সাজিদুর রহমান সিয়াম - ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত

৩৪২৬. Question

মুসলিম, যারা কালিমা পড়েছে কিন্তু পরবর্তী জীবনে ঠিকমতো ইবাদত করেনি। যেমন কখনো কখনো নামায পড়েছে, আবার পড়েনি। তারা কি চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে? নাকি আযাবের পর জান্নাত লাভ করবে?

 

 

Answer

যেসব ঈমানদার ইসলামের বিধি-নিষেধ পুরোপুরি মেনে চলেনি এবং গুনাহ থেকে তওবা না করে মৃত্যুবরণ করেছে তাদেরকে আল্লাহ তাআলা আপন অনুগ্রহে ক্ষমাও করে দিতে পারেন অথবা তাদের কৃতকর্মের কারণে শাস্তিও দিতে পারেন। তবে গুনাহের কারণে তারা জাহান্নামে গেলেও চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে নাবরং এক সময় আল্লাহ তাআলা তাদেরকে ঈমানের কারণে নিজ অনুগ্রহে জান্নাত দিবেন। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা বলেন, (তরজমা) নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তার সাথে শিরক করা ক্ষমা করবেন না। তবে এছাড়া অন্যান্য গুনাহ যার জন্য ইচ্ছা ক্ষমা করবেন। আর যে কেউ আল্লাহর শরীক সাব্যস্ত করল সে মারাত্মক অপবাদ আরোপ করল।-সূরা নিসা : ৪৮

হাদীস শরীফে এসেছেহযরত উসমান রা. থেকে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনযে ব্যক্তি এ বিশ্বাসের উপর মৃত্যুবরণ করবে যেআল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোনো মাবুদ নেইসে জান্নাতে প্রবেশ করবে। -সহীহ মুসলিমহাদীস ২৬

অপর হাদীসে আছেআবু সায়ীদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিতনবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনজান্নাতবাসীরা জান্নাতে এবং জাহান্নামীরা জাহান্নামে প্রবেশ করবে। অতপর আল্লাহ তাআলা (ফেরেশতাদেরকে) বলবেনযার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণও ঈমান আছে তাকে জাহান্নাম হতে বের করে আনো। তারপর তাদেরকে এমন অবস্থায় বের করা হবে যেতারা (পুড়ে) কালো হয়ে গেছে। অতপর তাদেরকে বৃষ্টির নদীতে বা হায়াতের নদীতে নিক্ষেপ করা হবে। ফলে তারা সতেজ হয়ে উঠবে। যেমন নদীর তীরে ঘাসের বীজ গজিয়ে উঠে। তুমি কি দেখতে পাও না,সেগুলো কেমন  হলুদ বর্ণের বক্র হয়ে গজায়? -সহীহ বুখারীহাদীস ২২উমদাতুল কারী ১/১০৪;আলফিকহুল আকবার ৫৭

Sharable Link

উসমান - রাজশাহী

৩৪২৭. Question

নামাযের মধ্যে যদি আগের সূরা পরে এবং পরের সূরা আগে পড়ি অর্থাৎ সূরা কাফিরূন আগে এবং সূরা কুরাইশ পরে পড়ি তাহলে নামায হবে কি?

 

 

Answer

নামাযের মধ্যে সূরার তারতীব রক্ষা করে পড়া মুস্তাহাব। ফরয নামাযে ইচ্ছাকৃত সূরার তারতীব ভঙ্গ করা অনুত্তম। তবে কেউ করলে নামায হয়ে যাবে। আর ভুলবশত হলে নামায মাকরূহ হবে না। সাহু সিজদাও ওয়াজিব হবে না। 

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৯৭; ফাতহুল কাদীর ১/২৯৯; শরহুল মুনইয়া ৪৯৪; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৪৬

Sharable Link

মুহাম্মাদ হাবীবুল্লাহ - গোপালগঞ্জ

৩৪২৮. Question

ক) মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত করা কি জরুরি? না মনে মনে করলেই হবে?

খ) সম্মিলিত মুনাজাত করার বিধান কী?

গ) জায়নামাযের দুআ পড়া যাবে কি?

 

 

Answer

ক) কোনো কাজের ব্যাপারে অন্তরের দৃঢ় ইচ্ছাকেই নিয়ত বলে।

সুতরাং নামায-রোযা এবং অন্যান্য আমলের ক্ষেত্রে অন্তরের সংকল্পই নিয়ত হিসেবে যথেষ্ট। মুখে উচ্চারণ করে বলা জরুরি নয়। তবে অন্তরের নিয়তের সাথে সাথে মুখেও উচ্চারণ করে বলতে নিষেধ নেই। কেউ যদি ইচ্ছার দৃঢ়তার জন্য মুখেও উচ্চারণ করে নেয় তবে তা দোষণীয় হবে না। -উমদাতুল কারী ১/৩৩; শরহুল মুনইয়া ২৫৪; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪১৫

খ) দুআ অনেক বড় ইবাদত। হাদীস শরীফে এসেছে, দুআই ইবাদত। এই দুআ যেমন একা করা যায় তেমনি সম্মিলিতভাবেও করা যায়। সম্মিলিত দুআ সংক্রান্ত এক দুটি দলিল নিম্নে সংক্ষেপে উল্লেখ করা হল-

১.   কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে, (তরজমা) তোমাদের দুজনের দুআ কবুল করা হয়েছে। -সূরা ইউনুস : ৮৯

এ আয়াতে তোমাদের দুইজনের দুআ বলতে মুসা আ. ও হারূন আ.-এর দুআ বুঝানো হয়েছে। একাধিক সাহাবী ও তাবেয়ী ইমামের সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, হযরত মুসা আ. দুআ করেছেন এবং হারূন আ. আমীন বলেছেন। একেই আল্লাহ তাআলা দুজনের দুআ বলেছেন। -তাফসীরে ইবনে কাসীর ২/৬৬৫; আদ্দুররুল মানসূর ৩/৩৪১

তো এটা তাদের দুজনের সম্মিলিত দুআ ছিল, যা আল্লাহ তাআলা কবুল করেছেন এবং খোশখবরি শুনিয়েছেন যে, তোমাদের দুজনের দুআ কবুল করা হয়েছে।

২.   একটি দীর্ঘ হাদীসে সাহাবীয়ে রাসূল হযরত হাবীব ইবনে মাসলামা আল ফিহরী রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, কিছু মানুষ যখন কোথাও একত্র হয়ে এভাবে দুআ করে যে, একজন দুআ করে এবং অন্যরা আমীন বলে সেক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলা অবশ্যই তাদের দুআ কবুল করেন। -মুজামে কাবীর তবারানী ৪/২৬; মুসতাদরাকে হাকেম ৩/৩৪৯

সম্মিলিত দুআ বিষয়ে আরো জানতে মাসিক আলকাউসার, শাবান-রমযান ১৪২৯; আগস্ট ২০০৮ সংখ্যায় হযরত মাওলানা আবদুল মালেক ছাহেব লিখিত সম্মিলিত দুআ : একটি প্রশ্নের উত্তর’’ প্রবন্ধটি পাঠ করুন।

