আমান উল্লাহ - রাজশাহী

৬৪০৯. Question

হুজুর, আমার কয়েকটা ছাগল আছে। এগুলোর দুধ বিক্রি করেই আমি সংসারের খরচ জোগাড় করি। দুধ দোহনের সময় কখনো কখনো সেগুলো মল ত্যাগ করে। অনেক সতর্কতা সত্ত্বেও দেখা যায়, হঠাৎ এক-দুইটা বিষ্ঠা দুধের বালতিতে পড়ে যায়। আমি সঙ্গে সঙ্গেই তা উঠিয়ে ফেলে দেই। তো এক্ষেত্রে কি আমার জন্য সেই দুধ বিক্রি করা বৈধ হবে?

 

Answer

দুধ দোহনকালে অল্প বিষ্ঠা বালতিতে পড়ামাত্র যদি বিলম্ব না করে তৎক্ষণাৎ উঠিয়ে ফেলা হয়, তাহলে সে দুধ নাপাক গণ্য হবে না; বরং তা পবিত্র গণ্য হবে। তা পান করা কিংবা বিক্রি করা জায়েয আছে। কিন্তু যদি দুধে বিষ্ঠা বেশি পরিমাণে পড়ে, কিংবা অল্প পরিমাণে পড়ার পর তৎক্ষণাৎ না ওঠানো হয়, বরং বিলম্বে ওঠানো হয়, যার ফলে বিষ্ঠার রঙ দুধে প্রকাশ পায়, অথবা তা ফেটে যায়, তাহলে সে দুধ নাপাক গণ্য হবে। এক্ষেত্রে তা পান করা বা বিক্রি করা কোনোটাই জায়েয হবে না।

-আলফাতাওয়া মিন আকাবীলিল মাশায়েখ, পৃ. ১৭; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৭; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ১৬১; আদ্দুররুল মুখতার ১/২২১

Sharable Link

হাম্মাদ - বরিশাল

৬৪১০. Question

আমাদের এলাকায় প্রচলন আছে, কুরবানী করার পর কেউ কেউ তাড়াতাড়ি রান্না করার জন্য কিছু গোশত কেটে আগেই ভাগ করে নেয়। রান্নার আগে এই গোশত কেউ কেউ ধুয়ে নেয় না। কারণ তাতে কোনো ময়লা থাকে না। তবে গোশতের সাথে হালকা কিছু রক্ত থাকে।

এখন আমার জানার বিষয় হল, গোশতে থেকে যাওয়া রক্তসহ এভাবে গোশত রান্না করা কি জায়েয?

 

Answer

পশু জবাই করার পর গোশতে যে রক্ত থাকে তা অপবিত্র নয়। কারণ তা প্রবাহিত রক্তের অন্তর্ভুক্ত নয়। এ রক্তসহ গোশত রান্না করা এবং তা খাওয়া জায়েয আছে।

কাতাদা রাহ. أَوْ دَمًا مَسْفُوحًا আয়াতাংশের তাফসীরে বলেন-

حرم الدم ما كان مسفوحا، وأما لحم خالطه دم، فلا بأس به.

কুরআনে প্রবাহিত রক্তকে হারাম করা হয়েছে। তবে গোশতে যে রক্ত থাকে তাতে কোনো অসুবিধা নেই।

-তাফসীরে তবারী, বর্ণনা ১৪০৯০, আহকামুল কুরআন, জাসসাস ১/১২৩; উয়ূনুল মাসায়িল, পৃ. ২০; শরহু মুখতাসিরল কারখী, কুদূরী ১/১৮১; বাদায়েউস সানায়ে ১/১৯৬; রদ্দুল মুহতার ১/৩১৯

Sharable Link

তাসলীম - বেগমগঞ্জ, নোয়াখালী

৬৪১১. Question

হুজুরের কাছে একটা মাসআলা জানতে চাই। নামাযের সময় ঋতুমতী মহিলা কী করবে? কারো থেকে শুনি, ওযু করে নামাযের স্থানে বসে তাসবীহ তাহলীল করবে। এ কথার উপর আমল করা কি জরুরি?

Answer

হায়েয চলাকালে মহিলাদের নামায পড়া নিষেধ এবং এর পরিবর্তে কোনো কিছু করা তার উপর জরুরি নয়। তবে কোনো কোনো ফকীহ বলেছেন, নামাযের অভ্যাস ধরে রাখার জন্য ঋতুমতী নারী নামাযের ওয়াক্তে ওযু করে মুসল্লায় বসে যিকির-আযকার ও তাসবীহ তাহলীল পাঠ করবে। এটা উত্তম।

-মুসান্নাফে আব্দুর রায্যাক, বর্ণনা ১২২২; আলফাতাওয়া মিন আকাবীলিল মাশায়িখ, পৃ. ৪৮; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ১/৫৭; আলবাহরুর রায়েক ১/১৯৩

Sharable Link

শাকের - রাজশাহী

৬৪১২. Question

আমি গতকাল এশার নামাযে ইমাম সাহেব সাহু সিজদা দেওয়ার পর শরীক হয়েছি। নামায শেষ করার পর আমার সন্দেহ হয় যে, ইমাম সাহেব সাহু সিজদা করার পর আমার ইক্তেদা করা সহীহ হল কি না? দয়া করে বিষয়টি জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

আপনার উক্ত নামায আদায় হয়েছে। কেননা সাহু সিজদার পরও ইমামের ইক্তেদা করা সহীহ আছে।

-আলমাবসূত, সারাখসী ২/১১২; তুহফাতুল ফুকাহা ১/২১৬; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪২৩; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৪৭৮ ​​​​​​​

Sharable Link

সালেহ - ঢাকা

৬৪১৩. Question

আমি আমাদের গ্রামের মসজিদে খতম তারাবী পড়াই। কয়েকদিন আগে তারাবী নামাযে দুই রাকাতের পর বৈঠক না করে ভুলে দাঁড়িয়ে যাই এবং একসঙ্গে চার রাকাত পড়ে সাহু সিজদা করে সালাম ফেরাই। আমার ধারণা ছিল, সাহু সেজদা করার কারণে নামায সহীহ হয়ে গেছে। কিন্তু একজন বললেন, তারাবী নামাযে প্রত্যেক দুই রাকাতের পর বৈঠক করা ফরয। আপনি যেহেতু ফরয তরক করেছেন, তাই সাহু সিজদা করলেও নামায সহীহ হয়নি। সুতরাং আগামীকাল তারাবী নামায শুরু হওয়ার আগে এই চার রাকাত নামায পুনরায় পড়িয়ে দেবেন। আমি ইমাম সাহেবের নির্দেশ অনুযায়ী ঐ চার রাকাত নামায পরদিন রাতে তারাবীর নামায শুরু হওয়ার আগে ছোট ছোট সূরা দিয়ে পড়িয়ে দেই।

মুহতারামের নিকট জানার বিষয় হল, বাস্তবেই কি তারাবী নামাযে দুই রাকাতের পর ভুলে বৈঠক না করে একসঙ্গে চার রাকাত পড়ে নিলে (শেষে সাহু সিজদা করলেও) পুরো নামায ফাসেদ হয়ে যায়, নাকি এক্ষেত্রে সাহু সিজদা করাই যথেষ্ট?

