মুহাম্মাদ আবদুশ শাকুর - হাটহাজারী, চট্টগ্রাম

১৬৬১.. Question

আমাদের গ্রামের এক ব্যক্তি কবরস্থানে গিয়ে তার আববার কবরের নিকট বসে দেখে দেখে কুরআন তেলাওয়াত করে। জানতে চাই, শরীয়তের দৃষ্টিতে এভাবে কবরের নিকট বসে কুরআন তেলাওয়াত করা কি জায়েয আছে?

Answer

কবরের পাশে বা কবরস্থানে কুরআন মজীদ দেখে তেলাওয়াত করা যদিও নাজায়েয নয় তথাপি তা থেকে বিরত থাকাই শ্রেয়। কারণ সাহাবা-তাবেয়ীন থেকে এমন করার প্রমাণ পাওয়া যায় না।

- ফাতাওয়া উছমানী ১/১৩৬; আহসানুল ফাতাওয়া ৮/২০

Sharable Link

মুহাম্মাদ হাসানাত - চাঁদপুর

১৬৬২. Question

আমি এক লোককে অনেকদিন আগে এক হাজার টাকা করয দিয়েছিলাম। কথা ছিল এক মাস পর সে তা আদায় করবে। কিন্তু এক মাসের স্থলে প্রায় ৭মাস গত হল, টাকা আদায়ের জন্য কয়েকবার তাগিদ দেওয়া সত্ত্বেও সে তা আদায় করছিল না। আমি একদিন আমার পরিচিত এক লোকের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বললাম। সে বলল, যদি আমি তোমার টাকা উদ্ধার করে দিতে পারি তাহলে আমাকে কী দিবে? আমি বললাম, তোমাকে টাকার এক তৃতীয়াংশ দিয়ে দিব। সেও এ মর্মে রাজি হয়ে যায়।

জানতে চাই, আমাদের উক্ত চুক্তি শরীয়সম্মত হয়েছে কি না?

Answer

ঐ টাকা আদায়ের জন্য উদ্ধারকারীকে শ্রম ব্যয় করতে হলে উক্ত চুক্তি জায়েয হবে এবং ঐ টাকা উদ্ধার করে দিলে তাকে তার পাওনা দিয়ে দিতে হবে।

-সহীহ বুখারী (তা’লীক) ১/৩০৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৩/১১৬; শরহুল মাজাল্লাহ খালিদ আতাসী ২/৬৭৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪৪৬; রদ্দুল মুহতার ৬/৬৩; বুহুস ফী কাযায়া ফিকহিয়্যা মুআছিরা ২/২১৭

Sharable Link

মুহাম্মাদ আবদুল মালিক - রায়পুরা, নরসিংদী

১৬৬৩. Question

আমরা জানি, আকীকা করতে হয় বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হওয়ার সপ্তম দিন। এখন আমার প্রশ্ন এই যে, দিবস-গণনা কবে থেকে শুরু হবে? যেদিন সে ভূমিষ্ট হল সেদিনও কি হিসাবে ধরা হবে না সেদিন বাদ দিয়ে?

Answer

বাচ্চা যদি রাত্রে ভূমিষ্ঠ হয় তাহলে পরের দিন থেকে সাত দিন গণনা করবে। আর যদি দিনে (অর্থাৎ ফজরের পর) ভূমিষ্ঠ হয় সেক্ষেত্রে ফিকাহবিদদের দু’টি মত রয়েছে। তবে বাহ্যিকভাবে হাদীস শরীফ থেকে বোঝা যায় যে, ওই দিনটিকে হিসাবে ধরতে হবে। অতএব সেই দিনসহ সাত দিন গণনা করে আক্বীকা করবে। যেমন কোনো শিশু বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত থেকে শুক্রবার মাগরিবের পূর্ব পর্যন্ত কোনো সময়ে জন্মগ্রহণ করলে তার আক্বীকা করতে হবে পরবর্তী বৃহস্পতিবার সূর্যাস্তের আগে। উল্লেখ্য, সপ্তম দিনে আক্বীকা করা মুস্তাহাব। এই দিনে সম্ভব না হলে ১৪ বা ২১ তম দিনে করবে।

-আলমাজমূ’ ৮/৪১১; মুখতাছারুল খলীল ৪/৩৮৯; ইলাউস সুনান ১৭/১১৯; আততাজ ও ইকলিল ৪/৩৯০

Sharable Link

মুহাম্মাদ আবদুদ দাইয়্যান - পল্লবী, ঢাকা

১৬৬৪. Question

নবজাতকের কানে আযান দেওয়ার পদ্ধতি কী? এই আযানও কি নামাযের আযানের মতোই হবে? এক ব্যক্তি বলেছেন, হাইয়া আলাস সালাহ, হাইয়া আলাল ফালাহ বলা লাগে না। তার বক্তব্য কি ঠিক? জানালে উপকৃত হব।

Answer

না। ঐ ব্যক্তির কথা ঠিক নয়। নবজাতকের কানে যে আযান দেওয়া হয় তাতেও হাইয়া আলাস সালাহ, হাইয়া আলাল ফালাহ বলতে হয়। তবে এই আযান নামাযের আযানের মতো উচ্চস্বরে দিবে না; বরং স্বাভাবিক আওয়াজে দিবে। ডান কানে আযান আর বাম কানে ইকামত দিবে।

