আমরা জানি, আল্লাহ তাআলা ছাড়া আর কাউকে সিজদা করা জায়েয নেই। কিন্তু সেদিন আমাদের এলাকার এক লোক বললেন, ভক্তি-শ্রদ্ধার জন্য পীর সাহেবকে বা মাজারে সিজদা করা জায়েয। তার এ কথা কতটুকু ঠিক? দয়া করে কুরআন-হাদীসের দলিল-প্রমাণসহ জানাবেন।
আমরা জানি, আল্লাহ তাআলা ছাড়া আর কাউকে সিজদা করা জায়েয নেই। কিন্তু সেদিন আমাদের এলাকার এক লোক বললেন, ভক্তি-শ্রদ্ধার জন্য পীর সাহেবকে বা মাজারে সিজদা করা জায়েয। তার এ কথা কতটুকু ঠিক? দয়া করে কুরআন-হাদীসের দলিল-প্রমাণসহ জানাবেন।
সিজদার উপযুক্ত একমাত্র আল্লাহ তাআলা। আল্লাহ তাআলা ছাড়া অন্য কাউকে সিজদা করা সম্পূর্ণ হারাম। তা যে উদ্দেশ্যই হোক না কেন। আর ইবাদতের উদ্দেশ্যে কাউকে সিজদা করলে সে মুশরিক হয়ে যাবে। গাইরুল্লাহকে সিজদা করা যে হারাম তা কুরআন-হাদীসের অকাট্য দলিলাদি দ্বারা প্রমাণিত। অতএব যারা বলে, ভক্তি-শ্রদ্ধার উদ্দেশ্যে পীর সাহেবকে বা মাজারে সিজদা করা জায়েয তাদের এ কথা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর। এটি হারাম হওয়ার ব্যাপারে নিম্নে কুরআন-হাদীসের কয়েকটি দলিল উল্লেখ করা হল।
১। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-
وَّ اَنَّ الْمَسٰجِدَ لِلّٰهِ فَلَا تَدْعُوْا مَعَ اللّٰهِ اَحَدًاۙ
নিশ্চয়ই সিজদার স্থানসমূহের মালিক আল্লাহ তাআলা। অতএব তোমরা তার সাথে কারো ইবাদত করো না। -সূরা জিন (৭২) : ১৮
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় প্রসিদ্ধ তাবেয়ী সায়ীদ ইবনে জুবায়ের, আতা, তলক ইবনে হাবীব প্রমুখ মুফাসসিরগণ বলেন, উক্ত আয়াতের সিজদার স্থানসমূহ দ্বারা উদ্দেশ্য সিজদার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। অর্থাৎ এগুলোর মালিক আল্লাহ। অতএব এগুলো দ্বারা আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে সিজদা করো না। -তাফসীরে ইবনে কাসীর ৪/৬৭৬; তাফসীরে কুরতুবী ১৯/১৪; তাফসীরে রুহুল মাআনী ২৯/৯১
২। হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তাআলার অভিশাপ ইহুদী-নাসারাদের উপর। তারা তাদের নবীগণের কবরকে সিজদার স্থান বানিয়েছে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৩৯০
৩। হযরত জুনদুব রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাঁর ইন্তেকালের তিনদিন আগে বলতে শুনেছি, সাবধান! তোমরা কবরকে সিজদার স্থান বানিও না। আমি তোমাদেরকে তা থেকে কঠোরভাবে নিষেধ করছি। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৫৩২
৪। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কারো জন্য (আল্লাহ ছাড়া) অন্য কাউকে সিজদা করা জায়েয নেই। যদি কারো জন্য জায়েয হত অন্য কাউকে সিজদা করা তাহলে আমি স্ত্রীকে আদেশ করতাম স্বামীকে সিজদা করতে। কেননা আল্লাহ তাআলা স্ত্রীর উপর স্বামীর অনেক বড় হক ন্যস্ত করেছেন। -সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৪১৬৫; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১২৬১৪
সুতরাং ভক্তি-শ্রদ্ধার নিয়তেও মাযার বা কোনো ব্যক্তিকে সিজদা করা জায়েয নেই; সম্পূর্ণ হারাম।
-সূরা জিন : ১৮; তাফসীরে ইবনে কাসীর ৪/৬৭৬; তাফসীরে কুরতুবী ১৯/১৪; তাফসীরে রুহুল মাআনী ২৯/৯১; সহীহ বুখারী, হাদীস ১৩৯০; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৫৩২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৮/২৫৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৬৮; আলইলাম বিকাওয়াতিইল ইসলাম ২/৩৪৮; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৪২৫; রদ্দুল মুহতার ৬/৩৮৩; আলফাওযুল কাবীর ৬৫; তাকবিয়াতুল ঈমান ৫২Sharable Link
আমার এক পায়ে ব্যান্ডেজ। অযু করার সময় ব্যান্ডেজের উপর মাসাহ করি। জানার বিষয় হল, ঐ ব্যান্ডেজের উপর মোজা পরলে কি তার উপর মাসাহ করা যাবে?
