আমানুল্লাহ - সিলেট

৬৪৯৫. Question

আমাদের মহল্লার মসজিদে নির্ধারিত ইমাম আছেন। তবে নির্ধারিত মুআযযিন নেই। তাই মহল্লার এক মুরব্বি লোক সাধারণত আযান দিয়ে থাকেন। ইমাম সাহেব না থাকলে কখনো কখনো তিনি ইমামতিও করেন। কিন্তু এই মুরব্বি আটরশির পীরের মুরিদ। এলাকার দ্বীনদার মুসল্লীগণ তাকে এই রাস্তা থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য অনেক চেষ্টা করেছেন; কিন্তু সে এই বিষয়ে কিছু শুনতেই রাজি নয়। এ বিষয়ে এলাকার লোকদের সাথে তার মাঝে মাঝেই ঝামেলা হয়। মসজিদ কমিটি বিষয়টির চূড়ান্ত মিমাংসা করার জন্য একবার তাকে নিয়ে বসে। তখন আটরশির পীরের বিষয়ে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করা হলে একপর্যায়ে সে বলে আপনারা সবাই জানেন, আমি আটরশির পীরের মুরিদ। আমি মসজিদ ছাড়তে পারি, আমি আমার পরিবার ছাড়তে পারি, কিন্তু আমি আমার পীরকে ছাড়তে পারব না। এতে যদি আমাকে জাহান্নামেও যেতে হয়, তাতেও আলহামদু লিল্লাহ। (নাউযু বিল্লাহ)।

তার এই বক্তব্যের পর এলাকায় তাকে নিয়ে আরো বেশি সমস্যা তৈরি হয়। এলাকার লোকদের সন্দেহ হচ্ছে যে, এই পীরের মুরীদের পেছনে নামায পড়া যাবে কি না? যদি তার পেছনে নামায পড়া হয়, তাহলে নামায সহীহ হবে কি না? এবং তাকে আযানের দায়িত্বে বহাল রাখা যাবে কি না?

মুফতী সাহেবের কাছে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে বিষয়টির সমাধান জানতে চাচ্ছি।

Answer

আটরশির পীর ও তার মুরিদদের ঈমান-বিধ্বংসী সুস্পষ্ট শিরকী ও কুফরী আকীদাসহ বহু ভ্রান্ত ও  গোমরাহীপূর্ণ মতবাদ রয়েছে। যা তাদের বিভিন্ন বক্তব্য ও লেখায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। যেগুলো বিশ্বাস করলে কোনো ব্যক্তি কিছুতেই সঠিক মুসলমান থাকতে পারে না। যার কিছু নমুনা সামনে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রশ্নে আটরশির এমন-ই এক মুরিদ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে, প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী যে নিজেই তার সম্পর্কে পরিষ্কার বলে দিয়েছে যে, আপনারা সবাই জানেন, আমি আটরশি পীরের মুরিদ। আমি মসজিদ ছাড়তে পারি, আমি আমার পরিবার ছাড়তে পারি, কিন্তু আমি আমার পীরকে ছাড়তে পারব না। এতে যদি আমাকে জাহান্নামেও যেতে হয়, তাতেও আলহামদু লিল্লাহ।

তার এ কথা থেকেই স্পষ্ট, সে আটরশির শিরকী ও কুফরী আকীদা-বিশ্বাসের পরিপূর্ণ অনুসারী। তাছাড়া স্বয়ং তার এ কথাটিই আরেক ভয়ংকর ঈমান-বিধ্বংসী কুফরী কথা। অতএব এই ব্যক্তিকে কিছুতেই নামাযের ইমামতির দায়িত্ব দেওয়া যাবে না এবং তার পেছনে নামায পড়লে নামায আদায় হবে না। তাই মসজিদ কমিটির ওপর জরুরি হল, এই ব্যক্তিকে আযান-ইমামতি কোনো কিছুর সুযোগ না দেওয়া। এটি তাদের ঈমানী দায়িত্ব। এতে তারা অবহেলা করলে মসজিদে বাতিলপন্থী লোকের আযান-ইমামতির সুযোগ দেওয়া এবং মুসল্লীদের নামায সহীহ না হওয়ার দায়ভার তাদের ওপরও বর্তাবে। আল্লাহ তাআলা সবাইকে হেফাযত করুন এবং দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন।

আটরশির পীরের কুফরী ও শিরকী আকীদা-বিশ্বাস

আটরশির পীর ও তার মুরিদদের যে ভয়ংকর কুফরী ও শিরকী আকীদা-বিশ্বাসগুলো রয়েছে, তার থেকে নমুনাস্বরূপ কিছু বিষয় তুলে ধরা হল

১. তাদের আকীদা হল, কালেমা পড়ার পর কেউ শিরকী ও কুফরী কথা ও কাজে ডুবে থাকলেও পরকালে তার মুক্তি পাওয়া সম্ভব। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা তাকে মাফ করে দিয়ে জান্নাত দিয়ে দিতে পারেন। এ ব্যাপারে আটরশির পীরের সুস্পষ্ট বক্তব্য এই

যে ব্যক্তি এই কলেমা শরীফকে বিশ্বাস করে এবং মুখে উচ্চারণ করে এবং তাহার সহিত সে যদি শিরকী ও কুফরীর ভিতর ডুবিয়াও থাকে, তাহা হইলেও আশা আছে যে, এই কলেমা শরীফের দ্বারা সে একদিন মুক্তি পাইবে। (নসিহত, বিশ্ব জাকের মঞ্জিল প্রেস, আটরশি, দ্বিতীয় মুদ্রণ, পৃ. ৩২২)

কুফর ও শিরক সম্পর্কে এ হচ্ছে তাদের আকীদা-বিশ্বাস। অথচ যে ব্যক্তি কুফরীতে ডুবে থাকবে সে নিশ্চিত কাফের। আর কাফের চিরস্থায়ী জাহান্নামী। পরকালে কখনোই মুক্তি পাবে না। এটি সরাসরি কুরআন কারীমের আয়াত দ্বারা পরিষ্কারভাবে প্রমাণিত।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন

اِنَّ الَّذِیْنَ كَفَرُوْا وَ مَاتُوْا وَ هُمْ كُفَّارٌ اُولٰٓىِٕكَ عَلَیْهِمْ لَعْنَةُ اللهِ وَ الْمَلٰٓىِٕكَةِ وَ النَّاسِ اَجْمَعِیْنَ،خٰلِدِیْنَ فِیْهَا  لَا یُخَفَّفُ عَنْهُمُ الْعَذَابُ وَ لَا هُمْ یُنْظَرُوْنَ.

যারা কাফের এবং কাফের অবস্থায়ই মৃত্যু বরণ করেছে ওদের ওপর আল্লাহ, ফেরেশতা ও মানুষ সকলের লানত। যাতে ওরা চিরকাল থাকবে। ওদের থেকে শাস্তি লাঘব করা হবে না এবং ওদের অবকাশও দেওয়া হবে না।(সূরা বাকারা (২) : ১৬১-১৬২)

আল্লাহ তাআলা আরো ইরশাদ করেন

اِنَّ الَّذِیْنَ كَفَرُوْا وَ ظَلَمُوْا لَمْ یَكُنِ اللهُ لِیَغْفِرَ لَهُمْ وَ لَا لِیَهْدِیَهُمْ طَرِیْقًا، اِلَّا طَرِیْقَ جَهَنَّمَ خٰلِدِیْنَ فِیْهَاۤ اَبَدًا وَ كَانَ ذٰلِكَ عَلَی اللهِ یَسِیْرًا.

