হাবীবুর রহমান - টেকনাফ

৩৭৭৩. Question

কোনো ব্যক্তি যদি ফরয গোসলে নাকের ভেতর পানি প্রবেশ না করিয়ে শুধু আঙ্গুল ভিজিয়ে নাকের ভেতরটা তিনবার মুছে নেয় তাহলে তার গোসল হবে কি এবং নাকের ভেতরে পানি প্রবেশ করানো ও তা পরিষ্কার করার পদ্ধতি কী?

 

 


Answer

ফরয গোসলে নাকের নরম স্থান পর্যন্ত পানি পৌঁছানো জরুরি। শুধু ভেজা আঙ্গুল দ্বারা নাকের ভেতর মুছে নেওয়া যথেষ্ট নয়। এর দ্বারা নাকে পানি পৌঁছানোর ফরয আদায় হবে না।

নাকের ভেতর পানি পৌঁছানোর উত্তম তরীকা হলডান হাতে পানি নিয়ে তা নিঃশ্বাসের মাধ্যমে নাকের নরম স্থান পর্যন্ত টেনে নেওয়া। হাত দিয়েও পানি ভেতরে দেওয়া যেতে পারে। অতপর বাম হাতের কনিষ্ঠা আঙ্গুল দ্বারা নাকের ভেতরটা পরিষ্কার করে নেওয়া। যেন কোনো অংশ শুকনা না থেকে যায়। এভাবে তিনবার পানি প্রবেশ করানো। 

-সুনানে আবু দাউদ ১/১৯; আলবাহরুর রায়েক ১/২১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/১০৮

Sharable Link

মাসুম বিল্লাহ - হবিগঞ্জ

৩৭৭৪. Question

আমাদের দেশে যে সকল মসজিদে তারাবীতে খতমে কুরআন হয় সেখানে দেখা যায়-

ক) যে কোনো একটি সূরার শুরুতে বড় আওয়াজে বিসমিল্লাহ পড়া হয়। বলা হয়ে থাকে, এ রকম পড়া সুন্নত।

খ) সূরা ইখলাস তিনবার পড়া হয়। বলা হয়ে থাকে, এ রকম পড়া মুস্তাহাব। অনুগ্রহপূর্বক এই দুই মাসআলার বিষয়ে শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে ফয়সালা জানানোর অনুরোধ রইল।


 


Answer

ক) বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম কুরআন মাজীদের স্বতন্ত্র একটি আয়াতযা দুই সূরার মাঝে পার্থক্য করার জন্য আল্লাহ তাআলা অবতীর্ণ করেছেন। সুতরাং মুসল্লিদেরকে পরিপূর্ণ খতম শোনাতে চাইলে যে কোনো একটি সূরার শুরুতে উঁচু আওয়াজে বিসমিল্লাহ পড়তে হবে। অন্যথায় এ কারণে মুসল্লিদের খতম অপূর্ণ থেকে যাবে। আর ইমামের জন্য সব নামাযেই সূরা ফাতিহা এবং সকল সূরার শুরুতে অনুচ্চ স্বরে বিসমিল্লাহ বলা মুস্তাহাব। -আসসিআয়াহ ২/১৭০ইহকামুল কনত্বরা ফী আহকামিল বাসমালাহ ১/৭১ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/৩২৮মাজমুআতুল ফাতাওয়ালাখনভী রাহ. ১/৩১৫

খ) কুরআন মাজীদ খতম করার ক্ষেত্রে সূরা ইখলাস তিনবার পড়ার কোনো বিধান শরীয়তে নেই। সাহাবা-তাবেয়ীন থেকেও এমন কোনো আমলের প্রমাণ নেই। ফিকহবিদগণ এই আমলকে অপছন্দ করেছেন। সুতরাং তারাবীতে কুরআন খতমের সময় সূরা ইখলাস তিনবার পড়ার প্রচলনটি ঠিক নয়। তাই এ থেকে বিরত থাকবে এবং অন্য সূরার ন্যায় যথানিয়মে একবারই পড়বে। -ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/৩২৬

Sharable Link

মাবরুর - মিরপুর, ঢাকা

৩৭৭৫. Question

 

 

সেদিন আসরের নামাযে আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব ভুলে তৃতীয় রাকাতে বসে পড়েছেন। কিন্তু কেউ লোকমা দেয়নি। এরপর চতুর্থ রাকাতে ইমাম সাহেব না বসে সোজা দাঁড়িয়ে যান। কেননা তিনি ভেবেছেন, এটি তৃতীয় রাকাত। মুসল্লিরা শেষ বৈঠকে বসে লোকমা দিয়েছেন। কিন্তু ইমাম সাহেব শেষ বৈঠকে আর ফিরে আসেননি। বাধ্য হয়ে মুসল্লিরা বৈঠক ছেড়ে দাঁড়িয়ে ইমাম সাহেবের অনুসরণ করেন। মাসআলা জানা থাকায় আমি ও কয়েকজন মুসল্লি শেষ বৈঠকে বসে ছিলাম। এরপর ইমাম সাহেব যখন পঞ্চম রাকাতের সিজদা করেছেন তখন আমরা সালাম ফিরিয়েছি। এরপর অবশ্য আমরাও সকলের সাথে সতর্কতাবশত পুনরায় আসরের নামায আদায় করে নিয়েছি। জানার বিষয় হল, আমাদের প্রথম নামায সহীহ হয়েছিল কি না।

উল্লেখ্য, তৃতীয় রাকাতে ইমাম সাহেব বসার কারণে যে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছে আমরা তা আদায় করিনি।

 

Answer

নামাযের শেষ বৈঠক ফরয। তা তরক করলে বা ভুলে ছুটে গেলে নামায ফাসেদ হয়ে যায়। প্রশ্নে উল্লেখিত অবস্থায় ইমাম সাহেব শেষ বৈঠক না করে দাঁড়িয়ে যাওয়ার কারণে এবং পঞ্চম রাকাতের সিজদার আগ পর্যন্ত বৈঠকে ফিরে না আসার কারণে ইমাম-মুক্তাদি সকলের নামায ফাসেদ হয়ে গেছে। যে সকল মুক্তাদি পঞ্চম রাকাতের জন্য দাঁড়ায়নি তাদেরও নামায হয়নি। কারণ ইমামের নামায ফাসেদ হয়ে গেলে মুক্তাদির নামাযও ফাসেদ হয়ে যায়। সুতরাং উল্লেখিত অবস্থায় ইমাম ও সকল মুক্তাদির পুনরায় নাযায পড়ে নেওয়া সঠিক হয়েছে।

-কিতাবুল আছল ১/২৩৯; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪২৭; ফাতহুল কাদীর ১/৪৪৪; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩২০

Sharable Link

বুরহানুদ্দিন - কুমিল্লা

৩৭৭৬. Question

 

নামাযে ইমাম সাহেব যদি ভুল করেন তাহলে আমরা আল্লাহু আকবার বলে লোকমা দিই। কয়েকদিন আগে আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব ভুল করে যোহরের নামাযের দ্বিতীয় রাকাতে না বসে দাঁড়িয়ে যান। তখন আমরা যথারীতি আল্লাহু আকবার বলে লোকমা দিই। নামায শেষে একজন আলেম বললেন, হাদীস ও ফিকহের কিতাবাদিতে সুবহানাল্লাহ বলে লোকমা দেওয়ার কথা আছে। আল্লাহু আকবার বলে নয়। সুতরাং সুবহানাল্লাহ বলাই উচিত। ঐ আলেমের কথা কি ঠিক? জানিয়ে বাধিত করবেন।


 

Answer

হাঁঐ আলেম ঠিক বলেছেন। ইমামের কোনো ভুল হলে সুবহানাল্লাহ বলে লোকমা দেওয়া সুন্নত। কেননা একাধিক হাদীসে সুবহানাল্লাহ বলে লোকমা দেওয়ার কথা উল্লেখ হয়েছে। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

من رابه شيء في صلاته، فليسبح.

