ইমরান হুসাইন - ঢাকা

৩৮৬২. Question

 

আমার পিতার ইন্তেকালের পর উত্তরাধিকার সূত্রে আমি নগদ পনের লক্ষ টাকা ও অন্যান্য সম্পত্তি লাভ করি। এই টাকা আমার নিকট চার বছর জমা ছিল। এরপর আমার বাড়ি নির্মাণ বাবদ তা ব্যয় হয়েছে। এখন সামান্য কিছু টাকাই আমার কাছে আছে। টাকাগুলো থাকা অবস্থায় আমি সেগুলোর কোনো যাকাত আদায় করিনি। জানার বিষয় হল, বাড়ি নির্মাণ বাবদ আমার যে টাকা খরচ হয়ে গেছে সেগুলোর বিগত বছরগুলোর যাকাত কি আদায় করতে হবে?

 


 

Answer

হাঁআপনাকে ঐ পনের লক্ষ টাকার বিগত চার বছরের যাকাত দিতে হবে। বাড়ি নির্মাণে ব্যয় করার কারণে পিছনের বছরগুলোর যাকাত মাফ হয়ে যায়নি।

চার বছরের প্রথম বছরে আপনাকে পনের লক্ষ টাকারই যাকাত দিতে হবে। আর পরবর্তী বছরের ক্ষেত্রে পূর্বের বকেয়া যাকাত বাদ দিয়ে বাকি টাকার যাকাত দিতে হবে। সে হিসেবে প্রথম বছরের যাকাত হবে ৩৭,৫০০/- টাকা। দ্বিতীয় বছরের যাকাত হবে ৩৬,৫৬২.৫০/- টাকা। তৃতীয় বছরের যাকাত হবে ৩৫,৬৪৮.৪৩/- টাকা। চতূর্থ বছরের যাকাত হবে ৩৪,৭৫৭.২৫/-টাকা। সুতরাং ঐ চার বছরে আপনার যাকাত ওয়াজিব হয়েছে সর্বমোট ১,৪৪,৪৬৮.২৫/- টাকা। এটা এখনও আপনার উপর আবশ্যক রয়ে গেছে।

আর আপনার নিকট বর্তমানে যে টাকা আছে তা থেকে এই বকেয়া যাকাত বাদ দিয়ে অবশিষ্ট টাকা নেসাব পরিমাণ হলে যাকাতবর্ষ পূর্ণ হওয়ার পর সে টাকার বর্তমানের যাকাতও আপনাকে আদায় করতে হবে। আর যদি নেসাব পরিমাণ না থাকে তবে যাকাত ফরয হবে না। 

-আলজামিউল কাবীর ১৬; মাবসূত, সারাখসী ২/১৯৬; বাদায়েউস সানায়ে ২/১১৬; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/১৮০-১৮১; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৬০

Sharable Link

আবদুস সবুর - বালিয়াকান্দি, রাজবাড়ি

৩৮৬৩. Question

আমাদের কাফেলায় সকলেই তামাত্তু হজ্বকারী। একজন বদলি আদায়কারী ছিল। আপনাদের কাছে হজ্ব সংক্রান্ত একটি মাসআলা জানতে চাই তা হল, হাজ্বীগণ বড় জামরায় পাথর মারার পর কুরবানীর পূর্বেই কি মাথা মুণ্ডাতে পারবে? দু ধরনের কথাই শুনেছি। গতবার আমাদের সাথে এক ব্যক্তি বদলি হজ্ব করেছে সে হজ্বের কুরবানী দেয়নি। পাথর মারার পর আমাদের কুরবানীর আগেই সে মাথা মুণ্ডিয়ে নিল। তার এ কাজ কি ঠিক হয়েছে? সঠিক মাসআলা জানালে উপকৃত হব।

 


Answer

ইফরাদ হজ্বকারীর উপর দমে শোকর অর্থাৎ হজ্বের কুরবানী করা ওয়াজিব নয়। বরং মুস্তাহাব। তাই ইফরাদ হজ্বকারী কুরবানী করলেও কুরবানীর পূর্বে তার জন্য চুল কাটা জায়েয। তবে কুরবানীর ইচ্ছা থাকলে তার জন্য কুরবানীর পরই চুল কাটা উত্তম। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বদলি আদায়কারী ইফরাদ হজ্বকারী  হয়ে থাকলে তার এ কাজ ঠিক হয়েছে। আর কিরান বা তামাত্তুকারী হাজ্বী সাহেবগণের উপর দমে শোকর আদায় করা ওয়াজিব। তাদের জন্য কুরবানীর আগে চুল কাটা জায়েয নয়। তাদের জন্য চুল কাটার পূর্বে কুরবানী করা ওয়াজিব। এই ধারাবাহিকতা ভঙ্গ হলে দম দেওয়া জরুরি হবে।

