রিয়াজুল ইসলাম - সতীঘাটা, যশোর

৬৩৮৩. Question

বাড়িতে যাওয়ার পথে পদ্মা নদী পার হওয়ার সময় কখনো ফেরিতে নামায পড়তে হয়। ফেরির ছাদে ওযুর যে পানির ব্যবস্থা থাকে, তা নদী থেকেই তোলা হয়। সেই পানি বেশ ঘোলাটে ও অস্বচ্ছ। আর লঞ্চ-ফেরির সব ধরনের ময়লা-আবর্জনা এবং টয়লেটের ময়লাও নদীতে পড়ে। ফলে ঐ পানি দিয়ে ওযু করতে, বিশেষত কুলি করতে রুচি হয় না।

হুজুরের কাছে জানার বিষয় হল, উক্ত পানি কি পাক এবং তা দ্বারা কি ওযু সহীহ হবে?

Answer

প্রবাহিত পানিতে নাপাকী পড়লে যদি নাপাকীর রঙ, গন্ধ ও স্বাদের কোনো একটিও পানিতে প্রকাশ না পায়, তাহলে ঐ পানি পাক। তা দ্বারা ওযু-গোসল ও পবিত্রতা অর্জন করতে কোনো অসুবিধা নেই।

সুতরাং ফেরির ট্যাংকির পানিতে নাপাকীর কোনো আলামত প্রকাশ না পেলে শুধু তা ঘোলাটে ও অস্বচ্ছ হওয়ার কারণে নাপাক গণ্য হবে না। তা দ্বারা ওযু-গোসল সহীহ হবে। 

-আলমাবসূত, সারাখসী ২৪/২৮; বাদায়েউস সানায়ে ১/২১৬; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী, ইসবীজাবী ১/৭১; রদ্দুল মুহতার ১/১৮৭

Sharable Link

বিনতে মুহাম্মাদ - নিউমার্কেট, যশোর

৬৩৮৪. Question

আমার প্রথম সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর নেফাস ছিল ১৮ দিন। দ্বিতীয় সন্তান হওয়ার পর ২০ দিন রক্ত আসে। এরপর ১৬ দিন রক্ত দেখা যায়নি। পরে আবার ৬ দিন স্রাব এসেছে।

হুজুরের কাছে জানার বিষয় হল, এক্ষেত্রে আমি কতদিন নেফাস গণ্য করব?

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ২০তম দিনে রক্ত বন্ধ হওয়ার পর নেফাসের সর্বোচ্চ সময়সীমা ৪০ দিনের ভেতর আবার রক্ত দেখা গেলেও তা যেহেতু ৪০ দিন অতিক্রম করে গেছে তাই এক্ষেত্রে আপনি আপনার প্রথম সন্তান প্রসবোত্তর নেফাসের সময়সীমা অনুযায়ী ১৮ দিন নেফাস গণ্য করবেন। এর পরবর্তী দিনগুলো এক্ষেত্রে ইস্তিহাযা গণ্য হবে। তাই ১৮তম দিনের পর থেকে পবিত্রতা অর্জন করে নামায পড়া আপনার ওপর ফরয ছিল। সুতরাং ১৮তম দিনের পর যে দিনগুলোতে রক্ত দেখা গেছে তখন যদি নামায না পড়ে থাকেন, তাহলে তা কাযা করে নিতে হবে।

-কিতাবুল আছল ১/২৯৪; আলমাবসূত, সারাখসী ২/১৪১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২২৩; আলবাহরুর রায়েক ১/২১২; রদ্দুল মুহতার ১/৩০০

Sharable Link

তুষার আহমদ - খড়কী, যশোর

৬৩৮৫. Question

রমযান মাসে একদিন এশার জামাতে মসজিদে যেতে দেরি হয়ে যায়। মসজিদে পৌঁছে দেখি, তারাবী শুরু হয়ে গেছে। তখন আমি খতম ছুটে যাবে মনে করে এশার নামায না পড়েই তারাবীতে শরীক হয়ে যাই। পরে বাসায় এসে এশা ও বিতির আদায় করি।

জানার বিষয় হল, আমার উক্ত তারাবী কি সহীহ হয়েছে?

Answer

না, আপনার তারাবী নামায আদায় হয়নি। কেননা তারাবী নামায সহীহ হওয়ার জন্য আগে এশার ফরয আদায় করা জরুরি। এশার ফরয পড়ার আগে তারাবীহ পড়লে তা আদায় হয় না।

এক্ষেত্রে আপনার করণীয় ছিল, আগে এশার ফরয আদায় করা, অতঃপর তারাবীর জামাত পেলে তাতে শরীক হওয়া।

-আলফাতাওয়া মিন আকাবীলিল মাশায়েখ, পৃ. ৮৫; বাদায়েউস সানায়ে ১/৬৪৪; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৩৫; আলমুহীতুল বুরহানী ২/২৫২; রদ্দুল মুহতার ২/৪৪

Sharable Link

ফয়সাল আহমদ - কুষ্টিয়া

৬৩৮৬. Question

একদিন আমি মাগরিবের ফরয নামায মসজিদে পড়ে বাসায় এসে সুন্নতের নিয়ত বাঁধি। বাইরে থেকে অনেক আওয়াজ আসছিল। তাই নামাযে একাগ্রতা আনার জন্য আমি উচ্চৈঃস্বরে কেরাত পড়ি। নামায শেষে খটকা লাগে, এভাবে জোরে কেরাত পড়ার কারণে নামাযে কোনো অসুবিধা হয়নি তো? তাই হুজুরের কাছে জানতে চাচ্ছি, আমার ওপর কি সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হয়েছিল? আমি সাহু সিজদা করিনি; আমার নামাযের কী হুকুম?

