মুহাম্মাদ শরীফ হায়দার - রাজশাহী

১৯৫৫. Question

আমাদের মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা প্রতি বছর সকল ছাত্রদেরকে এক সেট করে কাপড় দিয়ে থাকে। এ বাবদ যত টাকা ব্যয় হয় তার পুরোটা যাকাত ফাণ্ড থেকে বহন করা হয়। জানতে চাই যেসব ছাত্র আর্থিকভাবে স্বচ্ছল তারা কি সে কাপড় গ্রহণ করতে পারবে?

Answer

যাকাত গরীব-মিসকীনদের হক। এমন গরীব, যার কাছে মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদ নেই আর অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক হলে সে নিজে অথবা তার অভিভাবক মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক না হয় তাহলে যাকাত গ্রহণ করতে পারে। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মাদরাসার যেসব ছাত্র ব্যক্তিগতভাবে নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক কিংবা যেসব নাবালেগের পিতা নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক তাদের জন্য উক্ত কাপড় গ্রহণ করা জায়েয হবে না।

না।-সূরা তওবা : ৬; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ৩/১২৮; তাফসীরে কুরতুবী ৮/১৬৭; সহীহ বুখারী ১/১৮৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২১২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/২৭২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪২; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৪৯

Sharable Link

মুহাম্মাদ রকিবুল হাসান - বাগেরহাট, খুলনা

১৯৫৬. Question

জনৈকা মহিলার কাছে ৩ ভরি স্বর্ণালংকার আছে এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত কিছু কাপড় আছে, যার মূল্য আনুমানিক পাঁচ হাজার টাকা। সে ঋণগ্রস্থও নয়। তার উপর কি কুরবানী ওয়াজিব হবে? খ) কুরবানীর পশুকে জবাই করার জন্য শোয়ানোর সময় তার মাথা কোন দিকে থাকবে? উত্তর দিকে নাকি দক্ষিণ দিকে এবং পশুর পা কোন দিকে থাকবে? পূর্ব দিকে নাকি পশ্চিম দিকে?

Answer

ঐ মহিলার উপর কুরবানী ওয়াজিব। কারণ তার নিকট বিদ্যমান স্বর্ণ ও প্রয়োজনের অতিরিক্ত কাপড়ের মূল্য এক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য। যা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের চেয়ে বেশি। অতএব নেসবা পূর্ণ হওয়ায় তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে।-বাদায়েউস সানায়ে ২/১৫৮, ২০৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯১; হেদায়া ১/২০৮; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২২৭; ফাতহুল কাদীর ২/২১৮ খ) পশুকে জবাই করার সময় মাথা দক্ষিণ দিকে ও সীনা কিবলামুখী থাকবে। এতে পা পশ্চিম দিকে থাকবে। এভাবে শোয়ানো উত্তম।-উমদাতুল কারী ২১/১৫৭; ফাতহুল বারী ১০/২১; ইলাউস সুনান ১৭/১০০

Sharable Link

মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ - ত্রিশাল, ময়মনসিংহ

১৯৫৭. Question

এক ব্যক্তি আমাকে গেঞ্জি তৈরির অর্ডার দিয়েছে। তার সাথে আমার যেভাবে চুক্তি হয়েছে হিসাব করে দেখি যে, প্রতি গেঞ্জিতে (আনুমানিক) আমার খরচ হবে ১৫০/- টাকা আর আমার লাভ হবে ৩/- টাকা। কিন্তু আমার কাছে প্রতি গেঞ্জির জন্য ১০০/- টাকা করে আছে। এ কারণে আরেক ব্যক্তির সাথে এভাবে চুক্তি করেছি যে, সে আমার এ কাজে প্রতি গেঞ্জির জন্য ৫০/- টাকা করে বিনিয়োগ করবে। প্রতি গেঞ্জিতে যেহেতু লাভ ৩/- টাকা। তাই তাকে আমি ১/- টাকা করে দিব। অর্থাৎ সে প্রতি ৫০/- টাকায় ১/- টাকা পাবে। জানার বিষয় হল বিনিয়োগকারীর সাথে ৩/- টাকা লাভ থেকে ১/- টাকা নির্ধারিত হিসাবে দেওয়ার চুক্তি সহীহ হয়েছে কি না? যদি জায়েয না হয় তাহলে শতকরা হারে লাভ দেওয়ার শর্তে চুক্তি করা জায়েয হবে কি?

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীকে প্রতি গেঞ্জি বাবদ ১/- টাকা করে দেওয়ার শর্ত করা সহীহ হয়নি। যৌথ মূলধনী কারবারে কোনো পক্ষকে নির্ধারিত অংকে লাভ দেওয়ার চুক্তি করা নাজায়েয। এটা সুদী কারবারের অন্তর্ভুক্ত। এক্ষেত্রে বৈধ উপায়ে করতে চাইলে উভয়ের জন্য শতকরা হারে লভ্যাংশ ধার্য করতে হবে। অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে লাভের এক-তৃতীয়াংশ দেওয়ার চুক্তি করা যেতে পারে।

পারে।-হেদায়া (ফাতহুল কাদীর) ৫/৪০২; বাদায়েউস সানায়ে ৫/৭৭; আলমাআইরুশ শারঈয়্যাহ পৃ. ২১০; আলবাহরুর রায়েক ৫/১৭৪; রদ্দুল মুহতার ৪/৩১২