গ) জায়নামাযের কোনো দুআ নেই। কোনো কোনো মহলে ইন্নি ওয়াজ্জাহতু দুআটি জায়নামাযের দুআ নামে পরিচিত। কিন্তু এটি ঠিক নয়। এটি জায়নামাযের দুআ নয়; বরং হাদীস শরীফে নামায শুরু করার পর ছানা হিসেবে এ দুআ পড়ার কথা আছে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৭৭১; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৭৬০; রদ্দুল মুহতার  ১/৪৮৮; ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/১৫১

Sharable Link

মৌলবী আবদুল্লাহ - ইনানী

৩৪২৯. Question

কিছুদিন আগে আমার বড় ভাই ইন্তেকাল করেছেন। মেঝ ভাই ঢাকা থাকেন। তার দিকে লক্ষ্য করেই জানাযার সময় ঠিক করা হয়, কিন্তু তিনি নির্ধারিত সময়ে পৌঁছতে পারেননি। তার জন্য অপেক্ষা করতে চাইলে লোকজন বিরক্তিবোধ করে। তাই আমি জানাযা পড়িয়ে দিই।

মেঝ ভাইও আলেম। তার সাথে জানাযা পড়ার জন্য অনেকেই প্রথম জানাযায় শরীক হয়নি। জানাযা শেষ হওয়ার পাঁচ-সাত মিনিট পর মেঝ ভাই পৌঁছে যান। তখন যারা প্রথম জানাযায় শরীক হয়নি তারা মেঝ ভাইকে দ্বিতীয়বার জানাযা পড়ানোর জন্য খুবই জোর করে। কিন্তু মেঝ ভাই তা করেননি। ফলে লোকজন তার সাথে খুবই রাগ করেন এবং এ বিষয়কে কেন্দ্র করে এলাকার মধ্যে হৈচৈ শুরু হয়ে যায়।

এখন জানার বিষয় হল, আমার জন্য কি মেঝ ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে মৃত বড় ভাইয়ের জানাযা পড়ানো ঠিক বা জায়েয হয়েছে? আর মেঝ ভাইয়ের জন্য দ্বিতীয়বার জানাযা পড়ার অধিকার ছিল কি না? তিনিও তো বড় ভাইয়ের ওলি এবং আমার চেয়ে যোগ্যও বেশি।

 

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ে আপনার মেঝ ভাই যেহেতু উপস্থিত হতে পারেনি তাই আপনার জন্য জানাযা পড়ানো ঠিক হয়েছে এবং জায়েযও হয়েছে। আর এক্ষেত্রে মেঝ ভাইয়ের দ্বিতীয়বার জানাযা না পড়াও শরীয়তসম্মত হয়েছে। কেননা মৃতের এক ভাইয়ের উপস্থিতিতে জানাযা পড়া হয়ে গেলে অন্য ভাইয়ের জন্য দ্বিতীয়বার জানাযা পড়ার অধিকার থাকে না। 

-আদ্দুররুল মুখতার ২/২২০, ২/২২৩; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাদ্দুর ১/৩৭৬; আলবাহরুর রায়েক ২/১৮০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৬২-৬৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৪

Sharable Link

আমাতুল্লাহ - খুলনা

৩৪৩০. Question

আমি একজন গৃহিণী। আমার প্রায় বারো ভরি স্বর্ণ আছে। যা আমার বিবাহের মোহরানা ও পিতামাতার কাছ থেকে উপহার স্বরূপ পাওয়া। আর আমার স্বামীর আয় খুবই সীমিত। যা দিয়ে সংসারের খরচাদি ও অন্যান্য প্রয়োজন পূর্ণ করার পরে আয়ের টাকা থেকে কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। আর আমাকে হাত খরচ হিসেবে যা দেওয়া হয় তাও প্রয়োজনের অতিরিক্ত নয়। এদিকে আমার স্বামীর উপর বর্তমানে অনেক ঋণ আছে। ইত্যাদি কারণে আমি আমার উল্লেখিত স্বর্ণের যাকাত আদায় করতে অক্ষম।

উল্লেখ্য, এই বারো ভরি স্বর্ণ যার বিবরণ উপরে উল্লেখিত হল তা আমি আমার সন্তানদের মালিক বানিয়ে দেওয়ার নিয়ত করেছি। সন্তানরা এখনো নাবালেগ রয়েছে। তাই প্রশ্ন হল, ৭.৫ ভরি স্বর্ণ আমি নিজের জন্য রেখে বাকি স্বর্ণগুলোকে এই নাবালেগ সন্তানদের মালিক বানিয়ে দিলে যাকাতের হিসাবটা আমি কীভাবে করব? বিস্তারিতভাবে জানালে উপকৃত হব।

 

Answer

যাকাত ইসলামের অন্যতম রোকন। পাঁচ স্তম্ভের একটি। এবং যাকাত সম্পদের হক। কারো কাছে নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকার পরও যাকাত আদায় না করা বা আদায় না করার জন্য হীলা-বাহানা খোঁজ করা অথবা আদায় করতে গড়িমসি করা সবটাই অত্যন্ত গর্হিত কাজ। আপনি যাকাত আদায়ে অসামর্থ্যরে কথা লিখেছেন। কিন্তু শরীয়ত তো সম্পদের অংশ বিশেষ দ্বারাই যাকাত দিতে বলেছে। যেমন আপনার কাছে স্বর্ণ আছেআপনি তার ২.৫০% যাকাত হিসেবে আদায় করবেন। অন্য কোনো সম্পদ বা টাকা তো আদায় করতে হবে না। হাঁআপনি চাইলে সোনার বদলে সমমূল্যের টাকাও দিতে পারেন।

তাই নিজের কাছে ১২ ভরি সোনা থাকার পরও অসামর্থ্যরে প্রশ্ন আসে না।

উল্লেখ্য যেনাবালেগ সন্তানদের কিছু স্বর্ণ দিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন বাস্তবেই যদি তাদেরকে ঐ পরিমাণ একেবারেই দিয়ে দেন এবং এরপর আপনার কাছে যদি ৭.৫ তোলা স্বর্ণ থাকে তবে তখনও আপনার উপর যাকাত ফরয হবে। তবে যদি ৭.৫ তোলার কম স্বর্ণ থাকে এবং অন্য কোনো যাকাতযোগ্য সম্পদ না থাকে (যার দ্বারা আপনার যাকাতের নেসাব পূর্ণ হতে পারে) তাহলে সেক্ষেত্রে আপনি নেসাবের মালিক না থাকার কারণে আপনার উপর যাকাত ফরয হবে না।

কিন্তু যাকাত থেকে বাঁচার জন্য বাহানা হিসেবে এমনটি করা যাবে না। সন্তানদেরকে বাস্তবেই মালিক বানিয়ে দিলে তারা মালিক হয়ে যাবে। তখন আর তাতে আপনার কোনো অধিকার থাকবে না। কিন্তু শুধু যাকাতের ভয়ে নামেমাত্র মালিকানা দিলে যাকাত মাফ হবে না।

-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৫৬৭; কিতাবুল আছল ২/৯১; শরহুল মাজাল্লাহ, মাদ্দাহ : ৮৫১

Sharable Link

আহসান হাবীব - কাশিয়ানী, গোপালগঞ্জ

৩৪৩১. Question

ক) আমার হজ্ব করার সামর্থ্য নেই, কিন্তু ওমরাহ করার সামর্থ্য আছে। এখন আমার জন্য কি ওমরাহ করা আবশ্যক?