-জামে তিরমিযী ১/২৭৮; তুহফাতুল আহওয়াযী ৫/৮৯; তাকরীরাতে রাফেয়ী ১/৪৫; ইলাউস সুনান ১৭/১২৩; রদ্দুল মুহতার ১/৩৮৭

Sharable Link

মুহাম্মাদ হুসাইন আহমদ - মিরপুর, ঢাকা

১৬৬৫. Question

আমাদের এলাকার এক ব্যক্তি হজ্ব ফরয হওয়ার পর ইন্তেকাল করেন। তিনি নিজেও হজ্ব করতে পারেননি এবং ওয়ারিসদেরকেও তার পক্ষ হতে হজ্ব করার ওসীয়ত করেননি। এখন ওয়ারিসরা নিজেদের আগ্রহে মৃতের পক্ষ হতে বদলী হজ্ব করাতে চাচ্ছে। মৃতের এক আত্মীয় মক্কায় থাকে। তাঁর মাধ্যমে কি এ বদলী হজ্বটি করানো যাবে, নাকি দেশ থেকে কাউকে পাঠিয়ে করাতে হবে?

Answer

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী মৃত ব্যক্তি যেহেতু বদলী হজ্বের ওসীয়ত করে যায়নি তাই ওয়ারিশগণ চাইলে মক্কা থেকেও  বদলী হজ্ব করাতে পারে। তবে এক্ষেত্রেও দেশ থেকে লোক প্রেরণ করা উত্তম। কারণ এর দ্বারা মৃতের উপর যেভাবে ফরয হয়েছিল সেভাবেই হজ্বটি আদায় করা হয়।

-সহীহ বুখারী ১/২৫০; ফাতহুল বারী ৪/৭৭; আলমুগনী ইবনে কুদামা ৫/৪১; মাআরিফুস সুনান ৬/৩১৭

Sharable Link

মুহাম্মাদ ফযলুল হক - ত্রিশাল, ময়মনসিংহ

১৬৬৬. Question

আমাদের একটি হাউজিং প্রকল্প আছে। আমরা জায়গা কিনে বাড়ি করে ফ্ল্যাট বিক্রি করি। বাড়ি বানাতে প্রায় তিন-চার বছর সময় লেগে যায়। এখন জানার বিষয় এই যে, আমাদের কি উক্ত তিন-চার বছরের জমির যাকাত আদায় করতে হবে? যেহেতু আমরা জায়গাগুলো ব্যবসার নিয়তেই ক্রয় করে থাকি।

Answer

ফ্ল্যাট বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে হলে এর জন্য ক্রয়কৃত জমি ব্যবসায়িক সম্পদের অন্তর্ভুক্ত। তাই আপনাদের ক্রয়কৃত জমির মূল্য হিসাব করে যাকাত আদায় করতে হবে।

-সুনানে আবু দাউদ ১/২১৮; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/১৬৬; বাদায়েউস সানায়ে ২/৯৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪০

Sharable Link

মুহাম্মাদ আফযল - শাহরাস্তি, চাঁদপুর

১৬৬৭. Question

আমরা জানি যে, আক্বীকাতে মাদা বকরি জবাই করতে হয়। কেউ যদি মাদা বকরি জবাই না করে নর ছাগল জবাই করে তাহলে কি কোনো সমস্যা হবে?

Answer

না। সমস্যা হবে না। নর-মাদা উভয় ধরনের ছাগল দ্বারা আক্বীকা করা জায়েয।

-জামে তিরমিযী ১/২৭৮; আতত্বীবী ৮/১৩৩; আলইসতিযকার ১৫/৩৮০; আলমাজমূ’ ৮/৪০৯; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২২

Sharable Link

মুহাম্মাদ নাজমুল হক - হেসামদ্দি, বরিশাল

১৬৬৮. Question

আমাদের এ বিষয়টি জানা আছে যে, সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সপ্তম দিনে আক্বীকা করতে হয়। এটাই উত্তম। কিন্তু কেউ যদি সপ্তম দিনে আক্বীকা করতে না পারে তাহলে সে কোন দিন আক্বীকা করবে? এজন্য কি বিশেষ কোনো দিন নির্দিষ্ট আছে? জানালে উপকৃত হব।

Answer

সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সপ্তম দিনে আক্বীকা করা মুস্তাহাব। সপ্তম দিনে সম্ভব না হলে চৌদ্দ বা একুশ তম দিনে করা ভালো। এর চেয়ে বিলম্ব করা উচিত নয়। কারণ হাদীস শরীফে পর্যায়ক্রমে এই তিন দিনের কথাই উল্লেখিত হয়েছে। তাই এ নিয়মই অনুসরণ করা উচিত। তবে এরপর করলেও আক্বীকা আদায় হবে। একুশতম দিনের পর যে কোনো দিন আক্বীকা করা যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রেও সাতের হিসাব ঠিক রাখা সম্ভব হলে ভালো।

-আলমুসতাদরাক ৪/২৩৮; আলমুগনী ইবনে কুদামা ১৩/৩৯৬; ইলাউস সুনান ১৭/১১৮; বিদায়াতুল মুজতাহিদ ১/৫৪০

Sharable Link

মুহাম্মাদ মাহমুদ - তাড়াইল, ময়মনসিংহ

১৬৬৯. Question

মাছের ব্যবসায়ীরা পাইকারদের কাছ থেকে কিছু টাকা জামানত রাখে। যাতে পাইকাররা কোনো সময় বাকিতে মাছ ক্রয় করে টাকা না দিলে উক্ত টাকা থেকে কেটে রাখা যায়। তবে সাধারণত পাইকাররা নগদ টাকা দিয়ে মাছ ক্রয় করে। এখন জানার বিষয় এই যে, তাদের জন্য জামানত রাখা সহীহ হবে কি না এবং ঐ টাকা তারা নিজ প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারবে কি না?

