মৃত ব্যক্তির কাছে কুরআন পড়ার বিধান কী এবং কখন পড়বে? বিস্তারিত জানাবেন।
মৃত ব্যক্তির কাছে কুরআন পড়ার বিধান কী এবং কখন পড়বে? বিস্তারিত জানাবেন।
মৃতকে গোসল দেওয়ার পর তার কাছে কুরআন পড়া জায়েয। গোসল দেওয়ার আগে মৃতের অতি নিকটে কুরআন পড়া নিষেধ। অবশ্য চাদর বা অন্য কিছু দিয়ে লাশের আপাদমস্তক ঢাকা থাকলে গোসলের আগেও মৃতের নিকট বসে কুরআন মজীদ তেলাওয়াত করা জায়েয। আর গোসলের আগে লাশ পূর্ণ ঢাকা না থাকলে কাছে তেলাওয়াত করা যাবে না, দূরে তেলাওয়াতের সুযোগ রয়েছে।
Sharable Link-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫৭, শরহুল মুনিয়্যাহ ৫৭৭, আলবাহরুর রায়েক ২/১৭১, আদ্দুররুল মুখতার ২/১৯২
অনেককেই বলতে শুনেছি যে, ইমাম সাহেব যদি ফরয নামাযে প্রথম বৈঠকের কথা ভুলে গিয়ে দাঁড়িয়ে যান, এরপর মুকতাদিগণ লোকমা দেওয়ার কারণে পুনরায় কিয়াম থেকে বৈঠকের দিকে ফিরে আসেন তাহলে পরবর্তী সময়ে সেজদা সাহু করলেও নামায আদায় হবে না। বরং নতুন করে ওই নামায পড়তে হবে। তাদের এ কথা কি সঠিক? জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নোক্ত বক্তব্যটি ঠিক না। প্রথম বৈঠকের কথা ভুলে গিয়ে দাঁড়িয়ে যাওয়ার পর আবার তাশাহহুদের জন্য বসে গেলে বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী নামায ফাসেদ হয় না। প্রকাশ থাকে যে, প্রথম বৈঠক না করে ভুলে দাঁড়িয়ে গেলে নিয়ম হল, তাশাহহুদের জন্য পুনরায় ফিরে আসবে না। বরং স্বাভাবিকভাবে নামায পড়বে এবং শেষে সেজদা সাহুর মাধ্যমে নামায শেষ করবে। অবশ্য দাঁড়ানোর কাছাকাছি না পৌঁছলে সে ক্ষেত্রে বসে যাবে। এ ক্ষেত্রে নামায শেষে সেজদা সাহু আদায় করতে হবে না।
Sharable Link-ইলাউস সুনান ৭/১৭২, তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/১৯৬, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২৭, আলবাহরুর রায়েক ২/১০২, আদ্দুররুল মুখতার ২/৮৩
আমাদের মসজিদের জন্যে আমরা প্রায় পাঁচ বছর আগে এক জোড়া মাইক ক্রয় করেছি। দীর্ঘদিন ব্যবহারের পর বর্তমানে তা সমস্যা শুরু করেছে। আমরা চাচ্ছি সেগুলো বিক্রি করে দিয়ে অর্জিত মূল্যের সাথে জেনারেল ফান্ড থেকে আরো টাকা যোগ করে নতুন মাইক ক্রয় করব। কিন্তু আমাদের মসজিদ কমিটির একজন সদস্য তাতে আপত্তি করছে এবং বলছে যে, এ মাইকগুলো ছদকা করে দিতে হবে। জানতে চাই, তার কথা কতটুকু ঠিক এবং আমাদের এ উদ্যোগ শরীয়তসম্মত কি না?
