আমাদের এক আত্মীয়ের দুই চোখে অপারেশন হয়েছে। বেশ বড় ধরনের অপারেশন। সাত দিনের আগে ব্যান্ডেজ খোলা হবে না এবং খোলার পর এক মাস পর্যন্ত ডাক্তার চোখে পানি লাগাতে নিষেধ করেছে। এমন অবস্থায় তার অযুর বিধান কী? জানিয়ে বাধিত করবেন।
আমাদের এক আত্মীয়ের দুই চোখে অপারেশন হয়েছে। বেশ বড় ধরনের অপারেশন। সাত দিনের আগে ব্যান্ডেজ খোলা হবে না এবং খোলার পর এক মাস পর্যন্ত ডাক্তার চোখে পানি লাগাতে নিষেধ করেছে। এমন অবস্থায় তার অযুর বিধান কী? জানিয়ে বাধিত করবেন।
যতদিন ব্যান্ডেজ লাগানো থাকে, কিংবা চোখের অংশ ভেজাতে চিকিৎসক নিষেধ করে থাকেন ততদিন স্বাভাবিক নিয়মে অযু করে শুধু ব্যান্ডেজের ওপরে বা চোখের অংশে মাসাহ করবে (ভেজা হাতের পরশ বুলাবে)। আর চেহারার বাকি অংশ ধোয়া সম্ভব হলে ধোবে। তবে যদি চেহারার বাকি অংশ ধুতে গেলে চোখের ক্ষতি হওয়ার আশংকা থাকে এবং অভিজ্ঞ ডাক্তার তা ধুতে নিষেধ করেন তাহলে পূর্ণ চেহারাই মাসাহ করবে। আর চোখের অংশ মাসাহ করা যদি ক্ষতিকর হয় তাহলে ঐ অংশ মাসাহ না করলেও চলবে। এক্ষেত্রে অযুর অন্যান্য অঙ্গ যেহেতু ধুতে সক্ষম তাই চেহারা ছাড়া অযুর বাকি কাজ যথানিয়মে করবে এবং শুধু চেহারা মাসাহ করবে।
প্রকাশ থাকে যে, চোখ বা চেহারা ধোয়া যাবে না- শুধু এ কারণে তায়াম্মুম করা জায়েয হবে না।
Sharable Link-আসসুনানুল কুবরা, বাইহাকী ১/২২৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৩৯; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৫৮; আলবাহরুর রায়েক ১/১৬৩; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ১/২৩৬; আদ্দুররুল মুখতার ১/২৮১, ১০২
জুমার পরের সুন্নত আমি সাধারণত চার রাকাত পড়ি। একদিন চার রাকাত পড়ে মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় এক আলেম বললেন, জুমার পরের সুন্নত ছয় রাকাত পড়া উত্তম। হুযুরের কাছে জানার বিষয় হল, আসলেই কি জুমার পরে ছয় রাকাত পড়া উত্তম? জানিয়ে বাধিত করবেন।
উক্ত আলেম ঠিকই বলেছেন। জুমার পরে প্রথমে চার রাকাত সুন্নতে মুআক্কাদা পড়ার পর ভিন্ন সালামে দুই রাকাত পড়া সুন্নত। তবে অনেক ফকীহের মতে এ দু’রাকাত সুন্নতে গায়রে মুআক্কাদার অন্তর্ভুক্ত।
Sharable Link-শরহু মাআনিল আছার ১/২৩৪; আলমাবসূত, সারাখসী ১/১৫৭; ফাতহুল কাদীর ২/৩৯; আলমুহীতুল বুরহানী ২/২৩৪; আততাজনীস ওয়াল মাযীদ ২/১০৭; এলাউস সুনান ৭/১৭
আমরা জানি, নফল নামায শুরু করার পর ভেঙে ফেললে তা কাযা করতে হয়। এখন যদি কেউ মাকরূহ ওয়াক্তে নফলের নিয়ত বাঁধার পর কোনভাবে বুঝতে পেরে নামায ছেড়ে দেয় তাহলে কি এই নফলেরও কাযা করতে হবে? এ জিজ্ঞাসার কারণ, এ সময় তো এমনিতেই নামায পড়া অনুচিত ছিল। জানালে খুব উপকার হয়।
হাঁ, মাকরূহ ওয়াক্তে নফল শুরু করে ভেঙে ফেললেও তা কাযা করতে হবে। কেননা নফলের কাযা ওয়াজিব হওয়ার ক্ষেত্রে মাকরূহ ওয়াক্তে শুরু আর সাধারণ ওয়াক্তে শুরুর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। অতএব পরবর্তীতে সাধারণ সময়ে (মাকরূহ নয় এমন ওয়াক্তে) তা কাযা করে নিতে হবে।
Sharable Link-আলমাবসূত, সারাখসী ১/২০৯; বাদায়েউস সানায়ে ২/৬; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ১/২৪৮; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৭৫
ক. আমি গত রমযান মাসে তারাবীহর পড়া ভালোভাবে ইয়াদ করার জন্য মসজিদে বসে তিলাওয়াত করি। কখনো মসজিদের ভেতরে হেঁটে হেঁটে তিলাওয়াত করি। এখন প্রশ্ন হল একটি সিজদার আয়াত মসজিদের ভেতরে হেঁেট হেঁেট বারবার পড়ার কারণে আমার উপর কি একাধিক সিজদায়ে তিলাওয়াত ওয়াজিব হবে? নাকি একটিই ওয়াজিব হবে?