আশা করি সঠিক উত্তর জানাবেন।

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনাদের উক্ত চার রাকাত তারাবীর পুরোটাই ফাসেদ হয়ে যায়নি; বরং কেবল প্রথম দুই রাকাত সহীহ হয়নি। তবে শেষ দুই রাকাত আদায় হয়ে গেছে। সুতরাং যেহেতু প্রথম দুই রাকাত আদায় হয়নি, তাই এক্ষেত্রে আপনাদের করণীয় ছিল, ঐ দুই রাকাতে পঠিত কেরাতসহ ঐ রাতেই তা আদায় করে নেওয়া। তা না করে পরদিন রাতে তা আদায় করা সহীহ হয়নি। কেননা তারাবীর নামায পরে কাযা করা যায় না। সুতরাং ঐ দিন আপনাদের তারাবীর নামায ১৮ রাকাত আদায় হয়েছে। তবে তারাবীর খতম পূর্ণ করার জন্য ঐ দুই রাকাতের কেরাতগুলো পরবর্তী কোনো দিনের তারাবীতে পড়ে নেবেন।

-ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৩৯; আলমুহীতুল বুরহানী ২/২৫৭, ২৬৩; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৩৭৭, ৩৭৩; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী, পৃ. ২২৫

Sharable Link

বুরহান - সিলেট

৬৪১৪. Question

কখনো কখনো মাসবুক হলে ইমামের শেষ বৈঠকে তা স্মরণ থাকে না। ভুলে সালাম ফিরিয়ে ফেলি। প্রথম সালাম ফিরিয়ে নেওয়ার পর মাসবুক হওয়ার বিষয়টি মনে পড়ে। এক্ষেত্রে কি আমার নামায ভেঙে যাবে। আর যদি না ভাঙে, তাহলে কি সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে?

Answer

মাসবুক ভুলে ইমামের সঙ্গে সালাম ফেরালে নামায ভাঙে না। তবে এক্ষেত্রে মাসবুকের সালাম যদি ইমামের সালামের পর হয় (আর সাধারণত এমনটিই হয়ে থাকে) তাহলে তার ওপর সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে। সুতরাং এক্ষেত্রে নামায শেষে সাহু সিজদা করতে হবে। আর যদি মাসবুকের সালাম ইমামের সালামের সঙ্গেই হয়, তাহলে এক্ষেত্রে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে না।

-মুসান্নাফে আব্দুর রায্যাক, বর্ণনা ৩৫১১; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী, ইসবীজাবী ১/৩৫৮; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১০১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৭৪; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৯৯; রদ্দুল মুহতার ১/৫৯৯

Sharable Link

আবু যর - নোয়াখালী

৬৪১৫. Question

আমি মসজিদে যোহরের আগে সুন্নত আদায় করছিলাম। পাশে বসে একজন কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত করছিল। একপর্যায়ে সে সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করে, যা আমি নামাযরত অবস্থায় শুনতে পাই। এমতাবস্থায় আমার জন্য সিজদায়ে তিলাওয়াত আদায় করার বিধান কী?

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার ওপর সিজদায়ে তিলাওয়াত ওয়াজিব হয়েছে। তবে এই সিজদায়ে তিলাওয়াত আপনি নামায শেষ হওয়ার পর আদায় করবেন, নামাযের ভেতরে নয়।

-কিতাবুল আছল; ১/২৭৭; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৫৮; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫০২; আদ্দুররুল মুখতার ২/১১২

Sharable Link

তাহমীদ - বরিশাল

৬৪১৬. Question

গতকাল যোহরের নামাযে দ্বিতীয় রাকাতে প্রথম বৈঠকে তশাহহুদ পড়ছিলাম। ইমাম সাহেব আমার আগেই তাশাহহুদ শেষ করে দাঁড়িয়ে যান। এমতাবস্থায় আমি দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যাই- ইমামের সঙ্গে দাঁড়িয়ে যাব, নাকি তাশাহহুদ শেষ করে দাঁড়াব? পরে অবশ্য তাশাহহুদ শেষ করেই দাঁড়াই। হুজুরের কাছে জানার বিষয় হল, উল্লেখিত ছুরতে আমার করণীয় কী ছিল? তাশাহহুদ শেষ করে দাঁড়ানো কি ঠিক হয়েছে?

Answer

হাঁ, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে তাশাহহুদ শেষ করে দাঁড়ানোই ঠিক হয়েছে। কেননা তাশাহহুদ পড়া ওয়াজিব। মুক্তাদী তাশাহহুদ শেষ করার আগে ইমাম দাঁড়িয়ে গেলেও সে তাশাহহুদ পূর্ণ করেই দাঁড়াবে।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৫৯; ফাতাওয়া সিরাজিয়া, পৃ. ১৬; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৯৬; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ১/২২০

Sharable Link

ইরফান - যশোর

৬৪১৭. Question

গতকাল যোহর নামায পড়ার সময় জায়নামায থেকে একটু একটু দুর্গন্ধ অনুভব করি। নামায শেষে জানতে পারি। আমার ভাগিনা সকালে প্রস্রাব করেছিল। তখন জায়নামাযের সামনের এক কোণে প্রস্রাব লেগেছে। তা থেকেই দুর্গন্ধ আসছে। কিন্তু নামাযের সময় আমার কোনো অঙ্গ সে নাপাক অংশে লাগেনি। এখন জানার বিষয় হল, আমার উক্ত নামায কি সহীহ হয়েছে, নাকি তা আবার পড়তে হবে?

 

Answer

আপনি যেহেতু জায়নামাযের পবিত্র অংশে নামায আদায় করেছেন, অপবিত্র অংশে শরীরের কোনো অংশ লাগেনি, তাই আপনার উক্ত নামায আদায় হয়ে গেছে। পুনরায় তা পড়তে হবে না।

-আলফাতাওয়া মিন আকাবীলিল মাশায়েখ, পৃ. ৮৭; আততাজনীস ওয়াল মাযীদ ১/৩৯৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৭৫; রদ্দুল মুহতার ১/৪০৩

Sharable Link

আবদুর রহীম - নোয়াখালী

৬৪১৮. Question

আমাদের এলাকায় সাধারণত মৃতব্যক্তির গোসল আমি দেই। কোনো কোনো মায়্যেতের মোচ, নখ লম্বা ও অস্বাভাবিক থাকে। এখন আমার জানার বিষয় হল, গোসল দেওয়ার সময় এগুলো কেটে সুন্দর করে দেওয়া যাবে কি না?

Answer

মৃত ব্যক্তির মোচ, নখ ইত্যাদি লম্বা থাকলেও তা কাটা ঠিক নয়; বরং মাকরূহ। মোচ, নখ এবং অবাঞ্ছিত লোম অস্বাভাবিক লম্বা থাকলে পরিবারের লোকদের উচিত মৃত্যুর পূর্বেই তা কেটে দেওয়া। হাসান বসরী রাহ. ও ইবনে সিরীন রাহ. বলেন-

لَا يُجَزُّ لَهُ شَعْرٌ، وَلَا يُقَلَّمُ لَهُ ظُفْرٌ.

