মুহাম্মদ মীযানুর রহমান - রাজবাড়ী

৪৭১৮. Question

বাচ্চার পেশাবের বেশ কিছু কাঁথা-কাপড় মেঝেতে রাখা ছিল। একবার করে হালকাভাবে ধুয়ে শুধু বড় আকারের নাপাকির গন্ধ ও চিহ্ন দূর করা হয়েছিল। পুরোপুরি পাক করা হয়নি। ঐ নাপাক কাপড়ের পানি মেঝেতে লেগে বেশ খানিকটা জায়গা ভেজা মতোন হয়ে যায়। ঘর অপরিসর হওয়ায় ঐ জায়গা ছাড়া নামায পড়ার মতো আর জায়গাও নেই। এদিকে সময় এত অল্প যে, ঐ জায়গা মুছে পাক করতে গেলে নামাযের ওয়াক্ত শেষ হয়ে যায়। এ অবস্থায় ঐ মেঝেতে জায়নামায বিছিয়ে নামায পড়লে কি নামায সহীহ হবে? জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ নাপাক জায়গা যদি শুকনো থাকে, ফলে জায়নামায বিছানো দ্বারা যদি তা ভিজে না ওঠে তাহলে সেখানে জায়নামায বিছিয়ে নামায পড়া যাবে। আর যদি জায়গা পুরো শুকনো না হয় এবং জায়নামায বিছালে জায়নামায এভাবে ভিজে যায় যে, তাতে নাপাকির স্পষ্ট গন্ধ পাওয়া যায় তাহলে সেক্ষেত্রে ঐ জায়নামাযে নামায পড়া যাবে না।

-ফাতহুল কাদীর ১/১৬৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৪৩৪; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৩১; আলবাহরুর রায়েক ১/২৩২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৪৭

Sharable Link

নাজমুল হাসান - লালমনিরহাট

৪৭১৯. Question

আমি মাঝে মাঝে তাবলীগে যাই। কখনো কখনো আমাদের জামাতের রোখ প্রত্যন্ত গ্রামে পড়ে। গ্রামের মসজিদগুলোতে সাধারণত অযু-গোসলের ব্যবস্থা মসজিদ থেকে একটু দূরে থাকে। সেখানে মাঝ রাতে যদি গোসলের প্রয়োজন দেখা দেয় তাহলে করণীয় কী? কারণ এমন জায়গায় গভীর রাতে একা একা বের হয়ে গোসল করে নেওয়াটা কঠিন। দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

মসজিদে অবস্থানকারী ব্যক্তি গোসলের প্রয়োজন দেখা দেওয়ার পর কোন ওজরের কারণে মসজিদ থেকে বের হতে না পারলে সে তায়াম্মুম করে নিবে। পরবর্তীতে সুযোগ হওয়া মাত্রই বিলম্ব না করে মসজিদ থেকে বের হয়ে যাবে। এবং গোসল করে পবিত্রতা অর্জন করবে।

-হালবাতুল মুজাল্লী ১/১৯৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৮; আদ্দুররুল মুখতার ১/১৭২; কেফায়াতুল মুফতী ৩/৪০৪

Sharable Link

শাকের হুসাইন - সদর, সিলেট

৪৭২১. Question

আমাদের এলাকার বৃদ্ধরা বলে থাকেন, কেউ যদি দুআয়ে কুনূত না পারে তাহলে সে ঐ সময় তিনবার সূরা ইখলাস পড়ে নিবে। মুফতী সাহেবের নিকট আমার প্রশ্ন হল, তাদের উক্ত কথা সহীহ কি না?

Answer

দুআ কুনূত জানা না থাকলে

 رَبّنَا آتِنَا فِي الدّنْيَا حَسَنَةً، وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً، وَقِنَا عَذَابَ النَّار

পড়বে। অথবা

اللّهُمَّ  اغْفِرْ لِيْ

তিন বার পড়বে।

কিন্তু এক্ষেত্রে সূরায়ে ইখলাস পড়ার কথাটি সহীহ নয়। কারণ এটি দুআর স্থান। সূরা কিরাত পড়ার স্থান নয়।

উল্লেখ্য যে, যার দুআয়ে কুনূত জানা নেই তার উচিত দ্রুত দুআয়ে কুনূত শিখে নেওয়া।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৬৯৬৬; আততাজনীস ওয়াল মাযীদ ২/৮৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৪৪; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৩৮৪; ফাতাওয়া রহীমিয়া ৫/২৩৬

Sharable Link

এস.আর সাঈদ - কেন্দুয়া, নেত্রকোণা

৪৭৪৯. Question

১ : ...।

২ : হযরত মুফতী সাহেবের নিকট জানার বিষয় হচ্ছে, এয়ার কন্ডিশন (এসি) থেকে নির্গত পানি দ্বারা ফরয গোসল কিংবা অযু করা জায়েয হবে কি না? বা তা দ্বারা নাপাক কাপড় পরিষ্কার করা যাবে কি না?

Answer

১ : প্রথম প্রশ্নের উত্তর কোনো দারুল ইফতায় উপস্থিত হয়ে জেনে নিন। এ ধরনের প্রশ্ন সংশ্লিষ্টদের সাথেই সম্পৃক্ত।  এর প্রচার ঠিক নয়।

২ : এসি থেকে নির্গত পানি যেহেতু স্বচ্ছ ও পবিত্র থাকে এবং তা ব্যবহৃত নয় তাই এ পানি দ্বারা অযু ও ফরয গোসল করা জায়েয। ভালো পানি না পাওয়ার কারণে কেউ যদি এই পানি দ্বারা অযু করে তবে তা সহীহ হবে। আর এই পানি দ্বারা নাপাক কাপড়ও ধোয়া যাবে।

-আলবাহরুর রায়েক ১/৬৬; শরুহুল মুনয়াহ পৃ. ৮৮; আলইখতিয়ার ১/৬৪; আদ্দুররুল মুখতার ১/১৭৯

Sharable Link

মুহাম্মাদ আবদুল হাকীম - নওয়াপাড়া, যশোর

৪৭৫০. Question

আমি জানি, গোসল ফরয অবস্থায় কুরআন শরীফ পড়া যায় না। জানার বিষয় হল, গোসল ফরয অবস্থায় বিভিন্ন স্থানের মাসনূন দুআ কি পড়তে পারব? যেমন বাথরুমে প্রবেশের দুআ ইত্যাদি। দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

হাঁ, গোসল ফরয অবস্থায় দুআ পড়া যায়। তাই এ সময় কুরআন-হাদীসে বর্ণিত দুআসমূহ পড়তে পারবেন। তবে এ অবস্থায় কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত করা যাবে না।

-জামে তিরমিযী, হাদীস ১৩১; ফাতহুল কাদীর ১/১৪৯; আলবাহরুর রায়েক ১/২০০; হালবাতুল মুজাল্লী ১/১৮১; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/১৬৫; রদ্দুল মুহতার ১/১৭৪

Sharable Link

মুহাম্মাদ খালেদ - সুধন্যপুর মাদরাসা, কুমিল্লা

৪৭৫১. Question

আমি একদিন বিতর নামাযের মধ্যে প্রথম রাকাতে সূরা ইখলাস তিলাওয়াত করি। অতপর দ্বিতীয় রাকাতেও ভুলবশত সূরা ইখলাস তিলাওয়াত করি। অতপর নামায ছেড়ে দিয়ে আবার পুনরায় নামায আদায় করি। এমতাবস্থায় আমার করণীয় কী ছিল?

