রুকু-সিজদায় তিনবারের চেয়ে কম তাসবীহ পড়লে নামাযের কোনো ক্ষতি হবে কি?
রুকু-সিজদায় তিনবারের চেয়ে কম তাসবীহ পড়লে নামাযের কোনো ক্ষতি হবে কি?
রুকু-সিজদায় কমপক্ষে তিন তিনবার তাসবীহ পড়া সুন্নত। ইচ্ছা করে তিনবারের কম পড়া অনুচিত। তবে তাতেও নামায আদায় হয়ে যাবে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন রুকু করে তখন সে যেন তিনবার সুবাহানা রাবিবয়াল আযীম বলে এবং যখন সিজদা করে তখন যেন তিনবার সুবহানা রাবিবয়াল আ’লা বলে। যখন সে এভাবে চরবে তখন তার রুকু ও সিজদা পূর্ণ হ বে। আর এটি হল তাসবীহ আদায়ের সর্বম্নি পরিমাণ।
-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ২/৪৫২, হাদীস : ২৫৯০; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ২/৪৪৯, হাদীস : ২৫৭৫; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১১৫; বাদায়েউস সানায়ে ১/১৮৮; রদ্দুল মুহতার ১/৪৯৪; আলবাহরুর রায়েক ১/৩০৩; মাবসূত, সারাখসী ১/২১; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/১০৭; আননুতাফ ফিলফাতাওয়া ৪৪; শরহুল মুনইয়াহ ২৮২, ৩১৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৫৩৭; ফাতহুল কাদীর ১/২৫৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৫৪Sharable Link
আমি একদিন এশার নামাযে সামনের কাতার পুরা না হওয়া সত্ত্বেও পিছনের কাতারে পাখার নিচে দাঁড়াই। পরে আমার সংশয় জেগেছে, আমার নামায হয়েছে কি না। আমার নামায কি সহীহ হয়েছে?
আপনার নামায হয়ে গেছে। তবে সামনের কাতার পুরা না করে পিছনে দাঁড়ানো মাকরূহ হয়েছে। ভবিষ্যতে এমন করা থেকে বিরত থাকতে হবে। উল্লেখ্য, কাতারের নিয়ম হল, আগে সামনের কাতার পূর্ণ করা। তারপর পিছনে কাতার করা। হযরত আনাস রা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা আগে সামনের কাতার পূর্ণ কর। এরপর তার সাথে মিলিত কাতার। যেন অসম্পূর্ণ কাতারটি থাকে সবার শেষে।
-সুনান আবু দাউদ ১/৯৮; বাযলুল মাজহূদ ৪/৩৫১; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ২/৫৫; রদ্দুল মুহতার ১/৫৭০; বাদায়েউস সানায়ে ১/৫১২; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১১৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৫৬৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১০৭; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৪৫; মাবসূত, সারাখসী ১/১৯২; আলবাহরুর রায়েক ২/৩৩; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলালমারাকী ১৯৯Sharable Link
ইজতেমার ময়দানে দেখা যায়, একই সাথে একাধিক মাইয়্যেতের জানাযার নামায পড়া হয়। এভাবে কি একাধিক ব্যক্তির জানাযা এক সাথে পড়া যায়? যদি পড়া যায় তাহলে বালেগ পুরুষ/মহিলা ও নাবালেগ ছেলে/মেয়ের জানাযা একসাথে পড়লে কোন দুআটি পড়তে হবে?
সম্ভব হলে প্রত্যেক মাইয়্যেতের জন্য পৃথক পৃথক জানাযা পড়া ভালো। তবে একসাথে একাধিক মাইয়্যেতের জানাযার নামায পড়াও জায়েয আছে। প্রসিদ্ধ তাবেয়ী নাফে’ রাহ. বলেন, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. একসাথে নয়জনের জানাযার নামায পড়েছেন। সেদিন জামাতের ইমাম ছিলেন হযরত সাঈদ ইবনুল আস রা. এবং মুসল্লীদের মাঝে ইবনে ওমর রা. ও আবু হুরায়রা রা., আবু সাঈদ রা. ও আবু কাতাদা রা. (প্রমুখ বিশিষ্ট সাহাবীগণ) উপস্থিত ছিলেন।
একাধিক মাইয়্যেতের জানাযা একসাথে আদায় করলে এবং বালেগ-নাবালেগ উভয় ধরনের মাইয়্যেত থাকলে বালেগের নির্দিষ্ট দুআ এবং নাবালেগের নির্দিষ্ট দুআ পড়তে হবে।
-সুনানে নাসায়ী ১/২১৮; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৭/২৯৬; আদ্দুররুল মুখতার ২/২১৮; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলালমারাকী ৩২৫; সুনানে বায়হাকী ৪/১৯৪; আলইসতিযকার ২/৫৬৩; ইলাউস সুনান ৮/২৮০, ৩৬৩; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৩/৪৬৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২২৪; আলবাহরুর রায়েক ২/১৮৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১৫৭; মাবসূত, সারাখসী ২/৬৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৫; বাদায়েউস সানায়ে ২/৫৬Sharable Link
আমাদের এলাকার এক ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর তার আত্মীয় বললেন, মরহুমের নখগুলো বড় হয়ে গেছে। তা কেটে দিন। জানতে চাই, শরীয়তের দৃষ্টিতে এ কাজটি কি ঠিক?
