আবদুল হাই - দিনাজপুর

২৯০৬. Question

আমরা গত বৃহস্পতিবার কয়েকজন মিলে শবগুজারির জন্য মারকায মসজিদে গিয়েছিলাম। মসজিদের ২য় তলায় বিছানাপত্র রেখে বিশ্রাম করছিলাম। এমন সময় মাগরিবের নামাযের ওয়াক্ত শুরু হয়। ২য় তলায় সাউন্ড বক্সের ব্যবস্থা ছিল। তাই নিচ তলায় জায়গা থাকা সত্ত্বেও আমরা কয়েকজন উপরেই দাঁড়িয়ে ইমামের সাথে নামায আদায় করি। প্রশ্ন হল, এভাবে নামায পড়ার কারণে আমাদের নামায সহীহ হয়েছে কি?


Answer

 

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে দ্বিতীয় তলায় যারা দাঁড়িয়েছে তাদের নামাযও আদায় হয়ে গেছে। তবে নিচ তলায় কাতার পুরা না করে দোতলায় দাঁড়ানো মাকরূহ হয়েছে।

ইমাম নিচ তলায় দাঁড়ালে সেক্ষেত্রে মুসল্লিদের কর্তব্য হল, প্রথমে নিচ তলার কাতার পূর্ণ করা। নিচ তলায় কাতার পূর্ণ হওয়ার পরই উপর তলায় কাতার করা যাবে। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা কাতার সোজা কর এবং ফাঁকা জায়গা পূর্ণ কর।

-সহীহ মুসলিম ২/২৯; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৬২; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৮৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৮৮; শরহুল মুনইয়া ৫২৪

Sharable Link

মুহিউদ্দীন - মেঘনা, কুমিল্লা

২৯০৭. Question

আমরা জানি যে, হানাফী মাযহাব মতে ইমামের জন্য ইমামতির নিয়ত লাগে না। ইমামতির নিয়ত না করলেও তার পেছনে নামায আদায় করা সহীহ আছে। কিন্তু  সেদিন এক আলেম বললেন, হানাফী মাযহাবের মুকতাদি অন্য মাযহাবের ইমামের পিছনে ইকতিদা করলে মুক্তাদির ইকতিদা শুদ্ধ হওয়ার জন্য ইমামের ইমামতিরও নিয়ত করতে হবে। তার এ কথা কি ঠিক? এক্ষেত্রে ইমামের নিয়ত কিরূপ হবে? জানালে কৃতজ্ঞ হব।


Answer

ঐ ব্যক্তির কথা ঠিক নয়। অন্য মাযহাবের কোনো ব্যক্তির পিছনে ইকতিদা সহীহ হওয়ার জন্যও ইমামতির নিয়ত জরুরি নয়। ইমাম যদি ইমামতির নিয়ত না-ও করে তবুও সর্বাবস্থায় মুকতাদির ইকতিদা সহীহ হয়ে যাবে। তবে ইমামতির নিয়ত করে নেওয়া ভালো।

Sharable Link

মুহাম্মাদ শামসুল আরেফীন - উখিয়া, কক্সবাজার

২৯০৮. Question

অনেক সময় আমার স্ত্রী ও আট বছরের নাবালেগ ছেলেকে নিয়ে জামাতে নামায পড়ি। জানতে চাই, এভাবে শুধু স্ত্রী ও নাবালেগ ছেলে কিংবা তাদের একজনকে নিয়ে জামাতে নামায পড়া যাবে কি? যদি জামাত করা সহীহ হয় তাহলে এক্ষেত্রে দাঁড়ানোর পদ্ধতি কী?


Answer

পুরুষের জন্য মসজিদের জামাতে নামায পড়া জরুরি। বিনা ওযরে ফরয নামায ঘরে আদায় করা ঠিক নয়। একাধিক হাদীসে এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে এবং কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়েছে। তবে কখনো মসজিদের জামাত না পেলে সেক্ষেত্রে একাকী নামায না পড়ে বাসায় স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে জামাতে নামায পড়াই উত্তম।

এক্ষেত্রে দাঁড়ানোর পদ্ধতি হল, মহিলারা ইমামের পিছনে দাঁড়াবে। আর নাবালেগ ছেলে ইমামের ডান পাশে দাঁড়াবে।

হাদীস শরীফে আছে, আবু বকরা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একদিন) মদীনার উপকণ্ঠ থেকে নামায পড়ার জন্য এসে দেখেন সবাই (জামাতের সাথে মসজিদে) নামায পড়ে ফেলেছে। তখন তিনি ঘরে গিয়ে লোকজন জমা করে তাদের নিয়ে (জামাতের সাথে) নামায পড়ে নেন।-আলমুজামুল আওসাত, তবারানী ৪৬১

আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এবং আমার পরিবারস্থ একজন মহিলাকে নিয়ে নামায পড়েছেন। তখন আমাকে তাঁর ডান পাশে এবং ঐ মহিলাকে পিছনে দাঁড় করিয়েছেন।

-সুনানে নাসায়ী ১/৯২; মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা, ৩/৫৬৮; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৮৫; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৪৫; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৫৩

Sharable Link

মুহাম্মাদ আবদুল আহাদ - নোয়াখালী

২৯০৯. Question

আমার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালি। আমি ঢাকায় একটি মাদরাসাতে অনেক বছর যাবত পড়ালেখা করছি। একবার মাদরাসার বিরতিতে বাড়ি যাই এবং পরে বিশেষ প্রয়োজনে একদিনের জন্য বাড়ি থেকে মাদরাসায় আসি। সেদিনের নামায সম্পর্কে আমার এক শিক্ষককে জিজ্ঞাসা করি যে, আমি নামায কসর করব, না পূর্ণ পড়ব? তিনি বললেন, তুমি এখন মুকীম। তাই পূর্ণ নামায আদায় কর। ফলে আমি পূর্ণ নামায পড়ে নিলাম। প্রশ্ন হল, আমার জন্য মুকীমের নামায আদায় করা কি যথার্থ হয়েছে?