 

Answer

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী মাছ ব্যবসায়ীদের থেকে জামানত হিসেবে টাকা রাখা বৈধ। তবে সিকিউিরিটি বা জামানতের টাকা হেফাযত করে রেখে দিতে হবে। তা ব্যবহার করা বা ব্যবসায় লাগানো জায়েয হবে না। পরবর্তীতে ব্যবসায়ী পাওনা পরিশোধে ব্যর্থ হলে বিক্রেতা ঐ টাকা থেকে তার পাওনা নিয়ে নিতে পারবে।

উল্লেখ্য, মাছ ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে গৃহীত টাকা খরচ বা ব্যবসায় লাগাতে চাইলে জামানত হিসেবে টাকা নিবে না; বরং মাছের অগ্রিম মূল্য হিসেবে নিবে, যা বছরের সর্বশেষ লেনদেনের মূল্য হিসেবে ধর্তব্য হবে। এভাবে অগ্রীম মূল্য হিসাবে গৃহীত টাকা গ্রহীতা ব্যবহার করতে পারবে।

-আলইনায়া ১০/১৭৬; বাদায়েউস সানায়ে ৫/২০২; শরহুল মাজাল্লাহ খালিদ আতাসী ৩/১৪৩; জামে তিরমিযী ১/২৩৭; সুনানে বায়হাকী ৫/৩৫০; বুহুছ ফী কাযায়া ফিকহিয়্যাহ মুআছিরা ১/১১৪; আলফালাকুল মাশহুন ফিমা ইয়াতাআল্লাকু বিনতিফাঈল মুরতাহিন বিলমারহুন ৩/৪০৮; রদ্দুল মুহতার ৬/৪৮২

Sharable Link

মুহাম্মাদ সাঈদ আহমদ - মিরপুর, ঢাকা

১৬৭০. Question

আমি যাত্রাবাড়ি আড়তে দোকানদারী করি। দোকানের মালিক থাকেন ঝালকাঠি। তিনি সেখান থেকে বিভিন্ন পণ্য পাঠান এবং এর মূল্যও বলে দেন। আমি সেই মূল্যেই বিক্রি করি। তবে মাঝে মধ্যে দেখা যায়, তিনি যে মূল্য বলেন বাজারে ক্রেতা বেশি থাকায় এর চেয়ে দু’-এক টাকা বেড়ে যায়। এখন জানার বিষয় হল, আমি কি মালিকের নির্ধারিত মূল্যের  চেয়ে দু’-এক টাকা বেশি বিক্রি করতে পারব? যদি বেশি বিক্রি করি তাহলে অতিরিক্ত টাকা কি আমি নিতে পারব নাকি মালিককে দিয়ে দিতে হবে?

Answer

প্রশ্নোক্ত অবস্থায় আপনি মালিক কর্তৃক নির্ধারিত মূল্য থেকে বেশি বাজার মূল্যে বিক্রি করতে পারবেন। আর নির্ধারিত মূল্যের বেশি দিয়ে বিক্রি করলেও পূর্ণ টাকা মালিকেরই প্রাপ্য। মালিকের অনুমতি ছাড়া নিজে তা রেখে দিতে পারবেন না।

-ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৯; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৫/৪৭৭; আলমুগনী ইবনে কুদামা ৭/২৪৮;  আদ্দুররুল মুখতার ৫/৫২১

Sharable Link

মুহাম্মাদ মুশাররফ হুসাইন - গফরগাও, ময়মনসিংহ

১৬৭১. Question

এক ব্যক্তি মান্নত করেছে যে, যদি তার তাকবীরে উলা ছুটে যায় তাহলে যেদিন ছুটবে তার পরের দিনই সে একটি রোযা রাখবে। কিন্তু যেদিন তার তাকবীরে উলা ছুটেছে পরের দিন সে রোযা রাখেনি। এখন তার করণীয় কী? একটি রোযা রাখলেই চলবে? নাকি মান্নত ভঙ্গের কাফফারা দিতে হবে?

