মুহাম্মাদ গিয়াসুদ্দীন - সদর, রংপুর

২৫৯২. Question

শুনেছি, ব্যবহৃত পানি দ্বারা অযু বা গোসল করার অনুমতি নেই। কিছুদিন আগে ফরয গোসল করার সময় আমার গা বেয়ে পানির বেশ কিছু ছিটা বালতিতে পড়ে পানির স্বল্পতার কারণে পানি দিয়েই গোসল সম্পন্ন করি। পানি দ্বারা আমার গোসল হয়েছে কি না?

উল্লেখ্য, গোসলের সময় শরীর এবং কাপড়ের কোথাও বাহ্যিক কোনো নাপাকি ছিল না।

 

 

Answer

আপনার ঐদিনের গোসল সহীহ হয়েছে। কেননা ফরয গোসলের সময় শরীরে বাহি্যক নাপাকি লেগে না থাকলে শরীর থেকে পানির ছিটা বালতি, ড্রাম বা এ ধরনের ছোট পাত্রে পড়লেও সে পানি দিয়ে অযু-গোসল করা যাবে। এ কারণে ঐ পানি অযু-গোসলের জন্য ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে যাবে না।

বিখ্যাত তাবেয়ী ইমামম যুহরী রাহ.কে জনৈক ব্যক্তির (গোসলের হুকুম) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়, যার গোসল করার সময় গা বেয়ে পানির ছিটা পাত্রে পড়েছিল। উত্তরে তিনি বলেছিলেন, এতে ক্ষতির কিছু নেই।মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ১/৯২, হাদীস : ৩১১

প্রকাশ থাকে যে, গোসলের পূর্বে শরীর এবং কাপড় থেকে বাহ্যিক নাপাকি দূর না করে গোসল করলে যদি নাপাক স্থান থেকে পানি ছিটে বালতির পানিতে পড়ে তবে ঐ পানি নাপাক হয়ে যাবে।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৩; মাবসূত, সারাখসী ১/৪৮; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাদ্দুর ১/১০৪

Sharable Link

মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ - রাউজান, চট্টগ্রাম

২৫৯৩. Question

নামাযে ইমাম সাহেব যদি ভুল করেন তাহলে আমরা আল্লাহু আকবার বলে লোকমা দেই। কয়েকদিন আগে আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব ভুল করে যোহরের নামাযের দ্বিতীয় রাকাতে না বসে দাঁড়িয়ে যান। তখন আমরা যথারীতি আল্লাহু আকবার বলে লোকমা দেই। নামায শেষে একজন আলেম বললেন, হাদীস ফিকহের কিতাবাদিতে সুবহানাল্লাহ বলে লোকমা দেওয়ার কথা আছে। আল্লাহু আকবার বলে নয়। সুতরাং সুবহানাল্লাহ বলাই উচিত। আলেমের কথা কি সঠিক? জানিয়ে বাধিত করবেন।


Answer

হ্যাঁ আলেম ঠিক বলেছেন। ইমামের কোনো ভুল হলে সুবহানাল্লাহ বলে লোকমা দেওয়া সুন্নত।কেননা একাধিক হাদীসে সুবহানাল্লাহ বলে লোকমা দেওয়ার কথা উল্লেখ হয়েছে। রাসূলে কারীমসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেননামাযে কোনো সমস্যা দেখা দিলে যেন সুবহানাল্লাহবলে।-সহীহ বুখারী /১৬৫

অন্য এক বর্ণনায় এসেছেরাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (চার রাকাত বিশিষ্ট নামাযে)দ্বিতীয় রাকাতে না বসে দাঁড়িয়ে যান। তখন সাহাবায়ে কেরাম সুবহানাল্লাহ বলে লোকমাদিয়েছেন।-সুনানে নাসায়ী /১৩২

সুতরাং কোনো ভুলের ব্যাপারে ইমামকে সতর্ক করতে চাইলে আল্লাহু আকবার না বলে সুবহানাল্লাহবলা উচিত।

-শরহু মাআনিল আছার ১/২৯৪; নুখাবুল আফকার ৪/৩৬৯; আলমাবসূত ১/২০০; মুহীতুল বুরহানী ২/২১৩; শরহুল মুনইয়া ৪৪৯

Sharable Link

মুহাম্মাদ রাকিবুল ইসলাম - ত্রিশাল, ময়মনসিংহ

২৫৯৪. Question

হাদীস শরীফে এসেছে চল্লিশ দিন তাকবীরে উলার সাথে জামাতে নামায আদায় করলে দুটি মুক্তির সনদপত্র লেখা হয়। একটি হল জাহান্নাম থেকে মুক্তি। আর একটি হল নেফাক থেকে মুক্তি।

জানার বিষয় হল, তাকবীরে উলার সময় কতটুকু, ইমামের সাথে সাথেই তাকবীরে তাহরীমা বলতে হবে নাকি প্রথম রাকাত পেলেই তাকবীরে উলা পেয়েছে বলে ধরা হবে? জানালে উপকৃত হব।


Answer

তাকবীরে উলা সম্পর্কিত হাদীসটি নিম্নরূপ :

من صلى أربعين يوما في جماعة يدرك التكبيرة الأولى كتب له براءتان : براءة من النار، وبراءة من النفاق