খ. গোসল ফরয অবস্থায় সিজদার আয়াত শুনলেও কি সিজদা ওয়াজিব হবে? জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।
ক. মসজিদের ভেতরে বা কোনো ঘরে হেঁটে হেঁটে একটি সিজদার আয়াত বারবার পড়লে একটি সিজদাই ওয়াজিব হয়। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে এভাবে একটি সিজদার আয়াতই পড়ে থাকলে একটি সিজদাই আদায় করতে হবে।-ফাতাওয়া সিরাজিয়্যাহ পৃ. ১৪; ফাতহুল কাদীর ১/৪৭৫; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৩৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৪৭১; আলবাহরুর রায়েক ২/১২৫
খ. গোসল ফরয অবস্থায় সিজদার আয়াত শুনলেও সিজদা ওয়াজিব হয়। তবে হায়েয-নেফাস অবস্থায় শুনলে ওয়াজিব হয় না। বিখ্যাত তাবেয়ী হাম্মাদ ও সাইদ বিন জুবাইর রাহ. বলেন- জুনুবী ব্যক্তি সিজদার আয়াত শুনলে গোসল করে সিজদা করে নেবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ, বর্ণনা ৪৩৪৬) -কিতাবুল আছল ১/২৭২; ফাতাওয়া সিরাজিয়্যাহ পৃ. ১৪; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫০১; আদ্দুররুল মুখতার ২/১০৭
Sharable Link
একদিন আমার আম্মা নামায আদায় করছিলেন। তিনি যখন তাশাহহুদের বৈঠকে ছিলেন তখন আমার এক ছোট বাচ্চা তাঁর কোলে গিয়ে বসে পড়ে। বাচ্চার গায়ের জামা-কাপড় পেশাবে ভেজা ছিল। বাড়ীতে কেউ কেউ বলছে, নাপাকিসহ বাচ্চা তাঁর কোলে বসে পড়ায় নামায নষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু আমার কথা হচ্ছে, নাপাকি তো তাঁর নিজের কাপড়ে ছিল না। তো এ অবস্থায় কি আসলেই তাঁর নামাযের কোনো ক্ষতি হয়েছে? জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে শিশুটির কাপড়ের নাপাকী থেকে যদি আপনার আম্মার কাপড় ভিজে না যায় তাহলে বাচ্চা কোলে বসার দ্বারা তাঁর নামায নষ্ট হয়নি। কারণ এক্ষেত্রে নাপাক বহনকারী হল বাচ্চা। নামায আদায়কারীর শরীর এবং কাপড় সবই পাক। তার কোনো কিছুই নাপাক নয়। আবার সে নাপাক বহনকারীও নয়। তাই তার নামায নষ্ট হয়নি। কিন্তু যদি শিশুটির জামার ভেজা থেকে আপনার মায়ের কাপড়ও ভিজে যায় তাহলে সেক্ষেত্রে তাঁর নামায নষ্ট হয়ে যাবে।
Sharable Link-মুখতারাতুন নাওয়াযিল ১/১৭১; ফাতহুল কাদীর ১/১৭৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৭৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৫২; আলবাহরুর রায়েক ১/২২৮; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩৪৭; শরহুল মুনয়া পৃ. ১৭৪
আমাদের মহল্লার মসজিদে রমযানের শেষ দশকে রাত ১২টার পর জামাতের সাথে ০৮/১০/১২/১৪ রাকাত করে কিয়ামুল লাইল-এর নামায আদায় করা হয় এবং তাতে পূর্ণ ৩০ পারা পড়া হয়। ইমাম সাহেব ফতোয়া দিয়েছেন, রমযানের শেষ দশকের জামাতবদ্ধ এই নফল নামায মাকরূহ হবে না। তিনি মক্কা ও মদীনাকে দলীল হিসাবে ব্যবহার করেছেন।
আমার জানার বিষয় হল, উক্ত নফল নামাযের জামাতটা শরীয়তে বৈধ হবে কি না? বিস্তারিত দলীলসহ জানালে উপকৃত হব।
পুনশ্চ : উক্ত জামাতের জন্য মানুষকে উৎসাহিত করা হয় এবং ইমাম সাহেব মাইকে নামায পড়ান।
পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামায, জুমা ও দুই ঈদের নামাযে জামাতের বিষয়টি অতিব গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া তারাবীহ, রমযানের বিতর, ইস্তেসকা (বৃষ্টির জন্য নামায) এবং সূর্যগ্রহণের নামাযের জামাতও হাদীস-আসার দ্বারা প্রমাণিত এবং সুন্নাহর অন্তর্ভুক্ত। আর তাহাজ্জুদসহ অন্যান্য সুন্নত ও সকল প্রকার নফল নামায একাকী পড়াই সুন্নাহসম্মত কাজ। এগুলোর ক্ষেত্রে জামাতের বিধান নেই। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, খোলাফায়ে রাশেদীনের আমল এমনই ছিল। তাঁরা এজাতীয় নামায একাকী আদায় করতেন। আর সম্ভব হলে এসব নামায ঘরে পড়াই বেশি উত্তম। হযরত আবদুল্লাহ বিন সা‘দ রা. থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে এসেছে, তিনি বলেন-
سَأَلْتُ رَسُولَ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ عَنِ الصّلَاةِ فِي بَيْتِي وَالصّلَاةِ فِي الْمَسْجِدِ قَالَ: قَدْ تَرَى مَا أَقْرَبَ بَيْتِي مِنَ الْمَسْجِدِ، فَلَأَنْ أُصَلِّيَ فِي بَيْتِي أَحَبّ إِلَيّ مِنْ أَنْ أُصَلِّيَ فِي الْمَسْجِدِ إِلَا أَنْ تَكُونَ صَلَاةً مَكْتُوبَةً.
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ঘরের নামায এবং মসজিদের নামাযের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, তুমি দেখছ, মসজিদ আমার ঘরের এত নিকটে হওয়া সত্ত্বেও ফরয নামায ব্যতীত অন্যান্য নামাযগুলো আমি ঘরে পড়তেই ভালোবাসি। -শামায়েলে তিরমিযী, হাদীস ২৮০
পুরো নবী-যুগে দু-একটি ঘটনা এমন পাওয়া যাবে, যেখানে নফল নামাযের জামাতের কথা আছে। তাও নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো একাকী নফল নামায শুরু করার পর অন্য কেউ পাশে ইকতেদা করেছেন অথবা ঘটনাচক্রে ২/৩ জনের জামাত হয়েছে। নিয়মিত নফল নামাযের জামাত, মানুষকে সেজন্য আহ্বান করা এবং নফলের জামাতে কুরআন মাজীদ খতম করার কোনো দৃষ্টান্ত আমাদের জানামতে হাদীস-আসার এবং সীরাত ও তারিখের কিতাবাদিতে নেই। এসব দলীলের আলোকে ফিকহে হানাফীর ফতোয়া হল, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং খাইরুল কুরুনের অনুসরণে কিয়ামুল লাইল অর্থাৎ তাহাজ্জুদ নামায একাকী পড়াই সুন্নাত। এতে জামাতের পাবন্দি করা বিশেষত মসজিদে জামাতের সাথে পড়া অনুত্তম। অবশ্য কেউ একাকী নফল শুরু করার পর এমনিতেই দু-একজন তার ইকতেদা করলে তা ভিন্ন কথা।
আর হারামাইন শরীফাইনে জামাতসহ কিয়ামুল লাইল পড়াটা ফিকহে হাম্বলীর ফাতওয়া অনুযায়ী। সেখানকার ইমামগণ সাধারণত হাম্বলী মাযহাব অনুসরণ করে থাকেন। আর নফল নামাযের জামাত হাম্বলী মাযহাবে জায়েয। কিন্তু হাদীস-আসারের দলিল দ্বারা যেহেতু এক্ষেত্রে হানাফী মাযহাবের মত অধিক শক্তিশালী তাই হানাফী মাযহাব অনুসরণকারীদের হারামাইনের কথা বলে ভিন্ন আমলের দিকে ডাকা কোনোক্রমেই শুদ্ধ হতে পারে না।
Sharable Link-বাদায়েউস সানায়ে ১/৬৪৭; আলবাহরুর রায়েক ২/৬৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১১৬; রদ্দুল মুহতার ২/৪৮; আলমুহীতুল -বুরহানী ২/২৬৪
আমার কোমরে প্রচ- ব্যাথা। তাই আমি সাধারণত বসে নামায পড়ি। একদিন এশার নামাযে ব্যাথা কিছুটা কমে। তাই মনে করলাম নামায হয়ত দাঁড়িয়ে পড়তে পারব। সে হিসেবে দাঁড়িয়ে নামায শুরু করি। কিন্তু নামাযের মধ্যে ব্যাথা বেড়ে যায়। ফলে বাকি নামায আর দাঁড়িয়ে পড়া সম্ভব হয়নি। বসেই শেষ করতে হয়েছে। এখন মুফতী সাহেবের কাছে জানার বিষয় হল, দাঁড়িয়ে নামায শুরু করার পর ওজরের কারণে বসে পড়ার সুযোগ আছে কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।
