কিছুদিন আমি ফজর নামাযের কেরাত পড়ার সময় ভুলে
ان الله يحب المحسنين
এর স্থলে
ان الله لا يحب المسلمين
পড়েছি। এখন জানার বিষয় হল, আমার উক্ত নামায সহীহ হয়েছে কি? না হয়ে থাকলে এখন আমার করণীয় কী?
কিছুদিন আমি ফজর নামাযের কেরাত পড়ার সময় ভুলে
ان الله يحب المحسنين
এর স্থলে
ان الله لا يحب المسلمين
পড়েছি। এখন জানার বিষয় হল, আমার উক্ত নামায সহীহ হয়েছে কি? না হয়ে থাকলে এখন আমার করণীয় কী?
প্রশ্নোক্ত ভুলের কারণে আপনার নামায নষ্ট হয়ে গেছে। উক্ত নামায পুনরায় পড়ে নেওয়া জরুরি।
আলমুহীতুল বুরহানী ২/৭৩; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৫৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৮১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১১৮Sharable Link
(ক) আমার আম্মা আমার মরহুম পিতার মীরাসসূত্রে বাড়ির জমির ১১ কড়া (২২ শতাংশ) জমির মালিক হয়েছেন। জায়গাটির বর্তমান মূল্য ৬-৭ লক্ষ টাকা। এছাড়া আম্মার আর কোনো সম্পদ, অলংকারাদি বা নগদ অর্থ নেই। আম্মার ভরণ-পোষণ আমরা ছেলেরাই করি। উপরোক্ত জায়গাটি বর্তমানে খালি পড়ে আছে। চারদিকে দেয়াল দিয়ে ঘেরাও করে রাখা হয়েছে। জানার বিষয় এই যে, আমার আম্মার উপর কি হজ্ব করা ফরয?
(খ) আমি আমার পিতার মীরাসসূত্রে ৫ কাঠা জমির মালিক হয়েছি। জমিটি আমি ৯ লক্ষ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছি। চুক্তি হয়েছিল, ৫ মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করবে। কিন্তু ৪ মাসে ৬ লক্ষ টাকা পরিশোধের পর বাকি টাকা এখনও পরিশোধ করেনি। এক বছরেরও বেশি সময় দিচ্ছি-দিব বলে পার করে দেয়।
এখন জিজ্ঞাসার বিষয় হল, আমাকে উক্ত বকেয়া ৩ লক্ষ টাকার যাকাত আদায় করতে হবে কি না? দিলে কখন আদায় করব? উসূল হওয়ার পর বিগত সময়ের যাকাত দিতে হবে কি?
(ক) প্রশ্নপত্রের বিবরণ ও মৌখিক বর্ণনা অনুযায়ী আপনার আম্মার উপর হজ্ব ফরয হয়েছে। কারণ মীরাসসূত্রে পাওয়া জমিটি প্রয়োজনের অতিরিক্ত, তার বসবাস ও ভরণ-পোষণে লাগছে না। আর সেটির মূল্যও হজ্ব আদায়ের জন্য। সুতরাং আপনার আম্মাকে ফরয হজ্ব আদায় করতে হবে।
(খ) প্রশ্নে বর্ণিত ক্ষেত্রে জমির মূল্য বাবদ বকেয়া ৩ লক্ষ টাকা হাতে পাওয়ার আগে তার উপর যাকাত ফরয নয়। হস্তগত হওয়ার পর এক বছর অতিবাহিত হলে তার যাকাত দিতে হবে। তবে আপনি যদি পূর্ব থেকে যাকাতের নেসাবের মালিক হয়ে থাকেন তাহলে আপনার যাকাত-বর্ষ শেষ হওয়ার পর অন্যান্য সম্পদের সাথে মিলিয়ে ঐ টাকারও যাকাত আদায় করতে হবে। এক্ষেত্রে ঐ টাকার উপর আলাদাভাবে এক বছর অতিবাহিত হওয়া লাগবে না।
(ক) বাদায়েউস সানায়ে ২/২৯৮; ফাতহুল কাদীর ২/৩২২; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৯৩; মানাসিক মোল্লা আলী কারী ৪৪; আলমাসালিক ১/২৬৩; আলবাহরুল আমীক ১/৩৮৪; গুনইয়াতুন নাসিক ২০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১৭ (খ) শরহু মুখতাছারিত তাহাবী ২/৩৪১; বাদায়েউস সানায়ে ২/৯০; আততাজরীদ ৩/১২৬২; তুহফাতুল ফুকাহা ১/২৯৪; ফাতাওয়া দারুল উলূম ৬/১৩৫; আহসানুল ফাতাওয়া ৪/২৭১Sharable Link
আমাদের দেশে অনেক লোককে দেখা যায়, আবা পরিধান করে, যা টাখনুর নিচে ঝুলে থাকে। আমরা জানি, টাখনুর নিচে কাপড় পরা নিষেধ। আবাও কি এ হুকুমের অন্তর্ভুক্ত?
