মাওলানা আহমাদুল্লাহ - ওয়েব থেকে প্রাপ্ত

৪১৫৬. Question

আমি একজন সাবালক, হাফেজে কুরআন। গত রমযান মাসে আমার বোনের বাড়িতে বোনের উপস্থিতিতে মহিলাদেরকে নিয়ে আমি তারাবির নামায পড়াই। আমি দাঁড়াতাম বাহিরে। মহিলারা থাকত পর্দার ভেতরে। উল্লেখ্য যে, বোনের বাড়িতে জামাতের আয়োজন থাকায় এমন কিছু মহিলা তারাবীর নামাযে অংশগ্রহণ করেছে যারা একাকী ফরয নামাযও পড়ে না। অন্যান্য ক্ষেত্রে পর্দার বিষয়ে যেভাবেই থাকুক না কেন নামাযে আসা-যাওয়ার সময় মহিলারা যথাসাধ্য পর্দার প্রতি গুরুত্বারোপ করত। এভাবে দূর দূরান্ত থেকেও কিছু মহিলা জামাতে হাজির হত। পরবর্তীতে এলাকার আলেমদের মাঝে এ নিয়ে মতানৈক্য শুরু হয়। কেউ বলেন, মহিলাদের জন্য জামাতের আয়োজন করা মাকরূহ। কেউ বলেন, মাকরূহ নয়; জায়েয। আমার জানার বিষয় হল, উক্ত বিষয়ে শরীয়তের সঠিক সমাধান কী? দলীল-প্রমাণসহ জানালে চিরকৃতজ্ঞ হব।
 

Answer

তারাবীহর জামাতের জন্য মহিলাদেরকে বিভিন্ন জায়গা থেকে একত্রিত করা শরীয়তের দৃষ্টিতে একেবারে অপছন্দনীয়। ফরয নামাযের জামাতের বিশেষ গুরুত্ব থাকা সত্ত্বেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদের নিজ ঘরের অভ্যন্তরে নামায আদায় করাকে অধিক উত্তম ও সওয়াবের কাজ বলেছেন। হাদীসে এসেছে, হযরত উম্মে হুমাইদ রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমি আপনার সাথে নামায পড়তে পছন্দ করি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি জানি, তুমি আমার সাথে নামায পড়তে পছন্দ কর। কিন্তু তোমার জন্য গৃহাভ্যন্তরে নামায পড়া বাহিরের কামরায় নামায পড়ার চেয়ে উত্তম। আর নামায পড়া বাড়ির চৌহদ্দির ভেতরে নামায পড়ার চেয়ে উত্তম। আর বাড়ীর নামায পড়া মহল্লার মসজিদে নামায পড়ার চেয়ে উত্তম। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৭০৯০

এছাড়া সাহাবায়ে কেরামের অনেকেই ফরয নামাযের জামাতে মহিলাদের অংশগ্রহণ করতে নিরুৎসাহিত করেছেন। ফরয নামাযের জামাতে মহিলাদেরকে এত নিরুৎসাহিত করা হলে তারাবীহর ক্ষেত্রে শরীয়তের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হবে তা সহজেই অনুমান করা যায়।

সুতরাং বিভিন্ন বাসা থেকে কোনো বাড়িতে বা মসজিদে মহিলাদের তারাবীর জামাতের জন্য একত্রিত হওয়া  কিছুতেই উচিত নয়। মহিলাদের জন্য নিজ নিজ ঘরে একাকী তারাবী পড়াই উত্তম।

প্রকাশ থাকে যে, আপনার বোন এবং আপনার অন্য কোনো মাহরাম আত্মীয়া সেখানে থাকলে তারা চাইলে ঘরোয়াভাবে আপনার পিছনে তারাবীহ পড়তে পারবে। কিন্তু কোনো ভিন্ন মহিলাকে বাহির থেকে আসতে দেয়া ঠিক হবে না।

-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৫৭১; বাদায়েউস সনায়ে ১/৬১৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৮৯; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৬৬-৫৬৭

Sharable Link

ইলিয়াস হাবীব - সিলেট

৪১৫৭. Question

মুসাফির ব্যক্তি যদি চার রাকাতবিশিষ্ট ফরয নামাযে দুই রাকাত কসর না পড়ে ভুলে চার রাকাত পড়ে ফেলে তাহলে তার নামায আদায় হবে কি?

 

Answer

মুসাফির ভুলে চার রাকাত পড়ে ফেললে যদি নামাযের ভেতরেই স্মরণ হয় তাহলে সাহু সেজদা করে নেবে। আর নামাযের ভেতরে স্মরণ না হয়ে থাকলে তার ফরয আদায় হয়ে গেছে বলে ধর্তব্য হবে। অবশ্য যদি ঐ ব্যক্তি প্রথম বৈঠক না করে থাকে তাহলে তাকে ঐ ফরয নামায (দুই রাকাত) পুনরায় আদায় করতে হবে।  হাসান বসরী রাহ. বলেন, কোনো মুসাফির ভুলে যোহরের নামায চার রাকাত পড়ে নিলে সাহু সিজদা করবে।

-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ২/৫৪১; মারাকিল ফালাহ ২৩১; শরহুল মুনইয়াহ ৫৩৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/১২৮

Sharable Link

যাকারিয়া হাসান - যাত্রাবাড়ি, ঢাকা

৪১৫৮. Question

নামাযে ইমাম সাহেব যদি ভুল করেন তাহলে আমরা আল্লাহু আকবার বলে লোকমা দেই। কয়েকদিন আগে আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব ভুল করে যোহরের নামাযের দ্বিতীয় রাকাতে না বসে দাঁড়িয়ে যান। তখন আমরা যথারীতি আল্লাহু আকবার বলে লোকমা দেই। নামায শেষে একজন আলেম বললেন, হাদীস ও ফিকহের কিতাবাদিতে সুবহানাল্লাহ বলে লোকমা দেওয়ার কথা আছে। আল্লাহু আকবার বলে নয়। সুতরাং সুবহানাল্লাহ বলাই উচিত। ঐ আলেমের কথা কি সঠিক? জানিয়ে বাধিত করবেন।
 

Answer

হাঁ, ঐ আলেম ঠিক বলেছেন। ইমামের কোনো ভুল হলে সুবহানাল্লাহ বলে লোকমা দেওয়া সুন্নত। একাধিক হাদীসে সুবহানাল্লাহ বলে লোকমা দেওয়ার কথা উল্লেখ হয়েছে। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

مَنْ نَابَهُ شَيْءٌ فِي صَلاَتِهِ فَلْيَقُلْ: سُبْحَانَ اللّهِ.

‘নামাযে কোনো সমস্যা দেখা দিলে যেন সুবহানাল্লাহ বলে।’ -সহীহ বুখারী, হাদীস ১২১৮

অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (চার রাকাত বিশিষ্ট নামাযে) দ্বিতীয় রাকাতে না বসে দাঁড়িয়ে যান। তখন সাহাবায়ে কেরাম সুবহানাল্লাহ বলে লোকমা দিয়েছেন। -সুনানে নাসায়ী, হাদীস ১১৭৮

সুতরাং কোনো ভুলের ব্যাপারে ইমামকে সতর্ক করতে চাইলে আল্লাহু আকবার না বলে সুবহানাল্লাহ বলা উচিত।

-শরহু মাআনিল আছার ১/২৯৪; নুখাবুল আফকার ৪/৩৬৯; আলমাবসূত ১/২০০; আলমুহীতুল বুরহানী ২/২১৩; শরহুল মুনইয়া ৪৪৯

Sharable Link

মাহমুদ হাসান - মানিকগঞ্জ

৪১৫৯. Question

আমি হজ্বে যাওয়ার জন্য ব্যাংকে ৩ লক্ষ টাকা জমা করেছি। ভিসার কাগজপত্রে সমস্যার কারণে এ বছর হজ্বে যাওয়া হয়নি। আগামী বছর যাওয়ার নিয়ত করেছি। আমার জানার বিষয় হল, বছর অতিবাহিত হলে হজ্বে যাওয়ার জন্য ব্যাংকে জমাকৃত টাকার যাকাত আদায় করতে হবে কি? জানালে উপকৃত হব।
 