হাঁ, ফরয নামায দাঁড়িয়ে শুরু করার পর বাস্তবেই যদি এমন ওজর দেখা দেয়, যার কারণে দাঁড়িয়ে নামায পড়া বেশি কষ্টকর হয়ে যায় তাহলে বাকি নামায বসে পড়া জায়েয। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার জন্য বসে নামায পড়া সহীহ হয়েছে।
Sharable Link-কিতাবুল আছল ১/১৯২; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়্যাহ ১/১০৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৯৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৬৭৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩৭; রদ্দুল মুহতার ২/১০০
আমি ঢাকা মেডিকিলের ২য় বর্ষের ছাত্র। গত বছর তিন সেমিস্টারেই আমার ফলাফল খুব ভালো হয়। আমার আম্মাকে দেখতাম ফলাফলের সংবাদ শুনতেই তিনি সিজদা দিয়ে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতেন। এছাড়াও আরো কয়েকবার খুশির সংবাদ এলে তাকে এভাবে সিজদা আদায় করতে দেখেছি। আমার আম্মাকে ছাড়া অন্য কাউকে এভাবে সিজদা করতে না দেখায় বিষয়টি আমার কাছে নতুন মনে হচ্ছে। তাই মুহতারামের নিকট জানতে চাচ্ছি, এভাবে সিজদা করে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা প্রমাণিত কি না? দলীলসহ জানালে উপকৃত হব।
হাঁ, বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী আল্লাহর কোনো নিআমত লাভ করলে কিংবা কোনো বিপদ থেকে মুক্তি পেলে এভাবে সিজদার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায় করা জায়েয আছে। দীর্ঘ এক বর্ণনায় এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আলী রা.-এর চিঠির মাধ্যমে ইয়েমেনের হামদান গোত্রের ইসলাম গ্রহণের সংবাদ পেলেন তখন আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায়ে সিজদা করলেন। (সুনানে কুবরা, বাইহাকী ২/৩৬৯)
আসলাম রাহ. বলেন ওমর রা.-এর নিকট যখন ইয়ামামা বিজয়ের সংবাদ এল তখন তিনি সিজদা করলেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৮৫০১)
Sharable Link-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৪৮৫; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৫৯৪; শরহুল মুনয়াহ পৃ. ৬১৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩৫; রদ্দুল মুহতার ২/১২০
আমি জেনেছি, জুমার দিন গোসল করা সুন্নত, এখন এর জন্য নির্ধারিত কোনো সময় আছে কি? যদি কেউ দিনের শুরুতে গোসল করে থাকে তাহলে তাতে কি জুমার জন্য গোসলের সুন্নত আদায় হবে না? নাকি পুনরায় গোসল করতে হবে? জানতে আগ্রহী।
জুমার দিন জুমার নামাযের প্রস্তুতি হিসেবে গোসল করা সুন্নত। ফকীহগণ বলেন, জুমার প্রস্তুতি হিসেবে এমন সময় গোসল করা উত্তম যেন উক্ত অযু-গোসল দ্বারাই নামায আদায় করা সম্ভব হয়। অবশ্য বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী জুমার নিয়তে দিনের প্রথম ভাগে গোসল করলেও এর দ্বারা উক্ত সুন্নত আদায় হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে পুনরায় গোসল করার প্রয়োজন হবে না।
Sharable Link-সহীহ বুখারী, হাদীস ৮৭৭; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৫০৪৪, ৫০৮০, ৫০৮৭; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ১/২০১; আলবাহরুর রায়েক ১/৬৪; শরহুল মুনয়া পৃ. ৫৫; রদ্দুল মুহতার ১/১৬৮
আমাদের এলাকায় মায়্যেতকে কবরে রাখার পর শুধু মুখ কিবলার দিকে ঘুরিয়ে রাখা হয়। পুরো শরীর কিবলার দিকে রাখা হয় না। এতে কি সুন্নত আদায় হবে? নাকি পুরো দেহ কিবলার দিকে রাখতে হবে? জানালে কৃতজ্ঞ হব।
মায়্যেতকে কবরে ডান কাত করে শুইয়ে সিনা ও চেহারা কিবলার দিকে করে রাখা সুন্নত। প্রয়োজনে পিঠের দিকে মাটির চাক কিংবা মায়্যেতকে পূর্বের দেয়ালের সাথে টেক লাগিয়ে রাখবে। যেন মায়্যেত উল্টে না যায় এবং সহজে ডান কাত করে রাখা যায়। কিন্তু চিত করে শুইয়ে শুধু চেহারা কিবলার দিকে ঘুরিয়ে রাখলে সুন্নতসম্মত হবে না। প্রসিদ্ধ তাবেয়ী ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন,
اسْتَقْبِلْ بِالْمَيِّتِ الْقِبْلَةَ.
অর্থাৎ মায়্যেতকে কিবলামুখী করে রাখো। সুফিয়ান রাহ. বলেন-
يَعْنِي عَلَى يَمِينِهِ كَمَا يُوضَعُ فِي اللّحْدِ.
অর্থাৎ ডান কাতে রাখো যেমনিভাবে লাহদ কবরের ক্ষেত্রে রাখা হয়। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ৬০৬০)
Sharable Link-আলমাবসূত, সারাখসী ২/৭৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৯০; ফাতহুল কাদীর ২/৯৯; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৬২৪; আলবাহরুর রায়েক ২/১৯৪; রদ্দুল মুহতার ২/২৩৬
আমার দাদু চিটাগাংয়ে আমার চাচার বাসায় থাকতেন। কয়েক দিন আগে তিনি চাচার বাসায় মারা যান। আমার চাচা সেখানে একবার জানাযার নামায পড়ান। এরপর তাকে মাটি দেওয়ার জন্য শরীয়তপুরে নিয়ে আসেন। এখানে এসে পুনরায় তার জানাযার নামায পড়া হয়। এতে আমাদের এলাকার মসজিদের ইমাম সাহেব শরীক হওয়া থেকে বিরত থাকেন। তিনি বলেন, দ্বিতীয়বার জানাযার নামায পড়া ঠিক না। আমার চাচা তাকে বললেন, সহীহ বুখারীতে আছে, সাহাবায়ে কেরাম এক মহিলার জানাযার নামায পড়ার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুনরায় ঐ মহিলার কবরের ওপর জানাযার নামায পড়েছেন। এখন মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাই, এ বিষয়ে শরীয়তের বিধান কী? দ্বিতীয়বার জানাযার নামায পড়া যাবে কি না? যদি না যায় তাহলে সহীহ বুখারীর এই হাদীসের ব্যাখ্যা কী? দলীলসহ বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।
মায়্যেতের অভিভাবকের মধ্য থেকে কেউ মৃতের একবার জানাযার নামায পড়ে ফেললে দ্বিতীয়বার জানাযার নামায পড়া যায় না। কেননা, শরীয়তের বিধান জানাযার নামায একবারই পড়া। এক বর্ণনায় এসেছে, নাফে‘ রাহ. বলেন-
كَانَ ابْنُ عُمَرَ إِذَا انْتَهَى إِلَى جِنَازَةٍ وَقَدْ صُلِّيَ عَلَيْهَا دَعَا وَانْصَرَفَ وَلَمْ يُعِدِ الصّلَاةَ.
আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. যখন কোনো জানাযায় গিয়ে দেখতেন জানাযার নামায শেষ হয়ে গেছে তখন তিনি শুধু দুআ করে ফিরে আসতেন। পুনরায় নামায পড়তেন না। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ৬৫৪৫)
ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন-
لَا يُعَادُ عَلَى مَيِّتٍ الصّلَاةُ.