নামাযে কোনো সমস্যা দেখা দিলে যেন সুবহানাল্লাহ বলে। -সহীহ বুখারী ১/১৬৫

অন্য এক বর্ণনায় এসেছেরাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (চার রাকাত বিশিষ্ট নামাযে) দ্বিতীয় রাকাতে না বসে দাঁড়িয়ে যান। তখন সাহাবায়ে কেরাম সুবহানাল্লাহ বলে লোকমা দিয়েছেন। -সুনানে নাসায়ীহাদীস ১১৭৮

সুতরাং কোনো ভুলের ব্যাপারে ইমামকে সতর্ক করতে চাইলে আল্লাহু আকবার না বলে সুবহানাল্লাহ বলা উচিত।

-শরহু মাআনিল আছার ১/২৯৪; নুখাবুল আফকার ৪/৩৬৯; আলমাবসূত ১/২০০; আল মুহীতুল বুরহানী ২/২১৩; শরহুল মুনইয়া ৪৪৯

Sharable Link

আবুল খায়ের - নারায়নগঞ্জ

৩৭৭৭. Question

আমার মাঝে মাঝে এমন হয় যে, ফজরের সময় মসজিদে গিয়ে দেখি নামাযের ইকামত হচ্ছে বা জামাত শুরু হয়ে গেছে। এ অবস্থায় জামাতের কতটুকু অংশ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে আমি সুন্নত পড়ব? দ্বিতীয় রাকাত পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে নাকি ইমামকে তাশাহহুদে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে? জানিয়ে বাধিত করবেন।


Answer

ফজরের সুন্নত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হাদীস শরীফে এসেছেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

لا تدعوا ركعتي الفجر، وإن طردتكم الخيل.

তোমরা ফজরের সুন্নত ছেড়ে দিও না। যদিও সৈন্যবাহিনী তোমাদেরকে তাড়া দেয়। -মুসনাদে আহমদ,হাদীস ৯২৫৩

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদআবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস ও আবু দারদা রা.-এর মতো বিশিষ্ট সাহাবীদের থেকে বর্ণিত আছে যেতারা ফজরের জামাত শুরু হয়ে গেলেও সুন্নত পড়ে নিতেন। যেমন আবু দারদা রা. ফজরের সময় মসজিদে প্রবেশ করে লোকজনকে ফজরের জামাতে কাতারবদ্ধ পেলে মসজিদের এক কোণে (ফজরের) সুন্নত পড়তেন। অতপর মানুষের সাথে জামাতে শরিক হতেন। -শরহু মাআনিল আছারতহাবী ১/২৫৬

সুতরাং ফজরের জামাত শুরু হয়ে গেলেও সুন্নত পড়ে যদি জামাতের সাথে দ্বিতীয় রাকাতও পাওয়া যায় তাহলে সুন্নত পড়ে নিবে। আর দ্বিতীয় রাকাত পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকলে সুন্নত পড়বে নাবরং জামাতে শরিক হয়ে যাবে এবং সূর্যোদয়ের পর তা পড়ে নিবে।

প্রকাশ থাকে যেকোনো কোনো ফকীহ সুন্নত পড়ার পর ইমামকে তাশাহহুদে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও সুন্নত পড়ার কথা বলেছেন। কিন্তু অধিকাংশ ফকীহর মত তা-ইযা উপরে বলা হয়েছে।

উল্লেখ্যজামাত শুরু হওয়ার পর মসজিদে সুন্নত পড়ার কিছু শর্ত রয়েছে। যথা-

ক. কাতারের সাথে মিলিত হয়ে পড়া যাবে না। মসজিদের বারান্দায় বা কাতার থেকে দূরে মসজিদের এক কোণে বা কোনো খুঁটির আড়ালে সুন্নত পড়বে।

খ. জামাত থেকে পিছনে পৃথক হয়ে সুন্নত পড়ার মতো জায়গা না থাকলে সুন্নত পড়া যাবে না। এক্ষেত্রে জামাতে শরিক হয়ে যাবে। 

-আলজামিউস সগীর ৯০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৬১; বাদায়েউস সানায়ে ১/৬৪০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩০৮; আলবাহরুর রায়েক ২/৭৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২০; মাবসূত, সারাখসী ১/১৬৭; ফাতহুল কাদীর ১/৪১৬

Sharable Link

মিনহাজুদ্দীন - মহেশখালী

৩৭৭৮. Question

নামাযে লম্বা কেরাত পড়ার সময় শুরুতে বড় এক আয়াত পরিমাণ বা ছোট তিন আয়াত পরিমাণ পড়ার পর যদি পরবর্তী অংশে এমন কেনো ভুল পড়ে, যার কারণে অর্থ একেবারে পাল্টে যায় তাহলে নামায ভঙ্গ হবে কি না? আমার এ প্রশ্নটি হওয়ার কারণ হল, সে তো নামায হয়ে যায় এ পরিমাণ পড়ে ফেলেছে। আরেকটা জানার বিষয়, এক্ষেত্রে নফল ও ফরযের মধ্যে পার্থক্য আছে কি না?


Answer

নামাযে যতটুকু কেরাত পড়া হবে এর কোনো অংশে নামায ভেঙ্গে যাওয়ার মতো ভুল হলে নামায ভেঙ্গে যাবে। চাই ঐ ভুল নামায হয়ে যায় এ পরিমাণ কেরাত পড়ার ভেতরে হোক বা পরে হোক। নামায হয়ে যায় এ পরিমাণ পড়ার পর ভুল হলে নামায ভাঙ্গে না- এ ধারণা ঠিক নয়বরং যে ভুলের কারণে অর্থে চরমভাবে বিকৃতি ঘটে যেমনকুফরী অর্থ হয়ে যায় বা কুরআনের একেবারে উল্টো অর্থ হয় সেক্ষেত্রে যে অংশেই ভুল হোক নামায ভেঙ্গে যাবে। আর ভুলের ক্ষেত্রে ফরয ও নফল নামাযের হুকুম একই। নামায ভেঙ্গে যাওয়ার মতো ভুল হলে ফরয নফল সব নামাযই নষ্ট হয়ে যাবে। 

-শরহুল মুনইয়াহ ৪৭৬

Sharable Link

মিনহাজুদ্দীন - মহেশখালি

৩৭৭৯. Question

যদি ইমাম সাহেব কেরাতে আটকে যায় এবং এখনো নামায হয়ে যায় এ পরিমাণ পূর্ণ হয়নি তাহলে কি তিনি সে স্থান ত্যাগ করে অন্য জায়গা থেকে পড়তে পারবে? হেদায়া কিতাবের এ ইবারত থেকে জায়েয হবে বুঝা যায়-

ينبغي للمقتدي أن لا يعجل بالفتح وللإمام أن لا يلجئهم إليه، بل يركع إذا جاء أوانه أو ينتقل إلى آية أخرى .

