আমাদের মহল্লার মসজিদে কাঁচাবাজারের ভেতর দিয়ে যেতে হয়। আর কাঁচাবাজারের রাস্তা পানি ও কাদামাটি দিয়ে একাকার হয়ে থাকে। ফলে মসজিদে যাওয়ার সময় অসর্তকতা বশত কাপড়ে কাদামাটি লেগে যায়। আমার প্রশ্ন হল, এমন পোশাকে নামায পড়া যাবে কি? এসব কাদামাটি কি নাপাক?
আমাদের মহল্লার মসজিদে কাঁচাবাজারের ভেতর দিয়ে যেতে হয়। আর কাঁচাবাজারের রাস্তা পানি ও কাদামাটি দিয়ে একাকার হয়ে থাকে। ফলে মসজিদে যাওয়ার সময় অসর্তকতা বশত কাপড়ে কাদামাটি লেগে যায়। আমার প্রশ্ন হল, এমন পোশাকে নামায পড়া যাবে কি? এসব কাদামাটি কি নাপাক?
রাস্তা ও হাট-বাজারের সাধারণ কাদামাটি নাপাক নয়। তাই পোশাকে রাস্তার কাদামাটির ছিটা লেগে গেলেও তা পরে নামায পড়া জায়েয হবে। তবে কাদামাটির মধ্যে নাপাকী দৃশ্যমান হলে কাদার ঐ অংশ নাপাক বলে গণ্য হবে এবং কাপড়ে এধরনের কাদা বেশি পরিমাণে লেগে গেলে তা নিয়ে নামায হবে না। তা ধুয়ে নিতে হবে।
Sharable LinkÑকিতাবুল আছল ১/৫২; আলমুহীতুল বুরহানী ১/৩৬৪; খিযানাতুল আকমাল ১/৩৪; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ২০৬; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩২৪
আমার একটি কাপড়ের মধ্যে একদিন নাপাকী লাগে। তাৎক্ষণিক আমার কাছে পানি না থাকার কারণে আমি তা ধুতে পারিনি। পরে তা শুকিয়ে যায় এবং আমি নাপাকীর জায়গা ভুলে যাই। আমার এক বন্ধুর কাছে বিষয়টি বললে সে আমাকে বলল, কাপড়ের কিছু অংশ ধুয়ে নিলেই তো পাক হয়ে যাবে। মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাচ্ছি, আসলেই কি উক্ত কাপড়ের কিছু অংশ ধুয়ে নিলেই তা পাক হয়ে যাবে? আমার বন্ধুর কথা কি ঠিক? জানালে উপকৃত হব।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু কাপড়েরর কোথায় নাপাকী লেগেছিল তা সুনিশ্চিতভাবে জানা নেই, তাই এখন পুরো কাপড় বা কাপড়ের কোন্ অংশে নাপাকী লেগেছিল তা জানা থাকলে এর পুরোটা ধোয়া জরুরি। কাপড়ের যে কোনো স্থান থেকে কিছু অংশ ধুয়ে নিলেই তা পবিত্র হয়ে যাবে না। আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেনÑ
إِنْ خَفِيَ عَلَيْهِ مَكَانُهُ وَعَلِمَ أَنّهُ قَدْ أَصَابَهُ غَسَلَ الثّوْبَ كُلّهُ.
যদি নাপাকীর জায়গা অজ্ঞাত হয়ে যায়; তবে নিশ্চিতভাবে জানা থাকে যে, কাপড়ে নাপাকি লেগেছিল, তাহলে পুরো কাপড় ধুতে হবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৯০৫)
Sharable LinkÑফাতাওয়া সিরাজিয়া, পৃ. ৬; বাদায়েউস সানায়ে ১/২৩৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৪৬৭; ফাতহুল কাদীর ১/১৬৮
আমাদের গ্রামের মসজিদ ছনের বেড়ার তৈরি। রাতে ইঁদুর, চিকা ও ব্যাঙ ঢুকে জায়নামায বা কার্পেটে পায়খানা করে দেয়। জানতে চাই, এগুলোর বিষ্ঠা কি নাপাক? একজন আলেম বলেছিলেন, ব্যাঙের পেশাব নাকি পাক। এক্ষেত্রে সঠিক মাসআলা জানতে চাই।
ইঁদুর, চিকা ও ডাঙায় বসবাসকারী ব্যাঙের বিষ্ঠা ও পেশাব নাপাক। তাই জায়নামায ও কার্পেটে এগুলোর পেশাব-পায়খানা লাগলে ঐ স্থান নাপাক হয়ে যাবে এবং ধুয়ে পবিত্র করে নিতে হবে। তবে পানিতে বসবাসকারী ব্যাঙের পেশাব নাপাক নয়। তাই জায়নামাযে তা লাগলে নাপাক হবে না। যে আলেম ব্যাঙের পেশাব পাক বলেছেন, তিনি হয়ত পানিতে বসবাসকারী ব্যাঙের কথা বলেছেন।
Sharable LinkÑবাদায়েউস সানায়ে ১/১৯৮; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৪৪; আননুতাফ ফিল ফাতাওয়া, পৃ. ২৮; আলবাহরুর রায়েক ১/২৩০; রদ্দুল মুহতার ১/৩১৯; ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/৭৫
আমার স্বামী চাকরির সুবাদে ঢাকা থাকেন। আমি গ্রামে থাকি। তিনি পাক্ষিক এক দিনের ছুটিতে গ্রামে আসেন। আমি বর্তমানে গর্ভবতী ও শারিরীকভাবে দুর্বল। এলার্জী, ঠাণ্ডা ও কাশির সমস্যাও আছে। বর্তমানে আমাদের গ্রামে অনেক শীত পড়ছে। রাতে গরম পানি করা আমার জন্য কষ্টকর। তাই ফযরের নামায কাযা হওয়ার ভয়ে রাতে আমরা সহবাস থেকে বিরত থাকি। রাতে গরম পানি দিয়ে গোসল করাও আমার জন্য কষ্টকর। আর দিনের বেলা গরম পানি দিয়ে একাধিকবার গোসল করলে শারীরিক ক্ষতি ও রোগ বেড়ে যাওয়ার আশংকা আছে। এসব নিয়ে আমাদের মাঝে মনোমালিন্য হচ্ছে। এখন আমার করণীয় জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে গোসল করার দ্বারা অসুস্থতা ও শারীরিক ক্ষতির আশংকা প্রবল হলে আপনার জন্য গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করে নামায পড়া জায়েয হবে। তবে যখন পানি ব্যবহার করলে শারীরিক সমস্যা হবে না তখন গোসল করে নিতে হবে।
Sharable LinkÑকিতাবুল আছল ১/৮৬, ১০৪; খিযানাতুল আকমাল ১/৩৯; আলমুহীতুল বুরহানী ১/৩১২; শরহুল মুনয়া, পৃ. ৬৫; আলবাহরুর রায়েক ১/১৪১; নাফউল মুফতী ওয়াস সাইল, পৃ. ৩৩২
আমি মহিলা মাদরাসার হিফয বিভাগে শিক্ষকতা করি। মাসিক চলাকালীন ছাত্রীদের তিলাওয়াত শুনতে হয়। তখন ছাত্রীরা ভুল তিলাওয়াত করলে তা শুধরে দিতে আয়াতের একেক শব্দ পৃথক করে বলে সংশোধন করে দিই। এখন আমার প্রশ্ন হল, মাসিক চলাকালীন এভাবে ছাত্রীদের পড়া শুনতে পারব কি?
