হায়েয অবস্থায় মহিলারা আযানের জবাব দিতে পারবে কি?
হায়েয অবস্থায় মহিলারা আযানের জবাব দিতে পারবে কি?
মহিলাদের জন্যও আযানের জবাব দেওয়া মুস্তাহাব। তাই হায়েয অবস্থায়ও মহিলারা আযানের জবাব দিবে। এ অবস্থায় আযানের জবাব দিতে কোনো অসুবিধা নেই।
-ফাতাওয়া সিরাজিয়া পৃ. ৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৮; আদ্দুররুল মুখতার ১/২৯৩Sharable Link
আমি তিন বছর গ্রামের মসজিদে তারাবীহ পড়িয়েছি। সেখান থেকে আমার অনিচ্ছা ও নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও আমাকে অল্প কিছু হাদিয়া দেওয়া হয়।
আর আমার ছোট ভাইও দু’বছর এক হাসপাতাল মসজিদে তারাবীহ পড়িয়েছে এবং একইভাবে তাকেও হাদিয়া দেওয়া হয়। আর মুসল্লির একজন তাকে একটি পাঞ্জাবির কাপড়ও দিয়েছেন। জানার বিষয় হল এখন আমাদের করণীয় কী?
খতম তারাবীহতে কুরআন তিলাওয়াত ও খতম করা প্রধান উদ্দেশ্য। আর তিলাওয়াতের বিনিময় গ্রহণ করা নাজায়েয। হাদীস শরীফে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা কুরআন পাঠ করো। তাতে সীমালঙ্ঘন করো না, তা থেকে দূরে থেকো না, তা দ্বারা ভক্ষণ করো না এবং তার মাধ্যমে প্রাচুর্য কামনা করো না। -মুসনাদে আহমাদ,হাদীস ১৫৫২৯
আবু ইসহাক সাবীয়ী রাহ. বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে মা‘কিল রাহ. রমযান মাসে তারাবীহর নামায পড়ালেন। ঈদুল ফিতরের দিন উবায়দুল্লাহ ইবনে যিয়াদ তাকে এক জোড়া কাপড় এবং পাঁচ শ দিরহাম হাদিয়া দিলে তিনি তা এই বলে ফিরিয়ে দিলেন যে, আমরা কুরআন তিলাওয়াতের কোনো বিনিময় গ্রহণ করি না। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৭৮২১
প্রশ্নোক্ত অবস্থায় আপনাকে এবং আপনার ভাইকে এ সংক্রান্ত যে টাকা দেওয়া হয়েছে তা সদকা করে দিতে হবে। তবে ব্যক্তি বিশেষের পক্ষ থেকে দেওয়া ঐ জামার কাপড়টি যদ্দুর মনে হচ্ছে খালেস হাদিয়া হিসাবে দেওয়া হয়েছে। তাই আপনার ভাইয়ের জন্য এটি নেওয়া বৈধ হবে।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৭৮২২; কিতাবুল আছল ৪/১৫; ইনকাদুল হালিকীন ৯৭Sharable Link
একদিন ফজরের আযানের সময় الصلاة خير من النوم ভুলক্রমে বাদ দিয়ে الله أكبر দুইবার বলে ফেলি। এরপর সাথে সাথে ছুটে যাওয়া বাক্যের কথা মনে পড়লে তা বলি এবং পুনরায় সেখান থেকে পরের বাক্যগুলো বলে আযান শেষ করি। প্রশ্ন হল, ঐ আযান কি সহীহ হয়েছে?
প্রশ্নোক্ত অবস্থায় ছুটে যাওয়া বাক্যসহ বাকি বাক্যগুলো যেহেতু বলেছেন তাই আপনার উক্ত আযান সহীহ হয়েছে। আযান দেওয়ার সময় আযানের কোনো বাক্য ছুটে গেলে করণীয় হল, মনে পড়ার সাথে সাথে ছুটে যাওয়া বাক্যটি বলা এবং এরপর পরবর্তী বাক্যগুলো যথানিয়মে বলে আযান সম্পন্ন করা।
-কিতাবুল আছল ১/১১৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৪৯; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৯৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১৪৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৬Sharable Link
কোনো প্রাণীর ছবিযুক্ত গেঞ্জি গায়ে দিয়ে নামায পড়লে কি নামায হবে?
জামা কাপড়ে প্রাণীর ছবি দৃশ্যমান থাকলে তা পরিধান করে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী। তবে নামায মাকরূহ হলেও তা আদায় হয়ে যাবে। পুনরায় পড়তে হবে না। আর ছবিযুক্ত জামা-গেঞ্জি পরে মসজিদে আসা আরো মারাত্মক অন্যায়। এতে মসজিদের পবিত্রতা ও আদব নষ্ট হয় এবং এ কারণে অন্য মুসল্লিদের নামাযও মাকরূহ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।
-কিতাবুল আছল ১/১৮৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৫৮; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৩৯; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১১৯Sharable Link
আমার একটি দোকান আছে। যেখানে টাইপ ও কম্পোজের কাজ করি। প্রায়ই মাদরাসার ছাত্র-হুযুরদের লেখা টাইপ করতে হয়। সেখানে কুরআনের আয়াত, হাদীস ইত্যাদিও থাকে। অনেক সময় সিজদার আয়াতও টাইপ করতে হয়। প্রশ্ন হল, সিজদার আয়াত টাইপ করলে কি সিজদা ওয়াজিব হবে?
সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করলে বা সরাসরি তিলাওয়াত শুনলে সিজদা ওয়াজিব হয়। সিজদার আয়াত লিখলে বা টাইপ করলে সিজদা ওয়াজিব হয় না। তাই শুধু টাইপ করার দ্বারা সিজদা ওয়াজিব হবে না।
-ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৫৭; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৩০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৪৬২; আলবাহরুর রায়েক ২/১১৮Sharable Link
মাসবুক ব্যক্তি, যার এক রাকাত নামায ছুটে গিয়েছে সে ইমামের প্রথম বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু পড়বে নাকি পড়বে না?