মূলত আমার উদ্দেশ্য হল আরেকটা। তা হল, কেউ যদি কেরাতে এমন কোনো অশুদ্ধ পড়ে, যার কারণে নামায ভেঙ্গে যায় সে কি অন্যস্থান থেকে নতুনভাবে কেরাত শুরু করতে পারবে বা যে স্থানে আটকে গেছে এরপর থেকে?   কথা মনে করে যে, যা পড়েছি এবং অশুদ্ধ পড়েছি সব বাদ। যেন এখনো কেরাতই পড়িনি; বরং কেরাত এখন থেকে শুরু।


Answer

নামাযে কেরাত পড়তে গিয়ে আটকে গেলে এবং মাসনুন কেরাত পরিমাণ পড়া না হয়ে থাকলে তার জন্য লোকমা নেওয়াও জায়েয। তেমনিভাবে লোকমা না নিয়ে অন্যস্থান থেকে পড়াও জায়েয।

আর যদি মাসনুন কেরাতও পড়া হয়ে যায় তাহলে  লোকমা নেওয়া এবং অন্যস্থান থেকে পড়া উভয়টি মাকরূহ। এক্ষেত্রে অন্য জায়গা থেকে না পড়ে তৎক্ষণাৎ রুকুতে চলে যাবে।

অবশ্য খতম তারাবীহর বিষয়টি এ থেকে ভিন্ন।  এক্ষেত্রে লোকমা নিয়ে হলেও পড়া চালিয়ে যেতে কোনো সমস্যা নেই।

উল্লেখ্যএ মাসআলার সাথে কেরাতের ভুলের মাসআলার কোনোই সম্পর্ক নেই। প্রশ্নে দুই মাসআলাকে মেলানো হয়েছে। কেননা বড় ছোট যে পরিমাণই কেরাত পড়া হোক তার কোনো জায়গায় নামায ভেঙ্গে যাওয়ার মতো ভুল হলে তা শোধরানো ব্যতীত অন্যস্থান থেকে পড়লেও নামায ফাসেদ হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে মনে মনে ভাবা যেযা পড়েছি এবং অশুদ্ধ পড়েছি সব বাদ এ কথা ধর্তব্য হবে না। বরং ভুলের অংশ শুদ্ধ করে না পড়লে নামায ফাসেদ হয়ে যাবে।

-ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৩৭; ফাতহুল কাদীর ১/৩৪; শরহুল মুনইয়াহ ৩৬৪; রদ্দুল মুহতার ১/৬২৩, ৪৪১

Sharable Link

মুহাম্মাদ খায়রুদ্দীন - চাঁদপুর

৩৭৮০. Question

ক) মহিলা মায়্যেতকে কবরে রাখার সময় কবর ঢাকার হুকুম কী?

খ) এই মায়্যেতকে যদি খাটিয়া না ঢেকে জানাযার নামায আদায় করা হয় তাহলে নামায হবে কি না?

গ) আমাদের দেশে প্রচলিত আছে, কোনো ব্যক্তি মারা গেলে পরিবারের সকল মহিলাদের গোসল করতে হয়। এটা ইসলাম সমর্থন করে কি না?


Answer

ক) মহিলা মায়্যেতকে কবরে রাখার সময় কাপড় ইত্যাদি দিয়ে ঢেকে দেওয়া উত্তম।

আবু ইসহাক রাহ. বলেনআমি হারিস রাহ.-এর জানাযায় উপস্থিত হলাম। লোকজন তার কবর কাপড় দিয়ে ঢেকে দিল। তখন আবদুল্লাহ ইবনে ইয়াযিদ কাপড়টি টেনে সরিয়ে দেন এবং বলেনতিনি তো পুরুষ।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবাহাদীস ১১৭৮৫

খ) মহিলা মায়্যেতের খাটিয়াও আলাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া উত্তম। যাতে বেগানা পুরুষের দৃষ্টি লাশের উপর না পড়ে। অবশ্য খাটিয়া ঢাকা না হলেও জানাযার নামায আদায় হয়ে যাবে।

গ) কেউ মারা গেলে তার পরিবারের সকল মহিলাদের গোসল করতে হবে- এমন ধারণা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও কুসংস্কারের অন্তর্ভুক্ত। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহাদীস ১১২৭৯বাদায়েউস সানায়ে ২/৬৩;আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৯০আলমাবসূতসারাখসী ২/৬২আলবাহরুর রায়েক ২/১৯৪আলমুগনীইবনে কুদামা ৩/৪৮৪

Sharable Link

ইয়াহইয়া - নোয়াখালী

৩৭৮১. Question

মুয়াযযিন সাহেব ঘড়ি দেখে সূর্য ডোবার সময় হয়েছে মনে করে মাগরিবের আযান দিয়েছেন। তার আযান শুনে মহল্লার অনেক লোক ইফতার করে ফেলেছেন। পরে মহল্ল­ার অন্যান্য মসজিদের আযান, রেডিওর আযান ও রোযার চিরস্থায়ী ক্যালেন্ডারের মাধ্যমে দেখা গেল যে, বাস্তবে তারা সূর্য ডোবার আগেই ইফতার করেছিলেন। জানতে চাই, যারা ইফতার করে ফেলেছেন তাদের রোযা কি ভেঙ্গে গেছে? যদি ভেঙ্গে যায় তাহলে কাযা করলেই যথেষ্ট হবে নাকি কাফফারাও দিতে হবে?


Answer

প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী যারা সূর্যাস্তের আগেই ইফতার করেছেন তাদের রোযা নষ্ট হয়ে গেছে। তারা রোযাটি কাযা করবেনকাফফারা দেওয়া লাগবে না। হাদীস শরীফে আছেহযরত আসমা রা. বলেন, ‘রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যামানায় এক মেঘলা দিনে আমরা সূর্য ডুবে গেছে নিশ্চিত জেনে ইফতার করলাম। পরক্ষণেই মেঘ সরে গিয়ে সূর্য প্রকাশিত হল।’ হাদীসের রাবী হিশামকে জিজ্ঞাসা করা হলতাদেরকে কি রোযা কাযা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিলতিনি বললেনকাযা ছাড়া তো উপায় নেই।-সহীহ বুখারীহাদীস ১৯৫৯সুনানে আবু দাউদহাদীস ২৩৫৯

হযরত বিশর ইবনে কায়েস থেকে বর্ণিততিনি বলেনআমি এক রমযানে বিকেল বেলা উমর রা.-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ছিল। উমর রা. সূর্য ডুবে গেছে মনে করে নিজেও পানি পান করলেন এবং আমাকেও পান করালেন। পরক্ষণেই সূর্য দেখা গেল। উমর রা. বললেন, ‘সমস্যা নেই। এর পরিবর্তে একটি রোযা কাযা করাই যথেষ্ট হবে।’ -সুনানে কুবরাবায়হাকী ৪/৫৬৬মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহাদীস ৯১৩৮

হযরত ইবনে জুরাইজ রাহ. বলেনআমি আতা রাহ.-কে জিজ্ঞেস করলামরমযানের এক মেঘাচ্ছন্ন দিনে সময় হয়েছে মনে করে ইফতার করেছি। এরপর সূর্য দেখা গেল। এখন আমি কি শুধু ঐ দিনের রোযার কাযা করবনা আমাকে কাফফারাও আদায় করতে হবেআতা রাহ. বললেনহাঁ, (শুধু কাযা করবে) (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহাদীস ৯১৪৭)

-বাদায়েউস সানায়ে ২/২৫৭; আলবাহরুর রায়েক ২/২৯১; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪০৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৩৬; হাশিয়াতুত তহতাবী আলালমারাকী ৩৬৯

Sharable Link

রাইয়ান - পল্লবী, মিরপুর

৩৭৮২. Question

এক ব্যক্তি রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করছিলেন। মসজিদের পার্শ্ববর্তী মাঠে জানাযার নামায হচ্ছিল। তিনি তাতে শরিক হয়েছেন এবং নামায শেষ হওয়ামাত্রই মসজিদে ফিরে এসেছেন। এ কথা জানতে পেরে মসজিদের ইমাম সাহেব বলেছেন, তার ইতিকাফ ভেঙ্গে গেছে। ইমাম সাহেবের কথা কি ঠিক?