Answer

হাঁ, বছর অতিবাহিত হলে উক্ত টাকার যাকাত আদায় করা ফরয হবে। হজ্বের উদ্দেশ্যে জমা করা হলেও যেহেতু তা খরচ হয়নি এবং পুরো বছর জমা ছিল তাই ঐ টাকার যাকাত দিতে হবে।

উল্লেখ্য, যদি টাকাগুলো কোনো হজ্ব এজেন্সিকে খরচ বাবদ অগ্রিম দিয়ে দেওয়া হত সেক্ষেত্রে এ টাকার যাকাত দিতে হত না।

 

-ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/৮৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪০; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৬১-২৬২

Sharable Link

আবদুল হান্নান - মোমেনশাহী

৪১৬০. Question

আমি মীনায় কংকর নিক্ষেপ করার পর কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়ি। তাই তাওয়াফে যিয়ারত করতে বিলম্ব হয়ে যায়। ইচ্ছা ছিল, ১২ যিলহজ্ব মীনা থেকে কংকর নিক্ষেপ করে এসে তাওয়াফ করব। কিন্তু মীনা থেকে আসার পর প্রচ- ভীড় দেখে তাওয়াফ করার সাহস হয়নি। মাগরিবের পর ভীড় কমে গেলে তাওয়াফ করেছি। ১২ যিলহজ্ব মাগরিবের পর তাওয়াফ করার কারণে কি আমার উপর কোনো জরিমানা ওয়াজিব হবে?
 

Answer

হাঁ, ১২ যিলহজ্ব মাগরিবের পর তাওয়াফে যিয়ারত করার কারণে আপনার উপর একটি জরিমানা দম ওয়াজিব হয়েছে। কারণ, ১০ যিলহজ্ব সুবহে সাদিক থেকে ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত তাওয়াফে যিয়ারতের নির্ধারিত সময়। এ সময়ের পর তাওয়াফে যিয়ারত করলে দম ওয়াজিব হয়। ইবরাহিম নাখায়ী রাহ. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,

إِذَا تَرَكَهُ حَتَى مَضى تِلْكَ الْأَيَامُ أَهْرَقَ لِذَلِكَ دَمًا.

যে ব্যক্তি নির্ধারিত দিনগুলোর মধ্যে তাওয়াফে যিয়ারত করল না সে যেন একটি দম আদায় করে। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১৩২২৭

প্রকাশ থাকে যে, দম অর্থ এক বছর বয়সী ছাগল, ভেড়া বা দুম্বা যবাই করা। অথবা গরু, মহিষ বা উটের সাত ভাগের এক ভাগ কুরবানী করা। আর এ দমের পশু হেরেমে মক্কীর সীমানার ভেতরেই জবাই করা জরুরি। অতএব নিজে যাওয়া সম্ভব না হলে মক্কায় অবস্থানকারী অথবা হেরেমে গমণকারী কারো মাধ্যমে সেখানেই এই দমের পশু জবাই করতে হবে। হেরেমের বাইরে জবাই করলে দম আদায় হবে না।

-আলমাবসূত, সারাখসী ৪/৪১, ৪২; রদ্দুল মুহতার ২/৬১৯; মানাসিক, মোল্লা আলী আলকারী পৃ. ৩৪৮

Sharable Link

হাবীবুর রহমান - বংশাল, ঢাকা

৪১৬১. Question

এক ব্যক্তি হজ্ব আদায়ের উদ্দেশ্যে মক্কা শরীফে গমন করেছেন, কিন্তু মীকাতের আগে ইহরাম বাঁধেননি। আবার আইনী জটিলতার কারণে মীকাতে ফিরে এসেও ইহরাম বাঁধতে পারেননি। প্রশ্ন হল, এই অবস্থায় হজ্বের ইহরাম তিনি কোত্থেকে বাঁধবেন? উক্ত ওজরের কারণে মীকাতের ভিতরে ইহরাম বাঁধলে তার উপর দম আসবে কি না?
 

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মীকাতের ভেতরেও হজ্বের ইহরাম বাঁধা যাবে। তবে বিনা ইহরামে মীকাত অতিক্রম করার কারণে তার উপর দম ওয়াজিব হয়েছে। পুনরায় মীকাতে ফিরে আসতে অক্ষম হওয়ার কারণে উক্ত দম রহিত হবে না। অবশ্য যদি পুনরায় মীকাতে আসার সুযোগ হত আর তিনি সেখানে এসে ইহরাম বাঁধতেন তাহলে ইহরাম ছাড়া মীকাত অতিক্রমের ভুলের  কারণে দম দিতে হত না। 

উল্লেখ্য, কোনো ইবাদতের নিয়ত করলে প্রথমে ঐ ইবাদতের জরুরি মাসআলা-মাসাইল শিখে নিতে হয়। যেন সহীহ-শুদ্ধভাবে তা আদায় করা যায় এবং এ ধরনের ভুল না হয়।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৮/৪০৩; আলবাহরুল আমীক ১/৬১৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/৫৭৯-৫৮০; আলবাহরুর রায়েক ৩/৪৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৫৩

Sharable Link

মাহদী হাসান - রব্বানীনগর, নারায়ণগঞ্জ

৪১৬২. Question

একদিন আমার স্ত্রীর সাথে দাম্পত্য জীবনের একটি গোপন বিষয় নিয়ে ঝগড়া হয়। এক পর্যায়ে আমি রাগের মাথায় তার সাথে কোনোদিন মেলামেশা করব না বলে কসম করে ফেলি। অতপর চারদিন বাড়িতেই আলাদা ঘরে ছিলাম। কিন্তু সেই বিষয়টি নিয়ে আবার ঝগড়া হলে আমি ঢাকায় বোনের বাসায় চলে আসি এবং পাঁচ মাস যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখি। এর মধ্যে বিষয়টি পারিবারিকভাবে মীমাংসা হলে আমি বাড়ি ফিরে যাই।

মুহতারামের নিকট জানতে চাচ্ছি, আমি এই কসম থেকে কীভাবে নিষ্কৃতি পাব? এবং কসমের কাফফারা কীভাবে আদায় করব?

Answer

স্ত্রীর সাথে মেলামেশা না করার কসম করার পর চারমাস বিরত থাকলে স্ত্রীর উপর এক তালাকে বায়েন পতিত হয়ে যায়।

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে কসম করার পর আপনারা যেহেতু ৪ মাসের অধিক সময় মেলামেশা থেকে বিরত ছিলেন। তাই আপনার স্ত্রীর উপর এক তালাকে বায়েন পতিত হয়ে আপনাদের বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেছে।

এখন আপনারা উভয়ে একত্রে সংসার করতে চাইলে দুটি কাজ করতে হবে। প্রথমত, নতুনভাবে মহর ধার্য করে দুইজন সাক্ষীর সামনে পুনরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে।

দ্বিতীয়ত, আপনার কর্তব্য হল, বিবাহের পর পরই স্ত্রীর সাথে একত্রিত হয়ে অর্থাৎ মেলামেশা করে কসমটি ভেঙ্গে ফেলা। অতপর কসমের কাফফারা আদায় করা। বিবাহের পর যদি আবার চার মাস স্ত্রীর থেকে দূরে থাকা হয় তাহলে পূর্বোক্ত কসমের কারণে আবারো তালাকে বায়েন পতিত হয়ে যাবে। এ জন্য সময় ক্ষেপণ না করে স্ত্রীর সাথে মিলিত হতে হবে। কসমের কাফফারা হল, দশজন মিসকীনকে দু’বেলা তৃপ্তিসহকারে খাবার খাওয়ানো বা দু’বেলা খাবারের মূল্য দিয়ে দেওয়া অথবা তাদের প্রত্যেককে একজোড়া পরিধেয় বস্ত্র দেওয়া। আর এগুলোর সামর্থ্য না থাকলে ধারাবাহিকভাবে তিনদিন রোযা রাখা।