হ্যাঁ, আবা এবং সকল ধরনের পোষাক পুরুষের জন্য টাখনু গিরার নিচে ঝুলিয়ে পরা নাজায়েয। কেননা হাদীস শরীফে লুঙ্গি, জামা, পাগড়ি এবং চাদরকে টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে পরতে নিষেধ করা হয়েছে। (সুনানে নাসাঈ ২/২৫৪; তবারানী ৮/২৩২)
অন্য হাদীসে আছে, টাখনুর নিচে যতটুকু ঝুলিয়ে পরবে তা জাহান্নামে যাবে।
(সুনানে আবু দাউদ ৫৬৬)-সহীহ বুখারী ২/৮৬১; ফাতহুল বারী ১০/২৬৮; সুনানে নাসাঈ ২/২৫৪; আওনুল মাবুদ ১১/১০৩; তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ৪/১২০; তবারানী ৮/২৩২Sharable Link
বিতরের নামাযে দুআয়ে কুনূত পড়ার আগে হাত তুলে আবার হাত বাঁধতে হয়। আমার জানার বিষয় হল, বাঁধা থেকে হাত উঠাব, না হাত ছেড়ে দিয়ে পুনরায় হাত বাঁধার জন্য হাত উঠাব? জানিয়ে বাধিত করবেন।
দুআ কুনূতের তাকবীরের জন্য হাত উঠানোর সময় হাত ছেড়ে দিয়ে তারপর উঠানোর কোনো নিয়ম আছে বলে আমাদের জানা নেই। তাই সরাসরি হাত উঠাবে, হাত ছাড়বে না।
Sharable Link
জনৈক ব্যক্তি বিবাহের কয়েক মাস পর কয়েকজন লোকের সামনে স্ত্রীর অনুপস্থিতে তাকে তালাক গ্রহণের ক্ষমতা প্রদান করে। তালাক গ্রহণের ক্ষমতা প্রদানের বিষয়টি স্ত্রীর কাছে পৌঁছার আগেই মহিলাটি নিজ থেকে তালাকে বায়েন গ্রহণ করে।
জানতে চাই, ঐ মহিলার তালাক গ্রহণ করা সহীহ হয়েছে কি না?
উল্লেখ্য যে, তাদের বিবাহের কাবীননামার ১৮ নং ধারায় লেখা আছে যে, না, তালাকের অধিকার দেওয়া হয়নি।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বাস্তবেই যদি মহিলাটি তালাক গ্রহণের অধিকার দেওয়ার বিষয়টি অবগত হওয়ার আগেই তালাক গ্রহণ করে থাকে তাহলে তার তালাক গ্রহণ সহীহ হয়নি এবং ঐ তালাক কার্যকর হয়নি। কারণ স্ত্রী তালাক গ্রহণের অনুমতি না জেনে তালাক গ্রহণ করলে তা কার্যকর হয় না।
-ফাতাওয়া খানিয়া ১/৫২১; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৩২৫Sharable Link
আমাদের হজ্ব-কাফেলার মুআল্লিম সাহেব যিলহজ্বের ১১ ও ১২ তারিখ যোহরের পর বেশি ভিড় হবে বলে সকাল ৮/৯ টার সময় রমী করিয়ে আমাদের নিয়ে মক্কায় চলে যান। জানতে চাই, সকাল বেলা এভাবে রমী করার দ্বারা তা আদায় হয়েছে কি না এবং আদায় না হলে কোনো জরিমানা আসবে কি না?
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আমল ও আছারে সাহাবার আলোকে অধিকাংশ ফকীহ একমত যে, ১১ ও ১২ যিলহজ্ব সূর্য ঢলার আগ পর্যন্ত রমীর সময় হয় না। তাই এ সময় রমী করলে ওয়াজিব আদায় হবে না। সুতরাং কেউ আগে রমী করলে তাকে আবার সূর্য ঢলার পর রমী করতে হবে। অন্যথায় জরিমানা দম দিতে হবে।
অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনাদের উপর জরিমানা দম ওয়াজিব হয়েছে।
-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১২৯৯, ১৩০০; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১৪৭৯৬; বাদায়েউস সানায়ে ২/৩২৪; ফাতহুল কাদীর ২/৩৯৩, ৩৯২; আলবাহরুর রায়েক ২/৩৪৮; মানাসিকে মোল্লা আলী কারী ২৩৭; গুনইয়াতুন নাসিক ১৮১; আলমুগনী, ইবনে কুদামা ৫/৩২৮; আলমাজমু’ ৮/২১১; যখীরাহ ৩/২৭৫; আলবাহরুল আমীক ৪/১৮৭৩Sharable Link
ছেলেদের সামনের চুল বড় রেখে পিছনের চুল ছোট রাখা কিংবা সম্পূর্ণ মাথার চুল সমান রেখে সাইডে ক্ষুর দিয়ে কাটা জায়েয আছে কি?
মাথার সামনের দিকে চুল বড় রেখে পিছন বা মাথার পাশের চুল ছোট করে রাখা যদিও নাজায়েয নয় তবে তা নেক লোকদের রীতিবিরোধী। তাই এ থেকে বিরত থাকা উচিত। (কিতাবুত তারাজ্জুল, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল ৭৭; বাযলুল মাজহূদ ১৭/৮৩)
আর পুরো মাথার চুল সমান করে কেটে ঘাড় ও কানের পাশের চুলের মাথা সমান করার জন্য ক্ষুর ব্যবহার করার অবকাশ আছে। (ফাতহুল বারী ১০/৩৭৮; তালিফাতে রশীদিয়া ৪৮৪; ইমদাদুল আহকাম ৪/৩৩৪)
উল্লেখ্য, চুলের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করা যেতে পারে। ১. বাবরি চুল রাখা। অর্থাৎ কানের লতি পর্যন্ত ঘাড়ের অর্ধেক পর্যন্ত, অধিক লম্বা হয়ে গেলে কাধের কাছাকাছি পর্যন্ত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিকাংশ সময় বাবরি চুল রেখেছেন।
২. পুরো মাথার চুল মুন্ডিয়ে ফেলা।
৩. পুরো মাথার চুল সমানভাবে ছোট করে রাখা।
Sharable Link
জনৈক ব্যক্তি এক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এক লক্ষ টাকা মূল্যের একটি জমি জামানত রেখে দুই লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছিল। এখন সে জমিটি বিক্রি করতে চাচ্ছে এবং তার পরিবর্তে এক লক্ষ টাকার স্বর্ণালংকার জামানত রাখতে চাচ্ছে। তার জন্য শরীয়তে এই সুযোগ আছে কি?