হাঁ, যে মাসবুকের এক রাকাত ছুটে গেছে তার জন্যও ইমামের অনুসরণে প্রথম বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু পড়া ওয়াজিব। প্রখ্যাত তাবেয়ী ইবরাহীম নাখায়ী রাহ.-কে জিজ্ঞাসা করা হল যে,যার নামাযের কিছু অংশ ছুটে গেছে অর্থাৎ মাসবুক কি ইমামের প্রত্যেক বৈঠকে তাশাহহুদ পড়বে? উত্তরে তিনি বললেন, হাঁ।
-কিতাবুল আসার ১/১৫১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৯০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১৯২; রদ্দুল মুহতার ১/৪৯৬Sharable Link
লঞ্চ, ফেরী ইত্যাদিতে জুমার নামায পড়ার বিধান কী? যদি জুমার নামাযের ওয়াক্ত হয়ে যায় তাহলে সেখানে জুমার নামায পড়ে নিলে তা আদায় হবে কি? যদি না হয় তবে কোন কারণে আদায় হবে না এবং কি কি শর্ত পাওয়া গেলে আদায় হবে? বিস্তারিত জানালে কৃতজ্ঞ হব।
নৌকা, ফেরী, লঞ্চ ইত্যাদি চলমান অবস্থায় তাতে জুমা আদায় করা সহীহ নয়। কারণ জুমার নামায সহীহ হওয়ার জন্য একটি শর্ত হল, যে জায়গায় জুমা প্রতিষ্ঠা করা হবে সেটি শহর হতে হবে অথবা এমন গ্রাম হতে হবে, যেখানে শহরের সুযোগ-সুবিধা থাকে। যেমন, নিত্যপ্রয়োজনীয় আসবাবপত্র পাওয়া যায় এমন বাজার থাকে, রাস্তা-ঘাটের সুব্যবস্থা থাকে এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থাও থাকে ইত্যাদি।
লঞ্চ, ফেরী চলমান অবস্থায় নদীতে যেহেতু এসব শর্ত বিদ্যমান নেই তাই চলন্ত অবস্থায় এগুলোতে জুমা প্রতিষ্ঠা করা জায়েয হবে না। করলে তা সহীহ হবে না।
অবশ্য জলযান যদি পাড়ের সাথে নোঙর করা থাকে তাহলে তখন তা উক্ত পাড়ের হুকুমে হবে। পাড় যদি এমন স্থানে হয় যেখানে জুমার নামায সহীহ হয় তাহলে পাড়ের সাথে নোঙর করা জলযানেও জুমা পড়া সহীহ হবে। আর যদি পাড় সংলগ্ন এলাকায় জুমার শর্ত না পাওয়া যাওয়ার কারণে সেখানে জুমা না হয় তাহলে ঐ পাড়ে বা সেখানে নোঙর করা জলযানেও জুমা সহীহ হবে না।
-বাদায়েউস সানায়ে ১/৫৮৩; আলবাহরুর রায়েক ২/১৪০Sharable Link
আমি একদিন নামাযের পর মসজিদে বসা ছিলাম। এ অবস্থায় এক ব্যক্তি এসে আমার পেছনে নামাযে দাঁড়িয়ে যায়। আমি তার সামনে থেকে উঠে চলে আসি। তখন এক মুসল্লি আমাকে বললেন, আপনি নামাযির সামনে দিয়ে অতিক্রম করে গুনাহ করেছেন। কেননা মুসল্লির সামনে দিয়ে অতিক্রম করা নিষিদ্ধ। অথচ আমি জানতাম, মুসল্লির সামনে বসে থাকলে কোনো এক দিকে সরে যেতে অসুবিধা নেই। দয়া করে সঠিক মাসআলাটি জানাবেন।
নামাযির সামনে দিয়ে অতিক্রম করা নিষিদ্ধ। কিন্তু সামনে অবস্থানকারীর জন্য পাশে সরে যাওয়া বা সেখান থেকে চলে আসা নিষিদ্ধ নয়। তাই আপনার জন্য সামনে থেকে সরে আসা নাজায়েয হয়নি। ঐ মুসল্লির কথা ঠিক নয়। হাদীস শরীফে অতিক্রম করা বড় গুনাহ বলা হয়েছে।
সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে যে, আয়েশা রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে শুয়ে থাকা অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায আদায় করতেন। তখন হযরত আয়েশা রা. তাঁর সামনে থেকে এক পাশে উঠে চলে যেতেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৫১১; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৫১২
তবে মসজিদে মুসল্লির সামনে উপবিষ্ট ব্যক্তির বিশেষ জরুরত ছাড়া চলে না আসাই বাঞ্ছনীয়। বিশেষত লোকটি সরে গেলে নামাযির সামনে দিয়ে অন্যদের যাতায়াতের আশঙ্কা থাকলে নামায শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করাই উত্তম হবে।
-সহীহ বুখারী, হাদীস ৫১১; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৫১২; ইমদাদুল আহকাম ১/৮০৯Sharable Link
আমি নিয়মিত মসজিদেই নামায পড়ি। কখনো মসজিদে যেতে দেরি হয়ে গেলে বাড়িতে আমার স্ত্রীকে নিয়ে জামাত করি। এক্ষেত্রে তাকে আমার ডান পাশে একটু পেছনে দাঁড় করাই। অর্থাৎ তার পায়ের আঙ্গুল আমার গোড়ালির পরে হয়ে থাকে। আমার এ নিয়ম কি ঠিক আছে?
না, প্রশ্নোক্ত নিয়ম ঠিক নয়। এক্ষেত্রে সঠিক নিয়ম হল, স্ত্রীকে নিজের এক কাতার পেছনে দাঁড় করানো। হাদীস শরীফে আছে, আনাস রা. বলেন,
صَلَّيْتُ أَنَا وَيَتِيمٌ فِي بَيْتِنَا خَلْفَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَأُمِّي أُمُّ سُلَيْمٍ خَلْفَنَا
‘আমাদের ঘরে আমি এবং এক ইয়াতিম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পেছনে (জামাতের সাথে) নামায পড়েছি। আর আমাদের পেছনে আমার মা উম্মে সুলাইম (ইকতিদা করেন)। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৭২৭
তবে প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে নিয়মসম্মত না হলেও আপনাদের ঐ নামাযগুলো আদায় হয়ে গেছে। উল্লেখ্য যে, উম্মে সুলাইম রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাহরাম ছিলেন।
-সহীহ বুখারী, হাদীস ৭২৭; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৫২; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৯৫; রদ্দুল মুহতার ১/৫৭২Sharable Link
আমাদের পাড়ার মসজিদে গত রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফের জন্য কেউ স্বেচ্ছায় রাজি হচ্ছিল না। অবশেষে গ্রামের মুরব্বিগণ একজন দ্বীনদার দরিদ্র লোককে এই বলে রাজি করেন যে, তারা তার পরিবারের এই দশ দিনের খরচ নির্বাহ করবেন। জানার বিষয় হল, এ ধরনের পরিস্থিতিতে এভাবে বিনিময় দিয়ে ইতিকাফে বসানো জায়েয আছে কি না?