মৃতের চুল ও নখ কাটা যাবে না। (আসসুনানুল কুবরা, বাইহাকী ৩/৩৯০, বর্ণনা ৬৬৩৬)

আইয়ূব সাখতিয়ানী রাহ. বলেন-

عَنْ مُحَمَّدٍ ، أَنَّهُ كَانَ يَكْرَهُ أَنْ يُؤْخَذَ مِنْ عَانَةٍ، أَوْ ظُفْرٍ بَعْدَ الْمَوْتِ، وَكَانَ يَقُولُ: يَنْبَغِي لأَهْلِ الْمَرِيضِ أَنْ يَفْعَلُوا ذَلِكَ فِي ثِقَلِهِ.

মুহাম্মাদ ইবনে সিরীন রাহ. মৃতব্যক্তির নাভির নিচের পশম ও নখ ইত্যাদি কাটা অপছন্দ করতেন এবং তিনি বলতেন, তার পরিবারের উচিত (তার মৃত্যুর আগে) অসুস্থ অবস্থায়ই এগুলো কেটে দেওয়া। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১১০৫৪)

-আলমাবসূত, সারাখসী ২/৫৯; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৪৯; আলবাহরুর রায়েক ২/১৭৩; রদ্দুল মুহতার ২/১৯৮

Sharable Link

আবদুল কুদ্দুস - চন্দ্রগঞ্জ, লক্ষীপুর

৬৪১৯. Question

কয়েকদিন আগে গোসল ফরয থাকা অবস্থায় এক লোক মারা যান। তো এলাকার এক মুরুব্বির কথা  অনুযায়ী তাকে দুইবার গোসল দেওয়া হয়। হুজুরের কাছে জানতে চাই, গোসল ফরয থাকা অবস্থায় কেউ মারা গেলে কি তাকে দুইবার গোসল দেওয়া জরুরি?

Answer

গোসল ফরয থাকা অবস্থায় কেউ মারা গেলে তাকে দুইবার গোসল দেওয়ার নিয়ম নেই। বরং অন্যান্য  মৃত ব্যক্তিদের মত সুন্নাহসম্মত পন্থায় একবার গোসল দেওয়াই নিয়ম। আতা রাহ. বলেন-

إذَا مَاتَ الْجُنُبُ وَالْحَائِضُ يُصْنَعُ بِهِمَا مَا يُصْنَعُ بِغَيْرِهِمَا.

গোসল ফরয অবস্থায় কেউ মারা গেলে বা ঋতুমতী নারী মারা গেলে  (গোসলের ক্ষেত্রে) তাদের বিধান অন্যান্য মৃতের মতোই (অর্থাৎ তাদেরকে একবারই গোসল দিতে হবে)। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১১১২৬)

সুতরাং উক্ত মৃতকে দ্বিতীয়বার গোসল দেওয়া ঠিক হয়নি।

-আলআওসাত, ইবনুল মুনযির ৫/৩৬১; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫৬৬; মিনহাতুল খালিক ২/১৭১; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী, পৃ.  ৩১১আলমাজমূ শরহুল মুহাযযাব, নববী ৫/১২৩

Sharable Link

জোবায়ের হোসাইন - চাটখিল, নোয়াখালী

৬৪২০. Question

গত রমযানের একটি রোযা আমার যিম্মায় কাযা আছে। গত শুক্রবার রোযাটি কাযা করার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু শুক্রবার রাতে রোযা রাখার কথা আমার খেয়ালই ছিল না। পরে ঐ দিন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে কিছু খাওয়ার আগেই রোযা রাখার কথা স্মরণ হলে রোযার নিয়ত করে ফেলি।

মুহতারামের কাছে জানতে চাচ্ছি, আমার রোযাটি কি আদায় হয়েছে?

Answer

ঐ দিন আপনি যেহেতু সকাল হওয়ার পর নিয়ত করেছেন, তাই এই রোযাটি কাযা হিসেবে আদায় হয়নি; বরং তা নফল গণ্য হয়েছে। কেননা কাযা রোযার নিয়ত রাতেই, সুবহে সাদিক তথা ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার আগে করা জরুরি। সুবহে সাদিক হয়ে যাওয়ার পর কাযা রোযার নিয়ত করা সহীহ নয়। তাই ঐ কাযা রোযাটি আপনাকে পুনরায় রাখতে হবে।

-শরহু মুখতাসারিত তাহাবী, জাস্সাস ২/৪০১; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ১/৪৫৪; আযযাখিরাতুল বুরহানিয়া ৩/৪২; আলবাহরুর রায়েক ২/২৬২; রদ্দুল মুহতার ২/৩৮০

Sharable Link

মাশহুদ - সিলেট

৬৪২১. Question

আমি গত বছর রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করার মান্নত করেছিলাম। কিন্তু গত বছর বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে ইতিকাফ আদায় করতে পারিনি। এখন আমি চাচ্ছি, আগামী রমযানে উক্ত মান্নত ইতিকাফের কাযা করে নিতে। এভাবে কাযা করে নিলে আমার মান্নত ইতিকাফ কি আদায় হয়ে যাবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

না, মান্নতের উক্ত ইতিকাফ আগামী রমযানে কাযা করলে তাতে মান্নত আদায় হবে না। বরং মান্নতের ইতিকাফটি কাযা করার জন্য রমযান ছাড়া অন্য মাসে রোযাসহ দশ দিন ইতিকাফ করতে হবে। কেননা মান্নত ইতিকাফ কাযা হয়ে গেলে তা রমযানে আদায় করা যায় না। বরং রমযান ছাড়া অন্য মাসে রোযাসহ আদায় করতে হয়।

-কিতাবুল আছল ২/১৯৭; আলমুহীতুর রাযাবী ২/৬১; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২২৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১১

Sharable Link

হানীফ আহমাদ - ডেমরা, ঢাকা

৬৪২২. Question

একদিন আমার এক দরিদ্র বন্ধু আমার কাছে কিছু টাকা করয চায়। আমি তাকে যাকাতের নিয়তে উক্ত টাকা দিয়ে দেই। কিন্তু তার কাছে যাকাতের কথা প্রকাশ করিনি। আমার আচরণে সে করযই বুঝে নিয়েছে এবং ফেরত দেয়ার নির্ধারিত সময়ও বলে দিয়েছে। আমি হাঁ/না কিছুই বলিনি। কয়েক মাস পর সে তা ফেরত দিতে আসে। কিন্তু আমি তখন গ্রহণ না করে ফিরিয়ে দেই। এক্ষেত্রে উক্ত টাকা যাকাত হিসাবে ধর্তব্য হবে কি?

