সৈয়দ আলী - নাটোর

৫৬৯৮. Question

একদিন বাসায় ওযু করছিলাম। ওযুর মাঝখানে হঠাৎ ট্যাংকির পানি শেষ হয়ে যায়। আমি তখন মসজিদে চলে যাই। কিন্তু মসজিদে যেতে যেতে ওযুতে ধোয়া অঙ্গগুলো একেবারে শুকিয়ে যায়। তখন আমি দ্বিধায় পড়ে যাই যে, বাকি অঙ্গগুলো ধুয়ে পূর্বের ওযুই পূর্ণ করে নেব, নাকি নতুন করে আবার পূর্ণাঙ্গ ওযু করব। পরে মসজিদে আসা জনৈক মুসল্লিকে জিজ্ঞেস করে আমি শুধু আগের ওযুতে বাকি থাকা অঙ্গগুলো ধুয়েই দ্রুত ওযু শেষ করে ফেলি। তাই এখন মুহতারামের নিকট জানার বিষয় হল, পূর্বে ধোয়া অঙ্গগুলো শুকিয়ে যাওয়ার পর শুধু অবশিষ্ট অঙ্গগুলো ধুয়ে ওযু শেষ করা সহীহ হয়েছে কি না? জানালে উপকৃত হব।

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে পূর্বে ধোয়া অঙ্গগুলো শুকিয়ে গেলেও আপনার ওযু সহীহ হয়েছে। কেননা ওযুতে এক অঙ্গ শুকিয়ে যাওয়ার পূর্বে অন্য অঙ্গ ধোয়া সুন্নত। কোনো কারণে তা ছুটে গেলেও ওযু শুদ্ধ হয়ে যায়।

-কিতাবুল আছল ১/২৪; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ১/৩২৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/২২১; হালবাতুল মুজাল্লী ১/৭৬; দুরারুল হুক্কাম ১/১১

Sharable Link

হালিমা সাদিয়া - গুলশান, ঢাকা

৫৬৯৯. Question

আমার ছেলের বয়স মাত্র পাঁচ মাস। দুধ খাওয়ানোর পর কখনো কখনো সে আমার কোলে বমি করে। তখন আমি কাপড় থেকে বমি টিস্যু দিয়ে মুছে অথবা হাত দ্বারা ফেলে দিয়ে ঐ কাপড়েই নামায পড়ি। আমরা জানি, বড়দের বমি নাপাক। প্রশ্ন হল, দুধের শিশুর বমির বিধান কী? তা পাক, নাকি নাপাক?

Answer

প্রশ্নের বর্ণনায় মনে হচ্ছে, আপনার ছেলের বমি সাধারণত মুখ ভরে হয় না। যদি তা-ই হয় তাহলে তা নাপাক হবে না। কিন্তু যদি মুখ ভরে হয় তাহলে নাপাক গণ্য হবে। কেননা শিশুর বমিও মুখ ভরে হলে নাপাক। আর মুখ ভরে বমি এক দিরহামের (অর্থাৎ হাতের তালুর গভীরতা সমপরিমাণের) বেশি পরিমাণ কাপড়ে বা শরীরে লাগলে কাপড় নাপাক হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে এই স্থানটি ধৌত করে নামায আদায় করতে হবে। ধোয়া ছাড়া শুধু মুছে ফেলা যথেষ্ট নয়। এক দিরহামের কম হলে ধোয়া ছাড়া নামায পড়া যাবে। হাসান বসরী রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

الْقَيْءُ وَالْخَمْرُ وَالدّمُ بِمَنْزِلَةٍ.

বমি, মদ ও রক্তের হুকুম একই পর্যায়ের।  (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ২০৩৯)

-আলমাবসূত, সারাখসী ১/৮১; আলইখতিয়ার ১/১১০; ইমদাদুল ফাত্তাহ, পৃ. ১৫৯; আদ্দুররুল মুখতার ১/১৩৭; রদ্দুল মুহতার ১/৩১৬

Sharable Link

ফারহান - উত্তরা, ঢাকা

৫৭০০. Question

লকডাউনে আমাদের এলাকায় এক লোক মারা যান। আমি তাঁর জানাযায় শরীক হই। নামাযের সময় আমি জুতা খুলে জুতার উপর দাঁড়াই। তখন আমার পাশের এক মুরব্বী বললেন, জুতার উপর দাঁড়িয়ে নামায পড়লে নামায হয় না। মাটির উপর দাঁড়িয়ে নামায পড়তে হয়। জানার বিষয় হল, ঐ মুরব্বীর কথা কি ঠিক?

Answer

জুতার উপরের অংশে নাপাকী না থাকলে জুতার উপর দাঁড়িয়ে নামায পড়তে সমস্যা নেই। কিন্তু জুতার উপরের অংশে নাপাকি থাকলে জুতা খুলে দাঁড়াতে হবে।

উল্লেখ্য, যদি জুতার উপর-নিচ পবিত্র থাকে এবং যে জায়গায় দাঁড়াবে সে স্থানও পবিত্র হয় তাহলে জুতা পরেও জানাযার নামায পড়া জায়েয।

-ফাতাওয়া খানিয়া ১/৩০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৭৬; আলমুহীতুল বুরহানী ২/২০; আলবাহরুর রায়েক ২/১৭৯; রদ্দুল মুহতার ১/৪০২

Sharable Link

নাবিলা তাবাসসুম - বাড্ডা, ঢাকা

৫৭০১. Question

আমি মাদরাসার ছাত্রী। সম্প্রতি করোনা পরিস্থিতিতে আমাদের মাদরাসার বিরতি চলছে। বিরতিতে বাসায় দ্বীনী কিতাবাদি মুতালাআ ও ইবাদত বন্দেগীতে সময় কাটে। কিন্তু অপবিত্রতার দিনগুলোতে নামায ও তিলাওয়াত থেকে বিরত থাকি। প্রশ্ন হল, এ অবস্থায় কি যিকির-আযকার ও তাসবীহাত আদায় করতে পারব?

Answer

হাঁ, হায়েয অবস্থায় যিকির-আযকার, তাসবীহাত ও দুআ-দরূদ পড়া জায়েয। কিন্তু কুরআন কারীম পড়া যাবে না। মামার রাহ. বলেন-

سَأَلْتُ الزّهْرِيّ، عَنِ الْحَائِضِ وَالْجُنُبِ أَيَذْكُرَانِ اللهَ؟ قَالَ: نَعَمْ، قُلْتُ: أَفَيَقْرَآنِ الْقُرْآنَ؟ قَالَ: لَا.

আমি যুহরীকে জিজ্ঞাসা করলাম, ঋতুমতী নারী ও গোসল ফরয হয়েছে এমন ব্যক্তি কি আল্লাহর যিকির করতে পারবে? তিনি বললেন, হাঁ, পারবে।

আমি বললাম, তারা কি কুরআন পড়তে পারবে?

তিনি বললেন, না পারবে না। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ১৩০২)

ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন-

الْحَائِضُ وَالْجُنُبُ يَذْكُرَانِ اللهَ وَيُسَمِّيَانِ.

