মুহাম্মদ আমানুল্লাহ - লোচনপুর, রায়পুরা, নরসিংদী

১৩৩৯. Question

যদি কেউ যোহরের নামাজ পড়তে গিয়ে দেখে জামাত দাড়িয়ে গেছে এবং নামাযের আগের সুন্নত পড়তে পারবে না এমতাবস্থায় তাকে কি ফরজের পরে প্রথম সুন্নত পড়তে হবে না পড়তে হবে না? যদি পড়তে হয়, তাহলে সে কি শেষের দুই রাকাত সুন্নতের আগে পড়বে নাকি পরে। বিস্তারিতভাবে দলিল-প্রমাণ সহকারে জানাবেন বলে আশা করি।

Answer

প্রশ্নোক্ত অবস্থায় ঐ ব্যক্তি সুন্নত না পড়েই যোহরের জামাতে শরীক হবে। জামাত শেষে আগে দুই রাকাত সুন্নত পড়বে। এরপর পূর্বের ছুটে যাওয়া চার রাকাত সুন্নত পড়বে। কারণ দুই রাকাত সুন্নতকে ফরযের পর পরই আদায় করা সুন্নত। সুতরাং দুই রাকাতকে যথাসময় আদায় করাই শ্রেয়।

-সুনানে ইবনে মাজা ১/৮০, হেদায়া ১/১৫২; আলবাহরুর রায়েক ২/৭৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/১৮৩; ফাতওয়া হিন্দিয়া ১/১১২; শরহুল মুনিয়া ৩৯৯; রদ্দুল মুহতার ২/৫৮

Sharable Link

মুহাম্মদ রাশেদুল কাদের - ফরিদাবাদ, ঢাকা

১৩৪০. Question

সালাম বাদ আরজ এই যে, যদি কোনো ব্যক্তির ক্ষতস্থান থেকে এই পরিমাণ রক্ত বের হয় যা গড়িয়ে পড়ার মতো, কিন্তু সে তা গড়িয়ে পড়তে না দিয়ে মুছে ফেলে তাহলে কি তার ওযু নষ্ট হবে?

Answer

হাঁ, অযু ভেঙ্গে যাবে। গড়িয়ে পড়া পরিমাণ রক্ত বের হলেই অযু নষ্ট হয়ে যায়। তাই এ পরিমাণ রক্ত গড়িয়ে পড়ার আগে ক্ষতস্থান থেকে মুছে নিলেও অযু ভেঙ্গে যাবে।

-কিতাবুল আসল ১/৫৮; ফাতহুল কাদীর ১/৩৪; ফাতওয়া হিন্দিয়া ১/১১; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৩; রদ্দুল মুহতার ১/১৩৫

Sharable Link

মুহাম্মদ রাশেদুল কাদের - ফরিদাবাদ, ঢাকা

১৩৪১. Question

যদি কোনো ছেলের নাম ‘রাবিব’ বা ‘রাববানী’ রাখা হয় তাহলে শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো অসুবিধা আছে কি?

Answer

রাববী’ অর্থ আমার রব, আমার প্রতিপালক। প্রতিপালক তো একমাত্র আল্লাহ তাআলা। তাই এ শব্দ দ্বারা কোনো মানুষের নাম রাখা বা এ নামে ডাকা জায়েয হবে না। হ্যাঁ, ‘রববানী’ নাম রাখা যেতে পারে।

-ফাতহুল কাদীর ১০/৬০৬; তুহফাতুল মাওদুদ বি আহকামিল মাওলুদ ১০৮; শরহে নববী ২/২০৮; তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম ৪/২১৭

Sharable Link

মুহাম্মদ রাশেদুল কাদের - ফরিদাবাদ, ঢাকা

১৩৪২. Question

আমরা এতদিন শুনেছি, তাকবীরে তাশরীক তিন বার পড়তে হয়, কিন্তু এক ব্যক্তি থেকে শুনলাম এক বার পড়তে হয় এবং এক ইমাম সাহেবকে বলতে শুনেছি, এক বার পড়া ওয়াজিব এবং তিন বার পড়া সুন্নত। এখন প্রশ্ন হল, কোনটা সঠিক, জানালে চির কৃতজ্ঞ থাকব।

Answer

তাকবীরে তাশরীক একবার পড়াই নিয়ম। তিনবার পড়া মুস্তাহাব-একথা বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী ঠিক নয়। অবশ্য এ নিয়ে ফিকহবিদগণের মাঝে মতানৈক্য আছে। তাই এ বিষয়ে বাড়াবাড়ি করা ঠিক নয়।

-রদ্দুল মুহতার ২/১৭৮; মাজমাউল আনহুর ১/২৬০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫৩; তাহতাবী আলাল মারাকী ২৯৪; ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/৪৮৪

Sharable Link

মুহাম্মদ আরমান - ময়মনসিংহ

১৩৪৩. Question

আমার এক নিকটাত্মীয়ের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটেছে। তাদের একটি ছেলে ও একটি মেয়ে রয়েছে। ছেলেটির বয়স তিন এবং মেয়ের বয়স ১০। এখন প্রশ্ন উঠেছে, সন্তানরা কার নিকট থাকবে। দাদী নিজের কাছে রাখতে চায়। মা তাতে রাজি নয়। এক্ষেত্রে শরীয়তের ফয়সালা কী?

Answer

বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটলে পুত্র সন্তানের সাত বছর আর কন্যা সন্তানের বয়স নয় বছর হওয়া পর্যন্ত মা-ই তাদের লালন-পালনের অধিকার রাখেন। এসময়ের ভিতর পিতা বা পিতার পক্ষের কেউ তাদেরকে মার সম্মতি ছাড়া  নিয়ে আসতে পারবেন না। অবশ্য এ সময়ের ভিতর সন্তানদের মাহরাম নয় এমন কোনো পুরুষের সাথে যদি তাদের মার বিয়ে হয় তবে এক্ষেত্রে সন্তানদেরকে নিজের কাছে রেখে লালন-পালন করার অধিকার মা’র থাকবে না। বরং নানী, দাদী, খালা ও ফুফু যথাক্রমে প্রতিপালনের হকদার হবে। প্রশ্নোক্ত অবস্থাতেও এ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

-সুনানে আবু দাউদ ১/৩১০; আলবাহরুর রায়েক ৪/২৮০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ২/৭২; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৩২২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৪/৬৭; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৪৫৭

Sharable Link

মুহাম্মদ পলাশ - ভালুকা, ময়মনসিংহ

১৩৪৪. Question

জনৈক ব্যক্তি সূরা ফাতিহার পূর্বে ভুলে তাশাহুদ পড়ে ফেলে। স্মরণ হওয়া মাত্র সূরা ফাতিহা পড়ে অন্য সূরা মিলায়। কিন্তু নামায শেষে সাহু সিজদা করেনি। জানতে চাই, তার নামায হয়েছে কি না?