Answer

হাঁ, আপনি যেহেতু যাকাতের নিয়তে উক্ত টাকা তাকে দিয়েছেন, তাই এর দ্বারা আপনার যাকাত আদায় হয়ে গেছে। গ্রহীতা করযের কথা বলে নিলেও এতে অসুবিধা নেই। কেননা যাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে যাকাতদাতার নিয়তই হল মূল। গ্রহীতাকে তা জানানো জরুরি নয়।

-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/১৯৭; আলগায়া, সারুজী ৬/১৫৬; ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ৪/৮৬; আলবাহরুর রায়েক ২/২১২; রদ্দুল মুহতার ২/২৬৮

Sharable Link

হালীমা - নোয়াখালী

৬৪২৩. Question

আমি একটি মহিলা মাদরাসায় পড়াশোনা করি। সেখানে আমার এক বান্ধবী আর্থিক সংকটের কারণে লাগাতার দুই মাস মাদরাসার বেতন পরিশোধ করতে পারেনি। কর্তৃপক্ষ বেতন পরিশোধ করার জন্য তাগাদা দিলেও সে লজ্জার কারণে তার ওযরের কথা বলেনি। এ বিষয়ে একবার আমি তাকে চাপাচাপি করলে সে পুরো ব্যাপারটি আমাকে খুলে বলে। বিষয়টি আম্মুকে বললে আম্মু তার সম্মতি নিয়ে দুই মাসের বেতন পরিশোধ করে দেন। কিছুদিন আগে জেনেছি, আম্মু নাকি যাকাতের টাকা দিয়েই তার বকেয়া বেতন পরিশোধ করেছেন। এখন আমার প্রশ্ন হল, আমার বান্ধবী যদিও যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত, কিন্তু এভাবে বকেয়া বেতন পরিশোধের মাধ্যমে কি আমার আম্মুর যাকাত আদায় হয়েছে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

হাঁ, যাকাত আদায়ের নিয়তে তার সম্মতিতে তার বকেয়া বেতন পরিশোধের দ্বারা আপনার আম্মুর যাকাত আদায় হয়ে গেছে। কেননা যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত ব্যক্তির সম্মতিক্রমে যাকাতের টাকা দিয়ে তার দেনা পরিশোধ করে দেওয়া হলেও যাকাত আদায় হয়ে যায়। এক্ষেত্রে যাকাত থেকে তার দেনা পরিশোধ করা হচ্ছে- তাকে একথা জানানোও জরুরি নয়।

-ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৬৮; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/১২১; ফাতহুল কাদীর ২/২০৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯০; রদ্দুল মুহতার ২/৩৪৫;

Sharable Link

আদনান - উত্তরা

৬৪২৪. Question

আমাদের কোম্পানির এমডি স্যার অনেক সম্পদশালী। তিনি নিজে কয়েকবার হজ¦ করেছেন। কয়েক বছর যাবৎ তিনি কোম্পানিতে চাকরিরত যে কোনো একজনকে তার পক্ষ থেকে নফল বদলি হজে¦ পাঠান। আলহামদু লিল্লাহ, এবছর হজে¦ যাওয়ার জন্য আমার নাম প্রস্তাবে এসেছে। আমার ওপর হজ¦ ফরয নয়। কিন্তু আমার একটি খটকা আছে, আমি একটি মাসআলা শুনেছি, নিজে হজ¦ করতে একেবারে অক্ষম হয়ে গেলেই নাকি বদলি হজ¦ করানো যায়? আমাদের এমডি স্যার সুস্থ সবল মানুষ, তাঁর জন্য কি বদলি হজ¦ করানো জায়েয হবে; যদিও তা নফলই হোক না কেন? জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

ফরয হজ¦ নিজে করার সক্ষমতা থাকলে অন্যকে দিয়ে বদলি হজ¦ করানোর সুযোগ নেই। কিন্তু নফল হজে¦র হুকুম এর থেকে ভিন্ন। কেউ শারীরিকভাবে সক্ষম ও সামর্থ্যবান হলেও তার জন্য নিজের পক্ষ থেকে অন্য কাউকে নফল হজে¦ পাঠানো জায়েয আছে। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি তার পক্ষ থেকে নফল হজে¦ যেতে পারবেন। এতে কোনো অসুবিধা নেই।

-আলমাবসূত, সারাখসী ৪/১৫২; আয্যাখীরাতুল বুরহানিয়া ৩/১৪০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৬৪৮; আলবাহরুল আমীক ৪/২২৫৮; রদ্দুল মুহতার ২/৫৯৮

Sharable Link

আহমাদ - কুমিল্লা

৬৪২৫. Question

কিছুদিন আগে আমি উমরাহ আদায় করি। তাওয়াফ শেষে ক্লান্ত হয়ে পড়ি। আমি সুস্থ সবলই ছিলাম। হাঁটতে চলতে কোনো অসুবিধা ছিল না। কিন্তু ক্লান্তির কারণে তাওয়াফের পর সাঈ করার সময় হুইল চেয়ারে বসে সাঈ সম্পন্ন করি। দেশে আসার পর মসজিদের খতীব সাহেবের সঙ্গে উমরার গল্প করতে গিয়ে একথা বললে তিনি বলেন, আমার ওপর নাকি একারণে দম ওয়াজিব হয়েছে। হুজুরের কাছে জানতে চাচ্ছি, আসলেই কি আমার ওপর দম ওয়াজিব হয়েছে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

হাঁ, পায়ে হেঁটে সাঈ করতে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও হুইল চেয়ারে বসে সাঈ করার কারণে আপনার ওপর একটি দম ওয়াজিব হয়েছে। কেননা শরীয়তসম্মত ওজর ছাড়া সাঈ পায়ে হেঁটে করা ওয়াজিব। নিছক ক্লান্তির কারণে হুইল চেয়ারে সাঈ করার সুযোগ নেই। ক্লান্তির কারণে আপনি কিছুটা বিলম্বেও সাঈ করতে পারতেন। তাতে কোনো অসুবিধা ছিল না। এখন আপনার কর্তব্য হল, কারো মাধ্যমে হলেও হেরেমের এলাকায় দম হিসেবে কুরবানীর উপযুক্ত একটি ছাগল বা ভেড়া অথবা দুম্বা যবেহ করা।

-বাদায়েউস সানায়ে ২/৩১৯; আলবাহরুল আমীক ৩/১২৯০; আলমাসালিক ফিল মানাসিক ২/৭৫৯; রদ্দুল মুহতার ২/৫০০

Sharable Link

তানভীর হাসান - যশোর

৬৪২৬. Question

হুজুর, আমি দুই বছরের বাচ্চাকে নিয়ে উমরায় এসেছি। একবার তাকে কোলে নিয়ে তাওয়াফ করার সময় সে পেশাব করে  দেয়। ডায়াপার পরানো থাকার পরও আমার কাপড়ের বেশ কিছু অংশ ভিজে যায়। ঐ অবস্থায়ই আমি তাওয়াফ শেষ করি। জানার বিষয় হল, নাপাক কাপড়ে আমার এই তাওয়াফ কি আদায় হয়েছে? এবং এক্ষেত্রে কোনো জরিমানা আসবে কি?

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার তাওয়াফটি আদায় হয়েছে এবং এক্ষেত্রে কোনো জরিমানা দিতে হবে না। তবে তাওয়াফের সময় কাপড় পাক থাকা সুন্নত। তাই নাপাক কাপড়ে তাওয়াফ আদায় হয়ে গেলেও তা মাকরূহ। তাওয়াফে কাপড় পাক থাকার ব্যাপারে যত্নবান থাকতে হবে।

-শরহু মুখতাসারিত তাহাবী, জাস্সাস ২/৫৩০; বাদায়েউস সানায়ে ২/৩১০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৪৬; মানাসিক, মোল্লা আলী আলকারী, পৃ. ১৫১; রদ্দুল মুহতার ২/৫৫০

