অনেক মানুষকে দেখা যায় তারা হাটার সময় পান খায়। সে সময় তাদেরকে সালাম দেয়া যাবে কি?
অনেক মানুষকে দেখা যায় তারা হাটার সময় পান খায়। সে সময় তাদেরকে সালাম দেয়া যাবে কি?
জ্বী, পান খাওয়া অবস্থায় সালাম দেওয়া যাবে।
Sharable Link-রদ্দুল মুহতার ১/৬১৭, ইমদাদুল ফাতাওয়া ৪/২৮০
১০০টি পুরাতন টাকায় ৯০ টি নতুন টাকা দিলে নাকি নাজায়েয। আমি শুনেছি, এটা জায়েয এভাবে যে, ৮০ টাকা দিবে নতুন কাগজের আর ১০ টাকা দিবে পয়সায়। এতে নাকি জায়েয হয়ে যায়। এটা কি সত্য? যদি সত্য হয় তাহলে আমার প্রশ্ন হল, আমি একজনকে ১০০০ টাকা দিলাম এ শর্তে যে, তুমি আমাকে ৯০০ টাকা কাগজের দিবে আর ২০০ টাকা পয়সায় দিবে এক মাস পর। এটা কি জায়েয হবে? নাকি হবে না?
একই দেশের কারেন্সি আদান প্রদানের ক্ষেত্রে সমান সমান হওয়া জরুরি। কম-বেশি করলে তা সুদ হয়ে যাবে। তাই পুরাতন ১০০ টাকার পরিবর্তে নতুন ৯০ টাকার লেনদেন যেমন নাজায়েয, তেমনি ৯০ টাকার মধ্যে ১০ টাকা কয়েন দিয়ে আদায় করলেও নাজায়েয হবে। আর এই মাসআলার সাথে প্রশ্নোক্ত পরবর্তী মাসআলার কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ, প্রথমত নগদ লেনদেনে টাকা ভাংতির ক্ষেত্রে কম-বেশি করা তো নাজায়েয, কিন্তু এটি যদি জায়েযও হতো তবুও ঋণের বিষয়টিকে এর সাথে মিলানোর কোনো সুযোগ ছিল না। কেননা, ঋণ দিয়ে অতিরিক্ত কোনো কিছু নেওয়া সম্পূর্ণ হারাম। এটা ‘রিবা নাসিয়াহ’র অন্তর্ভুক্ত। তাই এক্ষেত্রেও ১০০০ টাকা ঋণের পরিবর্তে ৯০০ টাকা নিয়ে বাকি ২০০ টাকার কয়েন নিলেও তা সুদের শামিল।
Sharable Link-সুনানে আবু দাউদ ৪৭৩, বাযলুল মাজহুদ ৪/২৩৯, ফাতহুল কাদীর ৬/১৪৭, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৪৯, বুহুস ফী কাযায়া ফিকহিয়্যা মুআসারা ১/১৯১ রদ্দুল মুহতার ৫/১২৮
অনেক মানুষকে দেখা যায়, তারা একা সুন্নত ও ওয়াজিব নামায আদায় করার সময় এমন আওয়াজ করে তাকবীর বলে যার আওয়াজ তার আশপাশের মানুষ ভালোভাবে শুনতে পায়। আমার প্রশ্ন হল, এতে তার নামাযের কোনো ক্ষতি হবে কি?
উল্লেখিত অবস্থায় উচ্চ স্বরে তাকবীর বলা সুন্নত পরিপন্থী। আর যদি তা অন্যের ইবাদতে বিঘ্ন ঘটার কারণ হয় তাহলে আরো আপত্তিকর। তাই এ থেকে বিরত থাকা জরুরি। তবে এ কারণে নামায নষ্ট হবে না।
Sharable Link-রদ্দুল মুহতার ২/৮০
আমাদের গ্রামে ইমাম সাহেব ভুলবশত জানাযার নামাযে ৪ তাকবীরের স্থলে ৫ তাকবীর দিয়ে নামায শেষ করেন। মুসল্লিরা কেউ লোকমা দেয়নি। এভাবে লাশ দাফন করে ফেলে। পরবর্তীতে মুসল্লীদের এবং ইমাম সাহেবের ধারণা হল, নামাযে ৫ তাকবীর হয়েছে। এতে করে ইমাম সাহেব খুব ভয় পাচ্ছেন যে, এখন কী উপায় হবে? আল্লাহর কাছে কী জবাব দিব? অর্থাৎ ইমাম সাহেবের কী পরিণতি হবে। মুসল্লীদেরই বা কী হবে লোকমা না দেওয়ার কারণে। দয়া করে কুরআন-হাদীসের আলোকে জানিয়ে চিন্তামুক্ত করবেন।
জানাযার নামাযে চারের অধিক তাকবীর বলা ঠিক নয়। ভুলে বেশি হয়ে গেলে জানাযার কোনো ক্ষতি হবে না। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ জানাযা নামায আদায় হয়ে গিয়েছে। এ নিয়ে সমালোচনা করা কিংবা ইমাম সাহেবকে দোষারোপ করা ঠিক হবে না।
উল্লেখ্য, ইমাম কখনো চারের অধিক তাকবীর বললে মুসল্লীগণ তখন তাকবীর বলবে না। ইমামের অনুসরণ করবে না; বরং চুপ থাকবে। এরপর যখন ইমাম সালাম ফিরাবে তখন মু্ক্তাদীগণও সালাম ফিরাবে।
Sharable Link-সহীহ মুসলিম ও শরহে নববী ১/৩০৯, বাদায়েউস সানায়ে ২/৫১, আল বাহরুর রায়েক ২/১৮৪, খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২২৪, আদ্দুররুল মুখতার ২/১১৪
