মোজার উপর কতটুকু মাসেহ করা ফরয? মাসেহের পদ্ধতি বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।
মোজার উপর কতটুকু মাসেহ করা ফরয? মাসেহের পদ্ধতি বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।
মোজার উপর হাতের তিন আঙ্গুল পরিমাণ মাসেহ করা ফরয।
আর মাসেহর সুন্নত পদ্ধতি হল, প্রথমে উভয় হাতের আঙ্গুলগুলো পানিতে ভিজিয়ে নিবে। এরপর ডান হাতের আঙ্গুলগুলোর অগ্রভাগ ডান মোজার উপর পায়ের আঙ্গুল বরাবর এবং বাম হাতের আঙ্গুলগুলোর অগ্রভাগ বাম মোজার উপর পায়ের আঙ্গুল বরাবর সামান্য ফাঁকা করে রাখবে। অতপর উভয় হাতের আঙ্গুলগুলো পায়ের নলা পর্যন্ত টেনে নিবে।
-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৩; বাদায়েউস সানায়ে ১/৮৭; আলমুহীতুল বুরহানী ১/৩৪০; আলবাহরুর রায়েক ১/১৭৩; শরহুল মুনইয়া ১০৯; আদ্দুররুল মুখতার ১/২৭২Sharable Link
আমাদের এলাকায় মশা খুব বেশি। ঘুম থেকে উঠে অনেক সময় গেঞ্জিতে মশার রক্ত দেখা যায়। এমন হলে আমি সাধারণত গেঞ্জি পরিবর্তন করে নামায পড়তে যাই। কয়েকদিন আগেও মশার রক্তের কারণে গেঞ্জি পরিবর্তন করার সময় এক সাথী আমাকে বলল যে, মশার রক্ত নাকি নাপাক নয়। তার এ কথা কি সঠিক?
হাঁ, আপনার সাথী ঠিকই বলেছে। মশার রক্ত নাপাক নয়। তাই ঐ কাপড় পরে নামায পড়া যাবে।
হাসান বসরী, আতা, আবু জাফর, উরওয়া প্রমুখ তাবেয়ীগণ থেকে বর্ণিত আছে যে, কাপড়ে মাছি-মশার রক্ত লাগলে কোনো সমস্যা হবে না। তবে এক্ষেত্রে গেঞ্জি পরিবর্তন করে নেওয়া বা ধুয়ে পরিষ্কার করে নেওয়া যে ভালো তা তো স্পষ্ট।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ২০৩১, ২০৩২, ২০৩৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৪৩২; বাদায়েউস সানায়ে ১/১৯৫; আলবাহরুর রায়েক ১/২২৯Sharable Link
আমাদের এলাকার এক মসজিদের ইমাম আলিয়া মাদরাসার শিক্ষক। তিনি সেখানে উপযুক্ত বয়সের ছেলে-মেয়েদেরকে পড়ান। জানার বিষয় হল,পর্দার বিধান লঙ্ঘনকারী ইমামের পিছনে নামায পড়ার বিধান কী? বিস্তারিত দলিল-প্রমাণসহ জানতে চাই।
সহশিক্ষার প্রচলিত পদ্ধতি শরীয়তের নীতি ও আদর্শ পরিপন্থী। পর্দার বয়স হয়ে যাওয়ার পর গায়রে মাহরাম মেয়েদেরকে সরাসরি পড়ানো নাজায়েয। এতে পর্দার হুকুম লঙ্ঘনের গুনাহ ছাড়াও আরো অনেক গুনাহর আশঙ্কা থাকে। নিয়মিত এমন গুনাহর কাজে লিপ্ত ব্যক্তি ইমাম হওয়ার যোগ্য নয়। শরীয়তের দৃষ্টিতে ইমামতি একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। সংশ্লিষ্ট মাসআলা-মাসাইল জানেন এবং সুন্নতের অনুসারী পরহেযগার ব্যক্তিই এ পদের যোগ্য।
সুতরাং প্রশ্নোক্ত ব্যক্তি ঐ সহশিক্ষার প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত অবস্থায় ইমাম হওয়ার যোগ্য নয়। এ ধরনের ব্যক্তির ইমামতি মাকরূহে তাহরীমী। তবে এমন ব্যক্তির পিছনে নামায আদায় করলেও তা আদায় হয়ে যাবে।
প্রকাশ থাকে যে, মসজিদ কমিটির কর্তব্য হল, যথাসম্ভব উপযুক্ত ব্যক্তিকে ইমাম হিসেবে নির্বাচন করা,প্রকাশ্যে গুনাহয় লিপ্ত কিংবা শরীয়তের বিধানের প্রতি উদাসীন ব্যক্তিকে এ পদে নিয়োগ না দেওয়া।
-আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৭; রদ্দুল মুহতার ১/৫৬০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৮৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৯২; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৪৮; শরহুল মুনইয়াহ ৫১৩Sharable Link
আমি একদিন যোহরের আগের চার রাকাত সুন্নত পড়ছিলাম। ভুলে দ্বিতীয় রাকাতের বৈঠকের পর সালাম ফিরিয়ে ফেলি। এ অবস্থায় আমার করণীয় কী? আমাকে কি বাকি দু’রাকাত কাযা করতে হবে?
ভুলে সালাম ফিরিয়ে দিলে নামায ভঙ্গ হয় না। তাই প্রশ্নোক্ত অবস্থায় নামায পরিপন্থী কোনো কাজ না করে থাকলে দাঁড়িয়ে বাকি দুই রাকাত পড়ে সাহু সিজদা করত চার রাকাত পূর্ণ করে নিতে পারতেন। কিন্তু আপনি যেহেতু তা পূর্ণ করেননি তাই যে দু’রাকাত পড়া হয়েছে তা আদায় হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে বাকি দুই রাকাত কাযা পড়তে হবে না। অবশ্য যোহরের পূর্বে চার রাকাত সুন্নত যেহেতু আদায় হয়নি তাই জামাতের আগে সময় থাকলে তা পড়ে নিতে হবে। আর জামাতের আগে সময় না থাকলে জামাত শেষে দুই রাকাত সুন্নত আদায়ের পর পূর্বের চার রাকাত পড়ে নিবে।
-কিতাবুল আছল ১/১৩৪; বাদায়েউস সানায়ে ২/৭-৮; আলবাহরুর রায়েক ২/৫৯; রদ্দুল মুহতার ২/৩২, ২/৫৯; আদ্দুররুল মুখতার ১/২৯০; ফাতহুল কাদীর ১/৪১৫Sharable Link
আমি জানি যে, হানাফী মাযহাবে ফজরের নামায ফর্সা হওয়ার পর আদায় করা উত্তম। তাই আমাদের মসজিদেও দেরি করে ফজরের নামায শুরু হয়ে থাকে। কখনও কখনও সালাম ফেরানোর পর দেখি, সূর্য উদয়ের সময় একেবারেই নিকটবর্তী। এত বিলম্ব করে পড়া কি ঠিক? কতটুকু আগে জামাত শুরু করা উচিত। এ বিষয়ে সঠিক নির্দেশনা প্রদান করলে কৃতজ্ঞ হব।
সুবহে সাদিকের পর যখন অন্ধকার দূর হয়ে চারদিক ফর্সা হয় তখন ফজরের জামাত আদায় করা উত্তম। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা ফজরের নামায ফর্সা করে আদায় কর। কেননা তা অধিক সওয়াবের কাজ। -জামে তিরমিযী, হাদীস : ১৫৪
সুতরাং ফজরের জামাত ফর্সা হওয়ার পরই শুরু করা উত্তম। তবে এতটা বিলম্বে শুরু করবে না যে জামাত শেষ করতেই সূর্যোদয় নিকটবর্তী হয়ে যায়। বরং এমন সময় শুরু করবে যেন কোনো কারণবশত যদি নামায নষ্ট হয়ে যায় তাহলে সুন্নত-কেরাতসহ আবার স্বাভাবিকভাবে নামায আদায় করা সম্ভব হয়। অর্থাৎ সূর্যোদয়ের অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট আগে জামাত শুরু করা উচিত। এর বেশি বিলম্ব করা ঠিক নয়।
-কিতাবুল আছল ১/১২৩; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৮; ফাতহুল কাদীর ১/১৯৯; শরহুল মুনইয়াহ ২৩২Sharable Link
নামায চলাকালীন অনিচ্ছাকৃত মূত্র ফোঁটা নির্গত হলে কি নামায বাতিল হয়ে যাবে?