খ) হজ্বের মতো ওমরার জন্য কি নির্দিষ্ট সময় আছে?

গ) শুনেছি, কাবা শরীফ দেখলে নাকি হজ্ব ফরয হয়ে যায়- এ কথা কি ঠিক? তাহলে আমি ওমরাহ করলে কি আমার উপর হজ্ব ফরয হয়ে যাবে?

উপরোক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে শরঈ সমাধান জানালে কৃতজ্ঞ হব।

 

Answer

ওমরারর সামর্থ্য থাকলে জীবনে একবার ওমরাহ করা সুন্নতে মুআক্কাদাহ। অতএব এ অবস্থায় আপনার জন্য ওমরাহ করা সুন্নত। আর ওমরার জন্য কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই। শুধু যিলহজ্ব মাসের ৯-১৩ তারিখ পর্যন্ত পাঁচ দিন ওমরাহ করা মাকরূহ। এছাড়া বছরের যে কোনো সময় ওমরাহ করা জায়েয আছে। আর রমযান মাসে ওমরাহ করা সবচেয়ে উত্তম। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনরমযানে একটি ওমরাহ করা আমার সাথে একটি হজ্ব করার সমতুল্য। -সহীহ বুখারীহাদীস ১৮৬৩

আর কাবা শরীফ দেখলেই হজ্ব ফরয হয়ে যায়এ ধারণা ঠিক নয়। হজ্ব ফরয হওয়ার সাথে কাবা শরীফ দেখা-না দেখার কোনো সম্পর্ক নেই। বরং হজ্ব ফরয হওয়ার জন্য শারীরিক সক্ষমতার পাশাপাশি হজ্বের মৌসুমে হজ্বে আসা-যাওয়ার খরচসহ তার অনুপস্থিতির দিনগুলোতে পরিবারের চলার মতো স্বাভাবিক খরচের ব্যবস্থা থাকতে হবে। তাছাড়া বাইরে থেকে ওমরার ভিসায় গিয়ে হজ্ব করা নিষেধ। তাই ওমরাহ করতে গিয়ে হজ্ব পর্যন্ত থেকে যাওয়ারও সুযোগ নেই।

-গুনইয়াতুন নাসিক ২২, ১৯৬; মানাসিক, মোল্লা আলী কারী ৪৬৩; আততাজরীদ ৪/১৬৮৮

Sharable Link

জারহাদ হাসান আহমাদ - আমতলা, ঢাকা

৩৪৩২. Question

আলহামদু লিল্লাহ, আল্লাহ তাআলা গত বছর হজ্বে নিয়েছিলেন। যাওয়ার সময় বাসার পাশের মসজিদ থেকে ইহরাম বাধি। ইহরাম বেধে যখন এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা হব তখন পাশের এক আত্মীয়ের বাসার সামনে নিম

গাছ থেকে মেসওয়াকের জন্য একটি ডাল ভাংতে যাই তখন কাফেলার এক সাথী বললেন, ইহরাম বাঁধার পর সব ধরনের গাছের ডাল ভাঙ্গা, প্রাণী শিকার করা নিষিদ্ধ।

জানার বিষয় হল, ঐ সাথীর কথা কি ঠিক? নিজ দেশ থেকে ইহরাম বাঁধলে তখন থেকেই কি প্রাণী শিকার করা ও যে কোনো ধরনের গাছের ডাল ভাঙ্গা নিষিদ্ধ হয়ে যায়?

 

Answer

আপনার সাথীর ঐ কথা ঠিক নয়। ইহরামের কারণে হারামের সীমানার বাইরে কোনো গাছ কাটা বা ডাল ভাঙ্গা নিষিদ্ধ নয়। তবে হেরেমের এলাকার গাছ কাটা বা ডাল ভাঙ্গা ইহরাম থাক বা না থাক সর্বাবস্থায় নিষিদ্ধ। আর একথা ঠিক যেইহরাম বাঁধার পর যে কোনো স্থানের প্রাণী শিকার করা নিষিদ্ধ। আল্লাহ তাআলা বলেন, (তরজমা) হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইহরাম অবস্থায় শিকারের প্রাণী হত্যা করো না।

-সূরা মায়েদা : ৯৫; গুনইয়াতুন নাসিক ২৮১, ৩০৪; মানাসিক, মোল্লা আলী কারী ৩৮৪

Sharable Link

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক - ঢাকা

৩৪৩৩. Question

একজন নিঃসন্তান বিধবা নারীর উপর হজ্ব ফরয হয়েছে। তার আপন ভাই আছে, কিন্তু তাদের উপর হজ্ব ফরয নয়। তবে বিধবার ছোট বোন ও তার স্বামী হজ্বের সফরে যাচ্ছে। উক্ত বিধবা তাদের সাথে হজ্বের জন্য নিয়ত করেছে।

এখন প্রশ্ন হল, ছোট বোন ও তার স্বামীর সাথে বিধবার হজ্বের জন্য যাওয়ার বিষয়ে শরীয়তের বিধান কী? 

Answer

হজ্বের সফরেও মহিলাদের জন্য মাহরাম থাকা আবশ্যক। সহীহ মুসলিমে হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত আছেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনআল্লাহ এবং পরকালে বিশ্বাসী কোনো নারীর জন্য তার পিতাছেলেস্বামী বা ভাই অথবা অন্য কোনো মাহরাম ছাড়া তিনদিন (৪৮ মাইল বা ৭৮ কিলোমিটার) বা তার চেয়ে বেশি দূরত্বের কোথাও সফর করা বৈধ নয়।-সহীহ মুসলিমহাদীস ১৩৪০

হযরত ইবনে আব্বাস রা. বলেনআমি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে খুতবায় বলতে শুনেছি, .. কোনো মহিলা যেন মাহরাম ছাড়া কোথাও সফর না করে। তখন এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেনহে আল্লাহর রাসূল! আমার স্ত্রী তো (মাহরাম ছাড়াই) হজ্বের উদ্দেশ্যে রওনা করেছে। আর আমি তো অমুক যুদ্ধে যাব বলে নাম লিখিয়েছি। আল্লাহর রাসূল বললেনযাওতুমিও তোমার স্ত্রীর সাথে গিয়ে হজ্ব কর। -সহীহ মুসলিমহাদীস ১৩৪১

