একদিন মসজিদে যাওয়ার পথে একটি বাদুড় আমার কাপড়ে পেশাব করে দেয়। তখন বাসায় ফিরে অন্য কাপড় পরিধান করে নামায আদায় করি।
মুহতারামের কাছে জানতে চাচ্ছি যে, বাদুড়ের পেশাব পাক, না নাপাক?
একদিন মসজিদে যাওয়ার পথে একটি বাদুড় আমার কাপড়ে পেশাব করে দেয়। তখন বাসায় ফিরে অন্য কাপড় পরিধান করে নামায আদায় করি।
মুহতারামের কাছে জানতে চাচ্ছি যে, বাদুড়ের পেশাব পাক, না নাপাক?
বাদুড়ের পেশাব নাপাক নয়। তা কাপড়ে লাগলে কাপড় নাপাক হয় না। তাই উক্ত কাপড়েই নামায আদায় করলে তাও হয়ে যেত। তবে নামাযের আগে কাপড় পরিবর্তন করে ভালোই করেছেন। কেননা, তা নাপাক না হলেও যেহেতু ময়লা তাই স্থানটি ধুয়ে নেওয়া অথবা কাপড় পরিবর্তন করে নামায আদায় করাই উত্তম। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, বর্ণনা ১২৫৫)
Sharable Link-কিতাবুল আছল ১/২৫; বাদায়েউস সানায়ে ১/১৯৮; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৯; আলবাহরুর রায়েক ১/২৩০; হালবাতুল মুজাল্লী ১/৪৬১; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩১৮
আমি ফজরের নামাযের জন্য ওযু করি। ওযুতে মাথা মাসেহ করতে ভুলে যাই। পরে নামাযের কিছুক্ষণ আগে তা আমার স্মরণ হয়। মুহতারামের কাছে জানার বিষয় হল, শুধু মাথা মাসেহ করলেই আমার ওযু হয়ে যাবে, নাকি পুনরায় ওযু করতে হবে?
হাঁ, এক্ষেত্রে শুধু হাত ভিজিয়ে মাথা মাসেহ করে নিলেই হবে। পুনরায় ওযু করা জরুরি নয়। কেননা ওযু বা গোসলে কোনো অঙ্গ ধোয়া বা মাসেহ করা ছুটে গেলে তা পরে করে নিলেই ওযু-গোসল সম্পন্ন হয়ে যায়। মা‘মার রাহ. বলেন-
عَنْ قَتَادَةَ فِي رَجُلٍ نَسِيَ أَنْ يَسْتَنْشِقَ، أَوْ يَمْسَحَ بِأُذُنَيْهِ، أَوْ يَتَمَضْمَضَ حَتّى دَخَلَ فِي الصّلَاةِ، ثُمّ ذَكَرَ فَإِنّهُ لَا يَنْصَرِفُ لِذَلِكَ؟ قَالَ: فَإِنْ كَانَ نَسِيَ أَنْ يَمْسَحَ بِرَأْسِهِ فَذَكَرَ وَهُوَ فِي الصّلَاةِ، فَإِنّهُ يَنْصَرِفُ وَمَسَحَ بِرَأْسِهِ.
কাতাদাহ রাহ. বলেন, যে ব্যক্তি ওযুতে নাকে পানি দিতে বা কান মাসেহ করতে বা কুলি করতে ভুলে যায়, অতঃপর নামাযে তা স্মরণ হয়। তাহলে সে নামায ছেড়ে দেবে না। আর যদি মাথা মাসেহ করতে ভুলে যায় তাহলে নামায ছেড়ে দিয়ে মাথা মাসেহ করে নেবে। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ৪৪)
Sharable Link-কিতাবুল আছল ১/৩৩, ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/২২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৮
আমি আসরের নামাযের সময় বাড়ি থেকে ওযু করে মসজিদে রওয়ানা দেই। রাস্তায় হোঁচট খেয়ে পড়ে যাই। তখন আমার পায়ের একটি আঙুলের মাথা থেকে রক্ত বের হতে শুরু করে। আমি তখন রাস্তার পাশের বালু নিয়ে ক্ষতস্থানে দেই। এতে রক্ত বন্ধ হয়। কিন্তু আবার রক্ত বের হতে লাগে। এভাবে কয়েকবার রক্ত বের হতে থাকে আর প্রত্যেকবারই আমি রক্ত বন্ধ করার চেষ্টা করি। পরে রক্ত পড়া একেবারে বন্ধ হওয়ার পর মসজিদে গিয়ে নামায আদায় করি। নতুনভাবে আর ওযু করিনি।
মুহতারামের নিকট আমার জানার বিষয় হল, এভাবে বারবার রক্ত বের হওয়া এবং তা বন্ধ করার দ্বারা কি আমার ওযু ভেঙে গিয়েছে এবং ওই নামায কি আমাকে পুনরায় পড়তে হবে?
প্রশ্নোক্ত বর্ণনায় বুঝা যাচ্ছে, আপনার পায়ের আঙুল থেকে গড়িয়ে পড়া পরিমাণ রক্ত বের হয়েছে, যা ওযু ভঙ্গের কারণ। সুতরাং পুনরায় ওযু না করে আপনার আদায়কৃত নামায সহীহ হয়নি। নতুন ওযু করে ওই নামায আপনাকে আবার আদায় করে নিতে হবে।
Sharable Link-মাবসূত, সারাখসী ১/৭৭; বাদায়েউস সানায়ে ১/১২৪; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৩৬; ফাতাওয়া সিরাজিয়া, পৃ. ২৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১১; রদ্দুল মুহতার ১/১৩৫
আমি মসজিদের ওযুখানায় ওযু করতে বসি। তখন আমি একজনকে দেখি, সে ডান পা ধোয়ার আগেই বাম পা ধুয়েছে, তারপর ডান পা ধুয়েছে এবং এ ওযু দ্বারা নামাযও পড়েছে। এখন আমার জানার বিষয় হল, তার উক্ত ওযু কি সহীহ হয়েছে এবং তা দ্বারা আদায়কৃত নামায কি সহীহ হবে?