 

 


Answer

হাঁইমাম সাহেব ঠিকই বলেছেন। ইতিকাফরত অবস্থায় জানাযার নামাযের উদ্দেশ্যে মসজিদ থেকে বের হওয়ার কারণে তার সুন্নত ইতিকাফ ভেঙ্গে গেছে।

আয়েশা রা. বলেন,

السنة على المعتكف أن لا يعود مريضا، ولا يشهد جنازة، ولا يمس امرأة، ولا يباشرها.

ইতিকফকারীর নিয়ম হলসে কোনো রোগী দেখতে যাবে নাজানাযায় অংশগ্রহণ করবে না। স্ত্রীকে (কামভাবে) স্পর্শ করবে নাও তার সাথে সহবাস করবে না। -সুনানে আবু দাউদহাদীস ২৪৭৩

হযরত হিশাম ইবনে উরওয়াহ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেনতিনি বলেন,

المعتكف لا يجيب دعوة، ولا يعود مريضا، ولا يتبع جنازة.

ইতিকাফকারী কোনো দাওয়াতে যাবে নাঅসুস্থ কাউকে দেখতে যাবে নাকারো জানাযায় শরিক হবে না।-মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৪/৩৫৭-৩৫৮

সুতরাং এ ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তিকে রোযাসহ একদিনের ইতিকাফ কাযা করতে হবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ২/২৮৩, ২৮৪; মাবসূত, সারাখসী ৩/১১৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৬৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২১; রদ্দুল মুহতার ২/৪৪৪; ২৪৫

Sharable Link

আয়েশা - মুন্সিগঞ্জ

৩৭৮৩. Question

 

আজকাল ভিড়ের কারণে অনেক মহিলার পক্ষ থেকে মাহরাম পুরুষরাই কংকর মারার কাজ সেরে নেন। এটা কি সহীহ? আবার অনেক মহিলা ভিড়ের কারণে মুযদালিফার মাঠে না থেকে সরাসরি মিনার তাঁবুতে এসে রাত যাপন করেন। জানতে চাই এমন করা কি জায়েয হবে? এতে কি কোনো দম ওয়াজিব হবে?

 

 

Answer

ভিড়ের ওজরে অন্যকে দিয়ে রমী করানো (কংকর মারানো) বৈধ নয়। এর দ্বারা তাদের এই ওয়াজিব আদায় হবে না। দিনের বেলায় ভিড় থাকলেও রাতে তেমন ভিড় থাকে না। রাতে মহিলা ও দুর্বলদের জন্য রমীর উপযুক্ত সময়। অন্যকে দিয়ে রমী করানো কেবল তখনই জায়েয যখন হাজ্বী অসুস্থতার কারণে জামরাতে পৌঁছতে এবং রমী করতে সক্ষম না হন। যে অসুখে তার জন্য বসে নামায পড়া বৈধ এমন অবস্থায় অন্যকে দিয়ে রমী করাতে পারবেনঅন্যথায় নয়। আর ভিড়ের ওজরে মহিলাদের জন্য উকূফে মুযদালিফা না করে আরাফা থেকে সরাসরি মিনায় চলে যাওয়ার অনুমতি আছে। এতে তাদের উপর দম ওয়াজিব হবে না। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশী হাজ্বীদের মিনার তাঁবুগুলো যেহেতু মূলত মুযদালিফার সীমানাতেই পড়ে তাই আরাফা থেকে সরাসরি মিনার ঐ তাঁবুতে চলে গেলেও সকলের উকূফে মুযদালিফা আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু সক্ষমদের জন্য উত্তম হবে মসজিদে মাশআরে হারামের নিকটে খোলা আকাশের নিচে উকূফ করা।

-যুবদাতুল মানাসিক ১৮৪; গুনইয়াতুন নাসিক ১৮৮

Sharable Link

হাসান মাহমুদ - ছাতক, সুনামগঞ্জ

৩৭৮৪. Question

এক মহিলা হজ্ব করবে। তার বড় ভাই সৌদীতে চাকরি করে। ঢাকা বিমান বন্দর পর্যন্ত তার সঙ্গে তার ছোট ভাই থাকবে। ঢাকা থেকে জেদ্দা বিমানবন্দর পর্যন্ত মামাতো বোন ও তার স্বামী সাথে থাকবে। জেদ্দা বিমানবন্দর থেকে তার বড় ভাই তাকে নিয়ে যাবে এবং তার সঙ্গেই হজ্ব করবে। প্রশ্ন হল, সে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে জেদ্দা পর্যন্ত তার মামাতো বোন ও তার স্বামীর সাথে হজ্ব করার জন্য যেতে পারবে কি?


Answer

মাহরাম ছাড়া নারীর জন্য হজ্বের সফরে যাওয়াও নিষেধ। মামাতো বোনের স্বামী মাহরাম নয়। তাই প্রশ্নোক্ত মহিলা মামাতো বোন ও তার স্বামীর সাথে হজ্বে যেতে পারবে না। বরং স্বামী বা কোনো মাহরামের সাথেই যেতে হবে। হাদীস শরীফে এসেছেআবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিতনবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

لا تسافر المرأة إلا مع ذي محرم، ولا يدخل عليها رجل إلا ومعها محرم، فقال رجل: يا رسول الله إني أريد أن أخرج في جيش كذا وكذا، وامرأتي تريد الحج، فقال: اخرج معها.

কোনো মহিলা তার মাহরাম ব্যতিরেকে সফর করবে না এবং কোনো পুরুষ মাহরাম ছাড়া কোনো মহিলার নিকট যাবে না। অতপর এক ব্যক্তি বললেনহে আল্লাহর রাসূল! আমি অমুক সৈন্যদলের সাথে জিহাদে যেতে চাই আর আমার স্ত্রী হজ্বে যেতে চায়। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমিও তার সাথে হজ্বে যাও। -সহীহ বুখারী ১/১৪৭১/২৫০

আরেক হাদীসে এসেছেনবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

لا تحجن امرأة إلا ومعها ذو محرم.

কোনো মহিলা যেন মাহরাম ছাড়া হজ্ব করতে না যায়। (সুনানে দারাকুতনী ২/২২৩)

-বাদায়েউস সানায়ে ২/২৯৯; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৯৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৬৪; মুখতাসারুত তহাবী ৫৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৭৭; যুবদাতুল মানাসিক ৩২

Sharable Link

আবদুল্লাহ - চুনারোঘাট

৩৭৮৫. Question

গত বছর আল্লাহর রহমতে পবিত্র হজ্ব আদায় করেছি। যিলহজ্বের ১০ তারিখ আমরা কংকর নিক্ষেপ ও কুরবানী করার পর কাফেলার এক হাজ্বী ভাইয়ের মাথা মুণ্ডিয়ে দিই। তারপর তিনি আমার মাথা মুণ্ডিয়ে দেন। জানার বিষয় হল, ইহরাম অবস্থায় মাথা মুণ্ডানোর কারণে আমার উপর কি দম বা সদকা ওয়াজিব হয়েছিল?


Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে অন্যের মাথা মুণ্ডিয়ে দেওয়া অন্যায় হয়নি এবং আপনার উপর এ কারণে কোনো কিছু ওয়াজিবও হয়নি। হলকের পূর্বের সকল কার্যাদী সম্পন্ন করার পর অন্যের মাথার চুল মুণ্ডিয়ে দেওয়া জায়েয। তাবেয়ী হযরত ইবনে জুরাইজ রাহ. থেকে বর্ণিত তিনি বলেনআমি হযরত আতা রাহ.-কে জিজ্ঞাসা করলামএক ব্যক্তি কংকর নিক্ষেপ করেছে কিন্তু হলক করেনি সে কি অন্যকে হলক করে দিতে পারবেতিনি জবাবে বললেনহাঁ পারবে।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ, আসার নং ১৬১৩৯; মানসিক পৃ. ২৩০; যুবদাতুল মানাসিক ৩৭; গুনইয়াতুন নাসিক ১৭৪

Sharable Link

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক -

৩৭৮৬. Question

আমি একজন ব্যবসায়ী। আমার উপর অনেক আগে হজ্ব ফরয হয়েছে। তখন দ্বীনের বুঝ না থাকায় অবৈধ উপার্জন দিয়ে হজ্ব করেছি। এখন আমি জানতে চাই যে, উক্ত হজ্বের মাধ্যমে আমার ফরয হজ্ব কি আদায় হয়েছে, না পুনরায় হজ্ব করতে হবে?