বর্তমানে অনেক এলাকায় দেখা যায় যে, অনেক ব্যক্তি ৭, ১৪, ২১ টাকা এমনকি ৩ টাকা দেনমোহর ধরে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। অথচ হাদীসে আছে যে, দশ দিরহামের কম কোনো মোহর হয় না। সুতরাং আমার প্রশ্ন হল, দশ দিরহাম আমাদের বাংলাদেশের মুদ্রায় কত টাকা আসে। এবং উপরোক্ত বিবাহ সহীহ হবে কি না? হলে তার সুরত কী? দলীলসহ জানালে কৃতজ্ঞ হব।
মহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ হল, দশ দিরহাম। দেশীয় মাপ হিসাবে দুই ভরি/তোলা ও দশ আনা রূপা। এ পরিমাণ রূপার মূল্যের চেয়ে কম মহর ধার্য করা জায়েয হবে না। সর্বনিম্ন পরিমাণের চেয়ে কম মহর ধার্য করলেও বিয়ে সহীহ হয়ে যায়। তবে এক্ষেত্রে স্বামীর উপর সর্বনিম্ন মহরই দেওয়া জরুরি হয়। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে স্বামীর উপর দশ দিরহামের মূল্য আদায় করা জরুরি হবে।
Sharable Link-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩০৩, ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৩৭৫, আলবাহরুর রায়েক ৩/১৪৩, আদ্দুররুল মুখতার ৩/১০২
আমাদের এলাকার এক লোক অযুতে প্রতিটি অঙ্গ অন্তত ৪-৫ বার ধৌত করে। তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে সে বলে, এ ছাড়া আমার মন পরিতৃপ্ত হয় না। জানতে চাই, এভাবে নিয়মিত তিন বারের অধিক ধোয়ার অভ্যাস গড়ার হুকুম কী? এতে শরীয়তের দৃষ্টিতে কোনো অসুবিধা আছে কি?
অযুর অঙ্গগুলো তিন বার করে ধোয়া সুন্নত। তাই তিন বার ধোয়ারই অভ্যাস করা চাই। তিন বারের অধিক ধোয়ার অভ্যাস করা উচিত নয়। আর তিনের অধিক ধোয়াকে উত্তম মনে করে এর উপর আমল করা গুনাহ। পক্ষান্তরে তিনবার ধোয়ার পরও কোনো স্থানে পানি পৌঁছার ব্যাপারে সন্দেহ হলে সে স্থানটি আবার ধুয়ে নিবে। তবে শুধু ওয়াসওয়াসার ভিত্তিতে এরূপ করবে না।
Sharable Link-সুনানে আবু দাউদ ১/১৮, বাদায়েউস সানায়ে ১/১১৩, শরহুল মুনিয়্যা ২৬, খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২২, আলবাহরুর রায়েক ১/৪৬
হুজুর, আমি এক গরীব ঘরের ছাত্র। এ বছর ইন্টার পরীক্ষা দিয়েছি। সামনে এম.বি.এ পড়তে চাই। এটি অনেক ব্যয়বহুল। আমার বাবার জন্য এর ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব নয়। ইদানীং কিছু শুভাকাঙ্খী বন্ধু খবর দিল গ্রামীন ব্যাংক স্টুডেন্ট লোন দেয়। তারা এর জন্য কোনো সুদ নেয় না। তবে সার্ভিস চার্জ হিসাবে ৫% দিতে হয়। এছাড়া এ লোন গ্রহণের জন্য আমার মাকে ব্যাংকের সদস্য হতে হবে। অর্থাৎ ব্যাংকে তার একাউন্ট করতে হবে এবং মাকেই এ লোন গ্রহণ করতে হবে। জানতে চাই, এ লোন গ্রহণ করা এবং তা দিয়ে পড়াশুনার খরচ চালানো বৈধ হবে কি না?
প্রকাশ থাকে যে, তাদের সাথে চুক্তিতে এটিও উল্লেখ থাকবে যে, পাশ করার পর অন্যত্র চাকরী না পেলে তাদের ব্যাংকে চাকুরীর সুযোগ করে দিবে।
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী উক্ত স্টুডেন্ট লোন গ্রহণ করা বৈধ হবে না। কারণ সুদকে সার্ভিস চার্জ বলা হলে তা বৈধ হয়ে যায় না। লোন প্রদান করতে কোনো খরচ হলে শুধুমাত্র বাস্তবসম্মত এ খরচই (Actual Expenses) সার্ভিস চার্জ হিসাবে নেওয়ার অবকাশ আছে। বাস্তব খরচের অতিরিক্ত কিছুই নেওয়া জায়েয নয়। ৫% যে বাস্তব খরচের অনেক বেশি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই একে সার্ভিস চার্জ বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে তা সুদই। এ ছাড়া লোন গ্রহণের জন্য মহিলার সদস্য হওয়া এবং তার উপস্থিতিকে শর্ত করা যেমন অযৌক্তিক তেমনি তা শরীয়ত বিরোধী।
Sharable Link
আমি নারগিস আক্তার। আমার বয়স ৩৫ বছর। আমার কোনো সন্তান নেই। আমার নিকট হজ্ব আদায় করার টাকা রয়েছে। এ বছর একটি হজ্ব কাফেলার সাথে হজ্বে যেতে চাই। ঐ কাফেলায় অন্যান্য মহিলাও আছেন, যাদের সাথে তাদের মাহরাম আছে। জানতে চাই, মাহরাম ছাড়া আমি একা ঐ কাফেলার সাথে হজ্বে যেতে পারব কি না?