ঋতুমতী নারী ও গোসল ফরয হয়েছে এমন ব্যক্তি আল্লাহর যিকির করতে পারবে এবং বিসমিল্লাহ বলতে পারবে। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ১৩০৫)

হযরত ইবনে জুরাইজ রাহ. বলেন-

قُلْتُ لِعَطَاءٍ: الْحَائِضُ وَالْجُنُبُ يَذْكُرَانِ اللهَ؟ قَالَ: نَعَمْ.

আমি আতা রাহ.-কে জিজ্ঞাসা করলাম, ঋতুমতী নারী ও গোসল ফরয হয়েছে এমন ব্যক্তি কি আল্লাহর যিকির করতে পারবে? তিনি বললেন, হাঁ, পারবে। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ১৩০৪)

-ফাতহুল কাদীর ১/১৪৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৮; আলজাওহারাতুন নাইয়িরা ১/৩৯; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী, পৃ. ৭৭; রদ্দুল মুহতার ১/২৯৩

Sharable Link

জাওয়াদ আহমাদ - মুরাদনগর, কুমিল্লা

৫৭০২. Question

আমি একদিন বাড়িতে একাকী যোহরের নামায পড়ছিলাম। চতুর্থ রাকাত শেষে বৈঠক না করে ভুলে দাঁড়িয়ে যাই। তারপর রুকুতে গিয়ে স্মরণ হয় যে, আমি চতুর্থ রাকাতে শেষ বৈঠক করিনি। তখন মাসআলা না জানার কারণে নামায ছেড়ে দিয়ে নতুনভাবে আবার নামায পড়ি।

মুহতারামের নিকট জানতে চাই, উক্ত ক্ষেত্রে আমার জন্য করণীয় কী ছিল? নামায ছেড়ে দেওয়াটা কি আমার উচিত হয়েছে?

Answer

প্রশ্নোক্ত  ক্ষেত্রে যেহেতু পঞ্চম রাকাতের সিজদা করার আগেই আপনার ভুলের কথা স্মরণ হয়েছে, তাই স্মরণ হওয়া মাত্র (পঞ্চম রাকাতের সিজদা করার আগেই) আপনার করণীয় ছিল বসে যাওয়া। অতঃপর তাশাহহুদ পড়ে সাহু সিজদা করা। এরপর যথানিয়মে নামায শেষ করা। এতে আপনার ওই নামায সহীহ হয়ে যেত। কিন্তু তা না করে নামায ছেড়ে দেওয়া ঠিক হয়নি।

এমনকি ভুলে পঞ্চম রাকাতের সিজদা করে ফেললেও নামায থেকে বের হয়ে যাওয়া ঠিক নয়। সেক্ষেত্রে আরেক রাকাত পড়ে নিয়ে নিয়মমত সালাম ফিরাবে। তখন এই নামায নফল হিসেবে গণ্য হয়ে যাবে। আর যোহরের ফরয পুনরায় সে আদায় করে নেবে। কিন্তু নামায ছেড়ে দিলে ইচ্ছাকৃত নামায বাতিল করা হয়। আর ইচ্ছাকৃত কোনো আমল বাতিল করতে নিষেধ করা হয়েছে। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-

وَلَا تُبْطِلُوْۤا اَعْمَالَكُمْ.

আর তোমরা তোমাদের আমলসমূহকে বাতিল করো না। [সূরা মুহাম্মাদ (৪৭) : ৩৩]

-আলহাবিল কুদসী ১/১৯২; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪২৭তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৪৮০; আলবাহরুর রায়েক ২/১০২রদ্দুল মুহতার ২/৮৫

Sharable Link

আবদুল্লাহ - মতলব, চাঁদপুর

৫৭০৩. Question

একদিন এশার নামায পড়ার সময় তৃতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহার পর ভুলে অন্য একটি সূরাও পড়ে ফেলি। এরপর আমি আর সাহু সিজদা করিনি। আমার প্রশ্ন হল, এ অবস্থায় কি আমার নামায সহীহ হয়েছে?

Answer

হাঁ, আপনার উক্ত নামায সহীহ হয়েছে। কেননা ফরয নামাযের তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য কোনো সূরা পড়লে সাহু-সিজদা ওয়াজিব হয় না। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি সাহু-সিজদা না করে ঠিকই করেছেন।

প্রকাশ থাকে যে, ফরযের তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা না পড়া সুন্নত। তাই ফরযের শেষ দুই রাকাতে ইচ্ছাকৃত সূরা ফাতিহার সাথে সূরা মিলাবে না।

-ফাতাওয়া সিরাজিয়া, পৃ. ৮৮; আলবাহরুর রায়েক ১/৩২৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২৬; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৩৩১; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৫৯; রদ্দুল মুহতার ১/৪৫৯

Sharable Link

নাসির উদ্দিন ভুঁইয়া - গৌরিপুর, মোমেনশাহী

৫৭০৪. Question

জনৈক ব্যক্তি ঈদুল ফিতরের জামাতে এক রাকাত মাসবূক হন এবং দ্বিতীয় রাকাতের শুরুতে এসে যুক্ত হন।  ইমাম সাহেব নামায শেষ করার পর ওই ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বাকি নামায পূর্ণ করেন এবং প্রথম রাকাতে সূরা ফাতিহার আগে যেভাবে অতিরিক্ত তিনটি তাকবীর বলতে হয় সেভাবে তাকবীর বলেন। মুফতী সাহেবের কাছে প্রশ্ন হল, তার এভাবে নামায পড়া কি সহীহ হয়েছে?

Answer

ওই মাসবূক ব্যক্তির নামায আদায় হয়ে গেছে। তবে ওই রাকাতের শুরুতেই তার তাকবীর বলা নিয়ম পরিপন্থী হয়েছে। এক্ষেত্রে সঠিক নিয়ম হল, ইমাম সালাম ফেরানোর পর মাসবূক প্রথমে সূরা ফাতিহা ও অন্য একটি সূরা পড়বে, তারপর ঈদের নামাযের অতিরিক্ত তিন তাকবীর বলে রুকুতে যাবে। অর্থাৎ মাসবূক এ রাকাতেও রুকুর আগে অতিরিক্ত তাকবীর বলবে।

-মুসান্নাফে ইবেন আবি শাইবা, বর্ণনা ৫৮৬৩; কিতাবুল আছল ১/৩২২; বাদায়েউস সানায়ে ১/৬২৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২১৫; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৪৯৪; আলবাহরুর রায়েক ২/১৬১; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৫৫০; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৭৪

Sharable Link

আফজাল ভুঁইয়া - নাটোর

৫৭০৫. Question

একদিন আমি যোহরের আগের চার রাকাত সুন্নত পড়ার সময় তৃতীয় রাকাতে ভুলে সূরা ফাতিহা পড়েই রুকুতে চলে যাই এবং স্মরণ হওয়ার পর শেষ বৈঠকে সাহু-সিজদা করি। আমার প্রশ্ন হল, আমার এই নামায কি আদায় হয়েছে? সুন্নতের শেষ দুই রাকাতে কি সূরা ফাতিহার সঙ্গে অন্য সূরা মিলানো ওয়াজিব? এক্ষেত্রে আমার সাহু সিজদা করা কি ঠিক হয়েছে?