Answer

প্রশ্নোক্ত মান্নতের কারণে যেদিন তাকবীরে উলা ছুটেছে তার পরের দিন রোযা রাখা ওয়াজিব ছিল। সুতরাং ঐ দিন রোযা না রাখার কারণে ওয়াজিব তরকের গুনাহ হয়েছে। তাকে আগামী কোনো একদিন ঐ রোযাটি রাখতে হবে। এবং এর দ্বারা কৃত মান্নত আদায় হয়ে যাবে।

-সূরা হজ্ব : ২৯; সহীহ বুখারী ২/৯৯০; মুসান্নাফ ইবনে  আবি শায়বা ৭/৫২৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৭১; রদ্দুল মুহতার ২/৪৩৪

Sharable Link

মুহাম্মাদ বুরহানুদ্দীন - কচুয়া, চাঁদপুর

১৬৭২. Question

কিছুদিন আগে আমার দাদা একটি জমি ক্রয় করেছেন। জমিটির মূল্য ছিল দুই লক্ষ টাকা। কিন্তু জমিটির প্রতিবেশী শুফআর অধিকার দাবি করতে পারে এ আশংকায় রেজিষ্ট্রি কাগজে তার মূল্য দুই লক্ষের স্থলে তিন লক্ষ টাকা  লেখা হয়। যাতে এ মূল্য দেখে ওই প্রতিবেশী শুফআর দাবি না করে বা দাবি করলেও তাকে উক্ত জমি তিন লক্ষ টাকা দিয়েই  নিতে হবে। এতে জমির বিক্রেতাও রাজি ছিল। প্রশ্ন হল, জমির প্রকৃত কেনাদামের চেয়ে রেজিষ্ট্রিতে বাড়িয়ে লেখা এবং শুফআ দাবিকারীর কাছ থেকে উক্ত বাড়তি মূল্য আদায় করা জায়েয হবে কি না? জানিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন।

Answer

ঐভাবে মূল্য  বাড়িয়ে লেখা মিথ্যা হয়েছে। এছাড়া শুফআর দাবি শরীয়তে স্বীকৃত। তাই অধিক মূল্য লিখে  তাকে অধিকার আদায় থেকে বঞ্চিত করা অন্যায় হয়েছে। সুতরাং এক্ষেত্রে যদি শুফআর দাবি করে তবে তার কাছ থেকে বাস্তব মূল্যের চেয়ে বেশি নেওয়া জায়েয হবে না।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৫২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩৪৬; মাজমাউল আনহুর ৪/২২১; ফাতহুল কাদীর ৯/৩৭৬; আদ্দুররুল মুখতার ৬/২১৬

Sharable Link

মুহাম্মাদ মাহবুবুল আলম - চান্দিনা, কুমিল্লা

১৬৭৩. Question

কিছুদিন আগে আমি মার্কেট থেকে ২০০/-টাকা দিয়ে একটি চামড়ার মানিব্যাগ ক্রয় করি। ব্যাগটির মূল্য পরিশোধ করে দোকান থেকে বিদায় নিয়ে যখন কিছু দূর চলে আসি তখন শুনি বিক্রেতা উঁচু গলায় আমাকে ডাকছে। ডাক শুনে কাছে গেলে সে বলল, হুজুর! মাফ করবেন। আমি ব্যাগটির দাম ভুল বলে ফেলেছি। তার প্রকৃত মূল্য হল ২৪০/-টাকা। যদি বিশ্বাস না করেন তাহলে চার্ট দেখুন। অতঃপর সে আমাকে মূল্য তালিকার কাগজ দেখাল। তাতে এর ক্রয়মূল্য ২২০/-টাকা লিখা ছিল। সে আমার কাছে ২৪০/-টাকা দাবি করল। কিন্তু আমি তাতে কিছুতেই রাজি না হওয়ায় সে বলল, তাহলে হুজুর এর কেনাদামটা তো দিবেন। অবশেষে তার অনুনয় বিনয় দেখে আমি তাকে ২০/-টাকা দিলাম। প্রশ্ন হল, এক্ষেত্রে অতিরিক্ত বিশ টাকা দেওয়া কি আমার জন্য জরুরি ছিল? না দিলে কি আমি গুনাহগার হতাম?

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু উভয়ের সম্মতিতে বিক্রেতার চাওয়া দামই চূড়ান্ত হয়েছে এবং ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন হয়ে গিয়েছে এছাড়া এক্ষেত্রে বিক্রেতাকে কোনো প্রকার ধোঁকাও দেওয়া হয়নি তাই পরবর্তীতে আপনার জন্য অতিরিক্ত টাকা দেওয়া জরুরি ছিল না। তবে বিক্রেতার বক্তব্য অনুযায়ী  যেহেতু সে ভুলে কেনাদামের চেয়ে কম মূল্যে বিক্রি করেছে তাই তার আবদার রক্ষার্থে অতিরিক্ত বিশ টাকা দিয়ে ভালই করেছেন।

-শরহুল আশবাহ হামাবী ১/২৫৭; তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ১/৩৭৯-৩৮০; আলবাহরুর রায়েক ৬/১১৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৪/৭৯; আদ্দুররুল মুখতার ৫/১৪২-১৪৩

Sharable Link

মুহাম্মাদ আবুল হোসেন - গোপালগঞ্জ

১৬৭৪. Question

বর্তমানে প্রায় প্রত্যেক মসজিদে জামাত শুরুর আগে ইমাম সাহেব ঘোষণা করেন, যাদের মোবাইল আছে তা বন্ধ করে দিন। কিন্তু আমাদের এলাকার মাদরাসা-মসজিদে এই ঘোষণা হয় না। ফলে যেসব মুসল্লী মোবাইল বন্ধ করতে ভুলে যান তাদের রিং টোনের আওয়াজে মসজিদের পরিবেশ বিঘ্নিত হয় এবং নামাযের একাগ্রতা নষ্ট হয়। একদিন মসজিদের ইমাম সাহেব নামাযের পূর্বে মোবাইল বন্ধ করার অনুরোধ করলেন। এতে এক স্থানীয় ভদ্রলোক খুব রেগে গেলেন এবং মোবাইল বন্ধের এলান দেওয়ার অপরাধে ইমাম সাহেবকে অনেকক্ষণ বকাবকি করলেন। ফলে পরবর্তীতে এ ধরনের এলান করতে আর কেউ সাহস করেনি। এখন আমার প্রশ্ন এই যে, জামাত শুরুর আগে মোবাইল বন্ধ করার এলান করা কি অপরাধ হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