বিনিময় দিয়ে কাউকে ইতিকাফে বসানো জায়েয নয়। ইতিকাফ কোনো প্রকার বিনিময় ছাড়া একমাত্র আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই হতে হবে। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে পরিবারের খরচ নির্বাহের শর্তটি বিনিময়ের অন্তর্ভুক্ত। তাই উক্ত শর্তে ইতিকাফে বসানো শরীয়তসম্মত হয়নি।
উল্লেখ্য, ইতিকাফ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইতিকাফ শুরু করার পর মৃত্যু পর্যন্ত প্রতি বছর ইতিকাফ করেছেন। শুধু এক বছর বিশেষ কারণে ইতিকাফ করতে না পারলেও পরবর্তী বছর কাযা হিসেবে বিশ দিন ইতিকাফ করেছিলেন। এছাড়া ইতিকাফ করলে লাইলাতুল কদর পওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আর সকল ব্যস্ততা থেকে মুক্ত হয়ে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কিছুদিন মসজিদে থাকাটা তো এমনিতে অনেক বড় সৌভাগ্যেরও বিষয়। তাই প্রত্যেকের উচিত নিজেকে এই আমলের জন্য প্রস্তুত করা।
-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৫৩২; হেদায়া, ফাতহুল কাদীর ২/৩০৩; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৫৫Sharable Link
এক রমযানে অসুস্থতার কারণে আমি কিছু রোযা রাখতে পারিনি। সুস্থ হওয়ার পরও সেগুলো কাযা করিনি। এখন বার্ধক্যের কারণে এত দুর্বল হয়ে পড়েছি যে, রোযা রাখা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এ অবস্থায় আমার করণীয় কী?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যেহেতু ঐ রোযাগুলো রাখতে আর সক্ষমই নন, তাই আপনি ঐ রোযাগুলোর জন্য ফিদয়া আদায় করবেন। ফিদয়া হল প্রতিটি রোযার জন্য কোনো একজন দরিদ্র লোককে তৃপ্তি সহকারে দু’ বেলা খাবার খাওয়ানো কিংবা এর মূল্য প্রদান করা।
প্রকাশ থাকে যে, অসুস্থ অবস্থায় রোযা কাযা হয়ে গেলে সুস্থ হওয়ার পর তা আদায় করে নেওয়া কর্তব্য। তা আদায় না করে বার্ধক্য পর্যন্ত ইচ্ছাকৃত বিলম্ব করা ঠিক নয়।
-সূরা বাকারা (২) : ১৮৪; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৬৩; হেদায়া, ফাতহুল কাদীর ২/২৭৬; মাবসূত, সারাখসী ৩/৮৯; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ১/১৭৬-১৭৯Sharable Link
চলতি বছরসহ গত তিন বছর যাবৎ আমার মালিকানায় প্রয়োজনের অতিরিক্ত দুই লক্ষ বিশ হাজার টাকা রয়েছে। কিন্তু কোনো বছরের যাকাতই আমি আদায় করিনি। এ বছর তিন বছরের যাকাত একসাথে আদায় করতে চাচ্ছি। এখন আমি কোন বছরের যাকাত কত টাকা আদায় করব?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি প্রথম বছরে ২,২০,০০০/- টাকার উপর ৫,৫০০/- টাকা যাকাত আদায় করবেন। দ্বিতীয় বছরে ৫,৫০০/- টাকা বাদ দিয়ে মোট ২,১৪,৫০০/- টাকার উপর ৫,৩৬২.৫০/- টাকা যাকাত দিবেন। আর চলতি বছরে গত দুই বছরের যাকাতের মোট ১০,৮৬২.৫০/- টাকা বিয়োগ করে ২,০৯,১৩৭.৫০/- টাকার উপর ৫,২২৮.৪৩/- টাকা যাকাত দিবেন।
উল্লেখ্য যে, যাকাত ইসলামের একটি মৌলিক ফরয বিধান। তা আদায়ে বিলম্ব করা বা শিথিলতা প্রদর্শন করা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
-কিতাবুল আছল ২/৫৯; ফাতহুল কাদীর ২/১১৮; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৫৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/১৩২; আলবাহরুর রায়েক ২/২০৪Sharable Link
কুরবানীর ঈদের পর এক ব্যক্তি নেসাবের মালিক হয়। পরবর্তী বছর আসার আগেই বসবাসের জন্য জায়গা ক্রয় করে। এতে তার সব টাকা খরচ হয়ে যায় এবং আরো ঋণ করতে হয়। বর্তমানেও পরিপূর্ণভাবে ঋণ পরিশোধ করতে পারেনি। এ অবস্থায় জানার বিষয় হল-
ক) নগদ টাকা খরচ হয়ে যাওয়ার কারণে ঐ ব্যক্তির নেসাব বাকি আছে কি না? শুনেছি, নেসাবের মালিক হওয়ার পর ঋণের কারণে যাকাত মাফ হয় না। তাহলে যাকাতযোগ্য সম্পদ থেকে ঋণ বাদ দেওয়ার পর বাকি সম্পদ নেসাব পরিমাণ না হলেও কি যাকাত, কুরবানী, ফিতরা আদায় করতে হবে? আর উক্ত কথাটির মর্ম কী?
উল্লেখ্য যে, উক্ত ব্যক্তির ছোট দোকানে ৭/৮ হাজার টাকার ব্যবসার মাল থাকে।
খ) নেসাব বাকি থাকলে কি যাকাতবর্ষ শেষে অন্যান্য যাকাতযোগ্য সম্পদের সাথে ঋণ পরিশোধের জন্য জমাকৃত টাকারও যাকাত, কুরবানী আদায় করতে হবে? এবং কুরবানীর দিনগুলোতে ব্যবসার মাল ছাড়া নগদ অর্থ কুরবানীর সর্বাপেক্ষা ছোট পশুর মূল্যের পরিমাণ না হলে কি ধার করে কুরবানী করতে হবে?
ক) যাকাতবর্ষ পূর্ণ হওয়ার সময় ঐ ব্যক্তির মালিকানায় যেহেতু নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকছে না তাই তার উপর এ বছরের যাকাত ফরয হবে না। কেননা প্রশ্নের বর্ণনামতে দোকানের মাত্র ৭/৮ হাজার টকার পণ্য ব্যতীত তার যাকাতযোগ্য সকল সম্পদ খরচ হয়ে গেছে। পাশাপাশি তার উপর প্রচুর ঋণও রয়েছে। এমনকি এক্ষেত্রে তার উপর কুরবানী ও সদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব হবে না। আর নেসাবের মালিক হওয়ার পর যাকাতবর্ষ পূর্ণ হওয়ার আগেই যদি ঋণ হয়ে যায় এবং এ ঋণ বাদ দিলে বছর শেষে যাকাতের নেসাব না থাকে তাহলে তার উপর যাকাত ফরয হবে না। এক্ষেত্রে নেসাবের মালিক হওয়ার পর ঋণের কারণে যাকাত মাফ হবে না- এ কথা ঠিক নয়। হাঁ, যাকাতবর্ষ পূর্ণ হওয়ার পর যাকাত ফরয হয়ে গেলে তা পরবর্তী ঋণের কারণে মাফ হবে না।
উত্তর : খ) কারো উপর ঋণ থাকলে যাকাত-বর্ষ শেষে ঐ ঋণ বাদ দিয়ে অবশিষ্ট সম্পদ নেসাব পরিমাণ হলে এর যাকাত আদায় করা ফরয। ঋণের টাকার উপর যাকাত আসে না। অনুরূপ ঋণের টাকা বাদ দেওয়ার পর যদি কুরবানীর নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে তাহলে তার উপর কুরবানীও ওয়াজিব। আর যার উপর কুরবানী ওয়াজিব হয়েছে তার নিকট কুরবানী করার মতো পর্যাপ্তÍ নগদ অর্থ না থাকলেও কুরবানী করা আবশ্যক। এক্ষেত্রে প্রয়োজন-অতিরিক্ত কোনো জিনিস, জমি ইত্যাদি বিক্রি করে অথবা ঋণ করে হলেও কুরবানী করতে হবে।
-মুআত্তা মুহাম্মাদ, হাদীস ৩২২; বাদায়েউস সানায়ে ২/৯৯; আলমাবসূত, সারাখসী ৩/১০৩; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২২৭; ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ৬/২৮৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৫৮-৩৬০Sharable Link
আমাদের এলাকায় প্রচলন আছে, স্ত্রীর পক্ষ থেকে স্বামী ফিতরা আদায় করে দেয়। স্ত্রী নিজে তার ফিতরা আদায় করে না। এতে কি স্ত্রীর সদাকাতুল ফিতর আদায় হবে? অথচ তার সদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব হওয়ার মতো সম্পদ আছে। আর স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া আদায় করলে আদায় হবে কি না?
