মাহফুজুর রহমান - টাঙ্গাইল

৩০৬৭. Question

কিছুদিন আগে মসজিদে যাওয়ার পথে কাঁটাতারের আঘাতে আমার হাতের বেশ কিছু অংশের চামড়া ছিলে যায়। ফলে তা থেকে রক্ত গড়িয়ে না পড়লেও ছিলে যাওয়া অংশটি রক্তে লাল হয়ে থাকে। রক্ত গড়িয়ে না পড়ায় আমি ঐ অবস্থাতেই নামায পড়ি। কিন্তু নামাযের মাঝে ঐ অংশটির সাথে ঘষা লাগার কারণে আমার জামায় রক্তের হালকা দাগ লেগে যায়। আমার জানার বিষয় হল এভাবে নামায পড়া কি আমার জন্য শুদ্ধ হয়েছে? যখমের রক্ত যা গড়িয়ে পড়ার মতো নয় তা জামায় লাগলে কি জামা নাপাক হয়ে যাবে? এবং এ কারণে কি অযু ভেঙ্গে যাবে?


Answer

যখমের রক্ত গড়িয়ে না পড়লে অযু ভাঙ্গে না এবং এই রক্ত কাপড়ে লাগলে কাপড়ও নাপাক হয় না। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ রক্ত বাস্তবেই যদি গড়িয়ে পড়ার মতো না হয় তবে এ কারণে অযুও ভাঙ্গেনি এবং জামার হাতায় লাগার কারণে তা অপবিত্রও হয়নি। এক্ষেত্রে আপনার ঐ নামায শুদ্ধভাবেই আদায় হয়েছে।

-আলমাবসূত, সারাখসী ১/৭৬; ফাতহুল কাদীর ১/৩৪; আসসিআয়াহ ১/২১৫; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৩; রদ্দুল মুহতার ১/১৩৯

Sharable Link

রিয়াসাত কাবীর - বহুলা

৩০৬৮. Question

কিছুদিন আগে আমি অযু করার পর হঠাৎ বেহুঁশ হয়ে মাটিতে পড়ে যাই। কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরে পেয়ে দেখি জামাত শুরু হয়ে গেছে। তখন আমি দ্রুত গিয়ে ইমামের সাথে রুকুতে শরিক হয়ে যাই। নামায শেষে পাশের এক ভাই আমাকে বললেন, আপনার নামায তো হয়নি। কারণ অজ্ঞান হলে অযু ভেঙ্গে যায়। তাই আপনি অযু করে আবার নামায পড়ে নিন। এখন জানার বিষয় হল, তার এ কথা কি ঠিক? জ্ঞান হারানোর কারণে কি অযু ভেঙ্গে যায়?


Answer

জ্বী হ্যাঁ, অল্প সময়ের জন্য বেহুঁশ বা অচেতন হয়ে পড়লেও অযু ভেঙ্গে যায়। ঐ ব্যক্তি ঠিকই বলেছে। তাই এমনটি হলে জ্ঞান ফিরার পর নতুনভাবে অযু করতে হবে।

-কিতাবুল আছল ১/১৪৫; আলমাবসূত, সারাখসী ১/৮৯; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৭১; রদ্দুল মুহতার ১/১৪৩

Sharable Link

ফরহাদ হোসেন - সাভার, ঢাকা

৩০৬৯. Question

একাকী নামায আদায়কারী ব্যক্তি সূরা-কিরাত, তাসবীহ-দুআ ইত্যাদি কতটুকু জোরে পড়বে? নিজ কানে শুনতে পায়-এ পরিমাণ জোরে, নাকি শুধু ঠোঁট নাড়িয়ে হরফের মাখরাজ আদায় করে নিলেই যথেষ্ঠ হবে?


Answer

নিম্নস্বরে আদায়কৃত নামাযসমূহে নামাযী সূরা-কিরাত নিজ কানে শুনতে পায়-এ পরিমাণ আওয়াজে পাঠ করা উত্তম। তবে পাশের মুসলি পর্যন্ত আওয়াজ না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। অবশ্য কেউ যদি ঠোঁট নাড়িয়ে একেবারে নিম্ন আওয়াজে হরফের মাখরাজ যথাযথভাবে আদায় করে পড়ে তবেও তার নামায আদায় হয়ে যাবে।

-কিতাবুল আসল ১/১৯৬; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৯৭; আততাসহীহ ওয়াত তারজীহ আলা মুখতাসারিল কুদুরী ৭৪; ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/১৫৫

Sharable Link

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক - চট্টগ্রাম

৩০৭০. Question

যোহর নামাযের সময় প্রায় আধা ঘণ্টা বাকি থাকতেই একজন মহিলার ঋতুস্রাব দেখা দেয়। মহিলাটি তখনও যোহর নামায আদায় করেনি। জানতে চাই, পবিত্র হওয়ার পর তাকে কি ঐ দিনের যোহর নামায কাযা

করতে হবে?


