মুহাম্মাদ নযীর আহমদ - যশোর

২৯২৬. Question

 

আমার ডান পা ভেঙ্গে গেছে। ডাক্তার পুরো পা প্লাস্টার করে দিয়েছেন। এতে করে নড়াচড়া করতে আমার খুবই কষ্ট হচ্ছে। এ অবস্থায় আমার গোসল ফরয হয়েছে। গোসল করলে প্লাস্টারের ভেতর পানি যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই আমি জানতে চাচ্ছি যে, কীভাবে আমি পবিত্রতা অর্জন করতে পারব?


 

Answer

 

প্রশ্নোক্ত অবস্থায় গোসল করলে যেহেতু প্লাস্টারের ভিতরে পানি পৌঁছে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে এবং গোসলের জন্য প্রয়োজনীয় নড়াচড়া করাও কষ্টকর তাই গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করে নিলেই চলবে।

আর গোসলের তায়াম্মুম অযুর তায়াম্মুমের মতোই।

 

-মারাকিল ফালাহ ৬৮; ফাতহুল কাদীর ১/১০৮; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/১১৮; আলবাহরুর রায়েক ১/১৪০; আদ্দুররুল মুখতার ১/২৩৮

Sharable Link

মুহাম্মাদ পারভেজ - গাজীপুর

২৯২৭. Question

আমি ফরয গোসলে মাঝে মাঝে কুলি করতে ও নাকে পানি দিতে ভুলে যাই। এক্ষেত্রে পরবর্তীতে আমর করণীয় কি? পুনরায় কি গোসল করতে হবে, নাকি কুলি  করে নিলে ও নাকে পানি দিলেই চলবে?

 


Answer

ফরয গোসলে কুলি করতে বা নাকে পানি দিতে ভুলে গেলে স্মরণ হওয়ার পর নাকে পানি দিলে বা কুলি করে নিলেই চলবে, নতুন করে গোসল করতে হবে না। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর সূত্রে বর্ণিত এক হাদীসে এসেছে, এক ব্যক্তি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে জিজ্ঞাসা করল যে, এক ব্যক্তি ফরয গোসল করেছে, কিন্তু তার কোনো একটি অঙ্গে পানি পৌঁছেনি। (এখন তার করণীয় কি?) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে ঐ অঙ্গটি ধুয়ে নিয়ে নাযায পড়বে।

-আলমুজামুল কাবীর, তবারানী ১০/২৩১; মাজমাউয যাওয়াইদ ১/৬০৯; শরহুল মুনইয়া ৫০

Sharable Link

মুহাম্মাদ শাহজাহান - দৌলতপুর, কুষ্টিয়া

২৯২৮. Question

আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেবের সূরা-কেরাত শুদ্ধ নয়। মাদরাসার ছাত্র হিসেবে আমি তা বুঝতে পারি। তাই এ ব্যাপারে তাকে একদিন বললে তিনি আমাকে নামায পড়াতে দেন। কিন্তু গোপনে মুসল্লিদের কাছে তার ঐ অযোগ্যতার কথা অস্বীকার করেন। আর আমি তাদেরকে অনেকবার বলা সত্ত্বেও তারা ইমাম সাহেবকেই প্রাধান্য দেয় এবং আমার কথাকে গ্রাহ্য করে না। এখন আমি ঐ ইমামের পিছনে ইক্তিদা করলে আমার নামায অশুদ্ধ হবে এ ভয়ে আমি মসজিদে না গিয়ে বাড়িতেই একাকী নামায পড়ি। প্রশ্ন হল, এ অবস্থায় আমার বাড়িতে একাকী নামায পড়া সহীহ হচ্ছে কি? যদি না হয় তাহলে কী করণীয়? দলিল-প্রমাণ ও উপদেশসহ জানিয়ে উপকৃত করবেন।

 

 


Answer

ইমামের তিলাওয়াত কী পরিমাণ অশুদ্ধ প্রশ্নে তা উল্লেখ করা হয়নি। সিফাত ও তাজবীদ ও মাখরাজের সামান্য ভুলের কারণে নামায নষ্ট হয় না। ভুলের কারণে কুফরী অর্থ হয়ে গেলে বা চরমভাবে অর্থের বিকৃতি ঘটলে তখনই নামায ফাসেদ হয়।

আর নিয়মিত মসজিদের জামাত ত্যাগ করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

প্রশ্নোক্ত মসজিদে না পড়লে পার্শ্ববর্তী অন্য মসজিদে গিয়ে নামায পড়া উচিত। আর প্রশ্নোক্ত ইমামের পিছনে আপনার নামায পড়া-না পড়ার সিদ্ধান্ত নিজ থেকে না নিয়ে কোনো বিজ্ঞ আলেমকে ইমামের কিরাত শুনিয়ে তার থেকে পরামর্শ নেওয়া কর্তব্য।

জেনে রাখা দরকার, মসজিদের জামাত ত্যাগকারীর উপর হাদীসে কঠোর ধমকী এসেছে। তাই এ ব্যাপারে উদাসীনতা আদৌ ঠিক নয়।

-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৬৪৪; রদ্দুল মুহতার ১/৬৩১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৮১