হ্যাঁ, উক্ত প্রতিষ্ঠান মেনে নিলে জমির পরিবর্তে স্বর্ণালংকার জামানত রাখতে পারবে।
- হেদায়া ৪/৫৫৭; বাদায়েউস সানায়ে ৫/২৪৬; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৫২৪; জামেউর রুমুয ২/১৯৩; মাজাল্লাহ, পৃ. ১৩৫, মাদ্দাহ : ৭১২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৪৬২; মাজমাউল আনহুর ৪/২৯৪; শরহুল মাজাল্লাহ ৩/১৮৯Sharable Link
মোমেনশাহীর দুই ব্যক্তি ঢাকায় চাকরি করেন। তারা শুক্রবার সকাল ১১ টায় মোমেনশাহীর উদ্দেশে রওনা হয়েছিল। রাস্তায় জুমআর নামায পড়তে পারেননি। বেলা ৩টায় বাড়ি পৌঁছে দু’জন মিলে জামাতের সাথে যোহরের নামায আদায় করেছেন। প্রশ্ন হল, তাদের জন্য জামাতের সাথে যোহরের নামায পড়া ঠিক হয়েছে নাকি একাকী পড়া উচিত ছিল? জানালে খুশি হব।
তাদের যোহরের নামায আদায় হয়েছে। তবে তাদের জন্য যোহরের নামায একাকী পড়া উত্তম ছিল। কারণ জুমার জামাত না পেলে যোহর একাকী আদায় করা উত্তম।
-কিতাবুল আসল ১/৩৬৫; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৪৭৩; আলবাহরুর রায়েক ২/১৫৪; হাশিয়াতুত তহতাবী আলালমারাকী ২৮৪; রদ্দুল মুহতার ২/১৫৭Sharable Link
মসজিদের ইমাম সাহেব বললেন, তাকবীরে তাশরীক যেমন পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামাযের পর পড়তে হয় তেমনি ঈদের জামাতের পরও পড়তে হয়। মাসআলাটি সঠিক কি না জানালে খুশি হব।
ঈদের জামাতের পর তাকবীরে তাশরীক পড়া জায়েয আছে। তবে এ সময় তা পড়া ওয়াজিব নয়।
-মারাকিল ফালাহ ২৯৬; আলবাহরুর রায়েক ২/১৬৫; আননাহরুল ফায়েক ১/৩৭৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২১৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১০৪; শরহুল মুনইয়াহ ৫৭৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫২; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাদ্দুর ১/৩৫৭; রদ্দুল মুহতার ২/১৮০; কেফায়াতুল মুফতী ৩/৩০৫; ফাতাওয়া রহীমিয়া ৬/১৮১Sharable Link
বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীর একান্তে সাক্ষাতের পূর্বেই যদি স্বামী মৃত্যুবরণ করে এবং মহরও নির্ধারিত থাকে তাহলে কি স্ত্রী পূর্ণ মহর পাবে, না নির্ধারিত মহরের অর্ধেক পাবে?
নির্জনবাসের আগেও স্বামী-স্ত্রীর কোনো একজন মৃত্যু বরণ করলে স্ত্রী নির্ধারিত মহরের পুরোটাই পাবে।
-ফাতাওয়া খানিয়া ১/৩৬; বাদায়েউস সানায়ে ২/৫৮৪, ৫৮৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩০৩; রদ্দুল মুহতার ৩/১০২Sharable Link
আমি এক হেফযখানার খেদমতে আছি। আমাদের মাদরাসাটি মসজিদের একেবারে নিকটে অবস্থিত। আজান হলে স্পষ্ট শোনা যায়। জানার বিষয় হল, সবক চলাকালে যখন মসজিদে আযান হয় তখন ছাত্রদের তেলাওয়াত বন্ধ করে আযানের জওয়াব দেওয়া জরুরি কি না।
সাধারণ অবস্থায় তেলাওয়াতের সময় আযান শুনলে, তেলাওয়াত মওকুফ করে আযানের জওয়াব দেওয়াই উত্তম। কিন্তু যারা কুরআন মজীদ শেখা বা শেখানোয় ব্যস্ত থাকে তারা তাদের পড়াশেনা অব্যাহত রাখতে পারে। এ অবস্থায় তাদের আযানের জওয়াব না দেওয়ারও অবকাশ রয়েছে। সকল ছাত্রের পড়া বন্ধ করে আযানের জওয়াব দেওয়ানোর প্রয়োজন নেই।
-আসসিআয়াহ ২/৫১; রদ্দুল মুহতার ১/৩৯৬; আলবাহরুর রায়েক ১/২৫৯Sharable Link
তেলাওয়াতের সময় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নাম এলে তেলাওয়াত বন্ধ করে দরূদ পড়া উচিত নাকি তেলাওয়াত শেষ করে দরূদ পড়া উচিত? জানিয়ে বাধিত করবেন।
কুরআন মজীদের আয়াতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নাম এলে তৎক্ষণাৎ তেলাওয়াতকারী ও শ্রবণকারী কারো উপর দরূদ পড়া ওয়াজিব নয়। এক্ষেত্রে তেলাওয়াত চালিয়ে যাওয়াই নিয়ম। তবে তেলাওয়াত শেষে দরূদ পড়ে নেওয়া উত্তম।
-রদ্দুল মুহতার ১/৫১৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩১৬; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৪২২; আলমুহীতুল বুরহানী ৭/৫১০Sharable Link