সুতরাং প্রশ্নোক্ত মহিলার জন্য তার বোন ও তার স্বামীর সাথে হজ্বে যাওয়া জায়েয হবে না। মাহরামের ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত তাকে অপেক্ষা করতে হবে। আর শারীরিক সক্ষমতা থাকা পর্যন্ত যদি মাহরামের ব্যবস্থা না হয় তাহলে শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে গেলে কাউকে দিয়ে বদলি হজ্ব করাতে হবে বা বদলি হজ্বের অসিয়ত করে যেতে হবে।

উল্লেখ্য যেশরীয়তের বিধান অনুযায়ী যেমন মহিলাদের জন্য হজ্বের সফরে স্বামী বা মাহরাম থাকা জরুরি তেমনি বাস্তবতার আলোকেও হজ্বের কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে আঞ্জাম দেওয়ার জন্য পুরো সফরে মহিলার জন্য মাহরামের প্রয়োজন। তাছাড়া সৌদি সরকারের আইন অনুযায়ী মহিলার সাথে মাহরাম থাকা বাধ্যতামূলক। মাহরাম সাথে না থাকলে হজ্ব এজেন্সিগুলো ভুয়া মাহরাম বানিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে থাকে। হজ্বের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত আদায় করতে গিয়ে এমন গর্হিত কাজে লিপ্ত হওয়া কোনো বুদ্ধিমানের কাজ নয়।

-রদ্দুল মুহতার ২/৪৫৮; মানাসিক, মোল্লা আলী কারী ৫৫

Sharable Link

রশিদ কাউসার - নিলক্ষেত, ঢাকা

৩৪৩৪ . Question

জনৈক মহিলা সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার কিছুদিন পর ইন্তেকাল করেন। তার ইন্তেকালের পর শিশুটির ছোট খালা তাকে লালন-পালন করেন এবং তাকে তার দুধও পান করান। কয়েক বছর পর শিশুটির খালু ইন্তেকাল করেন। বর্তমানে ছেলেটির পিতা তার দুধ মা (খালা)-কে বিবাহ করতে চাচ্ছে। উভয় পরিবারের পক্ষ থেকেও সম্মতি রয়েছে।

প্রশ্ন হল, তাদের এ বিবাহ কি শরীয়তসম্মত হবে?

 

Answer

হাঁপ্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে পিতার জন্য সন্তানের দুধ মাতা-খালাকে বিবাহ করা জায়েয হবে। কেননা কোনো মহিলা সন্তানের দুধ মা হলেই তার সাথে পিতার বিবাহ নাজায়েয হয়ে যায় না। তবে তাদের এ বিবাহ উক্ত মহিলার স্বামীর মৃত্যুর ইদ্দত শেষ হওয়ার পর হতে হবে। 

-বাদায়েউস সানায়ে ৩/৪০০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৪/৩৬৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৪১৭

Sharable Link

মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান - নবীনগর, বি.বাড়িয়া

৩৪৩৫. Question

ইনশাআল্লাহ বলে তালাক দিলে কি তালাক হবে?  না হলে এর কারণ কী? দলিলপ্রমাণসহ জানানোর অনুরোধ রইল।

 

 

Answer

তালাকের সাথে ইনশাআল্লাহ বললে তালাককে আল্লাহ তাআলার ইচ্ছার সাথে শর্তযুক্ত করা হয়। তাই ইনশাআল্লাহ বলে তালাক দেওয়ার অর্থ হল আল্লাহ যদি চান তাহলে স্ত্রী তালাক। এই শর্তটি পাওয়া যাওয়ার বিষয়ে যেহেতু নিশ্চিত হওয়া যায় না তাই ইনশাআল্লাহ বলে তালাক দিলে তালাক কার্যকর হয় না।

ইমাম মুহাম্মাদ রাহ. তার কিতাবুল আছারে ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. থেকে বর্ণনা করেন যেকোনো ব্যক্তি যদি তার স্ত্রীকে বলে ইনশাআল্লাহ তুমি তিন তালাক। তার এ কথার দ্বারা স্ত্রীর উপর কোনো তালাক পতিত হবে না। -কিতাবুল আছার ৫১১

ইমাম আবদুর রাযযাক রাহ. তার মুসান্নাফে অনুরূপ বর্ণনা উল্লেখ করে বলেনআবু হানীফা এমনই বলতেনমানুষরাও এ মতের উপর প্রতিষ্ঠিত। আমার মতও এটিই।

-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস : ১১৩২৭; শরহু মুখতাসারিত তহাবী ৫/৮৬; ফাতহুল কাদীর ৩/৪৬০

Sharable Link

খুরশেদ আলম - বরিশাল

৩৪৩৬. Question

জনৈক ব্যক্তি পড়ালেখা করে। উচ্চতর শিক্ষা অর্জনের উদ্দেশে দেশের একটি বড় প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার জন্য আবেদন করে। ঐ প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার জন্য অবিবাহিত হওয়া শর্ত। কিন্তু সে বিবাহিত ছিল। তাই বিবাহিত হওয়া সত্তে¡ও ভর্তি হওয়ার জন্য সে তার জীবন বৃত্তান্তে অবিবাহিত লিখে এবং পরবর্তীতে মৌখিকভাবেও একথা স্বীকার করে যে, সে অবিবাহিত, তার কোনো স্ত্রী নেই। বর্তমানে সে ঐ প্রতিষ্ঠানের একজন ছাত্র।

জানার বিষয় হল, এভাবে বলা ও লিখার কারণে তার স্ত্রীর উপর কি কোনো তালাক পতিত হয়েছে?

 

Answer

বিবাহিত হওয়া সত্তে¡ও মিথ্যা বলে নিজেকে অবিবাহিত পরিচয় দেওয়া এবং স্ত্রী নেই বলা মারাত্মক অন্যায় ও কবীরা গুনাহ হয়েছে। এজন্য আল্লাহ তাআলার নিকট কায়মনোবাক্যে ইস্তিগফার করতে হবে। অবশ্য এভাবে মিথ্যা বলা ও লেখার কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটেনি এবং স্ত্রীর উপর কোনো তালাকও পতিত হয়নি। তাদের বিবাহ যথারীতি বহাল রয়েছে।

উল্লেখ্য যেনিজে অবিবাহিত প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানের শর্ত ভঙ্গ করে সেখানে ভর্তি হওয়া মারাত্মক অন্যায় হয়েছে। এটি ধোঁকা ও প্রতারণার শামিল। যা কোনো মুসলমানের কাজ নয়।

-বাদায়েউস সানায়ে ৩/১৭১; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৩/৮৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৪/৩৩; আদ্দুররুল মুখতার ৩/২৮৩