মাসিক চলা অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত শুনতে কোনো অসুবিধা নেই। তবে বলে দিতে হলে পৃথক পৃথক করে একেকটি শব্দ বলে দিতে পারবেন।
Sharable LinkÑআলমুহীতুল বুরহানী ১/৪০৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৯৩; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী, পৃ. ৭৭; রদ্দুল মুহতার ১/২৯৩
কুরবানীর ঈদের দিন যোহরের নামাযের সময় আমি আমার চাচাকে নামায পড়ার জন্য ডাকলে তিনি আমাকে বললেন, কাপড়ে রক্ত রয়েছে, তাই একটু বিলম্ব করে কাপড় পাল্টিয়ে নামায পড়ব।
আমি বললাম, আপনার কাপড়ে যে রক্ত রয়েছে তা তো এক দিরহাম বা তার চেয়ে কম। আর এই পরিমাণ রক্ত তো মাফ (معفو عنه)।
একথা শুনে তিনি বললেন, মাফ (معفو عنه) দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে নামায পড়ার পর যদি এক দিরহাম বা তার চেয়ে কম পরিমাণ রক্ত কাপড়ে দেখা যায় তাহলে নামায আর পুনরায় পড়তে হবে না। তবে নামাযের পূর্বে যদি কাপড়ে এক দিরহাম বা তার চেয়ে কম রক্ত দেখা যায় তাহলে তা না ধুয়ে নামায পড়লে নামায হবে না।
হুজুরের কাছে জানতে চাচ্ছি, তার কথা সঠিক কি না? এবং সত্যিই কি তিনি যদি ঐ অবস্থায় নামায পড়তেন তাহলে তার নামায হত না? নাকি নামায হয়ে যেত তবে মাকরূহ হত? আর মাকরূহ হলে মাকরূহে তাহরীমি হবে, না তানযীহী? বিষয়গুলো সাফ করার অনুরোধ করছি।
এক দিরহাম (অর্থাৎ হাতের তালুর গভীরতা) সমপরিমাণ তরল নাজাসাতে গালিজা শরীর বা কাপড়ে লাগার বিষয়টি যদি নামাযের পূর্বে জানা যায় তাহলে তা ধুয়ে নেওয়া ওয়াজিব। ধোয়া সম্ভব হওয়া সত্ত্বেও এ পরিমাণ নাপাকী নিয়ে নামায পড়লে গুনাহ হবে এবং মাকরূহে তাহরীমির সাথে তা আদায় হবে। আর যদি এক দিরহামের চেয়ে কম পরিমাণ নাপাকী লেগে থাকার কথা জানা যায় তাহলে তা ধুয়ে নেওয়া উত্তম। না ধুয়ে নামায পড়লে মাকরূহে তানযীহী হবে। তবে জেনেশুনে বিনা ওজরে নাপাকী নিয়ে (যদিও তা সামান্য হয়) নামায পড়া কিছুতেই সমিচীন নয়। মনে রাখতে হবে, নামাযের ফরয আদায় হয়ে যাওয়া এক কথা এবং তা পরিপূর্ণ পবিত্রতার সাথে আদায় হওয়া ভিন্ন কথা। চেষ্টা করতে হবে, নামায যেন পূর্ণ পবিত্রতার সাথে সুন্নত মোতাবেক আদায় হয়।
Sharable LinkÑমুখতারাতুন নাওয়াযিল ১/১৬৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৪৬; ফাতহুল কাদীর ১/১৭৮; আলজাওহারাতুন নায়্যিরা ১/৪৯; আলবাহরুর রায়েক, মিনহাতুল খালেক ১/২২৮
গত বছর আইয়ামে তাশরীকের দ্বিতীয় দিনে ঘুম থেকে জাগ্রত না হতে পারায় ফজরের নামায কাযা হয়ে যায়। পরে আমি তা ওই দিনের যোহরের নামাযের আগে কাযা করি। কিন্তু তখন তাকবীরে তাশরীক বলব কি নাÑ তা নিয়ে মনের মধ্যে খটকা লাগে। তখন সর্তকতামূলক আমি তাকবীর বলে নিই। মুহতারামের কাছে জানতে চাচ্ছি, উক্ত নামাযের পর তাকবীরে তাশরীক বলা কি ঠিক হয়েছে? জানালে উপকৃত হব।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আইয়ামে তাশরীকে ছুটে যাওয়া নামায যেহেতু আইয়ামে তাশরীকের মধ্যেই কাযা করেছেন। তাই ঐ নামাযের পর তাকবীরে তাশরীক বলা যথাযথ হয়েছে। কেননা আইয়ামে তাশরীকের ছুটে যাওয়া নামায যদি এ বছরের আইয়ামে তাশরীকের মধ্যেই আদায় করা হয় তাহলে উক্ত নামাযের পর তাকবীরে তাশরীক বলতে হয়। কিন্তু যদি আইয়ামে তাশরীকের পরে কাযা করা হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে তাকবীর বলতে হয় না।
Sharable LinkÑআলজামেউল কাবীর, পৃ. ১৩; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৫১৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২১৬; ফাতহুল কাদীর ২/৫১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫২; আলবাহরুর রায়েক ২/১৬৬
আমি প্রায় প্রতিদিন ফজরের পর থেকে যিকির-তিলাওয়াত করে ৭টার দিকে ইশরাকের নামায পড়ি। এটা আমার দৈনন্দিনের আমল। শুনেছি, ঈদের নামাযের পূর্বে নফল নামায পড়া নিষেধ। যেহেতু ঈদের নামাযের সময় আমরা বাড়িতেই থাকি, তাই ঈদগাহে নামায শেষ হওয়ার আগে আমি বাড়িতে ইশরাক পড়তে পারব কি না?