Answer

হাঁ, উক্ত নামাযে আপনার সাহু সিজদা করা সহীহ হয়েছে। কেননা, চার রাকাতবিশিষ্ট সুন্নত ও নফল নামাযের সব রাকাতেই সূরা ফাতিহার সঙ্গে অন্য সূরা মিলানো ওয়াজিব। তাই তৃতীয় রাকাতে সূরা না মিলানোর কারণে আপনার উপর সাহু সিজদা ওয়াজিব ছিল।

-আলবাহরুর রায়েক ১/২৯৬; মাজমাউল আনহুর ১/১৯৭; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৯১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৭১; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী, পৃ. ১৩৫; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৫৯

Sharable Link

জামিলা খাতুন - ঢাকা

৫৭০৬. Question

আমি এক মহিলা মাদরাসার শিক্ষিকা। আমাদের মাদরাসায় আমিই হিফজের একমাত্র শিক্ষিকা। আর কেউ না থাকায় হায়েযের দিনগুলোতেও আমাকে মাদরাসায় ছাত্রীদের পড়া শুনতে হয়। সিজদার আয়াত আসলে ঐ পৃষ্ঠা বাদ দিয়ে অন্য পৃষ্ঠা শুনি। কখনো আগে থেকে খেয়াল না করলে সিজদার আয়াতও শুনে ফেলি। এভাবে অনেকদিন কেটে যায়। সেদিন এক শিক্ষিকার সাথে এ বিষয়ে কথা হয়। সে বলল, হায়েয অবস্থায় সিজদার আয়াত শুনলে কিছুই হয় না। আরে, এ অবস্থায় তো নামাযই মাফ। আমার কথা বিশ^াস না হলে বড় কোনো আলেমকে জিজ্ঞাসা কর।

তাই মুহতারামের নিকট জানতে চাই, ঐ শিক্ষিকার কথা কি ঠিক? এ অবস্থায় আমার জন্য করণীয় কী?

Answer

উক্ত শিক্ষিকা ঠিক বলেছেন। ঋতুমতি নারী সিজদার আয়াতের তিলাওয়াত শুনলে তার উপর সিজদা ওয়াজিব হয় না।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ৪৩৪৮; কিতাবুল আছল ১/২৭২; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ১/৩৬৩; আযযাখিরাতুল বুরহানিয়া ২/২৯৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩২; জামিউর রুমুয ১/২৪১; আদ্দুররুল মুখতার ২/১০৬

Sharable Link

রিজওয়ান আশরাফ - লস্করহাট, ফেনী

৫৭০৭. Question

আমার দাদীজান বড় আমলদার মানুষ। তিনি দৈনিক ফজরের নামায আদায় করে দীর্ঘ সময় যিকির ও তাসবীহাত পড়ে ইশরাকের নামায পড়েন। গত ঈদের দিন সকালে যথারীতি ইশরাক পড়ার জন্য দাঁড়ালে আমার আব্বু বলেন, ঈদের দিন ঈদের নামাযের আগে নফল নামায পড়া মাকরূহ। দাদীজান তখন বলেন, এই হুকুম তো পুরুষদের জন্য।

মুহতারামের নিকট জানতে চাই, মহিলাদের জন্য ঈদের দিন ঈদের নামাযের আগে নফল পড়ার হুকুম কী?

Answer

ঈদের দিন ঈদের নামাযের আগে নারী-পুরুষ সবার জন্যই নফল নামায পড়া মাকরূহ। মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন রাহ. বলেন-

أَنّ ابْنَ مَسْعُودٍ، وَحُذَيْفَةَ، كَانَا يَنْهَيَانِ النّاسَ - أَوْ قَالَ -: يُجْلِسَانِ مَنْ رَأَيَاهُ يُصَلِّي قَبْلَ خُرُوجِ الْإِمَامِ يَوْمَ الْعِيدِ.

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. ও হুযায়ফা রা. ঈদের দিন ইমাম ঈদগাহে আসার আগে সকল মানুষকে নামায পড়তে নিষেধ করতেন। কিংবা কাউকে নামায পড়তে দেখলে বসিয়ে দিতেন। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ৫৬০৬)

-কিতাবুল আছল ১/১৩৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২১৪; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৪৯৭; ফাতাওয়া সিরাজিয়া, পৃ. ১১০; আননাহরুল ফায়েক ১/৩৬৮; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী, পৃ. ২৯০

Sharable Link

হারিস আহমাদ - নরসিংদী

৫৭০৮. Question

হালাল-হারাম মির্শ্রিত (কমবেশি যাইহোক) এমন মাল যদি নেসাব পরিামাণ হয় এবং যাকাতবর্ষ অতিক্রম করে তবে এমন মালের যাকাতের হুকুম কী? আর যাদের আয় সম্পূর্ণ হারাম এমন আয় যদি নেসাব পরিমাণ হয় তার যাকাতের হুকুম কী?

 

Answer

যাকাত হালাল মালের উপর আসে। হারাম মালের যাকাত হয় না। হারাম মালের ক্ষেত্রে শরীয়তের বিধান হল, যদি উক্ত মালের প্রকৃত মালিক জানা থাকে তাহলে তাকে তা ফেরত দেয়া জরুরি। আর মালিক জানা না থাকলে হারাম মাল পুরোটাই গরীব-মিসকীনকে সওয়াবের নিয়ত ব্যতীত সদকা করে দিতে হবে। তাই হালাল হারাম মিশ্রিত মালের ক্ষেত্রে কর্তব্য হল, হারাম মালের পরিমাণ নির্ণয় করে তা মালিক জানা থাকলে মালিককে ফেরত দেয়া। আর মালিক জানা না থাকলে তা গরীবকে সদকা করে দেয়া। এবং হালাল অংশের ২.৫% যাকাত দেয়া। আর যদি হালাল হারাম মিশ্রিত মালের মধ্যে হারামের পরিমাণ নির্ণয় করা সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে যাকাতযোগ্য সমুদয় সম্পদের বর্ষ শেষে যাকাত দিয়ে দেবে আর প্রবল ধারণা করে হারাম নির্ণয় করার চেষ্টা করবে এবং সে অনুযায়ী হারাম মাল সদকা করে দেবে।

-ফাতহুল কাদীর ৩/৪৬৩; মিনহাতুল খালিক ২/২২১; রদ্দুল মুহতার ২/২৯১

Sharable Link

উবায়েদ - জামালপুর

৫৭০৯. Question

আমি বিভিন্ন দ্বীনী  মাদরাসার জন্য সাধারণ দান, যাকাত-ফিতরা ইত্যাদির টাকা কালেকশন করে থাকি। দেশ ও দেশের বাহির থেকে অনেকেই আমার বিকাশ/নগদ একাউন্টে টাকা পাঠিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে বহু লোক আমার মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্টে যাকাত-ফিতরার টাকা পাঠান। আবার আমার নিজস্ব টাকাও জমা থাকে। সাধারণত বিকাশ থেকে টাকা ক্যাশ করতে চাইলে হাজারে ১৭.৫০ টাকা আর নগদে ১২.৫০ টাকা খরচ হয়। এখানে কয়েকটি বিষয় জানার রয়েছে :

১. অনেক মানুষ এমন আছেন, যারা বিকাশে টাকা পাঠাতে যে খরচ হয় তা দেন না। অনেকের কাছে এ খরচের টাকার কথা বলা যথেষ্ট মুশকিল বা অসম্ভব। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে এমনও মনে হয় যে, যদি তার কাছে সঠিক মাসআলা বলে ক্যাশআউটের টাকা চাওয়া হয় তাহলে সে পুনরায় মাদরাসায় দান তো করবেই না, আবার এমন কোনো কথাও বলে ফেলতে পারে, যা তার জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। এখন প্রশ্ন হল, এরকম লোক যদি বিকাশের মাধ্যমে আমার মোবাইলে ৫০০০ টাকা পাঠায় তাহলে এ টাকার ক্যাশআউট খরচ ৮৭.৫ টাকা কে দেবে?