Answer

প্রশ্নোক্ত অবস্থায় ঐ ব্যক্তি সাহু সিজদা না করে ঠিকই করেছে। কারণ ঐ ভুলের কারণে বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী সাহু সিজদা ওয়াজিব হয় না। সুতরাং তার নামায সহীহ হয়েছে।

-আলবাহরুর রায়েক ২/৯৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২৭; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১২২; ফাতহুল কাদীর ১/৪৩৯; হাশিয়াতুত্তাহতাবী আলাল মারাকী পৃ. ২৫১; তাহতাবী অলাদ্দুর ১/৩১১; শরহু মুনয়াতুল মুসাল্লী পৃ. ৪৬০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৭২০; আননাহরুল ফায়েক ১/৩২৪; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/৬৪

Sharable Link

জায়েদ আলী - চুয়াডাঙ্গা

১৩৪৫. Question

আমার চাচাত ভাইয়ের সাথে জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এরই জের ধরে একদিন আমি রাগ করে বলে ফেলি তোমার সাথে কোনো সম্পর্ক নেই। তোমার বাড়ির উঠান ডিঙানো আমার জন্য হারাম। এরপর প্রায় সপ্তাহ খানেক পর তার বাড়ির উঠানের উপর দিয়ে পাশের বাড়িতে যাই। তখন তারা বলল, তুমি না কসম করেছিলে? আমি এখন চিন্তিত। শরীয়তমতে আমার কী করণীয়?

Answer

তোমার বাড়ির উঠান ডিঙানো আমার জন্য হারাম’-একথাটি দ্বারা কসম সাব্যস্ত হয়েছে। আর এরপর তার বাড়ির উঠানে যাওয়ার কারণে আপনার কসম ভেঙে গেছে। এখন ঐ কসমের কাফফারা দেওয়া জরুরি। কাফফারা হল, দশজন মিসকিনের প্রত্যেককে দু’ বেলা পূর্ণ তৃপ্তিসহ খানা খাওয়ানো। বা প্রত্যেককে এক জোড়া করে কাপড় দেয়া। আর এগুলোর কোনোটি করা সম্ভব না হলে ধারাবাহিকভাবে তিনটি রোযা রাখতে হবে।

-আহকামুল কুরআন জাসসাস ৩/৬৯৬; আলবাহরুর রায়েক ৪/৪৯২; রদ্দুল মুহতার ৩/৭২৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৩/৪৩২; ফাতাওয়া সিরাজিয়া ৫৪

Sharable Link

মুহাম্মদ মাহমুদ - বাইতুল আমান, ঢাকা

১৩৪৬. Question

জনাব একটি বই-এ সূরা আননাজম এর ৩৯ নং আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে হুকুম বের করা হয়েছে, কুরআন তেলাওয়াতের সওয়াব মৃত ব্যক্তির জন্য দান করতে চাইলে তা পৌঁছবে না। কেননা এটা মৃত ব্যক্তির আমল ও উপার্জন কোনোটাই নয়। দয়া করে আপনাদের অভিমত জানাবেন।

Answer

প্রশ্নে যে আয়াতের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে তা এই-

وَ اَنْ لَّیْسَ لِلْاِنْسَانِ اِلَّا مَا سَعٰی

এই আয়াতের ভাষ্য হল, মানুষ নিজের আমল দ্বারা যা উপার্জন করে সে তারই সে মালিক। অন্যের উপার্জিত ছওয়াবের উপর তার কোনো অধিকার নেই। অন্যের কোনো নেকী তার আমলনামায় এমনিতেই চলে আসবে না। তবে এটা ভিন্ন প্রসঙ্গ যে, কেউ স্বেচ্ছায় কোন নেক আমল করে তার সওয়াব অন্যকে দান করল আর আল্লাহ তাআলা তা মঞ্জুর করে ঐ ব্যক্তির আমলনামায় পাঠিয়ে দিলেন। এ প্রসঙ্গে এই আয়াতে কিছুই বলা হয়নি। অন্যান্য আয়াত ও হাদীস থেকে প্রমাণ হয় যে, মৃতের নিকটে মুসলিম ভাইয়ের পাঠানো আমলের ছওয়াব পৌঁছে থাকে। সুতরাং উল্লেখিত আয়াত থেকে এই হুকুম বের করা যে, কুরআনের অন্যান্য আয়াত ও সহীহ হাদীসের সাথে সাংঘর্ষিক এবং সালাফে সালেহীনের ব্যাখ্যা ও আমলের পরিপন্থী। সুতরাং তা কোন অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

সাহাবা-তাবেঈন ও তাবে তাবেঈনের কেউই এই আয়াত থেকে প্রশ্নোক্ত হুকুম গ্রহণ করেননি। বরং তাদের আমল এই ছিল যে, তারা মৃত ব্যক্তির কবরের নিকট গিয়ে কুরআন তেলাওয়াত করতেন। পরবর্তীতে প্রত্যেক যুগে, প্রত্যেক ইসলামী শহরে এ ধারা অব্যাহত রয়েছে এবং মুসলমানগণ যুগ যুগ ধরে কোনো প্রকার আপত্তি ছাড়াই বিষয়টির উপর আমল করে আসছে।