Sharable Link

সাঈদুর রহমান - পল্লবী, ঢাকা

১৯৫৮. Question

আমরা তিন বন্ধু মিলে এ মর্মে চুক্তি করেছি যে, আমি ৪,০০০/- টাকা, বাকি দু’জন ৩,০০০/- টাকা করে ৬,০০০/- টাকা, মোট ১০,০০০/- টাকা দিয়ে দুটি রিকশা ক্রয় করব এবং যে দুই জন ৩,০০০/- টাকা করে দিয়েছে তারা রিকশা চালাবে। যা আয় হবে তা সবার মাঝে সমান ভাগে ভাগ হবে। আমার জানার বিষয় হল, এ ধরনের চুক্তি বৈধ হবে কি না? বৈধ না হলে বৈধ পদ্ধতি কী হবে? উল্লেখ্য যে, তারা ৩,০০০/- টাকা করে টাকা দিয়েছে তাদের কাছে বর্তমানে টাকা না থাকায় আমি তাদেরকে ৬,০০০/- টাকা ঋণ দিয়েছি এ শর্তে যে, তারা তা ধীরে ধীরে পরিশোধ করে দিবে।

Answer

ঐভাবে চুক্তি করা বৈধ হয়নি। এক্ষেত্রে উপার্জনের মধ্যে ভাগাভাগি পদ্ধতি সহীহ নয়। সহীহ পদ্ধতি হল ভাড়া-চুক্তি অনুসরণ করা। যেমন দুটি রিকশায় আপনার যে অংশ আছে তা আপনি চালককে/অংশীদারকে টাকার নির্দিষ্ট অংকের বিনিময়ে নির্ধারিত সময়ের জন্য ভাড়া দিবেন।

ফাতহুল কাদীর ৫/৪১১; আলবাহরুর রায়েক ৫/১৮৪; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৬২৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৪/১২৬; রদ্দুল মুহতার ৪/৩২৬

Sharable Link

মুহাম্মাদ শামসুল আরেফীন - ধানমণ্ডি, ঢাকা

১৯৫৯. Question

বিশ বছর পূর্বে বাড়ি বানানোর উদ্দেশ্যে ঢাকা শহরে একটি জমি ক্রয় করি। এখন আমি ঐ জমিতে বাড়ি বানানোর কাজ শুরু করেছি। কিন্তু এক স্থানে গর্ত করতে গিয়ে মাটির নিচে একটি কঙ্কাল পাওয়া গেল। জমি-বিক্রেতাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে সে বলল, আমার জানামতে এখানে কোনো কবর ছিল না। যা দ্বারা বুঝা যায় এটি অনেক পুরাতন কবর। আমার জানার বিষয় হল, এ অবস্থায় শরীয়তের দৃষ্টিতে আমার কী করণীয়? উল্লেখ্য, ঐ স্থানে আমার বাড়ি বানানো খুবই প্রয়োজন।

Answer

প্রশ্নোল্লিখিত অবস্থায় আপনি ঐ কঙ্কাল উঠিয়ে অন্যত্র দাফন করে দিতে পারেন। অথবা সেখানেও মাটির নিচে পুঁতে রেখে সমান করে দিয়ে উপরে বাড়ি নির্মাণ করতে পারবেন।

পারবেন।-ফাতহুল কাদীর ২/১০১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৪৭১; আলবাহরুর রায়েক ২/১৯৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১৭৫; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/৮০; রদ্দুল মুহতার ২/২৩৮

Sharable Link

মুহাম্মাদ খালেকুজ্জামান - খুলনা

১৯৬০. Question

আমার বাসা উত্তরায় আর অফিস গাজীপুরে। প্রতিদিন বাসা থেকে গিয়ে অফিস করি। যাতায়াতে ভীষণ কষ্ট হয়। এ ছাড়া খরচ তো আছেই। তাই গাজীপুরে বাসা খুজছিলাম। ইতিমধ্যে এক ব্যক্তির সাথে পরিচয় হল, যার বাসা গাজীপুরে আর অফিস উত্তরায় এবং আমার মতোই বাসা থেকে যাতায়াত করে অফিস করেন। আমি তাকে প্রস্তাব করি যে, উত্তরায় আমার নিজস্ব বাসা আছে। আপনি সেখানে থাকবেন বিনিময়ে আপনার এই বাসায় আমি থাকব। যেহেতু তিনিও আমার মতোই কষ্টের শিকার তাই তিনি আমার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়। এখন জানার বিষয় হল, এভাবে চুক্তি করা জায়েয আছে কি? যদি জায়েয না হয় তাহলে এই ধরনের ক্ষেত্রে সহীহ পদ্ধতি কী হবে?

