নামায শেষে আমরা যখন সালাম ফিরিয়ে থাকি তখন কি পূর্ণ সালাম বলাই ওয়াজিব নাকি আংশিক? যদি আংশিক হয় তবে পুরোটা বলার হুকুম কী? দ্বিতীয় সালাম কি ওয়াজিব?
নামায শেষে আমরা যখন সালাম ফিরিয়ে থাকি তখন কি পূর্ণ সালাম বলাই ওয়াজিব নাকি আংশিক? যদি আংশিক হয় তবে পুরোটা বলার হুকুম কী? দ্বিতীয় সালাম কি ওয়াজিব?
নামায শেষে উভয় সালাম বলা ওয়াজিব এবং উভয় সালামেই ‘আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ পর্যন্ত বলা সুন্নাত। তবে শুধু ‘আস-সালাম’ বললেও ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে।
Sharable Link-আল-বাহরুর রায়েক ১/৩০১; শরহুল মুনিয়া ২৯৮; আস-সিআয়াহ ২/১৩৭; আল-মুহীতুল বুরহানা ২/১৩১; রদ্দুল মুহতার ১/৪৬৮; মাজমাউল আনহুর ১/১৩৩
আমি দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এম.ডি.-এর দায়িত্বে আছি। অনেক সময় এক প্রতিষ্ঠানের জিনিস অন্য প্রতিষ্ঠানের জন্য ক্রয়-বিক্রয় করতে হয়। যেহেতু আমি উভয় প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল, তাই আমি একাই এ সকল ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন করে থাকি। আমার এ সকল ক্রয়-বিক্রয় সহীহ হচ্ছে কি না?
একই ব্যক্তি পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য দু’জনের প্রতিনিধি হতে পারে না। কারণ, এ ক্ষেত্রে একটি পণ্যের জন্য একই ব্যক্তির ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের ভূমিকা পালন করতে হয়। তাই ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার সম্মুখীন হলে কোনো এক পক্ষের জন্য অন্য কোনো ব্যক্তিকে প্রতিনিধি বানিয়ে তার সাথে ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন করবেন।
Sharable Link-আল-মাবসূত সারাখসী ১৯/৩২; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৩২২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/২, ৫/২৬৫; রদ্দুল মুহতার ৪/৫২৫; ৫০৪; শরহুল মাজাল্লা ২/২৮-২৯ আল মুগনী : ৭/২৩০ আযযখীরা : ৮/১০
আমাদের অনেকগুলো নারিকেল গাছ আছে। প্রচুর নারিকেল ধরে। তবে নারিকেল বিক্রি করার মতো আমাদের কেউ নেই। তাই আমরা বাজারের এক দোকানদারের নিকট এই শর্তে নারিকেল দেই যে, তুমি নারিকেলগুলো বিক্রি করে দাও। আমাদেরকে প্রতি জোড়া নারিকেলে ১৫ টাকা করে দিবে। আর এর চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করতে পারলে তা তোমার। এখানে আমার প্রশ্ন হল, উক্ত পদ্ধতিতে কারবার করা জায়েয আছে কি না?
হাঁ, প্রশ্নোক্ত পদ্ধতিতে নারিকেল বিক্রি করা জায়েয।
Sharable Link-সহীহ বুখারী ১/৩০৩, উমদাতুল কারী ১২/৯৩, আল-মুগনী ইবনে কুদামা ৮/৪২, রদ্দুল মুহতার ৬/৬৩, বুহুস ফী কাযায়া ফিকহিয়্যা মুআসারা ১/২০৯
নামাযের মাঝে ইমামের যদি কোন ভুল হয়ে যায়। তাহলে সতর্ক করার জন্য ‘সুবহানাল্লাহ’ বলবে নাকি ‘আল্লাহু আকবার’ বলবে? কোনটা উত্তম?
ইমামের কোনো ভুল হয়ে গেলে তাকে সতর্ক করার জন্য ‘সুবহানাল্লাহ’ বলাটাই উত্তম। কেননা হাদীস এবং সাহাবাদের আমল দ্বারা ‘সুবহানাল্লাহ’ বলা প্রমাণিত। তবে, ‘আল্লাহু আকবার’ বললেও নামাযের কোনো ক্ষতি হবে না।
Sharable Link-জামে তিরমিযী ১/৮৫; উমদাতুল কারী ৭/২৭৯; মাআরিফুস-সুনান ৩/৪৪২; সুনানে আবু দাউদ ১/১৪৮; ফাতহুল কাদীর ১/৩৫৬; আল-বাহরুর রায়েক ২/৭; রদ্দুল মুহতার ১/৬৩৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৯৯
আমাদের গ্রামের পুকুর-মালিকগণ নির্দিষ্ট দামে টিকিট ছাড়ে। এই টিকেটের মাধ্যমে টিকেট গ্রাহক ১ সপ্তাহ বা তার চেয়ে বেশি সময়ের জন্য বড়শি দিয়ে মাছ ধরার অনুমতি পায়। জানতে চাই, এ ধরনের চুক্তি বৈধ কি না?
