সাজিদা খাতুন - হবিগঞ্জ, সিলেট

৩১৮৭. Question

 

হাঁস-মুরগির ডিমের উপর যদি কোনো ময়লা বা নাপাকি না থাকে তবেও কি ডিমের উপরটা নাপাক ধরা হবে? পার্শ্ববর্তী এক মহিলা আমাকে মাসআলা বলল যে, ডিমের উপর ময়লা থাকুক বা না থাকুক ডিম ভাঙ্গার আগে তা অবশ্যই ধুয়ে নিতে হবে। কেননা ডিমের উপর অংশ নাপাক। মুরগির পেট থেকে বের হওয়ার সময় থেকেই ডিমের উপর অংশ নাপাক থাকে। এ কথা কি ঠিক? তাহলে এতদিন তো এটার উপর আমল করিনি। এখন আমাদের করণীয় কী?


 

Answer

প্রশ্নোক্ত কথাটি ঠিক নয়। ডিমের খোসার উপর কোনো নাপাকি লেগে না থাকলে তা পবিত্র। তাই পরিষ্কার ডিম যার উপর নাপাকি লেগে নেই তা ভাঙ্গার আগে ধুয়ে নেওয়া জরুরি নয়। মুরগির পেট থেকে বের হওয়ার সময় ডিমের কোনো অংশ ভেজা থাকলেও তা নাপাক নয়। অবশ্য নাপাকি লেগে থাকলে তা ভাঙ্গার আগে ধুয়ে নিতে হবে।

-রদ্দুল মুহতার ১/৩১৩

Sharable Link

ইরফান - ফেনী

৩১৮৮. Question

 

এক ব্যক্তি দীর্ঘ চল্লিশ বছর যাবত প্রথম সিজদা করার পর মাত্র ছয় ইঞ্চি উপরে মাথা তুলে দ্বিতীয় সিজদা করত। এখন সে বৃদ্ধ। জানতে চাই, তার এত বছরের আদায়কৃত নামাযের হুকুম কী? আর এখন তার করণীয় কী?


Answer

 

দুই সিজদার মাঝে সোজা স্থির হয়ে বসা ওয়াজিব। এ ব্যাপারে হাদীস শরীফে যথেষ্ট তাকীদ এসেছে। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে প্রবেশ করার পর এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে নামায পড়ল। অতপর এসে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাম দিল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সালামের জওয়াব দিয়ে বললেন, ফিরে যাও। আবার নামায পড়। কেননা তুমি তো নামায পড়নি। সে পুনরায় নামায পড়ার পর এসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাম দিল। তিনি বললেন, ফিরে যাও, আবার নামায পড়। কেননা তুমি তো নামায পড়নি। (তিনবার এরূপ হল)। সে বলল, যে সত্তা আপনাকে সত্য দ্বীন দিয়ে প্রেরণ করেছেন তার শপথ, আমি এর চেয়ে উত্তম তরীকায় নামায পড়তে জানি না। তাই আমাকে শিখিয়ে দিন। তিনি বললেন, যখন তুমি নামাযে দাঁড়াবে তখন তাকবীর বলবে, অতপর কুরআনের যতটুকু তিলাওয়াত করা তোমার জন্য সম্ভব ততটুকু তিলাওয়াত কর। তারপর ধীরস্থিরভাবে রুকু কর। অতপর সোজা স্থির হয়ে দাঁড়াও। অতপর ধীরস্থিরভাবে সিজদা কর, এরপর ধীরস্থির হয়ে বস, তারপর ধীরস্থিরভাবে সিজদা কর, তোমার পুরো নামায এভাবেই আদায় কর।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৭৯৩

উক্ত হাদীসের আলোকে ফুকাহায়ে কেরাম দুই সিজদার মাঝে স্থির হয়ে বসাকে ওয়াজিব বলেছেন। এ ওয়াজিব তরক করলে নামায মাকরূহ তাহরীমী হবে।  

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তি দ্বিতীয় সিজদার জন্য ছয় ইঞ্চি পরিমাণ উঠার দ্বারা তার দ্বিতীয় সিজদার ফরয আদায় হয়ে গেছে। কিন্তু সোজা হয়ে ধীরস্থিরভাবে বসার ওয়াজিব তরক করার কারণে নামায মাকরূহ তাহরীমী হয়েছে। এখন তার কর্তব্য হচ্ছে, বিগত সময়ের কৃতকর্মের জন্য আল্লাহর দরবারে ইস্তিগফার করা এবং এখন থেকে পরিপূর্ণ তরীকা মতো নামায আদায় করা।

 

 

-আলবাহরুর রায়েক ১/৩০০; রদ্দুল মুহতার ১/৪৬৪; আলমাবসূত, সারাখসী ১/১৮৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৫৩; আলইখতিয়ার লিতালীলিল মুখতার ১/১৭৯; শরহুল মুনইয়াহ ৩২২-৩২৩

Sharable Link

মাহবুব আলম - রাজশাহী

৩১৮৯. Question

 

আমি মসজিদে গিয়ে যখন ইমাম সাহেবকে রুকুতে পাই তখন কি তাকবীরে তাহরীমা বলে হাত বেঁধে তারপর রুকুতে যাব, নাকি হাত না বেঁধে সোজা রুকুতে চলে যাব? এ অবস্থায় তাকবীরে তাহরীমার পর রুকুর জন্য কি আলাদা করে তাকবীর বলতে হবে?