অর্থ : যে ব্যক্তি চল্লিশ দিন জামাতে নামায আদায় করবে এবং সে প্রথম তাকবীরও পাবে তার জন্যদুটি মুক্তির পরওয়ানা লেখা হবে। (একজাহান্নাম থেকে মুক্তি। (দুইনেফাক থেকে মুক্তি।-সুনানেতিরমিযী /৩৩আততারগীব /২৬৩

 হাদীস থেকে স্পষ্ট হয় যেইমামের প্রথম তাকবীর বলার সাথে সাথে তাকবীর বলে নামায শুরুকরলে তাকবীরে উলা পাবে। সুতরাং ইমামের তাকবীরে তাহরীমার সাথেই নামাযে শরিক হওয়ারচেষ্টা করতে হবে। প্রকাশ থাকে যেসূরা ফাতেহা শেষ হওয়ার আগে জামাতে শরিক হতে পারলেওকোনো কোনো ফকীহ তাকবীরে উলার সওয়াব হাসিল হয়ে যাবে বলে উল্লেখ করেছেন।

-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৫৪; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১০৭; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ১৪০; রদ্দুল মুহতার ১/৫২৬

Sharable Link

মুহাম্মাদ হেদায়াতুল্লাহ - কেন্দুয়া, নেত্রকোণা

২৫৯৫. Question

আমরা জানি, ইমামকে রুকুতে পেলে রাকাত পাওয়া যায়। ইমামকে রুকু থেকে দাঁড়ানো অবস্থায় বা সিজদারত বা বসা অবস্থায় পেলে সেই রাকাত পাওয়া যায় না। সকল অবস্থায় রাকাত পাওয়া না গেলেও ইমামের সাথে তখনি জামাতে শরিক হতে হবে নাকি ইমামের দাঁড়ানোর অপেক্ষা করতে হবে? জানালে উপকৃত হব।


Answer

ইমামের সাথে রুকু না পেলেও ইমামকে নামাযের যে অবস্থাতেই পাওয়া যাবে অপেক্ষা না করেতখনই জামাতে শরিক হয়ে যাবে।  ব্যাপারে হাদীস শরীফে সুস্পষ্ট নির্দেশনা এসেছে। রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

إذا وجدتم الإمام فقوموا أو قاعدا فاقعدوا أو راكعا فاركعوا أو ساجدا فاسجدوا.

তোমরা ইমামকে নামাযে দাঁড়ানো অবস্থায় পেলে  দাঁড়িয়ে যাবে। বৈঠক অবস্থায় পেলে বসে পড়বে।আর রুকু অবস্থায় পেলে রুকুতে চলে যাবে। আর সিজদায় পেলে সিজদায় শরিক হয়েযাবে।

-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ২/৪৫৯; আলমাতালিবুল আলিয়া, হাদীস : ৪৭৯; উমদাতুল কারী ৫/১৫২; ফাতহুল বারী ২/১৪০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৯১;

Sharable Link

ইশতিয়াক আহমদ - আহনাফ এন্টারপ্রাইজ, যশোর

২৫৯৬. Question

জনৈক ইমাম সাহেব ওয়াক্তিয়া নামাযের জামাতে একাধিক সূরা পড়েন। যেমন-ফজরের জামাতে প্রথম রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা বুরুজ পড়েন অতপর সূরা ত্বরিক পড়েন। দ্বিতীয় রাকাতে প্রথম রাকাতের ন্যায় সূরা ফাতিহার পর সূরা দুহা এবং সূরা আলাম নাশরাহ পড়েন।

উল্লেখ্য যে, একাধিক সূরা পড়ার মাঝে আস্তে বিসমিল্লাহ পড়েন। আমার প্রশ্ন হল, এভাবে জামাতের নামাযে বা একাকী নামায একাধিক সূরা পড়া আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমানিত কি না বিস্তারিত জানিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন।

Answer

ফরয ও অন্যান্য নামাযের এক রাকাতে একাধিক সূরা পড়া জায়েয আছে। ‍ তবে ফরয নামাযে একাধিক সূরা না পড়াই উত্তম।  রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আমল এমনই ছিল।  তিনি যেসব সূরা পড়তেন হাদীসের কিতাবে তার বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। তিনি ফরয নামাযে একেক রাকাতে অনেক বড় বড় সূরাও পড়েছেন।  কিন্তু একই রাকাতে একাধিক সূরা পড়তেন না।

সাহাবী-তাবেয়ীগণের আমলও এমনই ছিল।  যায়েদ ইবনে খালেদ জুহানী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি এক রাকাতে দুটি সূরা মিলানো পছন্দ করি না। যদিও আমাকে অতি মূল্যবান লাল উট দেওয়া হয়।  (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৩৭২৮)

উল্লেখ্য, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের নামাযে সূরা তাকবীর, সূরা তূর এবং এ জাতীয় সূরা পড়তেন। এছাড়া সূরা ইয়াসীন, সূরা মুমিনুন, সূরা রুম ও অন্যান্য সূরা ফজরের নামাযে পড়ার কথাও হাদীস শরীফে এসেছে।

-সহীহ মুসলিম ১/১৮৭; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৩/২৫৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৯৮; ফাতহুল কাদীর ১/২৯৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৬৭