বড়শি দিয়ে মাছ ধরার প্রশ্নোক্ত কারবারটি জায়েয নয় তাছাড়া এতে জুয়ার সাদৃশ্যও রয়েছে। এটি শরয়ী নীতিমালার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তাই এভাবে মাছ ধরার চুক্তি করা থেকে বিরত থাকা কর্তব্য।
Sharable Link-রদ্দুল মুহতার ৬/৪০৩; বুহুস ফী কাযায়া ফিকহিয়্যা মুআসারা ২/২৩১
আমার এক আত্মীয়ের একটি মুদী দোকান আছে। তার আচরণ খুব একটা ভালো না হওয়ায় কোনো কর্মচারীই বেশি দিন থাকতে চায় না। এবার একজন নতুন কর্মচারী এসেছে। তাকে আমার আত্মীয় এই বলে নিয়োগ দেয় যে, যদি তিন মাসের আগেই চাকুরী ছেড়ে চলে যাও তাহলে কোনো বেতন পাবে না। প্রশ্ন হল, এই ধরনের শর্তে নিয়োগ দেওয়া বৈধ হবে কি না? যদি অবৈধ হয়ে থাকে তাহলে এখন করণীয় কী? জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নে বর্ণিত শর্তে নিয়োগচুক্তি বৈধ নয়। বরং যতটুকু কাজ করবে এর যথাযোগ্য পারিশ্রমিক দিয়ে দেয়া জরুরী। সুতরাং উক্ত কর্মচারী তিন মাসের আগে চলে গেলেও তাকে তার কাজের ন্যায্য বেতন দিতে হবে। আর এ ক্ষেত্রে করণীয়ের মধ্যে একটি তো হল, কর্মচারীদের সাথে সদাচারণ করা। দ্বিতীয়ত প্রয়োজনের ক্ষেত্রে এমন শর্ত করার অবকাশ রয়েছে যে, প্রথম তিন মাসের বেতন চতুর্থ মাসে একত্রে দেওয়া।
Sharable Link-আল-বাহরুর রায়েক ৭/৩১২, ফাতহুল কাদীর ৮/৩৪, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৪৫, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪৪৩, শরহুল মাজাল্লা ২/৫৪৫
জানাযা কাঁধে নেওয়ার পর উচ্চস্বরে শাহাদাতাইন পড়ার হুকুম কী? সাহাবা-তাবেয়ীন থেকে এ ধরনের কোনো আমল প্রমাণিত আছে কি না?
জানাযা কাঁধে নেওয়ার পর কালেমায়ে শাহাদাত, কুরআন তিলাওয়াত বা অন্য কোনো যিকির শব্দ করে পড়া নিষেধ। এ সময় সাহাবা-তাবেয়ীনের আমল ছিল চুপ থেকে মৃত্যু ও কবরের পরিণতি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা। ইবনে জুরাইজ রহ. বলেন- ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জানাযার সাথে চলতেন তখন অনেক বেশি চুপ থাকতেন এবং চিন্তায় মগ্ন থাকতেন। (মুসান্নাফে আব্দুর রায্যাক, ৩/৪৫৩)
তাই এ সময় কোনো কিছু পড়ার চেয়ে কবরের চিন্তা করা এবং চুপ থাকাই শ্রেয়। তবে কেউ যিকির বা কালেমায়ে শাহাদাত পড়তে চাইলে নিম্নস্বরে পড়তে পারবে।
Sharable Link-সুনানে আবি দাউদ ২/৯৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬২; ফাতহুল কাদীর ২/৯৬; রদ্দুল মুহতার ৩/১৮৩
আমি একটি বইয়ের দোকান দিয়েছি। এখানে ধর্মীয় ও সাধারণ বইপত্র থাকে। স্কুল ও মাদরাসার অনেক ছাত্র-ছাত্রী আসে যাদের সবসময় বই কেনার সামর্থ্য থাকে না। তাই তাদের জন্য আমি কিছু বইপত্র রেখে দিয়েছি, যেগুলো ভাড়ায় তাদের পড়তে দিয়ে থাকি। যেমন, ছোট বই ২ টাকা, মাঝারি ধরনের বই ৫ টাকা ও বড় বই ১০ টাকা। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে বইপত্র ভাড়া দেওয়া জায়েয আছে কি?
