মুহাম্মাদ আবদুর রহমান - কাশিপুর, যশোর

৪৮০৩. Question

একবার আমি কুরআন শরীফ পড়ছিলাম। কুরআন শরীফ পড়ার মাঝে অযু ভেঙে যায়। তাই আমি পরিহিত জামার এক কোনা দিয়ে কুরআন শরীফ উঠিয়ে রাখি। মুফতী সাহেবের কাছে আমার জানার বিষয় হল, অযু ছাড়া এভাবে জামার কোনা দিয়ে কি কুরআন শরীফ উঠিয়ে রাখা যায়? দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার পরিহিত কাপড়ের কোনা দিয়ে কুরআন মাজীদ স্পর্শ করা ঠিক হয়নি। কারণ অযু না থাকলে পরিহিত কাপড় দ্বারাও কুরআন মাজীদ স্পর্শ করা নিষেধ। এ ভুলের জন্য ইস্তিগফার করবেন।

উল্লেখ্য যে, অযু বিহীন অবস্থায় কুরআন  মাজীদ স্পর্শ করতে চাইলে শরীর থেকে পৃথক পবিত্র কোনো কাপড় দ্বারা ধরা যাবে।

-ফাতহুল কাদীর ১/১৪৯; হালবাতুল মুজাল্লী ১/১৮৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১০৪; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/১৬৬; আলবাহরুর রায়েক ১/২০১

Sharable Link

মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ - খুলনা

৪৮০৪. Question

একদিন মুয়াযযিন সাহেব ভুলবশত মাগরিবের ওয়াক্ত হওয়ার আগে আযান দিয়ে ফেলেন। ওয়াক্ত হওয়ার পর আমার আব্বা তাকে পুনরায় আযান দিতে বলেন। তিনি বললেন, একবার তো আযান দেওয়া হয়েছে। আবার পুনরায় কেন আযান দেওয়া লাগবে? পূর্বের আযানই যথেষ্ট। হুযুরের কাছে জানার বিষয় হল, তার কথা কি ঠিক? জানালে উপকৃত হব।

Answer

মুয়াযযিন  সাহেবের কথা ঠিক নয়। এক্ষেত্রে পুনরায় আযান দেওয়া কর্তব্য ছিল। ওয়াক্তের আগে আযান দিলে তা সহীহ হয় না। তাই ভুলবশত ওয়াক্তের আগে আযান দিয়ে দিলে ওয়াক্ত হওয়ার পর পুনরায় আযান দিতে হবে। না জেনে দ্বীনী বিষয়ে মন্তব্য করা অন্যায়।

-কিতাবুল আছল ১/১১০; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ১/৫৫৮; আলমাবসূত, সারাখসী ১/১৩৪; মাজমাউল আনহুর ১/১১৩; রদ্দুল মুহতার ১/৩৮৫

Sharable Link

আবদুর রহীম - নালিতাবাড়ি, শেরপুর

৪৮০৫. Question

কিছুদিন আগে আমাদের মসজিদে একটি বিদেশি জামাত আসে। ঘটনাক্রমে ইমাম সাহেব অনুপস্থিত থাকায় বিদেশি মেহমানদের একজন ইমামতি করেন। ইমাম সাহেব মুসাফির থাকার কারণে তিনি দুই রাকাত পড়ে সালাম ফেরানোর পর আমি বাকি দুই রাকাত পড়ার জন্য দাঁড়িয়ে যাই। আমি এই দুই রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়ি এবং যথারীতি নামায শেষ করি। কিন্তু শেষ বৈঠকে ভুলে তাশাহহুদ না পড়ে সূরা ফাতিহা পড়ে ফেলি এবং সিজদায়ে সাহু না করেই নামায শেষ করি। জানার বিষয় হল, আমার নামায কি সহীহ হয়েছে? জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।

Answer

আপনার উক্ত নামায আদায় হয়ে গেছে। কেননা অবশিষ্ট দুই রাকাতে আপনি লাহেক ছিলেন। অর্থাৎ একা পড়লেও তা ইমামের পেছনে পড়া হয়েছে বলেই ধর্তব্য হবে। তাই এই বাকি দুই রাকাত নামায আদায় করার সময় কোনো ওয়াজিব ছুটে গেলে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয় না। সুতরাং আপনার সাহু সিজদা না দেওয়া ঠিকই হয়েছে এবং উক্ত নামায সহীহ হয়েছে। তা দোহরাতে হবে না।

-ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৬৯; হাশিয়াতুশ শুরুমবুলালী আলাদ দুরার ১/১৩৫; আদ্দুররুল মুখতার ২/১২৯

Sharable Link

সালমান আহমাদ - মোমেনশাহী

৪৮০৬. Question

কিছুদিন আগে আমার মেয়ের একটি ছেলেসন্তান জন্ম হয়। নার্সরা নাতিকে আমাদের কোলে দেওয়ার পর তার কানে আযান দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেই। ঠিক তখনই যোহর নামাযের আযান হয়। আমরা মসজিদের আযানই যথেষ্ট মনে করে পুনরায় তার কানে আর আযান দেইনি। জানার বিষয় হল, মসজিদের আযানের দ্বারা কি নবজাতকের কানে আযান দেওয়ার সুন্নাত আদায়  হয়ে যায়? আর নবজাতকের কানে আযান দেওয়ার ক্ষেত্রেও কি حي على الصلاةحي على الفلاح  বলার সময় ডানে-বামে চেহারা ঘোরানোর নিয়ম আছে? জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।

Answer

সন্তান জন্মগ্রহণ করার পর তার কানে আযান দেওয়া একটি স্বতন্ত্র সুন্নত। হাদীসে এই আযান নবজাতকের কানের কাছে দেওয়ার কথা আছে। নামাযের আযান দ্বারা এই সুন্নত আদায় হবে না। তাই মসজিদে আযান হলেও নবজাতকের কানে পৃথকভাবে আযান দিতে হবে। সুনানে আবু দাউদের এক বর্ণনায়  এসেছে, আবু রাফে রা. বলেন-

رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ أَذّنَ فِي أُذُنِ الْحَسَنِ بْنِ عَلِيٍّ حِينَ وَلَدَتْهُ فَاطِمَةُ بِالصّلَاةِ.

আমি রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হাসান বিন আলী রা. জন্মগ্রহণ করার পর তার কানে নামাযের আযানের মত আযান দিতে দেখেছি। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৫১০৫

বিখ্যাত মুহাদ্দিস মোল্লা আলী কারী রাহ. উক্ত হাদীস উল্লেখ করে বলেন-

وَهَذَا يَدُلّ عَلَى سُنِّيّةِ الْأَذَانِ فِي أُذُنِ الْمَوْلُودِ.

এই হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, নবজাতকের কানে আযান দেওয়া সুন্নত। -মিরকাতুল মাফাতীহ ৮/৮১

আর ফকীহগণ বলেছেন, নবজাতকের কানে আযান দেওয়ার ক্ষেত্রেও মূল আযানের মত حي على الصلاةحي على الفلاح বলার সময় ডানে বামে চেহারা ঘোরানো উত্তম।

-আলমুহীতুল বুরহানী ২/৮৯; রদ্দুল মুহতার ১/৩৮৫; আততাহরীরুল মুখতার, রাফেয়ী ১/৪৫; ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/১০৮

Sharable Link

হাবীবুর রাহমান - না. গঞ্জ

৪৮০৭. Question

তাবলীগ জামাতের মারকায ঢাকা কাকরাইল মসজিদ থেকে ৪০, ২০, ৭, ৩ দিনের জন্য বিভিন্ন মহল্লা, গ্রাম, শহর, পৌরসভা, থানা বা জেলাভিত্তিক জামাত পাঠানো হয়ে থাকে। এ অবস্থায় তাবলীগ জামাতের ভাইদের নামাযের হুকুম কী হবে?

কিছু ভাই বলে থাকেন, তাবলীগ জামাতে বের হয়ে যেহেতু একই মসজিদে ১৫ দিনের বেশি অবস্থান করা হয় না তাই সদা-সর্বদা মুসাফির থাকবে। তাদের এ কথা কতটুকু ঠিক?

এখানে আরো উল্লেখ্য যে, একই মসজিদ বা একই মহল্লা, গ্রাম, ইউনিয়ন, থানা বা জেলার ভিতর ১৫ দিনের বেশি থাকলে নামাযের হুকুম কী হবে?