২. কেউ কেউ আবর ক্যাশআউটের টাকা দিয়ে থাকেন। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন হচ্ছে যে, একজন উদাহরণস্বরূপ তার যাকাত ৫০০০ টাকা। সে আমার একাউন্টে খরচসহ ৫১০০ টাকা পাঠাল। এখানে খরচ হয় মূলত ৮৭.৫০ টকা। এক্ষেত্রে বাকি ১২.৫ টাকার কী হবে?

৩. কারো যাকাত ৫০০০ টাকা। সে আমার বিকাশ একাউন্টে ৫১০০ টাকা পাঠাল। দেখা গেল, ঐ মুহূর্তে আরেকজনের বিকাশের টাকা অন্যত্র পাঠানোর প্রয়োজন। সে আমার থেকে ৫০০০ টাকা সেন্ড মানি করালো। সেক্ষেত্রে আমার খরচ হল মাত্র পাঁচ টাকা। আমি দোকানে গিয়ে যদি ক্যাশআউট করতাম তাহলে আমার খরচ হতো, ৮৭.৫ টাকা। কিন্তু আমি ব্যক্তিগতভাবে সেন্ড মানি করার কারণে আমার খরচ হল পাঁচ টাকা বা সর্বোচ্চ দশ টাকা।  জানার বিষয় হল, এক্ষেত্রে বাকি ৯০-৯৫ টাকার মালিক কে? এ টাকার ক্ষেত্রে আমার করণীয় কী?

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, যে খরচসহ টাকা পাঠায় সে ধরেই নেয় যে আমার ক্যাশআউট করতে খরচ হবেই। কিন্তু এখানে আমি সেন্ড মানি বা নিজের প্রয়োজনে খরচ করার কারণে খরচ লাগে না। এক্ষেত্রে কি আমি মাদরাসা কর্তৃপক্ষকে ৫০০০ টাকা দিয়ে দিলেই হবে?

বি. দ্র. আমার লেনদেন এত বেশি হয় যে, যদি বলা হয় যে, যিনি কম দিয়েছেন তার কম টাকার রশিদ এবং যিনি বেশি দিয়েছেন তার বেশি টাকার রশিদ কাটা হবে তাহলে তা অসম্ভব।

Answer

১. যাকাতের টাকা তার হকদারের কাছে পৌঁছে দেওয়া যাকাতদাতার দায়িত্ব। এতে কোনো খরচের প্রয়োজন হলে তাকেই তা বহন করতে হবে। তবে নিকটে উপযুক্ত লোক থাকলে দূরবর্তী কাউকে যাকাত দেওয়া আবশ্যক নয়। তাই দূর থেকে কোনো দরিদ্র বা তার প্রতিনিধি যদি কোনো ব্যক্তির নিকট যাকাতের টাকা চেয়ে তা তার মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল এ্যকাউন্টে পাঠাতে বলে তাহলে সেক্ষেত্রে যাকাতদাতার জন্য ক্যাশআউট খরচ পাঠানো আবশ্যক নয়। তবে যাকাতগ্রহীতা বা তার প্রতিনিধি না বলা সত্ত্বেও যদি সে নিজ থেকে বিকাশ, নগদ ইত্যাদি মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে যাকাতের টাকা পাঠায় তাহলে ক্যাশআউট খরচসহ তা পাঠাতে হবে। এক্ষেত্রে কেউ যদি ক্যাশআউট খরচ না দেয় আর দরিদ্রব্যক্তি ক্যাশআউট করতে গিয়ে পরিমাণে কম পায় তাহলে কম অংশের যাকাত আদায় হবে না। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যদি যাকাত গ্রহীতার চাহিদাতেই যাকাতদাতাগণ টাকা প্রেরণ করে থাকেন তাহলে যাকাতদাতা খরচ না পাঠালে সে খরচ গ্রহীতা তথা মাদরাসা দেবে। আর খরচসহ পাঠালে খরচ বাদে বাকি টাকা গ্রহীতাকে দিয়ে দেবেন।

, ৩. যদি কেউ ক্যাশআউট খরচ বেশি পাঠায় অর্থাৎ ক্যাশআউট করার পর কিছু টাকা অতিরিক্ত থেকে যায় অথবা ক্যাশআউট খরচ পাঠানোর পর আপনি তা ক্যাশ না করে অন্য কোনো চার্জবিহীন কাজে ব্যবহার করেন বা সেন্ডমানি করেন তাহলে ক্যাশআউট বাবদ উদ্বৃত্ত সকল টাকা গ্রহীতাকে দিয়ে দেবেন; আপনি নিজে কিছুই গ্রহণ করতে পারবেন না। এ টাকা তিনি যে প্রতিষ্ঠানের জন্য পাঠিয়েছেন সেখানে পৌঁছে দিতে হবে। আমাদের দেশে দাতাগণ এমন চিন্তা করেই খরচ প্রেরণ করে থাকেন যে, যদি খরচ না হয় তাহলে পুরো টাকা গ্রহীতা (দরিদ্র ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান) পাবে। -বাদায়েউস সানায়ে ২/৩৯; মুগনিল মুহতাজ ৪/১৯২; ফাতাওয়াল লাজনাতিদ দাইমা ৯/৪৩২

Sharable Link

আবু সায়েম - মানিকগঞ্জ, ঢাকা

৫৭১০. Question

পজেশনে বিভিন্ন মার্কেটের দোকান-অফিস কেনাবেচা বৈধ কি না? যদি বৈধ না হয় তাহলে এমন দোকান-অফিসে ব্যবসা করে যে লাভ হয় সেটাও কি অবৈধ হবে?