হজ্বের সফরেও মহিলাদের সাথে মাহরাম পুরুষ থাকা জরুরি। মাহরাম পুরুষ ছাড়া অন্য মহিলাদের সঙ্গী হয়েও হজ্বে যাওয়া জায়েয হবে না। তাই মাহরাম পুরুষের ব্যবস্থা না হলে আপনি হজ্বের সফরে যেতে পারবেন না। পরবর্তীতে যখন মাহরাম পুরুষের ব্যবস্থা হবে তখন যেতে পারবেন। আল্লাহ না করুন, যদি এর আগেই মৃত্যু এসে যায় তবে বদলী হজ্বের অসিয়ত করে যাওয়া জরুরি।
Sharable Link-সহীহ মুসলিম ১/৪৩৪, আলবাহরুর রায়েক ২/৫৫১, মিনহাতুল খালেক ২/৫৫১, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১৯, আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৬৫
আমি একটি হাউজিং সোসাইটির কাছ থেকে তিন কাঠার একটি জমি কিনেছিলাম যা ৬০ ফুট প্রস্থের একটি সরকারী রাস্তার সংলগ্ন। এরপর উক্ত জমিতে আমার নামে সাইনবোর্ড বসাই ও চতুর্দিকে খুঁটি দেয়ার বন্দোবস্ত করি। জমি ক্রয় করার আনুমানিক ১৫ দিন পর একজন ভদ্রমহিলা উক্ত জমিতে এসে জমির মালিকানা দাবি করেন। পরে বিষয়টি নিয়ে থানায় তিন পক্ষ অর্থাৎ আমি নিজে, হাউজিং সোসাইটির প্রতিনিধি এবং ভদ্র মহিলা আলোচনায় বসলে দেখা যায় যে, আসলেই হাউজিং সোসাইটি আমার কাছে যে জমি বিক্রি করেছে, তা ওই ভদ্রমহিলার। এ পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত ক্রয়কৃত রাস্তার পাশের জমিটি ভদ্রমহিলাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। যদিও উক্ত হাউজিং সোসাইটির এবং ভদ্রমহিলার একই সি, এস/আর,এস দাগে জমি ক্রয় করা আছে। কিন্তু ভদ্রমহিলার ক্রয়কৃত জমিটি হচ্ছে ৬০ ফুট রাস্তার সংলগ্ন এবং হাউজিং সোসাইটির জমিটি ৬০ ফুট রাস্তা থেকে অনেক ভিতরে। যেখানে যাওয়ারও কোনো রাস্তা নেই। অথচ হাউজিং সোসাইটি আমাকে দলিলের ভিতর রাস্তা সংলগ্ন জমি হিসেবেই বিক্রি করেছে এবং দলিলে সে ভাবেই নকশা ও বর্ণনা দেওয়া আছে। তদুপরি হাউজিং সোসাইটির সার্ভেয়ারের উপস্থিতিতে তাদের দেখানো অবস্থানেই আমি খুঁটি ও সাইনবোর্ড স্থাপন করেছিলাম। স্পষ্টতই হাউজিং সোসাইটি আমাকে ধোঁকা দিয়েছে। এমতাবস্থায় আমি চাপ প্রয়োগ করে হাউজিং সোসাইটি থেকে আমার জমি ক্রয় বাবদ প্রদত্ত সমস্ত টাকা ও জমি রেজিষ্ট্রি বাবদ খরচকৃত সমস্ত টাকা ফেরত আনি। বিনিময়ে আমি তাদের নামে একটি আম-মোক্তারনামা লিখে দেই যাতে জমির সমস্ত প্রকার ক্ষমতা কোম্পানিকে হস্তান্তর করা হয়। উল্লেখ্য যে, যেহেতু ক্রয়কৃত জমিতে আমার নামে এখনও নামজারি হয়নি কাজেই দলিল করে কোম্পানিকে এই মুহূর্তে জমি লিখে দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে ভিন্ন একটি অঙ্গীকারনামা আমার তরফ থেকে কোম্পানিকে দেওয়া হয় যে, ইনশাআল্লাহ নামজারি হওয়ার পর কোম্পানিকে দলিল করে জমিটি বুঝিয়ে দেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে রেজিষ্ট্রি খরচ উক্ত কোম্পানি বহন করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়।
এখানে উল্লেখ্য যে, উক্ত হাউজিং সোসাইটিকে গত ১৯৯৯ সালের শেষ দিক হতে আমি টাকা দেয়া শুরু করেছিলাম এবং কিস্তিতে বিভিন্ন সময়ে এই টাকা পরিশোধ করা হয়। তবে কবে কত টাকা দেয়া হয়েছিল সে হিসাব আমার কাছে আছে। এখন আমার প্রশ্ন হল যে, যে টাকা আমি হাউজিং সোসাইটি থেকে ফেরত পেলাম সে টাকার উপর কি আমাকে বিগত নয় বছরের যাকাত দিতে হবে? উল্লেখ্য যে, জমিটি বাড়ি নির্মাণের উদ্দেশ্যে ক্রয় করেছিলাম।
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী উক্ত জমি বাবদ যত টাকা ফেরত পেয়েছেন তার উপর বিগত নয় বছরের যাকাত আদায় করতে হবে না। বরং ঐ টাকা হস্তগত হওয়ার পরও থেকেই যাকাতের হিসাব শুরু হবে।
Sharable Link-আলবাহরুর রায়েক ২/২০৩
আমি অযু অবস্থায় গাড়িতে করে এক স্থানে যাচ্ছিলাম। পথিমধ্যে সিটে বসে বসে আমার ঘুম এসে যায়। সিটে হেলান দিয়েই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। জানতে চাই, এভাবে ঘুমানোর কারণে আমার অযু নষ্ট হয়ে গিয়েছে কি না?
