আজকাল অনেক মহিলার সিজারের মাধ্যমে সন্তান হয়। সন্তান পরবর্তী যে স্রাব দেখা যায় তা কি নেফাসের রক্ত হিসেবে গণ্য হবে?
আজকাল অনেক মহিলার সিজারের মাধ্যমে সন্তান হয়। সন্তান পরবর্তী যে স্রাব দেখা যায় তা কি নেফাসের রক্ত হিসেবে গণ্য হবে?
সন্তান স্বাভাবিক নিয়মে ভূমিষ্ট হোক বা সিজার করে হোক এরপর মহিলার যে রক্তস্রাব আসে তা নেফাস বলেই গণ্য হবে।
-আলবাহরুর রায়েক ১/২১৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৭; আদ্দুররুল মুখতার ১/২৯৯Sharable Link
কোনো কোনো মসজিদে দেখা যায় ইমাম-মুসল্লিগণ ইকামত শুরু হওয়ার সময় বসে থাকে। মুআযযিন যখন ‘হাইয়া আলাস সালাহ’ বলে তখন দাঁড়ায়। তারা বলে ইকামতের সময় এরূপ করা সকলের জন্য মুস্তাহাব। অতএব আমার জানার বিষয় হল, এ কথা কতটুকু সঠিক? জানালে উপকৃত হব।
প্রশ্নোক্ত আমলটি সহীহ নয়। একাধিক হাদীসে ইকামতের শুরুতেই ইমাম-মুক্তাদী সকলে দাঁড়িয়ে যাওয়া এবং কাতার সোজা করার কথা বর্ণিত আছে। তবে ইমাম নামাযের জন্য না দাঁড়ানো পর্যন্ত মুসল্লিগণ দাঁড়াবে না। ইমামের আগেই মুসল্লিদের দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকা মাকরূহ।
হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (হুজরা থেকে) বের হওয়ার আগে বেলাল রা. ইকামত বলতেন না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যখন আসতে দেখতেন তখন তিনি ইকামত বলা শুরু করতেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬০৬
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নামাযের জন্য আসতে দেখা গেলে ইকামত শুরু করে দেওয়া হত। আর সাহাবায়ে কেরাম কাতার সোজা করা শুরু করতেন। এভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের জায়গায় পৌঁছার পূর্বেই কাতার পুরোপুরি সোজা হয়ে যেত। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬০৫
অপর হাদীসে আছে, মুআযযিন আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার বলে ইকামত শুরু করামাত্রই লোকেরা নামাযের জন্য দাঁড়িয়ে যেত এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের জায়গায় পৌঁছতে পৌঁছতে কাতার সোজা হয়ে যেত। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ১৯৪২
সুতরাং ইমাম মেহরাবের কাছে উপস্থিত থাকুক বা মেহরাবের দিকে আসতে থাকুক উভয় অবস্থায় ইকামতের শুরুতে মুক্তাদীগণ দাঁড়িয়ে যাবে। কারণ কাতার সোজা করার গুরুত্ব অনেক বেশি। বহু হাদীসে এ ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
নুমান বিন বাশীর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাতারগুলো এভাবে সোজা করতেন যেন তিনি এই কাতার দিয়ে তীর সোজা করবেন। এভাবে এক সময় তিনি নিশ্চিত হলেন যে, আমরা কাতার সোজা করার বিষয়টি ভালোভাবে বুঝে নিয়েছি। এরপর একদিন তিনি নামায পড়ানোর জন্য আসলেন এবং নির্ধারিত স্থানে দাঁড়ালেন। তিনি তাকবীর বলে নামায শুরু করবেন এমন সময় লক্ষ্য করলেন এক ব্যক্তির বুক কাতার থেকে কিছুটা সামনের দিকে বেড়ে আছে। তিনি তখন বললেন, আল্লাহর বান্দারা! তোমাদের কাতারগুলো সোজা করে নাও। অন্যথায় আল্লাহ তাআলা তোমাদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করে দিবেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৪৩৬
হযরত উমর রা. কয়েকজন মানুষকে শুধু এজন্যই নির্ধারিত রেখেছিলেন যে, তারা মুসল্লিদের কাতার সোজা করবেন। তারা যখন এসে জানাতেন যে, কাতার সোজা হয়েছে তখন উমর রা. নামায শুরু করতেন।-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ২৪৩৭-২৪৩৯
হযরত উসমান রা.-এর নিয়মও এমনই ছিল। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৩৫৫২
Sharable Link
আমি একদিন একাকী মাগরিবের নামায আদায় করছিলাম। শেষ রাকাতে একটু অন্য মনস্ক হয়ে পড়ি। তখন প্রথম সিজদা থেকে উঠার পর দ্বিতীয় সিজদা আদায় করেছি ভেবে তাশাহহুদ পড়তে থাকি। কিন্তু তাশাহহুদ শেষে আমার প্রবল ধারণা হয় যে, আমি দ্বিতীয় সিজদা করিনি। তাই তখন দ্বিতীয় সিজদা করে পুনরায় তাশাহহুদ পড়ি। এরপর সাহু সিজদাও আদায় করি।
আমার জানার বিষয় হল, এভাবে দ্বিতীয়বার তাশাহহুদ পড়া এবং সাহু সিজদা করা কি ঠিক হয়েছে? আর আমার নামায কি আদায় হয়েছে? জানিয়ে বাধিত করবেন।
হ্যাঁ, উক্ত নামায সহীহ হয়েছে। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে দ্বিতীয় সিজদা না দিয়েই যেহেতু আপনি তাশাহহুদ পড়েছিলেন তাই দ্বিতীয় সিজদা আদায়ের পর পুনরায় তাশাহহুদ আদায় করা সঠিক হয়েছে। আর দ্বিতীয় সিজদা আদায়ে যেহেতু বিলম্ব হয়েছে তাই সাহু সিজদা আদায় করা জরুরি ছিল। অতএব সাহু সিজদার সাথে উক্ত নামায শেষ করাও সঠিক হয়েছে।
-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/১২০; শরহু মুখতাসারিত তহাবী ২/২৯; ফাতাওয়া সিরাজিয়া ১৪; বাদায়েউস সানায়ে ১/৫৬৮; আলবাহরুর রায়েক ২/৯৩; আসসিআয়াহ ২/১৩১; রদ্দুল মুহতার ১/৪৫০Sharable Link
জনৈক ব্যক্তি এক নামাযে মাসবূক হল এবং শেষ বৈঠকে ইমামের পিছনে ভুলবশত তাশাহহুদের অতিরিক্ত পড়ে ফেলল। উক্ত ব্যক্তির উপর নামায শেষে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে কি না?