 

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে দাঁড়ানো অবস্থায় তাকবীরে তাহরীমা বলবেন। অতপর হাত না বেঁধে তাকবীর বলে রুকুতে চলে যাবেন। অবশ্য এক্ষেত্রে রুকুর জন্য আলাদা করে তাকবীর না বললেও চলবে। সাহাবা-তাবেয়ীন থেকে এক্ষেত্রে রুকুর তাকবীর বলা না বলা উভয় ধরনের বক্তব্য ও আমল আছে।

-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ২/২৭৮; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, ২/৪৩১-২; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৮৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৫২; ফাতহুল কাদীর ১/৪২০

Sharable Link

নাদীম ফায়জান - সরাইল

৩১৯০. Question

 

আমি যখন নামাযে মাসবুক হই তখন ইমাম সাহেব দ্বিতীয় সালাম শুরু করলেই বাকি নামাযের জন্য দাঁড়িয়ে যাই। আর অনেককে দেখি, ইমাম সাহেব দ্বিতীয় সালাম শেষ করলে তারপর দাঁড়ায়। প্রশ্ন হল, ইমাম সাহেব প্রথম সালাম ফেরানোর পর দ্বিতীয় সালাম শুরু করার আগে যদি দাঁড়িয়ে যাই তাহলে আমার নামায হবে কি?


Answer

হ্যাঁ, এক্ষেত্রেও আপনার নামায হয়ে যাবে। তবে ইমাম সাহেব দ্বিতীয় সালাম ফেরানোর পরই দাঁড়ানো উত্তম। কেননা ইমাম সাহু সিজদা দিবেন না-এ কথা নিশ্চিত হওয়ার পর মাসবুকের জন্য দাঁড়ানো ভালো।

-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ২/২২৫-২২৬; মারাকিল ফালাহ ২৫২; রদ্দুল মুহতার ১/৫৯৭; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৭৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৬৮

Sharable Link

আলমামুন - হোসেনপুর, কিশোরগঞ্জ

৩১৯১. Question

 

মাসবুক যদি ইমামের সালামের সাথে একদিকে বা উভয় দিকে সালাম ফিরিয়ে ফেলে তাহলে এর হুকুম কী এবং সিজদায়ে সাহু লাগবে কি না?


 

Answer

মাসবুক যদি ইমামের সালামের পূর্বে অথবা একেবারে সাথে সালাম ফিরিয়ে থাকে তাহলে তাকে সাহু সিজদা দিতে হবে না। আর যদি ইমামের সালামের পর সালাম ফিরিয়ে থাকে তাহলে সাহু সিজদা দিতে হবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ১/৪২২; ফাতহুল কাদীর ১/৩৩৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৭৪; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৯৯

Sharable Link

আলমামুন - হোসেনপুর, কিশোরগঞ্জ

৩১৯২. Question

 

যদি চার রাকাতবিশিষ্ট নামাযের জামাতে তিন রাকাত ইমামের পিছনে না পায় তাহলে অনেককে দেখা যায়, সালাম ফিরানোর পর এক রাকাত পড়ে বৈঠক করে। আবার অনেকে দুই রাকাত পড়ে বৈঠক করে এবং পরবর্তীতে বাকি নামায যথানিয়মে আদায় করে। এভাবে উভয় সুরতে নামায আদায়ের হুকুম কী? জানালে উপকৃত হব।


 

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ছুটে যাওয়া নামাযের মধ্যে প্রথম রাকাত পড়ে বৈঠক করাই সহীহ। দুই রাকাত পড়ে বৈঠক করার ব্যপারে একটি মত থাকলেও প্রথম মতটিই অধিক গ্রহণযোগ্য। অবশ্য এক্ষেত্রে কেউ যদি দুই রাকাত পড়ে বৈঠক করে তাহলে দ্বিতীয় মত অনুসারে তার নামায আদায় হয়ে যাবে এবং সাহু সিজদাও ওয়াজিব হবে না।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৬৫; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৭৯; আলমাবসূত, সারাখসী ১/১৯০; রদ্দুল মুহতার ১/৫৯৬

Sharable Link

মুহাম্মাদ ফায়যুল্লাহ - মৌলভীবাজার, সিলেট

৩১৯৩. Question

 

জানাযার নামাযে নিয়ত করার সময় মৃত ব্যক্তি পুরুষ না মহিলা তা কি নির্ধারণ করা আবশ্যক। মৃত ব্যক্তি পুরুষ না মহিলা কেউ যদি তা না-ই জানে তবে তার জানাযা কি সহীহ হবে? জানালে কৃতজ্ঞ হব।


 

Answer

জানাযা আদায়ের জন্য মৃত ব্যক্তি পুরুষ না মহিলা তা জানা জরুরি নয়। কারো যদি তা জানা না থাকে; বরং শুধু সামনে রাখা মৃত ব্যক্তির জানাযার নিয়ত করে তাহলেও জানাযার নামায সহীহ হয়ে যাবে। অবশ্য জানাযার প্রসিদ্ধ দুআ ছাড়াও কিছু দুআ এমন আছে, যেগুলোর জন্য মৃত ব্যক্তি পুরুষ না মহিলা তা জানার প্রয়োজন হয়। তাই জানাযার আগে এ বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া উচিত।

-আলবাহরুর রায়েক ১/২৮৩; শরহুল মুনইয়াহ ২৪৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৬৭, ১৬৪; রদ্দুল মুহতার ১/৪২৩

Sharable Link

মুহাম্মাদ হাবীবুল্লাহ - ঢাকা

৩১৯৪. Question

 

আমাদের মাদরাসার পাশে অস্থায়ীভাবে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে তা অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা আছে। বর্তমানে এতে পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়া হয়।