লোকটির ওই বক্তব্য ঠিক নয়। মাইকগুলো মসজিদের ব্যবহারে না আসলে তা ন্যায্য মূল্যে বিক্রয় করে দেওয়া যাবে এবং এর মূল্য দ্বারা নতুন মাইক ক্রয় করা যাবে। প্রয়োজনে মসজিদ ফান্ড থেকে আরো টাকা যোগ করতে পারবে।
উল্লেখ্য, পুরাতন বা মসজিদে ব্যবহার অনুপযোগী বস্ত্ত বিক্রিযোগ্য হলে তা বিক্রি করে এর মূল্য মসজিদের জন্য সংরক্ষণ করা জরুরি। মসজিদের সামান্য মূল্যের বস্ত্তও মুসল্লী বা অন্য কারো জন্য বিনামূল্যে নিয়ে নেওয়া বৈধ নয়। তেমনি কাউকে সদকা বা হাদিয়া করাও বৈধ নয়। বরং ন্যায্য মূল্য দিয়েই নিতে পারবে।
Sharable Link-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৪৫৮, আলইসআফ ৭৭, ফাতাওয়া তাতার খানিয়া ৫/৮৪৭, আদ্দুররুল মুখতার ৪/৩৫৯, ফাতাওয়া খানিয়া ৩/২৯৩
আমি আমার স্ত্রীকে এই শর্তে ছয় ভরি স্বর্ণের অলংকার প্রদান করি যে, তোমাকে এগুলোর মালিক বানিয়ে দিলাম, তবে শুধু ব্যবহার করতে পারবে। অন্য কাউকে দিতে পারবে না, বিক্রয় করতে পারবে না এবং এগুলো পরিবর্তন করে অন্য কিছু বানাতেও পারবে না। কোন একটি শর্তের খেলাফ করলে তোমার মালিকানা বাতিল বলে গণ্য হবে। আমার উদ্দেশ্য ছিল তাকে অলংকারগুলোর মালিক বানিয়ে দেওয়া, কিন্তু সে যেন নষ্ট করে না ফেলে এজন্য শর্তগুলো লাগিয়েছি। প্রশ্ন [১] তার জন্য শর্তগুলো মেনে চলা জরুরি কিনা এবং কোন শর্তের খেলাফ করলে তার মালিকানা বাতিল হবে কিনা? [২] এভাবে তাকে মালিক বানানোর দ্বারা সে অলংকারগুলোর মালিক হয়েছে কিনা? [৩] এমতাবস্থায় অলংকারগুলোর যাকাত কার উপর ওয়াজিব হবে? স্বামীর উপর না স্ত্রীর উপর? বিষয়গুলোর সমাধান বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী আপনার স্ত্রী অলংকারগুলোর মালিক হয়ে গেছে। প্রশ্নোল্লেখিত কোন শর্তের খেলাফ করলেও তার মালিকানা বাতিল হবে না। তবে স্ত্রীদের যেহেতু স্বামীর বৈধ নির্দেশ মেনে চলা কর্তব্য, তাই এ কথাগুলো সে যথাসম্ভব মেনে চলবে। উল্লেখ্য, অলংকারগুলোর মালিক যেহেতু স্ত্রী তাই সে নেসাবের মালিক হলে এগুলোর যাকাত তার উপরই ফরয।
Sharable Link
একদিন আমাদের এক প্রতিবেশী মৃত্যুবরণ করলে তার জানাযা নামায পড়ে দাফন করার জন্য কবরস্থানের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। আমার বড় চাচা ও আরো কিছু লোক জানাযার আগে আগে হাঁটছিলেন। জানাযার পেছন থেকে একজন তাদেরকে ডেকে বললেন, আপনারা পেছনে আসুন। জানাযার পেছনে চলা সুন্নত। উত্তরে আমার চাচা বললেন, না কোন সমস্যা নেই, জানাযার সামনে ও পেছনে উভয়খানেই চলা যায়। দাফন করে ফিরে আসার সময় তাদের মাঝে এ নিয়ে কিছু কথা কাটাকাটি হয়। আসলে এ ক্ষেত্রে সুন্নত তরীকা কী? জানাযার সামনে হাঁটা না পেছনে হাঁটা? জানিয়ে বাধিত করবেন।