যে সকল বই পাঠ করা জায়েয, সেগুলো নির্দিষ্ট মেয়াদে নির্দিষ্ট বিনিময়ে ভাড়া দেওয়াও জায়েয।
Sharable Link-আল মুহীতুল বুরহানী ১১/৩৪৯; বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৮; রদ্দুল মুহতার ৬/৩৪; আলমুগনী ইবনে কুদামা ৮/১৩৫
আমার একটি গরু নাড়া পালার সাথে বাঁধা ছিল। সেটা খরকুটা খাচ্ছিল। কারণবশত উক্ত পালাটি গরুর উপর পড়ে যায়। ফলে অবস্থা এমন হল যে, যদি নিয়মতান্ত্রিকভাবে গরুটি বের করা হয়, ততক্ষণে মারা যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা ছিল। আর গলায় জবাই করাও সম্ভব ছিল না ফলে বাধ্য হয়ে সাইডে আঘাত করে রক্ত প্রবাহিত করি এবং তার গোশত খাই।
এ কারণে এলাকায় বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এক দল লোকের দাবি হল উক্ত গরুর গোশত খাওয়া হালাল হয়নি। তাই আপনার প্রতিষ্ঠান হতে শরয়ী সমাধানের আবেদন করছি।
প্রশ্নোক্ত বিবরণ সত্য হলে গরুটি যদি বিসমিল্লাহ বলে ধারাল অস্ত্র দ্বারা যখম করা হয়ে থাকে এবং যখমের কারণে রক্ত প্রবাহিত হয়ে থাকে গরুটি মারা যায় তবে তার গোশত খাওয়া ঠিক হয়েছে।অপারগতার সময় এভাবে জবাই করার অনুমতি রয়েছে।
Sharable Link-সহীহ বুখারী ২/৮২৮; মুসান্নাফে ইবনে শাইবা ১০/৪৩৫; আলবাহরুর রায়েক ৮/১৭১; রদ্দুল মুহতার ৬/৩০৩; ফাতাওয়া সিরাজিয়া ৮৭
গত দুমাস আগে আমি একটি ফ্রিজ ক্রয় করি। এটির নগদ মূল্য হল ২৬ হাজার টাকা। আর আমার কাছে তখন পূর্ণ টাকা না থাকায় কিস্তিতে ২৮ হাজার টাকায় ক্রয় করি। চুক্তি হয়, আমি এখন ২৪ হাজার টাকা পরিশোধ করব। আর বাকী ৪ হাজার টাকা দুই মাস পরে দিব। তাদের ফরমে লিখা ছিল ২ মাস পর উক্ত টাকা না দিলে ৬ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হবে। সময়মতো টাকা দিতে না পারায় আমাকে এখন ৬ হাজারই পরিশোধ করতে হচ্ছে। আমার প্রশ্ন হল, উক্ত কারবারটি শরীয়তসম্মত হয়েছে কি না, আমার করণীয় কি এবং উক্ত ফ্রিজ আমার জন্য ব্যবহার করা বৈধ হবে কি না?
যেহেতু আপনি ক্রয়ের সময় ফ্রিজের দাম ২৮ হাজার টাকা চূড়ান্ত করে এনেছেন সেহেতু আপনার থেকে তারা ২৮ হাজার টাকাই পাবে। নির্ধারিত সময়ে মূল্য আদায় করতে না পারলেও তাদের জন্য ২৮ হাজারের বেশি নেয়া জায়েয হবে না।
এখন আপনার কর্তব্য হল অতি দ্রুত বাকী ৪ হাজার টাকা আদায় করে দেওয়া। বিনা ওজরে তা আদায়ে বিলম্ব করলে আপনি গুনাহগার হবেন। আর ফ্রিজটি যেহেতু বৈধভাবে আপনার মালিকানায় এসে গেছে তাই এটি ব্যবহার করতে কোনো সমস্যা নেই।
Sharable Link-জামে তিরমিযী ১/২৩৩; আল মাবসূত সারাখসী ১৩/৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/৩; রদ্দুল মুহতার ৪/৪২৯
আমি একটি ক্লিনিকে চাকুরি করি। আমাদের ক্লিনিকে প্রায় সময় দেখা যায় যে, অনেক মহিলার বাচ্চা হওয়ার পর ঐ বাচ্চা মারা যায়। আবার অনেক মহিলা মৃত বাচ্চা প্রসব করেন। মাঝে মধ্যে দেখা যায় যে, কোনো মহিলা অসম্পূর্ণ বাচ্চা প্রসব করেন। এখানে আমার জানার বিষয় হল, এসব ক্ষেত্রে ঐ বাচ্চার নাম রাখা না রাখা এবং কাফন, দাফন, জানাযা ও গোসলের ক্ষেত্রে ইসলামী শরীয়তের কী হুকুম? বিস্তারিত জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।
জীবিত ভুমিষ্ট বাচ্চা মারা গেলে সাধারণ মৃতের মতোই তার গোসল ও কাফন দিতে হবে এবং জানাযা পড়ে দাফন করতে হবে। এ ধরনের বাচ্চার (বয়স সাত দিনের কম হলেও) নাম রাখার কথা হাদীসে বলা হয়েছে।
আর যদি বাচ্চা মৃত ভুমিষ্ট হয় তাহলে তার জানাযা পড়তে হবে না। তাকে গোসল দিয়ে একটি পরিষ্কার কাপড়ে পেঁচিয়ে দাফন করে দিবে।
অবশ্য এ ধরনের বাচ্চাকে চাইলে তিন কাপড়েও কাফন দিতে পারবে। আর এ শিশুরও একটি নাম রেখে দিবে।