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়নি। তাই এক্ষেত্রে সাহু সিজদা না করা ঠিক হয়েছে। কেননা রাতের সুন্নত-নফল নামাযে কেরাত জোরে পড়লে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয় না।  -গায়াতুল বায়ান ১/৬৭৪; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৪২; মাজমাউল আনহুর ১/১৫৬; গামযু উয়ুনিল বাসায়ির ২/২৯; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৩৩

Sharable Link

হুযাইফা মুহাম্মাদ - কেরানীগঞ্জ

৬৩৮৭. Question

শীতকালে শেষ রাতে প্রচণ্ড শীতের কারণে আমি কানটুপি ব্যবহার করি এবং সাধারণত এটি পরেই ফজরের নামায আদায় করি। এক্ষেত্রে কখনো এমনও হয় যে, কানটুপি পরার কারণে কপাল ঢেকে যায় এবং ঐ অবস্থাতেই সিজদা আদায় করা হয়।

জানতে চাচ্ছি, কপাল কানটুপি দ্বারা আবৃত অবস্থায় সিজদা করার দ্বারা আমার সিজদা আদায় হবে কি?

Answer

সিজদার সময় কানটুপি দ্বারা কপাল ঢাকা থাকলেও সিজদা আদায় হয়ে যাবে এবং উক্ত নামাযও সহীহ হবে। তবে বিনা ওযরে কপাল ঢেকে সিজদা করা অনুত্তম। 

-সহীহ বুখারী, পৃ. ৫৬; আযযাখিরাতুল বুরহানিয়া ২/৮৪; আলবাহরুর রায়েক ১/৩১৯; হালবাতুল মুজাল্লী ২/২৫৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১০৮; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫০০ 

Sharable Link

আবু তালহা - ফতুল্লা, নারায়ণগঞ্জ

৬৩৮৮. Question

গত শনিবার আমাদের মাদরাসা মসজিদে ইমাম সাহেবের পেছনে মাগরিবের নামায আদায় করছিলাম। ইমাম সাহেব তৃতীয় রাকাতে রুকু থেকে দাঁড়িয়ে হঠাৎ বলে উঠলেন, আমরা নিয়ত ছেড়ে দিই। তাই মুসল্লিরা সবাই নিয়ত ছেড়ে দেয়। অতঃপর তিনি একজন ছাত্রকে নামায পড়ানোর জন্য বলে ওযু করতে চলে যান। পরে ঐ ছাত্র তখনই পুনরায় নামায পড়িয়ে দেন। তবে দ্বিতীয়বার জামাত করার সময় ইকামত দেওয়া হয়নি।

জানার বিষয় হল, এক্ষেত্রে পুনরায় ইকামত না দেওয়া কি ঠিক হয়েছে?

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে পুনরায় ইকামত না দেওয়া ঠিকই হয়েছে। কেননা কোনো কারণে নামায ফাসেদ হয়ে গেলে দেরি না করে তখনই যদি তা আদায় করা হয়, তাহলে এক্ষেত্রে দ্বিতীয়বার ইকামত দেওয়ার প্রয়োজন নেই। প্রথম ইকামতই যথেষ্ট।

-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১৫০; মিরাজুদ দিরায়াহ ১/৫৪১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৫; রদ্দুল মুহতার ১/৩৯০; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ১/১৮৭

Sharable Link

উসমান - সিলেট

৬৩৮৯. Question

জনৈক মহিলা ফরয নামায শুরু করার পর দ্বিতীয় রাকাতে হায়েয চলে আসে। ফলে সে নামাযটি পূর্ণ করতে পারেনি। এখন উক্ত নামাযের কী হুকুম? তা কি পবিত্র হওয়ার পর কাযা করতে হবে? এমনটি যদি নফল নামাযে হয়, তাহলে কী বিধান? জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

প্রশ্নোক্ত ফরয নামাযটির পরবর্তীতে কাযা করতে হবে না। তবে নফল পড়া অবস্থায় হায়েয শুরু হয়ে গেলে হায়েয থেকে পবিত্র হওয়ার পর তা কাযা করে নিতে হবে।

-কিতাবুল আছল ১/২৮৭; আলমাবসূত, সারাখসী ২/১৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৩২; আলবাহরুর রায়েক ১/২০৫; রদ্দুল মুহতার ১/২৯১

Sharable Link

খালিদ - রংপুর

৬৩৯০. Question

কয়েকদিন আগে খাতায় একটি প্রবন্ধ লিখছিলাম। ঐ প্রবন্ধে কুরআন মাজীদের বিভিন্ন আয়াত উল্লেখ করি। সেখানে সিজদার আয়াতও ছিল।

জানার বিষয় হল, সিজদার আয়াত লেখার কারণে আমার ওপর কি সিজদা ওয়াজিব হয়েছে?

 

Answer

না, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার ওপর সিজদায়ে তিলাওয়াত ওয়াজিব হয়নি। কেননা সিজদায়ে তিলাওয়াত ওয়াজিব হয় সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করা বা শোনার দ্বারা। মুখে উচ্চারণ না করে শুধু লেখার দ্বারা সিজদায়ে তিলাওয়াত ওয়াজিব হয় না।

-ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৫৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৮৪; আলবাহরুর রায়েক ২/১১৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩৩; রদ্দুল মুহতার ২/১০৯

Sharable Link

শামীম - ঝিনাইদহ

৬৩৯১. Question

গোসল ও কাফনের পূর্বে মৃত ব্যক্তিকে চাদর দিয়ে আপাদমস্তক ঢেকে দেওয়া হবে, নাকি তাকে স্বাভাবিক অবস্থায় রাখা হবে? সঠিক মাসআলা জানালে কৃতজ্ঞ হতাম।

Answer

মৃত্যুর পর মায়্যিতের আপাদমস্তক চাদর বা কোনো কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া মুস্তাহাব।

হাদীস শরীফে এসেছে, আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِيْنَ تُوُفِّيَ سُجِّيَ بِبُرْدٍ حِبَرَةٍ.

