতাকে জানিয়ে বিক্রি করলে অন্যায় হবে না । কিন্তু অন্য তেল মিশানোর বিষয়টি না জানিয়ে সরিষার তেল বলে বিক্রি করা জায়েয হবে না। এটি ক্রেতার সাথে প্রতারণার অন্তর্ভুক্ত। হাদীস শরীফে এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা ও ধমকি এসেছে।

উকবা ইবনে আমির রা. থেকে বর্ণিত আছেতিনি বলেছেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনমুসলমান মুসলমানের ভাই। কোন মুসলমানের জন্য পণ্যে ত্রæটি থাকা সত্তে¡ও তা উল্লে­খ না করে আরেকজনের কাছে বিক্রি করা জায়েয নয়। (সুনানে ইবনে মাজাহহাদীস ২২৪৬) আরেক হাদীসে আছেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনক্রয়-বিক্রয় লেনদেনে উভয় পক্ষ যদি সত্যবাদী হয় এবং (দোষ-ত্রুটি) কোন কিছু গোপন না করে স্পষ্ট সবকিছু বলে দেয় তবে তাদের ক্রয়-বিক্রয় বরকতপূর্ণ হবে। কিন্তু তারা যদি মিথ্যা বলে এবং (দোষ-ত্রুটি) গোপন করে তাহলে তাদের ক্রয়-বিক্রয় থেকে বরকত উঠিয়ে নেওয়া হবে। (সহীহ বুখারীহাদীস ২১১০) আরেক হাদীসে আছেআবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেনএকব্যক্তি খাদ্যপণ্য সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ পণ্যের নিকট দিয়ে অতিক্রম করেন এবং তাতে হাত ঢুকালেন। তিনি দেখতে পেলেনভেতরের পণ্য নিম্নমানের। তখন তিনি বললেনএটা পৃথকভাবে বিক্রি কর আর ওটা পৃথকভাবে বিক্রি কর। কেননা যে আমাদের সাথে প্রতারণা করে সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। (মুসনাদে আহমাদ,হাদীস ৫১১৩)

মোটকথাএখানে পদ্ধতি দুটি : যদি সরিষার তেল বলেই বিক্রি করতে চান তবে ক্রেতাকে খাঁটি সরিষার তেলই দিতে হবে। এর সাথে অন্য তেল মিশানো যাবে না। আর যদি অন্য তেল মিশিয়ে বিক্রি করতে চান তাহলে বিক্রির সময়েই ক্রেতাকে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া জরুরী।

উল্লেখ্যব্যবসায় লোকসান থেকে বাঁচার জন্য চিন্তা-ভাবনা করে জায়েয কোনো পন্থা বের করতে হবে। যেমন,ক্রেতাদেরকে আপনারা যদি বুঝাতে পারেন যে আপনাদের পণ্য বাস্তবেই খাঁটিএর সাথে অন্য তেল মিশানো হয় নাতাহলে ক্রেতাগণ কিছুটা বেশি মূল্য দিয়েও তা ক্রয় করতে আগ্রহী হবে। আর ব্যবসায় লোকসানের অজুহাতে শরীয়ত নিষিদ্ধ কোনো পথ অবলম্বন করার কোন সুযোগ নেই। 

-আলমুহীতুল বুরহানী ১০/৫০১; আল বাহরুর রায়েক ৬/৩৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৩/১০০; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৪৭; আল মাজমূ শরহুল মুহাযযাব ১২/১১৫

Sharable Link

মুতাসিম বিল্লাহ - মাইজদাপুর, নোয়াখালি

৩৪৯১. Question

৪ ভাইয়ের ১টি শরিকানা পুকুর আছে। ১ম ভাইয়ের জায়গা আছে ঐ পুকুরে ৪ অংশ, ২য় ভাইয়ের ৩ অংশ, ৩য় ভাইয়ের ২ অংশ আর ৪র্থ ভাইয়ের ১ অংশ। ঐ পুকুরে কেউ কখনো মাছ চাষ করেনি। তবে মাছ চাষ না করা হলেও এমনিতেই কিছু মাছ পাওয়া যায়। এখন আমার প্রশ্ন হল, মাছগুলো কি সমান সমান ভাগ হবে? নাকি জায়গার অংশ অনুযায়ী হবে?