Answer

প্রশ্নোক্ত চুক্তিটি সঠিক হয়নি; বরং এই ধরনের ক্ষেত্রেও ভাড়া দেওয়ার স্বাভাবিক নিয়মেই একে অন্যের কাছে টাকার বিনিময়ে ঘর ভাড়া দিবে। এক্ষেত্রে উভয় বাড়ির ভাড়া সমান সমান হলে ভাড়ার টাকা পরস্পরে আদান প্রদান করা বা কাটাকাটি করা দুটোরই সুযোগ আছে। আর যদি ভাড়ার পরিমাণ কম-বেশি হয় তাহলে যার বাসার ভাড়া কম সে অপর ব্যক্তিকে অবশিষ্ট টাকা পরিশোধ করবে।

আদ্দুররুল মুখতার ৬/৪, ৬২; মু’জামুল মুসতালাহাত ওয়াল আলফাফিল ফিকহিয়্যাহ ৩/৩২৯; আলমুগনী ইবনে কুদামা ৮/১৪; আলবাহরুর রায়েক ৭/২৯৮; তাকমিলা (আলবাহরুর রায়েক) ৮/৭

Sharable Link

মুহাম্মাদ আবু যায়েদ - চুয়াডাঙ্গা

১৯৬১. Question

একটি বড় গোসলখানায় আমরা কয়েকজন একসাথে গোসল করছিলাম। এক ভাই শুধু সাদা একটা লুঙ্গি পরে গোসল করছিলেন। উপর গামছা বা অন্য কিছু ছিল না। ফলে লুঙ্গি ভিজে শরীরের সাথে লেগে থাকার কারণে শরীরের রং স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছিল। আমি বললাম, ভাই আপনার তো ফরয তরক হচ্ছে। সে বলল কেন? আমি তো লুঙ্গি পরে আছি। আমি বললাম, লুঙ্গি পরে থাকলেও স্পষ্টত দেখা যাচ্ছে। যাহোক তার সাথে এ নিয়ে কিছু বিতর্কও হল। এখন প্রশ্ন হল, এ অবস্থায় কি সতর ঢাকার ফরয আদায় হবে? এবং কার সামনে এরূপ ঘটলে তার তার জন্য কি হুকুম?

Answer

যে কাপড় পরিধান করার পরও শরীরের রং দেখা যায় সে কাপড় দ্বারা সতর ঢাকার হক আদায় হয় না। তদ্রূপ লুঙ্গি ইত্যাদি ভিজলে যদি শরীরের রং ও আকার-আকৃতি কাপড়ের উপর থেকে বুঝা যায় তাহলে লোকজনের সামনে সে কাপড় পরে গোসল করলে তার উপর অন্য কোনো কাপড় যেমন গামছা, তোয়ালে ইত্যাদি পরে নেওয়া জরুরি। অন্যথায় সতর না ঢাকার গুনাহ হবে। আর এ অবস্থায় কারো দৃষ্টি পড়ে গেলে তৎক্ষণাৎ দৃষ্টি সরিয়ে নেওয়া কর্তব্য।

আলমুনতাকা, কাযী আবুল ওলীদ সুলাইমান বাজী ১০/২০১; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩৬৫, ৩৬৬

Sharable Link

মুহাম্মাদ ইউসুফ বাটালুভী - চরমোনাই, বরিশাল

১৯৬২. Question

আমাদের দেশের বাড়িতে অনেক সুপারি গাছ আছে। সুপারি আমরা লোকদের দিয়ে সুপারি পাড়িয়ে থাকি। তাদের সাথে এভাবে চুক্তি হয় যে, বড় গাছ হলে ৫টি আর মাঝারি বা ছোট গাছ হলে ৪টি মাঝারি ধরনের সুপারি তাদেরকে দেওয়া হবে। জানতে চাই, উক্ত চুক্তিতে কোনো সমস্যা আছে কি না? উল্লেখ্য যে, তাদের সাথে চুক্তি হওয়ার সময় এ কথা বলা হয় না যে, তাদের পাড়া সুপারি থেকে তাদের অংশ দেওয়া হবে।

Answer

এভাবে চুক্তি করা বৈধ হয়েছে।

সুনানে দারাকুতনী ৩/৪৭; বুহুস ফী কাযায়া ফিকহিয়্যাহ মুআছিরা ২/২১৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪৪৪; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৫/৩৫; আলমুহীতুল বুরহানী ১১/৩৩৩; ইলাউস সুনান ১৬/১৮১

Sharable Link

মুহাম্মাদ কলিমউদ্দীন - কটিয়াদী, কিশোরগঞ্জ

১৯৬৩. Question

আমি গত বছর একটি গাভী ক্রয় করি। এটাই আমার একমাত্র সম্পদ। গাভীটি ক্রয় করার কয়েক দিন পর আমি নিয়ত করি যে, কিছু দিন আমি দুধপান করার পর কুরবানী করে দিব। জানার বিষয় হল, গাভীটি কুরবানী করা কি আমার জন্য জরুরি হয়ে গেছে? না প্রয়োজনের সময় তা বিক্রি করতে পারব?

Answer

প্রশ্নোক্ত বর্ণনা অনুযায়ী আপনি চাইলে ঐ গরুটি বিক্রি করতে পারবেন। কোনো পশু ক্রয় করার পর এভাবে নিয়ত করলে তা কুরবানী করা জরুরি হয়ে যায় না।

ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯১; বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৩; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৪৬; রদ্দুল মুহতার ৬/৩২১; ফাতাওয়া সিরাজিয়া পৃ. ৮৮

Sharable Link

মুহাম্মাদ আনাস - কুলিয়া, নেত্রকোনা

১৯৬৪. Question

এক ব্যক্তি জমিতে ফুলকপির চাষ করেছে। তবে ফুলকপি হওয়ার আগেই অন্য ব্যক্তির কাছে তিন হাজার টাকায় বিক্রি করেছে। তার সাথে এভাবে চুক্তি হয়েছে যে, ঐ জমিতে ফুলকপি হওয়ার পর দুই হাজার টাকার বিনিময়ে ৩০০ টি ফুলকপি দিতে হবে। জানার বিষয় হল, উক্ত লেনদেনটি সহীহ হয়েছে কি না?