নফল নামায নিষেধ হওয়ার বিষয়টি কি পুরুষ-মহিলা সবার জন্যই প্রযোজ্য? জানালে উপকৃত হব।
ঈদের নামাযের পূর্বে বাড়িতেও নফল নামায পড়া যাবে না। পুরুষ-মহিলা সবার জন্যই ঈদের নামাযের আগে নফল পড়া মাকরূহে তাহরীমী। তাই আপনি ঈদগাহে নামায শেষ হওয়া পর্যন্ত ইশরাক পড়বেন না। ঈদগাহে নামায শেষ হওয়ার পর চাইলে ঘরে নফল পড়তে পারবেন।
Sharable LinkÑআলমুহীতুল বুরহানী ২/৪৯৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২১৪; আলবাহরুর রায়েক ২/১৬০; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ১/৩৫৩; রদ্দুল মুহতার ২/১৬৯
গত কয়েকদিন আগে আছরের নামাযের সময় মসজিদে গিয়ে দেখি, ইমাম সাহেব রুকুতে আছেন। রাকাত ছুটে যাওয়ার আশঙ্কায় আমি দ্রুত গিয়ে তাকবীর বলে রুকুতে চলে যাই। কিন্তু অধিক তাড়াহুড়ার কারণে তাকবীর বলতে বলতে রুকুতে যাই।
জানার বিষয় হল, আমার এভাবে তাকবীর বলা কী যথেষ্ট হয়েছে? আমার উক্ত নামাযের হুকুম কী? জানালে উপকৃত হব।
তাকবীরে তাহরীমা দাঁড়ানো বা দাঁড়ানোর কাছাকাছি (أقرب إلى القيام) অবস্থার ভেতর বলে শেষ করা জরুরি। রুকুতে বা রুকুর কাছাকাছি গিয়ে তাকবীরে তাহরীমা বলা শেষ হলে নামায হবে না। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে প্রবল ধারণা অনুযায়ী পূর্বোক্ত দুই অবস্থার যেটি আপনার ঘটেছে বলে মনে হয় সে অনুযায়ী আমল করবেন। আর যদি কোনো দিকেই প্রবল ধারণা না হয় তাহলে নামাযটি আবার পড়ে নিবেন।
Sharable LinkÑআলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৮৪; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৮৭; ফাতহুল কাদীর ১/২৪৩; মারাকিল ফালাহ, পৃ. ১১৮; রদ্দুল মুহতার ১/৪৫২
কিছুদিন আগে বেশি অসুস্থতার কারণে আমার ত্রিশ ওয়াক্তের নামায কাযা হয়ে যায়। পরে আমি সেই নামাযগুলো প্রায় প্রতিদিন এক-দুই ওয়াক্ত করে কাযা করতে থাকি। এখন আর মাত্র পাঁচ ওয়াক্ত বাকি আছে।
জানার বিষয় হল, এখন আমার উপর কি তারতীব রক্ষা করা জরুরি? জানালে উপকৃত হব।
কাযা নামাযের সংখ্যা ছয় ওয়াক্ত বা তার চেয়ে বেশি হলে তারতীব রক্ষা করা জরুরি থাকে না। এরপর আদায়কারীর কাযার সংখ্যা কমে গেলেও তারতীব রক্ষার হুকুম পুনরায় ফিরে আসে না। তাই আপনি বিনা তারতীবে পড়লেও এক্ষেত্রে আপনার নামায আদায় হয়ে যাবে।
Sharable LinkÑআলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৫০; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৪৬৬; আলবাহরুর রায়েক ২/৮৬; আদ্দুররুল মুখতার ২/৭০
কিছুদিন আগে এক শুক্রবারে আমরা দুই সাথি খুলনা থেকে ট্রেনে করে ঢাকায় ফিরছিলাম। আশা ছিল, ঢাকায় পৌঁছে জুমার নামায পাব। কিন্তু ট্রেন বিলম্ব করার কারণে আমরা জুমার জামাত পাইনি। কর্মস্থলে পৌঁছে আমরা জামাতের সাথে যোহর নামায আদায় করি। হুজুরের কাছে জানতে চাই, আমাদের জন্য জামাতের সাথে যোহর পড়া কি ঠিক হয়েছে?
আপনাদের যোহর নামায পড়া ঠিক হয়েছে। তবে জামাতের সাথে আদায় করা অনুত্তম হয়েছে। কারণ, যেই এলাকায় জুমার জামাত কায়েম হয় সেখানে জুমা না পেলে যোহর একাকী পড়তে হয়। এক্ষেত্রে জামাত করা অনুত্তম।
Sharable LinkÑফাতাওয়া খানিয়া ১/১৭৭; আলবাহরুর রায়েক ২/১৫৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৪৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৫৭; ইমদাদুল আহকাম ১/৭৮৪
একদিন আমি চট্টগ্রাম থেকে বাসে ঢাকা আসি। আসরের সময় গাড়ি একটি হোটেলে থামায়। ফলে প্রথম ওয়াক্তেই সেখানে আসরের নামায পড়ে নিই। আশা ছিল, মাগরিবের ওয়াক্তের ভেতর ঢাকায় পৌঁছে যাব এবং ওয়াক্ত শেষ হওয়ার আগেই নামায পড়ে নিতে পারব। কিন্তু রাস্তায় কিছুটা জ্যাম ছিল। যার কারণে গাড়ি স্টেশনে পৌঁছতে দেরি হয়ে যায়। তখন গাড়ি থেকে মসজিদ খুঁজে সেখানে পৌঁছতে পৌঁছতে মনে হচ্ছিল প্রায় এশার ওয়াক্ত হয়ে গেছে। কিন্তু মসজিদটিতে নামাযের সময়সূচি সংক্রান্ত কোনো ক্যালেন্ডারও ছিল না। যার কারণে ওয়াক্ত বাকি আছে না শেষ হয়ে গেছেÑ বুঝতে পারছিলাম না। তাই তখন বিব্রত অবস্থায় পড়ে যাই। অর্থাৎ নামায যে পড়ব নিয়ত করব কীভাবে? আদায়ের নিয়তে পড়ব না কাযার নিয়তে? অতঃপর এভাবে নিয়ত করি যে, যদি সময় থাকে তাহলে আদায় হবে আর না থাকলে কাযা হবে। জানতে চাচ্ছি, আমাদের এ নামায সহীহ হয়েছে কি না?