Sharable Link

মুহাম্মাদ যুবায়ের আহমদ - ধানুয়া, শিবপুর, নরসিংদী

২৯২৯. Question

কিছুদিন আগে আমি ঢাকা থেকে সিলেট টিলাগড় এলাকায় সফরে যাই। সেখানে পৌঁছে আসর নামাযে স্থানীয় মসজিদের জামাতে শরিক হই এবং মুসাফির হিসেবে ২ রাকাত পড়ে সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করে ফেলি। পরে একজন মুসল্লি আমাকে বললেন, মুকীম ইমামের পিছনে মুসাফির ব্যক্তি নামাযের নিয়ত/ইক্তিদা করলে চার রাকাত বিশিষ্ট নামায চার রাকাতই পড়তে হয়।

এখন আমার এ নামাযের হুকুম কি? যদি পুনরায় আদায় করতে হয় তাহলে কত রাকাত আদায় করতে হবে? জানালে কৃতজ্ঞ হব।


Answer

ওই ব্যক্তি ঠিকই বলেছে। চার রাকাত বিশিষ্ট ফরয নামাযে মুসাফির ব্যক্তি মুকীম ইমামের পিছনে ইক্তিদা করলে তাকে পূর্ণ নামাযই পড়তে হবে। এক্ষেত্রে দুই রাকাত পড়লে নামায আদায় হবে না। অতএব আপনার ঐ নামাযও আদায় হয়নি। এখন ঐদিন আসরের ওয়াক্তের শেষ পর্যন্ত যদি আপনি মুসাফিরই থাকেন তবে আসরের দুই রাকাত ফরয কাযা করে নিতে হবে।

আর যদি ওয়াক্ত শেষ হওয়ার আগেই আপনি মুকীম হয়ে গিয়ে থাকেন তবে আপনাকে ঐ দিনের আসরের চার রাকাত কাযা করতে হবে।

-আদ্দুররুল মুখতার ২/১৩০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৫১৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৪২; কিতাবুল আছার ১/১৯৯; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ২/৫৪২

Sharable Link

মুহাম্মাদ যুবায়ের আহমদ - ধানুয়া, শিবপুর, নরসিংদী

২৯৩০. Question

আমার নানা ও নানী দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর ইন্তিকাল করেন। তাদের নামায ও রোযার কাফফারা বাবদ প্রায় ৫,০০,০০০/- (পাঁচ লক্ষ) টাকা কাফফারা আসে। এখন তাদের সন্তানরা পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেয় যে, আমরা কাফফারা বাবদ পাঁচ লক্ষ টাকা সমমূল্যের এক খন্ড জমি মাদরাসার নামে ওয়াকফ করে দিব। আর সেই জমিটি আমরা আবাদ করে তার ফসল মাদরাসায় জমা দিব।

এখন প্রশ্ন হল, নামায-রোযার কাফফারা হিসেবে মাদরাসার নামে জমি ওয়াকফ করার দ্বারা কাফফারা আদায় সঠিক হবে কি না এবং সেই ওয়াকফকৃত জমি ওয়াকফকারীদের নিয়ন্ত্রনে রাখা সঠিক হবে কি না? বিস্তারিত জানালে কৃতজ্ঞ হব।

উল্লেখ্য যে, আমার নানা-নানী তাদের কাফফারা আদায়ের জন্য অসিয়ত করে যাননি।


Answer

 কাফফারা বা ফিদয়া আদায়ের জন্য ফকীর-মিসকীনকে মালিক বানিয় দিতে হয়। কিন্তু যেহেতু উনারা কাফফারার জন্য অসিয়ত করে যাননি সেজন্য প্রশ্নোক্ত প্রস্তাবটি গ্রহণযোগ্য হতে পারে। এতে ব্যয়কৃত অর্থ কাফফারা হিসেবে ধর্তব্য না হলেও মৃতদ্বয়ের জন্য সদকায়ে জারিয়া বিবেচিত হবে।

 আর মাদরাসার নামে ওয়াকফ করে দিতে চাইলে তাতে মাদরাসার পূর্ণ কর্তৃত্ব ও ভোগদখলের পূর্ণ স্বাধীনতার সাথে দিয়ে দেওয়া উচিত।

উল্লেখ্য যে, ব্যয়কৃত অর্থ-সম্পদ যদি  আপনার নানা-নানীর মীরাসের অংশ হয়ে থাকে তাহলে তা ব্যয় করার জন্য সকল ওয়ারিশদের স্বতঃস্ফূর্ত অনুমতি জরুরি এবং কোনো ওয়ারিশ নাবালেগ থাকলে তার অংশ থেকে কিছু নেওয়া যাবে না।

-রদ্দুল মুহতার ২/৩৩৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৫; কিফায়াতুল মুফতী ৬/৩৮৯

Sharable Link

মুহাম্মাদ লুৎফর রহমান - দিনাজপুর

২৯৩১. Question

আমার এক আত্মীয় কয়েকদিন আগে মারা গেছেন। তাকে গোসল দেওয়ার সময় হাতের নখগুলো বড় দেখে একজন তা কেটে দেয় এবং চুলও কেটে অাঁচড়ে দেয়। প্রশ্ন হল, মৃতের নখ বড় থাকলে তা কেটে দেওয়ার হুকুম কি?