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তেকালের পর ইয়ামানী একটি চাদর দ্বারা তাঁকে আবৃত করা হয়। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৮১৪)

-শরহু মুসলিম, নববী ৭/১০; আযযিয়াউল মানাবী ২/৪৬৭; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৫৯৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫৭; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী, পৃ. ৩০৮

Sharable Link

ফাহাদ - কুমিল্লা

৬৩৯২. Question

আমাদের মহল্লায় কেউ মারা গেলে সাধারণত তার জানাযার নামায মহল্লার বড় মসজিদে হয়ে থাকে, বড় মসজিদে মেহরাব বরাবর বাইরে খালি জায়গা আছে। জানাযার নামাযের সময় সেখানে লাশ রাখা হয় আর ইমাম ও মুসল্লিরা মসজিদে দাঁড়ায়। কিছু দিন আগে আমি এক আলেমের মুখে শুনেছি, মসজিদে জানাযার নামায পড়া মাকরূহ।

জানার বিষয় হল, আমাদের মহল্লায় বড় মসজিদ ছাড়া জানাযার নামায পড়ার মতো কোনো জায়গা নেই। এখন উক্ত আলেমের কথা সঠিক হয়ে থাকলে এক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কী? আশা করি সঠিক সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

জানাযার নামায মসজিদের বাইরে জানাযাগাহে বা মাঠে-ময়দানে পড়াই নিয়ম। এটিই সুন্নাহসম্মত পদ্ধতি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময়ও জানাযার নামায মসজিদের বাইরে পড়া হত। মসজিদে নববীর পাশে একটি খালি জায়গা ছিল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে জানাযার নামায পড়তেন। (মুয়াত্তা মুহাম্মাদ, পৃষ্ঠা ২৪৮)

অতএব, মসজিদের বাইরে জানাযার নামায পড়ার সুযোগ থাকলে মসজিদে জানাযার নামায পড়া মাকরূহ।

তবে কোনো কোনো ফকীহের মতে, লাশ মসজিদের বাইরে থাকলে মসজিদের ভেতর জানাযার নামায পড়া জায়েয আছে; মাকরূহ নয়। সুতরাং আপনাদের মহল্লায় মসজিদের বাইরে জানাযার নামায পড়ার ব্যবস্থা না থাকলে মসজিদের বাইরে অবস্থিত মেহরাবের সামনের জায়গায় লাশ রেখে মসজিদের ভেতর জানাযার নামায পড়তে পারবেন।

-আলমাবসূত, সারাখসী ২/৬৮; আলমুহীতুর রাযাবী ১/৪৬৩; ফাতহুল কাদীর ২/৯০; জামিউল মুযমারাত ২/২৭৩; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৬১৪; রদ্দুল মুহতার ২/২২৪

Sharable Link

আবু সাঈদ - নোয়াখালী

৬৩৯৩. Question

গত রমযানের শেষ দিকে আমার দাদা অসুস্থ হয়ে পড়েন। ফলে তার ছয়টি রোযা কাযা হয়ে যায়। ঐ অসুস্থতার মধ্যেই ঈদের তিন দিন পর তিনি মারা যান।

মুহতারামের কাছে জানার বিষয় হল, রোযাগুলোর ফিদইয়া দিতে হবে?

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার দাদা যেহেতু সুস্থ হয়ে রোযাগুলো কাযা করার সময় পাননি; বরং ঐ অসুস্থতার মধ্যেই মারা গেছেন, তাই তার ওপর ঐ রোযাগুলোর কাযা ওয়াজিব হয়নি, সুতরাং ঐ রোযাগুলোর ফিদইয়াও আবশ্যক হবে না।

সাঈদ ইবনে জুবাইর রাহ. বলেন-

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ فِي الرَّجُلِ الْمَرِيضِ فِي رَمَضَانَ فَلَا يَزَالُ مَرِيضًا حَتَّى يَمُوتَ قَالَ: لَيْسَ عَلَيْهِ شَيْءٌ.

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেছেন, কোনো ব্যক্তি যদি রমযানে অসুস্থ হয় (যার কারণে রোযা রাখতে পারেনি) এবং উক্ত অসুস্থতার মাঝেই মারা যায়, তাহলে তার ওপর কোনো কিছু ওয়াজিব নয়। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ৭৬৩০)

-আলমাবসূত, সারাখসী ৩/৮৯; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৬০; ফাতাওয়া সিরাজিয়া, পৃ. ৩০; আননাহরুল ফায়েক ২/২৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪২৪

Sharable Link

মোতালেব মিয়া - বাকড়া, যশোর

৬৩৯৪. Question

রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফে বসার পর একদিন ওযুর সময় আমার গলার মধ্যে পানি চলে যায়। তখন রোযার কথা স্মরণ ছিল। কিন্তু অনিচ্ছাকৃত এমনটি হয়ে যায়। পরে ইমাম সাহেবকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আপনার রোযা ভেঙে গেছে। এরপর আমি মসজিদ থেকে বের হইনি। যথারীতি দশ দিনের ইতিকাফ শেষ করেছি।

জানার বিষয় হল, আমার তো এক দিনের রোযা ভেঙে গেছে। সেক্ষেত্রে কি আমার উক্ত ইতিকাফ সহীহ হয়েছে?