নামাযে ইচ্ছা-অনিচ্ছায় প্রস্রাবের ফোঁটা বের হলে অযু নষ্ট হয়ে যাবে এবং নামাযও নষ্ট হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে অযু করে নতুনভাবে নামায পড়তে হবে। তবে নিশ্চিতভাবে প্রস্রাবের ফোঁটা বের হলেই কেবল অযু নষ্ট হবে,শুধু সন্দেহের উপর ভিত্তি করে নামায ছাড়া যাবে না।
-আলমুহীতুল বুরহানী ১/১৮০; আলবাহরুর রায়েক ১/৩১; শরহুল মুনইয়া ১২৪; আদ্দুররুল মুখতার ১/১৩৪Sharable Link
রমযানে বিতরের জামাতে কেউ মাসবুক হলে কী করণীয়? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।
কোনো ব্যক্তি যদি বিতর নামাযের দ্বিতীয় বা তৃতীয় রাকাতে শরিক হয় তাহলে ইমামের সাথেই দুআ কুনূত পড়ে নিবে। এরপর ছুটে যাওয়া নামায স্বাভাবিক নিয়মে আদায় করবে। অর্থাৎ অন্য নামাযে মাসবুক হলে যেভাবে আদায় করতে হয় সেভাবেই আদায় করবে।
আর যদি তৃতীয় রাকাতের রুকুতে শরিক হয় তাহলে ঐ রাকাতের দুআ কুনূত পেয়েছে বলে ধর্তব্য হবে। তাই এক্ষেত্রেও পরবর্তীতে আর দুআ কুনূত পড়বে না।
আর যদি শেষ রাকাতের রুকু না পায় তাহলে ইমামের সালামের পর দাঁড়িয়ে সাধারণ নিয়মে তিন রাকাত পড়বে এবং তৃতীয় রাকাতে দুআ কুনূত পড়বে।-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১১১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৪৫; আলবাহরুর রায়েক ২/৪১; শরহুল মুনইয়া ৪২১Sharable Link
কোনো বেওয়ারিশ লাশ দাফনের পদ্ধতি কী হতে পারে? যখন তাকে চেনার কোনো উপায় থাকে না যে সে মুসলমান, নাকি ভিন্ন ধর্মের?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মুসলিম হওযার বাহ্যিক কোনো নিদর্শন পাওয়া গেলে যেমন নাম পোশাক ইত্যাদি কিংবা শারীরিক নিদর্শন যেমন খতনা ইত্যাদি থাকলে মুসলমানের লাশের মত আচরণ করতে হবে। অর্থাৎ মুসলমানের লাশের মতই গোসল দিবে এরপর কাফন-জানাযা শেষে মুসলমানদের কবরস্থানেই দাফন করবে। আর যদি মুসলিম হওয়ার বাহ্যিক বা শারীরিক কোনো নিদর্শনই পাওয়া না যায় তাহলে মুসলমানদের এলাকায় এ ধরনের লাশ পাওয়া গেলে তাকেও মুসলমান গণ্য করা হবে এবং মুসলমানের লাশের মতই গোসল-জানাযা ও দাফন করবে। আর যদি এ ধরনের নিদর্শনহীন লাশ অমুসলিমদের এলাকায় পাওয়া যায় তাহলে সেক্ষেত্রে তাকে গোসল দিয়ে কোনোরকম কাফন পরাবে। তবে তার জানাযা পড়বে না। অতপর অমুসলিমদের কবরস্থানে তাকে দাফন করবে।
-আলবাহরুর রায়েক ২/১৭৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫৯; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/১০১; শরহুল মুনইয়া ৬০৬Sharable Link
আমার কাছে এক লক্ষ টাকা আছে, যা আমার খোরপোষের বাইরে। এখন আমার উপর কি যাকাত ফরয হবে? আর ফরয হলে কত টাকা আদায় করতে হবে? জানিয়ে উপকৃত করবেন।
হাঁ, এক বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর ঐ এক লক্ষ টাকার উপর যাকাত ফরয হবে। আর যাকাত দিতে হবে ২.৫০% হিসাবে এক লক্ষ টাকায় দুই হাজার পাঁচ শত টাকা।
-আলমুহীতুল বুরহানী ৩/১৫৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/১৫৪-১৫৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৩৭; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৪৯;Sharable Link
গত বছর আমি হজ্বে গিয়েছিলাম। দেশ থেকে ইহরাম বেঁধে যাইনি। ইচ্ছা ছিল মীকাত অতিক্রম করার আগে ইহরাম বেঁধে নেব। কিন্তু পরে আর মনে ছিল না। ইহরাম না বেঁধে মীকাত অতিক্রম করেছি। জেদ্দা বিমান বন্দরে নামার পর আমার এক আত্মীয় জানতে পারলে বলেন, আগে মদীনায় আমার বাসায় চলে আসুন। পরে হজ্বের আগে মদীনা থেকে ইহরাম বেঁধে হজ্ব করতে পারবেন। তার পরামর্শ অনুযায়ী আমি প্রথমে হারামে প্রবেশ না করে অন্য পথে সরাসরি মদীনায় গিয়ে সেখান থেকে ইহরাম বেঁধে হজ্ব করেছি। দেশে আসার পর এক ব্যক্তি বললেন, ইহরাম না বেঁধে মীকাত অতিক্রম করার কারণে নাকি আমার উপর দম ওয়াজিব হয়েছে।
তাই জানার বিষয় হল, ইহরাম না বেঁধে মীকাত অতিক্রম করার কারণে কি আমার উপর দম ওয়াজিব হয়েছে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ইহরাম না বেঁধে জেদ্দায় চলে এলেও পরবর্তীতে সেখান থেকে যেহেতু আপনি সরাসরি মক্কা মুকাররমায় যাননি; বরং মদীনায় গিয়ে সেখান থেকে ইহরাম বেঁধে হেরেমে গিয়েছেন তাই আপনার উপর দম ওয়াজিব হয়নি।
উল্লেখ্য যে, উমরাহ বা হজ্বের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার সময় নিজ এলাকা থেকেই ইহরাম বেঁধে নেওয়া উত্তম। সাহাবায়ে কেরাম সিরিয়া, বসরা, বায়তুল মাকদিস, কাদেসিয়ার মতো দূর-দূরান্ত এলাকা থেকে ইহরাম বেঁধে হজ্ব করতে আসতেন। এই মাসআলার উপর আমল করলে উক্ত জটিলতায় পড়তে হত না।
-সুনানে আবু দাউদ ২/৪১৩; মুসনাদে আহমাদ ৪৪/১৮১; আততামহীদ ১৫/১৪৫; সুনানে বায়হাকী ৫/৩১; মাবসূত, সারাখসী ৪/১৭৩; বাদায়েউস সানায়ে ২/৩৭৩; আলবাহরুর রায়েক ৩/৪৮; ফাতহুল কাদীর ৩/৩৩৪; ইরশাদুস সারী আলা মানাসিকি মোল্লা আলী কারী ৯৪-৯৫Sharable Link
জনৈক ব্যক্তি সার্বিকভাবে দ্বীনদার ও সম্ভ্রান্ত। পরিবারের সবাই দ্বীন-ধর্ম বিশেষত পর্দা-পুশিদার ব্যাপারে খুবই সচেতন। বর্তমানে উক্ত ব্যক্তির স্ত্রীর উপর হজ্ব ফরয হয়েছে। হজ্বে যেতে হলে আইডি কার্ড ও পাসপোর্ট করতে হবে। এগুলোতে ছবি অত্যাবশ্যকীয়। ছবি যদিও কোনো মহিলার মাধ্যমে তোলা সম্ভব হবে কিন্তু পাসপোর্টের ছবি অনেক পরপুরুষের নজরে পড়বে। বিশেষ করে জেদ্দায় পাসপোর্টের ছবি দেখিয়ে তার বাহককে তালাশ করা হয়। মুফতী ছাহেবের খেদমতে আরজ এই যে, এসব বিবেচনায় উক্ত ব্যক্তির স্ত্রীর জন্য নিজে হজ্বে না গিয়ে বদলি হজ্ব করানোর সুযোগ আছে কি?