Sharable Link

মুহাম্মাদ আবু রায়হান রফিক - গোপালগঞ্জ

২৫৯৭. Question

আমাদের এলাকায় এক ব্যক্তি মারা গেছেন। তার পিতা বেঁচে আছেন এবং তার একটি ছেলেও রয়েছে। পিতা আলেম, ছেলেটিও মাদরাসায় পড়ে। তার জানাযার নামায তার পিতা পড়িয়েছেন। কিন্তু জানাযার পর কিছু লোক বলাবলি করছিল যে, ছেলের নামায পড়ানো উচিত ছিল। কারণ সে তার পিতার জানাযা পড়ানোর বেশি হকদার। এখন জানতে চাচ্ছি যে, মৃত ব্যক্তির পিতা-পুত্রের মধ্যে তার জানাযার নামায পড়ানোর অধিক হকদার কে?


Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে পিতা যেহেতু আলেম তাই তার ইমামতি করা নিয়মানুযায়ী হয়েছে। মৃত ব্যক্তিরপিতা  ছেলে উভয়েই জানাযা পড়ানোর যোগ্য হলে পিতাই ইমামতির অধিক হকদার। তবে পিতাযদি মাসআলা-মাসায়েল সম্পর্কে অবগত না হন আর পুত্র আলেম হয় সেক্ষেত্রে সে- ইমামতিরজন্য অগ্রগণ্য হবে।

-কিতাবুল আছল ১/৪২৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৮৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৬১; রদ্দুল মুহতার ২/২২

Sharable Link

মুহাম্মাদ নূরনবী - দিনাজপুর

২৫৯৮. Question

আমাদের এক দূর-সম্পর্কের আত্মীয় কয়েকদিন আগে মারা গেছেন। মারা যাওয়ার অনেক আগে থেকেই তার অসিয়ত ছিল যে, তাকে যেন তার গ্রামের বাড়ি বরিশালে তার মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়। কিন্তু তিনি মারা যাওয়ার পর তার ছেলেরা যাতায়াত সমস্যাসহ বিভিন্ন কারণে তাকে ঢাকাতেই দাফন করে। এখন নিয়ে মৃতের ভাই-বোনদের সাথে তার ছেলেদের গন্ডগোল হচ্ছে। তারা বলছেন যে, অসিয়ত পূরণ না করাটা অনেক বড় অন্যায় হয়েছে। ছেলেরা তা মানতে নারাজ। দয়া করে সঠিক বিষয়টি জানালে কৃতজ্ঞ হব।


Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে তাকে ঢাকায় দাফন করা ঠিক হয়েছে। কেননা মানুষ যে এলাকায় মারা যায়তাকে  এলাকার বা পার্শ্ববর্তী এলাকার কবরস্থানে দাফন করা উত্তম। আর বরিশালে দাফন নাকরাটা অন্যায় হয়নি। কারণ মৃতের এই অসিয়তটি শরীয়তের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য নয়। তাইওয়ারিসদের জন্য তা পূর্ণ করাও জরুরি নয়।

-আলমুহীতুল বুরহানী ২৩/৪০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/২৩৫; রদ্দুল মুহতার ২/২২১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৮১

Sharable Link

মুহাম্মাদ আবু তাহের - সদর, কুমিল্লা

২৫৯৯. Question

সীতাকুন্ড ইকোপার্ক আমাদের বাড়ি থেকে শত কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। গত রমযানে আমরা দুই বন্ধু সেখানে ঘুরতে গেলাম। দুপুরের দিকে কষ্ট হচ্ছিল বলে আমি রোযা ভেঙ্গে ফেলি। কিন্তু আমার বন্ধু ভাঙ্গেনি। তার মত ছিল আনন্দ ভ্রমণের সামান্য কষ্টের অজুহাতে রোযার মতো গুরুত্বপূর্ণ আমল নষ্ট করা কিছুতেই সঙ্গত হবে না। জানার বিষয় হল, আমার বন্ধুর মত ঠিক কি না? ঠিক হলে আমার উপর কাফফারা আসবে কি না?


 

 

Answer

রমযানে রোযা রাখা অবস্থায় দিনের বেলা সফরে বের হলে সাধারণ কষ্টের কারণে রোযা ভাঙ্গাজায়েয নয়। তবে এক্ষেত্রে কেউ রোযা ভেঙ্গে ফেললে এর কারণে তাকে কাযা আদায় করতে হবে।কাফফারা আদায় করতে হবে না।

উল্লেখ্য যেসফর অবস্থায় রোযার বিধান সম্পর্কে অনেকের ভুল ধারণা রয়েছে। এক্ষেত্রে মাসআলাহলসফরে থাকা অবস্থায় দিনের শুরু থেকে রোযা না রাখার সুযোগ আছে। কিন্তু সফর অবস্থায়রোযা শুরু করে দিলে অথবা রোযা রেখে দিনের বেলায় সফরে বের হলে কঠিন ওজর ছাড়া রোযাভাঙ্গার অনুমতি নেই।

-মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৪/২৭০, হাদীস : ৭৭৬৬; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাদ্দুর ১/৪৬৩; আলবাহরুর রায়েক ২/২৮২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৪০৩