একই পন্থা অবলম্বন করবে ঐ সব অসম্পূর্ণভাবে জন্ম নেয়া মৃত শিশুদের ক্ষেত্রে যাদের মৌলিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সৃষ্টি হয়েছে।
আর যদি নষ্ট হয়ে যাওয়া গর্ভের কোনো অঙ্গ না হয়ে থাকে; বরং শুধু গোশতের টুকরো থাকে তাহলে তা একটি কাপড়ে পেঁচিয়ে দাফন করে দিবে। এক্ষেত্রে জানাযা, গোসল, নাম রাখা কিছুই করবে না।
Sharable Link-জামে তিরমিযী ১/২০০; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৩/৫৩০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫৯; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/৭৮; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৮; আদ্দুররুর মুখতার ২/২২৭-২২৮
শুনেছি আযানের জবাব দেওয়া সুন্নত। তাই নিয়মিত আযানের জবাব দিয়ে আসছি। গতকাল এক লোক বলল, হায়েয অবস্থায় আযানের জবাব দেওয়া যাবে না। উক্ত মাসআলার শরয়ী সমাধানের আবেদন করছি।
লোকটির ঐ কথা ঠিক নয়। হায়েয অবস্থায়ও আযানের মৌখিক জবাব দেওয়ার অবকাশ আছে।
Sharable Link-উমদাতুল কারী ৬/১১৭; শরহুন নববী ৪/৮৮; আলবাহরুর রায়েক ১/২৬০; রদ্দুল মুহতার ১/৩৯৬
আজকাল অনেক পত্রিকায় ‘কুইজের আসর’ নামে জ্ঞান প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে দেখা যায়। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে হলে ধাঁধাঁ বা কুইজের উত্তরগুলো লিখে পত্রিকা অফিসে পাঠাতে হয়। সঠিক উত্তর প্রদানকারীদের মধ্য থেকে লটারির মাধ্যমে কয়েকজনকে নির্বাচিত করে পুরস্কার প্রদান করা হয়। এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য ভিন্ন কোনো ফি দিতে হয় না। এ ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজন করা এবং এতে অংশগ্রহণ করা জায়েয আছে কি না? জানিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন।
প্রতিযোগীদের থেকে ফরমের খরচ মূল্যের অতিরিক্ত কোনো ফি না নিয়ে বৈধ জ্ঞানচর্চার উদ্দেশ্যে কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা জায়েয। এতে অংশগ্রহণ করাও বৈধ। প্রতিযোগিতার সঠিক উত্তরদাতাদের মধ্য থেকে লটারির মাধ্যমে কয়েকজনকে নির্বাচন করে তাদেরকে পুরস্কৃত করা জায়েয এবং বিজীয়দের জন্য এ পুরস্কার গ্রহণ করাও বৈধ।
Sharable Linkআহকামুল কুরআন (থানভী) ৪/১১; তাফসীরে কুরতুবী ১৫/১২৫-১২৮; বুহুস ফী কাযায়া ফিকহিয়্যা মুআসারা ২/২২৯
আমাদের দেশে পুকুর ভাড়া দেওয়ার প্রচলন আছে। ছয় মাস এক বছর বা আরো অধিক সময়ের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়। চুক্তিকৃত সময়ে ভাড়াগ্রহণকারী পুকুরে মাছ চাষ করুক বা না করুক সে যত মাছ ধরে নিতে পারে। মালিক পক্ষ থেকে তাকে এ অধিকার দেওয়া থাকে। শরীয়তের দৃষ্টিতে এভাবে পুকুর ভাড়া দেওয়া বৈধ কি না?
শুধু মাছ বিক্রির জন্য ছুতা হিসেবে এ পদ্ধতিতে পুকুর ভাড়া দেওয়া-নেওয়া জায়েয হবে না। বরং পুকুরে মাছ চাষকরা কিংবা পানি ব্যবহার করা কিংবা এ ধরনের কোনো সুবিধা ভোগ করার উদ্দেশ্যে নিয়মতান্ত্রিকভাবে ভাড়া দেওয়া জায়েয হবে।
Sharable Link-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪৪/৪৪১; বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৭; রদ্দুল মুহতার ৫/৬১; তাকরিরাতে রাফেঈ ৫/ ১৩৯
আমাদের মসজিদে এক ব্যক্তি কিছু কার্পেট দান করেন। কিন্তু তাতে মসজিদের মেঝের কিছু অংশ খালি থেকে যায়। পরবর্তীতে আরেক ব্যক্তি আরো কিছু কার্পেট দেন। তাতে কিছু কার্পেট অতিরিক্ত হয়ে যায়। এখন আমরা চাচ্ছি এ অতিরিক্ত কার্পেটগুলো পার্শ্ববর্তী একটি মসজিদে দিয়ে দিতে, যে মসজিদের আয়ের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। প্রশ্ন হল, আমাদের এ দান সহীহ হবে কি?