জানাযার সহগামীদের জন্য জানাযার পেছনে চলাই উত্তম। হাদীস শরীফে এ ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। তবে হাঁ, অধিকাংশ লোক পেছনে থাকলে দু-একজনের জন্য জানাযার সামনে চলা নাজায়েজ নয়। এটিও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। কিন্তু স্বাভাবিক নিয়ম হল জানাযার পেছনে চলা, সামনে নয়।
Sharable Link-সহীহ বুখারী ১/১৬৬, শরহু মাআনিল আছার ১/৩১০-৩১২, মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক ৩/৪৪৫-৪৪৬, সুনানে তিরমিযী ১/১৯৬, ফাতহুল কাদীর ২/৯৭, বাদায়েউস সানায়ে ২/৪৪, ৪৫
আমার বয়স ৬০এর উপরে। অনেক আগেই আমার ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে গেছে। গত কয়েক দিন আগে আমার স্বামী সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেছেন। এ ক্ষেত্রে আমি জানি যে, আমাকে স্বামীর মৃত্যুর কারণে চার মাস দশদিন ইদ্দত পালন করতে হবে। কিন্তু এ চার মাস দশ দিন কি ইংরেজি মাস হিসাবে পালন করব নাকি চন্দ্র মাস হিসাবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার স্বামীর মৃত্যু যদি কোন চন্দ্র মাসের প্রথম তারিখে সূর্য অস্ত যাওয়ার আগেই হয়ে থাকে তাহলে আপনি চন্দ্র মাস হিসাবেই চার মাস দশ দিন ইদ্দত পালন করবেন। আর যদি তার মৃত্যু চন্দ্র মাসের প্রথম তারিখে না হয়ে থাকে তাহলে প্রতি মাস পূর্ণ ৩০ দিন হিসাবে মোট ১৩০ দিন ইদ্দত পালন করবেন। উল্লেখ্য যে, ইদ্দত পালনের ক্ষেত্রে ইংরেজি মাসের হিসাব ধর্তব্য নয়।
Sharable Link-আলমুহীতুল বুরহানী ৫/২২৭-২২৮, ফাতহুল কাদীর ৪/১৩৯, ফাতাওয়া খানিয়া ১/৫৫০, রদ্দুল মুহতার ৩/৫০৯
কয়েক দিন আগে এক ছাত্রকে বলতে শুনলাম, টাখ্নুর নিচে লুঙ্গি, পায়জামা এগুলো পরা নিষেধ। কিন্তু পাঞ্জাবী, জুববা এগুলো পরা নিষেধ নয়। হাদীসের মধ্যে টাখ্নুর নিচে শুধু পরতে নিষেধ করা হয়েছে। পরতে নিষেধ করা হয়নি। এরপর তিনি এই হাদীস পড়ে শোনালেন-
ما أسفل من الكعبين من الإزار في النار.
প্রশ্ন হচ্ছে তার কথা কতটুকু সঠিক? জানিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন।
উক্ত ছাত্রের কথা ঠিক নয়। হাদীসে টাখ্নুর নিচে লুঙ্গি পরিধান করতে যেমন নিষেধ করা হয়েছে তেমনি টাখ্নুর নিচে জামা বা অন্য কোন কাপড় পরিধান করতেও নিষেধ করা হয়েছে। হযরত ইবনে উমর রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
الإسبال في الإزار والقميص والعمامة من جر منها شيئا خيلاء لم ينظر الله إليه يوم القيامة.
‘জামা, লুঙ্গি ও পাগড়ীর কোনটি যে ব্যক্তি অহংকারবশত টাখ্নুর নিচে পরিধান করবে কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তার প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না।’ -সুনানে আবু দাউদ ৪০৯৪
সুতরাং পুরুষগণ তাদের পরিধেয় কোন কাপড়ই টাখ্নুর নিচে পরিধান করতে পারবে না।
Sharable Link-সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৭৯১, সহীহ মুসলিম, হাদীস ২০৮৫, ফাতহুল বারী ১০/২৭৩, ১০/২৬৮, আওযাজুল মাসালেক ১৪/১৮৭, ইকমালুল মু’লিম ৬/৫৯৮
...