মায়্যেতের দ্বিতীয়বার জানাযার নামায পড়া যাবে না। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, ৬৫৪৪
অবশ্য মায়্যেতের অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া জানাযার নামায সম্পন্ন করা হলে অভিভাবক উক্ত নামায পুনরায় পড়াতে পারবেন। এক্ষেত্রে তার পেছনে কেবলমাত্র ওইসকল লোক শরিক হতে পারবেন, যারা পূর্বের জানাযায় শরিক হননি।
আর প্রশ্নে উল্লেখিত বুখারী শরীফের ঘটনাটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে খাস ছিল।
বিশিষ্ট ফকীহ ও মুহাদ্দিস ফখরুদ্দীন যায়লায়ী রাহ. উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বিতীয়বার জানাযার নামায পড়েছেন মুসলিম উম্মার অভিভাবক হিসেবে। (দেখুন তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫৭৪)
ইমাম মুহাম্মাদ রাহ. বলেন-
وَلا يَنْبَغِي أَنْ يُصَلّى عَلَى جِنَازَةٍ قَدْ صُلِّيَ عَلَيْهَا، وَلَيْسَ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ فِي هَذَا كَغَيْرِهِ، أَلا يُرَى أَنّهُ صَلّى عَلَى النّجَاشِيِّ بِالْمَدِينَةِ، وَقَدْ مَاتَ بِالْحَبَشَةِ، فَصَلاةُ رَسُولِ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ بَرَكَةٌ، وَطَهُورٌ فَلَيْسَتْ كَغَيْرِهَا مِنَ الصّلَوَاتِ.
অর্থাৎ, যে মায়্যেতের একবার জানাযা পড়া হয়েছে দ্বিতীয়বার তার জানাযা পড়া ঠিক নয়। এক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যদের মতো নন। কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামায বরকত ও পরিশুদ্ধির কারণ। সুতরাং তাঁর নামায অন্যদের নামাযের মতো নয়। -মুআত্তা মুহাম্মাদ, হাদীস ৩১৭
তাছাড়া ইমাম মালেক রাহ.-এর বিশিষ্ট শাগরিদ ইবনুল কাসিম রাহ. বলেন-
قُلْتُ لِمَالِكٍ: فَالْحَدِيثُ الّذِي جَاءَ عَنِ النّبِيِّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ أَنّهُ صَلّى عَلَى قَبْرِ امْرَأَةٍ؟ قَالَ: قَدْ جَاءَ هَذَا الْحَدِيثُ وَلَيْسَ عَلَيْهِ الْعَمَلُ.
আমি মালেক রাহ.-কে বললাম, যে বর্ণনায় এসেছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওাসায়াসাল্লাম এক মহিলার কবরের ওপর তার জানাযার নামায পড়েছেন তার ব্যাখ্যা কী? মালেক রাহ. বলেন, উম্মতের আমল এ হাদীস অনুসারে নয়। -ইস্তেযকার ২/৫৫৯
অর্থাৎ ইমাম মালেক রাহ.-ও একথা বুঝাতে চেয়েছেন যে, এটি ছিল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে খাস একটি ঘটনা। আরো বহু ঘটনা এমন হয়েছে, যেখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবার জানাযায় অংশ নিতে পারেননি কিন্তু পুনরায় তার জানাযার নামায পড়েননি। সুতরাং এমন একটি বিশেষ ঘটনা দিয়ে ব্যাপকভাবে দ্বিতীয় জানাযার দলিল পেশ করা উচিত নয়।
Sharable Link-আলমাবসূত, সারাখসী ২/১২৬; মুখতাসারুত তাহাবী পৃ. ৪২; ফাতহুল কাদীর ২/৮৪; আলবাহরুর রায়েক ২/১৮১; মিরকাত ৪/১২৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/২২৩
আমার স্ত্রীর উপর রমযানের রোযার একটি কাফফারা ওয়াজিব হয়েছিল। কাফফারার ষাটটি রোযার মধ্যে এগারোটি রোযা লাগাতার রাখে। বারোতম দিনে একটি দূরের সফরে বের হলে পথিমধ্যে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে রোযা ভাঙ্গতে বাধ্য হয়। তিন দিনের লাগাতার অসুস্থতার পর চতুর্থ দিন থেকে আবার কাফফারার রোযা রাখতে শুরু করে।
তো প্রশ্ন হল, সে এখন তার গণনা বারোতম রোযা থেকে করবে, না আবার শুরু থেকে শুরু করবে? এক্ষেত্রে শরীয়তের বিধান কী? দ্রুত জানালে কৃতজ্ঞ হব।
রমযানের রোযার কাফফারার জন্য বিরতিহীনভাবে লাগাতার ষাটটি রোযা রাখতে হয়। এক্ষেত্রে মহিলাদের ঋতুস্রাবই কেবল ওজর হিসেবে গণ্য হবে। অর্থাৎ ঋতুস্রাবের কারণে ঐদিনগুলো বাদ পড়লে কোনো সমস্যা হবে না। এছাড়া সফর, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে রোযার বিরতি হলে আবার নতুন করে কাফফারার রোযা শুরু করতে হবে। এক্ষেত্রে যেগুলো রাখা হয়েছিল তা কাফফারা হিসেবে ধর্তব্য হবে না। অতএব আপনার স্ত্রীকে নতুন করে কাফফারার ষাটটি রোযা রাখতে হবে।
Sharable Link-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ১১৫০৯; কিতাবুল আছল ২/১৫৮, ১৬০; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২৭৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৫/১৭৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৬১; রদ্দুল মুহতার ২/৪০৯
গত রমযানে আমরা একটি দাওয়াতী সফরে চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে যাই। বৌদ্ধ-পাড়ায় দাওয়াতের কাজ করি। আলহামদু লিল্লাহ ইসলামের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে এক ভাই বারতম রমযানে সকাল নয়টার দিকে স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করে। সে যেহেতু নতুন তাই তাকে সেদিন পানাহার থেকে বিরত থাকতে বলিনি; বরং পরবর্তী দিন থেকে সে নিয়মিত রোযা রাখে। তার ইসলাম গ্রহণের দিন এবং পূর্বে অতিবাহিত হওয়া এগারো দিনের রোযা কাযা করা-না করা নিয়ে আমাদের মাঝে মতের ভিন্নতা দেখা দেয়। কেউ বলে, রমযান হল নামাযের মত। তাই এক রমযান পাওয়া পুরো রমযান পাওয়ার হুকুমে। ফলে বিগত এগারো দিনের কাযা করতে হবে। আবার কেউ ভিন্ন কথাও বলেন।
তো প্রশ্ন হল-
ক. যেদিন কেউ ইসলাম গ্রহণ করল, সেদিন কি সে পানাহার থেকে বিরত থাকবে? যদি এমন ক্ষেত্রে পানাহার করে ফেলে তাহলে কী পরবর্তীতে তা কাযা করতে হবে? এক্ষেত্রে শরীয়তের বিধানটি
জানালে কৃতজ্ঞ হব।
খ. রমযানের কিছু দিন অতিবাহিত হওয়ার পর কেউ ইসলাম গ্রহণ করলে বিগত দিনের রোযা কাযা করার ব্যাপারে সঠিক মাসআলাটি কী?
ক. কেউ যদি রমযানের দিনে ইসলাম গ্রহণ করে তবে তার জন্য ঐ দিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোযাদারের মত পানাহার থেকে বিরত থাকা ওয়াজিব।
সুফিয়ান সাওরী রাহ. বলেন-
إِذَا أَسْلَمَ فِي شَهْرِ رَمَضَانَ لَمْ يَصُمْ يَوْمَهُ الّذِي أَسْلَمَ فِيهِ، وَلكِنْ يُؤْمَرُ أَنْ لَا يَأْكُلَ حَتّى يُمْسِي.