হাঁ, ব্যান্ডেজের উপর মাসাহ করে এবং অন্য পা ধুয়ে চামড়া জাতীয় মোজা পরা হলে পরবর্তী অযুর সময় থেকে উক্ত মোজার উপর মাসাহ করা যাবে। মাসাহর নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে গেলে উভয় মোজা খুলে পুণরায় ব্যান্ডেজের উপর মাসাহ করে নিবে এবং অপর পা ধুয়ে নিবে।
-শরহুয যিয়াদাত ১/১৫৮; রদ্দুল মুহতার ১/২৮০; আলমুহীতুল বুরহানী ১/৩৫৭; কিতাবুল আসল ১/৭৩; শরহুল মুনইয়াহ ১২৩Sharable Link
একদিন মসজিদে গিয়ে দেখি, ইমাম সাহেব রুকুতে চলে গিয়েছেন। তখন আমি রুকুতে গিয়ে এক তাসবীহ পড়ার আগেই ইমাম সাহেব দাঁড়িয়ে যান। এ অবস্থায় আমি ঐ রাকাত পেয়েছি বলে ধর্তব্য হবে কি?
রাকাত পাওয়ার জন্য রুকু পাওয়া জরুরি। আর রুকু পাওয়ার জন্য অল্প সময় ইমামের সাথে রুকুতে শরিক হওয়াই যথেষ্ট। ইমামকে এক তাসবীহ পরিমাণ পাওয়া জরুরি নয়। তবে ইমামের সাথে রুকুতে শরিক হওয়ার পর অন্তত এক তাসবীহ পরিমাণ বিলম্ব করে উঠবে।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ২৫৩৪; শরহুল মুনইয়াহ ৩০৫; হালবাতুল মুজাল্লী ২/১২৬Sharable Link
আমি এক মসজিদের ইমাম। ফজর ও আসরের নামাযের সালাম ফিরানোর পর কখনো দেখি, আমার বরাবর পেছনের কাতারে মাসবুক ব্যক্তি নামায পড়ছে। এ অবস্থায় আমার জন্য মুসল্লিদের দিকে মুখ করে বসা জায়েয হবে কি না?
মাসবুক যদি দ্বিতীয় কাতারে বা আরো পিছনে দাঁড়িয়ে নামায পড়ে আর তার সামনে কেউ থাকে তবে ইমাম ঐ বরাবর মুখ করে বসতে পারবেন। এক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা হবে না। কিন্তু মাসবুকের সামনে কোনো আড়াল না থাকলে তার বরাবর মুখ করে বসা মাকরূহ
হবে। কেননা নামাযির সামনে কোনো আড়াল না থাকলে তার বরাবর মুখ করে বসা বা দাঁড়ানো মাকরূহ তাহরীমী।
-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৫১১; হালবাতুল মুজাল্লী ২/২২৩; শরহুল মুনইয়াহ ৩৪১; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ১৭১-১৭২Sharable Link
অসুস্থ অবস্থায় আমি একদিন মাগরিবের পর ঘুমিয়ে পড়ি। এতে আমার ইশার নামায কাযা হয়ে যায়। এখন ঐ দিনের ইশা কাযা করার সময় বিতরের নামাযও কি কাযা করা লাগবে?
হাঁ, বিতর নামাযেরও কাযা পড়তে হবে। কেননা বিতর নামায ওয়াজিব। আবু সায়ীদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি বিতরের নামাযের কথা ভুলে যায় বা বিতর পড়া ব্যতীত ঘুমিয়ে পড়ে সে যেন স্মরণ হওয়ামাত্রই বা ঘুম থেকে উঠামাত্রই বিতর পড়ে নেয়।
-মুসনাদে আহমদ, হাদীস ১১২৬৪; জামে তিরমিযী, হাদীস ৪৬৫; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস: ১৪২৬; বাদায়েউস সানায়ে ১/৬০৮; হেদায়া, ফাতহুল কাদীর ১/৩৭২; আলবাহরুর রায়েক ২/৩৮; আততাজনীস ২/৯৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৩৯; রদ্দুল মুহতার ২/৫Sharable Link
নামাযে সিজদা অবস্থায় উভয় হাত যমীনের উপর বিছিয়ে দিলে কি নামাযের কোনো ক্ষতি হয়?
পুরুষের জন্য সিজদা অবস্থায় উভয় বাহু যমীন থেকে পৃথক রাখা সুন্নত। বাহু যমীনে বিছিয়ে রাখা মাকরূহে তাহরীমী। হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা ঠিকভাবে সিজদা কর। (সিজদায় গিয়ে) তোমাদের মধ্যে কেউ যেন তার উভয় বাহুকে বিছিয়ে না দেয় যেমন কুকুর বিছিয়ে দেয়। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৮২২
তবে ওজরের কারণে এমনটি করলে নামাযের ক্ষতি হবে না।
-আলবাহরুর রায়েক ২/২৩; কিতাবুল হুজ্জাহ ১/১৭৯; বাদায়েউস সানায়ে ১/৫০৫; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ১৯২; রদ্দুল মুহতার ১/৬৪৪Sharable Link
গত সপ্তাহে আমরা পাঁচজন জুমার নামাযের জন্য বের হতে বিলম্ব হয়ে যায়। গেটে এসে দেখি, গেট বন্ধ। ঐ সময়ে বের হওয়ার মতো আমাদের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। তাই আমরা ছাত্রাবাসের ভিতরেই খুতবা পড়ে জুমা আদায় করি। জানার বিষয় হল, আমাদের জুমা আদায় করা কি ঠিক হয়েছে? জুমা আদায়ের জন্য মসজিদ হওয়া কি শর্ত?