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে পুকুরের ঐ মাছ  প্রত্যেক শরিকের অংশ অনুপাতেই বণ্টন করতে হবে। আর মাছ ধরতে কোনো খরচ হলে তাও প্রত্যেকে নিজ নিজ অংশ অনুপাতে তা বহন করবে। -মাজাল্লাাহ ১০৭৩

Sharable Link

মুহাম্মাদ তারা মিয়া - নেত্রকোণা

৩৪৯২. Question

ট্রেনে ঢাকা যাব। এজন্য টিকেট করার জন্য লাইনে দাঁড়াই। কিন্তু সিরিয়াল আসার আগেই টিকেট শেষ হয়ে যায়। আর টিকেট ছাড়া কোনো যাত্রীকে ট্রেনে উঠানো হয় না। নেত্রকোণা থেকে ঢাকার ভাড়া ১৫০/- টাকা। কোনো উপায় না দেখে আরো কয়েকজন মিলে ট্রেনের ছাদে উঠে যাই এবং বিনে খরচে ঢাকা পৌঁছি।

এখন আমার প্রশ্ন হল, এভাবে ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ করা আমার জন্য কতটুকু ঠিক হয়েছে? এবং আমার উপর এর ভাড়া আবশ্যক কি না? ভাড়া দিতে হলে কতটুকু দিতে হবে? বিস্তারিত দলিলসহ জানালে কৃতজ্ঞ হব।

Answer

প্রশ্নোক্ত অবস্থায়ও বিনা টিকেটে ট্রেনে ভ্রমণ করা বৈধ হয়নি। এছাড়া ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ করাও আইনত নিষিদ্ধ। উভয় ক্ষেত্রেই আইন অমান্য করার কারণে গুনাহ হয়েছে। সরকারের ব্যবস্থাগত এ সকল বৈধ আইন জনগণের জন্য মেনে চলা আবশ্যক। এছাড়া ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ করা খুবই বিপদজনক। নিজেকে এমন বিপদজনক অবস্থার সম্মুখীন করাও জায়েয নয়।

 

এখন আপনার কর্তব্য হলউক্ত কাজের জন্য তওবা করা এবং ঐ ট্রেনে নেত্রকোণা থেকে ঢাকার যা ভাড়া সে মূল্যের স্ট্যান্ডিং টিকেট (আসনবিহীন) ক্রয় করে ছিঁড়ে ফেলা। এতে আপনি ভাড়ার দায় থেকে মুক্ত হয়ে যাবেন। -ইমদাদুল ফাতাওয়া ৩/৪৪৫

Sharable Link

মুহাম্মাদ সানাউল্লাহ - আমিরাবাদ, লোহাগড়া

৩৪৯৩. Question

আমার এক মামা বিদেশ থাকেন। তিনি আমার একাউন্টে তার পরিবারের জন্য টাকা পাঠান। মামা ঐ টাকা আমার একাউন্টে আমানত হিসেবে রাখেন। ঐ টাকা আমার একাউন্টে দীর্ঘদিন থেকে যায়। তাই আমি মামার অনুমতি নিয়ে ঐ টাকা দিয়ে ব্যবসা করি। এতে আমার অনেক লাভ হয়েছে। তবে কিছুদিন আগে ব্যবসায় বিপুল পরিমাণ লস হলে মূলধনের অনেক ক্ষতি হয়।

জানার বিষয় হল, মামা যেহেতু আমার কাছে ঐ টাকা আমানত হিসেবে রেখেছে এবং মামার অনুমতি নিয়েই ব্যবসা করেছি তাই এ অবস্থায় মামার টাকা ফিরিয়ে দিতে হবে কি না?