Answer

হজ্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতযার মাধ্যমে শারীরিক ইবাদতের পাশাপাশি আর্থিক ইবাদতের বিষয়ও রয়েছে। অবৈধ সম্পদের দ্বারা হজ্ব করলে এর দ্বারা ফরয আদায় হয়ে গেলেও আল্লাহর দরবারে তা কবুল হবে না। তাই কবুল হজ্বের জন্য পুনরায় হালাল সম্পদ দ্বারা হজ্ব করতে হবে।

-আলবাহরুর রায়েক ২/৩০৯; ফাতহুল কাদীর ২/৩১৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২০; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৫৬

Sharable Link

আশরাফ - বি. বাড়িয়া

৩৭৮৭. Question

এ বছর আমরা স্বামী-স্ত্রী হজ্বে যাব। আমাদের দু বছরের একটি ছেলে সন্তান আছে। তাকেও নিয়ে যাব। প্রশ্ন হল এই শিশু ছেলের ইহরাম বা হজ্বের আমল কীভাবে হবে? তাকেও কি ইহরামের কাপড় পরাতে হবে? ঠা-ার দরুণ মাথা মুখ ঢাকতে হলে তা পারব কি না? তার ভুলের কারণে দম ওয়াজিব হবে কি? দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন।


Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে শিশু সন্তানের পক্ষ থেকে তার পিতা ইহরাম  করে নিবেন। আর এই শিশুকে ইহরামের কাপড় পরানো জরুরি নয়। সম্ভব হলে পরাবে এবং যথাসম্ভব ইহরামের নিষিদ্ধ জিনিস থেকেও তাকে বিরত রাখতে চেষ্টা করবে। প্রয়োজন হলে তাকে সেলাই করা পোশাক পরাতে পারবে এবং চেহারা ও মাথা ঢাকতেও পারবে।

শিশু-বাচ্চা ইহরামের নিষিদ্ধ কোনো কিছু করার দ্বারা তার উপর কিংবা তার অভিভাবকের উপর জরিমানা-দম বা অন্য কোনো কিছু ওয়াজিব হবে না। অভিভাবক তাকে নিয়ে তাওয়াফ-সায়ী করবে। আর তার পক্ষ থেকে তাওয়াফের দুই রাকাতও পড়তে হবে না। মিনাআরাফায় নিজেদের সাথে সাথে রাখবে এবং তার পক্ষ থেকে কংকর নিক্ষেপ করবে। আর তার পক্ষ থেকে দমে শোকর আদায় করতে হবে না। ইহরাম ত্যাগ করার জন্য তার মাথা মুণ্ডন করে দিবে।

-মানাসিক, মোল্লা আলী কারী ১১২-১১৩, ২৬৩; গুনইয়াতুন নাসিক ৮৩-৮৪; রদ্দুল মুহতার ২/৪৬৬

Sharable Link

মুহাম্মাদ হাবিব - তেজগাঁও, ঢাকা

৩৭৮৮. Question

আমি বাড়ি বানানোর নিয়তে কিছু টাকা সঞ্চয় করেছি। আমার নিজের থাকার জন্য কোনো বাড়ি নেই। এখন হজ্বের মাস চলে এসেছে। ইচ্ছা করলে ঐ টাকা দিয়ে আমি হজ্ব করতে পারি। কিন্তু তখন আমি আর বাড়ি বানাতে পারব না। আমি জানি যে, বাড়ি হল, হাজতে আসলিয়া অর্থাৎ মৌলিক প্রয়োজনের অন্তর্ভুক্ত। তাই এ অবস্থায় আমার উপর কি হজ্ব ফরয হবে? ফরয হলে হাজতে আসলিয়ার অর্থ কী? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।


Answer

নিজে ও পরিবার-পরিজনের বসবাসের ব্যবস্থা থাকা হাজতে আসলিয়া অর্থাৎ ব্যক্তির মৌলিক প্রয়োজনের অন্তর্ভুক্ত। এই প্রয়োজন ভাড়া বাসার দ্বারাও পূর্ণ হতে পারে। নিজের মালিকানাধীন হওয়া জরুরি নয়।

সুতরাং যার জন্য ভাড়া বাড়িতে থাকার সুব্যবস্থা আছে তার জন্য নিজস্ব বাড়ি বানানো মৌলিক প্রয়োজনের অন্তর্ভুক্ত নয়। কেননা ভাড়া বাসা দ্বারা তো তার বসবাসের প্রয়োজন পূর্ণ হয়েই যাচ্ছে।

অতএব এমন ব্যক্তি যদি বাড়ি বানানোর নিয়তে টাকা জমা করে যা দিয়ে তার হজ্বের খরচ হয়ে যাবে তাহলে নির্ভরযোগ্য মত অনুযায়ী এ টাকার কারণে তার উপর হজ্ব ফরয হয়ে যাবে। তাই হজ্বের মৌসুমে এ টাকা দিয়ে হজ্ব করা তার জন্য আবশ্যক হয়ে যাবে। তবে হজ্বের মৌসুম আসার আগেই যদি ঐ টাকা বাড়ি বানানো বা অন্য কোনো প্রয়োজনে খরচ করে ফেলে এবং তার কাছে হজ্ব করার মতো আর টাকা না থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রে তার উপর হজ্ব ফরয হবে না।

পক্ষান্তরে যে ব্যক্তির বসবাসের জন্য ভাড়া বাসারও ব্যবস্থা নেই এবং বসবাসের প্রয়োজন পূরণের জন্যই তাকে বাড়ি বানাতে হবে তার জন্য নিজস্ব বাড়ি মৌলিক প্রয়োজনের অন্তর্ভুক্ত। এমন ব্যক্তি যদি বাড়ি বানানোর জন্য টাকা জমা করে এবং হজ্বের মৌসুম আসার পর তার কাছে এ পরিমাণ টাকা থাকেযা দিয়ে হজ্ব করলে বাড়ি বানানো যাবে না তাহলে তার উপর ঐ টাকার কারণে হজ্ব ফরয হবে না।

-গুনইয়াতুন নাসিক ২০; মানাসিক ৪৪; আলবাহরুল আমীক ১/৩৮২; মিনহাতুল খালিক ২/৩১৩

Sharable Link

আবদুল মান্নান - শায়েস্তাগঞ্জ, হবিগঞ্জ

৩৭৮৯. Question

আমি এ বছর হজ্বে যাওয়ার নিয়ত করেছি। আমার প্রশ্ন হল, যদি সৌদিতে খুব ঠাণ্ডা পড়ে তবে আমি কি ইহরাম অবস্থায় হাত, পা ও চেহারা চাদর দিয়ে ঢেকে ঘুমাতে পারব?