হাঁ, আপনাদের জুআ আদায় করা সহীহ হয়েছে। মসজিদ ছাড়াও জুমা পড়া সহীহ। অবশ্য বিনা ওজরে মসজিদের জুমা ত্যাগ করা গুনাহ। প্রকাশ থাকে যে, জুমার প্রথম আযানের পর পরই প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করে মসজিদে উপস্থিত হওয়া জরুরি। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, (তরজমা) হে ঈমানদারগণ! যখন জুমার দিনে (জুমার) নামাযের জন্য আযান দেওয়া হয় তখন তোমরা আল্লাহর যিকিরের দিকে ধাবিত হও। -সূরা জুম‘আ (৬২) ৯
আযানের পর অন্য কোনো কাজে ব্যস্ত হওয়া জায়েয নয়। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনাদের বিলম্ব করা ঠিক হয়নি।
-শরহুল মুনইয়াহ ৫৫১; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৫৪১; আলবাহরুর রায়েক ২/১৫১Sharable Link
গতকাল আসরের নামাযে প্রথম বৈঠকে তাশাহহুদ পড়ার সময় ভুলে আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ছুটে যায়। এজন্য আমি সাহু সিজদা করেছি। জানার বিষয় হল, ঐ অংশটুকু ছুটে যাওয়ার কারণে আমার উপর কি সাহু সিজদা ওয়াজিব ছিল? যদি ওয়াজিব না হয় তাহলে আমি সাহু সিজদা করার কারণে আমার নামায হয়েছে কি না?
হাঁ, ঐ অংশ ছুটে যাওয়ার কারণে আপনার জিম্মায় সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছিল। তাশাহহুদের সামান্য অংশ ছুটে গেলেও সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি সাহু সিজদা দিয়ে ঠিকই করেছেন।
-আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩১৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২৭; হাশিয়াতুত তহতাবী আলালমারাকী ১৩৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৭৭; ফাতহুল কাদীর ১/৪৩৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৯৯; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৬৬Sharable Link
একদিন আমি আযান দেওয়ার সময় أشهد أن لا إله إلا الله বলার আগে أشهد أن محمدا رسول الله বলে ফেলি। কিন্তু ভুল বুঝতে পেরে তা ঠিক করে পড়ে নিই। জানার বিষয় হল, এভাবে দোহরানোর কারণে আযান শুদ্ধ হয়েছে কি?
হাঁ, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে أشهد أن لا إله إلا الله থেকে আবার দোহরিয়ে বলা নিয়মসম্মতই হয়েছে। এর দ্বারা ঐ আযান শুদ্ধ হয়ে গেছে।
-ফাতাওয়া খানিয়া ১/৭৯; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৬৯; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৯৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৪৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৬; শরহুল মুনইয়াহ ৩৭৫; আলবাহরুর রায়েক ১/২৫৮; রদ্দুল মুহতার ১/৩৮৯Sharable Link
অনেক সময় এমন হয় যে, ইমাম সাহেব তাশাহহুদ শেষ করে দাঁড়িয়ে গেছেন। কিন্তু আমার এখনো শেষ হয়নি। এখন আমার করণীয় কী? তাশাহহুদ শেষ করে দাঁড়াব, নাকি তাশাহহুদ অপূর্ণ রেখেই ইমাম সাহেবের সাথে দাঁড়িয়ে যাব?
তাশাহহুদ পড়া ইমাম-মুকতাদি সকলের উপর ওয়াজিব। তাই মুকতাদীর তাশাহহুদ শেষ না হলে তার কর্তব্য হল, তাশাহহুদ পূর্ণ করা। এক্ষেত্রে ইমাম দাঁড়িয়ে গেলেও মুকতাদি দাঁড়াবে না; বরং তাশাহহুদ পূর্ণ করে দাঁড়াবে।
-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৫৯; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৯৬; শরহুল মুনইয়াহ ৫২৭; রদ্দুল মুহতার ১/৪৭০Sharable Link
আমি ইমাম সাহেবের পিছনে ফজরের নামায পড়ছিলাম। ইমাম সাহেব রুকুতে গেলে আমিও তার সাথে রুকুতে যাই। কিন্তু ইমাম সাহেব রুকু থেকে উঠে পড়েছেন মনে করে দাঁড়িয়ে যাই। উঠে দেখি ইমাম সাহেব রুকুতেই আছেন। তখন আমি আবার রুকু করে ইমামের সাথে শরিক হই। নামাযের পর এক ভাই বললেন, আপনার কর্তব্য ছিল ইমাম
সাহেব রুকু থেকে উঠা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকা। দ্বিতীয়বার শরিক হওয়ার কারণে আপনার রুকু দুটি হয়ে গেছে। জানার বিষয় হল, তার কথা কি ঠিক?
না, ঐ ব্যক্তির কথা ঠিক নয়। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার জন্য পুনরায় রুকুতে যাওয়া ঠিকই হয়েছে। কারণ ইমাম রুকু বা সিজদা থেকে উঠে পড়েছে মনে করে মুক্তাদী উঠে পড়লে তখন মুক্তাদীর জন্য ইমামের অনুসরণে পুনরায় রুকু বা সিজদায় ইমামের সাথে শরিক হওয়াই নিয়ম। এক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে বা বসে অপেক্ষা করতে হবে- এ কথা ঠিক নয়। আর এ পরিস্থিতিতে পুণরায় শরিক হওয়ার দ্বারা দুই রুকু হয়ে যায়- এ কথাও ঠিক নয়।
-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৫৯; শরহুল মুনইয়াহ ৫২৭; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/৫৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৯০; রদ্দুল মুহতার ১/৪৯৬Sharable Link
নামাযে মহিলাদের জন্য কান ঢেকে রাখতে হবে কি না?