Sharable Link

আনিসুল হক - অলংকার, চট্টগ্রাম

৬৪২৭. Question

আমার ও আমার স্ত্রীর মাঝে পারিবারিক কিছু বিষয়ে ঝগড়া হয়েছিল। তখন আমি তাকে রাগের মাথায় বলেছিলাম, ‘আজ থেকে তোক তালাক দিয়ে দিলাম।প্রতি উত্তরে সে বলেছিল, ‘তালাক দিয়ে লাভ কী? কিছুদিন পর আবার তো ফিরিয়ে নেবেন।একথা শুনে আমার রাগ আরো বেড়ে যায় এবং তার কথার জবাবে বলে ফেলি, ‘আচ্ছা, ঠিক আছে তোকে আর ফিরিয়ে নেব না।তখন তার বাবা এসে তাকে বাপের বাড়ি নিয়ে যায়। তখন থেকে এ পর্যন্ত (প্রায় ২৫/২৬ দিন) তার সাথে আমার আর কোনো দেখা-সাক্ষাৎ হয়নি। অবশ্য প্রয়োজনে ফোনে এক-দুবার কথা হয়েছে। কিন্তু ইদানীং ফোন করে সে আমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছে এবং তার কৃতকর্মের ওপর অনুশোচনা প্রকাশ করছে। আমারও তার সাথে আবার সংসার করার ইচ্ছা আছে।

তাই জানতে চাচ্ছি, উক্ত অবস্থায় তার ওপর কয় তালাক এবং কোন্ ধরনের তালাক পতিত হয়েছে? পুনরায় সংসার করতে চাইলে কীভাবে কী করতে হবে? আশা করি সবিস্তারে জানাবেন।

Answer

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী স্ত্রীকে উদ্দেশ্যে করে আজ থেকে তোকে তালাক দিয়ে দিলামএকথা বলার দ্বারা তার ওপর এক তালাকে রজয়ী পতিত হয়েছে। অতঃপর তোকে আর ফিরিয়ে নেব না- এ কথা বলার দ্বারা কোনো কিছু হয়নি। সুতরাং ইদ্দতের মধ্যে তাকে স্ত্রী হিসেবে ফিরিয়ে নিলে আপনার দাম্পত্য সম্পর্ক পুনর্বহাল হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে নতুন করে বিবাহ দোহরাতে হবে না। আর ফিরিয়ে নেয়ার উত্তম পদ্ধতি হল, মৌখিকভাবে ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত ব্যক্ত করা। যেমন আমি তোমাকে স্ত্রী হিসেবে ফিরিয়ে নিলাম। কিন্তু মহিলাকে যদি ইদ্দতের ভেতর (অর্থাৎ স্ত্রী ঋতুমতী হলে তিনটি স্রাব অতিক্রান্ত হওয়া পর্যন্ত, অন্তঃসত্তা হলে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত) মৌখিকভাবে কিংবা একসাথে থাকার মাধ্যমে যদি ফিরিয়ে না নেওয়া হয়, তাহলে ইদ্দত শেষ হওয়ার পরে আপনাদের বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে পুনরায় ঘর-সংসার করতে চাইলে নতুন করে মহর ধার্য করে সাক্ষীদের উপস্থিতিতে যথানিয়মে আবার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে।

উল্লেখ্য, স্ত্রীকে ইদ্দতের ভেতর ফিরিয়ে নেওয়া হোক বা ইদ্দত শেষ হওয়ার পর পুনরায় বিবাহের মাধ্যমে তাকে গ্রহণ করা হোক, উভয় ক্ষেত্রেই আপনি ভবিষ্যতে আর মাত্র দুই তালাকের অধিকারী থাকবেন। তাই পরবর্তীতে কখনো তাকে শুধু দুই তালাক দিলেই বর্তমান তালাকটিসহ মোট তিন তালাক হয়ে আপনাদের বৈবাহিক সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে ছিন্ন হয়ে যাবে। এরপর পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ারও সুযোগ থাকবে না। তাই ভবিষ্যতে তালাক দেওয়ার ব্যাপারে সতর্কতা জরুরি।

-আততাজরীদ, কুদূরী ১০/৪৮৪৯; ফাতহুল কাদীর ৩/৩৮৮; বাদায়েউস সানায়ে ৩/২৮৩ ও ২৯৫; রদ্দুল মুহতার ৩/২৭৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৪৬৮

Sharable Link

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক - নাসিরাবাদ, চট্টগ্রাম

৬৪২৮. Question

এলাকার এক মেয়ের সাথে আমার দীর্ঘদিন সম্পর্ক ছিল। প্রায়ই ফোনে তার সাথে কথাবার্তা হত। নিয়ত ছিল তাকে বিয়ে করব। তাই এ ব্যাপারে তাকে আশ্বস্ত করার জন্য একদিন বলেছিলাম, ‘আমি তোকে ছাড়া যদি অন্য কাউকে বিয়ে করি, তাহলে সে তিন তালাক।কিন্তু গত সপ্তাহে তার বাবা-মা তাকে অন্যত্র বিয়ে দিয়ে দেয়। এখন তার সাথে আমার সম্পর্কও বিচ্ছেদ হয়ে যায়। উক্ত বিষয়টি জানালে কেউ কেউ বলেছেন, আমি নাকি আর বিবাহ করতে পারব না। অন্য কাউকে বিয়ে করলে তার ওপর নাকি সাথে সাথেই তিন তালাক পড়ে যাবে। এ নিয়ে আমি খুব পেরেশানিতে আছি।

হুজুরের কাছে অনুরোধ, সামনে গুনাহের পথ থেকে যেন বাঁচতে পারি তাই শরীয়াহসম্মত বিবাহের কোনো সমাধান দেবেন।

Answer

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী আপনি ঐ মেয়েকে উদ্দেশ্য করে উক্ত কথাটি বলার কারণে এরপর তাকে ছাড়া অন্য মেয়েকে বিবাহ করা মাত্রই তার ওপর তিন তালাক পতিত হয়ে তৎক্ষণাৎ উক্ত বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যাবে এবং আপনারা একে অপরের জন্য সম্পূর্ণরূপে হারাম হয়ে যাবেন। তাই তালাকপ্রাপ্তা এ স্ত্রীর সাথে পুনরায় বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার সুযোগ থাকবে না। অবশ্য এরপর আপনি অন্য মেয়েকে বিবাহ করতে পারবেন। এতে ঐ কথার কারণে তার ওপর কোনো তালাক পতিত হবে না।

উল্লেখ্য, বিবাহের পূর্বে বেগানা মহিলার সাথে সম্পর্ক রাখা ও কথাবার্তা বলা কবীরা গুনাহ। উপরন্তু কোনো মেয়েকে বিয়ে করার জন্য তাকে এভাবে বলা যে, অন্য মেয়েকে বিয়ে করলে সে তিন তালাক হয়ে যাবে, খুবই অন্যায় কথা। তাই আপনাকে খাঁটি দিলে আল্লাহর কাছে তাওবা-ইস্তেগফার করতে হবে।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৫/১০২; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৩/১১৬; ফাতাহুল কাদীর ৩/৪৪৯; মাজমাউল  আনহুর ২/৫৯; রদ্দুল মুহতার ৩/৩৫৩

Sharable Link

তাহসিন - কুষ্টিয়া

৬৪২৯. Question

আমার পিতার প্রায় ৩০ বছর যাবৎ ইউনিলিভার’-এর ডিলারশিপ রয়েছে। তাদের কোম্পানির নিয়মানুযায়ী তাদের প্রদানকৃত বিভিন্ন ব্যানার, পোস্টার, ডেকোরেশন ইত্যাদি বিভিন্ন দোকানে প্রদান করতে হয়। আর এসকল ব্যানার-পোস্টারে মহিলাদের ছবি থাকে। এছাড়াও  তাদের বিভিন্ন অবৈধ ক্যাম্পেইন (ক্লোজ-আপ : কাছে আসার গল্প ইত্যাদি)-এর প্রচার-প্রচারণার কাজেও আমাদের অংশগ্রহণ  করতে হয়। আবার বর্তমানে ইসরাইলের সাথে তাদের সম্পর্ক থাকার কারণে তাদের পণ্য বয়কট করার আহ্বান জানানো হয়েছে। এমতাবস্থায় তাদের পণ্য বিক্রি করা এবং তাদের সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক বজায় রাখার হুকুম কী?

