ফয়যুল হাসান - কানাইঘাট, সিলেট.

৪৪২৭. Question

ইদানিং অনেক হাফেজ সাহেবকে তারাবীর নামাযে সিজদার আয়াত পাঠের পর রুকুর মাধ্যমে তা আদায় করতে দেখা যায়। এক্ষেত্রে বেশিরভাগ মুসল্লীরা তো বিষয়টি টেরই পায় না। তাই তারা রুকুতে সিজদা আদায়ের নিয়ত করতে পারে না। জানার বিষয় হল, এক্ষেত্রে ইমামের নিয়ত তাদের জন্য যথেষ্ট হবে কি না? এবং এর মাধ্যমে তাদের সিজদা আদায় হবে কি না?

Answer

রুকু বা নামাযের সিজদার মধ্যে সিজদায়ে তিলাওয়াতের নিয়ত না করে পৃথকভাবে সিজদায়ে তিলাওয়াত আদায় করা উচিত। আর নামাযে সিজদার আয়াত পাঠের পর কেউ যদি রুকুর মাধ্যমে তা আদায় করতে চায় সেক্ষেত্রে ইমাম-মুক্তাদী সকলের নিয়ত করা জরুরি। ইমাম যদি রুকুতে নিয়ত করে আর মুক্তাদীরা নিয়ত না করে তাহলে মুক্তাদীদের সিজদায়ে তিলাওয়াত আদায় হবে না। তাই ইমামদের উচিত রুকুতে সিজাদায়ে তিলওয়াতের নিয়ত না করা।

-মাজমাউল আনহুর ১/৩৩৭; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী পৃ.২৬৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/১১২

Sharable Link

উমর আহমদ - সিলেট

৪৪২৮. Question

মুহতারাম মুফতী সাহেব। আমার জানার বিষয় হল, মাসবুক ব্যক্তি তার ছুটে যাওয়া নামাযের জন্য কখন দাঁড়াবে? কেননা অনেক সময় দেখা যায় যে, ইমাম প্রথম সালাম দেওয়ার সাথে সাথেই কেউ দাঁড়িয়ে যায় কিংবা কেউ ইমামের দুই সালাম দেওয়ার পর দাঁড়ায়। আসলে কোনটি সঠিক?

Answer

ইমামের দু’দিকে সালাম ফিরানোর পরেই মাসবুকের দাঁড়ানো উচিত। এর আগে দাঁড়ানো অনুত্তম।

-খিযানাতুল আকমাল ১/৫৮; বাদায়েউস সানায়ে ১/৫৬৩; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৪৬৪; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী পৃ.২৫২

Sharable Link

যুবাইদুল ইসলাম - যাত্রাবাড়ী ঢাকা

৪৪২৯. Question

মুহতারাম মুফতী সাহেব, আমার জানার বিষয় হল, অনেক মসজিদে খতীবদেরকে দেখা যায় যে, তাঁরা খুতবার সময় হাতে লাঠি ব্যবহার করেন আবার কেউ তা ব্যবহার করেন না। আসলে কোন্ আমলটি শরীয়তসম্মত? জানিয়ে উপকৃত করবেন।

Answer

জুমার খুতবার সময় হাতে লাঠি বা ধনুক রাখার কথা হাদীস শরীফে আছে। তাই কোনো কোনো ফকীহ একে মুস্তাহাব বলেছেন। তবে লাঠি নেওয়া যেহেতু আবশ্যক নয় তাই একে সুন্নত বা জরুরি মনে করা যাবে না। এবং খতীবকে এ ব্যাপারে বাধ্যও করা যাবে না।

-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১০৮৯;  হালবাতুল মুজাল্লী ২/৫৪৪; আলবাহরুর রায়েক ২/১৪৮; রদ্দুল মুহতার ২/১৬৩; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী পৃ. ২৮০; ইলাউস সুনান ৮/৭২

Sharable Link

তাউসীফ কবীর - সিলেট

৪৪৩০. Question

নামাযের ইকামতের সময় অনেককে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তাই ইমাম সাহেব একদিন বললেন যে, ইকামতেরও জবাব দেওয়া উচিত। জানার বিষয় হল, আসলেই কি ইকামতের জবাব দেওয়া আবশ্যক?

Answer

ইমাম সাহেব ঠিকই বলেছেন। ইকামতের জবাব দেওয়া মুস্তাহাব। একটি বর্ণনায় ইকামতের জবাব দেওয়ার কথাও  পাওয়া যায়।

-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৫২৯; কিতাবুল আছল ১/১২১; আলবাহরুর রায়েক ১/২৫৯; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪০০; ইলাউস সুনান ২/১২৬

Sharable Link

মাওলানা আবদুস সাবুর - জকিগঞ্জ

৪৪৩১. Question

মুহতারাম মুফতী সাহেব, আমি এক মসজিদের ইমাম। বিভিন্ন সময় অনেক মুসল্লী তাড়াহুড়ো করে রুকুতে শরীক হওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু মসজিদ বড় হওয়ার কারণে অনেকে রুকুতে শরীক হতে না পেরে মাসবুক হয়ে যায়। তাই কোনো সময় আমি রুকুকে একটু দীর্ঘ করি, যাতে মুসল্লীরা রুকুতে শরীক হতে পারে। এভাবে রুকুকে দীর্ঘ করা কি শরীয়তের দৃষ্টিতে অনুমোদিত? জানিয়ে উপকৃত করবেন।

Answer

আগত মুসল্লীরা যাতে রুকুতে শরীক হতে পারে এ নিয়তে রুকুতে কিছুটা বিলম্ব করা যাবে। কিন্তু কোনো বিশেষ ব্যক্তির মনোরঞ্জন কিংবা কারো ভয়ে এমনটি করা জায়েয নয়।

-আলমুহীতুল বুরহানী ২/১১৫; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়্যা ১/১০৮; খিযানাতুল আকমাল ১/১৪০; শরহুল মুনয়া ২৮২; আততাজনীস ওয়াল মাযীদ ২/১৬

Sharable Link

হাফেজ রুহুল আলম - কানাইঘাট, সিলেট

৪৪৩২. Question

এক ব্যক্তি ‘আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতায়িনুকা’ দুআটি জানে না। তবে সে চাইলে শিখতে পারে। কিন্তু সে তা শেখার জন্য চেষ্টাও করে না। এমতাবস্থায় বিতর নামাযে অন্য কোনো দুআ পড়লে তার নামায সহীহ হবে কি?

Answer

বিতর নামাযে  দুআ কুনুত পড়া ওয়াজিব। কেউ যদি এক্ষেত্রে কোনো দুআই না পড়ে তাহলে পুনরায় নামায আদায় করতে হবে। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট দুআ ব্যতীত অন্য যে কোনো দুআ পড়লেও ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে এবং নামায সহীহ হয়ে যাবে। অবশ্য হাদীসে বর্ণিত দুআ যেমন ‘আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতায়িনুকা’ এটা পড়া সুন্নত। তাই হাদীসে বর্ণিত এ দুআ কেউ না জানলে দ্রুত শিখে নিবে।

-আলমুহীতুল বুরহানী ২/২৭০; আলবাহরুর রায়েক ২/৪২; রদ্দুল মুহতার ১/৪৬৮; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাদ্দুর ১/২৮০

Sharable Link

তাহেরা বিনতে মাহমুদ - কানাইঘাট, সিলেট

৪৪৩৩. Question

কারো যদি এশার ফরয আদায়ের পর অযু ভেঙ্গে যায়। নতুন অযু দিয়ে সে সুন্নত ও বিতর আদায় করে। পরে  ওয়াক্তের ভিতরেই মনে পড়ে যে, এশার ফরয অযু ছাড়া পড়া হয়েছিল, তখন কি তাকে ফরযের সাথে সুন্নত ও বিতরও পুনরায় আদায় করতে হবে, না শুধু এশার ফরয আদায় করলেই চলবে?