Answer

প্রশ্নোক্ত লেনদেনটি সহীহ হয়নি। কেননা এতে ফলনের পূর্বেই নির্দিষ্ট ক্ষেতের শস্য বিক্রি করা হয়েছে। আর কোনো নির্দিষ্ট ক্ষেতের শস্য ফলনের পূর্বে বিক্রি করা জায়েয নেই। হাদীস শরীফে এ ধরনের বিক্রির ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। এক্ষেত্রে সহীহ পদ্ধতিতে কারবার করতে চাইলে কোন ক্ষেতের শস্য নির্দিষ্ট না করে মেয়াদান্তে প্রদানের শর্তে অগ্রিম মূল্য দিয়ে খরিদ করে নিবে। ঐ শস্য কোনো নির্দিষ্ট ক্ষেতের হতে হবে এমন শর্ত করা যাবে না। আর উক্ত আগাম খরিদ চুক্তিতে নিম্নে বর্ণিত শর্তগুলো থাকা আবশ্যক। ১. চুক্তির সময় পরিপূর্ণ মূল্য পরিশোধ করা। ২. কোনো নির্দিষ্ট ক্ষেতের শস্য দেওয়ার শর্ত না করা। ৩. যে দ্রব্য অগ্রিম মূল্যে খরিদ করতে চাচ্ছে তার ধরন এবং গুণগত মান সুস্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা। ৪. বিক্রিত দ্রব্যের পরিমাণ নির্ধারণ করে নেওয়া। ৫. বিক্রিত দ্রব্য সরবরাহের তারিখ ও স্থান নির্ধারণ করে নেওয়া। ৬. বিক্রিত দ্রব্যটি এমন হওয়া, যা সাধারণত সব সময় বাজারে পাওয়া যায়। উল্লেখ্য, উপরোক্ত পদ্ধতিতে চুক্তি করার পর বিক্রেতা যেকোনো ক্ষেতের শস্য ক্রেতাকে দিতে পারবে।

সহীহ মুসলিম ২/৭; তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ১/৩৮৩; আলবাহরুর রায়েক ৫/২৫৯; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৩২৬; ফাতহুল কাদীর ৬/২০৭; আননাহরুল ফায়েক ৩/৩৫৯; রদ্দুল মুহতার ৪/৫৫৫; সহীহ বুখারী ১/২৯৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/১৮০; আলমুহীতুল বুরহানী ১০/২৭৮; আলমাআইরুশ শারঈয়্যাহ পৃ. ১৭০; ইতরুল হেদায়া পৃ. ১৪২

Sharable Link

মুহাম্মাদ কাউসার হামীদ - বরুড়া, কুমিল্লা

১৯৬৫. Question

কেউ কুমিল্লা থেকে ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্যে ১০০/- টাকা ভাড়া নির্ধারণ করে বাসে উঠল। অর্ধেক রাস্তা যাওয়ার পর দীর্ঘ জ্যামের কারণে লোকটি ঢাকা যাওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করে এবং বাস থেকে নেমে আসে। আমার জানার বিষয় হল এমতাবস্থায় লোকটি কি অর্ধেক ভাড়া দিবে, না পূর্ণ ভাড়া দিতে বাধ্য থাকবে?

Answer

পথে লোক নামায় এবং ওঠায় এমন লোকাল বাস না হলে পুরো ১০০/- টাকাই দিতে হবে। কিন্তু যদি লোকাল বাস হয় যাতে পূর্বে ভাড়া ঠিক হয়ে গেলেও পথে নামার সুযোগ থাকে এবং গন্তব্য অনুযায়ী ভাড়া কম-বেশি নেওয়া হয় তাহলে এক্ষেত্রে যতদূর এসেছে সে অনুযায়ী ন্যায্য ভাড়া দেওয়া জরুরি। যদি তা ৫০/- টাকার বেশি হয় তবে তাই দিতে হবে। এক্ষেত্রে পূর্ব নির্ধারিত ভাড়ার অর্ধেক দেওয়া যাবে না। অবশ্য পুরো ১০০/- টাকাও দিতে হবে না।

আলআশবাহ ওয়াননাযাইর পৃ. ৩২২; আলমুহীতুল বুরহানী ১১/২২৩, ২২৪ ও ২২৬; ফাতাওয়া খানিয়া ২/৩১৫, ৩১৬ ও ৩২২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪১৪, ৪৫৮; শরহুল মাজাল্লাহ, খালেদ আতাসী ২/৫৫৪, মাদ্দাহ : ৪৭০ ও ২/৬৩৫; শরহুল মাজাল্লাহ, সলীম রুস-ম বায ১/২৬৩; আদ্দুররুল মুখতার ৬/১০, ১১

Sharable Link

মুহাম্মাদ আবদুর রউফ - গলাচিপা, পটুয়াখালী

১৯৬৬. Question

১৯৬১ সালে রচিত পারিবারিক আইনে দাদা থাকা অবস্থায় বাবা মারা গেলে নাতী চাচাদের সাথে সম্পত্তি পাবে। প্রশ্ন হল সরকারী এ আইনের বলে নাতীর জন্য সম্পত্তি দাবি করা বৈধ হবে কি?