১. হযরত লাজলাজ রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আমার পিতা আমাকে ডেকে বললেন, বৎস! আমি ইন্তেকাল করলে আমাকে লাহাদ কবরে সমাহিত করবে এবং কবরে রাখার সময় ‘বিসমিল্লাহি ওয়া আলা মিল্লাতি রাসূলিল্লাহ।’ পড়বে। অতপর মাটি দ্বারা ঢেকে দিয়ে আমার মাথার কাছে দাড়িয়ে সূরা বাকারার প্রথম ও শেষাংশ তেলাওয়াত করবে। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এভাবে বলতে শুনেছি। -মু’জামে কাবীর, তবারানী ১৯/২২০ হাদীস ৪৯১ মুহাদ্দিস হাইছামী রাহ. বলেন, হাদীসটির বর্ণনাকারীগণ সকলেই নির্ভরযোগ্য। মাজমাউয যাওয়ায়েদ

২. হযরত শারী রাহ. বলেছেন, আনসারদের কেউ ইন্তেকাল করলে তারা ঐ ব্যক্তির কবরের নিকট গিয়ে গিয়ে কুরআন তেলাওয়াত করতেন।-জামে খল্লাল, শরহুস সুদূর ৩১১

মনে রাখতে হবে কোনো আয়াতের এমন ব্যাখ্যা কখনো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না যা কুরআনের অন্য আয়াত বা সহীহ হাদীসের খেলাফ কিংবা সালাফে সালেহীনের ব্যাখ্যার পরিপন্থী। এ ধরনের ব্যাখ্যা পরিহার করা জরুরি। প্রশ্নোক্ত ব্যাখ্যাটি যেহেতু এই শ্রেণীভুক্ত তাই তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

উল্লেখ্য, ইসালে ছওয়াব (মৃতের জন্য ছওয়াব হাদিয়া পাঠানো) দ্বারা এখানে আমাদের উদ্দেশ্য হল, যা শরীয়তের বিধান অনুযায়ী হয়ে থাকে। ইসালে ছওয়াবের যে সব পদ্ধতিতে বিভিন্ন বিদআত ও গলদ আকীদা বা আমল রয়েছে তা যে সংশোধনযোগ্য অবশ্যই এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। ...

Sharable Link

আব্দুল্লাহ সাকী - লালবাগ, ঢাকা

১৩৪৭. Question

জনৈক ব্যক্তি ফজরের নামায জামাতের সাথে পড়ছিল। দ্বিতীয় রাকাতের সিজদায় গিয়ে লোকটি ঘুমিয়ে পড়ে। এরপর সালামের শব্দ শুনে ঘুম থেকে উঠে বসে সাথে সাথে সালাম ফিরিয়ে দেয়। জানতে চাই, তার নামায হয়েছে কি না?

Answer

লোকটির নামায সহীহ হয়নি। কারণ শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ পরিমাণ বসা ফরয। এই ফরয আদায় না হওয়ায় তার ঐ নামায নষ্ট হয়ে গেছে। নামাযটির কাযা পড়ে নেয়া ফরয।

-বাদায়েউস সানায়ে ১/৩০০; শরহুল মুনিয়া ৪৫৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৫১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৯২; রদ্দুল মুহতার ১/৫৯৫

Sharable Link

মুহাম্মদ আবু বকর - সিরাজগঞ্জ

১৩৪৮. Question

আমি একটি দোকান থেকে কাপড় ক্রয় করেছি। কাপড়টি কাটার পর আমাকে প্যাকেট করে দেয়। এরপর আমার প্রয়োজনেই কাপড়টি দোকানদারের নিকট রেখে যাই। রাতে দোকানের মালামাল চুরি হয়ে যায়। আমার ব্যাগটিও চুরি হয়ে যায়। এখন আমি কি আমার কাপড়ের মূল্য ফেরত নিতে পারব?

Answer

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী কাপড়টি ক্রয় করত হস্তান্তর করার দ্বারা তাতে আপনার মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে এবং ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন হয়ে গেছে। সুতরাং পরে ঐ কাপড় সেখানে রেখে আসার অর্থ হচ্ছে আপনার পণ্য সেখানে আমানত হিসাবে রেখে এসেছেন। সুতরাং দোকানী তা হেফাযতে কোনো প্রকার ত্রুটি না করে থাকলে এর ক্ষতিপূরণ দিতে সে বাধ্য নয়।

-আহকামুল কুরআন জাসসাস ২/৩৯৩; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৬৬২; বাদায়েউস সানায়ে ৫/৩১০

Sharable Link

মুহাম্মদ আবু বকর - খিলগাও, ঢাকা

১৩৪৯. Question

গত কিছুদিন পূর্বে প্রায় মসজিদে ঘোষণা করা হয়েছে, ঘুর্ণিঝড়ে বিধ্বস্তদের জন্য অন্ন, বস্ত্র ও নগদ টাকা নিয়ে এগিয়ে আসুন। ইমাম-মুয়াজ্জিন বা অমুক ব্যক্তির নিকট জমা দিন। যথাস্থানে যথা সময়ে যথাযথভাবে পৌছে দেয়া হবে ইনশাআল্লাহ।

এখন জিজ্ঞাসা হল, সংগৃহীত তহবিলে রদবদল করা যাবে কি না? যথা নগদ টাকা দ্বারা চাল ক্রয় বা বস্ত্র বিক্রি করা যাবে কি না? লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, কোথাও কোথাও কোনো ট্রাস্টে জমা দেওয়ার আহবান হচ্ছে, কোথাও মসজিদ ভিত্তিক মাইকে সংগ্রহ করা হচ্ছে। আমরা স্বউদ্যোগে জনগণ থেকে উঠিয়ে ট্রাস্টে কিংবা অন্যদেরকে দিতে পারব কি না?