যারা কুফরী করেছে এবং (অন্যকে আল্লাহর পথে বাধা দিয়ে তাদের ওপর) জুলুম করেছে আল্লাহ কখনোই ওদের ক্ষমা করবেন না এবং ওদেরকে কোনো পথ দেখাবেন না, জাহান্নামের পথ ছাড়া, যেখানে ওরা চিরকাল থাকবে। আর এ আল্লাহর পক্ষে সহজ। সূরা নিসা (৪) : ১৬৮-১৬৯

পক্ষান্তরে শিরকও এমন মহা পাপ যে, আল্লাহ পরকালে অন্যান্য গুনাহ ক্ষমা করলেও শিরককারীকে ক্ষমা করবেন না। এটিও কুরআন কারীমে পরিষ্কারভাবে ইরশাদ হয়েছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন

اِنَّ اللهَ لَا یَغْفِرُ اَنْ یُّشْرَكَ بِهٖ وَ یَغْفِرُ مَا دُوْنَ ذٰلِكَ لِمَنْ یَّشَآءُ وَ مَنْ یُّشْرِكْ بِاللهِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلٰلًۢا بَعِیْدًا.

নিশ্চয় আল্লাহ তার সঙ্গে শিরক করাকে ক্ষমা করবেন না। তবে এছাড়া অন্যান্য (গুনাহ) যার জন্য ইচ্ছা, ক্ষমা করবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে শিরক করেছে সে সুদূর গোমরাহীতে পতিত হল। (সূরা নিসা (৪) : ১১৬)

২. আটরশির পীরের আরেকটি ঈমান বিধ্বংসী দাবি এবং তার মুরিদদের ভয়াবহ শিরকী আকীদা হল, মুরিদ পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুক না কেন, সে কোনো বিপদে পড়লে পীর তা জানতে পারে এবং তাকে বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারে। এমনকি পীর দুনিয়া থেকে কবরে চলে যাওয়ার পরও তার এমন ক্ষমতা থাকে। মুরিদদের ভালো-মন্দ সবকিছু পীরের হাতে। মুরিদ বিপদে পড়ে পীরকে স্মরণ করে সাহায্য চাইলে পীর তাকে রক্ষা করতে পারে।

এ ব্যাপারে আটরশির পীরের বক্তব্য হল

মুরিদ বিপদে পতিত হইয়া পৃথিবীর অপর প্রান্ত হইতেও আপন পীরকে স্মরণ করিলে, এই প্রান্ত হইতেও মুরিদের ডাকে সাড়া দিয়া পীরে কামেল আত্মিকভাবে তাওয়াজ্জুহর হাত বাড়াইয়া বিপদগ্রস্ত মুরিদকে বিপদ হইতে রক্ষা করিতে পারেন। এই ক্ষমতা যাহার নাই, তিনি কামেল মোকাম্মেল পীর নহেন। (নসিহত, বিশ্ব জাকের মঞ্জিল প্রেস, আটরশি, দ্বিতীয় মুদ্রণ, পৃ. ৯০৫)

এ ব্যাপারে তার আরেকটি বক্তব্য হচ্ছে

আমার পীরের মতন ক্ষমতাধর ওলী পৃথিবীতে খুব কমই আসিয়াছেন। তিনি নূরময় জগতে চলিয়া গিয়াছেন ঠিকই, কিন্তু সেখান থেকেও যাবতীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করিতেছেন। ইন্তেকালের পূর্বে আমাকে বলিয়াছেন বাবা, তোমার কোনো চিন্তা নাই, তোমার যাবতীয় কাজ আমি আমার হাতে রাখিলাম। (নসিহত, বিশ্ব জাকের মঞ্জিল প্রেস, আটরশি, দ্বিতীয় মুদ্রণ, পৃ. ১০৯৩)

এ হচ্ছে তাদের আরেক ভয়ংকর শিরকী আকীদা। ইসলামের আকীদা হল, কাউকে বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করার ক্ষমতা কেবল আল্লাহ তাআলার হাতে। তেমনি সবার ভালো-মন্দের ক্ষমতাও কেবল আল্লাহ তাআলারই হাতে। সাধারণ কোনো মানুষ তো দূরের কথা, কোনো নবী-রাসূলের হাতেও আল্লাহ তাআলা এই ক্ষমতা দেননি। এমনকি কোনো নবী-রাসূল অন্যের ভালো-মন্দ তো নয়ই; স্বয়ং নিজের ভালো-মন্দের জন্যও আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল।

আল্লাহ তাআলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ঘোষণা করার নির্দেশ দিচ্ছেন

قُلْ لَّاۤ اَمْلِكُ لِنَفْسِیْ نَفْعًا وَّ لَا ضَرًّا اِلَّا مَا شَآءَ اللهُ وَ لَوْ كُنْتُ اَعْلَمُ الْغَیْبَ لَا سْتَكْثَرْتُ مِنَ الْخَیْرِ  وَ مَا مَسَّنِیَ السُّوْٓءُ  اِنْ اَنَا اِلَّا نَذِیْرٌ وَّ بَشِیْرٌ لِّقَوْمٍ یُّؤْمِنُوْنَ.

আপনি বলে দিন, আমি আমার নিজের ভালো-মন্দেরও মালিক নই। কিন্তু আল্লাহ যা চান (তাই হয়)। আর যদি আমি অদৃশ্যের কথা জানতাম, তবে নিশ্চয় বহু কল্যাণ অর্জন করে নিতাম এবং আমাকে অকল্যাণ স্পর্শ করত না। আমি তো শুধু সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা ঈমানদার লোকদের জন্য। (সূরা আরাফ (৭) : ১৮৮)

অতএব আল্লাহ ছাড়া কাউকে লাভ-ক্ষতির মালিক মনে করা এবং বিপদ-আপদে অন্য কাউকে ডাকা ও গাইরুল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করা পরিষ্কার শিরক।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন

وَ لَا تَدْعُ مِنْ دُوْنِ اللهِ مَا لَا یَنْفَعُكَ وَ لَا یَضُرُّكَ  فَاِنْ فَعَلْتَ فَاِنَّكَ اِذًا مِّنَ الظّٰلِمِیْنَ،وَ اِنْ یَّمْسَسْكَ اللهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهٗۤ اِلَّا هُوَ وَ اِنْ یُّرِدْكَ بِخَیْرٍ فَلَا رَآدَّ لِفَضْلِهٖ  یُصِیْبُ بِهٖ مَنْ یَّشَآءُ مِنْ عِبَادِهٖ وَهُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِیْمُ.