Answer

যে ব্যক্তি ঢাকা সিটিতে মুকীম সে কাকরাইল থেকে সফরসম দূরত্বে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হলে ঢাকা সিটির সীমানা ত্যাগ করার পর থেকে সে মুসাফির গণ্য হবে এবং পথিমধ্যে মুসাফির ইমামের পেছনে বা একাকী নামায পড়লে কসর করতে হবে। অর্থাৎ চার রাকাতবিশিষ্ট ফরয নামায দুই রাকাত পড়তে হবে। আর মুকীমের পিছনে পড়লে পুরো চার রাকাত পড়তে হবে।

গন্তব্যস্থলে পৌঁছে একটি গ্রাম বা একটি শহরের বিভিন্ন মসজিদে লাগাতার ১৫ দিন বা তার বেশি থাকার নিয়ত করলে ঐ গ্রাম বা শহরে সে মুকীম গণ্য হবে। কিন্তু এক গ্রাম বা এক শহর না হয়ে পুরো জেলা বা উপজেলায় কিংবা এক ইউনিয়নের একাধিক গ্রামে ১৫ দিন বা তার বেশি অবস্থানের নিয়ত করলে সে মুকীম হবে না; বরং মুসাফিরই থাকবে।

তদ্রƒপ শহর ও শহরতলী মিলে ১৫ দিন বা তার বেশি অবস্থানের নিয়ত করলেও মুসাফির থাকবে।

তেমনি এক গ্রাম বা এক শহরের বিভিন্ন মসজিদে ১৫ দিনের কম থাকার নিয়ত করলে ঐ গ্রাম বা শহরেও সে মুসাফির গণ্য হবে।

আর মুকীম ব্যক্তি কাকরাইল থেকে ৭৮ কিলোমিটারের কম দূরত্বে সফরের জন্য বের হলে পথিমধ্যে এবং গন্তব্যস্থলে মুকীম গণ্য হবে।

তবে যে কাকরাইলে মুসাফির থাকবে সে কাকরাইল থেকে ৭৮ কিলোমিটারের কম দূরত্বে গেলেও মুসাফিরই থাকবে।

কোনো এক মসজিদে ১৫ দিনের বেশি অবস্থান না করলে সর্বদা মুসাফির থাকবে- এমন বক্তব্য সঠিক নয়।

-বাদায়েউস সানায়ে ১/২৬১, ২৬৮-২৭০; কিতাবুল আছল ১/২৩১-২৩৩, ২৫৬; আলবাহরুর রায়েক ২/১৩০-১৩২; রদ্দুল মুহতার ২/১২১-১২৫

Sharable Link

আসাদুযযামান - শেরপুর

৪৮০৮. Question

আমাদের নির্দিষ্ট ওয়াকফকৃত কোনো কবরস্থান ছিল না। তাই আমাদের বংশীয় লোকদেরকে বাড়ির পাশে একটি স্থানে দাফন করা হত। এখানে নতুন পুরাতন অনেক কবর আছে। সর্বশেষ এক বছর আগে আমার চাচাকে দাফন করা হয়। আল্লাহর রহমতে এখন আমরা একটি ওয়াকফকৃত কবরস্থান বানিয়েছি। আমাদের বংশের অনেকেই কবরগুলোকে নতুন কবরস্থানে স্থানান্তর করে আগের জায়গাকে সমান করে দিয়ে ফসলি জমি বানাতে চাচ্ছে। জানার বিষয় হল, আমরা কি নতুন-পুরাতন কবরগুলোকে ওয়াকফকৃত নতুন কবরস্থানে স্থানান্তর করে ঐ জমি ব্যবহার করতে পারব? মাসআলাটির সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

শরীয়তসম্মত কোনো ওজর ছাড়া কবর স্থানান্তর করা বৈধ নয়। তাই আপনাদের পার্শ্ববর্তী কবরগুলোকে স্থানান্তর করা যাবে না। অবশ্য যেসব কবরে লাশ মাটির সাথে একেবারে মিশে গেছে বলে প্রবল ধারণা হয় সেসব জায়গা ব্যক্তি মালিকানাধীন হলে তা সমান করে দিয়ে উক্ত জমি চাষাবাদসহ অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা যাবে। কেননা ব্যক্তি মালিকানাধীন কবরের লাশ মাটি হয়ে গেলে সেই কবরকে অক্ষত রাখা জরুরি থাকে না। আর যেসব কবর একেবারে নতুন বা বেশিদিন হয়নি এবং লাশ মাটি না হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি সেসব কবর স্থানান্তরও করা যাবে না। তা সমান করে অন্য কাজে ব্যবহার করা যাবে না; বরং এজাতীয় কবরগুলোর লাশ মাটি হয়ে যাওয়া পর্যন্ত অক্ষত রাখতে হবে।

-আততাজনীস ওয়াল মাযীদ ২/২৭৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৮২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২২৬; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৬২৯; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫৮৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৩৮

Sharable Link

মুহাম্মাদ আবদুল মাজেদ - মনিরামপুর, যশোর

৪৮০৯. Question

আমাদের গ্রামে আমার বড় মামা গরু ক্রয়-বিক্রয় করেন। তাকে সবাই গরু বেপারী বলে চেনে। তার লেনদেনের পদ্ধতি হল, তিনি একটা গরু ক্রয় করে ১০-১৫ দিন বাড়িতে রেখে বিক্রি করে দেন। আবার কখনো ১ মাস বা দেড় মাসের মত রেখে বিক্রি করে দেন।

মুফতী সাহেবের কাছে আমার জানার বিষয় হল, এটার কারণে তার উপর যাকাত আসবে কি না? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

হাঁ, উক্ত ব্যক্তি যেহেতু ব্যবসার উদ্দেশ্যে গরু ক্রয় করে তাই তা যাকাতযোগ্য সম্পদ বলে গণ্য হবে। সুতরাং যাকাতবর্ষ শেষে অতিরিক্ত কোনো গরু থেকে গেলে সেগুলোর মূল্য হিসাব করে যাকাত আদায় করতে হবে।

-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৫৫৭; কিতাবুল আছল ২/৯৭; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ২/৩৩৬; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/১৬৩; ফাতহুল কাদীর ২/১৬৬; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৫০

Sharable Link

জালালুদ্দীন - মোমেনশাহী

৪৮১০. Question

আমি আমার মাকে নিয়ে গত বছর হজ্বে যাই। মক্কায় পৌঁছে প্রথমে উমরা করি। এরপর নির্দিষ্ট সময়ে পুনরায় ইহরাম বেঁেধ হজ্বের কাজগুলো করতে থাকি। দশম তারিখে তাওয়াফের সময় প্রচÐ ভিড়ের আশংকা করে কংকর নিক্ষেপ না করে সরাসরি মক্কায় চলে যাই এবং তাওয়াফ করে নেই। তারপর ঐ দিনের বাকি আমলগুলো যথানিয়মে আদায় করি। জানার বিষয় হল, তাওয়াফ কি কংকর নিক্ষেপ, কুরবানী ও হলকের পরই করতে হবে? কংকর নিক্ষেপ করার আগে তাওয়াফ করা যাবে কি? যদি তাওয়াফ করা না যায় তাহলে আমরা যে তাওয়াফ করেছি  তার কারণে কোনো জরিমানা আদায় করতে হবে কি না? জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।

Answer

কংকর নিক্ষেপ, কুরবানী ও হলক এই তিন কাজ শেষ করার পর তাওয়াফে যিয়ারত করা সুন্নত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই তিন কাজ শেষ করার পরই তাওয়াফে যিয়ারত করেছেন। (দ্রষ্টব্য. সহীহ মুসলিম, হাদীস ১২১৮, ১৩০৫)

অবশ্য দশই যিলহজ্ব সুবহে সাদিক থেকেই তাওয়াফে যিয়ারতের সময় শুরু হয়ে যায়। তাই দশ তারিখে কংকর নিক্ষেপ করার আগে তাওয়াফে যিয়ারত করলেও তা আদায় হয়ে যাবে। তবে সুন্নত পরিপন্থী হবে। অবশ্য এ কারণে কোনো দম বা জরিমানা ওয়াজিব হবে না।

-বাদায়েউস সানায়ে ২/৩১৪; ফাতহুল কাদীর ২/৪৬৯; মানাসিক, মোল্লা আলী আলকারী পৃ. ৩৫৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৭০; গুনয়াতুন নাসিক পৃ. ১৭৮

Sharable Link

মুহাম্মাদ আলাউদ্দীন - শার্শা, যশোর

৪৮১১. Question

আল্লাহ তাআলার রহমতে গত বছর হজ্বে গিয়েছিলাম। আগামীতেও যাওয়ার ইচ্ছা আছে। বাকি আল্লাহর ইচ্ছা।  তো হজ্বে গিয়ে দেখলাম, অনেক মানুষ তাওয়াফের সময় জোরে জোরে বিভিন্ন দুআ-দরূদ পড়ে। এতে অন্যের তাওয়াফে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। একবার তো তাওয়াফের সংখ্যাই ভুলে গিয়েছিলাম। পাশে এক আলেমের কাছ থেকে মাসআলা জেনে নিয়ে আমল করেছি। এ সময় আরো কিছু লোককে দেখলাম সারি বেঁধে তাওয়াফ করছে। তাদের মধ্যে একজন ছোট মাইকে দুআ পড়ছে আর অন্যরা তার অনুসরণ করেছে।