মৃত ব্যক্তির চুল, নখ বড় থাকলেও তা কাটা মাকরূহ। এক্ষেত্রে মৃতের পরিবারবর্গের উচিত, মৃত্যুর পূর্বেই ঐসব পরিষ্কার করে দেওয়া।
-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৭/১৩৯; কিতাবুল আছার ৬৮; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৭/১৩৯; আলমুজামুল কাবীর, আওসাত ৫/৩৪৬; রদ্দুল মুহতার ২/১৯৭; শরহুল মুনইয়াহ ৫৭৯; ফাতহুল কাদীর ২/৭৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫৬৭; আলবাহরুর রায়েক ২/১৭৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫৮Sharable Link
এক ব্যক্তি রমযান মাসে সূর্যাস্ত হয়েছে মনে করে ইফতার করেছেন। কিন্তু সূর্য তখনও ডোবেনি। তার রোযা কি ভেঙ্গে গেছে? ভেঙ্গে গিয়ে থাকলে একটি রোযা কাযা করাই কি যথেষ্ট হবে নাকি কাফফারাও দিতে হবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তির রোযা ভেঙ্গে গেছে। এ ধরনের ক্ষেত্রে হুকুম হল, ভুল সম্পর্কে অবগত হওয়ার পর সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ইত্যাদি থেকে বিরত থাকবে এবং পরবর্তীতে একটি রোযা কাযা করে নিবে। তবে কাফফারা আদায় করতে হবে না। হযরত হানযালা রা. বলেন, আমি রমযান মাসে হযরত উমর রা.-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। সেখানে কিছু পানীয় পেশ করা হল এবং কেউ কেউ সূর্য ডুবে গেছে মনে করে তা পান করল। তখন মুয়াজ্জিন উচ্চস্বরে বললেন, আমীরুল মুমিনীন! আল্লাহর কসম, সূর্য এখনো ডোবেনি, তা উদিত অবস্থায় আছে। তখন হযরত উমর রা. বললেন, যারা ইফতার করে ফেলেছে তারা যেন তার পরিবর্তে আরেকটি রোযা রাখে। আর যারা ইফতার করেনি তারা যেন সূর্য ডুবা পর্যন্ত তা পূর্ণ করে।
-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৬/১৫০; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪০৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৫৬; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৩৬; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলালমারাকী ৩৬৯; ফাতহুল কাদীর ২/২৯০Sharable Link
এক ব্যক্তি রমযান মাসে রোযা অবস্থায় ভাইকে রক্ত দিয়েছে। এতে কি তার রোযা ভেঙ্গে গেছে বা কোনো ক্ষতি হয়েছে?
রোযা অবস্থায় রক্ত দিলে রোযা নষ্ট হয় না। কারণ শরীর থেকে রক্ত বের হওয়া রোযা ভঙ্গের কারণ নয়। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোযা অবস্থায় শিঙ্গা লাগিয়েছেন। সুতরাং রোযা অবস্থায় প্রয়োজনে রক্ত দেওয়া যাবে। তবে রক্ত দেওয়ার কারণে কারো যদি এত দুর্বল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা হয় যে, সে রোযা পূর্ণ করতে পারবে না। তাহলে তার জন্য রক্ত দেওয়া মাকরূহ হবে। তাই এ ধরনের ব্যক্তি অতীব প্রয়োজন ছাড়া দিনের বেলা রক্ত দিবে না।
-সহীহ বুখারী ১/২৬০; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৫৬; ফাতহুল কাদীর ২/২৫৬; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৭৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৯; রদ্দুল মুহতার ২/৩৯৫Sharable Link
আমার উপর দুই হাজার টাকা যাকাত আসে। এখন আমার হাতে নগদ টাকা নেই। তবে আমার দোকানে কিছু কাপড় আছে যেগুলোর বর্তমান বাজারমূল্য দুই হাজার টাকা হবে। এখন জানতে চাই, এগুলো দ্বারা যাকাত দিলে যাকাত আদায় হবে কি?