Answer

না, মহিলাটিকে ঐ দিনের যোহর নামাযের কাযা পড়তে হবে না। কেননা যোহরের ওয়াক্ত বাকি থাকা অবস্থায় ঋতুস্রাব শুরু হয়েছে। ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন, নামাযের সময়ের মধ্যে কোনো মহিলার অপবিত্রতা শুরু হলে ঐ নামায তাকে কাযা করতে হবে না।-কিতাবুল আছার ১/৮৪

হাসান বছরী রাহ., মুহাম্মাদ ইবনে সীরিন রাহ. প্রমুখ থেকেও অনুরূপ বর্ণনা এসেছে।

-কিতাবুল আছার ১/৮৪; কিতাবুল আছল ১/২৮৬; ফাতহুল কাদীর ১/১৫২; আলবাহরুর রায়েক ১/২০৫; রদ্দুল মুহতার ১/২৯১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৪৮৩

Sharable Link

আহমদ করীম - নোয়াখালি

৩০৭১. Question

গত রমযানে আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব বিতর নামাযে ভুলে দুআ কুনূত না পড়ে রুকুতে চলে যান। স্মরণ হওয়ার পর রুকু থেকে উঠে দুআ কুনূত পাঠ করেন। তারপর পুনরায় আবার রুকু করেন এবং পরে সাহু সিজদাও দেন। জানার বিষয় হল, আমাদের এই নামায সহীহ হয়েছে কি না? এক  রাকাতে দুইবার রুকু করার কারণে কোনো সমস্যা হয়েছে কি? জানিয়ে বাধিত করবেন।


Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সাহু সিজদা দিয়ে নামায শেষ করার কারণে সকলের নামায সহীহ হয়ে গেছে। উলেখ্য, দুআ কুনূত না পড়ে রুকুতে চলে গেলে নিয়ম হল পুনরায় কুনূতের জন্য না উঠে যথা নিয়মে নামায পড়ে যাওয়া এবং ভুলের জন্য সাহু সিজদা দেওয়া। কিন্তু এক্ষেত্রে ইমাম যদি রুকু থেকে  দুআ কুনূতের জন্য দাঁড়িয়ে যায় তবে পুনরায় রুকু করবে না; বরং দাঁড়ানো থেকে সরাসরি সিজদায় চলে যাবে। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে এই উভয় নিয়মের লঙ্ঘন হয়েছে। এতদসত্ত্বেও ঐ নামায আদায় হয়ে গেছে তা পুনরায় পড়তে হবে না।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭০; আলবাহরুর রায়েক ২/৪৩; শরহুল মুনইয়াহ ৪৬০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৯৮; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৬৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/৯

Sharable Link

এইচ এম এস - সিদ্ধেশ্বরী, ঢাকা

৩০৭২. Question

আমার বাড়ি থেকে খুলনা শহর  ৭১ কি. মি. এবং শহরের ভেতর ৫ কি.মি. দূরে আমার ভাইয়ের বাসা। আমি বাড়ি থেকে খুলনা গেলে মুকীম হব নাকি মুসাফির?


Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে খুলনা শহরে এবং আপনার ভাইয়ের বাড়িতে আপনি মুকীম থাকবেন। কেননা আপনার বাড়ি থেকে খুলনা শহর ও ভাইয়ের বাড়ির দূরত্ব সফর পরিমাণ (অর্থাৎ ৪৮ মাইল বা প্রায় ৭৮ কি.মি.) নয়। তাই আপনার বাড়ি থেকে সেখানে গেলে আপনাকে পূর্ণ নামাযই পড়তে হবে।

-রদ্দুল মুহতার ২/১২২; ফাতহুল কাদীর ২/৪; জাওয়াহিরুল ফিকহ ৩/৪২৫

Sharable Link

শফিকুর রহমান - কাঠালবাগান জামে মসজিদ, ঢাকা

৩০৭৩. Question

ইতিকাফের ফযীলত সম্পর্কিত নিম্নোক্ত হাদীসটি সহীহ কি না জানিয়ে বাধিত করবেন। হাদীসটি হল, যে ব্যক্তি রমযানের দশদিন ইতিকাফ করল সে যেন দুই হজ্ব ও দুই উমরাহ করল। একজন আলেম বলেছেন, এই বর্ণনাটি উৎসাহ দেওয়ার জন্য কেউ হয়ত বলেছেন এটি হাদীস নয়।


Answer

প্রশ্নোক্ত বর্ণনাটি ঠিক নয়। এটি একটি মুনকার বর্ণনা। এটি ইমাম তবারানী রাহ.-এর আলমুজামুল কাবীর গ্রন্থে (বর্ণনা নং ২৮৮৮) এবং ইমাম বায়হাকী রহা.-এর শুআবুল ঈমান গ্রন্থে (বর্ণনা নং ৩৯৬৬-৬৭) উলেখ আছে।

কিন্তু হাদীস বিশারদগণের নিকট বর্ণনাটি সনদের বিচারে মানোত্তীর্ণ নয়। এর সনদে মুহাম্মাদ ইবনে যাযান ও আনবাসা ইবনে আবদুর রহমান নামে দুজন ব্যক্তি রয়েছে, যাদের সম্পর্কে জরহ-তাদীল শাস্ত্রের ইমামগণের বিভিন্ন আপত্তি আছে।

আলামা মুনাবী রাহ. উক্ত হাদীস সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে ফয়যুল কাদীর গ্রন্থে বলেছেন, উক্ত বর্ণনায় মুহাম্মাদ ইবনে যাযান নামে একজন রাবী আছেন, যিনি মাতরুক (পরিত্যাজ্য)। এছাড়া এতে আনবাসা ইবনে আবদুর রহমান রয়েছে, যাকে ইমাম বুখারী রাহ. মাতরুক বলেছেন। আর ইমাম যাহাবী রাহ. তাকে জাল বর্ণনাকারী হিসেবে অভিযুক্ত করেছেন।