Answer

আপনার শিক্ষক ঠিকই বলেছেন। আপনি ঢাকা সিটিতে প্রবেশ করলেই মুকীম হয়ে যাবেন। ঢাকা ত্যাগ করার নিয়তে সামানপত্র নিয়ে অন্যত্র চলে না যাওয়া পর্যন্ত শুধু সফরের কারণে অতনে ইকামত বাতিল হবে না। তাই অতনে ইকামত বহাল থাকা অবস্থায় সেখানে এক দু দিনের জন্য আসলেও আপনি মুকীম গণ্য হবেন।

-বাদায়েউস সানায়ে ১/২৮০; আলবাহরুর রায়েক ২/১৩৬

Sharable Link

মুহাম্মাদ আবদুল মুমিন - ফরিদাবাদ মাদরাসা ঢাকা

২৯১০. Question

সাহেবে তারতীব ব্যক্তি-অর্থাৎ যার যিম্মায় কোনো অনাদায়ী কাযা নামায নেই বা থাকলেও তা ছয় ওয়াক্তের কম আছে-তার জন্য কি এমন ব্যক্তির পিছনে ইক্তেদা করা সহীহ হবে, যার যিম্মায় অনেক কাযা নামায রয়ে গেছে? জানালে কৃতজ্ঞ হব।


Answer

যার যিম্মায় অনেক নামায কাযা আছে সে ব্যক্তি ইমামতির যোগ্য হলে তাকেও ইমাম বানানো জায়েয আছে। আর তার পেছনে সাহেবে তারতীব ও অন্যদের নামায আদায় করাও সহীহ হবে। কিন্তু নিজের যিম্মায় অনেক নামায কাযা রেখে দিয়ে উদাসীন থাকা মুমিনের শান নয়; বরং তার কর্তব্য হল, যথাশীঘ্র সেগুলোর কাযা আদায় করে নেওয়া এবং আল্লাহর দরবারে ইস্তিগফার করা।

-আলবাহরুর রায়েক ১/৩৪৪, ৩৭৫

Sharable Link

মুহাম্মাদ আবু ইউসুফ - বাঞ্ছারামপুর পলিটেকনিট ইনস্টিটিউট বি. বাড়িয়া

২৯১১. Question

 

ক) আমরা যখন মসজিদে নামায পড়ি তখন বৈদ্যুতিক বাল্ব-এর কারণে আমাদের নিজেদের ছায়া আমাদের সামনে পড়ে। আর তা আমরা নামাযে থেকে দেখতে পাই।

অতএব আমার প্রশ্ন হল, এই ছায়ার কারণে কি নামাযে কোনো ক্ষতি হবে?

খ) আমাদের মহল্লায় কয়েক মাস আগে এক মুরববী মারা যান। আমি তার জানাযার নামাযে শরিক হই। নামায শেষে দেখলাম যে, যিনি জানাযার নামায পড়িয়েছেন (ইমাম) তিনি সকল মুসল্লিকে ডেকে একত্র করলেন এবং সকলকে নিয়ে দরূদ শরীফ পড়ে তার পর লাশকে সামনে রেখে অল্প সময় দুআ করলেন। এরপর লাশ কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হয় এবং লাশ দাফন করা হয়। দাফনের পর আরেকটি কাজ হুজুরকে করতে দেখি। তা হল, হুজুরের নির্দেশে চারজন লোক কবরের চার কোণায় দাঁড়ালেন। প্রত্যেকের হাতে ২ ইঞ্চি পরিমাণ গাছের ডাল। তার পর তারা চার কুল অর্থাৎ সূরা ইখলাছ, সূরা ফালাক, সূরা নাস ও সূরা কাফিরূন পাঠ করেন। এরপর চার জন ডালগুলো চার কোণায় গেঁথে দিলেন। তারপর সকলে কবরস্থানের বাইরে গিয়ে দুআ করে চলে গেলেন। এখন আমার প্রশ্ন হল-

ক) জানাযার পর লাশকে সামনে রেখে দুআ করা সম্পর্কে কুরআন-হাদীস কী বলে? এ সম্পর্কে জানাবেন। এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে এরূপ কোনো ঘটনা আছে কি?