ঈমানের পরই নামাযের মর্যাদা। এটি আল্লাহ তাআলার সামনে দন্ডায়মান হয়ে তাঁর সাথে কথোপকথনের এক অপূর্ব মুহূর্ত। এ কারণেই নামাযের খুশু-খুযু ও একাগ্রতার প্রতি যেভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে অন্য কোনো ইবাদতের বেলায় তেমন করা হয়নি। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-‘ঐ সকল মুমিন সফলকাম, যারা নিজেদের নামাযে বিনম্র।’ (সূরা মুমিনূন : ২) অন্যত্র ইরশাদ করেন, ‘সেসব নামাযীদের জন্য দুর্ভোগ যারা তাদের নামায সম্বন্ধে উদাসীন।’ (সূরা মাউন : ৪-৫)

এ কারণে ইমাম, মুসল্লী সকলের কর্তব্য হল নামাযের খুশু-খুযু তথা একাগ্রতার প্রতি সবিশেষ লক্ষ রাখা। বর্তমানে মোবাইলের রিং টোন দ্বারা যেহেতু মসজিদের আদব ক্ষুণ্ণ হয় এবং নামায বা অন্য ইবাদতের একাগ্রতা বিনষ্ট হয়  তাই মসজিদে প্রবেশ করার আগেই মোবাইল বন্ধ করে নিবে কিংবা সাইলেন্ট দিয়ে রাখবে। এ বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখা সকল মুসল্লীদের জন্য জরুরি। যেন কোনো অবস্থাতেই মসজিদে প্রবেশ করার পরও মোবাইল খোলা না থাকে। এরপরও অনেকে মোবাইল বন্ধ করতে ভুলে যায় তাই নামায শুরু করার আগে ইমাম বা মুয়াজ্জিন সাহেব মোবাইল বন্ধের কথা স্মরণ করিয়ে দিলে তা খুবই ভালো কাজ হিসেবে গণ্য হবে। এভাবে এলান করা নিষিদ্ধ তো নয়ই; বরং প্রশংসনীয় পদক্ষেপ।

হাদীস ও ফিকহের প্রখ্যাত ভাষ্যকার আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রাহ. এবং ইমাম নববী রাহ. একটি হাদীস থেকে প্রমাণ করেছেন যে, জামাত শুরু করার পূর্বে ইমাম সাহেব নামাযের স্বার্থে যে কোনো কথা বলতে পারেন।

অতএব প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী, মোবাইল বন্ধের এলান করার কারণে ইমাম সাহেবের উপর আপত্তি করা ঠিক হয়নি। না জেনে এভাবে আপত্তি করা অন্যায় হয়েছে।

-সহীহ মুসলিম ১/১৮১; ইকমালুল মু’লিম ২/৩৪৮; ফাতহুল বারী ২/১৪৭; উমদাতুল কারী ৫/২৫৫;আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৮৯, ৫৬৮; হাশিয়াতুত্তাহতাবী আলাদ্দুর ১/২৪৬

Sharable Link

মুহাম্মাদ আবু জর - কুমিল্লা

১৬৭৫. Question

একবার আমার এক বন্ধু আমাকে ৩০০/-টাকা দামের একটি লুঙ্গি কিনে দিতে বলল। আমি  আমার পরিচিত এক লুঙ্গি ব্যবসায়ীর নিকট গেলাম। তিনি আমাকে ৩০০/-টাকা দামের কতগুলো লুঙ্গি দেখালেন এবং আমি তা থেকে একটি লুঙ্গি পছন্দ করলাম। দাম পরিশোধ করতে গেলে তিনি বললেন, লুঙ্গিটির দাম ৩০০/-টাকাই। তবে আপনি আমার পরিচিত বিধায় আপনার খাতিরে আমি এর দাম ২০/-টাকা কম নিচ্ছি। এভাবে সে লুঙ্গির দাম ২০/-টাকা কম রাখে।

জানতে চাই, আমার খাতিরেই যেহেতু বিক্রেতা লুঙ্গির দাম ২০/-টাকা কম রেখেছে তাই উক্ত ২০/-টাকা আমি নিজে রেখে দিতে পারব কি না?