Answer

ইহরাম অবস্থায় মাথা ও চেহারা ব্যতীত শরীরের বাকি অংশ চাদর দিয়ে ঢাকা জায়েয। আর বিনা ওজরে পূর্ণ একদিন বা এক রাত মাথা বা চেহারা ঢেকে রাখলে দম ওয়াজিব হবে। হাঁকোনো ওজরের কারণে ঢাকার অনুমতি আছে। যেমন প্রচণ্ড শীতের কারণে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা হলে চেহারা ও মাথা ঢেকে রাখতে পারবে তবে এক্ষেত্রেও পূর্ণ এক দিন বা এক রাত চেহারা ঢেকে রাখলে দমে তাখয়ীর ওয়াজিব হবে। অর্থাৎ তিন পদ্ধতির যেকোনো একটি পদ্ধতিতে দম আদায় করা যাবে : ১. একটি ছাগল বা দুম্বা জবাই করা ২. ছয় জন মিসকীনের প্রত্যেককে একটি সদকায়ে ফিতির পরিমাণ দেওয়া ৩. অথবা তিনটি রোযা রাখা।

উল্লেখ্যপূর্ণ এক দিন বা পূর্ণ এক রাতের কম সময় ঢাকা থাকলে এক ফিতরা পরিমাণ টাকা সদকা করে দিবে।

-মানাসিক, মোল্লা আলী কারী পৃ. ৩০৮, ৩৯২; গুনইয়াতুন নাসিক, পৃ. ২৫৪; রদ্দুল মুহতার ২/৪৮৮; তাকরীরাতে রাফেয়ী ২/১৫৯; মিনহাতুল খালিক (আলবাহরুর রায়েক) ২/৩২৪

Sharable Link

জুনাইদ আহমদ - হবিগঞ্জ, সিলেট

৩৭৯০. Question

কোনো মহিলার স্বামী খোলা তালাক দিলে খোলা তালাকদাতা স্বামী তার স্ত্রী থেকে কী পরিমাণ বিনিময় নিতে পারবে? উত্তরটা জানালে উপকৃত হব।


Answer

খোলা তালাক যদি স্বামীর দোষের কারণে হয়ে থাকে তাহলে তালাকদাতার জন্য খোলার বিনিময়ে স্ত্রী থেকে কোনো কিছু গ্রহণ করা বৈধ হবে না। আর স্ত্রীর দোষের কারণে হয়ে থাকলে মহর সমপরিমাণ নেওয়া বৈধ হবে। এরচেয়ে বেশি নেওয়া মাকরূহ বা অনুত্তম হবে।

প্রখ্যাত তাবেয়ী ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন,

إذا جاء الأمر من قبلها حل له ما أخذ منها، فإن جاء من قبله لم يحل له ما أخذ منها.

খোলা তালাক যদি মহিলার দোষের কারণে হয়ে থাকে তাহলে স্বামীর জন্য তার থেকে যা নিবে তা বৈধ হবে।  আর যদি স্বামীর দোষে হয় তাহলে স্ত্রী থেকে যা নিবে তা বৈধ হবে না।’ -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাকহাদীস ১১৮২৫ 

আর ইমাম যুহরী রাহ. বলেন,

لا يحل للرجل أن يأخذ من امرأته شيئا من الفدية حتى يكون النشوز من قبلها، قيل له: وكيف يكون النشوز؟ قال: النشوز: أن تظهر له البغضاء، وتسيء عشرته، وتظهر له الكراهية، وتعصي أمره.

তালাকের বিনিময়ে স্ত্রী থেকে কিছু নেওয়া স্বামীর জন্য বৈধ হবে না যতক্ষণ না অবাধ্যতা স্ত্রীর পক্ষ থেকে না হবে। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলঅবাধ্যতা কখন সাব্যস্ত হবেতিনি বললেনসে যদি স্বামীর সাথে বিদ্বেষ প্রকাশ করেতার সাথে খারাপ ব্যবহার করেতার প্রতি অপছন্দ প্রকাশ করে ও তার হুকুম অমান্য করে। 

-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ১১৮১৫; কিতাবুল আছল ৪/৫৫৮; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৩৫; হেদায়া, ফাতহুল কাদীর ৪/৬১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৪৮৮; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৪৪৫

Sharable Link

মিজানুর রহমান - কিশোরগঞ্জ

৩৭৯১. Question

আমি ঢাকায় একটি মাদরাসায় পড়াশুনা করি। একদিন এক দরিদ্র লোক এসে চিকিৎসার জন্য কিছু আর্থিক সহযোগিতা চাইল। খবর নিয়ে জানতে পারলাম তার বাড়ি ভোলা। এবং সে যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত। আর এদিকে আমি ইতিপূর্বে একটি কসম করে ভঙ্গ করেছি। তাই ভাবলাম, আমাকে তো দশজন দরিদ্রকে দুই বেলা খাওয়াতে হবে বা এর মূল্য দিতে হবেই তাহলে এই ব্যক্তিকে দুই বেলার মূল্য ১০০ টাকা দিয়ে দেই। কিন্তু আমার কাছে মাত্র পঞ্চাশ টাকা ছিল। তাই এক বেলার নিয়তে দিয়ে দেই। পরে জনৈক আলেম বিষয়টি জানতে পেরে বললেন, এভাবে কাফফারা আদায় হবে না। একজনকে পূর্ণ দুই বেলার মূল্যই দিতে হবে। এখন জানার বিষয় হল, ঐ আলেম কি ঠিক বলেছেন?


Answer

হাঁতিনি ঠিকই বলেছেন। কাফফারা আদায়ের জন্য দশজন মিসকীনের প্রত্যেককে দুই বেলা খাওয়াতে হবে বা দুই বেলা খাবারের মূল্য দিতে হবে। কাউকে শুধু এক বেলা খাওয়ালে বা এক বেলার মূল্য দিলে তা কসমের কাফফারার অন্তর্ভুক্ত হবে না। অবশ্য নির্দিষ্ট ঐ দরিদ্র ব্যক্তিকেই যদি আরেক বেলা খাওয়ানো বা এর মূল্য দিয়ে দেওয়া হয় তাহলে তখন কসমের কাফফারা হিসেবে ধর্তব্য হবে।

-আলমাবসূত, সারাখসী ৭/১৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৫/১৯৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৬৩; আলবাহরুর রায়েক ৪/১০৮; রদ্দুল মুহতার ৩/৭২৬

Sharable Link

নাজমুশ শরীফ - ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত

৩৭৯২. Question

আমরা শখ করে দেশীয় বিভিন্ন মুদ্রা (কাগজের, পয়সার) সংগ্রহ করি। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে প্রচলিত এবং অপ্রচলিত সব ধরনের মুদ্রাই সংগ্রহ করি। সে মুদ্রা যত টাকা মূল্যের আমরা তার চেয়ে কম বা বেশি মূল্যে ক্রয়-বিক্রয় করি। ইসলামের দৃষ্টিতে এর বিধান কী? কাজটা কি এভাবে বৈধ, নাকি অন্য কোনোভাবে এই বেচাকেনা করা যাবে?


Answer

একই দেশের চলমান মুদ্রা পরস্পর লেনদেন করলে সমান সমান হওয়া জরুরি। কমবেশি করা সুদের অন্তর্ভুক্ত। তাই চলমান টাকা বা পয়সার বিনিময়ে টাকা-পয়সার লেনদেন করলে সমান সমান করতে হবে। কমবেশি করে লেনদেন করা যাবে না।

তবে অচল নোট বা পয়সা গায়ের মূল্যের চেয়ে কমবেশি দামে ক্রয়-বিক্রয় করা জায়েয। কিন্তু এ ধরনের অহেতুক কাজে অর্থ ব্যয় করা মুমিনের জন্য সমীচীন নয়।

-হেদায়া ৩/৮১; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ২/৫; বুহুস ফী কাযায়া ফিকহিয়্যা মুআসিরা ১/১৬০

Sharable Link

মুহাম্মাদ ইসরাফীল - মুহাম্মাদপুর, ঢাকা

৩৭৯৩. Question

একজন মুসলমান হিন্দু এক ব্যক্তির কাছ থেকে কিছু টাকা ঋণ নেয়। কিছুদিন পর হিন্দু লোকটি বাড়ি চলে আসে। এখন তার সাথে যোগাযোগ না থাকায় মুসলমান লোকটি পড়েছে বিপাকে। আমার জানার বিষয় হল, ঐ মুসলিম ব্যক্তি ঋণকৃত টাকা হিন্দু লোকটার নামে সদকা বা আল্লাহর রাস্তায় কল্যাণকর কাজে খরচ করলে ঋণমুক্ত হবে কি না?


Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তির কর্তব্য হলযথাসম্ভব হিন্দু করযদাতার ঠিকানা বের করে তার হাতে পাওনা টাকা পৌঁছে দিতে চেষ্টা করা। যথাযথ চেষ্টা করেও যদি তার কোনো সন্ধান পাওয়া না যায় তাহলে নিজের দায়মুক্তির নিয়তে টাকাটা গরিব-দুঃখীকে সদকা করে দিবে। এরপর পরবর্তীতে কখনো যদি ঐ হিন্দু করযদাতার সাথে যোগাযোগ হয় এবং সে তার টাকা দাবি করে তাহলে নিজ থেকে তা পরিশোধ করে দিতে হবে। আর পরিশোধ করে দিলে পূর্বের সদকার সওয়াব মুসলমান ব্যক্তি পাবে। 

-আহসানুল ফাতাওয়া ৬/৩৮৯

Sharable Link

আবরারুজ্জামান - মহিপাল, ফেনী

৩৭৯৪. Question

আমি দোকান থেকে এক হালি ডিম কিনে বাসায় নিয়ে আসি। ডিমগুলো ভাঙ্গার পর দেখা গেল, দুটি ডিম নষ্ট, খাওয়ার উপযোগী নয়। জানার বিষয় হল, নষ্ট দুটি ডিমের টাকা দোকানির কাছ থেকে ফেরত নেওয়া জায়েয হবে কি?

উল্লেখ্য, বাসায় আনার সাথে সাথে ডিমগুলো ভাঙ্গা হয়েছে।


Answer

হাঁনষ্ট ডিমের টাকা দোকানি থেকে ফেরত নেওয়া জায়েয হবে। কেননা এই ডিমের বিক্রিই শুদ্ধ হয়নি।

-কিতাবুল আছল ২/৫০০; আলমুহীতুল বুরহানী ১০/১২১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/৮৪; আলবাহরুর রায়েক ৬/৫৪-৫৫; রদ্দুল মুহতার ৫/২৬

Sharable Link

আবু বকর - ভৈরব

৩৭৯৫. Question

 

কুরবানী কার উপর ওয়াজিব হয়? জানালে কৃতজ্ঞ হব।


 

Answer

প্রাপ্তবয়ষ্কসুস্থমস্তিষ্কসম্পন্ন প্রত্যেক মুসলমান নর-নারী মুকীম ব্যক্তিযার মালিকানায় ১০ যিলহজ্ব সুবহে সাদিক থেকে ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজন অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদ  থাকবে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব হবে। নেসাব হল : স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত (৭.৫) ভরি। আর রুপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি। আর অন্যান্য বস্তুর ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপার সমমূল্যের সম্পদ। স্বর্ণ বা রুপার কোনো একটি যদি পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না হয় তবে স্বর্ণ-রুপা উভয়টি মিলে কিংবা এর সাথে প্রয়োজন-অতিরিক্ত অন্য বস্তুর মূল্য মিলে সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপার সমমূল্যের হয়ে যায়সেক্ষেত্রেও কুরবানী ওয়াজিব হবে। স্বর্ণ-রুপার অলঙ্কার,নগদ অর্থযে জমি বাৎসরিক খোরাকীর জন্য প্রয়োজন হয় না এবং প্রয়োজন অতিরিক্ত আসবাবপত্র- এ সবই কুরবানীর নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য।

-বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬, আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৫৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪০৫

Sharable Link

আবদুল হাই - বগুড়া

৩৭৯৬. Question

কুরবানীর গরু কিনতে গেলে দেখা যায়, লোকেরা গরুর দাঁত দেখে। যদি বিশেষ দুটি দাঁত ওঠে তাহলে পছন্দ হলে কেনে, অন্যথায় ঐ গরু কেনে না। তারা মনে করে, বিশেষ দুই দাঁত না উঠলে সেই গরু দিয়ে কুরবানী করা যায় না।

এখন আমার জানার বিষয় হল, গরু কুরবানীর উপযুক্ত হওয়ার জন্য দুটি দাঁত ওঠা কি জরুরি? আর যদি নিশ্চিতভাবে জানা যায়, কোনো একটি গরুর দুই বছর হয়েছে, কিন্তু এখনও বিশেষ দুটি দাঁত ওঠেনি তাহলে তা দিয়ে কুরবানী করলে সহীহ হবে কি না?


Answer

গরু কুরবানীর উপযুক্ত হওয়ার জন্য দুই বছর পূর্ণ হওয়া জরুরি। বিশেষ দাঁত ওঠা জরুরি নয়। তবে যেহেতু বিশেষ দুটি দাঁত দুই বছর বয়স পূর্ণ হলেই উঠে থাকে তাই সাধারণত দুই দাঁত ওঠাকে দুই বছর পূর্ণ হওয়ার আলামত মনে করা হয়। এ কারণেই মানুষ কুরবানীর পশু কিনতে গেলে তা পরীক্ষা করে। এতে আপত্তির কিছু নেই। তবে যদি কোনো গরুর ব্যাপারে নিশ্চিতভাবে জানা যায় যেদুই বছর পূর্ণ হলেও এখনও বিশেষ দুটি দাঁত ওঠেনি তাহলে সেই গরু দ্বারা কুরবানী সহীহ হবে। 

-ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৪৮; ইমদাদুল ফাতাওয়া ৩/৬১১-১৩

Sharable Link

যুবায়ের - নেত্রকোণা

৩৭৯৭. Question

আমি কুরবানীর ঈদের তিন মাস আগে কুরবানীর উদ্দেশ্যে একটি গাভী ক্রয় করেছি। কুরবানীর আগে সেই গাভীটির একটি বাচ্চা হয়েছে। জানার বিষয় হল, এ বাচ্চাটির ব্যাপারে শরীয়তের হুকুম কী?


Answer

উক্ত বাচ্চাটি সদকা করে দিতে হবে। অবশ্য জবাই না করে জীবিত সদকা করে দেওয়া উত্তম। আর যদি জবাই করে দেয় তবে তার গোশত সদকা করে দেওয়া ওয়াজিব হবে।

-আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪৪৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩২২

Sharable Link

খালেদ - যাত্রাবড়ি

৩৭৯৮. Question

আমাদের মহল্লা-মসজিদের নির্মাণ কাজ চলছে। নির্মাণ কাজে অনেক অর্থ প্রয়োজন। আমার জানার বিষয় হল, চামড়ার মূল্য কি মসজিদ নির্মাণ কাজে লাগানো যাবে? শরীয়তের নির্দেশনা জানাতে অনুরোধ রইল।


Answer

কুরবানীর পশুর চামড়ার মূল্য মসজিদে দান করা জায়েয নয় এবং এ টাকা মসজিদ নির্মাণের কাজে ব্যয় করাও জায়েয নয়। কারণকুরবানীর পশুর চামড়ার মূল্য গরীব মিসকিনের হক। তা যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত ব্যক্তিদেরকে সদকা করে দেয়া জরুরি। আর মসজিদ মুসলমানদের সাধারণ দান দ্বারাই নির্মাণ করতে হবে। 

-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৫; ফাতহুল কাদীর ৮/৪৩৮; ইমদাদুল আহকাম ৪/২৫৭

Sharable Link

হাবীবুল্লাহ - ভালুকা, ময়মনসিং

৩৭৯৯. Question

 

আমাদের একটি গরু আছে। সেটির অনেক বয়স হয়েছে। যার ফলে দুতিনটি দাঁত ছাড়া এর প্রায় সবকটি দাঁতই পড়ে গেছে। তবে যে পরিমাণ দাঁত অবশিষ্ট আছে তা দ্বারা ঘাস চিবিয়ে খেতে পারে। এ বছর এ গরুটিকে কুরবানী করতে চাচ্ছি। প্রশ্ন হল, এর দ্বারা কুরবানী করা কি সহীহ হবে?