 

Answer

মৃত ব্যক্তির নখ, চুল ইত্যাদি বড় থাকলেও তা কাটা যাবে না। এমনকি মৃতের শরীরে কোনো ধরনের সাজসজ্জা বা চুলে সিঁথি করতেও নিষেধ করা হয়েছে। তাই মৃতের নখ, চুল বড় থাকলেও তা না কেটে ঐ অবস্থায়ই তাকে দাফন করে দিবে।

প্রখ্যাত তাবেয়ী ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন, উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. এক মৃতের চুল আঁচড়ে দিতে দেখে বললেন, তোমরা মৃতের চুল কেন আঁচড়াচ্ছ? (কিতাবুল আছার ১/২৪২)

ইবনে সীরীন রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি মৃতের নাভীর নিচের পশম এবং নখ কাটা অপছন্দ করতেন এবং বলতেন, অসুস্থ ব্যক্তির পরিবারের কর্তব্য হল, মৃত্যুর পূর্বে অসুস্থ অবস্থায়ই তা পরিষ্কার করে ফেলা।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৭/১৩৯; শরহুল মুনইয়াহ ৫৭৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৯৮; আলবাহরুর রায়েক ২/১৭৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫৮

Sharable Link

মুহাম্মাদ তামীম - কুড়িগ্রাম

২৯৩২. Question

আমরা মৃত্যু শয্যায় শায়িত ব্যক্তির নিকট সূরা ইয়াসীন পড়ে থাকি। কিন্তু সেদিন একজন বলল যে, মৃত্যু শয্যায় শায়িত ব্যক্তির নিকট সূরা ইয়াসীন পড়া বিদআত। তার একথা ঠিক কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।


Answer

ঐ ব্যক্তির কথা ঠিক নয়। মৃত্যু শয্যায় শায়িত ব্যক্তির কাছে সূরা ইয়াসীন তিলাওয়াত করা উত্তম। সফওয়ান রাহ. বলেন, কয়েকজন প্রবীন তাবেয়ী আমাকে বলেছেন যে, তারা সাহাবী গুযাইফ ইবনুল হারেস রা.-এর প্রচন্ড মৃত্যু যন্ত্রণার সময় তাকে দেখতে যান। তখন সাহাবী গুযাইফ রা. বললেন, তোমাদের মাঝে সূরা ইয়াসীন পড়তে পারে এমন কেউ আছে? তখন সালেহ ইবনে শুরাইহ আস সাকুনী ইয়াসীন পড়া শুরু করলেন। সফওয়ান রাহ. বলেন, প্রবীণ তাবেয়ীগণ বলতেন, মৃত্যু শয্যায় শায়িত ব্যক্তির নিকট সূরা ইয়াসীন পড়া হলে মৃত্যু যন্ত্রণা লাঘব হয়।

-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৬৯৬৯; আলইসাবা ৩/১৫৬০; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৯১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫৭

Sharable Link

মুহাম্মাদ আবু সাঈদ - ঠাকুরগাও

২৯৩৩. Question

মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীর ছেহেনে রমযান মাসে দানশীল ব্যক্তিগণ রোযাদারদের জন্য বিভিন্ন ধরনের ইফতারের ব্যবস্থা করে থাকেন। বিশাল-বিশাল দস্তরখান বিছানো হয়। তাতে রোযাদারদেরকে উন্মুক্ত ও ব্যাপক আমন্ত্রণ জানানো হয়। জানার বিষয় হল, যদি কেউ সেখানে সুন্নত ইতিকাফে বসেন তাহলে তার জন্য কি এসব ইফতার ছেড়ে ছেহেনের বাইরে একটু দূরে গিয়ে হোটেলে ইফতার করা জায়েয হবে?


Answer

ইতিকাফকারীর জন্য মসজিদের ছেহেনের ইফতারিতে অংশগ্রহণ করা জরুরি নয়। ছেহেনের খাবার থাকা সত্ত্বেও ইতিকাফকারী চাইলে বাইরে হোটেলে গিয়ে ইফতার নিয়ে আসতে পারবে। এ কারণে তার ইতিকাফ নষ্ট হবে না বা ত্রুটিপূর্ণও  হবে না।

উল্লেখ্য, ইতিকাফকারীর জন্য খাবার এনে দেওয়ার কোনো লোক থাকলে তখন খাবারের জন্য ইতিকাফকারী নিজে মসজিদের বাইরে যেতে পারবে না।

-রদ্দুল মুহতার ২/৪৪৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১২; আলবাহরু রায়েক ২/৩০৩

Sharable Link

মুহাম্মাদ সহিদুল ইসলাম - লাকসাম

২৯৩৪. Question

ইসলামী অনুষ্ঠান ও গবেষণার জন্য একটি জনপ্রিয় টিভি-চ্যানেল বাংলাদেশে তাদের শাখা খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দর্শক ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে তারা আর্থিক অনুদানের আহবান জানিয়েছেন। এ বাবদ তারা যাকাতের টাকাও গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন।

জানতে চাই, কোনো ইসলামী টিভি চ্যানেল কি যাকাত গ্রহণ করতে পারবে? তাদেরকে যাকাত দিলে তা আদায় হবে কি?