 

 

Answer

হ্যাঁপ্রশ্নোক্ত অবস্থায় আপনার মামার সকল টাকা তাকে ফিরিয়ে দিতে হবে। কেননা আপনার মামা ঐ টাকা  প্রথমে আমানত হিসেবে রাখলেও পরবর্তীতে যেহেতু তার অনুমতি সাপেক্ষেই আপনি তা  ব্যবসায় খরচ করেছেন তাই তা আমানতের টাকা থাকেনিবরং ঋণের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে। সুতরাং এখন ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হলেও মামার সকল টাকা তাকে ফিরিয়ে দিতে হবে।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৩৬০; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৩১৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৬/৫৬

Sharable Link

মুহাম্মাদ হাবীবুল্লাহ - আমিরাবাদ, লোহাগড়া

৩৪৯৪. Question

দুই বছর আগে এক ব্যক্তিকে আমি পঞ্চাশ হাজার টাকা ঋণ দিয়েছিলাম। এর মধ্যে সে ৩০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছে। বাকি টাকা এখনো পরিশোধ করেনি। পূর্বে তার কাছে বাকি টাকা পরিশোধ করার মতো সামর্থ্য ছিল না। তাই আমি তাকে বাকি টাকা মনে মনে মাফ করে দিয়েছিলাম। তাকে কোনো কিছু বলিনি। এখন তার কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা আছে।

প্রশ্ন হল, আমি যেহেতু তাকে মনে মনে মাফ করে দিয়েছি এখন আমার জন্য তার থেকে বাকি টাকা চাওয়া এবং নেওয়া জায়েয হবে কি?

Answer

শুধু মনে মনে ঋণ মাফ করে দিলে তা মাফ হয়ে যায় নাবরং ঋণগ্রহিতাকে মাফের কথা জানালে এবং সে গ্রহণ করলে তখন মাফ হবে। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঋণগ্রহিতা থেকে বাকি টাকা চাওয়া এবং নেওয়া জায়েয হবে। 

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৩৮৪; আলমুহীতুল বুরহানী ৯/১৮২; রদ্দুল মুহতার ১/৫৩৫

Sharable Link

মুহাম্মাদ আবদুল আওয়াল - লোহাগড়া, চট্টগ্রাম

৩৪৯৫. Question

আমি এক বন্ধু থেকে পনের দিনের জন্য একটি বই নিজে পড়ার জন্য নিয়েছিলাম। বইটি আমার জন্য খুবই দরকারি ছিল। ঐ বই আমি এক সপ্তাহের মধ্যে পড়ে শেষ করে ফেলি। আমার অপর এক বন্ধু ঐ বইটি আমার কাছে পড়ার জন্য চায়। এখনো যেহেতু তা ফেরত দিতে সপ্তাহ বাকি আছে তাই আমি তাকে ৪/৫ দিনের জন্য পড়তে দেই। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তার রুমে আগুন লেগে বইটি পুড়ে যায়।

প্রশ্ন হল, এখন আমাকে কি ঐ বইয়ের জরিমানা দিতে হবে?

Answer

হ্যাঁআপনাকে ঐ বইয়ের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কেননা আপনার বন্ধুর স্পষ্ট অনুমতি ছাড়া অন্যকে পড়তে দেওয়া ঠিক হয়নি। এটি আমানতপরিপন্থী হয়েছে।  আর এরপর যেহেতু তা নষ্ট হয়েছে তাই আপনাকে এর ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। 