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার সুন্নত ইতিকাফটি ভেঙে গেছে এবং তা নফল হিসেবে আদায় হয়েছে। কেননা সুন্নত ইতিকাফ অবস্থায় রোযা ভেঙে গেলে সুন্নত ইতিকাফও নষ্ট হয়ে যায়। এখন আপনাকে রোযাসহ এক দিনের ইতিকাফ কাযা করতে হবে। এর জন্য কোনো এক দিন সূর্যাস্তের আগেই ইতিকাফের নিয়তে মসজিদে প্রবেশ করবেন এবং পরদিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোযাসহ একটি ইতিকাফ আদায় করে নেবেন।

-শরহু মুখতাসারিত তাহাবী, জাস্সাস ২/৪৬৬; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৮৬; আলবাহরুর রায়েক ২/২৯৯; রদ্দুল মুহতার ২/৪২২, ৪৪৪

Sharable Link

আবু তালহা - ফতুল্লা, নারায়ণগঞ্জ

৬৩৯৫. Question

এবছর রমযানের শেষ দশকে আমাদের মহল্লার মসজিদে আমার ইতিকাফে বসার ইচ্ছা আছে। মহল্লার মসজিদটি পাঞ্জেগানা মসজিদ হওয়ায় জুমার নামায আমরা পাশের জামে মসজিদে আদায় করি।

মুহতারামের কাছে প্রশ্ন হল, ইতিকাফ অবস্থায় জুমার নামায আদায়ের জন্য বের হওয়া কি আমার ওপর আবশ্যক, নাকি ইতিকাফের কারণে পাঞ্জেগানা মসজিদে থেকে যাওয়া এবং সেখানে যোহরের নামায পড়ে নেওয়ারও সুযোগ আছে?

Answer

পাঞ্জেগানা মসজিদে ইতিকাফ করলেও আপনাকে জুমায় যেতে হবে। এক্ষেত্রে জুমা না পড়ে উক্ত পাঞ্জেগানা মসজিদে যোহর পড়ে নেওয়া জায়েয হবে না; বরং জুমা আদায় করাই জরুরি। তবে এক্ষেত্রে জুমার জন্য এতটুকু সময় আগে বের হবে যে, জামে মসজিদে গিয়ে জুমার পূর্বের সুন্নত পড়া যায়; এর বেশি আগে নয়। পক্ষান্তরে জুমার ফরয ও পরবর্তী সুন্নত পড়ার পর বিলম্ব না করে ইতিকাফের মসজিদে ফিরে আসবে।

-কিাতবুল হুজ্জাহ আলা আহলিল মাদীনাহ ১/২৬৫; আলমুহীতুর রাযাবী ২/৫৬; আলইনায়া ২/৩০৯; আলজাওহারাতুন নাইয়িরা ১/১৮৯; দুরারুল হুক্কাম ১/২১৩

Sharable Link

রাশেদা - নড়াইল

৬৩৯৬. Question

আমার কাছে তিন ভরি স্বর্ণের অলংকার এবং পঞ্চাশ হাজার টাকা আছে। এগুলোর যাকাত প্রত্যেক বছর রমযানের সময় আদায় করে থাকি। এ বছর রমযানের দুই মাস আগে আমাকে আমার স্বামী আমার মহরের পঞ্চাশ হাজার টাকা পরিশোধ করেন।

হুজুরের কাছে জানার বিষয় হল, উক্ত পঞ্চাশ হাজারের তো যাকাতবর্ষ পূর্ণ হয়নি। এখন এ বছর এ টাকার যাকাত আদায় করতে হবে কি?

Answer

হাঁ, এ বছরের যাকাত আদায়ের সময় মহর বাবদ প্রাপ্ত উক্ত পঞ্চাশ হাজার টাকারও যাকাত আদায় করতে হবে। কেননা, যাকাতবর্ষ পূর্ণ হওয়ার আগে যাকাতযোগ্য সম্পদ প্রাপ্ত হলে তা বর্তমান নেসাবের সাথে যোগ হয়ে যায়। এর ওপর আলাদাভাবে একটি যাকাতর্ষ পূর্ণ হওয়া জরুরি নয়; পূর্বের যাকাতযোগ্য সম্পদের সাথে মিলে এরও যাকাত আদায় করতে হয়।

হাসান বসরী রাহ. বলেন-

إِذَا كَانَ عِنْدَكَ مَالٌ تُرِيدُ أَنْ تُزَكِّيَه وَبَيْنَكَ وَبَيْنَ الْحَوْلِ شَهْرٌ أَوْ شَهْرَانِ، ثُمَّ أَفَدْتَ مَالًا فَزَكِّهِ مَعَهُ، زَكِّهِمَا جَمِيعًا.

তোমার কাছে যদি (নেসাব পরিমাণ) যাকাতের সম্পদ থাকে এবং বর্ষ পূর্ণ হওয়ার এক-দুই মাস আগেও তুমি আরো কোনো যাকাতযোগ্য সম্পদ লাভ কর, তাহলে পূর্বের সম্পদের সাথে এ সম্পদেরও যাকাত আদায় করবে। (মুসান্নাফে আবদুর রায্যাক, বর্ণনা ৭০৪০)

-কিতাবুল আছল ২/৮৯; বাদায়েউস সানায়ে ২/৯০; আলমুহীতুর রাযাবী ১/৫১২, ৫১৪; আলবাহরুর রায়েক ২/২০৭-২০৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩০৬

Sharable Link

আনসারুল্লাহ - মোমেনশাহী

৬৩৯৭. Question

আমি একটি কোম্পানিতে চাকরি করি। দুই মাস পর ঐ কোম্পানিতে আমার চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। তখন আমি কোম্পানির প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে মোটা অংকের টাকা পাব। আমি নিয়ত করে রেখেছি যে, ঐ টাকা দিয়ে একটা ফ্ল্যাট কিনব। আমার এক আত্মীয় বললেন, ঐ টাকা হাতে পাওয়ার পর বছর শেষে নাকি তার যাকাত দিতে হবে।

মুহতারামের নিকট জানার বিষয় হল, যাকাত তো প্রয়োজন-অতিরিক্ত সম্পদের ওপর আসে। কিন্তু এ টাকা তো আমার প্রয়োজন-অতিরিক্ত না। এটা আমার লাগবে। আমি এটা দিয়ে ফ্ল্যাট কিনব। তাহলে কি এ টাকার ওপর যাকাত আসবে?