মাসরূক ব্যক্তি ইমামের শেষ বৈঠকে তাশাহহুদের অতিরিক্ত পড়ে ফেললে তার উপর সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে না। তবে ইচ্ছাকৃত তাশাহহুদের অতিরিক্ত না পড়াই ভালো। এক্ষেত্রে তাশাহহুদ ধীরে ধীরে পড়বে। যেন তাশাহহুদ শেষ হতে হতে সালামের সময় হয়ে যায়।
-বাদায়েউস সানায়ে ১/৪২০; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫১১Sharable Link
এক ব্যক্তি ইমামের সাথে তারাবীর কয়েক রাকাত পায়নি। এখন সে কি আগে ইমামের সাথে বিতির পড়ে নিবে, এরপর তারাবীর বাকি রাকাত আদায় করবে, না সে আগে তারাবীর ছুটে যাওয়া রাকাতগুলো আদায় করে নিবে এবং এরপর একাকী বিতির পড়ে নিবে? এক্ষেত্রে কোনটি সঠিক নিয়ম?
বিতিরের জামাতের আগে তারাবীর ছুটে যাওয়া রাকাতগুলো আদায় করা সম্ভব হলে তা আদায় করে নিবে। কিন্তু যদি তা আদায়ের সময় না থাকে এবং বিতিরের জামাত শুরু হয়ে যায় তাহলে আগে জামাতের সাথে বিতির পড়ে নিবে। এরপর তারাবীর অবশিষ্ট রাকাতগুলো আদায় করবে।
-আলমুহীতুল বুরহানী ২/২৬২Sharable Link
আমাদের এলাকার কিছু লোক স্টিমারে করে মালয়েশিয়া যাচ্ছিল। সাগরের মাঝে গিয়ে তাদের একজন মৃত্যুবরণ করে। এ অবস্থায় তাদের করনীয় কী-তা তাদের জানা ছিল না। তাই তারা ঐ মৃত ব্যক্তিকে নাকি সাগরে ফেলে দেয়।
তাই এখন আমার জানার বিষয় হল, সাগরের মাঝে কেউ এভাবে মারা গেলে তার কাফন-দাফন সম্পর্কে শরীয়তের বিধান কী?
নদী ও সমুদ্রপথে কেউ মারা গেলে সেক্ষেত্রে করণীয় হল, নৌযানের অবস্থান যদি তীরের নিকটবর্তী হয় এবং তাতে অবতরণ করাও সম্ভব হয় অথবা লাশের মধ্যে কোনো পরিবর্তন ঘটার আগে আগে গন্তব্যস্থলে পৌঁছা যায় তাহলে তাকে যথানিয়মে ভূমিতেই দাফন করতে হবে। আর যদি ভূমিতে অবতরণ করার আগেই লাশের মধ্যে পরিবর্তন ঘটার আশঙ্কা থাকে তাহলে এক্ষেত্রে নৌযানেই তার গোসল, কাফন এবং জানাযা নামায সম্পন্ন করা হবে। এরপর লাশ পানিতে ছেড়ে দিবে। এক্ষেত্রে সম্ভব হলে তার গায়ে কোনো ভারি বস্তু, যেমন পাথর ইত্যাদি বেঁধে দিবে যেন লাশ পানিতে ভেসে না থাকে বরং নিচে চলে যায়।
-ফাতহুল কাদীর ২/১০২; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/১০৯; ইমদাদুল ফাত্তাহ ৬৩৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৩৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৮৯Sharable Link
আমরা জানি, রমযানের রোযা ওজর ছাড়া ইচ্ছাকৃত ভেঙ্গে ফেললে কাফফারার রোযা এক নাগাড়ে দু মাস রাখতে হয়। মাঝখানে ছুটে গেলে তা আদায় হয় না। এখন জানার বিষয় হল, দু’মাস রোযা রাখার সময় মাঝখানে ঈদ বা আইয়ামে তাশরীক তথা রোযার জন্য নিষিদ্ধ দিন যদি চলে আসে এবং নিষেধ থাকার পরও রোযা রাখা হয় তাহলে কাফফারা আদায় হবে কি? এতে মাঝখানে বিরতি হয় না। কারণ আমরা আরেকটা মাসআলা জানি যে, কেউ যদি নিষিদ্ধ দিনে রোযার মান্নত করে তাহলে নিষেধাজ্ঞার পরও কেউ যদি রোযা রাখে তাহলে মান্নত পুরো হয়ে যায়। যদিও তাতে গুনাহ হয়। সে হিসেবে কাফফারাও আদায় হয়ে যাবে কি না? সঠিক মাসআলাটি জানানোর অনুরোধ রইল।
কাফফারার রোযা এমন সময় শুরু করতে হবে যেন তার মধ্যে শাওয়ালের ১ তারিখ অথবা যিলহজ্বের ১০ থেকে ১৩ তারিখ-এ দিনগুলো না আসে। কাফফারা আদায়ের দু’মাসের ভেতর উক্ত নিষিদ্ধ দিন পড়লে সে দিনগুলোতে রোযা রাখলেও কাফফারা আদায় হবে না; বরং এক্ষেত্রে পুনরায় নতুন করে লাগাতার দু মাস রোযা রাখতে হবে।
উল্লেখ্য যে, নিষিদ্ধ দিনসমূহে রোযা রাখার মান্নত সংক্রান্ত মাসআলার সাথে কাফফারার রোযার কোনো মিল নেই। উভয়ের মধ্যে মৌলিকভাবে পার্থক্য রয়েছে। এজন্য দুটোর হুকুমও ভিন্ন।
-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস : ১১৫১৯; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২৭৪; আলবাহরুর রায়েক ৪/১০৫, ২৯৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫১২; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৩৪, ৩/৪৭৬; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/২১৫Sharable Link
রমযান মাসে রোযা অবস্থায় অসুস্থতার কারণে এক ব্যক্তির বমি হয়। এর দ্বারা কি তার রোযা ভেঙ্গে গেছে? এখন তার কী করণীয়?