যদি তা হারাম হয়, তাহলে বর্তমানে মজুদকৃত পণ্য, এখান থেকে পূর্বে অর্জিত লভ্যাংশ এবং এখানে বিনিয়োগকৃত অর্থ এবং এই লভ্যাংশ দ্বারা ক্রয়কৃত বস্তুসমূহের হুকুম কী হবে?

Answer

ইসলামের দৃষ্টিতে মৌলিকভাবে অমুসলিম-কাফেরদের সাথে সাধারণ ব্যবসা-বাণিজ্য ও তাদের বৈধ পণ্য কেনা-বেচা জায়েয আছে। তবে কোনো অমুসলিম ব্যবসায়ী গোষ্ঠী/কোম্পানির ব্যাপারে যদি জানা যায় যে, তারা ইসলাম, মুসলমান ও ইসলামী শিক্ষা-আদর্শের বিরোধী এজেন্ডা নিয়ে কাজ করে, মুসলমানদের জুলুম-নিপীড়নকারী ব্যক্তি/দেশকে আর্থিক সমর্থন ও সহায়তা করে, তাহলে একজন আত্মমর্যাদাশীল মুসলমানের জন্য এমন গোষ্ঠীর সাথে ব্যবসা করা, তাদের পণ্য কেনা-বেচা করা থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকা উচিত। এটা মুমিনের শান ও ঈমানী গায়রতের দাবি। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

لَا تَجِدُ قَوْمًا یُّؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَ الْیَوْمِ الْاٰخِرِ یُوَآدُّوْنَ مَنْ حَآدَّ اللهَ وَ رَسُوْلَهٗ وَ لَوْ كَانُوْۤا اٰبَآءَهُمْ اَوْ اَبْنَآءَهُمْ اَوْ اِخْوَانَهُمْ اَوْ عَشِیْرَتَهُمْ اُولٰٓىِٕكَ كَتَبَ فِیْ قُلُوْبِهِمُ الْاِیْمَانَ وَ اَیَّدَهُمْ بِرُوْحٍ مِّنْهُ  وَ یُدْخِلُهُمْ جَنّٰتٍ تَجْرِیْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهٰرُ خٰلِدِیْنَ فِیْهَا رَضِیَ اللهُ عَنْهُمْ وَ رَضُوْا عَنْهُ ؕ اُولٰٓىِٕكَ حِزْبُ اللهِ  اَلَاۤ اِنَّ حِزْبَ اللهِ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ.

আপনি আল্লাহ ও আখেরাতে বিশ্বাসী মুমিনদেরকে এমন পাবেন না যে, তারা ওইসব লোকদের সাথে বন্ধুত্ব করে, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণে লিপ্ত। যদিও ওরা তাদের পিতা, পুত্র, ভাই বা জ্ঞাতি-গোষ্ঠী হয়। এমন লোকদের অন্তরেই আল্লাহ ঈমান লিখে দিয়েছেন। এবং তাদের সাহায্য করেছেন তার পক্ষ থেকে রূহ দ্বারা। তিনি তাদের দাখিল করবেন জান্নাতে, যার তলদেশে নহর প্রবাহিত, তারা তাতে অনন্তকাল থাকবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। তারাই আল্লাহর দল। শুনে রাখ! আল্লাহর দলই সফলকাম। [সূরা মুজাদালাহ (৫৮) : ২২]

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-

اِنَّمَا یَنْهٰىكُمُ اللهُ عَنِ الَّذِیْنَ قٰتَلُوْكُمْ فِی الدِّیْنِ وَ اَخْرَجُوْكُمْ مِّنْ دِیَارِكُمْ وَ ظٰهَرُوْا عَلٰۤی اِخْرَاجِكُمْ اَنْ تَوَلَّوْهُمْ وَ مَنْ یَّتَوَلَّهُمْ فَاُولٰٓىِٕكَ هُمُ الظّٰلِمُوْنَ.

আল্লাহ তোমাদেরকে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেছেন, যারা দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছে, তোমাদেরকে তোমাদের ঘরবাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে এবং বের করতে সহযোগিতা করেছে। যারা ওদের সাথে বন্ধুত্ব করে, তারা যালেম। [সূরা মুমতাহিনা (৬০) : ৯]

দ্বিতীয়ত, কোনো প্রতিষ্ঠানের ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ড বা নিজের ব্যবসার অর্জিত মুনাফা দ্বারা ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী কাজে সহায়তা করার বিষয়টি জানার পরও এমন প্রতিষ্ঠানের সাথে ব্যবসা করা বা তাদের পণ্যের কেনা-বেচা করা- তাদের এসব কাজকে একপ্রকার সহায়তারও শামিল। আর আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

وَ لَا تَعَاوَنُوْا عَلَی الْاِثْمِ وَ الْعُدْوَانِ ۪ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ ؕ اِنَّ اللّٰهَ شَدِیْدُ الْعِقَابِ.

আর তোমরা গোনাহের কাজ ও যুলুমে একে অপরকে সাহায্য করো না। আল্লাহকে ভয় করতে থাক, নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা। [সূরা মায়িদাহ (৫) : ২]

ফকীহগণ বলেন-

ولا يحل للمسلمين اكتساب سبب تقويتهم على قتال المسلمين.

অর্থাৎ যুদ্ধরত কাফেরদের শক্তিশালী করে- এমন কোনো ক্রিয়ার সাথে যুক্ত হওয়া মুসলমানদের জন্য বৈধ নয়। (শরহুস সিয়ারিল কাবীর, সারাখসী ৪/৮০)

আর যদি ব্যবসা করতে গিয়ে তাদের কোনো ইসলাম-বিরোধী ক্যাম্পেইনের প্রচার-প্রচারণায় নিজেদেরও অংশগ্রহণ করতে হয়, তাহলে এমন কোম্পানির ব্যবসা পরিহারের বিষয়টি আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা ছেড়ে দেওয়া ঈমানী গায়রতের দাবির পাশাপাশি তা এ গোষ্ঠীগুলোর ইসলাম বিদ্বেষী এসব কর্মকাণ্ডের একপ্রকার প্রতিবাদও বটে। এবং সামর্থ্য অনুযায়ী নিজের জায়গা থেকে নির্যাতিত ও মযলুম মুসলমানদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টারও অংশ এটি। এমন নিয়তে কেউ তা করলে আল্লাহ তাআলার দরবারে সে এসবের প্রতিদান পাবে ইনশাআল্লাহ। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-

ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ لَا یُصِیْبُهُمْ ظَمَاٌ وَّ لَا نَصَبٌ وَّ لَا مَخْمَصَةٌ فِیْ سَبِیْلِ اللهِ وَ لَا یَطَـُٔوْنَ مَوْطِئًا یَّغِیْظُ الْكُفَّارَ وَ لَا یَنَالُوْنَ مِنْ عَدُوٍّ نَّیْلًا اِلَّا كُتِبَ لَهُمْ بِهٖ عَمَلٌ صَالِحٌ اِنَّ اللهَ لَا یُضِیْعُ اَجْرَ الْمُحْسِنِیْنَ.