 


Answer

টিভি চ্যানেলের জন্য যাকাত দিলে তা আদায় হবে না। কারণ যাকাত গরীব-মিসকীনের হক। যাকাত আদায়ের খাত শরীয়ত কর্তৃক সুনির্ধারিত। নির্ধারিত খাতের বাইরে যাকাত দিলে তা আদায় হবে না।

আর প্রশ্নে বর্ণিত ক্ষেত্রটি শরীয়ত নির্ধারিত খাতসমূহের অন্তর্ভুক্ত নয়। তাই কোনো চ্যানেলকে যাকাতের টাকা দেওয়া জায়েয হবে না।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২১২; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/১২০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৮৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৪৪

Sharable Link

আহমদ - কুমিল্লা

২৯৩৫. Question

আমার পিতার উপর হজ্ব ফরয ছিল। তিনি হজ্ব না করেই মৃত্যুবরণ করেছেন। তিনি হজ্ব করার অসিয়ত করে যাননি। তার মৃত্যুর পর আমরা তার সম্পদ ভাগ করে নিয়েছি। আমার পিতা যেহেতু হজ্ব করেননি তাই আমি তার পক্ষ থেকে বদিল হজ্ব করার জন্য টাকা জমা করতে থাকি। চাকরির টাকা ও কিছু জমি বিক্রি করে হজ্ব করার মতো টাকা জমা করেছি। ইতিপূর্বে আমার উপর হজ্ব ফরয ছিল না। একজন আলেম বলেছেন, এই সম্পদ জমা করার কারণে তোমার উপর হজ্ব ফরয হয়ে গেছে। তুমি নিজের হজ আদায় করে নাও। তোমার পিতার বদলি হজ্ব করা তোমার উপর জরুরি নয়। এখন আমি আমার নিজের হজ্ব আদায় করব নাকি পিতার বদলি হজ্ব আদায় করব? দয়া করে জানাবেন।


Answer

উক্ত আলেম ঠিকই বলেছেন। আপনার গচ্ছিত ঐ টাকার কারণে আপনার নিজের উপরই হজ্ব ফরয হয়ে গেছে। তাই আগে আপনার নিজের হজ্ব আদায় করা জরুরি।

প্রকাশ থাকে যে, আপনার পিতা যদিও তার পক্ষ থেকে হজ্ব করার অসিয়ত করে যাননি। কিন্তু যেহেতু তার উপর হজ্ব ফরয ছিল আর তিনি ফরয হজ্ব আদায় না করেই ইন্তিকাল করেছেন এবং পর্যাপ্ত সম্পদও রেখে গেছেন তাই তার ওয়ারিসদের কর্তব্য হবে তার পক্ষ থেকে বদলি হজ্ব আদায় করানো। বালেগ ওয়ারিসদের স্বতঃস্ফূর্ত ব্যয়ের মাধ্যমে এই হজ্ব করানো উচিত। হাদীস শরীফে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন, এক মহিলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বলল, আমার মা মান্নত করেছিলেন যে, তিনি হজ্ব করবেন। কিন্তু তা পূর্ণ করার আগেই তিনি মারা গেছেন। (এখন আমার করণীয় কী?) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, অর্থ : তুমি তার পক্ষ থেকে হজ্ব আদায় করে নাও। বল তো, যদি তোমার মা কারো নিকট ঋণী হতেন তুমি কি তার ঋণ পরিশোধ করতে না? মহিলাটি বলল, হ্যাঁ। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা আল্লাহর ঋণ পরিশোধ কর। কেননা তিনি প্রাপ্য পাওয়ার অধিক হকদার।

-সহীহ বুখারী ১/২৪৯; আলমানাসিক ৪২, ৪৩২; গুনইয়াতুন নাসিক ২০

Sharable Link

খুবাইব - টঙ্গী

২৯৩৬. Question

আমাদের বাড়িওয়ালা দশ বছর আগে তার ভাতিজাকে সম্পূর্ণ খরচ দিয়ে হজ্বে পাঠিয়েছিলেন। ভাতিজা তখন বালেগ ছিল, কিন্তু বেকার ও আর্থিকভাবে অসচ্ছল ছিল। এখন সে কাপড়ের ব্যবসায় দ্রুত উন্নতি করেছে। ইতিমধ্যেই সে প্রচুর অর্থের মালিক হয়ে গেছে। যা অনেক আগেই নেসাব অতিক্রম করেছে। এখন কি তার জন্য পুনরায় হজ্ব করা জরুরি, না আগের ঐ হজ্বটিই তার জন্য যথেষ্ট হবে?