Answer

প্রশ্নোক্ত লেনদেনে আপনার খাতিরে বিক্রেতা মূল্য কম নিলেও বাকি টাকা মালিকের। তাই ওই ২০/-টাকা আপনার নিজের জন্য রেখে দেওয়া জায়েয হবে না। কেননা এক্ষেত্রে আপনি কেবল ক্রেতার প্রক্ষ থেকে প্রতিনিধি। সুতরাং বিক্রেতা যে কারণেই মূল্য কম রাখুক তা মূল ব্যক্তিরই হবে। অতএব এটা আপনার ঐ বন্ধুকে ফেরত দিতে হবে। তার অনুমতি ব্যতীত তা নেওয়া আপনার জন্য বৈধ হবে না।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/৫৮৮; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/২৬; আলবাহরুর রায়েক ৭/১৫৫; শরহুল মাজাল্লাহ খালিদ আতাসী ৪/৪৭৮; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৫১৬

Sharable Link

মুহাম্মাদ আবদুল মালিক - কাপাসিয়া, গাজিপুর

১৬৭৬. Question

কোনো ব্যক্তিকে বদলী হজ্ব করার জন্য সরকারীভাবে যেতে যা খরচ হয় তা পূর্ণ টাকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সে নিজের আরামের জন্য কিছু টাকা যোগ করে বেসরকারীভাবে যেতে চাচ্ছে। এ অবস্থায় বদলী হজ্ব আদায়ে কোনো সমস্যা হবে কি?

Answer

হজ্বের জরুরি খরচ দেওয়ার পর বদলী আদায়কারী নিজ থেকে অতিরিক্ত খরচ করলে বদলী হজ্ব আদায়ে ত্রুটি আসবে না। হজ্বের প্রয়োজনীয় খরচাদি পরিশোধ করাই প্রেরণকারীর দায়িত্ব। অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা নেই, বদলী আদায় হয়ে যাবে।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৫৭; গুনইয়াতুন নসিক পৃ. ৩২৩; মানাসিকে মোল্লা আলী কারী পৃ. ৪৫৮; যুবদাতুল মানাসিক পৃ. ৪৫০; আদ্দুররুল মুখতার ২/৬০২

Sharable Link

মুহাম্মাদ আবুল কাশেম - বি.বাড়িয়া

১৬৭৭. Question

এক ব্যক্তির ডান পা মারাত্মকভাবে যখম হয়েছে। ডাক্তার তার পা ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে। তাই তিনি অজু করার সময় ব্যান্ডেজের উপর মাসহ করে নামায পড়েন। জানার বিষয় হল, তাকে যদি ফরয নামাযের ইমাম বানানো হয় আর সুস্থ লোকজন তার ইকতিদা করে তাহলে কি সুস্থ লোকদের নামায সহীহ হবে?

Answer

হ্যাঁ, সুস্থ লোকদের জন্য ঐ ব্যক্তির পিছনে ইকতিদা করা জায়েয হবে। কারণ অযুর স্থানে ব্যান্ডেজের উপর মাসহকারী ব্যক্তির ইমামতি সহীহ। তার পিছনে অযুকারী ব্যক্তির নামায পড়তে বাধা নেই। তবে এমন মাজুর ব্যক্তি যার ক্ষত থেকে রক্ত বা পুঁজ ঝরতে থাকে সে ইমামতির যোগ্য নয়। তার পিছনে সুস্থ লোকদের ইকতিদা সহীহ হবে না।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৮৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৪৭; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৫৫; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৬৪; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৮৫; আননাহরুল ফায়েক ১/২৫৪; হাশিয়াতুত্তাহতাবী আলাদ্দুর ১/২৫২

Sharable Link

মুহাম্মাদ আদনান বিন নোমান - ২১/১৭ শেওড়াপাড়া, ঢাকা

১৬৭৮. Question

আমি বিত্রের নামাযে ভুলবশত দুআ কুনূত না পড়ে রুকুতে চলে যাই। রুকুতে যাওয়ার পর যখন স্মরণ হল তখন চিন্তা-ভাবনা করে স্থির করি যে, রুকু থেকে উঠে কুনূত পড়ব। তাই আমি রুকু থেকে উঠে কুনূত পড়ে সেজদায় যাই এবং নামায শেষে সাহু সিজদা করি। জানতে চাই, আমার নামায শুদ্ধ হয়েছে কি?

Answer

দুআ কুনূতের স্থান রুকুর পূর্বে। ভুলবশত ছুটে গেলে নিয়ম হল, সাহু সিজদা করা। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে রুকু থেকে উঠে কুনূত পড়া নিয়ম পরিপন্থী হয়েছে। তবে এতে নামায ফাসেদ হয়নি। আর যথাসময়ে না পড়ার কারণে যে ত্রুটি হয়েছিল তা সাহু সিজদা দ্বারা পূরণ হয়েছে এবং নামাযটি আদায় হয়ে গেছে।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১১১ ও ১৩১; আলবাহরুর রায়েক ২/৪২; শরহুল মুনিয়্যাহ পৃ. ৪৬৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৬৭৩; আদ্দুররুল মুখতার ২/৯

Sharable Link

মিসেস মরিয়ম - ১৮/১৬ পল্লবী, ঢাকা

১৬৭৯. Question

দুপুর একটা। মুআযযিন যোহরের আযান দিচ্ছেন। আমি রান্নায় ব্যস্ত। আযানের ধ্বনি কানে আসামাত্র  আমি স্থির করলাম যে, রান্না শেষ করেই নামায আদায় করব ইনশআল্লাহ। তড়িঘড়ি রান্না শেষ করে অযু-গোসল করে নামাযের সকল প্রস্ত্ততি সম্পন্ন করি। ইতিমধ্যে মাসিক শুরু হয়ে যায়। জানার বিষয় এই যে, আমার ঐ দিনের যোহরের নামায কাযা করতে হবে কি না?