Answer

ত্রাণ সামগ্রী বা নগদ টাকা ও জমাকৃত পণ্য সামগ্রী যদি দুর্গত এলাকার লোকদের জন্য উপযোগী হয় এবং তা পৌঁছানোও সম্ভব হয় তবে জমাকৃত পণ্য ও টাকা সেভাবেই পৌঁছে দেওয়া কর্তব্য।

আর যদি জমাকৃত সামগ্রী ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার জন্য উপকারী না হয় কিংবা সংগৃহীত পণ্য দুর্গত এলাকায় পৌঁছানো সম্ভব না হয় তবে তা বিক্রি করে প্রয়োজনীয় দ্রব্য বা নগদ টাকা পৌঁছানোর অবকাশ আছে। তদ্রূপ উক্ত এলাকার জন্য কোনো বিশেষ দ্রব্য বা খাদ্যদ্রব্যের প্রয়োজন থাকলে তাও নগদ টাকার বিনিময়ে ক্রয় করে নেওয়া জায়েয।

হ্যাঁ, কোনো দাতা থেকে যদি এ শর্ত মেনে গ্রহণ করা হয় যে, তার প্রদত্ত টাকা বা সাহায্য সামগ্রী হুবহু ক্ষতিগ্রস্থদের নিকট পৌঁছানো হবে তবে যথাসম্ভব তা সেভাবেই পৌঁছে দেয়া জরুরি হবে। দুর্গত এলাকায় টাকা বা সাহায্য সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার জন্য যাদেরকে মনোনিত করা হবে তাদের আমানতদারী সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া জরুরি। তাই কোনো ট্রাস্টের কর্তৃপক্ষ হোক বা মসজিদ ভিত্তিক প্রতিনিধি হোক তারা যদি আমানতদার হয় তাহলে নিজেদের উদ্যোগে জমাকৃত টাকা বা সাহায্য সামগ্রী তাদেরকে দিতে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু আমানতদার না হলে যারা সংগ্রহ করবে তাদেরকে নিজ দায়িত্বে পৌঁছে দিতে হবে।

-মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়া মাদ্দা ১৪৬৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/২৯১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/৫৬৭; রদ্দুল মুহতার ৫/১৫৩

Sharable Link

মুহাম্মদ আবু বকর - খিলগাও, ঢাকা

১৩৫০. Question

বাবার ওছিয়ত মতে বদলী হজ্বের জন্য এক ব্যক্তিকে টাকা দেওয়া হল। সে টাকা নিয়ে হজ্জ, ওমরা ও কুরবানী সবই করে আসতে মনস্থ করল। জনৈক আলেম বললেন, যে খাতে টাকা দেওয়া হয়েছে তাই তোমাকে করতে হবে। খেয়াল খুশি মতো ঐ সব কিছু করা যাবে না। তদুপরি সে ওমরা, কুরবানী ও হজ্জ সবই করে এসেছে।

জানার বিষয় হল, বদলী হজ্জ আদায় হয়েছে কি না? ওমরা ও কুরবানীর টাকা বহন করবে কে? বদলী হজ্জ না হয়ে থাকলে জরিমানা দিতে হবে কি না?

Answer

বদলী হজ্জের জন্য প্রেরণকারী যদি ইফরাদ হজ্বের কথা নির্দিষ্ট করে দেয় অথবা কিরান ও তামাত্তু হজ্ব করতে নিষেধ করে তখনই কেবল বদলী হজ্ব আদায়কারীর জন্য ইফরাদ হজ্ব করা জরুরি হয। সেক্ষেত্রে কিরান বা তামাত্তু হজ্ব করা জায়েয হবে না। কিন্তু প্রেরণকারী অনুমতি দিলে কিংবা কোনো ধরনের হজ্বের কথা নির্দিষ্টভাবে না বললে কিরান বা তামাত্তু হজ্ব করাও জায়েয। আমাদের দেশের মানুষ যেহেতু সাধারণত তামাত্তু হজ্বই করে থাকে এবং হজ্ব বলতে তামাত্তুকেই বুঝে থাকে তাই প্রেরণকারী কিরান ও তামাত্তু হজ্ব করতে নিষেধ না করা পর্যন্ত বদলী হজ্বের অনুমতিকে তামাত্তু হজ্বের অনুমতি ধরা হবে।

অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে তামাত্তু হজ্ব করার দ্বারা বদলী হজ্ব আদায় হয়েছে এবং আদায়কারীর উপর কোনো জরিমানা আসবে না। আর এ বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করাও ঠিক হবে না।

উল্লেখ্য যে, তামাত্তু ও কিরানের ক্ষেত্রে উমরা ও কুরবানী হজ্ব থেকে ভিন্ন কোনো আমল নয়; বরং এগুলো হজ্বেরই অংশ। তাই ওমরা ও কুরবানীকে হজ্ব থেকে ভিন্ন আমল মনে করা এবং ওমরা ও কুরবানী করার দ্বারা বদলী হজ্বের অনুমতির বিরুদ্ধাচরণ হয়েছে বলে মনে করা ঠিক নয়।

-আলমাবসূত সারাখসী ৪/১৫৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩১০; আলবাহরুর রায়েক ৩/১১৬

Sharable Link

মুহাম্মদ যাকারিয়া - বিক্রমপুর

১৩৫১. Question

আমার দাদী অসুস্থ। তিনি বার্ধক্যে পৌঁছেছেন। বয়স ৭৫ এর মতো হবে। রোযা রাখতে সক্ষম নন। আর নামায কত রাকাত পড়লেন তা মনে রাখতে পারেন না। ভবিষ্যতে সুস্থ হবেন তাও আশা করা যায় না। এখন আমার প্রশ্ন হল, তার ব্যক্তিগত কিছু অর্থকড়ি আছে। সেখান থেকে নামায রোযার ফিদিয়া দিলে তার বিগত নামায রোযার ফিদিয়া আদায় হবে কি? নাকি তার ইন্তেকালের পর ওয়ারিসগণ তার মিরাছ  থেকে ফিদিয়া আদায় করবে।

উল্লেখ্য, তিনি বিগত ৩-৪ বছর যাবত অসুস্থ। রোযা রাখতে পারেন না তবে মাঝে মাঝে কিছুটা সুস্থ হন তখন নামায পড়তে পারেন। ঘটনাক্রমে এবার রমযান মাসে তিনি একদিন রোযা রেখেছিলেন। ইফতারের পর বেহুশ হয়ে যান। এমনকি মৃত্যুর সম্মুখীন হয়ে পড়েন। তাই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আল্লাহ তাআলার রহমতে এখন কিছুটা সুস্থ, কিন্তু রোযা রাখার মতো সুস্থ নন। এমনকি মাঝে মাঝে নামায পড়তেও সক্ষম নন। এখন কী করণীয় বিস্তারিত জানাবেন।