আপনার প্রশ্নের উত্তর ফোনে জেনে নিন।
Sharable Link
আলকাউসারের প্রশ্নোত্তরের এক জায়গায় পড়েছি যে, তাবলীগ জামাত শহরের ভেতর ১৫ দিন অবস্থানের নিয়ত করলে মুকীম হবে। সেই হিসাবে আমরা যশোর পৌঁছে এলাকায় ১৫ দিনের বেশি অবস্থান করে মুকীম হিসাবে নামায আদায় করে আসছি। আমাদের জামাতটি চিল্লার জামাত। শহরের বাইরের পার্শ্ববর্তী দু’তিন মসজিদে যাবে। সেখান থেকে আবারও শহরে ফিরে আসবে। এরপর চিল্লা শেষে ঢাকা ফিরবে। জানতে চাই, শহর থেকে বাইরের এলাকার মসজিদগুলোতে থাকাবস্থায় আমরা মুকীম না মুসাফির?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনারা শহরের বাইরের মসজিদগুলোতেও মুকীম থাকবেন। কেননা আপনারা যেহেতু শহরে মুকীম ছিলেন তাই শহর থেকে সফরসম দূরত্বে যাওয়ার নিয়তে শহর ত্যাগ না করা পর্যন্ত মুকীমই থাকবেন। শহরের বাইরের মসজিদগুলো যেহেতু সফরসম দূরত্বে নয় তাই সেখানেও আপনারা মুকীম থাকবেন।
Sharable Link-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/২০, রদ্দুল মুহতার ২/১৩২
আমরা জানি যে, কেউ হাঁচি দিয়ে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বললে তার জবাবে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলতে হয়। কিন্তু কেউ যদি একাধিকবার হাঁচি দিয়ে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে তাহলে সে ক্ষেত্রে প্রতিবার ‘আলহামদুলিল্লাহ’-এর জবাবে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলতে হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।
পরপর হাঁচি দিয়ে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বললে উপস্থিত ব্যক্তি তিনবার পর্যন্ত তার হাঁচির জবাব দেবে। কিন্তু তিনবারের অধিক হলে তখন আর জবাব দেওয়া লাগবে না।
Sharable Link-সুনানে আবু দাউদ ২/৩৩০, ফাতহুল বারি ১০/৬২১, আলমুহীতুল বুরহানী ৮/২৩, ফাতাওয়া খানিয়া ৩/ ৪২৪, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩২৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৪১৪
কয়েক দিন হলো জনৈক ইমাম সাহেবের মুখে শুনলাম যে, আমরা অনেকেই রাকাত ধরার জন্য দ্রুত রুকুতে চলে যাই। এ ক্ষেত্রে অনেকেই তাকবীরে তাহরীমা রুকুতে গিয়ে বলি। আবার অনেকে পূর্ণ তাকবীর রুকুতে গিয়ে না বললেও দাঁড়িয়ে তাকবীর শুরু করি কিন্তু শেষ করি রুকুতে গিয়ে। অর্থাৎ দাঁড়ানো অবস্থায় ‘আল্লাহু’ বলি আর রুকু অবস্থায় গিয়ে ‘আকবার’ বলি। এভাবে তাকবীরে তাহরীমা বললে নামায হবে না। বরং পূর্ণ তাকবীরে তাহরীমা দাঁড়িয়েই বলতে হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, উক্ত ইমাম সাহেবের কথা কি সঠিক? জানিয়ে বাধিত করবেন।
হাঁ, উক্ত ইমাম ঠিক বলেছেন। তাকবীরে তাহরীমা পুরোটাই দাঁড়িয়ে বলতে হবে। পূর্ণ তাকবীর কিংবা তাকবীরের কিছু অংশও যদি রুকুতে গিয়ে [অর্থাৎ হাত হাঁটু পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়ার পর] শেষ হয় তাহলে নামায আদায় হবে না।
Sharable Link-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৮৪, আসসিআয়াহ ২/১১০, ফাতহুল কাদীর ১/২৪৩, ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৪৪১, রদ্দুল মুহতার ১/৪৪
অনেক সময় দেখা যায় যে, বন্যা, ঘুর্ণিঝড়, টর্নেডো, ভূমিকম্প ইত্যাদি কোনো দুর্যোগের কারণে অনেক মানুষ এক সাথে মারা গেলে তাদেরকে গণ কবর দেওয়া হয়। এভাবে একাধিক লাশকে এক কবরে দাফন করা জায়েয আছে কি না?