আমাদের এলাকায় কয়েক বিঘা জমি নিয়ে চিংড়ি মাছের ঘের করা হয়। সেখানে মাছ চাষ করা হয়। আর ঘেরের উপর মুরগীর ফার্ম তৈরি করা হয়। মুরগীর বিষ্ঠা ঐ মাছের খাদ্য। প্রশ্ন হল, ঐ মাছের হুকুম কী? তা কী হালাল? জানিয়ে বাধিত করবেন।
চিংড়ি মাছের চাষ করা হয় অনেক বড় জায়গাজুড়ে বেশি পানিতে। তাই মুরগীর বিষ্ঠা খাওয়ালেও মাছের মধ্যে কোনো দুর্গন্ধ হয় না এবং তার স্বাদও পরিবর্তন হয় না। সুতরাং এই চাষের চিংড়ি খাওয়া জায়েয। বিষ্ঠা খাওয়ানোর কারণে চাষের মাছ খাওয়া নিষিদ্ধ হবে না।
-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ১২/৪৩২, হাদীস : ২৫০৯৮; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৪৪; রদ্দুল মুহতার ৬/৩০৬, ৩৪০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৮৯; মুগনীল মুহতাজ ৪/৩৮৪; হাওয়াশি শারওয়ানী ১২/৩২১; আযযখীরাহ ৪/১০৪; আলমুগনী ১৩/৩২৮Sharable Link
আমার এক বন্ধু তার কামরায় ফরয নামায পড়ছিল। আমি বাইরে থেকে এসে দরজায় আওয়াজ করি। সে নামযারত অবস্থায় এক কাতার পরিমাণ হেঁটে এসে এক হাতে এক দফায় দরজা খুলে নিজ জায়গায় চলে গিয়ে নামায পুরো করে। একজন আলেম বলেছেন, তার নামায সহীহ হয়েছে। সত্যিই কি সহীহ হয়েছে? উল্লেখ্য, আমার ঐ বন্ধু পশ্চিম দিক থেকে সরেনি। কারণ তার রুমের দরজা পশ্চিম দিকে ছিল।
প্রশ্নে বর্ণনা অনুযায়ী ঐ ব্যক্তি নামায পরিপন্থী অন্য কিছু না করে থাকলে শুধু ঐভাবে দরজা খোলা দ্বারা তার নামায নষ্ট হয়নি। কারণ সে এক হাত ব্যবহার করে এক দফায় দরজা খুলেছে। অতএব ওই আলেম সাহেবের কথা সঠিক। তবে কোনো ওজর ছাড়া নামাযে এ ধরনের সামান্য কাজেও লিপ্ত হওয়া ঠিক নয়।
-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৫৮৫, ৫৮৮; বাদায়েউস সানায়ে ১/৫৫৩; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ১৭৭; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৬৬; আদ্দুররুল মুখতার ১/৬২৮Sharable Link
ফিকহের কিতাবে ঘোড়ার গোশত খাওয়াকে মাকরূহ বলা হয়েছে। কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ঘোড়া জিহাদের কাজে ব্যবহার হয়। তাই সাধারণভাবে খাওয়া শুরু করলে জিহাদের কাজে ব্যাঘাত ঘটবে।
বর্তমানে জিহাদে ঘোড়ার ব্যবহার প্রায় নেই বললেই চলে। বিশেষ করে আমাদের দেশে তো নেই-ই। তাহলে ঘোড়ার গোশত খাওয়া বর্তমানে জায়েয হবে কি? এ ব্যাপারে একজন মুফতী সাহেবকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ঘোড়া সম্মানিত হওয়ার কারণে তা খাওয়া মাকরুহ। সঠিক সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।
বর্তমানে যুদ্ধক্ষেত্রে যদিও ব্যাপকভাবে ঘোড়ার ব্যবহার হয় না, কিন্তু তা একেবারে বন্ধও হয়ে যায়নি। তাই পুলিশ কেন্দ্রগুলোতে ঘোড়ার রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় এবং নিয়মিত তার প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়।
তাছাড়া হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত খালিদ ইবনে ওলীদ রা. বলেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোড়ার গোশত নিষেধ করেছেন। (সুনানে নাসাঈ ৮/২০৬; সুনানে আবু দাউদ ২/৫৩১)
নিষিদ্ধতার মূল সূত্র হচ্ছে উক্ত হাদীস। আর জিহাদের কাজে ব্যবহার হওয়ার বিষয়টি একটি প্রাসঙ্গিক দলিলমাত্র। অতএব জিহাদের কাজে ঘোড়ার ব্যবহার একেবারে বন্ধ হয়ে গেলেও তা খাওয়া উপরোক্ত হাদীসের কারণে মাকরূহ তানযীহি থাকবে।
-আহকামুল কুরআন, জাসসাস ৩/১৮৩, ১৮৪; সহীহ বুখারী ২/৬০৬; সহীহ মুসলিম ২/১৫০; সুনানে আবু দাউদ ২/৫৩১; দারা কুতনী ৪/২৮৭; উমদাতুল কারী ১৭/২৪৮; বাযলুল মাজহূদ ১৬/১১৩; বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৪৯; ইলাউস সুনান ১৭/১৪৩; ফাতহুল কাদীর ৮/৪১৯; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলালমারাকী ১৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯০; মুলতাকাল আবহুর ৪/১৬২; আযযখীরাহ ৪/১০১; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩০৫Sharable Link
এক ব্যক্তি ফরয নামাযে রত বন্ধুকে কিছু জিজ্ঞাসা করলে সে হাতের ইশারায় অথবা মাথা নেড়ে উত্তর দিল। এ অবস্থায় তার নামায সহীহ হয়েছে কি?