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/২৯০; শরহুল মাজাল্লা ৩/৩২১

Sharable Link

মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম - ফেনী

৩৪৯৬. Question

প্রতি বছর আমরা নির্দিষ্ট পাঁচ শরিক মিলে কুরবানী করি। এ বছরও কুরবানীর এক সপ্তাহ আগে ৫জন মিলে একটি গরু ক্রয় করি। কুরবানীর আগের দিন আমাদের এক প্রতিবেশী তাতে শরিক হতে চাইলে আমরা তাকে শরিক করে নিই। জানার বিষয় হল, এভাবে শরিক করার কারণে আমাদের কুরবানী আদায়ে কোনো ত্রæটি হয়েছে কি না? জানালে উপকৃত হব।

Answer

প্রশ্নোক্ত অবস্থায় সকলের কুরবানী সহীহ হয়েছে। তবে পাঁচ জনে মিলে কুরবানী দেওয়ার নিয়তে পশু ক্রয়ের পর নতুন করে শরিক নেওয়া অনুত্তম হয়েছে। এক্ষেত্রে ঐ শরিক থেকে প্রাপ্য টাকা সদকা করে দেওয়া উত্তম। 

-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১০; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৪১৭; মাবসূত, সারাখসী ১২/১৫

Sharable Link

যায়েদ হাসান - খুলনা

৩৪৯৭ . Question

এক ব্যক্তি কুরবানীর পশু ক্রয়ের পর ১২ যিলহজ্বের মধ্যে তা কুরবানী করতে পারেনি। এখন তার কী করণীয়? আর কেউ যদি পশু ক্রয়ই না করে এবং কুরবানীর সময় শেষ হয়ে যায় তখন তার কী করণীয়?

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তি ক্রয়কৃত পশুটি জীবিত সদকা করে দিবে। আর কোনো ব্যক্তির উপর কুরবানী ওয়াজিব হওয়া সত্তে¡ও যদি সে কুরবানীর পশু ক্রয় না করে এবং কুরবানীও না করে থাকে তাহলে তার উপর কুরবানীর যোগ্য একটি ছাগলের মূল্য সদকা করে দেওয়া ওয়াজিব। আর উভয় ক্ষেত্রেই যথাসময়ে কুরবানী না করার কারণে তাওবা-ইস্তিগফার  করবে। 

-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪২৩; রদ্দুল মুহতার ৬/৩২১; তুহফাতুল ফুকাহা ৩/৮৩; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০২

Sharable Link

আসআদ - রূপগঞ্জ, নারায়নগঞ্জ

৩৪৯৮ . Question

আমাদের গ্রামের এক ব্যক্তি কুরবানী করার জন্য ঈদের দুদিন আগে হাট থেকে একটি গাভি ক্রয় করে আনে। ঘটনাক্রমে বাড়ির আরেকটা গাভির সাথে ঐ গাভির লড়াই লেগে ক্রয়কৃত গাভির একটি শিং ভেঙ্গে যায়। প্রশ্ন হচ্ছে, এমন শিং ভাঙ্গা গাভি দ্বারা কুরবানী করলে কুরবানী হবে কি না?

 

Answer

গাভিটির শিং যদি একেবারে গোড়া থেকে ভেঙ্গে গিয়ে থাকেযার দরুণ মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে যায় তাহলে এ পশু দ্বারা কুরবানী সহীহ হবে না। পক্ষান্তরে শিং ভাঙ্গার কারণে মস্তিষ্কে যদি আঘাত না পৌঁছে থাকে তাহলে এ পশু দ্বারা কুরবানী সহীহ হবে। 

-মুসনাদে আহমদ ১/৯৫, হাদীস ৭৩৪; ইলাউস সুনান ১৭/২৩৭; রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৭