Answer

প্রথম রাকাতে যে সূরা পড়া হয়েছে দ্বিতীয় রাকাতেও পুনরায় সে সূরা পড়লে নামায নষ্ট হয় না। তবে ফরয নামাযে ইচ্ছাকৃত এমনটি করা অনুত্তম। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার নামায ছেড়ে দেওয়া ঠিক হয়নি। নামায শুরু করার পর এভাবে নামায ছেড়ে দেওয়া অন্যায়। নামায হচ্ছে কি না- এ ব্যাপারে সংশয় থাকলে নামায সমাপ্ত করে মাসআলা জেনে নিতে পারতেন।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৯৬; ফাতহুল কাদীর ১/২৯৯; হালবাতুল মুজাল্লী ২/২৮১; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৩৩৬; মাজমাউল আনহুর ১/১৬০

Sharable Link

মুহাম্মাদ জসিমুদ্দীন - বানারিপাড়া, বরিশাল

৪৭৫২. Question

আমাদের এলাকায় ঈদের নামাযের পর ইমাম সাহেব খুতবার মধ্যে তাকবীরে তাশরীক পড়লে অনেক মুসল্লী ইমামের সাথে জোরে জোরে তাকবীর পাঠ করে। অনুরূপভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম নিলে জোরে দরূদ শরীফ পড়ে। এখন মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাচ্ছি, খুতবা চলাকালীন এভাবে সশব্দে তাকবীর বা দরূদ শরীফ পড়া যাবে কি না? জানালে কৃতজ্ঞ হব।

Answer

খুতবার মধ্যে ইমাম সাহেব তাকবীরে তাশরীক পাঠ করলে বা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম উচ্চারণ করলে মুখে উচ্চারণ করে তাকবীর ও দরূদ শরীফ পড়া যাবে না। তবে মনে মনে পড়তে পারবে। উল্লেখ্য যে, জুমার খুতবার ন্যায় ঈদের খুতবাও  চুপ থেকে মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করা ওয়াজিব।

-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ৫৬৪২; কিতাবুল আছল ১/৩২৮; বাদায়েউস সানায়ে ১/৫৯৪; ফাতহুল কাদীর ২/৩৮; মাজমাউল আনহুর ১/২৫৩; রদ্দুল মুহতার ২/১৫৯

Sharable Link

মুহাম্মাদ যোবায়ের আহমাদ - কামরাঙ্গীর চর, ঢাকা

৪৭৫৩. Question

আমাদের টুপির একটি গার্মেন্ট আছে, আর আল্লাহর রহমতে সেখানে চার ওয়াক্ত নামায জামাতের সাথে আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। একজন নির্দিষ্ট ইমামও আছেন। ইমামের অনুপস্থিতে আমিও নামায পড়াই। ঘটনাক্রমে একদিন উভয়ে অনুপস্থিত ছিলাম তখন আমার ফুফাতো ভাই ইমামতি করে, আর ও হল একজন মক্তবের ছাত্র, এখনো বালেগ হয়নি। আর উপস্থিত সকলেই নামায সম্পর্কে এতটাই অজ্ঞ যে, তারা কেউই ইমামতির দায়িত্ব পালনে সম্মত হচ্ছিল না, বিধায় অপারগ হয়ে আমার ফুফাতো ভাই নামায পড়ায়। এখন নামায কি সহীহ হয়েছে? কাযা করা লাগবে কি লাগবে না? জানতে পারলে উপকৃত হব।

Answer

নাবালেগের পেছনে প্রাপ্তবয়স্কদের ইক্তিদা সহীহ নয়। এক বর্ণনায় এসেছে, হযরত আতা রাহ. বলেন-

لَا يَؤُمّ الْغُلَامُ الّذِي لَمْ يَحْتَلِمْ.

অপ্রাপ্ত বয়স্ক কোনো বালক যেন ইমামতি না করে। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ৩৮৪৫)

তাই ঐ শিশুর পেছনে যেসকল প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি নামায পড়েছে তাদের নামায হয়নি। তা কাযা করে নিতে হবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৫৮; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৭৯; ফাতহুল কাদীর ১/৩০৯; মাজমাউল আনহুর ১/১৬৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৮৫

Sharable Link

মুহাম্মাদ আশিক - বগুড়া

৪৭৫৪. Question

প্রায় সময় নামাযের মধ্যে রাকাত সংখ্যা নিয়ে সন্দেহে পড়ি। মুহতারামের নিকট জানার বিষয় হল, এরূপ মুহূর্তে আমার জন্য করণীয় কী?

Answer

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী আপনার যেহেতু প্রায় সময় রাকাত সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ হয় তাই আপনার জন্য করণীয় হল, প্রবল ধারণা অনুযায়ী আমল করা। অর্থাৎ যত রাকাত হয়েছে বলে প্রবল ধারণা হয় তত রাকাত ধরে নামায পূর্ণ করে ফেলা। প্রবল ধারণা অনুযায়ী আমল করলে সিজদায়ে সাহু দিতে হবে না।

আর যদি চিন্তার পরও কোনো রাকাতের ব্যাপারে প্রবল ধারণা না হয় তাহলে সন্দিহান রাকাতগুলোর মধ্যে কম সংখ্যাটি ধরে নামায পূর্ণ করবেন। এক্ষেত্রে প্রতি রাকাতে বসে তাশাহহুদ  পড়তে হবে এবং নামাযের শেষে সিজদায়ে সাহুও দিতে হবে।

-সহীহ বুখারী, হাদীস ৪০১; জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৯৮; কিতাবুল আছল ১/১৯৩; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ২/২৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৬৯; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৩৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩০; আদ্দুররুল মুখতার ২/৯৩-৯৪

Sharable Link

মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ মারূফ - মনিরামপুর, যশোর

৪৭৫৫. Question

সাধারণত আমি সুবহে সাদিকের পর কুরআন শরীফ পড়ি। তাই অনেক সময় সিজদার আয়াতও পড়া হয়। আমি জানি, এসময় নফল নামায পড়া মাকরূহ। হুযূরের কাছে আমার জানার বিষয় হল, এসময় সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করে সিজদা করা যাবে কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

উক্ত সময় নফল নামায পড়া মাকরূহ হলেও সিজদায়ে তিলাওয়াত আদায় করতে কোনো অসুবিধা নেই।

-শরহু মুখতাসারিত তহাবী ১/৫৪৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১৫; হালবাতুল মুজাল্লী ১/৬৫৫; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩৭৫

Sharable Link

ইকবাল  হোসেন - চট্টগ্রাম

৪৭৫৬. Question

গত কিছুদিন আগে যোহরের চার রাকাত সুন্নত পড়ার সময় শেষ বৈঠকে প্রথমবার তাশাহহুদ পড়ার পর আমার সন্দেহ জাগে যে, তাশাহহুদের কিছু অংশ ছুটে গেছে। তাই আবার পুরো তাশাহহুদ পড়ি। এরপর যথানিয়মে নামায শেষ করি। এখন হুযূরের কাছে জানার বিষয় হল, শেষ বৈঠকে দুই বার তাশাহহুদ পড়ার কারণে আমার উপর কি সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হয়েছিল? যদি হয়ে থাকে, তাহলে এখন আমার করণীয় কী?