-শরহু মাআনিল আছার ১/৪৪৮; মানাসিক, মোল্লা আলী কারী ২২৫; ফাতহুল কাদীর ২/৪৭২; মাজমাউল আনহুর ১/৪৩৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/৫৫৫

Sharable Link

মুহাম্মাদ শরাফত করীম - সোনাইমুড়ি, নোয়াখালি

৩৮৬৪. Question

গত বছর হজ্বের সফরে একদিন তাওয়াফের পর তাওয়াফের দুই রাকাত নামায পড়তে ভুলে যাই। বাসায় আসার পর স্মরণ হলে ঐ দুই রাকাত নামায পড়ে নিই। প্রশ্ন হল, তাওয়াফের দুই রাকাত নামায পড়তে বিলম্ব হওয়ায় আমার উপর কোনো দম আবশ্যক হয়েছে কি না?

 


Answer

তাওয়াফের পর দুই রাকাত নামায পড়া ওয়াজিব। এই দুই রাকাত নামায মাকরূহ ওয়াক্ত না হলে তাওয়াফের পরপরই পড়া সুন্নত। বিনা কারণে তাওয়াফের দুই রাকাত নামায পড়তে দেরি করা ঠিক নয়। তবে ঐ দুই রাকাত নামায বিলম্বে পড়লেও কোনো দম ওয়াজিব হয়নি। এমনকি কেউ ঐ দু রাকাত না পড়লেও দম ওয়াজিব হবে না। তবে ওয়াজিব ছেড়ে দেওয়ার গুনাহ হবে। অতএব আপনার উপর কোনো দম ওয়াজিব নয়। 

-গুনইয়াতুন নাসিক ১১৬; মানাসিক, মুল্লা আলী আলক্বারী ১৫৫; ইলাউস সুনান ১০/৮০; রদ্দুল মুহতার ২/৪৭০

Sharable Link

সাইফুদ্দীন - ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত

৩৮৬৫ . Question

ইসলামী শরীয়তে শিশুর দুধপানের মেয়াদকাল কতটুকু? দয়া করে জানাবেন।

 


Answer

শিশুর দুধপানের সর্বোচ্চ সময় হল চান্দ্রমাসের হিসাবে দুই বছর। দুই বছরের অধিক দুধ পান করানো যাবে না। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন,

وَ الْوَالِدٰتُ یُرْضِعْنَ اَوْلَادَهُنَّ حَوْلَیْنِ كَامِلَیْنِ لِمَنْ اَرَادَ اَنْ یُّتِمَّ الرَّضَاعَةَ .ؕ

মায়েরা তাদের সন্তানদের পূর্ণ দু বছর দুধ পান করাবে। এ সময়কাল তাদের জন্যযারা দুধ পান করানোর মেয়াদ পূর্ণ করতে চায়।

-সূরা বাকারা (২) : ২৩৩; মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক ১৩৯০০, ১৩৯০১; আসসুনানুল কুবরা, বাইহাকী ৭/৪৬২; ফাতহুল কাদীর ৩/৩০৭-৩০৯; আল বাহরুর রায়েক ৩/২২৩; আদ্দুররুল মুখতার ৩/২০৯

Sharable Link

আব্দুল্লাহ - শ্রীনগর, মুন্সিগঞ্জ

৩৮৬৬. Question

একটি মেয়ের বিবাহ হয়েছে তার মায়ের সৎ মামার সাথে। সৎ মামা অর্থাৎ এক নানার ঔরসে ভিন্ন নানির ঔরসজাত ছেলের সাথে বিবাহ বৈধ কি না? কুরআন-হাদীসের আলোকে জানিয়ে বাধিত করবেন।

 


Answer

মায়ের আপন মামাসৎ মামা এবং বৈপিত্রেয় মামা সকলেই মাহরামের অন্তর্ভুক্ত। কুরআন মাজীদের সূরা নিসার ২৩ নং আয়াতে যাদের সাথে বিবাহ হারাম তাদের আলোচনা রয়েছে।

