আমার চক্ষু অপারেশনের কারণে ইশারা করে নামায পড়ি। এই অবস্থায় আমি কি দাঁড়িয়ে নামায আদায় করব না বসে আদায় করব?
আমার চক্ষু অপারেশনের কারণে ইশারা করে নামায পড়ি। এই অবস্থায় আমি কি দাঁড়িয়ে নামায আদায় করব না বসে আদায় করব?
স্বাভাবিকভাবে আদায়ে অক্ষম বা মাজু ব্যক্তির জন্য দাঁড়িয়ে ইশারায় নামায পড়ার চেয়ে বসে ইশারা করে নামায পড়া উত্তম।
Sharable Link-ফাতহুল কাদীর ২/৭; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৭১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৯৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/২০২
আমার চক্ষু অপারেশনের কারণে অযু করার সময় চোখের নিচের অংশ পানি দ্বারা ধৌত করি এবং উপরের অংশ মাসেহ করি এবং অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যথানিয়মে ধৌত করে নামায পড়ি।
এ প্রসঙ্গে জনৈক আলেমের নিকট শুনেছি, এই মাসেহ এবং ধৌত করা অযুর চেয়ে তায়াম্মুম করাই ভালো। এ ক্ষেত্রে আমি জানতে চাই যে, কোনটি সঠিক।
এ পরিস্থিতিতে আপনার চোখের যেখানে পানি পৌঁছানো নিষিদ্ধ সেস্থানে মাসেহ করে বাকি অংশ এবং অন্যান্য অঙ্গ ধৌত করে অযু করাই নিয়ম। এভাবে অযু না করে তায়াম্মুম করলে পবিত্রতা অর্জিত হবে না। তাই ‘এভাবে অযু না করে তায়াম্মুম করা উত্তম’ এ কথা ঠিক নয়।
Sharable Link-তবারানী, কাবীর ৮/১৩১; মাজমাউয যাওয়াইদ ১/৫৯৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/২৮৪; আলমুহীতুল বুরহানী ১/৩৬০; ফাতহুল কাদীর ১/১৪০; শরহুন নুকায়া ১/৭৫; তুহফাতুল ফুকাহা ১/৯০; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ১/১৫
আমাদের মসজিদের ছাদের উপর মোবাইল কোম্পানি একটি টাওয়ার বসাতে চায়। মসজিদ নির্মাণের সময় আমাদের এমন কোনো পরিকল্পনা ছিল না। বর্তমানে ভাড়ার বিনিময়ে এটা বসানো জায়েয হবে কি না এবং এর অর্থ মসজিদের কাজে লাগানো যাবে কি না?
মসজিদ আল্লাহর ঘর। আল্লাহ তাআলার ঘরের যথাযথ সম্মান দেওয়া ঈমানের দাবি। তাই মসজিদের দেয়াল, ছাদ বা অন্য কোনো অংশ ভাড়া দেওয়া নাজায়েয। এতে আল্লাহ তাআলার ঘরের অসম্মানী হয়। সুতরাং মসজিদের ছাদে মোবাইল কোম্পানির টাওয়ারের জন্য অনুমতি দেওয়া বা ভাড়া দেওয়া জায়েয হবে না। কর্তৃপক্ষের জন্য এ ধরনের চুক্তি থেকে বিরত থাকা জরুরি। মুসল্লিগণও এ ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখবে যেন মসজিদের মান ক্ষুণ্ন হওয়ার মতো কোনো কাজ না হয়।
Sharable Link-ফাতাওয়া খানিয়া ৩/২৯৩; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/২৮২; আলবাহরুর রায়েক ৫/২৫১; রদ্দুল মুহতার ৪/৩৫৮; আলমুহীতুল বুরহানী ৯/১২৭
বয়স্কদের জামাতে কাতারের ফাঁকে ছোট ৮/১০ বছরের বাচ্চারা দাঁড়ালে বড়দের নামাযের কোনো ক্ষতি হবে কি না? যদি ক্ষতি হয় তবে বাচ্চারা কোথায় দাঁড়াবে? বিশেষ করে যখন বড় কোনো মাহফিলের জামাতে বাচ্চাদেরকে অভিভাকের সঙ্গেই দাঁড়ানোর প্রয়োজন দেখা দেয়, তখনই বা কী করবে?