প্রকাশ থাকে যে, সে হজ্ব করার সময় ফরয বা নফল কিছুই নির্দিষ্ট করেনি বরং শুধু হজ্বের নিয়ত করেছিল।


Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তির ফরয হজ্ব আদায় হয়ে গেছে। তার জন্য পুনরায় হজ্ব করা জরুরি নয়। কারণ দরিদ্র ব্যক্তিও যদি কোনোভাবে হজ্ব আদায় করে এবং ফরয হজ্বের নিয়ত করে বা শুধু হজ্বের নিয়ত করে থাকে (অর্থাৎ নফল হজ্বের নিয়ত না করে থাকে) তাহলে সেটা তার ফরয হজ্ব বলেই গণ্য হবে। পরবর্তীতে নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলেও দ্বিতীয়বার তার উপর হজ্ব করা ফরয হবে না।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১৩৬৭৩; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৯৪; মানাসিক, মোল্লা আলী কারী ৪১; গুনইয়াতুন নাসিক ৩২; আলবাহরুর রায়েক ২/৩১২; আলবাহরুল আমীক ১/৩৮৬

Sharable Link

লুৎফর রহমান - দিনাজপুর

২৯৩৭. Question

আমি এবার হজ্বে যাচ্ছি। তামাত্তু হজ্ব করার ইচ্ছা আছে। কিন্তু দমে শোকর দেওয়ার সামর্থ্য আমার নেই। তাই দমের পরিবর্তে রোযা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রশ্ন হল, ক) দমের পরিবর্তে রোযা রাখলে কয়টি রোযা রাখতে হবে এবং কী নিয়মে রাখতে হবে? ঐ রোযার নিয়ত কখন করতে হবে? সুবহে সাদিকের পর ঐ রোযার নিয়ত করলে কি তা আদায় হবে?


Answer

কিরান ও তামাত্তুকারী দমে শোকর আদায়ের সামর্থ্য না রাখলে এর পরিবর্তে তাকে দশটি রোযা রাখতে হবে। তিনটি রোযা ইহরামের পর থেকে আরাফার দিন পর্যন্ত শেষ হতে হবে। বাকি সাতটি পরবর্তীতে সুযোগমতো রাখলেও চলবে। এই সাতটি রাখার নির্ধারিত মেয়াদ নেই। এগুলো দেশে এসেই আদায় করা উত্তম। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, (তরজমা) অতপর যখন তোমরা নিরাপদ হয়ে যাবে তখন যে ব্যক্তি হজ্বের সাথে উমরার সুবিধাও গ্রহণ করবে সে (আল্লাহর উদ্দেশ্যে পেশ করবে) যে কুরবানী সহজলভ্য হয় তা আদায় করবে। কারও যদি সে সামর্থ্য না থাকে তবে সে হজ্বের সময়ে তিনটি রোযা রাখবে এবং সাতটি (রোযা রাখবে) যখন বাড়িতে প্রত্যাবর্তন করবে। এভাবে মোট দশটি রোযা হবে। -সূরা বাকারা : ১৯৬

আর দমের পরিবর্তে রোযা রাখলে এর নিয়ত সুবহে সাদিকের পূর্বেই করতে হবে। সুবহে সাদিকের পর নিয়ত করলে ঐ রোযা দম আদায়ের জন্য যথেষ্ট হবে না।

-আলবাহরুর রায়েক ২/২৬২; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৭৭

Sharable Link

আহমদ দীদার - দুপচাচিয়া, বগুড়া

২৯৩৮. Question

গত বছর আমাদের কাফেলার এক ব্যক্তি ভুলে উমরার সায়ী না করে মাথা মুন্ডিয়ে হালাল হয়ে যায়। স্মরণ হওয়ামাত্রই হেরেমে গিয়ে সায়ী করে নেয়। জানতে চাই, তার এই উমরা কি সহীহ হয়েছে? আর যদি না হয় তাহলে তার করণীয় কী?


Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে লোকটি যেহেতু পরবর্তীতে সায়ী আদায় করে নিয়েছে তাই তার উমরাহ সহীহ হয়ে গেছে। তবে সায়ীর পূর্বে মাথা মুন্ডানোর কারণে তার উপর একটি জরিমানা দম ওয়াজিব হয়েছে। এই জরিমানা দম হেরেমের এলাকাতেই আদায় করতে হবে।

-গুনইয়াতুন নাসিক ১৩২, ২৬২; আদ্দুররুল মুখতার ২/৫৫৮; মানাসিক মোল্লা আলী কারী ১৭৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৪২৯; কিতাবুল আছল ২/৪৩৪

Sharable Link

আবদুল ওয়াহিদ - আদালতপাড়া, টাঙ্গাইল

২৯৩৯. Question

 

আমি কুরবানীর ঈদের তিন মাস আগে কুরবানীর উদ্দেশ্যে একটি গাভী ক্রয় করেছি। কুরবানীর আগে সেই গাভীটার একটি বাচ্চা হয়েছে। জানার বিষয় হল, এ বাচ্চাটির ব্যাপারে শরীয়তের হুকুম কী?


 

Answer

উক্ত বাচ্চাকে সদকা করে দিতে হবে। অবশ্য জবাই না করে জীবিত সদকা করে দেওয়া উত্তম। আর যদি জবাই করে দেয় তবে তার গোশত সদকা করে দেওয়া ওয়াজিব হবে।

-আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪৪৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩২২

Sharable Link

শরিফুল ইসলাম - সিলেট

২৯৪০. Question

গত বছর আমাদের কুরবানীর পশুটি ট্রাক থেকে নামানোর সময় এক পায়ে আঘাত পেয়ে তা ফুলে যায়। যার ফলে স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে একটু কষ্ট হয় এবং হাঁটাচলার সময় ঐ পাটি তুলনামূলক কম ব্যবহার করে। আমার প্রশ্ন হল, উক্ত পশু দ্বারা আমাদের কুরবানী সহীহ হয়েছে কি?