যাকাত নগদ অর্থ দ্বারা আদায় করা উচিত। যেন যাকাত গ্রহণকারী তার প্রয়োজন অনুযায়ী তা ব্যয় করতে পারে। অবশ্য নতুন কাপড় এবং দরিদ্রের প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র দ্বারাও যাকাত আদায় করা জায়েয।
-ইলাউস সুনান ৯/৪৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২১৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪২; আলবাহরুর রায়েক ২/২০১Sharable Link
আমার কাছে কিছু টাকা আছে। কী পরিমাণ টাকা থাকলে কুরবানী ওয়াজিব হয়? আর কুরবানী করলে কী ফযীলত পাওয়া যায় তা জানতে চাই।
কুরবানীর দিনগুলোতে (১০ যিলহজ্ব ফজর থেকে ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত) সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপা বা এর সমমূল্যের প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদের মালিক হলে কুরবানী ওয়াজিব হয়। এর চেয়ে কম সম্পদের মালিক হলে কুরবানী ওয়াজিব হয় না। (আহকামুল কুরআন, জাসসাস ৩/১২৮; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৫৫)
উল্লেখ্য, টাকা-পয়সা, সোনা-রুপার অলংকার, ব্যবসায়িক পণ্য, প্রয়োজন অতিরিক্ত জমি, সারা বছরেও ব্যবহার হয় না এমন অপ্রয়োজনীয় আসবাবপত্র এসব কিছুর মূল্য কুরবানীর নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য। সুতরাং আপনার নিকট জমা টাকা এবং প্রয়োজন অতিরিক্ত সম্পদ মিলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার বর্তমান মূল্য পরিমাণ থাকলে আপনার উপর কুরবানী ওয়াজিব। অন্যথায় ওয়াজিব নয়।
হাদীসে কুরবানীর অনেক ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। যেমন এক হাদীসে আছে, কুরবানীর দিন পশু কুরবানীর চেয়ে আল্লাহ তাআলার নিকট প্রিয় কোনো আমল নেই। (জামে তিরমিযী, হাদীস : ১/১৮০)
অন্য হাদীসে আছে, হযরত আলী রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাতেমাকে তার কুরবানীর নিকট উপস্থিত থাকতে বললেন এবং ইরশাদ করলেন, এই কুরবানীর প্রথম রক্তবিন্দু প্রবাহিত হওয়ার সাথে সাথেই আল্লাহ তাআলা তোমার গুনাহসমুহ মাফ করে দিবেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এটা কি শুধু আহলে বাইতের জন্য? না সকল মুসলমানের জন্য? তিনি বললেন, এই ফযীলত সকল মুসলমানের জন্য।
-আলমুততাজিরুর রাবেহ ৩১৬; মাজমাউয যাওয়াইদ ৪/১৭; আততারগীব ওয়াততারহীব ১/১৭৫Sharable Link
আমাদের এলাকার কুরবানীর পশু যবাই, গোশত বানানো ইত্যাদি কাজের বিনিময়ে কসাইরা কুরবানীর গোশত ও চামড়া নেওয়ার শর্ত করে থাকে। কাজের বিনিময়ে গোশত দেওয়ার চুক্তি করা বৈধ কি না?
কুরবানীর পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া জায়েয নেই। সুতরাং আপনাদের এলাকার ঐ প্রচলনটি নাজায়েয। এক্ষেত্রে করণীয় হল, কসাইয়ের সাথে কাজের বিনিময়ে টাকা বা অন্য কিছু দেওয়ার চুক্তি করবে। কুরবানীর পশুর কোনো অংশ দেওয়ার চুক্তি করবে না। হ্যাঁ, চুক্তি অনুযায়ী পূর্ণ পারিশ্রমিক দেওয়ার পর অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন বা গরীবদের যেমনিভাবে কুরবানীর গোশত বা চামড়া দেওয়া হয় তেমনি কোনো রূপ চুক্তি ব্যতিত কসাইকেও হাদিয়া হিসেবে কুরবানীর চামড়া বা গোশত দেওয়া যাবে। শর্ত বা চুক্তি করে কুরবানীর কোনো অংশ দেওয়া যাবে না।
হযরত আলী রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে উট নহর করতে আদেশ করেছেন এবং কসাইকে (পারিমশ্রমিক হিসেবে) কুরবানীর পশুর কোনো কিছু দিতে নিষেধ করেছেন। আলী রা. বলেন, আমরা তাদেরকে নিজেদের অংশ থেকে (এমনিই) দিয়ে থাকি। (পারিশ্রমিক হিসেবে নয়)।-সহীহ বুখারী ১/২৩২; সহীহ মুসলিম ১/৪২৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৭০; রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৮Sharable Link