উল্লেখ্য, বর্তমানে বিভিন্ন মার্কেটের দোকান-অফিস এভাবেই বেচাকেনা হয়।  আমার জানামতে পাকিস্তান আমল থেকেই এভাবে চলে আসছে। এর কোনো ব্যতিক্রম হয় না।

Answer

আমাদের দেশে দোকান, অফিস ইত্যাদির পজেশন বিক্রির যে প্রচলন রয়েছে, অর্থাৎ দোকান/মার্কেট মালিক প্রথমে কারো নিকট চড়া মূল্যে দোকানের পজেশন বিক্রি করে। অতঃপর পজেশন ক্রেতার কাছ থেকে উক্ত দোকান বা অফিসের আবার মাসে মাসে জমিদারির নামে ভাড়াও আদায় করা হয়, এটি শরীয়তসম্মত নয়; বরং পজেশন বিক্রির নামে একমুঠে যে অঙ্ক প্রথমে নেয়া হয় তা শরীয়তের দৃষ্টিতে এক প্রকারের রিশওয়াতের অন্তর্ভুক্ত, যা সম্পূর্ণ নাজায়েয। এটি না بيع (বেচাকেনা) না إجارة (ভাড়া চুক্তি)। বরং একটি জগাখিচুড়ি পদ্ধতি; যা শরীয়তের কোনো স্বীকৃত আক্দের (চুক্তির) আওতাতে পড়ে না। তাই এ পদ্ধতির লেনদেন থেকে বিরত থাকা কর্তব্য।

সঠিকভাবে লেনদেনটি করতে চাইলে হয়ত দোকান/অফিস সাফ কবলা দলীলমূলে বিক্রি করে দেবে এবং ক্রেতাকে তার সম্পূর্ণ মালিক বানিয়ে দেবে। এরপর বিক্রেতার উক্ত দোকান বা অফিসে কোনো ধরনের অধিকার থাকবে না এবং ক্রেতার কাছ থেকে উক্ত দোকান বা অফিসের ভাড়া বাবদ কোনো অর্থও গ্রহণ করতে পারবে না। আর সাফ কবলা দলীলমূলে বিক্রি না করতে চাইলে শুরু থেকেই কেবল ভাড়া পদ্ধতি গ্রহণ করবে। এক্ষেত্রে মালিক যদি ভাড়া গ্রহিতা থেকে একমুঠে বেশি অর্থ নিতে চায় তাহলে সময় ও ভাড়ার পরিমাণ নির্ধারণ করে এককালীন অগ্রিম ভাড়া নিয়ে নেবে।

অবশ্য প্রচলিত পজেশন ক্রয়-বিক্রয় অবৈধ হলেও কোনো ব্যক্তি যদি দোকানের পজেশন ক্রয় করে তাতে ব্যবসা করে আর তার ব্যবসার মূল কারবার বৈধ হয় এবং ব্যবসাও বৈধ পন্থায় করে তাহলে পজেশনের কারণে উক্ত ব্যবসা ও তার লাভ অবৈধ গণ্য হবে না; বরং তার মুনাফা ভোগ করা জায়েয হবে।

-গামযু উয়ূনিল বাছাইর ২/১৬৯; মুফীদুল হুসনা, শুরুম্বুলালী, পৃ. ৪৬; রদ্দুল মুহতার ৪/৫২১

Sharable Link

খাইরুল ইসলাম - পঞ্চগড়

৫৭১১. Question

দুইজন মিলে একটি গাড়ি ক্রয় করল এক লক্ষ টাকায়। কিন্তু এতে একজনের পঞ্চাশ হাজার টাকা হালাল আর আরেকজনের পঞ্চাশ হাজার টাকা হারাম। এখন এমন গাড়ী কারো কাছে ভাড়া দিল মাসিক দশ হাজার টাকা চুক্তিতে। এই ভাড়ার টাকা দুইজনে সমানভাবে ভাগ করে নেবে। এভাবে গাড়ী অথবা দোকান ক্রয় করে ভাড়ার মাধ্যমে লভ্যাংশ অর্জন করা বৈধ হবে কি না?

 

Answer

 যৌথ কারবার শুরু করার পূর্বেই যদি শরীকের ব্যাপারে জানা থাকে যে, তার উপার্জন অবৈধ ও হারাম এবং যে টাকা সে বিনিয়োগ করবে তা হারাম উপার্জন থেকেই করবে তাহলে জেনেশুনে এ ব্যক্তিকে ব্যবসায় শরীক নেয়া যাবে না। কারণ নিজের অংশ হালাল হলেও যেহেতু কারবারটি যৌথ তাই শরীকের অংশ হারাম হওয়ার কারণে অর্জিত মুনাফার মধ্যে হারামের কুপ্রভাব থাকে। উপরন্তু এ ধরনের উপার্জন বরকতপূর্ণও হয় না। তাই এ ধরনের শরীকের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং কারবার করা থেকে বিরত থাকা কর্তব্য। কিন্তু পূর্বে থেকে যদি তা জানা না থাকে, বরং যৌথ মালিকানার ভিত্তিতে গাড়ী ক্রয় করার পর জানা গেল অংশীদারের টাকা হারাম, তাহলে শরীকের বিনিয়োগকৃত টাকা অবৈধ হলেও ঐ গাড়ী থেকে ভাড়া খাটিয়ে মুনাফা অর্জিত হলে যে শরীকের অর্থ হালাল তার অংশের মুনাফা বৈধ হবে।

-গামযু উয়ূনিল বাছাইর ২/২২৭

Sharable Link

আলতাফ হুসাইন - বরগুনা

৫৭১২. Question

কারো উপার্জনে হালাল-হারাম মিশ্রিত থাকলে তার দাওয়াত, হাদিয়া-তোহফা কবুল করা বৈধ হবে কি না? এখানে হালাল-হারামের আধিক্যের বা স্বল্পতার কোনো শর্ত আছে কি না?

Answer

যার উপার্জন হালাল-হারাম মিশ্রিত সে যদি কোনো কিছু হাদিয়া দেয় বা দাওয়াত করে, এক্ষেত্রে উক্ত হাদিয়া বা দাওয়াত হালাল মাল থেকে ব্যবস্থা করেছে বলে জানা যায়, তাহলে তা গ্রহণ করা জায়েয আছে। আর যদি হারাম মাল থেকে হাদিয়া বা দাওয়াতের ব্যবস্থা করেছে বলে জানা যায় তাহলে তা গ্রহণ করা জায়েয হবে না। পক্ষান্তরে হাদিয়া বা দাওয়াতের ব্যবস্থা কোন্ ধরনের সম্পদ থেকে করেছে তা যদি জানা না যায় তাহলে এক্ষেত্রে তার অধিকাংশ উপার্জন হালাল হলে তার দাওয়াত ও হাদিয়া গ্রহণ করা জায়েয আছে। আর যদি অধিকাংশ উপার্জন হালাল না হয় তাহলে গ্রহণ করা যাবে না।

-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ১৪৬৭৫; শরহুস সিয়ারিল কাবীর ১/৯৯; উয়ূনুল মাসাইল, পৃ. ২২০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৪৩

Sharable Link

আলতাফ হুসাইন - বরগুনা

৫৭১৩. Question

যার সম্পূর্ণ উপার্জন হারাম তার কাছে কোনো ব্যবসায়িক পণ্য বা অন্য কোনো সম্পদ বিক্রি করা বৈধ হবে কি না?