আর আপনি আল্লাহকে ছাড়া অন্য কাউকে ডাকবেন না, যে আপনার উপকারও করতে পারে না এবং আপনার ক্ষতিও করতে পারে না। আপনি যদি (এরূপ) করেন, তবে তখন আপনিও জালেমদের অন্তর্ভুক্ত হবেন। যদি আল্লাহ আপনার ওপর কোনো কষ্ট আপতিত করেন, তবে এর অপসারণকারী তিনি ছাড়া আর কেউই নেই। আর যদি তিনি আপনাকে কোনো কল্যাণ পৌঁছাতে চান, তবে তার অনুগ্রহ রদকারী কেউ নেই। তিনি আপন বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা নিজ অনুগ্রহ দান করে থাকেন। আর তিনি অতি ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। সূরা ইউনুস (১০) : ১০৬-১০৭

সূরা ফাতেহায় ইরশাদ হয়েছে

اِیَّاكَ نَعْبُدُ وَ اِیَّاكَ نَسْتَعِیْنُ.

আমরা আপনারই ইবাদত করি এবং আপনারই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি। (সূরা ফাতেহা (১) : ৪)

সাহায্য প্রার্থনা সম্পর্কে এ হচ্ছে মুমিনের আকীদা। মুমিন কেবলই আল্লাহ তাআলার দরবারে সাহায্য প্রার্থনা করে। কোনো গাইরুল্লাহর কাছে কিছুতেই নয়।

৩. তাদের আরেকটি ভয়াবহ কুফরী আকীদা হল, তাওহীদে আদইয়ান। যার সারকথা হল, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক আনীত দ্বীন ইসলাম ছাড়াও যে কোনো ধর্মের অনুসরণ করে মানুষ মুক্তি পেতে পারে।

এ ব্যাপারে আটরশির পীরের বক্তব্য হল

হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টানগণ নিজ নিজ ধর্মের আলোকেই সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য অর্জন করতে পারে এবং তাহলেই কেবল বিশে^ শান্তি আসবে। (আটরশির কাফেলা, পৃ. ৮৯, ২য় সংস্করণ, ১৯৮৪)

কালেমা পাঠকারী মুসলমান মাত্রই জানে, এরূপ আকীদা-বিশ্বাস পোষণকারী ব্যক্তির ঈমান থাকে না। তার এ কথার অর্থ দাঁড়ায়, হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা দেব-দেবী ও অজস্র প্রতিমা পূজা করে জঘন্য প্রকৃতির কাফের মুশরিক হয়েও আল্লাহর প্রিয়পাত্র হতে পারবে। তদ্রূপ বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানরা সুস্পষ্ট কাফের-মুশরিক হয়ে এবং আল্লাহর দুশমন হয়েও আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারবে। জানা কথা যে, এমন জঘন্য আকীদা লালনকারী কিছুতেই মুসলমান হতে পারে না। জঘন্য প্রকৃতির কাফের মুলহিদ ও যিন্দিক ব্যতীত এমন আকীদা পোষণ করতে পারে না। যারা কাফের ও মুশরিক, কুরআনের ভাষ্য অনুযায়ী আল্লাহর প্রিয়পাত্র হওয়া তো দূরের কথা, তারা আল্লাহর দুশমন। চির জাহান্নামী।

কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে

اِنَّهٗ مَنْ یُّشْرِكْ بِاللهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَیْهِ الْجَنَّةَ وَ مَاْوٰىهُ النَّارُ.

যে আল্লাহর সঙ্গে শিরক করবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন এবং তার বাসস্থান হবে জাহান্নাম। সূরা মায়েদা (৫) : ৭২

শরীয়তে মুহাম্মাদী আবির্ভাবের পর আল্লাহর কাছে ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীন ও শরীয়ত গ্রহণযোগ্য নয়। আল্লাহ তাআলা কুরআন কারীমে ইরশাদ করেন

اِنَّ الدِّیْنَ عِنْدَ اللهِ الْاِسْلَامُ .

নিঃসন্দেহে আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য দ্বীন একমাত্র ইসলাম। (সূরা আলে ইমরান (৩) : ১৯)

আরো ইরশাদ করেন

وَ مَنْ یَّبْتَغِ غَیْرَ الْاِسْلَامِ دِیْنًا فَلَنْ یُّقْبَلَ مِنْهُ وَ هُوَ فِی الْاٰخِرَةِ مِنَ الْخٰسِرِیْنَ.

যে ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম তালাশ করে, কস্মিনকালেও তার কাছ থেকে তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে হবে ক্ষতিগ্রস্ত। (সূরা আলে ইমরান (৩) : ৮৫)

কোনো মানব রচিত ধর্ম তো দূরের কথা, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আবির্ভাবের পর ইসলাম গ্রহণ না করে বরং কেউ যদি পূর্ববর্তী কোনো শরীয়তেরও অনুসরণ করে, তাহলেও সে পরকালে মুক্তি পাবে না।

আল্লাহ তাআলা কুরআন কারীমে ইরশাদ করেন

وَ قُلْ لِّلَّذِیْنَ اُوْتُوا الْكِتٰبَ وَالْاُمِّیّٖنَ ءَاَسْلَمْتُمْ فَاِنْ اَسْلَمُوْا فَقَدِ اهْتَدَوْا  وَاِنْ تَوَلَّوْا فَاِنَّمَا عَلَیْكَ الْبَلٰغُ وَاللهُ بَصِیْرٌۢ بِالْعِبَادِ.

এবং আহলে কিতাব ও নিরক্ষরদেরকে (আরবের মুশরিকদেরকে) বলে দিন, তোমরা কি ইসলাম গ্রহণ করেছ? তখন যদি তারা ইসলাম গ্রহণ করে, তবে হেদায়েত পেয়ে গেল। আর যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে (আপনার চিন্তার কারণ নেই। কেননা) আপনার দায়িত্ব তো হল শুধু পৌঁছে দেওয়া। আর আল্লাহর দৃষ্টিতে রয়েছে সকল বান্দা। (সূরা আলে ইমরান (৩) : ২০)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন

وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ، لَا يَسْمَعُ بِي أَحَدٌ مِنْ هَذِهِ الْأُمَّةِ يَهُودِيٌّ وَلَا نَصْرَانِيٌّ، ثُمَّ يَمُوتُ وَلَمْ يُؤْمِنْ بِالَّذِي أُرْسِلْتُ بِه إِلَّا كَانَ مِنْ أَصْحَابِ النَّارِ.

ওই সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ, এ উম্মতের ইহুদী বা নাসারা যে-ই আমার দাওয়াত পাবে আর আমার আনীত দ্বীনের ওপর ঈমান না এনে মৃত্যুবরণ করবে, সে হবে জাহান্নামী। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৫৩)

শুধু এ কয়টিই নয়; বরং ঐ পীর ও তার অনুসারীদের আরো বহু ঈমান-বিধ্বংসী আকীদা-বিশ্বাস ও বক্তব্য রয়েছে। আর তাদের দ্বীন-ধর্ম পালনের পদ্ধতি যে সাধারণ মুসলমানদের থেকে ভিন্ন এ কথাও সবার জানা। সুতরাং এমন আকীদার লোকদেরকে মসজিদের কোনো দায়িত্ব প্রদান থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।

Sharable Link

মুহাম্মাদ নোমান - কক্সবাজার

৬৪৯৬. Question

একবার আমরা কয়েক বন্ধু মিলে জুমার দিন সকালে সফরে বের হই। গন্তব্যে পৌঁছাতে প্রায় তিনটা বেজে যায়। তখন সব জায়গায় জুমার নামায শেষ। যেহেতু আমরা সবাই মুসাফির, তাই সকলেই জামাতের সাথে দুই রাকাত যোহরের নামায আদায় করি। মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাচ্ছি। আমাদের উক্ত নামায জামাতের সাথে পড়া সহীহ হয়েছে কি?