উল্লেখ্য যে, পুনরায় পরস্পর বিয়ে হলে আপনি মাত্র দুই তালাকের অধিকারী থাকবেন। সুতরাং এরপর দুই তালাক দিলেই উক্ত স্ত্রী আপনার জন্য সম্পূর্ণ হারাম হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে নতুন বিবাহ করারও কোনো সুযোগ থাকবে না। তাই এ ব্যপারে খুব সতর্ক থাকতে হবে।

-সূরা বাকারা (২) : ২২৬-২২৭; সূরা মায়েদা (৫) : ৮৯; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ১১৬০৩; আলমাবসূত, সারাখসী ৭/১৯, ৩০; বাদায়েউস সনায়ে ৩/২৮১; ফাতহুল কাদীর ৪/৪৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৪৭৬; মাজমাউল আনহুর ২/২৬৫

Sharable Link

নেয়ামাতুল্লাহ - হযরতপুর, কেরানীগঞ্জ, ঢাকা

৪১৬৩. Question

আমরা জানি, স্বামীর মৃত্যুর পর চার মাস দশদিন স্ত্রীকে ইদ্দত পালন করতে হয়। এ সময় বিশেষ কিছু বিধান তার মেনে চলতে হয়। তন্মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য একটি বিধান হল, এ সময় সে অন্যত্র বিয়ে করতে পারে না। কিন্তু আমাদের সমাজে দেখা যায়, মেয়েকে উপযুক্ত মনে হলে ইদ্দতের মধ্যেই কাবিন নামা তৈরি করে রাখা হয়। এবং ইদ্দত শেষে বিয়ের বাকি কাজ সম্পন্ন হয়।

এখন প্রশ্ন হল, এভাবে ইদ্দতের মধ্যেই কাবিননামা লিখে রাখা শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়েয হবে কি?

Answer

ইদ্দতের মধ্যে সুস্পষ্ট ভাষায় বিয়ের প্রস্তাব দেওয়াই নাজায়েয। সেখানে একেবারে কাবিননামা তৈরি করে ফেলা আরো মারাত্মক অন্যায় ও গুনাহের কাজ। কুরআনে কারীমে এসেছে, আল্লাহ পাক বলেন,

وَ لَا تَعْزِمُوْا عُقْدَةَ النِّكَاحِ حَتّٰی یَبْلُغَ الْكِتٰبُ اَجَلَهٗ

আর যতক্ষণ পর্যন্ত তারা ইদ্দতের নির্দিষ্ট মেয়াদ উত্তীর্ণ না করে ততক্ষণ পর্যন্ত বিবাহের আকদ পাকা করার ইচ্ছাও করো না। -সূরা বাকারা (২) : ২৩৫

সুতরাং ইদ্দতের মধ্যে কাবিননামা লিখে রাখা যাবে না। তবে ইশারা-ইঙ্গিতে বিয়ের ইচ্ছা প্রকাশ করা যেতে পারে। আল্লাহ পাক বলেন,  তোমরা স্ত্রীলোকদের বিয়ের প্রস্তাব সম্বন্ধে ইঙ্গিতে যা ব্যক্ত কর অথবা নিজেদের মনে গোপন রাখ, তাতে তোমাদের কোন দোষ নেই। (সূরা বাকারা (২) : ২৩৫) প্রকাশ থাকে যে, কাবিননামা হচ্ছে বিবাহের নিবন্ধন ফরম যা বিবাহ সংঘটিত হওয়ার পর পূরণ করা নিয়ম। বিবাহের পূর্বে তা পূরণ করলে অনেক মিথ্যার আশ্রয় নিতে হবে। তাই এহেন কাজ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।

-শরহু মুখতাসারিত তহাবী ৪/৩৪১; বাদায়েউস সনায়ে ৩/৩২৩; আহকামুল কুরআন, জাস্সাস ১/৪২২; আলবাহরুর রায়েক ৪/১৫১; ফাতহুল কাদীর ৪/১৬৫

Sharable Link

আহমাদুল্লাহ মাসুম - লালমনিরহাট

৪১৬৪. Question

আমার বাবা গত মাসে ইন্তেকাল করেছেন। ইন্তেকালের আগে তিনি একটি অসিয়তনামা লিখে যান। তাতে লিখা আছে-

‘আমার উপর প্রায় ২০ টি কসমের কাফফারা অবশিষ্ট রয়েছে। তোমরা সেগুলো আমার রেখে যাওয়া সম্পদ থেকে আদায় করে দিও।’

আমরা সকল ওয়ারিশগণ তার কসমের কাফফারা আদায় করতে প্রস্তুত রয়েছি। জানতে চাচ্ছি-

ক. তাঁর সবক’টি কসমের জন্য একটি কাফফারা আদায় করলে যথেষ্ট হবে নাকি প্রত্যেকটির জন্য আলাদা আলাদা কাফফারা লাগবে?

খ. কসমের কাফফারা আদায়ের নিয়ম কী?

Answer

ক. যতগুলো কসম ভঙ্গ হয়েছে সবগুলোর জন্য পৃথক পৃথক কাফফারা আদায় করা জরুরি। সবগুলোর জন্য একটি কাফফারা আদায় করা যথেষ্ট নয়। -আলমাবসূত, সারাখসী ৮/১৫৭; রদ্দুল মুহতার ৩/৭১৪; ফাতহুল কাদীর ৫/২

খ. প্রত্যেকটি কাফফারার জন্য প্রাপ্তবয়স্ক দশজন দরিদ্রকে দু’বেলা তৃপ্তিসহকারে আহার করানো বা দু’বেলা খাবারের মূল্য দিয়ে দেওয়া অথবা তাদের প্রত্যেককে একজোড়া পরিধেয় বস্ত্র দেওয়া আবশ্যক। -সূরা মায়েদা (৫) : ৮৯; ফাতহুল কাদীর ৪/৩৬৫; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৭২৫

Sharable Link

খুরশিদ আলম - লালমনিরহাট

৪১৬৫. Question

গত বছর গ্রামে মাহফিলের পোস্টার ছাপানোর জন্য একটি ছাপার দোকানে যোগাযোগ করি। দরদামের পর চার কালারের ৫০০ পোস্টার বাবদ ২৩০০ টাকা নির্ধারিত হয় এবং সে মতে কাজ সম্পন্ন হয়।

কিছুদিন আগে ভিন্ন একটি কাজে তার দোকানে গেলে সে আমাকে বলে যে, ঐ সময় তার ভুল হয়েছিল। এজন্য তার ৮০০ টাকা লস হয়েছে। তাই সে আমাকে ঐ ৮০০ টাকা দিতে অনুরোধ জানায়।

এদিকে আমাদের মাহফিলের কার্যক্রম শেষ এবং এর টাকাও অবশিষ্ট নেই। বরং কিছু টাকা এখনো ঋণ আছে। এমতাবস্থায় আমার জন্য তার টাকা পরিশোধ করা কি আবশ্যক?