এখন মুফতী সাহেবের কাছে আমার জানার বিষয় হল, তাওয়াফের সময় এভাবে উচ্চস্বরে দুআ-দরূদ পড়ার বিধান কী? দয়া করে বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

তাওয়াফ করার সময় উচ্চস্বরে দুআ-দরূদ পড়া ও যিকির-আযকার করা ঠিক নয়। এটি সুন্নাহ পরিপন্থী আমল। এছাড়া এতে তাওয়াফকারীদের একাগ্রতা নষ্ট হয় এবং অনেকের আমলে বিঘœ ঘটে। আর কারো আমলে বিঘœ ঘটানো নিষিদ্ধ।

মনে রাখা দরকার যে, তাওয়াফ গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। এ সময় খুশু-খুযু তথা একগ্রতা ও মগ্নতার সাথে থাকা উচিত। তাওয়াফসহ হজ্বের সকল আমল আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণে হওয়া উচিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

خُذُوا عَنِّي مَنَاسِكَكُمْ.

তোমরা আমার থেকে হজ্বের বিধান ও নিয়মাবলি শিখে নাও। -সুনানে কুবরা, বাইহাকী ৫/১২৫

আর তাওয়াফের সময় এভাবে উচ্চস্বরে সকলে সমস্বরে দুআ-দরূদ ও যিকির করার কোনো প্রমাণ হাদীস-আছারে পাওয়া যায় না। এটি সুন্নাহসম্মত আমল নয়; বরং তা বিদআত। তাই এ পদ্ধতি বর্জনীয়।

-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৪৯৯; আননাহরুল ফায়েক ২/৭৬; আলবাহরুল আমীক ২/১২১৭; মানাসিক, মোল্লা আলী আলকারী পৃ. ১৬৫; রদ্দুল মুহতার ২/৪৯৭

Sharable Link

মুহাম্মাদ যুবায়ের আহমাদ - নড়িয়া, শরিয়তপুর

৪৮১২. Question

আমার ভগ্নিপতি গত বছর হজ্বে গিয়েছিলেন। হজ্বে যাওয়ার আগে দেশেই আমি হজ্বের বিভিন্ন বিষয়ে তাকে দিকনিদের্শনা দিয়েছিলাম। যেন হজ্বের হুকুম-আহকাম পালনে কোনো ধরনের ত্রæটি না হয়। ১২ তারিখে তাকে ফোন করে জিজ্ঞাসা করলাম, কোথায় আছেন? তিনি বললেন, এই তো কেবলমাত্র কংকর মেরে মক্কায় আসলাম। আমি বললাম, সূর্য ঢলার আগেই কংকর মেরেছেন? তিনি বললেন, হাঁ। এখানকার অনেকেই বলেছে ১১ ও ১২ তারিখে সূর্য ঢলার আগেও কংকর নিক্ষেপ করা যায়। আমি বললাম, আপনি পুনরায় মিনায় গিয়ে কংকর মেরে আসেন। ফলে তিনি আবার মিনায় গিয়ে কংকর নিক্ষেপ করেন।

এখন মুফতী সাহেবের কাছে আমার জানার বিষয় হল, যারা বলে, ১১ ও ১২ তারিখে সূর্য ঢলার আগেও কংকর মারা যাবে। তাদের কথা শুদ্ধ কি না? বিষয়টি নির্ভরযোগ্য দলীলসহ জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

১১ ও ১২ তারিখে সূর্য ঢলার আগে কংকর মারা যায় না। কারণ ১১ ও ১২ তারিখে সূর্য ঢলার আগে কংকর মারার সময় শুরুই হয় না। এসময় কংকর মারা চার মাযহাবের কারো নিকটেই সহীহ নয়।

হযরত জাবের রা. বলেন-

رَمَى رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ الْجَمْرَةَ يَوْمَ النّحْرِ ضُحًى، وَأَمّا بَعْدُ فَإِذَا زَالَتِ الشّمْسُ.

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইয়াউমুন নাহরে (অর্থাৎ ১০ যিলহজ্ব) দিনের প্রথম প্রহরে জামরায় (আকাবায়) কংকর মেরেছেন। আর পরের দিনগুলোতে সূর্য ঢলে যাওয়ার পর কংকর মেরেছেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১২৯৯

হযরত ওয়াবারা রাহ. বলেন-

سَأَلْتُ ابْنَ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا، مَتَى أَرْمِي الجِمَارَ؟ قَالَ: إِذَا رَمَى إِمَامُكَ، فَارْمِهْ. فَأَعَدْتُ عَلَيْهِ المَسْأَلَةَ، قَالَ: كُنّا نَتَحَيّنُ فَإِذَا زَالَتِ الشّمْسُ رَمَيْنَا.

আমি ইবনে উমর রা.-কে জিজ্ঞাসা করলাম, (১০ যিলহজ্বের পরের দিনগুলোতে) কখন কংকর মারব? তিনি বললেন, তোমার ইমাম যখন কংকর মারে তখন তুমিও মার। আমি পুনরায় তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, আমরা সূর্য ঢলার অপেক্ষা করতাম। যখন সূর্য ঢলে যেত তখন কংকর মারতাম। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৭৪৬

হযরত উমর রা., হযরত আবদুল্লাহ ইবন যুবায়ের রা., হযরত সাঈদ বিন যুবায়ের রা., হযরত তাউস রাহ.সহ প্রমুখ সাহাবা-তাবেঈন থেকে সূর্য ঢলার পরে কংকর মারার একাধিক বর্ণনা হাদীসের কিতাবসমূহে এসেছে। কিন্তু নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা কোনো সাহাবী থেকে এই দুই দিনে সূর্য ঢলার আগে মারার কথা প্রমাণিত নেই। সুতরাং ১১ ও ১২ তারিখে সূর্য ঢলে যাওয়ার আগে কংকর মারলে তা সহীহ হবে না। কেউ মারলে সূর্য ঢলার পর আবার কংকর মারতে হবে। অন্যথায় দম ওয়াজিব হয়ে যাবে।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ, বর্ণনা ১৪৭৯২-১৪৮০০; আলমাবসূত, সারাখসী ৪/৬৮; বাদায়েউস সানায়ে ২/৩২৪; আলমুগনী, ইবনে কুদামা ৫/৩২৮; আলমাজমূ শরহুল মুহাযযাব ৮/২১১; ইলাউস সুনান ১০/১৭৮

Sharable Link

ইবরাহীম - মাদারিপুর

৪৮১৩. Question

আমরা জানি, ইহরাম অবস্থায় সেলাইযুক্ত কাপড় পরা জায়েয নয়। প্রশ্ন হল, লুঙ্গির ক্ষেত্রেও কি একই হুকুম? সেলাই ছাড়া লুঙ্গি পরলে অনেক সময় সতর খুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই এক্ষেত্রে কী করণীয়? বিস্তারিত জানানোর অনুরোধ রইল।

Answer

ইহরাম অবস্থায় পুরুষের জন্য শরীরের কোনো অঙ্গের আকৃতিতে সেলাই করা পোশাক পরা নাজায়েয। যেমন, পাঞ্জাবী, পায়জামা, গেঞ্জি ও মোজা ইত্যাদি। আর লুঙ্গি যেহেতু পায়জামার মত কোনো অঙ্গের আকৃতিতে বানানো নয় তাই সেলাইযুক্ত লুঙ্গি পরা নাজায়েয নয়। তবে খোলা চাদর পরলে যাদের সতরের অঙ্গগুলো বা তার অংশবিশেষ খুলে যাওয়ার আশংকা না থাকে তাদের জন্য সেলাইযুক্ত লুঙ্গি না পরাই উচিত। কেননা ইহরামের কাপড় একেবারে সেলাইমুক্ত হওয়া উত্তম। তাই সম্ভব হলে ইহরাম অবস্থায় সেলাইবিহীন চাদরই পরবে। কিন্তু সেলাইবিহীন চাদর পরলে কারো যদি সতর খুলে যাওয়ার আশংকা থাকে তবে তার জন্য সেলাই করা লুঙ্গি ব্যবহার করাই উচিত।

-মানাসিক, পৃ. ৯৮, ১২০; ফাতাওয়া রহীমিয়া ৮/৭৫; আহকামে হজ্ব, মুফতী মুহাম্মাদ শফী পৃ. ৩৪

Sharable Link

আশিকুর রহমান - রাজশাহী

৪৮১৪. Question

গত বছর আমার বিয়ে হয়। বিয়ের কিছু দিন পরই স্ত্রীর সাথে মনোমালিন্য হয়। সে বিভিন্ন পর-পুরুষের সাথে ফোনে কথা বলে, তাদের সাথে আড্ডা দেয়। তাকে অনেক বোঝানোর পরও কাজ হয়নি; বরং সে বারবার বলে, আমাকে ছেড়ে দাও। আমাকে তালাক দিয়ে দাও। আমার স্ত্রীরা পারিবারিকভাবে বেশ ধনী। তাই মুরব্বীদের সাথে পরামর্শ করে তাকে খোলা তালাক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। আমার এক চাচা বললেন, তুমি খোলা তালাক বাবদ তিন লাখ টাকা নাও। মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাই, আমি কি আমার স্ত্রী থেকে তালাক বাবদ উক্ত টাকা গ্রহণ করতে পারব?

