আমি নামাযের শেষ বৈঠকে দরূদ শরীফের পরে اللهم إني ظلمت نفسي এই দুআ পড়তাম। কিন্তু গতকাল মুআযযিন সাহেব বললেন, দরূদ শরীফের পরে এই দুআ ছাড়া অন্য যে কোনো দুআ পড়া যায় এবং এর মাধ্যমে নামাযের কোনো ক্ষতিও হয় না। কথাটি আমার কাছে নতুন মনে হয়েছে। তাই মুফতী সাহেবের নিকট আমার জানার বিষয় হচ্ছে, দরূদ শরীফের পর এই দুআ ছাড়া অন্য যে কোনো দুআ পড়া যাবে কি না?
নামাযের শেষ বৈঠকে দরূদ শরীফের পরে যেসব দুআ পড়ার কথা হাদীস শরীফে এসেছে তার মধ্যে প্রশ্নোক্ত দুআটি অন্যতম। সহীহ বুখারী ও মুসলিমসহ হাদীসের অনেক কিতাবে উক্ত দুআটি পড়ার কথা আছে। এছাড়া এসময় পড়ার জন্য আরো কিছু দুআ হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে। কেউ চাইলে সেগুলোর যে কোনোটি পড়তে পারে। তবে এ সময়ের দুআ হিসেবে হাদীসে বর্ণিত হয়নি এমন কোনো দুআ নিজ থেকে নির্বাচন করে পড়া অনুত্তম হবে। নামাযের সকল বিষয় এমনকি দুআ-দরূদ সবই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের অনুকরণে হতে হবে। হাদীস ও আছারে এসময়ের আরো যেসব দুআ বর্ণিত হয়েছে তার কয়েকটি নিম্নরূপ :
এক.
اللهُمّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنّمَ، وَمِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ، وَمِنْ شَرِّ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدّجّالِ.
(সহীহ মুসলিম, হাদীস ৫৮৮)
দুই.
اللّهُمّ اغْفِرْ لِيْ مَا قَدّمْتُ وَمَا أَخّرْتُ، وَمَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ، وَمَا أَسْرَفْتُ، وَمَا أَنْتَ أَعْلَمُ بِهِ مِنِّيْ، أَنْتَ الْمُقَدِّمُ وَأَنْتَ الْمُؤَخِّرُ لَا إِلَهَ إِلّا أَنْتَ.
(সহীহ ইবনে খুযায়মা, হাদীস ৭২৩)
তিন.
اللّهُمّ إنّا نَسْأَلُك مِنَ الْخَيْرِ كُلِّهِ مَا عَلِمْنَا مِنْهُ وَمَا لَمْ نَعْلَمْ، وَنَعُوذُ بِكَ مِنَ الشّرِ كُلِّهِ مَا عَلِمْنَا مِنْهُ وَمَا لَمْ نَعْلَمْ.
(মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ, বর্ণনা ৩০৪৭)
-আলইখতিয়ার ১/১৮৬; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৩০; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫২৩; ইমদাদুল ফাত্তাহ পৃ. ৩০২
ফযলুর রহমান
গাজীপুর
৪৭৫৮ প্রশ্ন : গত শুক্রবার সকাল দশটার দিকে আমাদের এলাকার চেয়ারম্যান সাহেব নতুন রাস্তা নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন। আমি শ্রমিক হিসাবে কাজ করছিলাম। ঘণ্টাখানিক পর জুমার নামাযের সময় হয়ে যায়। কন্ট্রাক্টর সাহেবকে নামাযের কথা জানালে তিনি বলেন, ‘দুইটা পর্যন্ত কাজ চলবে। এরপর আধা ঘণ্টা বিরতি। তখন যোহর পড়ে নিও।’ অতপর আমি ব্যথিত হৃদয়ে কাজ শুরু করলে এক মুরব্বী শ্রমিক সান্ত¡না দিয়ে বলেন, ‘বাবা রাগ কর না, এখন আমরা তার অধীনে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কাজ করার জন্য চুক্তিবদ্ধ। তাই আমাদেরকে ছুটি না দেওয়ার অধিকার তার আছে।’
মুহতারামের নিকট আমার জিজ্ঞাসা হল, আসলে কী কন্ট্রাক্টর আমাদেরকে জুমার জন্য ছুটি না দিয়ে কাজে বাধ্য করতে পারে?
উত্তর : জুমার নামায গুরুত্বপূর্ণ ফরয। পবিত্র কুরআনে জুমার আযানের পর সব ধরণের ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ করে নামাযের প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْۤا اِذَا نُوْدِیَ لِلصَّلٰوةِ مِنْ یَّوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا اِلٰی ذِكْرِ اللهِ وَ ذَرُوا الْبَیْعَ، ذٰلِكُمْ خَیْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ.
হে ঈমানদারগণ! জুমার দিনে যখন নামাযের জন্য আযান দেওয়া হয়, তখন আল্লাহর স্মরণের দিকে দ্রæত ধাবিত হও এবং বেচাকেনা বন্ধ করে দাও। এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বুঝ। -সূরা জুমুআ (৬২) : ৯
ফকীহগণ এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ক্রয়-বিক্রয়ের মত অন্যান্য দুনিয়াবী ব্যস্ততাও নিষিদ্ধ। এক হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে বলেন-
لَيَنْتَهِيَنّ أَقْوَامٌ عَنْ وَدْعِهِمُ الْجُمُعَاتِ، أَوْ لَيَخْتِمَنّ اللهُ عَلَى قُلُوبِهِمْ، ثُمّ لَيَكُونُنّ مِنَ الْغَافِلِينَ.
অর্থাৎ লোকেরা যেন কোনোভাবেই জুমার নামায না ছাড়ে। নচেৎ আল্লাহ তাআলা তাদের অন্তরে মোহর মেরে দিবেন। অতপর তারা অবশ্যই গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৮৬৫
সুতরাং শরয়ী কোনো ওযর ছাড়া জুমার নামায ছাড়া যাবে না। কারো অধীনে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কাজে নিয়োগ হলেও কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব হল অধীনস্তদের জুমা পড়ার সুযোগ দেওয়া। জুমার সময় কাজে আটকে রেখে পরে যোহর পড়তে বলা জায়েয নয়। নিয়োগকর্তার এ অধিকার নেই। জোর করে এমনটি করলে শ্রমিকের জুমা না পড়ার গুনাহের ভার নিয়োগকর্তার উপর বর্তাবে। আর পূর্ব থেকে জানা থাকলে শ্রমিকের জন্যও এধরনের কাজে চুক্তিবদ্ধ হওয়া জায়েয হবে না।