না, একারণে তার রোযা ভাঙ্গেনি। কেননা রোযা অবস্থায় অনিচ্ছাকৃত বমি হলে (যদি তা বেশিও হয়) রোযা ভাঙ্গে না। অবশ্য কেউ ইচ্ছাকৃত মুখ ভরে বমি করলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, রোযা অবস্থায় (অনিচ্ছাকৃত) বমি হলে তা কাযা করতে হবে না। কিন্তু ইচ্ছাকৃত বমি করলে সে যেন তা কাযা করে নেয়।
-জামে তিরমিযী, হাদীস ৭২০; কিতাবুল আসল ২/২০২; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩২৬Sharable Link
রোযা অবস্থায় যদি শরীরের কোনো অঙ্গ থেকে রক্ত বের হয় কিংবা সিরিঞ্জ দিয়ে শরীর থেকে রক্ত বের করা হয় তাহলে কি রোযা ভেঙ্গে যাবে?
রোযা অবস্থায় শরীর থেকে রক্ত বের হলে রোযা ভাঙ্গে না। তদ্রƒপ সিরিঞ্জ দ্বারা বের করা হলেও রোযা ভাঙ্গে না। তবে বিশেষ ওযর ছাড়া শরীর থেকে ইচ্ছাকৃত এ পরিমাণ রক্ত বের করা মাকরূহ, যার কারণে ঐ দিন রোযা পূর্ণ করার শক্তি হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা হয়।
-সহীহ বুখারী, হাদীস ১৯৩৮, ১৯৪০; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৫৬; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৩; ফিকহুন নাওয়াযিল ২/৩০০Sharable Link
রোযা অবস্থায় কেউ যদি চোখে ড্রপ ব্যবহার করে এবং মুখেও তিক্ততা অনুভব হয় তাহলে কি রোযা ভেঙ্গে যাবে?
না, রোযা অবস্থায় চোখে ড্রপ ব্যবহার করলে রোযা ভাঙ্গবে না। এমনকি এর তিক্ততা মুখে বা গলায় অনুভব হলেও রোযা ভাঙ্গবে না (মাসআলাটি সাধারণ কিয়াসের বহির্ভুত সরাসরি আসার দ্বারা প্রমাণিত)।
-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৩৭৯; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৪৪Sharable Link
রোযা অবস্থায় কি দাঁত ব্রাশ করা যাবে? এতে কি রোযা নষ্ট হয়ে যাবে?
রোযা অবস্থায় টুথপেস্ট বা মাজন দিয়ে দাঁত ব্রাশ করা মাকরূহ। আর পেস্ট বা মাজন গলার ভেতর চলে গেলে রোযাই নষ্ট হয়ে যাবে। তাই রোযা অবস্থায় টুথপেস্ট বা মাজন ব্যবহার করা যাবে না। টুথপেস্ট বা মাজন দিয়ে ব্রাশ করতে হলে সাহরীর সময় শেষ হওয়ার আগেই করে নিবে।
-ইমদাদুল ফাতাওয়া ২/১৪১; জাওয়াহিরুল ফিকহ ৩/৫১৮Sharable Link
রোযা অবস্থায় যদি কেউ স্যালাইন বা ইঞ্জেকশন নেয় তাহলে কি রোযা ভেঙ্গে যাবে? তেমনি অসুস্থ অবস্থায় কেউ যদি গ্লুকোজ স্যালাইন নেয় তাহলে কি তার রোযা সহীহ হবে?
স্যালাইন বা ইঞ্জেকশন নিলে রোযা ভাঙ্গে না। তেমনিভাবে অসুস্থতার কারণে গ্লুকোজ স্যালাইন নিলেও রোযার ক্ষতি হবে না। তবে অসুস্থতা ছাড়া গ্লুকোজ স্যালাইন নেওয়া নাজায়েয।
-আলাতে জাদীদা কে শরঈ আহকাম ১৫৩Sharable Link
এতেকাফকারী কি জানাযা পড়ার জন্য মসজিদের বাইরে যেতে পারবে? এতে কি তার এতেকাফ নষ্ট হয়ে যাবে?
ইতিকাফকারী জানাযা পড়ার জন্য মসজিদের বাইরে যেতে পারবে না। জানাযার জন্য বাইরে বের হলে এতেকাফ নষ্ট হয়ে যাবে।
-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৪৭৩; আসসুনানুল কুবরা, বাইহাকী, হাদীস ৮৫৯৪; কিতাবুল আসল ২/১৮৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৪৪৫Sharable Link
আমি একজন ব্যবসায়ী। আমার দোকানে ব্যবসার পণ্য আছে প্রায় দশ লক্ষ টাকার। আমি যথাসম্ভব নগদেই বিক্রি করে থাকি। কিন্তু ব্যবসার খাতিরে অনেক সময় বাকিও দিতে হয়। এভাবে মানুষের কাছে আমার প্রায় সত্তর-আশি হাজার টাকা বাকি আছে। আমার প্রশ্ন হল, যাকাতবর্ষ শেষ হলে ঐ বাকি টাকারও কি যাকাত দিতে হবে?