Answer

না, শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ দুই বার পড়লে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হয় না। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সিজদায়ে সাহু না করে নামায শেষ করা ঠিকই হয়েছে।

-আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩১৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৭৭; শরহুল মুনয়া পৃ. ৪৬০; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১২১; ফাতহুল কাদীর ১/৪৩৯

Sharable Link

ফয়সাল আহমাদ - পাহাড়তলি, চট্টগ্রাম

৪৭৫৭. Question

আমি নামাযের শেষ বৈঠকে দরূদ শরীফের পরে اللهم إني ظلمت نفسي এই দুআ পড়তাম। কিন্তু গতকাল মুআযযিন সাহেব বললেন, দরূদ শরীফের পরে এই দুআ ছাড়া অন্য যে কোনো দুআ পড়া যায় এবং এর মাধ্যমে নামাযের কোনো ক্ষতিও হয় না। কথাটি আমার কাছে নতুন মনে হয়েছে। তাই মুফতী সাহেবের নিকট আমার জানার বিষয় হচ্ছে, দরূদ শরীফের পর এই দুআ ছাড়া অন্য যে কোনো দুআ পড়া যাবে কি না?

Answer

নামাযের শেষ বৈঠকে দরূদ শরীফের পরে যেসব দুআ পড়ার কথা হাদীস শরীফে এসেছে তার মধ্যে প্রশ্নোক্ত দুআটি অন্যতম। সহীহ বুখারী ও মুসলিমসহ হাদীসের অনেক কিতাবে উক্ত দুআটি পড়ার কথা আছে। এছাড়া এসময় পড়ার জন্য আরো কিছু দুআ হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে। কেউ চাইলে সেগুলোর যে কোনোটি পড়তে পারে। তবে এ সময়ের দুআ হিসেবে হাদীসে বর্ণিত হয়নি এমন কোনো দুআ নিজ থেকে নির্বাচন করে পড়া অনুত্তম হবে। নামাযের সকল বিষয় এমনকি দুআ-দরূদ সবই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের অনুকরণে হতে হবে। হাদীস ও আছারে এসময়ের আরো যেসব দুআ বর্ণিত হয়েছে তার কয়েকটি নিম্নরূপ :

এক.

اللهُمّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنّمَ، وَمِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ، وَمِنْ شَرِّ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدّجّالِ.

(সহীহ মুসলিম, হাদীস ৫৮৮)

দুই.

اللّهُمّ اغْفِرْ لِيْ مَا قَدّمْتُ وَمَا أَخّرْتُ، وَمَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ، وَمَا أَسْرَفْتُ، وَمَا أَنْتَ أَعْلَمُ بِهِ مِنِّيْ، أَنْتَ الْمُقَدِّمُ وَأَنْتَ الْمُؤَخِّرُ لَا إِلَهَ إِلّا أَنْتَ.

(সহীহ ইবনে খুযায়মা, হাদীস ৭২৩)

তিন.

اللّهُمّ إنّا نَسْأَلُك مِنَ الْخَيْرِ كُلِّهِ مَا عَلِمْنَا مِنْهُ وَمَا لَمْ نَعْلَمْ، وَنَعُوذُ بِكَ مِنَ الشّرِ كُلِّهِ  مَا عَلِمْنَا مِنْهُ وَمَا لَمْ نَعْلَمْ.

(মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ, বর্ণনা ৩০৪৭)

-আলইখতিয়ার ১/১৮৬; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৩০; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫২৩; ইমদাদুল ফাত্তাহ পৃ. ৩০২

ফযলুর রহমান

গাজীপুর

৪৭৫৮ প্রশ্ন : গত শুক্রবার সকাল দশটার দিকে আমাদের এলাকার চেয়ারম্যান সাহেব নতুন রাস্তা নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন। আমি শ্রমিক হিসাবে কাজ করছিলাম। ঘণ্টাখানিক পর জুমার নামাযের সময় হয়ে যায়। কন্ট্রাক্টর সাহেবকে নামাযের কথা জানালে তিনি বলেন, ‘দুইটা পর্যন্ত কাজ চলবে। এরপর আধা ঘণ্টা বিরতি। তখন যোহর পড়ে নিও।’ অতপর আমি ব্যথিত হৃদয়ে কাজ শুরু করলে এক মুরব্বী শ্রমিক সান্ত¡না দিয়ে বলেন, ‘বাবা রাগ কর না, এখন আমরা তার অধীনে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কাজ করার জন্য চুক্তিবদ্ধ। তাই আমাদেরকে ছুটি না দেওয়ার অধিকার তার আছে।’

মুহতারামের নিকট আমার জিজ্ঞাসা হল, আসলে কী কন্ট্রাক্টর আমাদেরকে জুমার জন্য ছুটি না দিয়ে কাজে বাধ্য করতে পারে?

উত্তর : জুমার নামায গুরুত্বপূর্ণ ফরয। পবিত্র কুরআনে জুমার আযানের পর সব ধরণের ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ করে নামাযের প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْۤا اِذَا نُوْدِیَ لِلصَّلٰوةِ مِنْ یَّوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا اِلٰی ذِكْرِ اللهِ وَ ذَرُوا الْبَیْعَ،  ذٰلِكُمْ خَیْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ.

হে ঈমানদারগণ! জুমার দিনে যখন নামাযের জন্য আযান দেওয়া হয়, তখন আল্লাহর স্মরণের দিকে দ্রæত ধাবিত হও এবং বেচাকেনা বন্ধ করে দাও। এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বুঝ। -সূরা জুমুআ (৬২) : ৯

ফকীহগণ এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ক্রয়-বিক্রয়ের মত অন্যান্য দুনিয়াবী ব্যস্ততাও নিষিদ্ধ। এক হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে বলেন-

لَيَنْتَهِيَنّ أَقْوَامٌ عَنْ وَدْعِهِمُ الْجُمُعَاتِ، أَوْ لَيَخْتِمَنّ اللهُ عَلَى قُلُوبِهِمْ، ثُمّ لَيَكُونُنّ مِنَ الْغَافِلِينَ.