প্রশ্নোক্ত অবস্থায় আপনি যেভাবে নিয়ত করেছেন এর দ্বারা নামায সহীহ হয়ে গেছে। এছাড়া শুধু আজকের মাগরিব পড়ছিÑ এভাবে নিয়ত করলেও নামায হয়ে যেত। কেননা নির্ধারিত ওয়াক্তের নামায পড়ার সময় নিয়তের ক্ষেত্রে আদা বা কাযার নিয়ত সুনির্ধারিতভাবে করা জরুরি নয়। এক্ষেত্রে আপনার ওয়াক্তের ভেতর হয়ে থাকলে আদা হবে, অন্যথায় কাযা গণ্য হবে।
Sharable LinkÑফাতাওয়া খানিয়া ১/৮২; আলমুহীতুল বুরহানী ২/২৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/২৬২; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ২৫৩; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪২২
আমি একদিন এক মসজিদে জুমার নামায পড়াই। খুতবার সময় আমি শুধু সামনের দিকে তাকিয়ে খুতবা না দিয়ে ডানে-বামের মুসল্লীদের দিকে তাকানোর জন্য মাথা ঘুরাই। নামায শেষে এক আলেমের সাথে মুলাকাত হলে তিনি বললেন, খুতবার সময় সুন্নাত হল ইমাম ডান-বামে মাথা না ঘুরিয়ে শুধু সামনের মুসল্লীদের দিকে ফিরে খুতবা দেবে। জানার বিষয় হল, উক্ত আলেমের কথা কি ঠিক?
হাঁ, ঐ আলেম ঠিক বলেছেন। খুতবার সময় ডানে-বামে মাথা না ঘুরিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে খুতবা দেয়া সুন্নাত। তাই খুতবার সময় ডানে-বামে মাথা ঘুরানো থেকে বিরত থাকবে।
Sharable LinkÑউমদাতুল কারী ৬/২২১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২০৫; রদ্দুল মুহতার ২/১৪৯
কিছুদিন মসজিদে ফজরের নামাযের পর একটি বিষয় লক্ষ করছি। তা হচ্ছে একটি ছেলেকে প্রায় প্রায় দেখা যায়, নামায শেষ হওয়ার পর বারান্দায় এসে আবার দুই রাকাত নামায পড়ছে। পরে খোঁজ নিলে জানা যায় যে, ফজরের সুন্নত পড়তে না পারার কারণে এমনটি করে থাকে। অর্থাৎ জামাত শেষ হওয়ার পর সূর্য ওঠার আগেই বারান্দায় এসে তা পড়ে নেয়। হুজুরের কাছে জানতে চাচ্ছি যে, তার এ কাজটি ঠিক হচ্ছে কি না। অর্থাৎ ফজরের আগে যদি সুন্নত না পড়া যায়, তাহলে জামাত শেষ হওয়ার পর সূর্য ওঠার আগেই তা পড়ে নেওয়া জায়েয আছে কি না?
না, ফজরের নামাযের পর সুন্নত পড়া ঠিক হচ্ছে না। কেননা ফজরের সুন্নত সময়মত পড়তে না পারলে সূর্যোদয়ের পর মাকরূহ ওয়াক্তের পর পড়া নিয়ম। সূর্য ওঠার আগে তা পড়া মাকরূহে তাহরিমী। হাদীসে এ সময় নফল বা সুন্নত পড়তে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত আছে যেÑ
نَهَى رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ عَنْ صَلاَتَيْنِ: بَعْدَ الفَجْرِ حَتَّى تَطْلُعَ الشّمْسُ، وَبَعْدَ العَصْرِ حَتّى تَغْرُبَ الشّمْسُ.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই সময় নামায পড়তে নিষেধ করেছেন। ফজরের পর সূর্য ওঠা পর্যন্ত এবং আসরের পর সূর্য ডোবা পর্যন্ত। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৮৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৮২৫)
তাই ফজরের সুন্নত ছুটে গেলে সূর্যোদয়ের আগে পড়বে না; বরং সূর্যোদয়ের পর থেকে সূর্য হেলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে আদায় করে নেবে। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনÑ
مَنْ لَمْ يُصَلِّ رَكْعَتَيِ الفَجْرِ فَلْيُصَلِّهِمَا بَعْدَ مَا تَطْلُعُ الشّمْسُ.
যে ফজরের দুই রাকাত সুন্নত (সময়মতো) পড়েনি সে যেন সূর্যোদয়ের পর তা আদায় করে নেয়। (জামে তিরমিযী, হাদীস ৪২৩; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ১০৫৩)
Sharable LinkÑবাদায়েউস সানায়ে ১/৬৪৩
আমরা জানি, মৃত ব্যক্তিকে কবরে ডান কাত করে শোয়ানো সুন্নত। আমাদের এলাকাতেও এভাবেই প্রচলন চলে আসছে। কিন্তু কিছুদিন আগে এক লোক মারা গেলে তার সন্তানেরা তাকে চিৎ করে শোয়ায়, অতঃপর শুধু তার চেহারা ডান দিকে ঘুরিয়ে দেয়। তাদের জিজ্ঞাসা করলে তারা বলে, এভাবেও সুন্নত আদায় হয়। জানার বিষয় হল, তাদের কথা কি ঠিক? শুধু চেহারা ডান দিকে ঘুরিয়ে দেয়ার দ্বারাও কি সুন্নত আদায় হয়ে যায়?