পর্দার বিধানের প্রতি যথাযথভাবে আমল করা এবং এ ব্যাপারে দৃঢ় মানসিকতা ও ঈমানী গায়রত ও জযবা প্রশংসনীয় বিষয়। একজন পর্দানশীন মুমিন নারীর জন্য তার চেহারা পরপুরুষের সম্মুখে অনাবৃত হওয়া এবং তার ছবি অন্যদের সামনে প্রদর্শিত হওয়া স্বভাবতই মনোকষ্টের কারণ। তবে পর্দা যেমন আল¬াহ তাআলার বিধান তেমনি হজ্বও তাঁরই গুরুত্বপূর্ণ ফরয হুকুম। বান্দার কর্তব্য হল, সর্বদা নিজের জযবা ও আবেগের উপর আল্লাহ তাআলার হুকুমকে প্রাধান্য দেওয়া এবং আল্লাহ তাআলার হুকুমের সামনে নিজের যুক্তি ও আবেগকে সমর্পিত করা। এটিই প্রকৃত বন্দেগী। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উক্ত মহিলার উপর যেহেতু হজ্ব ফরয এবং নিজে হজ্ব করার মতো শারীরিক শক্তি-সামর্থ্য তার আছে তাই তার নিজের হজ্ব নিজেকেই গিয়ে করতে হবে। পাসপোর্টের ছবি পরপুরুষ দেখবে-এই কারণে বদলি করানো জায়েয হবে না। এক্ষেত্রে বদলি করালে তার ফরয হজ্ব আদায় হবে না।
প্রকাশ থাকে যে, হজ্বের জন্য ছবিযুক্ত পাসপোর্ট করা এবং ছবি পাসপোর্ট ইমিগ্রেশনে চেক-আপ হওয়া এসব কিছুই হজ্বের ব্যবস্থাপনাগত বিষয়। হজ্বে গমনেচ্ছু ব্যক্তির এসব বিষয়ে কিছুই করার থাকে না; বরং এখানে সে আইনগতভাবেই এসব কাজ করতে বাধ্য। তাই এসব ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিষয়ের দায়ভার কর্তৃপক্ষের উপরই বর্তাবে।
-আল বাহরুর রায়েক ৩/৬০; আদ্দুররুল মুখতার ২/৫৯৮Sharable Link
বর্তমানে দেখা যায়, বরপক্ষের না বলার পরও কনেপক্ষ ফার্নিচার ইত্যাদি দিয়ে থাকে। তাই জানার বিষয় হল, এসব আসবাবপত্র গ্রহণ করা জায়েয হবে কি?
বরপক্ষের দাবি কিংবা সামাজিক চাপ ছাড়া কনেপক্ষের লোকজন স্বতঃস্ফূর্তভাবে কনের ঘরে ব্যবহারের জন্য কোনো আসবাবপত্র দিলে তা গ্রহণ করা যাবে।
তবে বরপক্ষের দাবি কিংবা চাপের কারণে অথবা সামাজিক প্রচলনের কারণে বাধ্য হয়ে কোনো কিছু দিলে তা গ্রহণ করা জায়েয হবে না।
-মুসনাদে আহমদ, হাদীস ১৫৪৮৮; ফিকহুন নাওয়াযিল ৩/৩৪৮-৩৫৩Sharable Link
আমাদের সমাজে নারীদেরকে স্বামীর মৃত্যুর পর তার জন্য শোক প্রকাশার্থে সাজসজ্জা থেকে বিরত থাকতে দেখা যায়। তাছাড়া বিধবা নারীদের সাদা কাপড় পরিধান করার প্রচলন প্রায় সব অঞ্চলেই আছে। অনেকে এটিকে শুধু একটি সামাজিক প্রথা মনে করে থাকে। আবার অনেকে এটিকে শরীয়তের বিধান মনে করলেও এ ব্যাপারে এতটা যত্নশীল নয়। তদ্রূপ অনেকে এসব বিষয়কে কুসংস্কার বলেও মন্তব্য করে থাকে।
জানার বিষয় হল, আসলে এ বিষয়ে শরীয়তের নির্দেশনা কী? স্বামীর মৃত্যুর পর একজন স্ত্রীর এ ব্যাপারে করণীয় কী?