সুতরাং ইতিকাফের ফযীলত সম্পর্কিত প্রশ্নোক্ত বর্ণনা গ্রহণযোগ্য নয়। তাই এটি মানুষের মাঝে বর্ণনা করা থেকে বিরত থাকতে হবে। তবে রমযানের শেষ দশকের ইতিকাফ অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ সুন্নত আমল। রাসূলুলাহ সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা তা প্রমাণিত। এক রমযানে কোনো কারণে তিনি ইতিকাফ করতে পারেননি। তাই পরবর্তী বছর তিনি বিশদিন ইতিকাফ করেছেন।-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২৪৬৮

তাই প্রশ্নোক্ত ফযীলতের বর্ণনাটি বিশুদ্ধ না হলেও ইতিকাফ যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ফযীলতপূর্ণ ইবাদত তা রাসূলুলাহ সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম-এর বাস্তব আমল দ্বারা সহজেই অনুমেয়।

Sharable Link

মাকসুদা বিনতে আবদুলাহ - নোয়াপাড়া, টেকনাফ

৩০৭৪. Question

 

আমার নিকট দুই লক্ষ টাকা আছে। সে টাকার উপর দশ মাস অতিবাহিত হয়েছে। দশ মাসের মাথায় আমার আববা মৃত্যুবরণ করেন। তার রেখে যাওয়া সম্পদ থেকে মীরাস হিসেবে আমি এক লক্ষ টাকা পাই। জানার বিষয় হল, বছর শেষ হলে আমার ঐ দুই লক্ষ টাকার সাথে মীরাস সূত্রে পাওয়া টাকার উপরও কি যাকাত আসবে, নাকি উভয়ের আলাদা আলাদা হিসাব হবে?

 


 

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বছর শেষে ঐ এক লক্ষ টাকাসহ পুরো তিন লক্ষ টাকা থাকলে পুরোটার যাকাত দিতে হবে। কেননা নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিকের নিকট যাকাতবর্ষের ভেতর যাকাতযোগ্য যত সম্পদ জমা হবে বছর শেষে যা থাকবে মূল নেসাবের সাথে সেগুলোরও যাকাত দিতে হবে। এক্ষেত্রে মূল নেসাবের উপর বছরপূর্ণ হওয়াই যথেষ্ট। সকল সম্পদের উপর বছর পূর্ণ হওয়া জরুরি নয়।

-আলমাবসূত, সারাখসী ২/১৬৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৮৮; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/৬২; আলবাহরুর রায়েক ২/২২২

Sharable Link

মাওলানা যাকারিয়া - ঢাকা

৩০৭৫. Question

আগামী বছর আমরা স্বামী-স্ত্রী হজ্বে যাব। আমাদের দু বছরের একটি ছেলে সন্তান আছে। তাকেও নিয়ে যাব। প্রশ্ন হল এই শিশু ছেলের ইহরাম বা হজ্বের আমল কীভাবে হবে? তাকেও কি ইহরাম পরাতে হবে? ঠান্ডার দরুণ মাথা মুখ ঢাকতে হলে তা পারব কি না? তার ভুলের কারণে দম ওয়াজিব হবে কি? দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন।


Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে শিশু সন্তানের পক্ষ থেকে তার পিতা ইহরাম  করে নিবেন। আর এই শিশুকে ইহরামের কাপড় পরানো জরুরি নয়। সম্ভব হলে পরাবে এবং যথাসম্ভব ইহরামের নিষিদ্ধ জিনিস থেকেও তাকে বিরত রাখতে চেষ্টা করবে। প্রয়োজন হলে তাকে সেলাই করা পোশাক পরাতে পারবে এবং চেহারা ও মাথা ঢাকতেও পারবে।

শিশু বাচ্চা ইহরামের নিষিদ্ধ কোনো কিছু করার দ্বারা তার উপর কিংবা তার অভিভাবকের উপর জরিমানা দম বা অন্য কোনো কিছু ওয়াজিব হবে না। অভিভাবক তাকে নিয়ে তাওয়াফ-সায়ী করবে। আর তার পক্ষ থেকে তাওয়াফের দুই রাকাতও পড়তে হবে না। মিনা, আরাফায় নিজেদের সাথে সাথে রাখবে এবং তার পক্ষ থেকে কংকর নিক্ষেপ করবে। আর তার পক্ষ থেকে দমে শোকর আদায় করতে হবে না। ইহরাম ত্যাগ করার জন্য তার মাথা মুন্ডন করে দিবে।

-মানাসিক, মোল্লা আলী কারী ১১২-১১৩, ২৬৩; গুনইয়াতুন নাসিক ৮৩-৮৪; রদ্দুল মুহতার ২/৪৬৬

Sharable Link

শামসুল আরেফীন - শেওড়াপাড়া, ঢাকা

৩০৭৬. Question

বিয়ের ক্ষেত্রে সাক্ষীর প্রয়োজন আছে এটা আমাদের জানা আছে। কিন্তু সাধারণ মহলে দেখা যায়, মেয়ের অনুমতি (ইযিন) নেওয়ার জন্যও দুই জন সাক্ষীর উপস্থিতিকে জরুরি ভাবা হয়। জানতে চাই, ইযন নেওয়ার সময় কি সাক্ষীর প্রয়োজন আছে?