অর্থাৎ লোকেরা যেন কোনোভাবেই জুমার নামায না ছাড়ে। নচেৎ আল্লাহ তাআলা তাদের অন্তরে মোহর মেরে দিবেন। অতপর তারা অবশ্যই গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৮৬৫

সুতরাং শরয়ী কোনো ওযর ছাড়া জুমার নামায ছাড়া যাবে না। কারো অধীনে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কাজে নিয়োগ হলেও কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব হল অধীনস্তদের জুমা পড়ার সুযোগ দেওয়া। জুমার সময় কাজে আটকে রেখে পরে যোহর পড়তে বলা জায়েয নয়। নিয়োগকর্তার এ অধিকার নেই। জোর করে এমনটি করলে শ্রমিকের জুমা না পড়ার গুনাহের ভার নিয়োগকর্তার উপর বর্তাবে। আর পূর্ব থেকে জানা থাকলে শ্রমিকের জন্যও এধরনের কাজে চুক্তিবদ্ধ হওয়া জায়েয হবে না।

-তাফসীরে রূহুল মাআনী ২৮/১০৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২১০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৪৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৫৩

Sharable Link

আবদুল মতিন - বরিশাল

৪৭৫৯. Question

মাননীয় মুফতী সাহেব! দু’বছর হল আমার দাদী ইন্তেকাল করেন। কিছুদিন আগে আমরা গ্রামের বাড়িতে যাই। দাদীর কবর যিয়ারত করতে গিয়ে দেখি, কবরটির মধ্যখান বেশ ডেবে গেছে। এ অবস্থা দেখে বাবা ও আমি মিলে কোদাল দিয়ে কবরস্থানের খালি জায়গা থেকে মাটি এনে কবরটি আগের মত করে দেই। আমাদের এ কাজ দেখে এক মুরব্বি আপত্তি করে বলেন, কবরকে আপন অবস্থায় রেখে দিতে হয়।

তো প্রশ্ন হল, কবর ডেবে গেলে, কোনো পাশ ভেঙ্গে গেলে বা অন্য কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে। তাতে মাটি দিয়ে মেরামত করা কি ঠিক নয়? সঠিক মাসআলাটি জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

কবর ডেবে গেলে বা কোনো পাশ ভেঙ্গে গেলে নতুন মাটি দিয়ে কবর মেরামত করা জায়েয। শরীয়তের দৃষ্টিতে  এতে কোনো সমস্যা নেই। তাই আপনাদের কাজটি অনুচিত হয়নি।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ, বর্ণনা ১১৯২৩; ফাতাওয়া সিরাজিয়্যাহ পৃ. ৭৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৯৪; শরহুল মুনয়া পৃ. ৫৯৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৭০; মাজমাউল আনহুর ১/২৭৬; রদ্দুল মুহতার ২/২৩৭

Sharable Link

আব্দুর রহমান - নেত্রকোণা

৪৭৬০. Question

কিছুদিন আগে আমার বড় ভাবী ইন্তেকাল করেন। শোক সংবাদটি আমার এক বন্ধুকে জানালে প্রসঙ্গক্রমে সে আমাকে একটি মাসআলা বলে। তা হল- ‘স্বামীর জন্য মৃত স্ত্রীকে গোসল করানো, স্পর্শ করা এমনকি দেখাও জায়েয নেই।’। তাই তুমি এ গুরুত্বপূর্ণ মাসআলাটি তোমার ভাইকে জানিয়ে দিয়ো! মাসআলাটিতে আমার সন্দেহ জাগে, ফলে তখন তা আর ভাইয়াকে জানাইনি।

প্রশ্ন হল, আসলেই কি স্বামীর জন্য মৃত স্ত্রীকে গোসল করানো, স্পর্শ করা এবং দেখা নাজায়েয? এক্ষেত্রে শরীয়তের বিধানটি জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

স্বামীর জন্য মৃত স্ত্রীকে গোসল করানো ও স্পর্শ করা জায়েয নয়। তবে বিশুদ্ধ মতানুযায়ী স্বামীর জন্য মৃত স্ত্রীকে দেখা জায়েয আছে। স্বামীর জন্য দেখা জায়েয নয়- এ কথা ঠিক নয়।

-মুসান্নফে ইবনে আবী শাইবাহ, বর্ণনা ১১৯০২; কিতাবুল আছার, ইমাম মুহাম্মাদ রাহ. ১/২৪৫; মুখতাসারুত তাহাবী পৃ. ৪১; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৫০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২২০; আলবাহরুর রায়েক ২/১৭৩; রদ্দুল মুহতার ২/১৯৮

Sharable Link

আবদুল হক - বি. বাড়িয়া

৪৭৬১. Question

মাননীয় মুফতী সাহেব! রমযান মাসে অনেককে দেখা যায় যে, তারা অযু করার পর মুখের ভেতরে অযুর পানি থাকার ভয়ে বারবার থুথু ফেলতেই থাকে, ফলে দ্রæত গলা শুকিয়ে যায়। আবার কেউ কুলির পর একবারও থুথু ফেলে না।

তো প্রশ্ন হল, অযু করার পর মুখে যে আর্দ্রতা থাকে তা কি থুথুর সাথে গিলে ফেলা যাবে, না ফেলে দিতে হবে? এক্ষেত্রে আসলে সঠিক মাসআলাটি কী?

Answer

কুলির পরে মুখে লেগে থাকা আর্দ্রতা বা ভেজাভাব পানির হুকুমে নয়। সুতরাং কুলির পরে থুথুর সাথে তা গিলে ফেললে রোযার কোনো ক্ষতি হবে না। আর এই আর্দ্রতা দূর করার জন্য বারবার থুথু ফেলারও প্রয়োজন নেই; বরং এটা অহেতুক কাজ।

-বাদায়েউস সানায়ে ২/২৩৮; ফাতহুল কাদীর ২/২৫৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৩; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/১০০; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৯৬; মারাকিল ফালাহ পৃ. ৩৬১

Sharable Link

মুহাম্মাদ রাকিব - ওয়েব থেকে প্রাপ্ত

৪৭৬২. Question

মুহতারাম, আমাদের এক ভাই মুহাররমের দশ তারিখ রোযা রেখেছিল। মাগরিবের আগে আযান শুনে তিনি ইফতার করেন। অতপর মসজিদে গিয়ে দেখেন ওয়াক্তের আগে আযান দেওয়ার কারণে কিছু লোক মুআযযিন সাহেবকে বকাঝকা করছে। মুহতারামের নিকট প্রশ্ন হল, ঐ ভাইটির রোযা কি সহীহ হয়েছে? না হলে কী করণীয়?

Answer

বাস্তবেই যদি সময়ের আগে আযান হয়ে থাকে এবং তা শুনে আপনার ঐ ভাই ইফতার করে থাকে তাহলে তার ঐ রোযা আদায় হয়নি। সেক্ষেত্রে পরবর্তীতে উক্ত রোযা তাকে কাযা করে নিতে হবে।

-কিতাবুল আছল ২/১৪৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৫৬; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়্যাহ ১/২১১; ফাতহুল কাদীর ২/২৯০; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪০৫

Sharable Link

মুহাম্মাদ রাকিব - কুমিল্লা

৪৭৬৩. Question

মুহতারাম! গত রমযানে একদিন পুকুরে গোসল করার সময় আমার গলায় কিছু পানি ঢুকে যায়। মুহতারামের নিকট আমার জিজ্ঞাসা হল, এতে কি আমার রোযা ভেঙ্গে গেছে?