Answer

মোটেই না। তবে ওয়ারিশগণ স্বেচ্ছায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে যদি কিছু দেয় তবে তা নেওয়া জায়েয হবে।

সূরা নিসা : ৭; আসসিরাজী ফিলমিরাছ পৃ. ২২; সহীহ বুখারী ২/৯৯৭; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৭৭৪

Sharable Link

মুহাম্মাদ হুসাইন আহমদ - নেত্রকোনা

১৯৬৭. Question

নামাযের প্রথম সারিতে দাঁড়ানো ব্যক্তি সম্পর্কে হাদীস শরীফে বিভিন্ন ফযিলত বর্ণিত হয়েছে। প্রশ্ন হল কোনো নেতৃস্থানীয় লোক যেমন মন্ত্রী, এমপি বা অন্য কেউ যদি সামনের কাতারে দাঁড়ানো লোককে সরিয়ে দেয় এবং সে স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায় সামনের কাতার থেকে সরে আসে তাহলে তাদের দু’জনের মধ্য থেকে বর্ণিত সওয়াবের অধিকারী কে হবে?

Answer

এক্ষেত্রে সামনে উপবিষ্ট মুসল্লীর সম্মতি থাকলে কিংবা সে নিজেই জায়গা ছেড়ে দিলে দু’জনই সামনের কাতারের সওয়াব পাবে। আর পূর্ব থেকে বসে থাকা মুসল্লীর সম্মতি ছাড়া তাকে সরিয়ে দিয়ে অন্য কেউ বসলে পরবর্তী ব্যক্তি সামনের কাতারের সওয়াব পাবে না; বরং অন্যের হক নষ্ট করার জন্য গুনাহগার হবে।

রদ্দুল মুহতার ১/৫৬৯; ইলাউস সুনান ৪/৩৬৬

Sharable Link

মুহাম্মাদ হাবীবুর রহমান - পল্লবী, ঢাকা

১৯৬৮. Question

এক মহিলার স্বামী মারা যাওয়ায় সে ইদ্দত পালন করছে। এ অবস্থায় কি সে নাকফুল পরতে পারবে? রঙিন কাপড় পরতে পারবে? চুল আচড়াতে পারবে? একজন বললেন, চুল আচড়ানো নিষেধ। তাহলে এত লম্বা চুল না আচড়ালে তো জট বেঁধে যাবে? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

স্বামী মারা গেলে স্ত্রীর জন্য ইদ্দত অবস্থায় সকল প্রকার সাজসজ্জা ত্যাগ করা জরুরি। তাই অলংকার পরা যাবে না। এমনকি নাকফুলও খুলে রাখতে হবে। আর রঙিন সাধারণ ব্যবহৃত কাপড় পরতে পারবে। সাদা কাপড় পরা বাধ্যতামূলক নয়। তবে পুরাতন কাপড় থাকলে নতুন কাপড় পরবে না। তদ্রূপ ঝলমলে কাপড় থেকেও বিরত থাকবে। সৌন্দর্যের উদ্দেশ্যে চুল আচড়াতে পারবে না। তবে চুলের স্বাভাবিকতা রক্ষা করার জন্য আচড়ানোর প্রয়োজন হলে তা পারবে। এটা নিষিদ্ধ নয়।

সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২৩০৪; মুসনাদে আহমদ ৬/৩০২; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৫৫৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৩৩; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৩/২৬৬

Sharable Link

মুহাম্মাদ ইয়াহইয়া মানসুরী - ফরিদাবাদ, ঢাকা

১৯৬৯. Question

বর্তমানে কোনো ব্যাংকই সুদমুক্ত বলে দাবি করা যায় না। এ পরিস্থিতিতে টাকা-পয়সা হেফাযতের জন্য কি করণীয় আছে। সুদী ব্যাংকে আমার একটি একাউন্ট আছে। তার সুদ সওয়াবের নিয়ত ছাড়া সদকা করে দিলে একাউন্টটি ব্যবহার করা যাবে কি? বা এ উদ্দেশ্যে একাউন্ট খোলা যাবে কি?

Answer

সুদী ব্যাংকে অতিরিক্ত অংশ গ্রহণ না করলেও সেভিংস একাউন্ট খোলা মানেই সুদী চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়া। পরবর্তীতে সুদ গ্রহণ না করলেও সুদী চুক্তির গুনাহ হবে। আর পরে অতিরিক্ত গ্রহণ করলে তাতে সুদ গ্রহণ ও ভোগ করার গুনাহ হবে ভিন্নভাবে। তাই সুদী ব্যাংকে একাউন্ট খোলা আবশ্যক হলে কারেন্ট একাউন্ট তথা চলতি হিসাব খোলা যাবে। অবশ্য আজকাল কোনো কোনো ব্যাংকে কারেন্ট একাউন্টেও কিছু সুদ দেওয়া হয় যাকে এস.টি.ডি. বলে। কোনো কোনো ব্যাংকে ভিন্ন নামও আছে। এ ধরনের কারেন্ট একাউন্ট খোলার হুকুম সুদী ব্যাংকের সেভিংস একাউন্টের মতোই। একাউন্ট করলেই সুদী চুক্তির গুনাহ হবে। তাই সুদী ব্যাংকে একাউন্ট করতে অতিরিক্ত দেয় না এমন কারেন্ট একাউন্ট করতে পারবে।