Sharable Link

মুহাম্মাদ ইনামুল হক - সালটিয়া, ময়মনসিংহ

৩৪৩৭. Question

 আমার এক বন্ধু একটি মেয়ের সাথে এভাবে বিয়ে করেছিল যে, মোবাইলে ছেলে মেয়েকে বলেছিল, আমি তোমাকে এত টাকা মহর ধার্য করে বিবাহ করলাম। রাজি থাকলে বল কবুল। তখন মেয়ে ফোনেই কবুল বলেছিল। পরে ছেলেও কবুল বলেছিল। বিবাহের সময় ছেলের সাথে আরো ২ জন পুরুষ ছিল। উভয়ে লাউডস্পিকারের মাধ্যমে মেয়ের কবুল শুনতে পেরেছিল। আর ছেলেরটা সরাসরিই শুনেছে। এখন জানতে ইচ্ছুক, এর দ্বারা কি ইসলামের দৃষ্টিতে ছেলেমেয়ের বিবাহ সহীহ হয়েছে? এখন তারা একত্রে ঘর-সংসার করতে চাচ্ছে। তারা চুপিসারে বিয়ে করেছে।

 

Answer

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী মোবাইল ফোনে সংঘটিত উক্ত বিবাহ সহীহ হয়নি। কেননা বিবাহ সহীহ হওয়ার জন্য যে স্থানে বিবাহের ইজাব-কবুল হবে সেখানে দুজন সাক্ষীর উপস্থিত থাকা এবং উপস্থিত পাত্র-পাত্রী বা তাদের প্রতিনিধি থেকে সরাসরি ইজাব-কবুল শ্রবণ করা আবশ্যক। পাত্র পাত্রী বা তাদের প্রতিনিধি দুই স্থান থেকে ফোনে লাউড স্পিকারের মাধ্যমে ইজাব-কবুল করলে এবং সাক্ষীগণ তা শ্রবণ করলে এর দ্বারা বিবাহ সংঘটিত হয় না। পাত্র-পাত্রী ভিন্ন স্থানে অবস্থান করলে তাদের মধ্যে বিবাহ কীভাবে করতে হবে সে নিয়ম নির্ভরযোগ্য আলেম থেকে জেনে নেওয়া জরুরি।

জেনে রাখা দরকার যেবিবাহ-শাদি অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পিতা-মাতা এবং মুরব্বিজনদের পরামর্শ ও সম্মতিক্রমেই তা হওয়া বাঞ্ছনীয়। অভিভাবকদের অসম্মতিতে কিংবা তাদেরকে না জানিয়ে নিজে নিজে এ পদক্ষেপ নেওয়া কিছুতেই ঠিক নয়। হাদীস শরীফে অভিভাবকের সম্মতির প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এছাড়া একাধিক হাদীসে বিবাহের প্রচার করা ও তা প্রকাশ্যে করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ চুপিসারে করা কিছুতেই ঠিক নয়।

-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৯৫১৮, ২৫৩২৬, ১৬১২৩০; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস : ১০৪৯০, ১০৪৯৪; বাদায়েউস সানায়ে ২/৫২৭, ২/৪৯০; ফিকহুন নাওয়াযিল ৩/৩৪৩-৩৪৪; আদ্দুররুল মুখতার ৩/২১-২২;

Sharable Link

সাকী নূর - মনোহরগঞ্জ, কুমিল্লা

৩৪৩৮. Question

বিগত ৫০ বছর আগে দুই বাড়ি ও দুই পুকুরের মধ্যখানে ছোট একটি পাঞ্জেগানা মসজিদ প্রতিষ্ঠা করা হয়। তখন যারা প্রতিষ্ঠা করেন মসজিদের জায়গাসহ তার পাশের আরো অনেক জায়গা তাদের মালিকানায় ও দখলে ছিল। পরবর্তীতে এই পুরো জায়গার মালিকানা নিয়ে পাশের বাড়ির লোকজনের সাথে বিরোধ সৃষ্টি হলে আদালতে মামলা গড়ায়। দীর্ঘদিন মামলা চলার পর মসজিদের জায়গাসহ পাশের জায়গার মালিকানা আদালতের রায় অনুসারে পরবর্তী দাবিদারদের সাব্যস্ত হয়। তবে পরিবর্তিত মালিকরাও মসজিদকে মসজিদ হিসেবে মেনে নিয়েছেন এবং সবার জন্যই মসজিদ উন্মুক্ত রেখেছেন, শুধু তারা তত্ত¡াবধান করেন, এ ছাড়া সবকিছুই আগের মতোই আছে। এই মসজিদের খরচের জন্য মসজিদের পাশের বাড়ির একজন এক খÐ জমি মৌখিকভাবে ওয়াকফ করে যান প্রায় ২৫ বছর আগে এবং দীর্ঘ ২০-২২ বছর যাবৎ মসজিদ এই জমির আয়ও ভোগ করে। উল্লেখ্য দাতা জমি দানের কিছুদিন পর মারা যান এবং দাতার কোনো ছেলে সন্তান নেই। মেয়েদের অন্যত্র বিয়ে হয়ে গিয়েছে। দাতার ওয়ারিশদের মধ্যে অনেক ভ্রাতুষ্পুত্র রয়েছেন তাদের থেকে দুই একজন নিজেদের উদ্যোগে মসজিদের জন্য দানকৃত জমিতে নিজেদের বাড়ির সামনে পূর্বের মসজিদের অনতিদূরে আরেকটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে। 

এখন জানার বিষয় হল,

১। পূর্বের মসজিদের জন্য ওয়াকফকৃত জায়গায় নতুন মসজিদ নির্মাণ করা বৈধ হবে কি না?

২। রেজিস্ট্রি ব্যতীত শুধু মৌখিক ওয়াকফ পূর্ণাঙ্গ ওয়াকফ হিসেবে গণ্য হবে কি?

বিস্তারিত দলিল-প্রমাণসহ জানালে খুব উপকৃত হব।

 

Answer

কোনো জমি মৌখিকভাবে ওয়াকফ করলেও শরীয়তের দৃষ্টিতে তার ওয়াকফ সহীহ ও সম্পন্ন হয়ে যায়। সুতরাং প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী যেহেতু উক্ত জমিটি পুরাতন মসজিদের খরচ নির্বাহের জন্যই মৌখিকভাবে ওয়াকফ করা হয়েছে তাই এ জমি ওয়াকফকারীর মালিকানা থেকে বের হয়ে গেছে এবং এতে সম্পূর্ণরূপে মসজিদের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। তাই জমিটি যে জন্য ওয়াকফ করা হয়েছে সে কাজেই তা লাগানো জরুরি। অতএব ওয়াকফকারীর ওয়ারিশদের জন্য তাতে নতুন মসজিদ প্রতিষ্ঠা করা জায়েয হবে না।

-দুরারুল হুককাম ২/১৩৬; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৩৬০-৩৬১; শরহুল মুনইয়া ৬১৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৬/৫১৪