হাঁ, স্ত্রীর পক্ষ থেকে স্বামীর সদাকাতুল ফিতর আদায় করে দেওয়ার যেহেতু প্রচলন আছে তাই স্বামী স্ত্রীর সদাকাতুল ফিতর আদায় করে দিলে আদায় হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে তার অনুমতি নেওয়া জরুরি নয়। এবং এ কারণে স্বামী সওয়াবের অধিকারী হবে। নাফে রাহ. বলেন,
كَانَ ابْنُ عُمَرَ يُعْطِيهِ عَمَّنْ يَعُولُ مِنْ نِسَائِهِ
‘আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. তাঁর স্ত্রীদের পক্ষ থেকে সদাকাতুল ফিতর প্রদান করতেন।’ -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১০৪৫৫
তবে স্ত্রীর দায়িত্ব হল, হয়ত সদাকাতুল ফিতর নিজে আদায় করা, বা তার পক্ষ থেকে তা আদায় করা হয়েছে কি না এর খোঁজ নেওয়া।
-আলমাবসূত, সারাখসী ৩/১০৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২২৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৪৬১Sharable Link
আমি আমার দোকানে কয়েকজন কর্মচারী রেখেছি। তাদের সাথে চুক্তি হয়েছে যে, তাদেরকে প্রত্যেক মাসে বেতন তো দেওয়া হবে। সাথে ঈদ ইত্যাদি উপলক্ষে নির্ধারিত অংকের বোনাসও দেওয়া হবে। এখন জানার বিষয় হল, আমি কি যাকাতের টাকা থেকে তাদেরকে বোনাস দিতে পারব?
যাকাতের টাকা দ্বারা কর্মচারীদেরকে ঈদ বোনাস দেওয়া জায়েয হবে না। কেননা বোনাস পারিশ্রমিকের অন্তর্ভুক্ত। আর যাকাত সম্পূর্ণ বিনিময়হীনভাবেই দেওয়া আবশ্যক। তাই যাকাতের টাকা দিয়ে বোনাস দিলে যাকাত আদায় হবে না।
অবশ্য কর্মচারীকে তার নির্ধারিত বেতন ও বোনাস দেওয়ার পর গরিব হওয়ার কারণে যাকাত থেকে কিছু দিতে চাইলে তা জায়েয হবে। এক্ষেত্রে অতিরিক্তটা যাকাত বলে দেওয়াই শ্রেয় হবে। যাতে সে যাকাতের টাকাকে মালিকের অনুগ্রহ বা বোনাসের অতিরিক্ত বিভিন্ন সময় যা আশা করে সেগুলোর অন্তর্ভুক্ত মনে না করে।
-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/২১৮Sharable Link
গত রবিউল আওয়াল মাসের নয় তারিখে আমার আব্বু মারা যান। আর আমার আম্মু জীবিত আছেন। আর আমরা জানি, স্বামী মারা যাওয়ার পর চার মাস দশ দিন ইদ্দত পালন করতে হয়। এখন প্রশ্ন হল, আব্বু যেহেতু মাসের কয়েক দিন অতিবাহিত হওয়ার পর ইন্তেকাল করেছেন তাই এ অবস্থায় চার মাস দশ দিনের হিসাব কীভাবে করবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার আব্বার মৃত্যু যেহেতু মাস শুরু হওয়ার পর হয়েছে তাই আপনার আম্মা এক শত ত্রিশ দিন ইদ্দত পালন করবেন। এক্ষেত্রে মাসের হিসাব ধর্তব্য হবে না।
-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫২২; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৫৪৯-৫৫০; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩১০; আলমুহীতুল বুরহানী ৪/২২৭; আলবাহরুর রায়েক ৪/১৩২Sharable Link
আমি দিনের বেলা ঘুমিয়ে ছিলাম। ঘুম থেকে ওঠার পর স্ত্রী বলছে, আমি নাকি ঘুমন্ত অবস্থায় অস্ফুট স্বরে তোমাকে তালাক দিলাম কথাটি বলেছি। কিন্তু আমি এর কিছুই জানি না। আমার মামা শশুর বলছেন, এর দ্বারা আমার স্ত্রী নাকি তালাক হয়ে গেছে। হুযুরের কাছে জানতে চাই, ঘুমের ঘোরে আমি কী বলেছি তা তো জানি না। তবুও আমার স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে?
ঘুমন্ত ব্যক্তির তালাক পতিত হয় না। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি ঘুমন্ত অবস্থায় স্ত্রীকে তালাক দিলেও তা পতিত হয়নি। হাদীস শরীফে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
رُفِعَ الْقَلَمُ عَنْ ثَلَاثَةٍ: عَنِ النَّائِمِ حَتَّى يَسْتَيْقِظَ، وَعَنِ الصَّبِيِّ حَتَّى يَحْتَلِمَ، وَعَنِ الْمَجْنُونِ حَتَّى يَعْقِلَ.
‘তিন শ্রেণীর মানুষ থেকে কলম উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে; ঘুমন্ত ব্যক্তি জাগ্রত হওয়ার আগ পর্যন্ত, নাবালেগ বালেগ হওয়ার আগ পর্যন্ত ও পাগল ব্যক্তি সুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত।’-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩০১৬
ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন, ঘুমন্ত ব্যক্তির তালাক ধর্তব্য নয়।
-কিতাবুল আসার ২/৪৫১; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ১১৪২৫; শরহু মুখতাসারিত তহাবী ৫/১৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৪/৩৯১; রদ্দুল মুহতার ৩/২৪৩Sharable Link
আমার স্বামী আমাকে নিয়ে তার শশুরালয়ে অর্থাৎ আমার পিতার বাড়িতে বেড়াতে আসেন। ঘটনাক্রমে সেখানেই তার ইন্তেকাল হয়ে যায়। এখন হুযুরের নিকট আমার জানার বিষয় হল, আমি স্বামীর মৃত্যুর ইদ্দত কোথায় পালন করব? আমার স্বামীর বাড়িতে না পিতার বাড়িতে? দয়া করে উত্তরটা জানালে উপকৃত হব।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার পিত্রালয়ে স্বামীর মৃত্যু হলেও আপনাকে স্বামীর বাড়িতেই ইদ্দত পালন করতে হবে।
কেননা ইদ্দত স্বামীর বাড়িতেই পালন করা জরুরি। একটি দীর্ঘ হাদীসে এসেছে যে, এক মহিলার স্বামী ইন্তেকাল করলে সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট নিজের পিত্রালয়ে চলে যাওয়ার অনুমতি চায়। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন,
امْكُثِي فِي بَيْتِكِ حَتَّى يَبْلُغَ الكِتَابُ أَجَلَهُ.