জানার বিষয় হল, এই মসজিদে ইতিকাফ করা সহীহ হবে কি? আর ইতিকাফের কারণে কি মসজিদটি ওয়াকফিয়া বা স্থায়ী মসজিদ হয়ে যাবে? দয়া করে বিস্তারিত দলিল-প্রমাণের আলোকে জানিয়ে বাধিত করবেন।  


Answer

 

প্রশ্নোক্ত অস্থায়ী নামাযের ঘরটি যেহেতু ‘শরঈ মসজিদ’ নয় তাই তাতে ইতিকাফ সহীহ হবে না। ইতিকাফ সহীহ হওয়ার জন্য ‘শরঈ মসজিদ’ হওয়া জরুরি। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে, (তরজমা) তোমরা মসজিদে ইতিকাফরত অবস্থায় তাদের (স্ত্রীদের) সাথে মিলিত হয়ো না। -সূরা বাকারা (২) : ১৮৭ 

ইমাম কুরতুবী রাহ. এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, উক্ত আয়াতের আলোকে সকল ইমাম এ বিষয়ে একমত যে, মসজিদ ছাড়া অন্যস্থানে ইতিকাফ সহীহ হবে না।

 

-সূরা বাকারা (২) : ১৮৭; তাফসীরে কুরতুবী ২/২২২; কিতাবুল ইসআফ ফী আহকামিল আওকাফ ৭২; আলবাহরুর রায়েক ২/৩০১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৬৭; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৮০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৪৪২; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৪০

Sharable Link

মাসরুর মাহমুদ - মালিবাগ, ঢাকা

৩১৯৫. Question

 

গত বছর আল্লাহর রহমতে পবিত্র হজ্ব আদায় করেছি। যিলহজ্বের ১০ তারিখ আমরা কংকর নিক্ষেপ ও কুরবানী করার পর কাফেলার এক হাজ্বী ভাইয়ের মাথা মুণ্ডিয়ে দিই। তারপর তিনি আমার মাথা মুণ্ডিয়ে দেন। জানার বিষয় হল, ইহরাম অবস্থায় মাথা মুণ্ডানোর কারণে আমার উপর কি দম বা সদকা ওয়াজিব হয়েছিল?


 

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে অন্যের মাথা মুণ্ডিয়ে দেওয়া অন্যায় হয়নি এবং আপনার উপর এ কারণে কোনো কিছু ওয়াজিবও হয়নি। হলকের পূর্বের সকল কার্যাদী সম্পন্ন করার পর অন্যের মাথার চুল মুণ্ডিয়ে দেওয়া জায়েয। তাবেয়ী হযরত ইবনে জুরাইজ রাহ. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি হযরত আতা রাহ.-কে জিজ্ঞাসা করলাম, এক ব্যক্তি কংকর নিক্ষেপ করেছে কিন্তু হলক করেনি সে কি অন্যকে হলক করে দিতে পারবে? তিনি জবাবে বললেন, হ্যাঁ পারবে।

- মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ, আসার নং ১৬১৩৯; মানসিক পৃ. ২৩০; যুবদাতুল মানাসিক ৩৭; গুনইয়াতুন নাসিক ১৭৪

Sharable Link

আহমাদ আমান - এয়ারপোর্ট, ঢাকা

৩১৯৬. Question

 

পবিত্র অবস্থায় তাওয়াফে যিয়ারাহ আদায় করার পর জনৈকা মহিলার হায়েয শুরু হয়ে যায়। ফলে সে অপবিত্র অবস্থায় সায়ী করে। উক্ত মহিলার সায়ী কি আদায় হয়েছে? এই জন্য কি তাকে দম দিতে হবে?


 

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উক্ত মহিলার সায়ী আদায় হয়েছে। কেননা সায়ীর জন্য পবিত্রতা শর্ত নয়। তাই মহিলাদের জন্য এ অবস্থায় সায়ী করা জায়েয। আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, তাওয়াফে যিয়ারাহ আদায়ের পর সায়ীর পূর্বে কোনো মহিলার হায়েয এসে গেলে সে যেন (এ অবস্থায়) সাফা-মারওয়ার সায়ী করে নেয়। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১৪৫৮৩) উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা ও হযরত উম্মে সালামা রা. থেকেও এমন বর্ণনা রয়েছে। 

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, ৮/৪৪১; আলমাবসূত, সারাখসী ৪/৫১; বাদায়েউস সানায়ে ২/৩১৯; যুবদাতুল মানাসিক, ১৪৫

Sharable Link

মুঈনুল ইসলাম - হাটহাজারী, চট্টগ্রাম

৩১৯৭. Question

 

(ক) মহিলারা বদলী হজ্ব করতে পারবে কি?

(খ) এক মহিলার স্বামী ও সন্তান নেই। তার বয়স ৬৮ বছর। চলাফেরা করতে পারেন। তিনি কি তার হজ্ব কাউকে দিয়ে করাতে পারবেন?