Sharable Link

হাবীবুর রহমান - সিলেট সদর

৩৪৯৯. Question

আমরা সহোদর তিনভাই মিলে প্রতি বছর একটি গরু কুরবানী করি। বড় ভাই এক ভাগ আর আমরা দুই ভাই তিন অংশ করে মোট ছয় ভাগ নিয়েছি। আমরা দুই ভাই সমান সমান টাকা দিয়ে অংশগ্রহণ করি। কিন্তু বড়ভাই আমাদের মধ্যে তুলনামূলক অসচ্ছল হওয়ায় তিনি তার অংশের পুরো টাকা দেন না। আমরা দুই ভাই বলেছি, আপনি যা পারেন দেন, বাকিটা আমরা দুজনে দিয়ে দিব। অবশ্য গোশত সকলের অংশ হারেই বণ্টন করা হয়। টাকা কম-বেশির কারণে তাতে ব্যবধান করা হয় না; বরং ধরে নেওয়া হয় যে, আমরা ছোট দুই ভাই বড় ভাইয়ের টাকার আংশিক আদায় করে দিই। জানতে চাই, উল্লেখিত পদ্ধতিতে আমাদের কুরবানী কি সহীহ হচ্ছে?

Answer

হ্যাঁপ্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনাদের কুরবানী সহীহ হয়েছে। কেননা কোন শরীকের পক্ষ থেকে যদি আরেক শরীক কুরবানীর টাকা আংশিক আদায় করে দেয়আর কুরবানীতে তার অংশ একসপ্তমাংশের কম না হয়বরং পুরোপুরি একসপ্তমাংশ বা তার বেশি হয় তবে তাদের কুরবানী সহীহ হবে। কিন্তু ঐ শরীকের অংশ যদি একসপ্তমাংশের কম হয় তাহলে তাদের কুরবানী সহীহ হবে না। 

-ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/২৯০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩১৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৭৮; ইমদাদুল আহকাম ৪/২৪৯

Sharable Link

যোবায়ের - সাতক্ষীরা

৩৫০০. Question

নবজাতক বাচ্চার চুল ৭ম দিন কাটা কী? ৭ম দিনের আগে বা পরে কাটা যাবে কি না? চুলের ওজন পরিমাণ রূপা-সোনা সদকা করার বিধান কী? আর এর মধ্যে কোনো হিকমত আছে কি? যদি এক বছর পরে আকীকা করা হয় তাহলে ঐ সময়ও কি চুল কেটে তার সমান রূপা-সোনা সদকা করতে হবে?

এই চুল কাটা এবং আকীকা উভয়টি একসাথে করতে হবে নাকি আগে পিছে করলেও হবে। অর্থাৎ ৭ম দিনে চুল কাটা হল আর ১ বছর পর আকীকা করা হল। দয়া করে বিস্তারিত জানাবেন।

Answer

সন্তান জন্মের ৭ম দিনে অভিভাবকের দায়িত্ব হলসন্তানের আকীকা করামাথার চুল মুণ্ডন করা এবং তার সুন্দর নাম রাখা।

হাদীস শরীফে এসেছেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনসন্তান আকীকার সাথে  দায়বদ্ধ থাকে। তার পক্ষ থেকে সপ্তম দিনে পশু জবাই করবেনাম রাখবে ও মাথা মুণ্ডন করে দিবে।-জামে তিরমিযীহাদীস ১৫২২

সপ্তম দিনে আকীকা করামাথা মুণ্ডন করা এবং নাম রাখা মুস্তাহাব। তবে এ তিনটির কোনোটি অপরটি সাথে শর্তযুক্ত নয়। তাই কারো আর্থিক সামর্থ্য না থাকার কারণে সে যদি ৭ম দিনে আকীকা করতে না পারে তাহলেও ঐ দিন সন্তানের মাথা মুণ্ডন করে দিবে এবং নামও রাখবে। আকীকা করতে বিলম্ব হলেও এসব কাজে বিলম্ব করবে না।

আর হাদীস শরীফে যেহেতু সপ্তম দিনে মাথা মুণ্ডন করতে বলা হয়েছে তাই সপ্তম দিনের আগে মুণ্ডন না করাই উচিত।