Sharable Link

মুহাম্মাদ আতিকুর রহমান - মগবাজার, ঢাকা

১৯৭০. Question

আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব আছর ও ফজর নামাযের সালামের পর কিবলা থেকে ঘুরে মুসল্লীদের দিকে ফিরে বসেন। এক্ষেত্রে যদি কোনো মাসবুক তার মুখোমুখী থাকে চাই সে যত দূরেই হোক তিনি তার মুখোমুখী বসেন না; বরং ডানে বা বামে একটু ঘুরে বসেন। যখন মাসবুকের নামায শেষ হয়ে যায় তখন তিনি সোজা হয়ে বসেন। জানার বিষয় হল, ইমাম সাহেব ও মাসবুকের মাঝে যদি কয়েক কাতার মুসল্লী থাকে যাদের নামায শেষ হয়ে গেছে তাহলে এর ব্যবধান থাকা সত্ত্বেও কি তার মুখোমুখী হয়ে বসা যাবে না? আশা করি জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

ইমাম সাহেব ও মাসবুকের মাঝে তৃতীয় কোনো ব্যক্তির আড়াল থাকলে ইমামের জন্য নামায শেষে ঐ মাসবুকের মুখোমুখী হয়ে বসা জায়েয আছে। তবে এক্ষেত্রেও মুখোমুখী না বসাই উত্তম। আর কোনো আড়াল না থাকলে মাসবুক বা নামাযী ব্যক্তি দূরে থাকলেও তার মুখোমুখী হয়ে বসা মাকরূহ।

হাশিয়াতুত তাহতাবী আলালমারাকী পৃ. ১৭১; ফাতহুল কাদীর ১/৩৬১; আলবাহরুর রায়েক ২/৩১; শরহুল মুনইয়াহ পৃ. ৩৪১; আননাহরুল ফায়েক ১/২৮৬; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৩১-৫৩২

Sharable Link

মুহাম্মাদ আবুল কালাম - ধুনট, বগুড়া

১৯৭১. Question

আমরা আততরীক ইলাল কুরআন-গ্রন্থে পড়েছি যে, আযর হল হযরত ইবরাহীম আ.-এর পিতা। এ সম্পর্কে কুরআনের একটি আয়াতও পড়েছি। তা হল, واذ قال ابراهيم لابيه آزر اتتخذ اصناما آلهة এতে বোঝা যায় যে, আযর হযরত ইবরাহীম আ.-এর পিতা। কিন্তু আমরা শুনেছি যে, আযর নাকি ইবরাহীম আ.-এর পিতা না; বরং চাচা। তাহলে আয়াতে ‘লিআবীহি’ দ্বারা কী উদ্দেশ্য? আর আমাদের শ্রুত কথাটা কি ঠিক? বিস্তারিত দলীল-প্রমাণসহ জানালে কৃতজ্ঞ হব।

Answer

কোনো কোনো মুফাসসির এ ধরনের মত ব্যক্ত করে থাকলেও তা সঠিক নয়। সঠিক কথা হল, ‘আযর’ হযরত ইবরাহীম আ.-এর পিতাই এবং কুরআন মজীদে আসল অর্থেই পিতা বলা হয়েছে।

তাফসীরে ইবনে কাছীর (দারুল ফিকর) ২/২৪০; মাআরিফুল কুরআন (উর্দু) ৩/৩৭৯; কাসাসুল কুরআন ১/১০৯-১১০; তাফসীরে মাজেদী ২/৫৬

Sharable Link

মুহাম্মাদ আশরাফ আলী - বগুড়া

১৯৭২. Question

তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন ও দুররে মানসুরে একটি হাদীস পেয়েছি। তা হল, ‘যে ব্যক্তি ফরয নামাযের পর আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে সে মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই জান্নাতে প্রবেশ করবে। উভয় কিতাবে বলা হয়েছে যে, ইমাম নাসায়ী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। কিন্তু আমি নাসায়ী শরীফে হাদীসটি খুঁজে পাইনি। মেহেরবানী করে জানাবেন যে, হাদীসটি নাসায়ী শরীফের কোথায় আছে। আর যদি নাসায়ী শরীফে না থাকে তাহলে হাদীসের কোন কিতাবে আছে আর হাদীসটির হুকুম কী?

Answer

উক্ত হাদীসটি ইমাম নাসায়ী রাহ. তাঁর ‘সুনানে কুবরা’ তে ‘আমালুল ইয়াউমি ওয়াললাইল’ অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন। হাদীস নং ৯৯২৮। আর দরসে নেযামীতে পঠিত নাসায়ী শরীফ নামে যে প্রসিদ্ধ কিতাব রয়েছে তা সুনানে কুবরা থেকে বাছাইকৃত সংকলন। এর নাম ‘আলমুজতাবা’। এই কিতাবে ওই হাদীসটি নেই। হাদীসটির একাধিক সনদসহ তবরানী কাবীর (হাদীস : ৭৫৩২) ও তবরানী আওসাতে (হাদীস : ৮০৬৪) উল্লেখ আছে। ইমাম মুনযিরী রাহ. হাদীসটির হুকুম সম্পর্কে বলেন, ‘ইমাম নাসায়ী রাহ. এবং তবারানী রাহ. একাধিক সূত্রে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তন্মধ্যে একটি সনদ সহীহ। (আততারগীব ওয়াততারহীব হাদীস : ২৩৭৬) মাজমাউয যাওয়াইদে একটি সনদকে ‘জাইয়েদ’ বলা হয়েছে। (মাজমাউয যাওয়াইদ ১০/১২৮)

Sharable Link

মুহাম্মাদ রবীউল ইসলাম - দোহার, ঢাকা

১৯৭৩. Question

রবিউল আওয়াল, রবিউস সানী, জুমাদাল উলা, জুমাদাল উখরা, যিলকদ-এই মাসগুলোতে বিশেষ কোনো রোযা-নামাযের কথা কুরআন-হাদীসে আছে কি না?