কারণ, (জিহাদকারীদের) আল্লাহর পথে যে পিপাসা, ক্লান্তি, ও ক্ষুধা স্পর্শ করে এবং তারা কাফেরদের ক্রোধ উদ্রেককারী যত পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং তারা শত্রুদের থেকে যা কিছু কেড়ে নেয়- এসবের প্রত্যেকটির বদলে তাদের জন্য নেক আমল লেখা হয়। নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মশীলদের প্রতিদান বিনষ্ট করবেন না। [সূরা তাওবাহ (৯) : ১২০]

আয়াতটির ব্যাখ্যায় ইমাম তীবী রাহ. বলেন-

وهو عام في كل ما يسوؤهم، وينكبهم، ويلحق بهم ضرراً.

অর্থাৎ কাফেরদের কষ্ট দেয়, ক্ষতির মুখে ফেলে, দুর্দশা বয়ে আনে- এমন সব কাজ ও পদক্ষেপ এর শামিল। (ফুতুহুল গাইব ৭/৩৯৭)

যুগে যুগে ঈমানদারগণ এ ধরনের ইসলাম বিদ্বেষী গোষ্ঠীর সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করে এসেছেন এবং এর জন্য সাময়িক ও পার্থিব কোনো কষ্ট হলেও তারা তা হাসিমুখে বরণ করে নিয়েছেন। এ সম্পর্কে ইমাম নববী রাহ. বলেন-

جرى للصحابة المهاجرين وغيرهم ومن أشبههم من المؤمنين في جميع الأزمان، فإنهم يقاطعون من حاد الله ورسوله مع حاجتهم في معايشهم إلى الارتفاق بهم، والاعتضاد بمخالطتهم، فآثروا رضى الله تعالى على ذلك.

অর্থাৎ, মুহাজির ও অন্যান্য সাহাবী এবং তাদের অনুরূপ (মজবুত ঈমানের অধিকারী) অন্য মুমিন থেকে প্রতি যুগেই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণে লিপ্ত ব্যক্তিদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ ও বয়কটের ধারা চলে আসছে। অথচ জীবন-জীবিকা নির্বাহে এদের সাথে সহাবস্থান ও নরম আচরণের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তাঁরা এর উপর আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের সন্তুষ্টিকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। (শরহে মুসলিম, নববী ৩/২৭)

সুতরাং প্রকাশ্যে ইসলাম বিরোধী তৎপরতায় জড়িত, মুসলিমদের নিপীড়নকারীদের সহায়তাকারী কোম্পানির পণ্য কেনা-বেচা, তাদের সাথে যুক্ত হয়ে ব্যবসা থেকে বিরত থাকা ঈমানী গায়রতের (মূল্যবোধ ও চেতনার) দাবি।

ইতিমধ্যে কেউ এ ধরনের কোনো কোম্পানির ব্যবসার সাথে জড়িত হয়ে থাকলে সেক্ষেত্রেও আল্লাহর উপর ভরসা করতঃ সাহস করে এ ধরনের কোম্পানির ব্যবসা ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করা চাই। এবং এর পরিবর্তে কোনো ভল ব্যবসা বা ইসলাম বিরোধী কার্যকলাপে জড়িত নয়- এমন কোনো জনকল্যাণকর প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হয়ে ব্যবসা করা যেতে পারে। সুবিধাজনক বিকল্প বৈধ ব্যবসা দাঁড় করাতে না পারা বা অন্য কোনো কারণে তাৎক্ষণিকভাবে এ ধরনের ব্যবসা ছেড়ে দেওয়া সম্ভব না হলে যত দ্রুত সময়ে সম্ভব বিকল্প ব্যবসা দাঁড় করানোর চেষ্টা করবে। এবং বিকল্প ব্যবসা দাঁড়িয়ে গেলে এ ধরনের ব্যবসা থেকে বেরিয়ে আসবে। আল্লাহ তাআলাই একমাত্র তাওফীকদাতা।

অবশ্য এতদিন পর্যন্ত এসব কোম্পানির বৈধ পণ্যের ব্যবসা করে যে মুনাফা গ্রহণ করা হয়েছে তা ভোগ করা জায়েয হবে। সে টাকা বা তা দ্বারা অর্জিত অন্য সম্পদ ভোগ করতে অসুবিধা নেই। অনুরূপ বর্তমানে এসব মজুতকৃত মাল বিক্রি করে এর মূল্য, এমনিভাবে এ ধরনের ব্যবসায় বিনিয়োগকৃত অর্থও ভোগ করা যাবে। তবে ব্যবসা ছেড়ে দেওয়ার সংকল্প করা হলে সামনে থেকে নতুন করে এমন কোনো পণ্য মজুদ বা তাতে অর্থ বিনিয়োগ থেকে বিরত থাকা উচিত হবে।

-আহকামুল কুরআন, জাস্সাস ২/৫৫৫; তাফসীরুল কাশশাফ ৪/৪৯৭; শরহু মুসলিম, নববী ৩/২৭; শরহুস সিয়ারুল কাবীর ৪/১৮২ ও ১৮৩; বাদায়েউস সানায়ে ৬/৬৫; নিসাবুল ইহতেসাব, পৃ. ২৮৫

Sharable Link

ফাহাদ - ঢাকা

৬৪৩০. Question

আমার এক বন্ধু আমার থেকে এক বছরের জন্য দেড় লাখ টাকা ঋণ নেয়। আমার যেহেতু টাকার সংকট ছিল, তাই আমি তাকে প্রথমে ঋণ দিতে চাচ্ছিলাম না। পরে সে আমার কাছে তার একটি পুরাতন ফোন মর্গেজ হিসাবে রাখলে আমি তাকে ঋণ দেই। আমি আমার বন্ধুর ফোনটা মাঝে মাঝে ব্যবহার করতাম। এটা আমার বন্ধু জানত না। কিছুদিন আগে বাসে বসে ফোনটা চালাচ্ছিলাম, হঠাৎ জানালা দিয়ে ফোনটা ছিনতাই করে নিয়ে যায়। ফোনটা যখন আমার বন্ধু আমাকে দেয় তখন এর দাম ছিল ৬০ হাজার টাকা। কিন্তু যখন তা ছিনতাই হয় তখন এই মডেলের ফোনের বাজারমূল্য ২০% কমে গেছে। এদিকে ফোনটি ছিনতাই হওয়ার এক সপ্তাহ আগেই পাওনা পরিশোধের সময় শেষ হয়ে গেছে। ফোনটি হাতছাড়া হওয়ায় আমার বন্ধু বলছে, সে ঋণের পুরো টাকা পরিশোধ করবে না।