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ঐ অতিরিক্ত কার্পেট যদি মসজিদের কোনো প্রয়োজনে না আসে, তবে পার্শ্ববর্তী যে মসজিদের প্রয়োজন রয়েছে সেখানে তা দিয়ে দেওয়া জায়েয হবে।
Sharable Link-আলমাবসূত ১২/৪২; কিতাবুল ইসআফ ফী আহকামিল আওকাফ ৭৭; ফাতহুল কাদীর ৫/৪৪৬; রদ্দুল মুহতার ৪/৩৫৯
আমাদের এলাকায় কিছু লোকের নিকট পানি সেচার মেশিন আছে। তারা মানুষের পুকুরের পানি এই চুক্তিতে সেচে দেয় যে, তারা পুকুরের পানি সেচে মাছ ধরে দিবে। পুকুরের মালিকের কোনো কাজ করতে হবে না। এর বিনিময়ে তারা অর্ধেক মাছ নিয়ে যাবে। আর বাকি অর্ধেক মাছ পুকুরের মালিক পাবে। এক্ষেত্রে পুকুরে মাছ বেশি পাওয়া গেলে তারা লাভবান হয়। আবার কখনো মাছ কম থাকলে তাদের লোকসান হয়। অবশ্য লোকসান খুব কমই হয়। কারণ তারা পুকুরের পানি দেখলে বুঝতে পারে যে, পুকুরে কী পরিমাণ মাছ থাকতে পারে? এখন প্রশ্ন হল, এ ধরনের কারবার শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ কি না?
না, এ ধরনের চুক্তি শরীয়তে জায়েয নেই। কেননা এতে পারিশ্রমিকের পরিমাণ অজানা। শরীয়তের দৃষ্টিতে পারিশ্রমিক চুক্তির সময়ই নির্ধারিত ও চূড়ান্ত হওয়া জরুরী। যেন কাজ শেষে পরস্পরে মনোমালিন্য না হয় এবং কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কাও না থাকে। তাই এক্ষেত্রে সঠিক পদ্ধতি হল, মেশিনের মালিক পানি সেচ করা এবং মাছ ধরে দেওয়ার বিনিময়ে কী পারিশ্রমিক নিবে তা পূর্বেই সুনির্ধারিত হতে হবে। সে যদি টাকা নেয় তাহলে টাকার পরিমাণ, আর অন্য কিছু নিতে চাইলে তার ধরন ও পরিমাণ নির্দিষ্ট করে নিতে হবে।
Sharable Link-মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৮/২৩৫; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৪৭; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৪৬; শরহুল মাজাল্লা ২/৫৩৮
বিতর নামাযে ভুলে দোয়ায়ে কুনুত ছেড়ে দেওয়ার কারণে আমার উপর সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হয়েছে। কিন্তু আমি ভুলে সিজদায় সাহু আদায় করিনি। এখন আমার নামায কি হয়ে যাবে? নাকি পুনরায় পড়তে হবে?
সিজদা সাহু ওয়াজিব হওয়ার পর ভুলে বা ইচ্ছাকৃত সিজদা সাহু না করে থাকলে ঐ নামায পুনরায় পড়ে নেয়া আবশ্যক। তাই প্রশ্নোক্ত বিতর নামাযটিও পুনরায় আদায় করে নিতে হবে।
Sharable Link-হিদায়া ১/১৪৩; ফাতহুল কাদীর ১/৩০৮; মারাকিল ফালাহ ১৩৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/৬৩
আমাদের এলাকায় স্থানীয় একটি ইসলামী সোসাইটির কিছু জনকল্যাণমূলক প্রকল্প রয়েছে। যার একটি হল, কোনো সুদী ব্যাংকে টাকা জমা রেখে বছর শেষে প্রাপ্ত সুদ দ্বারা গরীব-অসহায় লোকদের সাহায্য-সহযোগিতা করা। আমার প্রশ্ন হল, গরীবদের সাহায্যের জন্য ব্যাংকে টাকা রেখে সুদ গ্রহণ করা জায়েয আছে কি? বিস্তারিত দলীলসহ জানতে চাই।
না, উক্ত উদ্দেশ্যেও সুদের ভিত্তিতে টাকা রাখা যাবে না। কারণ, নিজে ভোগ করার উদ্দেশ্যে যেমন সুদী কারবার করা হারাম ও কবীরা গোনাহ, তদ্রূপ গরীব-অসহায়দেরকে সাহায্য করার নিয়তেও সুদী কারবার করা হারাম।
প্রকাশ থাকে যে, গরীব-অসহায়দের সাহায্য করা একটি প্রশংসনীয় ও অনেক বড় ছওয়াবের কাজ। অন্যান্য আমলের মতো এ আমলও শরীয়তসম্মত পন্থাতেই হতে হবে, তবেই তা ছওয়াব লাভের উপযোগী হবে।