Sharable Link

মুহাম্মাদ মুসলিম - আন্দর কিল্লা, চট্টগ্রাম

৩৪৩৯. Question

আমাদের প্রিন্টিং প্রেসে ক্রেতাদের সাথে এভাবে লেনদেন হয়ে থাকে যে, যখন তারা কোনো বই-পুস্তক, ড য়েরী, পোস্টার ইত্যাদি ছাপাতে চায় তখন তাদেরকে ভালো কোয়ালিটির কাগজও বাইন্ডিং হিসাবে দাম বলা হয়। যদি তারা ঐ দামের সাথে সন্তুষ্ট না হয় বরং এর চেয়ে অনেক কম দামে দিতে চায় তখন আমরা কম দামে পণ্য বানিয়ে দেই। কিন্তু দাম হিসাবে পণ্যের মান কমিয়ে দেই। অনেক সময় নমুনা দেখিয়ে দরদাম ঠিক করা হয়। যদি তারা ঐ নমুনার ন্যায্য দামের সাথে সন্তুষ্ট না হয় এবং তারা যে দাম বলে ঐ দামে ঐ কোয়ালিটির পণ্য বানিয়ে দেওয়া যদি সম্ভব না হয় তখন আমরা তাদেরকে ঐ দামে ঐ কোয়ালিটির পণ্য বানিয়ে দিতে সম্মত হই। কিন্তু পরে সূ²ভাবে কাগজ ও বাইন্ডিং এর মান কমিয়ে দেই, যা ক্রেতারা বুঝতে পারে না। তবে দাম হিসেবে পণ্যের মান কম হয় না।

উল্লেখ্য যে, এভাবেই প্রিন্টিং প্রেসগুলোতে লেনদেন হয়ে থাকে তাই আমরাও এভাবে করতে বাধ্য হই। অন্যথায় ক্রেতা ধরে রাখা এবং ব্যবসার মান ঠিক রাখা সম্ভব হবে না। প্রায় সময় লস দিতে হবে। জানার বিষয় হল, আমাদের এভাবে কারবার করা সহীহ হচ্ছে কি না?

 

Answer

ক্রেতার সাথে যে মানের কাগজছাপা এবং বাঁধাইয়ের চুক্তি হবে প্রেস কর্তৃপক্ষের জন্য ঐ মানেরই বইডায়েরী ইত্যাদি দেওয়া জরুরি। তদ্রূপ কোনো নির্দিষ্ট নমুনার উপর চুক্তি হলে তার চেয়ে নিম্ন মানের পণ্য দেওয়া জায়েয হবে না।

ক্রেতা মূল্য কম দিতে চাইলে তাকে সুস্পষ্ট জানিয়ে দিতে হবে যেএই মূল্য দিয়ে উক্ত মানের কাগজ বা বই দেওয়া যাবে না।

মোটকথাক্রেতাকে চুক্তি অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ করতে হবে। চুক্তি অনুযায়ী পণ্য না দেওয়া এবং ক্রেতাকে বাস্তব কথা না বলে ভালো দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিম্ন মানের দেওয়া ধোঁকা ও মিথ্যার শামিল। খরিদ্দার ধরে রাখার স্বার্থেও এমন মিথ্যা বলা জায়েয নেই। এতে ব্যবসার বরকত নষ্ট হয়ে যায়।

অতএব সততা ও স্বচ্ছতা বজায় রেখেই ব্যবসা করতে হবে এবং নিজেদের স্বচ্ছতার কথা সুন্দরভাবে উপস্থাপনার মাধ্যমে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। সততা ও স্বচ্ছতার মধ্যেই আল্লাহ তাআলা বরকত রেখেছেন। সত্য ও আমানতদার ব্যবসায়ীদের জন্য হাদীসে সুসংবাদ এসেছে। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, (তরজমা) ... যদি ক্রেতা এবং বিক্রেতা সত্য বলে এবং সবকিছু স্পষ্ট করে (লেনদেন করে) তাহলে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত হবে। আর যদি গোপন রেখে (লেনদেন করে) এবং মিথ্যা বলে তাহলে এতে তাদের ব্যবসায় বরকত থাকবে না। -সহীহ বুখারীহাদীস ২১১৪

আরেক হাদীসে এসেছেহযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিতরাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনসত্য ও আমানতদার মুসলিম ব্যবসায়ী কেয়ামতের দিন শহীদদের সাথে থাকবে। 

-সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ২১৩৯; সুনানে কুবরা, বায়হাকী ৫/২৬৬; আলমওসূআতুল ফিকহিয়্যাহ কুয়াইতিয়্যাহ ১৯/৩২;

Sharable Link

শওকত ইরফান - চকবাজার, ঢাকা

৩৪৪০. Question

 আমাদের পড়শী এক বড় ভাই বিদেশ থাকেন। তিনি বলেছেন, আমি যদি কোনো ব্যবসা করতে চাই তাহলে তিনি টাকা দিতে প্রস্তুত আছেন। সে মতে আমি তাকে জানালাম, আমি বইয়ের ব্যবসা করতে চাই। তিনি টাকা দিবেন আর আমি শ্রম দিব। কথা হল যে, মুদারাবার ভিত্তিতেই আমাদের ব্যবসা হবে। তাকে লাভের ৩০% দিব।

অতপর আমি বইয়ের ব্যবসার জন্য একটি দোকান ভাড়া নেই এবং আমার সাথে দুজন কর্মচারী নিয়োগ করি। এখন আমার প্রশ্ন হল,

ক) ব্যবসার জন্য দোকান ভাড়া, দুইজন কর্মচারীর বেতন কি ব্যবসার খরচ হিসেবে ধরা যাবে? এবং মুদারাবার মাল থেকে নেওয়া যাবে কি?

খ) ব্যবসার পরিচিতির জন্য কোনো বিজ্ঞাপণ দিতে চাইলে সেটার খরচ কি মুদারাবার মাল থেকে নিতে পারব?

 

Answer

ব্যবসার জন্য দোকান ভাড়াকর্মচারীর বেতন এবং ব্যবসার প্রচারের উদ্দেশ্যে প্রচলন অনুযায়ী বিজ্ঞাপনের ব্যয় ব্যবসার খরচের অন্তর্ভুক্ত হবে। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি মুদারাবার মাল থেকে এগুলো খরচ করতে পারবেন। তবে এ ব্যাপারে বিনিয়োগকারীর সাথে আলোচনা করে নেওয়া উচিত। 

-আলইখতিয়ার ২/৪৬৮; আলবাহরুর রায়েক ৭/২৬৪; রদ্দুল মুহতার ৫/৬৪৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৫/৪৪৮

Sharable Link

মুহাম্মাদ খালিদ - গোপালগঞ্জ

৩৪৪১ . Question

আমি একজন ছাত্র। আমাদের প্রতিষ্ঠানে ছাত্রদের মাঝে সাপ্তাহিক বক্তৃতা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ সকল অনুষ্ঠানে যারা বিজয়ী হয় তাদেরকে পুরস্কারও দেওয়া হয়। এজন্য বছরের শুরুতেই সকল সদস্য থেকে চাঁদা নেওয়া হয়।

আমার প্রশ্ন হল, বিজয়ীদেরকে পুরস্কার দেওয়ার জন্য সকল সদস্য থেকে এভাবে টাকা নেওয়া কি জায়েয হবে?