খ) চার কুল পড়ে কবরের চার কোণে ডাল গেড়ে দেওয়ার হুকুম কি? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবা-তাবেঈন থেকে কি এরূপ করা প্রমাণিত আছে? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।


 

Answer

ক) না, ছায়ার কারণে নামাযের কোনো ক্ষতি হবে না।


খ) জানাযার পর দাফনের পূর্বে লাশের কাছে দরূদ পড়া ও দুআ করার প্রচলনটি বিদআত।

তদ্রুপ কবরের চার কোণে চার কুল পড়ে ডাল গেঁথে দেওয়ার বিষয়টিও সম্পূর্ণ মনগড়া ও বিদআত।

কোনো হাদীসে বা সাহাবা-তাবেয়ীন থেকে এই দুই আমলের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। তাই উভয় আমলই পরিহার করা জরুরি।

 

-মিরকাতুল মাফাতীহ ৪/১৪৯; আলবাহরুর রায়েক ২/১৮৩; আলফাতাওয়াল বাযযাযিয়া ১/৮০

Sharable Link

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক - বরিশাল

২৯১২. Question

হস্তমৈথুনের কারণে রোযা নষ্ট হবে কি না? যদি রোযা নষ্ট হয় তাহলে রমযানে কেউ এমনটি করলে উক্ত রোযার কাযা ও কাফফারা উভয়টি দেওয়া লাগবে নাকি শুধু কাযা করে নিলেই যথেষ্ট হবে?


Answer

হাত বা অন্য কোনো বস্ত্তর মাধ্যমে বীর্যপাত ঘটালে রোযা ভেঙ্গে যাবে। এক্ষেত্রে পরবর্তীতে এর কাযা আদায় করা জরুরি হবে। তবে কাফফারা আদায় করতে হবে না।

উল্লেখ্য, হস্তমৈথুন মারাত্মক গুনাহের কাজ। আর রোযা অবস্থায় এর ভয়াবহতা আরো বেশি। সর্বদা এ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৫০; আততাজনীস ওয়াল মাযীদ ২/৩৭৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৫

Sharable Link

মাহমুদ হাসান তারেক - কাটাখালী, রাজশাহী

২৯১৩. Question

এক বইয়ে পেয়েছি, কোনো মহিলার যদি শুধু দুই ভরি স্বর্ণ থাকে (যার মূল্য সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার অধিক) তবে সে নেসাবের মালিক হিসেবে গণ্য হবে না। কিন্তু সেই মহিলার কাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত অল্প টাকাও থাকে তবে সেই টাকা দুই ভরি স্বর্ণের মূল্যের সাথে যোগ হয়ে নেসাব পূর্ণ হবে। সেই হিসেবে বছরান্তে যদি ওই মহিলার কাছে দুই ভরি স্বর্ণের সাথে অল্প টাকাও অতিরিক্ত থাকে তবে তাকে পুরো মূল্যের উপর যাকাত আদায় করতে হবে। মাসআলাটি কি সহীহ?

যদি উপরোক্ত মাসআলাটি সঠিক হয়। তবে ঈদের সময় মহিলারা হাদিয়া হিসেবে যে টাকা পায় এবং সেই টাকা জমিয়ে না রেখে খরচ করার নিয়ত থাকে, তবে কি সেটা ‘‘প্রয়োজনের অতিরিক্ত ’’ টাকা হিসেবে স্বর্ণের মূল্যের সাথে যুক্ত হয়ে নেসাব  হিসেবে ধর্তব্য হবে? এবং বছরান্তে তার যাকাত দিতে হবে? বিস্তারিত উদাহরণসহ জানালে খুবই উপকৃত হব।


Answer

কিতাবের প্রশ্নোক্ত মাসআলাটি সঠিক। দুই ভরি স্বর্ণের সাথে কিছু টাকা থাকলেও স্বর্ণের মূল্য হিসাব করে তা নেসাব পরিমাণ হলে বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর তার যাকাত দিতে হবে। সুতরাং ঈদের কিংবা অন্য সময়ের জমানো উপহারের টাকা থাকলে তা স্বর্ণের মূল্যের সাথে যাকাতের মধ্যে হিসাবযোগ্য। এমনকি এসব উপহারের টাকা কোনো প্রয়োজনে রেখে দিলেও বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর তার যাকাত দিতে হবে।

-রদ্দুল মুহতার ২/২৬২; বাদায়েউস সানায়ে ২/৯২; আলবাহরুর রায়েক ২/২০৬; আননাহরুল ফায়েক ১/৪১৫; ফাতহুল কাদীর ২/১৬২; আলবাহরুর রায়েক ২/২৩০; রদ্দুল মুহতার ২/৩০৩; আততাজরীদ ৩/১৩১১

Sharable Link

সারওয়ার হুসাইন - কুমিল্লা

২৯১৪. Question

 

আমার বড় ভাই স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ রিয়াদে থাকেন। ছেলে দুজনের বয়স যথাক্রমে দশ ও সাত বছর। এ বছর তিনি স্ত্রী সন্তানসহ হজ্ব করতে চাচ্ছেন।

প্রশ্ন হল, নাবালেগ বাচ্চাদের হজ্ব আদায়ের পদ্ধতি কী? আর ইহরাম অবস্থায় তারা যদি ইহরাম পরিপন্থী কোনো কাজ করে তবে এর হুকুম কী? 