Sharable Link-মুসনাদে আহমাদ ১/৩৮৭; জামে তিরমিযী ১/৩; মুসতাদরাকে হাকীম ১/৩৯০; আল আরফুশ শাযী ১/৩৯০
জনৈক ইমাম সাহেব ফজরের নামায শেষ করে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখেন পাঁচ মিনিট হয়ে গেছে সূর্য উঠছে । ইমাম সাহেব মুসুল্লীদেরকে বসিয়ে রেখে সূর্য ওঠা শেষ হলে দ্বিতীয় বার জামাতের সাথে নামায আদায় করেন এবং কেরাত চুপেচুপে পাঠ করেন, অপর এক ব্যক্তি বলে উঠল আপনাদের নামায হয়নি নামায আবার পড়তে হবে। কেননা ফজরের নামাযে কেরাত শুনিয়ে পড়া ওয়াজিব।
ইমাম সাহেব মুসুল্লীদেরকে নিয়ে তৃতীয় বার জামাতের সাথে জোরে কিরাতের সাথে নামায আদায় করেন। এখন আমার জানার বিষয় হল যে-
১. জামাতের সাথে নামায চলাকালীন সূর্য উঠে গেলে পুনরায় জামাতের সাথে নামায আদায় করতে পারবে কিনা?
২. জামাত করতে পারলে কিরাআত উচ্চস্বরে পড়বে নাকি আস্তে, আর উল্লেখিত নামাযের হুকুম কী? বিস্তারিত জানালে খুশি হব।
ঐ দিনের প্রথম নামাযটি সূর্যাদয়ের কারণে সহীহ হয়নি। আর দ্বিতীয়বার জামাতের সাথে আদায়কৃত ফজরের কাযা নামাযে কিরাত নিম্ন স্বরে পড়ার কারণে সেটিও যথাযথভাবে আদায় হয়নি। তাই উক্ত নামায পুনরায় পড়ে নেয়া ঠিকই হয়েছে।
Sharable Link-সহীহ বুখারী ১/৮৩; সহীহ মুসলিম ১/২৮৬ ও ১/২৩৮; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩২৯; সুনানে আবু দাউদ ১/৬২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২১; আল বাহরুর রায়েক ১/৩৩৫
জনাব করিম সাহেব তার পাঁচ কাঠা পরিমাণ জমি ২১ লক্ষ টাকায় বিক্রি করতে চায়। তাই দালালের সাথে এই মর্মে চুক্তি করে যে, সে যদি তার জমি ২১ লক্ষ টাকায় বিক্রি করে দিতে পারে তাহলে দালালকে এক লক্ষ টাকা দেওয়া হবে। আর বাকি বিশ লক্ষ টাকা জমির মালিক নিজে রাখবে। প্রশ্ন হল, দালালের জন্য এই টাকা গ্রহণ করা বৈধ হবে কি?
হ্যাঁ, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে তার জন্য ঐ টাকা গ্রহণ করা জায়েয।
Sharable Link-সহীহ বুখারী ১/৩০৩; উমদাতুল কারী ১২/৯৩; রদ্দুল মুহতার ৬/৬৩; শরহুল মুহাযযাব ১৫/৩৪২
আমার দাঁতে সমস্যার কারণে মাঝে মাঝে দাঁত থেকে রক্ত বের হয়। প্রশ্ন হল, রোযা অবস্থায় যদি দাঁত থেকে রক্ত বের হয় তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে কি?
দাঁত থেকে রক্ত বের হওয়া রোযা ভঙ্গের কারণ নয়। তবে রোযা অবস্থায় রক্ত বের হলে তা গলায় চলে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
Sharable Link-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৫৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৩; ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ৪/৯৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৯৬
মুদারিব পুঁজির যোগানদাতার সাথে এই মর্মে চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছে যে, পুঁজির মালিক তাকে লাভের সুনির্ধারিত অংশ ব্যতীত মাসিক ১০০০ টাকা করে দিবে।
এক্ষেত্রে আমি জানতে ইচ্ছুক মুদারিবের জন্য পুঁজির মালিক থেকে লভ্যাংশের সুনির্ধারিত অংশ ব্যতীত অতিরিক্ত কিছু শর্তের ভিত্তিতে নেওয়া জায়েয আছে কি না?