তুমি ইদ্দত শেষ হওয়া পর্যন্ত তোমার (স্বামীর) ঘরেই অবস্থান কর। -জামে তিরমিযী, হাদীস ১২০৪
আর ইদ্দত হচ্ছে চার মাস দশদিন অথবা অন্তসত্তা হলে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত।
-সূরা বাকারা (২) : ২৩৪; সূরা তালাক (৬৫) : ৪; আলবাহরুর রায়েক ৪/১৫৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৩৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৫/২৩৯; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৫৩৬Sharable Link
আমার এক নিকটাত্মীয়ের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটেছে। তাদের একটি ছেলে ও একটি মেয়ে আছে। ছেলের বয়স দুই বছর। আর মেয়ের বয়স সাত বছর। প্রশ্ন হল, সন্তানরা কার নিকট থাকবে? দাদী নিজের কাছে রাখতে চায়। এতে সে রাজি নয়। এক্ষেত্রে শরীয়তের সিদ্ধান্ত জানতে চাই।
স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটলে পুত্র সন্তানের সাত বছর ও কন্যা সন্তানের নয় বছর বয়স পর্যন্ত মা-ই তাদের লালন-পালনের অধিক হকদার। এ সময়ে মায়ের সম্মতি ব্যতীত পিতা বা পিতার পক্ষের কারো জন্য সন্তানকে মা থেকে একেবারে নিয়ে আসা জায়েয হবে না। অবশ্য এ সময়ের ভিতর সন্তানদের মাহরাম নয় এমন কারো সাথে যদি তাদের মায়ের বিবাহ হয় তাহলে সেক্ষেত্রে মায়ের জন্য সন্তানদেরকে নিজের কাছে রাখার অধিকার থাকবে না। এক্ষেত্রে নানী, দাদী, আপন বোন এবং বৈপিত্রেয় বোন, পর্যায়ক্রমে উক্ত সন্তান লালনের হকদার হবে।
-কিতাবুল আছল ১০/৩৪৮; আলবাহরুর রায়েক ৪/১৬৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৪১; ফাতহুল কাদীর ৪/১৮৮; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৩/২৯৫; আলইখতিয়ার ৩/৩০২Sharable Link
আমার আম্মা অসুস্থ থাকার কারণে আমার খালাম্মা শৈশবে আমাকে কিছুদিন দুধ পান করিয়েছেন। কয়েক বছর পূর্বে আরেকটি শিশুও কিছুদিন খালাম্মার দুধ পান করেছে। এখন শিশুটির বোনের সঙ্গে আমার বিবাহের আলোচনা চলছে। জানার বিষয় হল, ঐ শিশুটি কি আমার দুধ ভাই হবে? এবং তার বোনকে বিবাহ করা কি আমার জন্য জায়েয হবে?
আপনাকে যে খালা দুধ পান করিয়েছেন তার থেকে যারা দুধ পান করেছে তারা সবাই আপনার দুধ ভাই-বোন। তাই কয়েক বছর পূর্বে যে শিশুটি দুধ পান করেছে সে আপনার দুধ ভাই। তবে এ শিশু আপনার দুধ ভাই হওয়ার কারণে তার বোন আপনার দুধ বোন হয়ে যায়নি। সে আপনার মাহরাম নয়। তার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া আপনার জন্য জায়েয হবে।
-বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩৯৬, ৩/৪০০; মাবসূত, সারাখসী ৫/১৩৭; ফাতহুল কাদীর ৩/৩১৫; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৩১৭Sharable Link
আমার খালাত ভাই তিনটি বিষয়ে পৃথক পৃথক কসম করেছিল এবং সে প্রত্যেকটি বিষয়েই কসম ভঙ্গ করেছে। এখন হুযুরের নিকট আমার জানার বিষয় হল, ঐ তিনটি কসম ভঙ্গের জন্য কি একটি কাফফারা যথেষ্ট হবে, নাকি প্রত্যেকটির জন্য ভিন্ন ভিন্ন কাফফারা দিতে হবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে প্রত্যেক কসম ভঙ্গের জন্য ভিন্ন ভিন্ন কাফফারা আদায় করা জরুরি। কেননা প্রত্যেক কসম ভঙ্গের জন্য পৃথক কাফফারা ওয়াজিব। সবগুলোর জন্য একটি কাফফারা যথেষ্ট নয়। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার খালাত ভাইকে তিনটি কসম ভঙ্গের জন্য তিনটি কাফফারা আদায় করতে হবে।
-কিতাবুল আছল ২/২৯৭; মাবসূত, সারাখসী ৮/১৫৭; আলবাহরুর রায়েক ৪/২৯১; আদ্দুররুল মুহীত ৩/৭১৪Sharable Link
কিছুদিন আগে আমার ছোট ছেলে একটি জটিল রোগে আক্রান্ত হয়েছিল। তখন আমি মান্নত করেছিলাম, আল্লাহ তাআলা যদি আমার ছেলেকে সুস্থ করে দেন তাহলে আমি আমাদের ছাগলটি প্রতিবেশী আবদুল ওয়াহাবকে দিব। আলহামদু লিল্লাহ, আমার ছেলে এখন সুস্থ হয়েছে। এদিকে আমার অন্য এক প্রতিবেশী শফিকও অত্যন্ত গরিব। সে বিপদে পড়ে আমার নিকট কিছু টাকা চাচ্ছে। হুযুরের নিকট জানতে চাই-
ক) আমি কি আমার মান্নত আবদুল ওয়াহাবকে না দিয়ে শফিককে দিতে পারব?
খ) ঐ ছাগলটি দেওয়াই কি জরুরি? ছাগলের পরিবর্তে টাকা দিলে কি মান্নত আদায় হবে?
ক) সুনির্দিষ্টভাবে কোনো গরিবকে দেওয়ার মান্নত করলেও তাকে দেওয়া জরুরি হয়ে যায় না। বরং অন্য গরিবকেও দেওয়া যায়। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার ছাগলটি আবদুল ওয়াহাবকে না দিয়ে শফিককেও দিতে পারবেন। -আলবাহরুর রায়েক ৪/২৯৬; রদ্দুল মুহতার ৩/৭৪০
উত্তর : খ) আপনি যেহেতু ছাগল দেওয়ার মান্নত করেছেন তাই বিশেষ কোনো ওজর না হলে ছাগলটিই দান করবেন। তবে ছাগলের ন্যায্যমূল্য মান্নত হিসেবে দিলেও মান্নত আদায় হয়ে যাবে।
-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪৩; আলবাহরুর রায়েক ৫/২৪৭; ফাতহুল কাদীর ২/১৪৪; বাদায়েউস সানায়ে ২/১১৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৮৫-২৮৬Sharable Link
আমার বড় মেয়ের বিবাহ নিয়ে বেশ জটিলতা সৃষ্টি হয়েছিল। তখন আমি মনে মনে এই সংকল্প করি, বিয়েটা সুষ্ঠুভাবে হয়ে গেলে হাজার খানেক টাকা সদকা করব। আল্লাহর রহমতে সুষ্ঠুভাবেই বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে। এ বিষয়ে ইমাম সাহেবের সাথে আলোচনা করতে গেলে তিনি বললেন, আপনি যেহেতু মুখে কিছু উচ্চারণ করেননি। শুধু মনে মনে স্থির করেছেন তাই এটা মান্নত হয়নি এবং এক হাজার টাকা সদকা করা আপনার জন্য আবশ্যকও নয়। আমার জানার বিষয় হল, টাকা সদকা করা কি আসলেই আমার জন্য আবশ্যক নয়?