হেলান দিয়ে বা হেলান ছাড়াই বসে বসে ঘুমালে যদি ঘুমন্ত ব্যক্তি আসনের সাথে এঁটে বসে থাকে অল্প সময়ের জন্যও আসন থেকে শরীর উঠে না যায় তাহলে নির্ভরযোগ্য বক্তব্য অনুযায়ী এভাবে ঘুমানোর দ্বারা অযু ভাঙবে না। কিন্তু যদি ঘুমন্ত অবস্থায় শরীর আসন থেকে অল্প সময়ের জন্যও পৃথক হয়ে যায় তাহলে অযু নষ্ট হয়ে যাবে। সুতরাং প্রশ্নোক্ত অবস্থায় আপনার অযুর বিষয়টিও উপরোক্ত নিয়ম অনুযায়ী বিচার্য।
Sharable Link-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৯, বাদায়েউস সানায়ে ১/১৩৫, আলমুহীতুল বুরহানী ১/২৮, আল বাহরুর রায়েক ১/৭৩
আমি একদিন গাড়িতে যেতে যেতে সিটে বসে একটি সিজদার আয়াত মুখস্ত করার জন্য বারবার পড়েছি। জানার বিষয় হল, আমার উপর কয়টি সিজদা ওয়াজিব হবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার উপর একটি সিজদা ওয়াজিব।
Sharable Link-বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৩৩, রদ্দুল মুহতার ২/১১৭, তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫০৪, আননাহরুল ফায়েক ১/৩৪৩
জনাব আবদুল করিম ২লক্ষ টাকা মহরে বিয়ে করে। বিয়ের সময় স্ত্রীকে কোনো মহর দেয়নি। পুরোটাই বাকি ছিল। আবদুল করিম তার স্ত্রীকে একখন্ড জমি রেজি. করে দেয় প্রায় এক বছর আগে। এখন স্ত্রী তার মহর দাবি করছে। কিন্তু স্বামী শপথ করে বলছে, ঐ জমি আমি মহর হিসেবেই দিয়েছি। কিন্তু স্ত্রী তা মানতে রাজি নয়। সে বলে, সেটা এমনিই দিয়েছে, মহর হিসাবে নয়। এখন কার কথা ধর্তব্য হবে? তাকে কি আবার মহর দিতে হবে? এক্ষেত্রে স্বামী যদি মহর হিসাবে আর কিছু না দেয় তবে কি সে গুনাহগার হবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে স্বামীর বক্তব্যই গৃহিত হবে। স্বর্ণ-রূপা, টাকা, জমি ও এ ধরনের সম্পদ মহরের নিয়তে দিলেই তা দ্বারা মহর আদায় হয়ে যায়। দেওয়ার সময় মহরের কথা উল্লেখ করা জরুরি নয়। তাই ঐ জমির মূল্য পরিমাণ মহর আদায় হয়েছে বলে ধরা হবে।
Sharable Link-ফাতহুল কাদীর ৩/২৫৫, আলবাহরুর রায়েক ৩/১৮৪, হেদায়া ২/৩৩৭, ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/১২৮, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩২২, আদ্দুররুল মুখতার ৩/১৫১
আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব একদিন ফযরের নামাযে সূরা সিজদা তিলাওয়াত করেছিলেন। সেদিন সিজদা তিলাওয়াত থেকে ওঠে আবার সূরা ফাতেহা পড়ে ফেলেন এরপর সূরা সিজদার বাকি অংশ পড়েন। কিন্তু শেষে সাহু সিজদা না করেই নামায শেষ করেন। নামাযের পর মুসল্লীদের মধ্যে হট্টগোল লেগে যায়। মুসল্লীরা বলে নামায হয়নি, কিন্তু ইমাম সাহেব বলেন, নামায হয়ে গেছে। জানতে চাই, কার কথা সঠিক?
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ঐ দিনের ফযরের নামায সহীহ হয়েছে। তা পুনরায় আদায় করতে হবে না। ইমাম সাহেবের বক্তব্যই সঠিক। সূরা ফাতিহার পর ওয়াজিব কিরাত পরিমাণ কোনো স্থান থেকে পড়ে নেয়ার পর ভুলবশত আবার সূরা ফাতেহা পড়লে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয় না।
Sharable Link-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৫১৯, বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৬, রদ্দুল মুহতার ১/৪৬০, তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৪৭৩, শরহুল মুনিয়্যাহ ৪৬০
আমার মা গত বছর হজ্ব করেছেন। ইহরাম অবস্থায় তিনি বেখেয়ালে একটি উকুন মেরে ফেলেছিলেন। জানতে চাই, এর জন্য কোনো জরিমানা দিতে হবে কি না?