 ওকিল যদি পিতা বা ভাই হয় তাহলেও কি সাক্ষীর প্রয়োজন হবে? সঠিক মাসআলা জানিয়ে বাধিত করবেন।

 

Answer

কনে থেকে বিবাহের ইযন বা সম্মতি গ্রহণের জন্য সাক্ষী জরুরি নয়। তবে সাক্ষী রাখা ভালো। আর সাক্ষী রাখতে চাইলে মেয়ের মাহরাম থেকেই হতে হবে। গায়রে মাহরাম পুরুষ যেন ইযন নেওয়ার জন্য মেয়ের সামনে না যায়-এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

-আলবাহরুর রায়েক ৩/৮৯; রদ্দুল মুহতার ৩/২১

Sharable Link

নাম ও ঠিকানা প্রকাশে অনিচ্ছুক - ঠিকানা প্রকাশে অনিচ্ছুক

৩০৭৭. Question

প্রায় তিন বছর আগে আমি আমার মায়ের মাথা ছুঁয়ে কসম করেছিলাম যে, আমি আর ধূমপান করব না। কিন্তু পরে আমি ধূমপান করেছি। অতপর আমি তাবলীগে গিয়ে আলাহ তাআলার মেহেরবানিতে দ্বীনের বুঝ পেয়েছি। আলাহ তাআলার ইচ্ছায় এখন দ্বীনদারির সাথে জীবনযাপন করার চেষ্টা করছি। সকল মন্দ কাজ থেকে তওবা করেছি। এরপর থেকে আর ধূমপান করিনি। আমাকে কি এখন সেই কসমের কাফফারা দিতে হবে? আমি এখনো ছাত্র। আমার ভরণ-পোষণের খরচ আববা থেকে নেই। কাফফারা দিতে হলে তার থেকে টাকা নিয়ে কি দেওয়া যাবে? তাকে কি জানাতে হবে কী জন্য টাকা নিয়েছি? কাফফারা স্বরূপ কী

করতে হবে?


Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে কসম ভঙ্গ করার কারণে আপনাকে কাফফারা দিতে হবে। কসমের কাফফারা হল, দশজন মিসকীনকে দু বেলা তৃপ্তি সহকারে খানা খাওয়ানো অথবা তাদেরকে এক জোড়া করে বস্ত্র দান করা। আর আপনার পিতাকে জানিয়ে তার থেকে টাকা নিয়েও কাফফারা আদায় করতে পারবেন। তবে নিজ থেকে অর্থ ব্যয়ের মাধ্যমে কাফফারা আদায়ের সামর্থ্য না থাকলে লাগাতার তিনটি রোযা রেখে কাফফারা আদায় করা যাবে।

প্রকাশ থাকে যে, কসম একমাত্র আলাহ তাআলার নামেই করা যায়। আলাহ তাআলা ব্যতিত অন্য কারো নামে কসম করা নাজায়েয। আর পিতা-মাতা বা অন্য কারো মাথা ছুয়ে কসম করা কুসংস্কারের অন্তর্ভুক্ত।

-সূরা মায়েদা : ৮৯; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ২/৪৫৩; কিতাবুল আছার ২/৬০০; কিতাবুল আছল ২/২৭৬, ২৮০; ফাতহুল কাদীর ৪/৪৬৭; ফাতাওয়া খানিয়া ২/৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৫৩; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩০; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৭২৫, ৩/৭০৮

Sharable Link

মুহাম্মাদ আবদুলাহ - রাজশাহী

৩০৭৮. Question

এ. কে. ট্রাভেলস কোম্পানির বাসের টিকেট ক্রয়ের পর কোনো কারণে যাত্রার কমপক্ষে ৬ ঘণ্টা আগে টিকেট ফেরত দিলে কর্তৃপক্ষ তা ফেরত নেয়। তবে শতকরা ১০/- টাকা করে কেটে রাখে। জানতে চাই, এভাবে টাকা কেটে রাখা বৈধ কি না?


Answer

বাস কর্তৃপক্ষের জন্য বিক্রিত টিকেট  ফেরত না নেওয়ারও অধিকার রয়েছে। তবে ফেরত নিলে টাকা কেটে রাখা যাবে না। অবশ্য টিকেট দেওয়া- নেওয়ার জন্য যা খরচ হয়েছে সার্ভিস চার্জ হিসেবে তা কেটে রাখতে পারবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ৪/৫৯৩; আদ্দুররুল মুখতার ৫/১২৪

Sharable Link

মুহাম্মাদ আবদুলাহ - ঢাকা

৩০৭৯. Question

আমরা শুনেছি, কুইজ প্রতিযোগীদের থেকে টাকা নিয়ে তা দিয়ে বিজয়ীদের পুরস্কার দেওয়া অবৈধ। তাহলে আমাদের প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষার জন্য ফী গ্রহণ করা হয় আর এই ফীর একটি অংশ দ্বারা মেধাবী ছাত্রদের পুরস্কার দেওয়া হয়। এটা  জায়েয কি না? জায়েয হলে উভয়ের মাঝে পার্থক্য কী? দয়া করে কুরআন-হাদীসের আলোকে বিস্তারিত জানাবেন।