হাঁ, ঐ ব্যক্তির ওযু সহীহ হয়েছে। এবং তা দ্বারা আদায়কৃত নামাযও সহীহ হয়েছে। কেননা ওযুতে ডান পা আগে ধৌত করা সুন্নত। এর উল্টো করলেও ওযু হয়ে যায়। তবে যেহেতু ডান পা আগে ধোয়া সুন্নত তাই এ ব্যাপারে যত্নবান হওয়া উচিত। হাদীসে এসেছে, হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
كَانَ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ يُعْجِبُهُ التّيَمّنُ، فِي تَنَعّلِهِ، وَتَرَجّلِهِ، وَطُهُورِهِ، وَفِي شَأْنِهِ كُلِّهِ.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুতা পরিধান করা, চুল আঁচড়ানো, পবিত্রতা অর্জনসহ সকল কাজ ডান দিক থেকে শুরু করতে পছন্দ করতেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস ১৬৮)
Sharable Link-বাদায়েউস সানায়ে ১/১১৩; ফাতাওয়া সিরাজিয়া, পৃ. ২৮; ফাতহুল কাদীর ১/১৩; আলবাহরুর রায়েক ১/২৭; মাজমাউল আনহুর ১/২৯
গত বছর ২০২১ ঈ.-এ ঈদুল ফিতর শুক্রবারে হয়েছে। আমাদের মসজিদের খতীব সাহেব ঈদের নামাযের আলোচনার সময় বলেন, জুমার দিন ঈদ হলে ঈদের নামায পড়লে জুমার নামায না পড়লে কোনো অসুবিধা নেই। সঠিক মাসআলা দলীলসহ জানতে চাই।
জুমার দিনে ঈদ হলে ঈদ ও জুমা উভয়টিই পড়তে হবে। ঈদের নামায পড়লে জুমা পড়া লাগবে না- এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। কেননা, ঈদের নামায ও জুমার নামায দুটি পৃথক পৃথক আমল। অন্যদিকে ঈদের নামায ওয়াজিব আর জুমার নামায ফরয। সুতরাং একটি আদায় করে আরেকটি বাদ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এর সপক্ষে হাদীসের অনেক সুস্পষ্ট প্রমাণও রয়েছে। জুমার দিন ঈদ হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উভয় নামাযই পড়তেন। সহীহ হাদীস দ্বারা এটিই প্রমাণিত। এক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে জুমার নামায না পড়ার কোনো প্রমাণ নেই।
হযরত নুমান ইবনে বাশীর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ يَقْرَأُ فِي الْعِيدَيْنِ، وَفِي الْجُمُعَةِ بِسَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَى، وَهَلْ أَتَاكَ حَدِيثُ الْغَاشِيَةِ، قَالَ: وَإِذَا اجْتَمَعَ الْعِيدُ وَالْجُمُعَةُ، فِي يَوْمٍ وَاحِدٍ، يَقْرَأُ بِهِمَا أَيْضًا فِي الصّلَاتَيْنِ.
অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই ঈদের নামাযে এবং জুমার নামাযে সূরা আ‘লা ও সূরা গাশিয়া পড়তেন। যখন একই দিনে জুমা ও ঈদ হত, তিনি উভয় নামাযেই এই সূরাদ্বয় পড়তেন। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ৮৭৮)
সহীহ বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে, তাবেয়ী আবু উবাইদ রাহ. বলেন-
ثُمّ شَهِدْتُ العِيدَ مَعَ عُثْمَانَ بْنِ عَفّانَ، فَكَانَ ذَلِكَ يَوْمَ الجُمُعَةِ، فَصَلّى قَبْلَ الخُطْبَةِ، ثُمّ خَطَبَ فَقَالَ: يَا أَيّهَا النّاسُ، إِنّ هَذَا يَوْمٌ قَدِ اجْتَمَعَ لَكُمْ فِيهِ عِيدَانِ، فَمَنْ أَحَبّ أَنْ يَنْتَظِرَ الجُمُعَةَ مِنْ أَهْلِ العَوَالِي فَلْيَنْتَظِرْ، وَمَنْ أَحَبّ أَنْ يَرْجِعَ فَقَدْ أَذِنْتُ لَهُ.
অর্থাৎ হযরত উসমান রা.-এর খেলাফতকালে একবার জুমার দিনে ঈদ হল। তিনি ঈদের নামায পড়ালেন। তারপর খুতবায় বললেন, হে লোকসকল, এটি এমন একটি দিন, যেই দিনে দুই ঈদ একত্রিত হয়েছে। তাই মদীনার বাইরের এমন প্রত্যন্ত অঞ্চল যেখানে জুমার বিধান নেই, সেখান থেকে আগত লোকদের কেউ চাইলে জুমার জন্য অপেক্ষা করতে পারে। আর কেউ (নিজ এলাকায়) ফিরে যেতে চাইলে আমি তাকে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দিলাম। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৫৭২)
উমর ইবনে আবদুল আযীয রাহ. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন-
اجْتَمَعَ عِيدَانِ عَلَى عَهْدِ النّبِيِّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ فَقَالَ: مَنْ أَحَبّ أَنْ يَجْلِسَ مِنْ أَهْلِ الْعَالِيَةِ فَلْيَجْلِسْ فِي غَيْرِ حَرَجٍ.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সময় একবার একই দিনে জুমা ও ঈদ হয়। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, মদীনার বাইরের এমন প্রত্যন্ত অঞ্চল যেখানে জুমার বিধান নেই, সেখান থেকে আগত লোকদের কেউ চাইলে জুমার জন্য অপেক্ষা করতে পারে। যদি তার কোনো কষ্ট না হয়। (মুসনাদুশ শাফিয়ী, হাদীস ৫০০)
এই বর্ণনাগুলোতে স্পষ্টভাবেই উল্লেখ হয়েছে, জুমার নামাযে হাজির না হওয়ার সুযোগ কেবলই মদীনার বাহির থেকে আগত লোকদের জন্য। যাদের উপর জুমা ফরযই নয়।
লক্ষণীয় যে, যারা বলেন, ‘জুমার দিন ঈদ হলে ঈদের নামায পড়লে জুমার নামায না পড়লে কোনো অসুবিধা নাই’ তারা কিছু হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করে থাকেন, কিন্তু সেগুলোর সনদ যয়ীফ। এ ধরনের যয়ীফ হাদীস দ্বারা কোনো ফরয বিধান (যেমন জুমার নামায) বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই। কারণ, জুমার নামায ফরয হওয়ার বিষয়টি কুরআন মাজীদের আয়াতসহ শরীয়তের অনেক অকাট্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত। আর কোনো দুর্বল হাদীস দ্বারা তা বাদ দেওয়া যায় না।
যেমন তারা তাদের দাবির পক্ষে হযরত যায়েদ ইবন আরকাম রা.-এর সূত্রে বর্ণিত একটি হাদীস পেশ করেন। হাদীসটি নিম্নরূপ-
عَنْ إِيَاسِ بْنِ أَبِي رَمْلَةَ الشّامِيِّ، قَالَ: شَهِدْتُ مُعَاوِيَةَ بْنَ أَبِي سُفْيَانَ، وَهُوَ يَسْأَلُ زَيْدَ بْنَ أَرْقَمَ، قَالَ: أَشَهِدْتَ مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ عِيدَيْنِ اجْتَمَعَا فِي يَوْمٍ؟ قَالَ: نَعَمْ، قَالَ: فَكَيْفَ صَنَعَ؟ قَالَ: صَلّى الْعِيدَ، ثُمّ رَخّصَ فِي الْجُمُعَةِ، فَقَالَ: مَنْ شَاءَ أَنْ يُصَلِّيَ، فَلْيُصَلِّ.
অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময়ে একবার জুমার দিন ঈদ হয়। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের নামায পড়েন এবং জুমার নামায পড়ার ব্যাপারে ছাড় দেন। তিনি বলেন, যে জুমার নামায পড়তে চায় সে পড়তে পারে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১০৭০)
কিন্তু এ সম্পর্কে প্রথম কথা হল, এই হাদীসের সনদে ইয়াস ইবনে আবী রামলা নামে একজন রাবী আছেন। তাকে ইবনুল মুনযির (৩১৮ হি.) রাহ. এবং হাফেয ইবনে হাজার (৮৫২ হি.) রাহ. ‘মাজহূল’ (অর্থাৎ যার পরিচয় অজানা। তাই তার বিশ^স্ততাও প্রমাণিত নয়) বলেছেন। [বায়ানুল ওয়াহমি ওয়াল ঈহাম ৪/২০৩ (১৬৯৭), মীযানুল ইতিদাল ১/২৬৮ (৯৯৬), তাকরীবুত তাহযীব (৫৮৭) পৃ. ১৫৫]
তার সম্পর্কে ইমাম ইবনে খুযাইমা রাহ. বলেন-
إني لا أعرف إياس بن أبي رملة بعدالة ولا جرح.
অর্থাৎ আমি ইয়াস ইবনে আবী রামলার ব্যাপারে ভালো-মন্দ কিছুই জানি না। (সহীহ ইবনে খুযাইমা ১/৭০৯)
যাইহোক, সনদে মাজহূল রাবী থাকায় একে সহীহ বলার সুযোগ নেই। ইমাম ইবনুল মুনযির (৩১৮ হি.) রাহ. বলেন-
هذا الحديث لا يثبت، وإياس بن أبي رملة راويه عن زيد مجهول.
অর্থাৎ হাদীসটি প্রমাণিত নয়। এর বর্ণনাকারী ইয়াস ইবনে আবী রামলা মাজহূল। (আততালখীসুল হাবীর ২/২১০)
ইমাম ইবনুল কাত্তান (৬১৮ হি.) রাহ. ইবনুল মুনযিরের বক্তব্য সমর্থন করেছেন। এছাড়াও ইমাম ইবনে খুযাইমা (৩১১ হি.) রাহ. إن صح الخبر বলে হাদীসটি সহীহ হওয়ার ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করেছেন।
এ বিষয়ে দুর্বল সনদে আরো দুটি বর্ণনা থাকায় কেউ কেউ হাদীসটিকে সামষ্টিক বিচারে গ্রহণযোগ্য বলতে চেয়েছেন। কিন্তু হাদীসটি গ্রহণযোগ্য ধরে নেওয়া হলেও তা দ্বারা সাধারণভাবে সকল মানুষের জন্য জুমা না পড়ার এখতিয়ার প্রমাণিত হয় না; বরং এ ধরনের হাদীস ও আসারের আলোকে ঐসব মানুষের জন্য জুমার ছাড় দেওয়া হয়েছে, যারা ঈদের নামায পড়ার জন্য এমন এলাকা থেকে এসেছে যেখানের লোকদের উপর জুমা পূর্ব থেকেই ফরয নয়। সহীহ বুখারীর পূর্বোক্ত বর্ণনাটিসহ বিভিন্ন হাদীসই যার সুস্পষ্ট প্রমাণ।
ইমাম তাহাবী (৩২১) রাহ. বলেন-
إن المرادين بالرخصة في ترك الجمعة في هذين الحديثين هم أهل العوالي الذين منازلهم خارجة عن المدينة ممن ليست الجمعة عليهم واجبة؛ لأنهم في غير مصر من الأمصار، والجمعة فإنما تجب على أهل الأمصار، وفي الأمصار دون ما سوى ذلك.
অর্থাৎ হাদীসে যাদেরকে জুমার নামায না পড়ার ব্যাপারে ছাড় দেওয়া হয়েছে, তারা হল মদীনার বাহির থেকে আগত লোকেরা। তাদের উপর জুমা ফরয ছিল না। কেননা জুমার নামায ফরয হয় শহরবাসীদের উপর। (শরহু মুশকিলিল আছার ৩/১৮৭)
ইমাম ইবনে আবদুল বার (৪৬৩ হি.) রাহ. একই ব্যাখ্যা করেছেন এবং বলেছেন-
وهذا تأويل تعضده الأصول وتقوم عليه الدلائل ومن خالفه فلا دليل معه.
অর্থাৎ শরীয়তের উসূল ও মূলনীতি এই ব্যাখ্যার সমর্থন করে এবং এর সপক্ষে অনেক দলীল রয়েছে। এর বিপরীত ব্যাখ্যার সমর্থনে কোনো দলীল নেই। (আততামহীদ ১০/২৭৪)
তিনি আরো বলেন-
وأحسن ما يتأول في ذلك أن الأذان رخص به من لم تجب الجمعة عليه ممن شهد ذلك العيد، والله أعلم، وإذا احتملت هذه الآثار من التأويل ما ذكرنا لم يجز لمسلم أن يذهب إلى سقوط فرض الجمعة عمن وجبت عليه؛ لأن الله عز وجل يقول :>یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْۤا اِذَا نُوْدِیَ لِلصَّلٰوةِ مِنْ یَّوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا اِلٰی ذِكْرِ اللّٰهِ<، ولم يخص الله ورسوله يوم عيد من غيره من وجه تجب حجته، فكيف بمن ذهب إلى سقوط الجمعة والظهر المجتمع عليهما في الكتاب والسنة والإجماع بأحاديث ليس منها حديث إلا وفيه مطعن لأهل العلم بالحديث.
অর্থাৎ এ বিষয়ক হাদীসসমূহের সর্বোত্তম ব্যাখ্যা হল, জুমার নামায পড়ার ব্যাপারে ঐ লোকদের ছাড় দেওয়া হয়েছে, যাদের উপর জুমার নামায ফরয ছিল না। তবে তারা সেসময় ঈদের নামাযে হাজির হয়েছিল। উক্ত হাদীসসমূহের এই ব্যাখ্যা পাওয়ার পর কোনো মুসলিমের জন্য একথা বলা জায়েয হবে না যে, ঈদের দিন জুমার ফরয রহিত হয়ে যায়। কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْۤا اِذَا نُوْدِیَ لِلصَّلٰوةِ مِنْ یَّوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا اِلٰی ذِكْرِ اللّٰهِ.