Answer

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী আপনার দাদীর যেহেতু রোযা রাখার শক্তি নেই পরবর্তীতেও সে সামর্থ ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই তাই তিনি জীবদ্দশাতেই তার রোযার ফিদিয়া আদায় করতে পারবেন। আর তিনি যেহেতু এখনো অন্যের সহায়তা নিয়ে হলেও নামায আদায়ে সক্ষম তাই মোটামুটি সুস্থ অবস্থায় যথাসম্ভব ছুটে যাওয়া নামাযগুলোর কাযা করতে হবে। কাযা না করে কাফফারা আদায় করলে তা যথেষ্ট হবে না। হাঁ, তাঁর মৃত্যুর পর অবশিষ্ট কাযা নামাযের কাফফারা আদায়ের ব্যাপারে অসিয়ত করে যেতে পারেন।

-ফাতাওয়া খানিয়া ১/২০৩; ফাতহুল কাদীর ২/২৭৬; আলবাহরুর রায়েক ২/২৮৬; রদ্দুল মুহতার ২/৭৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৭

Sharable Link

মুহাম্মদ যাকারিয়া - বিক্রমপুর

১৩৫২. Question

মলত্যাগ করার পর শুধু পানি ব্যবহার করলে সুন্নতের ছওয়াব পাওয়া যাবে কি? বিস্তারিত জানানোর জন্য অনুরোধ করছি।

Answer

মলত্যাগের পর তিনটি ঢিলা ব্যবহার করা মুস্তাহাব। এটা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। তাই ঢিলা বা টিস্যু ব্যবহার না করে শুধু পানি ব্যবহার দ্বারা ঐ মুস্তাহাব আদায় হবে না।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৪৮; আলবাহরুর রায়েক ১/২৪১; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী ১/২৫; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩৩৬

Sharable Link

মুহাম্মদ যাকারিয়া - বিক্রমপুর

১৩৫৩. Question

যে তিনদিন কুরবানী করা যায় ঐ দিনগুলিতে গোশত খাওয়ার উদ্দেশ্যে হাঁস, মুরগী জবাই করা যাবে কি? অনেকে বলে থাকেন যে, যাবে না। সঠিক সমাধান চাই।

Answer

হ্যাঁ, কুরবানীর দিনসমূহেও হাঁস, মুরগী জবাই করা জায়েয। এ সময় হাঁস, মুরগী জবাই করা যাবে না-একথা ঠিক নয়। তবে কুরবানীর নিয়তে করা যাবে না।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩১৪; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/২৯০; রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৩

Sharable Link

মুহাম্মদ আমীমুল এহসান - জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া

১৩৫৪. Question

অনেক মসজিদে জুমার দিন খুতবার সময় দেখা যায় কাতারের মাথায় রাখাদান বাক্স চালিয়ে দেওয়া হয়। আবার অনেক সময় খাদেম নিজেই খুতবা চলাকালে রুমাল বা থলি হাতে নিয়ে হেঁটে হেঁটে টাকা উঠাচ্ছে। প্রশ্ন হল, খুতবার সময় এভাবে টাকা তোলা কি জায়েয হবে?

Answer

খুৎবা চলাকালীন সকল কাজ হতে বিরত থেকে খুৎবা শ্রবণ করা ওয়াজিব। এ সময় যেকোনো উপায়ে চাঁদা উঠানো এবং চাঁদা দেওয়া নাজায়েয। শুধু দানবাক্স চালানোও নাজায়েয। হাদীস শরীফে এসেছে- অর্থাৎ ‘(খুতবা অবস্থায়) যে নুড়ি সরাল সেও অনর্থক কাজ করল।’ অন্য হাদীসে এসেছে-

ومن لغى فلا جمعة له

আর যে অনর্থক কাজ করল তার জুমা-ই শেষ হয়ে গেল। অনুদান সংগ্রহের কাজটিও সুন্নত আদায়ের পর খুৎবার আযান শুরু হওয়ার আগে করা যেতে পারে।

-সহীহ বুখারী ১/১২৭; সহীহ মুসলিম ১/২৮৩; শরহে নববী ১/২৮১; বাদায়েউস সানায়ে ২/২০৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২০৬; ফাতাওয়া নাওয়াযেল ৭৮; আলমুগনী ২/৮৪; ফাতহুল কাদীর ২/৬৬; রদ্দুল মুহতার ২/১৬১

Sharable Link

আবু সাদেক - ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫

১৩৫৫. Question

আমাদের ইমাম সাহেব তারাবীর নামাযে সূরার প্রথমে ‘বিসমিল্লাহ’ উচ্চস্বরে পড়েন এবং বলেন,  উচ্চস্বরে ‘বিসমিল্লাহ’ না পড়লে মুক্তাদির তারাবীতে খতমে কুরআন হবে না বা খতমে কুরআনের ছওয়াব পাবে না। ইতোপূর্বে কোথাও এরূপ পড়তে দেখিনি। এমনকি মক্কা ও মদীনা শরীফের মসজিদেও তারাবীতে সূরার প্রথমে এরূপ উচ্চস্বরে পড়তে দেখিনি।

উল্লেখিত বিষয় সম্পর্কে শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে মুফতী সাহেবদের মতামত জানতে ইচ্ছা রাখি। আশা করি বাংলা ভাষায় উত্তর দিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

নামাযে পুরো কুরআন মজীদ খতম করলে যে কোনো একটি সূরার শুরুতে একবার বিসমিল্লাহ উচ্চ স্বরে পড়া নিয়ম। তাই একবারই উচ্চস্বরে বিসমিল্লাহ পড়বে। একটি সূরা ছাড়া বাকি সূরাগুলোতে নিঃশব্দে বিসমিল্লাহ পড়বে। নামাযে সকল সূরার শুরুতে বিসমিল্লাহ উচ্চস্বরে পড়া অনুত্তম।

প্রশ্নে উল্লেখ নেই যে, ঐ ইমাম সাহেব প্রত্যেক সূরার শুরুতেই জোরে বিসমিল্লাহ পড়ে থাকেন, না পুরো খতমে একবার জোরে পড়েন। যদি তিনি সকল সূরার শুরুতে পড়ে থাকেন তবে তা অনুত্তম হয়েছে। আর যদি যেকোনো এক সূরার শুরুতে পড়ে থাকেন তবে তা ঠিকই আছে।

-আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৯১; ইমদাদুল আহকাম ১/৩২৮; ইমদাদুল আহকাম ১/৬৩০

Sharable Link

মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মানসুর - রংপুর

১৩৫৬. Question

আমি ইচ্ছা করেছি যে, আমার মাদরাসায় ছাত্রদেরকে শেষ রাতে ঘুম থেকে জাগানোর জন্য সাউন্ড বক্স ব্যবহার করব। যাতে ধ্বনিত হবে ‘কুরআন মজীদ’-এর সরাসরি কিংবা রেকর্ডকৃত তিলাওয়াতের উচ্চ কণ্ঠে সুমধুর আওয়াজ। যেন ঘুম থেকে ওঠার পর একটি পবিত্র প্রভাব পড়ে। কিন্তু জানতে পারলাম যে, এলার্ম হিসাবে নাকি তেলাওয়াত নাজায়েয। এখন আমি চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞাসা করছি যে, আমার উক্ত ইচ্ছাটা এবং তা বাস্তবায়ন করাটা শরীয়ত সম্মত হবে কি না? অথবা আমার উক্ত ইচ্ছা বাস্তবায়ন করার শরীয়তসম্মত পদ্ধতি কী হতে পারে?

Answer

ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার জন্য কুরআনে কারীমের তিলাওয়াত ব্যবহার করা যাবে না। এতে কুরআনে কারীমের আদব ক্ষুণ্ণ হয়।

-আলমুগনী ৩/৭৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩১৬

Sharable Link

মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম - নওদাকুর্শা, কুষ্টিয়া

১৩৫৭. Question

এক রাত্রিতে আমার স্বপ্নদোষ হয়েছে কিন্তু গোসল না করে শুধু ওযু করে সাহরী খেয়েছি। আমার রোযা কি আদায় হয়েছে? নাকি কাযা করতে হবে?

 

Answer

ঐ রোযাটি আদায় হয়েছে। তার কাযা করতে হবে না। সাহরী খাওয়া এবং রোযা শুরু করার জন্য শারীরিক পবিত্রতা জরুরি নয়। উল্লেখ্য, বিনা কারণে ফরয গোসলে বিলম্ব করা অনুচিত।

-সহীহ বুখারী ১/২৫৮, এলাউস সুনান ৯/১৭৭; মারাকীল ফালাহ ২৬২; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৩; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪০০

Sharable Link

ডা. ফজলুল হক - মিরপুর-১২

১৩৫৮. Question

আমি শ্বাসকষ্টের রোগী। আমার সারা বছর শীত-গ্রীষ্ম ইনহেলার ব্যবহার করতে হয়। রাতে এবং দিনে মোট চার বার নিতে হয়। তাই জানতে চাই, ইনহেলার ব্যবহারের দ্বারা রোযার কোনো ক্ষতি হয় কি না? যদি রোযা ভেঙে যায় তাহলে আমি কি রোযা রাখতে পারব না। আমি কি দিনের বেলা খানা-পিনা করতে পারব? এ বিষয়ে আমি খুবই চিন্তিত। একেকজন একেক ধরনের মত দিয়ে থাকে।

Answer

রোযা অবস্থায় ইনহেলার ব্যবহার করলে রোযা ভেঙে যায়। তাই সাহরীর শেষ সময এবং ইফতারের সময় ইনহেলার ব্যবহার করলে যদি তেমন কষ্ট না হয় তবে রোযা অবস্থায় তা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা জরুরি। হ্যাঁ, অসুস্থ বেশি হওয়ার কারণে দিনেও ব্যবহার করা জরুরি হলে তখন নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনার করণীয় হবে : ১. আপনি রমযানের রোযা রাখবেন। ২. উক্ত ওজরে ইনহেলার ব্যবহার করলেও অন্যান্য পানাহার থেকে বিরত থাকবেন। ৩. আর পরবর্তীতে এর কাযা করে নিবেন। ৪. আর এ ওজর যদি সারা বছর থাকে তাহলে ফিদয়া আদায় করবেন।

-সূরা বাকারা ১৮৪; ফাতহুল কাদীর ২/২৮২; মাজমাউল আনহুর ১/৩৬১; রদ্দুল মুহতার ২/৩৯৫; মাজাল্লাতু মাজমায়িল ফিকহিল ইসলামী সংখ্যা ১০ ভলিউম ২, পৃ ৩১-৬৫

Sharable Link

রকীবুল ইসলাম - রায়পুরা, নরসিংদী

১৩৫৯. Question

একদিন আমার তা’লীমী মুরববী আমাকে হুকুম করলেন, বাজার থেকে দু’টি তাল কিনে আনার জন্য। আমি রওনা দিলাম। পথিমধ্যে ঐ হুজুরের এক সাথীর সাথে আমার দেখা হল। তিনি আমাকে বললেন, হুজুরের দু’টি তাল থেকে আমাকে একটি দিয়ে যাবে। এক্ষেত্রে আমার করণীয় কী? আমি কি হুজুরের অনুমতি ব্যতীত উনাকে একটি তাল দিতে পারব?