Answer

হ্যাঁ, উক্ত পশু দ্বারা কুরবানী করা সহীহ হয়েছে। কেননা পশুটির পা একেবারে ভেঙ্গে যায়নি; বরং আঘাতের কারণে হাঁটতে কষ্ট হত। আর এ ধরনের পশুর কুরবানী সহীহ।

-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২৮০২; জামে তিরমিযী, হাদীস : ১৪৯৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৬৬; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪২৬; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬; আলবাহরুর রায়েক ৮/১৭৬

Sharable Link

আবদুল ওয়াহিদ - আশরাফুল মাদারিস টাঙ্গাইল

২৯৪১. Question

আমাদের পরিবারে আম্মা ও আমরা তিন ভাই আছি। পিতার মৃত্যুর পর সম্পদ বণ্টন করা হয়নি। ছোট ভাইদের লেখাপড়ার খরচসহ সংসারের সকল আয়-ব্যয় অভিন্ন। এ অবস্থায় আমাদের সকলের পক্ষ থেকে কি একটি কুরবানী যথেষ্ট হবে, না প্রত্যেকের উপর কুরবানী করা ওয়াজিব?


Answer

আপনাদের পরিবার যৌথ হলেও এবং পিতার সম্পদ এখনো বণ্টন করা না হলেও কুরবানীর ক্ষেত্রে প্রত্যেকের প্রাপ্ত অংশ হিসাবযোগ্য। অতএব এ হিসাবে যে প্রাপ্ত বয়স্ক সদস্য প্রয়োজন অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে তার উপরই পৃথকভাবে কুরবানী করা ওয়াজিব হবে।

প্রাপ্ত বয়স্কদের কেউ নেসাব থেকে কম সম্পদের মালিক হলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে না। তদ্রূপ কেউ অপ্রাপ্ত বয়স্ক হলে তার উপরও কুরবানী ওয়াজিব নয়।

-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/২৪২; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/৪৭৫; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৪৪

Sharable Link

মাসুম - দিনাজপুর

২৯৪২. Question

 

প্রতি বছর আমরা ছয় ভাই মিলে একটি গরু কুরবানী করি। একটি গরুতে যেহেতু সাতজন শরিক হতে পারে তাই এবার আমরা পশুর ৭ম ভাগটি ইছালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে মৃত পিতার পক্ষ থেকে কুরবানী দিতে চাচ্ছি। এভাবে মৃত পিতার পক্ষ থেকে তা কুরবানী করলে তা সহীহ হবে কি এবং ঐ অংশের গোশত কি আমরা খেতে পারব?


 

Answer

হ্যাঁ, প্রশ্নোক্ত অবস্থায় ৬ জন মিলে ৭ম অংশ পিতার পক্ষ থেকে কুরবানী করলে তা সহীহ হবে। তবে এটি উত্তম পদ্ধতি নয়। উত্তম হল, সবাই মিলে এক অংশের টাকা এক ভাইকে মালিক বানিয়ে দিবে। অতপর সে ভাই পিতার পক্ষ থেকে কুরবানী করবে। এতে কাজটি নিয়মসম্মত হবে এবং সকলে সওয়াবও পেয়ে যাবে। আর উভয় অবস্থায় মৃত পিতার জন্য দেওয়া অংশের গোশত নিজেরা খেতে পারবে এবং সদকাও করতে পারবে।

-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৩৮৫; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৯; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২৬; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৭৮; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/২৯৫

Sharable Link

আবদুছ ছবুর - দিনাজপুর

২৯৪৩. Question

 

আমাদের এলাকায় কুরবানীর সময় পশুর চামড়া ছিলা, গোশত কাটা ও অন্যান্য কাজ এলাকার গরীব লোকেরা করে থাকে। বিনিময় হিসেবে তাদেরকে কিছু গোশত দেওয়া হয়। টাকা দিলে তারা টাকা নিতে চায় না। বরং কিছু গোশত পাওয়ার জন্যই তারা এ কাজ করে থাকে। প্রশ্ন হল, এভাবে তাদেরকে কাজের বিনিময়ে গোশত দেওয়া জায়েয হবে কি?

উল্লেখ্য, ঐ সময় পেশাদার কসাইও পাওয়া যায় না, যারা টাকার বিনিময়ে এ কাজ করবে। 


 

Answer

 

কুরবানীর গোশত, চামড়া বা অন্য কিছু বিনিময় হিসেবে দেওয়া জায়েয নয়। কেননা হাদীস শরীফে এ ব্যাপারে নিষেধ করা হয়েছে। আলী রা. বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে আদেশ করেছেন কুরবানীর উটের কাছে থেকে তার গোশত ও চামড়া সদকা করতে এবং কসাইকে তা থেকে কিছু না দিতে। তিনি আরও বলেছেন, আমরা কসাইকে নিজেদের পক্ষ থেকে পারিশ্রমিক দিতাম। (সহীহ বুখারী ১/২৩২) 

তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে তাদের কাজের বিনিময়ে টাকা বা অন্য কিছু  দিতে হবে। কোনো অবস্থায় কুরবানীর গোশত বিনিময় হিসেবে দেওয়া যাবে না। তবে  টাকা বা অন্য কিছু দ্বারা পরিপূর্ণ পারিশ্রমিক দিয়ে দেওয়ার পর হাদিয়া হিসেবে কুরবানীর গোশত দিতে পারবে এবং দেওয়া উচিত।

 

-সহীহ মুসলিম ১/৪২৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩২১; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪৪২

Sharable Link

মুহাম্মাদ যাকারিয়া - পাবনা

২৯৪৪. Question

প্রতি বছর আমরা নির্দিষ্ট পাঁচ শরিক মিলে কুরবানী করি। এ বছরও কুরবানীর এক সপ্তাহ আগে ৫জন মিলে একটি গরু ক্রয় করি। কুরবানীর আগের দিন আমাদের এক প্রতিবেশী তাতে শরিক হতে চাইলে আমরা তাকে শরিক করে নেই। জানার বিষয় হল, এভাবে শরিক করাতে কুরবানী আদায় হয়েছে কি? জানালে উপকৃত হব।

উল্লেখ্য, কুরবানীদাতা প্রত্যেক শরিকই স্বচ্ছল ও নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক।


Answer

প্রশ্নোক্ত অবস্থায় সকলের কুরবানী সহীহ হয়েছে। তবে পশু ক্রয়ের পর নতুন করে শরিক নেওয়া অনুত্তম হয়েছে। এক্ষেত্রে নতুন শরিক থেকে প্রাপ্ত টাকা প্রত্যেক সদস্যের জন্য সদকা করে দেওয়া উত্তম হবে।

-আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৭; আলমাবসূত, সারাখসী ১২/১৫; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৫০

Sharable Link

সালমা - রূপনগর, ঢাকা

২৯৪৫. Question

আমাকে আমার স্বামী তালাক দিয়ে দিয়েছে। আমার ১৪ মাসের একটি পুত্র সন্তান আছে তাকে লালন পালনের জন্য নিজের কাছে রেখে দেই। কিছুদিন আগে তার বাবা (আমার তালকদাতা স্বামী) এসেছে তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমি তাকে দেইনি। তার সন্তান তাকে না দেওয়া কি আমার জন্য অন্যায় হয়েছে? কুরআন-হাদীসের আলোকে জানালে কৃতজ্ঞ হব।


Answer

প্রশ্নোক্ত অবস্থায় এ শিশুকে নিজের কাছে রেখে দেওয়া আপনার অন্যায় হয়নি। বরং আপনার অন্যত্র বিবাহ না হলে শিশুর বয়স সাত বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত তার লালনপালনের সর্বাধিক অধিকারী আপনিই। হাদীস  শরীফে এসেছে, জনৈক মহিলা রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, এটা আমার পুত্র। আমার উদর ছিল তার গর্ভাশয়, আমার স্তন ছিল তার পানপাত্র, আমার কোল ছিল তার বিশ্রামস্থল। তার পিতা আমাকে তালাক দিয়ে দিয়েছে। এখন আমার কাছ থেকে তাকে কেড়ে নিতে চাচ্ছে। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার অন্যত্র বিবাহ হওয়ার আগ পর্যন্ত তুমিই তার লালনপালনের অধিক হক রাখ।-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২২৭০

অবশ্য মায়ের কাছে থাকলেও ঐ শিশুর যাবতীয় খরচ পিতাকেই বহন করতে হবে। আর সাত বছর বয়স হওয়ার পর পিতা চাইলে ছেলেটিকে নিজ দায়িত্বে নিয়ে যেতে পারবেন।

-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২২৭০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৫/২৭৩, ৪১১; ফাতহুল কাদীর ৪/১৮৪, ১৮৮; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৫৬৬, ৬১৮

Sharable Link

মুহাম্মাদ ফারুক - মিরপুর, ঢাকা

২৯৪৬. Question

আমার মা ২০০৭ সালে মারা যান। তার মৃত্যুর কিছু দিন পর বাবা এক বিধবা মহিলাকে বিয়ে করেন। ঐ বিধবা মহিলার বর্তমানে যিনি আমার সৎ মা আগের সংসারের একটি মেয়ে আছে। আমি কি ঐ মেয়েটিকে বিয়ে করতে পারব?


Answer

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ঐ মেয়েটি আপনার মাহরাম নয় তার সাথে আপনার বিবাহ জায়েয। কেননা তার পিতা-মাতাও ভিন্ন এবং তার সাথে আপনার রক্তের কোনো সম্পর্কও নেই।

-আলবাহরুর রায়েক ৩/৯৪; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৩১; ফাতহুল কাদীর ৩/১২০; আননাহরুল ফায়েক ২/১৮৭

Sharable Link

হাবীবুর রহমান - কাতিয়া মাদরাসা সুনামগঞ্জ

২৯৪৭. Question

ক) আমাদের এলাকায় ধানের উপর টাকা লাগানোর প্রচলন রয়েছে। তা এভাবে যে, জমির মালিক বৈশাখ মাস আসার আগেই প্রতি হাজারে তিন মণ ধান দেবেন বলে টাকা নেন। অতপর নির্ধারিত সময়ে ধান দিয়ে দেন। এখন আমার প্রশ্ন হল, ধানের উপর এভাবে টাকা লাগানো জায়েয কি না? এ সম্পর্কে শরীয়তের হুকুম কি? জানালে কৃতজ্ঞ হব।