স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রীর ইদ্দতকালীন সময় (অন্তঃসত্ত্বা হলে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত অন্যথায় ৪ মাস ১০ দিন) সব ধরনের সাজসজ্জা থেকে বিরত থাকা ওয়াজিব বিধান।
সহীহ বুখারীতে উম্মে হাবীবা রা. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ এবং পরকালে বিশ্বাসী কোনো নারীর জন্য তার স্বামী ব্যতীত অন্য কারো মৃত্যুতে তিনদিনের বেশি সময় হিদাদ (শোক করা ও সাজসজ্জা থেকে বিরত থাকা) বৈধ নয়। আর স্বামীর মৃত্যুতে ৪ মাস ১০ দিন হিদাদ পালন করবে।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৫৩৩৪
উম্মে সালামা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে স্ত্রী লোকের স্বামী মৃত্যুবরণ করে সে যেন ইদ্দতকালীন সময়ে রঙিন এবং কারুকার্যমণ্ডিত কাপড় ও অলংকার পরিধান না করে। আর সে যেন খিযাব ও সুরমা ব্যবহার না করে।-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২২৯৮
আল্লামা কুরতুবী রাহ. তার বিখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ ‘আলজামে লিআহকামিল কুরআন’ও ইদ্দত সংক্রান্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় লেখেন, হিদাদ পালনের অর্থ হল, মহিলা তার ইদ্দতকালীন সুগন্ধি, সুরমা, মেহেদি,অলঙ্কারাদিসহ পোশাক-আশাকের ক্ষেত্রে যাবতীয় সাজসজ্জা ত্যাগ করবে। -আল জামে’ লিআহকামিল কুরআন, কুরতুবী ৩/১১৮
সুতরাং কোনো মহিলার স্বামী মারা যাওয়ার পর ৪ মাস ১০ দিন অথবা অন্তঃসত্ত্বা হলে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত যে কোনো ধরনের সাজসজ্জা যা উৎসবাদিতে পরা হয় এমন চাকচিক্যপূর্ণ পোশাক পরিধান করা,সুগন্ধি ও অন্যান্য সাজসজ্জার প্রসাধনী ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। তদ্রƒপ মেহেদি লাগানো, সুরমা দেওয়া থেকেও বিরত থাকা আবশ্যক। অবশ্য ব্যবহৃত রঙিন কাপড় যদি চাকচিক্যপূর্ণ না হয় তাহলে তা পরিধান করতে কোনো অসুবিধা নেই।
ইদ্দত অবস্থায় সাদা কাপড় পরা আবশ্যক নয়। বরং সাদা কাপড় পরিধান করাকে জরুরি মনে করা ঠিক নয়।
প্রকাশ থাকে যে, ইদ্দত অবস্থায় মহিলার জন্য সাজগোজ ত্যাগ করার বিধান একাধিক হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। এ ব্যাপারে হাদীসে অত্যন্ত গুরুত্ব এসেছে। এটি শরীয়তের গুরুত্বপূর্ণ বিধান। সুতরাং একে সামাজিক প্রথা বা কুসংস্কার মনে করা অন্যায়। বরং আল্লাহ এবং পরকালে বিশ্বাসী সকল মুসলমানের উচিত উক্ত বিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া। নারীদের কর্তব্য উক্ত বিধান পালনে যত্নশীল হওয়া।
-আলমাবসূত, সারাখসী ৬/৫৯; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৫৩০-৫৩২; মিরকাতুল মাফাতীহ ৬/৪৫২; তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম ১/২৩১; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩৩০; ফাতহুল বারী ৯/৪০১, ৩৯৫Sharable Link
আমার প্রতিবেশী বকর তার স্ত্রীর প্রতি জুলুমের আচরণ করে। স্ত্রী অতিষ্ঠ হয়ে তার কাছে তালাক চায়। কিন্তু বকর শর্ত দিয়েছে যে, তালাক দিলে তাকে তার দেওয়া মহর ফেরত দিতে হবে। এতে স্ত্রী সম্মত হলে বকর তাকে সে মহরের বিনিময়ে এক তালাক দিয়ে দেয়। প্রশ্ন হল, উক্ত অবস্থায় বকরের জন্য তার দেওয়া মহর তালাকের বিনিময়ে ফেরত নেওয়া বৈধ হবে কি?
প্রশ্নের বক্তব্য অনুযায়ী বাস্তবেই বকরের জুলুমের কারণে যদি তার স্ত্রী তালাক নিতে বাধ্য হয়ে থাকে তবে বকরের জন্য এ স্ত্রী থেকে তালাকের কারণে মহর ফেরত নেওয়া বা অন্য কিছু নেওয়া বৈধ হবে না।
কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা সূরা নিসার ১৯ ও ২০ নং আয়াতে এ ধরনের ক্ষেত্রে স্ত্রী থেকে সম্পদ গ্রহণ করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন।
আমর বিন দীনার রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, স্বামী যদি তার স্ত্রীর সাথে অসদাচরণ করে তাহলে স্ত্রী কোনো কিছুর বিনিময়ে তালাক চাইলেও স্বামীর জন্য তা নেওয়া বৈধ হবে না। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক,হাদীস : ১১৮২২
ইবনে শিহাব যুহরী রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, স্বামীর জন্য তার স্ত্রী থেকে তালাকের বিনিময়ে কোনো কিছু নেওয়া তখনি বৈধ হবে যখন স্ত্রীর অবাধ্যতার কারণেই স্বামী তাকে তালাক দিয়ে থাকে। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস : ১১৮১৫
অনুরূপ বক্তব্য হযরত উরওয়া, আতা, আমর বিন শুআইব প্রমুখ তাবেয়ী থেকেও বর্ণিত আছে।
(দেখুন : মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১৮৭৩৭-১৮৭৪২) -বাদায়েউস সানায়ে ৩/২৩৫; রদ্দুল মুহতার ৩/৪৪৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৪৮৮; আহকামুল কুরআন, থানবী ১/৪৮৮Sharable Link
সুদি ব্যাংক থেকে যে বৃত্তি দেওয়া হয় তা নেওয়া কি জায়েয?
সুদি ব্যাংক থেকে প্রদত্ত বৃত্তি নেওয়া জায়েয নয়। কারণ ব্যাংকগুলোর অধিকাংশ আয় সুদ। তাই তাদের বৃত্তির মাঝে সুদের আশঙ্কাই বেশি। অতএব এ টাকা যে নামেই দেওয়া হোক তা গ্রহণ করা জায়েয হবে না।
-রদ্দুল মুহতার ২/২৯২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৮/১৭৪Sharable Link
আমার ভাতিজাকে এক সিএনজির মালিক বলেছে, তোমাকে আমি একটি সিএনজি দিব। দিনপ্রতি তুমি আমাকে ৮০০/- টাকা দিবে। সিএনজির কোনো সমস্যা হলে সেটা আমি দেখব। আর তুমি চাইলে চুক্তিটা এভাবেও করতে পার যে, প্রতিদিন তুমি আমাকে ৬০০/- টাকা দিবে আর ছোটখাটো কোনো সমস্যা হলে সেটা তুমি দেখবে আর বড় কোনো সমস্যা হলে আমি দেখব। তোমার ইচ্ছা দুই চুক্তির যে কোনোটি আমার সাথে করতে পার। প্রশ্ন হল, আমার ভাতিজা সিএনজিটি ভাড়া নিতে চাচ্ছে। এখন কোন চুক্তিটি করা তার জন্য বৈধ হবে?