নামায অবস্থায় এক হাত অথবা মাথা দ্বারা ইশারা করে উত্তর দিলে নামায নষ্ট হয় না। তবে নামাযের হালতে এভাবে ইশারায় উত্তর দেওয়াও ঠিক নয়। কুরআন মজীদ এবং হাদীস শরীফে নামাযে খুশু-খুযুর প্রতি খুব গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তাই বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া নামাযের হালতে কারো কথার জবাব দেওয়ার চেষ্টা করা এবং ইচ্ছাকৃত হাত বা মাথা নাড়ানো থেকে বিরত থাকা কর্তব্য।
কুরআন মজীদে নামাযের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যারা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ স্থির রাখে এবং এদিক-সেদিক ভ্রুক্ষেপ না করে তাদেরকে মুমিন বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
হযরত আবু যর রা. থেকে বর্ণিত হাদীস শরীফে আছে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নামাযরত ব্যক্তি যতক্ষণ এদিক সেদিক ভ্রুক্ষেপ না করে ততক্ষণ আল্লাহর (বিশেষ) রহমত তার প্রতি থাকে। আর যখন সে অন্য দিকে ভ্রুক্ষেপ করে তখন আল্লাহর (বিশেষ) রহমত তার থেকে সরে যায়। (সুনানে আবু দাউদ ১/১৩১)
সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব রাহ. এক ব্যক্তিকে নামাযরত অবস্থায় দাঁড়িতে হাত বুলাতে দেখে বললেন, তার অন্তরে যদি খুশু থাকত তবে তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ স্থির থাকত। (মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ২/২৬৬, হাদীস : ৩৩০৮)
প্রকাশ থাকে যে, নামাযরত ব্যক্তির মনোযোগ নষ্ট হয় এমন কোনো কাজ করা অন্যায়। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া তাকে কিছু জিজ্ঞাসা করা এবং জবাব দিতে বাধ্য করা গুনাহর কাজ। এ থেকে বিরত থাকা জরুরি।
-সুনানে আবু দাউদ ১/১৩১-১৩৩; তাসফীরে ইবনে কাসীর ৪/৪৪৫; জামে তিরমিযী ১/৪৮, ৫০, ৫১; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৩/৫৩৩-৫৩৪; হাশিয়াতুত তহতাবী আলালমারাকী ১৯২; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৩৯৫; বাদায়েউস সানায়ে ১/৫৪৪; আলবাহরুর রায়েক ২/৮-৯; নুখাবুল আফকার ৪/৪০৯-৪২০; আদ্দুররুল মুখতার ১/৬৪৪Sharable Link
বিভিন্ন মসজিদে ফজর বা অন্য নামাযের সময় নামাযের পাঁচ/দশ মিনিট আগে মসজিদের মাইক থেকে নামাযের আর মাত্র পাঁচ মিনিট বাকি আছে বা এ জাতীয় অন্য কিছু বলে মুসল্লীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। জামাতের কথা আবার স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়।
আমাদের এলাকায় এ নিয়ে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। মুফতী সাহেবের সমীপে আমার প্রশ্ন হল, এটা কী শরীয়তসম্মত?জানিয়ে বাধিত করবেন।
নামাযের জামাতের প্রতি মুসল্লীদেরকে আহবানের জন্য শরীয়ত আযানের বিধান দিয়েছে। সুতরাং অবগতি এবং প্রস্ত্ততির জন্য আযানকেই যথেষ্ট মনে করা উচিত। তাই আযানের পর নামাযের জন্য নিয়মিত মাইকে ডাকাডাকি করা বা ঘোষণা দেওয়া সমীচীন নয়। এ থেকে বিরত থাকা উচিত। হ্যাঁ, মাঝেমধ্যে বিশেষ কোনো পরিস্থিতিতে আযানের পর পুনরায় ঘোষণার প্রয়োজন দেখা দিলে তা জায়েয আছে। কিন্তু কোনো ক্ষেত্রেই এ ধরনের ডাকাডাকিকে নিয়মে পরিণত করা যাবে না। এতে আযানের মাহাত্ম ও গুরুত্ব কমে যাবে এবং নিজ থেকে শরীয়তে নুতন নিয়ম সংযোজন করা হবে, যা বিদআতের অন্তর্ভুক্ত।
-জামে তিরমিযী ১/২৮; আলমাবসূত সারাখসী ১/১৩১; ফাতহুল কাদীর ১/২১৪; আযযখীরাহ ২/৪৭; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৬৭; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/২৪৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৬; আলবাহরুর রায়েক ১/২৬০-২৬১; কিফায়াতুল মুফতী ৩/৫৪; ইমদাদুল মুফতীন ২৬৯; ইমদাদুল আহকাম ১/৪৩৩Sharable Link
আমি একজন চাকরিজীবি। গত কুরবানীর সময় আমার বেতনের ৩০ হাজার টাকা আমার প্রতিষ্ঠানের নিকট বকেয়া ছিল। কুরবানীর সময় আমার নিকট কুরবানী দেওয়ার মতো কোনো নগদ অর্থ বা অন্য কোনো সম্পদ ছিল না। তখন আমি একজন আলেমের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করলাম। তিনি আমাকে বললেন, উক্ত বকেয়া বেতনের কারণে আমার উপর কুরবানী ওয়াজিব। কিন্তু তারপরও তখন আমার নিকট টাকা না থাকার কারণে আমি কুরবানী করিনি।
এখন জানার বিষয় এই যে, উক্ত বকেয়া বেতনের কারণে কি আমার উপর কুরবানী ওয়াজিব ছিল? ওয়াজিব হয়ে থাকলে গত কুরবানীর সময় কুরবানী না করার কারণে আমার কি গুনাহ হয়েছে? বর্তমানে আমার করণীয় কি? আশা করি, সঠিক বিষয়টি জানিয়ে উপকৃত করবেন।
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী আপনার বেতনের বকেয়া ৩০ হাজার টাকার কারণে আপনার উপর কুরবানী ওয়াজিব হয়নি। উক্ত বেতন উসূল হওয়ার পর থেকেই কেবল তার উপর যাকাত-কুরবানী ইত্যাদি বিধান প্রযোজ্য হবে। উসূলের আগে নয়। অতএব বিগত কুরবানীর সময় কুরবানী না করার করারণে আপনি গুনাগার হবেন না। উল্লেখ্য যে, বেতন উসূল হওয়ার আগ পর্যন্ত তা কর্মচারীর একটি হক তথা প্রাপ্য হিসেবে গণ্য হয়। তাতে কর্মচারীর মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয় না। আর যাকাত-কুরবানী ইত্যাদির সম্পর্ক মালিকানার সাথে। হক্বের সাথে নয়।
-বাদায়েউস সানায়ে ২/৯, ৪/৬১; মাবসূত, সারাখসী ২/১৯৬; হেদায়া ৩/২৭৮; আলবাহরুর রায়েক ২/২০৮, ৭/৩০০; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩০৬; রদ্দুল মুহতার ৬/১০; জাদীদ মাসায়েল কে শরঈ আহকাম, মুফতী শফী রাহ. ৬৪-৬৫Sharable Link
অনেককে ফরয নামাযের পর মাথায় হাত রেখে يا قوي পড়তে দেখা যায়। জানতে চাই, এ আমলের কথা নির্ভরযোগ্য কোনো কিতাবে আছে কি?