উল্লেখ্য, ফ্ল্যাট কিনতে আমার দুই-তিন বছর দেরিও হতে পারে। তবে এ টাকা আমি অন্য কোনো কাজে খরচ করব না।

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে যে টাকা পাবেন, সেটা হাতে পাওয়ার পর ফ্ল্যাট কেনার জন্য রেখে দিলেও বছর শেষে এর যাকাত দিতে হবে। কেননা নগদ অর্থ কোনো প্রয়োজনে খরচ করার জন্য রেখে দিলেও নেসাব পরিমাণ হলে বছরান্তে এর যাকাত আদায় করা ফরয।

Ñবাদায়েউস সানায়ে ২/৯১; আলবাহরুর রায়েক ২/২০৬; গুনইয়াতু যাবিল আহকাম ১/১৭২; রদ্দুল মুহতার ২/২৬২

Sharable Link

আলআমিন - মাদানী নগর, নারায়ণগঞ্জ

৬৩৯৮. Question

আলহামদু লিল্লাহ, ঢাকায় আমার বড় একটি টেইলার্সের দোকান আছে। আমি জানি, যে সমস্ত জিনিস ব্যবসায়িক পণ্য নয়, বরং উপার্জনের মাধ্যম, তাতে যাকাত আসে না। তাই আমার দোকানে যেসমস্ত মেশিনারি আছে, তার যাকাত দেওয়া লাগবে না। কিন্তু প্রশ্ন হল, কাপড় সেলাই করার সময় যে জিনিসগুলো ব্যবহার করা হয় যেমন, সুতা, বোতাম, চেইন, বক্রম ইত্যাদি। যা সাধারণত আমার দোকানে বিপুল পরিমাণে কিনে রাখতে হয়, এগুলোর কি যাকাত দিতে হবে

Answer

প্রশ্নোক্ত জিনিসগুলোর মূল্য (স্বতন্ত্রভাবে কিংবা নিজের যাকাতযোগ্য অন্য সম্পদের সাথে মিলে) যাকাতের নেসাব পরিমাণ হলে এরও যাকাত দিতে হবে। কেননা, গ্রাহকদের থেকে যেহেতু এগুলোর মূল্য নেওয়া হয়, তাই এগুলো ব্যবসায়িক পণ্যের অন্তর্ভুক্ত। তাই অন্যান্য ব্যবসায়িক পণ্যের মতো এগুলোও যাকাতযোগ্য সম্পদের অন্তর্ভুক্ত।

-শরহু মুখতাসারিল কারখী ২/১৪৫; আযযাখীরাতুল বুরহানিয়া ২/৫০৩; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৫০; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ১/৩৯২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭২

Sharable Link

ইহসান - চট্টগ্রাম

৬৩৯৯. Question

গ্রামে আমার একটি টিনশেড ঘর আছে, যা আমি অন্যের কাছে ভাড়া দিয়ে থাকি। বর্তমানে যে লোকটি সেখানে ভাড়া থাকে, সে গরিব। আমি চাচ্ছি, তার থেকে সামনের দুই মাসের ভাড়া নেব না। এর পরিবর্তে ভাড়া পরিমাণ টাকা যাকাতের হিসাব থেকে কর্তন করে নেব। এভাবে কি আমার যাকাত আদায় হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

না, যাকাত আদায়ের নিয়তে যাকাতের হিসাব থেকে ভাড়া কর্তন করার দ্বারা আপনার যাকাত আদায় হবে না। কেননা ভাড়ার টাকা না নেওয়া বা মাফ করে দেওয়ার মাধ্যমে যাকাত আদায় হয় না। এক্ষেত্রে যাকাত আদায় করতে চাইলে এমনটি করা যেতে পারে, আপনি গরিব ভাড়াটিয়াকে যাকাতের টাকা থেকে যাকাতের নিয়তে ভাড়া পরিমাণ টাকার মালিক বানিয়ে দেবেন। এরপর ভাড়াটিয়া তার মালিকানাধীন উক্ত টাকা দিয়েই আপনার ভাড়া পরিশোধ করে দিতে পারবে। এতে আপনার যাকাতও আদায় হয়ে যাবে এবং ভাড়াও পরিশোধ হয়ে যাবে।

-কিতাবুল আছল ২/১২৬; আলমাবসূত, সারাখসী ২/২০৩; ফাতাওয়া সিরাজিয়া, পৃ. ২৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/১৯৫; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৭০

Sharable Link

মোরশেদ - মাইজদি, নোয়াখালী

৬৪০০. Question

আলহামদু লিল্লাহ, এ বছর উমরায় যাওয়ার সৌভাগ্য হয়। তাওয়াফ করার সময় প্রচণ্ড গরম ছিল। তাই তাওয়াফের পর অবচেতন মনেই হাতরুমালটি ভিজিয়ে মাথায় দেই। কিছুক্ষণ (আট-দশ মিনিট) পরই একজন বললেন, ইহরাম অবস্থায় তো মাথা ঢাকা নিষেধ, সাথে সাথে আমি তা সরিয়ে ফেলি। বর্তমানে উমরাহ শেষ করে দেশে চলে এসেছি। হুজুরের কাছে জানতে চাই, এখন আমার করণীয় কী?