কেউ যদি রমযানের দিনে ইসলাম গ্রহণ করে তাহলে সেদিন সে রোযা রাখবে না। তবে ঐ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকবে। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ৭৩৬৩)
কিন্তু কেউ সেদিন পানাহার করে ফেললে তাকে ঐ দিনের রোযা কাযা করতে হবে না। তবে ইসতিগফার করতে হবে।
খ. আর রমযানের রাতে কেউ ইসলাম গ্রহণ করলে পরবর্তী দিন থেকেই রোযা রাখতে হবে। সর্বক্ষেত্রে ইসলাম গ্রহণের পর থেকেই রোযা রাখতে হবে। পূর্বের দিনগুলোর রোযা রাখতে হবে না।
Sharable Link-আলমুজামুল কাবীর তাবারানী, হাদীস ৬৪০১; কিতাবুল আছল ২/১৫৬, ১৬৬; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৬১; খিযানাতুল আকমাল ১/৩০০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১৪; ইমদাদুল ফাত্তাহ পৃ. ৬৯৩
আমি গত রমযান মাসে স্বাভাবিকভাবে রোযা রাখছিলাম। কিন্তু হঠাৎ অসুস্থতার কারণে রোযা রাখা অবস্থায় অজ্ঞান হয়ে যাই এবং অজ্ঞান অবস্থায় তিন দিন হাসপাতালের লাইফ সাপোর্টে থাকি। এরপর আল্লাহ তাআলার অশেষ রহমতে জ্ঞান ফিরে পাই এবং বাকি রোযাগুলো রাখি। হুযুরের কাছে জানার বিষয় হল, আমি যে তিন দিন অজ্ঞান ছিলাম সে দিনগুলোর রোযার হুকুম কী হবে? জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।
প্রথম দিন যেহেতু রোযা রাখা অবস্থায় অজ্ঞান হয়েছেন তাই সেদিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত যদি আপনাকে পানাহার না করানো হয়ে থাকে তাহলে ঐ রোযা আদায় হয়ে গেছে। আর যদি পানাহার করানো হয়ে থাকে তাহলে উক্ত রোযাসহ পরের দুইদিনের রোযার কাযা আদায় করবেন। এক্ষেত্রে কাফফারা দিতে হবে না।
Sharable Link-আলমাবসূত, সারাখসী ৩/৭০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৪২৭; আলবাহরুর রায়েক ২/২৯০; রদ্দুল মুহতার ২/৪৩২
গত ১২/১০/২০১৮ ঈ. তারিখে আমার স্ত্রীর সাথে পরের দিন রোযা রাখার ব্যাপারে কথা হয় যে, আমি নফল রোযা রাখব আর আমার স্ত্রী তার রমযানের কাযা রোযা রাখবে। কিন্তু শেষরাতে উঠতে পারিনি, ফলে সকালে কী করবো চিন্তা করতে করতে প্রায় ১১টার দিকে দুইজনই সেহরি না খেয়েই রোযা রাখার সিদ্ধান্ত নেই এবং যথারীতি দুজনই রোযা রাখি। হুযুরের কাছে জানতে চাচ্ছি, আমাদের ঐ দিনের রোযা সহীহ হয়েছে কিনা? জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনাদের উভয়ের রোযাই নফল হিসেবে আদায় হয়েছে। আপনার স্ত্রীর কাযা রোযা আদায় হয়নি। কারণ কাযা রোযা রাখার জন্য সুবহে সাদিকের পূর্বে নিয়ত করা জরুরি। আর নফল রোযা রাখার জন্য সুবহে সাদিকের পূর্বে নিয়ত করা জরুরি নয়; বরং শরয়ী অর্ধ দিন অর্থাৎ সুবহে সাদিক থেকে নিয়ে সূর্যাস্তের মধ্যবর্তী সময়ের আগে আগে নিয়ত করাই যথেষ্ট। তাই আপনার স্ত্রীকে ঐ কাযা রোযা পৃথকভাবে আদায় করতে হবে।
Sharable Link-কিতাবুল আছল ২/১৬৪; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ২/৪০১; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৪৩; দুরারুল হুক্কাম ১/১৯৭; মারাকিল ফালাহ পৃ. ৩৫২; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/১৫১
আমি মোমেনশাহী বড় মসজিদে সাত দিন ইতেকাফ করার মান্নত করেছিলাম। কিন্তু ইতেকাফ শুরু করার পর অসুস্থ হয়ে যাওয়ার কারণে বাকি দিনগুলোর ইতেকাফ পুরা করতে পারিনি। হুযুরের কাছে জানার বিষয় হল,
ক. এখন আমার কয় দিনের ইতেকাফ করতে হবে?
খ. ইতেকাফ কি বড় মসজিদেই করতে হবে? নাকি অন্য কোনো মসজিদেও করতে পারব?
গ. এ ইতেকাফের সময় কি আমাকে রোযা রাখতে হবে? জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।
ক, খ : প্রশ্নোক্ত মান্নতের দ্বারা আপনার উপর একত্রে সাত দিন ইতেকাফ করা ওয়াজিব হয়েছিল। আপনি যেহেতু একত্রে সাত দিনের ইতেকাফ পূর্ণ করতে পারেননি তাই এখন আপনাকে পুনরায় সাত দিনের ইতেকাফ ধারাবাহিকভাবে পূর্ণ করতে হবে।
আর উক্ত ইতেকাফ আপনি যে কোনো মসজিদে করতে পারবেন। উল্লেখিত বড় মসজিদেই আদায় করা জরুরি নয়। কারণ নির্দিষ্ট কোনো মসজিদে ইতেকাফের মান্নত করলে ঐ মসজিদেই ইতেকাফ করা আবশ্যক হয় না; বরং অন্য মসজিদেও তা আদায় করা যায়। -কিতাবুল আছল ২/১৮৪; ফাতহুল কাদীর ২/৩১৪; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৭৭; আলবাহরুর রায়েক ২/৩০৬; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৩৬
গ. মান্নতের ইতেকাফের সময় রোযা রাখতে হয়। তাই আপনাকে উক্ত সাত দিনের ইতেকাফের সময় রোযা রাখতে হবে। উম্মুল মুমিনীন আয়েশা সিদ্দিকা রা. বলেন- রোযা ছাড়া ইতেকাফ হয় না। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৪৭৩)
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন- ইতেকাফকারীর জন্য রোযা রাখা জরুরি। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, ৯৭১১)
আলী রা. থেকেও এমনটি বর্ণিত আছে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা ৯৭১৩)
Sharable Link-আলমাবসূত, সারাখসী ৩/১১৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৭৯; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৭৪; আলবাহরুর রায়েক ২/৩০০
আমার প্রতিবেশী একজন ধনী ব্যবসায়ী। কিন্তু তিনি তার পরিবারের প্রতি উদাসীন। এমনকি ঠিকমত তাদের খরচও দেন না। মাঝে মাঝেই স্ত্রীকে ঘর থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। আমার জানামতে তার স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে বেশ কষ্টে দিন কাটান।
আমার প্রশ্ন হল, আমি কি ঐ ব্যবসায়ীর স্ত্রীকে যাকাত দিতে পারব? দিলে কি আমার যাকাত আদায় হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।
ঐ মহিলা যদি নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক না হয় তাহলে সেক্ষেত্রে তাকে যাকাত দেওয়া যাবে। তবে যে মহিলার স্বামী ধনী এবং তার ভরণ-পোষণ যথাযথ আদায় করে তাহলে সে ব্যক্তিগতভাবে যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত হলেও তাকে যাকাত না দেওয়াই উচিত।