Answer

প্রশ্নোক্ত মাসগুলোতে বিশেষ কোনো নামায বা রোযার কথা কুরআন-হাদীসে নেই। তবে যিলকদ মাস যেহেতু আশহুরে হুরূম তথা চারটি সম্মানিত মাসের অন্যতম তাই এ মাসে নফল রোযা রাখা মুস্তাহাব। কেননা আশহুরে হুরূমে নফল রোযা রাখার কথা হাদীসে রয়েছে। একটি দীর্ঘ হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন সাহাবীকে লক্ষ্য করে বলেছেন, তুমি আশহুরে হুরূমে রোযা রাখ।

লাতাইফুল মাআরিফ পৃ. ২৮৫, ২৮৬; সুনানে আবু দাউদ হাদীস : ২৪২৫; বাযলুল মাজহূদ ১১/২৯০; আউনুল মাবুদ ৭/৫৮; নায়লুল আওতার ৪/৩১৮; ইবনে মাজাহ, হাদীস : ১৭৪১; রদ্দুল মুহতার ২/৩৭৫; আলফাযাইলু ওয়াল আহকাম লিশশুহূরি ওয়াল আইয়াম, আল্লামা আবদুল করীম গুমথালভী পৃ. ২০

Sharable Link

মুহাম্মাদ শাহ ইমরান - শর্শদী মাদরাসা, ফেনী

১৯৭৪. Question

জুমার পূর্বের চার রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ কি আছারে সাহাবা দ্বারা প্রমাণিত?

Answer

হ্যাঁ, জুমার পূর্বের চার রাকাত আছার দ্বারা প্রমাণিত। নিম্নে কিছু উল্লেখ করা হল : ১. আবু উবাইদ বর্ণনা করেন যে, হযরত আবদুল্লাহ জুমার পূর্বে চার রাকাত পড়তেন। (ইবনে আবী শায়বা ৫৪০২) ২. বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত ইবরাহীম নাখয়ী রাহ. বলেন, ‘তাঁরা (সাহাবায়ে কেরাম) জুমার আগে চার রাকাত সুন্নাত নামায পড়তেন।’ (মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ৫৪০৫) সাহাবায়ে কেরামের এই আমল জুমার পূর্ব চার রাকাত নামায সুন্নত প্রমাণিত হওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। কারণ এই আমল তারা নিঃসন্দেহে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে পেয়েছেন। এছাড়া যোহরের পূর্বে চার রাকাত নামায পড়ার যে কারণ হাদীস শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে অর্থাৎ ‘সূর্য ঢলে যাওয়ার পরের সময়টা এমন যে, তখন আসমানের দরজা খুলে দেওয়া হয়।’ তা জুমার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

Sharable Link

মুহাম্মাদ আহমদ আলী - সাভার, ঢাকা

১৯৭৫. Question

হযরত ইউসুফ আ.-এর ভাইরা ষড়যন্ত্র করে তাকে কূপে নিক্ষেপ করেছিল। যার বর্ণনা কুরআন মজীদের সূরা ইউসুফে আছে। জানার বিষয় হল সেই ভাইরা কি নবী ছিলেন? তারা নবী হলে এ ঘটনা তাদের নবুওয়তপ্রাপ্তির আগের না পরের? জানালে কৃতজ্ঞ হব।

Answer

নির্ভরযোগ্য বক্তব্য অনুযায়ী হযরত ইউসুফ আ.-এর যে ভাইরা তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল তাদের কেউ নবী ছিলেন না। তারা ছিলেন সাধারণ মুমিন। পরবর্তীতে ইউসুফ আ. তাদেরকে ক্ষমা করে দেন এবং তারা নিজেদের কৃতকর্মে অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহ তাআলার নিকট তাওবা করেন।

সূরা ইউসুফ : ৯১-৯৮; তাফসীরে ইবনে কাছীর ২/৭২৬; রূহুল মাআনী ৭/১৮৪; মাআরিফুল কুরআন ৫/৩১; ফাতাওয়াল লাজনাতিদ দাইমাহ ৩/২৮৩

Sharable Link

মুহাম্মাদ নজরুল ইসলাম - মুন্সীগঞ্জ

১৯৭৬. Question

পাঞ্জাবীর হাতার দৈর্ঘ্য কোন পর্যন্ত রাখা সুন্নত? এ ব্যাপারে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আমল বরাতসহ জানাবেন।

Answer

রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জামার হাতা সম্পর্কে দুই ধরনের বক্তব্য পাওয়া যায়। কিছু বর্ণনায় কব্জি পর্যন্ত আর কিছু বর্ণনায় আঙ্গুলের মাথা পর্যন্ত হাতা লম্বা রাখার কথা এসেছে। সুতরাং কব্জির সমান বা এর চেয়ে কিছু লম্বা করলে সুন্নতের উপর আমল হয়ে যাবে। তবে আঙ্গুলের অগ্রভাগ থেকে লম্বা রাখা সুন্নত নিয়ম নয়। কারণ শু‘আবুল ঈমান বায়হাকীর এক হাদীসে আছে, হযরত আলী রা. এমন লম্বা হাতা আঙ্গুল সমান করে কেটে ফেলেছিলেন।