 

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি দোকানদারকে অতিরিক্ত ৮০০ টাকা দিতে বাধ্য নন। তবে বাস্তবেই যদি লোকটি ভুল হিসাব করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে মনে হয়, তাহলে সম্ভব হলে তাকে ঐ টাকা প্রদান করা উত্তম হবে।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ২৩২৮; গামযু উয়ূনিল বাসাইর, হামাবী ১/২৩৬; মাজমুআতু রাসাইলি ইবনি আবিদীন ২/৭০

Sharable Link

সালিম মারজান - দঁড়াটানা, যশোর

৪১৬৬. Question

একজন মাওলানা সাহেবের কাছ থেকে পড়ার জন্য দুটি বই এনেছিলাম। বইদুটি খুবই চমৎকার। আমার এক বন্ধু বইদুটি পড়ার জন্য আমার কাছ থেকে নিতে চায়। আমি বললাম, মালিকের অনুমতি নিয়ে নেই। কিন্তু মাওলানা সাহেব দূরের সফরে থাকায় এবং তার সাথে যোগাযোগের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় আমি তার অনুমতি নিতে পারিনি। আর তিনি আমাকে বইদুটি দেয়ার সময় অন্য কাউকে দিতে নিষেধও করেননি। তাই আমি তার অনুমতি ছাড়াই বইদুটি বন্ধুকে পড়তে দিয়েছি।

জানতে চাচ্ছি, মালিকের অনুমতি ছাড়া বন্ধুকে বইদুটি পড়তে দেয়া আমার জন্য জায়েয হয়েছে কি? দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন।

 

Answer

বইদুটির মালিকের সাথে যদি আপনার এতটুকু ঘনিষ্ঠতা থাকে যে, আপনি অন্যকে তা পড়তে দিয়েছেন জানলে তিনি অসন্তুষ্ট হবেন না বলে আপনার বিশ্বাস থাকে তবে সেক্ষেত্রে বইদুটি আপনার বন্ধুকে পড়তে দেয়া জায়েয হয়েছে। কিন্তু মালিকের অসম্মতির আশংকা থাকলে কিংবা যাকে দেয়া হয়েছে সে যত্ন সহকারে তা ব্যবহার না করার সম্ভাবনা থাকলে মালিকের অনুমতি ছাড়া তাকে দেওয়া ঠিক হয়নি।

-আলমাবসূত, সারাখসী ১১/১৪০; রদ্দুল মুহতার ৫/৬৮০

Sharable Link

রফীকুল ইসলাম - উত্তরখান, ঢাকা

৪১৬৭. Question

আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে কুরবানীর ঈদের সময় চামড়ার ব্যবসা করি। ব্যবসার প্রক্রিয়াটা এই হয় যে, আমরা প্রথমে ট্যানারিতে যোগাযোগ করে চামড়ার একটা মূল্য নির্ধারণ করি। এরপর ঈদের এক-দুদিন আগ থেকে ঈদের দিন সকাল পর্যন্ত যারা কুরবানী করবে তাদের বাড়ি বাড়ি যাই। তাদের সাথে চামড়া ক্রয়ের চুক্তি করে আমাদের নির্ধারণকৃত মূল্য তাদের হাতে অগ্রিম দিয়ে আসি। এতে দেখা যায়, অধিকাংশ চামড়াই আমরা কিনতে পারি। কেননা এভাবে অগ্রিম না কিনলে অন্য গ্রুপ এসে কিনে ফেলার আশংকা থাকে।

অতপর ঈদের দিন সকালে কুরবানী হওয়ার পর চামড়া ছিলা হলে আমরা সেগুলো ট্যানারিতে নিয়ে বিক্রি করি। জানতে চাচ্ছি, আমাদের উক্ত ব্যবসা শরীয়তসম্মত কি না? কোনো সমস্যা থাকলে তা সমাধানের উপায়সহ জানালে উপকৃত হব।

Answer

পশুর চামড়া ছেলার আগে তার ক্রয়-বিক্রয় জায়েয নয়। তাই পশু জবাইয়ের আগেই আপনাদের চামড়া কেনা জায়েয হয়নি।

সহীহ ও বৈধভাবে ব্যবসা করতে চাইলে চামড়া ছেলার পরই তার ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন করতে হবে। তবে পশুমালিকদের সাথে যবাইয়ের আগে প্রাথমিক আলোচনা করা যাবে এবং যে মূল্যে ক্রয় করতে চান তাও উল্লেখ করা যাবে। আর ক্রয়ের নিশ্চয়তা হিসেবে কিছু টাকা তাদের হাতে দিয়েও আসতে পারবেন। কিন্তু সেটি মূল্য হিসেবে দেয়া যাবে না। বরং তার কাছে জমা থাকবে। আর মূল ক্রয়-বিক্রয় হবে পশু জবাইয়ের পর যখন চামড়া ছেলা হয়ে যাবে তখন। ঐ সময়ে যে মূল্য ঠিক হবে তা বিক্রেতার নিকট জমা টাকার (যদি দেয়া হয়ে থাকে) সাথে সমন্বয় করতে পারবেন।

-ফাতহুল কাদীর ৬/৫১; আলবাহরুর রায়েক ৬/৭৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/১২৯; ইমদাদুল আহকাম ৩/৪৩২

Sharable Link

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক - মুহাম্মাদপুর, ঢাকা

৪১৬৮. Question

হুযুর! আমার একটি টেইলার্স আছে। এবং দর্জি হিসেবে মানুষের মাঝে আমার বেশ সুনাম-সুখ্যাতি রয়েছে। তাই মানুষ জামা-কাপড় বানানোর জন্য আমার টেইলার্সে ভীড় করে। ইদানিং আমার আশপাশে নতুন কিছু টেইলার্স হয়েছে। সেগুলোতে জামার মজুুরি কম হওয়া সত্ত্বেও মানুষ শখ করে আমার টেইলার্সে অর্ডার দেয়। ঈদের সময় আমার টেইলার্সে অনেক চাপ পড়ে যায়। প্রচুর পরিমাণে অর্ডার থাকে। কিন্তু আমি কাজ করে শেষ করতে পারি না। তাই কিছু কিছু অর্ডার কাস্টমারদের অগোচরে অন্য দর্জিদেরকে কিছু কম মজুরিতে দিয়ে দেই। যেমন, আমি কাস্টমার থেকে ৫০০ টাকা নিলে তাদেরকে দেই ৪০০ টাকা। এক্ষেত্রে কোনো কোনো অর্ডারের কাপড় আমি নিজে কেটে তাদেরকে শুধু সেলাই করতে দেই। আবার কোনো কোনো অর্ডার পুরোটাই তাদের হাতে সোপর্দ করি। তারা অপরিপক্ক হওয়ায় বাহ্যতই সে জামাগুলো একটু নি¤œমানের হয়। যা কাস্টমার সাধারণত ধরতে পারে না।

জানার বিষয় হল, আমার জন্য এমনটি করা কি জায়েয? অন্যথায় এ পরিস্থিতিতে আমি কী করতে পারি? দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

কোনো নির্দিষ্ট টেইলার্সে পোশাক বানাতে দিলে উক্ত টেইলার্সের মাস্টার ও সহকারীদের দিয়েই পোশাক বানানোর চুক্তি হয়। সুতরাং যে পোশাক বানাতে দিয়েছে তার অনুমতি ছাড়া অন্য টেইলার্সে দেওয়া জায়েয হবে না। এটা ধোকার শামিল। কোনো ক্ষেত্রে যদি এমনটি করা হয়ে থাকে তবে যে টেইলার্সে বানানো হয়েছে সেখানকার সমান মজুরী নিতে হবে। অতিরিক্ত নেওয়া বৈধ হবে না। এবং অনুমতি ব্যতীত অন্য জায়গা থেকে বানানোর কারণে ক্রেতাদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।

উল্লেখ্য যে, আপনার টেইলার্স থেকে মানসম্মতভাবে যতটুকু কাজ করে দিতে পারবেন এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ডেলিভারি দিতে পারবেন ততটুকুই অর্ডার নিবেন। এর বেশি অর্ডার নেয়া অন্যায়। তবে সঠিক অনুমান করতে না পেরে কখনো বেশি নিয়ে ফেললে গ্রাহকদের অনুমতিক্রমে অন্য দর্জিকে দেওয়া বা তারা অর্ডার ফেরত নিতে চাইলে ফেরত দিয়ে দেওয়া যেতে পারে। আর এসব হতে হবে ডেলিভারি তারিখের অন্তত এতদিন আগে, যেন তারা নির্দিষ্ট সময়ের ভেতর অন্যের দ্বারা কাজ করিয়ে নিতে পারে। এবং তারা কোন অসুবিধায় না পড়ে।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ২০৪২৫-২০৪২৯; মাবসূত, সারাখসী ১৫/১১৮; আলইখতিয়ার ২/১৩৬; আলমুহীতুল বুরহানী ১২/৪৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া  ১৫/২৯৬; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/৯১; আদ্দুররুল মুখতার ৬/১৮