উল্লেখ্য, আমার বিয়ের মহর ছিল আড়াই লাখ টাকা। বিয়ের সময় স্বর্ণালংকারের মাধ্যমে তা আদায় করে দিয়েছি।

Answer

স্ত্রীর অন্যায়ের কারণে খোলা তালাক হলে স্বামী পূর্ণ মহর বা মহরের অংশ বিশেষ ফেরত নেওয়ার কিংবা না দেওয়ার শর্ত করতে পারে। কিন্তু মহরের চেয়ে বেশি দাবি করা অনুচিত। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার মহর যেহেতু আড়াই লাখ ছিল তাই খোলা তালাক দেওয়ার সময় আড়াই লাখ বা তার কম অর্থের শর্ত করতে পারবেন। অবশ্য আপনার স্ত্রী যদি নিজ থেকে আপনাকে অতিরিক্ত টাকা দিতে চায় তাহলে সেক্ষেত্রে আপনি তা গ্রহণ করতে পারবেন।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ, হাদীস ১৮৮৩০; কিতাবুল আছল ৪/৫৫৮; আলজামেউস সাগীর পৃ. ১১৯; বাদায়েউস সানায়ে ৩/২৩৬; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৩/১৮৪; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ২/১৬১; রদ্দুল মুহতার ৩/৪৪৫

Sharable Link

আফরোজা বেগম - উত্তরা, ঢাকা

৪৮১৫. Question

আমি জানতাম, বাচ্চাকে দুই বছর পর্যন্ত বুকের দুধ খাওয়ানো যায়। আমার বাচ্চার বয়স দুই বছর এক মাস। কিন্তু এখনও দুধ ছাড়াতে পারিনি। সেদিন এক বোন থেকে শুনলাম, আড়াই বছর পর্যন্ত নাকি দুধ পান করানো যায়। এক্ষেত্রে সঠিক মাসআলাটি জানতে চাচ্ছি।

Answer

বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী শিশুকে চান্দ্রমাসের হিসাবে দুই বছর পর্যন্ত বুকের দুধ পান করানো যায়। দুই বছরের পর পান করানো নাজায়েয। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

وَ الْوَالِدٰتُ یُرْضِعْنَ اَوْلَادَهُنَّ حَوْلَیْنِ كَامِلَیْنِ لِمَنْ اَرَادَ اَنْ یُّتِمَّ الرَّضَاعَةَ .

মায়েরা তাদের সন্তানদের পূর্ণ দুবছর দুধ পান করাবে, (এ বিধান) তার জন্য, যে দুধ পান (এর মেয়াদ) পূর্ণ করতে চায়। -সূরা বাকারা (২) : ২৩৩

তাই আপনার উপর জরুরি হল, দ্রæত শিশুটির দুধ ছাড়িয়ে দেওয়া।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ, বর্ণনা ১৭৩৪৩; ফাতহুল কাদীর ৩/৩০৭-৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ২/১১; আলবাহরুর রায়েক ৩/২২৩; ইমদাদুল ফাতাওয়া ২/৮৬৭

Sharable Link

আরীফ আহমাদ - খুলনা

৪৮১৬. Question

আমার এক বন্ধু এক মেয়েকে ফোনে বিয়ে করে। সে মেয়েটিকে ফোনে বলে, আমি তোমাকে এত টাকার মহরে বিবাহ করলাম, তুমি রাজী থাকলে কবুল বল। মেয়েটি তখন কবুল বলে। ফোনে লাউডস্পিকারের মাধ্যমে ছেলের দুজন বন্ধুও মেয়ের কবুল বলা শুনেছিল। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর ছেলে এবং মেয়ে উভয়ের অভিভাবক তাদেরকে ভিন্ন জায়গায় বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাদের উভয়ে বলে, আমাদের তো বিয়ে হয়ে গেছে। আমরা পরস্পর স্বামী-স্ত্রী। তাই অন্য কোথাও আমরা বিয়ে করব না।

আমার প্রশ্ন হচ্ছে, তাদের বিবাহ কি শুদ্ধ হয়েছে? এক্ষেত্রে শরীয়তের বিধান কী? বর্তমানে তাদের বাবা-মা চাচ্ছেন তারা একে অপরকে তালাক দিয়ে দিক। এটা কি বৈধ হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

প্রশ্নোক্ত কথিত বিবাহ শুদ্ধ হয়নি। কারণ, বিবাহ শুদ্ধ হওয়ার জন্য দুজন সাক্ষীর সামনে পাত্র-পাত্রী কিংবা তাদের প্রতিনিধি উপস্থিত হয়ে ইজাব-কবুল (বিবাহকার্য সম্পাদন) করা জরুরি। আর প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু ইজাব-কবুল (প্রস্তাব ও গ্রহণ) দুটি পৃথক জায়গা থেকে হয়েছে আর সাক্ষীদ্বয় শুধু এক স্থানে উপস্থিত ছিল তাই তাদের উক্ত বিবাহ শুদ্ধ হয়নি এবং তারা শরীয়তের দৃষ্টিতে পরস্পর স্বামী-স্ত্রী নয়; সুতরাং উক্ত মেয়ের অন্যত্র বিবাহের জন্য তালাক নেওয়ারও প্রয়োজন নেই। মেয়েটির অভিভাবক চাইলে তার অনুমতি নিয়ে এখনি অন্য কারো সাথে তার বিবাহ দিতে পারবে। আর যদি ঐ ছেলে ও মেয়ে একত্রে ঘর-সংসার করতে চায় তবে তাদেরকে যথাযথ পন্থায় নতুন করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ২/৫২৭; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ২/১৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৪/৩৬; মুঈনুল মুফতী, তুমুরতাশী পৃ. ১৮০; আলবাহরুর রায়েক ৩/৮৮; দুরারুল হুক্কাম ১/৩২৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৬৮

Sharable Link

আহসান হাবীব - তেজগাঁও, ঢাকা

৪৮১৭. Question

আমি ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। আমার ছোট ছোট দুটি ছেলে এবং একটি মেয়ে আছে। আমার স্ত্রীর সাথে একটি বিষয় নিয়ে মনোমালিন্য হচ্ছিল। কিছুদিন আগে আমার বোনেরা আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসলে সে তাদের সাথে খুবই খারাপ আচরণ করে  এবং ফোনে আমার সাথে খুব কথা কাটাকাটি হয়। আমি তাকে তালাক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই এবং একটি চিঠিতে ঘটনার বিবরণসহ লিখি যে, ‘আমি আমার স্ত্রীকে বায়েন তালাক দিলাম’। আমি মুখে উচ্চারণ করে তালাক বলিনি কিন্তু তালাকের নিয়তেই উক্ত কথা লিখেছি। পরে আমার ছেলে-মেয়ের কথা ভেবে তালাকের চিঠিটি তার কাছে না পাঠিয়ে ছিঁড়ে ফেলি।

আমার জানার বিষয় হল, উক্ত লেখার কারণে আমার স্ত্রীর উপর তালাক পতিত হয়েছে কি না? এখন তার সাথে ঘর-সংসার করতে পারব কি না? উল্লেখ্য, আমি ইতিপূর্বে তাকে কোনো তালাক দেইনি। সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার উদ্দেশ্যে চিঠিতে ঐ কথা লেখার দ্বারাই আপনার স্ত্রীর উপর এক তালাকে বায়েন পতিত হয়ে আপনাদের বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেছে। তালাক পতিত হওয়ার জন্য মুখে উচ্চারণ করে বলা জরুরি নয়। তদ্রƒপ লিখিত তালাক স্ত্রীর কাছে প্রেরণ করা বা পৌঁছাও জরুরি নয়। সুতরাং আপনার উক্ত তালাক কার্যকর হয়ে গেছে। তবে এখন আপনারা যদি পুনরায় ঘর-সংসার করতে চান তাহলে মোহর ধার্য করে সাক্ষীদের উপস্থিতিতে পুনরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে। এভাবে পুনরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে পরবর্তীতে আপনি মাত্র দুই তালাকের অধিকারী থাকবেন। অর্থাৎ যদি কখনো তাকে দুই তালাক দেওয়া হয় তাহলে পূর্বের এক তালাকসহ মোট তিন তালাক পতিত হয়ে আপনাদের বৈবাহিক সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে ছিন্ন হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে এভাবে নতুন বিবাহের মাধ্যমেও একত্রিত হওয়ার সুযোগ থাকবে না। অতএব ভবিষ্যতে তালাকের ব্যাপারে খুবই সতর্ক থাকতে হবে।