 

Answer

না। কারো জিনিস তার অনুমতি ব্যতীত অন্যকে দেওয়া যাবে না।

-মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়া মাদ্দা ১৪৬৩; শরহুল মাজাল্লা লিলআতাসী ৪/৪৩৩; ফাতহুল কাদীর ৭/৪১; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৫১৭

Sharable Link

আবদুলল হাকীম - বরিশাল

১৩৬০. Question

আমাদের এলাকার এক লোক পুরাতন বাড়ি, জমি-জমা কোনো কারণবশত হারিয়ে ফেলে  পরে সে সরকার মারফতে কিছু খাস জমির মালিক হয়। তবে সে মালিকানা নিজের নামে রেজিষ্ট্রি করার আগে মারা যায়। পরবর্তীতে একজন বিত্তশালী ব্যক্তি ঐ জমিগুলো জোরপূর্বক নেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু ঐ লোকটার তিন ছেলে অনেক টাকা খরচ করে জমিগুলো তাদের নামে রেজিষ্ট্রি করতে সক্ষম হয়। এখন মুফতী মহোদয়ের কাছে আমার আবেদন যে, ঐ লোকটার আরো যে দুই মেয়ে আছে তারা এ সম্পত্তিতে অংশিদার হবে কি না? দলিল-প্রমাণসহ জানালে কৃতজ্ঞ হব।

Answer

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী যেহেতু ঐ খাস জমিগুলো সরকার কর্তৃক তাদের পিতা প্রাপ্ত হয়েছেন এবং সেই ক্ষমতা বলে তার জীবদ্দশায় তিনি সেখানে বসবাস করেছেন। আর এরই ভিত্তিতে পরবর্তীতে ছেলেরা রেজিষ্ট্রি করতে সক্ষম হয়েছে, তাই এই খাস জমি পিতার পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবেই গণ্য হবে। সুতরাং এতে লোকটার ছেলে-মেয়ে সকলেই নিজ নিজ অংশ অনুপাতে হিস্যা পাবে। অবশ্য ছেলেরা এ জমির রেজিষ্ট্রি ইত্যাদির পিছনে যা খরচ করেছে তা বোনদের অংশ অনুযায়ী তাদের থেকে নিয়ে নিতে পারবে।

-সহীহ বুখারী ২/৯৯৬; আলমাবসূত সারাখসী ২৯/১৩৮; রদ্দুল মুহতার ৪/১৪২

Sharable Link

রায়হান ইবনে ফজলুর রহমান - নাটাই পাড়া, বগুড়া

১৩৬১. Question

বর্তমানে বাসা-বাড়িতে যে গ্যাসের লাইন নেওয়া হয় তা এই শর্তে যে, সারা মাস গ্যাস ব্যবহার করবে এবং মাস শেষে বিল বাবদ চারশত (৪০০/-) টাকা আদায় করতে হবে। উল্লেখ্য যে, এখানে কোনো মিটার সিস্টেম না থাকায় কতটুকু গ্যাস ব্যবহৃত হচ্ছে তা জানারও কোনো উপায় নেই। এখন কোনো পরিবার গ্যাসের লাইন নেওয়ার পর তার ভাড়াটে অথবা আশপাশের অন্য পরিবারকে যদি তার গ্যাস লাইনে সংযুক্ত চুলা ব্যবহার করার অনুমতি দেয় এবং তার বিনিময় গ্রহণ করে তবে এই বিনিময় জায়েয হবে কি না? যদি জায়েয না হয় তবে ভাড়াটের জন্য যেহেতু অন্য লাইন সংযুক্ত করা ব্যয় সাপেক্ষ তাই সে ক্ষেত্রে কী করা উচিত। অনুগ্রহ পূর্বক দলিলসহ জানানোর জন্য সবিনয় অনুরোধ করছি।

Answer

আবাসিক এলাকার জন্য সরকার বার্নার হিসাবে লাইন দিয়ে থাকে। ডাবল বার্নারে কেবল দুটি চুলা ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে। আর সিঙ্গেল বার্নারে মাত্র একটি চুলা। সুতরাং অনুমোদন ছাড়া  অতিরিক্ত সংযোগ দিয়ে বেশি চুলা জ্বালানো জায়েয হবে না। কেউ করলে তা আত্মসাৎ গণ্য হবে। আর এ থেকে অর্জিত টাকাও হারাম হবে। ভাড়াটিয়ার জন্য ভিন্ন চুলার ব্যবস্থা করতে হলে পৃথক অনুমোদন নেওয়া জরুরি। চাই এতে যাই খরচ হোক না কেন।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪৯০; রদ্দুল মুহতার ৬/৩৬

Sharable Link

মুহাম্মদ হাসান বিন জাকির - আবদুল্লাহপুর, মুন্সিগঞ্জ

১৩৬২. Question

আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব থাকাকালীন সে না বালেগ শিশু দ্বারা আযান দেওয়ান। এমতাবস্থায় উক্ত আযান কি সঠিক হবে? দয়া করে এর সমাধান দিয়ে উপকৃত করবেন।

Answer

আযান শরীয়তের গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল, যা বালেগ পুরুষ দ্বারাই হওয়া কাম্য। অবশ্য আযানের গুরুত্ব বোঝে এবং সহীহ শুদ্ধভাবে উচ্চস্বরে আযান দিতে পারে এমন নাবালেগ আযান দিয়ে দিলে তা সহীহ বলে গণ্য হবে। তবে তাকে নিয়মিত মুয়াযযিন বানানো আদৌ ঠিক নয়। আর একেবারে অবুঝ শিশুর আযান সহীহ নয়।

-মুসান্নাফ ইবনে শাইবা ১/২৫৬; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৭২; আলবাহরুর রায়েক ১/৪৪২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৪৯-৫০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৫২০; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩৯১

Sharable Link

মুহাম্মদ অলিউল্লাহ - ছাগলনাইয়া, ফেনী

১৩৬৩. Question

নাপাকী কয় প্রকার ও কী কী? এবং নাপাকীর ক্ষমাযোগ্য পরিমাণ কতটুকু? নাপাকী থেকে পবিত্র হওয়ার পদ্ধতি কয় প্রকার ও কী কী? বিশেষ করে নিম্নের ইবারত এর হল করলে খুশি হব

قال في شرح التنوير : أما لو غسل في غدير وصب عليه الماء كثيرا أو جرى عليه الماء طهر مطلقا بلا شرط  عصر وتجفيف وتكرار غمس.