Answer

ইহরাম অবস্থায় আপনি যেহেতু অল্প কিছু সময় (যার পরিমাণ এক ঘণ্টার কম) মাথা ঢেকে রেখেছিলেন, তাই এজন্য আপনি এক-দুই রিয়াল পরিমাণ সদকা করে দেবেন। এই সদকা হেরেমের এলাকায় আদায় করা উত্তম। অবশ্য দেশের গরিব-মিসকীনদের দান করলেও আদায় হয়ে যাবে।

-খিযানাতুল আকমাল ১/৩৬৪; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৪২৯, ৪৩০; মানাসিক, মোল্লা আলী আলকারী, পৃ. ৩০৭; রদ্দুল মুহতার ২/৫৫৮; গুনইয়াতুন নাসিক, পৃ. ২৫১, ২৫৪

Sharable Link

মুহাম্মাদ সাখাওয়াতুল্লাহ - বেগমগঞ্জ, নোয়াখালী

৬৪০১. Question

গত মাসে আমি উমরায় গিয়েছিলাম। তখন আমার এক সফরসঙ্গী আমাকে একটি আতর হাদিয়া দেন। একদিন আতরের ঘ্রাণ পরীক্ষা করার জন্য শিশিটির মুখ খুলে শুধু ঘ্রাণ নেই। তখন আমি ইহরাম অবস্থায় ছিলাম।

জানার বিষয় হল, ঐ সময় আতরের ঘ্রাণ নেওয়া কি আমার জন্য ঠিক হয়েছে? এ কারণে আমার ওপর কি কোনো জরিমানা ওয়াজিব হয়েছে?

Answer

ইহরাম অবস্থায় ইচ্ছাকৃতভাবে আতর- সুগন্ধির ঘ্রাণ নেওয়া মাকরূহ। সুতরাং ইহরাম অবস্থায় আতরের ঘ্রাণ নেওয়া আপনার র্ঠিক হয়নি। তবে এ কারণে আপনার ওপর কোনো জরিমানা ওয়াজিব হয়নি।

হযরত আবু যুবাইর রাহ. বলেন-

سَأَلْتُ جَابِرًا : يَشُمُّ الْمُحْرِمُ الرَّيْحَان وَالطِّيبَ؟ فَقَالَ : لاَ.

আমি হযরত জাবের রা.-কে জিজ্ঞেস করেছি যে, ইহরাম অবস্থায় কি ফুল ও সুগন্ধির ঘ্রাণ নেওয়া যাবে?

উত্তরে তিনি বললেন, না। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, বর্ণনা ১৪৮২৮)

নাফে রাহ. আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণনা করেন-

عَنِ ابْنِ عُمَرَ؛ كَانَ يَكْرَهُ شَمَّ الرَّيْحَانِ لِلْمُحْرِمِ.

তিনি ইহরাম অবস্থায় ফুলের ঘ্রাণ নেওয়া অপছন্দ করতেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১৪৮২৭)

-আলমাবসূত, সারাখসী ৪/১২৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৪৩৮তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/৩৫৪; মানাসিক, মোল্লা আলী আলকারী, পৃ. ৩১১; গুনইয়াতুন নাসিক, পৃ. ২৪৩

Sharable Link

ইবরাহীম খলীল - পালবাড়ি, যশোর

৬৪০২. Question

হুজুর, আমি উমরায় এসেছি। মক্কায় এখন শীতের মৌসুম। প্রথমদিন রাতে মক্কায় পৌঁছি। ভোরে হারাম শরীফে যাওয়ার সময় ইহরামের কাপড়ের ওপর আরেকটি চাদর পরিধান করি। কিন্তু শীতের তীব্রতা বেশি থাকায় তা যথেষ্ট হচ্ছিল না। তাই জ্যাকেটের হাতার মধ্যে হাত না ঢুকিয়ে কেবল গায়ে জড়িয়ে তার ওপর চাদর পরে হারাম শরীফে যাই। এখন আমার জানার বিষয় হল, এভাবে জ্যাকেট গায়ে জড়ানোর কারণে কি আমার ওপর কোনো জরিমানা ওয়াজিব হয়েছে?

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যেহেতু জ্যাকেটের হাতার ভেতর হাত প্রবেশ করাননি; বরং তা চাদরের মতো শুধু গায়ে জড়িয়ে রেখেছেন, তাই এর দ্বারা আপনার ওপর কোনো জরিমানা আবশ্যক হয়নি।

হাসান বসরি রাহ. ও আতা রাহ. থেকে বর্ণিত আছে-

أَنَّهُمَا لَمْ يَرَيَا بَأْسًا أَنْ يَرْتَدِيَ الْمُحْرِمُ بِالْقَمِيصِ.

তারা উভয়ে ইহরাম অবস্থায় জামাকে চাদরের মতো পরতে সমস্যা মনে করতেন না। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১৫৯৭৩)

তবে ইহরাম অবস্থায় জ্যাকেট, জামা ও এধরনের পোশাক বিশেষ কোনো ওযর ছাড়া এভাবে গায়ে জড়িয়ে রাখাও অনুত্তম।

Ñশরহু মুখতাসারিল কারখী ২/৫৯২; আলমাবসূত, সারাখসী ৪/১২৫; আলবাহরুল আমীক ২/৭৯২; মানাসিক, মোল্লা আলী আলকারী, পৃ. ৩০৪; রদ্দুল মুহতার ২/৪৮৯

Sharable Link

আফরোজা খানম - কুমিল্লা

৬৪০৩. Question

আজ থেকে ২৫ দিন আগে আমার স্বামী মারা যায়। তখন থেকেই আমি যথানিয়মে ইদ্দত পালন করে আসছি। কিন্তু ইদানীং একটি বিষয় নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে, তা হল, আমাদের এলাকায় মসজিদ সংলগ্ন এক বাড়িতে একটি মাসতুরাতের জামাত এসেছে। আমাদের বাড়ি থেকে তার দূরত্ব ৯/১০ মিনিট হাঁটার পথ।

জানতে চাচ্ছি, আমি কি দিনে সেখানে তালীম শোনার জন্য যেতে পারব? বাড়ির আশপাশের মহিলারা সবাই সেখানে তালীম শুনতে যায়। আমাকেও তারা যাওয়ার জন্য দাওয়াত দিচ্ছে। এখন আমি কী করব? এক্ষেত্রে শরীয়তের বিধান কী?