মুদারিবের জন্য কোনো নির্দিষ্ট অংক পারিশ্রমিক হিসাবে ধার্য করা জায়েয নেই।
সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মাসিক ১০০০ টাকা নেওয়া তার জন্য জায়েয হবে না এবং এ শর্তটি বাতিল বলে গণ্য হবে। এক্ষেত্রে মুদারিবের জন্য লাভের হার বেশি করে পুনঃ ধার্য করা যেতে পারে।
Sharable Link-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/২৮৭; আল মুহীতুল বুরহানী ১৮/১২৭; বাদায়েউস সানায়ে ৫/১১৯; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/৭৭
আমি ঢাকার এক মাদরাসায় জালালাইন জামাতে পড়াশুনা করি। আমার বড় ভাই বিয়ে করার পর আমাদের যৌথ সংসার থেকে পৃথক হয়ে গিয়েছে। সে একটি ইন্সুরেন্স কোম্পানীতে চাকুরি করে। এ চাকুরি ব্যতীত তার ইনকামের দ্বিতীয় কোনো ব্যবস্থা নেই। আমার পড়ালেখার খরচের জন্য মাঝে মধ্যে সে আমাকে টাকা-পয়সা দেয়। এখন আমার জানার বিষয় হল, তার এ দেওয়া টাকা-পয়সা গ্রহণ করা আমার জন্য জায়েয হবে কি না?
প্রচলিত ইন্সুরেন্সে সুদসহ আরো বেশ কিছু শরীয়ত পরিপন্থী বিষয় রয়েছে। এ ধরনের কোম্পানিতে চাকুরি করা না জায়েয এবং উপার্জিত অর্থ হারাম। সুতরাং প্রশ্নের বর্ণনা মতে যেহেতু আপনার ভাইয়ের উক্ত চাকুরি ব্যতীত উপার্জনের দ্বিতীয় কোনো পথ নেই। তাই তাঁর প্রদেয় টাকা গ্রহণ করা আপনার জন্য জায়েয হবে না।
Sharable Link-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৪২; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৪০০; আল মুহীতুল বুরহানী ৮/৭৩; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/৩৬০
ক. কনে ও বর পক্ষের সম্মতিক্রমে স্ত্রীর দেনমোহর দুই লক্ষ টাকা ধার্য করা হয়েছিল। তা থেকে এক লক্ষ টাকা বিবাহের সময় আদায় করা হয়েছে। আদায়কৃত এক লক্ষ টাকার মধ্যে মেয়ের হাতের সোনার বালা ও গলার হারসহ মোট সাড়ে চার ভরি স্বর্ণালংকার অন্তর্ভুক্ত ছিল। স্ত্রীকে দেনমোহর হিসাবে প্রদত্ত উক্ত হাতের বালা ও গলার হার বর্তমানে ছেলের মায়ের নিকট রয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, দেনমোহরের বাকি এক লক্ষ টাকা এবং মেয়ের হাতের বালা ও গলার হার মেয়ে পাবে কি না?
খ. কন্যা সন্তানের ভরণ-পোষণ
বিবাহের পর ১৪-৯-০৭ ইং তারিখে একটি কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করে। জন্মের পর থেকে এ পর্যন্ত সন্তানের যাবতীয় খরচ স্ত্রী পক্ষ বহন করে আসছে। সন্তানের পিতা দুই ঈদে কিছু কাপড়-চোপড় দেওয়া ছাড়া সন্তানের ভরণ-পোষণ বাবদ কোনো খরচ দেয়নি। প্রশ্ন হচ্ছে, এ সন্তানের ভরণ-পোষণ তার পিতাকে দিতে হবে কি না? দিতে হলে কী পরিমাণ, কত দিন পর্যন্ত দিতে হবে, বিগত দিনগুলোর অনাদায়ী খরচ তাকে আদায় করতে হবে কি না? তাছাড়া মা নিজে সন্তানের লালন-পালন বাবদ পিতা থেকে কোনো বেতন ভাতা পায় কি না?
গ. বিয়ের সময় প্রদত্ত বিভিন্ন জিনিসপত্র
বিবাহের সময় কনের পিতা মেয়েকে জাজিম, লেপ ও বালিশসহ একটি খাট দিয়ে ছিল যা ছেলের বাড়িতে আছে। তা ছাড়া আত্মীয়-স্বজনদের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন উপহার দেওয়া হয়েছিল। এ সকল উপহার সামগ্রী বর পক্ষ রেখে দিয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এ সকল আসবাবপত্র মেয়ে পাবে কি না?