Answer

যার সমুদয় উপার্জন হারাম এবং তার নিকট পণ্য বিক্রি করা হলে সে হারাম থেকেই তা পরিশোধ করবে বলে জানা যায় তাহলে তার নিকট পণ্য বিক্রয় করা থেকে বিরত থাকতে হবে। হাঁ, ক্রেতা যদি হালাল মাধ্যম থেকে মূল্য পরিশোধ করছে বলে অবহিত করে তাহলে তার নিকট পণ্য বিক্রি করতে অসুবিধা নেই।

-জামেউল উলূমি ওয়াল হিকাম ১/২০৮; আলমুহীতুল বুরহানী ১০/৩৭০; গামযু উয়ূনিল বাছাইর ২/২২৭; রদ্দুল মুহতার ৫/৯৮

Sharable Link

হাম্মাদ - কুষ্টিয়া

৫৭১৪. Question

আমি এক লোক থেকে একটি পুরোনো মোবাইল কিনি। এরপর আমি জানতে পারি যে, ঐ মোবাইলটি পরিচিত অন্য একজনের, যা বিক্রেতা তার থেকে চুরি করে নিয়েছে। এরপর আমি বিক্রেতার কাছে মোবাইল ফেরত দিয়ে এর মূল্য  ফেরত চাই। কিন্তু ঐ লোক তাতে রাজি হচ্ছে না। আমি জানতে চাচ্ছি, এক্ষেত্রে আমার করণীয় কী? ঐ লোক যদি মোবাইল ফেরত না নেয় তাহলে কি আমি তা ব্যবহার করতে পারব?

 

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মোবাইলটি যেহেতু চুরির। তাই তা ব্যবহার করা আপনার জন্য বৈধ হবে না। এক্ষেত্রে বিক্রেতা মোবাইলের মূল্য ফেরত না দিলেও তা ব্যবহার করা যাবে না। আর আপনি যেহেতু মোবাইলের মালিককে চেনেন, তাই সেটা মালিকের কাছেই পৌঁছে দিতে হবে এবং এক্ষেত্রে বিক্রেতার দায়িত্ব হল, মোবাইলের মূল্য ফেরত দেওয়া। যদি সে তা ফেরত না দেয়, তাহলে সে গুনাহগার হবে।

-মাবসূত, সারাখসী ৯/১৭২; বাদায়েউস সানায়ে ৬/৪৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৭/৫৯; আদ্দুররুল মুখতার ৪/১১০

Sharable Link

আব্দুল্লাহ - কাটিয়া, সাতক্ষীরা

৫৭১৫. Question

এ বছর আমাদের জেলায় তিন দিনব্যাপী তাবলীগের জোড় হয়। ঐ জোড় উপলক্ষে ব্যবসা করার জন্য এক পরিচিত দোকানে গিয়ে বলি, আমি আপনার দোকান থেকে রুমাল, টুপি, আতর পাইকারী দরে এত পরিমাণ ক্রয় করব। তবে জোড় শেষে কিছু পণ্য অবিক্রিত থেকে গেলে তা আপনার দোকানে ফেরত দেব। বিক্রেতা আমার প্রস্তাবে রাজি হয়ে আমার কাছে পণ্য বিক্রি করে।

আমার জানার বিষয় হল, অবিক্রিত পণ্য ফেরত দেওয়ার কথা বলে তা ক্রয় করা কি আমার জন্য জায়েয হয়েছে?

Answer

বিক্রি না হলে পণ্য ফেরত দেওয়া হবে- এমন শর্তে ক্রয়-বিক্রয় জায়েয নয়। তবে কোনো রকম শর্ত না করে যদি বিক্রেতা নিজ থেকেই এই ছাড় দেয় তাহলে ক্রেতার ঐ সুযোগ গ্রহণ করা জায়েয আছে। অবশ্য বিষয়টিকে বাধ্যতামূলক করে দেওয়া যাবে না। তাই পরবর্তীতে বিক্রেতা যদি কোনো কারণে ফেরত নিতে অস্বীকৃতি জানায় তখন তাকে বাধ্য করা যাবে না। আপনাদের লেনদেনটি যদি দ্বিতীয় প্রকারের অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে তবে সেটি জায়েয হয়েছে।

-কিতাবুল আছল ১১/ ১৮৪; মাবসূত, সারাখসী ১৩/১৫; ফাতহুল কাদীর ৫/৫০৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৯/৩১৬; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৮৪

Sharable Link

আবদুল আওয়াল - যশোর

৫৭১৬. Question

আমি আমার খালাতো ভাইকে ৫ লক্ষ টাকা দিয়ে কাপড়ের ব্যবসা করতে বলি। তার সাথে এভাবে চুক্তি করি যে, বছর শেষে লাভ-লোকসান হিসাব করে যা লাভ হবে তার ৪৫% আমি নেব আর ৫৫% তুমি নেবে। আর যেহেতু সংসার চালানোর জন্য তোমার টাকা প্রয়োজন তাই প্রতি মাসে তুমি ৮০০০/- টাকা বেতন হিসাবে নেবে। এভাবে আমরা ব্যবসা শুরু করব। এমন সময় একজন বলল, আমার খালাতো ভাইয়ের জন্য প্রতি মাসে ৮০০০/- বেতন নির্ধারণের কারণে নাকি আমাদের ব্যবসা-চুক্তি শরীয়তসম্মত হয়নি। তাই জানার বিষয় হল, আমাদের ব্যবসা-চুক্তি বাস্তবেই কি শরীয়তসম্মত হয়নি? বিষয়টির সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার জন্য ৪৫% আর আপনার খালাতো ভাইয়ের জন্য ৫৫% লভ্যাংশ নির্ধারণ করার চুক্তি সহীহ হয়েছে। কিন্তু আপনার খালাতো ভাইয়ের জন্য মাসিক বেতন ধার্য করা সহীহ হয়নি। কারণ এক পক্ষের পুঁজি আর অপর পক্ষের শ্রম আছে এমন কারবারে কোনো পক্ষের জন্য নির্ধারিত কিছুর শর্ত করা জায়েয নয়। তবে এ কারণে আপনাদের মূল চুক্তিটি ফাসেদ হয়ে যায়নি। সুতরাং প্রশ্নোক্ত চুক্তি অনুযায়ী ব্যবসা করলে আপনার খালাতো ভাই তার শ্রমের বিনিময়ে শুধু ধার্যকৃত লভ্যাংশই পাবে। মাসিক ৮০০০/- টাকা করে বেতন পাবে না।

-বাদায়েউস সানায়ে ৫/১১৯; আলমুহীতুল বুরহানী ১৮/১২৭; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ১/৭৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৫/৩৯৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/২৮৭

Sharable Link

ইকরাম হুসাইন - কুমিল্লা

৫৭১৭. Question

আমি ইতালিতে থাকি। ১০ মাস আগে আমার এক চাচাতো ভাই আমার থেকে ১ লক্ষ টাকা ঋণ নেয়। এক বছরের মধ্যে তা পরিশোধ করার কথা। কয়েকদিন আগে সে বলল, আমি একটি ব্যবসা শুরু করতে চাচ্ছি। আপনি তো আমার থেকে ১ লক্ষ টাকা পান। আরো  ৫০ হাজার টাকা যদি দেন তাহলে দেড় লক্ষ টাকার পুঁজি নিয়ে ব্যবসাটা শুরু করব। আমি বললাম, আপাতত তুমি ১ লক্ষ টাকা দিয়েই শুরু কর। ব্যবসায় যা লাভ হবে এর অর্ধেক তোমার আর অর্ধেক আমার। হুজুরের কাছে জানার বিষয় হল, এভাবে চুক্তি করা কি সহীহ হয়েছে?