প্রত্যেক লাশকে ভিন্ন ভিন্নভাবে কবর দেওয়াই শরীয়তের নিয়ম। অবশ্য জায়গার সংকট কিংবা লাশের সংখ্যা বেশি আর ব্যবস্থাপনা অপ্রতুল হওয়ার দরুন পৃথক পৃথক কবর দেওয়া অধিক কষ্টকর হলে এক কবরে একাধিক লাশ দাফন করাও জায়েয আছে। তবে এ ক্ষেত্রে নিয়ম হল, লাশগুলো পাশাপাশি রেখে প্রত্যেকটি লাশকে মাটি দ্বারা অন্যটি থেকে আড়াল করে দেবে। একটি লাশের উপর অন্য আরেকটি লাশ রাখবে না।
Sharable Link-সুনানে আবু দাউদ ২/৪৪৭, মাবসুতে সারাখসী ২/৬৫, শরহুল মুনিয়্যাহ ৬০৬, ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১৭১, রদ্দুল মুহতার ২/২১৯
আমি কয়েক বছর আগে হজ করতে যাই। আর আইয়্যামে তাশরীকের মাঝে সেখানে কুরবানী করি। সেখানে কুরবানী করায় আমার পক্ষ থেকে দেশে কুরবানী করা হয়নি। দেশে আসার পর একজন আলেমের নিকট শুনতে পেলাম, সামর্থ্যবান ব্যক্তির উপর উভয়স্থানেই [দেশে ও সৌদি আরবে] কুরবানী করতে হবে। এখন আমার প্রশ্ন হল, আসলেই কি আমাকে দু’ জায়গায় কুরবানী করতে হবে, নাকি একজায়গায় কুরবানী করলে চলবে? বিষয়টি সম্পর্কে প্রামাণ্য গ্রন্থাদির উদ্ধৃতিসহ বিস্তারিত সমাধান দিয়ে বাধিত করবেন ।
কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার জন্য একটি শর্ত হল মুকীম হওয়া। প্রশ্নের বিবরণ ও মৌখিক বক্তব্য অনুযায়ী যেহেতু আপনি কুরবানীর দিনসমূহে মুসাফির ছিলেন তাই ওই বছর আপনার উপর কুরবানী ওয়াজিব ছিল না। আপনি সেখানে যে কুরবানী আদায় করেছেন তা হজের কুরবানী, যাকে ‘দমে শুকর’ বলা হয়। তামাত্তু ও কিরানকারীর উপর এ কুরবানী ওয়াজিব। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার উপর সেখানে বা দেশে ঈদুল আযহার কুরবানী করা ওয়াজিব নয়।
Sharable Link-মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৪/৩৮২, বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৫, ইলাউস সুনান ১৭/২১২, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া ৫/২৯২, খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩০৯, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২
আমি একজন ওষুধ ব্যবসায়ী। আমি দীর্ঘদিন যাবৎ বিভিন্ন অভিজ্ঞ ডাক্তারের সংস্পর্শে থেকে ওষুধ বিক্রির পাশাপাশি অনেক বিষয়ে পারদর্শিতা অর্জন করেছি। যার ফলে অনেক সাধারণ গ্রাম্য ব্যক্তি এসে আমার নিকট হতে ওষুধ নিয়ে যায়। বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির নিয়ম হল ওষুধের বিক্রি বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ডাক্তারকে বিনামূল্যে অনেক ওষুধ বিতরণ করে। যে কোম্পানি যে ডাক্তারকে ওষুধ বেশি পরিমাণে প্রদান করে, সে ডাক্তার রোগীদের জন্য সে কোম্পানির ওষুধ লিখে দেয়। অন্যদিকে প্রত্যেক কোম্পানির পক্ষ থেকে তার প্রতিনিধিকে বলা হয়, ‘প্রতিমাসে তোমাকে ওই স্থানে এত পরিমাণ টাকার ওষুধ বিক্রি করতেই হবে। না হলে বেতন কমে যাবে।’
প্রশ্ন হল, এখন বিভিন্ন কোম্পানির ওষুধ বিক্রেতা যদি বিনামূল্যের ওষুধগুলো ওই সমস্ত ডাক্তারকে দেয়, যারা ডাক্তারির পাশাপাশি ওষুধও বিক্রি করে, যাতে কোম্পানির ওষুধ বেশি বিক্রি হয় এবং তাদের লক্ষমাত্রাও পূর্ণ হয়, আমার জন্য এই বিনামূল্যের ওষুধ নেওয়া শরীয়ত সম্মত হবে কি না? যদি না হয়, তবে শরীয়তসম্মত অন্য কোনো পদ্ধতি আছে কি না?