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তি এশার ফরয পুনরায় আদায় করবে। তবে বিতর আর পড়তে হবে না। কেননা বিতর স্বতন্ত্র ওয়াজিব। এশার ফরয বাতিল হওয়ার দ্বারা বিতর বাতিল সাব্যস্ত হবে না। তবে ওয়াক্তের মধ্যেই যদি ফরয আদায় করা হয় তাহলে সুন্নত পুনরায় পরে নিবে। কেননা সুন্নত ফরযেরই অনুগামী। তাই ফরয বাতিল হলে সুন্নতও বাতিল হয়ে যায়। আর ওয়াক্ত শেষ হওয়ার পর স্মরণ হলে শুধু ফরযের কাযা করবে সুন্নতের নয়। কেননা সুন্নতের কাযা হয় না।

-ফাতাওয়া সিরাজিয়্যা পৃ. ১৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৪৫০; মাজমাউল আনহুর ১/২১৬

Sharable Link

ফয়যুল হাসান - সিলেট

৪৪৩৪. Question

একদিন আমাদের মসজিদের হাফেজ সাহেব কুরআন শরীফের কেবল দুআ সম্বলিত আয়াত দ্বারা তারাবীর নামায পড়ান। এক্ষেত্রে তিনি একই রাকাতে কুরআনুল কারীমের বিভিন্ন জায়গা থেকে তিলাওয়াত করেন। জানার বিষয় হল, নামাযে এভাবে একই রাকাতে বিভিন্ন জায়গা থেকে তিলাওয়াত করার কী হুকুম?

Answer

নামাযে একই রাকাতে ইচ্ছাকৃত একাধিক স্থান থেকে তিলাওয়াত করা মাকরূহ। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিলাল রা.-এর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। আর বিলাল রা. একই রাকাতে বিভিন্ন সূরা থেকে তিলাওয়াত করছিলেন। পরে রাসূলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, আমি একটি উত্তমকে আরেকটি উত্তমের সাথে মিলিয়েছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না, সূরা যেভাবে আছে সেভাবেই পড়। (ফাযাইলুল কুরআন, আবু উবাইদ পৃ. ৯৫)

এজাতীয় হাদীসের আলোকে ফকীহগণ একই রাকাতে ইচ্ছাকৃত একাধিক স্থান থেকে পড়াকে মাকরূহ বলেছেন। তবে খতম তারাবীহ্র ক্ষেত্রে যেসব আয়াত ছুটে গেছে সেগুলো একত্র করে একবারে পড়ে নিলে মাকরূহ হবে না। খতমের সার্থে একে ছাড় দেওয়া হয়েছে।

-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৬৭; ফাতহুল কাদীর ১/২৯৯; শরহুল মুনয়া পৃ. ৪৯৪; রদ্দুল মুহতার ১/৫৪৬; ইলাউস সুনান ৪/১৩৯

Sharable Link

মাহমূদ - নোয়াখালী

৪৪৩৫. Question

আমরা জানি ফরযের প্রথম দুই রাকাতের কোনো রাকাতে সূরা ফাতেহার পর সূরা মিলাতে ভুলে গেলে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়। আমার জানার বিষয়  হল, ভুলে যাওয়ার বিষয়টি তৃতীয় বা চতুর্থ রাকাতে মনে পড়লে তৃতীয় বা চতুর্থ রাকাতে সূরা ফাতেহার পর কোনো সূরা পড়ে নেয়া কি জরুরি? বা পড়ে নেয়ার হুকুম কী? এবং ইমাম হলে জাহরী নামাযের ক্ষেত্রে কি জোরে পড়বে?

Answer

ফরয নামাযের প্রথম দুই রাকাতে সূরা ফাতেহার সাথে অন্য সূরা মিলাতে ভুলে গেলে নিয়ম হল, তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাতে সূরা ফাতেহার সাথে অন্য সূরা পড়ে নেয়া। আর দুই রাকাতের কোনো এক রাকাতে সূরা মিলাতে ভুলে গেলে পরের দুই রাকাতের যে কোন এক রাকাতে সূরা মিলিয়ে নিবে। অবশ্য এক্ষেত্রে পরের দুই রাকাতে যদি সূরা মিলানো না হয় তবুও নামায আদায় হয়ে যাবে এবং সূরা মিলানো হোক বা না হোক উভয় ক্ষেত্রে নামায শেষে সাহু সিজদা করতে হবে।

উল্লেখ্য, উচ্চস্বরে কেরাতবিশিষ্ট নামাযের কোন রাকাতে ইমাম সূরা মিলাতে ভুলে গেলে শেষ দুই রাকাতের যে রাকাতে সূরা মিলাবে ঐ রাকাতের সূরা কেরাত জোরে পড়বে।

-কিতাবুল আছল ১/১৯৫; আলজামেউস সগীর পৃ.৭২, ৯৬; ফাতহুল কাদীর ১/২৮৭; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৩২৯; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৫৯

Sharable Link

খায়রুল ইসলাম - কেরাণীগঞ্জ

৪৪৩৬. Question

(ক) : কিছু মুসাফির জামাতে নামায পড়ছে। ইমামও মুসাফির। আসরের

নামায। এক রাকাত হয়ে গেছে আর এক রাকাত বাকি। ইতিমধ্যে একজন মুসাফির এসে নামাযে শরীক হল। এখন কথা হল এই মুসাফির তো জানে না যে, ইমাম মুসাফির না মুকিম। এখন এই মুসাফির মুসল্লি কত রাকাত নামায পড়বে। মুকিমের নামায না মুসাফিরের এবং কেন?

(খ) রাসূলে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি গাছের মিসওয়াক ব্যবহার করতেন? আমরা যদি আমাদের দেশের গাছের মিসওয়াক ব্যবহার করি তবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে গাছের ডাল দ্বারা মিসওয়াক করেছেন তার মত ফজিলত হাসিল হবে কি না? দলিল দিয়ে উপকৃত করবেন বলে আশাবাদি।

Answer

(ক) : ইমাম মুকীম না মুসাফির এ ব্যাপারে সন্দেহ হলে জামাতে শরীক হওয়ার পূর্বেই তা জেনে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে এবং ইমামেরও উচিত যদি তিনি মুসাফির হন তাহলে কসর নামাযের ক্ষেত্রে নামাযশেষে সালাম ফেরানোর পর মুসল্লীদেরকে জানিয়ে দেওয়া যে, তিনি মুসাফির, তাই নামায কসর পড়া হয়েছে। সুতরাং কোনো মুকীম মুসল্লী থাকলে তারা যেন নামায পূর্ণ করে নেয়।

এক বর্ণনায় এসেছে, ওমর রা. যখন মক্কায় এসে নামাযের ইমামতি করতেন তখন চার রাকাত বিশিষ্ট নামায দু’রাকাত পড়তেন এবং নামায শেষে বলতেন-

يَا أَهْلَ مَكّةَ أَتِمّوا صَلاَتَكُمْ، فَإِنّا قَوْمٌ سَفْرٌ.