জানার বিষয় হল, এখন আমি কি আমার বন্ধু থেকে জোরপূর্বক পুরো টাকা ফেরত নিতে পারব? আশা করি সঠিক সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঋণ গ্রহীতার কাছে আপনি ঋণের পুরো টাকা ফেরত দেওয়ার দাবি করতে পারবেন না। বরং ফোনটি বন্ধক নেওয়ার পর আপনার বন্ধুর অনুমতি ছাড়া তা ব্যবহার করা অবস্থায় যেহেতু ছিনতাই হয়েছে, তাই এক্ষেত্রে ফোনটি বন্ধক হিসাবে গ্রহণ করার দিন এর যে বাজারমূল্য ছিল, সে পরিমাণ টাকা ঋণ থেকে কর্তন যাবে। এর পর অবশিষ্ট টাকা আপনি ফেরত পাবেন।  এক্ষেত্রে ছিনতাই হওয়ার সময় ফোনটির দাম কমে গেলেও তা ধর্তব্য নয়।

-আলমুহীতুর রাযাবী ৮/৩৮২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৪৬৬; নাতায়িজুল আফকার ৯/১১৬; রদ্দুল মুহতার ৬/৫৬০

Sharable Link

আনাস - কুমিল্লা

৬৪৩১. Question

আমার আম্মা গত কয়েক মাস আগে মারা গেছেন। মারা যাওয়ার দুই মাস আগে তিনি তার সব জায়গা-সম্পত্তি আমার ছোট ভাইকে হেবা করে গেছেন এবং আমার ছোট ভাই আম্মার মৃত্যুর আগেই সেগুলো আম্মার কাছ থেকে বুঝে নিয়েছে। কিন্তু বিষয়টা আমরা জানতাম না, শুধু আব্বা জানতেন। তাই আম্মার মৃত্যুর পর আমরা জায়গা-সম্পত্তি ভাগ করে নিতে চাইলে আব্বা বাধা দিয়ে বলেন, তোর মা তার জায়গা-সম্পত্তি তোর ছোট ভাইকে হেবা করে গেছে। বিষয়টা আমরা সবাই আব্বার দিকে তাকিয়ে মেনে নিলেও বড় ভাই মানতে পারছেন না। বরং আব্বার সাথে একরকম ঝগড়া করে গ্রামের বাড়িতে আম্মার রেখে যাওয়া একটা জমি দখল করে নেন এবং টিনশেড ঘর বানিয়ে পরিবারসহ তাতে থাকা শুরু করেন।

উল্লেখ্য, আমার আম্মা মৃত্যুর আগে কয়েক বছর প্যারালাইসিসে আক্রান্ত ছিলেন এবং এ রোগে আক্রান্ত অবস্থায়ই তিনি মারা গেছেন। তবে দীর্ঘদিন প্যারালাইসিসে আক্রান্ত থাকলেও এ কারণে তার শারীরিক অবস্থা দিন দিন অবনতির দিকে যায়নি। বরং মৃত্যু পর্যন্ত প্রায় এক অবস্থায় ছিল। তা ছাড়া মৃত্যুর আগে তিনি প্যারালাইসিস ছাড়া ভিন্ন কোনো রোগে আক্রান্ত হননি।

এখন মুহতারামের কাছে আমি যে বিষয়টি জানতে চাই সেটি হচ্ছে, আমি একজন আলেমের মুখে শুনেছি, মৃত্যুর আগে অসুস্থ অবস্থায় কোনো ব্যক্তি কাউকে কিছু দান করলে তা তার সমুদয় সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশের বেশিতে কার্যকর হয় না। প্রশ্ন হল, আমার আম্মা তো মৃত্যুর আগে তার ছোট ছেলেকে জায়গা-সম্পত্তি হেবা করার সময় প্যারালাইজড ছিলেন। সুতরাং এ অবস্থায় তিনি যে হেবা করেছেন, তা তার সমুদয় সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশের বেশিতে কার্যকর হয়েছে কি? যদি কার্যকর না হয়ে থাকে, তাহলে এখন তার ওয়ারিশরা কি সম্পত্তির বাকি দুই তৃতীয়াংশ মিরাসনীতি অনুযায়ী বণ্টন করে নিতে পারবে? আশা করি সঠিক সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার আম্মা যেহেতু মৃত্যুর আগে তার সব জায়গা-সম্পত্তি আপনার ছোট ভাইকে হেবা করে দিয়েছেন এবং সেও আপনার আম্মার মৃত্যুর আগেই আপনার আম্মা থেকে সব জায়গা-সম্পত্তি বুঝে নিয়েছে, তাই এক্ষেত্রে আপনার আম্মার উক্ত হেবা-দানটি কার্যকর হয়ে গেছে এবং আপনার ছোট ভাই এ সব জায়গা-সম্পত্তির মালিক হয়ে গেছে।

এক্ষেত্রে আপনার আম্মা প্যারালাইজড অবস্থায় থাকা উক্ত হেবা কার্যকর হতে প্রতিবন্ধক হবে না। কেননা প্যারালাইসিস রোগ সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী হয়। এটি মারাযুল মওত হিসাবে গণ্য হয় না।

সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার আম্মা তার ছোট ছেলেকে যা কিছু হেবা করে গেছেন সেগুলোর মালিক সে একাই। এগুলো আপনার আম্মার মিরাসী সম্পত্তির অন্তর্ভুক্ত হবে না। তাই এ থেকে আপনারা কোনো অংশ পাবেন না।

অতএব, আপনার বড় ভাই কর্তৃক উক্ত জমি দখল করে তাতে ঘর নির্মাণ শরীয়তসম্মত নয়। কারণ উক্ত জায়গার মালিক আপনার ছোট ভাই।

-আলজামিউস সাগীর, পৃ. ৫২৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৭/৪০২; রদ্দুল মুহতার ৬/৬৬০; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়া, মাদ্দাহ ৮৬১; দুরারুল হুক্কাম শরহু মাজাল্লাতুল আহকাম ২/৪৮৭

Sharable Link

উম্মে খালেদ - খাজুরা, যশোর

৬৪৩২. Question

হুজুর, আমার স্বামী ইন্তেকাল করেছেন দুই বছর আগে। আমি চট্টগ্রামে থাকি। আমার বড় মেয়ে পরিবারসহ ঢাকায় থাকে। আমার একটি ছেলে আছে, যার বয়স সাত বছর। শুনেছি, মাহরাম ছাড়া মহিলাদের সফর করা জায়েয নয়। প্রশ্ন হল, আমি আমার ঐ ছেলের সাথে কি ঢাকায় মেয়ের বাসায় বেড়াতে যেতে পারব?

Answer

না, আপনার সত বছর বয়সী ছেলের সঙ্গে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা সফর করা জায়েয হবে না। কেননা মহিলাদের জন্য সফরসম দূরত্বে (৪৮ মাইল বা তার অধিক) গমনের ক্ষেত্রে সঙ্গে প্রাপ্তবয়স্ক মাহরাম পুরুষ অথবা অন্তত প্রাপ্তবয়স্কের কাছাকাছি কোনো মারহাম থাকা জরুরি। আর সাত বছর বয়সী ছেলে প্রাপ্তবয়স্কের কাছাকাছি নয়।

-শরহু মুখতাসারিল কারখী ২/৪২৩; খিযানাতুল আকমাল ১/৩৭৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ২/৫৩; আলমুহীতুর রাযাবী ২/১৩২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১৯ ​​​​​​​

Sharable Link