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যোহর নামায জামাতের সাথে পড়া আপনাদের জন্য মাকরূহে তাহরীমী হয়েছে। কেননা যে এলাকায় জুমার জামাত হয় সেখানে যারা জুমায় শরীক হতে পারবে না, তাদের জন্য নিয়ম হল, যোহরের নামায একাকী আদায় করা। একাকী আদায় না করে জামাতে পড়া মাকরূহে তাহরীমী।

আলমাবসূত, সারাখসী ২/৩৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৮৮; আলবাহরুর রায়েক ২/১৫৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৫৭

Sharable Link

সফওয়ান - নেত্রকোনা

৬৪৯৭. Question

আমি ঢাকায় পড়াশুনা করি। আমার বাড়ী নেত্রকোনা জেলা বারহাট্টা থানায়। একবার ঢাকা থেকে বাড়ি যাওয়ার সময় নেত্রকোনা সদরে পৌঁছে যোহর নামায আদায় করি। মুসাফির হওয়ার কারণে কসর করি। বাড়িতে পৌঁছে দেখি, তখনো যোহর নামাযের ওয়াক্ত বাকি আছে। আমি জানতে চাচ্ছি, এক্ষেত্রে মুকীম হওয়ার পর কি যোহর নামায পুনরায় চার রাকাত পড়তে হবে।

Answer

না, উক্ত যোহর নামায মুকীম হওয়ার পর পুনরায় পড়তে হবে না। কেননা মুসাফির অবস্থায় কোনো নামায কসর আদায় করার পর ওই ওয়াক্তের মধ্যেই মুকীম হয়ে গেলেও তা পুনরায় পড়ার বিধান নেই।

কিতাবুল আছল ১/২৩৬; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৬৭; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৪০৭; ফাতাওয়া সিরাজিয়্যা, ৭৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৪১

Sharable Link

মুহাম্মাদ ইহতেশাম - ফরিদপুর

৬৪৯৮. Question

ব্যস্ততার কারণে গতকাল আমার মাগরিব নামায পড়তে বিলম্ব হয়ে যায়। নামাযে দাঁড়ানোর সময় সন্দেহ হয়ে যে, মাগরিবের ওয়াক্ত বাকি আছে, না এশার ওয়াক্ত শুরু হয়ে গেছে। তখন উক্ত সন্দেহ নিয়ে এ নিয়তে নামায পড়লাম যে, আজকের মাগরিবের নামাযটি আদায় করছি। নামায শেষে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম, নামাযে দাঁড়ানোর আগেই মাগরিবের ওয়াক্ত শেষ হয়ে গেছে।

হযরতের নিকট প্রশ্ন হল, উক্ত সন্দেহ নিয়ে এভাবে আদায়কৃত নামাযটি কি সহীহ হয়েছে?

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে নামায আদায়ের সময় ওয়াক্ত থাকা না থাকার ব্যাপারে সন্দেহ থাকলেও যেহেতু ঐ দিনের মাগরিবের নিয়তেই তা পড়েছেন তাই আপনার উক্ত নামায সহীহ হয়েছে। তবে তা যেহেতু ওয়াক্তের পর পড়েছেন, তাই তা কাযা হিসেবে আদায় হয়েছে।

আততাজনীস ওয়াল মাযীদ ১/৪১৬; আযাযাখীরাতুল বুরহানিয়া ১/৫৩৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৪৪; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/২৬২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৬৬

Sharable Link

তাহনিয়া - ঢাকা

৬৪৯৯. Question

আমার ব্যবহারের কিছু অলংকার আছে। সেগুলোর কোনো কোনোটাতে দামী ডায়মন্ড বসানো আছে। মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাচ্ছি, উক্ত অলংকারের যাকাত আদায়ের সময় কি এই ডায়মন্ডগুলোরও যাকাত দিতে হবে?

Answer

না, উক্ত ডায়মন্ডগুলোর যাকাত দিতে হবে না। কেননা স্বর্ণ রূপা ছাড়া অন্যান্য ধাতব ব্যবসার পণ্য না হলে, সেগুলোর যাকাত দেওয়া ফরয নয়। তাবেয়ী ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন

لَيْسَ فِي الْجَوْهَرِ وَاللُّؤْلُؤِ زَكَاةٌ إِذَا لَمْ يَكُنْ لِلتِّجَارَةِ.

মনি মুক্তা ব্যবসার উদ্দেশ্যে না হলে, তাতে যাকাত নেই। (কিতাবুল আছার, ইমাম মুহাম্মাদ, বর্ণনা ২৯৯)

কিতাবুল আছল ২/৯৭; আলমাবসূত, সারাখসী ২/১৯৭; আলগায়া, সারুজী ৬/১৩১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৮০; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৭৩

Sharable Link

কমল চৌধুরী - মহিপাল, ফেনী

৬৫০০. Question

যাকাতবর্ষ পূর্ণ হওয়ায় গত সপ্তাহে সমুদয় সম্পত্তির হিসাব করে দেখি যেআমার সর্বমোট বিশ লক্ষ টাকার যাকাতযোগ্য সম্পদের ৫০,০০০ টাকা যাকাত আসে। তাই যাকাত দেওয়ার নিয়তে ৫০,০০০ টাকা আলাদা করে একটি ব্যাগে রেখে দিই। কিন্তু দুর্ঘটনাক্রমে টাকাসহ ঐ ব্যাগটি চুরি হয়ে যায়। মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাই, এমতাবস্থায় কি আমার যাকাত মাফ হয়ে গেছে, নাকি পুনরায় ঐ পরিমাণ টাকা যাকাত হিসাবে দিতে হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

যাকাত প্রদানের জন্য আলাদা করে রাখা টাকাগুলো চুরি হয়ে যাওয়ার দ্বারা উক্ত যাকাত আদায় হয়ে যায়নি। আপনাকে উক্ত যাকাত পুনরায় আদায় করতে হবে।

তবে এখন আপনি চুরি হয়ে যাওয়া উক্ত পঞ্চাশ হাজার টাকা বাদ দিয়ে আপনার অবশিষ্ট ১৯ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার যাকাত (৪৮ হাজার ৭৫০ টাকা) আদায় করবেন।

আলমাবসূত, সারাখসী ৩/৩৩; শরহুয যিয়াদাত, কাযীখান ১/২৫১; খিযানাতুল আকমাল ১/২৬৭; আলবাহরুর রায়েক ২/২১১; রদ্দুল মুহতার ২/২৭০

Sharable Link

আবদুর রহমান - গাজীপুর, ঢাকা

৬৫০১. Question

২০১৫ সালে আমার বাবা আমাকে হজ্বে নিয়ে যান। তখন আমার বয়স ছিল ১৭ বছর। এবং সে সময় আমার সম্পদ বলতে কিছুই ছিল না। এখন আলহামদু লিল্লাহ হজ্ব ফরয হওয়ার মতো ক্যাশ আমার নিকট জমা হয়েছে। হযরতের নিকট প্রশ্ন হল, পূর্বের আদায়কৃত হজ্বটি কি ফরয হিসেবে আদায় হয়েছে, না এখন নতুন করে ফরয হজ্ব আদায় করতে হবে?