Answer

না। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনাকে ঐ দিনের যোহরের নামায কাযা করতে হবে না। কারণ নামাযের ওয়াক্ত থাকাবস্থায় স্রাব শুরু হয়েছে।

-মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ১/৩৩৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৩২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৩৩৫; ফাতহুল কাদীর ১/১৫২; রদ্দুল মুহতার ১/২৯১

Sharable Link

মুহাম্মাদ আবরার - খুলনা

১৬৮০. Question

আমি মাগরিবের নামাযে ইমামের পিছনে ইকতিদা করি। দ্বিতীয় রাকাআতে রুকুতে যাওয়ার পর আমার সন্দেহ হয় যে, আমি তাকবীরে তাহরীমা করেছি কি করিনি? দীর্ঘক্ষণ চিন্তা-ভাবনার পরও আমি নিশ্চিত হতে পারিনি এবং এই সংশয়ের মাঝেই নামায শেষ করি।

জানার বিষয় এই যে, আমার নামায কি শুদ্ধ হয়েছে? শুদ্ধ না হলে এখন আমার কী করণীয়?

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে এ সংশয় যদি আপনার জীবনে এই প্রথমবার হয়ে থাকে তাহলে নামাযটি পুনরায় পড়ে নেওয়া জরুরি। আর যদি এ ধরনের সংশয়ের ঘটনা আরো ঘটে থাকে তাহলে নামাযটি আদায় হয়ে গেছে বলে ধর্তব্য হবে। এক্ষেত্রে তা পুনরায় পড়তে হবে না।

উল্লেখ্য, নামায শুরু করার সময় মনোযোগের সাথে তা শুরু করতে হবে। এরপর আর কোনো সন্দেহ করা বাঞ্ছনীয় নয়; বরং যথারীতি নামায পড়ে যেতে হবে।

-আলবাহরুর রায়েক ২/১০৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৭২; মারাকিল ফালাহ পৃ. ২৬০; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১২১; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ১/৬৩; ফাতহুল কাদীর ১/৪৪৩-৪৫২; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩১৬; আদ্দুররুল মুখতার ২/৯৫

Sharable Link

মুহাম্মাদ ইসমাঈল - কুমিল্লা

১৬৮১. Question

আমার এক আত্মীয় বিদেশে থাকে। সে বিদেশ থেকে দেশে অবস্থানকারী তার এক ভাইকে আদেশ করল যে, তুমি আমাদের বাড়ির পাশের জমিটি আমার ও তোমার নামে কিনে ফেল। এর দাম যা হয় তা যদি তোমার কাছে থাকে তাহলে তা দিয়ে জমিটির পুরো মূল্য পরিশোধ করে দাও। আমি চার মাসের মধ্যে আমার অংশের টাকা তোমাকে পাঠিয়ে দিব। তার ভাই এ শর্তে রাজি হয় এবং পুরো টাকা নিজ থেকে দিয়ে জমিটি কিনে ফেলে। কিন্তু জমি রেজিষ্ট্রি করার সময় পুরোটাই সে নিজের নামে রেজিষ্ট্রি করে। বর্তমানে তার ভাই দেশে এসেছে এবং উক্ত জমি থেকে অংশ নিতে চাচ্ছে। কিন্তু ক্রেতা-ভাই দিতে চাচ্ছে না। উল্লেখ্য, বিদেশ থেকে তার ভাই তাকে নির্ধারিত সময়ে টাকা পাঠিয়েছিল। কিন্তু সে তা গ্রহণ করেনি।

জানার বিষয় এই যে, শরীয়তের দৃষ্টিতে সে কি এখন উক্ত জমি থেকে অংশ দাবি করতে পারবে এবং তার ভাই কি তাকে তা দিতে বাধ্য থাকবে?

Answer

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী যেহেতু ওই ব্যক্তি তার ভাইকে উক্ত জমির একাংশ তার নিজের নামে কিনতে বলেছে এবং সে এ দায়িত্ব গ্রহণও করেছে তাই এরপর পুরো জমি নিজের নামে রেজিষ্ট্রি করা তার জন্য বৈধ হয়নি। এ জমির অর্ধেকের মালিক সে এবং বাকি অর্ধেকের মালিক তার ভাই। অতএব তাকে ঐ অংশ দিয়ে এর খরিদমূল্য তার কাছ থেকে নিয়ে নিবে।

-ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/৫৮০; শরহুল মাজাল্লাহ খালিদ আতাসী ৪/৪৬৫