উল্লেখ্য যে, গোসল করার সময় রোযার কথা আমার স্মরণ ছিল।

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার রোযা নষ্ট হয়ে গেছে। তাই তা কাযা করে নিতে হবে। কাফফারা লাগবে না।

-কিতাবুল আছল ১/১৬৮; খিযানাতুল আকমাল ১/২৯৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৫৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০২; রদ্দুল মুহতার ২/৪০১

Sharable Link

আবদুল আহাদ - ফেনী

৪৭৬৪. Question

আমাদের এলাকার জামে মসজিদে পূর্ণ দশ দিন ইতিকাফে বসার জন্য কেউ প্রস্তুত হয়নি। অবশ্য তিন জন মিলে ভাগ করে থাকতে চেয়েছে। জানতে চাই, এতে কি সুন্নাত ইতিকাফ আদায় হবে? এবং এলাকাবাসী সুন্নাত ইতিকাফের দায়িত্ব থেকে মুক্ত হতে পারবে?

Answer

না, এভাবে কারো সুন্নত ইতিকাফ আদায় হবে না এবং এলাকাবাসী সুন্নত ইতিকাফ থেকে দায় মুক্ত হবে না। কারণ সুন্নত ইতিকাফের জন্য একজন হলেও রমযানের শেষের পুরো দশ দিন ইতিকাফ করতে হবে। তিন জন ভাগ করে দশ দিন অবস্থান করলে কারো সুন্নত ইতিকাফ আদায় হবে না; সেটা নফল ইতিকাফ বলে গণ্য হবে।

-ফাতহুল কাদীর ২/৩০৫; আলবাহরুর রায়েক ২/২৯৯; হাশিয়াতুত তাহতাবি আলাল মারাকি পৃ. ৩৮২; রদ্দুল মুহতার ২/৪৪৫

Sharable Link

শামছুল হুদা - নোয়াখালী

৪৭৬৫. Question

আমি আবুধাবিতে থাকি। রমযানের ঈদের পরে দেশে এসেছি। আসার সময় যাকাতের অর্থ সাথে নিয়ে আসি। এরপর তা এলাকার গরীবদের দিয়ে দেই। পরে জানতে পারি, আমার ছোট খালুর কিডনিতে পাথর ধরা পড়েছে। অপারেশন করতে হবে। ৬৫ হাজার টাকা লাগবে। সে গরীব মানুষ। এত টাকা জোগাড় করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। আমার মা বললেন, যাকাতের টাকা থেকে হলেও তুমি তাকে সহযোগিতা করো। কিন্তু আমার তো গত বছরের যাকাতের টাকা শেষ হয়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে আমি কি আমার খালুকে আগামী বছরের যাকাতের অর্থ থেকে দিতে পারব?

Answer

আপনার খালু যদি বাস্তবেই যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত হন তাহলে তাকে আপনি আগামী বছরের অগ্রিম যাকাতের নিয়তে টাকা দিতে পারবেন। কেননা নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়ার পরে বছর অতিবাহিত হওয়ার পূর্বেও যাকাত আদায় করা যায়। এক বর্ণনায় এসেছে, হযরত আলী রা. বলেন-

أَنّ الْعَبّاسَ بْنَ عَبْدِ الْمُطّلِبِ سَأَلَ رَسُولَ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ فِي تَعْجِيلِ صَدَقَتِهِ قَبْلَ أَنْ تَحِلّ فَرَخّصَ لَهُ فِي ذَلِكَ.

আব্বাস রা. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বছর অতিবাহিত হওয়ার পূর্বে অগ্রিম যাকাত আদায় করার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আদায়ের অনুমতি দিলেন। (সহীহ ইবনে খুযায়মা, বর্ণনা ২৩৩০)

অবশ্য এক্ষেত্রেও ঐ বছর শেষে সম্পদের হিসাব করতে হবে। যদি অগ্রিম আদায়কৃত অর্থ যাকাতযোগ্য সমুদয় সম্পদের ২.৫% -এর কম হয় তাহলে অবশিষ্ট অংশ আদায় করে দিতে হবে।

-কিতাবুল আছল ২/১২৩; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ২/২৬৬; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৬৪; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়্যাহ ১/১৯৩; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৯৩

Sharable Link

মুহাম্মাদ সা‘দ - কুমিল্লা

৪৭৬৬. Question

আমার বাবার দশ লাখ টাকা ব্যাংকে ছিল। তিনি প্রতি বছর এই টাকাগুলোর যাকাত আদায় করতেন। এই বছর যাকাতবর্ষ পূর্ণ হওয়ার পর তা আদায়ের পূর্বে তিনি মারা যান। মৃত্যুর পূর্বে তিনি আমাদেরকে এই বিষয়টি অবহিত করে যাকাত আদায় করার ওছিয়ত করেছিলেন। কিন্তু এই নিয়ে ওয়ারিছদের মাঝে মতপার্থক্য হয়। মুহতারামের নিকট প্রশ্ন হল-

ক. আমাদের জন্য কি এই টাকার যাকাত দেওয়া আবশ্যক?

খ. বাবার একাউন্টে এই টাকার উপর যে সুদ জমা হয়েছে তা কি আমরা মিরাছ হিসেবে নিতে পারব?

Answer

ক. আপনার বাবা যেহেতু যাকাতবর্ষ শেষ হওয়ার পর মারা গেছেন এবং তিনি যাকাত আদায় করার ওছিয়াতও করেছেন তাই তার রেখে যাওয়া সম্পদের এক তৃতীয়াংশ থেকে উক্ত যাকাত আদায় করে দেওয়া আপনাদের উপর জরুরি। -আলমাবসূত, সারাখসী ২/১৮৫; ফাতাওয়া সিরাজিয়্যাহ, পৃ. ২৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৪১; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৯৪

খ. ইসলামে সুদ হারাম। সুদে অর্জিত সম্পদ পুরোটাই সদকাযোগ্য। এতে মীরাস জারী হয় না। অতএব আপনারা মীরাস হিসেবে ঐ সম্পত্তি থেকে কিছুই পাবেন না। এই টাকা সওয়াবের নিয়ত ছাড়া পুরোটাই সদকা করে দেওয়া আবশ্যক। 

  -আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৬৩; আলবাহরুর রায়েক ৮/২০১; রদ্দুল মুহতার ৬/৩৮৬

Sharable Link

মুহাম্মাদ নাঈম - বাগেরহাট

৪৭৬৭. Question

গত মাসে আমার দোকানের ব্যবসায়িক পণ্যের যাকাতবর্ষ পূর্ণ হওয়ার কিছুদিন পর দুর্ঘটনাক্রমে দোকানে আগুন লেগে অনেক মাল পুড়ে যায়। আর কিছু মাল বাকি থাকে। মুহতারামের নিকট জানার বিষয় হল- এরূপ অবস্থায় আমাকে কি পুরো মালের যাকাত দিতে হবে?

 

Answer

না, এক্ষেত্রে পুড়ে যাওয়া পণ্যগুলোর যাকাত দেওয়া লাগবে না। অবশিষ্ট মালের যাকাত দিলেই চলবে।

-কিতাবুল আছল ২/১০৫; ফাতাওয়া সিরাজিয়্যাহ পৃ. ২৫; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ১/৪৪৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৮০

Sharable Link

মুহাম্মাদ রাকিব - সিলেট

৪৭৬৮. Question

আমি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হিসাবরক্ষক। প্রতি বছর এই প্রতিষ্ঠানের যাকাত আমি হিসাব করে বের করি। এই বছর যাকাত বের করলে বস আমাকে যাকাতের কিছু টাকা দিয়ে বললেন, এই টাকাগুলো তোমার জানাশোনা গরীব লোকদের দিয়ে দিও। আমার এক খালা খুব গরীব। আমি কি তাকে এই টাকাগুলো দিতে পারব?