আমি গতবার কুরবানীর প্রথম দিন কুরবানী না করে দ্বিতীয় দিন কুরবানী করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমার এক বন্ধু বলল, প্রথম দিনই কুরবানী করা উত্তম। তার কথা কি ঠিক?
হ্যাঁ, কোনো ওজর না থাকলে প্রথম দিনই কুরবানী করা উত্তম।
খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত আলী রা. বলেন, কুরবানী করার সময় তিনদিন। এর মধ্যে প্রথম দিন কুরবানী করা উত্তম।
-মুসনাদে আহমদ ৪/৩৫০; আলমুহাল্লা ৬/৪০; শরহু মুখতাসারিত তহাবী ৭/৩৩১Sharable Link
জনৈকা মহিলার স্বামী সৌদি আরবে শ্রমিকের কাজ করত। গত বছর ডিসেম্বরের ৫ তারিখে ঐ দেশে তার মৃত্যু হয়। কিন্তু স্ত্রী স্বামীর মৃত্যুসংবাদ পায়নি। তাই ইদ্দতের সময় যা কিছু করতে হয় তা না করে স্বাভাবিক জীবন যাপন করেছে। এ বছর অর্থাৎ ২০১১ সালের এপ্রিল মাসের ২০ তারিখ সে স্বামীর মৃত্যুসংবাদ পেয়েছে। সে কি মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পর ইদ্দত পালন করবে? উল্লেখ্য, উক্ত মহিলা অন্তঃসত্ত্বা নয়।
স্বামীর মৃত্যুর পর থেকেই স্ত্রীর ইদ্দত শুরু হয়ে যায় চাই স্ত্রী স্বামীর মৃত্যু সম্পর্কে অবগত থাকুক বা না থাকুক। তাই প্রশ্নোক্ত মহিলা স্বামীর মৃত্যুসংবাদ না পেলেও এবং ইদ্দতকালীন নিয়মকানুন পালন না করলেও মৃত্যুর পর থেকেই তার ইদ্দতের হিসাব হবে। বিখ্যাত তাবেয়ী মাসরূক রাহ. বলেছেন, ‘‘স্ত্রীর অজান্তে স্বামী মৃত্যুবরণ করলে কিংবা স্ত্রীকে তালাক দিলে মৃত্যু ও তালাকের দিন থেকে ইদ্দত গণনা শুরু হবে।’’ তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উক্ত মহিলার ইদ্দত পূর্ণ হয়ে গেছে। মৃত্যুসংবাদ পাওয়ার পর নতুন করে ইদ্দত পালন করতে হবে না।
-সূরা বাকারা : ২৩৪; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ১০/১৩১; শরহু মুখতাসিরুত তাহাবী ৫/২৪৮; আলমুহীতুল বুরহানী ৫/২৩৩; রদ্দুল মুহতার ৩/৫২০; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩০১; আলবাহরুর রায়েক ৪/১৩২Sharable Link
দুইজন ছেলে-মেয়ে পিতা-মাতার অগোচরে কাজি অফিসে গিয়ে নিকাহনামায় স্বাক্ষর করেছে। তাদের দু’জন বন্ধুও ঐ সময় উপস্থিত ছিল তবে তারা মুখে ইজাব-কবুল করেনি। তাদের এ বিয়ে কি সহীহ হয়েছে? জানালে খুশি হব।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে তাদের বিয়ে হয়নি। কেননা, বিবাহ সম্পন্ন হওয়ার জন্য মৌখিকভাবে ইজাব-কবুল করা শর্ত, শুধু নিকাহনামায় স্বাক্ষর করার দ্বারা বিয়ে হয় না।
-আলবাহরুর রায়েক ৩/৮৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৭০; রদ্দুল মুহতার ৩/১২Sharable Link
জনৈকা মহিলার বয়স ৫৩ বছর অতিক্রম করেছে। মাথার চুল সাদা হয়ে যাচ্ছে তাই তিনি কালো কলপ ব্যবহার করেন। জানার বিষয় এই যে, তার জন্য কি এটা জায়েয হবে?
বয়সের কারণে চুল সাদা হলে কালো কলপ ব্যবহার করা জায়েয নয়। হাদীস শরীফে আছে, হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন আবু কুহাফা রা. (আবু বকর রা.-এর পিতা) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসলেন। তখন তার মাথার চুল ও দাঁড়ি ছিল ‘ছাগামা’ নামক উদ্ভিদের ফুলের মতো তীব্র সাদা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা দেখে বললেন, তোমার এই চুল ও দাঁড়ির শুভ্রতা কোনো কিছু দ্বারা পরিবর্তন কর। তবে তোমরা কালো কলপ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাক। (সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৫৪৬৬)
অন্য হাদীসে আছে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আখেরি যামানায় কিছু লোক কবুতরের বুকের মতো কালো রংয়ের কলপ ব্যবহার করবে। তারা জান্নাতের খোশবুও পাবে না। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৪২০৯)
অতএব উক্ত মহিলার জন্য চুলে কালো কলপ ব্যবহার করা জায়েয নয়। তবে মেহেদী রং করতে পারবেন।