Sharable Link

মুহাম্মদ মহিউদ্দীন - জামেআ আজিজিয়া ওয়াসেকপুর সোনাইমুড়ী, নোয়াখালী

৪১৬৯. Question

বর্তমানে بيع الوفاء করা যাবে কি? এক্ষেত্রে দেখা যায় কোনো ব্যক্তি থেকে ঘর বাড়ী بيع الوفاء করে বিক্রেতাকে সেই ঘরে ভাড়ার বিনিময় থাকতে দেওয়া হয়। এখানে বিক্রেতা ক্রেতাকে ঘর খালি করে বুঝিয়ে না দিয়ে শুধু মৌখিক বা কাগজে লিখিত চুক্তি করে  নেয়।

এখন প্রশ্ন হল, এমনটা করলে তা জায়েয হবে কি না? আর জায়েয না হলে জায়েযের সুরত কি হবে? যদি ঘর/বাড়ী খালি করে ক্রেতাকে বুঝিয়ে দেয় তখন সে বাড়ীটি বিক্রেতাকে ভাড়ার বিনিময়ে থাকতে দেয়া যাবে কি না?

Answer

بيع الوفاء নামটিতে بيع তথা বিক্রি শব্দ থাকলেও এটি মূলত বন্ধকী চুক্তি। শরীয়তের ক্রয়-বিক্রয় নীতিমালার সাথে এর কোনো মিল নেই। শরীয়তের নিয়ম হল, ক্রয়কৃত বস্তুর উপর ক্রেতার নিরঙ্কুশ অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। সে যেমনিভাবে এটি ভোগ করতে পারে, তেমনিভাবে চাইলে তা বিক্রি বা দানও করতে পারে। অথচ بيع الوفاء-এর ক্ষেত্রে ক্রেতার এ ধরনের এখতিয়ার অর্জিত হয় না। এমনকি সে তা নিজ ইচ্ছা অনুযায়ী ভোগও করতে পারে না। এতে কোনো স্থায়ী ইমারতও নির্মাণ করতে পারে না।

এই কারণেই ফকীহগণ বলেন, এতে ক্রয়-বিক্রয় শব্দ ব্যবহার করা হলেও মূলত ঋণ প্রদান করে ঋণগ্রহীতার কোনো বস্তু থেকে উপকৃত হওয়াই এ চুক্তির উদ্দেশ্য থাকে। আর ঋণপ্রদান করে ঋণগ্রহীতার কোনো বস্তু থেকে উপকৃত হওয়া সুদের অন্তর্ভুক্ত। এক্ষেত্রে ক্রয়-বিক্রয় শব্দ ব্যবহার করা হলেও তা জায়েয হবে না। ফকীহ আবুল হাসান মাতুরীদীসহ জুমহুর ফুকাহায়ে কেরাম একে নাজায়েয বলেছেন।

আর بيع الوفاء যেহেতু বৈধ নয়, তাই بيع الوفاء চুক্তিতে কোন ব্যক্তি থেকে ঘর/বাড়ী নিয়ে তা ঐ ব্যক্তিকে বা অন্য কাউকে ভাড়া দেওয়াও বৈধ হবে না। চাই ঘর/বাড়ী খালি করে তাকে বুঝিয়ে দেওয়া হোক বা ভাড়াটিয়া নামে নিজেই তাতে অবস্থান করুক।

-রদ্দুল মুহতার ৫/২৭৬, ৬/৪৮২; মাজাল্লাতু মাজমাইল ফিকহিল ইসলামী, সংখ্যা ৭, ৩/৫৫৭; ইমদাদুল ফাতাওয়া ৩/১০৬

Sharable Link

মোল্লা মুহাম্মাদ সাইফুল্লাহ - হাজিবাড়ী, নরসিংদী

৪১৭০. Question

কেউ যদি কোনো প্রয়োজনে প্রচলিত নিয়মে জমি বন্ধক দিয়ে ঋণ নেয় (অর্থাৎ যতদিন ঋণ আদায় না করবে ততদিন ঋণদাতা জমি ভোগ করবে, ঋণ আদায় করলে কোনো কর্তন ব্যতীতই জমি ফেরত দিবে) এবং এই টাকা তার ব্যবসায় বিনিয়োগ করে তাহলে তার সম্পূর্ণ আয় কি হারাম বলে গণ্য হবে? দয়া করে জানাবেন।

 

Answer

ঋণ দিয়ে বিনিময়ে বন্ধকী জমি থেকে উপকৃত হওয়া সুদের অন্তর্ভুক্ত। তাই এ ধরনের চুক্তিতে ঋণ আদান-প্রদান করা নাজায়েয। আর যেহেতু প্রশ্নোক্ত টাকাগুলো অর্জিত হয়েছে নাজায়েয চুক্তির উপর ভিত্তি করেই তাই এ টাকা দিয়ে ব্যবসা করা কোনো ক্রমেই ঠিক হবে না; বরং যত দ্রুত সম্ভব টাকাগুলো মালিককে ফিরিয়ে দিতে হবে। এরপর যদি সে বন্ধক ফিরিয়ে দিয়ে করজে হাসানা দিতে রাজি হয় অথবা শরীয়তসম্মত কোনো পন্থায় বিনিয়োগ করে তাহলে সেক্ষেত্রে এ টাকা দিয়ে ব্যবসা করা যাবে এবং মুনাফাও গ্রহণ করা যাবে।

স্মরণ রাখা দরকার যে, অবৈধ পন্থায় কারো কাছ থেকে টাকা নিয়ে তা দ্বারা ব্যবসা করা শরীয়তসম্মত নয় এবং  তাতে কোনো বরকত নেই।

-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ১৫০৭১; রদ্দুল মুহতার ৬/৪৮২; শরহুল মাজাল্লাহ ৩/১৯৪

Sharable Link

মুহাম্মাদ ওমর ফারুক - ওয়েব থেকে প্রাপ্ত

৪১৭১. Question

ব্যাংকে আমার পিতার কিছু টাকা ছিল। আমার পিতা ইন্তেকাল করার পর ব্যাংক ঐ টাকার সুদসহ হিসাব করে আমাদের নামে দিয়ে দিয়েছে। এখন এই টাকা আমাদের জন্য হালাল হবে কি না?

 

Answer

জমাকারী মূল ব্যক্তির জন্য সুদ গ্রহণ করা যেমন হারাম তদ্রƒপ তার ওয়ারিশদের জন্যও তা ভোগ করা হারাম। এজন্য সুদের টাকা ওয়ারিশদের মাঝে বণ্টন করা জায়েয হবে না। এ টাকা সওয়াবের নিয়ত ছাড়া গরীব-মিসকীনদেরকে সদকা করে দিতে হবে। আর একাউন্টের মূল জমাকৃত টাকা যেহেতু আপনার পিতার ছিল তাই এ টাকা আপনারা শরীয়তের মীরাসনীতি অনুযায়ী বণ্টন করে নিবেন।

-আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩৮৫; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৪২৯; রদ্দুল মুহতার ৫/৯৯

Sharable Link

মুহাম্মাদ সোহেল রানা - পটিয়া, চট্টগ্রাম

৪১৭২. Question

আমি আমার বন্ধুর নিকট থেকে ১০ লাখ টাকা নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছি। কথা হয়েছে, মোট মুনাফার অর্ধেক তার, আর অর্ধেক আমার। এ বিষয়ে দুটি মাসআলা জানতে চাই।

১. প্রতিদিন বাসা থেকে দোকানে আসা-যাওয়ার খরচ ব্যবসায়িক খরচের অন্তর্ভুক্ত হবে কি না?

২. বিভিন্ন সময় ব্যবসায়িক প্রয়োজনে  যেমন : মাল ক্রয়-বিক্রয় ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিভিন্ন স্থানে যেতে হয়। তো এ সময়ের কোন কোন খরচ ব্যবসায়িক খরচ হিসেবে গণ্য হবে?