উক্ত মাহরামের আলোচনায় যে ভগ্নিকন্যা এসেছে তাতে বোনের মেয়ের মেয়েসহ তাদের অধস্তন সকলে অন্তর্ভুক্ত। এতে আপন বোন ও সৎ বোনের মেয়ে এবং এদের অধস্তন সকল কন্যার হুকুম সমান।

তাই ঐ মেয়ের বিবাহ তার মায়ের সৎ মামার সাথে সম্পূর্ণ হারাম হয়েছে। তাদের জন্য অবিলম্বে পৃথক হয়ে যাওয়া জরুরি এবং আল্লাহ তাআলার দরবারে কায়মনোবাক্যে তাওবা-ইস্তিগফার করা আবশ্যক। 

-সূরা নিসা (৪) : ২৩; মাবসূত, সারাখসী ৪/১৯৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৭৩; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৩৬০

Sharable Link

বিলাল হুসাইন - আটিবাজার, কেরানীগঞ্জ

৩৮৬৭. Question

আমার এক বন্ধুর কাপড় তৈরির মিল আছে। সে তার মিলের একটি মেশিন বিক্রি করতে চাচ্ছে। আমার ইচ্ছা হল, তার থেকে মেশিনটি কিনে তার কাছেই আবার ভাড়ায় দিয়ে দিব।

আমার জন্য এটা জায়েয হবে কি না?

 


Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যদি সাময়িক সময়ের জন্য টাকা দিয়ে অতিরিক্ত গ্রহণই উদ্দেশ্য হয় এবং এর ছূতা হিসেবে লেনদেনটি করা হয় অর্থাৎ মেশিনটি ক্রয় করা ও ভাড়া দেওয়া সবই যদি ছূতা হিসেবে অবলম্বন করা হয় তবে তা বৈধ হবে না।

কিন্তু যদি এক্ষেত্রে লেনদেনটি ছূতা হিসেবে গ্রহণ করা না হয়বরং প্রকৃত অর্থেই ক্রয়-বিক্রয় উদ্দেশ্য হয়ে থাকে তবে নিম্নোক্ত শর্তসাপেক্ষে তা করা যাবে-

১। ক্রয়ের সাথে ভাড়ার শর্ত করা যাবে না। অর্থাৎ ক্রয়ের সময় এ কথা বলা যাবে না যেমেশিনটি কিনব তবে শর্ত হলতোমার কারখানায় এটিকে ভাড়া হিসেবে রাখতে হবে।

২। ক্রয়ের পর মেশিনটি আগে আপনার দখলে বুঝে নিতে হবে।

ক্রয়ের পর যে কারো কাছে ভাড়া দেওয়ার স্বাধীনতা থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে যেমনিভাবে অন্যত্র ভাড়া দিতে পারবেন তদ্রূপ পূর্বের মালিকের নিকটও তা ভাড়া দিতে পারবেন। ক্রয়ের পর পূর্বের মালিকের কাছে ভাড়া দিতে চাইলে তার সাথে পৃথকভাবে ভাড়া চুক্তি করে নিতে হবে।

৩। কারখানার মালিক মেশিনটি ভাড়া না রাখতে চাইলে তাকে এর জন্য বাধ্য করা যাবে না।

৪। বাস্তবসম্মত মূল্যে বেচা-কেনা হতে হবে। নামমাত্র মূল্যে বিক্রি ও ভাড়া ধরা যাবে না।

-আলমাআইরুশ শরইয়াহ ১৪৫; রদ্দুল মুহতার ৫/১৪৭

Sharable Link

আবদুর রহমান - লালবাগ, ঢাকা

৩৮৬৮ . Question

আমি আমার বাড়ির ২টি ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়ে থাকি। কয়েকমাস থেকে তা খালি পড়ে আছে। গত সপ্তাহে এক ভাড়াটিয়ার সাথে কথা হয়েছে যে, সে একটি ভাড়া নিবে। এখন জানতে পারি যে, সে হিন্দু। আমার জানার বিষয় হল, হিন্দুকে ঘর ভাড়া দেওয়া কি জায়েয?