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার আদায়কৃত পূর্বের হজ্বটি দ্বারাই ফরয হজ্ব আদায় হয়ে গেছে। এখন হজ্ব করার মতো সম্পদের মালিক হলেও পুনরায় হজ্ব আদায় করা আপনার ওপর ফরয হবে না।

আলফাতাওয়া মিন আকাবীলিল মাশায়িখ, পৃ. ১৪৫; মুখতারাতুন নাওয়াযেল ১/৪৯১; গুনইয়াতুন নাসিক, পৃ. ২৪

Sharable Link

মুহাম্মাদ উবাইদুল্লাহ করীম - সাভার, ঢাকা

৬৫০২. Question

ছোট একটি চাকরির সুবাদে ফ্যামিলি নিয়ে ঢাকাতে একটি ভাড়া বাসায় দীর্ঘদিন বসবাস করছি। আমার নিজস্ব সম্পদ বলতে গ্রামে পৈত্রিকসূত্রে পাওয়া একটি বাড়ি ছাড়া আর কিছুই নেই। চাকরি শেষে সেখানে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও বর্তমানে আমরা সেখানে বসবাস করি না। ঐ বাড়িটা বিক্রি করলে ৯/১০ লাখ টাকার মতো হবে। মুহতারামের নিকট প্রশ্ন হল, এমতাবস্থায় আমার ওপর কি হজ্ব পালন করা ফরয?

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার ওপর হজ্ব আদায় করা ফরয নয়। কেননা বর্তমানে ভাড়া বাড়িতে বসবাস করলেও গ্রামের ঐ বাড়িটিই যেহেতু আপনার মালিকানাধীন একমাত্র বাড়ি, তাই এটি বিক্রি করে হজ্ব করা আপনার ওপর ফরয হবে না।

আলবাহরুর রায়েক ২/৩১৩; গুনইয়াতুন নাসিক, পৃ. ২১; মানাসিকে মোল্লা আলী আলকারী, পৃ. ৪৫; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৬২

Sharable Link

শরিফুল ইসলাম - রংপুর

৬৫০৩. Question

আমি রাস্তায় বিভিন্ন সময় ফলমূল ও লেবুর শরবত বিক্রি করি। কখনো এমন হয়, শরবত পান করার সময় কাস্টমারের হাত থেকে অনিচ্ছাকৃতভাবে গ্লাস পড়ে ভেঙে যায়।

মুহতারামের কাছে জানতে চাচ্ছি, এক্ষেত্রে তার থেকে উক্ত গ্লাসের জরিমানা নিতে পারব কি? জানিয়ে উপকৃত করবেন।

Answer

কাস্টমারের হাত থেকে গ্লাসটি পড়ে যাওয়ার পেছনে যদি গ্লাসটি তার ভালোভাবে হাত দিয়ে না ধরা বা তার অন্য কোনো অবহেলা না থাকে, তাহলে এক্ষেত্রে তার থেকে উক্ত গ্লাসের জরিমানা দাবি করা বৈধ হবে না।

অবশ্য গ্লাসটি তার হাতে যাওয়ার পর সেটিকে যদি সে ভালোভাবে না ধরে বা তার অন্য কোনো অবহেলার কারণে যদি সেটি পড়ে গিয়ে ভেঙে যায়, তাহলে তার থেকে ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবেন।

তবে এখানে উল্লেখ্য যে, কোন্টিকে কাস্টমারের ত্রুটি ও অবহেলা গণ্য করা হবে আর কোন্টিকে গণ্য করা হবে না তা নির্ণয় করা সূক্ষ্ম বিষয় এবং মাসআলার হুকুম এর ওপরই নির্ভরশীল। অতএব বাস্তবে কখনো এমন ঘটলে কোনো মুফতী সাহেবের নিকট ঘটনার পুরো বিবরণ দিয়ে মাসআলা জেনে নিতে হবে।

ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৮৬; আলমুহীতুর রাযাবী ৫/১৩৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৬/৮১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৩৬৮

Sharable Link

নজীর আহমাদ - কোটালীপাড়া, গোপালগঞ্জ

৬৫০৪. Question

গত ধানের মৌসুমে আমি ৯০০ টাকা দরে ৪০ মন ধান কিনে রেখেছি। আমার ইচ্ছা হল কয়েক মাস পরে যখন ধানের দাম বেড়ে যাবে তখন আমি ধানগুলো বিক্রি করে দেব। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের দেশে ফাল্গুন-চৈত্র মাসে ধানের দাম বেড়ে যায়। তখন আমি ধানগুলো বিক্রি করার ইচ্ছা করেছি।

আমি শুনেছি, শরীয়তে ইহতিকার তথা পণ্য মজুদ করে রাখা নিষেধ। এখন আমার জানার বিষয় হল, আমার এ কাজ কী শরীয়ত-নিষিদ্ধ ইহতিকার-এর আওতায় পড়বে, নাকি এভাবে ব্যবসা করা আমার জন্য বৈধ হবে? বিষয়টির সমাধান জানিয়ে উপকৃত করবেন।

Answer

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী আপনি যে পরিমাণ ধান কিনে রেখেছেন এর পরিমাণ যেহেতু সামান্য, যার কারণে বাজার প্রভাবিত হয় না এবং এলাকায় ধানের সংকট সৃষ্টি হয় না, তাই তা শরীয়ত-নিষিদ্ধ ইহতিকার তথা মজুদকরণের আওতায় পড়বে না। কিন্তু যদি একই এলাকায় বহু মানুষ এ পরিমাণ ধান (বা অন্য কোনো খাদ্যদ্রব্য) কিনে মজুদ করে রাখে যার দ্বারা এলাকায় ধানের সংকট দেখা দেয় এবং বাজারে ধানের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যায়, তাহলে তখন তা অন্যায় ও গুনাহের কাজ হবে। হাদীস শরীফে এসেছে

مَنِ احْتَكَرَ فَهُوَ خَاطِئٌ.