Answer

১. বাসা থেকে দোকানে আসা-যাওয়ার খরচ ব্যবসায়িক খরচের অন্তর্ভুক্ত নয়। তাই আপনি এ খরচ ব্যবসার টাকা থেকে নিতে পারবেন না।

২. ব্যবসার প্রয়োজনে কোথাও গেলে সেখানে সরাসরি ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত যেসব খরচ হয় যেমন নিজের যাতায়াত ভাড়া, থাকা-খাওয়া, শ্রমিক ও পরিবহণ ইত্যাদি ব্যবসার খরচ বলে গণ্য হবে। তবে এক্ষেত্রেও আপনার স্তরের ব্যবসায়ীগণ যাতায়াত ও থাকা-খাওয়া ইত্যাদি সুবিধার ক্ষেত্রে সাধারণত যে মানের খরচ করে থাকে আপনিও তেমনটা করতে পারবেন। এর বেশি খরচ করতে পারবেন না।

-আলমাবসূত, সারাখসী ২২/৬২; বাদায়েউস সনায়ে ৫/১৪৮

Sharable Link

মোহাম্মাদ হানজালা - মিরপুর, ঢাকা

৪১৭৩. Question

 

আমার একটি কাঠমিস্ত্রির দোকান আছে। যা একটি বড় মাদরাসার পাশে। অনেক সময় ছাত্ররা টেবিল বানানোর অর্ডার দিয়ে যায়। কিন্তু যে তারিখে নিয়ে যাওয়ার কথা ঐ তারিখে আর টেবিল নিতে আসে না।

ক. জানার বিষয় হলো, আমি কি ঐ টেবিল অন্যত্র বিক্রি করতে পারব?

খ. যদি অন্যত্র বিক্রি করা জায়েয হয় তাহলে অর্ডার নেয়ার সময় যে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে এর বেশি মূল্যে বিক্রি করতে পারবো কি? দয়া করে জানিয়ে উপকার করবেন।

 

Answer

অর্ডারী বস্তু প্রস্তুত হওয়ার পর অর্ডারদাতা তা দেখে চূড়ান্ত করার আগ পর্যন্ত তাতে ঐ ব্যক্তির অধিকার সৃষ্টি হয় না। তাই নেওয়ার সময় পার হয়ে যাওয়ার পরও লোকটি যদি না আসে তাহলে তা অন্যত্র বিক্রি করতে পারবেন। এছাড়া  যদি অর্ডারদাতার কাক্সিক্ষত বস্তু যথাযথভাবে বানিয়ে দিতে পারেন এবং আপনার ওয়াদা ভঙ্গ না হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হোন তাহলে ঐ ব্যক্তি বস্তুটি দেখে চূড়ান্ত করার আগেও তা বিক্রি করতে পারবেন। এবং উভয়ক্ষেত্রে ন্যায়সঙ্গত যে কোনো দামে তা বিক্রি করা যাবে। এ মূল্য পূর্বের ব্যক্তির সাথে ঠিক করা দামের চেয়ে কম-বেশিও হতে পারে।

-বাদায়েউস সনায়ে ৪/৯৫; আলবাহরুর রায়েক ৬/১৭১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/২০৮; ফাতহুল কাদীর ৬/২৪৩; আদ্দুররুল মুখতার ৫/২২৫

Sharable Link

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক - দেওয়ানগঞ্জ, জামালপুর

৪১৭৪. Question

ডিশ লাইনে চাকরি করে উপার্জিত টাকা হালাল না হারাম? সে টাকা যদি কেউ তার বোনকে অথবা ভগ্নিপতি প্রয়োজন পুরা করতে দেয় তাহলে তাদের জন্য তা হালাল হবে? দয়া করে জানালে খুবই উপকৃত হবো। বড় বিপদে আছি।
 

Answer

বর্তমানে ডিশ লাইনগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনার প্রদর্শনেই ব্যবহার হয়ে থাকে। এটি অশ্লীলতা ছড়ানোর অন্যতম মাধ্যম। ডিশের সংযোগ স্থাপন করা মানেই গুনাহের কাজে অন্যকে সহযোগিতা করা।

তাই ডিশ সংযোগ দেওয়া নাজায়েয, এবং এতে চাকুরি করাও নাজায়েয। এর থেকে অর্জিত আয় অবৈধ। এই টাকা কোনো সামর্থ্যবান ব্যক্তিকে দিলে তার জন্য জেনে শুনে তা গ্রহণ করা ও ব্যবহার  করা জায়েয হবে না। অবশ্য প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বোন ও ভগ্নিপতি যদি দরিদ্র হয় তাহলে তারা এ টাকা নিজ প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারবে।

-আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩৯১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৪২৫; জাওয়াহিরুল ফিক্হ ২/৪৩৯-৪৫৩

Sharable Link

কামরুল হাসান - লালমনিরহাট

৪১৭৫. Question

 

আমাদের গ্রামে খ্রিস্টান মিশনারীদের একটি গ্রুপ উচ্চমূল্যে জমি ক্রয় করছে। এখানে তারা মিশনারী স্কুল, চার্চ ও অন্যান্য ধর্মীয় কার্যক্রম পরিচালিত করবে।

তারা উচ্চমূল্য দেওয়ার কারণে আমার জমির আশেপাশের জমিগুলো ইতোমধ্যেই কিনে ফেলেছে। আমি প্রথমে তাদের কাছে জমি বিক্রি করব না বলে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম। কিন্তু এখন তারা তাদের জমিতে কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে এবং আমার জমিতে যাওয়ার জন্য সরু একটি রাস্তা রেখেছে। এদিকে জানিয়ে দিয়েছে যে, ভবন তৈরির পরিকল্পনা করবে। এতে আমার জমিতে যাওয়া-আসার রাস্তা বন্ধ হলে এবং ফসল ফলানোর ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত হলে তারা দায়ী থাকবে না।

এমতাবস্থায় আমি যদি তাদের কাছে জমি বিক্রি না করি তাহলে ভবিষ্যতে জমিটি কারো কাছে বিক্রিও করতে পারব না। আবার কোন ফায়েদাও উঠাতে পারব না।

সুতরাং জানতে চাচ্ছি, সেখানে চার্চ তৈরি এবং খ্রিস্টধর্ম শিক্ষা দেওয়ার বিষয়টি জানা সত্ত্বেও কি আমি তাদের নিকট জমি বিক্রি করতে পারব? এবং এর অর্থ কি আমার জন্য হালাল হবে?

 

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যেহেতু জমিটি চার্চ বানানোর জন্য বিক্রি করছেন না; বরং বাধ্য হয়েই তাদের কাছে বিক্রি করছেন তাই তা বিক্রি করা এবং এর মূল্য গ্রহণ করা আপনার জন্য বৈধ হবে। এরপর তারা যা করবে এর দায়ভার তাদের উপর যাবে। আর যদি কোনোভাবে অন্যত্র বিক্রি করা সম্ভব হয় তবে জমিটি অন্য কারো কাছে বিক্রি করাই শ্রেয় হবে।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩৭৬; আদ্দুররুল মুখতার ৪/২৬৮; জাওয়াহিরুল ফিকহ ২/৪৩৯-৪৫৩

Sharable Link

মোবারক সরদার - মোহাম্মদপুর, ঢাকা

৪১৭৬. Question

আমার একটি প্রাইভেট কার আছে। আমি এটি ভাড়ায় দিয়ে থাকি। অনেক সময় এমন হয় যে, কেউ সারা দিনের জন্য গাড়ি ভাড়া নিয়েছে। কিন্তু সারা দিনে মাত্র ১/২ ঘণ্টা গাড়ি ব্যবহার করেছে। অবশিষ্ট সময় কোনো কারণে গাড়িটির আর প্রয়োজন হয়নি। এমন ক্ষেত্রে দিন শেষে গাড়ি ফিরিয়ে দেয়ার সময় অনেকে অনুরোধ করে কিছু টাকা কম রাখতে। জানতে চাই, এ ক্ষেত্রে শরীয়তের বিধান কী?