(হে ঈমানদারগণ! জুমার দিন যখন নামাযের জন্য ডাকা হয় তখন আল্লাহর যিকিরের দিকে ধাবিত হও) আর আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূল ঈদের দিনের ব্যাপারে কোনো আলাদা বিধান দেননি (তাই এই বিধান সারা বছরের সকল জুমাবারের জন্য প্রযোজ্য)। জুমা ও যোহরের নামাযের বিধান কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমা দ্বারা প্রমাণিত। সুতরাং ঐ ব্যক্তির কাজ কীভাবে সঠিক হতে পারে, যে এমন অকাট্য বিধান রহিত করতে চায় এমন সব হাদীস দ্বারা, যার প্রতিটিতেই শাস্ত্রজ্ঞদের মতে কোনো না কোনো দুর্বলতা আছে। (আততামহীদ ১০/২৭৭)
সুতরাং জুমার দিনে ঈদ হলেও জুমার নামায বাদ দেওয়া জায়েয হবে না; বরং ঈদ ও জুমার নামায উভয়টিই আদায় করবে।
উল্লেখ্য যে, যাদের উপর জুমা ফরয না থাকায় ঈদের নামাযের পর নিজ অঞ্চলে চলে যাওয়ার অনুমতি প্রদান করা হয়েছিল তাদের থেকে ওই দিনের যোহরের নামায যে মাফ হয়ে যায়নি তা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ, যাদের উপর জুমা ফরয নয় তাদের যোহরের নামায আদায় করা ফরয।
Sharable Link
আমি একদিন মসজিদে গিয়ে দেখি, ইমাম সাহেব রুকুতে আছেন। তাই আমি রাকাত পাওয়ার জন্য তাড়াহুড়া করে সামনের কাতারে ফাঁকা থাকা সত্ত্বেও পিছনের কাতারে একা দাঁড়িয়ে যাই। নামাযের পর একজন আলেম বললেন, এভাবে পিছনের কাতারে একা নামায পড়া মাকরূহ। তাই আমি জানতে চাচ্ছি, পিছনের কাতারে একা নামায পড়ার হুকুম কী? বিস্তারিত জানিয়ে উপকৃত করবেন।
সামনের কাতারে ফাঁকা থাকলে পেছনের কাতারে দাঁড়ানো মাকরূহে তাহরীমী। তবে যদি সামনের কাতারে জায়গা খালি না থাকে, তাহলে একাকী পেছনের কাতারে দাঁড়াতে পারবে। অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সামনে ফাঁকা রেখে পিছনে একাকী দাঁড়ানো ঠিক হয়নি। মাকরূহ হয়েছে। হাদীসে এভাবে দাঁড়াতে নিষেধ করা হয়েছে।
হযরত আবু বাকরা রা. থেকে বর্ণিত-
أَنّهُ انْتَهَى إِلَى النّبِيِّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ وَهُوَ رَاكِعٌ، فَرَكَعَ قَبْلَ أَنْ يَصِلَ إِلَى الصّفِّ، فَذَكَرَ ذَلِكَ لِلنّبِيِّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ فَقَالَ: زَادَكَ اللهُ حِرْصًا وَلاَ تَعُدْ.
তিনি (নামাযে এসে) নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রুকু অবস্থায় পেলেন। তখন তিনি কাতারে পৌঁছার আগেই (নামাযে শরীক হলেন এবং) রুকুতে চলে গেলেন। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিষয়টি জানালে তিনি তাকে বললেন, আল্লাহ তোমার আগ্রহ বৃদ্ধি করে দিন। তবে ভবিষ্যতে এরকম করো না। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৭৮৩)
Sharable Link-বাদায়েউস সানায়ে ১/৫১২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৫৭; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৩০৫; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৭০; রদ্দুল মুহতার ১/৫৭০
কয়েকদিন আগে আসরের নামাযের জন্য মসজিদে যাই। তখন ইমাম সাহেবকে রুকু অবস্থায় পাই। আমি দ্রুত ‘আল্লাহু আকবার’ বলে রুকুতে যাই। কিন্তু তাড়াহুড়া করার দরুন আমার তাকবীরে তাহরীমা রুকুতে গিয়ে শেষ হয়। মুহতারামের নিকট জানতে চাই যে, আমার উক্ত তাকবীরে তাহরীমা এবং নামায সহীহ হয়েছে কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।
নামাযে তাকবীরে তাহরিমা দাঁড়িয়ে বলা ফরয। তাই তাকবীরে তাহরিমার কিছু অংশ যদি রুকুর কাছাকাছি বা একেবারে রুকুতে গিয়ে শেষ হয়, তাহলে তাকবীরে তাহরিমা আদায় হবে না। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার তাকবীরে তাহরিমা যদি রুকুতে গিয়ে শেষ হয়ে থাকে তাহলে আপনার নামায হয়নি। উক্ত নামায পুনরায় পড়ে নিতে হবে।
Sharable Link-বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৩৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৮৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৮৭; ফাতহুল কাদীর ১/২৪৩; আততাজনীস ওয়াল মাযীদ ১/৪৩২; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ১/২১৬
সেদিন আমি ফজরের নামাযে দাঁড়িয়ে প্রথম রাকাতে ছানা না পড়ে ভুলে তাশাহহুদ পড়ে ফেলি। তারপর সূরা ফাতেহা পড়ি। মুহতারামের কাছে জানতে চাই, উক্ত ভুলের কারণে কি আমার উপর সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছিল?
না, উক্ত ভুলের কারণে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়নি। প্রথম রাকাতে সূরা ফাতিহার পূর্বে তাশাহহুদ পড়ে ফেললে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয় না। তবে ইচ্ছাকৃত এমনটি করা ঠিক নয়।
Sharable Link-আলআজনাস, নাতিফী ১/১০৯; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১২২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৭৭; ফাতহুল কাদীর ১/৪৩৯; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৪৪৬; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৪৬০
আমি শাওয়াল মাসে রমযানের কাযা রোযা রাখি এবং এর সাথে শাওয়ালের ছয় রোযারও নিয়ত করি। আমি জানতে চাচ্ছি যে, এভাবে নিয়ত করার দ্বারা আমার রমযানের কাযা আদায় হবে কি? এবং আমি শাওয়ালের ছয় রোযার সওয়াব কি পাবো?