Answer

নাপাকী প্রধানত দুই প্রকার। ১. নাজাসাতে গলীযা। যে নাপাকীর হুকুম শক্ত। ২. নাজাসাতে খফীফা। যে নাপাকীর হুকুম কিছু্টা হালকা। নাজাসাতে গলীযা আবার দুই প্রকার। ১. তরল নাপাকী যেমন মানুষের পেশাব, রক্ত, বীর্য ইত্যাদি। ২. গাঢ় বা শক্ত নাপাকী যেমন মানুষের মল, পশুর পায়খানা ইত্যাদি।

নাজাসাতে গলীযার মধ্যে যেগুলো তরল তা এক দেরহাম (তথা গোলাকৃতভাবে কাঁচা টাকা পরিমাণ, যা হাতের তালুর নীচু স্থান পরিমাণ হয়) পরিমাণ বা তার কম শরীর বা কাপড়ে লেগে গেলে কাপড় বা শরীর নাপাক হবে না। তদ্রূপ নাজাসাতে গলীজার মধ্যে শক্ত নাপাকী এক সিকি পর্যন্ত অর্থাৎ ৪.৩৭ গ্রাম পরিমাণ বা এর কম কাপড় বা শরীরে লাগলে তা নাপাক হবে না। অবশ্য নাপাকী দূর করা সম্ভব হলে এ পরিমাণ নাজাসাতে গলীযা নিয়ে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী হবে।

আর নাজাসাতে খফীফা শরীর বা কাপড়ের যে অঙ্গে লেগেছে তার চার ভাগের এক ভাগের কম হলে কাপড় নাপাক হবে না। অবশ্য এ নাপাকী ধোয়ার ব্যবস্থা থাকলে তা নিয়ে নামায আদায় করা মাকরুহ তাহরীমী হবে।

নাপাক থেকে পবিত্র করার পদ্ধতিসমূহ :

গাঢ় নাপাকী : যেমন রক্ত, পায়খানা শরীর বা কাপড়ে লাগলে তা এমনভাবে ধৌত করতে হবে যেন নাপাকী পরিপূর্ণ দূর হয়ে যায় । এক্ষেত্রে তিন বার ধোয়া জরুরি নয়। তিন বারের কমে যদি নাপাকী চলে যায় তবেও পাক হয়ে যাবে। অবশ্য এক্ষেত্রেও তিন বার ধোয়া ভাল।

তরল নাপাকী লাগলে তা বালতি বা ছোট বদ্ধ জায়গার পানি দ্বারা পবিত্র করতে চাইলে তিন বার ধৌত করা এবং প্রত্যেক বার নিংড়ানো জরুরি।

হ্যাঁ, যদি এমন কাপড় বড় পুকুরে ভালোভাবে ধৌত করা হয় কিংবা ছোট বদ্ধ জায়গায় না ধুয়ে নাপাকীর উপর অধিক পরিমাণ পানি ঢালা হয় কিংবা এ কাপড়ের উপর দিয়ে প্রচুর পরিমাণ পানি প্রবাহিত হয়ে যায় যার দ্বারা নাপাকী দূর হয়ে যাওয়ার প্রবল ধারণা হয় তবে তিন বার ধোয়া ও নিংড়ানো ছাড়াই পাক হয়ে যায়। প্রশ্নোক্ত ফাতাওয়া শামীর ঐ ইবারতটি এক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। অর্থাৎ তরল নাপাকী লাগলে তা তিন বার ধোয়া ও নিংড়ানো ব্যতীত পবিত্র করার নিয়ম বলা হয়েছে।

Sharable Link

মুহাম্মদ অলিউল্লাহ - ছাগলনাইয়া, ফেনী

১৩৬৪. Question

মুখের ভ্রণ শুকানোর পর যে চাউল হয় তা বের করার দ্বারা (যদি পানি বা রক্ত বের না হয়) অযু বা গোসল নষ্ট হবে কি না?

Answer

না, এর দ্বারা অযু গোসল কিছুই নষ্ট হবে না।

Sharable Link

আলহাজ্ব মুহাম্মদ ইমরান মিয়া - কুমিল্লা

১৩৬৫. Question

আমি রমযান মাসে নিয়মিত এতেকাফ করে থাকি। সে সময় একাধারে কয়েকদিন গোসল না করলে আমার কষ্ট হয় ও ইবাদত পালনে খুব অস্বস্তি বোধ হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এ রকম সমস্যার কারণে আমি মসজিদের গোসলখানায় বা পুকুরে গোসল করতে পারব কি না?

Answer

সাধারণ গোসলের উদ্দেশ্যে ইতেকাফকারী মসজিদ থেকে বের হতে পারবে না। বের হলে ইতেকাফ ভেঙ্গে যাবে। তবে প্রশ্নোক্ত ওজরে এমন করা যেতে পারে যে, ইস্তেঞ্জার উদ্দেশ্যে বের হয়ে ইস্তেঞ্জার পর অযু করতে যতটুকু সময় লাগে সে সময়ের ভিতর গোসল করে নিবে। এক্ষেত্রে গোসল ব্যতীত অন্যান্য কাজ যেমন কাপড় ধোয়া, সাবান ব্যবহার থেকেও বিরত থাকবে।

Sharable Link

আবদুল্লাহ - ঢাকা

১৩৮৫. Question

আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহ্মাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহএর পরে ওয়া মাগফিরাতুহু ওয়া জান্নাতুহু ইত্যাদি বৃদ্ধি করে বলার হুকুম কী? ওয়াবারাকাতুহএর পরে কি কোনো বাক্য বৃদ্ধি করে বলা প্রমাণিত?

Answer

সালাম ও তার উত্তর ওয়াবারাকাতুহ পর্যন্ত বলাই সুন্নত। একাধিক সহীহ হাদীস ও সাহাবায়ে কেরামের আছার দ্বারা এতটুকু বলা এবং এর বেশি না বলা প্রমাণিত। তবে কোনো কোনো দুর্বল বর্ণনায় ওয়াবারাকাতুহএর পরে ওয়া মাগফিরাতুহু ওয়া রিদওয়ানুহু ইত্যাদি শব্দ বৃদ্ধির কথাও পাওয়া যায়। তাই কেউ কোনো সময় এগুলোর কোনোটি বাড়িয়ে বললে নাজায়েয বা বিদআত হবে না। তবে এমন না বলাই শ্রেয়।

-তবারানী (আওসাত) ১/৪৩৭; মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৮/৭০; মুআত্তা মালেক ৩৭৯; তাফসীরে ইবনে কাসীর ১/৫৮৩; ফাতহুল বারী ১১/৮; আদাবুল মুফরাদ হাদীস ১০১৬; আওজাযুল মাসালিক ১৫/১০১

Sharable Link