Sharable Link

মুহাম্মাদ মাসুম - মোমেনশাহী

২৬০০. Question

আমি রোযা অবস্থায় মিসওয়াক করছিলাম। হঠাৎ দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত বের হয়ে থুথুর সাথে পেটে চলে যায়। এতে কি আমার রোযা ভেঙ্গে গেছে? জানিয়ে বাধিত করবেন।


Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে গলায় যদি রক্তের স্বাদ অনুভূত হয় কিংবা রক্ত যদি থুথুর সমপরিমাণ বা বেশি হয়েথাকে তাহলে তা গিলে ফেলার দ্বারা রোযাটি ভেঙ্গে গেছে।

এক্ষেত্রে  রোযা কাযা করতে হবে। আর যদি থুথুর চেয়ে রক্তের পরিমাণ কম হয় এবং গলায়স্বাদও অনুভূত না হয় তাহলে রোযাটি ভাঙ্গেনিতা সহীহ হয়েছে।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৫০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৫৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৯৬; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/৯৮; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৩; ফাতাওয়াত হিন্দিয়া ১/২০৩; ফাতহুল কাদীর ২/২৫৮

Sharable Link

হাফেয মুহাম্মাদ ফখরুল হাসান - শিকারপুর, তারাকান্দা, ময়মনসিংহ

২৬০১. Question

 

যাকাত ইংরেজি মাস হিসেবে, না চন্দ্র মাস হিসেবে, নাকি বাংলা মাস হিসেবে দিতে হবে? জানালে উপকৃত হব।


 

Answer

যাকাত চন্দ্রবর্ষ অনুযায়ী আদায় করা জরুরি। বাংলা বা ইংরেজি বর্ষের হিসাব এক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্যনয়। কারো যদি চন্দ্রবর্ষের হিসাব রাখতে অসুবিধা হয় তবে প্রত্যেক ইংরেজি বর্ষের ১১ দিন পূর্বেইচন্দ্রবর্ষ পূরণ হয়েছে বলে ধরে নিবে এবং সে অনুযায়ী যাকাত আদায় করবে এবং পরের বছরেরহিসাব  ১১ দিন পূর্ব থেকেই শুরু করবে। কারণ হিজরী সন ইংরেজি সন থেকে ১১দিন কম হয়েথাকে।

-আলবাহরুর রায়েক ২/২০৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭৫; আলমুহাল্লা ৪/৭৫; আততাওকীতুল হাওলী ফিয যাকাত ২৫

Sharable Link

মুহাম্মাদ মাহবুবুর রশীদ - ৩৬ পূর্ব কাজিপাড়া, মিরপুর, ঢাকা

২৬০২. Question

ব্যবসা করার জন্য যে মাল ক্রয় করা হয় তার যাকাত দিতে হবে কি না? ক্রয়কৃত মাল সারা বছরব্যাপী মজুত থাকবে না। তবে সারা বছরব্যাপী মাল ক্রয়-বিক্রয় চলতে থাকবে।


Answer

ব্যবসাপণ্য যাকাতযোগ্য সম্পদ। ব্যবসায়ীর যে দিন যাকাত-বর্ষ পূর্ণ হবে সেদিন তার নিকট বিক্রয়েরজন্য যেসব মালামাল থাকবে সেগুলোর মূল্য হিসাব করে যাকাত দিতে হবে। বছরের মাঝে মালামালকমবেশি যাই থাকুক তা ধর্তব্য নয়।

-মুখতাছারুত তাহাবী ৫০; রদ্দুল মুহতার ২/৩০২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭৯

Sharable Link

মুহাম্মাদ হুযায়ফা বিন শিহাব - সদর, কিশোরগঞ্জ

২৬০৩. Question

যদি একই দেশের বিভিন্ন স্থানে স্বর্ণ-রূপার বিভিন্ন দর প্রচলিত থাকে তাহলে টাকা-পয়াসা ব্যবসার সম্পদের যাকাতের নিসাব নির্ধারণের ক্ষেত্রে কোন স্থানের দর ধর্তব্য হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।


Answer

আমাদের দেশে রূপার ক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক কোনো একক দর নির্ধারিত থাকে না। তাই যদিদেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন দরে রূপার লেনদেন হয় তাহলে সেক্ষেত্রে যাকাতদাতার সম্পদ যে স্থানেরয়েছে সে স্থানের কাঁচা রূপার দর অনুযায়ী নিসাব নির্ধারণ করতে হবে।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৩/১৬৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৮৬; ফাতহুল কাদীর ২/১৬৭; আলবাহরুর রায়েক ২/২২৯; আলফিকহুল ইসলামী ও আদিল্লাতুহু ২/৭৬০; মাজমূআতুল ফাতাওয়াশ শারইয়াহ ৭/৭৪

Sharable Link

মুহাম্মাদ রাশেদুল ইসলাম - দিনাজপুর

২৬০৪. Question

আমি এলাকার এক ব্যক্তির সাথে হজ্বে যাই। সে ইহরাম অবস্থায় বহনের সুবিধার্থে কখনো নিজের লাগেজ মাথায় বহন করত। অথচ আমার জানা মতে, ইহরাম অবস্থায় মাথা ঢাকা নিষেধ। প্রশ্ন হল, ইহরাম অবস্থায় নিজের লাগেজ বা অন্য কোনো বোঝা মাথায় বহন করা জায়েয আছে কি? এতে কি কোনো জরিমানা আসবেদয়া করে জানাবেন।