Answer

পাওনা টাকা ঋণগ্রহীতা থেকে হস্তগত না করে তা দিয়েই ঋণ গ্রহিতার সঙ্গে ব্যবসার চুক্তি করা বৈধ নয়। তাই প্রশ্নোক্ত চুক্তিটি সহীহ হয়নি। তবে ঋণদাতা যদি পাওনা  টাকা ঋণগ্রহিতা থেকে বুঝে নেয়ার পর পুনরায় তাকে ব্যবসার জন্য দেয় তাহলে তা জায়েয হবে।

-কিতাবুল আছল ৪/১৩০; বাদায়েউস সানায়ে  ৫/১১৪; আলমুহীতুল বুরহানী ১৮/১২২; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৫/৫১৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৫/৩৯৩; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৬৪৭

Sharable Link

মিছবাহ - ঢাকা

৫৭১৮. Question

রাশেদুল হাসান সাহেব একটি মাকতাবার মালিক। তিনি ভারতের এক লাইব্রেরি থেকে পাঁচ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ১০০ সেট ফাতাওয়া শামীপাঁচ মাস পর হস্তান্তর করার চুক্তিতে ক্রয় করেছেন। এবং চুক্তির সময় তিনি তাদের পূর্ণ টাকা পরিশোধ করে দিয়েছেন। চুক্তিতে উল্লিখিত পাঁচ মাস পূর্ণ হতে এখনো তিন মাস বাকি। কিন্তু রাশেদ সাহেবের কিছু টাকার প্রয়োজন, তাই তিনি ঐ ১০০ সেট ফাতাওয়া শামীথেকে ৬০ সেট পাশের আরেক মাকতাবার কাছে নগদ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করতে চাচ্ছেন। তার জন্য এখন এই ৬০ সেট বিক্রি করা কি জায়েয হবে?

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উক্ত লাইব্রেরি থেকে কিতাবগুলো বুঝে পাওয়ার পূর্বে রাশেদ সাহেবের জন্য ঐ কিতাব অন্য কারো কাছে বিক্রি করা জায়েয হবে না। হাদীস শরীফে এসেছে-

أَنّ حَكِيمَ بْنَ حِزَامٍ أَخْبَرَهُ، قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، إِنِّي أَشْتَرِي بُيُوعًا فَمَا يَحِلّ لِي مِنْهَا، وَمَا يُحَرّمُ عَلَيّ قَالَ: فَإِذَا اشْتَرَيْتَ بَيْعًا، فَلَا تَبِعْهُ حَتّى تَقْبِضَهُ.

হাকীম ইবনে হিযাম রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করি। এর কোন্টি আমার জন্য হালাল এবং কোন্টি হারাম? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যখন তুমি কোনো পণ্য ক্রয় করবে তখন তা হস্তগত হওয়ার পূর্বে অন্যত্র বিক্রয় করবে না। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৫৩১৬)

হযরত ওমর রা. বলেন-

إذَا أَسْلَمْتَ فِي شَيْءٍ فَلاَ تَبِعْهُ حَتّى تَقْبِضَهُ، وَلاَ تَصْرِفُهُ فِي غَيْرِهِ.

তুমি যখন কোনো কিছুতে অগ্রিম ক্রয়চুক্তি (বাইয়ে সালাম) কর, তখন তা হস্তগত হওয়ার পূর্বে অন্যত্র বিক্রয় করবে না এবং তা অন্য কিছু দ্বারা পরিবর্তনও করবে না। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ, হাদীস ২১২৪৪)

-শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ৩/১৩৩; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৪৫১; আলমুহীতুল বুরহানী ৯/২২৭; আদ্দুররুল মুখতার ৫/২১৮

Sharable Link

তাহমীদ - ঢাকা

৫৭১৯. Question

আমি নৌবাহিনীতে চাকরি করি। দুই বছর আগে ঢাকার ভাটারা এলাকাতে আমার একটি ফ্ল্যাট পছন্দ হয়। কিন্তু ফ্ল্যাট মালিকের সাথে আমার পরিচয় না থাকায় আমার বড় ভাইকে আমার জন্য ফ্ল্যাটটি ক্রয় করতে বলি। আমার বড় ভাই ঐ এলাকার দীর্ঘদিনের বাসিন্দা। এমতাবস্থায় আমার দুই বছরের জন্য বিদেশ মিশনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তখন আমি আমার ভাইকে বলি, ‘আমি আপনাকে টাকা দিয়ে যাই, আর আপনি আমার পক্ষ থেকে ফ্ল্যাটটি ক্রয় করে নিন।তখন তিনি রাজি হন। আমি তাকে ২৫,০০,০০০/- টাকা নগদ দিয়ে যাই। পরে তিনি জানান যে, ফ্ল্যাটটির মূল্য নিয়েছে ৩৫,০০,০০০/- টাকা। তুমি যে নগদ ২৫,০০,০০০/- টাকা আমাকে দিয়েছো, আমি তা দিয়ে ফ্ল্যাটটি তোমার জন্য ক্রয় করেছি। বাকি দশ লক্ষ টাকা এক বছরের মধ্যে পরিশোধ করলেই হবে। আমি সে হিসেবে বাকি টাকাও পরিশোধ করে দিই। কিন্তু দুই বছর পর দেশে এসে ভাইকে আমার কাছে ফ্ল্যাটটি বুঝিয়ে দিতে বললে এবং এর দলীলপত্র চাইলে সে বলে, ‘দলীল তো তখন আমার নামে করেছিলাম, তাই আমি চাচ্ছি, ঐ ফ্ল্যাটটি আমার কাছে রেখে দিতে।ফলে তিনি এখন আমাকে ঐ টাকা ফেরত দিতে চাচ্ছেন। আমার প্রশ্ন হল, আমার ভাই এই কাজটি কি ঠিক করেছেন? আর এখন এই ফ্ল্যাটের প্রকৃত মালিক কে? টাকা আমার হওয়া সত্ত্বেও আমার ভাই শুধু দলীলপত্র তার নামে করার দ্বারাই কি সে ঐ ফ্ল্যাটের মালিক হয়ে যাবে? এখন আমাকে ৩৫,০০,০০০/- টাকা দিলে কি সে এর থেকে দায়মুক্ত হয়ে যাবে?

Answer

প্রশ্নের বর্ণনা যদি বাস্তব হয়, তাহলে আপনি যেহেতু আপনার জন্য ফ্ল্যাটটি ক্রয়ের উদ্দেশ্য আপনার বড় ভাইকে টাকা দিয়েছিলেন, আর তিনি ঐ টাকা দিয়েই ফ্ল্যাটটি ক্রয় করেছেন। তাই ঐ ফ্ল্যাটটির মালিক আপনিই। আপনার ভাই নিজের নামে দলীলপত্র করার দ্বারা তিনি ঐ ফ্ল্যাটের মালিক হয়ে যাননি; বরং তার জন্য নিজ নামে রেজিস্ট্রি করা অন্যায় ও খেয়ানত হয়েছে। তাই এখন আপনার ভাইয়ের কর্তব্য হল, ফ্ল্যাটটি তার নিজ খরচে আপনার নামে রেজিস্ট্রি করে দেওয়া। এবং তা নিষ্কণ্টকভাবে আপনার দখলে বুঝিয়ে দেওয়া। আর এটা না করে এখন ফ্ল্যাটের ক্রয়মূল্য আপনাকে ফেরত দেওয়া সম্পূর্ণ অন্যায় ও খেয়ানত। এটা আদৌ জায়েয হবে না।

-কিতাবুল আছল ১১/২৮৫; আলহাবিল কুদসী ২/১১১; বাদায়েউস সানায়ে ৫/৩৩; আলমুহীতুল বুরহানী ১৫/৫৩; আলবাহরুর রায়েক ৭/১৫৮

Sharable Link

মাহমুদ - যাত্রাবাড়ি, ঢাকা

৫৭২০. Question

আইনজীবীদের উপার্জন হালাল কি না? ফৌজদারী মামলার আয় বৈধ আর দেওয়ানী মামলার আয় অবৈধ- এমন কোনো মতামত আছে কি না?