হাদীস, আছার ও আদইয়া-আযকারের কিতাবসমূহে আমরা প্রশ্নোক্ত আমলের কথা পাইন। এটি কোনো বুযুর্গের পরীক্ষিত আমল হয়ে যাবে। তাই একে মাসনুন মনে করা ঠিক নয়।
Sharable Link
আমরা অনেক সময় আমাদের উস্তাদ এবং মুরববীদের খেদমত করতে চাই। এ উদ্দেশ্যে অযুর সময় তাঁদেরকে পানি ঢেলে দেই। অযু তাঁরা নিজ হাতে করেন। কিন্তু কোনো কোনো সময় তাঁরা অযুর ক্ষেত্রে এতটুকু খেদমত নিতেও পছন্দ করেন না; বরং স্পষ্টভাবে নিষেধ করেন।
জানার বিষয় হল, কোনো ওজর না থাকলে অযুর মধ্যে অন্যের দ্বারা শুধু পানি ঢালার সহযোগিতা নেওয়া কি অনুচিত? শরীয়তের দৃষ্টিতে তা কি অপছন্দনীয়? হাদীস-আছার ও নির্ভরযোগ্য কিতাবাদির বরাতসহ বিষয়টির সমাধান জানালে কৃতজ্ঞ হব।
কোনো ওজর না থাকলেও অন্যের দ্বারা শুধু অযুর পানি ঢেলে দেওয়ার ব্যাপারে সহযোগিতা নেওয়া জায়েয। এটি মাকরূহ নয়। একাধিক সহীহ হাদীসে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিভিন্ন সময় অযুর পানি ঢেলে দেওয়া হত আর তিনি নিজে অযু করতেন। তদ্রূপ অনেক সাহাবী-তাবেয়ী থেকেও অযুর ক্ষেত্রে এ ধরনের সহযোগিতা নেওয়ার কথা হাদীসের কিতাবে আছে।
-সহীহ বুখারী ১/৩০; সুনানে ইবনে মাজাহ ২৩; সুনানে নাসাঈ ১/১২; সহীহ মুসলিম ১/১৩৩, ৪১৬; ইলাউস সুনান ১/১৩৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়অ ১/১১২; আলমুহীতুল বুরহানী ১/১৭৮; আলবাহরুর রায়েক ১/২৮; ফাতহুল কাদীর ১/৩১; আদ্দুররুল মুখতার ১/১২৭; শরহুল মুনইয়াহ ৩১Sharable Link
শুনেছি, কারূনের ধনভান্ডারের চাবি সত্তরটি উট বহন করত। কথাটি কি সহীহ? কুরআন-হাদীসে কি এর প্রমাণ আছে?
কুরআন মজীদে কারূনের ধন সম্পদের ব্যাপারে বলা হয়েছে যে- اتينا من اتينا من الكنوز ما ان مفاتحه كنتوا بالعصبة أولى القوةوة অর্থ : এবং আমি তাকে এত অধিক পরিমাণ ধণভান্ডার দান করেছিলাম যে, তার চাবিসমূহ বহন করতে গিয়ে একদল শক্তিশালী মানুষ ক্লান্ত হয়ে পড়ত। (সূরা কাছাছ : ৭৬) এ সম্পর্কে এরচেয়ে বেশি কিছু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বাণী তথা হাদীস শরীফে পাওয়া যায় না। তাই কুরআন মজীদে যতটুকু আছে এর বেশি কিছু বলা থেকে বিরত থাকাই শ্রেয়। উপরন্তু বিষয়টি যেহেতু কোনো আকীদা বা আমলের সাথেও সম্পৃক্ত নয় তাই উল্লেখিত তথ্যের সত্যাসত্য যাচাইয়ের জন্য সময় ব্যয় করারও প্রয়োজ নেই।
-তাফসীরে ইবনে কাসীর ৩/৬৩৬; তাফসীরে কুরতুবী ১৩/২০৬; তাফসীরে কাবীর ৯/১৫; তাফসীরে তাবারী ১০/১০১; তাফসীরে রুহুল মাআনী ২০/১১১; আদ্দুররুল মানসুর ৫/১৩৬Sharable Link
সূরা বনী ইসরাইলের ৭৯ নং আয়াতে ‘মাকামে মাহমুদ’ দ্বারা কী উদ্দেশ্য? আযানের দুআয়ও শব্দটি আছে। এর দ্বারা কি জান্নাতের বিশেষ কোনো স্তর বোঝানো হয়েছে?