যে ব্যক্তি পণ্য মজুদ করে রাখবে সে গুনাহগার হবে। (সহীহ মুসিলম, হাদীস ১৬০৫)

শরহু মুখতাসারিত তাহাবী, জাস্সাস ৮/৫৪৬; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৩০৮; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৮/৬০; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩৯৮

Sharable Link

মুহাম্মাদ আহসান হাবীব - ঢাকা

৬৫০৫. Question

আমি একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের পরিচালক। ছাত্রদের মেধা বিকাশের লক্ষ্যে আমরা বছরের বিভিন্ন সময়ে বেশ কয়েকটি শিক্ষামূলক প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকি। প্রতিযোগিতার বিষয়গুলো হল, প্রবন্ধ রচনা, সাধারণ জ্ঞান, কবিতা আবৃত্তি, বিতর্ক, বক্তৃতা ইত্যাদি। এসব প্রতিযোগিতায় যারা ১ম, ২য় ও ৩য় স্থান লাভ করে, তাদেরকে বিভিন্ন দ্বীনী কিতাবাদি পুরস্কার দেওয়া হয়।

প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের নিয়ম হল, ২০০ টাকা করে জমা দিয়ে একটি ফরম পূরণ করতে হয়। টাকা জমা দিয়ে ফরম পূরণ না করলে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয় না। এই টাকা দিয়েই প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কারের আয়োজন করা হয়।

মুহতারামের নিকট আমাদের জানার বিষয় হল, উক্ত পদ্ধতিতে প্রতিযোগীদের থেকে টাকা উঠিয়ে বিজয়ীদের পুরস্কারের ব্যবস্থা করা কি জায়েয আছে? যদি জায়েয না হয়, তাহলে এর শরীয়তসম্মত পদ্ধতি কী হবে?

Answer

প্রতিযোগীদের থেকে টাকা নিয়ে সেই টাকা দিয়ে বিজয়ীদেরকে পুরস্কার দেওয়া নাজায়েয। এটি কিমার তথা জুয়ার অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং এ থেকে বিরত থাকা জরুরি।

এক্ষেত্রে সঠিক পন্থায় পুরস্কারের ব্যবস্থা করতে চাইলে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী ব্যতীত অন্য মাধ্যমে পুরস্কারের ব্যবস্থা করতে হবে।

মুয়াত্তা ইমাম মুহাম্মাদ, বর্ণনা ৮৫৯; শরহুস সিয়ারিল কাবীর, সারাখসী ১/৬৩; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী, জাস্সাস ৭/৩৬৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৮/৭৩; রদ্দুল মুহতার ৬/৪০২; ফিকহুন নাওয়াযেল ৩/২১৭

Sharable Link

মুহাম্মাদ রবিউল হক - ফেনী

৬৫০৬. Question

গ্রাম-গঞ্জে বিভিন্ন সাপুড়েদেরকে দেখা যায় তারা সাপের খেলা দেখানোর জন্য সাপ নিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরতে থাকে। আর গ্রামের কিছু মানুষ ঘণ্টা প্রতি নির্ধারিত পারিশ্রমিকের বিনিময়ে সাপুড়ের সাথে সাপ খেলা দেখানোর চুক্তি করে এবং খেলা দেখানো শেষ হলে দর্শকদের থেকে টাকা উঠিয়ে তার পারিশ্রমিক পরিশোধ করে দেয়।

জানতে চাই, শরীয়তের দৃষ্টিতে সাপ খেলা দেখানো এবং এর বিনিময় নেওয়া কি জায়েয আছে?

Answer

সাপ খেলা দেখানো এবং একে পেশা হিসেবে গ্রহণ করা এবং এর বিনিময় নেওয়া জায়েয নয়। কারণ শরীয়তের দৃষ্টিতে এটি বিনিময়যোগ্য কাজই নয়। এ ধরনের খেলা দেখা ও দেখানো সম্পূর্ণ বেহুদা ও অনর্থক কাজ। এই খেলায় দ্বীনী ও দুনিয়াবী কোনো ফায়েদা বা উপকার নেই। বরং এধরনের অনর্থক ও বাজে কাজে সময়, শ্রম ও অর্থ ব্যয় করা এ নিআমতগুলোর অপব্যয়ের অন্তর্ভুক্ত।  এছাড়া এজাতীয় পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের অনেকেরই সাপের কামড়েই মৃত্যু ঘটে। এই কাজ নাজায়েয হওয়ার এটিও একটি কারণ। সুতরাং এ থেকে বিরত থাকা জরুরি।

জামে তিরমিযী, হাদীস ১৬৩৭; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী, জাস্সাস ৮/৫৪৪; আলমাবসূত, সারাখসী ১৬/৩৭; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩৯৪

Sharable Link

মামুন মুনশী - মোমেনশাহী

৬৫০৭. Question

আমি ও আমার ফুফাতো ভাই মিলে একটি কাপড় ইস্ত্রির দোকান দিয়েছি। আমাদের মাঝে এভাবে চুক্তি হয়, ইস্ত্রির অর্ডার গ্রহণ করা, কাপড় ইস্ত্রি করা সব কাজ আমরা দুজনে মিলেই করব। যা আয় হবে তা আমরা উভয়ে মাস শেষে সমানভাবে ভাগ করে নেব। কিন্তু কিছুদিন পর আমার ফুফাত ভাই অসুস্থ হয়ে পড়ে। ফলে এক সপ্তাহ পর্যন্ত সে দোকানে আসতে পারেনি। সে দিনগুলোতে অর্ডারের সব কাপড় আমি একাই ইস্ত্রি করেছি।

মুহতারামের কাছে জানার বিষয় হল, যে দিনগুলোতে দোকানের সব কাজ আমি একা করেছি, সে দিনগুলোর উপার্জিত টাকাও কি দুজনের মাঝে ভাগ করতে হবে, নাকি সে টাকা আমি একাই নিতে পারব?

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার শরীকের অসুস্থতার দিনগুলোতে কাপড় ইস্ত্রির সব কাজ আপনি একা করলেও তা থেকে উপার্জিত টাকা পূর্বশর্ত অনুযায়ী দুজনের মাঝেই ভাগ করতে হবে। তা আপনি একা নিতে পারবেন না। এধরনের চুক্তিতে কোনো শরীক কোনো কারণে কাজ করতে না পারলেও উপার্জিত অর্থ শর্ত অনুযায়ী দুজনের মাঝেই বণ্টিত হবে। যদিও বাস্তবসম্মত ওজর ছাড়া অবহেলাবশত এমনটি করা ঠিক নয়।

কিতাবুল আছল ৪/৫১; আলমাবসূত, সারাখসী ১১/১৫৭; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী, জাস্সাস ৩/২৫২; বাদায়েউস সানায়ে ৫/১০৩; দুরারুল হুক্কাম শরহু মাজাল্লাতিল আহকাম ৩/৪১৫

Sharable Link

মুহাম্মাদ বেলাল হোসেন - মুরাদনগর, কুমিল্লা

৬৫০৮. Question

আমি আলহামদু লিল্লাহ প্রতি বছর একটি গরু কুরবানী করি। তার গোশত তিন ভাগ করে এক ভাগের কিছু অংশ এলাকার গরিব-মিসকীনকে দেই আর কিছু অংশ আমার গরিব আত্মীয়-স্বজনদেরকে দেই। এখন জানার বিষয় হল, কুরবানীর পশুর গোশত কি সমান তিন ভাগে ভাগ করা আবশ্যক, নাকি কেউ চাইলে পুরো গোশত নিজেই রেখে দিতে পারবে? আর আমি কি আমার গরিব আত্মীয়-স্বজনদের বাসায় বেড়াতে গেলে আমার দেওয়া উক্ত গোশত খেতে পারব?