উল্লেখ্য, আপনার জন্য আপনার প্রতিবেশীকে বোঝানো উচিত যে, একজন পুরুষের সদ্ব্যবহার পাওয়ার সবচে হকদার হল তার স্ত্রী। উপরন্তু তাকে ঘর থেকে বের হয়ে যেতে বলা তো চরম অভদ্রতা। এ রকম আচরণ থেকে সবারই বেঁচে থাকা আবশ্যক।
Sharable Link-বাদায়েউস সানায়ে ২/১৫৮; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৬৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৮৯; আলবাহরুর রায়েক ২/২৪৬
আমার ফুফাত ভাই খুব গরীব। সে অনেকের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছিল। কিন্তু এখন তা পরিশোধ করতে পারছে না। গত বছর ফুফু বলেছিলেন, আমি যেন গত বছরের যাকাতের টাকাটা ফুফাত ভাইকে দিই, যাতে সে ঋণগুলো পরিশোধ করতে পারে। আমি তখন তাঁর কথা অনুযায়ী তাকে যাকাতের টাকা দিয়ে দিই। পরে জানতে পারলাম, ফুফাত ভাই তা দিয়ে ঋণ আদায় না করে অন্য জায়গায় খরচ করে ফেলেছে। এবছর ফুফু আমাকে অনুরোধ করেছেন, আমি যেন যাকাতের টাকাটা ফুফাত ভাইয়ের পক্ষ থেকে সরাসরি পাওনাদারদের দিই। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, ফুফাত ভাইয়ের হাতে না দিয়ে সরাসরি পাওনাদারদের দিলে কি আমার যাকাত আদায় হবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার ফুফাত ভাইয়ের অনুমতি নিয়ে বা তাকে অবগত করে যাকাতের অর্থ দ্বারা পাওনাদারদের ঋণ পরিশোধ করে দিতে পারবেন। এতে আপনার যাকাত ও তার ঋণ দুটোই আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু তাকে অবগত করা ছাড়াই যদি যাকাত দিয়ে দেওয়া হয় তাহলে যাকাত আদায় হবে না।
Sharable Link-ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৬৮; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ১/১৮০; ফাতহুল কাদীর ২/২০৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪৩
আমার নাতি আর্মিতে চাকুরি করে। সে গত রমযানে আমার নিকট ২৩ হাজার টাকা পাঠিয়ে বলল, ১০ হাজার টাকা আপনার জন্য আর ১৩ হাজার টাকা যাকাতের।
আপনি যে কোন জায়গায় তা দিয়ে দিবেন। এরপর আমি যাকাতের টাকাগুলো আমার বড় ছেলে, যার সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হয় তাকে দিয়ে দেই। এখন আমার দুটি বিষয় খটকা লাগছে-
ক. ভাগিনার যাকাতের অর্থ মামাকে দিলে যাকাত আদায় হবে কি না?
খ. আমি আমার ছেলেকে যাকাতের টাকা দেওয়ার দ্বারা আমার দায়িত্ব পালনে কোনো ত্রুটি হয়েছে কি না?
ভাগিনা মামাকে যাকাত দিতে পারে। তাই আপনার বড় ছেলে যদি যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত হয় তাহলে নাতির টাকা (তার মামাকে) আপনার বড় ছেলেকে দেওয়া জায়েয হয়েছে এবং যাকাতের টাকাগুলো তাকে দেওয়ার দ্বারা আপনার দায়ীত্বও যথাযথভাবে আদায় হয়েছে।
Sharable Link-ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৬৭; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ১/৪২৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/২২৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৭০
আমার বাবা ব্যাংকে একটি হজ¦ ডিপোজিট করেছেন। তাতে প্রতি মাসে দশ হাজার টাকা করে জমা রাখেন। তিন বছরে ৩ লক্ষ ৬০ হাজার টকা জমা হয়েছে। আমার বোনের অপারেশনের কারণে এবছর হজে¦ যেতে পারেননি। এখন মুফতী সাহেবের নিকট জানতে চাই, আমার বাবার হজে¦র উদ্দেশ্যে জমাকৃত টাকার যাকাত দিতে হবে কি না?
জমাকৃত টাকা নেসাব পরিমাণ হওয়ার পর বছর অতিবাহিত হলে তার যাকাত আদায় করতে হবে। যদিও তা হজে¦র বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে জমা করা হোক। যতক্ষণ না টাকাগুলো ঐ কাজে খরচ করা হবে তা যাকাতযোগ্য সম্পদ হিসেবে বিবেচিত থাকবে। সুতরাং আপনার বাসায় জমাকৃত টাকা নেসাব পরিমাণ হওয়ার পর বছর অতিক্রান্ত হলেই তার যাকাত দিতে হবে।
Sharable Link-আলজামেউল কাবীর পৃ. ২৪; রদ্দুল মুহতার ২/২৬১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭৩
কিছুদিন আগে দুধ খাওয়ার জন্য একটি গাভী ক্রয় করি এবং মনে মনে এ নিয়তও করি যে, গাভীর মূল্য বেড়ে গেলে বিক্রি করে দেব। জানার বিষয় হল, আমার উপর কি এ গাভীটির যাকাত আদায় করা ওয়াজিব? জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে গাভীটি যেহেতু দুধ খাওয়ার জন্যই ক্রয় করা হয়েছে তাই পরবর্তীতে তা বিক্রি করে দেওয়ার নিয়ত থাকলেও তা ব্যবসার পণ্য বলে বিবেচিত হবে না। সুতরাং তা বিক্রি করে দেওয়ার আগ পর্যন্ত এর যাকাত দিতে হবে না। গাভীটি যখন বিক্রি করে দেওয়া হবে তখন বিক্রিলব্ধ মূল্য নেসাব পরিমাণ হলে যাকাতযোগ্য সম্পদ বলে বিবেচিত হবে।
Sharable Link-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪০; ফাতহুল কাদীর ১/১৬৬; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়্যা ১/১৮৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১৬৯
আমার একটি পোল্ট্রি ফার্ম আছে। প্রতি মাসে প্রায় লাখ টাকার খাদ্যের প্রয়োজন হয়। আমি একসাথে পুরো মাসের খাদ্য ক্রয় করে রাখি। কিছুদিন আগে আমার যাকাতবর্ষ পূর্ণ হয় এবং যাকাত আদায় করি। কিন্তু ক্রয়কৃত খাদ্যের যাকাত আদায় করিনি। এক ভাই বললেন, আপনি যেহেতু ব্যবসার পণ্য উৎপাদনের জন্য এ খাবারগুলো ক্রয় করেছেন তাই আপনাকে এ খাদ্যের যাকাত আদায় করতে হবে। জানার বিষয় হল, তার কথা কি ঠিক? আমার কি এ খাদ্যের যাকাত আদায় করতে হবে? জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।
ঐ লোকের কথা ঠিক নয়। আপনাকে উক্ত খাদ্যের যাকাত আদায় করতে হবে না। কেননা ব্যবসার উদ্দেশ্যে রাখা মুরগী, মাছ ইত্যাদির খাদ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ব্যবসার পণ্য নয়; বরং তা ব্যবহারযোগ্য প্রয়োজনীয় মালের অন্তর্ভুক্ত। তাই এর যাকাত দিতে হবে না।
Sharable Link-বাদায়েউস সানায়ে ২/৯৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৮০; আলবাহরুর রায়েক ২/২১০