 

Answer

(ক) স্বামী বা যথাযথ অভিভাবকের অনুমতি থাকলে এবং মাহরাম পুরুষ সাথে থাকলে মহিলারাও বদলী হজ্বে যেতে পারবে।-গুনইয়াতুন নাসিক ৩৩৭; মানাসিক মোল্লা আলী কারী, ৩৩৭; আল মাসালিক ফিল মানাসিক ২/৮৯৩; আলবাহরুল আমীক ৪/২২৬৮

(খ) প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উক্ত মহিলা বয়স্কা হলেও যেহেতু তিনি চলাফেরা করতে পারেন সুতরাং তার সাথে হজ্ব করার মত কোনো মাহরাম পুরুষ থাকলে তার জন্য বদলী হজ্ব করানো জায়েয হবে না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মাহরামের ব্যবস্থা না হলে তার জন্য বদলী হজ্ব করানো বা বদলী হজ্বের ওসিয়ত করে যাওয়া জরুরি হবে। 

আর হজ্বের সফরে স্বামী বা পুত্র থাকা জরুরি নয়। বরং অন্য যে কোনো মাহরাম সঙ্গী  (যেমন : ভাই, চাচা, মামা ইত্যাদি) পাওয়া গেলেও বদলী করানো যাবে না, নিজেই যাওয়া ফরয হবে। -বাদায়েউস সানায়ে ২/৪৫৫; আলবাহরুর রায়েক ৩/৬১; ফাতহুল কাদীর ৩/৬৮; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৯৪

 

Sharable Link

মুহাম্মাদ ফারুক - সাবরা, বকশী বাজার

৩১৯৮. Question

 

হুযুর গত তিন বছর আগে আমার দাদা মৃত্যুবরণ করেন। দাদার রেখে যাওয়া সম্পদ থেকে দাদি হজ্ব করতে পারবেন এ পরিমাণ সম্পদ মিরাস হিসেবে পেয়েছেন। গত বছর দাদি তাঁর প্রতিবেশী এক লোকের সাথে হজ্ব করতে যান। জানার বিষয় হলো, বৃদ্ধা মহিলার জন্য কি পর-পুরুষের সাথে হজ্ব করতে যাওয়া বৈধ হবে? যদি বৈধ না হয় তাহলে তার হজ্ব কি আদায় হয়ে যাবে?


 

Answer

 

বৃদ্ধা মহিলার জন্যও মাহরাম ছাড়া হজ্বে যাওয়ার অনুমতি নেই। হাদীস শরীফে এসেছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কোনো মহিলা যেন মাহরাম ছাড়া সফর না করে এবং মাহরাম না থাকা অবস্থায় কোনো পুরুষ যেন তার কাছে গমন না করে। তখন এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি অমুক সেনাদলের সাথে জিহাদে যেতে চাচ্ছি। কিন্তু আমার স্ত্রী হজ্বে যেতে চাচ্ছে। তখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে তুমি তার (স্ত্রীর) সাথেই হজ্বে যাও। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৮৬২; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৩৩৮ 

আরেক হাদীসে এসেছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কোনো মহিলা যেন মাহরাম ছাড়া হজ্ব করতে না যায়। সুনানে দারাকুতনী ২/২২৩ 

তারপরও কোনো মহিলা যদি মাহরাম ছাড়া হজ্ব আদায় করে তাহলে তার হজ্ব আদায় হয়ে যাবে। তবে মাহরাম ছাড়া যাওয়ার কারণে গুনাহগার হবে।

উল্লেখ্য যে, মাহরাম ছাড়া হজ্বে গেলে অনেক জায়গায় মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয়। সৌদী দূতাবাস থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় অন্যকে মাহরাম দেখাতে হয়। এজেন্সিওয়ালারা পরপুরুষকে মাহরাম হিসেবে দেখিয়ে তার ভিসার ব্যবস্থা করে থাকে। একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত করতে গিয়ে এভাবে মিথ্যার আশ্রয় নেয়া খুবই ঘৃণিত কাজ এবং অন্যায়।

 

-বাদায়েউস সানায়ে ২/৩০০; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাদদুর ১/৪৮৪; গুনয়াতুন নাসিক পৃ ২৯

Sharable Link

মাহমুদা - উত্তর যাত্রাবাড়ি, ঢাকা

৩১৯৯. Question

 

আমি ৫৬ বছর বয়সের একজন বিধবা নারী। এ পৃথিবীতে আমার মাহরাম বলতে এক বয়োবৃদ্ধ ভাই ছাড়া কেউ নেই। আমার হজ্বে যাওয়ার আর্থিক সামর্থ্য রয়েছে। শুনেছি মহিলাদের মাহরাম ছাড়া হজ্বে যাওয়ার অনুমতি নেই। এমতাবস্থায় আমার করণীয় কী?


 

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আর্থিক সামর্থ্য থাকার কারণে আপনার উপর হজ্ব ফরয। তবে মাহরামের ব্যবস্থা না হলে নিজে হজ্বে যাবেন না। এক্ষেত্রে অন্যকে দিয়ে বদলী হজ্বের ব্যবস্থা করবেন। অথবা বদলী হজ্বের ওসিয়ত করে যাবেন।

-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৬৮৫; আলবাহরুর রায়েক ২/৩১৫-৩১৬; মানাসিক ৬৪

Sharable Link

সাঈদুর রহমান - মালিবাগ, ঢাকা

৩২০০. Question

 

আমাদের এলাকার এক লোক তার বাপ শরিক ভাই  (বৈমাত্রেয় ভাই) -এর মেয়ের মেয়েকে বিয়ে করেছে এবং তাদের ঘরে একটি ছেলেসন্তানও হয়েছে। তাদের এই বিয়ে নিয়ে আমাদের এলাকায় বিরূপ পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।

তাই আমার জানার বিষয় হল, তাদের এই বিয়ে কি শরীয়তসম্মত হয়েছে? যদি না হয় তবে তাদের করণীয় কী? আর তাদের ছেলেসন্তানের হুকুম কী হবে? দয়া করে বিস্তারিত দলিল-প্রমাণসহ জানিয়ে বাধিত করবেন।  