আপনি যেহেতু মনে মনে আল্লাহর রাস্তায় খরচ করতে সংকল্প করেছেন তাই তা পূর্ণ করাই উচিত হবে। তবে আপনি যেহেতু মুখে উচ্চারণ না করে শুধু মনে মনে নিয়ত করেছেন তাই সেটা মান্নত হয়নি। কেননা মান্নতের জন্য মুখে উচ্চারণ করা জরুরি। সুতরাং ঐ এক হাজার টাকা সদকা করা আপনার জন্য ওয়াজিব নয়। ইমাম সাহেবের ঐ কথা ঠিক আছে।
-হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী পৃ. ৩৮৩; আহকামুল কুরআন, ইবনে আরাবী ১/২৬৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৭২; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/২৩২; আলবাহরুর রায়েক ২/৩০৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৪১Sharable Link
কিছুদিন আগে আমার ছেলে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়। তার আশঙ্কাজনক অবস্থা দেখে আমি বলেছিলাম, সে সুস্থ হলে আল্লাহর রাস্তায় একটা ছাগল সদকা করব। তার সুস্থতায় বেশ বিলম্ব হচ্ছিল। আমি তার আশু সুস্থতা কামনা করে সে সুস্থ হয়ে উঠার আগেই একটি ছাগল সদকা করে দেই। হুজুরের কাছে জানতে চাই, সুস্থ হয়ে উঠার আগেই ছাগল সদকা করা কি সহীহ হয়েছে এবং আমার মান্নত পূর্ণ হয়েছে?
হাঁ, আপনার ঐ ছাগল সদকা করা সহীহ হয়েছে এবং তা সাধারণ সদকার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তা দ্বারা মান্নত আদায় হয়নি। কেননা আপনি যেহেতু ছেলে সুস্থ হলে ছাগল সদকা করার মান্নত করেছেন তাই ছেলে সুস্থ হওয়ার আগে ছাগল সদকা করার দ্বারা উক্ত মান্নত আদায় হবে না। অতএব সন্তান সুস্থ হওয়ার পর মান্নত পূরণের জন্য আপনাকে নতুন করে ছাগল সদকা করতে হবে। উল্লেখ্য, বিপদ-মুসিবতে আল্লাহর জন্য দান করার ক্ষেত্রে মান্নত না করে সরাসরি নগদ দান করাই উত্তম। এটিই হাদীসের শিক্ষা। হাদীসে আছে,মান্নতের দ্বারা কৃপণের মাল বের হয়।
-সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৬৩৯; আলমুহীতুল বুরহানী ৬/৩৫৯; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২৪৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৪৩৩; আলবাহরুর রায়েক ২/২৯৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৩৭Sharable Link
আমরা দুই ভাই। আব্বার মৃত্যুর পর কিছু জমি বণ্টন করা হয়েছে। আর কিছু জমি এখনো বণ্টন করিনি। আমাদের মসজিদের পাশের জমিটিও বণ্টন করিনি। ইতিমধ্যে আমার ছোট ভাই ঐ জমি থেকে তার অংশ মসজিদের জন্য ওয়াকফ করে দেয়। জানার বিষয় হল, তার অংশ কি ওয়াকফ হয়ে গেছে?
যৌথ জমি বণ্টনের আগে তা থেকে নিজের অংশ ওয়াকফ করা জায়েয। তাই আপনার ছোট ভাইয়ের ঐ ওয়াকফ সহীহ হয়েছে। এখন আপনাদের কর্তব্য হল, জমি বণ্টন করে মসজিদের অংশ আলাদা করে বুঝিয়ে দেওয়া।
-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৩৬৫; আলইসআফ ২৫; মাজমাউল আনহূর ২/৫৭৪; কিতাবুল ওয়াকফ ১০৬Sharable Link
আমার একজন আত্মীয় যে আর্থিকভাবে মোটামুটি সামর্থ্যবান। তার বাবা ব্যাংক থেকে সুদী ঋণ নিয়ে বাড়ি করেছে। যেটা ভাড়া দেওয়া হবে। ঐ আত্মীয় তার বাবাকে সুদী ঋণ নিতে নিষেধ করেও বিরত রাখতে পারেনি। আবার বাবা বাড়ি তৈরি করার সময় তার থেকে বেশ কিছু টাকা ঋণ নিয়েছে। যা ঐ বাড়িতে কাজে লাগিয়েছে। এখন তার প্রশ্ন হল, ঐ বাড়ি থেকে প্রাপ্ত ভাড়া সে গ্রহণ করতে পারবে কি না? সে কি ঐ বাড়িতে থাকতে পারবে? আর তার বাবার মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার সূত্রে সে বাড়ি থেকে অংশ পেলে তা কি সে গ্রহণ করতে পারবে? উপরোক্ত সবগুলো ছূরতে যদি তার জন্য টাকা নেওয়া বৈধ না হয় তাহলে তার যে টাকা বাড়িতে লাগানো হয়েছে তা কি তিনি নিয়ে নিতে পারবেন? উত্তর জানালে উপকৃত হব।
সুদের ভিত্তিতে ঋণ নেওয়া-দেওয়া সম্পূর্ণ হারাম। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-
وَ اَحَلَّ اللهُ الْبَیْعَ وَ حَرَّمَ الرِّبٰوا ؕ.
আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং সুদকে করেছেন হারাম। -সূরা বাকারা (২) : ২৭৫
অপর এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَ ذَرُوْا مَا بَقِیَ مِنَ الرِّبٰۤوا اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِیْنَ فَاِنْ لَّمْ تَفْعَلُوْا فَاْذَنُوْا بِحَرْبٍ مِّنَ اللهِ وَ رَسُوْلِهٖ.
হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সুদের যা কিছু অবশিষ্ট আছে তা পরিত্যাগ করো। যদি তোমরা মুমিন হও। যদি তা না কর তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের সংবাদ জেনে নাও। -সূরা বাকারা (২) : ২৭৮-২৭৯
হাদীস শরীফে এসেছে, জাবের রা. বলেন,
لَعَنَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ آكِلَ الرِّبَا، وَمُؤْكِلَهُ، وَكَاتِبَهُ، وَشَاهِدَيْهِ، وَقَالَ: هُمْ سَوَاءٌ.
‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুদ ভক্ষণকারী, সুদ প্রদানকারী, সুদের লেখক এবং সাক্ষীগণকে অভিসম্পাত করেছেন এবং বলেছেন, (গুনাহের ক্ষেত্রে) তারা সবাই বরাবর।’ -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৫৯৮
সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার ঐ আত্মীয়ের বাবার সুদী ঋণ নেওয়া হারাম হয়েছে। এখন তার কর্তব্য হল, অবিলম্বে ব্যাংকের সকল ঋণ পরিশোধ করে দেওয়া এবং আল্লাহ তাআলার কাছে তাওবা-ইস্তেগফার করা।
আর ঐ বাড়ি তৈরিতে যেহেতু তার ছেলের টাকা আছে এবং সে বাবাকে সুদী লোন নিতে নিষেধও করেছে তাই সুদী লোনের গুনাহ ঐ ছেলের উপর বর্তাবে না এবং ঐ বাড়ি থেকে প্রাপ্ত অংশে বসবাস করা এবং এর আয় গ্রহণ করা তার জন্য জায়েয হবে।
Sharable Link
আমি বিদেশে থাকা অবস্থায় খবর পেলাম, আমাদের বাড়ির পাশের জমিটি ১৪ লক্ষ টাকায় বিক্রি হবে তখন আমি আমার ছোট ভাইকে বললাম, আমাদের বাড়ির পাশের জমিটি ১৪ লক্ষ টাকায় বিক্রি হবে তুমি আমাদের দুইজনের জন্য জমিটি কিনে ফেল। আমার অংশের টাকা আমি মাস শেষে পাঠিয়ে দেব। সে এতে রাজি হয় এবং মাস শেষে আমি টাকাও পাঠিয়ে দিয়েছি। এখন বাড়িতে এসে দেখি, সে পুরো জমিটা নিজের জন্য কিনেছে এবং তার নামে রেজিস্ট্রি করে ফেলেছে এবং ১৪ লক্ষ টাকা সে নিজ থেকে দিয়েছে। আমি যে টাকা পাঠিয়েছি সে তা গ্রহণ করেনি। জানার বিষয় হল, আমি কি এখন আমার অংশ দাবি করতে পারব এবং আমার ভাই কি আমাকে ঐ জমির অর্ধেক দিতে বাধ্য থাকবে?
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী যেহেতু আপনি আপনার ভাইকে ঐ জমির একাংশ আপনার জন্য কেনার দায়িত্ব দিয়েছেন এবং সে এ দায়িত্ব গ্রহণও করেছে। তাই আপনার ভাইয়ের জন্য ঐ জমিটি পুরোটা নিজের নামে কেনা ও রেজিস্ট্রি করা বৈধ হয়নি। এখন তার কর্তব্য হল, ঐ জমির অর্ধেক ক্রয়মূল্যে আপনাকে দিয়ে দেওয়া।
-ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/৫৮০; শরহুল মাজাল্লা, খালিদ আতাসী ৪/৪৬৫Sharable Link
আমাদের এলাকার একটি গ্রাম্য জামে মসজিদের টাকা অগ্রিম দিয়ে অদূরে একটি ব্রিক ফিল্ডের সাথে বিগত কয়েক বছর থেকে লাভজনক হারে দাদন ব্যবস্থা নেওয়া হয়। যার প্রেক্ষিতে ব্রিক ফিল্ডের মালিক উক্ত মসজিদকে নির্দিষ্ট সিজনে যে পরিমাণ ইট সরবরাহ করার জন্য নির্দিষ্ট করা হয় তা মসজিদের পক্ষ হতে পাবলিকের নিকট লাভজনক হারে বিক্রি করে টাকা নিজ হাতে মসজিদের অনুমতিতে রেখে দেয়। মসজিদ পক্ষ পুনরায় আরো কিছু টাকা ব্রিক ফিল্ডের মালিকের নিকট দিয়ে উক্ত কার্যক্রমের নবায়ণ করে।
এখন আমাদের প্রশ্ন হল, উক্ত গৃহীত পদ্ধতি ইসলামী শরীয়তে বৈধ হয়েছে কি না? যদি উক্ত ব্যবস্থা শরীয়ত পরিপন্থী হয়ে থাকে তাহলে সঠিক নিয়ম বিস্তারিত দলিলসহ জানালে উপকৃত হব।
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ব্রিক ফিল্ডের মালিকের সাথে উক্ত লেনদেন নাজায়েয হয়েছে। কারণ বাইয়ে সালাম তথা আগাম বিক্রিতে পণ্য আদায়ের সময় হলে পণ্য হস্তগত বা বুঝে নেওয়া জরুরি। পণ্য বুঝে নেওয়ার পূর্বে উক্ত বিক্রি চুক্তি সম্পন্নই হয় না। তাই পণ্য বুঝে নেওয়ার আগে ঐ পণ্য অন্যত্র বিক্রি করা বা বিক্রেতাকেই বিক্রির দায়িত্ব দেওয়া সবই নাজায়েয। হাদীস শরীফে এসেছে, হাকিম বিন হিযাম রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি বিভিন্ন জিনিষ ক্রয় করে থাকি। তো কোন জিনিস আমার জন্য বৈধ আর কোন জিনিস অবৈধ? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
يَا بْنَ أَخِي، إِذَا ابْتَعْتَ بَيْعًا فَلَا تَبِعْهُ حَتَّى تَقْبِضَهُ.
‘হে আমার ভাতিজা! যখন কোনো কিছু ক্রয় করবে তখন ক্রয়কৃত বস্তু বুঝে নেওয়ার পূর্বে তা বিক্রি করবে না।’ -সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৪৯৯০
উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
إِذَا أَسْلَمْتَ فِي شَيْءٍ فَلَا تَبِعْهُ حَتَّى تَقْبِضَهُ.