ক. দেনমোহর স্ত্রীর প্রাপ্য অধিকার। এ ঋণ আদায় করা স্বামীর কর্তব্য। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে দেনমোহরের বাকি এক লক্ষ টাকা এবং প্রদেয় স্বর্ণালংকার যা ছেলের মার নিকটে আছে তা দ্রুত স্ত্রীকে দিয়ে দিতে হবে।
খ. কন্যা সন্তানের বিবাহ পর্যন্ত যাবতীয় ভরণ-পোষণ পিতার সামর্থ অনুযায়ী দেওয়া কর্তব্য। বিগত যে দিনগুলোতে পিতা কন্যার খরচ দেয়নি এ সময় মা যদি নিজ সম্পদ থেকে খরচ করে থাকে তবে তা পিতার জন্য আদায় করা জরুরী নয়। কিন্তু যদি স্ত্রী কারো থেকে ঋণ নিয়ে খরচ করে থাকে তবে সে ঋণ পরিশোধ করা পিতার উপর জরুরী।
উল্লেখ্য যে, মা তার মেয়েকে লালন-পালন বাবদ (স্ত্রী থাকাকালীন) পিতা থেকে কোনো বেতন ভাতা দাবি করতে পারবে না। কারণ তখন মেয়েকে লালন-পালন করা মাতার নৈতিক দায়িত্ব। আর স্বামী স্ত্রীকে তালাক দিলে ইদ্দত শেষ হওয়ার পর থেকে মা মেয়ের লালন-পালনের জন্য পারিশ্রমিক দাবি করলে পিতার সামর্থ অনুযায়ী যুক্তিসঙ্গতভাবে তা আদায় করতে হবে।
গ. নিম্নে বর্ণিত জিনিসগুলো স্ত্রীর বলে ধর্তব্য হবে :
১. স্বামী বিয়ের সময় যে সকল সাজানী দিয়েছে এবং পরবর্তীতে স্ত্রীকে যা কাপড় ইত্যাদি দিয়েছে সেগুলোর মালিক স্ত্রী।
২. বিয়ে ও তৎপরবর্তী সময় স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে যা দেওয়া হয়েছে তার মালিকও স্ত্রী।
৩. আর যে সকল জিনিস পুরুষ-মহিলা উভয়ের ব্যবহারের উপযোগী কিংবা সংসারের ব্যবহৃত যৌথ আববাবপত্র, এগুলোর মধ্যে যা মেয়ে পক্ষ দিয়েছে তা মেয়ের। আর ছেলেপক্ষ যা দিয়েছে তা ছেলের। যেমন : প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মেয়ের পিতা যে খাট, জাজিম, বিছানাপত্র দিয়েছে এর মালিক মেয়েই।
Sharable Link-সূরা নিসা ৪, ৪০; আল ইনায়াহ ৩/২০৪; ফাতহুল কাদীর ৩/২৪৮; রদ্দুল মুহতার ৩/৫৭২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৪৩, ৫৬৩, খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৪০০
মাসবুক ব্যক্তি যখন তার ছুটে যাওয়া রাকাত আদায় করার জন্য দাঁড়াবে তখন কি তাকে ছানা পড়তে হবে? যদি নামায শুরু করার সময় ছানা পড়ে থাকে তবেও কি পরবর্তীতে পড়তে হবে?
হাঁ, মাসবুকের জন্য সর্বাবস্থায় ছুটে যাওয়া রাকাত আদায়ের শুরুতে ছানা পড়া মুস্তাহাব। নামায শুরুর সময় যদি ছানা পড়ে থাকে তবুও পরবর্তীতে ছানা পড়া মুস্তাহাব।
Sharable Link-শরহুল মুনিয়্যা ৩০৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৫৫৮; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৯৬
আমেরিকা প্রবাসী এক মুসলমান ব্যক্তি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। দেশে আনার পর তার লাশ অক্ষত ছিল। কিন্তু জানাযা না পড়েই তাকে দাফন করা হয়। প্রশ্ন হল, দাফনের পর কবরে রেখেই তার জানাযা পড়া যাবে কি না?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে কবরস্থ লাশটি পঁচে গলে যায়নি বলে প্রবল ধারণা হলে কবরটিকে সামনে রেখে জানাযা পড়ে নিবে। আর লাশটি পঁচে গেছে বলে প্রবল ধারণা হলে তার জানাযা পড়া যাবে না।
Sharable Link-সহীহ বুখারী ১/১৭৮; আল মাবসূত; সারাখসী ২/২৯; শরহুল মুনিয়্যা ৫৮৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২২৪; আল-মুহীতুল বুরহানী ৩/৯৬; আল-বাহরুর রায়েক ২/১৮২
আমাদের মসজিদে মাইক নেই। তাই জুমআর দিন যারা বারান্দায় থাকে তারা ইমাম সাহেবের খুতবা শুনতে পায় না। এক্ষেত্রে যদি তারা যিকির, তেলাওয়াত, তাসবীহ ইত্যাদি পড়ে তাহলে এতে কোনো সমস্যা আছে?
খুতবা শোনা যাক বা না যাক উভয় অবস্থায় খুতবা চলাকালীন সমবেত মুসল্লীদের চুপ থাকা ওয়াজিব। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে খুতবা শুনা না গেলেও সকল প্রকার কথাবার্তা এমনকি যিকির, তেলাওয়াত, তাসবীহ তাহলীল ইত্যাদি পড়া থেকেও বিরত থাকতে হবে।
Sharable Link-ফাতহুল কাদীর ২/২৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৪৭; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৮১; রদ্দুল মুহতার ২/১৫৯