Answer

যে সমস্ত বস্ত্ত দ্বারা সাধারণত মাথা ঢাকা হয় যেমন-টুপিপাগড়িরুমালকাপড় ইত্যাদি সমস্তজিনিস দ্বারা ইহরাম অবস্থায় মাথা ঢাকা নিষেধ। কিন্তু যে বস্ত্ত দ্বারা সাধারণত মাথা ঢাকা হয় না;বরং বহনের উদ্দেশ্যে মাথায় নেওয়া হয় যেমন-ঝুড়িব্যাগ ইত্যাদি  সমস্ত জিনিস ইহরামঅবস্থায় মাথায় বহন করা জায়েয আছে। এতে পূর্ণ মাথা ঢেকে গেলেও কোনো জরিমানা আসবে নাএবং ইহরামের কোনো ক্ষতিও হবে না।

-মানাসিক ৩০৮; বাদায়েউস সানায়ে ২/৪০৬; গুনইয়াতুন নাসিক ২৫৫; আলবাহরুল আমীক ২/৮০০; আদ্দুররুল মুখতার ২/৫৪৭

Sharable Link

মুহাম্মাদ ইশফাকুর রহমান - বাগেরহাট

২৬০৫. Question

আমি বছর হজ্বে মুযদালিফায় যাওয়ার সময় মুযদালিফায় পৌঁছার আগেই মাগরিবের ওয়াক্ত শেষ হয়ে গেছে দেখে পথেই মাগরিবের নামায আদায় করে নিই। দুই দিন পর সাথীদের সাথে আলোচনা করে জানতে পারি যে, আমার জন্য ইশার ওয়াক্তে মুযদালিফায় এসে মাগরিব ইশা একত্রে আদায় করা ওয়াজিব ছিল। আমি জানতে চাই, এখন আমার জন্য ওই নামায কাযা করা অথবা কোনো দম দেওয়া ওয়াজিব হবে কি না? জানালে কৃতজ্ঞ হব।


Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার  দিনের মাগরিবের নামায আদায় হয়ে গেছে। তা কাযা করা লাগবে নাএবং এজন্য কোনো দমও ওয়াজিব হবে না। তবে যথা সময়ে আদায় না করার কারণে ওয়াজিবছেড়ে দেওয়ার গুনাহ হয়েছে। এজন্য আল্লাহ তাআলার কাছে ইস্তেগফার করতে হবে।

উল্লেখ্য যেহাজ্বীদের জন্য  যিলহজ্ব দিবাগত রাতে মাগরিব  ইশার নামায মুযদালিফায় এসেইশার ওয়াক্তে আদায় করা ওয়াজিব। ইশার ওয়াক্তের মধ্যে মুযদালিফায় পৌঁছা সম্ভব হলেআরাফায় অথবা পথে কোথাও পড়া নাজায়েয। এরপরও কেউ মুযদালিফার আগে মাগরিব পড়েনিলে মুযদালিফায় এসে ইশার ওয়াক্তের মধ্যে পুনরায় মাগরিব পড়ে নেওয়া ওয়াজিব। অবশ্য যদিমুযদালিফায় পৌঁছার আগেই ইশার সময় শেষ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা হয় তবে সে ক্ষেত্রে যেখানেআছে সেখানেই মাগরিব-ইশা পড়ে নিবে।

-ফাতহুল কাদীর ৩/৩৭৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৫১৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/৫০৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৩০; আলবাহরুল আমীক ৩/১৬১২; আলমাসালিক ফিলমানাসিক ১/৫৩৩

Sharable Link

মুহাম্মাদ সাঈদ আহমদ - বিক্রমপুরী

২৬০৬. Question

 

একজন বদলি হজ্ব আদায়কারী তার প্রেরণকারীর পক্ষ থেকে তামাত্তু হজ্বের নিয়তে প্রথমে দেশ থেকে উমরার ইহরাম করে মক্কা মুকাররমায় গিয়ে উমরাহ আদায় করেন। উমরাহ আদায় শেষে মদীনা মুনাওয়ারা যিয়ারত করতে যান। অতপর হজ্বের সময়ে যুলহুলাইফা থেকে প্রেরকের পক্ষ থেকে হজ্বের ইহরাম করে যথানিয়মে হজ্ব আদায় করেন।

জানার বিষয় হল, তামাত্তু হজ্বের ক্ষেত্রে উমরাহ আদায়ের পর হজ্বের আগে মীকাতের বাইরে যাওয়ার কারণে তার হজ্বের কোনো ক্ষতি হয়েছে কি? 


 

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বদলি হজ্বটি যথাযথভাবেই আদায় হয়েছে। উমরার পর হজ্বের আগে মদীনামুনাওয়ারায় যাওয়ার কারণে হজ্বের কোনো ক্ষতি হয়নি।

-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১৩১৭২; কিতাবুল আছল ২/৫৩৭; মুখতাছারু ইখতিলাফিল উলামা ২/১৬৭; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ১/২৮৮

Sharable Link

মুহাম্মাদ আনার - কিশোরগঞ্জ

২৬০৭. Question

পাঁচ বছর আগে আমার পিতা ইন্তেকাল করেন। তিনি ছেলে, মেয়ে, মা, স্ত্রী ভাই রেখে যান। যাবত তার সম্পদ ওয়ারিসদের মাঝে বণ্টন হয়নি। এখন আমরা তা বণ্টন করতে চাচ্ছি। জানার বিষয় হল, তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি ওয়ারিসদের মাঝে কীভাবে বণ্টন করতে হবে?


