(ক) : কিছু মুসাফির জামাতে নামায পড়ছে। ইমামও মুসাফির। আসরের
নামায। এক রাকাত হয়ে গেছে আর এক রাকাত বাকি। ইতিমধ্যে একজন মুসাফির এসে নামাযে শরীক হল। এখন কথা হল এই মুসাফির তো জানে না যে, ইমাম মুসাফির না মুকিম। এখন এই মুসাফির মুসল্লি কত রাকাত নামায পড়বে। মুকিমের নামায না মুসাফিরের এবং কেন?
(খ) রাসূলে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি গাছের মিসওয়াক ব্যবহার করতেন? আমরা যদি আমাদের দেশের গাছের মিসওয়াক ব্যবহার করি তবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে গাছের ডাল দ্বারা মিসওয়াক করেছেন তার মত ফজিলত হাসিল হবে কি না? দলিল দিয়ে উপকৃত করবেন বলে আশাবাদি।
(ক) : ইমাম মুকীম না মুসাফির এ ব্যাপারে সন্দেহ হলে জামাতে শরীক হওয়ার পূর্বেই তা জেনে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে এবং ইমামেরও উচিত যদি তিনি মুসাফির হন তাহলে কসর নামাযের ক্ষেত্রে নামাযশেষে সালাম ফেরানোর পর মুসল্লীদেরকে জানিয়ে দেওয়া যে, তিনি মুসাফির, তাই নামায কসর পড়া হয়েছে। সুতরাং কোনো মুকীম মুসল্লী থাকলে তারা যেন নামায পূর্ণ করে নেয়।
এক বর্ণনায় এসেছে, ওমর রা. যখন মক্কায় এসে নামাযের ইমামতি করতেন তখন চার রাকাত বিশিষ্ট নামায দু’রাকাত পড়তেন এবং নামায শেষে বলতেন-
يَا أَهْلَ مَكّةَ أَتِمّوا صَلاَتَكُمْ، فَإِنّا قَوْمٌ سَفْرٌ.
‘আমরা মুসাফির (তাই নামায কসর করেছি) সুতরাং তোমরা যারা মক্কার অধিবাসী নামায পূর্ণ করে নাও।’ (মুআত্তা মালেক, বর্ণনা ৫০৪)
কিন্তু কখনো যদি এমন হয় যে, মুক্তাদী কোনোভাবে বুঝতে পারছে না যে, ইমাম মুকীম না মুসাফির তাহলে সেক্ষেত্রে নিয়ম হল, মুক্তাদী মুকীম হোক বা মুসাফির ইমামকে মুকীম ধরে নামায পূর্ণ করবে।
অতএব, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ মুসাফির যদি ইমামের অবস্থা না জানতে পারে এবং ইমাম নিজেও সালামের পর কোনো ঘোষণা না দেন তবে তিনি ইমামের সালামের পর আসরের তিন রাকাত আদায় করে নামায পূর্ণ করবেন। তবে এক্ষেত্রে যদি চার রাকাত পূর্ণ না করে দুই রাকাতেই সালাম ফিরিয়ে দেয় আর পরে জানা যায় যে ইমাম মুসাফির ছিল তাহলে নামায আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু ইমাম যদি মুকীম হয়, আর মুক্তাদী দুই রাকাত পড়ে সালাম ফিরিয়ে দেয় তাহলে তার নামায ফাসেদ হয়ে যাবে। এবং তাকে ঐ নামায পুনরায় আদায় করতে হবে। আর সে যেহেতু মুসাফির তাই একাকী পড়লে দুই রাকাত পড়বে। -রদ্দুল মহতার ২/১৩৭; আলমাবসূত, সারাখসী ২/১১০; আলবাহরুর রায়েক ২/২৩৮
(খ) হাদীস ও আছারের বিভিন্ন বর্ণনা থেকে বোঝা যায় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পিলুগাছের মেসওয়াক ব্যবহার করতেন এবং পিলুগাছের মেসওয়াক ব্যবহার করা পছন্দ করতেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন-
كُنْتُ أَجْتَنِي لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سِوَاكًا مِنْ أَرَاكٍ
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য পিলুগাছের মেসওয়াক সংগ্রহ করতাম। -আলমুজামুল কাবীর, তবারানী ৯/৭৮, হাদীস ৮৪৫২; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদীস ৫৩১০
অপর এক বর্ণনায় এসেছে সাহাবী আবু খায়রাহ আসসুবাহী রা. বলেন-
كُنْتُ فِي الْوَفْدِ الّذِينَ أَتَوْا رَسُولَ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ مِنْ عَبْدِ الْقَيْسِ فَزَوّدَنَا الْأَرَاكَ نَسْتَاكُ بِهِ، فَقُلْنَا: يَا رَسُولَ اللهِ عِنْدَنَا الْجَرِيدُ وَلَكِنّا نَقْبَلُ كَرَامَتَكَ وَعَطِيّتَكَ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ: اللهُمّ اغْفِرْ لِعَبْدِ الْقَيْسِ إِذْ أَسْلَمُوا طَائِعِينَ غَيْرَ مُكْرَهِينَ إِذْ قَعَدَ قَوْمِي لَمْ يُسْلِمُوا إِلّا خَزَايَا مَوْتُورِينَ.
অর্থাৎ, ঐ প্রতিনিধিদলের মধ্যে আমিও ছিলাম, যারা আল্লাহ্র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসেছিল। আল্লাহ্র রাসূল তখন আমাদেরকে পিলুগাছের মেসওয়াক দিলেন। তখন আমরা বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমাদের কাছে মেসওয়াকের জন্য খেজুর গাছের ডাল আছে। কিন্তু আমাদের প্রতি আপনার এ সম্মান এবং হাদিয়া তো অবশ্যই আমরা গ্রহণ করব। এরপর আল্লাহ্র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জন্য দুআ করলেন...। (আলমুজামুল কাবীর, তবারানী ২২/৩৬৮, হাদীস ৯২৪)
এই বর্ণনা থেকে একথাও বোঝা যাচ্ছে যে, সাহাবায়ে কেরাম পিলুগাছ ছাড়া অন্য গাছের মেসওয়াকও ব্যবহার করতেন।
এক হাদীসে ইরশাদ হয়েছে-
السِّوَاكُ مَطْهَرَةٌ لِلْفَمِ مَرْضَاةٌ لِلرّبِّ.
হাদীসটিতে মেসওয়াকের বিষয়ে দুটি কথা বলা হয়েছে।
১. مَطْهَرَةٌ لِلْفَمِ মুখ পরিষ্কারকারী। ২. مَرْضَاةٌ لِلرّبِّ আল্লাহ্র সন্তুষ্টির কারণ।
হাদীসের প্রথম অংশ থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, মিসওয়াকের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য মুখ পরিষ্কার হওয়া। সুতরাং যেসকল গাছের মিসওয়াক দাঁতকে পরিষ্কার করে এবং দাঁত ও মুখের জন্য উপকারী হয় এমন সব গাছেরই মিসওয়াক ব্যবহার করা যাবে। মিসওয়াকের মূল সওয়াব ও ফযীলত অর্জনের জন্য কোনো নির্দিষ্ট গাছের ডাল হওয়া জরুরি নয়। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৭; শরহুল মুনয়া পৃ.২৯; আননাহরুল ফায়েক ১/৪১; আলমাজমূ ২/৮৯, ১৭৫