উল্লেখ্য, তালাক হল বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্নকারী চ‚ড়ান্ত পদক্ষেপ। দাম্পত্য জীবনের সমস্যা জটিল হয়ে পড়লে উভয়ের জন্য তা থেকে নিষ্কৃতির সর্বশেষ পথ। তাই অত্যন্ত ভেবে-চিন্তে ও পরামর্শ সাপেক্ষে এ পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। কোনো কথা বা সামান্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে তালাক দেওয়া অন্যায়। এ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।

আরো উল্লেখ্য যে, শরীয়তে তালাক অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়। যা ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়, রাগ বা স্বাভাবিক অবস্থায় এমনকি ঠাট্টাচ্ছলে দিলেও কার্যকর হয়ে যায়। তাই এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা জরুরি।

-কিতাবুল আছল ৪/৫১৬; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়্যাহ ২/৭৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ২/৯১; আলমুহীতুল বুরহানী ৪/৪৮৪; ফাতহুল কাদীর ৩/৪০৩; আলবাহরুর রায়েক ৩/২৪৯; রদ্দুল মুহতার ৩/২৪৬

Sharable Link

জসিমুদ্দীন - নাভারণ, যশোর

৪৮১৮. Question

আমার এক বন্ধুর বোনকে তার স্বামী একটি বায়েন তালাক দেয়। তালাক দেয়ার কিছুদিন পর তারা উভয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে সম্মত হন। ১৭ দিন পরে আমার বন্ধুর বাবা ঘরোয়াভাবে তাদের বিবাহের আয়োজন করেন। আমাদের গ্রামের ইমাম সাহেবকে ডেকে বিবাহ পড়িয়ে দেন। বিবাহের মজলিসে ইমাম সাহেব আমার বন্ধুর বাবা এবং তার সেই বোন ও বোনজামাই উপস্থিত ছিলেন। ইমাম সাহেব খুতবা দিয়েছেন আর তার বাবা বিবাহ পড়িয়েছেন। এখন আমাদের নিকট দুটি বিষয়ে খটকা লাগছে-

ক. তার বাবা এবং ইমাম সাহেব সাক্ষী হিসেবে যথেষ্ট হবেন কি না?

খ. ইদ্দত শেষ হওয়ার পূর্বে তাদের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া ঠিক হয়েছে কি না?

Answer

ক. প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উপস্থিত ব্যক্তিগণ অর্থাৎ ইমাম সাহেব ও ছেলের বাবা বিবাহের সাক্ষী হিসেবে ধর্তব্য হবেন। সুতরাং ঐ বিবাহ সংঘটিত হয়ে গেছে। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৬৭; আদ্দুররুল মুখতার ৩/২৫; ফাতহুল কাদীর ৩/১১৬

খ. স্ত্রীকে বায়েন তালাক দেওয়ার পর ইদ্দতের মধ্যেও তালাকদাতা স্বামীর জন্য তাকে পুনরায় বিবাহ করা জায়েয আছে। তবে তালাকদাতা ছাড়া অন্য কারো সাথে ইদ্দত অবস্থায় বিবাহ জায়েয নেই।

-বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩২৩; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৩/১৬২; আননাহরুল ফায়েক ২/৪২০; ফাতহুল কাদীর ৪/৩০

Sharable Link

মুখলেছুর রহমান - হবিগঞ্জ

৪৮১৯. Question

আমার দাদা প্রায় ৪০ বছর আগে মসজিদ মাদরাসার জন্য এক বিঘা জমি ওয়াকফ করেছিলেন। তখনই একটি মসজিদ এবং ছোট পরিসরে একটি মাদরাসা বানানো হয়। এরপর ছাত্রসংখ্যা অনেক বেশি হওয়ার কারণে নামাযের সময় মসজিদে তাদের জায়গা হয় না। তাই মসজিদটি বড় করা খুবই দরকার। এজন্য মসজিদ কমিটি আগের ভবনটি ভেঙ্গে বড় করে মসজিদ বানাতে চাচ্ছে। এর জন্য অনেক অর্থের প্রয়োজন। তাই মসজিদ কমিটি উক্ত জমির একটি অংশ বিক্রি করে তার অর্থ নতুন মসজিদ নির্মাণে ব্যয় করার পরিকল্পনা করেছেন। জানার বিষয় হল, ওয়াক্ফকৃত জমিটির একটি অংশ বিক্রি করে তার অর্থ দিয়ে মসজিদ ভবন নির্মাণ করার ক্ষেত্রে শরীয়তের বিধান কী? মাসআলাটির সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

কোনো মসজিদের জমি সে মসজিদের ভবন নির্মাণের উদ্দেশ্যেও বিক্রি করা জায়েয নয়। তাই প্রশ্নোক্ত মসজিদ ভবন নির্মাণের উদ্দেশ্যেও মসিজদের ঐ জমি বিক্রি করা জায়েয হবে না।

উল্লেখ্য, মসজিদ নির্মাণের জন্য যে অর্থের প্রয়োজন তা সংগ্রহের জন্য মসজিদ কমিটি স্থানীয় মুসলমানদেরকে উৎসাহিত করবে। কেননা মসজিদ নির্মাণ ও এর খরচাদির ব্যবস্থা করা এলাকার মুসলমানদের ঈমানী দায়িত্ব ও কর্তব্য।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৪২৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৬/৬৬; আলবাহরুর রায়েক ৫/২০৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৪৬৩

Sharable Link

মুহাম্মাদ নাজমুল কারীম - মনিপুরি পাড়া, ঢাকা

৪৮২০. Question

দুই শতাংশ জায়গার উপর একশ বছরের পুরনো একটি মসজিদ রয়েছে। সঙ্গে মসজিদের জন্য ওয়াকফকৃত আরো পাঁচ শতাংশ জমি ছিল। কালক্রমে যা বেদখল হয়ে গিয়েছে। তা আর উদ্ধার করা সম্ভব নয়। এখন মসজিদটি সম্প্রসারিত করা জরুরি হয়ে পড়েছে। যা এখানে সম্ভব নয়। তাই মুতাওয়াল্লী চাচ্ছেন, অদূরে চার শতাংশের উপর বড় আকারে মসজিদ করতে। এখন আমার জানার বিষয় হল, আগের মসজিদ ও তার জায়গাটা কোন্ কাজে ব্যবহার করা হবে? উল্লেখ্য, অতি নিকটে হওয়ার কারণে উভয়টাকে মসজিদ হিসাবে ব্যবহার করা সমীচীন মনে হচ্ছে না। দয়া করে মাসআলাটির সমাধান প্রদান করে বাধিত করবেন।

Answer

পুরাতন মসজিদের পাশে জায়গা ক্রয় করে হলেও সেখানেই সম্প্রসারণের চেষ্টা করা উচিত। যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে নতুন স্থানে মসজিদ বানানো যাবে। সেক্ষেত্রে পুরাতন মসজিদকেও আবাদ রাখার চেষ্টা করবে। পুরাতন মসজিদে শুধু পাঞ্জেগানা আর নতুন মসজিদে পাঞ্জেগানাসহ জুমা আদায় করা যেতে পারে। কিন্তু পুরাতন মসজিদকে একেবারে বিলীন করে দেওয়া যাবে না। কেননা কোনো স্থানে একবার মসজিদ হলে কিয়ামত পর্যন্ত তা মসজিদের জন্য নির্ধারিত হয়ে যায়। ওই জায়গায় মসজিদ সংক্রান্ত কাজ ছাড়া অন্য কোনো কাজ করার সুযোগ থাকে না।

আর উভয় মসজিদে একত্রে নামায চালু রাখা যদি সম্ভব না হয় বা কষ্টকর হয় তবে তাতে অন্য কোনো দ্বীনী কাজও করা যেতে পারে। যেমন শিশুদের সকালের মক্তবের ব্যবস্থা হতে পারে। ইতেকাফের সময় মুসল্লিগণ সেখানে ইতেকাফও করতে পারবেন।