-শরহু মুসলিম, নববী ১৪/৮০; তাকমিলা, ফাতহুল মুলহিম ৪/১৪৯; মিরকাতুল মাফাতীহ ৮/২৯৪; রদ্দুল মুহতার ৬/৭৫৬; আলমুগনী ১/১২৭Sharable Link
কিছু দিন আগে এক দেশে আইন করা হয় যে, মহিলারা বোরকা পরতে পারবে, তবে চেহারা ঢাকতে পারবে না। তাদেরকে মুখমন্ডল খোলা রাখতে হবে। এ বিষয়ে একজন বললেন, এতে শরীয়ত-বিরোধী কিছু নেই। কারণ মহিলাদের চেহারা ঢাকতে হবে এমন কথা কুরআন-হাদীসে নেই। তাই চেহারার পর্দা জরুরি নয়। তার এ কথা কতটুকু সত্য? দলীল-প্রমাণসহ বিস্তারিত জানতে চাই।
ঐ ব্যক্তির কথা ঠিক নয়। পরপুরুষের সামনে নারীকে তার চেহারা ঢেকে রাখতে হবে। এটি কুরআন-সুন্নাহর বিধান। উম্মাহাতুল মুমিনীন ও অন্যান্য সাহাবিয়ার আমল দ্বারাও তা প্রমাণিত। নিম্নে কয়েকটি দলীল উল্লেখ করা হল।
কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, হে নবী! আপনি বলুন, নিজের স্ত্রী-কন্যা ও মুমিনদের স্ত্রীগণকে, তারা যেন টেনে নেয় নিজেদের উপর তাদের চাদরের কিছু অংশ। (সূরা আহযাব : ৫৯)
এ আয়াতের তাফসীরে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন, আল্লাহ তাআলা মুমিনদের স্ত্রীগণকে আদেশ করেছেন, তারা যখন কোনো প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হবে তখন যেন মাথার উপর থেকে চাদর টেনে নিজেদের চেহারা ঢেকে নেয়। এবং শুধু এক চোখ খোলা রাখে। (তাফসীরে ইবনে কাসীর ৩/৮২৪)
ইমাম জাসসাস রাহ. বলেন, এই আয়াতে যুবতী নারীদেরকে পরপুরুষের সামনে চেহারা ঢেকে রাখার আদেশ করা হয়েছে। (আহকামুল কুরআন, জাসসাস ৩/৩৭২)
আরো দেখুন : তাফসীরে কুরতুবী ১৪/১৫৬; জামেউল বয়ান, তবারী ১০/৩৩১; তাফসীরে রূহুল মাআনী ২২/৮৮
আম্মাজান হযরত আয়েশা রা. হজ্বের সফরের বিবরণ দিয়ে বলেন, আমরা ইহরাম অবস্থায় রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ছিলাম। আমাদের পাশ দিয়ে অনেক কাফেলা অতিক্রম করত। তারা আমাদের সামনে এলে নিজেদের চেহারার উপর ওড়না ঝুলিয়ে দিতাম। তারা অতিক্রম করে চলে যাওয়ার পর ওড়না সরিয়ে ফেলতাম। (সুনানে আবু দাউদ ২/৪৫৭)
আম্মাজান হযরত আয়েশা রা. অন্য এক সফরের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, অতপর সাফওয়ান ইবনে মুআত্তাল আসসুলামী সকালে আমার অবস্থানস্থলে পৌঁছল। সে একজন ঘুমন্ত মানুষের আকৃতি দেখে আমার নিকট এল এবং আমাকে চিনে ফেলল। কেননা, পর্দার বিধান নাযিল হওয়ার আগে সে আমাকে দেখেছিল। তখন সে জোরে ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ পাঠ করল, যার শব্দে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। সাথে সাথে আমি ওড়না দ্বারা মুখমন্ডল আবৃত করে ফেলি। (সহীহ বুখারী, হাদীস : ৪৮৫০)
হযরত আসমা বিনতে আবু বকর রা. বলেন, আমরা পর পুরুষের সামনে আমাদের চেহারা ঢেকে রাখতাম। (মুসতাদরাকে হাকীম ২/১০৪)
আরো দেখুন : তাফসীরে ইবনে কাসীর ৩/৮০৪; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ৩/৩৬৯; সহীহ বুখারী, হাদীস : ৩২৪, ৪৭৫৭, ১৮৩৮; ফাতহুল বারী ২/৫০৫, ৮/৩৪৭; উমদাতুল কারী ৪/৩০৫; মাআরিফুস সুনান ৬/৯৮; তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ৪/২৬৮; মাজমুআতুল ফাতাওয়া, ইবনে তাইমিয়া ২২/১০৯, ১১৪
মোটকথা, কুরআন-হাদীসের ভাষ্য এটাই যে, মহিলারা পরপুরুষের সামনে নিজেদের মুখমন্ডল আবৃত রাখবে। এটা পর্দারই অংশ।
প্রকাশ থাকে যে, কোনো কোনো দেশে নারীর মুখমন্ডল খোলা রাখার যে আইন করা হয়েছে তা এ কারণে করা হয়নি যে, ইসলামের দৃষ্টিতে চেহারার পর্দা নেই। বরং এ আইনের পিছনে ইসলামের প্রতি তাদের অব্যাহত বিদ্বেষ এবং মুসলমানদের কোনঠাসা করার প্রবণতাও কার্যকর। এ আইন তাদেরই কথিত মানবাধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতার সম্পূর্ণ বিরোধী। তাই এই আইন আন্তর্জাতিক অঙ্গণেও ধিকৃত হয়েছে।
Sharable Link