‘আমরা মুসাফির (তাই নামায কসর করেছি) সুতরাং তোমরা যারা মক্কার অধিবাসী নামায পূর্ণ করে নাও।’ (মুআত্তা মালেক, বর্ণনা ৫০৪)

কিন্তু কখনো যদি এমন হয় যে, মুক্তাদী কোনোভাবে বুঝতে পারছে না যে, ইমাম মুকীম না মুসাফির তাহলে সেক্ষেত্রে নিয়ম হল, মুক্তাদী মুকীম হোক বা মুসাফির ইমামকে মুকীম ধরে নামায পূর্ণ করবে।

অতএব, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ মুসাফির যদি ইমামের অবস্থা না জানতে পারে এবং ইমাম নিজেও সালামের পর কোনো ঘোষণা না দেন তবে তিনি ইমামের সালামের পর আসরের তিন রাকাত আদায় করে নামায পূর্ণ করবেন। তবে এক্ষেত্রে যদি চার রাকাত পূর্ণ না করে দুই রাকাতেই সালাম ফিরিয়ে দেয় আর পরে জানা যায় যে ইমাম মুসাফির ছিল তাহলে নামায আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু ইমাম যদি মুকীম হয়, আর মুক্তাদী দুই রাকাত পড়ে সালাম ফিরিয়ে দেয় তাহলে তার নামায ফাসেদ হয়ে যাবে। এবং তাকে ঐ নামায পুনরায় আদায় করতে হবে। আর সে যেহেতু মুসাফির তাই একাকী পড়লে দুই রাকাত পড়বে। -রদ্দুল মহতার ২/১৩৭; আলমাবসূত, সারাখসী ২/১১০; আলবাহরুর রায়েক ২/২৩৮

(খ) হাদীস ও আছারের বিভিন্ন বর্ণনা থেকে বোঝা যায় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পিলুগাছের মেসওয়াক ব্যবহার করতেন এবং পিলুগাছের মেসওয়াক ব্যবহার করা পছন্দ করতেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন-

كُنْتُ أَجْتَنِي لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سِوَاكًا مِنْ أَرَاكٍ

আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য পিলুগাছের মেসওয়াক সংগ্রহ করতাম। -আলমুজামুল কাবীর, তবারানী ৯/৭৮, হাদীস ৮৪৫২; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদীস ৫৩১০

অপর এক বর্ণনায় এসেছে সাহাবী আবু খায়রাহ আসসুবাহী রা. বলেন-

كُنْتُ فِي الْوَفْدِ الّذِينَ أَتَوْا رَسُولَ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ مِنْ عَبْدِ الْقَيْسِ فَزَوّدَنَا الْأَرَاكَ نَسْتَاكُ بِهِ، فَقُلْنَا: يَا رَسُولَ اللهِ عِنْدَنَا الْجَرِيدُ وَلَكِنّا نَقْبَلُ كَرَامَتَكَ وَعَطِيّتَكَ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ: اللهُمّ اغْفِرْ لِعَبْدِ الْقَيْسِ إِذْ أَسْلَمُوا طَائِعِينَ غَيْرَ مُكْرَهِينَ إِذْ قَعَدَ قَوْمِي لَمْ يُسْلِمُوا إِلّا خَزَايَا مَوْتُورِينَ.

অর্থাৎ, ঐ প্রতিনিধিদলের মধ্যে আমিও ছিলাম, যারা আল্লাহ্র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসেছিল। আল্লাহ্র রাসূল তখন আমাদেরকে পিলুগাছের মেসওয়াক দিলেন। তখন আমরা বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমাদের কাছে মেসওয়াকের জন্য খেজুর গাছের ডাল আছে। কিন্তু আমাদের প্রতি আপনার এ সম্মান এবং হাদিয়া তো অবশ্যই আমরা গ্রহণ করব। এরপর আল্লাহ্র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জন্য দুআ করলেন...। (আলমুজামুল কাবীর, তবারানী ২২/৩৬৮, হাদীস ৯২৪)

এই বর্ণনা থেকে একথাও বোঝা যাচ্ছে যে, সাহাবায়ে কেরাম পিলুগাছ ছাড়া অন্য গাছের মেসওয়াকও ব্যবহার করতেন।

এক হাদীসে ইরশাদ হয়েছে-

السِّوَاكُ مَطْهَرَةٌ لِلْفَمِ مَرْضَاةٌ لِلرّبِّ.

হাদীসটিতে মেসওয়াকের বিষয়ে দুটি কথা বলা হয়েছে।

১. مَطْهَرَةٌ لِلْفَمِ মুখ পরিষ্কারকারী। ২. مَرْضَاةٌ لِلرّبِّ আল্লাহ্র সন্তুষ্টির কারণ।

হাদীসের প্রথম অংশ থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, মিসওয়াকের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য মুখ পরিষ্কার হওয়া। সুতরাং যেসকল গাছের মিসওয়াক দাঁতকে পরিষ্কার করে এবং দাঁত ও মুখের জন্য উপকারী হয় এমন সব গাছেরই মিসওয়াক ব্যবহার করা যাবে। মিসওয়াকের মূল সওয়াব ও ফযীলত অর্জনের জন্য কোনো নির্দিষ্ট গাছের ডাল হওয়া জরুরি নয়। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৭; শরহুল মুনয়া পৃ.২৯; আননাহরুল ফায়েক ১/৪১; আলমাজমূ ২/৮৯, ১৭৫

Sharable Link

আফরোজা আক্তার - মতিঝিল, ঢাকা

৪৪৩৭. Question

কোনো কোনো মহলে প্রচলন আছে, বিশেষ কেউ মারা গেলে তাকে কবর দেওয়ার পর বা পরবর্তীতে বিশেষ কোনো উপলক্ষে  তার আত্মীয়-স্বজন ও অন্যান্যরা এসে তার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কিছু সময় নীরবতা পালন করে এবং ফুলের মালা, ফুলের তোড়া কবরের উপর বা কবরের পাশে রাখে।

হুযুরের কাছে জানতে চাই, মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে তার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন এবং তার কবরের উপর বা কবরের পাশে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ  করা কতটুকু কুরআন-হাদীস সম্মত? দলীল-প্রমাণসহ জানানোর অনুরোধ রইলো।

Answer

মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে নীরবতা পালন করা, মৃত ব্যক্তির কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা শরীয়তসম্মত নয়। এগুলো বিজাতীয় সংস্কৃতি। বিধর্মীদের আবিষ্কার। আর বিজাতিদের অনুসরণের ব্যাপারে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেছেন-

 

مَنْ تَشَبّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ.

যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য অবলম্বন করবে- সে তাদের দলভুক্ত হবে। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪০৩১

সুতরাং মুসলমানদের কর্তব্য এসব অহেতুক মনগড়া কাজ সম্পূর্ণরূপে পরিহার করা।

প্রকাশ থাকে যে, কোন মুসলমান ইন্তেকাল

করার পর তার কবরের কাছে গিয়ে জীবিতদের কী করতে হবে তা ইসলামে সুনির্দিষ্টভাবে বলে দেওয়া আছে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবা-তাবেয়ী থেকে এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। মৃতের দাফনকার্য সম্পন্ন করার পর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আমল কী ছিল সে ব্যাপারে উসমান রা. বলেছেন-

كَانَ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ إِذَا فَرَغَ مِنْ دَفْنِ الْمَيِّتِ وَقَفَ عَلَيْهِ، فَقَالَ: اسْتَغْفِرُوا لِأَخِيكُمْ، وَسَلُوا لَهُ بِالتّثْبِيتِ، فَإِنّهُ الْآنَ يُسْأَلُ.

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোনো মৃতের দাফনকার্য সম্পন্ন করতেন তখন কিছু সময় সেখানে অবস্থান করতেন এবং সঙ্গীদের বলতেন, তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো এবং অবিচল থাকার দুআ করো। তাকে তো এখনই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩২১৩

তাবেয়ী আলা ইবনে লাজলাজ থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি তার সন্তানদেরকে বলেছেন, আমার মৃত্যুর পর যখন তোমরা আমাকে কবর দিবে তখন তোমরা আমাকে লাহদ (বোগলী) কবরে রেখ এবং بِسم الله وعَلى سنة رَسُول الله

 

বলে সুন্দরভাবে মাটি দিয়ে দিও। তারপর আমার মাথার কাছে সূরা বাকারার শুরু ও শেষাংশ পাঠ করো। কারণ আমি আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. কে এটা পছন্দ করতে দেখেছি। (তারীখে ইবনে মাঈন-দুরী সংকলিত ২/৩৭৯-৩৮০)

সহীহ মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে, সাহাবী হযরত বুরায়দা রা. বলেন, যখন তারা কবর (যিয়ারতের জন্য) যেতেন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে শিখিয়ে দিতেন। তখন তারা এভাবে বলতেন-

السّلَامُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ، وَإِنّا إِنْ شَاءَ اللهُ لَلَاحِقُونَ، أَسْأَلُ اللهَ لَنَا وَلَكُمُ الْعَافِيَةَ .