‘মাকামে মাহমুদ’ দ্বারা শাফায়াতে কুবরা (বড় সুপারিশ) উদ্দেশ্য। একাধিক হাদীসের ভাষ্য অনুযায়ী হাশরের দিন হাশরবাসীর জন্য সর্বপ্রথম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর নিকট সুপারিশ করবেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস : ৪৭১৮, ৭৫১০; ফাতহুল বারী ৮/২৫২, ১১/৪৩৫) সর্বপ্রথম শাফাআতের এই মর্যাদা অন্য কোনো নবী প্রাপ্ত হবেন না। আল্লাহ প্রদত্ত সুপারিশের এ অধিকারকেই আয়াত ও হাদীসে মাকামে মাহমুদ বলা হয়েছে। এর দ্বারা জান্নাতের বিশেষ কোনো স্তর বোঝানো হয়নি।
Sharable Link
হজ্ব শিক্ষার একটি বইয়ে পড়েছি, হাজরে আসওয়াদ একটি জান্নাতী পাথর, যা প্রথমে খুব সাদা ছিল। এরপর মানুষের গুনাহের কারণে তা কালো হয়ে যায়। মানুষের গুনাহ যদি তাকে স্পর্শ না করত তাহলে যেকোনো অসুস্থ ব্যক্তি তাকে স্পর্শ করামাত্র সুস্থ হয়ে যেত। আমি জানতে চাই, কথাগুলো সহীহ কি না? হাদীস বা আছারে এ ধরনের কথা আছে কি না?
হ্যাঁ, কথাগুলো সহীহ। সহীহ সূত্রে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হাজরে আসওয়াদ জান্নাতের পাথর। প্রথমে এটি দুধের চেয়েও অধিক সাদা ছিল। পরে মানুষের গুনাহ তাকে কালো করে দিয়েছে। (জামে তিরমিযী, হাদীস : ৮৭৮; সহীহ ইবনে খুযাইমা ৪/২২০; মুসনাদে আহমাদ ১/৩০৭, ৩২৯, ৩৭৩)
অন্য হাদীসে আছে, মানুষের গুনাহ যদি হাজরে আসওয়াদ ও মাকামে ইবরাহীমের পাথরকে স্পর্শ না করত তাহলে যেকোনো অসুস্থ ব্যক্তি তা স্পর্শ করলে (আল্লাহর পক্ষ হতে) তাকে সুস্থতা দান করা হত। (সুনানে কুবরা, বাইহাকী ৫/৭৫; শরহুল মুহাযযাব ৮/৫১)
Sharable Link
আমাদের মসজিদের খতীব সাহেব আল্লাহর মহববতের কথা বলতে গিয়ে বলেন, আল্লাহ তাআলা যখন কোনো বান্দাকে মহববত করেন তখন জিবরাঈল আ.কে ডেকে বলেন যে, আমি অমুক ব্যক্তিকে মহববত করি। তুমিও তাকে মহববত কর। অতপর জিবরাঈল আ. আসমানে ঘোষণা করেন, অমুক ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা মহববত করেন। সুতরাং তোমরা তাকে মহববত কর। তখন আসমানবাসী তাকে মহববত করতে থাকে। অতপর জমিনেও তার প্রতি কবুলিয়ত ঢেলে দেওয়া হয়। আর আল্লাহ তাআলা যখন কোনো বান্দাকে অপছন্দ করেন তখন জিবরাঈল আ.কে ডেকে বলেন, আমি অমুক ব্যক্তিকে অপছন্দ করি। সুতরাং তুমিও তাকে অপছন্দ কর। তখন জিবরাঈল আ. তাকে অপছন্দ করতে থাকেন। অতপর তিনি আসমানবাসীদের কাছে ঘোষণা করেন যে, অমুক ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা অপছন্দ করেন তোমরাও তাকে অপছন্দ করো। তখন আসমানবাসীরাও তাকে অপছন্দ করতে থাকে। অতপর জমিনে তার প্রতি ঘৃণা ছড়িয়ে পড়ে। খতীব সাহেবের উপরোক্ত বয়ান সহীহ কি না এবং সহীহ হলে তার কবুলিয়্যাত ঢেলে দেওয়া হয়-এ কথার অর্থ কী?