প্রশ্নোক্ত ভাড়া চুক্তির প্রথমটি শরীয়তসম্মত। তা অবলম্বন করতে পারেন। কেননা এক্ষেত্রে গাড়ির মেরামতের দায়িত্ব মালিকের উপর রাখা হয়েছে। তবে হাঁ, চালকের অবহেলা বা ত্রুটির কারণে গাড়ির কোনো সমস্যা হলে তা চালককেই ঠিক করতে হবে। এ খরচ মালিকের উপর চাপানো যাবে না। আর ভাড়া চুক্তির দ্বিতীয় প্রস্তাবটি শরীয়তসম্মত নয়। কেননা এক্ষেত্রে গাড়ির স্বাভাবিক ও ছোটখাটো সমস্যা ঠিক করার দায়ভার চালকের উপর চাপানো হয়েছে। অথচ চালকের ত্রুটির কারণে ক্ষতি না হলে ছোট বড় সকল মেরামত খরচ মালিকের দায়িত্বে।
-মাজাল্লাহ, মাদ্দাহ : ৪৯৪; শরহুল মাজাল্লাহ ২/৫৮৩; কিতাবুল আছল ৪/৪১; আলমুগনী, ইবনে কুদামা ৮/২০-২১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৫/২৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪১৬; রদ্দুল মুহতার ৬/৫০Sharable Link
আমি নিজ তহবিল থেকে মুনাফার জন্য বিশ্বস্ত লোকদেরকে ঋণ প্রদান করে থাকি। ঋণগ্রহীতাকে নগদ টাকা না দিয়ে আলোচনা সাপেক্ষে কোনো পণ্য (ধান, চাল, আটা ইত্যাদি পণ্য বস্তা হিসেবে) কিনে মূল্য পুনঃনির্ধারণ করে নির্দিষ্ট মেয়াদে কিস্তিতে অথবা মেয়াদান্তে সকল টাকা পরিশোধের শর্তে পণ্য প্রদান করে থাকি। উক্ত গ্রহীতার পণ্যের প্রয়োজন না থাকলে তিনি পণ্য পুনরায় বিক্রি করে দিতে পারেন।
উদাহরণস্বরূপ, ঋণ গ্রহীতার সাথে চুক্তি হওয়ার পর আমি তাকে নিয়ে বাজারে কোনো পাইকারি দোকানে গিয়ে বর্তমান বাজারদরে ১,০০,০০০/- টাকার চাল ক্রয় করি। অতপর তা ১,২০,০০০/- টাকা মূল্য নির্ধারণ করে ঋণগ্রহীতাকে প্রদান করি। ঋণ গ্রহীতা স্বস্থানে রেখেই পণ্যগুলো বাজারদর (১,০০,০০০/-) থেকে সামান্য কমবেশি (বস্তা প্রতি ১/২ টাকা) করে দোকানির নিকট বিক্রি করে দেন। উল্লেখ্য যে, এ পদ্ধতিতে একই পণ্য তিনবার বিক্রি করা হচ্ছে এবং সর্বাবস্থায় পণ্য স্বস্থানে থাকছে। তবে পণ্য চিহ্নিত করা হয়।
জানার বিষয় হল,উপরোক্ত পদ্ধতিতে বিনিয়োগ প্রদান করা শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ কি না?
প্রশ্নোক্ত পদ্ধতির লেনদেনের সাথে জড়িত সকলের নিকট একথা স্পষ্ট যে, এখানে তাদের কারোই পণ্য আদান-প্রদান ও ক্রয়বিক্রয় উদ্দেশ্য নয়। এক পক্ষ টাকার বিনিময়ে অতিরিক্ত গ্রহণের জন্য ক্রয়-বিক্রয়ের ছুতা অবলম্বন করেছে। আর অন্য পক্ষ নগদ টাকার জন্য বাধ্য হয়ে তা গ্রহণ করছে। এক্ষেত্রে দুই তিন হাত বদল হলেও পণ্য যার কাছে ছিল তার কাছেই থেকে যাচ্ছে। যা শরীয়ত নিষিদ্ধ বাইয়ে ঈনার অন্তর্ভুক্ত। হাদীস শরীফে এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে।
সুতরাং প্রশ্নোক্ত পদ্ধতিতে লেনদেন করা সম্পূর্ণ নাজায়েয।
উল্লেখ্য যে, আল্লাহ তাআলা বান্দার জন্য হালাল উপার্জনের অনেক পথ খোলা রেখেছেন। সুতরাং মুসলমানের কর্তব্য হল, হিলা-বাহানা করে শরীয়ত কর্তৃক নিষিদ্ধ পথে না চলে উপার্জনের হালাল পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করা।
-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩৪৬২; ইলাউস সুনান ১৪/১৭৮; আননিহায়া ফী গারীবিল হাদীস ৩/৩৩৪Sharable Link
আমাদের এলাকার সাধারণ লোকজন ব্যাপকভাবে সুপারিতে আগাম চুক্তির লেনদেন করে থাকে। অর্থাৎ মৌসুমের আগে ক্রেতা বিক্রেতাকে কিছু টাকা দিয়ে বলে যে, ১০ মাস পরে আমাকে এত পরিমাণ সুপারি দিবেন। আর সুপারি সাধারণত সব সমান হয় না। বরং তা ছোটবড় অনেক ধরনের হয়ে থাকে। ছোটবড় হওয়ার কারণে মূল্যের মাঝেও তারতম্য হয়। আর আমি জানি যে, যেসব পণ্য গণনা করে বিক্রি করা হয় তা যদি পরস্পরে ছোটবড় হওয়ার কারণে তার মূল্যেও তারতম্য হয় তাহলে তাতে আগাম বিক্রি সহীহ হয় না। তাহলে সুপারির মধ্যেও কি আগাম বিক্রি সহীহ হবে না?
উল্লেখ্য, সুপারি গণনা করেই বিক্রি করা হয়।
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী সুপারি ছোটবড় হওয়ার কারণে যেহেতু তার মূল্যের মধ্যেও তারতম্য হয়ে থাকে তাই এক্ষেত্রে ছোটবড় কোন ধরনের এবং কোন মানের সুপারি দিবে তা চুক্তির সময়ই নির্ধারণ করে নিতে হবে। তাহলে প্রশ্নোক্ত লেনদেনটি সহীহ হবে। কিন্তু যদি সুপারির মান ও ধরন উল্লেখ করা না হয় তাহলে এ চুক্তি সহীহ হবে না। কারণ আগাম ক্রয় চুক্তিতে পণ্যের গুণগত মান একেবারে স্পষ্ট হওয়া শর্ত। যেন পরবর্তীতে পণ্য আদান-প্রদানের সময় এ নিয়ে কোনো বিবাদের আশঙ্কা না থাকে।
-ফাতহুল কাদীর ৬/২০৮, ৬/২২১; আলবাহরুর রায়েক ৬/১৫৬, ১৬০; আদ্দুররুল মুখতার ৫/২১১; শরহুল মাজাল্লাহ ২/৩৮৯Sharable Link
আমাদের ত্রিশজনের একটা সংগঠন আছে। সংগঠনের নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক সদস্যকে মাসে একশত টাকা করে জমা করতে হয়। কেউ লাগাতার তিন মাস টাকা আদায় না করলে তাকে বিশ টাকা আর পাঁচ মাস আদায় না করলে পঞ্চাশ টাকা জরিমানা দিতে হয়। আর এ টাকাগুলো সংগঠনের প্রয়োজনীয় কাজে ব্যয় করা হয়। সংগঠনের এ পদ্ধতি কি শরীয়তসম্মত? দয়া করে জানাবেন।
না, সংগঠনের উক্ত জরিমানা পদ্ধতি শরীয়তসম্মত নয়। নির্ধারিত সময়ে টাকা আদায় না করার কারণে জরিমানা আরোপ করা জায়েয নেই।
সুতরাং যাদের থেকে জরিমানা নেওয়া হয়েছে তাদেরকে তা ফেরত দিতে হবে। অবশ্য এক্ষেত্রে এমন নিয়ম করা যেতে পারে যে, কিস্তি আদায়ে বিলম্ব করলে বিলম্বিত সময়ের মুনাফা সে পাবে না।
-আলবাহরুর রায়েক ৫/৪১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/১৬৭; রদ্দুল মুহতার ৪/৬১-৬২, ৬/৩৮৫; শরহুল মাজাল্লাহ ১/২৬৫Sharable Link
ঢাকা এবং চট্টগ্রামের বিভিন্ন লাইব্রেরির মাঝে এভাবে চুক্তি হয়ে থাকে যে, ঢাকার লাইব্রেরি মালিক চট্টগ্রামের লাইব্রেরি মালিককে বলে, প্রেস থেকে বই ছেপে আসলে আপনাকে ৪০% কমিশনে বই দিব। এখন আমাকে বইয়ের অগ্রিম মূল্য দিয়ে দেন। তখন চট্টগ্রামের লাইব্রেরির মালিকগণ বইয়ের অগ্রিম মূল্য দিয়ে থাকে।
এক্ষেত্রে আরো একটি লেনদেন হয়ে থাকে। তা এই যে, চট্টগ্রামের লাইব্রেরি মালিকগণ বিভিন্ন ব্যক্তি থেকে এই বলে টাকা নিয়ে থাকে যে, ঢাকায় অমুক লাইব্রেরি থেকে ৪০% কমিশনে বই কিনতে চাচ্ছি। এখন আমাকে বইয়ের অগ্রিম মূল্য দিতে হচ্ছে। আপনি আমাকে টাকা দেন যেন আমি বইয়ের অগ্রিম মূল্য পরিশোধ করতে পারি। বই কেনার পর আপনার টাকার সাথে ১০% কমিশন পরিমাণ অতিরিক্ত টাকা আপনাকে দিব।
এখন আমার প্রশ্ন হল, উল্লেখিত লেনদেন দুটি শরীয়তসম্মত কি না? যদি শরীয়তসম্মত না হয় তাহলে কিভাবে শরীয়তসম্মত হবে?