Answer

পরীক্ষার জন্য ফী গ্রহণ করা এবং কুইজ প্রতিযোগিতার জন্য টাকা নেওয়ার হুকুম এক নয়। কেননা পরীক্ষার ফী পরীক্ষা সংক্রান্ত খরচ এবং এর ব্যবস্থাপনার জন্য কর্তৃপক্ষ নিয়ে থাকেন। এই টাকার মালিক প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠান অন্যান্য খরচের মতো চাইলে এ টাকা দিয়ে মেধাবী ছাত্রদেরকে পুরস্কারও দিতে পারে। কিন্তু কুইজ প্রতিযোগীদের থেকে ফরমের ন্যায্য মূল্যের অতিরিক্ত নেওয়া ঠিক নয়। অতিরিক্ত নিলে কর্তৃপক্ষ তার মালিক হবে না। সুতরাং প্রতিযোগীদের থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে তা দ্বারা পুরস্কার দেওয়াও বৈধ হবে না। বরং তাদের থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে পুরস্কার দেওয়া এক ধরনের কিমার।

-বুহুস ফী কাযায়া ফিকহিয়্যা মুআসিরা ২/২৩২

Sharable Link

শাহ ইফতেখার চৌধুরী - মতিঝিল, ঢাকা

৩০৮০. Question

আমি একটি সুদী ব্যাংকে ১৫ বছর কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেছি। এ সময় ব্যাংক থেকে পাওয়া বেতন দিয়ে জমি, বাড়ি-গাড়ি করেছি। এখন আমি সুদী কারবারে জড়িত থাকার কারণে অনুতপ্ত হয়ে ভিন্ন চাকুরীতে যোগদান করেছি। কিন্তু আগের চাকুরীর বেতন দিয়ে আমি যে সম্পত্তির মালিক হয়েছি তা কি আমার জন্য বৈধ হবে? বৈধ না হলে আমি এখন কী করতে পারি? অনুগ্রহ করে জানিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন।


Answer

সুদী ব্যাংকে চাকুরী করে যা উপার্জন করেছেন তা হারাম। এ টাকা দিয়ে খরিদকৃত জমি ও বাড়ি-গাড়ি ব্যবহার করা ও তা দ্বারা উপকৃত হওয়া নাজায়েয। এখন আপনি যদি এগুলো থেকে বৈধভাবে উপকৃত হতে চান তবে যে পরিমাণ টাকা দ্বারা জমি কিনেছেন ও বাড়ি-গাড়ি করেছেন সওয়াবের নিয়ত ছাড়া সে পরিমাণ টাকা গরীব-মিসকীনদের মাঝে সদকা করে দিলে আপনি এ সম্পদের মালিক হয়ে যাবেন। তখন এগুলো থেকে উপকৃত হওয়া জায়েয হবে। ক্রয়মূল্য সদকা করার আগ পর্যন্ত ঐ সম্পদ হালাল হবে না এবং এর থেকে কোনো প্রকার উপকৃত হওয়াও আপনার জন্য বৈধ হবে না।

তাই ক্রয়মূল্য সদকা করার পূর্বে বাড়িভাড়া বা জমি থেকে যা আয় হবে তাও সদকা করে দিতে হবে। আর পিছনের জীবনে হারাম উপার্জন ও তার ভোগব্যবহারের কারণে আল্লাহ তাআলার নিকট তাওবা-ইস্তিগফারও করতে হবে।

-তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম ১/৬১৯; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/৩২২; বাদায়েউস সানায়ে ৬/১৫০; হেদায়া, ফাতহুল কাদীর ৮/২৫৮

Sharable Link

ইবরাহীম - মনোহরদী, নরসিংদী

৩০৮১. Question

আমাদের একটা গরু আছে। কোনো এক রোগের কারণে যার লেজের সামান্য অংশ লম্বা পশমসহ ঝরে পড়েছে। আগামী ঈদুল আযহায় গরুটি কুরবানী দিতে চাচ্ছি। শরীয়তের দৃষ্টিতে তা বৈধ হবে কি?


Answer

হ্যাঁ, ঐ গরু দ্বারা কুরবানী করা জায়েয হবে। কেননা কোনো গরুর লেজ যদি অর্ধেকের বেশি অবশিষ্ট থাকে তবে তা দ্বারা কুরবানী করা জায়েয।

-মুখতাছারুত তহাবী ৭/৩৫৫; হেদায়া ৮/৪৩৩; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৫৩; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৪; আলবাহরুর রায়েক ৮/১৭৮; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২৩

Sharable Link

মুজাহিদুল ইসলাম - জামিয়া মাদানিয়া ফেনী

৩০৮২. Question

আমার আত্মীয়স্বজনের সংখ্যা অনেক বেশি। কিছুদিন পর আমার ছেলের আকীকা। আমি কি তিন বা ততোধিক ছাগল দ্বারা তার আকীকা করতে পারব? এক্ষেত্রে শরীয়তের বিধান কী? জানানোর অনুরোধ রইল।


Answer

হাদীস শরীফে ছেলে সন্তানের ক্ষেত্রে দুইটি ছাগল দ্বারা আকীকা করার কথা এসেছে। হযরত উম্মে কুরয রা. রাসূলুলাহ সালালাহু আলাইহি ওয়াসালামকে আকীকা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি উত্তরে বলেন, ছেলের জন্য দুটি ছাগল আর মেয়ের জন্য একটি ছাগল (দ্বারা আকীকা করবে)। (জামে তিরমিযী, হাদীস : ১৫১৫; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৬৭১৩; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২৮৩৬; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৭৬৬৫)