Answer

হাঁ, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার খালাকে যাকাতের টাকাগুলো প্রদান করতে পারবেন। কেননা যাকাত আদায়ের প্রতিনিধি তার গরিব আত্মীয়কে যাকাত দিতে পারে।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৮৯; ফাতাওয়া বাযযাযিয়াহ ৪/৮৬; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৬৯

Sharable Link

মুহাম্মাদ সাঈফ আলআরেফিন - মিরপুর, ঢাকা

৪৭৬৯. Question

আমার অতি নিকটাত্মীয় কয়েকজন ২০১৩ সাল হতে তাদের আত্মীয়দের যাকাত দিয়ে আসছে। কিন্তু যাদেরকে যাকাত দিচ্ছে তারা সবাই যাকাত পাওয়ার মত গরিব নয়। মাসআলা না জানার কারণেই এমনটা হচ্ছে। তাই জানতে চাই, কেমন গরিবকে যাকাত দেওয়া যায়। যাকাতের যোগ্য না হওয়া সত্তে¡ও এতদিন যা দেওয়া হয়েছে তার হুকুম কী? যাকাত প্রদানকারীরা মহিলা। তাদের সঠিক মাসআলা জানা নেই এবং জানার আগ্রহও নেই।

Answer

শরীয়তে সম্পদশালী ব্যক্তির উপর যাকাত ফরয হওয়ার বিধানের পাশাপাশি কাদেরকে যাকাত দেওয়া যাবে তাও সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। তাই যাকাতযোগ্য সম্পদের ২.৫% যে কাউকে দিয়ে দেওয়ার দ্বারাই যাকাত আদায় হয়ে যাবে না; বরং উপযুক্ত খাতে যাকাত পৌঁছানোর ব্যবস্থা করাও যাকাতদাতার কর্তব্য। এবং কাকে যাকাত দেওয়া যাবে, কাকে দেওয়া যাবে না- এ সংক্রান্ত জ্ঞান অর্জন করাও কর্তব্য।

আর প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার দায়িত্ব হল আপনার নিকটাত্মীয়দের এ বিষয়টি বোঝানো যে, যাকাত গরিবদের হক। কেউ নেসাব পরিমাণ তথা সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা বা সমপরিমাণ প্রয়োজন-অতিরিক্ত সম্পদের মালিক হলে তাকে যাকাত দেওয়া যাবে না। এ কাজটি আপনি নিজেও করতে পারেন। অন্য কারো মাধ্যমেও করাতে পারেন।

এছাড়াও ঐ মহিলাদেরকে যাকাতের মাসায়িল বিষয়ক নির্ভরযোগ্য দ্বীনী কিতাবাদি পড়তে দিতে পারেন।

উল্লেখ্য, অভাবী আত্মীয়-স্বজন যাকাত গ্রহণের মতো গরিব না হলেও যাকাত ছাড়া সামর্থ্য অনুযায়ী নফল দান থেকে তাদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করা যেতে পারে। কেননা, সামর্থ্যবানদের সম্পদে ফরয, ওয়াজিব দান ছাড়াও দরিদ্র প্রতিবেশীদের ও আত্মীয়দের হক রয়েছে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-

وَ فِیْۤ اَمْوَالِهِمْ حَقٌّ لِّلسَّآىِٕلِ وَ الْمَحْرُوْمِ.

আর তাদের ধন-সম্পদে রয়েছে সাহায্যপ্রার্থী ও বঞ্চিতদের হক। -সূরা যারিয়াত (৫১) : ১৯

আর মাসআলার জ্ঞান না থাকার কারণে  যে যাকাতের যোগ্য নয় তাকে যাকাত দিয়ে দিলে আদায় হবে না। ঐ যাকাত পুনরায় আদায় করতে হবে। তবে হাঁ, সাহায্য চাওয়ার কারণে প্রকৃত হকদার মনে করে যাকাত দিয়ে থাকলে তা আদায় হয়ে যাবে।

-সহীহ বুখারী, হাদীস ১৩৯৫; জামে তিরমিযি, হাদীস ৬৫২; বাদায়েউস সানায়ে ২/১৫৭, ১৬২-১৬৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২১২, ২১৫; আলবাহরুর রায়েক ২/২৪৫-৭; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৩৪৮, ৩৫৩

Sharable Link

ইমাম হাসান - নাটোর

৪৭৭০. Question

আল্লাহর রহমতে আমার গত বছর হজ্বে যাওয়ার সুযোগ হয়। ১২ই যিলহজ্ব মাগরীবের পর রাস্তায় এক বৃদ্ধের সাথে দেখা হয়। তিনি বললেন, বাবা, আমি রাস্তা হারিয়ে ফেলেছি। আমার বাসাটা একটু খুঁজে দেবে? তার বাসা খুঁজতে খুঁজতে আলাপচারিতায় জানতে পারলাম তিনি তখনও তাওয়াফে যিয়ারত করেননি। মিনা থেকে ১২ই যিলহজ্বের কংকর মারার পর কাফেলার সাথে মক্কার উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলেন। কিন্তু ভিড়ে কাফেলা থেকে বিছিন্ন হয়ে যান। কাফেলাকে খুঁজে না পেয়ে শেষে একাই মাগরীবের সময় মক্কায় এসে পৌঁছান। আমি বললাম, ১২ই যিলহজ¦ সূর্যাস্তের আগে তাওয়াফ না করার কারণে আপনার উপর তো দম ওয়াজিব হয়ে গেছে। তিনি বললেন, আমি তো বিকালের আগেই তাওয়াফ করার জন্য বের হয়েছিলাম। কিন্তু পথ ও কাফেলা হারিয়ে ফেলায় দেরি হয়ে গেছে। এখন এশার সময়ই তাওয়াফ করে নিচ্ছি। তাহলেও কি আমার দম দিতে হবে?

মুফতী সাহেবের কাছে প্রশ্ন হল, এধরনের ক্ষেত্রেও কি দম ওয়াজিব হবে? কাফেলা খুঁজতে গিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে তাওয়াফে যিয়ারত না করতে পারলে যদি পরে করে নেওয়া হয় তাহলেও কি দম দিতে হবে?