জনৈক শিক্ষক তার সাত বছরের এক ছেলেকে স্কুলে নিয়ে গিয়ে এক প্রাপ্তবয়স্ক ছাত্রীকে বলেছে, তোমাকে আমার ছেলের স্ত্রী হিসেবে নিলাম। মেয়েটিও কোন কিছু না বুঝে বলে ফেলেছে আলহামদু লিল্লাহ আমি কবুল করলাম। সেখানে তার বয়সী একাধিক মেয়ে উপস্থিত ছিল। তবে কোনো পুরুষ সেখানে ছিল না। এরপর ঘটনা আর আগে বাড়েনি। সম্প্রতি ঐ মেয়ের অন্যত্র বিয়ের কথা চূড়ান্ত হয়েছে। এখন প্রশ্ন হল, উপরোক্ত ঘটনায় কি তাদের মাঝে বিবাহ সম্পন্ন হয়ে গেছে? এবং সেক্ষেত্রে ঐ মেয়ের অন্যত্র বিবাহ কি বৈধ হবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু কোনো সাক্ষী ছিল না তাই ঐ কথার কারণে ছেলেটির সাথে উক্ত মেয়ের বিবাহ হয়নি। এখন মেয়েটিকে অন্যত্র বিয়ে দিতে কোনো অসুবিধা নেই। কারণ বিবাহ সহীহ হওয়ার জন্য বিয়ের সময় সাক্ষী হিসেবে কমপক্ষে দুজন পুরুষ বা একজন পুরুষ দুজন নারীর উপস্থিতি আবশ্যক। আর এক্ষেত্রে কোনো পুরুষ ছিল না।
উল্লেখ্য যে, উক্ত শিক্ষকের জন্য নিজ ছাত্রীর সাথে এমন আচরণ করা নিতান্তই অন্যায় হয়েছে।
Sharable Link-রদ্দুল মুহতার ৩/৯৫; আলবাহরুর রায়েক ৩/৮৭; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ২/১২; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৩৩১
আমি গত রমযানে খুব অসুস্থ ছিলাম। কোনোভাবেই আমার জ¦র কমছিল না। আমার আম্মু মান্নত করলেন যে, যদি আমার ছেলে ঈদের আগে সুস্থ হয় তাহলে আমি ঈদের দিন রোযা রাখব। আল্লাহর রহমতে আমি ঈদের আগে সুস্থ হয়ে যাই। আমার আম্মু পূর্ব মান্নত অনুযায়ী ঈদের দিন রোযা রাখলেন। পরবর্তীতে তিনি গ্রামের এক মহিলার কাছে জানতে পারলেন, ঈদের দিন রোযা রাখা নিষেধ। মুহতারামের নিকট প্রশ্ন হল, ঐ মহিলার কথা কি ঠিক? যদি ঠিক হয় তাহলে আমার আম্মু ঈদের দিন যে রোযা রেখেছেন তা কি পুনরায় আদায় করতে হবে?
হাঁ, উক্ত মহিলার কথা ঠিক। ঈদের দিন রোযা রাখা নাজায়েয। হাদীস শরীফে ঈদের দিন রোযা রাখতে নিষেধ করা হয়েছে।
হযরত আবু সাঈদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
نَهَى النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ عَنْ صَوْمِ يَوْمِ الفِطْرِ وَالنّحْرِ.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন রোযা রাখতে নিষেধ করেছেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৯৯১
তাই আপনার মাকে এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার কারণে তাওবা ইস্তিগফার করতে হবে।
আবশ্য ঈদের দিন রোযা রাখা যদিও নিষেধ। তবে ঐ দিন রোযা রাখলে তা রোযা হিসেবে গণ্য হবে। তাই আপনার মায়ের মান্নত আদায় হয়ে গেছে। তবে এক্ষেত্রে তার উচিত ছিল ঈদের দিনের পরিবর্তে অন্য কোনো দিন রোযা রেখে মান্নতটি পুরা করা।
Sharable Link-আততাজরীদ, কুদুরী ৩/১৫৭৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৮
আমাদের শ্রদ্ধাভাজন জনাব আবদুস সবুর সাহেব বড় রাস্তার পাশে একটি ইবতেদায়ী সরকারী আলিয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠার জন্য দুই বিঘা জমি ওয়াকফ করেন। মাদরাসা প্রতিষ্ঠার পর ৩-৪ বছর সবকিছু স্বাভাবিকভাবেই চলছিল। কিন্তু ওয়াকফকারীর মৃত্যুর পর বিভিন্ন কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর তা বছর খানিক এভাবেই পড়ে থাকে। এখন মাদরাসা কমিটি ও এলাকাবাসি চাচ্ছে যে, উক্ত জায়গায় একটি হাফিজিয়া/এবতেদায়ী কওমী মাদরাসা বানাতে। অথবা তা পাশের জামে মসজিদের আয়-উন্নতির জন্য দিয়ে দিতে।
তাই মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাচ্ছি, উক্ত জায়গায় মাদরাসা বানাব না তা মসজিদের জন্য দিয়ে দেব? অথবা অন্য কাজে লাগাব?
এ ব্যাপারে আমাদের করণীয় সম্পর্কে সঠিক দিকনিদের্শনা কামনা করছি। আল্লাহ তাআলা আপনাদের উত্তম প্রতিদান দিন।
প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী উক্ত জমিতে একটি দ্বীনী হাফিজিয়া/এবতেদায়ী মাদরাসা পরিচালনা করা জায়েয হবে। কারণ এটা ওয়াকফকারীর উদ্দেশ্যের অন্তর্ভুক্ত।
তবে জমিটি মসজিদের আয়-উন্নতির কাজে ব্যবহার করা জায়েয হবে না এবং যে কাজের জন্য ওয়াকফ করা হয়েছে এর বাইরে অন্য কোনো কাজেও লাগানো যাবে না।
Sharable Link-রদ্দুল মুহতার ৪/৪৪৫, ৪৩৪, ৩৫৯; ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ৬/২৬১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৩৬২
আমার দাদা তার জীবদ্দশায় আমাদের বাড়ি সংলগ্ন একটি জমি মসজিদের নামে ওয়াকফ করে যান। এতদিন তা মসজিদের বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ইদানীং আমরা বাড়িতে একটি বিল্ডিং করার উদ্যোগ নিয়েছি। যাতে ঐ জমিটির একাংশের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। তাই আমরা চাচ্ছি, সমমূল্যের আরেকটি জমি দিয়ে উক্ত জমিটি পরিবর্তন করতে। মসজিদের মুতাওয়াল্লীসহ কমিটির বেশিরভাগ লোক এতে রাজি আছেন। তবে ইমাম সাহেবসহ কমিটির কিছু সদস্য তাতে আপত্তি জানিয়েছেন। জানার বিষয় হল, বিশেষ প্রয়োজনবশত ওয়াকফকারীর উত্তরসূরী হিসাবে আমাদের জন্য মসজিদের জমি পরিবর্তন করার অবকাশ আছে কি না? যদি কমিটির সকল সদস্য সম্মতি দেয় তাহলে কি পরিবর্তন করা যাবে?
প্রশ্নোক্ত প্রয়োজনেও মসজিদের ওয়াকফিয়া জমিটি পরিবর্তন করা জায়েয হবে না। মসজিদের জায়গা এভাবে পরিবর্তন করা যায় না। এক্ষেত্রে ওয়াকফকারীর ওয়ারিশগণ ও মসজিদকমিটির সকল সদস্য একমত হলেও কাজটি করা যাবে না।
Sharable Link-ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩০৭; আলবাহরুর রায়েক ৫/২২২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৪০১; আলইসআফ পৃ. ৩২; রদ্দুল মুহতার ৪/৩৮৪
আমি একজনের সাথে এই মর্মে চুক্তি করেছি যে, আমি তাকে ফসল বোনার সময় ১০,০০০/- টাকা দিব। বিনিময়ে সে আমাকে ৩ মাস পর ৪০ কেজি ফসল দিবে, যার মূল্য তখন ১৬,০০০/- টাকা দাঁড়ায়। এরকম চুক্তি জায়েয কি না?