 

Answer

বৈমাত্রেয় ভাইয়ের মেয়ের মেয়ে মাহরামের অন্তর্ভুক্ত। তার সাথে বিবাহ হারাম। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, (তরজমা) তোমাদের প্রতি হারাম করা হয়েছে তোমাদের মা, তোমাদের মেয়ে, তোমাদের বোন, তোমাদের ফুফু, তোমাদের খালা, ভাতিজী ও ভাগ্নী...। -সূরা নিসা (৪) : ২৩ 

কাযী ছানাউল্লাহ পানিপথী রাহ. তাফসীরে মাযহারীতে বলেন, উক্ত আয়াতে ‘ভাতিজী’ দ্বারা সহোদর, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয় ভাইয়ের সন্তানাদি ও তাদের অধঃস্তন সকলেই উদ্দেশ্য। (তাফসীরে মাযহারী ২/২৬৫) 

সুতরাং প্রশ্নোক্ত লোকটির জন্য তার বৈমাত্রেয় ভাইয়ের মেয়ের মেয়েকে বিয়ে করা সম্পূর্ণ হারাম হয়েছে। তাই এখনই তাদের পৃথক হয়ে যাওয়া জরুরি। আর বিগত দিনগুলো একত্রে বসবাসের জন্য আল্লাহ তাআলার নিকট খাঁটিমনে তাওবা-ইস্তিগফার করতে হবে।

উভয়ে পৃথক হয়ে যাওয়ার পর থেকে মহিলাটির জন্য ইদ্দত পালন করা জরুরি। ইদ্দতকালীন সময়ে তার ভরণপোষণ ঐ ব্যক্তিকে বহন করতে হবে। ইদ্দতের পর মহিলাটি অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে। আর বিবাহ অবৈধ হলেও তাদের ঘরে জন্ম নেওয়া ছেলেটির বংশপরিচয় তার পিতা থেকেই সাব্যস্ত হবে এবং পিতার মৃত্যুর পর ঐ সন্তান তার ওয়ারিস গণ্য হবে।

 

-রদ্দুল মুহতার ৪/২৪, ৩/৫১৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৭৩, ১/৫২৬, ১/৫৩৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৫/২২৬, ৫/২৬০

Sharable Link

মুহাম্মাদ আখতার হুসাইন - চাটখিল, নোয়াখালী

৩২০১. Question

 

বর্তমানে বিয়েশাদিতে আলোকসজ্জা ও গেইট করা হয়। এ সম্পর্কে কারো কারো বক্তব্য হল, আলোকসজ্জা যদি বিয়ের এলানের নিয়তে হয় আর বরপক্ষ থেকে গেইটের জন্য কোনো টাকা না নেওয়া হয় তবে তা জায়েয, অন্যথায় নাজায়েয।

অতএব এ বিষয়ে শরীয়তের সঠিক সমাধান জানিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন।  


Answer

বিয়ের এলান ও প্রচারণার উদ্দেশ্যেও আলোকসজ্জা করা ও গেইট লাগানো ঠিক নয়। এটি অপচয় ও সম্পূর্ণ রেওয়াজসর্বস্ব কাজ। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে আলোকসজ্জা শুধু বিদ্যুতের অপচয়ই নয়; বরং অন্যের হক নষ্ট করারও শামিল। তাই এসব থেকে মুসলমানদের বেঁচে থাকা কর্তব্য। 

আর গেইটের জন্য বরপক্ষ থেকে চাপ সৃষ্টি করে টাকা নেওয়া আরো গর্হিত কাজ। সুতরাং এসব কুরূসুম থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। 

Sharable Link

মুহাম্মাদ হামীদুল্লাহ - হবিগঞ্জ, সিলেট

৩২০২. Question

 

এক ব্যক্তি দুটি বিয়ে করেছে। প্রথম স্ত্রীর কয়েকজন সন্তান হওয়ার পর সে মারা যায়। এরপর লোকটি আরেকটি বিয়ে করে। এর কিছুদিন পর ঐ ব্যক্তির বড় ছেলে পিতার দ্বিতীয় স্ত্রীর বোনকে বিয়ে করে। এখন প্রশ্ন হল, ঐ ছেলের জন্য সৎ মায়ের বোনকে বিয়ে করা কি বৈধ হয়েছে? সঠিক মাসআলা জানিয়ে বাধিত করবেন।


 

Answer

হ্যাঁ, ঐ ছেলের জন্য বাবার স্ত্রীর (সৎ মায়ের) বোনকে বিয়ে করা বৈধ হয়েছে। কেননা সে মাহরামের অন্তর্ভুক্ত নয়।

-রদ্দুল মুহতার ৩/৩১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৪/৪৯

Sharable Link

মুহাম্মাদ - জুরাইন, যাত্রাবাড়ি

৩২০৩. Question

 

আমাদের বাড়ির পাশে রাস্তায় এক ব্যক্তি বিভিন্ন ধরণের বড়ই বিক্রি করে। তার কাছ থেকে বড়ই কিনতে গেলে মিষ্টি না টক তা যাচাই করার জন্য খেয়ে দেখতে বলে এবং বলে যে, খেয়ে পছন্দ হলে কিনবেন অন্যথায় নয়।

এখন তার থেকে বড়ই কেনার পূর্বে ভালো-মন্দ, টক-মিষ্টি ইত্যাদি যাচাই করার জন্য তা থেকে কি খেয়ে দেখতে পারব? কেননা টক বা মন্দ হলে সেক্ষেত্রে তো আমি তার কাছ থেকে কিনব না। এ অবস্থায় তার তো এক দুইটা বড়ই বিনা মূল্যেই চলে গেল।  