উক্ত হাদীসের নির্দেশনা মোতাবেক ছেলের জন্য দুটি ছাগল দ্বারাই আকীকা করা নিয়ম। তাই আকীকার নিয়তে তিন বা ততোধিক ছাগল যবাই না করাই বাঞ্ছনীয়। উল্লেখ্য, আকীকার মুস্তাহাব আদায়ের জন্য দাওয়াতের আয়োজন জরুরি নয়।

-ইমদাদুল ফাতাওয়া ৩/৬২২

Sharable Link

মুহাম্মাদ কামাল আহমদ - সোনাইমুড়ি, নোয়াখালি

৩০৮৩. Question

আমি প্রতি বছর একা একটা গরু কুরবানী করি। গত বছরও একা কুরবানী করার নিয়তে গরু কেনার জন্য হাটে যাই। কিন্তু অস্বাভাবিক চড়ামূল্যের কারণে একা ক্রয় করা সম্ভব হয়নি। তাই গরু ক্রয়ের সময় শরিক নেওয়ার নিয়ত করে নেই এবং পরে আরেকজনকে শরিকে নিয়ে কুরবানী করি। প্রশ্ন হল, ঐভাবে কুরবানী করার দ্বারা কি আমার কুরবানী আদায় হয়েছে?


Answer

হ্যাঁ, আপনার কুরবানী সহীহ হয়েছে।

-কিতাবুল আছল ৫/৪০৮; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১০; হেদায়া ৪/৪২৯; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৭

Sharable Link

মুহাম্মাদ আদনান - কুমিল্লা

৩০৮৪. Question

পিতা তার ছেলেমেয়েদের মধ্যে সম্পদ বণ্টন করার ক্ষেত্রে ছেলে ও মেয়েকে সমান সমান দিতে হবে কি না?

এ অবস্থায় এমদাদুল মুফতীনের ৯৫৮ নং প্রশ্নের উত্তরে ৮৭০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, ছেলে ও মেয়েকে সমান সমান দিতে হবে। মিরাসের নিয়মে মেয়েকে অর্ধেক দিবে না বা দেওয়া উচিত নয়। এ মাসআলা কি সঠিক? বিস্তারিত জানতে চাই।

 

Answer

পিতামাতা জীবদ্দশায় সন্তানদিগকে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি দেওয়ার বিষয়টি দুভাবে হতে পারে।

এক. সন্তানদিগকে সম্পত্তির অংশবিশেষ প্রদান করা।

দুই. জীবদ্দশায় সকল সম্পত্তি সম্ভাব্য ওয়ারিশদের মাঝে বণ্টন করে দেওয়া।

প্রথম ক্ষেত্রে অর্থাৎ পিতামাতা যদি সন্তানদেরকে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি থেকে কোনো কিছু প্রদান করতে চান তাহলে সেক্ষেত্রে ছেলেমেয়ে সকলকে সমানভাবে দেওয়া কর্তব্য। শরীয়তসম্মত কোনো কারণ ছাড়া তাদের মাঝে উলেখযোগ্য কমবেশি করা ঠিক নয়।

তদ্রূপ মীরাসের নীতি অনুযায়ী ছেলেকে মেয়ের দ্বিগুণ দেওয়া  যাবে না। কেননা হাদীস শরীফে সন্তানদিগকে কোনো কিছু হেবা করার ক্ষেত্রে সমতা রক্ষা করার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

যেমন, নুমান ইবনে বাশীর রা. বলেন, আমার পিতা আমাকে রাসূলুলাহ সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম-এর নিকট নিয়ে গেলেন। উদ্দেশ্য ছিল, রাসূলুলাহ সালালাহু আলাইহি ওয়াসালামকে সাক্ষী রেখে আমাকে একটি জিনিস হাদিয়া দিবেন। তখন তিনি আমার পিতাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, সে ছাড়া তোমার আর কোনো সন্তান আছে? তিনি বললেন, জ্বী, আছে।

রাসূলুলাহ  সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বললেন, তাদের মাঝে সমতা রক্ষা কর।-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৮৩৫৯

সহীহ বুখারীর একটি বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুলাহ সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম ইরশাদ করেছেন, সন্তানদেরকে হাদিয়া দেওয়ার ক্ষেত্রে সমতা রক্ষা কর।-সহীহ বুখারী ১/৩৫২

অবশ্য সন্তানদের মধ্যে কেউ যদি পিতামাতার অধিক অনুগত হয় এবং তাদের খেদমত ও দেখাশোনার প্রতি অধিক যত্নবান হয় অথবা ইলম-আমল, তাকওয়া ও পরহেযগারিতে কোনো সন্তান অধিক অগ্রগণ্য হয় সেক্ষেত্রে পিতামাতা খুশি হয়ে তাকে কিছু বেশি দিতে চাইলে তা জায়েয।

এভাবে দেওয়া সাহাবা থেকে প্রমাণিত আছে। যেমন, আবু বকর রা. আয়েশা রা.-কে, উমর রা. আসেম রাহ.-কে এবং আবদুর রহমান ইবনে আউফ রা. তাঁর কোনো কোনো সন্তানকে অধিক দিয়েছেন। (মুআত্তা, ইমাম মালেক পৃষ্ঠা : ৬৪৩; শরহু মাআনিল আছার ২/২২৫; ফাতহুল বারী ৫/২৫৪)

 