 

Answer

প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের থেকে টাকা নিয়ে বিজয়ীদেরকে পুরস্কার দেওয়া জায়েয নয়। এটা এক প্রকারের কিমার তথা জুয়ার অন্তর্ভুক্ত।

সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বক্তৃতা অনুষ্ঠানের বিজয়ীদেরকে পুরস্কার দেওয়ার জন্য অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী সদস্যদের থেকে চাঁদা উঠানো জায়েয হবে নাবরং এক্ষেত্রে পুরস্কারের জন্য ভিন্ন ফান্ডের ব্যবস্থা করতে হবে। তবে প্রতিযোগীদের কেউ যদি স্বেচ্ছায় স্বতঃস্ফর্তভাবে ঐ ফান্ডে অনুদান দিতে আগ্রহী হয় তবে তার থেকে নেওয়া যাবে। আর অনুষ্ঠানটি যেহেতু সকলের জন্য প্রশিক্ষণমূলক তাই এর ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত অন্যান্য খরচাদি সংশিশ্লষ্ট সকলের থেকে নেওয়া জায়েয হবে। 

-ফিকহুন নাওয়াযিল ৩/২১৭; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৪০২; বুহুছ ফী কাযায়া ফিকহিয়্যাহ মুআছিরা ২/১৫৬, ২/১৫৮; আলমওসূআতুল ফিকহিয়্যাহ আলকুয়াইতিয়্যাহ ১৫/৮০

Sharable Link

সুফিয়া খাতুন - মুহাম্মাদপুর, ঢাকা

৩৪৪২. Question

আমার স্বামী পৈত্রিক সূত্রে টিনশেড বাড়িসহ ৪.৬৭ শতক জমির মালিক ছিলেন। তিনি ২০১৩ সালে ইন্তেকাল করেন। উক্ত সম্পত্তি ছাড়া তার আর কোনো সম্পত্তি ছিল না। ইন্তেকালের পূর্বে তিনি উক্ত ৪.৬৭ শতক জমি (টিনশেড বাড়িসহ) ছোট মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তাকে দান করে দেন এবং দখলও বুঝিয়ে দেন। ইন্তেকালের সময় তার ওয়ারিশদের মধ্যে আমি তার স্ত্রী, ৪ কন্যা, ২ ভাই ও ৩ বোন জীবিত ছিল।

আমার বর্তমানে নিম্নোক্ত সম্পত্তি আছে-

১ বিঘা জমি, ৪.১২ শতক জমির উপর ৪ তলা ভবন ও কিছু নগদ টাকা।

আমার উক্ত সম্পত্তির মধ্যে ৪ তলা বাড়ির ২য়, ৩য় ও ৪র্থ তলা বড় তিন কন্যাকে দান করা হয়েছে। কেননা তারা পিতা থেকে কিছুই পায়নি। আর প্রথম তলা ভাড়া বাবদ অর্জিত অর্থের অর্ধেক আমাদের অবর্তমানে আমাদের নামে সদকা করা হবে। আর বাকি অর্ধেক অর্থ ভবনের মেরামত কাজে ব্যবহার করা হবে মর্মে সিদ্ধান্ত হয়। আমার ওয়ারিশদের মধ্যে ৪ কন্যা, ১ ভাই এবং ২ বোন আছে।

এ অবস্থায় আমার জানার বিষয় হল,

ক) আমার স্বামী ছোট মেয়েকে যে দান করেছেন এবং আমি বড় তিন মেয়েকে যে দান করেছি তা সহীহ হয়েছে কি না?

খ) এ দান পরবর্তীতেও বহাল থাকবে কি না?

গ) অন্য ওয়ারিশদের এতে আপত্তি করার সুযোগ আছে কি না?

ঘ) ৪ তলা ভবনের নিচ তলার অর্ধেক ভাড়া সদকা করার বিষয়টি সঠিক হয়েছে কি না?

যদি উক্ত বিষয়গুলো শরীয়ত মোতাবেক না হয় তাহলে আমার এবং কন্যাদের করণীয় কী হবে? অনুগ্রহপূর্বক জানিয়ে চিন্তামুক্ত করবেন।

 

 

 

Answer

খ ও গ) আপনার স্বামী তার জীবদ্দশায় ছোট মেয়েকে যে সম্পদ দান করেছেন এবং আপনি পরবর্তীতে বড় তিন কন্যাকে যে তিনটি ফ্ল্যাট দান করেছেন এবং তাদেরকে উক্ত সম্পদের মালিকানাও বুঝিয়ে দিয়েছেন এর দ্বারা তারা ঐ সম্পদের মালিক হয়ে গেছে এবং এ দান পরবর্তীতেও বহাল থাকবে। পিতার জন্য সকল সম্পদ ছোট মেয়েকে দিয়ে দেওয়া ঠিক হয়নি। এক্ষেত্রে সমতা বজায় রাখার জন্য বড় তিন মেয়েকে তিন ফ্ল্যাট দেওয়া আপনার জন্য ঠিক হয়েছে।-উমদাতুল কারী ১৩/১৪৯শরহুল মাজাল্লাহ ৩/৩৫৮

উত্তর : ঘ) ৪ তলা ভবনের নিচ তলার অর্ধেক ভাড়া আপনার অবর্তমানে গরীব-মিসকীনদের মাঝে সদকা করার যে

সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা সঠিক আছে এবং উদ্যোগটি প্রশংসনীয়ও বটে। তবে এটি কার্যকর করার জন্য আপনার জীবদ্দশাতে ঐ অংশ নির্ধারিত খাতে ওয়াকফ রেজিষ্ট্রি করে দিতে হবে। যেন আপনার অবর্তমানে তা  কার্যকর থাকে। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৩৬৬

Sharable Link

শফিক বিন ইসহাক - সীতাকুণ্ড, চট্টগ্রাম

৩৪৪৩. Question

আমাদের এলাকায় কেউ মারা গেলে মৃত্যু উপলক্ষ্যে বিবাহের ন্যায় খাবারের আয়োজন করা হয় এবং জানাযার পর এলান করা হয় যে, খাবার না খেয়ে কেউ যেন না যায়। শরীয়তের দৃষ্টিতে মৃতের বাড়িতে এমন আয়োজন করার বিধান কী? দলিলসহ জানালে উপকৃত হব।

 

Answer

কেউ মারা গেলে মৃতের বাড়িতে দাওয়াতের আয়োজন করা বিদআত। সাহাবায়ে কেরামের যুগ থেকেই এটিকে নিষিদ্ধ ও মন্দ কাজ গণ্য করা হত। হযরত জাবির বিন আবদুল্লাহ রা. বলেনআমরা মৃতের দাফন কার্য শেষ হওয়ার পর তার বাড়িতে একত্রিত হওয়া এবং (আগতদের জন্য) খাবারের আয়োজন করাকে নিয়াহা (নিষিদ্ধ পন্থায় শোক পালন) এর অন্তর্ভুক্ত গণ্য করতাম। -মুসনাদে আহমাদহাদীস ৬৯০৫