 

Answer

 

নাবালেগ বুঝমান হলে বালেগদের মতো তারাও যথানিয়মে ইহরাম বাঁধবে এবং হজ্বের কার্যাদি আদায় করবে। আর বুঝমান না হলে তাদের পক্ষ থেকে অভিভাবক ইহরাম করবে। তবে নাবালেগ অবস্থায় আদায়কৃত হজ্ব তাদের জন্য নফল হবে। তাই বালেগ হওয়ার পর হজ্বের সামর্থ্য হলে পুনরায় তাদের উপর হজ্ব করা ফরয হবে। 

ইবনে আববাস রা. বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  ইরশাদ করেছেন, কেউ নাবালেগ অবস্থায় হজ্ব করলেও প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর (সামর্থ্যবান হলে) পুনরায় হজ্ব করতে হবে।

আর ইহরাম অবস্থায় নাবালেগ থেকে ইহরাম পরিপন্থী কোনো কাজ প্রকাশ পেলেও কোনো জরিমানা ওয়াজিব হবে না। তবে অভিভাবকের কর্তব্য হল তাদেরকে যথাসম্ভব ইহরামের নিষিদ্ধ কার্যাদি থেকে বিরত রাখা।-রদ্দুল মুহতার ২/৪৬৬; গুনইয়াতুন নাসিক ৮৪

 

(মুস্তাদরাক লিল হাকেম, হাদীস : ১৮১২; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হাদীস : ৩০৫০; আলবাহরুল আমীক ১/৩৬৩; আলবাহরুর রায়েক ২/৩১৬; ফাতহুল কাদীর ২/৩৩২)

Sharable Link

কাউসার আহমদ - ঢাকা

২৯১৫. Question

বিবাহের সময় ফাতেমা রা.-এর বয়স কত ছিল?


Answer

বিবাহের সময় হযরত ফাতেমা রা.-এর বয়স কত ছিল এ ব্যাপারে একাধিক মত রয়েছে। তবে অধিকাংশের মত হল, ঐ সময় তার বয়স ছিল প্রায় সাড়ে পনেরো বছর।


আলইস্তিয়াব, তাহযীবুল কামাল ২২/৩৮৬; তাহযীবুত তাহযীব ইত্যাদি গ্রন্থে এ মতটিই উল্লেখ করা হয়েছে।

Sharable Link

মুসাম্মাত ফাতিমা বিনতে ফয়সাল - টাঙ্গাইল

২৯১৬. Question

আমার স্বামী আশুলিয়ায় এক গার্মেন্টসে কাজ করত। আমরা সেই গার্মেন্টসের নিকটে একটি বাসা ভাড়া করে থাকি। গত দু মাস পূর্বে হঠাৎ সে মারা যায়। এখন আর্থিক অভাব-অনটনের কারণে বাসার ভাড়া দিতে পারছি না। তাই এ অবস্থায় ইদ্দতের বাকি দিনগুলো বাপের বাড়ি গিয়ে অতিবাহিত করতে পারব কি? দয়া করে জানাবেন।


Answer

প্রশ্নোক্ত অবস্থায় বাসার ভাড়া প্রদান করা যেহেতু আপনার জন্য কষ্টকর তাই এ পরিস্থিতিতে পিত্রালয়ে গিয়ে ইদ্দতের বাকি দিন অতিবাহিত করা জায়েয হবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩২৫-২৬; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৫৩৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৫/২৪৭; আলমওসুআতুল ফিকহিয়্যাহ ২৯/৩৫১

Sharable Link

আবদুর রশিদ - দিনাজপুর

২৯১৭. Question

রফিককে আমার চাচি কিছুদিন দুধ পান করিয়েছিলেন। এখন রফিকের বোনের সাথে আমার চাচাতো ভাইয়ের বিয়ের কথাবার্তা চলছে। প্রশ্ন হল, আমার চাচাতো ভাই কি ঐ মেয়েকে বিবাহ করতে পারবে?


Answer

হ্যাঁ, রফিকের বোনের সাথে আপনার চাচাতো ভাইয়ের বিবাহ সহীহ হবে। কারণ রফিক আপনার চাচীর দুধ পান করার দ্বারা তার বোনের সাথে আপনার চাচাত ভাইয়ের দুধ সম্পর্ক স্থাপিত হয়নি।

-আলবাহরুর রায়েক ৩/২২৭; আদ্দুররুল মুখতার ৩/২১৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৪/৩৬৫; সহীহ বুখারী ১/৩৬০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৪৩; হেদায়া ২/৩৫১

Sharable Link

মুহাম্মাদ আবদুল মজিদ - মুন্সিগঞ্জ

২৯১৮. Question

আমাদের এলাকার শরীফ সাহেব তার বন্ধুকে কথা দিয়েছিলেন যে নিজের বড় মেয়েকে বন্ধুর ভাতিজার সাথে বিয়ে দিবেন। দুই পরিবার মিলে যখন বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করার উদ্যোগ নেয় তখন হঠাৎ মেয়ে এ বিয়েতে অসম্মতি জানায়। মেয়ের বয়স ২১ বছর। এখন শরীফ সাহেব চাচ্ছেন, মেয়ের অমতেই বিয়ে পড়িয়ে দিবেন। এভাবে বিয়ে দেওয়া বৈধ হবে কি?