নামাযের জ্ঞান রাখে এমন নাবালেগ ছেলেকে বড়দের সাথে দাঁড় করানো মাকরূহ নয়। এতে বড়দের নামাযের কোনো ক্ষতি হবে না; বরং কোনো কোনো ফকীহ বলেছেন, ছোট বাচ্চারা বড়দের কাতারের পিছনে দাঁড়ালে যদি তাদের দুষ্টুমি করার আশঙ্কা থাকে, সেক্ষেত্রে তাদেরকে বড়দের সাথে কিংবা বড়দের ফাঁকে ফাঁকে দাঁড় করানোই শ্রেয়। তবে সাধারণ নিয়ম হল, বাচ্চাদেরকে পিছনের কাতারে দাঁড় করানো ভালো।
উল্লেখ্য, নামাযের জ্ঞান নেই বা অন্যের নামাযে বিঘœ ঘটানোর আশঙ্কা রয়েছে এমন নাবালেগ বাচ্চাকে মসজিদে না আনাই উচিত।
Sharable Link-সহীহ মুসলিম ১/১৮১; জামে তিরমিযী ১/৫৩; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৫৩; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৯২; ইলাউস সুনান ১/২৬৪; তুহফাতুল মুহতাজ ৩/১০৬-১০৭
অনেক সময় কোনো কোনো কোম্পানির মোবাইল কার্ড অধিক মূল্যে ক্রয় করতে হয়। যেমন ৫০ টাকার কার্ড ৫৪/৫৫ টাকায়। আমি দিচ্ছি ৫৫ টাকা আর পাচ্ছি ৫০ টাকা। প্রশ্ন হল, এই বাড়তি দেওয়াটা সুদ হিসেবে গণ্য হবে কি না?
৫০ টাকার মোবাইল কার্ড ৫৪/৫৫ টাকায় ক্রয়-বিক্রয় করলে এত সুদ হয় না। কারণ এটি একটি পণ্য। ৫০ টাকার কার্ডটি মূলত টাকা নয়; বরং ৫০ টাকা মূল্যমানের টেলিযোগাযোগ সেবা। তাই এ সেবা কেউ ৫০ টাকা দিয়ে ক্রয় করে অন্যের নিকট অধিক মূল্যে বিক্রি করলে এটা সুদ হবে না। অবশ্য যথাযথ কারণ ছাড়া কোম্পানি কর্তৃক নির্ধারিত খুচরা মূল্যের চেয়ে অধিক দামে বিক্রি ক রা অন্যায়।
Sharable Link-তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম ১/৪০০; ফাতহুল কাদীর ৬/১৫৯
এক ব্যক্তি বিয়ের কয়েকদিন পর বিদেশে চলে যায়। বিদেশ থেকে খবর পায়, নয় মাসের মাথায় তার স্ত্রীর সন্তান হয়েছে। এখন ওই ব্যক্তি ভীষণ সন্দেহ করছে যে, ওই সন্তান কি তার নাকি হারাম সন্তান? একে কি সে তার ঔরসজাত সন্তান হিসেবে পরিচয় দিতে পারবে? স্ত্রী যদি কারও সাথে গোপনে খেয়ানত করে থাকে তবুও কি এই সন্তান স্বামীরাই গণ্য হবে? আশা করি সঠিক সমাধান জানাবেন।
এ নবজাতক ওই মহিলার প্রবাসী স্বামীর ঔরসজাত সন্তান। কেননা এ মহিলা তারই স্ত্রী এবং সন্তানও হয়েছে ৬ মাস অতিক্রমের পর। আর শরীয়তে এ ধরনের সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। তাই এসব অমূলক সন্দেহ পরিত্যাগ করা জরুরি।
Sharable Link-সহীহ বুখারী ১/২৭৬, হাদীস : ২০৫৩, ২২১৮; সহীহ মুসলিম ১/৪৭০, হাদীস : ১৪৫৭/৩৬; রদ্দুল মুহতার ৩/৫৪০; বাদায়েউস সানায়ে ৫/৩৬৩
আমরা বাসা-বাড়িতে প্রতিদিন কুরআন তিলাওয়াত করি। সাধারণত ফজরের পর তিলাওয়াত করা হয়। এ সময় ঘরের সদস্যদের কেউ অন্য কাজে ব্যস্ত থাকে। কেউবা যিকির-আযকার করে কেউ ঘুমায়। তিলাওয়াত কিছুটা উঁচু আওয়াজে পড়লেই ভালো লাগে। এখন জানতে চাই, সিজদার আয়াত এলে তখন কি আমার জন্য আস্তে পড়া জরুরি? যেন ঘরের অন্য কেউ না শোনে। আমি এমনটি করি, কিন্তু মনে খটকা লাগে যে, সিজদা করতে কষ্ট কিসের? জোরেই পড়া উচিত। যেন সকলে শুনতে পায় এবং সিজদা আদায় করে। কোনটি সঠিক?