ইহরাম অবস্থায় একটি উকুন মারলে সামান্য পরিমাণ খাদ্য যেমন একটি খেজুর বা দু’চার টাকা সদকা করাই যথেষ্ট।
Sharable Link-হিদায়া ১/২৬৬, রদ্দুল মুহতার ২/৫৬৯, ফাতহুল কাদীর ৩/২৩, মানাসিক মোল্লা আলী কারী রাহ. ৩৭
একটি সমিতি তাদের সকল সদস্যের অনুমতিতে এই নিয়ম করেছে যে, যদি কোনো সদস্য মাসিক চাঁদা প্রত্যেক মাসের ১০ তারিখের মধ্যে আদায় না করে তাহলে ২০ টাকা করে জরিমানা দিতে হবে। উক্ত ২০ টাকা মূল টাকার সাথে একত্র করা হবে না; বরং তা সমিতির বিভিন্ন কাজে ব্যয় করা হবে। যেমন মিটিং এর খরচ হিসাবে, সদস্যদের চা-পানিতে বা সদস্যদের সাথে যোগাযোগের জন্য খরচ করা হবে। জানার বিষয় হল, এ ধরনের নিয়ম সঠিক কি না? এবং এ ধরনের নিয়ম দ্বারা জরিমানা আদায় করা জায়েয হবে কি না?
প্রশ্নোক্ত জরিমানার ব্যাপারে সকল সদস্যের সম্মতি থাকলেও তা নেওয়া এবং সমিতির কাজে ব্যয় করা জায়েয হবে না। সুতরাং যথাসময়ে কিস্তি আদায়ের জন্য প্রশ্নোক্ত নিয়ম করা যাবে না।
উল্লেখ্য, সদস্যদের যথাসময়ে জমা নিশ্চিত করার জন্য এ নীতিমালা বানানো যেতে পারে যে, জমার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেলে অগ্রীম একত্রে দুই/তিন মাসের জমা দিতে বাধ্য থাকবে।
Sharable Link-আলবাহরুর রায়েক ৫/৪১, ফাতহুল কাদীর ৫/১১৩, রদ্দুল মুহতার ৪/৬১
M.B.B.S ৬ বছরের কোর্স। ৫ বছর পড়াশোনার পর শেষ বছর হল ইন্টার্নিশীপ (শিক্ষানবিস)। তখন মাসিক বেতন ৬,৫০০ টাকা। ইন্টার্নী অবস্থায় একজনকে মেডিসিন সার্জারি, গাইনী সব জায়গায় ডিউটি করতে হয়। ডিউটি শিডিওল, সকাল ৮ টা হতে দুপুর ২ টা পর্যন্ত, দুপুর ২ টা হতে রাত ৮ টা ও রাত ৮ টা হতে সকাল ৮ টা পর্যন্ত। সকাল ৮ টা হতে দুপুর ২টা পর্যন্ত সবার থাকা বাধ্যতামূলক। বাকি বিকাল এবং রাত ভাগ করে দেওয়া হয় যার যখন পড়ে। এই সময়টাতে একজন নবীন ডাক্তারকে মূলত হাতে কলমে শিখানো হয় যাতে সবকিছু সম্পর্কে তার মোটামুটি একটা ধারণা থাকে এবং ইমারজেন্সি যে কোনো চিকিৎসা দিতে পারে। পরবর্তীতে জটিল রোগীদেরকে বিশেষজ্ঞরা চিকিৎসা দিবে এবং একজন M.B.B.S ডাক্তার যাতে এতটুকু বুঝতে পারে এটা কী জাতীয় সমস্যা এবং সেই জায়গায় Reffered করতে পারে। এই সময় আমাদেরকে অস্থায়ী একটি Registration নাম্বার দেয়া হয় পরবর্তীতে Internee শেষে Permanant Registration নাম্বার দেয়া হয় Practice করার জন্য।
এখন আমার প্রশ্ন হল :
আমার যে Ward এ কাজ সেখানে কাজ শেষ হওয়ার পর দুপুর ২ টা বাজার পূর্বেই চলে আসতে পারব কি না?
Ward এর যাবতীয় কাজ শেষ হয়ে গেলেও ছুটির নির্ধারিত সময়ের আগে চাকুরীস্থল ত্যাগ করা জায়েয হবে না। কারণ, কাজ না থাকলেও ওয়ার্ডে পুরো সময় উপস্থিত থাকাটাও চাকুরির একটি অংশ। এছাড়া রোগীদের নির্ধারিত ব্যবস্থাপত্র দেওয়ার পরও হঠাৎ কারো অবস্থা খারাপ হয়ে যেতে পারে। মোটকথা, নির্ধারিত কাজ শেষ করা যেমন চাকুরীর অংশ, তদ্রূপ পুরো সময় উপস্থিত থাকাটাও চাকুরীর একটি অংশ ও দায়িত্ব।
Sharable Link-আলবাহরুর রায়েক ৮/২৯, রদ্দুল মুহতার ৬/৬৯
ইন্টার্নি অবস্থায় বাইরে ক্লিনিকে কাজ করতে পারব কি না? (যখন ক্লিনিকে কাজ করব তখন হাসপাতালে আমার যে ডিউটি সেটা অন্য একজন ইন্টার্নিকে দিয়ে আসলাম) সরকার Registratin Number শুধুমাত্র হাসপাতালে কাজ করার জন্য দেয়।
ইন্টার্নি অবস্থায় সরকার কর্তৃক অন্যত্র কাজ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকে। ইন্টার্নি মঞ্জুরী দেয়ার সময়ই পূর্ণ ছয় মাস অন্যত্র চাকুরী না করার অঙ্গীকার নেওয়া হয়। সরকার এ বাবদ তাকে ভাতাও প্রদান করে থাকে। তাই ইন্টার্নি অবস্থায় নিজের দায়িত্ব অন্যকে দিয়ে করিয়ে নিলেও তার জন্য অন্যত্র চাকুরী করা জায়েয হবে না। কারণ, একে তো নিজের দায়িত্ব অন্যকে দিয়ে করিয়ে নেওয়াও বৈধ নয়। দ্বিতীয়ত এক্ষেত্রে ইন্টার্নিকারী থেকে কাজ নেওয়ার চেয়ে সরকারের মুখ্য উদ্দেশ্য থাকে তাকে কাজ শেখানো, প্রশিক্ষণ দেওয়া। অন্যত্র চাকুরী করলে এটা ব্যাহত হবে। এছাড়া এটি সরকারের সাথে কৃত চুক্তিরও লঙ্ঘন। তাই ইন্টার্নি অবস্থায় অন্যত্র চাকুরি করা জায়েয হবে না।
Sharable Link-আলবাহরুর রায়েক ৮/২৯, রদ্দুল মুহতার ৬/৭০
গাইনী ইন্টার্নী অবস্থায় একজন পুরুষ ডাক্তারকে ডেলিভারি করানো, সিজার করানো সবকিছুই করতে হচ্ছে। এখন একজন পুরুষ ডাক্তারের জন্য এখানে ডিউটি করা কি নাজায়েয? যেহেতু এখানে সাড়ে তিন মাস ডিউটি করা বাধ্যতামূলক তো এক্ষেত্রে করণীয় কী?