 

Answer

 

বিক্রেতা বড়ইয়ের স্বাদ দেখার জন্য খাওয়ার অনুমতি দিলে ক্রেতার জন্য দু-একটি বড়ই খেয়ে দেখা জায়েয আছে।  

ক্ষেত্রে স্বাদ যাচাইয়ের পর পছন্দ না হলে তার থেকে বড়ই না কিনলেও অন্যায় হবে না।  

কিন্তু বাসত্মবে যদি ফল ক্রয়ের ইচ্ছা না থাকে; বরং ক্রেতার ভান ধরে বিনা পয়সায় অন্যের ফল খাওয়াই উদ্দেশ্য হয়ে থাকে তাহলে তা জায়েয হবে না। এভাবে খেলে বিক্রেতাকে এর মূল্য দিয়ে দিতে হবে। অথবা তার থেকে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে।

 

 

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ২২৫৪৬; ফাতাওয়া রহীমিয়া ৯/১৭

Sharable Link

মুহাম্মাদ যুলফিকার - চট্টগ্রাম

৩২০৪. Question

 

আমি একজন ব্যবসায়ী। বিনিয়োগকারীদের টাকা দিয়ে মুদারাবার ভিত্তিতে আমি ব্যবসা করি। ব্যবসায়িক প্রয়োজনে প্রায়ই আমাকে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা যেতে হয়। যাতায়াত খরচ ও সফর অবস্থায় থাকা-খাওয়ার খরচ ব্যবসার টাকা থেকেই নিয়ে থাকি। কিছুদিন পূর্বে ব্যবসার কাজে ঢাকা যাওয়ার সময় গাড়ি দুর্ঘটনায় আমি মারাত্মকভাবে আহত হই। চিকিৎসার পেছনে অনেক টাকা ব্যয় হয়। এখন জানার বিষয় হল, উক্ত চিকিৎসার খরচ আমি ব্যবসার টাকা থেকে নিতে পারব কি না? দয়া করে জানাবেন।


 

Answer

 

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের অনুমতি ব্যতীত আপনার চিকিৎসা খরচ ব্যবসার টাকা থেকে নেওয়া জায়েয হবে না। হ্যাঁ, তারা অনুমতি দিলে নিতে পারবেন। 

অবশ্য ব্যবসার প্রয়োজনে সফর করলে যাতায়াত ও থাকা-খাওয়ার সাধারণ খরচ ব্যবসার টাকা থেকে নিতে পারবেন।

 

-কিতাবুল আছল ৪/১৭-১৮০; আততাজরীদ ৭/৩৫১৭; মুজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়াহ, মাদ্দাহ : ১৪১৯; শরহুল মাজাল্লাহ, খালিদ আতাসী ৪/৩৫৩, ৩৫৪; আলমাবসূত, সারাখসী ২২/৬৩; আলমুহীতুল বুরহানী ১৮/১৯৯; বাদায়েউস সানায়ে ৫/১৪৯

Sharable Link

রিয়াদ আনোয়ার - কুয়াকাটা

৩২০৫. Question

 

আমরা চার ভাইবোন। আমরা ভাইবোনেরা মিলে প্রতি বছর একটি গরু কুরবানী করি। এ বছর নিয়ত করেছি একটি গরু কিনে আমরা চার জনে চারভাগ দিবো আর আমাদের মৃত মা-বাবা, দুজনের নামে দুই ভাগ দিবো। আমাদের প্রশ্ন হলো- মৃত মা-বাবার নামে যে কুরবানী করব তার গোশত নিজেরা খেতে পারবো নাকি পুরোটা গরীবদেরকে সদকা করে দিতে হবে?

 


 

Answer

নিজেদের পক্ষ থেকে মা-বাবার সাওয়াবের উদ্দেশ্যে কুরবানী করলে সেই কুরবানীর গোশত নিজেরাও খেতে পারবেন এবং আত্মীয়-স্বজন ও অন্যান্যদেরও খাওয়াতে পারবেন। তাদের অংশের গোশত গরীবদেরকে সদকা করা আবশ্যক নয়।

-রদ্দুল মুহতার ২/৩২৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪৪৪; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৫২

Sharable Link

আমেনা বেগম - মিরপুর

৩২০৬. Question

 

প্রতি বছর কুরবানীর পর আমাদের বাসায় প্রচুর পরিমাণে চর্বি জমা হয়। এসকল চর্বি উত্তমরূপে না নিজে ব্যবহার করা যায় না অন্যকে দেওয়া যায়। আমার প্রতিবেশী মহিলারা চর্বি কিনতে আসা ব্যক্তিদের নিকট তা বিক্রি করে দেন। কিন্তু আমার স্বামী একথা বলে আমাকে চর্বি বিক্রি থেকে বিরত রেখেছেন যে, ‘কুরবানীর পশুর চর্বি বিক্রি করা নাজায়েয।’ আমি জানতে চাচ্ছি যে, তার উক্ত কথা কি ঠিক? আর যেহেতু সুষ্ঠুভাবে চর্বিগুলোকে ব্যবহার না করার কারণে তা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয় তাই তা বিক্রি করে গরীবদেরকে এর অর্থ দেওয়ার সুযোগ আছে কি না?