 


Answer

জ্বীঅমুসলিমকে ঘর ভাড়া দেওয়া জায়েয। এবং তার থেকে প্রাপ্ত ভাড়াও বৈধ। তবে এমন কাউকে ভাড়া দেওয়া যাবে না যার দ্বারা মুসলিম সমাজে বিধর্মীদের আচার-অনুষ্ঠান প্রচার পায় কিংবা যার দ্বারা মুসলমানদের দ্বীনী অনুভূতিতে আঘাত আসে। 

-আলমাবসূত, সারাখসী ১৫/১৩৪; আলমুহীতুল বুরহানী ১১/৩৪৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৩/১৫০

Sharable Link

মুহাম্মাদ মুফিজুর রহমান - ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত

৩৮৬৯. Question

আমি ও আমার বড় ভাই মিলে একটি কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার পরিচালানায় আছি। আমাদের এখানে অনলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন চাকরির আবেদন, বিশ্ববিদ্যালয়/কলেজে ভর্তি ইত্যাদি ফরম পূরণ করা হয়। আমার জানামতে, ব্যাংকে চাকরি করা জায়েয নয়। তবে আমাদের জন্য কি অনলাইনের মাধ্যমে কোনো ব্যাংকে চাকরির আবেদন ফরম পূরণ করা জায়েয হবে? নাকি নাজায়েয হবে? দয়া করে এর উত্তর দিয়ে আমাদের উপকৃত করবেন।


 


Answer

প্রচলিত ধারার ব্যাংকে চাকরি করা নাজায়েয। কেননা এ ব্যাংকগুলোর প্রধান ও মূল কাজই হল সুদের আদান-প্রদান। সুতরাং ব্যাংকের চাকরির জন্য আবেদন ফরম পূরণ করে দেওয়া নাজায়েয কাজে সহযোগিতা করার অন্তর্ভুক্ত। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা গুনাহের কাজে সহযোগিতা করতে নিষেধ করেছেন। ইরশাদ করেছেন-

وَ تَعَاوَنُوْا عَلَی الْبِرِّ وَ التَّقْوٰی ۪ وَ لَا تَعَاوَنُوْا عَلَی الْاِثْمِ وَ الْعُدْوَانِ ۪ .

এবং নেকি ও তাকওয়ায় পরস্পর সহযোগিতা কর এবং গুনাহের কাজ ও সীমালঙ্ঘনে একে অন্যের সহযোগিতা করো না। -সূরা মায়েদা (৫) : ২

অতএব ব্যাংকের ফরম পূরণে সহযোগিতা করা বৈধ হবে না।

Sharable Link

আবু বকর সিদ্দীক - তারাব, রূপগঞ্জ

৩৮৭০. Question

একজন ইমাম সাহেব আমাকে সাথে নিয়ে পাইকারী দোকান থেকে ১ লক্ষ টাকার ফ্যান কিনে ইমাম সাহেবের নামেই ভাউচার করেন। অতপর ইমাম সাহেব ফ্যানগুলো নিজের আয়ত্তে দুই দিন রাখার পর উক্ত এক লক্ষ টাকার ঐ ফ্যানগুলো ছয় মাসের বাকি মেয়াদে ১ লক্ষ আঠারো হাজার টাকায় আমার কাছে বিক্রি করেন।

উক্ত বেচাকেনাতে সুদের কোনো সম্পৃক্ততা আছে কি? দলিলসহ জানালে উপকৃত হব।

 


Answer

আপনাদের লেনদেনটি যদি বাস্তবেই প্রশ্নে বর্ণিত পদ্ধতিতে হয়ে থাকে অর্থাৎ ইমাম সাহেব প্রথমে ফ্যানগুলো নিজের জন্য খরিদ করে থাকেন এবং সেগুলো নিজের আয়ত্তে নিয়ে থাকেন এরপর আপনার নিকট পৃথকভাবে নির্দিষ্ট মেয়াদে বা কিস্তিতে নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করে থাকেন তাহলে আপনাদের প্রশ্নোক্ত লেনদেনটি সহীহ হয়েছে। এতে সুদের সম্পৃক্ততা নেই। তবে এক্ষেত্রে আঠারো হাজার টাকার লাভের পরিমাণটা বেশি। তা আরো কম হওয়া উচিত ছিল। যদিও এ কারণে ঐ ক্রয়-বিক্রয় নাজায়েয হয়ে যায়নি। আর ভবিষ্যতেও যেন কারবারটি সুদের সম্পৃক্ততা থেকে মুক্ত থাকে সেজন্য নিম্নের বিষয়টি লক্ষ্য রাখা জরুরি।

নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে আপনাকে টাকাগুলো পরিশোধ করে দিতে হবে। নির্ধারিত মেয়াদ থেকে বিলম্ব করা গুনাহ। তবে কোনো কারণে সময়মতো মূল্য পরিশোধ করা না হলে অতিরিক্ত প্রদানের শর্ত করা যাবে না এবং কোনো ধরনের জরিমানা আরোপ করা যাবে না। অতিরিক্ত নিলেই তা সুদ হয়ে যাবে।