হ্যাঁ, খতীব সাহেবের ঐ বক্তব্য সঠিক। সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিমসহ অন্যান্য হাদীসের কিতাবে সহীহ সনদে তা বর্ণিত আছে। আর উক্ত হাদীসে যে কবুলিয়াতের কথা বলা হয়েছে তার অর্থ হল, ভূপৃষ্ঠে তার গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ তাআলার পছন্দনীয় বান্দা হওয়ার কারণে নেককার মানুষও তাকে মহববত করে এবং সর্বজনের অন্তরে তার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালবাসা জন্মে।
-সহীহ বুখারী ৬০৪০; সহীহ মুসলিম ২/৩৩১; ইকমালুল মুলিম ৮/১১৬; ফাতহুল বারী ১০/৪৭৬; জামে তিরমিযী ২/১৪৯; মুসনাদে আহমদ ৫/২৭৯; তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ৫/৪৫৯; তাফসীরে কুরতুবী ৪/৬৯Sharable Link
জনৈক ব্যক্তি বলেছেন, নবীজীর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যমানায় চন্দ্র দ্বি খন্ডিত হয়েছিল এ সম্পর্কে কোনো সহীহ হাদীস নেই। তার এ কথা কি সহীহ? বরাতসহ জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।
ঐ ব্যক্তির কথা ঠিক নয়। চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হওয়ার কথা কুরআন মজীদে ও সহীহ হাদীসে আছে। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে-(তরজমা) কেয়ামত আসন্ন এবং চন্দ্র বিদীর্ণ হয়েছে। তারা যদি কোনো নিদর্শন দেখে তবে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে, এটা তো চিরাগত যাদু। (সূরা কমর : ১-৩) আর এ সম্পর্কে অনেক সহীহ হাদীস রয়েছে। আল্লামা ইবনে কাসীর রাহ. এ সম্পর্কিত হাদীসকে মুতাওয়াতির বলেছেন। (তাফসীরে ইবনে কাসীর ৪/২৭৬) নিম্নে কয়েকটি হাদীস উদ্ধৃত করা হল। ১. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, আমরা মিনায় রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ছিলাম। হঠাৎ চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হল এবং এক খন্ড পাহাড়ের পশ্চাতে চলে গেল ও এক খন্ড পাহাড়ের উপরে রইল। তখন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা সাক্ষী থেকো। (সহীহ বুখারী ১/৫৪৬; সহীহ মুসলিম ২/৩৭৩) ২. হযরত আনাস ইবনে মালেক রা. বর্ণনা করেন, মক্কাবাসীরা রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে কোনো নিদর্শন দেখতে চাইল। তখন আল্লাহ তাআলা চন্দ্রকে দ্বিখন্ডিত করে দেখিয়ে দিলেন। তারা দেখতে পেল যে, চাঁদের দুই খন্ড হেরা পাহাড়ের দুই পার্শ্বে চলে গিয়েছে।
-সহীহ বুখারী ১/৫৪৫; সহীহ মুসলিম ২/৩৭৩; জামে তিরমিযী ৩২৮৫; মুসনাদে আহমদ ৩/১৬৫; দালাইলুন নুবুওয়াহ ২/২৬২-২৬৮; আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া ৩/৩৫৪, ৩৬১; ফাতহুল বারী ৭/২২১; আততাহরীর ওয়াত তানবীর ২৭/১৬৩; আদ্দুররুল মানসুর ৬/১৩২-১৩৪; তাফসীরে কুরতুবী ১৭/১২৫-১২৮; তাফসীরে মাযহারী ৯/১৩৫Sharable Link
জনৈক ওয়ায়েয এক ওয়াজ মাহফিলে বলেছেন, আল্লাহ তাআলার কাছে একশতটি মহববত আছে। তার মধ্যে নিরানববইটি মহববত নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন। আর একটিমাত্র মহববত দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, যার কারণে দুনিয়ায় মানুষ একে অপরকে মহববত করে এবং মা তার সন্তানকে মহববত করে। তেমনি পশুপাখি তাদের শাবক ও ছানাদেরকে মহববত করে। জানিয়ে বাধিত করবেন যে, তার এই কথা কি কোনো সহীহ হাদীসে আছে? বরাতসহ জানালে কৃতজ্ঞ হব।
হ্যাঁ, ওই ব্যক্তির কথার মর্ম সঠিক। সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিমসহ অন্যান্য হাদীসের কিতাবে সহীহ সনদে তা বর্ণিত হয়েছে। তবে হাদীসে মহববত শব্দটি নেই; বরং রহমত শব্দ আছে। নিম্নে হাদীসটির তরজমা দেওয়া হল। হযরত আবু হুরাইরা রা. বলেন, আমি রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তাআলা রহমতকে এক শত ভাগ করেছেন। তন্মধ্য থেকে নিরানববই ভাগ রহমত নিজের কাছে রেখেছেন। আর একভাগ রহমত জমিনে অবতীর্ণ করেছেন। যার কারণে সমস্ত সৃষ্টি একে অপরের প্রতি দয়া করে থাকে। এমনকি ঘোড়া তার পায়ের খুর এই আশংকায় উঠিয়ে রাখে যে, তার দ্বারা বাচ্চা ব্যথা পাবে।
-সহীহ বুখারী ২/৮৮৭Sharable Link
হাশরের ময়দানে সবাই উলঙ্গ অবস্থায় উঠবে। এদের মধ্যে সর্বপ্রথম কাকে বস্ত্র পরিধান করানো হবে?
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম ইবরাহীম আ.কে বস্ত্র পরিধান করানো হবে।
-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৩৩৪৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২৮৬Sharable Link
হাবশার বিখ্যাত বাদশা নাজাসী যিনি মুসলমানদেরকে আশ্রয় দিয়েছিলেন এবং নিজেও মুসলমান হয়েছিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে তাঁর সাক্ষাত হয়েছিল কি? অর্থাৎ তিনি কি সাহাবী? জানতে চাই।
হাবশার বাদশা নাজাশী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবদ্দশায় ইসলাম গ্রহণ করেছেন। তবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে যেহেতু তার সাক্ষাৎ হয়নি তাই তিনি সাহাবী নন; বরং তাবেয়ী। কেননা সাহাবী হওয়ার জন্য শর্ত হল, ঈমানের সাথে জীবদ্দশায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সাক্ষাত হওয়া।
-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২৭২৭৬; আলইসাবা ১/২০৫; শরহুল মুহাযযাব ৫/২১০; উসদুল গাবা ১/১১৮; তুহফাতুল আহওয়াযী ৪/১১৪; রাফউ শানিল হুবশান ১২০Sharable Link