Answer

প্রাপ্ত বয়স্কা মেয়ের সম্মতি ব্যতীত তাকে বিয়ে দেওয়া জায়েয নেই। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মেয়ের অনুমতি ছাড়া তাকে সেখানে বিয়ে দেওয়া বৈধ হবে না। অবশ্য পিতা যদি এ অবস্থায় বিয়ে পড়িয়েই দেন তাহলে এ বিয়ে সহীহ হওয়া মেয়ের সম্মতির উপর নির্ভর করবে। সে যদি এ বিয়েকে মেনে নেয় তাহলে তা সহীহ হবে। অন্যথায় তা বাতিল গণ্য হবে।

প্রকাশ থাকে যে, পিতামাতার পছন্দের ব্যাপারে মেয়ে বা ছেলের অমত থাকলে তা শুরুতেই বলা উচিত। আলোচনা অগ্রসর হয়ে যাওয়ার পর ছেলে বা মেয়ের অসম্মতি প্রকাশ করা ঠিক নয়। তাই আলোচনা একেবারে অগ্রসর হয়ে গেলে অভিভাবকের সিদ্ধান্তকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে।

এছাড়া এমনিতেও মা বাবার সিদ্ধান্ত যেমনিভাবে মমতাপূর্ণ হয় তেমনি তা অভিজ্ঞতার কারণে মূল্যবানও হয়ে থাকে। তাই তাদের সিদ্ধান্ত ও পছন্দের মূল্যায়ন করা উচিত। অমত করলেও তা ভেবে চিন্তে করা উচিত।

-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৪১৯; আলবাহরুর রায়েক ৩/১১০; ফাতহুল কাদীর ৩/১৬১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৮৭; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৫৮

Sharable Link

মুহাম্মাদ কায়কোবাদ - নারায়ণগঞ্জ

২৯১৯. Question

জনৈক ব্যক্তির দুই মেয়ে। বড় জনের নাম আয়েশা। ছোটজনের নাম হালীমা। আয়েশার তুলনায় হালীমা সুন্দরী। আয়েশার বিয়ের কথাবার্তা চলছে। মেয়ের আত্মীয় স্বজন পাত্রী দেখানোর সময় আয়েশাকে না দেখিয়ে হালীমাকে দেখায়। পাত্র জানতে পারে যে, সে আয়েশাকেই দেখছে। পরবর্তীতে বিয়ের তারিখ ধার্য হয় এবং আয়েশার সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের সময় পাত্রকে বলা হয় যে, অমুকের মেয়ে আয়েশাকে তোমার বিবাহে এত দেন মোহরের এওয়াজে দিলাম। তখন পাত্র কবুল করে। পরবর্তীতে যখন তাদের সাক্ষাত হয় তখন দেখা গেল যে, যেই মেয়েকে সে দেখেছিল সেই মেয়ের সাথে তার বিবাহ হয়নি। ধীরে ধীরে মেয়ে পক্ষের কারসাজি সম্পর্কে ছেলে সবই অবগত হয়। এখন পাত্র জানতে চায়, তার এ বিবাহ সহীহ হয়েছে কি? আয়েশার সাথেই বিয়ে হয়েছে? না কি তার ছোট বোন, যাকে সে দেখেছিল তার সাথে বিবাহ হয়েছে। কেননা সে তো হালীমাকেই দেখেছে এবং সে তাকেই বিয়ে করছে। পাত্র যদি আয়েশাকে মেনে নিতে না পারে তবে তার তালাক দেওয়া কি বৈধ হবে?


Answer

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী বিয়ের আকদের সময় যেহেতু আয়েশার নাম উল্লেখ করে প্রস্তাব করা হয়েছে এবং এই প্রস্তাবের উপরই পাত্র কবুল বলেছে তাই আয়েশার সাথেই তার বিবাহ সংঘটিত হয়েছে। এক্ষেত্রে মনে অন্য মেয়ের কথা থাকলেও সেটা ধর্তব্য হবে না। কেননা যার নাম উল্লেখ করে প্রস্তাব ও কবুল করা হয় তার সাথেই বিবাহ হয়ে যায়। তবে পাত্রী পক্ষের এহেন ধোঁকাপূর্ণ আচরণ মারাত্মক অন্যায় হয়েছে। এ জন্য তাদের উচিত পাত্রের কাছে ক্ষমা চাওয়া। প্রকাশ থাকে যে, এ অবস্থায় পাত্র যদি উক্ত ভুলকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে আয়েশাকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নিয়ে দাম্পত্য জীবন চালিয়ে যায় তবে সে সওয়াবের অধিকারী হবে। অবশ্য সে যদি মানতে না পারে তবে তার জন্য আয়েশাকে তালাক দেওয়াও বৈধ হবে।

-রদ্দুল মুহতার ৩/২৬; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৩২৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৪/৩৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৪/২৫

Sharable Link

মাও: মহিউদ্দিন - চালিভাঙ্গা মাদরাসা মেঘনা কুমিল্লা

২৯২০. Question

 

কিছুদিন পূর্বে একটি মাসিক পত্রিকায় একটি হাদীস পড়েছিলাম যে, এক ব্যক্তি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে আরয করল ইয়া রাসূলাল্লাহ! দুনিয়া আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে এবং আমার নিকট আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি ফেরেশতাদের দরুদ এবং মানবজাতির এই তাসবীহ দ্বারা কেন কল্যাণ অর্জন কর না, যার মাধ্যমে মানুষকে রিযিক প্রদান করা হয়? লোকটি নিবেদন করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তা কি? তিনি এরশাদ করেন, ‘‘তুমি সুবহে সাদিক হতে ফজরের নামায আদায় করা পর্যন্ত একশত বার