ডাক্তাররা বিভিন্ন রোগের ব্যাপারে বলেন, অমুক রোগটি ছোঁয়াচে। কিন্তু বুখারী শরীফের বাংলা অনুবাদে একটি হাদীস দেখলাম, ছোঁয়াচে রোগ বলতে কিছু নেই। ইসলামে কি ছোঁয়াচে রোগকে অস্বীকার করা হয়েছে? অথচ এটি একটি বাস্তব বিষয়। মুফতী সাহেবের নিকট বিষয়টির সমাধান কামনা করছি।
মূল উত্তরের আগে কয়েকটি কথা জেনে নেয়া উচিত।
ক) ইসলামের কোনো বিষয়ই সঠিক বাস্তবতার পরিপন্থী নয়। কেননা, এ বিশ্বজগত যিনি সৃষ্টি কছেন তিনিই শরীয়ত দিয়েছেন। অতএব ইসলামের কোনো বিষয়ের সাথে সঠিক বাস্তবতার সংঘর্ষ হতে পারে না।
খ) এ বিশ্ব জগতে যা কিছু হয় সবই আল্লাহ তাআলার ফয়সালাতে হয়ে থাকে। এর পিছনে যেসব আসবাবকে বাহ্যিক কার্যকারণ হিসেবে দেখা যায় এগুলো যদিও বাস্তব, তবে এসবের কার্য ও ক্রিয়া করার ক্ষমতা আল্লাহপ্রদত্ত। আল্লাহ তাআলা ক্রিয়া করার ক্ষমতা না দিলে এগুলো ক্রিয়া করতে পারবে না। এজন্যই ইবরাহীম আ.কে আগুনে নিক্ষেপের পরও আল্লাহর হুকুম না হওয়ার কারণে আগুন কোনো ক্রিয়া করতে পারেনি।
গ) সুস্থতা-অসুস্থতা আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়। সুস্থতার যেমন বিভিন্ন কারণ রয়েছে তদ্রূপ অসুস্থতারও বিভিন্ন কারণ আছে। যেমন-মাত্রাতিরিক্ত ঠান্ডায় সর্দি বা জ্বর হয়। তেমনিভাবে রোগাক্রান্ত হওয়ার একটি কারণ এটিও যে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে যাওয়া। এটি একটি বাস্তব বিষয়। শরীয়ত একে অস্বীকার করেনি। তবে অন্যান্য আসবাবের ব্যাপারে যে কথা এখানেও একই কথা-কার্য ও ক্রিয়া করার ক্ষমতা আল্লাহপ্রদত্ত। রোগের মধ্যে ক্রিয়া করার নিজস্ব ক্ষমতা নেই। তাই আল্লাহ চাইলে রোগাক্রান্ত হবে নতুবা হবে না। এজন্যই দেখা যায়, সংস্পর্শে যাওয়ার পরও অনেকে রোগাক্রান্ত হয় না।
ভূমিকার পর মূল উত্তর দেওয়া হল।
প্রশ্নে যে হাদীসের উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে এর মূল আরবী পাঠ এর সঠিক তরজমা এই, ‘রোগ-ব্যধি (তার নিজস্ব ক্ষমতায়) একজনের দেহ থেকে আরেকজনের দেহে লেগে যায় না।’ (সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৫৭৪২)
ছোঁয়াচে রোগ বলতে কিছু নেই-হাদীসের এ তরজমা বিশুদ্ধ নয়। কেননা, এর থেকে বোঝা যায়, বাস্তব ছোঁয়াচে রোগকে ইসলাম অস্বীকার করেছে। অথচ রোগাক্রান্ত হওয়ার অন্যান্য কারণ যেমনিভাবে বাস্তব তদ্রূপ রোগাক্রান্ত হওয়ার এই কারণটিও বাস্তব। ইসলাম একে অস্বীকার করেনি। এক্ষেত্রে যে বিষয়টিকে ভ্রান্ত ও বাতিল সাব্যস্ত করা হয়েছে তা হল, কোনো ব্যাধিকে এমন মনে করা যে, তা নিজে নিজেই সংক্রমিত হয়। যেমনটি জাহেলী যুগে মনে করা হত। উপাকার ও অপকারের একমাত্র মালিক আল্লাহ তাআলা। হায়াত-মওত, সুস্থতা-অসুস্থতা সবই তাঁর হুকুমে হয়ে থাকে। মোটকথা, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে রোগাক্রান্ত হওয়া একটি বাস্তব বিষয়। তবে সংক্রমনের এই ক্ষমতা রোগের নিজস্ব নয়; বরং আল্লাহপ্রদত্ত। তাই তিনি চাইলে সংক্রমণ হবে নতুবা হবে না এবং এটি যেহেতু রোগাক্রান্ত হওয়ার একটি বাস্তব কারণ তাই রোগাক্রান্ত হওয়ার অন্যান্য কারণ থেকে বেঁচে থাকতে যেমনিভাবে কোনো দোষ নেই তেমনি এক্ষেত্রেও উপযুক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা দোষের নয়। বরং কিছু হাদীসে সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।-বাযলুল মাজহূদ ১৬/২৪২; শরহুন নববী ২/২৩০; ফয়যুল কাদীর ৬/৪৩৩; তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম ৪/৩৭০; তরজুমানুস সুন্নাহ ২/৪১৬; বুলুগুল আরাব ফী মারিফাতি আহওয়ালিল আরব ২/৩১৫Sharable Link
আমার এক মুরববী অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও কিন্তু কোনো চিকিৎসা নিতে চান না। তাঁর কথা হল, চিকিৎসা নেওয়া তাওয়াক্কুলের পরিপন্থী। অথচ তার রোগের উন্নত ও শরীয়তসম্মত চিকিৎসা রয়েছে। জানতে চাই, শরীয়তে চিকিৎসা গ্রহণের বিধান কী? চিকিৎসা গ্রহণ করা কি তাওয়াক্কুলের পরিপন্থী?