হাঁ, মহিলাদের জন্য নামাযে কান ঢেকে রাখা আবশ্যক। কেননা, নামাযে মহিলাদের কান সতরের অন্তর্ভুক্ত। তাই নামাযের মধ্যে কোনো কানের চার ভাগের একভাগ তিন তাসবীহ পরিমাণ সময় খোলা থাকলে নামায নষ্ট হয়ে যাবে।
-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৯; শরহুল মুনইয়াহ ২১৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৭৪; আলবাহরুর রায়েক ১/২৭১; রদ্দুল মুহতার ১/৪০৮, ৪০৯Sharable Link
আমি একজন হাফেযে কুরআন। তারাবীর নামায পড়ানোর সময় পরের রাকাতের কেরাত স্মরণ করার জন্য সিজদায় গিয়ে কিছু কুরআন পড়ি। আমার জানার বিষয় হল, এতে কি আমার নামাযের কোনো ক্ষতি হয়?
রুকু-সিজদায় কুরআন পড়া নিষেধ। সহীহ মুসলিমে আছে, হযরত আলী রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে রুকু বা সিজদায় কুরআন পড়তে নিষেধ করেছেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৪৮০
তাই ফকীহগণ বলেছেন, রুকু-সিজদায় ইচ্ছাকৃত কুরআন পড়লে নামায মাকরূহ তাহরীমী হবে। তাই এ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। আর যদি ভুলে পড়া হয় এবং তা এক আয়াত বা তার বেশি হয় তাহলে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে।
-সহীহ মুসলিম, হাদীস ৪৮০; শরহুল মুনইয়াহ ৩৫৭, ৪৬০; আলবাহরুর রায়েক ২/৯৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩১৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৭৭; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ২৫০; রদ্দুল মুহতার ১/৬৫৪, হালবাতুল মুজাল্লী ২/৪৪৪Sharable Link
ফজরের নামাযের সময় আমি মসজিদের এক কোণে সুন্নত পড়ছিলাম। ইমাম সাহেব সূরা ফাতিহার পর সূরা আলিফ-লাম-মীম সাজদা পড়েন। সিজদার আয়াত পড়ে সিজদা আদায় করেন। আমি ইমাম সাহেবের সঙ্গে সিজদার আয়াতে শরিক হতে পারিনি। তবে ঐ রাকাতেই রুকুর আগে শরিক হয়েছি। জানার বিষয় হল, আমার কি পরবর্তীতে তিলাওয়াতে সিজদা আদায় করতে হবে?
না, পরবর্তীতে আপনাকে ঐ সিজদা আদায় করতে হবে না। কারণ প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি ইমামের সাথে ঐ রাকাতেই শরিক হওয়ার কারণে কিরাত ও তিলাওয়াতে সিজদা সবই পেয়েছেন বলে ধর্তব্য হবে।
-শরহুল মুনইয়াহ ৫০১; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ২৬৮; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৩৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৮৫; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৭৫; আদ্দুররুল মুখতার ২/১১০Sharable Link
আমরা জানি, মাগরিব, ইশা ও ফজরের নামায যদি কেউ একা একা পড়ে তাহলে তার উচ্চস্বরে কেরাত পড়ারও অবকাশ আছে। আস্তে আস্তে পড়ারও অবকাশ আছে। তো জোরে কিরাত পড়ার সময় তাকবীর এবং তাসমীও (سمع الله لمن حمده) কি জোরে বলবে?
মাগরিব, ইশা ও ফজরে একাকী নামায আদায়কারী উচ্চস্বরে কিরাত পড়লেও তাকবীর ও তাসমী আস্তেই পড়বে। জোরে পড়বে না। কারণ একাকী নামায আদায়কারীর জন্য উচ্চস্বরে তাকবীর বলার কোনো প্রয়োজন নেই।
-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৫৪; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৩৬; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৩২৯; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৭৫Sharable Link
গত রমযানে একদিন আমি বিতর নামায পড়াতে গিয়ে ভুলক্রমে দুআয়ে কুনূত না পড়ে রুকুতে চলে যাই। মুসল্লিরা সাথে সাথে পেছন থেকে লোকমা দিলে আমি তৎক্ষণাৎ উঠে দুআয়ে কুনূত পড়ি এবং নামায শেষে সাহু সিজদা দেই। সালামের পর মুসল্লিদের কেউ কেউ বলল, সাহু সিজদা দেওয়ার প্রয়োজন ছিল না। কারণ আমাদের দুআয়ে কুনূত ছুটেনি এবং রুকুতে গিয়েও তিন তাসবীহ পরিমাণ বিলম্ব হয়নি। হুজুরের কাছে জানতে চাই, তাদের কথা কি ঠিক? আমার জন্য কি সিজদায়ে সাহু করা ঠিক হয়েছে?
প্রশ্নোক্তক্ষেত্রে আপনার জন্য সিজদায়ে সাহু করা ঠিকই হয়েছে। সিজদায়ে সাহুর প্রয়োজন ছিল না- প্রশ্নের এ কথা ঠিক নয়। কেননা দুআয়ে কুনূত না পড়ে রুকুতে চলে যাওয়ার কারণেই সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হয়ে গেছে। তাই রুকু থেকে উঠে দুআ কুনূত পড়লেও সাহু সিজদা দিতে হবে। রুকুতে তিন তাসবীহ বিলম্ব হয়েছে কি না তা এক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয় নয়। কুনূত না পড়ে রুকুতে চলে গেলে নিয়ম হল, কুনূতের জন্য আর না দাঁড়ানো। তাই এক্ষেত্রে মুক্তাদিগণ ইমামকে দাঁড়াতে বাধ্য করবে না। বরং যথানিয়মে অবশিষ্ট নামায পূর্ণ করে শেষে সিজদায়ে সাহু করবে।
-বাদায়েউস সানায়ে ১/৬১৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১১১; আলবাহরুর রায়েক ২/৪২; রদ্দুল মুহতার ২/৯-১০Sharable Link
নামাযে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হওয়ার পর কখনো আমি সিজদায়ে সাহু করতে ভুলে যাই এবং সালাম ফিরিয়ে ফেলি। সালাম ফিরানোর পর মনে পড়ে। এ অবস্থায় আমার করণীয় কি?