মৃত ব্যক্তিকে ডান কাত করে সীনা ও চেহারা কেবলামুখী করে শোয়ানোই সুন্নত। শুধু চেহারা ডান দিকে ঘুরিয়ে কবরে রাখলে এর দ্বারা সুন্নত আদায় হবে না। পূর্ণ ডান কাতে শোয়ানোর জন্য কবরের পূর্ব দেওয়ালে টেক লাগিয়ে শোয়াবে কিংবা এমনভাবে কবর খনন করবে যেন লাশ কবরে রাখলে তা সহজেই কিবলামুখী হয়ে যায়।
Sharable LinkÑসুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৮৬৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৯০; বাদায়েউস সানায়ে ২/৬৩; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৫৯৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২২৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৬
গত বছর আমার কাছে দুই লক্ষ টাকা ছিল। ভেবেছিলাম, টাকাগুলো দিয়ে ঘরের ছাদের কাজ ধরব। কিন্তু কিছুদিন পর আমার বড় ভাইয়ের মেয়ের বিয়ের সময় টাকাগুলো আমার কাছ থেকে ধার নেয়। এক বছর হয়ে গেছে এখনও টাকাগুলো দিতে পারেনি। জানার বিষয় হল, আমার উপর কি উক্ত দুই লক্ষ টাকার যাকাত ফরয হয়েছে? জানালে উপকৃত হব।
ধার দেওয়া টাকার উপরও যাকাত ফরয হয়। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ধার দেওয়া ঐ দুই লক্ষ টাকার যাকাত দিতে হবে। তবে তা এখনই আদায় করা জরুরি নয়; বরং সেই টাকা হস্তগত হওয়ার পরও পেছনের অনাদায়ী বছরের যাকাত একসাথে আদায় করা যাবে।
Sharable LinkÑকিতাবুল আছল ২/৯৩; আলমাবসূত, সারাখসী ২/১৯৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৩৮; ফাতহুল কাদীর ২/১২৩; আলবাহরুর রায়েক ২/২০৭
আমি গত দু’বছর আগে পাঁচ লক্ষ টাকা মহর ধার্য করে বিবাহ করি। তার মধ্যে দুই লক্ষ টাকা নগদ পরিশোধ করি, আর বাকি তিন লক্ষ টাকা পরে পরিশোধ করব বলে জানাই। এখন আমার কাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত তিন লক্ষ টাকা আছে, যার উপর এক বছর পূর্ণ হয়ে গেছে। জানার বিষয় হল, মহরের টাকা বাকি থাকার কারণে কি আমার উপর যাকাত ফরয হবে?
আপনি যদি হাতে থাকা তিন লক্ষ টাকা দ্বারা বকেয়া মহর পরিশোধ করে দেন তাহলে আপনাকে উক্ত তিন লক্ষ টাকার যাকাত আদায় করতে হবে না।
আর যদি আপনার উক্ত তিন লক্ষ টাকা থেকে মহর পরিশোধ করার ইচ্ছা না থাকে, বরং পরবর্তীতে আদায়ের ইচ্ছা থাকে তাহলে উক্ত তিন লক্ষ টাকার যাকাত আদায় করা আবশ্যক হবে।
Sharable LinkÑআলমুহীতুল বুরহানী ৩/২৩৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭৩; আলবাহরুর রায়েক ২/২০৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/২৩৫; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৬১
আমরা দশজন মিলে একটা সমিতি করেছি। গতবছর তাতে এক লক্ষ টাকা জমা হয়েছে। প্রত্যেকের দশ হাজার টাকা করে। জানার বিষয় হল, আমাদের এই সম্মিলিত টাকার উপর কি যাকাত ফরয হবে?
সমিতির মোট জমার উপর সমষ্টিগতভাবে যাকাত ফরয নয়। তবে কোনো সদস্যের নিকট যদি সমিতির টাকাসহ যাকাতযোগ্য আরো সম্পদ থাকে এবং উভয়টি মিলে নেসাব পরিমাণ হয়ে যায়, কিংবা সমিতিতে তার যতটুকু টাকা আছে সেটিই নেসাব পরিমাণ হয় তাহলে তার উপর যাকাত ফরয।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উক্ত সমিতিতে আপনাদের প্রত্যেকের ১০ হাজার টাকা করে জমা আছে, যা যাকাতের নেসাব সমপরিমাণ নয়। তাই শুধু এ টাকার কারণে কারো উপর যাকাত আসবে না। তবে কোনো সদস্যের নিকট যদি ঐ টাকার সাথে আরো টাকা বা যাকাতযোগ্য সম্পদ থাকে এবং উভয়টি মিলে নেসাব পরিমাণ হয়ে যায় তাহলে ঐ ব্যক্তির উপর যাকাত ফরয হবে।
Sharable LinkÑকিতাবুল আছল ২/৬৭; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ২/২৫১; আলমাবসূত, সারাখসী ২/১৫৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৮১; আলবাহরুর রায়েক ২/২১৬; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩০৪
দশ বছর আগে আমার বিয়ে হয়। বিয়েতে আমি ৬ ভরি স্বর্ণ ও দুই ভরি রুপা পাই। দুই বছর পর স্বর্ণগুলো বিক্রি করে কিছু টাকা হাসবেন্ডকে দিই আর কিছু টাকা দিয়ে ফার্নিচার বানাই বা অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা হয় (স্পষ্ট মনে নেই)। হুজুরের কাছে জানতে চাচ্ছিÑ
১. ৬ ভরি স্বর্ণ ও দুই ভরি রুপা দ্বারা কি যাকাত ফরয হয়?
২. যদি হয় তাহলে উক্ত দুই বছরের যাকাত দিতে হবে কি?
৩. এক ব্যক্তির কাছে দুই ভরি স্বর্ণ ও দুই ভরি রুপা আছে। তাকে কি এ পরিমাণ সোনা-রুপার কারণে যাকাত দিতে হবে?
১,২. ছয় ভরি স্বর্ণ ও দুই ভরি রুপার কোনোটাই পৃথক পৃথকভাবে যদিও যাকাতের নেসাব হয় না, কিন্তু এই দুটোর মূল্য একত্র করলে তা রুপার নেসাব অর্থাৎ ৫২.৫ (সাড়ে বায়ান্ন) তোলা-এর মূল্য সমপরিমাণ হয়ে যায়। আর দুইটি একত্রে থাকলে তখন যেটার মূল্য কম সেটার হিসাবে নেসাব পরিমাণ হলেই যাকাত দিতে হয়। সুতরাং প্রশ্নোক্ত অবস্থায় আপনাকে পিছনের দুই বছরের যাকাত আদায় করতে হবে।
৩. বর্তমান মূল্য অনুযায়ী দুই ভরি স্বর্ণ ও দুই ভরি রুপা থাকলে তার সমষ্টিগত মূল্য যাকাতের নেসাব অর্থাৎ ৫২.৫ (সাড়ে বায়ান্ন) তোলা রুপার সমপরিমাণ হয় যায়। তাই কারো কাছে এ পরিমাণ সোনা-রুপা থাকলে যাকাত দিতে হবে।
Sharable LinkÑকিতাবুল আছল ২/৯১; বাদায়েউস সানায়ে ২/১০৬; আলহাবিল কুদসী ১/২৭২; আলবাহরুর রায়েক ২/২৩০; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৮৩, ৩০৩
আমি হজে¦ আমার বাচ্চা কোলে নিয়ে ফরয তাওয়াফ করছিলাম। বাচ্চার পরনে ডায়াপার ছিল। তাওয়াফ শেষে দেখি বাচ্চার পেশাবে ডায়াপার ভিজে আমার কাপড়ও ভিজে গেছে।
মুফতী সাহেবের কাছে জানার বিষয় হলÑ কাপড়ে নাপাকী থাকা অবস্থায় তাওয়াফ করার দ্বারা কি আমার তাওয়াফ হয়েছে? এ কারণে কি কোনো জরিমানা দিতে হবে?