Answer

তাওয়াফে যিয়ারাতের সময় ১০ই যিলহজ্ব সুবহে সাদিক থেকে ১২ই যিলহজ্বের সূর্যাস্ত পর্যন্ত। শরীয়তসম্মত ওজর ব্যতীত এসময়ের ভিতর তাওয়াফে যিয়ারত না করে পরে করলে জরিমানা হিসাবে দম ওয়াজিব হয়। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তির উপর দম ওয়াজিব হয়েছে।

উল্লেখ্য যে, ‘পথ হারিয়ে যাওয়া’ এক্ষেত্রে ওজর হিসাবে ধর্তব্য হবে না। তিনি তো আরো আগেই ঘর থেকে বের হতে পারতেন। তবে পথ হারিয়ে যাওয়ার কারণে বিলম্বের গুনাহ হবে না। তবে তাকে দম দিতে হবে।

আর দম অর্থ এক বছর বয়সী ছাগল, ভেড়া বা দুম্বা জবাই করা কিংবা গরু, মহিষ বা উটের সাত ভাগের এক ভাগ দেওয়া। আর দমের পশু হেরেম এলাকাতেই জবাই করতে হবে।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ, বর্ণনা ১৩২২৭; আলমাবসূত, সারাখসী ৪/৪১; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৯৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৬০৬; খিযানাতুল ফিকহ পৃ. ৯৪; রদ্দুল মুহতার ১/৫০৭; মানাসিকে মোল্লা আলী আলকারী পৃ. ৩৪৮, ৩৯৩; গুনয়াতুন নাসিক পৃ. ২৩৯

Sharable Link

মুহাম্মাদ আশিক - ওয়েব থেকে প্রাপ্ত

৪৭৭১. Question

মুহতারাম, ইহরাম অবস্থায় আমি ৮ তারিখ রাতে এশার নামাযের পর চাদর গায়ে দিয়ে ঘুমিয়ে ছিলাম। এই অবস্থায় যেহেতু মাথা ও মুখ ঢাকা যায় না, তাই আমি বুক পর্যন্ত চাদর গায়ে দিয়েছিলাম। ফযরের আগে ঘুম থেকে ওঠার সময় খেয়াল করলাম, ঘুমের ভিতরে অজান্তে পূর্ব অভ্যাস অনুযায়ী আমি চাদর দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলেছি। মুহতারামের নিকট আমার জিজ্ঞাসা হল, এক্ষেত্রে আমার করণীয় কী? এরকম অনিচ্ছাকৃত ভুলের কারণে কি কাফফারা দিতে হয়?

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যেহেতু ১২ ঘণ্টার কম সময় মুখ ঢেকে রেখেছিলেন। তাই আপনাকে এক সদকাতুল ফিতর পরিমাণ সদকা করতে হবে। এক্ষেত্রে দম ওয়াজিব হবে না। আর কাজটি অনিচ্ছাকৃত হলেও সদকা আদায় করা আবশ্যক।

-আলমাবসূত, সারাখসী ৪/১২৮; বাদায়েউস সানায়ে ২/৪১০; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৮৮; মানাসিক, মোল্লা আলী আলকারী পৃ. ৩০৭; গুনয়াতুন নাসিক পৃ. ২৫৪

Sharable Link

আবদুল্লাহ আলহাসান - জামেয়া মাদানিয়া, সিলেট

৪৭৭২. Question

আমাদের মসজিদের একটি জমি দীর্ঘদিন থেকে মহল্লার এক ব্যক্তির দখলে ছিল এবং সে জমিটির মালিকানা দাবি করে আসছিল। ২০০৬ সালে সে জমিটি আরেকজনের কাছে বিক্রি করে দেয়। লোকটি তাতে বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস শুরু করে। ২০০৭ সালে আমরা ক্রেতার বিরুদ্ধে মামলা করি। সে নানা অপকৌশলে মামলার রায় তার পক্ষে নিয়ে যায়। ২০০৯ সালে আরেক সূত্র ধরে আমরা পুনরায় মামলা করি। দীর্ঘদিন পরে গত বছর আদালত মসজিদের পক্ষে রায় দেয়। সে জমি বুঝিয়ে না দিয়ে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে। বিষয়টির এভাবে কোনো নিষ্পত্তি না দেখে এলাকার কিছু গণ্যমান্য ব্যক্তি একটি সমঝোতা করতে চাচ্ছেন যে, যেহেতু সে বাড়ি নির্মাণ করে ফেলেছে তাই জমিটির বর্তমান বাজারমূল্য মসজিদকে দিয়ে দিবে। জানার বিষয় হল, জমির বিপরীতে এভাবে মূল্য নেওয়া বৈধ হবে কি না? এক্ষেত্রে ঐ লোক কি মূল বিক্রেতা থেকে ক্ষতিপূরণ নিতে পারবে?

Answer

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ঐ ব্যক্তির জন্য মসজিদের জায়গাটি কেনা এবং তাতে বাড়ি নির্মাণ করা বৈধ হয়নি। এখন তার কর্তব্য, মসজিদের জমিটি মসজিদের জন্য ফেরত দিয়ে নিজেকে দায়মুক্ত করা। এক্ষেত্রে তার নির্মিত ঘরটি সে  সরিয়ে নিতে পারবে। আর মসজিদ কর্তৃপক্ষ চাইলে ঘরটি তার থেকে কিনেও  রাখতে পারবে। কিন্তু বর্তমান ক্রেতা যদি জমি দিতে অস্বীকার করে এবং কোনোভাবে তা উদ্ধার করা সম্ভব না হয় তাহলে সেক্ষেত্রে মসজিদ কর্তৃপক্ষের জন্য জমির মূল্য বাবদ যা পায় তা নেওয়া বৈধ হবে। এভাবে টাকা আদায় হলে এর দ্বারা অন্যত্র মসজিদের জন্য স্থায়ী সম্পদ খরিদ করবে। আর ঐ ক্রেতা তার বিক্রেতার কাছ থেকে এ ক্ষতিপূরণ আদায় করতে পারবে।

-সহীহ বুখারী, হাদীস ২৭৬৪; ফাতাওয়া বাযযাযিয়াহ ৬/২৫৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৪৪৮; আলবাহরুর রায়েক ৫/২৪২

Sharable Link

মাহবুবুর রহমান মারুফ - বরিশাল

৪৭৭৩. Question

আমরা জানি, একজাতীয় জিনিস সমান সমান করা ব্যতীত কমবেশি করে লেনদেন করা অথবা বিনিময় করা জায়েয নেই।

এখন প্রশ্ন হল, আমরা যখন মোবাইলে টাকা রির্চাজ করার জন্য দোকানদারকে বিশ টাকা দেই, তখন সে ১ টাকা কম ১৯ টাকা রির্চাজ করে দেয়। এক্ষেত্রে আমাদের এই লেনদেন কমবেশি করার কারণে সুদী লেনদেন হবে কি না?