Answer

মৃতের রেখে যাওয়া সমুদয় সম্পত্তি থেকে প্রথমে তার কোনো ঋণ থাকলে তা পরিশোধ করতেহবে। এরপর তার শরীয়তসম্মত কোনো অসিয়ত থাকলে অবশিষ্ট সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ থেকেতা আদায় করতে হবে। অতপর তার অবশিষ্ট স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি জীবিত ওয়ারিসদের মাঝেনিম্ন বর্ণিত হারে বণ্টন করতে হবে 

মা : ১৬.৬৬%, স্ত্রী : ১২.%, প্রত্যেক ছেলে : ১৫.৭৪০%, প্রত্যেক মেয়ে :.৮৭০%, ভাই : কোনো অংশ  পাবে না।

এক্ষেত্রে মৃতের ছেলে থাকার কারণে মৃতের ভাই মীরাস পাবে না।

-আহকামুল কুরআন, জাসসাস ২/৮১; আলমুহীতুল বুরহানী ২৩/২৯২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৬/৪৫১; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৭৭৩

Sharable Link

মুহাম্মাদ এনামুল হক - টেকেরহাট

২৬০৮. Question

আমাদের বাড়ির পাশের একটি মেয়েকে সৌদী অবস্থানরত একজন বাংলাদেশী ছেলের সাথে মোবাইলে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিয়ের সময় উভয় প্রান্তে লাউড স্পিকারে অনেক লোক বিয়ের সাক্ষী ছিল। বর্তমানে তাদের একটি সন্তানও হয়েছে। জানার বিষয় হল, মোবাইলে তাদের বিয়ে কি সহীহ হয়েছে? আর না হলে বর্তমান সন্তানের হুকুম কী? জানালে উপকৃত হব।

Answer

বিবাহ সহীহ হওয়ার জন্য একই মজলিসে সাক্ষীদের সম্মুখে উভয় পক্ষ কিংবা তাদের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে ইজাব-কবুল হওয়া জরুরি। আর মোবাইল বা ফোনে বিবাহে এ শর্ত পাওয়া যায় না। তাই প্রশ্নোক্ত বিবাহ সহীহ হয়নি। এভাবে প্রবাসে অবস্থানরত ব্যক্তি বিবাহ করতে চাইলে তার পদ্ধতি হল, ছেলে এ দেশে তার পক্ষে বিবাহ সম্পন্ন করার জন্য একজন উকিল তথা প্রতিনিধি নিযুক্ত করবে। ঐ উকিল বিবাহের মজলিসে উপস্থিত হয়ে সাক্ষীদের সম্মুখে প্রবাসীর পক্ষ থেকে ইজাব বা কবুলের মাধ্যমে বিবাহকার্য সম্পন্ন করবে।

যেহেতু প্রশ্নোক্ত দম্পতির বিবাহ সহীহ হয়নি তাই এখন তাদের করণীয় হল, অনতিবিলম্বে নতুন করে মোহর ধার্য করে সাক্ষীদের সম্মুখে বিবাহ পড়িয়ে নেওয়া। আর বিগত জীবনের জন্য অন্তরের অন্তস্থল থেকে তওবা-ইস্তিগফার করা।

প্রকাশ থাকে যে, তাদের ঐ সন্তানটি বৈধ এবং সে পিতামাতার মিরাসেরও হকদার হবে।

 

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৯৪, ১/৩৬৯; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৫১৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৪/৩৬

Sharable Link

মুহাম্মাদ সাঈদুর রহমান - কাঠালবাড়িয়া, নাটোর

২৬০৯. Question

আমার ছোট ভাইয়ের বয়স যখন ছয় মাস তখন আমার মা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। কয়েকদিন যাবত খানাপিনা গ্রহণ করতে পারেননি। সে সময় মেঝো খালা আমার ছোট ভাইকে দুধ পান করিয়েছেন। প্রশ্ন হল, খালার মেয়ের সঙ্গে আমার বড় ভাইয়ের বিবাহ জায়েয হবে কি?

 

Answer

হ্যাঁআপনার বড় ভাইয়ের জন্য  মেয়েকে বিবাহ করা জায়েয। ছোট ভাই খালার দুধ পান করারদ্বারা বড় ভাইয়ের সাথে দুধ সম্পর্ক স্থাপন হয়নি।

-আলমাবসূত, সারাখসী ৫/১৩৭; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৪০০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৪/৩৬৫; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৩১৭

Sharable Link

মুহাম্মাদ তাওহীদুল ইসলাম (রাশেদ) - ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম

২৬১০. Question

 

আমরা জানি, মদ খেয়ে তালাক দিলে তালাক পতিত হয়ে যায়। কিন্তু আমাদের এলাকার একজন মুফতী সাহেব বললেন, মদ খেয়ে পাগলের মতো মাতাল হয়ে গেলে পর্যায়ে পৌঁছার পর তালাক দিলে তালাক  পতিত হবে না। এই ফতোয়াটি কতটুকু সঠিক? জানিয়ে বাধিত করবেন।