 

Answer

গাড়িটি যদি সারাদিন ব্যবহার উপযোগী থাকে তবে ভাড়াগ্রহীতা যেহেতু পূর্ণ সময় ব্যবহারের সুযোগ পেয়েছে তাই পূর্ণ ভাড়া পরিশোধ করা তার কর্তব্য হবে। আপনি স্বেচ্ছায় না কমালে তাকে পূর্ণ ভাড়াই দিতে হবে। তবে আপনি চাইলে নিজ থেকে কিছু ভাড়া কমিয়ে দিতে পারেন।

-আলমুহীতুল বুরহানী ১১/২২৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/৮১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪১৩; আলবাহরুর রায়েক ৭/৩০০

Sharable Link

আবুবকর - ময়মনসিং

৪১৭৭. Question

আমরা জানি, যে ব্যক্তি কুরবানী করবে হাদীস শরীফে তাকে যিলহজ্বের চাঁদ দেখার পর থেকে চুল, নখ ইত্যাদি না কাটার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রশ্ন হল, এক্ষেত্রে সে চুল, নখ কখন কাটবে? কুরবানীর আগে নাকি পরে?
 

Answer

ঐ ব্যক্তি নিজের কুরবানী সম্পন্ন হওয়ার পর নখ, চুল কাটবে। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

مَنْ كَانَ لَهُ ذِبْحٌ يَذْبَحُهُ فَإِذَا أُهِلَّ هِلَالُ ذِي الْحِجَّةِ، فَلَا يَأْخُذَنَّ مِنْ شَعْرِهِ، وَلَا مِنْ أَظْفَارِهِ شَيْئًا حَتَّى يُضَحِّيَ.

‘যে ব্যক্তির কুরবানীর পশু আছে যা সে কুরবানী করবে যিলহজে¦র চাঁদ ওঠার পর থেকে কুরবানী করার আগ পর্যন্ত সে যেন তার চুল ও নখ না কাটে।

-সহীহ মুসলিম ,হাদীস ১৯৭৭; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৭৯১; মিরকাতুল মাফাতীহ ৩/৩০৬; বাযলুল মাজহূদ ১৩/১২

Sharable Link

রেজাউল করীম - দয়াগঞ্জ, ঢাকা

৪১৭৮. Question

আমি ফার্মের মুরগির ব্যবসা করি। এ বিষয়ে হুযুরের কাছে কিছু মাসআলা জানতে চাই।

১. মুরগি একা একা জবাই করা যাবে কি? নাকি দু’জন মিলেই জবাই করতে হবে?

২. মহিলারা জবাই করতে পারবে কি না?

৩. অনেক সময় ভুলে বিসমিল্লাহ পড়া হয় না,  এতে কি মুরগি হারাম হয়ে যায়?

৪. যে কথা বলতে পারে না, সে কি জবাই করতে পারবে? যদি করতে পারে বিসমিল্লাহ পড়বে কীভাবে?

Answer

১. জবাই সহীহ হওয়ার জন্য একাধিক ব্যক্তি হওয়া জরুরি নয়। একজন ব্যক্তি বিসমিল্লাহ পড়ে কেটে নিলেই জবাই  সহীহ গণ্য হবে। তবে একজন জবাই করতে গিয়ে যেন পশুর অধিক কষ্ট না হয় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

২. হাঁ, মহিলারাও জবাই করতে পারবে। -মুসান্নাফে আবদুররায্যাক, হাদীস ৮৫৫২; কিতাবুল আছল ৫/৪০০

৩. জবাইয়ের সময় ভুলে বিসমিল্লাহ ছুটে গেলে জবাই সহীহ হয়ে যায়। ‘বিসমিল্লাহ’ ভুলে যাওয়ার কারণে জবাইকৃত পশু-পাখি হারাম হয়ে যায় না। তবে ইচ্ছাকৃত ছেড়ে দিলে সে পশু খাওয়া হারাম হয়ে যাবে। সুতরাং এক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। ভুলবশত বিসমিল্লাহ না পড়ে জবাই করা সম্পর্কে ইবরাহীম নাখায়ী রাহ.-কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, এতে কোনো সমস্যা নেই। -মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক ৮৫৪০; শরহু মুখতাসারিত তহাবী ৭/২৩২

৪. মুসলমান বোবা ব্যক্তির জবাইও সহীহ। যেহেতু সে বিসমিল্লাহ বলতে অক্ষম, তাই বিসমিল্লাহ বলা ছাড়াই তার জবাই সহীহ হবে এবং পশু হালাল হবে।

-ফাতাওয়া কাযীখান ৩/৩৬৮; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৪৮

Sharable Link

মুসাদ্দেক বিল্লাহ - ডেমরা, ঢাকা

৪১৭৯. Question

হাতে বা পায়ে অনেককে উলকি অংকন করাতে দেখা যায়। এগুলো কি জায়েয? হোক সে নারী বা পুরুষ। দলীলসহ বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।

 

 

Answer

নারী-পুরুষ কারো জন্যই শরীরে উলকি অংকন করানো জায়েয নেই। এটা বিজাতীয় সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত। হাদীস শরীফে এ ধরনের কাজ থেকে নিষেধ করা হয়েছে। ৬৩

-সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৯৪৪, ৫৯৩৭; ফাতহুল বারী ০/৩৮৫; কিতাবুল আসার, ইমাম মুহাম্মাদ ২/৭

Sharable Link

তাহমীনা জাহান - নোয়খালী

৪১৮০. Question

আমার বান্ধবীদের অনেকেই পার্লারে গিয়ে ভ্রু প্লাক করে এবং জোড়া ভ্রু পৃথক করে। আমি জানতে চাচ্ছি, এভাবে জোড়া ভ্রু পৃথক করা এবং ভ্রু প্লাক করা শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ কি না?

 

Answer

ভ্রু প্লাক করা ও জোড়া ভ্রু পৃথক করা বৈধ নয়। হাদীস শরীফে এসেছে, যে নারী কপালের স্বাভাবিক পশম উঠায়, আল্লাহ তাআলা তার উপর অভিসম্পাত করেন। সুতরাং এরূপ করা থেকে বিরত থাকা কর্তব্য।

-সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৯৩৯; ফাতহুল বারী ১০/৩৯০; আলইখতিয়ার ৪/১৪২; রদ্দুল মুহতার ৬/৩৭৩

Sharable Link

মুহাম্মাদ রাফি - ওয়েব থেকে প্রাপ্ত

৪১৮১. Question

বালেগা মহিলাদের গলার আওয়াজ কি পর্দার অন্তর্ভুক্ত? অনেক পর্দানশীন মহিলাদের নিজের ঘর থেকে উচ্চ শব্দে কথা বলতে শোনা যায়। এ বিষয়ে শরীয়তের বিধান জানতে চাই।

আর কোনো মহিলা কি পরপুরুষের সাথে কথা বলতে পারবে? কথা বললে তার পর্দা কি নষ্ট হয়ে যাবে?