-সহীহ বুখারী, হাদীস ২২৮৭; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩৪৯৮; জামে তিরমিযী, হাদীস ১২৩৪; হেদায়া, ফাতহুল কাদীর ৬/১২২; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৩৯৪; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যাহ ২৪৫

Sharable Link

মাসুম বিল্লাহ - মুন্সিগঞ্জ

৩৮৭১ . Question

আমাদের এলাকায় একটি বড় পুকুর আছে। কর্তৃপক্ষ প্রতি বছর এক দু বার তাতে মাছ শিকারের জন্য নির্দিষ্ট মূল্যে টিকেট ছেড়ে থাকে। টিকেট সংগ্রহকারীগণ নির্ধারিত দিনে বড়শি দিয়ে ঐ পুকুর থেকে মাছ শিকার করেন। যে যা শিকার করতে পারে সেটা তার। জানার বিষয় হল, এই পদ্ধতিটি কি শরীয়তসম্মত?

 


Answer

মাছ শিকারের প্রশ্নোক্ত পদ্ধতিটি শরীয়তসম্মত নয়। কেননা এতে কে কতটুকু মাছ পাবে তা সম্পূর্ণ অস্পষ্ট। বরং একেবারে না পাওয়ারও সম্ভাবনা আছে। যা ধোঁকা ও শরীয়ত নিষিদ্ধ আলগারারের অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া জুয়ার সাথেও এর সাদৃশ্য রয়েছে। কারণ এতে কে কী পরিমাণ মাছ ধরতে পারবে তার কোনো নিশ্চয়তা থাকে না। কেউ হয়ত পাবেই না। অথচ টাকা দিয়েছে সবাই। এই টাকা হয়ত পুরোটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাবে। আবার এমনও হতে পারে যেকেউ অনেক বেশি মাছ পেয়ে যাবে। যেহেতু এই অনিশ্চয়তা মূল লেনদেনের সাথেই জড়িত তাই তা নাজায়েয। মুসলমানদের জন্য তা পরিহার করা কর্তব্য।

-সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৫১৩; মাবসূত, সারাখসী ১২/১৯৪; আদায়েউস সানায়ে ৪/১৭; আননাহরুল ফায়েক ৩/৪১৯; রদ্দুল মুহতার ৬/৬৬

Sharable Link

মেহেদী হাসান - ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত

৩৮৭২. Question

আমি একজনের সাথে এভাবে চুক্তি করি যে, আমরা একটি ব্যবসা করব। ব্যবসার সমস্ত টাকা আমি দিব। আর সে ব্যবসা পরিচালনা করবে। দুজনের ভাগ হবে ৫০%। সাথে এ চুক্তিও রয়েছে যে, যদি কোনো কারণে ব্যবসার কোনো ক্ষতি হয় তাহলে সব ক্ষতিপূরণ সে (যাকে আমি ব্যবসার জন্য টাকা দিয়েছি) বহন করবে। আমাদের এ চুক্তি সহীহ হয়েছে কি না? যদি সহীহ না হয় তাহলে আমরা চুক্তিটা কীভাবে করতে পারি? দয়া করে জানাবেন।

 


Answer

প্রশ্নোক্ত চুক্তিতে ব্যবসায় কোনো ক্ষতি হলে তা ব্যবসায়ী বহন করবেএ শর্তটি বৈধ হয়নি। কেননা আপনারা যে চুক্তি করেছেন ফিকহের পরিভাষায় তা হল মুদারাবা। আর মুদারাবার ক্ষেত্রে শরীয়তের বিধান হলব্যবসায় কোনো ক্ষতি হলে প্রথমত লভ্যাংশ থেকে ধরা হবে। তাতেও না হলে বাকিটুকু মূলধন থেকে পূরণ করা হবে। মুদারিব তথা ব্যবসা পরিচালনাকারী বহন করবে না। তাই উক্ত শর্ত বাতিলযোগ্য।

-বাদায়েউস সানায়ে ৫/১১৯; আল ইখতিয়ার ২/৪৬১, তাবয়ীনুল হাকায়েক ৫/৫২১; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৬৪৮

Sharable Link

মুহাম্মাদ আবু বকর - আমতলি, ফেনী

৩৮৭৩. Question

আমি ফুটপাতের দোকান থেকে বিভিন্ন জিনিস ক্রয় করি। অনেক সময় দোকানির সাথে দরকষাকষি হয়। আমি একটি দাম বলি। সে আমার কাক্সিক্ষত দামে না দেওয়ায় সেখান থেকে আমি চলে আসি। কিন্তু দূরে আসার পর ঐ দামেই পণ্যটি কেনার জন্য দোকানি আমাকে ডাকতে থাকে। আমার প্রশ্ন হল, এরূপ ক্ষেত্রে শরীয়তের দৃষ্টিতে ঐ পণ্যটি কেনা কি আমার জন্য জরুরি?