হাঁ, মানুষের নিকট পাওনা টাকাও যাকাতযোগ্য সম্পদ। তবে বকেয়া টাকা হস্তগত হওয়ার পূর্বে তার যাকাত আদায় করা আবশ্যক নয়। তাই আপনি চাইলে টাকাগুলো হস্তগত হওয়ার পরও যাকাত আদায় করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে পিছনের বছরগুলোর হিসাব করে সেগুলোর যাকাত দিতে হবে।
-আলমাবসূত, সারাখসী ২/১৯৫; বাদায়েউস সানায়ে ২/৯০; আলবাহরুর রায়েক ২/২০৭-২০৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩০৫Sharable Link
গত মুহাররমের ৭ তারিখে আমার এক আত্মীয় সড়ক দুর্ঘটনায় ইন্তেকাল করেন। তার উপর যাকাত ফরয ছিল। তার যাকাত-বর্ষের তারিখ ছিল ১ মুহাররম। প্রতি বছর তিনি হিসাব করেই যাকাত আদায় করতেন। কিন্তু এবার আর সে সুযোগ তার হয়নি এবং তিনি এ ব্যাপারে কোনো অসিয়ত করেননি।
এখন তার পরিবারের পক্ষ থেকে জানার বিষয় হল, তাদেরকে কি মৃতের রেখে যাওয়া সম্পদ থেকে তার অনাদায়ী যাকাত আদায় করতে হবে, নাকি তার যাকাতের টাকাও অন্যান্য সম্পদের মতো মীরাছ হিসেবে বণ্টিত হবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তি যেহেতু তার যাকাত আদায়ের অসিয়ত করেননি তাই তার পরিত্যক্ত সম্পদ থেকে যাকাত আদায় করা জায়েয হবে না; বরং তার পরিত্যক্ত পুরো সম্পদই মীরাছ হিসেবে ধর্তব্য হবে। অবশ্য ঐ ব্যক্তির বালেগ ওয়ারিশগণ নিজেদের অংশ থেকে তার অনাদায়ী যাকাত দিয়ে দিলে তারা সওয়াবের অধিকারী হবে এবং মৃত ব্যক্তিও এর দ্বারা উপকৃত হবে ইনশাআল্লাহ। আর এক্ষেত্রে যদি সকল ওয়ারিশ বালেগ হয় এবং তারা প্রত্যেকেই স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে কাজটি করতে চায় তাহলে ইজমালি সম্পদ থেকেও কাজটি সমাধা করতে পারবে।
-শরহু মুখতাসারিত তহাবী ২/৩৫৭; বাদায়েউস সানায়ে ২/১৬৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৯৪; আলমাবসূত, সারাখসী ২/১৮৫, ১৮৬; দুরারুল হুককাম ১/১৭৯Sharable Link
আমি একজন ব্যবসায়ী। ব্যবসার মূলধন ছাড়া প্রয়োজন অতিরিক্ত হজ্ব করার মতো সম্পদ নেই। তবে ব্যবসার মূলধন বিক্রি করে হজ্ব করতে পারব। কিন্তু পরে ব্যবসা করার জন্য কোনো মূলধন বাকি থাকবে না। ঋণ নিয়ে ব্যবসা করতে হবে। উল্লেখ্য যে, ব্যবসার আয় থেকেই পরিবারের খরচ নির্বাহ করি। হুযুরের নিকট জানতে চাই, এ অবস্থায় আমার উপর হজ্ব ফরয হবে কি না? জানালে কৃতজ্ঞ হব।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উক্ত ব্যবসার উপরই যেহেতু আপনার সংসারের ব্যয় নির্ভরশীল এবং ব্যবসার টাকা দিয়ে হজ্বে গেলে পুঁজিই শেষ হয়ে যাবে তাই এক্ষেত্রে ঐ ব্যবসার মূলধন প্রয়োজনের অন্তর্ভুক্ত। অতএব ঐ ব্যবসার মূলধনের কারণে আপনার উপর হজ্ব ফরয হবে না। অবশ্য সংসারের খরচ নির্বাহ হয়ে যায়- এ পরিমাণ ব্যবসার মাল রেখে অতিরিক্ত সম্পদ দ্বারা হজ্ব করা যখন সম্ভব হবে তখন হজ্ব ফরয হবে।
-আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৬২; আলবাহরুর রায়েক ২/৩১৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৭৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১৮;Sharable Link
কিছুদিন আগে এক দাওয়াতি সফরে রাঙামাটি গিয়েছিলাম। সেখানে কাদিয়ানীদের দাওয়াতে এক গ্রামের ৯-১০টি পরিবার একসাথে একই সময়ে কাদিয়ানী হয়ে যায়। আমরা খবর পেয়ে সেখানে যাই এবং তাদেরকে দীর্ঘদিন বোঝানোর পর তারা আবার ফিরে আসে।
এখন প্রশ্ন হল, তাদের পূর্বের বৈবাহিক সম্পর্কের কী হবে? প্রথমে ইসলাম ধর্ম থেকে সপরিবারে কাদিয়ানী হয়ে যাওয়া পরে আবার ইসলাম ধর্মে ফিরে আসায় কি তাদের পূর্বের বিবাহ সম্পর্ক বহাল থাকবে? যদি না থাকে তাহলে তাদের ব্যাপারে এখন করণীয় কী?