Answer

কুরবানীর পশুর গোশত তিন ভাগ করে এক ভাগ নিজের ও নিজ পরিবার-পরিজনের জন্য রাখা, আরেকভাগ আত্মীয়-স্বজনদেরকে দেওয়া এবং আরেকভাগ গরিব-মিসকীনদেরকে দেওয়া মুস্তাহাব।

ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কুরবানীর গোশতের তিন ভাগের এক ভাগ পরিবার-পরিজনকে দিতেন। আরেকভাগ গরিব আত্মীয়-স্বজনদেরকে দিতেন। আরেকভাগ দানপ্রার্থীদেরকে দান করে দিতেন। (আলমুগনী, ইবনে কুদামা ১৩/৩৭৯)

কুরবানীর গোশত এভাবে তিন ভাগে ভাগ করা মুস্তাহাব; জরুরি নয়। সুতরাং পরিবারের প্রয়োজনে কেউ চাইলে উক্ত বণ্টনের ভেতর কমবেশ করতে পারবে। এতে কুরবানীর কোনো সমস্যা হবে না।

আর আপনার কোনো গরিব আত্মীয়-স্বজনদের বাসায় গেলে, তারা যদি আপনাকে আপনার দেওয়া কুরবানীর গোশত দ্বারা মেহমানদারি করে, তা খেতে পারবেন। এতে কোনো সমস্যা নেই।

সহীহ মুসলিম, বর্ণনা ১৯৭২; তুহফাতুল ফুকাহা ৩/৮৭; ফাতাওয়া সিরাজিয়্যা, পৃ. ৮৯; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/৪৮৬; রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৮

Sharable Link

নাবিলা - ফুলগাজী, ফেনী

৬৫০৯. Question

গত কুরবানীর ঈদের পরের দিন আমার বিবাহ হয়। বিয়ের আগে আমার মালিকানাধীন কোনো সম্পদ ছিল না। বিবাহের সময় উপহার ও মোহর বাবত তিন ভরি স্বর্ণ ও নগদ পঞ্চাশ হাজার টাকা আমার মালিকানায় আসে। কয়েকদিন আগে আমার শ্বশুরবাড়ির এক মহিলা আমাকে বললেন, তুমি যেহেতু কুরবানীর সময়ের ভেতরেই নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছ, তাই এই বছর তোমার ওপর কুরবানী ওয়াজিব ছিল। জানতে চাই, ঐ মহিলার কথাটি কি ঠিক? বাস্তবেই কি এ বছর আমার ওপর কুরবানী ওয়াজিব ছিল?

Answer

হাঁ, উক্ত মহিলা ঠিকই বলেছেন। কুরবানীর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অর্থাৎ দশ যিলহজ্ব ফজর থেকে বার যিলহজ্ব সূর্যাস্তের ভেতর নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়ে গেলেই কুরবানী ওয়াজিব হয়ে যায়। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যেহেতু কুরবানীর সময়ের মধ্যেই নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়ে গেছেন, তাই এ বছর আপনার ওপর কুরবানী ওয়াজিব ছিল। কিন্তু আপনি যেহেতু কুরবানী করেননি, তাই এখন আপনার করণীয় হল, কুরবানীর উপযুক্ত একটি ছাগলের মূল্য সদকা করে দেওয়া।

বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৮, ২০৩; আলমুহীতুর রাযাবী ৬/৫৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩০৯; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২১

Sharable Link

জাকের হুসাইন - বেগমগঞ্জ, নোয়াখালী

৬৫১০. Question

আমি একজন দরিদ্র লোক। আমার মালিকানায় চারটি গাভী আছে। এগুলোর দুধ বিক্রি করার মাধ্যমেই আমার পরিবারের জীবিকা নির্বাহ হয়। আগামী কুরবানীতে এগুলোর একটিকে কুরবানী করার নিয়ত করেছিলাম; কিন্তু বর্তমানে আমি আর্থিক সংকটে আছি, তাই কুরবানীর নিয়তকৃত গাভীটি বিক্রি করে দিতে চাচ্ছি।

এখন আমার জানার বিষয় হল, কুরবানীর নিয়ত করার কারণে গাভীটি কুরবানী করা কি আমার ওপর আবশ্যক হয়ে গেছে? শরীয়তের দৃষ্টিতে আমার জন্য গাভীটি বিক্রি করার কোনো সুযোগ আছে কি?

Answer

প্রশ্নোক্ত গাভীটি কুরবানী না করে বিক্রি করে দেওয়া আপনার জন্য জায়েয হবে। কেননা এটি যেহেতু আপনার পালিত পশু; কুরবানী করার নিয়তে ক্রয় করেছেন এমন নয়, তাই এটি আপনি কুরবানী করার নিয়ত করে থাকলেও তা কুরবানী করা আপনার ওপর আবশ্যক হয়ে যায়নি।

আলমুহীতুর রাযাবী ৬/৫৮; বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯২; আযযাখীরাতুল বুরহানিয়া ৮/৩১৬; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ৩/৭৪; রদ্দুল মুহতার ৬/৩২১

Sharable Link

আবু রায়হান - নোয়াখালী

৬৫১১. Question

এবছর কুরবানী করার জন্য আমি একটি গরু ক্রয় করি। গরুটি রাস্তার পাশে বাঁধার পর গাড়ি চাপা পড়ে এর লেজের এক তৃতীয়াংশের বেশি থেতলে যায়। অবশিষ্ট লেজে পচন ধরার ভয়ে থেতলে যাওয়া অংশটি কেটে ফেলে দিতে হয়। এখন লেজের অধিকাংশ বাকি আছে। কিন্তু এর দ্বারা কুরবানী সহীহ হবে কি না এব্যাপারে বিপরীতমুখী দুই ধরনের কথাই শুনছি।  কেউ বলেছেন, কুরবানী সহীহ হবে না। আবার কেউ বলেছেন, এখনো লেজের অধিকাংশ বাকি থাকায় কুরবানী সহীহ হবে। তাই হুযুরের কাছে অনুরোধ, এক্ষেত্রে শরীয়তের সঠিক সমাধান জানিয়ে আমাকে উপকৃত করবেন?

Answer

উক্ত গরুটির লেজ যেহেতু অর্ধেকের বেশি অবশিষ্ট আছে, তাই তা দ্বারা কুরবানী সহীহ হবে। কেননা কুরবানী সহীহ হওয়ার জন্য পশুর লেজ অন্তত অর্ধেকের বেশি অবশিষ্ট থাকা শর্ত। অর্ধেক পরিমাণ বা এর চেয়ে কম থাকলে তা দ্বারা কুরবানী সহীহ নয়।

আলজামিউস সগীর, পৃ. ৪৭৩; শরহু মুখতাসারিত তহাবী, পৃ. ৩০৩; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৪; আলমুহীতুর রাযাবী ৬/৬১; রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৩

Sharable Link

রাশেদ - চট্টগ্রাম

৬৫১২. Question

আমি কুরবানীর জন্য গরু ক্রয় করে পিকআপে করে আমার বাড়িতে নিয়ে আসি। পিকআপ থেকে নামানোর সময় গরুটি উপুড় হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। ফলে তার মাথার একপাশের শিং অর্ধেকটা ভেঙে যায়। পায়ে আঘাত পেলেও হাঁটতে কোনো পায়ে সমস্যা হচ্ছে না। প্রশ্ন হল, এ গরু দিয়ে কুরবানী করা সহীহ হবে কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন?