রমযানের কাযা রোযার সঙ্গে শাওয়ালের ছয় রোযার নিয়ত করার দ্বারা কেবল রমযানের কাযা আদায় হয়েছে, শাওয়ালের ছয় রোযা আদায় হয়নি। কেননা, একসাথে কাযা ও নফল রোযার নিয়ত করলে শুধু কাযা আদায় হয়; নফল আদায় হয় না।
Sharable Link-বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৪০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৫১; আতাজনীস ওয়াল মাযীদ ২/৩৭২; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৪৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৩৭৩; রদ্দুল মুহতার ২/৩৭৯
আমি এক বাসায় কাজ করি। গত রমযানে একদিন কাজ শেষ করে বাসায় ফিরছিলাম। সময়টা ছিল দুপুর। গরমও ছিল প্রচণ্ড। কাজের বাসা থেকে আমাদের বাসার পথও বেশ দীর্ঘ। একে তো কাজের ক্লান্তি। তারপর আবার গরমের মধ্যে এত লম্বা পথ হেঁটে বাসায় ফিরতে ফিরতে বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়ি। বাসায় এসে ইচ্ছাকৃত এক গ্লাস পানি পান করে ফেলি। পরে আমি বেশ অনুতপ্ত হই। কারণ, আমি চাইলেই রোযা পূর্ণ করতে পারতাম; হয়ত সামান্য কষ্ট হত। ঘটনাক্রমে ঐ দিন আছরের পরই আমার হায়েয শুরু হয়ে যায়। ঘটনাটা মসজিদের ইমাম সাহেবকে জানালে তিনি বলেন, ঐ দিনের রোযা কাযা করে নিলেই চলবে কাফফারা লাগবে না। জানার বিষয় হল, ঐ ইমাম সাহেব কি ঠিক বলেছেন? সত্যিই কি আমার ঐ দিনের রোযার কাফফারা লাগবে না?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার ঐ দিনের রোযা ভেঙ্গে ফেলা নাজায়েয হয়েছে। এ ধরনের ক্ষেত্রে কাযা ও কাফ্ফারা উভয়টি আবশ্যক হয়ে যায়। তবে ঐ দিন যেহেতু পরবতীর্তে আপনার হায়েয এসে গেছে তাই এক্ষেত্রে আপনাকে উক্ত রোযার কাযা আদায় করলেই চলবে। কাফফারা লাগবে না।
উল্লেখ্য, রোযা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের অন্যতম। তাই শরয়ী ওযর ছাড়া রোযা ভেঙে ফেলা মারাত্মক গুনাহ।
Sharable Link-কিতাবুল আছল ২/১৫৩; মাবসূত, সারাখসী ৩/৭৫; আলহাবিল কুদসী ১/৩১৫; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৭; আলজাওহারাতুন নাইয়িরা ১/১৮১
এ বছর আমার চাচা রমযানের পাঁচ দিন আগে করোনায় আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। যার কারণে তার পক্ষে রোযা রাখা সম্ভব হয়নি। রোযার ঈদের দু’দিন আগে তিনি ইন্তেকাল করেন। এখন হুজুরের নিকট আমাদের জানার বিষয় হল, তিনি যে রোযাগুলো রাখতে পারেননি সেগুলোর জন্য কি ফিদয়া দিতে হবে? অনুগ্রহ করে মাসআলাটি জানালে খুব উপকৃত হতাম।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার চাচা যেহেতু যে রমযানে অসুস্থ হয়েছেন সে রমযানেই ইন্তিকাল করেছেন এবং ঐ রমযানের রোযাগুলো কাযা করার মত সময় ও সক্ষমতা তিনি পাননি, তাই ছুটে যাওয়া রোযাগুলোর ফিদয়া আদায় করতে হবে না।
Sharable Link-মাবসূত, সারাখসী ৩/৮৯; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৬৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৬১; আলবাহরুর রায়েক ২/২৮৩; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪২২
আমাদের গ্রামের মসজিদে আযান দেওয়ার জন্য এবং মসজিদের জেনারেটর ও অন্যান্য আসবাবপত্র রাখার জন্য মসজিদের বাইরে মসজিদের দেওয়ালের সাথে সংযুক্ত করে একটি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। মসজিদের ভেতর দিয়ে সেই ঘরে প্রবেশ করা যায়। এখন মুফতী সাহেবের নিকট আমরা জানতে চাই যে, রমযান মাসে ইতিকাফকারী কোনো ব্যক্তি, যিনি মসজিদের নির্ধারিত মুআযযিন অথবা তিনি ছাড়া অন্য কোনো ইতিকাফকারী ব্যক্তি আযান দেওয়ার জন্য মসজিদের বাইরে নির্মাণ করা সেই ঘরে প্রবেশ করে, তাহলে তার ইতিকাফ নষ্ট হবে কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।
ইতিকাফকারী (মসজিদের নির্ধারিত মুআযযিন হোক অথবা সাধারণ মুসল্লী) আযান দেওয়ার জন্য মসজিদের বাইরে যেতে পারেন। সুতরাং আযান দেওয়ার উদ্দেশ্যে ঐ ব্যক্তি উক্ত ঘরে প্রবেশ করতে পারবেন। এ কারণে ইতিকাফের ক্ষতি হবে না। তবে আযান শেষে বিলম্ব না করে মসজিদে ফিরে আসবেন।
Sharable Link-কিতাবুল আছল ২/১৯১; মাবসূত, সারাখসী ৩/১২৬; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ২/৪৭৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২২৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৬৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৪৪৬; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ১/৪৭৫
একবার আমি রোযা অবস্থায় ট্রেনে সফর করছিলাম। আমার পাশের সিটে এক হিন্দু ব্যক্তি সিগারেট পান করছিল। তার সিগারেটের ধোঁয়া মাঝেমধ্যে অনিচ্ছাকৃতভাবে আমার নাক-মুখ দিয়ে গলায় প্রবেশ করে। আমার জানার বিষয় হল, অনিচ্ছাকৃতভাবে সিগারেটের ধোঁয়া গলায় প্রবেশ করার দ্বারা কি আমার রোযা ভেঙে গেছে?