 

Answer

 

আপনার স্বামী ঠিকই বলেছেন। কুরবানীর গোশত, চর্বি, হাড্ডি ইত্যাদি বিক্রি করা নাজায়েয। এ ব্যাপারে একাধিক হাদীসে নিষেধ করা হয়েছে। 

তাই নিজে ব্যবহার করতে না পারলে গরীব-মিসকীনকে দিয়ে দিবে। অবশ্য কাউকে দেওয়ার সুযোগ না থাকার কারণে তা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা হলে বিক্রি করা যাবে। অতপর প্রাপ্ত অর্থ সদকা করে দিতে হবে।

 

-মুসনাদে আহমদ, হাদীস ১৬২১১; মাজমাউয যাওয়াইদ, ৪/২৭; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৫, শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ৭/৩৩৯, আলখানিয়া ৩/৩৫৪ খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩২২

Sharable Link

মুহাম্মাদ বিন মাহবুব - তেতুলিয়া, পঞ্চগড়

৩২০৭. Question

 

আমার পিতা একজন মাদরাসার শিক্ষক ছিলেন। তার কুরবানী করার সামার্থ্য ছিলো। গত ঈদে তিনি কুরবানীর জন্য একটি গরুও কিনেছিলেন। কিন্তু সেটি কুরবানী করার সুযোগ তার আর হয়নি। ঈদের নামায পড়ে আসার পথে সড়ক দূর্ঘটনায় ইন্তেকাল হয়। তার মৃত্যুতে পরিবারের সকলে শোকাহত ছিল। তাই কুরবানীর তিনদিনের ভেতর গরুটি আর কুরবানী করা হয়নি। এখন আমরা ঐ গরুটি কী করব? সেটি কি সদকা করে দিতে হবে? অথবা আগামী কুরবানীর ঈদে যবেহ করার জন্য রেখে দিতে হবে?


 

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার পিতা যেহেতু কুরবানীর সময়  (১২ যিলহজ্ব) শেষ হওয়ার আগেই ইন্তেকাল করেছেন, তাই এ বছরের কুরবানী তার উপর ওয়াজিব থাকেনি। সুতরাং তার ক্রয়কৃত ঐ পশুটিরও কুরবানী করা বা সদকা করা লাগবে না। বরং এই পশু এখন তার পরিত্যাক্ত সম্পত্তি হিসাবে ধর্তব্য হবে। ওয়ারিশরা চাইলে সেটা বিক্রি করে দিয়ে এর মূল্য সকলের অংশ অনুযায়ী ভাগ করে নিতে পারেন। আবার চাইলে যবেহ করে এর গোশতও বণ্টন করে নিতে পারেন আর যদি সকল ওয়ারিশ বালেগ হয় এবং তারা একমত হয় তাহলে তারা গরুটি বা এর মূল্য সদকাও করে দিতে পারবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৯; আলবাহরুর রায়েক ৮/১৭৪; আদ দুররুল মুখতার ৬/৩১৯; ফাতাওয়ায়ে তাতারখানিয়া ১৭/৪৯

Sharable Link

মাহবুব সামী - ঝিনাইদহ

৩২০৮. Question

 

আমাদের একটি গরু আছে। সেটির অনেক বয়স হয়েছে। যার ফলে দুতিনটি দাঁত ছাড়া এর প্রায় সবকটি দাঁতই পড়ে গেছে। তবে যে পরিমাণ দাঁত অবশিষ্ট আছে তা দ্বারা ঘাস চিবিয়ে খেতে পারে। এবছর এ গরুটিকে কুরবানী করতে চাচ্ছি। প্রশ্ন হল, এর দ্বারা কুরবানী করা কি সহীহ হবে?


 

Answer

এ অবস্থায়ও গরুটি যদি ঘাস চিবিয়ে খেতে পারে তাহলে তার কুরবানী সহীহ হবে।

-শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ৭/৩৫৫; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৫; ফাতওয়া বাযযাযিয়া ৬/২৯৩

Sharable Link

ইউনুস যাকারিয়া - নবীনগর, সাভার

৩২০৯. Question

 

আমাদের মহল্লা মসজিদের নির্মাণ কাজ চলছে। নির্মাণ কাজে অনেক অর্থ প্রয়োজন। তাই মসজিদ কমিটি এ মর্মে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, আমরা এবারের কুরবানীতে এলাকার মানুষদের অনুরোধ করব। তারা যেন  সকলে তাদের কুরবানীর পশুর চামড়ার পুরো না হলেও অমত্মত অর্ধেক মূল্য মসজিদের নির্মাণ কাজের জন্য দান করেন।

আমার জানার বিষয় হল, মসজিদ কমিটির উক্ত সিদ্ধান্ত কি সঠিক হয়েছে? চামড়ার মূল্য কি মসজিদ নির্মাণ কাজে লাগানো যাবে? শরীয়তের নির্দেশনা জানাতে অনুরোধ রইল।  


 

Answer

মসজিদ কমিটির উক্ত সিদ্ধান্ত সহীহ নয়। কুরবানীর পশুর চামড়ার মূল্য মসজিদে দান করা জায়েয নয় এবং এ টাকা মসজিদ নির্মাণের কাজে ব্যয় করাও জায়েয নয়। কারণ, কুরবানীর পশুর চামড়ার মূল্য গরীব মিসকিনের হক। তা যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত ব্যক্তিদেরকে সদকা করে দেয়া জরুরি। আর মসজিদ মুসলমানদের সাধারণ দান দ্বারাই নির্মাণ করতে হবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৫; ফাতহুল কাদীর ৮/৪৩৮; ইমদাদুল আহকাম ৪/২৫৭