সাহু সিজদা ওয়াজিব হওয়ার পর ভুলবশত সিজদা না করে সালাম ফিরিয়ে ফেললে কর্তব্য হল, সালামের পর নামায পরিপন্থী কোনো কাজ না করে থাকলে সিজদায়ে সাহুর কথা মনে পড়ার সাথে সাথে সিজদা করে নিবে এবং যথানিয়মে তাশাহহুদ দুরূদ ও দুআ মাসূরা পড়ে নামায শেষ করবে। তবে সালাম
ফিরানোর পর নামায পরিপন্থী কোনো কাজ করলে যেমন কথা বলে ফেললে সাহু সিজদা করার সুযোগ থাকে না। এক্ষেত্রে আদায়কৃত নামায পুণরায় পড়ে নেওয়া ওয়াজিব হবে।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৪৫১২; কিতাবুল আসল ১/২০০; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩২৪, ৩২৫; রদ্দুল মুহতার ২/৯১Sharable Link
গত রমযানে আমাদের মসজিদে এক হাফেয সাহেব তারাবীর নামাযে ভুলে দ্বিতীয় রাকাতে না বসে দাঁড়িয়ে যান এবং অতিরিক্ত দু রাকাত মিলিয়ে মোট চার রাকাত পড়ে সাহু সিজদার মাধ্যমে নামায শেষ করেন। নামায শেষে এ নিয়ে মুসল্লিদের মাঝে মতবিরোধ দেখা দেয়। কেউ কেউ বলে যে, সাহু সিজদার দ্বারা চার রাকাতই তারাবী হিসেবে সহীহ হয়েছে। কেউ বলে যে, শুরুর দু রাকাত সহীহ হয়েছে, শেষের দু রাকাত নয়। আবার কেউ বলে, শেষের দু রাকাত তারাবী হিসেবে ধরা হবে।
উল্লেখ্য, যারা চার রাকাতই তারাবী হিসেবে ধরা হবে বলেছে তারা বলে যে, থানভী রাহ. নাকি ইমদাদুল ফাতাওয়াতে এক্ষেত্রে চার রাকাতই তারাবী হবে বলে ফতোয়া দিয়েছেন।
দয়া করে মাসআলাটির সঠিক সমাধান জানিয়ে আমাদের বিবাদ নিরসন করবেন।
তারাবীর নামাযে দু রাকাতের পর না বসে আরো দু রাকাত মিলিয়ে নিলে বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী শুধু শেষের দু রাকাতই তারাবী হিসেবে গণ্য হবে। সুতরাং এক্ষেত্রে প্রথম দু রাকাত পুনরায় পড়ে নিতে হবে এবং এতে তিলাওয়াতকৃত অংশও খতম তারাবীর ক্ষেত্রে পড়ে নিতে হবে। আর ঐ রাত অতিবাহিত হয়ে গেলে শুধু প্রথম দু রাকাতে তিলাওয়াতকৃত অংশ পরবর্তী তারাবীতে পড়ে নিবে। ঐ দু রাকাতের কাযা করতে হবে না।
আর প্রশ্নে ইমদাদুল ফাতাওয়ার যে উদ্ধৃতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেখানে হাকীমুল উম্মত থানভী রাহ. ফকীহ আবুল লাইসের মত অনুযায়ী চার রাকাতই তারাবী হিসেবে সহীহ হবে বলে ফতওয়া দিয়েছেন। এটা কোনো কোনো হানাফী ফকীহর মত। তবে অধিকাংশ ফকীহ এ মত অনুযায়ী ফতোয়া দেননি; বরং সতর্কতামূলক তারা শেষের দু রাকাতই তারাবী হিসেবে সহীহ হওয়ার ফতোয়া দিয়েছেন। থানভী রাহ. নিজেও ইমদাদুল ফাতাওয়ায় এ বিষয়ের আরেকটি প্রশ্নের জবাবে শুধু দু রাকাতই সহীহ হবে বলে ফতোয়া দিয়েছেন। দেখুন : ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/৩৩০
আর প্রশ্নোল্লিখিত চার রাকাত হয়ে যাওয়ার কথাটি তিনি এক বিশেষ পরিস্থিতিতে ‘দুর্বল মতের’ ভিত্তিতে বলেছিলেন। এটা সাধারণ অবস্থার ফতোয়া নয়। এ কথাগুলো আল্লামা যফর আহমদ উসমানী রাহ. ইমদাদুল আহকামে (১/৬১৮-৬২০) থানভী রাহ.-এর বরাতে উল্লেখ করেছেন।
প্রকাশ থাকে যে, ইমাম যদি তারাবীর দু রাকাতে বসতে ভুলে যায় তাহলে এক্ষেত্রে নিয়ম হল, তৃতীয় রাকাতের জন্য সিজদা করার আগ পর্যন্ত স্মরণ হলে সাথে সাথে বসে পড়বেন এবং সাহু সিজদা করে নামায শেষ করবেন। তখন এ দু রাকাত নামায তারাবী হিসেবে সহীহ হবে।
-ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৩৯-২৪০, ১/২৩৬; আলমুহীতুল বুরহানী ২/২৫৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৩০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১১৭-১১৮; ইমদাদুল আহকাম ১/৬১৯-৬২০Sharable Link
ঈদের নামাযে ইমাম সাহেব প্রথম রাকাতে অতিরিক্ত তাকবীর বলার আগে কিরাত পড়ে ফেললে বা রুকুও করে ফেললে এক্ষেত্রে করণীয় কী? দয়া করে জানাবেন।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সূরা ফাতিহার পর অন্য সূরা মিলানোর আগে স্মরণ হলে সাথে সাথে অতিরিক্ত তাকবীরগুলো বলে নিবে এবং পুনরায় সূরা ফাতিহা পড়বে।