আলমাওয়াহিবুল লাদুনিয়্যাহ ২/৪২৭, ৪৩৬; আশশামায়িলিল মুহাম্মাদিয়্যাহ পৃ. ১৫৫.১৫৭; আলমাওয়াহিবুল লাদুনিয়্যাহ আলাশ শামায়িলিল মুহাম্মাদিয়্যাহ পৃ. ১৫৬; জামেউল ওসায়েল ১/১০৯; শুআবুল ঈমান, বায়হাকী ৫/১৫৪, ১৫৫, ১৭১; বাযলুল মাজহূদ ১৬/৪০৭, ৩৫৩; মিরকাতুল মাফাতীহ ৮/২৪৫,২৪৭; ফাতাওয়া রশীদিয়াহ পৃ. ৫৭৩

Sharable Link

মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান - নারায়ণগঞ্জ

১৯৭৭. Question

আমাদের এলাকায় একটি মাযার আছে। সেখানে কিছু সাধক আছেন যারা মাঝে মধ্যে বড় উদ্ভট কথাবার্তা বলে থাকেন। হক্কানী লোকদের ব্যাপারেও উদ্ভট মন্তব্য করে থাকেন। একদিন বললেন, মেরাজে গিয়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে নব্বই হাজার কালাম লাভ করেন। এর মধ্যে ত্রিশ হাজার কালাম জাহেরী আর বাকী ষাট হাজার বাতেনী। এসব কিছু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গোপনে একমাত্র আলী রা.কে বলে গেছেন। তাঁর নিকট থেকে ক্রমান্বয়ে সূফী, ফকীর ও দরবেশদের নিকট ষাট হাজার কালাম রয়েছে। যেগুলো সম্পর্কে ওলামায়ে কেরাম অজ্ঞ। ফলে তারা ফকীর-দরবেশদের কিছু বিষয়াদি নিয়ে আপত্তি করেন। এ কথাগুলো সঠিক? বাস্তবেই কি ষাট হাজার কালাম বাতেনী আছে?

Answer

এ কথা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও সুস্পষ্ট কুফর। এতে আল্লাহ তাআলার উপর মিথ্যারোপ করাহয় যে, তিনি মানুষকে দু’প্রকার শরীয়ত দান করেছেন। একটি ত্রিশ হাজার কালামবিশিষ্ট। আর অপরটি ষাট হাজার কালামবিশিষ্ট শরীয়ত। আর উভয় শরীয়ত পরস্পর বিরোধী। এক শরীয়তে এক বস' হালাল হলে অন্য শরীয়তে তা হারাম। এরূপ পরস্পর বিরোধী কাজ সৃষ্টির পক্ষেও নিকৃষ্ট। তাহলে আল্লাহ তাআলার শানে এমন কথা বলা কতটা ধৃষ্টতা! দ্বিতীয়ত এখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপরও অপবাদ দেওয়া হয় যে, তিনি অধিকাংশ মৌলিক কথা যা সকল মুসলমানের জানা জরুরি ছিল তা তিনি তাদের কাছে পৌঁছাননি। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর এমন কথা বলা ঈমান পরিপন্থী। তৃতীয়ত দ্বীনের বিশেষ কিছু কথা শুধু হযরত আলী রা.কে বলেছেন অন্য কাউকে বলেননি-এটা মূলত সাবায়ী চক্রের আকীদা। যাদের কাফের হওয়ার বিষয়ে উম্মতের ইজমা রয়েছে। এই ভ্রান্ত আকীদা তারা হযরত আলী রা.-এর জীবদ্দশাতেই প্রচার করেছিল। তখন হযরত আলী রা. এ কথা সুস্পষ্টভাবে অস্বীকার করেছেন। সুনানে নাসায়ীতে এসেছে, ‘এক ব্যক্তি হযরত আলী রা.কে জিজ্ঞাসা করল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি লোকের অগোচরে আপনাকে কিছু বলে গেছেন? একথা শোনে ক্রোধে তার চেহারা লাল হয়ে গেল। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের অগোচরে আমাকে কিছুই বলে যাননি। তবে তিনি আমাকে চারটি কথা বলে গেছেন। তখন আমরা ছিলাম ঘরের ভেতর। তিনি ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি তার পিতাকে লা’নত করে আল্লাহ তাআলা তাকে লা’নত করেন। যে ব্যক্তি গায়রুল্লাহ তথা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে জবাই করে আল্লাহ তাআলা তার উপর লা’নত করেন। যে ব্যক্তি কোনো বিদআতীকে আশ্রয় দেয় আল্লাহ তাআলা তার উপর লা’নত করেন। যে ব্যক্তি জমিনের চিহ্ন এদিক-সেদিক করে আল্লাহ তাআলা তার উপর লা’নত করেন। (সুনানে নাসায়ী ২/১৮৩, ১৮৪) সুতরাং প্রশ্নোক্ত ঐ কথা সম্পূর্ণ বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও কুফরী কথা। এ আকীদা অবশ্যই বর্জন করা জরুরি।

Sharable Link