‘তুমি কোনো কিছুতে সালাম চুক্তি করলে ঐ বস্তু বুঝে নেওয়ার পূর্বে তা বিক্রি করো না।’ -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ২১২৪৪
আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকেও তাই বর্ণিত হয়েছে। -প্রাগুক্ত, ২১২৪৫
সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মসজিদ কমিটির ইট বুঝে নেওয়া ছাড়াই অন্যত্র বিক্রি করে দেওয়া সম্পূর্ণ নাজায়েয হয়েছে। বরং প্রথম ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি সম্পন্ন হওয়া ছাড়াই লাভ নেওয়ার কারণে অনেকটা এমনই হয়ে গেল যে, মসজিদ কমিটি ব্রিক ফিল্ড কর্তৃপক্ষকে অল্প টাকা দিয়ে ইট ক্রয়ের নামে মেয়াদান্তে বেশি টাকা গ্রহণ করল। অথচ ইট ক্রয়ই সম্পন্ন হয়নি। ফলে এ কারবার অনেকটা সুদি কারবারের সাথেই মিলে গেছে।
এছাড়া প্রশ্নোক্ত লেনদেনে আগাম বিক্রিচুক্তির সাথে উক্ত পণ্য বিক্রি করে দেওয়ার চুক্তিও যুক্ত আছে। আর এভাবে এক চুক্তির সাথে অন্য চুক্তিকে শর্ত করাও নাজায়েয। হাদীস শরীফে এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে।
প্রশ্নোক্ত লেনদেনটি যেহেতু নাজায়েয হয়েছে তাই এর লাভ মসজিদের কাজে লাগানো যাবে না। তা সদকা করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে বৈধভাবে লেনদেন করতে চাইলে মসজিদ কর্তৃপক্ষ প্রথমে ব্রিক ফিল্ডের মালিকের সাথে নির্দিষ্ট পরিমাণ ইট নির্ধারিত তারিখে নেওয়ার চুক্তি করবে। এ সময় ব্রিক ফিল্ড কর্তৃপক্ষকে ইট পুনরায় অন্যত্র বিক্রি করে দেওয়ার দায়িত্ব দিবে না; বরং এ সময় শুধু আগাম বিক্রি চুক্তিই করবে। পরে যখন মেয়াদ উত্তীর্ণ হবে তখন মসজিদ কর্তৃপক্ষ ইটগুলো বুঝে নিবে এবং তারাই অন্যত্র বিক্রি করে দিবে। আর নিজেদের পক্ষে তা বিক্রি করা সম্ভব না হলে তখন ব্রিক ফিল্ড কর্তৃপক্ষকে বিক্রির দায়িত্ব দেওয়া যাবে। কিন্তু এ দায়িত্ব দিতে হবে নিজেদের ইট অন্যান্য ইট থেকে পৃথক করা ও বুঝে নেওয়ার পর। ব্রিক ফিল্ড কর্তৃপক্ষ ইট অন্যত্র বিক্রি করে টাকা মসজিদ কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করবে।
উল্লেখ্য যে, আগাম বিক্রি তথা বাইয়ে সালাম সহীহ হওয়ার জন্য কিছু শর্ত রয়েছে। যথা : ১. চুক্তির সময় পণ্যের পরিমাণ নির্ধারিত করা ২. পণ্যের গুণগত মান নির্ধারিত করা ৩. মূল্য বাকি না থাকা; বরং চুক্তির সময়ই সমস্ত মূল্য পরিশোধ করে দেওয়া ৪. পণ্য যদি এমন হয়, যা বহন করতে খরচের প্রয়োজন হয় যেমন, ইট ইত্যাদি তাহলে তা ক্রেতাকে কোথায় বুঝিয়ে দিবে তা নির্ধারিত করা ৫. পণ্য আদায়ের সময়সীমা নির্ধারিত করা এবং সে অনুযায়ী তা হস্তগত করা ইত্যাদি। আর এসব বিষয় উভয় পক্ষের স্বাক্ষরের মাধ্যমে লিপিবদ্ধ করে রাখতে হবে। যাতে পরবর্তীতে এসব বিষয়ে কোনো বিবাদ না হয়।
প্রকাশ থাকে যে, মসজিদের দানের টাকা দাতাগণ সরাসরি মসজিদ ও সংশ্লিষ্ট কাজে ব্যবহার করার জন্যই দিয়ে থাকে। মসজিদের দানের টাকা দিয়ে ব্যবসা করার প্রচলন আমাদের সমাজে নেই। এছাড়া বর্তমানে আমানতদারির খুব অভাব। এমন পরিস্থিতিতে মসজিদের সাধারণ দানের টাকা দিয়ে ব্যবসা না করাই কর্তব্য। ব্যবসা করতে চাইলে ব্যবসার জন্য আলাদা ফান্ড গঠন করে সে টাকা দিয়ে ব্যবসা করবে। আর মসজিদের টাকা এমন খাতে বিনিয়োগ করবে যাতে ঝুঁকির পরিমাণ কম থাকে।
-সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৪৯৯০; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ২১২৪৪; আলবাহরুর রায়েক ৬/১৬৪, ৬/১১৭; ফাতাওয়া খানিয়া ২/২৬২; শরহুল মাজাল্লা, খালিদ আতাসী ২/১৭৬; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৩৭৮৩; রদ্দুল মুহতার ১/৬৫৮Sharable Link
আলহামদু লিল্লাহ! আল্লাহ আমাকে যথেষ্ট পরিমাণ সম্পদ দান করেছেন। প্রতি বছর একাই একটি গরু কুরবানী দেওয়ার তাওফীক হয়। গত কুরবানীর ঈদে একাই কুরবানী দেওয়ার উদ্দেশ্যে একটি গরু ক্রয় করি। আমার এক চাচা বললেন, তোমার গরুটা যেহেতু বড়। তাই আলাদাভবে গরু কিনতে চাচ্ছি না। তোমার গরুর দুই ভাগ আমি নিতে চাচ্ছি। যা মূল্য হয় দিয়ে দেব। তখন আমি চাচাকে শরিক বানিয়ে নিই। মূল্য নিতে না চাইলেও জোর করে দিয়ে দেয়। প্রশ্ন হল, পশু ক্রয়ের পর কাউকে শরিক বানানো জায়েয আছে কি না এবং আমাদের উক্ত কুরবানী সহীহ হয়েছে কি না?
ভাগে কুরবানী দিতে চাইলে পশু ক্রয়ের সময়ই অন্যকে শরিক নেওয়ার নিয়ত করা উচিত। পশু ক্রয়ের সময় অন্যকে শরিক বানানোর নিয়ত না থাকলে ক্রয়ের পর কাউকে শরিক বানানো মাকরূহ। অবশ্য কাজটা মাকরূহ হলেও এক্ষেত্রেও সকল শরিকের কুরবানী সহীহ হয়ে যাবে।
ক্রয়ের সময় শরিক নেওয়ার নিয়ত না থাকলে অন্যকে শরিক করলে শরিক থেকে প্রাপ্ত টাকা সদকা করে দেওয়া উত্তম হবে। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার চাচাকে শরিক বানানো মাকরূহ হলেও কুরবানী সহীহ হয়ে গেছে। তবে তার কাছ থেকে প্রাপ্ত টাকা সদকা করে দেওয়া উত্তম হবে।
-কিতাবুল আছল ৫/৪০৮; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪৫১; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৫১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০৪; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৭Sharable Link
এক হুযুরকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি একটি বিদআত করবে তার কোনো আমল কবুল হবে না। তার নামায, রোযা, সদকা কোনো কিছু আল্লাহ কবুল করবেন না। তিনি বলেছেন, এ কথা নাকি হাদীসে আছে। বাস্তবে কি এ কথা হাদীসে আছে? দয়া করে জানাবেন।
হাঁ, এ কথা হাদীস শরীফে আছে। হাসান বসরী রাহ. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
مَنْ أَحْدَثَ حَدَثًا أَوْ آوَى مُحْدِثًا فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللَّهِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ، لَا يُقْبَلُ مِنْهُ صَرْفٌ وَلَا عَدْلٌ، قَالُوا: وَمَا الْحَدَثُ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: بِدْعَةٌ بِغَيْرِ سُنَّةٍ...
‘যে ব্যক্তি (দ্বীনের ভেতর) নতুন কোনো বিষয় উদ্ভাবন করল, অথবা নব উদ্ভাবনকারীকে আশ্রয় দিল তার উপর আল্লাহ, ফেরেশতা ও সকল মানব জাতির লানত। তার ফরয-নফল কোনো আমল কবুল হবে না। সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! নব উদ্ভাবন কী? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সুন্নাহ বাদ দিয়ে বেদআত অবলম্বন করা ...।
-কিতাবুল মারাসীল আবু দাউদ, হাদীস ৫৩৫Sharable Link