হে কবরবাসী মুমিন ও মুসলিমগণ! তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। ইনশাআল্লাহ আমরাও শীঘ্রই তোমাদের সাথে মিলিত হব। আল্লাহ্র কাছে আমাদের জন্য ও তোমাদের জন্য ‘আফিয়ত’ (সব রকমের বিপদ-আপদ এবং অনাকাক্সিক্ষত ও অবাঞ্ছিত বিষয় থেকে নিরাপত্তা)-এর প্রার্থনা করি। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৯৭৫

দাফনকার্য সম্পন্ন করার পর এবং অন্যান্য সময় কবর যিয়ারত করার নিয়মাবলী সম্পর্কে এ ধরণের আরো বহু হাদীস বর্ণিত হয়েছে। হাদীসে বর্ণিত এ সকল আমলের দ্বারা মৃত ব্যক্তি যেমন উপকৃত হবে তদ্রƒপ যারা মৃতের জন্য আমল করবে তারাও ফায়েদা পাবে।

অতএব মুসলমানের কর্তব্য কবর যিয়ারতের ক্ষেত্রেও ইসলামের শিক্ষা ও আদর্শ অনুযায়ী আমল করা, হাদীস ও সুন্নাহ্র অনুসরণ করা এবং অমুসলিমদের আচার-আচরণ ও সংস্কৃতি পরিহার করা।

-মাআরিফুস সুনান ১/২৬৫

Sharable Link

হাফেজ রায়হান আহমদ - কানাইঘাট, সিলেট

৪৪৩৮. Question

আমার নানু কিছুদিন আগে দু চোখ অপারেশন করিয়েছেন। তাতে ঘন ঘন ড্রপ ব্যবহার করতে হয়। এদিকে তিনি প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার নফল রোযা রাখেন। জানার বিষয় হল, রোযা অবস্থায় চোখে ড্রপ ব্যবহার করলে রোযা নষ্ট হবে কি?

অনুরূপ রোযা অবস্থায় নাকে ড্রপ ব্যবহার করলে রোযার কোনো ক্ষতি হবে কি না?

Answer

রোযা অবস্থায় চোখে ড্রপ ব্যবহার করতে কোনো অসুবিধা নেই। এ কারণে রোযা নষ্ট হয় না। আর রোযা অবস্থায় নাকে ড্রপ ব্যবহার না করাই উচিত। কারণ ওষুধ গলার ভেতর চলে গেলে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে। আর নাকে ওষুধ দিলে সাধারণত গলায় চলেই যায়।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৫৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৩; রদ্দুল মুহতার ২/৩৯৫; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৮; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/১৮১

Sharable Link

আবদুল্লাহ আল মামুন - চাটখিল, নোয়াখালী

৪৪৩৯. Question

আমাদের সমাজে সাধারণত ধার্মিক পরিবারগুলোতে পিতা-মাতা তাদের সন্তানকে ৭/৮ বছর বয়স থেকেই নামাযের প্রতি উৎসাহ দিতে শুরু করেন এবং এ ব্যাপারে তাদেরকে খুব সচেতন বলেই মনে হয়। কিন্তু রমযানের রোযার ব্যাপারে কখনো কখনো এর বিপরীত চিত্র পরিলক্ষিত হয়। এমনকি কেউ কেউ তো সন্তানের বয়স ১১/১২ হওয়া সত্ত্বেও তাকে রোযা থেকে বিরত রাখেন। এ ব্যাপারে তাদের কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা বলেন, সন্তানের এখনও রোযার বয়স হয়নি।

এখন মুহতারামের নিকট জানার বিষয় হল, অপ্রাপ্তবয়স্ক বালকের রোযার ক্ষেত্রে শরীয়তের নির্দেশনা কী?

নামাযের ক্ষেত্রে যেমন বলা হয়েছে, সাত বছর বয়সে সন্তানকে নামাযের নির্দেশ দাও। আর দশ বছর বয়সে নামায ছেড়ে দিলে শাস্তি দাও। রোযার বিষয়টি কি এমন, নাকি পার্থক্য আছে?

Answer

সাত বছর বয়সী বাচ্চাদেরকে রোযা রাখার প্রতি চাপাচাপি করা যাবে না। তবে যখন থেকে দু-একটি  করে রোযা রাখতে পারে এবং শারীরিকভাবে রোযা রাখতে সক্ষম হয় তখন থেকে কিছু কিছু রোযা রাখতে উৎসাহিত করবে। আর বালেগ হওয়ার পরই যেহেতু তার উপর পুরো রমযান রোযা রাখা আবশ্যক হয়ে যায় তাই সে বিষয়টি লক্ষ রেখে বালেগ হওয়ার কাছাকাছি বয়সে ছেলে-মেয়েদেরকে রোযার প্রতি অভ্যস্ত করে তুলবে।

-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ৭২৯৩, ৭২৯৪; মুখতাসারু ইখতিলাফিল উলামা ২/১৫; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাদ্দুর ১/৪৫৬; রদ্দুল মুহতার ২/৪০৯

Sharable Link

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক - ঢাকা

৪৪৪০. Question

আমি  ধার্মিক পরিবারের সন্তান হওয়ায় বালেগ হওয়ার পর থেকেই প্রতি রমযানে রোযা রাখি। কিন্তু শুরুতে বন্ধুদের প্ররোচনায় গোপনে পানাহার করে বেশ কিছু রোযা ভেঙে ফেলেছিলাম। এখন সেগুলোর কাযা-কাফফারা আদায় করতে চাই। শুনেছি বিনা ওজরে একটি রোযা ভাঙলে ৬০ টি  রোযা কাযা হিসেবে রাখতে হয়। তাহলে কি আমাকে প্রত্যেক রোযার জন্য ৬০ টি করে রোযা রাখতে হবে? এ ব্যাপারে কোনো ছাড় আছে কি? শরীয়তের সমাধান জানানোর অনুরোধ রইল।

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যতগুলো রোযা রেখে বিনা ওজরে ভেঙে ফেলেছেন সেগুলোর জন্য একটি কাফফারা আদায় করলেই যথেষ্ট হবে। প্রত্যেকটির জন্য ভিন্ন ভিন্ন কাফ্ফারা আদায় করা লাগবে না। তবে প্রত্যেকটির জন্য একটি করে রোযা কাযা করতে হবে। আর মনে রাখতে হবে, শরয়ী ওজর ছাড়া ইচ্ছাকৃত রমযানের রোযা ছেড়ে দেওয়া অনেক বড় গুনাহ। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন-

مَنْ أَفْطَرَ يَوْمًا مِنْ رَمَضَانَ مُتَعَمِّدًا مِنْ غَيْرِ سَفَرٍ ، وَلاَ مَرَضٍ لَمْ يَقْضِهِ أَبَدًا وَإِنْ صَامَ الدّهْرَ كُلّهُ.