ঢাকার লাইব্রেরির সাথে চট্টগ্রামের লাইব্রেরি মালিকের উক্ত চুক্তিটি বাই সালাম অর্থাৎ আগাম ক্রয় লেনদেনের অন্তর্ভুক্ত। তাই চুক্তিটি সহীহভাবে করার জন্য বইয়ের পুরো মূল্য চুক্তির সময়ই দিয়ে দিতে হবে এবং বইয়ের মান, পরিমাণ ও ধরন এবং বই হস্তান্তরের তারিখ চুক্তির সময় নির্ধারণ করে নিতে হবে। তাহলে এ লেনদেন জায়েয হবে। মোটকথা বাই সালামের যাবতীয় শর্ত এক্ষেত্রে পাওয়া যেতে হবে। কিন্তু এ চুক্তির ক্ষেত্রে ক্রেতার জন্য কারো থেকে এ ভিত্তিতে টাকা নেওয়া জায়েয হবে না যে, তাকে এর বিনিময়ে প্রাপ্ত বইয়ের ১০% বা কিছু কমিশন দেওয়া হবে। কেননা কমিশন দেওয়ার শর্তে কারো থেকে টাকা নেওয়া সুদী লোনের অন্তর্ভুক্ত, যা সম্পূর্ণ হারাম।
উপরোক্ত পদ্ধতির বিকল্প হিসেবে ক্রেতা কারো থেকে বিনিয়োগ নিতে চাইলে তাকে বই ক্রয়ে শরিক করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে উভয়ে নিজ নিজ মূলধন অনুযায়ী বইয়ের মালিক হবে। বই হস্তগত হওয়ার পর তা বিক্রি করে অর্জিত লাভ তারা চুক্তি অনুযায়ী ভাগ করে নিবেন। আর লোকসান হলে তা মূলধনের অনুপাতে ভাগ হবে।
উল্লেখ্য যে, এক্ষেত্রে শরিক নিজের অংশ অপর শরিককে বিক্রি করে দিতে পারবে। তবে এই ক্রয়-বিক্রয় অবশ্যই বই হস্তগত করার পর হতে হবে।
-আলমাবসূত, সারাখসী ১২/১২৪; আদ্দুররুল মুখতার ৫/২১৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/১৭৮; আলবাহরুর রায়েক ৬/১৬০; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যাহ, মাদ্দাহ : ১৩৬৭, ১৩৬৯Sharable Link
বর্তমানে অনেক পণ্যের সাথে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য গ্যারান্টি দিয়ে থাকে। নির্দিষ্ট সময়ের আগে যদি ঐ জিনিস নষ্ট হয়ে যায় এক্ষেত্রে ক্রেতা কোনো শর্ত লঙ্ঘন না করলে গ্যারান্টি কার্ডের সাথে ঐ পণ্য নিয়ে গেলে তা ফেরত নিয়ে নতুন পণ্য দেয়। এবং এক্ষেত্রে বিক্রেতা দিতে বাধ্য থাকে।
আবার অনেক পণ্য ক্রয় করলে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ওয়ারেন্টি দিয়ে থাকে। তখন নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে ঐ জিনিস নষ্ট হয়ে গেলে শর্তসাপেক্ষে তা ঠিক করে দেয়।
জানার বিষয় হল, গ্যারান্টি বা ওয়ারেন্টির শর্তে ক্রয়বিক্রয় করা জায়েয কি না? আর এক্ষেত্রে বিক্রেতা নতুন পণ্য দেওয়া বা পুরাতন পণ্য ঠিক করে দেওয়ার ব্যাপারে বাধ্য থাকবে কি না?
হাঁ, গ্যারান্টি বা ওয়ারেন্টির শর্তে পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করা জায়েয আছে। অতএব এ ধরনের পণ্যে কোনো ত্রুটি দেখা দিলে গ্যারান্টি বা ওয়ারেন্টির শর্ত অনুযায়ী বিক্রেতা নতুন পণ্য দিতে বা পুরাতন পণ্য ঠিক করে দিতে বাধ্য থাকবে। উল্লেখ্য যে, ক্রয়-বিক্রয়ের সময় গ্যারান্টি বা ওয়ারেন্টির শর্তাবলি ও নিয়মাবলি সম্পূর্ণভাবে লিখে উভয় পক্ষ স্বাক্ষর করে নিতে হবে। যেন পরবর্তীতে এ নিয়ে কোনো ঝগড়া বা বিতর্ক না হয়।
শরহুল মাজাল্লাহ ২/৬৪, মাদ্দাহ : ১৮৮; রদ্দুল মুহতার ৫/৮৮; তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম ১/৬৩৫Sharable Link
আমাদের এলাকায় বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক সংগঠন আছে। যারা সমাজের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের পাশাপাশি মানুষকে ঋণ দিয়ে সহযোগিতা করে। তাদের ঋণ দেওয়ার নিয়ম হল, তারা ঋণের পরিমাণ হিসাবে বিভিন্ন ধরনের ফরম বানিয়েছে। ঋণের পরিমাণ বাড়লে ফরমের মূল্যও বাড়ে। কেউ ঋণ নিতে চাইলে ঋণের পরিমাণ হিসেবে ফরম কিনে চুক্তি করতে হয়।
উল্লেখ্য যে, ফরমের মূল্য খরচের চেয়ে অধিক রাখা হয় এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে পুনরায় ফরম কিনে নতুনভাবে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য চুক্তি করতে হয়। এ পদ্ধতিতে ঋণ দেওয়া নেওয়া সহীহ কি না? জানালে উপকৃত হব।