মোটকথা, মসজিদটি পরিপূর্ণভাবে সংরক্ষণ করতে হবে এবং ভবিষ্যতে এলাকাবাসী চাইলে এটিকে যেন পুনরায় নিয়মিত জামাতে নামাযের জন্য চালু করতে পারে সেভাবে ঐ জায়গা হেফাযত করতে হবে।

উল্লেখ্য যে, পুরাতন মসজিদের বেদখল হয়ে যাওয়া জায়গা উদ্ধারের সর্বাত্মক চেষ্টা করা মসজিদের মুসল্লি ও কমিটির লোকদের কর্তব্য। আর যারা দখল করেছে তাদের কর্তব্য হল অবিলম্বে তা ফেরত দেওয়া এবং আল্লাহ তাআলার কাছে তওবা করা।

-আলবাহরুর রায়েক ৫/২৫১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৮/১৬৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৪৫৮; রদ্দুল মুহতার ৪/৩৫৮; ইমদাদুল আহকাম ৩/২০০

Sharable Link

খালেদ সাইফুল্লাহ - সাভার, ঢাকা

৪৮২১. Question

আমাদের এলাকায় প্রচলন আছে যে, যারা ধান ভাঙ্গায় তারা প্রতি মন ধানে যত টাকা পারিশ্রমিক আসে তার পরিবর্তে তত টাকার কুঁড়া নেয়। আর কুঁড়া না দিলে ধান ভাঙ্গাতে চায় না।

প্রশ্ন হল, কুঁড়া নিয়ে ধান ভাঙ্গানো জায়েয কি না? নাজায়েয হলে বৈধ পদ্ধতি কী হবে? দয়া করে জানাবেন।

Answer

ধান ভাঙ্গানোর পারিশ্রমিক হিসাবে কুঁড়া নেওয়া জায়েয আছে। তবে যে ধান ভাঙ্গানো হবে এর কুঁড়া থেকেই পারিশ্রমিক দিতে হবে চুক্তির সময় এমন শর্ত করা জায়েয হবে না। বরং পারিশ্রমিকের বিষয়টি এমন রাখতে হবে যে, মালিক চাইলে অন্য কুঁড়া থেকেও পারিশ্রমিক আদায় করতে পারে। অর্থাৎ কুঁড়ার পরিমাণ ও গুণগত মান নির্ধারণ করবে। এভাবে চুক্তি করার পর পরবর্তীতে যে ধান ভাঙ্গানো হবে এর কুঁড়া থেকেও পারিশ্রমিক দেওয়া যাবে।

-কিতাবুল আছল ৩/৪৩৬; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/১২৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৫/১১৫; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৫৭; শরহুল মাজাল্লাহ, আতাসী ২/৫৩৮

Sharable Link

আলহাজ্ব আব্দুল্লাহ আল মাক্কুল - ভৈরব, কিশোরগঞ্জ

৪৮২২. Question

আমার জানার বিষয় হল যে, আমার আলআরাফাহ ইসলামী ব্যাংক ও এনআরসি ব্যাংকে সেভিং একাউন্টে কিছু টাকা জমা আছে। এই টাকা দিয়ে বসুন্ধরা গ্রæপ, সিটি গ্রæপ, মেঘনা গ্রæপ, টি কে গ্রæপসহ অন্যান্য কোম্পানির নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী যেমন, আটা, ময়দা, চিনি, তৈল, ডালডা, ভুসি ইত্যাদি পণ্য দাম যখন কম থাকে তখন পণ্যগুলো কোম্পানি থেকে ক্রয় করা হয়। পণ্যের মূল্য তাদের ব্যাংক একাউন্টে নগদ জমা করা হয়। তারা পণ্য প্রদানের একটি তারিখ দিয়ে শুধু পণ্যের ¯িøপ দিয়ে দেয়। এই ¯িøপটিকে ব্যবসার ভাষায় ডিও বলা হয়। ডিও কিনে তাতে উল্লেখিত পণ্যসামগ্রী সংশ্লিষ্ট কোম্পানির গোডাউনে মজুদ রাখা হয়। কোনো পণ্যসামগ্রী আমি স্ব-চোখে দেখিও না এবং আমার গোডাউনেও আনি না, কেবলমাত্র কোম্পানীর দায়িত্বশীল প্রতিনিধির সাথে সরাসরি বা মোবাইলে কথা বলে পণ্যসামগ্রী কিনে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির ব্যাংক একাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দিলে কোম্পানি আমাকে ঐ ডিও লেটার দিয়ে দেয়, পরবর্তীতে উল্লেখিত পণ্যসামগ্রীর দাম বৃদ্ধি হলে, উক্ত ডিও লেটার কাগজটি অন্য আরেকজন ব্যবসায়ীর কাছে কিছু লাভ করে বিক্রি করে দেওয়া হয়। এই ধরনের ব্যবসা করা জায়েয কি না? এই ব্যবসা করা যাবে কি না? জানালে খুবই উপকৃত হব।

Answer

ডিও মানে হচ্ছে ডেলিভারি অর্ডার। আপনি যে পণ্যের টাকা পরিশোধ করেছেন তা কোন তারিখে আপনাকে দেওয়া হবে তার স্বীকারোক্তি। এটি কোনো পণ্য নয়। তাই এ কাগজ বিক্রি করা জায়েয হবে না। ডিওতে যে পণ্যের কথা বলা হয়েছে তা আপনার দখলে আসার পূর্বে সেটি আপনার জন্য বিক্রিযোগ্যই নয়। হাদীস শরীফে এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা এসেছে। হাকীম ইবনে হিযাম রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

لَا تَبِيعَنّ شَيْئًا حَتّى تَقْبِضَهُ.

কোনো বস্তু হস্তগত করার আগ পর্যন্ত তা বিক্রি করবে না। -সুনানে কুবরা, বাইহাকী ৫/৩১৩

এধরনের কারবার করে ফেললে আপনার জন্য এর মুনাফা ভোগ করা জায়েয হবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কোনো বস্তুর দায়িত্ব ও ঝুঁকি গ্রহণের পূর্বে তার লাভ ভোগ করা বৈধ নয়। -জামে তিরমিযী, হাদীস ১২৩৪

উল্লেখ্য, ডিও এমন মালেরও হয়ে থাকে, যা ডিও লেখার সময় প্রস্তুত থাকে না। সেক্ষেত্রে ডিও বিক্রি করলে হাদীসের নিষিদ্ধ معدوم (অস্তিত্বহীন) বস্তুর বিক্রয় হয়। এটাও সম্পূর্ণ নাজায়েয। তাই মুসলমানদের জন্য এমন ক্রয়-বিক্রয় থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।

-জামে তিরমিযী, হাদীস ১২৩৩; আলমাবসূত, সারাখসী ১৩/৮; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৩২৬, ৩৯৪; আলবাহরুর রায়েক ৬/১৬৪

Sharable Link

জালাল সরকার - নবীনগর, বি. বাড়িয়া

৪৮২৩. Question

মুহতারাম, ফরহাদ আহমদ আমার ছোট ভাই। সে আমেরিকা থাকে। তার উপার্জিত টাকা আমার কাছেই পাঠিয়ে থাকে। আমি সে টাকা দিয়ে ব্যবসা করি এবং পরিবারের ভরণপোষণ করি। ফরহাদ একবার লটারীতে পঞ্চাশ লক্ষ টাকা পায়। লটারীর এসব টাকা সে  আমার নিকট পাঠিয়ে দিলে আমি সে টাকা থেকে কিছু ব্যবসায় বিনিয়োগ করি আর কিছু জমি ক্রয় করি এবং নিজেও কিছু খরচ করি।

এখানে উল্লেখ্য যে, আমি এক আলেমকে জিজ্ঞেস করে জেনেছিলাম যে, কাফের মুলুকে পাওয়া লটারীর  টাকা  বৈধ, এতে সুদ নেই। তবে তা শুধু ফরহাদের জন্য জায়েয। কিন্তু এখন সঠিক মাসআলা জেনেছি যে, মূলত ওই টাকা ফরহাদের জন্যও নাজায়েয। কিন্তু এর মধ্যে আমি লটারীর টাকা ও পূর্বে পাঠানো টাকা দিয়ে বেশ মোটা অংকের টাকা ব্যয়ে একটি জমি ও দোকান ক্রয় করি। দ্বিতীয়ত সংসারের ভরণপোষণও এ টাকা থেকেই করেছি। তৃতীয়ত যাকাত, সাধারণ দান-খায়রাতও এ টাকা থেকেই দিয়েছি।

এ অবস্থায় কী পন্থা অবলম্বন করলে উক্ত টাকা ও সম্পদ বৈধ হবে? আর এ টাকা থেকে দেওয়া যাকাত ও দান-খায়রাতের কী বিধান?