যে ব্যক্তি সফর বা অসুস্থতা ছাড়া রমযানের একটি রোযাও ইচ্ছাকৃত ছেড়ে দিবে সে পুরো জীবন রোযা রাখলেও ঐ রোযার হক আদায় হবে না। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৯৮৯৩)

-কিতাবুল আছল ২/১৫৩; আলমাবসূত, সারাখসী ৩/৭৫; ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ১/১০৩; মারাকিল ফালাহ পৃ. ৩৬৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪১৩

Sharable Link

আবু জাফর - সিলেট

৪৪৪১. Question

আশুরার রোযা কি শুধু ১০ মুহাররম? নাকি এর সাথে আগে বা পরে একদিন মিলিয়ে রাখতে হবে। একজন বললেন : শুধু ১০ মুহাররম রাখলেও নাকি তা আশুরার রোযা হিসাবে আদায় হবে। সঠিক কোনটি? জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

আশুরার রোযা মূলত ১০ই মুহাররমের  রোযা। তবে এই রোযার সাথে আরো একটি রোযা মিলিয়ে রাখার ব্যাপারে হাদীসে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

صُومُوا عَاشُورَاءَ وَخَالِفُوا فِيهِ الْيَهُودَ، صُومُوا قَبْلَهُ يَوْمًا وَبَعْدَهُ يَوْمًا.

তোমরা আশুরার দিন রোযা রাখ এবং তাতে ইহুদীদের বিরোধিতা কর, আশুরার আগে একদিন বা পরে একদিন রোযা রাখ। (সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস ২০৯৫)

তাই ৯ ও ১০ অথবা ১০ ও ১১ দুইদিন রোযা রাখা উত্তম। অবশ্য কেউ যদি শুধু ১০ মুহাররম রোযা রাখে তবে সেটিও আশুরার রোযা হিসাবেই গণ্য হবে। তবে হাদীসের নির্দেশনার  উপর আমল না করার জন্য মাকরূহ তথা অনুত্তম হবে।

-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৪১৮; বাদায়েউস সানায়ে ২/২১৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৬৫; আলবাহরুর রায়েক ২/২৫৭; রদ্দুল মুহতার ২/৩৭৫

Sharable Link

বিলাল আহমদ - রাজাগঞ্জ, সিলেট

৪৪৪২. Question

গত রমযানে আমি অসুস্থ থাকার কারণে কয়েকটি রোযা রাখতে পারিনি। এখনও তা কাযা হিসাবে রয়ে গেছে। কিন্তু রমযানের পরে কাযা রোযা না রেখে শাওয়ালের নফল রোযা রেখেছিলাম। তাই হযরতের কাছে জানার বিষয় হল, কাযা রোযা না রেখে নফল রোযা রাখলে তা কি সহীহ হবে।

Answer

হাঁ, রমযানের কাযা রোযা আদায়ের আগে নফল রোযা রাখা জায়েয। তাই কাযা রোযা না রেখে শাওয়ালের ছয় রোযা রাখা অন্যায় হয়নি। রমযানের কাযা রোযা রাখার আগে কোনো নফল রোযা রাখা যায় না- একথা ঠিক নয়। হাদীসে বর্ণিত ফযীলপূর্ণ নফল বা মুস্তাহাব রোযাগুলো রাখতে কোনো অসুবিধা নেই। তবে কাযা রোযা থাকলে সর্বক্ষেত্রেই সম্ভাব্য নিকটতম সময়ে তা আদায়ের ব্যাপারে যত্নবান হতে হবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ২/২৬৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৬০; আলবাহরুর রায়েক ২/২৮৫; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪২৩

Sharable Link

সিয়াম তাকী - সদর দক্ষিণ, কুমিল্লা

৪৪৪৩. Question

আমাদের এলাকায় প্রচলন আছে, মানুষ বৃদ্ধ হওয়ার কারণে রোযা রাখতে না পারলে রমযান মাসে মাদরাসা থেকে একজন দরিদ্র ছাত্রকে লজিং রাখে। তাকে ভোররাতে ও সন্ধারাতে খাবার খাওয়ায়। আমার জানার বিষয় হল-

ক. বৃদ্ধ হওয়ার কারণে রোযা রাখতে অক্ষম হলে কী করবে?

খ. উপরোক্ত পদ্ধতিতে খাবার খাওয়ানোর দ্বারা রোযার ফিদয়া কি আদায় হবে?

Answer

ক. অতিশয় বৃদ্ধ হওয়ার কারণে কোনো ব্যক্তি রমযানের রোযা রাখতে অক্ষম হয়ে পড়লে প্রতিদিনের রোযার পরিবর্তে পূর্ণ খাবার খেতে পারে এমন একজন দরিদ্রকে দু’বেলা খাবার খাওয়াবে। আনাস রা. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বৃদ্ধ হওয়ার পর এক-দু’বছর রোযা রাখতে পারেননি। এবং প্রতি রোযার পরিবর্তে একজন মিসকিনকে গোশত-রুটি খাইয়েছেন। (মুসনাদে আবদ ইবনে হুমাইদ- ফাতহুল বারি ৮/২৮) -কিতাবুল হুজ্জাহ আলা আহলিল মাদীনাহ ১/২৫৪; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়্যা ১/২২২

খ. ছাত্র জায়গীর রেখে ফিদয়া আদায়ের পদ্ধতি ঠিক আছে। তবে এক্ষেত্রে ছাত্রটি যেন খুব ছোট বয়সের না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। -ফাতহুল কাদীর ২/২৭৭; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২০৩; আলবাহরুর রায়েক ২/২৮৬

Sharable Link

আয়েশা সিদ্দিকা শাম্মী - কানাইঘাট, সিলেট

৪৪৪৪. Question

কিছুদিন আগে আট-দশ বছরের এক শিশু আব্বুর কাছে এসে তার চিকিৎসার জন্য সাহায্য চায়। তাকে সহযোগিতার জন্য তার এক আত্মীয়ও তার সাথে ছিল। আব্বু তার করুণ অবস্থা দেখে খুব কষ্ট পান এবং তার চিকিৎসার জন্য বড় অংকের যাকাতের টাকা দেওয়ার ইচ্ছা করেন। কিন্তু পাশে বসা আমার বড় মামা বাধা দিয়ে বলেন, নাবালেগ বাচ্চাকে যাকাত দিলে যাকাত আদায় হয় না। জানার বিষয় হল, তার এ কথাটি কি ঠিক?

Answer

অবুঝ নাবালেগ শিশুকে যাকাত দিতে হলে অভিভাবকের মাধ্যমে দিতে হয়। অভিভাবক সাথে না থাকলে কিংবা তার হস্তগত না হলে শুধু শিশু বাচ্চার হাতে দেওয়া যথেষ্ট হবে না। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে শিশুটির সাথে যেহেতু তার একজন অভিভাবক ছিল এবং শিশুটিও দশ বছর বয়সী  আর এ বয়সের শিশুরা বর্তমানে বুঝমান হয়ে যায় তাই তাকে যাকাত দেওয়া জায়েয হত। এক্ষেত্রে আপনার বড় মামার বাধা দেওয়া ঠিক হয়নি।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২১৪; আলমুলতাকাত ফিল ফাতাওয়া পৃ. ৭৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪২; আলবাহরুর রায়েক ২/২০১; রদ্দুল মুহতার ২/৩৪৪

Sharable Link

মুহাম্মাদ আবদুল কাইয়ূম - ঢালকানগর মাদরাসা, ঢাকা

৪৪৪৫. Question

আমরা কয়েকজন যুবক উদ্যোগ নিয়েছি যে, এ বছর রমযানে চাঁদা উঠিয়ে এলাকার গরীব লোকদের ইফতারির ব্যবস্থা করব। খাবার রান্না করে মসজিদে প্যাকেট করে রাখা হবে। মাগরীবের কিছুক্ষণ আগে এসে লোকেরা একেক প্যাকেট করে নিয়ে যাবে। কেউ চাইলে মসজিদে বসেও খেতে পারবে। জানার বিষয় হল, আমরা কি এ  আয়োজনের ব্যয় নির্বাহের জন্য যাকাতের টাকা গ্রহণ করতে পারব? কেউ এ আয়োজনে যাকাতের টাকা দিলে তার যাকাত আদায় হবে কি না?