মাথা মুণ্ডন করার পর চুলের ওজন পরিমাণ রূপা বা স্বর্ণ সদকা করা মুস্তাহাব।

হাদীস শরীফে এসেছেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান রা.-এর আকীকা দিয়ে ফাতেমা রা.-কে বললেনতার মাথা মুণ্ডন করে দাও এবং চুলের ওজন পরিমাণ রূপা সদকা করে দাও। -জামে তিরমিযীহাদীস ১৫১৯

অপর এক হাদীসে রূপা বা স্বর্ণ সদকা করার কথাও এসেছে। -আলমুজামুল আওসাতহাদীস ৫৫৮মাজমাউয যাওয়াইদহাদীস ৬২০৪ইলাউস সুনান ১৭/১১৯

রূপা বা স্বর্ণ সদকা করার হেকমত সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রথম কথা হলউক্ত সদকার হেকমত সম্পর্কে হাদীস শরীফে যেহেতু কিছু বলা হয়নি তাই এর রহস্য বা হেকমত অনুসন্ধানের পিছনে না পড়াই ভালো। বান্দার কাজ হলবিধি-বিধানের হেকমতের পিছনে না পড়ে শরীয়তের হুকুম পালন করে যাওয়া।

 

অবশ্য শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভী রাহ.-এর একটি কারণ এই লিখেছেন যেসন্তান যে চুলসহ ভূমিষ্ট হয়েছিল তা কেটে ফেলার মাধ্যমে সন্তান একটি অবস্থানে পদার্পণ করে। তাই এর শুকরিয়াস্বরূপ ঐ চুলের বিনিময়ে সদকা করার হুকুম দেওয়া হয়েছে (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা ২/১৪৫)। আর কোনো কারণবশত বাচ্চার চুল যদি সপ্তম দিনে কাটা সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে সপ্তম দিনের চুলের ওযন অনুমানে রূপা বা স্বর্ণ সদকা করে দিবে।

Sharable Link

হুসাইন আহমদ - বেতাগী, বরগুনা

৩৫০১. Question

পাগড়ি পরিধানের হুকুম কী? বিস্তারিত জানতে চাই। অনেককে দেখা যায়, শুধু ফরয নামাযের সময় পাগড়ি পরিধান করে। এজন্য যে, পাগড়ি বেঁধে নামায আদায় করলে ১ রাকাতে সত্তর রাকাতের ছওয়াব পাওয়া যায়। এবং অনেককে  এটাও বলতে শোনা যায় যে, যদি ইমাম সাহেব পাগড়ি বেঁধে নামায পড়ান তাহলে ইমাম ও মুক্তাদিরা নামাযে সত্তর গুণ সওয়াব লাভ করবেন। আমার জানার বিষয় হল, তাদের কথা কতটুকু সঠিক? জানালে উপকৃত হব। তাছাড়া একটি বইয়ে দেখতে পেলাম, পাগড়ি পরে নামায আদায় করলে সত্তর গুণ সওয়াব পাওয়া যায়। আবার আরেকটি বর্ণনায় রয়েছে পঁচিশ গুণ সওয়াব পাওয়া যায়। এরপর উক্ত বইয়ে লেখা হয়েছে যে, এ হাদীসগুলো দুর্বল হলেও বেশি দুর্বল নয় আর ফাযায়েলের ক্ষেত্রে যয়ীফ হাদীসের উপর আমল করতে কোনো অসুবিধা নেই। উক্ত বইয়ের বক্তব্য কি সঠিক?