উপস্থিত লোকজন যদি অন্য কোনো কাজে ব্যস্ত না থাকে; বরং অযুসহ সিজদা আদায়ের পরিবেশ থাকে তবে এক্ষেত্রে তিলাওয়াতকারী উচ্চ আওয়াজে সিজদার আয়াত পড়তে পারে। কিন্তু যদি উপস্থিত লোকজন অন্য কাজে লিপ্ত থাকে কিংবা সিজদা আদায়ের জন্য প্রস্তুত না থাকে, ফলে এ সময় সিজদার আয়াত জোরে পড়লে তাদের কষ্ট হবে কিংবা পরবর্তীতে আদায় করতে ভুল যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে এসব ক্ষেত্রে সিজদার আয়াত আস্তে পড়াই শ্রেয়। কেননা, এ ধরনের পরিস্থিতিতে জোরে পড়লে তাদেরকে কষ্টে ফেলা হবে কিংবা অবহেলা বা ব্যস্ততার দরুণ সিজদা আদায় না করার গুনাহে পতিত করা হবে।
Sharable Link-মাজমাউল আনহুর ১/২৩৮; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৫০; ইনায়া ১/৪৭৮; আননাহরুল ফায়েক ১/৩৪৩; ফাতাওয়া সিরাজিয়া ১৪
শুনেছি পিছনের কাতারে একা দাঁড়ানো মাকরূহ। এটা কোন ধরনের মাকরূহ? সামনের কাতারে যদি জায়গা না থাকে আর পিছনের কাতারে দাঁড়ানোর মতো অন্য কেউ না থাকে এ ক্ষেত্রেও কি একা দাঁড়ানো যাবে না? সামনের কাতার থেকে কাউকে পিছনের কাতারে নিয়ে আসা কি জরুরি?
সামনের কাতারে দাঁড়ানোর জায়গা থাকা অবস্থায় পিছনের কাতারে একা দাঁড়ানো মাকরূহে তাহরীমী। আর সামনের কাতারে জায়গা না থাকলে এবং সামনের কাতার থেকে টেনে পিছনের কাতারে নিয়ে আসার মতো লোকও না পাওয়া গেলে পিছনের কাতারে একা দাঁড়ানো মাকরূহ নয়; বরং এ ক্ষেত্রে পিছনের কাতারে ইমামের বরাবর একা দাঁড়ানোই নিয়ম।
উল্লেখ্য সামনের কাতারে জায়গা না থাকলে এবং পিছনের কাতারে দাঁড়ানোর অন্য কাউকে না পেলে তখন সামনের কাতার থেকে কোনো মুসল্লীকে টেনে পিছনের কাতারে নেওয়া যাবে। তবে শর্ত হল, এমন লোককে নেওয়া যাবে যিনি এ সর্ম্পকিত মাসআলা জানেন এবং এতে বিব্রত হবেন না। সুতরাং এ ধরনের লোক পাওয়া না গেলে সামনের কাতার থেকে কাউকে টানা যাবে না।
Sharable Link-সহীহ বুখারী ২/২২২; আলমুহীতুল বুরহানী ১/৫১২; ফাতহুল কাদীর ১/৩০৯; তাতারখানিয়া ১/৫৬৯; ইলাউস সুনান ৪/৩৩৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৫৭
কোনো ব্যক্তি তার এক সন্তানকে কিছু জমি এই শর্তে দান করেছে যে, পিতা জীবিত অবস্থায় সে তাতে কোনো হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। মৃত্যুর পর সে তার মালিকানা লাভ করবে। পরবর্তীতে যাকে দান করা হয়েছিল সে উক্ত সম্পত্তি চাষাবাদ করে এবং কিছুদিন পর ইন্তেকাল করে। আমার জানার বিষয় হল, এ ধরনের শর্ত করে দান করা সহীহ কি না? শরীয়তের দৃষ্টিতে সম্পত্তির বর্তমান মালিক কে?