একজন মেডিক্যাল ছাত্রের জন্য বিভাগ চয়ন করার সময়ই গাইনী বিভাগ এড়িয়ে যাওয়া কর্তব্য। এটি যেহেতু মেয়েলি বিষয় তাই এ বিভাগের চিকিৎসকও মহিলাদেরই হওয়া উচিত। হ্যাঁ, এরপরও যদি কোনো পুরুষ এ বিভাগের চিকিৎসক হতে চায় তবে পুরুষ ডাক্তারের জন্য নারীর চিকিৎসার যে সকল নীতিমালা রয়েছে এসকল নীতিমালা ইন্টার্নিকারীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ ক) যথাসম্ভব পর্দা রক্ষা করে চলতে হবে। শুধু চিকিৎসার প্রয়োজনে যতটুকু দেখা বা স্পর্শ করা লাগে শুধু ততটুকুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে।
খ) মহিলা রোগীর সাথে নির্জনে এক কক্ষে অবস্থান করবে না।
Sharable Link
সিজার বা ডেলিভারি করানোর পর যে ঔষধ থাকে সেখান থেকে দু’একটি ঔষধ বা জিনিস রেখে দেওয়া হয় বাকি ঔষধ ফেরত দেয়া হয়। এত রোগী সরকারী হাসপাতালে আসে যে, তা অনুমতি ছাড়াই নেওয়া হয়। নেয়ার উদ্দেশ্য হল, সরকারী হাসপাতালে অনেক সময় অনেক গরীব রোগী অথবা ইমার্জেন্সি রোগী ভর্তি হয়। যাদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হয়। তা না হলে রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে। তখন আমাদের সংরক্ষিত সেই ঔষধ দ্বারা চিকিৎসা করা হয়। এভাবে একজনের ঔষধ দ্বারা অন্য রোগীকে চিকিৎসা দেয়া কি ঠিক হচ্ছে? না হলে বিকল্প কী ব্যবস্থা আছে?
রোগীদের বিনা অনুমতিতে এভাবে ঔষধ রেখে দেওয়া জায়েয হবে না। এই ঔষধগুলো যদিও ভালো ক্ষেত্রেই ব্যবহার হচ্ছে, কিন্তু মালিকের অনুমতি ছাড়া তা নেওয়া বৈধ হবে না। এটি অন্যের সম্পদ চুরি করে সেবা খাতে ব্যয় করার অন্তর্ভুক্ত।
অবশ্য, রোগীরা যদি স্বতস্ফূর্তভাবে কোনো ঔষধ রেখে দেয় তবে তা নেওয়া জায়েয হবে। তাছাড়া এ উদ্দেশ্যে সরকারী-বেসরকারী সেবা ফান্ডের ব্যবস্থা কর যেতে পারে।
Sharable Link-সুনান বায়হাকী ৬/৯৭, আদ্দুররুল মুখতার ৪/৮২
আমি গত রমযানে রোযা রেখে ইচ্ছাকৃত রোযা ভেঙ্গে ফেলি। তাই আমার উপর একটি রোযার কাফফারা ওয়াজিব হয়েছে। শুনেছি এ জন্য আমাকে ৬০ টি রোযা রাখতে হবে। জানতে চাই, চন্দ্রমাস হিসাবে রাখলেও কি ৬০দিন পূর্ণ করতে হবে?
চন্দ্র মাসের প্রথম তারিখ থেকে কাফফারার রোযা শুরু করলে পরপর দুই মাস রোযা রাখলেই কাফফারা আদায় হয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে ৬০ দিন পূর্ণ করা জরুরি নয়। দুই মাসে যত দিনই হোক তাতেই কাফফারা আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু যদি চন্দ্র মাসের পহেলা তারিখ থেকে কাফফারার রোযা শুরু না করা হয় তাহলে ধারাবাহিক ষাটটি রোযা রাখতে হবে।
Sharable Link-সহীহ মুসলিম ১/২৫৯; ফতহুল কাদীর ৪/২৩৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৬১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/২৮৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১৫; রদ্দুল মুহতার ৩/৪৭৬
গোসল ফরয হয়েছে এমন ব্যক্তি কুলি না করেই পানি পান করেছে। এ ব্যক্তিকে গোসলের সময় কি পুনরায় কুলি করতে হবে? কুলি না করে গোসল করলে গোসল হবে কি না?