ঋণ প্রদান করে ফরম বিক্রির নামে অতিরিক্ত টাকা গ্রহণ করা সম্পূর্ণ নাজায়েয ও সুদের অন্তর্ভুক্ত। প্রশ্নোক্ত পদ্ধতিতে ঋণের পরিমাণ হিসেবে ফরমের দাম বেশি নেওয়া এবং সময় মতো পরিশোধ করতে না পারলে পুনরায় ফরম কিনে নতুনভাবে চুক্তি করার মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া সুদ খাওয়ার একটি অপকৌশল। লোকে যাতে এটিকে সুদ না বলে এজন্যই ফরম বিক্রির উক্ত ছুতা অবলম্বন করা হয়েছে। অতএব হিলা-বাহানা করে সুদ গ্রহণের পদ্ধতি বন্ধ করতে হবে এবং আল্লাহ তাআলার কাছে তওবা করতে হবে। আর বিগত দিনে এভাবে যাদের থেকে ফরমের খরচ মূল্যের অতিরিক্ত নেওয়া হয়েছে তাদরকে অতিরিক্ত সকল টাকা ফেরত দিতে হবে।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ২১০০৭; আননুতাফ ফিলফাতাওয়া ২৯৬; বাদায়েউস সানায়ে ৬/৫১৮; ইলাউস সুনান ১৪/৫১৪;; শরহুল মাজাল্লাহ ১/২৬৪-২৬৫Sharable Link
কুরবানীর পশু কেনার সময় এর সাথে অনেক সময় মোবাইল সেট, কখনো ফ্রিজ ফ্রি দেয়। আমার জানার বিষয় হল, উক্ত মোবাইল বা ফ্রিজ কি ব্যবহার করা যাবে, নাকি সদকা করে দিতে হবে? দয়া করে জানালে কৃতজ্ঞ হব।
কুরবানীর পশুর সাথে মোবাইল, ফ্রিজ বা অন্য কিছু ফ্রি দিলে তা নিজে ব্যবহার করতে পারবে। তা সদকা করে দেওয়া জরুরি নয়। কারণ এটা কুরবানীর পশুর সাথে পেলেও তা কুরবানীর অংশ বা সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয় নয়; বরং তা পৃথক ক্রয়কৃত পণ্যের মতোই।
Sharable Link
আমার ছেলের বয়স ৫ বছর। এখন তার আকীকা করতে চাচ্ছি। আকীকার হুকুম কী? অর্থাৎ কী দিয়ে আকীকা করতে হবে এবং এর বণ্টন বিধি কী? আকীকার গোশত কে কে খেতে পারবে? বাবা-মাও কি সে গোশত খেতে পারবে? আর আকীকা কি কুরবানীর সাথে দেওয়া যাবে? যদি যায় তাহলে কীভাবে ?
দয়া করে বিস্তারিত জানিয়ে উপকৃত করবেন।
আকীকা করা মুস্তাহাব। পুত্রসন্তানের জন্য দুটি ছাগল আর কন্যার জন্য একটি ছাগল।
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম ছেলের পক্ষ থেকে দুটি ছাগল আর মেয়ের পক্ষ থেকে একটি ছাগল দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। -জামে তিরমিযী, হাদীস ১৫১৩
আর কুরবানীর পশুতে আকীকার নিয়তে শরিক হওয়াও জায়েয। তবে এক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন আকীকা ও কুরবানীর কোনো অংশ পশুর এক সপ্তমাংশের কম না হয়।
আকীকার গোশত সন্তানের মা-বাবা ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন এবং ধনী-গরীব সকলেই খেতে পারবে। আকীকার গোশতের বণ্টন ও ব্যবহার কুরবানীর মতোই। কিছু গোশত নিজেদের জন্য রাখা, কিছু আত্মীয়-স্বজনকে দেওয়া এবং কিছু গোশত গরীবদেরকে সদকা করা উত্তম।
-আততালীকুল মুমাজজাদ ২৮৯, ২৯০; ইলাউস সুনান ১৭/১১৮; আলমুগনী, ইবনে কুদামা ১৩/৩৯৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০৪; আলমুসতাদরাক লিল হাকিম, হাদীস : ৭৬৬৯Sharable Link
আমার এক স্ত্রী, কয়েকজন ছেলেমেয়ে আছে। আমার কিছু স্থাবর সম্পত্তি, জমা-জমি ও বাড়িঘর আছে। দেনাকর্জও আছে। এ অবস্থায় আমার উক্ত ওয়ারিশদের মধ্যে সহায় সম্পত্তি ইত্যাদি বণ্টন করে যেতে চাই। সামান্য নিজের নামে রাখতে ইচ্ছুক। এ অবস্থায় আমাকে শরয়ী আইন মোতাবেক কী করতে হবে? দয়া করে জানাবেন।
প্রশ্নের বক্তব্য অনুসারে আপনার উপর যেহেতু মানুষের দেনা-পাওনা আছে তাই প্রথমে তা পরিশোধ করে দিতে হবে। এরপর অবশিষ্ট সম্পত্তি থেকে স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে তথা সম্ভাব্য ওয়ারিশদেরকে দান করতে চাইলে সেক্ষেত্রে এটি যেহেতু আপনার উদ্দেশ্যের বিবেচনায় মৃত্যুপরবর্তী মীরাছেরই পূর্ববণ্টন তাই এক্ষেত্রে মীরাছের নীতিমালা অনুসারে প্রত্যেককে তার অংশ লিখে দখল বুঝিয়ে দিবেন। আর আপনি নিজের নামেও কিছু সম্পত্তি রাখতে চাইলে রাখতে পারবেন।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে ছাড়া আপনার আর কোনো ওয়ারিশ (এক্ষেত্রে পিতামাতা) না থাকলে এদের মাঝে নিম্নোক্ত পদ্ধতিতে সম্পদ বণ্টন করবেন। স্ত্রীকে শতকরা ১২.৫ অংশ। অতপর অবশিষ্ট সম্পত্তি ছেলেমেয়েদের মাঝে ‘ছেলে, মেয়ের দ্বিগুণ পাবে’- এই মূলনীতির ভিত্তিতে বণ্টন করবেন।
আর যতটুকু সম্পত্তি নিজের নামে রাখবেন, আপনার মৃত্যুর পর কেবল ঐ অংশের মধ্যে মীরাছের বিধান প্রযোজ্য হবে।
-তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ২/৭৫; আলমুগনী, ইবনে কুদামা ৮/২৫৯-২৬০; আলমাদখালুল ফিকহিল আম ২/৯৫৪; আলমাবসূত, সারাখসী ২৯/১৪০, ২৯/১৪৮Sharable Link
জায়েদ ইন্তেকালের সময় মা, বাবা, দুই ছেলে, এক মেয়ে, একজন বাপ-শরিক ভাই, একজন মা-শরিক ভাই ও স্ত্রী রেখে যায়। মাননীয় মুফতী সাহেবের খেদমতে অধমের জানার বিষয় হল, জায়েদের রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে কে কতটুকু পাবে?