পবিত্র কাপড়ে তাওয়াফ করা সুন্নত। জেনেশুনে অপবিত্র কাপড় নিয়ে তাওয়াফ করা মাকরূহ। তবে এর কারণে দম বা জরিমানা ওয়াজিব হয় না। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার উপর কোনো দম বা জরিমানা ওয়াজিব হয়নি এবং আপনার তাওয়াফ হয়ে গেছে।
Sharable LinkÑআলমাবসূত, সারাখসী ৪/৩৯; বাদায়েউস সানায়ে ২/৩১০; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৪৫৩; ফাতাওয়া সিরাজিয়া, পৃ. ৩৬; আলবাহরুর রায়েক ৩/১৮; রদ্দুল মুহতার ২/৫৫০
আমি একজন কৃষক। কৃষিকাজ করেই সংসার চালাই। ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছা হজে¦ যাব। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে সম্ভব হচ্ছিল না। আবার মনের ইচ্ছাও দৃঢ় হতে লাগল। অবশেষে বিগত তিন বছর আগে পরিবারের অনুমতি নিয়ে একজন থেকে টাকা ঋণ করে আমি হজে¦ যাই। তিন বছর পর এখন আল্লাহ তাআলা আমাকে বেশ সচ্ছলতা দান করেছেন। জানার বিষয় হল, এখন কি আমার উপর আবার হজ¦ ফরয হয়েছে? এখন হজ¦ করলে কি তা ফরয হজ¦ গণ্য হবে, না নফল হজ¦?
অস্বচ্ছল অবস্থায় হজ¦ করলেও তা ফরয হজ¦ হিসেবেই আদায় হয়। তাই আপনার বিগত হজ¦ দ্বারাই ফরয হজ¦ আদায় হয়ে গিয়েছে। এখন আপনি হজ¦ করলে তা নফল গণ্য হবে।
Sharable LinkÑআলমাবসূত, সারাখসী ৪/১৪৯; বাদায়েউস সানায়ে ২/৩০১; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৮১; রদ্দুল মুহতার ২/৪৬০; গুনইয়াতুন নাসিক, পৃ. ৩২
আমার এক আত্মীয় বাসের ড্রাইভার। বর্তমানে সে সৌদিআরবে মক্কা টু মদীনা বাস চালিয়ে থাকে। এ কারণে তাকে একদিন পর পর মক্কায় আসতে হয়। হুজুরের কাছে যে বিষয় জানতে চাচ্ছি তা হচ্ছে, আমাদের সকলেরই জানা আছে যে, মীকাতের বাইরে থেকে কেউ সরাসরি মক্কায় প্রবেশ করলে তাকে এহরাম বেঁধে প্রবেশ করতে হয়। তাই এখন সে কী করবে? ইহরাম বেঁধেই মক্কায় প্রবেশ করবে?
মীকাতের বাইরে থেকে মক্কায় প্রবেশ করতে চাইলে সাধারণ অবস্থায় মীকাত থেকে ইহরাম করেই আসার বিধান। কিন্তু বাস চালক, ব্যবসায়ী বা এমন লোকজন যাদের পেশার তাগিদে ঘন ঘন মক্কা মুকাররামায় আসা-যাওয়ার প্রয়োজন দেখা দেয় তাদের জন্য প্রত্যেকবার ইহরাম করে আসা এবং উমরা করা যেহেতু কষ্টকর বরং অনেক ক্ষেত্রে প্রায় অসম্ভব। তাই এ ধরনের ব্যক্তি উমরার ইচ্ছা না করে থাকলে তাদেরকে হেরেমে প্রবেশের জন্য ইহরাম করতে হবে না। সুতরাং আপনার ঐ আত্মীয় ড্রাইভিং করার ক্ষেত্রে ইহরাম ছাড়াও মক্কায় প্রবেশ করতে পারবে। এ কারণে তার উপর কোনো জরিমানা আসবে না এবং কোনো গুনাহও হবে না ইনশাআল্লাহ।
قال الراقم : وهذا من باب الإفتاء بمذهب الغير من أجل عموم البلوى والحاجة الملحة.