 


Answer

ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে এক পক্ষ পণ্যের মূল্য প্রস্তাব করার পর অপর পক্ষ তাতে রাজি না হলে ঐ প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায়। তদ্রূপ এক পক্ষ মূল্য প্রস্তাবের পর অপর পক্ষ রাজি হওয়ার আগে দুজনের কেউ ঐ জায়গা থেকে চলে গেলেও ঐ প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায়।

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু আপনি মূল্য প্রস্তাব করার পর দোকানি অস্বীকৃতি জানিয়েছে এবং আপনিও সেখান থেকে চলে এসেছেন তাই আপনার আগের প্রস্তাব বাতিল হয়ে গেছে। অতএব এক্ষেত্রে আপনার প্রস্তাবিত মূল্যে দিতে চাইলেও আপনার না নেওয়ার সুযোগ আছে। তাই না নেওয়াতে আপনার কোনো ত্রুটি হয়নি। বরং এক্ষেত্রে বিক্রেতা ঐ মূল্যে দিতে চাইলে তা নতুন প্রস্তাব হিসেবে ধর্তব্য হবে। সুতরাং পণ্যটি ক্রয় করা বা না করা উভয় এখতিয়ার আপনার থাকবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ৪/৩২৪; ফাতহুল কাদীর ৫/৪৬০-৪৬১, ৪৬৩; আলবাহরুর রায়েক ৫/২৭২

Sharable Link

সজিব - ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত

৩৮৭৪. Question

আমার এক বোন কুরআন মাজীদ পড়ান। আর্থিক সংকটে তাকে বিভিন্ন বাসায় গিয়ে পড়াতে হয়। আবার সপ্তাহের ছয়দিনই পড়াতে হয়। তথা পুরো মাস তার এটাই কাজ। প্রশ্ন হল, এভাবে অসহায় মহিলার জন্য পর্দার সাথে বাইরে গিয়ে পড়ানো ঠিক কি না?

আর ঋতুর হালতেও কুরআনের সবক শোনা ও দেওয়ার জায়েয কোনো সুরত আছে কি? কারণ এই হালতেও তার বাদ দেওয়ার সুযোগ থাকে না। কেউ কেউ বলে থাকে, এই হালতে পুরা আয়াত না পড়ে শব্দ শব্দ তাসবীহের নিয়তে পড়লে জায়েয। কথাটা সঠিক কি না? দয়া করে জানালে উপকৃত হব।

 

 

Answer

বাস্তবেই যদি ঐ মহিলার জন্য নিজের উপার্জন করা ছাড়া জীবিকার কোনো ব্যবস্থা না থাকে এবং ঘরে বসে জীবিকার ব্যবস্থা না হয় তাহলে পর্দার সাথে আশপাশের বাসায় গিয়ে নারী ও ছোট ছেলেদেরকে পড়াতে পারবে। বালেগ বা বালেগের কাছাকাছি বয়সের কোনো ছেলেকে পড়াতে পারবে না। আর কুরআন শিক্ষাদানকারীনী মহিলা ঋতুমতী থাকা অবস্থায়ও পড়া শুনতে পারবে। কিন্তু এ অবস্থায় আয়াত বা আয়াতের অংশবিশেষ বলে দেওয়া জায়েয হবে না। প্রয়োজন হলে এক দু শব্দ করে বলে দিতে পারবে। প্রকাশ থাকে যেশিক্ষিকাগণ মাসের নির্ধারিত ঐ দিনগুলোতে ছাত্রীদেরকে শুধু মাসআলা-মাসায়িলদুআ-নামায ইত্যাদি শিক্ষা দিতে পারেন।

-তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/১১৭; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৫৫; আলবাহরুর রায়েক ১/২০০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৮, ফিকহুন নাওয়াযিল ৩/৩৫৯

Sharable Link