 

Answer

নারীর প্রতি শরীয়তের নির্দেশনা হল, সে যেন প্রয়োজন ছাড়া এত জোরে কথা না বলে যে, তার আওয়াজ গাইরে মাহরাম পর্যন্ত পৌঁছে যায়।

এ জন্য ইবাদত বন্দেগীর ক্ষেত্রেও তা লক্ষ রাখা হয়েছে। যেমন, আযান দেয়ার দায়িত্ব নারীদের দেয়া হয়নি। কারণ আযান উচুঁ শব্দে দিতে হয়। নারীগণকে সকল নামাযের কেরাত নিম্নস্বরে পড়তে হয়। হজ্বের তালবিয়া পুরুষগণ উচ্চ আওয়াজে পড়বে কিন্তু মহিলারা পড়বে নিম্ন আওয়াজে ইত্যাদি।

অতএব মহিলাগণ সাধারণ অবস্থায় তাদের কথাবার্তা এমনভাবে বলার চেষ্টা করবে যেন তা নিজেদের পরিসর পর্যন্ত সীমিত থাকে। নিজ ঘরেও এত জোর আওয়াজে কথা বলবে না, যাতে বাইরের লোকজন শুনতে পায়। আর নারীগণ বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া পর পুরুষের সাথে কথা বলবে না। কোন দরকারী কথা বলতে হলে পর্দার আড়াল থেকেই বলবে এবং কোমলতা পরিহার করে স্বাভাবিক স্বরে বলবে। এভাবে কথা বললে পর্দা নষ্ট হবে না।

-সূরা আহযাব (৩৩) : ৩২; আলবাহরুর রায়েক ১/২৭০; শরহু মুখতাসারিত তহাবী ১/৫৬৩; রদ্দুল মুহতার ১/৪০৬

Sharable Link

মুহাম্মাদ শরীফ - মুন্সিগঞ্জ

৪১৮২. Question

আমি জানি, দুধবোনের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ জায়েয। কেননা তার সাথে বিবাহ বৈধ নয়। কিন্তু আমার এক দুধবোন আছে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাকে নিয়ে আমার মনে মাঝে মধ্যে কুধারণা আসে। এমতাবস্থায় তার সাথে দেখা-সাক্ষাৎ ও কথাবার্তা বলতে কি কোনো সমস্যা আছে? দয়া করে জানাবেন।

 

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার জন্য ঐ মেয়ের সাথে কথাবার্তা ও দেখা-সাক্ষাৎ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। কেননা সে মাহরাম হলেও তার ব্যাপারে যেহেতু আপনার কুচিন্তা হয় তাই তার থেকে দূরে থাকা জরুরি। কোনো মাহরামের ব্যাপারে মনে কুচিন্তা আসলে বা গুনাহে পড়ার আশংকা হলে তার সাথেও প্রয়োজনীয় দূরত্ব অবলম্বন করা জরুরি হয়ে যায়।

-বাদায়েউস সনায়ে ৪/২৯২; আলবাহরুর রায়েক ৮/১৯৪; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩৬৮

Sharable Link

মুহাম্মাদ ইমরান - ওয়েব থেকে প্রাপ্ত

৪১৮৩. Question

আমার মা আমার ছোট ভাইকে ২ বছর বয়সে রেখে ইন্তেকাল করেন। আমার ভাইকে প্রতিপালনের মত কেউ না থাকায় তখন থেকে ও আমার খালার কাছে থাকে। আমার খালাই ওকে লালন-পালন করেন এবং তার সন্তানের মত ভালবাসেন। আমার ভাই এখন আমার খালাকে মা এবং খালুকে বাবা বলে ডাকে। আমার ভাই এর বয়স এখন ১৮ বছর। ও এখন আমার বাবাকে খালু এবং আমাদেরকে খালাত ভাই বলে পরিচয় দেয়। ওর সকল পরিচয়পত্রে খালুর নাম ব্যবহৃত হয়। ও মানতে রাজি নয় যে আমরা ওর আপন ভাই। আমার বাবা এবং আমরা ওর উপর কোন চাপ প্রয়োগ করতে চাই না। এমতাবস্থায় শরীয়তের দৃষ্টিতে ওর হুকুম কী হবে? ও আমার খালুকে বাবা বলে ডাকলে এবং পরিচয় দিলে গুনাহগার হবে কি?
 

Answer

জন্মদাতা পিতা ব্যতীত কাউকে নিজ পিতা হিসাবে পরিচয় দেওয়া নাজায়েয। এর দ্বারা নিজের বংশসূত্র গোপন করা হয়। এটা মিথ্যা ও ধোকার শামিল। হাদীসে এ ব্যাপারে কঠোর ধমকি এসেছে।

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যদিও বংশ পরিচয় গোপন করা উদ্দেশ্য মনে হয় না, বরং যাদের ঘরে ছোট থেকে লালিত পালিত হয়েছে সামাজিক নিয়মেই তাদেরকে মা-বাবা বলে ডাকা হচ্ছে। তথাপি আইডি কার্ড ইত্যাদিতে জন্মদাতা নয় এমন কাউকে বাবা হিসেবে লেখা তো সরাসরি মিথ্যা বলা হচ্ছে। তাই আপনার ভাইয়ের কর্তব্য হল, নিজ আইডি কার্ড সংশোধন করে জন্মদাতা বাবার নাম লিখিয়ে নেয়া। আর নিজ পিতাকে বাবা বলেই ডাকা। আপন ভাইদেরকে খালাত ভাই না বলা।

-সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৭৬৬; ফাতহুল বারী ১২/৫৬; আলমিনহাজ শরহে মুসলিম, নববী ২/৫০, ৫২; আহকামুল কুরআন জাস্সাস ৩/৩৫৪

Sharable Link

মুহিব ইমতিয়াজ - কোনাপাড়া, ডেমরা, ঢাকা

৪১৮৪. Question

 

আমি একটা বিষয়ে জানতে চাচ্ছি, কিছুদিন আগে আমার এক ফুফাতো ভাইয়ের খৎনা করানো হয়েছে। তার বয়স মাত্র দু’বছর। আমার বড় দাদু এতে বেশ রেগে যান এবং বলেন, এতো ছোট বাচ্চাকে এতোটা কষ্ট দেওয়া বড় অন্যায় হয়েছে। খৎনার জন্য কমপক্ষে ছয়-সাত বৎসর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। যেন বাচ্চা এর ধকলটা সহ্য করে নিতে পারে।

কিন্তু ভালো ডাক্তারের পরামর্শ ও উন্নত চিকিৎসার ফলে আমাদের মনেই হয়নি যে, খৎনার কারণে ওর ততোটা কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। তারপরও দাদুর কথায় সন্দেহ হচ্ছে, এত কম বয়সে খৎনা করানো ঠিক কি না?

তাই হুযুরের কাছে জানতে চাই, খৎনার জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময় বা বয়স আছে কি না? দয়া করে এ ব্যাপারে শরীয়তের বিধান জানিয়ে বাধিত করবেন।

 

Answer

খৎনার জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো বয়স নেই। তবে বালেগ হওয়ার আগে আগেই তা করিয়ে নেয়া উচিত। যেমন সাত থেকে দশ বছরের মধ্যে করিয়ে ফেলা বাঞ্ছনীয়। বাচ্চার বেশি কষ্ট না হয় এবং বুঝের বয়স হয় এমন সময় খৎনা করানো যায়। খৎনা পরবর্তী জটিলতার আশংকা না থাকলে কম বয়সেও খৎনা করানো যাবে। শরীয়তের দৃষ্টিতে এতে দোষের কিছু নেই।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৮৫; খিযানাতুল আকমাল ৩/৪৭০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৫৭

Sharable Link

জুলেখা বেগম - জুরাইন, ঢাকা

৪১৮৫. Question

আমরা জানি, আমাদের মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম শুনলে বা পড়লে তাঁর উপর দরূদ শরীফ পাঠ করতে হবে। কুরআন শরীফেও বিভিন্ন স্থানে আমাদের নবীজীর নাম আছে। আমি জানতে চাই, পবিত্র কুরআন পাঠ কালে যখন নবীজীর নাম আসে তখনও কি তাঁর উপর দরূদ পড়া আবশ্যক, না তখন স্বাভাবিকভাবে পাঠ করে যেতে হবে?

 

Answer

কুরআন মাজীদ তিলাওয়াতের সময় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম  আসলে তিলাওয়াতের মাঝে দরূদ শরীফ পড়ার নিময় নেই। এক্ষেত্রে তিলাওয়াতের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখবে। আর তিলাওয়াত ছাড়া সাধারণ অবস্থায় রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম উচ্চারণ বা শ্রবণ করলে দরূদ শরীফ পড়বে।

-খিযানাতুল আকমাল ৩/৪৬৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৭/৫১০; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৪২২; রদ্দুল মুহতার ১/৫১৯

Sharable Link