অসুস্থ হলে চিকিৎসা নেওয়া জায়েয। এটি তাওয়াক্কুলের পরিপন্থী নয়। কারণ তাওয়াক্কুল হল, এই বিশ্বাস রাখা যে, উপায়-উপকরণ আল্লাহরই সৃষ্টি এবং তা আল্লাহর আদেশেই কাজ করে। তাই ফলাফলের জন্য আল্লাহর উপরই ভরসা করতে হবে। আল্লাহ যদি ইচ্ছা করেন তাহলে সুস্থতা আসবে অন্যথায় নয়। হাদীসে আছে, প্রতিটি রোগের চিকিৎসা রয়েছে। যখন রোগ অনুযায়ী চিকিৎসা করা হয় তখন আল্লাহ তাআলার হুকুমে আরোগ্য লাভ হয়।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৫৬৯৭
আর স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেখানে চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন এবং অন্যদেরকেও চিকিৎসা গ্রহণ করতে বলেছেন সেখানে একে তাওয়াক্কুলের পরিপন্থি মনে করা আদৌ ঠিক নয়। এ সম্পর্কিত কিছু হাদীস-আছার নিম্নে পেশ করা হল।
হযরত আবু দারদা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলাই রোগ ও ঔষধ সৃষ্টি করেছেন এবং প্রত্যেক রোগের চিকিৎসাও তিনি সৃষ্টি করেছেন। অতএব তোমরা চিকিৎসা গ্রহণ কর।-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৩৮৬৪
হযরত উসামা ইবনে শুরাইক বলেন, কতিপয় মরুবাসী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, আমরা কি অসুস্থ হলে চিকিৎসা নিব? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। আল্লাহর বান্দারা! তোমরা চিকিৎসা গ্রহণ করো।-জামে তিরমিযী
এক আনসারী সাহাবী বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক আহত ব্যক্তিকে দেখতে গেলেন। দেখে বললেন, তার জন্য অমুক গোত্রের চিকিৎসককে ডেকে আন।-মুসনাদে আহমদ ৫/৩৭১
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিঙা লাগিয়েছেন এবং নাকে বিশেষ ঔষধ দিয়েছেন যেন হাঁচির মাধ্যমে রোগ সেরে যায়।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৫৬৯১
এছাড়া আরো অনেক হাদীস রয়েছে। এসব হাদীস থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, চিকিৎসা গ্রহণ করা জায়েয এবং এটি তাওয়াক্কুলের পরিপন্থী নয়।
-আসসিয়ারুল কাবীর ১/৯২; শরহুন নববী ২/২২৫; ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া ১৮/১২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৫৪; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৮০; আযযাখীরাহ ১২/৩০৭; আহকামুল আদবিয়্যিহ ৩৫; বাসায়িরে হাকীমুল উম্মত ৩৭১; আলমাওসূআতুল ফিকহিয়্যা ১১/১১৬Sharable Link
আমাদের বাসায় রংয়ের কাজ করার জন্য দুজন লোককে দৈনিক ১০০/-টাকা চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়। দুদিন কাজ করার পর তৃতীয় দিনও তারা কাজ করার জন্য বাসায় এসেছিল। কিন্তু ঐ দিন বৃষ্টির কারণে কোনো কাজ করতে পারেনি। তারা বলছে, ঐ দিনের পারিশ্রমিকও তাদেরকে দিতে হবে। একজন বলছে, পুরো না দিলে অর্ধেক দিতে হবে। জানতে চাই, শরীয়তের দৃষ্টিতে তাদেরকে ঐ দিনের মজুরি দেওয়া কি জরুরি?
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী বৃষ্টির কারণে তারা যেহেতু কাজ শুরুই করতে পারেনি তাই তারা ঐ দিনের মজুরি পাবে না। সুতরাং তারা পারিশ্রমিক (পূর্ণ বা আংশিক) দাবি করলেও তা দেওয়া জরুরি নয়।
-আলবাহরুর রায়েক ৮/২৯; শরহুল মাজাল্লাহ ২/৪৮৭, মাদ্দাহ : ৪২৫Sharable Link
আমাদের বাসায় কাজের লোক কাজ করতে গিয়ে মাঝেমধ্যে কাঁচের গ্লাস, কাপ ইত্যাদি ভেঙ্গে ফেলে। এ কারণে তাদের উপর ক্ষতিপূরণ আরোপ করা যাবে কি?
কাজের লোক ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো বস্ত্ত নষ্ট করলে কিংবা তার কোনো ত্রুটির কারণে নষ্ট হলে ক্ষতিপূরণ নেওয়া বৈধ। কিন্তু নষ্ট হওয়ার পিছনে যদি তার ত্রুটি না থাকে তবে ক্ষতিপূরণ নেওয়া জায়েয হবে না। বিখ্যাত তাবেয়ী মুহাম্মাদ ইবনে সিরীন রাহ. শ্রমিকের উপর ঐ সময় ক্ষতিপূরণ আরোপ করতেন যখন শ্রমিকের ত্রুটি প্রমাণিত হত।
-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ২০৮৬৭; শরহুল মাজাল্লাহ ২/৬০১, ৬০৩; রদ্দুল মুহতার ৬/৭০Sharable Link
আমি একজনের কাছ থেকে এভাবে চুক্তিতে ১০ হাজার টাকা নিয়েছি যে, আমি কাপড়ের ব্যবসা করব। এতে যা লাভ হবে এর দুই তৃতীয়াংশ আমার আর এক তৃতীয়াংশ তার। সাথে সাথে পুঁজিদাতা এই শর্তও দিয়েছেন যে, কাপড় আনার জন্য যখন ঢাকায় যাবে তখন আসা বা যাওয়ার একটি ভাড়া তোমার পকেট থেকে দিবে। আরেকটির ভাড়া ব্যবসা থেকে যাবে। জানতে চাই, ভাড়ার ব্যাপারে উক্ত শর্তারোপ সঠিক হয়েছে কি না।
উত্তর : প্রশ্নোক্ত কারবারে ব্যবসার কাজে যাতায়াতের ভাড়ার বিষয়ে ঐ শর্ত করা ঠিক হয়নি। কারণ একজনের পুঁজি ও অন্যের শ্রম কারবারে একমাত্র ব্যবসার উদ্দেশ্যে কোথাও সফর হলে সফরের যাতায়াত ও থাকা-খাওয়ার বাস্তব খরচ ব্যবসা (মুদারাবা ফান্ড) থেকেই যাবে। এ খরচ ব্যবসায়ীর উপর আরোপ করা অন্যায়। বিখ্যাত তাবেয়ী ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন, মুদারিব (ব্যবসায়ী) ন্যায্যভাবে খরচ করবে। এরপর ব্যবসায় লাভ হলে ঐ খরচ লভ্যাংশ থেকে বাদ যাবে নতুবা মূল পুঁজি থেকে বাদ যাবে। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ২১৭০৭)
তাবেয়ী সালেম ও কাসেম রাহ. বলেন, ব্যবসার উদ্দেশ্যে সফর হলে ব্যবসায়ী ন্যায্যভাবে খানাপিনা ও বাহনের খরচ (ব্যবসা থেকে) নিতে অসুবিধা নেই।
-প্রাগুক্ত ২১৭১০; শরহুল মাজাল্লাহ ৪/৩৫৩, মাদ্দা : ১৪১৯Sharable Link
দুই ব্যক্তির মাঝে একটি বিষয়ে মতভেদ হলে একজন অপরজনকে বলেছে, আমি যা বলছি তা সত্য হলে তুমি আমাকে ১০০/-টাকা দিবে। আর মিথ্যা হলে আমি ১০০/-টাকা দিব। এরপর তারা তৃতীয় ব্যক্তির নিকট ২০০/-টাকা জমা দিয়েছে। জানতে চাই, এভাবে বাজি ধরা কি বৈধ হয়েছে?