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে পশুটির শিং যেহেতু আংশিক ভেঙেছে। গোড়া থেকে ভেঙে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। এবং পায়ে আঘাত পেলেও আঘাতপ্রাপ্ত পায়ে ভর করে চলতে পারে, তাই উক্ত গরু দ্বারা কুরবানী করা সহীহ হবে।

উল্লেখ্য, কোনো পশুর শিং যদি গোড়া থেকে এমনভাবে ভেঙে যায়, যার কারণে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায় বা কোনো পা যদি এমনভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়, যার ওপর ভর করে হাঁটা-চলা করতে পারে না, তাহলে এমন পশু দ্বারা কুরবানী সহীহ হবে না।

জামে তিরমিযী, হাদীস ১৫০৩; কিতাবুল আছল ৫/৪০৫, ৪০৯; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩২০, ৩২১; রদ্দুল মুহতার ৬/ ৩২৩

Sharable Link

আতাউল্লাহ - ফেনী

৬৫১৩. Question

আমাদের এলাকায় একজন কসাই আছে। কুরবানীর ঈদের দিন সে কয়েক জায়গায় কাজ করে। তো সে দ্রুত কাজ করার জন্য গরু জবাইয়ের একটু পরেই আরেকজনের সাহায্যে গরুর সামনের পা থেকে চামড়া খসানো শুরু করে। অথচ গরু তখনো পেছনের পা নাড়তে থাকে। তার এ কাজটি কেমন?

Answer

জবাইয়ের পর পশু পুরোপুরিভাবে নিস্তেজ হওয়ার আগেই তার চামড়া খসানো মাকরূহে তাহরীমী। কেননা এতে পশুকে অহেতুক কষ্ট দেওয়া হয়। তাই উক্ত কসাইকে এমনটি করা থেকে বারণ করা কর্তব্য। হাদীস শরীফে জবাইয়ের সময় পশুকে অনর্থক কষ্ট না দেওয়ার হুকুম করা হয়েছে।

শাদ্দাদ ইবনে আউস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, হযরত উমর রা. বলেছেন

وَإِذَا ذَبَحْتُمْ فَأَحْسِنُوا الذَّبْحَ، وَلْيُحِدَّ أَحَدُكُمْ شَفْرَتَه، فَلْيُرِحْ ذَبِيحَتَه.

আর যখন তোমরা জবাই করবে তখন উত্তম পন্থায় জবাই কর। তোমাদের প্রত্যেকে যেন তার ছুরি ভালোভাবে শান দিয়ে নেয় এবং তার জবাইকৃত জন্তুকে (যথাসম্ভব) শান্তি প্রদান করে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৯৫৫)

তাবেয়ী ফারাফেসা রাহ. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন

وَذَرِ الْأَنْفُسَ حَتَّى تَزْهَقَ.

জবাইকৃত প্রাণীর রূহ চলে যাওয়ার পর নিস্তেজ হওয়া পর্যন্ত তাকে রেখে দাও। (অর্থাৎ নিস্তেজ হয়ে যাওয়ার পূর্বে গোশত কাটা বা চামড়া খসানো শুরু করো না।) (মুসান্নাফে আবদুর রায্যাক, বর্ণনা ৮৬১৪)

শরহু মুখতাসারিল কারখী ৬/২৯৯; বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৮৯; আলমুহীতুর রাযাবী ৬/৪২; আলইখতিয়ার ৪/২৩৭; আদ্দুররুল মুখতার ৬/২৯৬

Sharable Link

ইসমাঈল - চট্টগ্রাম

৬৫১৪. Question

কিছুদিন আগে এক বন্ধুর বাড়িতে দাওয়াতে গিয়ে সেখানে একটি জায়নামায দেখলাম, যা ছাগলের চামড়া শুকিয়ে বানানো হয়েছে। তা দেখে আমার খুব পছন্দ হয়। আমার ইচ্ছা, এ বছর আমি যে ছাগলটি কুরবানী করব, তার চামড়া দ্বারা জায়নামায বানিয়ে নামায আদায়ের জন্য ব্যবহার করব। এটি কি আমার জন্য জায়েয হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

হাঁ, নিজের কুরবানীর পশুর চামড়া বিক্রি না করে ব্যবহারের জন্য জায়নামায বানাতে পারবেন। এতে কোনো অসুবিধা নেই। কুরবানীর পশুর চামড়া বিক্রি করে দিলে বিক্রিলব্ধ টাকা নিজে ভোগ করা জায়েয নয়; বরং পুরো টাকাই গরিব-মিসকীনদের সদকা করে দেওয়া আবশ্যক। কিন্তু বিক্রি না করে সরাসরি চামড়া ব্যবহার করতে কোনো অসুবিধা নেই।

কিতাবুল আছল ৫/৪০৮; শরহু মুখতাসারিল কারখী ৬/৩৮৯; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৫; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৫৪; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২৮

Sharable Link

আব্দুল আযীম - জার্মানি প্রবাসী

৬৫১৫. Question

আমি জার্মানিতে থাকি। এখানকার মুরগির খামারগুলোর মালিক সাধারণত অমুসলিমই হয়ে থাকে। খামারগুলোতে মুরগিকে যে ফিড খাওয়ানো হয়, সেটার উপাদানে অন্যান্য পাক বস্তুর সাথে শুকরের হাড্ডি ও চামড়ার গুড়ার কথাও লেখা থাকে। পরিমাণে সামান্যই হয়ে থাকে। আমরা মুরগি কিনতে চাইলে এসব খামারের মুরগিই কিনতে হয়। এছাড়া আমাদের জানামতে এমন কোনো খামারও নেই, যেখানে মুরগিকে সম্পূর্ণ পবিত্র ফিড খাওয়ানো হয়।

জানতে চাই, এসব মুরগি হালাল পদ্ধতিতে জবাই করা হলে তা খাওয়া যাবে কি না?

Answer

আপনি শুকরের উপাদান মিশ্রিত যে ফিডের কথা উল্লেখ করেছেন তা মুরগিকে খাওয়ানো হলেও যেহেতু ফিডের অন্যান্য উপাদানের তুলনায় শুকরের অংশের পরিমাণ খুবই সামান্য, ফলে মুরগির গোশতের মধ্যে এর বড় কোনো প্রভাব পড়ে না। সুতরাং যথাযথভাবে জবাই করা হলে এসব মুরগি খাওয়া জায়েয হবে।

উল্লেখ্য, মুসলমানদের জন্য মানুষের আহারযোগ্য কোনো প্রাণীর ফিডে শুকরের কোনো অংশ ব্যবহার করা জায়েয নয়।

কিতাবুল আছল ৫/৩৯৫; বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৫৩; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৭/২৩; আলমুহীতুর রাযাবী ২/৫০৯; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩৪০, ৫/৫৫

Sharable Link