আর দ্বিতীয় ক্ষেত্রে অর্থাৎ পিতামাতা যদি মৃত্যুর পূর্বে সকল স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ওয়ারিসদের মাঝে বণ্টন করে দিতে চায় তাহলে এক্ষেত্রেও যেহেতু তা মূলত হেবা বা দানেরই অন্তর্ভুক্ত তাই ফকীহগণের অনেকের মতে এ অবস্থায়ও ছেলেমেয়ে সকলকে সমহারে দিতে হবে। মীরাসের নীতি অনুযায়ী ছেলেকে মেয়ের চেয়ে দ্বিগুণ করে দেওয়া যাবে না। ইমদাদুল মুফতীনে এ মতকে গ্রহণ করা হয়েছে। এ মত অনুযায়ী কেউ সন্তানদের মাঝে সমুদয় সম্পত্তি সমহারে বণ্টন করে দিলেও তা অন্যায় হবে না।

তবে এক্ষেত্রে আরেকটি মত হল, জীবদ্দশায় সকল সম্পত্তি বণ্টন বাহ্যিকভাবে হেবা বা দান হলেও উদ্দেশ্যের দিক থেকে যেহেতু তা মৃত্যু পরবর্তী মীরাসের পূর্ববণ্টন তাই উদ্দেশ্যের বিবেচনায় মীরাসের নীতি অনুযায়ীই বণ্টন করা উচিত এবং ছেলেকে মেয়ের চেয়ে দ্বিগুণ দেওয়া উচিত। এটি ইমাম মুহাম্মাদ রাহ.-

এর মত।

 

আর কিফায়াতুল মুফতী ও ফাতাওয়া রহীমিয়াতে একটি প্রশ্নের উত্তরে এ মত অনুযায়ী ফতোয়া দেওয়া হয়েছে। আর সহীহ মুসলিমের ভাষ্যগ্রন্থ তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিমেও এ মতকে গ্রহণ করা হয়েছে।

 

তাই উদ্দেশ্যের প্রতি লক্ষ্য রেখে এ মত অনুযায়ী ছেলেকে মেয়ের চাইতে দ্বিগুণ দেওয়া উত্তম হবে। এছাড়া বর্তমানে যেভাবে নিজের সমুদয় সম্পদ পূর্বেই বণ্টন করে দেওয়ার প্রবণতা হয়েছে তাতে এই দ্বিতীয় মত অনুযায়ী বণ্টন করাই অধিক যুক্তিযুক্ত। কারণ বর্তমানে অনেকেই নিজের জীবদ্দশাতেই সমুদয় সম্পদ ছেলেমেয়েদের নামে লিখে দিয়ে থাকে। এখন যদি প্রথমোক্ত বক্তব্যের উপর আমল করে সমান সমান দেওয়া হয় তাহলে পিতামাতার সম্পদে ছেলেমেয়েদেরকে শরীয়ত যেভাবে অংশ দিতে চেয়েছে তার উপর আর আমলের সুযোগই থাকে না। কারণ এক্ষেত্রে তার কোনো সম্পদই তো অবশিষ্ট থাকবে না।

-সহীহ বুখারী ১/৩৫২; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৪০৫৬; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৮৩৫৯; তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ২/৭১; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/২৩৭; আমুগনী, ইবনে কুদামা ১৩/৩৬৩

Sharable Link

মুহাম্মাদ মুয়াজ্জেম হোসেন - চাটখিল, নোয়াখালি

৩০৮৫. Question

গত ২১ মে ২০১৩ তারিখে নোয়াখালির এক মসজিদে বয়ানে শুনেছি যে, দাওয়াতের কাজে বের হয়ে এক পা ফেলার পর অপর পা ফেলার সাথে সাথেই আলাহ তাআলা তার পূর্বজীবনের গুনাহ মাফ করে দিবেন। তাদের আমলনামায় ১৭ জন আলেম, ২৩ জন মিসকীন, ৩০ জন শহীদের ছওয়াব লিখে দিবেন এবং আল্লাহ তাদেরকে নিজে হিসাব দিয়ে জান্নাতে পাঠিয়ে দিবেন। কুরআন-সুন্নাহর আলোকে এ বিষয়গুলি কতটুকু বাস্তব? দলিল-প্রমাণসহ বিস্তারিত জানানোর অনুরোধ রইল।


Answer

প্রশ্নে ফযীলতের যে কথাগুলি বলা হয়েছে তা সম্পূর্ণ বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। এগুলো কুরআন-সুন্নাহর কথা নয়। নিজ থেকে বানিয়ে ফযীলতের কথা বলা এবং লোকদের মাঝে তা প্রচার করা দ্বীনের মধ্যে সংযোজনের অন্তর্ভূক্ত, যা সম্পূর্ণ হারাম ও মারাত্মক গুনাহ। আর হাদীস হিসেবে তা প্রচার করা আরো ভয়াবহ গুনাহ। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি দ্বীনে এমন কিছু সংযোজন করল, যা দ্বীনের অন্তর্ভূক্ত নয় তবে তা প্রত্যাখ্যাত।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ২৬৯৭

অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমার উপর মিথ্যারোপ করবে সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয়।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ১০৭

প্রকাশ থাকে যে, দ্বীনের দিকে মানুষকে দাওয়াত দেওয়ার গুরুত্ব ও ফযীলত সম্পর্কে কুরআন-সুন্নাহয় বহু আয়াত ও হাদীস রয়েছে। তাই দাওয়াতের গুরুত্ব ও ফযীলত বর্ণনার ক্ষেত্রে এসব সুস্পষ্ট আয়াত ও হাদীস থেকে বর্ণনা করা কর্তব্য। দ্বীনী বিষয়ে না জেনে কিছু বলা, লোকমুখে প্রচলিত কথাবার্তা প্রচার করা দ্বীনের ব্যাপারে শৈথিল্য প্রদর্শনের অন্তর্ভুক্ত। এ থেকে বেঁচে থাকা জরুরি।