রোযাদার ব্যক্তির নাক বা মুখ দিয়ে ধোঁয়া চলে গেলে রোযার কোনো ক্ষতি হয় না। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার উক্ত রোযার কোন ক্ষতি হয়নি। তা সহীহ হয়েছে।
প্রকাশ থাকে যে, রোযাদার ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে নাক বা মুখ দিয়ে ধোঁয়া টেনে নেয় তাহলে রোযা ভেঙে যাবে।
Sharable Link-কিতাবুল আছল ২/১৭২; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৩৮; মুখতারাতুন নাওয়াযেল ১/৪৭৪; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৪৯; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/১৭১; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৯৫
রোযা অবস্থায় ওযুর মধ্যে অথবা অন্য কোনো প্রয়োজনে কুলি করার পর মুখে পানির ভেজা ভেজা ভাব থেকে যায়। পরে থুথুর সাথে তা পেটে যায়। দীর্ঘদিন হল আমার সন্দেহ হয় যে, এর দ্বারা আমার রোযা নষ্ট হয়ে যায় কি না। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও এখান থেকে বাঁচতে পারি না। তাই মুহতারামের নিকট জানতে চাই, উক্ত পানি পেটে যাওয়ার দ্বারা আমার রোযা নষ্ট হবে কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।
রোযা অবস্থায় কুলি করে মুখে থেকে পানি ফেলে দেওয়ার পর মুখ যে আর্দ্রতা থাকে তা থুথুর সাথে পেটে গেলে রোযার কোনো ক্ষতি হয় না। সুতরাং এ নিয়ে দুশ্চিন্তা করা ঠিক নয়।
Sharable Link-আলহাবিল কুদসী ১/৩১৩; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৩৮; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/১৭২ ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ৪/১০০; ফাতহুল কাদীর ২/২৫৮; রদ্দুল মুহতার ২/৩৯৬
গত রমযানে একদিন আমি যোহরের নামাযের জন্য ওযু করছিলাম। ওযু শেষে ভুলে পানি পান করে ফেলি। তখন আমার রোযা ভেঙে গেছে মনে করে ওইদিন স্বাভাবিক পানাহার করি।
হুজুরের নিকট জানতে চাই, এভাবে ইচ্ছাকৃত পানাহার করার দ্বারা কি আমার ওপর ওই দিনের রোযার কাযা-কাফফারা উভয়টি আবশ্যক হবে, নাকি শুধু ওই দিনের রোযার কাযা আদায় করতে হবে? সঠিক উত্তর জানিয়ে বাধিত করবেন।
রোযা রেখে ভুলে কিছু খেলে বা পান করলে রোযা ভাঙে না। আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
إِذَا نَسِيَ فَأَكَلَ وَشَرِبَ، فَلْيُتِمّ صَوْمَهُ، فَإِنّمَا أَطْعَمَهُ اللهُ وَسَقَاهُ.
যখন কেউ ভুলে পানাহার করে ফেলে, সে যেন তার রোযা পূর্ণ করে। কেননা আল্লাহ তাআলাই তাকে পানাহার করিয়েছেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস ১৯৩৩)
তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে প্রথমে ভুলে পানি পান করার পর আপনার রোযা বহাল ছিল। পরে ইচ্ছাকৃত পানাহারের কারণে আপনার রোযা ভেঙে গিয়েছে। তাই আপনাকে ওই দিনের জন্য একটি রোযা কাযা করতে হবে। কিন্তু কোনো কাফফারা আদায় করতে হবে না। আর উক্ত ভুলের কারণে আল্লাহ তাআলার নিকট তাওবা-ইস্তিগফার করতে হবে।
Sharable Link-কিতাবুল আছল ২/১৫৫; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৫৮; খিযানাতুল আকমাল ১/৩০০; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ১/২২৪; আলমুহীতুল বুররহানী ৩/৩৬৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৫৮; রদ্দুল মুহতার ২/৪০৫
আমাদের এক আত্মীয় হজ্বে যাওয়ার জন্য হজ্ব এজেন্সিতে টাকা জমা দেন। কিন্তু গত সপ্তাহে তিনি হঠাৎ স্ট্রোক করে ইন্তেকাল করেন। এখন জানার বিষয় হল, এজেন্সিতে জমা দেওয়া ঐ টাকা কি তার মিরাসের অন্তভুর্ক্ত হবে, নাকি ঐ টাকা দিয়ে কাউকে বদলী হজ্ব করিয়ে দিতে হবে।
উল্লেখ্য, তিনি হঠাৎ মারা যাওয়ায় মৃত্যুর পূর্বে বদলী হজ্বর ওসিয়ত করে যেতে পারেননি।
উত্তর : প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে তিনি যেহেতু নিজে হজ্ব করে যেতে পারেননি তাই এজেন্সি থেকে যদি ঐ টাকা ওঠানো যায় তাহলে তা মীরাসী সম্পত্তি হিসেবে গণ্য হবে। তবে জেনে রাখা দরকার, হজ্ব গুরুত্বপূর্ণ ফরয ইবাদত। কেউ জীবদ্দশায় তা আদায় করতে না পারলে বদলী হজ্বের ওসিয়ত করে যেতে হয়। লোকটি তা করতে পারেনি। তাই তার ওয়ারিসগণের উচিত তার পক্ষ থেকে বদলী হজ্ব করিয়ে দেওয়া। হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: جَاءَتْ امْرَأَةٌ إِلَى النّبِيِّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ، فَقَالَتْ: إِنّ أُمِّي مَاتَتْ وَلَمْ تَحُجّ، أَفَأَحُجّ عَنْهَا؟ قَالَ: نَعَمْ، حُجِّي عَنْهَا.
বুরাইদা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এক মহিলা এসে বলল, আমার মা মারা গিয়েছেন, কিন্তু তিনি হজ্ব আদায় করে যেতে পারেননি। আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ্ব আদায় করবো? তিনি বললেন, হাঁ, তুমি তার পক্ষ থেকে হজ্ব আদায় কর। (জামে তিরমিযী, হাদীস ৯২৯)
অতএব ওয়ারিশগণের উচিত লোকটির পক্ষ থেকে কাউকে বদলী হজ্বে পাঠানো। তবে যেহেতু ঐ ব্যক্তি হজ্বের ওসিয়ত করে যাননি তাই তার মীরাসী সম্পত্তি থেকে হজ্বের খরচ নিতে হলে সকল ওয়ারিশের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন লাগবে। আর কোনো নাবালেগ ওয়ারিশ থাকলে তার অংশ থেকে নেয়া যাবে না। কারণ লোকটির মৃত্যুর পর ঐ সম্পত্তিগুলো ওয়ারিশদের মালিকানায় এসে গেছে।
-বাদায়েউস সানায়ে ২/৪৬৯; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৩০৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৬৫৯; গুনইয়াতুন নাসিক, পৃ. ৩২২
Sharable Link
বিভিন্ন দাম্পত্য কলহের কারণে স্ত্রীর সাথে আমার বিবাহ বিচ্ছেদের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের চার বছর বয়সী একটি পুত্র সন্তান আছে। মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাচ্ছি যে, আমাদের বিচ্ছেদ হয়ে গেলে আমার সন্তান কার কাছে থাকবে? এবং তার লালন-পালন ও খরচাদির দায়িত্বশীল কে হবে?