Answer

ওকালতি পেশার মধ্যে বৈধ-অবৈধ দুদিকই রয়েছে। মজলুম ও অধিকার বঞ্চিত ব্যক্তিকে সাহায্য করা, তার ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার পক্ষে মেধা, শ্রম ও প্রচেষ্টা ব্যয় করা নিঃসন্দেহে ভালো কাজ। তাই ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে বৈধ ও শরীয়তের নীতিমালা রক্ষা করে ওকালতি পেশার কাজ জায়েয আছে। এ পেশা গ্রহণের পূর্বে যে বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে তা হল-

ক. সত্য ও ন্যায়ের উপর দৃঢ়পদ থাকার ব্যাপারে নিজের প্রতি আস্থাশীল হতে হবে।

খ. কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোনো আইন বা মামলার পক্ষে লড়া যাবে না

গ. মিথ্যা, অসত্যের আশ্রয় নেয়া যাবে না। এমনকি ন্যায়ের পক্ষে লড়তে গিয়েও নয়।

ঘ. উৎকোচ ও ঘুষ গ্রহণ করা যাবে না।

ঙ. জালিম ও অত্যাচারীর পক্ষে লড়া যাবে না।

এ সকল বিষয় লক্ষ রেখে বৈধভাবে যদি কোনো মামলা পরিচালনা করে এবং তাতে চেষ্টা-শ্রম ব্যয় করে তাহলে এর ন্যায্য পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়েয আছে। অনুরূপ উপরোক্ত শর্তাবলির প্রতি লক্ষ রেখে দেওয়ানী ও ফৌজদারী মামলাতেও সংশ্লিষ্ট হওয়া যাবে।

-সূরা নিসা (৪) : ১০৫, ১০৭; সূরা মায়েদা (৫) : ২; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ২/৩৪৯; তাফসীরে তাবারী ৯/১৭৬; রুহুল মাআনী ৩/২৩০; আলমাবসূত, সারাখসী ১৯/৪

Sharable Link

হাসানুর রহমান - অস্ট্রেলিয়া

৫৭২১. Question

আমি অস্ট্রেলিয়া থাকি। এ বছর বাংলাদেশে আমার এক আত্মীয়কে আমার পক্ষ থেকে কুরবানী করে দিতে বলি এবং টাকাও পাঠিয়ে দিই। কথামতো সে বাংলাদেশে ঈদের প্রথম দিনে অর্থাৎ যিলহজে¦র দশ তারিখে আমার পক্ষ থেকে কুরবানী করে দেয়। তখন আমাদের দেশে যিলহজে¦র নয় তারিখ ছিল।

আমার জানার বিষয় হল, উক্ত ক্ষেত্রে কি আমার কুরবানী আদায় হয়েছে?

Answer

 কুরবানী যে স্থানে করা হয় ঐ স্থানের সময়ই ধর্তব্য হয়। সুতরাং প্রশ্নোক্ত অবস্থায় বাংলাদেশে যেহেতু তখন কুরবানীর সময় ছিল তাই উক্ত কুরবানী যথাযথভাবে আদায় হয়ে গেছে।

-আলমাবসূত, সারাখসী ১২/১৯; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ৭/৩৩৬; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৩ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৪৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৬৪

Sharable Link

আবদুর রহমান - ডেমরা, ঢাকা

৫৭২২. Question

এ বছর আমরা বগুড়া থেকে কুরবানীর উদ্দেশ্যে একটি গরু কিনেছিলাম। গরুটি ঢাকায় নিয়ে আসার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় ট্রাক থেকে পড়ে যায়। ফলে গরুটির শিং ভেঙে যায়। আমি মুহতারামের নিকট জানতে চাচ্ছি যে, এখন আমি এই গরুটি দ্বারা কুরবানী করতে পারব কি না?

 

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে গরুটির শিং যদি একেবারে গোড়া থেকে ভেঙে গিয়ে থাকে, যার দ্বারা মস্তিষ্কও ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে এই পশু দ্বারা কুরবানী করা সহীহ হবে না। কিন্তু যদি মস্তিষ্ক বিকৃত না হয় অথবা শিং গোড়া থেকে না ভেঙে থাকে তাহলে গরুটির কুরবানী সহীহ হবে।

-মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৭৩৪; মাবসূত, সারাখসী ১২/১১; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩২০; আলবাহরুর রায়েক ৮/১৭৬; ফাতহুল কাদীর ৮/৪; রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৩

Sharable Link

আলতাফ হোসাইন - মোমেনশাহী

৫৭২৩. Question

আমার বাড়ি মোমেনশাহী জেলার মশাখালিতে। গত কুরবানীতে আমার উপর কুরবানী ওয়াজিব ছিল। কুরবানীর উদ্দেশ্যে আমি একটি ছাগলও ক্রয় করেছিলাম। কিন্তু ঈদের এক দিন আগে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। স্থানীয় মেডিকেলে গেলে তারা পরীক্ষা করে বলে; আপনার পিত্তথলিতে পাথর হয়েছে। দ্রুত অপারেশন না করলে বিপদ হতে পারে। তাই আমি ঈদের পরের দিন ঢাকায় চলে আসি এবং হাসপাতালে ভর্তি হই। এরপর অপারেশন করে কিছুটা সুস্থ হয়ে ৫ দিন পর বাড়িতে ফিরে আসি। ঐদিকে এসব ঝামেলার কারণে আমার ছাগলটি কুরবানী করা হয়নি। আমি ঈদের ১ম দিন মুকীম ছিলাম। শেষ দুই দিন মুসাফির ছিলাম। এখন আমার করণীয় কী? ঐ ছাগলটি কি সদকা করে দিতে হবে?

Answer

ঈদের তিন দিনের শেষ সময় কেউ মুসাফির থাকলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব থাকে না। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যেহেতু ঈদের তৃতীয় দিন শেষ পর্যন্ত মুসাফির ছিলেন তাই গত ঈদে আপনার উপর কুরবানী ওয়াজিব ছিল না। সুতরাং কুরবানীর উদ্দেশ্যে পশু ক্রয় করলেও তা সদকা করা জরুরি নয়। সুতরাং ছাগলটি আপনার নিজ কাজে লাগাতে পারেন।

-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ৮১৪২; বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৫৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪১০; ফাতাওয়া  হিন্দিয়া ৫/২৯২; রদ্দুল মুহতার ৬/৩১

Sharable Link