আর যদি সুদ হয় তাহলে বিগত দিনগুলোতে যে লেনদেন করা হয়েছে তাতে উভয়ের কী হুকুম? বিস্তারিত জানালে আমরা সকলেই উপকৃত হতাম।

Answer

মোবাইলে টাকা রিচার্জের ক্ষেত্রে কম বেশি লেনদেন করা সুদ নয়। কারণ এক্ষেত্রে একজাতীয় জিনিসের লেনদেন হয় না। কেননা মোবাইলে টাকা রির্চাজ করার মানে হচ্ছে টেলি যোগাযোগ সেবা ক্রয় করা। সুতরাং একদিকে টাকা অন্যদিকে মোবাইল অপারেটরের সেবা ক্রয় করা হচ্ছে। টাকার মোকাবেলায় টাকা হচ্ছে না। তাই মোবাইলে কম টাকা রির্চাজ হলেও তা সুদ হবে না।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৩/১০২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/১১৭; আদ্দুররুল মুখতার ৫/১৭২

Sharable Link

আশরাফুল আলম - মিরপুর, ঢাকা

৪৭৭৪. Question

আমি শুনেছি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে চাকরি করা হারাম। বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্ষেত্রেও কি একই বিধান? বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যক্রম অন্যান্য ব্যাংকের মত নয়। এরা কাউকে (ব্যক্তিগতভাবে) ঋণ দেয় না, আমানতও নেয় না। তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঋণ দেয় অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কাজ ও প্রতিষ্ঠার কারণ দেশের আর্থিক ব্যবস্থা ঠিক রাখা ও ভারসাম্য রক্ষা করা। এক্ষেত্রে এখানে চাকরি করা কি হারাম হবে? যদি উত্তর দেয়া হয় তাহলে খুব উপকৃত হব।

Answer

বাংলাদেশ ব্যাংক সকল সুদী ব্যাংকের পরিচালক। সুদী ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা করাই তার মূল কাজ। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি করা সুদী অর্থব্যবস্থায় সহযোগিতার নামান্তর। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে, তাদের আয়ের সিংহভাগই সুদ থেকে অর্জিত। তাই প্রশ্নোক্ত ব্যাংকে চাকুরি করার হুকুম অন্যান্য ব্যাংকে চাকরি করার মতই।

-সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৫৯৮; তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ১/২১৯

Sharable Link

জাহাঙ্গীর - ভোলা

৪৭৭৫. Question

আমি আমাদের এলাকার ‘উদয়ন সমবায় সমিতির’ একজন সদস্য। আমাদের সমিতিতে বেশ কিছু টাকা জমা হলে কোষাধ্যক্ষ সাহেবকে মুযারাবার ভিত্তিতে ব্যবসার জন্য ৫ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়। তিনি প্রথমে আগ্রহ দেখালেও পরে ঝামেলা হবে ভেবে রাজি হচ্ছিলেন না। তাই সমিতির সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, তিনি যেভাবে ইচ্ছা সেভাবেই ব্যবসা পরিচালনা করবেন, ব্যবসার উপকারার্থে যে কোনো সিদ্ধান্ত তিনি নিবেন- এতে কারো আপত্তি থাকবে না। তিনি (একথা ভেবে যে, ব্যবসায় তার অভিজ্ঞতা নেই তাই লাভ না হতে পারে) তার এক আমানতদার বন্ধুকে সমিতির টাকা মুদারাবা চুক্তিতে দুই বছরের জন্য দিয়ে দেন। শতকরা হারে লাভের ৩০% সে পাবে ৭০% সমিতি পাবে। এক্ষেত্রে বিষয়টি তিনি দু-একজনের সাথে মৌখিকভাবে আলোচনা করলেও আনুষ্ঠানিকভাবে সকলের থেকে অনুমতি নেননি।

ঘটনাটি জানাজানি হলে অনেক সদস্য এতে অসন্তুষ্ট হন। তারা টাকা ফিরিয়ে নেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে অনেক ঝামেলা হচ্ছে। সভাপতি চাচ্ছেন কোনোভাবে চলতি বছর শেষ করতে। কিন্তু অন্যান্যরা এখনই টাকা ফিরিয়ে আনার দাবি জানাচ্ছেন।

মুফতী সাহেবের কাছে নিবেদন হল, নিজে ব্যবসা না করে এভাবে অন্যের সাথে চুক্তি করা কি জায়েয হয়েছে? সদস্যদের অভিযোগের কারণে এখনই তিনি চুক্তি ভঙ্গ করতে বাধ্য কি না? এক্ষেত্রে  এক বছর শেষ করার দাবি কি শরীয়তসম্মত? এ সময় ব্যবসায় কোনো লোকসান হলে এর দায়ভার কে নিবে?

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু ঐ ব্যক্তিকেই মুদারাবা ব্যবসা করার জন্য টাকা দেওয়া হয়েছিল তাই সমিতির সদস্যদের অনুমতি ছাড়া তার জন্য অন্যজনের সাথে মুদারাবা চুক্তি করা সহীহ হয়নি। এখন সদস্যরা এতে আপত্তি জানালে তাকে টাকা ফিরিয়ে দিতে হবে। বছরের শেষ পর্যন্ত চুক্তি বহাল রাখার সুযোগ নেই। অবশ্য যেহেতু সে অন্যজনের সাথে চুক্তি করে ফেলেছে এবং তা ব্যবসায়িক স্বার্থেই করেছে তাই সমঝোতার ভিত্তিতে তাকে কিছু সময় দেওয়া উচিত। আর লোকটি যেহেতু সমিতির সদস্যদের অনুমতি ছাড়া এমনটি করেছে তাই ব্যবসায় কোনো লোকসান হলে এর ক্ষতিপূরণ তাকে একাই বহন করতে হবে।

-মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যাহ, মাদ্দাহ ১৪১৫; শরহুল মাজাল্লাহ ৪/৩৪৪; আলমুহীতুল বুরহানী ১৮/১৭৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৫/৪৩১; রদ্দুল মুহতার ৫/৬৪৯

Sharable Link

ইবনে জাওয়াদ - চট্টগ্রাম

৪৭৭৬. Question

আমার আম্মা প্রগতি লাইফ ইনসিওরেন্স দশ বছর মেয়াদী একটি বীমা করেন। মাসে ২০০ টাকা করে দশ বছরে ২৪০০০ টাকা জমা হয়। ইনসিওরেন্স কোম্পানি এ টাকার সাথে আরোও ১৬০০০ টাকা মিলিয়ে মোট ৪০০০০ টাকা দিয়েছে। যা একটি ব্যাংক একাউন্টে রয়েছে। তিনি এখন জানতে চাচ্ছেন যে, তার এ টাকার উপরে কুরবানী ওয়াজিব হবে কি না? কেউ কেউ বলেছে, ইনসিওরেন্স ডিভিডেন্ড হারাম। তাই তার উপর কুরবানী আসবে না। আবার কেউ বলেছে, যেহেতু অধিকাংশ টাকা হালাল, তাই এর উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে। সঠিক মাসআলাটি  জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

ইনসিওরেন্স কোম্পানি মূল জমার অতিরিক্ত যে টাকা দিয়েছে তা সম্পূর্ণ হারাম। আর হারাম টাকা নেসাবের অন্তর্ভুক্ত হয় না। এবং সে টাকার উপর কুরবানীও ওয়াজিব হয় না। বরং হারাম টাকা পুরোটাই সদকাযোগ্য। অতএব আপনার মায়ের জমাকৃত ২৪,০০০ টাকা ছাড়া তার নিকট যদি অন্য কোনো সম্পদ না থাকে তাহলে এ টাকার কারণে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে না।

-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/২৩৩; আলবাহরুর রায়েক ২/২০৫; রদ্দুল মুহতার ২/২৯১; আততাকরীরুল মুখতার, রাফেয়ী ২/১৩৩

Sharable Link