মা-বাবার মাঝে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটলে পুত্র সন্তানের বয়স সাত বছর হওয়া পর্যন্ত মা তার লালন-পালনের অধিকার রাখে। অবশ্য মা অন্যত্র (সন্তানের মাহরাম ব্যতীত কারো সাথে) বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে তার আর এ অধিকার থাকে না। সেক্ষেত্রে সন্তানের নানী, দাদী, বোন, খালা, ফুফু যথাক্রমে এ অধিকার লাভ করে।
সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনাদের মাঝে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে গেলে আপনার ছেলের সাত বছর হওয়া পর্যন্ত তার মা নিজের কাছে তাকে রাখতে পারবে। তার বয়স সাত বছর পূর্ণ হলে আপনি তাকে আপনার কাছে নিয়ে আসতে পারবেন। আর সন্তান যার কাছেই থাকুক তার লালন-পালন বাবদ যাবতীয় খরচাদি আপনাকেই বহন করতে হবে।
প্রকাশ থাকে যে, আপনাদের মাঝে বাস্তবে বিচ্ছেদের মতো কোনো কিছু ঘটে থাকলে সে ব্যাপারে মাসআলা জেনে নিয়ে সে অনুযায়ী আমল করবেন। আর যদি বিচ্ছেদের মতো কিছু না ঘটে থাকে; বরং বিচ্ছেদের আশঙ্কা করে থাকেন তাহলে সম্পর্ক বহাল রাখার চেষ্টা করা দরকার। আল্লাহ তাআলা বৈবাহিক সম্পর্কের স্থায়িত্ব পছন্দ করেন। অনিবার্য কারণ ছাড়া বিচ্ছেদ অপছন্দ করেন। বৈবাহিক জীবনে কোনো জটিলতা দেখা দিলে শরীয়তের নির্দেশনা হচ্ছে উভয় পক্ষের মুরব্বীদের সহায়তা নিয়ে সম্পর্ককে রক্ষা করার চেষ্টা করা। এ ব্যাপারে কোনো নির্ভরযোগ্য আলেমের শরণাপন্ন হয়ে বিস্তারিত নির্দেশনা নিয়ে সে অনুযায়ী কাজ করা উচিত হবে।
Sharable Link-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২২৭৬; কিতাবুল আছল ১০/৩৫১, ৩৪৮; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৪৫৭, ৪৪৩; ফাতহুল কাদীর ৪/১৮৮; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৩/২৯১; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৫৬৩; রদ্দুল মুহতার ৩/৬১৩
আমার চারটি ছেলে সন্তান; কোনো মেয়ে নেই। আমি মান্নত করেছিলাম, ‘যদি আল্লাহ তাআলা আমাকে কন্যা সন্তান দান করেন তাহলে আমি বড় গরু দিয়ে তার আকীকা করে গ্রামবাসীকে খাওয়াবো।’ আল্লাহর রহমতে কিছুদিন পূর্বে আমার কন্যা সন্তান হয়। আমি চাচ্ছি, তার আকীকা করতে। কিন্তু তার জন্ম সিজারে হওয়ায় এবং পরবর্তী কিছু জটিলতায় ইতিমধ্যে আমার অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। যদ্দরুন এই মুহূর্তে গরু দিয়ে আকীকা করা আমার জন্য কষ্টসাধ্য। হুজুরের নিকট জানতে চাই, এখন আমার জন্য গরু দিয়ে আকীকা না করে ছাগল দিয়ে আকীকা করার সুযোগ আছে কি?
আকীকার মান্নত সহীহ নয়। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার মান্নতই যেহেতু সহীহ হয়নি তাই স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী ছাগল দিয়েই আপনি আকীকা করতে পারবেন। গরু দিয়ে আকীকা করা জরুরি হবে না।
Sharable Link-আদ্দুররুল মুখতার ৩/৭৩৫; ইমদাদুল আহকাম ৪/২০৭
আমার মোবাইল সার্ভিসিং করার দোকান আছে। আমার দোকানে কর্মচারী হিসেবে দুইজন কাজ করে। সম্প্রতি এক কর্মচারী একটা মোবাইল মেরামত করার সময় অনিচ্ছাকৃত স্ক্রীনের অংশবিশেষ ভেঙে ফেলে। পরবর্তীতে মোবাইলের মালিক নতুন স্ক্রীন লাগিয়ে দিতে বলে। সে ঐ ত্রুটিপূর্ণ স্ক্রীন নিতে রাজি হচ্ছে না।
আমার জানার বিষয় হল, উক্ত ক্ষেত্রে কি তার নতুন স্ক্রীন লাগিয়ে দেওয়া আমার জন্য আবশ্যক? যদি আবশ্যক হয়ে থাকে তাহলে কি আমি ঐ কর্মচারী থেকে স্ক্রীনের মূল্য আদায় করতে পারব?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মোবাইলটি মেরামত করার সময় যেহেতু আপনাদের হাতেই স্ক্রীনটি নষ্ট হয়েছে তাই আপনাদেরকে উক্ত মোবাইলের স্ক্রীন লাগিয়ে দিতে হবে। অথবা এর ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আর এই জরিমানা আপনার পক্ষ থেকেই দিতে হবে; কর্মচারী থেকে নেওয়া যাবে না। কেননা প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী কর্মচারী ইচ্ছাকৃতভাবে সেটি নষ্ট করেনি; বরং তার অনিচ্ছাতেই এমনটি ঘটে গেছে। তাই তার উপর এর জরিমানা বর্তাবে না। অবশ্য মোবাইলটি নষ্ট হওয়ার ক্ষেত্রে কর্মচারীর অবহেলা ও ত্রুটি প্রমাণিত হলে তার থেকে এর জরিমানা আদায় করা যাবে।
Sharable Link-মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, বর্ণনা ১৪৯৪৬, ১৪৯৪৮; মাবসূত, সারাখসী ১৬/১২; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৭৪, ৭৬; আলমুহীতুল বুরহানী ১২/৬৬; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/১৪০ শরহুল মাজাল্লা, আতাসী ২/৭২৩, ৭২০
সরকারি কলেজের পাশে আমাদের একটা লাইব্রেরি আছে। আমাদের এখানে কম্পোজ ও গ্রাফিক্স ডিজাইনের চাহিদা বেশি থাকায় আমি ঢাকায় আমার এক বন্ধুর সাথে চুক্তি করি যে, আমার দোকানে কম্পোজ বা গ্রাফিক্স ডিজাইনের যত অর্ডার আসবে সে ঢাকায় তার দোকানে বসে কাজ করে আমার মেইলে পাঠিয়ে দেবে। আর আমি আমার দোকানের প্রিন্টার থেকে প্রিন্ট বের করে কাস্টমারকে দিব এবং কম্পোজ ও প্রিন্টের কারবারে যা লাভ হবে তা আমরা সমানভাবে বণ্টন করে নেব।
আমার জানার বিষয় হল, আমাদের কারবারে উক্ত পদ্ধতিতে লভ্যাংশ বণ্টনের চুক্তি কি শরীয়তের দৃষ্টিতে সহীহ হয়েছে?