দান কার্যকর হওয়ার জন্য দুটি জরুরি শর্ত রয়েছে। যথা:
১. দাতা দানকৃত বস্তুর মালিক হওয়া। ২. যাকে দান করবে তাকে বুঝিয়ে দেওয়া। এ দুটি শর্তের কোনো একটি না পাওয়া গেলে দান কার্যকর হবে না। সুতরাং “দাতার মৃত্যুর পর মালিক হবে” এ প্রক্রিয়ায় দান সহীহ নয়। কারণ, একে তো মৃত্যুর পর ওই বস্তুর মালিক দাতা থাকে না; বরং মৃত্যুর সাথে সাথে ওয়ারিশরাই তার মালিক হয়ে যায়। দ্বিতীয়ত এ পদ্ধতিতে দান করলে যেমনিভাবে প্রথম শর্তটি পাওয়া যায় না তেমনিভাবে দখল বুঝিয়ে দেওয়ার শর্তও পাওয়া যায় না। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ওই সম্পত্তির মালিক ওই সন্তান নয়; বরং পিতা কিংবা তিনি জীবিত না থাকলে তার সকল ওয়ারিশই তার মালিক।
প্রকাশ থাকে যে, প্রশ্নোক্ত শর্তের ভিত্তিতে দানকৃত জমি ওই সন্তান চাষাবাদ করলেও এতে তার মালিকানা প্রমাণিত হবে না, যতক্ষণ না তার পিতার জীবদ্দশায় সন্তানের নামে জমির মালিকানা ও দখল হস্তান্তরের যথাযথ প্রমাণ ও দলিলপত্র পাওয়া না যাবে।
Sharable Link-আদ্দুররুল মুখতার ৫/৬৮৮-৩৯২; আলবাহরুর রায়েক ৭/২৮৫; বাদায়েউস সানায়ে ৫/১৭৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩৭৪
রুটি বানানোর পর কখনো হাত পরিপূর্ণ পরিষ্কার করার পরও নখের ফাঁকে আটা লেগে থাকে। এছাড়া মাটির কাজ করলেও নখে মাটি লেগে থাকে। এমনিভাবে নখ কিছুটা বড় হলেই তাতে ময়লা জমে থাকে। আর অজু-গোসলে তো সকল অঙ্গে পানি প্রবাহিত করা শর্ত। কিন্তু নখের ভিতর ময়লা জমে থাকলে ওই স্থানে পানি প্রবাহিত করার শর্ত পাওয়া যায় না। এমতাবস্থায় অজু-গোসল সহীহ হবে কি না?
অজু-গোসলের সময় নখের ভিতর লেগে থাকা আটা বা ময়লা ভিজে তার নিচে পানি পৌঁছালেই অজু-গোসল হয়ে যাবে। পানি প্রবাহিত হওয়া জরুরি নয়।
Sharable Link-তাতারখানিয়া ১/৯০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২২; আলবাহরুর রায়েক ১/৪৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৪; আদ্দুররুল মুখতার ১/১৫৪; শরহুল মুনইয়াহ ৪৯
নাভির নিচের চুল ও বগলের চুল কাটার মেয়াদ কী? কতদিনের মধ্যে তা কাটতে হবে? এ ব্যাপারে একটি কথা শুনেছি যে, ৪০ দিনের বেশি হলে নামায হবে না, এটি কতটুকু সত্য জানিয়ে বাধিত করবেন।
নাভির নিচের চুল ও বগলের চুল প্রতি সপ্তাহেই পরিষ্কার করা উচিত এবং এ কাজটি শুক্রবার জুমার আগে করাই ভালো। অবশ্য প্রতি ১৫ দিনেও করা যেতে পারে। তবে ৪০ দিনের মধ্যে অবশ্যই করতে হবে। কেননা ৪০ দিন থেকে বিলম্ব করা মাকরূহে তাহরীমী। -ফাতাওয়া শামী ৬/৪০৬; ফাতাওয়া রহীমিয়া ৩/২০৩-২০৪, ২/২৩৯
হযরত আনাস রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নখ ও গোঁফ কাটা এবং বগলের চুল উপড়ানোর ব্যাপারে আমাদের মেয়াদ নির্ধারণ করে দিয়েছেন যে, আমরা যেন সেগুলো ৪০ রাতের অধিক আপন অবস্থায় (না কেটে অক্ষত) ছেড়ে না রাখি।” -সহীহ মুসলিম ১/১৯৭, হাদীস ২৫৮; সুনানে নাসায়ী ১/৪, হাদীস ১৪;
তবে ৪০ দিনের বেশি হয়ে গেলে নামায হবে না কথাটা ঠিক নয়।
Sharable Link