Sharable Link

আনাস ফারহান - কেরাণীগঞ্জ, ঢাকা

৩২১০. Question

 

স্বামীর নিকট স্ত্রী মোহরের কিছু টাকা পাবে। কিছু টাকা নগদ আদায় করেছে। যে টাকা বাকী আছে তার পরিমাণ কুরবানীর নেসাবের চেয়ে অধিক। স্বামী এ টাকা এ বছর কুরবানীর আগে দিতে পারছে না। বরং সামনের বছর আদায় করবে বলে সম্ভাবনা রয়েছে।

এখন এ মহিলার উপর কি ঐ পাওনা টাকার কারণে এ বছর কুরবানী ওয়াজিব হবে? প্রকাশ থাকে যে, স্ত্রীর কাছে এছাড়া কোনো নগদ টাকা বা স্বর্ণ বা অন্য কোনো সম্পদ নেই। 


 

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ মহিলার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। কেননা তার কাছে কোনো সম্পদই নেই। আর সে যে মহর পাবে সে কারণেও তার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। কারণ, মহরের টাকা হস্তগত হওয়ার আগে তাতে স্ত্রীর পূর্ণ মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয় না। সুতরাং ভবিষ্যতে মোহর পাবে এ কারণে স্ত্রীর উপর এখন কুরবানী ওয়াজিব  হবে না 

-রদ্দুল মুহতার ৬/৩১২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯২

Sharable Link

এইচএমএস - সিদ্ধেশ্বরী

৩২১১. Question

 

আমার ৩ মেয়ে ১ ছেলে। আমি ২০১২ সালের জানুয়ারি মাস থেকে প্রত্যেক মেয়েকে পঞ্চাশ হাজার এবং ছেলেকে ১ লক্ষ টাকা করে দিচ্ছি। এখন জানার বিষয় হল, আমার জীবদ্দশায় এভাবে ছেলেকে মেয়েদের দ্বিগুণ টাকা দেওয়া শরীয়তসম্মত হচ্ছে কি? যদি ছেলেকে মেয়ের সমান সমান দিতে হয় সেক্ষেত্রে ছেলের বউকেও সমপরিমাণ টাকা দিতে পারব কি?


 

Answer

 

আপনি ছেলে মেয়েদের যে টাকা দিয়ে আসছেন তা কি তাদের প্রয়োজনীয় খরচ নির্বাহের জন্য দিচ্ছেন নাকি উপঢৌকন ও হাদিয়াস্বরূপ দিচ্ছেন এ বিষয়টি প্রশ্নে উল্লেখ করেননি। 

যদি উক্ত টাকা তাদের প্রয়োজনীয় খরচ নির্বাহের জন্য দিয়ে থাকেন তাহলে তাদের প্রয়োজন অনুপাতে কমবেশি করে প্রদান করতে কোনো অসুবিধা নেই। এ অবস্থায় তাদের প্রয়োজনই মুখ্য থাকবে। তাই এক্ষেত্রে সমতা রক্ষার প্রশ্ন আসবে না। কিন্তু যদি তাদেরকে উপহার বা হাদিয়া হিসেবে দিয়ে থাকেন তাহলে জীবদ্দশায় সন্তানদের হাদিয়া দেওয়ার নীতিমালা অনুযায়ী ছেলে-মেয়েকে সমান সমান দেওয়া উচিত। এক্ষেত্রে মীরাসের নীতি অর্থাৎ ছেলেকে মেয়ের দ্বিগুণ দেওয়ার নীতি প্রযোজ্য হবে না।

অবশ্য সন্তানদের কারো দ্বীনদারী, উন্নত আখলাক বা বাসত্মব প্রয়োজনের প্রতি লক্ষ্য করে কিংবা মা-বাবার খেদমত ইত্যাদির কারণে কিছু বেশি দিতে চাইলে সেটারও সুযোগ আছে। কিন্তু উল্লেখযোগ্য কারণ ছাড়া হাদিয়ার ক্ষেত্রে তারতম্য করা ঠিক নয়। কেননা হাদীস শরীফে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সন্তানদেরকে হাদিয়া দেওয়ার ক্ষেত্রে সমতা রক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন।

নুমান ইবনে বাশীর রা. বলেন, আমার পিতা আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট নিয়ে গেলেন। উদ্দেশ্য ছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সাক্ষী রেখে আমাকে একটি জিনিস হাদিয়া দিবেন। তখন তিনি আমার পিতাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, সে ছাড়া তোমার কি আর কোনো সন্তান আছে? তিনি বললেন, জ্বী, আছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাদের মাঝে সমতা রক্ষা কর। (মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৮৩৫৯)

সহীহ বুখারীর একটি বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, সন্তানদের হাদিয়া দেওয়ার ক্ষেত্রে সমতা রক্ষা কর। (সহীহ বুখারী ১/৩৫২)

সুতরাং হাদিয়া বা উপহার দিতে চাইলে আপনার ছেলে-মেয়েদের মাঝেও সমতা রক্ষা করে দেওয়াই সমীচীন হবে। অবশ্য ছেলেকে বেশি দেওয়ার পিছনে যদি যথাযথ কারণ থাকে সেক্ষেত্রে তাকে মেয়েদের থেকে বেশি দিতে পারবেন।

আর পুত্রবধূকে দেওয়ার দ্বারা যদি ছেলেকেই বেশি দেওয়া উদ্দেশ্য হয়ে থাকে তাহলে তাও যথাযথ কারণ ছাড়া করা উচিত হবে না।

 

-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৪০৫৬; তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ২/৭১; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/২৩৭

Sharable Link