 

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে প্রত্যেককে যেহেতু তার ইফতারির মালিক বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে তাই এ খাতে যাকাতের টাকা ব্যয় করা যাবে এবং এর দ্বারা যাকাত আদায় হয়ে যাবে।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২১৫; আলবাহরুর রায়েক ২/২০১; আন্নহরুল ফায়েক ১/৪১২; রদ্দুল মুহতার ২/২৫৭

Sharable Link

মিজান বিন ইবরাহীম - কানাইঘাট, সিলেট

৪৪৪৬. Question

গত অক্টোবর মাসে আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। মরণব্যাধী এ রোগের চিকিৎসা করাতে গিয়ে তিনি অনেক টাকা ঋণী হয়ে যান। এলাকার এক লন্ডনপ্রবাসী চাচ্ছেন, নিজের যাকাতের টাকা দিয়ে তার ঋণ পরিশোধ করে দিতে। জানার বিষয় হল, যাকাতের টাকা দিয়ে মরহুম ইমাম সাহেবের ঋণ পরিশোধ করে দিলে ঐ ব্যক্তির যাকাত আদায় হবে কি?

Answer

যাকাতের টাকা দিয়ে মৃতের ঋণ পরিশোধ করা যাবে না। এর দ্বারা যাকাত আদায় হবে না। কেননা যাকাত আদায়ের জন্য যাকাতের টাকা কাউকে মালিক বানিয়ে দেওয়া জরুরি। আর মৃত ব্যক্তি কোনো কিছুর মালিক হতে পারে না।

উল্লেখ্য যে, মৃত ব্যক্তির কোন আপনজন যদি যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত দরিদ্র ও গরীব হয় এবং সে নিজের জন্য কারো কাছ থেকে যাকাতের টাকা নিয়ে সেচ্ছায় মৃত ব্যক্তির ঋণ আদায় করে দেয় তাহলে সেক্ষেত্রে যাকাতও আদায় হয়ে যাবে এবং ঋণও আদায় হয়ে যাবে।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪৩; আলবাহরুর রায়েক ২/২৪৩; মাজমাউল আনহুর ১/৩২৮; আননাহরুল ফায়েক ১/৪৬২

Sharable Link

আবুদল মতিন - মনোহরগঞ্জ, কুমিল্লা

৪৪৪৭. Question

আমার প্রবাসী ভাইয়ের ১০ লক্ষ টাকা ব্যাংকে জমা আছে। যেগুলোর যাকাত এ বছর এখনও আদায় করা হয়নি। তাই আমি আমার যাকাত আদায় করার সময় একত্রে তার ঐ টাকার যাকাত (২৫ হাজার টাকা) আমার কাছ থেকে আদায় করে দিয়েছি। পরবর্তীতে তাকে জানালে তিনি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এবং ঐ টাকা আমাকে দিয়ে দেন।

এখন হযরতের নিকট প্রশ্ন হল, এভাবে তার পূর্ব অনুমতি ব্যতীত তার যাকাত আদায় করার দ্বারা তা আদায় হয়েছে কি?

 

Answer

আপনার ভাইয়ের যাকাত যদি পূর্ব থেকেই আপনার আদায় করার নিয়ম থাকে তাহলে ঐভাবে যাকাত দেওয়ার দ্বারা  তার যাকাত আদায় হয়ে গিয়েছে। কারণ, কোনো পরিবার বা সমাজে যদি স্ত্রী সন্তান বা ভাই বোনের পক্ষ থেকে যাকাত আদায় করে দেওয়ার রেওয়াজ থাকে তাহলে সুনির্দিষ্টভাবে অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন থাকে না। তবে পূর্ব থেকে নিয়ম না থাকলে অনুমতি ব্যতীত ভাই বোনের  যাকাত নিজ থেকে আদায় করলে এর দ্বারা তাদের যাকাত আদায় হবে না। বরং তা নফল দান হিসাবে গণ্য হবে এবং ঐ ব্যক্তিকে তার যাকাত পৃথকভাবে আদায় করতে হবে।

-কিতাবুল আছল ২/১২৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/২২৭; আলবাহরুর রায়েক ২/২৫২; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২২৮; রদ্দুল মুহতার ২/৩৬৩

Sharable Link

মাওলানা আবদুল্লাহ জুনায়েদ - বীরদল মাদরাসা, কানাইঘাট

৪৪৪৮. Question

আমাদের মাদরসার দশজন মেধাবী ছাত্র এ বছর বোর্ড পরিক্ষায় মুমতাজ বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছে। ছাত্রদের কৃতিত্বপূর্ণ এ ফলাফলে খুশী হয়ে মাদরাসার এক হিতাকাক্সক্ষী তাদের বড় আকারে পুরস্কার দেওয়ার ইচ্ছা করেছেন। এখন তিনি জানতে চাচ্ছেন, যাকাতের টাকা দিয়ে ছাত্রদের পুরস্কার দেওয়া যাবে কি না?

Answer

যাদেরকে পুরস্কার দেওয়া হবে তারা যদি গরীব ও যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত হয় এবং তাদের কেউ নাবালেগ হলে তার পিতা যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত হয় তাহলে যাকাতের টাকা দিয়ে তাদের পুরস্কার দেওয়া যাবে এবং এর দ্বারা ঐ ব্যক্তির যাকাত আদায় হয়ে যাবে। আর কোনো ছাত্র বা তার অভিভাবক (ছাত্র নাবালেগ হওয়ার ক্ষেত্রে) নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে তাকে যাকাতের অর্থ দ্বারা পুরস্কার দেওয়া যাবে না।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪৩; মাজমামাউল আনহুর ১/২৯০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯০; রদ্দুল মুহতার ২/২৬৮

Sharable Link

আবদুল্লাহ যুলকারনাইন - ঢাকা

৪৪৪৯. Question

মুহতারাম মুফতী সাহেব, আমার জানার বিষয় হল, কোন পিতা কি তার গরীব ছেলে যে যাকাত নেওয়ার উপযুক্ত তাকে যাকাত দিতে পারবে?

Answer

ছেলে মেয়েকে নিজের যাকাত দেওয়া যায় না। এমনকি তারা গরীব হলেও তাদেরকে নিজের যাকাত দেওয়া জায়েয নয়। তাদেরকে যাকাত দিলে যাকাত আদায় হবে না। তাই তারা গরীব-অসহায় হলে তাদেরকে যাকাত-ফিতরা ছাড়া অন্য সম্পদ দ্বারা সহযোগিত করবে।

-কিতাবুল আছল ২/১২৪; বাদায়েউস সানায়ে ২/১৪৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪২; ফাতহুল কাদীর ২/২০৯

Sharable Link

খালেদ খাঁন - সিলেট

৪৪৫০. Question

আমার এক প্রবাসী আত্মীয় প্রায় প্রতি বছর তার গ্রামের বাড়ীতে শীতের আগে গরীব লোকদের মাঝে বস্ত্র এবং কুরবানীর আগে চাল, ডাল, তেল, মসলা ইত্যাদির প্যাকেট তৈরি করে তা তাদের মাঝে বিতরণ করেন। এবং তিনি তা যাকাতের টাকা থেকে করে থাকেন। তো এভাবে টাকা না দিয়ে বস্ত্র বা খাবার কিনে দিলে কি এর দ্বারা যাকাত আদায় হবে? জানিয়ে উপকৃত করবেন।