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী উক্ত কারবারে যেহেতু আপনাদের উভয়েরই শ্রম রয়েছে তাই লভ্যাংশ বণ্টনের চুক্তিটি সহীহ হয়েছে। সুতরাং আপনারা উভয়ে যদি চুক্তি অনুযায়ী কাজ করেন তাহলে উক্ত কারবারে যা লাভ হবে তা আপনারা সমানভাবে বণ্টন করে নিতে পারবেন।
Sharable Link-আলমাবসূত, সারাখসী ১১/১৫২; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ৩/২৫০; বাদায়েউস সানায়ে ৫/৮৫; আলবাহরুর রায়েক ৫/১৮১; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৩৯৮
আমি পরিবার নিয়ে একটা ভাড়া বাড়িতে থাকি। বাড়ির মালিক ঢাকায় থাকে। কয়েকদিন ধরে পানির পাইপে সমস্যা হওয়ায় অনেক পানি অপচয় হচ্ছে এবং ট্যাংকিতে পানি বেশিক্ষণ সংরক্ষণ করে রাখা যাচ্ছে না। বারবার মটর ছাড়া লাগছে। বাড়ির মালিককে বারংবার বলার পরও কোনো গুরুত্ব দেয়নি। তাই আমি মিস্ত্রি এনে মেরামত করে নিয়েছি। পার্টস কেনা এবং মিস্ত্রি খরচ বাবত আমার ১০০০/- টাকা খরচ হয়েছে। ভাড়া দেওয়ার সময় ঐ ১০০০/- টাকা কম দিতে চাইলে মালিক তাতে রাজি হচ্ছে না। সে পূর্ণ ভাড়াই দাবি করছে।
আমার জানার বিষয় হচ্ছে, এক্ষেত্রে কি আমি বাড়ি ভাড়া থেকে ১০০০ টাকা কেটে নিতে পারবো?
ভাড়া বাড়িতে কোনো সমস্যা হলে তা মেরামত কিংবা ঠিক করে দেওয়ার দায়িত্ব মালিকের। তাই ভাড়াটিয়া মালিকের অনুমতিক্রমে মেরামত করলে তার খরচ মালিক থেকে নিতে পারবে। কিন্তু মালিকের অনুমতি ছাড়া মেরামত করলে তার খরচ প্রদানের জন্য মালিককে বাধ্য করা যাবে না। তবে এক্ষেত্রেও মালিকের নৈতিক দায়িত্ব হল, মেরামত খরচ দিয়ে দেওয়া। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যেহেতু বাড়ির মালিকের অনুমতি ছাড়া পানির পাইপ মেরামত করেছেন তাই এক্ষেত্রে ঐ খরচ মালিক স্বেচ্ছায় দিতে না চাইলে তার প্রাপ্য ভাড়া থেকে জোরপূর্বক কেটে রাখা যাবে না।
Sharable Link-কিতাবুল আছল ৩/৪৭৭; আলমুহীতুল বুরহানী ১১/৩৬৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৩/১৪৮; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ৩/৩৭৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৫/১৫১; রদ্দুল মুহতার ৬/৮০
বাজারে আমার একটি দোকান আছে। আমার এক বন্ধু দোকানটি নিতে চাচ্ছে। সে এখানে কম্পোজ ও অনলাইনের বিভিন্ন কাজ করবে। তার দুটি কম্পিউটার আছে, যেগুলো সে এ কাজে ব্যবহার করবে। আর প্রিন্টারসহ আরো কিছু প্রয়োজনীয় আসবাব সে কিনে নেবে। দোকানের ডেকোরেশনের কাজও সে নিজেই করবে। আর সে আমাকে কিছু কাজ শিখিয়ে দেবে। আমিও তার সঙ্গে কিছু কিছু কাজ করব। লভ্যাংশ বণ্টনের চুক্তি এভাবে হয় যে, ৬০% আমার বন্ধু নেবে আর ৪০% আমি নিব। হুজুরের কাছে জানার বিষয় হল- এভাবে চুক্তি করা জায়েয হয়েছে কি না?
হাঁ, প্রশ্নোক্ত পদ্ধতিতে দু’জনের মাঝে শতকরা হারে লাভ বণ্টনের চুক্তি করা জায়েয হয়েছে। তাই আপনি চাইলে আপনার বন্ধুর সাথে এভাবে ব্যবসা করতে পারেন। এতে কোনো অসুবিধা নেই।
Sharable Link-ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/২২৮; আলবাহরুর রায়েক ৫/১৮১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৩৩৪; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যা, মাদ্দাহ ১৩৯৫; শরহুল মাজাল্লা, আতাসী ৪/৩১৭
আমাদের গ্রামের লোকেরা নারিকেল গাছ থেকে নারিকেল পাড়িয়ে বিনিময়ে দুটি বা তিনটি নারিকেল দেওয়ার চুক্তি করে। জানার বিষয় হল, এভাবে চুক্তি করা কি জায়েয?
নির্ধারিত সংখ্যার নারিকেলের বিনিময়ে গাছ থেকে নারকেল পাড়ার চুক্তি করা জায়েয। এ ক্ষেত্রে বিনিময় হিসেবে কোন্ মানের নারিকেল দেওয়া হবে তা আগেই ঠিক করে নিতে হবে। তবে তার পাড়া নারিকেল থেকেই বিনিময় দেয়ার শর্ত করা যাবে না। অবশ্য ঐভাবে চুক্তি করার পর লোকটির পেড়ে দেয়া নারিকেল (শর্তানুযায়ী হলে তা) দিয়েও বিনিময় দেওয়া যাবে। আর পূর্বে উল্লেখিত মানের অন্য নারিকেলও দেওয়া যাবে।
Sharable Link-আলমুহতুল বুরহানী ১১/৩৩৩; ফাতাওয়া খানিয়া ২/৩২৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৫/১১৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৩/১১৩; শরহুল মাজাল্লা, আতাসী ২/৫৩৯