 

Answer

এ অবস্থায়ও গরুটি যদি ঘাস চিবিয়ে খেতে পারে তাহলে তার দ্বারা কুরবানী সহীহ হবে।

-শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ৭/৩৫৫; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৫; ফাতওয়া বাযযাযিয়া ৬/২৯৩

Sharable Link

যায়েদ - কিশোরগঞ্জ

৩৮০০. Question

আমাদের একটা গরু আছে। কোনো এক রোগের কারণে যার লেজের সামান্য অংশ লম্বা পশমসহ ঝরে পড়েছে। আগামী ঈদুল আযহায় গরুটি কুরবানী দিতে চাচ্ছি। শরীয়তের দৃষ্টিতে তা বৈধ হবে কি?


Answer

হাঁঐ গরু দ্বারা কুরবানী করা জায়েয হবে। কেননা কোনো গরুর লেজ যদি অর্ধেকের বেশি অবশিষ্ট থাকে তবে তা দ্বারা কুরবানী করা জায়েয।

-মুখতাছারুত তহাবী ৭/৩৫৫; হেদায়া ৮/৪৩৩; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৫৩; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৪; আলবাহরুর রায়েক ৮/১৭৮; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২৩

Sharable Link

হাবীবুর রহমান - গুলশান, ঢাকা

৩৮০১. Question

 

আমাদের এলাকায় কিছু লোক আছে, যারা সামর্থ্য না থাকার কারণে কুরবানী দিতে পারে না। তাদের মধ্যে কিছু লোক এমন আছে, যারা কুরবানীর দিন মুরগী বা হাঁস যবাই করে থাকে। আমি জানতে চাই, কুরবানীর দিন হাঁস-মুরগী ইত্যাদি যবাই করা জায়েয আছে কি?


 

Answer

কুরবানীর দিনেও কুরবানীর নিয়ত না করে কেবল খাওয়ার উদ্দেশ্যে হাঁসমুরগী ইত্যাদি যবাই করা জায়েয। এতে দোষের কিছু নেই।

তবে কুরবানীর নিয়তে কিংবা কুরবানীর সাদৃশ্য অবলম্বনের উদ্দেশ্যে হাঁসমুরগী যবাই করা যাবে না।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০০; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৩/২৯০; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৩; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাদ্দুর ৪/১৬০

Sharable Link

মাওলানা দেলাওয়ার হুসাইন - রাজফুলবাড়িয়া, সাভার, ঢাকা

৩৮০২. Question

গত ডিসেম্বর প্রচলিত ভুল বিভাগে একটি ভিত্তিহীন কথা শিরোনামে লেখা হয়েছিল সাত আসমানের কোনোটি লোহা দিয়ে তৈরি কোনোটি ... লোকমুখে শোনা যায় যে, সাত আসমানের প্রথম আসমান লোহা দিয়ে তৈরি দ্বিতীয় আসমান তামা দিয়ে তৈরি ইত্যাদি। এটি একটি অলীক কল্পনামাত্র এর কোনো ভিত্তি নেই...

অথচ কিছুদিন আগে মাজমাউয যাওয়াইদ কিতাবে এ সংক্রান্ত একটি হাদীস পেয়েছি। যাতে কোন আসমান কী দিয়ে তৈরি করা হয়েছে তার বর্ণনা আছে। তাই উক্ত হাদীসটির মান উল্লেখ করে সঠিক বিষয়টি জানানোর অনুরোধ রইল।


Answer

মাজমাউয যাওয়াইদ-এর যে বর্ণনাটির কথা আপনি উল্লেখ করেছেন তা এই-

عن الربيع بن أنس قال: السماء الدنيا لوح مكفوف، والثانية صخرة، والثالثة حديد، والرابعة نحاس، والخامسة فضة، والسادسة ذهب، والسابعة ياقوت.

রবী ইবনে আনাস রাহ. বলেনপ্রথম আসমান হল চির ও ফাটলহীন সুবিস্তৃত জমাট বস্তুদ্বিতীয় আসমান পাথরতৃতীয়টি লোহাচতুর্থটি তামাপঞ্চমটি রূপাষষ্ঠটি স্বর্ণসপ্তমটি ইয়াকূত পাথর।-আলমুজামুল আওসাতমাজমাউয যাওয়াইদহাদীস ১৩৩৬৫

এখানে প্রথম লক্ষণীয় বিষয় হলএটি রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কোনো হাদীস নয়। বরং তাবেয়ী রবী ইবনে আনাস রাহ.-এর কথা। কোনো কোনো বর্ণনায় রবী ইবনে আনাস রাহ. কথাটি কাব আলআহবারের বরাতেও বর্ণনা করেছেন। (সাআলিবী রচিত তাফসীর গ্রন্থ আলকাশফু ওয়াল বায়ান ৯/৩৫৭মাআলিমুত তানযীলবাগাবী ৪/৩৭০তাফসীরে খাযেন ৭/১২৪)

রবী ইবনে আনাস রাহ. থেকে প্রচুর ইসরাঈলী বর্ণনা পাওয়া যায়যার বিশদ বিবরণের জন্য ড. মুহাম্মাদ ইবনে আলী আলখাযীরী রচিত তাফসীরুত তাবেয়ীন দেখা যেতে পারে। আর কাব আল আহবার রাহ. ইসলাম গ্রহণের পূর্বে অনেক বড় ইহুদী প-িত ছিলেন। ইসলাম গ্রহণের পরও তিনি ইসরাঈলী বিভিন্ন কথা বর্ণনা করতেন। তাই এটি একটি ইসরাঈলী বর্ণনা। এজন্যই আবু শাহবা রাহ. ইসরাঈলিয়্যাতের বিষয়ে তার লিখিত প্রসিদ্ধ গ্রন্থ আলইসরাঈলিয়্যাত ওয়াল মাওযূআত-এ বর্ণনাটি উল্লেখ করেছেন। এবং একে ভিত্তিহীন ইসরাঈলী বর্ণনাসমূহের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। (দেখুন২৮৩ পৃষ্ঠা)

বলাবাহুল্য যেকোন আসমান কী দিয়ে তৈরি- এটা আমাদের জ্ঞানের উর্ধ্বের বিষয়। তাই সহীহ সূত্রে বর্ণিত কোনো হাদীসে এর বিবরণ পাওয়া না গেলে এ বিষয়ে কিছু বলার সুযোগ নেই। এজন্যই প্রসিদ্ধ মুফাসসির আবু হাইয়্যান আন্দুলুসী রাহ. বলেছেন-

ما ذكر من مواد هذه السموات ... يحتاج إلى نقل صحيح.

অর্থাৎ আসমানসমূহের যে উপাদানের কথা উল্লেখ করা হয় তা প্রমাণিত হওয়ার জন্য সহীহ বর্ণনা থাকা আবশ্যক। -আলবাহরুল মুহীত ১০/২২১

প্রখ্যাত মুফাসসির মাহমুদ আলূসী রাহ. রূহুল মাআনীতে উক্ত বর্ণনাটি সম্পর্কে বলেছেন-

ليس بمعتبر أصلا، ولم يرد يما تضمنه من التفصيل حديث صحيح.

অর্থাৎ এটি মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। কোনো সহীহ হাদীসে এ বিষয়ে এমন বিবরণ আসেনি।

-রূহুল মাআনী ২৮/১৪৩

Sharable Link