Answer

হাঁ, এভাবে প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য ও বস্ত্র ইত্যাদি দ্বারাও যাকাত দেওয়া যায়, তাই ঐ ব্যক্তির যাকাত আদায় হয়ে যাবে। তবে কোনো দ্রব্য ইত্যাদি দ্বারা যাকাত দেয়ার চেয়ে সরাসরি নগদ টাকা দেয়া উত্তম। এতে গরীবের উপকার বেশি হয়। গরীব নিজের প্রয়োজন মত তা খরচ করতে পারে।

-বাদায়েউস সানায়ে ২/১৪৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২১৫; খিযানাতুল আকমাল ১/২৮৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৫৭, ৩৬৬

Sharable Link

ইউসূফ মাহমূদ - নিকেতন, গুলশান

৪৪৫১. Question

একটি বিষয়ে শরীয়তের আলোকে সমাধান জানানোর অনুরোধ করছি।

আমার ছোট ভাইয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছিল আমাদের এক মামাতো বোনের সাথে। কিন্তু তার মা অর্থাৎ আমাদের মামী বললেন, তিনি আমার বড় বোনকে ছোটবেলায় দুধ পান করিয়েছিলে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর মুরব্বীরা বলছেন, এ বিয়ে জায়েয হবে না।

মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাচ্ছি, ঐ মামাতো বোনের সাথে আমার ছোট ভাইয়ের বিয়ে জায়েয হবে কি না? আর এ ব্যাপারে এতদিন পর্যন্ত কেউ জানতো না। এমনকি আমার আম্মাও জানতো না। এদিকে পরিবারের অনেকে মামীর এ দাবির সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠিয়েছে।

এ সব বিষয়কে সামনে রেখে বিষয়টির সমাধান জানিয়ে আমাদেরকে উপকৃত করবেন।

Answer

আপনার মামী আপনার বড় বোনকে দুধপান করালেও ঐ মামির মেয়ের সাথে আপনার ছোট ভাইয়ের বিয়ে জায়েয। কেননা তার মা আপনার ছোট ভাইকে দুধ পান করায়নি। তাই আপনার বড় বোনকে দুধ পান করানোর দ্বারা ছোট ভাইয়ের সাথে বা আপনাদের অন্যান্য ভাই-বোনদের সাথে দুধসম্পর্ক সৃষ্টি হয়নি।

-আলমাবসূত, সারাখসী ৩০/৩০১; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৪০০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৪/৩৬৪; রদ্দুল মুহতার ৩/২১৭

Sharable Link

মাওলানা খালিদ হাসান - পাগার, গাজীপুর

৪৪৫২. Question

গাজীপুরের পাগারের পূর্বদিকে অবস্থিত খ্রিস্টান নগর। এ এলাকার জমিদার সব খ্রিস্টান। কিন্তু সেখানে অনেক মুসলমানেরও বসবাস রয়েছে। প্রায় দুই/তিন হাজার মুসলমান বসবাসকারীর জন্য নামাযের উপযুক্ত কোনো জায়গা না থাকায় তারা সাময়িকভাবে পাঞ্জেগানা মসজিদ বা জামে মসজিদের জন্য কোনো ফ্লোর ভাড়া নিতে পারবে কি? উল্লেখ্য  যে, তাদের জায়গা ক্রয় করার মত আর্থিক সামর্থ্যও নেই এবং তারা সেই ভাড়া ফ্লোরে নামাযের পাশাপাশি শিশু ও বয়স্কদের কুরআন শেখার ব্যবস্থাও রাখতে চায়।

Answer

যে এলাকায় মুসলমানদেন বসতি রয়েছে এবং সেখানে মুসল্লীদের জামাতে নামায পড়ার মত মসজিদ নেই সেখানে মসজিদ নির্মান করা এলাকাবাসীর ঈমানী দায়িত্ব। এ ছাড়া ইসলামে পুরুষদের জন্য মসজিদের জামাতে নামায পড়ার গুরুত্ব অপরিসীম। গ্রহণযোগ্য ওযর ছাড়া মসজিদের জামাতে শরীক না হওয়ার ব্যাপারে হাদীস শরীফে কঠিন সতর্কবাণী উচ্চাতির হয়েছে।

অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে এলাকার সকল মুসলমানের ঈমানী কর্তব্য হল, সম্মিলিতভাবে মসজিদের জন্য স্বতন্ত্র জায়গার ব্যবস্থা করা। এলাকায় বসবাসকারীদের জমি কেনার সামর্থ্য না থাকলে এলাকার মধ্যে যারা অধিক জমির মালিক তাদের কর্তব্য হবে মসজিদের জন্য জায়গার বন্দোবস্ত করা।

 

এলাকায় মসজিদ প্রতষ্ঠা হওয়ার আগ পর্যন্ত সম্ভব হলে পাশর্^বর্তী মহল্লার মসজিদের জামাতে নামায পড়বে। আর যদি মসজিদ অনেক দূরে হয় অথবা বিশেষ ওযরের কারণে নিয়মিত মহল্লা থেকে দূরে যাওয়া সম্ভব না হয় তাহলে সেক্ষেত্রে সাময়িকভাবে কোনো ফ্লোর ভাড়া নিয়ে সেখানে নামাযের ব্যবস্থা করা যাবে এবং ঐ জায়গায় কুরআন শিক্ষার ব্যবস্থাও করা যাবে।

-সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৫১; ফাতহুল কাদীর ১/৩০০; ফাতহুল বারী ২/১৫৩; ইলাউস সুনান ৪/১৬৪

Sharable Link

আবদুল্লাহ মাসুদ - ময়মনসিংহ

৪৪৫৩. Question

যখন নতুন ফসল কাটা হয় তখন ফসলের দাম কম থাকে, তাই কম দামে ক্রয় করে গুদামজাত করে রাখি। যখন বাজারে বেশি দাম হয় তখন বিক্রি করি। এভাবে অধিক মুনাফা লাভের আশায় পণ্য গুদামজাত করে রাখতে কি কোনো অসুবিধা আছে?

Answer

অধিক মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে খাদ্য-শস্য বা সাধারণ মানুষের প্রয়োজনীয় পণ্য অধিক পরিমাণে আটকে রেখে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা শরীয়তে নিষিদ্ধ।

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

مَنِ احْتَكَرَ فَهُوَ خَاطِئٌ.

যে ব্যক্তি (প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী) আটকে রাখে সে গুনাহগার। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৬০৫

ফকীহগণ বলেন, উপরোক্ত হাদীস এবং এ সংক্রান্ত অন্যান্য হাদীস ঐ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যাতে মানুষের প্রয়োজনীয় পণ্য গুদামজাত করে আটকে রাখার দরুন বাজারে সংকট সৃষ্টি হয় এবং মানুষ অভাব অনটনের শিকার হয় এবং দ্রব্যমূল্য অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। তাই এ ধরনের গুদামজাত করা নাজায়েয। সরকারের  কর্তব্য এ ধরনের গুদামজাতের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরকে তাদের পণ্য বাজারে বিক্রি করতে বাধ্য করা।

আর যদি খাদ্য ও পণ্য সামগ্রী জমা করে রাখার বিষয়টি স্বাভাবিক পর্যায়ের হয়, মানুষের ক্ষতি ও অনটনের আশঙ্কা না থাকে এবং বাজারে ঐ পণ্যের সঙ্কট দেখা না দেয় তাহলে এ জাতীয় সাধারণ গুদামজাত করা নাজায়েয নয়।

-আলজামেউস সাগীর পৃ.৪৮১; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৩০৯; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৪২২