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী তারা যেহেতু সপরিবারে একসঙ্গে একই সময় কাদিয়ানী হয়ে গেছে এবং পরে আবার তওবা করে একসঙ্গে সপরিবারে ইসলাম ধর্মে ফিরে এসেছে তাই তাদের পূর্বের বিবাহ বহাল আছে। এখন তারা পূর্বের ন্যায় দাম্পত্য জীবন চালিয়ে যেতে পারবে। নতুন করে বিবাহ করতে হবে না।
-মুখতাসারুত তহাবী ২৫/-২৫৯; আলমুহীতুল বুরহানী ৪/১৯৫; আলমাবসূত, সারাখসী ৫/৪৯; আততাজরীদ ৯/৪৫৫১; বাদায়েউস সানায়ে ২/৬৫৬; রদ্দুল মুহতার ৩/১৯৬Sharable Link
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,যে মহিলা আল্লাহর উপর এবং পরকালের উপর ঈমান রাখে তার জন্য মাহরাম সাথে না থাকা অবস্থায় একদিন একরাতের পথ সফর করা হালাল নয়। এক্ষেত্রে আমার জানার বিষয় হল,মহিলাদের বংশীয় মাহরাম কতজন এবং তাদের নামের একটি তালিকা জানতে চাই।
‘মাহরাম’ দ্বারা উদ্দেশ্য হল,মহিলার ঐ সকল আত্মীয়,যাদের সাথে সবসময়ের জন্য বিবাহ হারাম। এদের মধ্যে বংশীয় মাহরাম হলেন-
১) পিতা,দাদা,নানা,প্রমুখ ঊর্ধ্বতন পুরুষগণ।
২) ছেলে,নাতি (ছেলের ঘরের নাতি এবং মেয়ের ঘরের নাতি,এভাবে নিচের দিকের পুরুষগণ)
৩) আপন ভাই, (বৈপিত্রেয় ভাই এবং বৈমাত্রেয় ভাইও এর অন্তর্ভুক্ত)
৪) মামা, (মায়ের আপন, বৈমাত্রেয় এবং বৈপিত্রেয় ভাই)
৫) চাচা, (পিতার আপন, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয় ভাই)
৬) ভাতিজা (আপন, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয় ভাইয়ের ছেলে) ও তধস্তন ছেলে সন্তানাদি।
৭) ভাগিনা (আপন, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয় বোনের ছেলে) ও তধস্তন ছেলে সন্তানাদি।
-শরহু মুসলিম, নববী ৯/১০৫; উমদাতুল কারী ৭/১২৮; বাদায়েউস সানায়ে ২/৩০০; রদ্দুল মুহতার ২/৪৬৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১৯; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/২৪৩; তাফসীরে রুহুল মাআনী ৪/২৫২; আলবাহরুর রায়েক ৩/৯৩Sharable Link
আমাদের এলাকার এক ভদ্রলোক মসজিদের জন্য একটি জায়গা ওয়াকফ করেছেন। জায়গাটিতে মসজিদ নির্মাণের পর একপাশে কিছু জায়গা খালি থেকে যায়। পরবর্তীতে এলাকার লোকজন ঐ খালি জায়গায় কবর দেওয়া শুরু করে। দীর্ঘদিন পর মসজিদ বড় করার প্রয়োজন দেখা দিলে মসজিদ কমিটি প্রায় দু’বছর আগে থেকে উক্ত জায়গায় কবর দেওয়া নিষেধ করে দেয়।
এখন জানার বিষয় হল, উক্ত জায়গাটিতে কবর দেওয়া কি ঠিক হয়েছে? এখন ঐ জায়গায় মসজিদ করা যাবে কি না?
প্রশ্নোক্ত জায়গাটি যেহেতু মসজিদের জন্য ওয়াকফকৃত তাই সেখানে কবর দেওয়া ঠিক হয়নি। কোনো স্থান যে উদ্দেশ্যে ওয়াকফ করা হয় সেখানে তা-ই করা আবশ্যক। অতএব ঐ জায়গায় মসজিদ স¤প্রসারণ করতে কোনো অসুবিধা নেই। আর স¤প্রসারণ করতে চাইলে কবরগুলো নিশ্চিহ্ন করে দিবে।
উল্লেখ্য, মৃত ব্যক্তিকে এলাকার কবরস্থান থাকলে সেখানেই কবর দিবে। যত্রতত্র কবর দেওয়াও ঠিক নয়। আর কবরস্থান না থাকলে এলাকাবাসীর যৌথ উদ্যোগে কবরস্থান বানাবে এবং সেখানেই কবর দিবে।
-দুরারুল হুককাম ২/১৩৬; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৩৬০; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/২৬১; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫৮৮; আলবাহরুর রায়েক ২/১৯৫Sharable Link
এক ব্যক্তি মসজিদ এবং মাদরাসা করার জন্য নিজ বাড়ির পাশে ৬ ডিশিমেল জায়গা দিতে চাচ্ছে। কিন্তু জমিটা গ্রামের মূল রাস্তা থেকে একটু ভিতরে। মসজিদ ও মাদরাসা করার উপযোগী নয়। গ্রামে এমনিতেই মানুষ কম। তারপর জমিটা মানুষের চলাচলের রাস্তা থেকে দূরে এবং বাড়ির সাথেই লাগানো। সেখানে মসজিদ করলে নিয়মিত ৩/৪ জন মুসল্লির বেশি পাওয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেন এলাকার মুরব্বী ও বিজ্ঞজনেরা। লোকটির পরিবারের অন্য সদস্যগণও তার এ সিদ্ধান্তে একমত নয় এবং বাড়ির লোকেরা সেখানে মসজিদ হওয়াকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। এলাকায় এমন কিছু স্থান আছে, যেখানে মাদরাসা ও মসজিদের খুবই প্রয়োজন। আশেপাশে বাড়িঘর বেশি এবং এলাকার বেশির ভাগ মানুষের চলাচলের রাস্তার পাশে কিছু জমিও আছে। এ অবস্থায় যদি লোকটি জমিটি ওয়াকফ করে তাহলে পরবর্তীতে রাস্তার নিকটে মসজিদ ও মাদরাসার উপযোগী কোনো জমি ক্রয় করে সেখানে মসজিদ ও মাদরাসা করার জন্য উক্ত জমিটি বিক্রয় করা যাবে কি না?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু এখনো জমিটি ওয়াকফ করা হয়নি বরং শুধু মনে মনে ইচ্ছা করা হয়েছে তাই এ অবস্থায় উত্তম পন্থা হল, তিনি নিজেই তার মালিকানাধীন জমিটি বিক্রি করে উপযুক্ত স্থানে একটি জমি খরিদ করে মসজিদের নামে ওয়াকফ করে দিবেন।
Sharable Link
আমাদের এলাকায় রাস্তার পাশে ফুটপাথে ছোটছোট দোকান বসে। ঘড়ি, লাইট, মোবাইল বিভিন্ন ধরনের পুরাতন জিনিস সেখানে পাওয়া যায়। এলাকার মানুষ ঐসব দোকানকে চোরাই মার্কেট বলে। সবাই বলে, সেখানে চুরির মাল বিক্রি হয়।
আমার প্রশ্ন হল, ঐসব দোকান থেকে কোনো কিছু কেনা কি জায়েয হবে?
চোরাই মাল ক্রয় করা জায়েয নেই। তাই বাস্তবেই যদি সেটি চোরাই মার্কেট হয়ে থাকে তাহলে সেখান থেকে কোনো কিছু ক্রয় করা জায়েয হবে না।
-রদ্দুল মুহতার ৪/৫০৪-৫০৫Sharable Link
গত কুরবানীর ছুটিতে বাড়িতে যাওয়ার জন্য ট্রেনের টিকেট কিনেছিলাম। পরে ঐ সময় আর বাড়িতে যাওয়া হচ্ছে না বিধায় ঐ টিকেট আরেক ব্যক্তিকে পঞ্চাশ টাকা বেশিতে বিক্রি করেছি। হুজুরের নিকট জানতে চাই, আমার জন্য ঐ টিকেট অধিক মূল্যে বিক্রি করা জায়েয হয়েছে কি?