Sharable Link

আকলিমা পারভীন - ইশ্বরদী, পাবনা

৩০৮৬. Question

একজন আলেমকে বলতে শুনেছি যে, কেউ যদি হারাম খাদ্য খাওয়ার সময় আলাহ তাআলার নামের সাথে উপহাস করার জন্য বিসমিল্লাহ বলে তবে সে কাফের হয়ে যাবে। তবে কারো যদি উপহাস উদ্দেশ্য না হয় তবে সে কাফের  হবে না।

কিন্তু দুটি ইসলামী পত্রিকায় এর বিপরীত বক্তব্য দেখলাম। সেখানে বলা হয়েছে, হারাম খাদ্য খাওয়ার শুরুতে বিসমিল্লাহ বললেই কাফের হয়ে যাবে। স্বয়ং এ কাজটিই এক ধরনের উপহাস। তাই তার নিয়ত কী ছিল তা ধর্তব্য হবে না।

এ বিষয়ে সঠিক সমাধান জানিয়ে কৃতার্থ করবেন।


Answer

প্রশ্নে বর্ণিত আলেমের বক্তব্যই সঠিক। পত্রিকা দুটির এ সম্পর্কিত বক্তব্য সঠিক নয়। নিশ্চিতভাবে হারাম জানা সত্ত্বেও কোনো হারাম খাদ্য (যা হারাম হওয়ার বিষয়টি অকাট্য ও সকলেরই জানা) বিসমিলাহ বলে খাওয়া মারাত্মক গুনাহ ও কুফরি কাজ। তবে উপহাস বা ঠাট্টা উদ্দেশ্য না হলে এ কারণে কাউকে কাফের বলা যাবে না। অবশ্য এক্ষেত্রে লোকটি মারাত্মক গুনাহগার ও ফাসেক বলে গণ্য হবে।

আর উপহাস বা ঠাট্টার উদ্দেশ্যে কেউ এরূপ করলে সে কাফের হয়ে যাবে। তবে যতক্ষণ পর্যন্ত হারাম বস্ত্তর উপর কেউ উপহাস বা ঠাট্টার সাথে বিসমিলাহ বলেছে এটা নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে কাফের বলা যাবে না।

-হাশিয়াতুত তহতাবী আলাদ্দুর ২/৪৭৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৭/৩২৫; আলবাহরুর রায়েক ৫/১২৪

Sharable Link

আবদুল ওয়াহিদ - টাঙ্গাইল

৩০৮৭. Question

আমাদের পাশের বাসায় এক হিন্দু পরিবার ভাড়া থাকে। একবার তাদের ছোট ছেলে অসুস্থ হলে আমি কিছু ফলমূল নিয়ে তাকে দেখতে যাই। আসার সময় বেশ কিছু টাকাও দিয়ে আসি। কিন্তু এখন আমি এটা ভেবে খুবই চিন্তিত যে, আমি একজন মুসলমান হয়েও হিন্দু ছেলেকে দেখতে যাওয়া এবং টাকা দেওয়া জায়েয হয়েছে কি না? দয়া করে জানাবেন।


Answer

প্রতিবেশী অমুসলিম হলেও তাদের সাথে সদাচরণ করা, বিপদ-আপদে সাহায্য করা এবং অসুস্থতার সময় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা ইসলামের শিক্ষা। হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, এক ইহুদী বালক রাসূলুলা সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম-এর খেদমত করত। একবার সে অসুস্থ হলে রাসূলুলাহ সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম তাকে দেখতে গেলেন। অতপর তাকে বললেন, তুমি ইসলাম গ্রহণ কর। তখন সে মুসলমান হয়ে গেল। (সহীহ বুখারী ২/৮৪৪)

তাই প্রশ্নোক্ত হিন্দুকে দেখতে যাওয়া এবং তাকে সাহায্য করা অন্যায় হয়নি। তবে বিধর্মীদের সাথে হৃদ্যতা ও অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব কায়েম করা যাবে না। পবিত্র কুরআন মজীদে এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৪৮; আলবাহরুর রায়েক ৮/২০৪; ইমদাদুল মুফতীন ৮৪৫

Sharable Link

মুহাম্মাদ ইউনুস - ফেনী

৩০৮৮. Question

দুধ, চিনি ইত্যাদির সাথে অনেক সময় পিঁপড়া থাকে। দুধ বা চিনির সাথে দু একটা পিঁপড়াও মুখের ভিতরে চলে যায়। জানতে চাই, চিনি বা দুধের সাথে থাকা ঐ পিঁপড়া খাওয়া যাবে কি? এ বিষয়ে শরয়ী সমাধান জানিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন।


Answer

না, এসব পিঁপড়াও খাওয়া বৈধ নয়। কোনো খাদ্যের মধ্যে পিঁপড়া থাকলে তা সম্পূর্ণরূপে বেছে ফেলে দিয়ে ঐ খাবার খাওয়া যাবে। জেনেশুনে একটি পিঁপড়াও খাওয়া যাবে না।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪১৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৮৯; রদ্দুল মুহতার ৬/৩০৬

Sharable Link