Answer

ইদ্দত পালনকালে বিধবার জন্য নিজ বাড়িতে অবস্থান করা জরুরি। শরীয়তসম্মত ওযর ছাড়া এসময় বাইরে বের হওয়া জায়েয নয়। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে তালীম শোনার জন্য বের হওয়া যাবে না।

আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

لَا تَخْرُجُ الْمُتَوَفى عَنْهَا فِيْ عِدَّتِهَا مِنْ بَيْتِ زَوْجِهَا.

বিধবা ইদ্দত চলাকালীন স্বামীর ঘর থেকে বের হবে না। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ১২০৬২)

এ সময় আপনি নিজ গৃহে থেকে কুরআন তিলাওয়াত, যিকির-আযকার এবং দ্বীনী কিতাবাদি পড়বেন।

Ñআলবাহরুর রায়েক ৪/১৫৪; আননাহরুল ফায়েক ২/৪৮৯; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ২/২৩০; রদ্দুল মুহতার ৩/৫৩৬

Sharable Link

মাশহুদ - সিলেট

৬৪০৪. Question

আমি গত বছর রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করার মান্নত করেছিলাম; কিন্তু বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে ইতিকাফ আদায় করতে পারিনি। এখন আমি চাচ্ছি, আগামী রমযানে উক্ত মান্নত ইতিকাফের কাযা করে নিতে। এভাবে কাযা করে নিলে আমার মান্নত ইতিকাফ কি আদায় হয়ে যাবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

না, আগামী রমযানে মান্নতের উক্ত ইতিকাফ কাযা করলে তাতে মান্নত আদায় হবে না। বরং মান্নতের ইতিকাফটি কাযা করার জন্য রমযান ছাড়া অন্য মাসে রোযাসহ দশ দিন ইতিকাফ করতে হবে। কেননা মান্নতের ইতিকাফ কাযা হয়ে গেলে তা রমযানে আদায় করা যায় না। বরং রমযান ছাড়া অন্য মাসে রোযার মাধ্যমে আদায় করতে হবে।

-কিতাবুল আছল ২/১৯৭; আলমাবসূত, সারাখসী ৩/১২১; আলমুহীতুর রাযাবী ২/৬১; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৭৯-২৮০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১১

Sharable Link

নাসির - কুমিল্লা

৬৪০৫. Question

আমি ঢাকার কারওয়ান বাজারে ফলের ব্যবসা করতাম। আমার ব্যবসায় আগ থেকেই ৫০ লাখ টাকা ঋণ ছিল। এর মধ্যে করোনার সময় ব্যবসায় লস খেয়ে আরো ২০ লাখ টাকা ঋণী হয়ে পড়ি। যা এখনো পরিশোধ করতে পারিনি। কিন্তু এবার রোযার ঈদে বাড়িতে গেলে চেয়ারম্যান সাহেব আমাকে বলেন, আমাদের বর্তমান ঈদগাহটিতে মুসল্লিদের জায়গা সংকুলান হচ্ছে না। আপনার জমিটা তো পাশেই আছে, যদি ঈদগাহের জন্য ওয়াকফ করে দিতেন, তাহলে ভালো হত। আমি চেয়ারম্যান সাহেবের কথায় রাজি হয়ে যাই এবং আমার জমিটি লিখিতভাবে ঈদগাহের জন্য ওয়াকফ করে দেই। কিন্তু সমস্যা হল, ইতিপূর্বে আমি যাদের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছিলাম তাদের পাওনা পরিশোধ করতে বিলম্ব হওয়ায় ইদানীং আমার ওপর তারা চাপ প্রয়োগ করছে, যেন আমি ওয়াকফ বাতিল করে দেই এবং জমিটি তাদের কাছে বন্ধক রাখি।

জানার বিষয় হল, এখন আমার জন্য ওয়াকফ বাতিল করে জমিটি পাওনাদারদের কাছে বন্ধক রাখা জায়েয হবে কি?

উল্লেখ্য, আমি এখন কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেছি। এ ব্যবসায় লাভ করতে পারলে পাওনাদারদের পাওনা আস্তে আস্তে পরিশোধ করে দিব।

Answer

ঈদগাহের জন্য উক্ত জমিটি ওয়াকফ করার দ্বারা এর ওয়াকফ সম্পন্ন হয়ে গেছে। এখন আর এই ওয়াকফ বাতিল করার সুযোগ নেই। তাই এই জমিটি আবার নিজ দখলে নিয়ে পাওনাদারদের নিকট তা বন্ধক রাখা কিছুতেই জায়েয হবে না।

তবে উল্লেখ্য, আপনি যেহেতু আগ থেকেই অনেক টাকা ঋণী, তাই এ অবস্থায় আপনার কর্তব্য ছিল, পাওনাদারদের পাওনা পরিশোধকে প্রাধান্য দেওয়া। ঈদগাহের জন্য ওয়াকফ করা নিঃসন্দেহে সওয়াবের কাজ। কিন্তু তা আপনার জন্য জরুরি ছিল না। অথচ অন্যের পাওনা পরিশোধ করা ফরয।

-ফাতহুল কাদীর ৫/৪২৪; আলইসআফ ফী আহকামিল আওকাফ, পৃ. ৫৬; আলবাহরুর রায়েক ৫/২০৫; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৩৫১; উমদাতুল কারী ১২/২২৭

Sharable Link

আব্দুল জাব্বার - সিরাজগঞ্জ

৬৪০৬. Question

আমাদের এলাকায় প্রচুর আলু চাষ হয়। এলাকার কিছু লোক আছে, যাদের জমিজমা নেই। তারা অন্যদের থেকে এই চুক্তিতে জমি বর্গা নেয় যে, আলুর বীজ, সার, কীটনাশক এবং জমি চাষ ও সেচ খরচ বর্গাচাষী নিজে দেবে। পরবর্তীতে উৎপাদিত ফসল থেকে বীজ সার ইত্যাদির খরচ বাদ দিয়ে বাকি ফসল উভয়ের মাঝে অর্ধার্ধি হারে বণ্টন হবে। এবছর আমি কিছু জমি বর্গা দিতে চাই। তাই মুহতারাম মুফতী সাহেবের নিকট জানার বিষয় হল, প্রশ্নোক্ত পদ্ধতিতে জমি বর্গা দেওয়া-নেওয়া বৈধ হবে কি? জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