 

Answer

মদ বা নেশাদ্রব্য সেবনের কারণে বেহুঁশ বা মাতাল হয়ে কোনো ব্যক্তি স্বীয় স্ত্রীকে তালাক দিলেও তাকার্যকর হয়ে যায়। এক্ষেত্রে তালাক পতিত না হওয়ার কথাটি সঠিক নয়।

প্রখ্যাত তাবেয়ী সায়ীদ ইবনে মুসাইয়িব রাহ সুলাইমান ইবনে ইয়াসার রাহ.কে মাতাল ব্যক্তির(তালাক প্রদানসম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তারা উভয়ে জবাবে বলেছেনমাতাল ব্যক্তির তালাকপতিত হয়ে যাবে।-মুয়াত্তা ইমাম মালেক ২১৬

উল্লেখ্য যেনেশাদ্রব্যের সেবন বা ব্যবহারকে আল্লাহ তাআলা সম্পূর্ণরূপে হারাম করেছেন এবং থেকে বিরত থাকার জন্য কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া মদ পানের পার্থিব ক্ষতিও অনেক। তাইসকলকে  থেকে বিরত থাকতে হবে।

-মুয়াত্তা ইমাম মালেক ২১৬; বাদায়েউস সানায়ে ৩/১৫৮; আলবাহরুর রায়েক ৩/২৪৭; ফাতহুল কাদীর ৩/৩৪৫

Sharable Link

তাহমিনা আক্তার - ফুলতলা, খুলনা

২৬১২. Question

) যদি বিক্রেতা জমি বিক্রির জন্য কোনো দালালের সাথে এভাবে চুক্তি করে যে, আমি এই জমি পাঁচ লক্ষ টাকায় বিক্রি হলে সন্তুষ্ট অথবা তুমি আমাকে পাঁচ লক্ষ টাকা দিবে। এরচেয়ে বেশি বিক্রি করতে পারলে তা তুমি পাবে। তাহলে কি চুক্তি বৈধ হবে?


) বিক্রেতা যদি বলে, আমার জমি এক লক্ষ টাকায় বিক্রি করব এই শর্তের উপর বিক্রয় প্রতিনিধি নির্ধারণ করে তাহলে কি তার জন্য নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশিতে বিক্রি করে অতিরিক্ত মূল্য নিজে গ্রহণ করা জায়েয হবে?

) আমাদের এলাকায় এক কাঠা জমি বিশ হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়, সে হিসেবে বিক্রেতা জমি বিক্রির জন্য কাউকে দায়িত্ব দেয়। কিন্তু  সে পঁচিশ হাজার টাকায় বিক্রি করে এবং পাঁচ হাজার টাকা বিক্রেতাকে প্রদান করে অথবা নিজে গ্রহণ করে তাহলে কি বৈধ হবে? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।


Answer

এভাবে চুক্তি করা শরীয়তসম্মত নয়। কেননা এতে দালালরা বিক্রয় প্রতিনিধির পারিশ্রমিকনির্ধারিত হয় না। অথচ তাদের পারিশ্রমিক নির্ধারণ করে নেওয়া জরুরি। দ্বিতীয়ত এভাবে চুক্তিকরার কারণে প্রতিনিধি জমির স্বাভাবিক মূল্য থেকে অনেক বেশি মূল্যে বিক্রি করার প্রয়াস পায়।ফলে অনেক ক্ষেত্রে ক্রেতাগণ বেশি মূল্য দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হন। আর মধ্যস্বত্ত্বভোগীর অবাধ সুযোগ 

হস্তক্ষেপের মাধ্যমে পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে বাজারকে প্রভাবিত করা শরীয়তসম্মত নয়। তাই এমনচুক্তি করা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। এক্ষেত্রে সঠিক পদ্ধতি হলপ্রতিনিধি নিযুক্ত করার সময়ইতার পারিশ্রমিক নির্ধারণ করে নেওয়া। যেমন-জমি বিক্রি করে দিলে কাঠা বা শতাংশ প্রতিমধ্যস্থতাকারী কত টাকা পাবে তা শুরুতেই বলে দিবে।-আলমুহীতুল

বুরহানী ১১/২১৬ফাতাওয়া হিন্দিয়া /৪১০ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৫/

  বিক্রয় প্রতিনিধির জন্য জমির মালিক কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশিতে বিক্রি করাসমীচীন নয়। আর বাজার মূল্য থেকে অস্বাভাবিক বেশি মূল্যে বিক্রি করা নিষেধ। অবশ্য কোনোপ্রকারের ধোকার আশ্রয় না নিয়ে বাজারের স্বাভাবিক দামের ভিতর থেকেই যদি মালিকের নির্ধারিতমূল্যের চেয়ে কিছু বেশি দামে বিক্রি করে তাহলে তাতে অসুবিধা নেই। এক্ষেত্রে বিক্রিলব্ধ সকলটাকা জমির মালিক পাবে। জমির মালিক কর্তৃক নির্ধারিত মূল্য থেকে বেশি দামে বিক্রি করলেওপ্রতিনিধির জন্য অতিরিক্তটুকু নেওয়া জায়েয হবে না। বরং পুরোটাই জমির মালিককে দিয়ে দেওয়াজরুরি। অবশ্য মালিক খুশি হয়ে পারিশ্রমিকের বেশি দিলে তা নেওয়া বৈধ হবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ৫/২৬; আলমুহীতুল বুরহানী ১৫/৮১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/৫৭৫