Sharable LinkÑফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৫৫১; আলমাজমূ শরহুল মুহায্যাব ৭/১৪; আলমুগনী, ইবনে কুদামা ৫/৭০; হাজ¦ ও উমরাহ কে জাদীদ মাসাইল আওর উনকা হাল্, ইন্ডিয়া ফিক্হ একাডেমি, পৃ. ২১
আমার এক বন্ধু তার স্ত্রীকে বিশেষ একটি ঘটনার প্রেক্ষিতে বলেছিল, আগামী এক বছর আমার অনুমতি ছাড়া তোমার বাবা-মার সাথে ফোনে অথবা সরাসরি কোনোভাবেই কথা বলতে পারবে না। বললে প্রত্যেকবার এক তালাক হবে। এভাবে তিনবার বললে তিন তালাক হয়ে যাবে। পরবর্তীতে সমস্যার সমাধান হলে সে তার স্ত্রীকে তাদের সাথে কথা বলার অনুমতি দেয়। এখন তার স্ত্রী জানতে চাচ্ছে, একবারে পূর্ণ এক বছরের জন্য অনুমতি নিয়ে নেয়াই যথেষ্ট হবে, না প্রতিবারের জন্য পৃথক অনুমতি নিতে হবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে স্বামী থেকে প্রত্যেকবার কথা বলার সময় অনুমতি নেওয়া হোক বা পুুরো বছরের জন্য একবারে অনুমতি নেওয়া হোক উভয়টি যথেষ্ট হবে। মোটকথা, ঐসময় থেকে এক বছরের মধ্যে স্বামীর অনুমতি নিয়েই কথা বলতে হবে। অন্যথায় তালাক হয়ে যাবে।
উল্লেখ্য, স্ত্রীকে এ ধরনের কঠিন শর্ত আরোপ করা, তাও আবার তিন তালাকের সাথে শর্তযুক্ত করা সম্পূর্ণ জুলুম ও নাজায়েয হয়েছে। তাই স্ত্রীকে পুরো বছরের জন্য অনুমতি দিয়ে দেওয়া কর্তব্য। আর এহেন কাজের জন্য তওবা-ইস্তেগফার করতে হবে।
Sharable LinkÑআলমুহীতুল বুরহানী ৫/১০৩; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৭১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৫/৫৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৪৩৯
স্বামী খাতায় লিখেছে যে, আমার স্ত্রী পাঁচ বছরের মধ্যে তার বাপের বাড়িতে গেলে সে তালাক। এখানে আর কোনো শর্ত ছিল না। স্ত্রী ঐ লেখা দেখেছে। অতঃপর স্ত্রী তার বাবার বাড়ির পাশের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সকলের সাথে দেখা করে। এখন জানার বিষয় হল, এ কাজ করার দ্বারা স্ত্রীর উপর কোনো তালাক পতিত হবে কি? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ঐ মহিলা যেহেতু বাবার বাড়ি যায়নি; বরং পাশের বাড়ি গিয়েছে তাই উল্লিখিত শর্ত পাওয়া যায়নি। অতএব মহিলার উপর কোনো তালাক পতিত হয়নি।
Sharable LinkÑআলমাবসূত, সারাখসী ৬/১৪৩, ৯/৪৮; আলমুহীতুল বুরহানী ৪/৪০৯; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/১৮৪; আলবাহরুর রায়েক ৪/১৪; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৩৫০
কিছুদিন আগে আমার স্বামী থেকে আমি ‘খোলা তালাক’ গ্রহণ করি। তালাকের পর ইদ্দতের মাঝে আমি স্বাভাবিকভাবেই চলাফেরা করছিলাম। পাশের বাসার এক মহিলা আমাকে কানের দুল পরা অবস্থায় দেখে বললেন, ইদ্দতের সময়ও আপনি কানের দুল পরে আছেন? ইদ্দতের সময় তো অলংকার পরা যায় না। জানার বিষয় হল, তিনি কি ঠিক বলেছেন? তালাকের ইদ্দতেও কি অলংকার পরা নিষেধ? সঠিক মাসআলাটি জানিয়ে বাধিত করবেন।
খোলা তালাকের ইদ্দতের সময় মহিলার জন্য অলংকারাদি ব্যবহার করা ও সাজ-সজ্জা করা নিষেধ। তাই আপনার কানের দুলটি যদি বড় হয় এবং তাতে সাজ-সজ্জা প্রতীয়মান হয় তাহলে ইদ্দত শেষ হওয়া পর্যন্ত কানের দুল পরা থেকে বিরত থাকবেন। অবশ্য যদি নাকফুলের মত ছোট কিছু হয়ে থাকে, যা সাধারণত মানুষ অলংকার মনে করে নাÑ তাহলে সেটি পরতে পারবেন।
Sharable LinkÑশরহু মাআনিল আছার ২/৪৮ (৪৪৯৫); কিতাবুল আছল ৪/৪৩২; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩৩১; ফাতহুল কাদীর ৪/১৬০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৩৩; আলবাহরুর রায়েক ৪/১৫০; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৫৩০
এক মেয়ের সাথে আমার ফোনে কথা হত এবং কখনো কখনো তার সাথে দেখাও হত। পরে এক হুজুর থেকে জানতে পারি যে, এটি কবিরা গুনাহ এবং এতে আল্লাহ নারায হন। ফলে আমি এর থেকে বের হয়ে আসার প্রতিজ্ঞা করি। কিন্তু কিছুতেই বের হতে পারছিলাম না। বরং আমার প্রতিজ্ঞাটি বারবার ভঙ্গ হতে থাকে। তাই একপর্যায়ে আমি মুখে এভাবে প্রতিজ্ঞা করি যে, আরেকবার যদি এমনটি ঘটে তাহলে আমি যাকে বিবাহ করব সে তালাক হয়ে যাবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তার সাথে আবারো কথা হয়, আবারো দেখা হয়!
যাইহোক, এরপর আমার অন্য মেয়ের সাথে বিবাহ হয় আর আজ আমাদের বিবাহের প্রায় দুই বছর পূর্ণ হল। এখন আমি কী করব? আমার বউ কি তালাক হয়ে গেছে?
প্রশ্নোক্ত কথার কারণে বিবাহের সাথেসাথেই আপনার স্ত্রীর উপর এক তালাকে বায়েন পতিত হয়ে গেছে। তাই তখনি আপনাদের পৃথক হয়ে যাওয়া আবশ্যক ছিল। অথবা নতুনভাবে বিবাহ করে সংসার করা দরকার ছিল। কিন্তু তা না করে একত্রে বসবাস করে আপনি মারাত্মক ভুল করেছেন। এখন আপনাদের পৃথক হয়ে যেতে হবে। আর যদি পুনরায় ঘর-সংসার করতে চান তবে মহর ধার্য করে দুজন সাক্ষীর সামনে পুনরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে। আর বিবাহ ছাড়া এতদিন একত্রে ঘর-সংসারের কারণে আল্লাহ তাআলার দরবারে তওবা-ইস্তিগফার করতে হবে।
উল্লেখ্য, যে কোনো কিছুর সাথে তালাকের শর্ত জুড়ে দেওয়া বা তালাকের মাধ্যমে হলফ করা খুবই অন্যায় ও ক্ষতিকর কাজ। এসব থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক। আর এমনটি ঘটে গেলে কোনো নির্ভরযোগ্য আলেমেদ্বীন থেকে মাসআলা জেনে নেওয়া জরুরি।
Sharable LinkÑআলমুহীতুল বুরহানী ৫/১২৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৫১৩; আলহাবিল কুদসী ১/৪১৯; আলবাহরুর রায়েক ৪/৭; আননাহরুল ফাইক ২/৩৫২
গত বছর আমার বড় খালামনির বিয়ে হয়। তারপর থেকেই ছোট খালামনির সাথে তার সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে। দুজন একসাথে হলেই ঝগড়া। একদিন খালামনি মামার বাসায় এলে ছোট খালামনির সাথে খুব ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে ছোট খালামনি বলে বসেন, ‘তুই যদি আর কখনো এই বাসায় আসিস তাহলে কসমÑ আমি আত্মহত্যা করব।’ এই কথা শোনার পর দুই মাস হল বড় খালামনি আর আসেননি। ছোট খালামনি এখন তার আচরণে অনুতপ্ত, তিনি চান, বড় খালামনি বাসায় আসুক। তাই তিনি জানতে চান, আল্লাহ্র নাম না নিয়ে শুধু ‘কসম’ শব্দ দ্বারা কি কসম সংঘটিত হয়েছে? হয়ে থাকলে এই মুহূর্তে তার করণীয় কী?