سبحان الله وبحمده سبحان الله العظيم

পাঠ করিও। দেখবে দুনিয়া তোমার পায়ে লুটিয়ে পড়বে। এর  প্রত্যেকটি শব্দ দ্বারা আল্লাহ তাআলা একজন করে ফেরেশতা সৃষ্টি করবেন, যে কিয়ামত পর্যন্ত তার তসবীহ পাঠ করতে থাকবে এবং তুমি এর সওয়াব পেতে থাকবে।

আমার জানার বিষয় হল, এই হাদীসটি কোন কিতাবে আছে এবং তা আমল যোগ্য কি না জানিয়ে বাধিত করবেন।


 

Answer

প্রশ্নোক্ত বর্ণনাটি ইমাম গাযালী রাহ. এহইয়াউ উলূমুদ্দীন গ্রন্থে যিকিরের ফযীলত অধ্যায়ে সনদহীন উল্লেখ করেছেন।

এই রেওয়ায়াতটি রিজাল শাস্ত্রের একাধিক কিতাবে ইসহাক ইবনে ইবরাহীম তাবারীর সূত্রে বর্ণনা করা হয়েছে। হাদীস বিশারদগণ এই বর্ণনাটিকে মওযু ও বাতিল বলেছেন।

ইমাম ইবনে হিববান রহ. কিতাবুল মাজরুহীন গ্রন্থে ইসহাক ইবনে ইবরাহীম তাবারির সূত্রে বর্ণনাটি উল্লেখ করে বলেছেন, এই হাদীসটি মওযু এর  কোনই ভিত্তি নেই। দেখুন : কিতাবুল মাজরুহীন ১/১৪৯

আল্লামা ইবনে হাজার রহ. লিসানুল মীযানে বর্ণনাটি সম্পর্কে বলেছেন, এটি একটি বাতিল রেওয়ায়েত। তিনি আরো বলেছেন, ইসহাক ইবনে ইবরাহীম ‘‘সানায় ’’ বসবাস করতেন। তাকে ইবনে আদী ‘‘মুনকারুল হাদীস’’ আখ্যায়িত করেছেন।-লিসানুল মীযান ১/৩৪৪

আরো দ্রষ্টব্য : আল লাআলিল মাসনূআ ২/২৮৭- তানযীহুশ শারীআ ২/৩১৮

সুতরাং উক্ত কথাটি হাদীস নয় এবং বর্ণিত ঐ ফযীলত প্রমাণিত নয়।

অবশ্য প্রশ্নোক্ত বর্ণনাটি ও ফযীলত প্রমাণিত না হলেও এতে যে দুআ, যিকির-আযকার ও ইস্তিগফার উল্লেখ হয়েছে তা সহীহ। এসব যিকর বিভিন্ন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত এবং একেকটি তাসবীহর একাধিক ফযীলত হাদীস শরীফে এসেছে।

মুসনাদে আহমাদে বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যখন নূহ আলাইহিস সালামের মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসল তিনি তাঁর ছেলেকে বললেন তোমাকে দুটি উপদেশ দিচ্ছি।

১.  لا إله إلا الله পাঠের নির্দেশ দিচ্ছি। কেননা সাত আসমান সাত যমীন যদি এক পাল্লায় রাখা হয় আর অন্য পাল্লায় لا إله إلا الله রাখা হয় তাহলে لا إله إلا الله এর  পাল্লা ভারি হবে।

২. سبحان الله وبحمده  পাঠ করবে। কেননা তা প্রত্যেক বস্ত্তর সালাত এবং তাসবীহ এবং এর দ্বারা সৃষ্টিজীবকে রিযক পৌঁছানো হয়।-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৬৫৮৩, ৭১০১

এছাড়া সহীহ বুখারিতে (২/১১২৯) এসেছে, দুটি কালেমা আল্লাহ তাআলার নিকট অতি প্রিয়, পড়তে খুব সহজ, মীযানের পাল্লায় অনেক ভারী তা হল

سبحان الله وبحمده سبحان الله العظيم

আর ইস্তিগফারের ফযীলত কুরআন মাজীদের অসংখ্য আয়াত ও হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে তাতো বলারই অপেক্ষা রাখে না। 

Sharable Link

মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ - যশোর সদর, যশোর

২৯২১. Question

আমি একটি গুনাহের কাজ থেকে তাওবার নিয়তে এভাবে কসম করি যে, আল্লাহর কসম আমি আর এই কাজ করব না। কখনো বলি, আল্লাহর কসম আমি আর করব না। কখনো বলি, আল্লাহর জালালিয়াতের কসম, আমি আর এই কাজ করব না। তবে কি করব না তা মুখে উল্লেখ করিনি। কিন্তু অন্তরে ঐ কাজের নিয়ত ছিল। শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে প্রতি বারই আমার দ্বারা ঐ কাজ সংঘটিত হয়ে যায় এবং একবার কসম করে ভঙ্গ করার মাঝে কয়েকবার এভাবে কসম করি।

এখন প্রশ্ন হল, আমি কসম ভঙ্গকারী হয়েছি কি না? হলে কয়টি কাফফারা আদায় করতে হবে? যে কয়বার ভঙ্গ হয়েছে সে কয়টি নাকি যে কয়বার কসম করেছি সে কয়টি। জানিয়ে বাধিত করবেন।