উল্লেখ্য, আমাদের এক বিধবা খালা ও খালাতো ভাই-বোন আছে। এখন তাদেরকে কি পুরো টাকা দিয়ে দেওয়া যাবে? কেননা একে  তো তারা গরিব আবার এক খালাতো বোন বিয়ের উপযুক্ত। টাকাটা দিলে তাদের অনেক উপকার হবে।

Answer

‘কাফের মুলুকের লটারীর টাকা বৈধ, এতে সুদ নেই’  প্রশ্নের একথা সহীহ নয়। সুতরাং ফরহাদ ও তার পরিবারের জন্য উক্ত লটারীর টাকা ভোগ করা সম্পূর্ণ হারাম হয়েছে। তাই উক্ত লটারী থেকে প্রাপ্ত টাকা দিয়ে যেসকল জমি ও দোকান ক্রয় করেছেন এবং এছাড়া আরো অন্যান্য খাতে যা খরচ করেছেন, তা নাজায়েয হয়েছে। এখন উক্ত জমি ও দোকান থেকে বৈধভাবে উপকৃত হতে চাইলে এবং তা হালাল সম্পদে রূপান্তর করতে চাইলে; উক্ত জমি ও দোকানে লটারীর যে পরিমাণ টাকা ব্যয় করেছেন এবং এতদিন দোকান থেকে যা লাভ হয়েছে তা সওয়াবের নিয়ত ছাড়া গরীব-মিসকীনদের মাঝে সদকা করে দিতে হবে। এভাবে মূল টাকা সদকা করে দিলে উক্ত সম্পদ বৈধ বলে গণ্য হবে। আর ঐ টাকা থেকে পরিবারের জন্য যা খরচ করেছেন তাও হিসাব করে সদকা করে দিতে হবে।

উল্লেখ্য যে, উক্ত লটারীর টাকা থেকে গরীবদেরকে বা কোন মাদরাসার গোরাবা ফান্ডে যা দান-সদকা করা হয়েছে সে পরিমাণ টাকা আবার নতুন করে সদকা করা লাগবে না। তা আদায় হয়ে গেছে।

আপনাদের বিধবা খালা ও খালাতো ভাই-বোন যদি যাকাত গ্রহণের যোগ্য হয়ে থাকে তাহলে তাদেরকেও তাদের প্রয়োজন অনুপাতে ঐ টাকা থেকে দিতে পারবেন। তবে একত্রে এত বেশি টাকা দেওয়া যাবে না যে, বর্তমান প্রয়োজন পূর্ণ হওয়ার পরও তাদের কাছে নেসাব পরিমাণ টাকা থেকে যায়। সুতরাং তাদেরকে দেওয়ার পর বাকি টাকা অন্যান্য গরীব-মিসকীনদের দিয়ে দেওয়া সমীচীন হবে।

-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩৬৭৮, ৩৬৮৫; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ, বর্ণনা ২৩৫৯৩; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ২/৪৬৫; ফিকহুন নাওয়াযিল ৩/২১৩; আলবাহরুর রায়েক ৮/২০১; রদ্দুল মুহতার ৬/৩৮৫; বযলুল মাজহুদ ১/১৪৮

Sharable Link

মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম - রায়গঞ্জ, সিরাজগঞ্জ

৪৮২৪. Question

হযরতের কাছে বিনীত নিবেদন এই যে, আমাদের এলাকায় লোকজন বিভিন্ন পদ্ধতিতে জমি চাষাবাদ করে। যার মধ্যে একটি পদ্ধতি হল- একজন ব্যক্তি অপরজন থেকে উদাহরণ স্বরূপ এক বিঘা জমি ৫ বছরের জন্য নেয় এবং অগ্রিম বাবদ দেড় লক্ষ টাকা দেয় এবং চুক্তি হয় যে, সে জমিওয়ালাকে প্রতি বছর ৫৬০ টাকা করে ভাড়া দিবে এবং নির্ধারিত বছরের পর পূর্ণ টাকা জমিওয়ালা থেকে ফেরত নিবে। অথবা প্রতি বছর ৫৬০ টাকা করে ভাড়া না দিয়ে নির্ধারিত বছরের পর মূল টাকা থেকে ৫৬০ টাকা করে প্রতি বছরে বাদ দিয়ে বাকি টাকা জমিওয়ালা ফেরত দিবে। যেমনটি দোকানের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে।

হযরতের কাছে জানার বিষয় হল, উল্লেখিত পদ্ধতিতে জমি চাষাবাদ করা জায়েয হবে কি না?

Answer

ঋণ দিয়ে বিনিময়ে গ্রহীতার জমি বন্ধক রাখা এবং তা চাষাবাদ করে ভোগ করার প্রশ্নোক্ত পন্থা শরীয়তসম্মত নয়। এটি মূলত সুদভিত্তিক ঋণ প্রদানেরই একটি প্রকার। আর এক্ষেত্রে এই লেনদেনকে বৈধতা দেওয়ার জন্য নামেমাত্র যে ভাড়া (১ বিঘায় ৫৬০ টাকা) কর্তন করা হচ্ছে এর দ্বারা জমি ভোগ করা জায়েয হয়ে যায় না। প্রকৃতপক্ষে উক্ত দেড় লক্ষ টাকা ঋণের কারণেই নামে মাত্র ৫৬০ টাকা ভাড়ায় জমি চাষের জন্য দেওয়া হয়েছে। তাই এমন কারবার করা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।

আর বৈধ পন্থায় জমি দিয়ে টাকা নিতে চাইলে বন্ধকি চুক্তি না করে ভাড়া বা লীজের চুক্তি করবে। যেমন কারো যদি ১৫ হাজার টাকার প্রয়োজন হয় আর এক বিঘা জমির বার্ষিক ভাড়া ৩ হাজার টাকা হয়; তবে সে ৫ বছরের জন্য জমিটি ভাড়া দিয়ে ১৫ হাজার টাকা অগ্রিম ভাড়া বাবদ নিয়ে নিবে। তারপর যত বছর ভাড়াগ্রহীতা উক্ত জমি ভোগ করবে তত বছরের ভাড়া সেই ১৫ হাজার টাকা থেকে কর্তিত হবে। আর কোনো কারণে যদি ৫ বছরের আগে জমি ফেরত দেয় বা পারস্পরিক সম্মতিতে ভাড়া চুক্তি বাতিল করা হয় তাহলে ভাড়াগ্রহীতা অবশিষ্ট টাকা ফেরত পাবে।

-আননুতাফ ফিল ফাতাওয়া পৃ. ২৯৬; রদ্দুল মুহতার ৬/৪৮২; শরহুল মাজাল্লাহ, আতাসী ৩/১৯৬; আলফুলকুল মাশহুন (মাজমুআতু রাসাইলিল লাখনবী ৩/৪১২)

Sharable Link

মাওলানা মুহাম্মাদুল্লাহ - বগুড়া

৪৮২৫. Question

কুরবানী প্রসঙ্গে একটি মাসআলার সমাধান জানানোর আবেদন।

মুহতারাম, আমরা জানতাম, কুরবানীর পশুতে কোনো শরীকের অংশ এক সপ্তমাংশের কম হলে সকল শরীকের কুরবানীই নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু আমাদের এলাকায় একজন মুফতী সাহেব এমন একটি ঘটনায় ফতোয়া দিয়েছেন যে, শুধু ঐ শরীকের কুরবানীই নষ্ট হবে। অন্য শরীকের কুরবানী সহীহ হয়ে যাবে।

এর কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, অন্য শরীকদের কুরবানী কেবল ঐ ক্ষেত্রেই নষ্ট হয়, যেক্ষেত্রে কোনো শরীক হারাম মাল দ্বারা কুরবানী করে অথবা দুনিয়াবী উদ্দেশ্যে শরীক হয়।

এ ফতোয়াটি আমাদের কাছে সঠিক মনে হচ্ছে না। মুফতী সাহেবের কাছে বিনীত নিবেদন, হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য কিতাবাদির হাওয়ালাসহ মাসআলাটির সঠিক সমাধান জানাবেন।

Answer

কুরবানীর পশুতে কোনো শরীকের অংশ এক সপ্তমাংশের কম হলে কোনো শরীকের কুরবানী সহীহ হবে না। কারণ কারও অংশ এক সপ্তমাংশের কম হলে সেটি কুরবানীর হুকুমে থাকে না; সাধারণ গোস্তের হুকুমে হয়ে যায়।