Sharable Link

ইবরাহীম - ফরাশগঞ্জ, ঢাকা

৪৪৫৪. Question

আমি কাশমীরী শাল ভালো কিনতে পারি। তাই অনেক পরিচিতরা আমাকে কাশমীরী শাল কেনার জন্য টাকা দেয়। সাধারণ খুচরা বাজারে যে চাদরটার মূল্য হয় ৫০০০/-টাকা। কিন্তু ইন্ডিয়া থেকে সরাসরি এগুলো আমদানী করে এমন কয়েকজনের সাথে আমার পরিচয় আছে। তারা সে চাদরটাই বিক্রি করে ৪২০০/- টাকায়। আবার কখনো দেখা যায়, তাদের থেকে আমি নিয়মিত পণ্য নেই একারণেও আমার কাছ থেকে তারা মূল্য কম নেয়।

জানতে চাই, আমার জন্য এই অতিরিক্ত টাকা রেখে দেওয়া বৈধ হবে কী? এতে শরীয়তের দৃষ্টিতে কোনো আপত্তি আছে কি না? জানালে উপকৃত হব।

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যারা চাদর ক্রয় করতে দিয়েছে তাদের পক্ষ থেকে আপনি ক্রয় প্রতিনিধি মাত্র। সুতরাং যে কারণেই মূল্য ছাড় পাওয়া যাক তা মূলত ক্রেতারই প্রাপ্য। তাদের সম্মতি ব্যতীত এই ছাড়ের টাকা আপনার নেওয়া বৈধ হবে না। তাই শাল ক্রয়ের পর যে পরিমাণ টাকা বেঁচে যাবে তা মূল মালিককে ফেরত দিয়ে দিতে হবে।

-মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যাহ, মাদ্দা : ১৪৭৯; বাদায়েউস সনায়ে ৫/৩০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/৫৮৮; আলবাহরুর রায়েক ৭/১৫৫

Sharable Link

মুহাম্মাদুল্লাহ - হবিগঞ্জ

৪৪৫৫. Question

কোনো চাষী যখন ফসল ফলাতে গিয়ে অভাবে পড়ে যায় তখন সে মানুষের কাছ থেকে সার ইত্যাদি কেনার জন্য এই বলে ঋণ নেয় যে, আমাকে এখন ১০,০০০/- টাকা ঋণ দিন, পরবর্তীতে ফসল হওয়ার পর কিছু ফসলসহ পূর্ণ ১০,০০০/- টাকা ফেরত দিয়ে দিব। এ ধরনের ঋণচুক্তি  করা বৈধ কি না?

Answer

এভাবে ঋণের বিনিময়ে ফসল দেওয়ার চুক্তি করা সম্পূর্ণ হারাম। এটি সুস্পষ্ট সুদি চুক্তি। কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-

وَ اَحَلَّ اللهُ الْبَیْعَ وَ حَرَّمَ الرِّبٰوا.

আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন, আর সুদকে করেছেন হারাম। -সূরা বাকারা (২) : ২৭৫

হাদীস শরীফে হযরত জাবের রা. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন-

لَعَنَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ آكِلَ الرِّبَا، وَمُؤْكِلَهُ، وَكَاتِبَهُ، وَشَاهِدَيْهِ، وَقَالَ: هُمْ سَوَاء.

অর্থাৎ সুদখোর, সুদ প্রদানকারী, সুদি চুক্তির লেখক এবং এর সাক্ষী এদের সবার উপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিসম্পাত করেছেন এবং বলেছেন, এরা সবাই সমান (অপরাধী)। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৫৯৮)

তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতা থেকে শুধু তার দেওয়া ১০,০০০/- টাকাই উসুল করা যাবে। ফসল বা অন্য কিছু অতিরিক্ত নেওয়া হারাম হবে।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ২১৭৮; আহকামুল কুরআন জাসসাস ১/৪৬৯

Sharable Link

রওশন রেযা - মুগদা, ঢাকা

৪৪৫৬. Question

আমার বাবার এক বন্ধু বেশ টাকা-পয়সার মালিক। দ্বীনদার মানুষ। বিবাহ করেননি। বয়স ৫৬/৫৭। বাবা-মা দুজনই মারা গিয়েছেন। ভাইবোন কেউ নেই। আত্মীয় বলতে আছে শুধু দুই চাচা, এক ফুফু এবং এক মামা ও এক খালা।

তার নিকটাত্মীয় কেউ নেই বিধায় তিনি অসিয়ত করেছেন যে, তার মৃত্যুর পর তার সব সম্পত্তি তার গ্রামের মাদরাসার জন্য ওয়াক্ফ হয়ে যাবে।

এখন তিনি জানতে চাচ্ছেন, যে তার অসিয়ত কি সহীহ হয়েছে? কেউ কেউ বলছেন, এক তৃতীয়াংশের বেশি অসিয়ত করা জায়েয নেই। বিষয়টি জানানোর অনুরোধ রইল।

Answer

অসিয়তের ব্যাপারে শরীয়তের একটি মূলনীতি হল, অসিয়তকারীর যদি কোনো ওয়ারিশ থাকে তাহলে সে তার মালিকানাধীন এক তৃতীয়াংশ সম্পদের মধ্যে অসিয়ত সীমিত রাখবে। এর বেশি অসিয়ত করবে না।

সাহাবী সা‘দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস রা. বলেন-

مَرِضْتُ، فَعَادَنِي النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ، فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، ادْعُ اللهَ أَنْ لاَ يَرُدّنِي عَلَى عَقِبِي، قَالَ: لَعَلّ اللهَ يَرْفَعُكَ وَيَنْفَعُ بِكَ نَاسًا، قُلْتُ: أُرِيدُ أَنْ أُوصِيَ، وَإِنّمَا لِي ابْنَةٌ، قُلْتُ: أُوصِي بِالنِّصْفِ؟ قَالَ: النِّصْفُ كَثِيرٌ، قُلْتُ: فَالثّلُثِ؟ قَالَ: الثّلُثُ، وَالثّلُثُ كَثِيرٌ أَوْ كَبِيرٌ، قَالَ: فَأَوْصَى النّاسُ بِالثّلُثِ، وَجَازَ ذَلِكَ لَهُمْ.

একবার আমি অসুস্থ হলাম তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দেখতে আসলেন। আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল! ...আমি অসিয়ত করে যেতে চাচ্ছি! আমার আছে শুধু একমাত্র মেয়ে। সুতরাং আমি কি আমার অর্ধেক সম্পদের অসিয়ত করতে পারব? আল্লাহ্র রাসূল বললেন, অর্ধেক তো অনেক! আমি তখন বললাম, তাহলে এক তৃতীয়াংশ? আল্লাহর রাসূল বললেন এক তৃতীয়াংশ হতে পারে, তবে এক তৃতীয়াংশও কম না! তিনি বলেন, এরপর মানুষ এক তৃতীয়াংশ অসিয়ত করতে লাগল, আর তা বৈধ হল। -সহীহ বুখারী, হাদীস ২৭৪৪

প্রকাশ থাকে যে, ওয়ারিশ বলতে শুধু মা-বাবা, ছেলে-মেয়ে স্ত্রী- এরাই নয়; বরং চাচা-ফুফু, মামা-খালাগণও ক্ষেত্রবিশেষে ওয়ারিশ হয়ে থাকেন। তাই এই প্রকারের কোনো ওয়ারিশ জীবীত থাকা অবস্থায়ও এক তৃতীয়াংশের বেশি অসিয়ত করলে তার অনুমোদন ছাড়া সেটা কার্যকর হবে না।

সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর তার ওয়ারিশ হিসেবে যারা জীবিত থাকবে তাদের অনুমোদন ছাড়া তার সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশের অতিরিক্তের ক্ষেত্রে অসিয়ত কার্যকর হবে না।

-কিতাবুল আছল ৫/৪২৯; উমদাতুল কারী ১৪/৩৫; ফাতহুর কাদীর ৭/৩৫২; রদ্দুল মুহতার ৪/৩৯৮; ইলাউস সুনান ১৮/৩১২

Sharable Link