টিকেট বিক্রি করে অতিরিক্ত মূল্য নেওয়া জায়েয হয়নি। তাই অতিরিক্ত পঞ্চাশ টাকা ঐ ব্যক্তিকে ফেরত দিবে। যদি তাকে পাওয়া সম্ভব না হয় তবে তা সদকা করে দিতে হবে।
-কিতাবুল আছল ৩/৪৬৩; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৬৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৩/১১৮; আলমুহীতুল বুরহানী ১১/২৬৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৫/৫০Sharable Link
২০০৬ সালে আমি দেশের বাইরে কর্মরত ছিলাম। বাবা ফোনে জানালেন, টঙ্গীতে ৬ কাঠার ভালো একটি জমি বিক্রি হবে তুই রাখবি নাকি? আমি লাগাতার তিন মাস টাকা পাঠালাম জমিটা আমার নামে কেনার জন্য। বাবা আমাকে জানালেন, তোর জন্য ঐ জমিটা কিনেছি।
গত বছর ২০১৩ সালে আমি দেশে এসে যখন বাবার কাছে ঐ জমির দলিলপত্র চাই তখন বাবা বলেন, ঐ জমি তো আমার নামে দলিল করে নিয়েছি। তো সেটা আমারই থাক। তোকে তোর টাকা ফিরিয়ে দিচ্ছি- এই বলে আমি তখন যত টাকা দিয়েছিলাম বাবা ততটাকা আমাকে ফিরিয়ে দিতে চাইলেন। অথচ ঐ জমির দাম এই সাত বছরে তিন গুণের মতো বেড়েছে।
এখন আমার প্রশ্ন হল, উক্ত জমি বাবা নিজের নামে দলিল করে নেওয়ার কারণে সেটা কি বাবার হয়ে যাবে? যদি তাই হয় তাহলে আমি এখন ৭ বছর পূর্বে জমির যে মূল্য ছিল সেটাই পাব, নাকি জমির বর্তমান মূল্য? অনুগ্রহ করে জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ঐ জমির প্রকৃত মালিক আপনিই। আপনার বাবা আপনার পক্ষ থেকে ক্রয়ের প্রতিনিধিমাত্র। তাই জমিটি তার নামে দলিল করা অন্যায় হয়েছে। নিজের নামে দলিল করলেও তিনি এ জমির মালিক নন। সুতরাং এখন আপনার বাবার কর্তব্য হল, নিজ খরচে ঐ জমি আপনার নামে দলিল করে দেওয়া।
অবশ্য আপনি চাইলে ঐ জমি আপনার বাবার নিকট বিক্রিও করে দিতে পারেন। এক্ষেত্রে জমির বর্তমান মূল্য দাবি করাও আপনার জন্য জায়েয। কিন্তু জোরপূর্বক জমির ক্রয়মূল্য ফিরিয়ে দেওয়া তার জন্য জায়েয হবে না।
-মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়াহ, মাদ্দাহ : ১৪৮৫; শরহুল মাজাল্লাহ ৪/৪৬; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৫১৭Sharable Link
আমাদের মহল্লায় শীতের মৌসুমে ব্যাডমিন্টন খেলা হয়। এ বছর মহল্লার কিছু যুবক ছেলে টুর্নামেন্ট ছেড়েছে। মোট ২৪টি দলে ৪৮ জন খেলোয়াড় থাকবে। সবার থেকে ৫০০/- টাকা করে চাঁদা করা হয়েছে। ২০০/- টাকা খেলার খরচ বাবদ, আর বাকি টাকা দিয়ে বিজয়ী দুই দলকে পুরস্কার দেওয়া হবে।
হুযুরের কাছে জানতে চাই, এভাবে খেলাধুলা শরীয়তে বৈধ কি?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সকল প্রতিযোগী থেকে চাঁদা নিয়ে তা থেকে বিজয়ী দলকে পুরস্কার দেওয়া নাজায়েয। এটি জুয়ার অন্তর্ভুক্ত। তাই এভাবে টুর্ণামেন্ট আয়োজন করা বৈধ হবে না। এছাড়া ইসলামে শরীর চর্চা ও খেলাধূলার যে সীমারেখা রয়েছে তা বর্তমানের এসব টুর্ণামেন্টে ঠিক থাকে না। যেমন, টুর্ণামেন্টে অংশগ্রহণকারী দল ও দর্শকবৃন্দ নামায থেকে উদাসীন থাকে। টুর্ণামেন্টকে কেন্দ্র করে মূল্যবান সময় ও বিপুল অর্থের অপচয় হয়। এছাড়া আরো বিভিন্ন গর্হিত কাজ এতে হয়ে থাকে। তাই এ জাতীয় টুর্ণামেন্ট আয়োজন করা শরীয়তসম্মত নয়। অবশ্য খেলাধূলা ও শরীর চর্চার বৈধ সীমারেখার ভেতরে থেকে এবং উপরোক্ত ত্রুটিসমূহ থেকে বিরত থেকে শরীর চর্চার নিয়তে ব্যাডমিন্টন খেলা জায়েয।
-জামে তিরমিযী, হাদীস : ১৬৩৭; রদ্দুল মুহতার ৬/৪০২; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/১৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩২৪; তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ৪/৪৩৬Sharable Link
সুদের টাকা দিয়ে মাদরাসা বা মসজিদের টয়লেট নির্মাণ বা পুননির্মাণ করা জায়েয হবে কি?