এ ভিত্তিতে ফুকাহায়ে কেরাম এটিকে বিদআত বলেছেন। কেননা দাওয়াতের আয়োজন তো করা হয় কোনো আনন্দ উৎসবের সময়কোনো বেদনার মুহূর্তে নয়। তাছাড়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নত তো হল মৃতের পরিবার-পরিজনদের জন্য প্রতিবেশীর পক্ষ থেকে খাবারের ব্যবস্থা করাযেন তাদেরকে মৃতের জন্য ব্যস্ততা ও শোকাহত থাকার কারণে অনাহারে থাকতে না হয়। আর প্রশ্নোক্ত কাজটি এর সম্পূর্ণ উল্টো ও বিপরীত। তাই এর থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। 

-সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৬১২; ফাতহুল কাদীর ২/১০২; রদ্দুল মুহতার ২/২৪০; ইলাউস সুনান ৮/৩২৯

Sharable Link

লুৎফুর রহমান - নওগাঁ

৩৪৪৪. Question

খতনা করার হুকুম কী? কত বছর বয়সে খতনা করানো উত্তম? আমাদের এলাকায় এক লোক নতুন মুসলমান হয়েছে। তার বয়স ৩৫। তার খতনার বিধান কী? অনেকে ছেলের খতনা করিয়ে লোকজনকে দাওয়াত করে খাওয়ায় এটা কেমন? এ ধরনের দাওয়াতে অংশগ্রহণ করা যাবে কী? অনুগ্রহ করে জানালে কৃতজ্ঞ হব।

 

Answer

খতনা করা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। এটি শিআরে ইসলাম অর্থাৎ ইসলামের মৌলিক নিদর্শনের অন্তর্ভুক্ত। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনফিতরাত (তথা নবীগণের সুন্নত) পাঁচটি : খতনা করানাভীর নিচের পশম পরিষ্কার করাবগলের পশম উঠানোমোঁচ ছোট করা এবং নখ কাটা।-সহীহ বুখারীহাদীস : ৬২৯৭

শারীরিকভাবে শক্ত-সামর্থ্যবান হওয়ার পরই সুবিধাজনক সময় ছেলের খতনা করিয়ে দেওয়া অভিভাবকের দায়িত্ব। আর কোনো কারণে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগে যদি খতনা না করা হয় অথবা বয়স্ক হওয়ার পর কেউ ইসলাম গ্রহণ করে তাহলেও তার খতনা করা জরুরি। অতএব প্রশ্নোক্ত নবমুসলিমকেও খতনা করে নিতে হবে।

ইবনে শিহাব যুহরী রাহ. বলেনকোনো ব্যক্তি যখন ইসলাম গ্রহণ করত তখন সে বড় হলেও তাকে খতনা করার আদেশ করা হত। -আলআদাবুল মুফরাদহাদীস : ১২৫২

খতনার উত্তম সময়ের ব্যাপারে ফকীহগণ বলেনশিশুর শারীরিক উপযুক্ততা ও তার বালেগ হওয়ার কাছাকাছি বয়সে পৌঁছার আগেই বা এর মাঝামাঝি সময়ে যেমন৭-১০ বছর বা অনুর্ধ্ব ১২ বছরের মধ্যে করে নেওয়া উত্তম।

আর খতনা উপলক্ষ্যে কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করার প্রমাণ নেই। তাছাড়া বর্তমানে যে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের রেওয়াজ শুরু হয়েছে তা অবশ্যই বর্জনীয়। এছাড়া এতে গান-বাদ্য ইত্যাদি শরীয়তবিরোধী কোনো কিছু থাকলে তা তো সম্পূর্ণ নাজায়েয হবে।

-ফাতহুল বারী ১১/৯২, ৯/৫০৩, ১০/৩৫৫, ৪/৪১৩; রদ্দুল মুহতার ৬/৭৫১-৭৫২, ৬/২৮২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ২/১৩২; আলবাহরুর রায়েক ৭/৯৫-৯৬

Sharable Link

আসিফ - গাজীপুরা, টঙ্গি

৩৪৪৫. Question

মোবাইলে কি কুরআন শোনা যাবে? বাংলা কুরআন ও হাদীসের বাংলা তরজমা মোবাইলে রাখা যাবে কি?

 

 

 

Answer

জ্বীমোবাইল ফোনের স্পীকারে কুরআন তিলাওয়াত শোনা যাবে। তবে তিলাওয়াত চলাকালীন সময় পূর্ণ আদব রক্ষা করে মনোযোগের সাথে শুনতে হবে। আর কুরআন মাজীদের তরজমা ও  হাদীস মোবাইল মেমোরিতে সংরক্ষণ করা জায়েয আছে। তবে এগুলো মোবাইলে দৃশ্যমান থাকা অবস্থায় সতর্ক থাকতে হবে যেন এর অসম্মান না হয়।

Sharable Link

মুহাম্মাদ হারুন - বসুন্ধরা

৩৪৪৬. Question

গত এক মাস আগে আমার এক আত্মীয়ের বিবাহ হয়। তারা ওলিমার আয়োজন করে এক কমিউনিটি সেন্টারে। তার বিবাহের দাওয়াত পেয়ে আমি ও আমার এক চাচাতো ভাই তাতে অংশগ্রহণ করি। যাওয়ার পর দেখি যে, সেখানে গান-বাজনাসহ আরো বিভিন্ন ধরনের গুনাহের কাজ চলছে। তখন আমরা দুজন সেন্টারের এক কোণায় বসে থাকি। পরে খানা খেয়ে ফিরে আসি।

এখন জানার বিষয় হল, শরীয়তে ওলিমার দাওয়াত কবুল করার হুকুম কী? উল্লেখিত পরিস্থিতিতে দাওয়াত কবুল করা সম্পর্কে শরীয়ত কী বলে?

 

 

Answer

সাধারণ অবস্থায় ওলিমার দাওয়াত গ্রহণ করা সুন্নত। হযরত আবদুল্লাহ বিন উমর রা. থেকে বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনতোমাদের কেউ নিজের ভাইকে দাওয়াত দিলে সে যেন তা কবুল করে। ওলিমার দাওয়াত হোক বা অন্য কোনো দাওয়াত। -সহীহ মুসলিম,হাদীস ১৪২৯

তবে আজকাল অধিকাংশ বিয়ের অনুষ্ঠানগুলোতে  গান-বাজনানারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা ও বেপর্দা ব্যাপক। তাই এ ধরনের দাওয়াতে অংশগ্রহণ না করাই কর্তব্য।

তবে দাওয়াতকারী যদি এমন নিকটাত্মীয় হয় যেতার দাওয়াতে অংশগ্রহণ না করলে সে অধিক মনক্ষুণœ হবে বা আত্মীয়তা সম্পর্ক নষ্ট হবে সেক্ষেত্রে অংশগ্রহণকারীর জন্য যদি গুনাহের কাজ থেকে প্রতিবাদ করা সম্ভব হয় তাহলে প্রতিবাদের উদ্দেশ্যে তাতে অংশগ্রহণ করা যাবে। কিন্তু প্রতিবাদ করা সম্ভব না হলে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবে। এক্ষেত্রে নিজ থেকে আত্মীয়তা সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করবে। 

-হেদায়া, ফাতহুল কাদীর ৮/৪৪৮; রদ্দুল মুহতার ৬/৩৪৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৭৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৪৩

Sharable Link