আর যদি অন্য সূরা মিলানোর পর স্মরণ হয় তাহলে কিরাত শেষ করে রুকুর আগে অতিরিক্ত তাকবীরগুলো বলবে। এরপর রুকু করবে এবং উভয় অবস্থায়ই নির্ধারিত সময় তাকবীর আদায় না করার কারণে সাহু সিজদা দিয়ে নামায শেষ করবে।
আর যদি রুকুতে চলে যাওয়ার পর তাকবীরের কথা স্মরণ হয় তাহলে তখন আর তাকবীর বলবে না; বরং নামায শেষে সাহু সিজদা করবে।
-হালবাতুল মুজাল্লী শরহু মুনইয়াতুল মুসল্লী ২/৫৫০; শরহুল মুনইয়াহ ৫৭২; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪০৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৯৯Sharable Link
জানাযা নামাযে সালাম ফিরানোর সময় লক্ষ্য করা যায় যে, অনেকে এক সালামে এক হাত করে দুই সালামে দুই হাত ছেড়ে দেয়। এর সঠিক পদ্ধতি দলিলসহ বর্ণনা করলে উপকৃত হব।
জানাযা নামাযে সালাম ফিরানোর সময় হাত কখন ছাড়বে- এ সম্পর্কে ফিকহবিদগণ থেকে দুই ধরনের মত রয়েছে। একটি মত হল, চতুর্থ তাকবীর বলার পর উভয় হাত ছেড়ে দিবে এবং এরপর সালাম ফিরাবে। আরেকটি মত হল, উভয় সালাম ফিরানো পর্যন্ত হাত বেঁধে রাখবে। সালাম ফিরানোর পর উভয় হাত ছেড়ে দিবে।
সুতরাং জানাযা নামাযে সালাম ফিরানোর সময় উপরোক্ত যে কোনো পদ্ধতিই অবলম্বন করা যেতে পারে।
আর প্রশ্নে যে পদ্ধতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে ফিকহী দৃষ্টিকোণ থেকে তা ঠিক মনে হয় না।
-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২২৫; আসসিআয়াহ ২/১৫৯; হেদায়া, ফাতহুল কাদীর ১/২৫০; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৮৭-৪৮৮Sharable Link
ক) মায়্যেতের গোসলদাতা ও দাফনকার্য সম্পাদনকারী যেমন, কবর খননকারী, বাঁশ কর্তনকারী ইত্যাদি লোকদেরকে কাজের পারিশ্রমিক হিসেবে কোনো বিনিময় দেওয়া যাবে কি না?
খ) মায়্যেতের পরিধেয় কাপড়-চোপড় ও অন্যান্য আসবাবপত্রের হুকুম কী?
গ) মাইয়্যেতের দাফনকার্য শেষ হলে কবরের পাশে অবস্থান করে কী কী আমল করা যেতে পারে?
ক) হাঁ, মায়্যেতের গোসলদাতা, কবর খননকারী ও তার সহযোগীদেরকে বিনিময় দেওয়া জায়েয। তবে এসব কাজ বিনিময়হীনভাবে করাই উত্তম।
খ) মায়্যেতের পরিধেয় কাপড়, আসবাবপত্রও মীরাসের অন্তর্ভুক্ত। তাই এগুলোও মীরাসের নিয়ম অনুযায়ী বণ্টন করতে হবে। তবে সকল ওয়ারিশ যদি স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগুলো দান করে দিতে চায় তবে তাও জায়েয আছে।
গ) মায়্যেতের দাফন শেষে কবরের পাশে অবস্থান করে নিম্নের আমলগুলো
করার কথা হাদীসে এসেছে।
১। মৃতের মাগফিরাতের জন্য এবং কবরের সওয়ালের জওয়াবে অটল থাকার জন্য দুআ করা। হযরত উসমান রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মৃতের দাফনকার্য সম্পন্ন করতেন তখন কবরের পাশে দাঁড়িয়ে বলতেন, তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য মাগফিরাত কামনা করো এবং (সওয়ালের-জওয়াবে) অটল থাকার জন্য দুআ করো। কেননা এখনই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩২১৩
২। মৃতের মাথার দিকে অবস্থান করে সূরা বাকারার শুরু এবং শেষের কিছু অংশ তিলাওয়াত করবে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. লাশ দাফনের পর তার মাথার দিকে অবস্থান করে সূরা বাকারার শুরু এবং শেষের অংশ পড়া পছন্দ করতেন। -সুনানে বায়হাকী ৪/৫৬
Sharable Link
আমার গ্রামের বাড়ি খুলনার বাগেরহাটে। আমার প্রশ্ন হল, আমাদের এলাকার সামাজিক কবরস্থানটা মুর্দা দাফন দ্বারা পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। এখন কি এ কবরস্থানে মাটি সংস্কার করে আবার মুর্দা দাফন করা যাবে? এ বিষয়টি নিয়ে এলাকায় মতানৈক্য দেখা দিয়েছে। কেউ বলছে, কবরস্থানে মাটি সংস্কার করে আবার দাফন করা যাবে। আবার কেউ বলছে, এখন প্রত্যেকে নিজ নিজ পারিবারিক কবরস্থানের ব্যবস্থা করে সেখানে দাফন করবে। দয়া করে এ বিষয়ে শরীয়তের হুকুম জানিয়ে বাধিত করবেন। আমরা শরয়ী সমাধানের প্রতীক্ষায় আছি।