উল্লেখ্য, আমি এভাবে কতবার যে কসম করে ভঙ্গ করেছি তা জানা নেই। এখন কী করতে পারি? সুপরামর্শ চাই।

 


Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে কসম ভঙ্গ করার কারণে আপনাকে কাফফারা আদায় করতে হবে। এক্ষেত্রে একবার কসম করে তা ভাঙ্গার  পূর্বে সেই বিষয়ের কসম বারবার পুনরাবৃত্তি করার দ্বারা যদি আপনি ভিন্ন করে কসমের উদ্দেশ্য না নিয়ে থাকেন; বরং পূর্বের কসমেরই পুনরাবৃত্তি করা এবং তা দৃঢ় করা উদ্দেশ্য হয়ে থাকে তাহলে এক্ষেত্রে প্রতি কসমের উপর কাফফারা আসবে না। বরং এভাবে কসমগুলো করার পর যখন কসম ভঙ্গ হয়েছে তখন একটি কাফফারা দিতে হবে। এরপর যদি আবার কসম করা হয় এবং তা ভঙ্গ করা হয় তাহলে পুনরায় কাফফারা দিতে হবে।

একটি কসমের কাফফারা হল, দশজন গরীব মিসকীনকে দু বেলা তৃপ্তিসহ খানা খাওয়ানো। অথবা তাদের প্রত্যেককে এক জোড়া করে কাপড় দেওয়া। এ দুটির সমার্থ্য না থাকলে এক নাগাড়ে তিনটি রোযা রাখা।

এখন আপনার কর্তব্য হল, উপরোক্ত মাসআলা অনুযায়ী কতবার কসম ভঙ্গ করেছেন যথাসম্ভব তার সঠিক হিসাব বের করার চেষ্টা করা। সঠিক হিসাব বের করা না গেলে প্রবল ধারণার ভিত্তিতে কাফফারার সংখ্যা নির্ধারণ করে তা আদায় করবেন এবং আল্লাহ তাআলার নিকট ভুলভ্রান্তির জন্য ইস্তিগফার করবেন।

প্রকাশ থাকে যে, গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার সংকল্পের ক্ষেত্রে বান্দার দায়িত্ব হল বারবার কসম না করে বরং আল্লাহ তাআলার প্রতি মুতাওয়াজ্জেহ হওয়া এবং তার তাওফীক কামনা করা এবং কোন আল্লাহওয়ালা বুযুর্গের সংশ্রব অবলম্বন করা ও বেশি বেশি দুআ করতে থাকা

।-সূরা মায়েদা : ৮৯; কিতাবুল আসল ৩/২৩৮, ৩/১৯৬; আলমাবসূত, সারখসী ৮/১৫৭; ইলাউস সুনান ১১/৪২৬; রুহুল মাআনী ৭/১৪

Sharable Link

সাজিদুর রহমান - জামিয়া ইকরা ঢাকা

২৯২২. Question

শেয়ারবাজার সম্পর্কে সর্বশেষ সিদ্ধান্ত কী? বর্তমান শেয়ারবাজারে অংশগ্রহণ করা জায়েয কি না? জায়েয হলে কি কি শর্তের সাথে জায়েয আছে জানিয়ে বাধিত করবেন।


Answer

বর্তমান শেয়ারবাজারের কারবারগুলো শরীয়তের লেনদেন সংক্রান্ত নীতিমালার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। ব্যাপকভাবে সুদের মিশ্রণের সাথে সাথে বাজারটি অনেকটা জুয়ার মার্কেটের আকার ধারণ করেছে। তাই আরব দেশসহ বিশ্বের অনেক অঞ্চলের অধিকাংশ বড় বড় আলেম শেয়ারবাজারের কারবারকে নাজায়েয ফতওয়া দিয়েছেন। জেদ্দা ভিত্তিক ওআইসি ফিকহ একাডেমীতে বিশ্বের বড় বড় ফকীহগণের অংশগ্রহণে এ বিষয়ে ব্যাপক গবেষণা হয়েছে এবং দীর্ঘ আলোচনা-পর্যালোচনার পর এটি না জায়েয হওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়েছে।-মাজাল্লাতু মাজমায়িল ফিকহিল ইসলামী, সংখ্যা : ৭, পৃষ্ঠা : ৭১১-৭১২

এ ব্যাপারে বিস্তারিত দালিলিক প্রবন্ধ ছাপা হয়েছিল মাসিক আলকাউসারের এপ্রিল ১০, ফেব্রুয়ারি, মার্চ, এপ্রিল ১১ সংখ্যায়। যা পরবর্তীতে মাকতাবাতুল আশরাফ লাইব্রেরী থেকে পুস্তিকা আকারে প্রকাশিত হয়েছে। বিস্তারিত জানার জন্য ঐ পুস্তিকাটি দেখা যেতে পারে।

Sharable Link

মুহাম্মাদ রওশন আলম - সিরাজগঞ্জ

২৯২৩. Question

আমাদের গ্রামে এই প্রথা চালু আছে যে, যদি কোনো ব্যক্তি চুরি করে বা ব্যাভিচারে লিপ্ত হয় তাহলে তাদের বিচার করা হয়। এবং বিচারে তাদের জরিমানা করা হয়। এবং সেই টাকা বিচারকেরা বণ্টন করে নেয়।