Answer

পাগড়ি মাসনূন পোশাকের অন্তর্ভুক্ত। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণত যে সকল পোশাক ব্যবহার করতেন পাগড়িও তার অন্তর্ভুক্ত। তিনি বিভিন্ন সময় পাগড়ি ব্যবহার করেছেন তা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত আছে। সাহাবা-তাবেয়ীনও নামাযে এবং নামাযের বাইরে ব্যাপকভাবে পাগড়ি পরতেন বহু হাদীস ও আসারে বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত আছে। পাগড়ি তাদের নিকট পছন্দনীয় পোশাক ছিল। তাঁরা অন্যান্য পোশাকের ন্যায় তা ব্যবহার করতেন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামসাহাবায়ে কেরাম ও সালাফের অনুসরণে পাগড়ি ব্যবহার করলে অবশ্যই সওয়াব হবে।

আর পাগড়ি নামাযের বিশেষ পোশাক নয়বরং নামাযে এবং নামাযের বাইরে উভয় ক্ষেত্রেই সমভাবে পরিধানযোগ্য একটি পোশাক। সাহাবা-তাবেয়ীন শুধু নামাযের সাথে এটাকে সীমাবদ্ধ করতেন না। তাই শুধু নামাযের সময় ব্যবহার করাঅন্য সময় ব্যবহার না করা সালাফের রীতি পরিপন্থী।

আর পাগড়ি বেঁধে নামায আদায় করলে সত্তর রাকাতের সওয়াব পাওয়া যায় এ সংক্রান্ত যে বর্ণনাটি উল্লে­খ করা হয়েছে তা সহীহ নয়। এটি একটি ভিত্তিহীন বর্ণনা। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহ. স্পষ্ট ভাষায় বলেছেনএটি একটি মিথ্যা ও বাতিল কথা। -শরহু জামেইত তিরমিযীইবনে রজব রাহ. ২/৮৩১

ইমাম সাখাবী রাহ. পাগড়ি বেঁধে নামায আদায় করার ফযীলত সম্পর্কিত যে তিনটি বর্ণনা প্রমাণিত নয় বলে উল্লে­খ করেছেন তন্মধ্যে এ বর্ণনাটিও রয়েছে। -আলমাকাসিদুল হাসানাহ ৩৪৬

অনুরূপ পাগড়ি বিশিষ্ট দুরাকাত নামায পাগড়িহীন পঁচিশ রাকাতের সমান এবং পাগড়ি বিশিষ্ট একটি জুমআ পাগড়ি বিহীন সত্তর জুমআর সমান- যে বর্ণনা রয়েছে সেটিও গ্রহণযোগ্য নয়। হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. এ বর্ণনাটিকে মওযূ অর্থাৎ জাল বলেছেন। -লিসানুল মীযান ৩/২৪৪

হাফেয সাখাবী রাহ. এ বর্ণনাটিকেও প্রমাণিত নয় বলেছেন। -আলমাকাসিদুল হাসানাহ ৩৪৬

হাফেয সুয়ূতী রাহ. যাইলুল লাআলিল মাসনূআতে (১/৪২৭) ইবনে হাজার রাহ.-এর উক্ত কথা উদ্ধৃত করেছেন।

এ সম্পর্কে আরো দেখুন : তাযকিরাতুল মাওযূআত ১/১৫৫আলআসারুল মারফুআ ১/২৩২আলমাসনূ ১/১১৮

সুতরাং এ ধরনের বাতিল ও অগ্রহণযোগ্য বর্ণনাকে আমলযোগ্য যয়ীফ বলা ঠিক নয়। হাদীস শাস্ত্রজ্ঞ ইমামগণের সুস্পষ্ট বক্তব্যের বিপরীতে এমন কথা গ্রহণযোগ্য নয়।

প্রকাশ থাকে যেআমলের ফযীলত বিষয়ে যয়ীফ হাদীস গ্রহণযোগ্য- এটি মুহাদ্দিসগণের একটি স্বীকৃত কথা। তবে এর জন্য কিছু শর্ত রয়েছে। অন্মধ্যে অন্যতম একটি শর্ত হলবর্ণনাটি মাতরুক বা মুনকার পর্যায়ের না হতে হবে। তাই ব্যাপকভাবে যে কোনো যয়ীফ হাদীসই আমলযোগ্য বলা ঠিক নয়।

হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. বলেনযয়ীফ হাদীসের উপর আমল করার জন্য শর্ত হলক) সনদের দুর্বলতা বেশি না হতে হবে। এটি সর্বসম্মত বিষয়। সুতরাং যয়ীফ হাদীসের শ্রেণী থেকে ঐ বর্ণনা বের হয়ে যাবেযার মধ্যে কোনো রাবী মিথ্যুক রয়েছে বা মিথ্যার অভিযোগে অভিযুক্ত কিংবা তিনি বেশি ভুল করেন।

খ) ঐ আমল শরীয়তের কোনো না কোনো মূলনীতির অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে।

গ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এটি সুপ্রমাণিত এমন আকীদা পোষণ না করতে হবে। -আলকওলুল বাদী ১৯৫

ইবনে হাজার রাহ.-এর এই তিন শর্তের কথা হানাফী মাযহাবের বিখ্যাত ফতোয়ার কিতাব দুরারুল হুক্কাম ১/১২;আদ্দুররুল মুখতার এবং রদ্দুল মুহতারেও উল্লে­খ রয়েছে।

আল্লামা হাসকাফী রাহ. যয়ীফ হাদীসের উপর আমল করার উক্ত শর্তসমূহ উ­েল্লখ করার পর বলেনমওযূ হাদীসের উপর তো কোনো অবস্থাতেই আমল করা জায়েয নয়। -আদ্দুররুল মুখতার ১/১২৮

অতএব পাগড়ি পরিধান করে নামায আদায় করলে সত্তর গুণপঁচিশ গুণ সওয়াব পাওয়া সংক্রান্ত যে বর্ণনা রয়েছে সেগুলো তো হাদীস শাস্ত্রজ্ঞ ইমাম ও মুহাদ্দিসীনে কেরামের সুস্পষ্ট ভাষ্যমতে মওযূ ও বাতিল বর্ণনা। এসব বর্ণনাকে ভিত্তি করে অধিক ফযীলত পাওয়ার আশায় পাগড়িকে শুধু নামাযের সময় ব্যবহার করা ঠিক নয়।

আর ইমাম পাগড়ি বেঁধে নামায পড়ালে ইমাম ও মুক্তাদি সকলেই সত্তর গুণ সওয়াব লাভ করবে- প্রশ্নের এ কথার সপক্ষে কোনো হাদীস বা আসার পাওয়া যায় না। তাই নির্ভরযোগ্য প্রমাণাদি ছাড়া এ ধরনের কথা বলা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।

 

উল্লেখ্য যেউপরোক্ত অগ্রহণযোগ্য বর্ণনাগুলো বিশ্বাস না করে পাগড়িকে নিয়মিত পোশাকের অংশ বানানো যে উত্তম কাজ তা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। পাগড়ি মুসলমানদের বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত পোশাক এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে এটি নামাযের সময়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত নয়।

Sharable Link

মুহাম্মাদ হাফীযুল্লাহ - বরগুনা

৩৫০২. Question

আমাদের দেশে পুরুষদের মধ্যে সালামের সময় মুসাফাহা করার প্রচলন আছে। কিন্তু মহিলাদের পরস্পরের সাথে মুসাফাহা করার প্রচলন নেই।

হুজুরের নিকট জানতে চাই, মহিলাদের পরস্পরের সাথে মুসাফাহা করা জায়েয আছে কি না?

Answer

হ্যাঁ মহিলাদের জন্যও পরস্পরে মুসাফাহার বিধান রয়েছে। পুরুষের মতো তাদের জন্যও পরস্পরে সাক্ষাতের সময় মুসাফাহা করা সুন্নত। 

-মুগনিল মুহতাজ ৩/১৭৫; আলমওসূআতুল ফিকহিয়্যাহ ৩৭/৩৫৭-৮

Sharable Link