খ) অনেকসময় জামাতে নামাযের মধ্যে মোবাইল বেজে উঠে। যা নামাযে ব্যাঘাত ঘটায়। এখন আমার প্রশ্ন হল, নামাযের মধ্যেই হাত দ্বারা মোবাইল বন্ধ করা যায় কি না? বন্ধ করলে কি আমালে কালীল বা কাছীর হয়ে যাবে? বিস্তারিত জানালে কৃতজ্ঞ হব।


Answer

ক) হ্যাঁ, প্রশ্নোক্ত পদ্ধতিতে ধানের আগাম খরিদ জায়েয। তবে এক্ষেত্রে নিম্নোক্ত শর্তাবলির প্রতি লক্ষ রেখে লেনদেন করতে হবে :

১. ধান প্রদানের সময় ও স্থান নির্ধারণ করতে হবে।

২. ধানের প্রকার ও পরিমাণ নির্দিষ্ট করতে হবে।

৩. কোন বিশেষ ক্ষেতের ধান দেওয়ার শর্ত করা যাবে না।

৪. ধানের মূল্য পুরোটা অগ্রিম আদায় করে দিতে হবে।

৫. মেয়াদান্তে ক্রেতাকে ধানই গ্রহণ করতে হবে।

বিক্রেতা যদি ধান দিতে না পারে তবে ক্রেতা কেবল তার আদায়কৃত টাকাই গ্রহণ করতে পারবে। কম-বেশি করা যাবে না।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ২২৪০; ফাতহুল কাদীর ৬/২১-২৩০; রদ্দুল মুহতার ৫/২১৪, ২১৮; শরহুল মাজাল্লাহ ২/৩৯২

উত্তর : খ) নামায অবস্থায় মোবাইল বেজে উঠলে আপন অবস্থায় থেকেই এক হাত দ্বারা তা বন্ধ করে দিবে। এক্ষেত্রে দুই হাত ব্যবহার করা যাবে না। কেননা একসঙ্গে দুই হাত ব্যবহার করলে নামায ভেঙ্গে যাবে।

-রদ্দুল মুহতার ১/৬২৪; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ১৭৭; আলবাহরুর রায়েক ২/১১

Sharable Link

মুশফিক ইবনে আজাদ - মুহাম্মাদনগর গল্লামারী, খুলনা

২৯৪৮. Question

আমার চাচা একজন প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক। একজন আলেম তাকে বলেছেন, তিনি যে বিষয়ের ক্লাস নিয়ে থাকেন ঐ বিষয়ে ঐ ছাত্রদের প্রাইভেট পড়ানো জায়েয নেই।

এতে ঘুষের আশঙ্কা রয়েছে।

আমার জানার বিষয় হল, তিনি কি সঠিক বলেছেন? যদি তিনি ইনসাফ করতে পারেন তবুও কি হারাম হবে?


Answer

আপনার চাচা যদি ক্লাসে যেভাবে পড়ানোর কথা সেভাবেই হক আদায় করে পড়িয়ে থাকেন, আর এরপরও ছাত্রের দুর্বলতার কারণে কিংবা সাবজেক্ট কঠিন হওয়ার কারণে বাস্তবেই প্রাইভেট পড়ানোর প্রয়োজন থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে তিনি নিজের ছাত্রদেরকেও প্রাইভেট পড়াতে পারবেন। তবে প্রাইভেট পড়ার কারণে ঐ ছাত্রকে ক্লাসে বা পরীক্ষায় অতিরিক্ত কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া যাবে না। বরং পরীক্ষা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে যোগ্যতা ও সক্ষমতা অনুযায়ী অন্য ছাত্রদের মতোই আচরণ করতে হবে।

কিন্তু তিনি যদি ক্লাসেই যথাযথভাবে না পড়ানোর কারণে ছাত্রদের প্রাইভেট পড়ার প্রয়োজন হয় কিংবা প্রাইভেট পড়লে ক্লাসে বা পরীক্ষায় অতিরিক্ত সুবিধা পাওয়া যায়, নাম্বার বেশি দেওয়া হয় বা প্রশ্নের পড়া আগেই দাগিয়ে দেওয়া হয় ইত্যাদি তবে প্রাইভেট পড়ানো জায়েয হবে না। এক্ষেত্রে প্রাইভেট পড়িয়ে টাকা নেওয়া ঘুষ হবে। তাই নিজের স্কুলের ছাত্রদেরকে প্রাইভেট না পড়ানোই অধিক নিরাপদ। বিশেষত যে ছাত্রদের ক্লাস তিনি নিজেই নিয়ে থাকেন তাদেরকে প্রাইভেট না পড়ানোই ভালো। পড়াতে চাইলে উপরোক্ত শর্তের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। আর সরকারীভাবে প্রাইভেট পড়ানো যদি নিষেধ থাকে তবে পড়ানো যাবে না।

-হাশিয়াতুত তহতাবীল আলাদ্দুর ৩/১৭৭; আলমওসূআতুল ফিকহিয়্যাহ, কুয়েত ২২/২২০; আহকামুল মালিল হারাম ৫২

Sharable Link