সুদের টাকা মূল মালিককে ফিরিয়ে দেওয়া আবশ্যক। যদি মালিক জানা না থাকে বা মালিককে ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব না হয় তাহলে ঐ টাকা সদকা করা ওয়াজিব। সেক্ষেত্রে ঐ টাকা কোনো গরীব-মিসকীনকে সদকা করে দিতে হবে। এ টাকা মসজিদ-মাদরাসার টয়লেটের কাজেও না লাগানো উচিত।
-শরহুল মাজাল্লাহ, মাদ্দাহ : ৯৭; রদ্দুল মুহতার ৬/৩৮৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৪/১৭১Sharable Link
কাসেম, শফিক ও দীন মুহাম্মাদ। তারা তিন ভাই একসাথে নৌকা নিয়ে মাছ ধরত। দু’ এক মাস আগে সাগরের আবহাওয়া খারাপ হলে তারা তিন ভাই নৌকা ডুবে মারা যায়। তাদের মধ্যে কাসেমের এক স্ত্রী, দুই ছেলে, শফিকের এক স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়ে আছে। আর দীন মুহাম্মাদ বিয়ে করেনি। তাদের মা-বাবা, এক ভাই, দুই বোন জীবিত আছে।
এখন ওয়ারিশগণ জানতে চায় যে, মৃত তিন ভাইয়ের মীরাস তাদের মধ্যে কীভাবে বণ্টন করা হবে?
উল্লেখ্য, তিন ভাইয়ের মৃত লাশ উদ্ধার করা হয়। তাদের মধ্যে কার আগে কে মারা গেছে তা জানা যায়নি।
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ঐ মৃত তিন ভাইয়ের রেখে যাওয়া নিজ নিজ সম্পত্তি থেকে প্রথমে তাদের কাফন-দাফনের খরচ (প্রয়োজন হলে) সম্পন্ন করতে হবে। অতপর তাদের কোনো ঋণ থাকলে তা (নিজ নিজ সম্পত্তি থেকে) পরিশোধ করতে হবে। এরপর তাদের কারো কোনো বৈধ অসিয়ত থাকলে তা ঐ ব্যক্তির অবশিষ্ট সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ থেকে আদায় করতে হবে। অতপর প্রত্যেকের অবশিষ্ট সম্পত্তি নিজ নিজ ওয়ারিশদের মাঝে নিম্নে বর্ণিত তফসীল অনুযায়ী বণ্টন করতে হবে।
কাসেমের রেখে যাওয়া সম্পত্তি তার ওয়ারিশগণ নিম্নের নিয়মে পাবে।
বাবা : ১৬.৬৬%, মা : ১৬.৬৬%, স্ত্রী : ১২.৫% আর প্রত্যেক ছেলে ২৭.০৮৩% করে পাবে।
আর শফিকের রেখে যাওয়া সম্পত্তি তার ওয়ারিশগণ নিম্নের শতকরা হারে পাবে।
বাবা : ১৬.৬৬%, মা : ১৬.৬৬%, স্ত্রী : ১২.৫%, ছেলে : ৩৬.১১১% ও মেয়ে : ১৮.০৫৫%।
দীন মুহাম্মাদের রেখে যাওয়া সম্পত্তি তার ওয়ারিশগণ নিম্নোক্ত হারে পাবে-
বাবা : ৮৩.৩৩৩%, মা : ১৬.৬৬৬%।
উল্লেখ্য, মৃত তিন ভাইয়ের সম্পত্তি থেকে তাদের ভাই-বোনেরা বাবা জীবিত থাকার কারণে কোনো হিস্যা পাবে না।
আরো উল্লেখ্য যে, এভাবে একাধিক লোক একত্রে মৃত্যুবরণ করলে যদি তাদের মধ্যে কে আগে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে তা জানা না যায় তাহলে সেক্ষেত্রে তারা নিকটাত্মীয় হলেও একে অন্যের থেকে কোনো মীরাস পায় না।
-সূরা নিসা (৪) : ১১; সহীহ বুখারী, হাদীস : ৬৭৩২; সুনানে বায়হাকী ৬/২২২; আলবাহরুর রায়েক ৮/৪৮৯, ৪৯৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৬/৪৪৮, ৬/৪৫০, ৬/৪৫১, ৬/৪৫৭; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৭৭০; আলমুহীতুল বুরহানী ২৩/৪০৬; রদ্দুল মুহতার ৬/৭৯৮Sharable Link
আমাদের এলাকায় বহুল প্রচলিত একটি বিষয় সম্পর্কে হুযুরের নিকট জানতে চাই। দয়া করে জানালে উপকৃত হব।
সাধারণ লোকজন কবর ও মাযারের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় হাতের ইশারায় বা কবরের দেয়াল স্পর্শ করে কবরবাসীকে সালাম দিতে দেখা যায়। এভাবে সালাম দেওয়ার প্রচলন শরীয়তসম্মত কি না?
কবরবাসীকে সালাম দেওয়া এবং যিয়ারত করার পদ্ধতি হাদীসে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ হয়েছে। সে পদ্ধতি ছাড়া কবরবাসীর সাথে অন্য কোনো আচরণ বৈধ নয়। হাতের ইশারায় কিংবা কবরের দেয়াল ছুঁয়ে সালাম দেওয়া এবং কবরকে চুমু দেওয়া বিদআত ও নাজায়েয।
কবরবাসীকে সালাম দেওয়ার সহীহ পদ্ধতি বিভিন্ন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। আয়েশা রা. বলেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ রাতে বাকী, কবরস্থানে যেতেন এবং বলতেন-
السلام عليكم دار قوم مؤمنين، وإنا إن شاء الله بكم لاحقون.
(অর্থ :) হে মুমিন কবরবাসী! তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। ইনশাআল্লাহ আমরাও তোমাদের সাথে মিলিত হব। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৪৯
অন্য হাদীসে এসেছে, সুলায়মান রাহ. তার পিতা বুরায়দা রা. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে শিক্ষা দিতেন, তারা যখন কবরস্থানে যাবে কবরবাসীকে যেন এভাবে সালাম দেয়-
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لَاحِقُونَ، نَسْأَلُ اللَّهَ لَنَا وَلَكُمُ الْعَافِيَةَ
(অর্থ:) হে মুমিন ও মুসলিম কবরবাসী! আপনাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমরাও ইনশাআল্লাহ আপনাদের সাথে মিলিত হব। আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করছি তিনি যেন আমাদেরকে এবং আপনাদেরকে শান্তি দান করেন। -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৫৪৭
অতএব হাদীসে বর্ণিত নিয়মেই কবরবাসীকে সালাম দিতে হবে। হাতের ইশারায় বা কবর ছুঁয়ে সালাম দেওয়া যাবে না।
-ফাতহুল কাদীর ২/১০২; আলবাহরুর রায়েক ২/১৯৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৬; মিরকাতুল মাফাতীহ ৪/২১৯; আলমাদখাল, ইবনুল হাজ্জ ১/২৫৪Sharable Link
আকীকার হাদীসের মধ্যে যে রাহীনাতুন শব্দ আছে এর দ্বারা উদ্দেশ্য কি? যে আকীকা করবে না, সে কি শাফাআত থেকে মাহরূম হবে?