এভাবে উভয় পক্ষ থেকে বাজি ধরা নাজায়েয। এটা জুয়ার অন্তর্ভুক্ত।
-আহকামুল কুরআন, জাসসাস ২/৪৬৫; রদ্দুল মুহতার ৬/৪০৩Sharable Link
আমার এক পরিচিতজনের দাদার সম্পত্তি বণ্টন করা হবে। তার পিতা তার দাদার আগেই মারা গেছেন। প্রশ্ন হল, চাচাদের সাথে সেও তার দাদার রেখে যাওয়া সম্পত্তির অংশ পাবে কি না? জনৈক এডভোকেট বলেছেন, অংশীদার হবে। এ ব্যাপারে শরীয়তের মাসআলা কী?
শরীয়তের স্বতঃসিদ্ধ বিধান হল, মৃত্যুর সময় কোনো ছেলে বেঁচে থাকলে নাতী-নাতনী দাদার মীরাছ পায় না। এক্ষেত্রে মৃতের অধিক নিকটবর্তী হওয়ায় পুত্র মীরাছের হকদার হয়। শরীয়তে মীরাছ বণ্টনের মৌলনীতি হল, মৃতের কাছের আত্মীয় থাকাবস্থায় দূরের আত্মীয় মীরাছ পায় না। কুরআন মজীদে আছে-পুরুষের জন্যও সেই সম্পদে অংশ রয়েছে, যা পিতামাতা ও নিকটতম আত্মীয়রা রেখে যায় আর নারীদের জন্যও সেই সম্পদে অংশ রয়েছে, যা পিতামাতা ও নিকটতম আত্মীয়রা রেখে যায়। সে (পরিত্যক্ত) সম্পদ কম হোক বা বেশি। এ অংশ (আল্লাহর তরফ থেকে) নির্ধারিত। (সূরা নিসা : ৭)
আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা.-থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, (মীরাছ বণ্টনের ক্ষেত্রে) তোমরা প্রথমে যাদের অংশ সুনির্ধারিত তাদের অংশ দিয়ে দাও। এরপর অবশিষ্ট সম্পদ মৃতের নিকটতর পুরুষকে দাও। (সহীহ বুখারী, হাদীস : ৬৭৩৫)
উপরোক্ত আয়াত ও হাদীসের স্পষ্ট নির্দেশনা হল, মীরাছ বণ্টন হবে নিকটতর আত্মীয়দের মাঝেই। নিকট আত্মীয় থাকাবস্থায় দূরের আত্মীয় মৃতের সম্পদ পাবে না। এছাড়া বিশিষ্ট সাহাবী হযরত যায়েদ ইবনে ছাবিত রা. যার সম্পর্কে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যায়েদ হল মীরাছের বিষয়ে উম্মতের মাঝে সবচেয়ে অধিক জ্ঞানী। (মুসনাদে আহমদ ৩/১৮৪) তিনি বলেন, দাদার সন্তানরা থাকতে নাতী দাদার মীরাছ পাবে না। (সহীহ বুখারী ২/৯৯৭)
অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রেও নাতী দাদার মীরাছ পাবে না। (শরহু মুখতাসারিত ত হাবী ৪/৯২; আলমুহীতুল বুরহানী ২৩/৩০৭)
প্রকাশ থাকে যে, যদি কোনো ব্যক্তির জীবদ্দশায় তার কোনো ছেলে সন্তানাদি রেখে মারা যায় এবং তারা অসচ্ছল থাকে তাহলে এক্ষেত্রে দাদার উচিত তাদের জন্য সম্পদের কিছু অংশের ওসীয়ত করে যাওয়া। অবশ্য কেউ যদি নিজ কর্তব্যে অবহেলা করে ওসীয়ত না করে যায় তাহলে সেক্ষেত্রে তারা সম্পদের হকদার হবে না।
-তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ৬/১৪; হামারে আয়েলী মাসাইল পৃ. ২৫Sharable Link