কবর পুরাতন হওয়ার কারণে লাশ মাটি হয়ে যাওয়ার প্রবল ধারণা হলে সেখানে নতুন কবর দেওয়া জায়েয আছে। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনাদের ঐ কবরস্থানের পুরাতন কবরের এলাকায় সংস্কার করে সেখানে নতুন করে কবর দেওয়া যাবে। অবশ্য কবর খননের সময় সেখানে কোনো হাড্ডি ইত্যাদি পাওয়া গেলে তা কবরের এক পাশে বা ভিন্ন স্থানে দাফন করে দিবে।
তবে কম সময়ের কবর, যেগুলোতে লাশ মাটি হয়ে যাওয়ার প্রবল ধারণা হয়নি সেখানে বিশেষ ওজর ছাড়া নতুন করে কবর দেওয়া যাবে না।
-তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫৯৯; আলবাহরুর রায়েক ২/১৯৫; রদ্দুল মুহতার ২/২৩৩Sharable Link
জনৈক ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর যথারীতি জানাযা-দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এরপর কিছু মুসল্লি বলাবলি করছে যে, ইমাম সাহেব জানাযার নামাযে তিন তাকবীর বলেছেন। ইমাম সাহেব নিশ্চিতভাবে বলছেন যে, তিনি চার তাকবীরই বলেছেন। এভাবে তিন দিন গত হয়েছে। এখন এ ব্যাপারে আমাদের কোনো করণীয় আছে কি না জানাবেন।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে চার তাকবীর বলা হয়েছে, এ ব্যাপারে ইমাম সাহেব যেহেতু নিশ্চিত তাই তাঁর কথাই গ্রহণযোগ্য হবে এবং উক্ত জানাযা নামায সহীহ হয়েছে বলেই ধর্তব্য হবে। এছাড়া মুসল্লিদের মাঝে সংশয় থাকলে তৎক্ষণাতই বলা কর্তব্য ছিল। তা না করে দাফনের পর বলাটা আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়। সুতরাং এখন এ নিয়ে বিতর্ক ও সন্দেহে লিপ্ত হওয়া ঠিক হবে না।
-আলবাহরুর রায়েক ২/১০৯; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১০৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/৯৪Sharable Link
অসুস্থতার কারণে আমি গত রমযানে দুটি রোযা রাখতে পারিনি। গতকাল সকাল দশটার দিকে হঠাৎ আমার ঐ কাযা রোযার কথা মনে পড়ে। যেহেতু আমি তখন পর্যন্ত কিছু খাইনি তাই তখনই কাযা রোযার নিয়ত করে নিই। জানার বিষয় হল, আমার ঐ রোযাটি কি কাযা রোযা হিসেবে ধর্তব্য হবে?
কাযা রোযার জন্য সুবহে সাদিকের আগে নিয়ত করা শর্ত। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যেহেতু সুবহে সাদিকের আগে নিয়ত করেননি তাই ঐ রোযা নফল হয়েছে। তা দ্বারা আপনার কাযা রোযা আদায় হয়নি।
-কিতাবুল আসল ২/১৬৪; আলবাহরুর রায়েক ২/২৬২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৫১; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৪৩; বাদায়েউস সানায়ে ২/২২৯; রদ্দুল মুহতার ২/৩৮০Sharable Link
রমযানের শেষ দশকে সুন্নত ইতিকাফকারী ব্যক্তি জানাযার নামাযে শরিক হতে পারবে কি না?
সুন্নত ইতিকাফকারী জানাযার নামাযের জন্য মসজিদের বাইরে গেলে তার ইতিকাফ ভেঙ্গে যাবে। হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত আয়েশা রা. বলেন, ইতিকাফকারীর জন্য নিয়ম হল, অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাবে না এবং (মসজিদের বাইরে) জানাযার নামাযে শরিক হবে না। ...-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৪৬৫
প্রকাশ থাকে যে, ইতিকাফকারীর জন্য কোনো কারণে বাইরে অনুষ্ঠিত জানাযায় শরিক হওয়া আবশ্যক হলে সে যেতে পারবে তবে এ কারণে তার ঐ দিনের ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যাবে এবং সুন্নত ইতিকাফও থাকবে না। এক্ষেত্রে তাকে একদিন রোযা অবস্থায় ইতিকাফের কাযা করতে হবে।
-আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৮০ কিতাবুল আছল ২/১৮৩; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২২২; রদ্দুল মুহতার ২/৪৪৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১২; আলমাবসূত, সারাখসী ৩/১১৮Sharable Link
নূরুল হক আমার প্রতিবেশী। সে যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত। কিন্তু সে অত্যন্ত ভদ্র মানুষ। আমি তাকে যাকাতের টাকা দিলে সে লজ্জা পাবে। এখন যদি আমি তার বুঝমান ছেলেকে ঈদ-বখশিশ হিসেবে যাকাতের টাকা দেই তাহলে কি আমার যাকাত আদায় হবে?