আর একটি পশুর অংশবিশেষ শুধু গোশত হাসিলের উদ্দেশ্যে হয়ে গেলে পুরো পশুই আর কুরবানীর জন্য থাকে না। তাই এতে কোনো শরীকের কুরবানীই সহীহ হয় না। এ মাসআলাই সঠিক। প্রশ্নের ঐ কথা ঠিক নয়।

-আলমাবসূত, সারাখসী ১২/১২; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/৪৭৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩১৫; ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ৬/২৯০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪৫৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০৫

Sharable Link

মাহমুদ হাসান - কিশোরগঞ্জ

৪৮২৬. Question

কী পরিমাণ সম্পদ থাকলে একজনের উপর কুরবানী ওয়াজিব হয়? জানালে কৃতজ্ঞ হব।

Answer

প্রাপ্তবয়ষ্ক, সুস্থমস্তিষ্কসম্পন্ন প্রত্যেক মুসলমান নর-নারী মুকীম ব্যক্তি, যার মালিকানায় ১০ যিলহজ্ব সুবহে সাদিক থেকে ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজন অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদ  থাকবে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব হবে। নেসাব হল : স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত (৭.৫) ভরি। আর রুপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি। আর অন্যান্য বস্তুর ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপার সমমূল্যের সম্পদ। স্বর্ণ বা রুপার কোনো একটি যদি পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না হয় তবে স্বর্ণ-রুপা উভয়টি মিলে কিংবা এর সাথে প্রয়োজন-অতিরিক্ত অন্য বস্তুর মূল্য মিলে সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপার সমমূল্যের হয়ে যায়, সেক্ষেত্রেও কুরবানী ওয়াজিব হবে। স্বর্ণ-রুপার অলঙ্কার, নগদ অর্থ, যে জমি বাৎসরিক খোরাকীর জন্য প্রয়োজন হয় না এবং প্রয়োজন অতিরিক্ত আসবাবপত্র- এ সবই কুরবানীর নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য।

-বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬, আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৫৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪০৫

Sharable Link

হামীদুল্লাহ - হবিগঞ্জ, সিলেট

৪৮২৭. Question

নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক যদি কুরবানীর সময় সাময়িক ঋণগ্রস্ত হয় তাহলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে কি?

Answer

নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক যদি কুরবানীর দিনগুলোতে সাময়িক ঋণগ্রস্ত থাকে, যা পরিশোধ করে দিলে তার কাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদ বাকি থাকে না তাহলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে না। আর যদি ঋণ আদায় করে দিলেও নেসাব পরিমাণ সম্পদ বাকি থাকে তাহলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯২

Sharable Link

মূসা মুর্তজা পারভেজ - বংশাল, ঢাকা

৪৮২৮. Question

আমাদের বাসায় ছারপোকার উপদ্রব অনেক বেড়ে গেছে। অনেক চেষ্টা করেও সেগুলো দূর করতে পারছি না। ধীরে ধীরে সেগুলোর উপদ্রব বেড়েই চলছে, যার ফলে আমরা অনেক অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি। তাই আর কোনো উপায় না দেখে এখন চাচ্ছি যে, পুরো ঘর আমরা গরম পানি দিয়ে ধোব এবং ঘরের সব সামান ফুটন্ত গরম পানিতে ভিজিয়ে পরিষ্কার করব।

এখন মাননীয় মুফতী সাহেবের কাছে আমার প্রশ্ন হল, এ পদ্ধতিতে ঘর পরিষ্কার করার দ্বারা তো ছারপোকাগুলোকে কষ্ট দেয়া হবে, যা হাদীসে নিষেধ করা হয়েছে। তাই এখন আমার খটকা লাগছে। কিন্তু অন্য কোনো উপায়ও খুঁজে পাচ্ছি না। তাই সিদ্ধান্তও নিতে পারছি না। আশা করি মুফতী সাহেব আমাকে এই পেরেশানি থেকে মুক্ত করবেন। দ্রæত উত্তর জানালে অনেক উপকৃত হব।

Answer

কষ্টদায়ক ও ক্ষতিকর প্রাণী, পোকা-মাকড় মেরে ফেলা বৈধ। বিশেষত যখন তা ক্ষতি করতে থাকে এবং কষ্টের কারণ হয়। তবে হাদীস শরীফে যেহেতু কোনো প্রাণীকে আগুন দিয়ে পোড়াতে নিষেধ করা হয়েছে, তাই ফকীহগণ এক্ষেত্রে গরম পানি ব্যবহার করতেও নিষেধ করেছেন। কিন্তু যদি অন্য কোনোভাবেই এগুলো মারা বা তাড়ানো সম্ভব না হয়, তাহলে প্রয়োজনে গরম পানি ব্যবহার করে সেগুলো মারা বৈধ হবে।

-সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৯৮; শরহে মুসলিম, নববী ৮/১১৩; ফাতহুল বারী ৪/৪৫, ৪৮; উমদাতুল কারী ১০/১৮৪; রদ্দুল মুহতার ৪/১২৯; ইমদাদুল ফাতাওয়া ৪/২৬৩

Sharable Link

আইয়ুব হাসান - মিরপুর, ঢাকা

৪৮২৯ ও ৪৮৩০. Question

ক) সম্মিলিত মুনাজাত করার বিধান কী? কারো ধারণা, সম্মিলিতভাবে দুআ করা শরীয়তে প্রমাণিত নেই। এ ব্যাপারে দলীল-প্রমাণসহ বিস্তারিত জানালে আমরা উপকৃত হব।

খ) জায়নামাযের দুআ পড়া যাবে কি?

Answer

ক) দুআ অনেক বড় ইবাদত। হাদীস শরীফে এসেছে, দুআই ইবাদত। এই দুআ যেমন একা করা যায় তেমনি সম্মিলিতভাবেও করা যায়। সম্মিলিত দুআ সংক্রান্ত এক দুটি দলিল নিম্নে সংক্ষেপে উল্লেখ করা হল-

১. কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-

قَالَ قَدْ اُجِیْبَتْ دَّعْوَتُكُمَا.

আল্লাহ তাআলা বললেন, তোমাদের দুজনের দুআ কবুল করা হয়েছে। -সূরা ইউনুস  (১০) : ৮৯

এ আয়াতে তোমাদের দুজনের দুআ বলতে মূসা আ. ও হারূন আ.-এর দুআ বুঝানো হয়েছে। একাধিক সাহাবী ও তাবেয়ী ইমামের সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, হযরত মূসা আ. দুআ করেছেন এবং হারূন আ. আমীন বলেছেন। একেই আল্লাহ তাআলা দুজনের দুআ বলেছেন। -তাফসীরে ইবনে কাসীর ২/৬৬৫; আদ্দুররুল মানসূর ৩/৩৪১

তো এটা তাদের দুজনের সম্মিলিত দুআ ছিল, যা আল্লাহ তাআলা কবুল করেছেন এবং খোশখবরি শুনিয়েছেন যে, তোমাদের দুজনের দুআ কবুল করা হয়েছে।

২. একটি দীর্ঘ হাদীসে সাহাবীয়ে রাসূল হযরত হাবীব ইবনে মাসলামা আলফিহরী রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, তিনি ইরশাদ করেছেন-

لَا يَجْتَمِعُ مَلَأٌ فَيَدْعُو بَعْضُهُمْ وَيُؤَمِّنُ الْبَعْضُ إِلّا أَجَابَهُمُ اللهُ.

কিছু মানুষ যখন কোথাও একত্র হয়ে এভাবে দুআ করে যে, একজন দুআ করে এবং অন্যরা আমীন বলে সেক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলা অবশ্যই তাদের দুআ কবুল করেন। -আলমুজামুল কাবীর, তবারানী, হাদীস ৩৫৩৬; মুসতাদরাকে হাকেম, হদীস ৫৪৭৮; মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাদীস ১৭৩৪৭

সম্মিলিত দুআ বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানতে মাসিক আলকাউসার, শাবান-রমযান ১৪২৯; আগস্ট ২০০৮ সংখ্যায় হযরত মাওলানা আবদুল মালেক ছাহেব লিখিত ‘সম্মিলিত দুআ : একটি প্রশ্নের উত্তর’ প্রবন্ধটি পাঠ করুন।

খ) জায়নামাযের কোনো দুআ নেই। কোনো কোনো মহলে ‘ইন্নি ওয়াজ্জাহাতু’ দুআটি জায়নামাযের দুআ নামে পরিচিত। কিন্তু এটি ঠিক নয়। এটি জায়নামাযের দুআ নয়; বরং হাদীস শরীফে নামায শুরু করার পর ছানা হিসেবে এ দুআ পড়ার কথা আছে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৭৭১; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৭৬০; রদ্দুল মুহতার  ১/৪৮৮; ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/১৫১

Sharable Link