শুধু ‘কসম’ শব্দ বলে কোনো কিছুর অঙ্গিকার করলে তা দ্বারাও কসম সংঘটিত হয়ে যায়। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উক্ত কথা দ্বারা আপনার খালার কসম সংঘটিত হয়ে গেছে। তবে আত্মহত্যা করা যেহেতু হারাম, আর হারাম কাজের কসম করলে তা পূরণ করা নিষেধ। তাই আপনার বড় খালা এ বাসায় আসলে আপনার ছোট খালা কসম ভঙ্গের কাফফারা আদায় করে দেবেন। কসমের কাফফারা হল, দশজন গরীবকে দুই বেলা খাবার খাওয়ানো অথবা তাদের প্রত্যেককে এক জোড়া করে পরিধেয় বস্ত্র দেয়া। এ দুটির কোনোটির সামর্থ্য না থাকলে লাগাতার তিন দিন রোযা রাখা।
Sharable LinkÑকিতাবুল আছল ২/২৭৬; আলমুহীতুল বুরহানী ৬/৬৫; আলবাহরুর রায়েক ৪/২৮১; রদ্দুল মুহতার ৩/৭১২
আমাদের এলাকায় এক ব্যক্তি মসজিদের উন্নয়নের জন্য একটি জমি ওয়াকফ করেন। অনেক বছর আগে ওয়াকফকারী ইন্তিকাল করেছেন। এদিকে জমিটি বেশ কয়েক বছর যাবৎ পানিতে ডুবে আছে। কোনো কাজ করা যায় না। প্রায় পুরো বছর পানির নিচে পড়ে থাকে। মসজিদ কমিটি চাচ্ছে, ঐ জমিটি একটা কোম্পানির নিকট বিক্রি করে তার বিনিময়ের সাথে আরো কিছু টাকা যোগ করে নতুন উর্বর একটি জমি ক্রয় করতে, যেখানে ফসল ইত্যাদি করা যাবে।
জানার বিষয় হল, এই জমি বিক্রি করা যাবে কি? বিক্রি করে কি তার টাকা দিয়ে ভিন্ন আরেকটি উর্বর জমি ক্রয় করা যাবে?
বাস্তবেই যদি উক্ত জমি বছরের অধিকাংশ সময় ব্যবহারের উপযোগী না থাকে এবং এর মাধ্যমে কোনো আয়ও না হয়, তাহলে সেটি বিক্রি করে এ থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে লাভজনক উর্বর জমি ক্রয় করার অবকাশ আছে। এক্ষেত্রে ক্রয়কৃত জমিটি বিক্রিত জমির মত ওয়াকফ হিসেবেই গণ্য হবে।
কিন্তু কোনোক্রমেই জমিটির বিক্রিত মূল্য অন্য কাজে লাগানো যাবে না; বরং অবশ্যই বিক্রিত জমি থেকে মসজিদের জন্য অধিক উপকারী হয় এমন জমি মসজিদের নামেই খরিদ করতে হবে।
Sharable LinkÑখুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৪২৫; ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ৬/২৭১; আলবাহরুর রায়েক ৫/২৫২; রদ্দুল মুহতার ৪/৩৮৪
আমাদের মসজিদের পাশেই মসজিদের জায়গায় একটা লিচু গাছ আছে। নামাযে গেলে মাঝেমাঝেই ঐ গাছ থেকে লিচু পেড়ে খাই। জানতে চাই, মসজিদের গাছের লিচু এভাবে খাওয়া আমাদের জন্য বৈধ হবে কি?
মসজিদের জায়গার গাছের মালিক মসজিদ এবং এর ফলও মসজিদের। তাই মুসল্লী বা অন্য কারো জন্য তা বিনামূল্যে খাওয়া বৈধ হবে না। অতএব এতদিন বিনামূল্যে যে ফল খেয়েছেন তার ন্যায্যমূল্য মসজিদে দিয়ে দিতে হবে।
Sharable LinkÑআলইসআফ, পৃ. ৮৮; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩১০; আলহাবিল কুদসী ১/৫৪৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৪৭৭; আলবাহরুর রায়েক ৫/২০৪; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৪৩২
আমাদের এলাকায় ইট ভাটার মালিকরা সিজনের শুরুতে অনেকের কাছে অগ্রিম ইট বিক্রি করে টাকা নিয়ে নেয়। এরপর সিজন শেষে অর্থাৎ ৩/৪ মাস পর ইট দেয়। অনেক লোক এই কারবারে জড়িত হচ্ছে। এতে কম মূল্যে ইট কিনে বেশি দামে বিক্রি করা যায়। এই পদ্ধতিতে ইট ক্রয়-বিক্রয় কি বৈধ হবে?
প্রশ্নোক্ত লেনদেনটি কিছু শর্ত সাপেক্ষে জায়েয। শর্তসমূহ হচ্ছে, চুক্তির সময় ইটের পরিমাণ, সাইজ, গুণগত মান নির্ধারিত করতে হবে। আর ইট বুঝিয়ে দেওয়ার তারিখ এবং কোথায় হস্তান্তর করবেÑ এসব বিষয় সুস্পষ্ট করে নিতে হবে। আর মেয়াদ শেষে ক্রেতাকে ইটই বুঝে নিতে হবে। কোনোভাবেই তা ইটভাটার মালিকের নিকট বিক্রি করে টাকা নেওয়া যাবে না।
Sharable LinkÑশরহু মুখতাসারিত তাহাবী ৩/১২০; আলহাবিল কুদসী ২/৫৩; আলইখতিয়ার ২/৮৩; আদ্দুররুল মুখতার ৫/২১৪; শরহুল মাজাল্লাহ, আতাসী ২/৩৯০