নূরুল হক যেহেতু যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত তাই তার নাবালেগ বুঝমান ছেলেকে যাকাতের নিয়তে ঈদ বখশিশ হিসেবে টাকা দিলেও তা দ্বারা যাকাত আদায় হয়ে যাবে।
-ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/৮৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯০; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাদ্দুর ১/৪৩১; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৫৬Sharable Link
আমার এক গরীব প্রতিবেশীর কাছ থেকে আমি দশ হাজার টাকা পাই। কয়েক বছর হয়ে গেল, কিন্তু তিনি টাকাটা দিতে পারছেন না। আমি যদি যাকাত আদায়ের নিয়তে ঐ দশ
হাজার টাকা মাফ করে দেই তাহলে কি আমার যাকাত আদায় হবে?
না, এভাবে ঋণ মাফ করার দ্বারা যাকাত আদায় হবে না। কেননা, যাকাত আদায়ের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তিকে যাকাতের মাল নগদে মালিক বানিয়ে দেওয়া শর্ত। সুতরাং ঐ ব্যক্তি যদি বাস্তবেই যাকাত গ্রহণের যোগ্য হয় তাহলে আপনি যাকাত বাবদ তাকে নগদ দশ হাজার টাকা দিয়ে দিতে পারবেন। অতপর তার থেকে আপনার ঋণ উসুল করে নিতে পারবেন।
-কিতাবুল আছল ২/১২৬; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/৩১; রদ্দুল মুহতার ২/২৭০-২৭১Sharable Link
হজ্ব সম্পন্ন করার পর সাধারণত হাজ্বী সাহেবগণ মাথা মুণ্ডিয়ে থাকেন বা চুল ছোট করে থাকেন। এটা করা কি জরুরি? জরুরি হয়ে থাকলে বার্ধক্যের কারণে যাদের মাথার চুল পড়ে টাক হয়ে গেছে তাদের করণীয় কী?
হাজ্বী সাহেবদের জন্য কুরবানীর পর মাথা মুণ্ডানো বা চুল ছোট করা ওয়াজিব। কারো মাথা আগে থেকে মুণ্ডানো থাকলে অথবা পুরো মাথা টাক থাকলে হালাল হওয়ার জন্য মাথার উপর ক্ষুর ঘুরিয়ে নিতে হবে। প্রখ্যাত তাবেয়ী হযরত মাসরুক রাহ.-কে জিজ্ঞাসা করা হয়, যে ব্যক্তি উমরাহ করে মাথা মুণ্ডিয়ে ফেলেছে অতপর হজ্ব করেছে (সে হালাল হওয়ার জন্য কী করবে?) তিনি উত্তরে বললেন, মাথায় ক্ষুর ঘুরিয়ে নেবে।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১৩৭৯৯; বাদায়েউস সানায়ে ২/৩২৮; আলবাহরুর রায়েক ২/৩৪৬; আলমাবসূত, সারাখসী ৪/৭০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৮০; আদ্দুররুল মুখতার ২/৫১৫, ৪৬৮Sharable Link
আমি ছোট বেলায় আমার আব্বার সঙ্গে হজ্ব করেছি। এখন আমি বড় হয়েছি এবং আমার কাছে হজ্বে যাওয়ার মতো সম্পদ আছে। প্রশ্ন হল, আমার ছোটবেলার ঐ হজ্বটিই কি ফরয হজ্ব হিসেবে আদায় হয়ে গেছে, নাকি আবার হজ্ব করতে হবে? দয়া করে জানাবেন।
আপনার ছোটবেলার হজ্বটি নফল হিসেবে আদায় হয়েছে। তাই আপনাকে ফরয হজ্ব আদায় করতে হবে।
ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে বালক হজ্ব করবে অতপর প্রাপ্তবয়স্ক হবে তাকে আরেকটি হজ্ব করতে হবে ।
-আলমুজামুল আওসাত, তবারানী, হাদীস ৭২৫২; মাজমাউয যাওয়াইদ ৩/৪৭৩ (হাদীস ৫২৫৪); মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১৫১০৫; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৯৩; আলবাহরুল আমীক ১/৩৬২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১৭Sharable Link
আমি একবার খুব জটিল রোগে আক্রান্ত হলাম। তখন মানত করলাম যে, আল্লাহ তাআলা যদি আমাকে সুস্থ করেন তাহলে আমি হজ্ব করব। তখন আমার আর্থিক অবস্থা এমন ছিল যে, আমার উপর হজ্ব ফরয। প্রশ্ন হল, আমার জন্য কি পৃথক দুটি হজ্ব করা জরুরি? নাকি শুধু ফরয হজ্ব আদায় করলেই হবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ফরয হজ্ব আদায় করলেই চলবে। মানতের জন্য পৃথকভাবে আরেকটি হজ্ব আদায় করতে হবে না। অবশ্য আপনি যদি ফরয হজ্ব ছাড়াও ভিন্ন একটি মানতের হজ্ব করবেন বলে সুনির্দিষ্টভাবে নিয়ত করে থাকেন তবে মানতের জন্য পৃথক হজ্ব করতে হবে। এক্ষেত্রে ফরয হজ্ব দ্বারা মানতের হজ্ব আদায় হবে না।
-আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৪৯৩; ফাতহুল কাদীর ৩/৮৯; আলবাহরুর রায়েক ২/৩১০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৬৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৬৭৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৭৭; মানাসিক, মোল্লা আলী কারী ৪৬৭Sharable Link