প্রশ্নে উল্লেখিত হাদীসটি হল-
عن سمرة بن جندب عن النبي صلى الله عليه وسلم أنه قال : كل غلام رهينة بعقيقته تذبح عنه يوم سابعه ويحلق ويسمى.
অর্থ : প্রতিটি সন্তান আকীকার সাথে আবদ্ধ থাকে। সপ্তম দিনে তার পক্ষ থেকে পশু যবাই করবে, তার মাথা মুণ্ডিয়ে দিবে এবং তার নাম রাখবে। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৮৩১; মুসনাদে আহমদ, হাদীস ২০০৮৩
হাদীসে উল্লেখিত রাহীনাতুন শব্দের আভিধানিক অর্থ, আবদ্ধ, বন্ধকী বস্তু। (মাজমাউ বিহারিল আনওয়ার ২/৪০৭; লিসানুল আরব ৫/৩৪৮) হাদীস ভাষ্যকারগণ এক্ষেত্রে শব্দটির বিভিন্ন ব্যাখ্যা উল্লেখ করেছেন- ক) পিতামাতার জন্য নাবালেগ সন্তানের সুপারিশ আকীকার সাথে সম্পৃক্ত। অর্থাৎ সন্তান যদি নাবালেগ অবস্থায় মারা যায় এবং তার আকীকা করা না হয়ে থাকে তবে সে তার পিতামাতার জন্য সুপারিশ করবে না। প্রশ্নে শাফাআত থেকে মাহরূম হবে বলে যে কথা বলা হয়েছে এর অর্থ সন্তানের শাফাআত।
খ) সন্তানের নিরাপত্তা, শারীরিক সুস্থতা ও বৃদ্ধি আকীকার সাথে সম্পৃক্ত।
গ) সন্তান লাভ করা আল্লাহর পক্ষ থেকে নিআমত। এর প্রতি শুকরিয়া জ্ঞাপন আকীকার সাথে আবদ্ধ। এছাড়াও রাহীনাতুনের আরো অনেক ব্যাখ্যা রয়েছে।
-মিরকাতুল মাফাতীহ ৮/৭৭-৭৮; ফায়যুল কাদীর ৪/৪১৫; ফাতহুল বারী ৯/৫০৮; উমদাতুল কারী ২১/৮৮; আততালীকুল মুমাজজাদ ২/৬৫৭; বাযলুল মাজহূদ ১৩/৮২Sharable Link
আমাদের এক সহপাঠী উচ্চস্বরে কুরআন তিলাওয়াত করে থাকেন এবং সিজদার আয়াত এলেও উচ্চস্বরে পড়েন। অথচ সে সময় আমরা অনেকেই অযু অবস্থায় থাকি না কিংবা অযু অবস্থায় থাকলেও সিজদা আদায় করতে ভুলে যাই। তাই আমরা তাকে অনুচ্চস্বরে সিজদার আয়াত পড়তে বলি। কিন্তু সে আমাদের কথায় কর্ণপাত করে না; বরং বিভিন্ন ধরনের যুক্তি দিয়ে থাকে। মুফতী সাহেবের কাছে প্রশ্ন হল, বর্ণিত অবস্থায় তিলাওয়াতের সময় সিজদার আয়াত আস্তে পড়ার বিধান আছে কি? আশা করি উত্তর জানাবেন।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সিজদার আয়াত অনুচ্চস্বরেই তিলাওয়াত করা উচিত। কেননা উপস্থিত লোকজন সিজদা আদায়ে প্রস্তুত না থাকলে কিংবা ভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকলে সিজদার আয়াত উচ্চস্বরে না পড়া উত্তম।
-বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৫০; আননাহরুল ফায়েক ১/৩৪৩; আদ্দুররুল মুখতার ২/১১৮; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫০৫Sharable Link
কোনো কোনো ব্যক্তিকে সালাম দিলে তারা মুখে জবাব দেন না; বরং মাথা কিংবা হাত নাড়িয়ে সালামের উত্তর দেন। প্রশ্ন হল, এভাবে ইশারার মাধ্যমে সালামের জবাব দেওয়া কি শরীয়তসম্মত? আশা করি উত্তর জানাবেন।
শুধু ইশারার মাধ্যমে সালামের আদান-প্রদান করা শরীয়তসম্মত নয়। সালাম আদান-প্রদানের সঠিক পদ্ধতি হল, মৌখিকভাবে দেওয়া। সালাম কোন শব্দে দিবে এবং কীভাবে দিবে তা একাধিক হাদীস দ্বারা প্রমাণিত এবং এ ব্যাপারে কুরআন কারীমেও নির্দেশনা এসেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, (তরজমা) যখন তোমাদেরকে সালাম দেওয়া হয় তোমরা জবাব দাও তার চেয়ে উত্তম পন্থায় অথবা উত্তরে তাই বল। -সূরা নিসা ৪ : ৮৬
সুতরাং মুখে জবাব না দিয়ে শুধু ইশারা করলে সালামের উত্তর আদায় হবে না। এছাড়া সালামদাতা নিকটে থাকলে তাকে শুনিয়ে জবাব দেওয়া ওয়াজিব। অবশ্য সালামদাতা যদি বধির হয় কিংবা দূরে থাকে তাহলে মুখে উত্তর দেওয়ার পাশাপাশি ইশারার মাধ্যমেও জবাবের কথা তাকে বুঝিয়ে দেওয়া বাঞ্ছনীয়।
-সহীহ বুখারী, হাদীস ৬২২৭; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৪১৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩৩৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/১৮;আল আরফুশ শাযী ৪/১৪২Sharable Link