Sharable Link

মুহাম্মাদ যাকারিয়া - বি.বাড়িয়া

১৬৮২. Question

আমি একজন প্রবাসী। অনেক বছর থেকেই বিদেশে থাকি। ১৯৯৬ সনে সরকারীভাবে আমি ইমাম হিসেবে কাতারে যাই। যাওয়ার সম্পূর্ণ খরচ সরকার বহন করে। এতে সংসারের কোনো টাকা খরচ হয়নি। কাতারে আমার উপার্জিত টাকা থেকে প্রথম চার বছরে প্রায় ১৪ লক্ষ টাকা বাড়িতে পাঠিয়েছি। আমি আমার পিতাকে এ টাকা দিয়ে আমার জন্য বাড়ির জমি খরিদ করতে এবং তাতে বাড়ি করতে বলেছি। আমার ইচ্ছা ছিল তা আমার নামে রেজিষ্ট্রি হবে। কিন্তু তিনি ঐ টাকা থেকে মাত্র ৪লক্ষ টাকা বাড়ির কাজে ব্যয় করেন। বাকি টাকা সংসারে খরচ করেন এবং ঐ বাড়িটিও আমাকে না জানিয়ে নিজের নামে রেজিষ্ট্রি করেন। এরপর একটি চিঠিতে তিনি আমাকে লেখেন যে, যেহেতু আমি তা আমার নামে রেজিষ্ট্রি করে ফেলেছি তাই বিষয়টি শরীয়তের উপর ছেড়ে দাও।

আমার আম্মার দাবি হল, তিনি নিজ পিত্রালয় থেকে ১লক্ষ টাকা এনে বাড়িতে খরচ করেছেন। আসলে পরবর্তী বছরগুলোতে আমি ঠিকই বাড়ির ঋণের টাকা আদায় করেছি এবং এ বাবদ উপরোক্ত ১৪ লক্ষ টাকা ছাড়াও আরো টাকা পাঠিয়েছি, কিন্তু তা সংসারের অন্যদের পিছনে খরচ করা হয়েছে এবং বোনদের বিবাহ-শাদি আমি দিয়েছি। দু’ভাইকে ১০লক্ষ টাকা খরচ করে বিদেশ পাঠিয়েছি। এমনিভাবে আমাকে সংসারের খরচও দিতে হয়েছে। অথচ আমার বিয়ের পর থেকে সংসার ভিন্ন। উল্লেখ্য, আমার পিতা এখন আখেরাতবাসী।

জানার বিষয় হল, উক্ত বাড়িতে কি আমার পিতার সকল ওয়ারিশ হকদার হবে নাকি তা আমার একক হক বলে বিবেচিত হবে? বিস্তারিত জানাবেন।

 

Answer

প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী আপনার পাঠানো টাকা দ্বারা যেহেতু আপনি নিজের জন্য জমি ক্রয় করে তাতে বাড়ি নির্মাণ করতে বলেছেন তাই সে টাকা দিয়ে জমি কিনে বা বাড়ি করে পিতা নিজের নামে দলীল করলেও এতে তাঁর মালিকানা সাব্যস্ত হবে না এবং বাড়িটি তাঁর মীরাস সম্পত্তি হিসেবেও গণ্য হবে না; বরং এটা আপনার নিজের একক মালিকানাধীন সম্পত্তি বলে বিবেচিত হবে।

সুতরাং আপনার পিতার অন্যান্য ওয়ারিশদের দায়িত্ব হল, আইনগত ঝামেলা এড়ানোর জন্য আপনার নামে তা লিখে দেওয়া। অবশ্য এক্ষেত্রে যা অফিসিয়াল খরচ হবে তা আপনাকে বহন করতে হবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ৫/৩৩; আলবাহরুর রায়েক ৭/১৬০; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/১৯; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৫১৭

Sharable Link

মুহাম্মাদ ফয়সাল - কুমিল্লা

১৬৮৩. Question

কিছুদিন পূর্বে আমাদের এলাকায় হিন্দুদের মন্দিরে মূর্তিপূজা হচ্ছিল। পূজা চলাকালীন একদিন গভীর রাতে এলাকার কিছু মুসলমান যুবক মন্দিরে সিঁদ কেটে মূর্তিদের সামনে সাজিয়ে রাখা মিষ্টি, কলা, ফলফলাদিসহ আরো বিভিন্ন ধরনের খাবার নিয়ে এসে পরস্পর ভাগাভাগি করে খেয়ে ফেলে। জানার বিষয় হল, এ ধরনের খাবার মুসলমানদের জন্য খাওয়া জায়েয কি না?

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে তাদের এসব খাবার গোপনে আনা চুরি হয়েছে। আর মুসলমানদের মালামাল চুরি করা যেমন নাজায়েয তেমনি অমুসলিমদের মালামাল চুরি করাও নাজায়েয। অতএব তাদের জন্য এসব খাবার নেওয়া সম্পূর্ণ নাজায়েয হয়েছে।

উল্লেখ্য, মূর্তির সামনে কোনো খাবার দেওয়া সুস্পষ্ট শিরক। মূর্তি ও প্রতিমার নামে উৎসর্গ করার কারণে এ সকল খাবার সম্পূর্ণ হারাম হয়ে যায়। তাই এ কারণেও এই খাবার খাওয়া তাদের জন্য হারাম হয়েছে। এছাড়া মন্দির থেকে এভাবে খাবার চুরি করাটা আরো মারাত্মক অন্যায় হয়েছে। এর দ্বারা বিধর্মীদের সামনে ইসলামকে খাটো করা হয়েছে। মুসলমানদেরকে গালি দেওয়া ও কটাক্ষ করার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের কাজ কুরআন-হাদীসে নিষেধ করা হয়েছে।

-মারাকিল ফালাহ পৃ. ৩৭৮; আদ্দররুল মুখতার ২/৪৩৯; হাশিয়াতুত্তাহতাবী আলাদ্দুর ১/৪৭১

Sharable Link