উৎপাদিত ফসল থেকে খরচ বাদ দিয়ে অর্থাৎ বীজ, সার, কীটনাশক এবং জমি চাষ ও সেচ ইত্যাদি খরচ বাদ দিয়ে বাকি ফসল জমি মালিক ও বর্গাচাষীর মাঝে অর্ধার্ধি হারে বণ্টন করার চুক্তি শরীয়তসম্মত নয়; বরং এক্ষেত্রে বৈধ পদ্ধতি হল, জমির সকল খরচ বর্গাচাষী বহন করবে। আর বর্গাচাষীর বীজ, সার, কিটনাশক ইত্যাদির খরচ উঠে আসাসহ তার শ্রম অনুপাতে যেন লাভ হয়, সেজন্য উভয়ের সম্মতিতে শতকরা হারে তার জন্য কিছুটা বেশি ধার্য করা যেতে পারে। কিন্তু উৎপাদিত ফসল থেকে নির্ধারিত পরিমাণ কারো জন্য ধার্য করা জায়েয হবে না।

-কিতাবুল আছল ৯/৫৪৬; বাদায়েউস সানায়ে ৫/২৫৮; আলমুহীতুর রাযাবী ৬/২৫৫; আলবাহরুর রায়েক ৮/১৬১; আদ্দুররুল মুখতার ৬/২৭৬

Sharable Link

আব্দুল কাইয়ূম - মিরপুর, ঢাকা

৬৪০৭. Question

এক মুদি ব্যবসায়ী আমাকে বলল, ভাই আমার এখানে  কাস্টমারের আনাগোনা অনেক বেশি। এখানে লোডের ব্যবসা করলে ভালো চলবে। অর্থাৎ রিচার্জ ব্যবসা। এ বাবদ সে আমাকে টাকা দিতে বলে। আমার মূলধন তার শ্রম। লাভ ৫০% করে। আমাদের এ ব্যবসা কি বৈধ? একজন বলেছেন, লোডের ব্যবসা নাকি বৈধ। বিস্তারিত দলীল-প্রমাণসহ জানালে উপকৃত হব।

Answer

মোবাইল রিচার্জ-এর কারবারে ব্যবসায়ীর নিকট টাকা বিনিয়োগ করে লভ্যাংশ নেওয়ার চুক্তি সহীহ নয়। কারণ এ কারবারে মোবাইল কোম্পানির ডিস্ট্রিবিউটরকে নির্ধারিত পরিমাণ টাকা দিয়ে সে পরিমাণ টাকা গ্রাহকদের নম্বরে প্রদান করার কারণে নির্ধারিত পরিমাণ কমিশন পেয়ে থাকে। সুতরাং মোবাইল রিচার্জের কারবারটি মূলত ইজারা তথা শ্রম বিনিময়ের অন্তর্ভুক্ত। তাই এতে মুযারাবা তথা একজনের মূলধন অপরজনের শ্রম চুক্তি সহীহ হবে না।

-আসসুনানুল কুবরা, বাইহাকী ৫/৩৫০; দুরারুল হুক্কাম শরহুল মাজাল্লাহ ৩/৪১৮; শরহুল মাজাল্লাহ, আতাসী ৪/৩১৭

Sharable Link

মুহাম্মাদ - সাতক্ষীরা

৬৪০৮. Question

হুজুর! আমি অর্থনৈতিকভাবে অনেক সংকটাপন্ন। সোনালী লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডনামের একটি কোম্পানি থেকে ডেভেলপমেন্ট অফিসারবা উন্নয়ন কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করার জন্য আমাকে অফার দিচ্ছে। শুনেছি, কোম্পানির একটি শরীয়া কাউন্সিল আছে। তাদের দাবি, কোম্পানিটি ইসলামী শরীয়া মোতাবেক পরিচালিত।

হুজুরের কাছে আমার জিজ্ঞাসা, সোনালী লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানির কার্যক্রম কতটুকু শরীয়তসম্মত? আমার জন্য এর উন্নয়ন কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করা জায়েয হবে কি? সঠিক সমাধান দিয়ে বাধিত করবেন। 

 

Answer

আমাদের দেশে যেসব ইন্সুরেন্স কোম্পানি শরীয়া মোতাবেক পরিচালিত হওয়ার দাবি করে, কার্যত অনেক ক্ষেত্রেই তারা ইসলামী শরীয়ার নীতিমালা বাস্তবায়ন করে না। কাগজপত্রে কিছু ইসলামী পরিভাষা ব্যবহার করেই ক্ষান্ত থাকে। এছাড়া এরা যে মডেলে চলে, সেই মডেলটিই নির্ভরযোগ্য আলেমদের নিকট অবৈধ। শরীয়া মোতাবেক পরিচালিত হওয়ার দাবিদার এ কোম্পানিগুলোর পলিসি আর প্রচলিত ধারার ইন্সুরেন্স কোম্পানির পলিসির মধ্যে বাস্তব অর্থে তেমন কোনোই পার্থক্য নেই।

সুতরাং হালাল-হারাম বেছে চলতে চায়- এমন ব্যক্তির জন্য এধরনের কোম্পানিতে চাকরি করা থেকে বিরত থাকা চাই। এধরনের প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়েয নয়।

-আহকামুল কুরআন, জাস্সাস ২/৪৬৫, ১/৩২৯; তাহরীরুল কালাম ফি মাসাইলিল ইলতিযাম, পৃ. ১৯৯

Sharable Link