ফরয গোসলে মুখের ভিতর সর্বত্র পানি পৌঁছানো জরুরি। সাধারণত পানি পান করা দ্বারা মুখের ভিতরে সর্বত্র পানি পৌছে না। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রেও স্বাভাবিক নিয়মে গোসলের সময় পুনরায় কুলি করা জরুরি হবে। অবশ্য পানি পান করার সময় যদি পূর্ণ মুখে পানি পৌঁছেছে বলে নিশ্চিত হয় তাহলে পরবর্তীতে গোসলের জন্য পুনরায় কুলি করা জরুরি হবে না। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও আবার কুলি করে নেওয়া ভালো।
Sharable Link-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩; রদ্দুল মুহতার ১/১
যদি নামাযে অযু নষ্ট হয়ে যায় আর নামায না ছেড়ে ইস্তেগফার পড়তে থাকে ও মুসল্লীদের সাথে উঠা-বসা করতে থাকে তাহলে সে কাফির হয়ে যায়। কথাটা কতটুকু সত্য?
না, এতে তার ঈমান নষ্ট হবে না। কিন্তু এক্ষেত্রে মুসল্লীদের সাথে উঠা-বসা না করে সম্ভব হলে হয়ত বের হয়ে যাবে এবং অযু করে পুনরায় নতুন করে ইক্তিদা করবে। আর বের হওয়া সম্ভব না হলে স্বস্থানে বসে পড়বে। এরপর নামায শেষে অযু করে পুনরায় নামায পড়ে নিবে।
Sharable Link-আলমুহীতুল বুরহানী ২/২৯০, ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৬৯৩
জনৈক ব্যক্তির কান থেকে পুঁজ বের হয়। সে যদি নামাযের পূর্বে অযুর পর আবার তুলা দিয়ে কান পরিষ্কার করে তাহলে কি তার অযু ভেঙ্গে যাবে?
যদি এ পরিমাণ পানি ও পুঁজ বের করা হয়, যা গড়িয়ে পড়ার মত তাহলে এর দ্বারা অযু নষ্ট হয়ে যাবে। আর যদি গড়িয়ে পড়া পরিমাণ না হয় তবে অযু নষ্ট হবে না।
Sharable Link-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১০৬, শরহুল মুনিয়া ৩৪৯, আদ্দুররুল মুখতার ১/১৩৫
নামাযে সন্দেহ হয়েছে যে, অযু ভেঙ্গে গিয়েছে। তারপরও সন্দেহ নিয়ে নামায পড়ে ফেলে। নামাযের পর নিশ্চিত হল যে, আসলেই অযু ভেঙ্গে গিয়েছিল। তাহলে কি নামায পুনরায় পড়তে হবে?
হাঁ, এক্ষেত্রে ঐ নামায পুনরায় পড়ে নিতে হবে।
Sharable Link-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩১, ফাতাওয়া খানিয়া ১/১০১
অনেকের মুখেই শুনি, কাক নাকি দুঃসংবাদ নিয়ে আসে অর্থাৎ মৃত্যুর খবর। এটা নাকি বাস্তবে প্রমাণিত। আর পেঁচা যেখানে ডাকে সেখানে নাকি বিপদ হয় অর্থাৎ পেঁচার ডাকই খারাপ। এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে, এই কথাগুলো সত্য কি না এবং এই সমস্ত কথা বা এ জাতীয় অনেক কুসংস্কার যা আমাদের সমাজে প্রচলিত রয়েছে-এগুলো বিশ্বাস করলে ঈমান থাকবে কি না বা ঈমানের কোনো ক্ষতি হবে কি না? মেহেরবানী করে তা দলীল প্রমাণসহ জানাবেন।
আপনার শোনা কথাটি ঠিক নয়। কাক, পেঁচা এগুলোর সাথে ভালো-মন্দের কোনো সম্পর্ক নেই। এগুলোকে অশুভ মনে করা এবং এদের উপস্থিতিকে অনিষ্টকারী ভাবা জাহেলী যুগের ভ্রান্ত ধারণা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ধারণাকে খুব কঠিনভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং সুস্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন যে, এগুলোতে কোনো অনিষ্ট নেই। এগুলোকে অশুভ ও অনিষ্টকারী মনে করাকে তিনি শিরক বলেও অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন-‘কুলক্ষণ গ্রহণ শিরকের অন্তর্ভুক্ত।’ প্রকৃত পক্ষে অশুভ হল মানুষের মন্দ আমল ও গুনাহের কাজ।
Sharable Link-সহীহ বুখারী ২/৮২৬, ফয়যুল বারী ৪/৩৬৭, ফাতহুল বারী ১০/২২৩
নামাযের মধ্যে সিজদায় দুই পা উঠে গেলে কি নামায ফাসেদ হয়ে যায়?