মৃত জায়েদের স্থাবর-অস্থাবর যাবতীয় সম্পদ থেকে প্রথমে তার কাফন-দাফনের খরচ (প্রয়োজন হলে) সম্পন্ন করবে। অতপর তার কোনো ঋণ থাকলে তা পরিশোধ করতে হবে। এরপর তার কোনো বৈধ অসিয়ত থাকলে তা অবশিষ্ট সম্পদের এক তৃতীয়াংশ থেকে পূর্ণ করতে হবে।
এরপর অবশিষ্ট সম্পদ তার ওয়ারিশদের মাঝে বণ্টন করতে হবে। এক্ষেত্রে জায়েদের বাবা ও মা প্রত্যেকে সমুদয় সম্পদের এক ষষ্ঠাংশ করে পাবে এবং স্ত্রী পাবে এক অষ্টমাংশ। তাদের অংশ দেওয়ার পর অবশিষ্ট সম্পদ তার ছেলেমেয়েগণ ‘‘এক পুত্রের অংশ দুই কন্যার অংশের সমান’’ হিসেবে লাভ করবে।
কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-
يُوصِيكُمُ اللَّهُ فِي أَوْلَادِكُمْ لِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الْأُنْثَيَيْنِ
(তরজমা) আল্লাহ তোমাদের সন্তান সম্পর্কে নির্দেশ দিচ্ছেন, এক পুত্রের অংশ দুই কন্যার অংশের সমান। ... তার (মৃতের) সন্তান থাকলে তার পিতামাতা প্রত্যেকের জন্য পরিত্যক্ত সম্পদের এক ষষ্ঠাংশ; ... আর তোমাদের সন্তান থাকলে তাদের (স্ত্রীদের) জন্য তোমাদের পরিত্যক্ত সম্পদের এক অষ্টমাংশ।-সূরা নিসা ৪ : ১১-১২
সুতরাং প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী জায়েদের সমুদয় সম্পদ তার ওয়ারিশদের মাঝে নিম্নবর্ণিত শতকরা হারে বণ্টিত হবে-
১। জায়েদের বাবা : শতকরা ১৬.৬৬৬ ভাগ ২। জায়েদের মা : শতকরা ১৬.৬৬৬ ভাগ ৩। জায়েদের স্ত্রী : শতকরা ১২.৫০ ভাগ ৪। জায়েদের প্রত্যেক ছেলে : শতকরা ২১.৬৬৬ ভাগ ৫। জায়েদের মেয়ে : শতকরা ১০.৮৩ ভাগ।
উল্লেখ্য যে, জায়েদের বাবা ও ছেলে জীবিত থাকার কারণে প্রশ্নোক্ত অবস্থায় তার বাপ-শরিক ভাই ও মা-শরিক ভাই কোনো অংশ পাবে না। -সূরা নিসা ৪ : ১১-১২
Sharable Link
কুরআন মজীদে বিভিন্ন স্থানে যে সাকীনাহ শব্দ এসেছে এর অর্থ কী? দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন।
সাকীনার শাব্দিক অর্থ হল, রহমত, স্বস্তি-প্রশান্তি, স্থিরতা ও সংশয় দূরিভূত হওয়া।
ইমাম কুরতুবী রাহ. আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.-এর বরাতে উল্লেখ করেছেন যে, সূরা বাকারায় উল্লেখিত সাকীনাহ ব্যতীত অন্য সকল সাকীনাহ দ্বারা উদ্দেশ্য স্বস্তি ও প্রশান্তি। -তাফসীরে কুরতুবী ৬/১৭৫
আর মুফাসসিরগণ বলেছেন, সূরা বাকারায় সাকীনাহ অর্থ স্থিরতা ও সংশয় দূরীভূত হওয়া। অবশ্য কেউ কেউ সকল স্থানে স্বস্তি ও প্রশান্তি অর্থ করেছেন।
-সূরা ফাতহ ৪৮ : ৪; তাফসীরে কুরতুবী ৬/১৭৫, ৩/১৬২; তাফসীরে ইবনে কাসীর ১/৪৫০; তাফসীরে তবারী ৬/৩৪৪; তাফসীরে রূহুল মাআনী ১০/৮৯Sharable Link
আমাদের মকতবে কিছু পুরাতন ছেঁড়া-ফাটা কুরআন শরীফ ও কায়েদা-আমপারা আছে। কিছু কুরআন শরীফের বিভিন্ন জায়াগা পোকা খেয়ে ফেলেছে। যার ফলে এগুলো আর পড়ার উপযুক্ত থাকেনি। হুযুরের নিকট জানতে চাচ্ছি, এসব কুরআন শরীফ ও কায়েদা-আমপারা কী করব? এক্ষেত্রে শরীয়তের বিধান কী?
কুরআন শরীফ বা কায়েদা-আমপারা যদি ছিঁড়ে-ফেটে যায় কিংবা অন্য কোনো কারণে পড়ার উপযুক্ত না থাকে তাহলে একটি পবিত্র কাপড়ে পেঁচিয়ে ঘরবাড়িতে আলমারি বা এমন কিছুতে হেফাযতে রেখে দিবে। আর বাসাবাড়িতে নিরাপদে যত্নসহকারে রাখা সম্ভব না হলে পবিত্র কাপড় পেঁচিয়ে চলাচলমুক্ত কোনো পবিত্র স্থানে দাফন করে দিবে। অথবা ভারি কোনো বস্তুর সাথে বেঁধে প্রবহমান নদী বা জলাশয়ে কিংবা পুকুরে ডুবিয়ে দিবে।
-ফাযাইলুল কুরআন, আবু উবায়দ পৃ. ২৪৩; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৪২২; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/৩৮০; উমদাতুল কারী ২০/১৯; আলফাতাওয়াল ওয়ালওয়ালিজিয়াহ ১/৭৬Sharable Link
আমার বাড়ি কক্সবাজার। আমি চট্টগ্রামে লেখাপড়া করি। মাদরাসায় আসা-যাওয়ার সময় গাড়িগুলোতে সাধারণত গান ছেড়ে দেওয়া হয়। তাই আমি গাড়িতে গান ছেড়ে দেওয়া হলে গান যেন শুনতে না হয় সেজন্য কুরআন তিলাওয়াত করতে থাকি। গত কুরবানীর বন্ধের পর মাদরাসায় আসার সময়ও গাড়িতে গান ছেড়ে দেওয়া হলে আমি তিলাওয়াত শুরু করি। আমার সাথে আমার এক সাথী ছিল। সে আমাকে বলে যে, গান চলাকালীন কুরআন তিলাওয়াত করলে আবার কুরআনের বেহুরমতি হবে না তো? তার এ কথা শুনে আমার দিলেও এ ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ জাগে।
দয়া করে উক্ত অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত বা যিকির করার হুকুম জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নোক্ত পরিস্থিতিতে গান শোনা থেকে বিরত থাকার উদ্দেশ্যে কুরআন তিলাওয়াত করা বা যিকির আযকার করা জায়েয হবে। এতে কুরআন শরীফ বা যিকিরের অসম্মান হবে না; বরং এ অবস্থায় তিলাওয়াত ও যিকিরে ব্যস্ত থাকা আরো প্রশংসনীয় ও অধিক সওয়াবের কাজ হবে।
-ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৪২৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩১৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৭/৫০৮Sharable Link
হিন্দুদের সালামে কী বলব?
কোনো হিন্দু বা বিধর্মী সালাম দিলে জবাবে শুধু ‘‘ওয়া আলাইকুম’’ বলবেন। হাদীস শরীফে এসেছে, আনাস ইবনে মালেক রা. বর্ণনা করেন, কয়েকজন সাহাবী আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আরয করলেন, আহলে কিতাব আমাদেরকে সালাম দিয়ে থাকে। আমরা তাদেরকে কীভাবে এর উত্তর দিব?তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা ‘‘ওয়া আলাইকুম’’ বলবে।
-সহীহ মুসলিম, হাদীস ২১৬৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩৩৪; আলবাহরুর রায়েক ৮/২০৪; ফাতাওয়া সিরাজিয়া ৭২; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৪১২Sharable Link