প্রশ্নোক্ত চুক্তিটি বাইয়ে সালাম তথা আগাম বেচা-কেনার অন্তর্ভুক্ত। কিছু শর্তসাপেক্ষে এ চুক্তি বৈধ। শর্তগুলো হল,
ক. ফসলের গুণগত মান ও পরিমাণ সুনির্দিষ্ট হতে হবে।
খ. ফসল হস্তান্তরের সময় ও স্থান সুনির্ধারিত হতে হবে।
গ. চুক্তির সময়ই ফসলের পুরো মূল্য বিক্রেতাকে বুঝিয়ে দিতে হবে।
সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যদি এ সকল শর্ত যথাযথভাবে পালিত হয়ে থাকে তাহলে আপনাদের ঐ চুক্তি বৈধ হয়েছে।
আর এটা ঋণ চুক্তি নয়। বরং অগ্রিম মূল্য পরিশোধের মাধ্যমে পণ্যের ক্রয়-চুক্তি। শরীয়তের পরিভাষায় একে ‘বাইয়ে সালাম’ বলে।
উল্লেখ্য যে, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে পণ্যের মূল্য অনেক কম ধরা হয়েছে। এ ধরনের বেচা-কেনায় পণ্যের মূল্য তা পরিশোধের সময়ের বাজারমূল্যের চেয়ে কম ধরার সুযোগ থাকলেও অস্বাভাবিক কম মূল্য নির্ধারণ করা উচিত নয়।
Sharable Link-সহীহ বুখারী, হাদীস ২২৪০; কিতাবুল আছল ২/৩৭১; আলমুহীতুল বুরহানী ১০/২৭৭; আদ্দুররুল মুখতার ৫/২১৪
আমরা টিনসেডে একটি ব্যাচেলার মেসে ভাড়া থাকি। মেসটি বেশ পুরোনো হওয়ায় চালের টিনে কয়েক জায়গা ছিদ্র হয়ে গেছে। বৃষ্টির সিজনে পানি পড়ে। মালিককে অনেকবার মেরামতের কথা বলেও কোনো লাভ হয়নি। অবশেষে আমরা কয়েকজন মিলে মালিকের অনুমতি ছাড়াই নতুন তিনটা টিন কিনে লাগিয়েছি। মাস শেষে ভাড়া দেয়ার সময় টিনের দাম ও মিস্ত্রী খরচ ভাড়া থেকে কেটে রেখে দিয়েছিলাম। কিন্তু মালিক এতে সম্মত হচ্ছে না। সে টিনের দাম নগদও দিবেন না আবার ভাড়া হিসাবেও কাটবে না। পরে আমাদেরকে পূর্ণ ভাড়াই দিতে হয়েছে।
এখন আমাদের প্রশ্ন হল,
ক. ভাড়াবাড়ি বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে গেলে তা মেরামতের দায়িত্ব কার?
খ. প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আমরা নিজেদের পক্ষ থেকে যে মেরামত করেছি তার ব্যয় মালিক থেকে নিতে পারব কি না?
ভাড়া ঘরবাড়ি মেরামতের প্রয়োজন হলে তা ঠিক করে দেওয়ার দায়িত্ব মালিকের। ভাড়াটিয়াগণ মালিকের অনুমতিক্রমে মেরামত করে নিলে তার ব্যয় মালিক থেকে নিতে পারবে। কিন্তু ভাড়াটিয়া যদি বাড়ী মালিকের অনুমতি ছাড়া নিজ থেকে তা মেরামত করে তাহলে সেক্ষেত্রে মালিককে ঐ খরচ দেওয়ার জন্য বাধ্য করতে পারবে না। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বাড়ির মালিক যেহেতু মেরামতের ব্যাপারে সম্মত ছিল না তাই এখন আপনাদের নিজ থেকে যা খরচ করেছেন তা মালিক দিতে না চাইলে জোরপূর্বক নেওয়া বা ভাড়া কেটে রাখা জায়েয হবে না। তবে বাড়িওয়ালার নৈতিক দায়িত্ব, বাড়ি মেরামতের খরচ আপনাদেরকে দিয়ে দেওয়া।
প্রকাশ থাকে যে, ঘরবাড়ি বসবাস অনুপযোগী হয়ে গেলে কিংবা জরুরি মেরামতের প্রয়োজন হলে সেক্ষেত্রে মালিকের কর্তব্য তা মেরামত করে দেওয়া। এক্ষেত্রে মেরামত না করা জুলুম। এ ধরনের ত্রুটি ও জুলুমের কারণে ভাড়াটিয়া তৎক্ষণাৎ ঘরবাড়ি ছেড়ে দিতে পারে। সেক্ষেত্রে মালিক তাকে থাকার জন্য বাধ্য করার অধিকার রাখবে না। আর যদি ত্রুটি এমন পর্যায়ের হয়, যার দরুন ভাড়ার পরিমাণ কমে যায় তাহলে ঐ পরিমাণ ভাড়া কম নেওয়া মালিকের দায়িত্ব।
Sharable Link-আলমুহীতুল বুরহানী ১১/৩৬৪; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৭৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৩/১৪৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪৫৫; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যাহ, মাদ্দা ৫২৯
আমার একটি লাইব্রেরী আছে। অনেক সময় কোনো বইয়ের পূর্বের সংস্করণ শেষ হয়ে যায় বা পূর্বের কোনো বই নতুন করে ছাপা হয়। ফলে তখন অনেক টাকার প্রয়োজন হয়। আবার বই কতটুক বিক্রি হবে সে ব্যাপারেও ঝুঁকি থাকে। অগ্রিম বেশ কিছু কপি বিক্রয় হয়ে গেলে এ ঝুঁকি কিছুটা কমে যায়। এজাতীয় ক্ষেত্রে অনেক লাইব্রেরী কম মূল্যে অগ্রিম বই বিক্রয় করে দেয়। ৩০-৩৫% পর্যন্তও ছাড় দিয়ে থাকে তারা। গ্রাহকগণও এর প্রতি আগ্রহী থাকে। তাই হুজুরের কাছে জানতে চাই, এভাবে অগ্রিম বেচা-কেনা করতে কোনো সমস্যা আছে কি না? এবং শরীয়তের দৃষ্টিতে এক্ষেত্রে কী কী বিষয় লক্ষণীয়?
বই ছাপানোর পূর্বে তার অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় কিছু শর্তসাপেক্ষে জায়েয। তা হল-
১. বই সুনির্ধারিত হতে হবে।
২. কাগজ, ছাপা ও বাঁধাই ইত্যাদির গুণগত মান উল্লেখ থাকতে হবে।
৩. বই দেওয়ার সময় ও স্থান নির্ধারণ করে নিতে হবে। আর লেনদেনের সময় তা উভয়পক্ষের দস্তখতসহ দু’জন সাক্ষীর সামনে একটি লিখিত চুক্তি করে নিবে। এক্ষেত্রে অগ্রিম মূল্য নেয়ার কারণে মূল্য কিছুটা কমও হতে পারে।
Sharable Link-আলমুহীতুল বুরহানী ১০/৩৬৩; বাদায়েউস সনায়ে ৪/৪৪৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/২০৭; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যা, মাদ্দা : ৩৯০, ৩৯২