সিজদার সঠিক পদ্ধতি হল, উভয় পায়ের আঙ্গুলি কিবলামুখী করে জমিনে লাগিয়ে রাখা। পুরো সিজদার মধ্যে অন্তত এক তাসবীহ পরিমাণ সময় কোনো পায়ের কোনো অংশ জমিনে লেগে থাকলে সিজদা হয়ে যায়। সুতরাং এরপর দুই পা উঠে গেলে নামায ফাসেদ হবে না। তবে অধিকাংশ সিজদায় এভাবে দুই পা উঠে গেলে মাকরূহ তাহরীমী হবে। আর যদি পুরো সিজদার মধ্যে এক তাসবীহ পরিমাণও উভয় পায়ের কোনো অংশ জমিনে না লেগে থাকে তবে নামায ফাসেদ হয়ে যাবে।
Sharable Link-শরহুল মুনিয়া ২৮৪, রদ্দুল মুহতার ১/৪৪৭, তাকরীরাতে রাফেয়ী ১/৫৬
কালিমা তাইয়্যিবা পড়ার পর কি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে হয়? কোনো কোনো আলেমকে পড়তে শুনেছি। আসলে পড়তে হয় কি না জানাবেন।
কালেমা তাইয়িবা তো ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ এতটুকুই। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কালেমার অংশ নয়। তাই রাসূলের নামের পর দরূদ শরীফ পড়তে হয় এ নিয়ম অনুযায়ী কালেমার পরেও তা পড়া যাবে। তবে কালেমার সাথে একেবারে মিলিয়ে নয়; বরং কালেমার পর ওয়াকফ করে এরপর পড়বে। যেন দরূদ শরীফকে কালেমার অংশ মনে না হয়।
Sharable Link-ফাতাওয়া উসমানী ১/৫৮
অধিকাংশ সময় আমাদের মসজিদে অনেক লোককে দেখতে পাই যে, নামায অবস্থায় আস্তিন গুটিয়ে রাখে। এক দিন মহল্লার ইমাম সাহেব তাদেরকে বললেন যে, এরকম করাটা মাকরূহ। এখন আমি জানতে চাই, এ কথা সঠিক কি না? যদি সঠিক হয় তাহলে এটা মাকরূহ তাহরীমী না তানযিহী? জানিয়ে বাধিত করবেন।
জামার হাতা গুটিয়ে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী। এটা হাদীসের নিষিদ্ধ سدل ثوب (স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী কাপড় না রাখা) এর অন্তর্ভুক্ত।
Sharable Link-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১০৬, শরহুল মুনিয়া ৩৪৮, আদ্দুররুল মুখতার ১/৬৩৯, ফাতহুল কাদীর ১/৩৫৯, খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৫৮
আমি বিশেষ বিপদে পড়ে তা হতে মুক্তির জন্য আজীবন তাহাজ্জুদের নামায পড়ার মান্নত করি। আল্লাহর রহমতে আমি বিপদমুক্ত হয়েছি। কিন্তু সাংসারিক কর্মকান্ড সেরে ঘুমোতে ঘুমোতে রাত প্রায় ১২ টা বেজে যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শেষ রাতে উঠে নামায পড়তে পারি না। তাই হুজুরের কাছে আমার প্রশ্ন, ইশার পর অথবা রাতে ঘুমানোর আগে এ নামায পড়তে পারব কি না? পড়লে তা বিতরের আগে না পরে কয় রাকাত পড়তে হবে? নামাযের আগে বা পরে কোনো দুআ পড়তে হবে কি না?
তাহাজ্জুদ রাতের শেষ অংশে আদায় করা উত্তম। তবে তাহাজ্জুদের ওয়াক্ত যেহেতু ইশার নামাযের পর থেকেই শুরু হয়ে যায় তাই ইশার পর বা ঘুমানোর আগে মান্নতকৃত তাহাজ্জুদ পড়ে নিতে পারবেন। ইশার পর অন্তত দুই রাকাত নফল নামায তাহাজ্জুদের নিয়তে পড়লে কৃত মান্নতের উপর আমল হয়ে যাবে। এটি বিতরের আগে বা পরে উভয় সময় পড়া যাবে। তবে বিতরকে সর্ব শেষে আদায় করা উত্তম। আর এ নামাযের আগে বা পরে নির্ধারিত কোনো দুআ নেই।
Sharable Link-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৬৫, রদ্দুল মুহতার ৩/৭৪০
কোনো ব্যক্তির জিম্মায় কাযা নামায নেই। কিন্তু সে পূর্বে যে নামায পড়েছে তাতে কখনো কখনো বিভিন্ন ভুলভ্রান্তি (যেমন-অশুদ্ধ তিলাওয়াত, ঠিকমত রোকন আদায় না করা ইত্যাদি) হয়েছে। এখন কি তাকে সেসব নামাযের কাযা আদায় করতে হবে? যদি করতে হয় তাহলে কীভাবে করবে?
আদায়কৃত নামাযের কাযা তখনই পড়তে হয় যখন নামায একেবারে নষ্ট হয়ে গিয়ে থাকে কিংবা কোনো ওয়াজিব ছুটে যাওয়ার কারণে তা অসম্পূর্ণ হয়ে যায়। প্রশ্নে বর্ণিত বিগত নামাযের কাযা পড়ার যে কারণ উল্লেখ করা হয়েছে তা স্পষ্ট নয়। যদি এমন অশুদ্ধ তিলাওয়াত করে থাকেন যার কারণে নামায ফাসেদ হয়ে যায় তাহলে তার কাযা আদায় করতে হবে। অন্যথায় শুধু সন্দেহের উপর ভিত্তি করে কাযা পড়া যাবে না। আর প্রশ্নে ‘ঠিক মত রোকন আদায় না করা’ বলে কী বুঝিয়েছেন তাও স্পষ্ট নয়। স্পষ্ট করে বললে উত্তর দেওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ।
Sharable Link