Sharable Link

মুহাম্মাদ শাহজাহান - বোরহানুদ্দীন, ভোলা

২৬১৩. Question

ঢাকার এক মসজিদের অযুখানায় লেখা আছে, যে ব্যক্তি অযুর শুরুতে বিসমিল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহ পাঠ করবে, অযু ভঙ্গের পূর্ব পর্যন্ত ফেরেশতারা তার আমলনামায় সওয়াব লিখতে থাকবে। (তারগীব) এই সহীহ দলিলভিত্তিক কি না? এছাড়া শুরুতে বিসমিল্লাহ বলার অন্য কোনো হাদীস আছে কি না? দয়া করে জানাবেন।


Answer

অযুর শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা অথবা আল্লাহ তাআলার নামের কোনো যিকির দ্বারা অযু শুরু করাসুন্নত  ফযীলতের কাজ। একাধিক হাদীসে  ব্যাপারে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আনাস রা.-এর সূত্রে নির্ভরযোগ্য বর্ণনায় এসেছেনবী কারীম সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনতোমরা আল্লাহর নামে অযু শুরু কর। (সহীহ ইবনে খুযাইমা,হাদীস : ১৪৪)

হযরত আবু হুরায়রা রা.-এর সূত্রে নির্ভরযোগ্য আরেকটি বর্ণনায় এসেছেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন ব্যক্তির নামায হবে নাযার অযু নেই। আর  ব্যক্তিরঅযু হবে না (অর্থাৎ অযুর সওয়াব পাবে না), যে অযুর শুরতে আল্লাহর নাম পাঠ করবে না।(মুসতাদরাক হাকিমহাদীস : ৫৩৪জামে তিরমিযীহাদীস : ২৫)

হযরত আবু হুরায়রা রা.-এর সূত্রে বর্ণিত আরেকটি নির্ভরযোগ্য বর্ণনায় এসেছেরাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনপ্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ কাজযা বিসমিল্লাহিররাহমানির রাহীম দ্বারা শুরু করা হয়নি তা অসম্পূর্ণ।-জামে সগীরসুয়ূতীহাদীস : ৬২৮৪

কোনো কোনো বর্ণনায় বিসমিল্লাহ-এর পরিবর্তে ‘বিযিকরিল্লাহ’ আর কোনো বর্ণনায় ‘বিহামদিল্লাহশব্দ এসেছে। তাই ফকীহগণ  মুহাদ্দিসগণ  সংক্রান্ত সকল হাদীসের সমন্বয়ে  কথা বলেছেনযেবিসমিল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো যিকির দ্বারা শুরু করলেও সুন্নত আদায় হয়ে যাবে এবং এরফযীলতও অর্জিত হবে।

আর প্রশ্নোল্লেখিত বর্ণনাটি মুজামে সগীরতবারানী নামক গ্রন্থে (/৭৩সাহাবী হযরত আবুহুরায়রা রা.-এর সূত্রে বর্ণিত আছে। কিন্তু এর সনদ নির্ভরযোগ্য নয়। কারণ এর বর্ণনাকারীদেরমধ্যে ইবরাহীম ইবনে মুহাম্মাদ নামে একজন ব্যক্তি রয়েছেনতার সম্পর্কে হাফেয ইবনে আদী(মৃত : ৩৬৩ হি.), হাফেয যাহাবী (মৃত্যু : ৭৪৮ হি.) এবং হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. (মৃত্যু : ৮৫২ হি.) বলেছেনতার থেকে অনেক মুনকার তথা অগ্রহণযোগ্য রেওয়ায়েত বর্ণিতহয়েছে। দেখুন : আলকামিল ফিযযুয়াফা /২৬২মীযানুল তিদাল /৯১লিসানুল মীযান /৯৮

এছাড়াও উক্ত সনদে আরেকজন বর্ণনাকারী ইবরাহীম ইবনে মুহাম্মাদের উস্তাদ আলী ইবনে সাবিতআছেযাকে হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী রাহমাজহুল অর্থাৎ অজ্ঞাত বলেছেন। দেখুন :নাতাইজুল আফকার /১৬৮

 প্রেক্ষিতে হাদীস বিশরাদগণ এই বর্ণনাটিকে মুনকার তথা অগ্রহণযোগ্য আখ্যাদিয়েছেন।

-মুজামুস সগীর, তবারানী ১/৭৩; মীযানুল ইতিদাল ১/৯১; নাতাইজুল আফকার, হাদীস : ১৬৩; নায়লুল আওতার ১/১৩৪; আলমাসনূ’ পৃষ্ঠা : ২০৯; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ১৪৪; জামে তিরমিযী, হাদীস : ২৫; মাআরিফুস সুনান ১/৪; শরহুন নববী ২/৯৮; আদ্দুররুল মুখতার ১/১০৮; আলবাহরুর রায়েক ১/১৮

Sharable Link