আর ব্যাভিচারী উভয়ে যদি অবিবাহিত হয় তাদের বিয়ে করিয়ে দেওয়া হয়। আর বিবাহিত হলে শুধু ছেলের জরিমানা হয়।

আমার মন চায়, এই টাকাগুলো জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা হোক। এই সব কাজের কোনটা জায়েয আর কোনটা নাজায়েয শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে জানিয়ে বাধিত করবেন।


Answer

চুরি, ব্যভিচার এ ধরনের কোনো অপরাধের বিচার হিসাবে টাকা বা কোনো কিছু জরিমানা করা বৈধ নয়। দ্বিতীয়তঃ অভিযুক্তদের থেকে জরিমানা আদায় করে বিচারকদের তা নিয়ে নেওয়া সম্পূর্ণ হারাম। জরিমানার এ টাকা জনকল্যাণমূলক কাজেও লাগানো যাবে না। বরং এ টাকা মালিককেই ফেরত দিতে হবে।

প্রকাশ থাকে যে, চুরি ও ব্যাভিচারের শাস্তি শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত। সালিশ কর্তৃক জরিমানা আদায় করা বা তাদের পরস্পরে বিয়ে করিয়ে দেওয়া এগুলো উক্ত অপরাধের শাস্তি নয়। এছাড়া শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত শাস্তি প্রয়োগের অধিকার একমাত্র আদালত বা সরকারেরই। কোনো সালিশ বা ব্যক্তি তা প্রয়োগের অধিকার রাখে না। তবে চুরির অপরাধ প্রমাণিত হলে চুরিকৃত সম্পদ ফিরিয়ে দেওয়া বা এর ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য সালিশের মাধ্যমে বাধ্য করা জায়েয। এ বাবদ যা পাওয়া যাবে তা মালিককেই ফেরত দিতে হবে। আর চুরি বা ব্যাভিচারে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে তওবা ও পর্দা-পুশিদার সাথে থাকা ইত্যাদি ব্যাপারে সালিশগণ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও তাদের অভিভাবকদেরকে সতর্ক করতে পারবে। সমাজে এহেন কাজের পুনরাবৃত্তি না হয় সে ব্যাপারে গণসচেতনা গড়ে তুলবে।

-রদ্দুল মুহতার ৪/৬১; আলবাহরুর রায়েক ৫/৪১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/১৬৭

Sharable Link

মুহাম্মাদ খালেদ - গাজীপুর

২৯২৪. Question

ডিম কেনার পর ভাঙ্গলে অনেক সময় পঁচা বের হয়, যা খাওয়ার উপযুক্ত নয়। অনেক দোকানদার তা পরিবর্তন করে দেয় আর কেউ কেউ দিতে চায় না। জানতে চাই, এ ধরনের ডিম পরিবর্তন করতে পারব কি না? আর দোকানদারের জন্য তা পরিবর্তন করে দেওয়া জরুরি কি না?


Answer

ডিম ক্রয় করে তা ভাঙ্গার পর যদি একেবারে নষ্ট ও পঁচা পাওয়া যায় তাহলে তা দোকানদারকে দেখিয়ে মূল্য ফেরত নিতে পারবেন। কিংবা অন্য ডিম আনতে পারবেন। এক্ষেত্রে দোকানদার ডিম পাল্টে না দিলে তার জন্য এর মূল্য ভোগ করা বৈধ হবে না। তবে ক্রেতার হাতে আসার পর রেখে দেওয়ার কারণে নষ্ট হলে তা ফেরত দেওয়া বৈধ হবে না।

-আলমুহীতুল বুরহানী ১০/১২১; রদ্দুল মুহতার ৫/২৫; ফাতহুল কাদীর ৬/১৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৯/১৬৬

Sharable Link

মুহম্মাদ রফিকুল ইসলাম - ঢাকা

২৯২৫. Question

আমাদের এলাকায় তিন তলাবিশিষ্ট একটি মসজিদ আছে। মসজিদের পশ্চিমে মসজিদের জায়গায় বাথরুম, প্রস্রাবখানা ও লাশ রাখার ঘর বিদ্যমান। মসজিদ কমিটি বাথরুম, প্রস্রাবখানা ও লাশ রাখার ঘরের উপরে ছাদ দিয়ে তাতে ইমাম-মুয়াযযিনের পরিবার নিয়ে থাকা, পাঠাগার ও কমিটির মিটিংয়ের জন্য রুম তৈরি করতে চাচ্ছে। এটা করা বৈধ হবে কি? জানিয়ে বাধিত করবেন।


Answer

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ঐ ইস্তেঞ্জা খানা ও লাশ রাখার ঘরের উপর ইমাম-মুয়াযযিনের স্বপরিবারে থাকার ব্যবস্থা করা এবং মসজিদের অফিস কক্ষ ও ইসলামী বই-পুস্তকের জন্য পাঠাগার করা জায়েয হবে। তবে ঐ অংশের জন্য আলাদা সিড়ি রাখা উচিত। যাতে করে মসজিদে যাতায়াতকারীদের কোনো প্রকার সমস্যা না হয়।

-আলবাহরুর রায়েক ৫/২১৫; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৩৫৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৯/১২৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৪৫৫

Sharable Link