ডাক্তারদের কর্তব্য হল, রোগীর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে তার জন্য সর্বাধিক উপযোগী ওষুধ নির্বাচন করা। এ ক্ষেত্রে ডাক্তারের সর্বোচ্চ বুদ্ধি বিবেচনা অনুযায়ী রোগীর জন্য যে কোম্পানির ওষুধ অধিক উপযোগী মনে হবে তাই ব্যবস্থাপত্রে লিখবে। কিন্তু তা না করে কোন কোম্পানির ওষুধ রোগীর জন্য অনুপযোগী হওয়া সত্ত্বেও বা অধিক কার্যকর না হলেও তা প্রদান করা রোগীর সাথে চরম খেয়ানতের শামিল। আর কোন কিছুর বিনিময়ে কোনো নির্ধারিত কোম্পানির ওষুধ প্রেসক্রিপশনের চুক্তি করা না-জায়েয এবং এ ধরনের চুক্তি করে কোনো কিছু গ্রহণ করা ডাক্তারদের জন্য উৎকোচের শামিল। চাই তা ফিজিশিয়ান সেম্পলের নামেই হোক না কেন। অবশ্য ওষুধ কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে ডাক্তারদেরকে দেওয়ার জন্য যে ফিজিশিয়ান সেম্পল রয়েছে, নির্ধারিত কোম্পানির ওষুধ বিক্রির বিনিময় বা উৎকোচ হিসাবে না হলে সেগুলো গ্রহণ করা ডাক্তারদের জন্য জায়েয। তবে ওইগুলো যেহেতু ফ্রি বিতরণ করে রোগীদের উপর প্রয়োগের মাধ্যমে ডাক্তারদের অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য দেওয়া হয় এবং তা বিক্রি নিষিদ্ধ থাকে, তাই ডাক্তারের জন্য ফিজিশিয়ান সেম্পল বিক্রি করা জায়েয হবে না। বরং ডাক্তার যে রোগীর জন্য তা সমীচীন মনে করবে তাকে ফ্রি প্রদান করবে।
Sharable Link-মুসনাদে আহমাদ ২/১৬৪, শরহুল মাজাল্লাহ ৪/৪৫৭, আদ্দুররুল মুখতার ৫/৫২১, আলমুগনী [ইবনে কুদামা] ৭/২৪৩
বর্তমানে যে তাসবীহ মুসলমানরা ব্যবহার করে তা ব্যবহার করা জায়েয, নাকি বেদআত? অনেকে তাসবীহ ব্যবহার করাকে বেদআত বলে আখ্যায়িত করে, তাদের কথা ঠিক কিনা? জানতে চাই।
তাসবীহ ব্যবহার জায়েয, বেদআত নয়। কারণ সহীহ হাদীস এবং সাহাবীদের আমল থেকে অঙ্গুলি ছাড়া ভিন্ন বস্ত্ত দ্বারাও তাসবীহ গণনার সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে। হযরত সায়াদ ইবনে আবী ওক্কাস [রা.] সম্পর্কে বর্ণিত আছে, তিনি খেজুরের বিচি ও পাথরকুচি দ্বারা তাসবীহ জপতেন। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ২/২৮২
এ ছাড়া তাসবীহ ব্যবহারের ব্যাপারে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা থেকেও সমর্থন পাওয়া যায়। হযরত সায়াদ ইবনে আবী ওক্কাস [রা.] বর্ণনা করেন, একদিন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মহিলার গৃহে প্রবেশ করে দেখলেন, তার সামনে কিছু পাথরকুচি অথবা খেজুরের বিচি রয়েছে। সে তা দিয়ে তাসবীহ জপছে। নবীজী তাকে বললেন, আমি কি তোমাকে এর চেয়ে সহজ কোন পন্থা বলব? এরপর তিনি তাকে ফযীলতপূর্ণ একটি দুআ শিখিয়ে দিলেন। -জামে তিরমিযী ২/১৯৭
উল্লেখিত হাদীসে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাটিকে পাথরকুচি দিয়ে তাসবীহ জপতে নিষেধ করেননি। কাজটি যে শরীয়তপরিপন্থী নয় তা প্রমাণের জন্য এটিই যথেষ্ট। -বাযলুল মাজহুদ ২/৩৫৫
সুতরাং তাসবীহ ব্যবহারকে বেদআত বলা ভুল। বরং এটি একটি মুবাহ তথা জায়েয পন্থা। আল্লামা ইবনে তাইমিয়া [রহ.] বলেন, ‘অঙ্গুলি দ্বারা তাসবীহ গণনা করা সুন্নত। আর খেজুরদানা এবং পাথর টুকরো বা এ জাতীয় বস্ত্ত দ্বারা গণনা করা ভাল। সাহাবীদের কেউ কেউ এমন করতেন।’
Sharable Link-মাজমূআ ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া ২২/৫০৬, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ২/২৮২, জামে তিরমিযী ২/১৯৭, বাযলুল মাজহুদ ২/৩৫৫, রদ্দুল মুহতার ১/৬৫০-৬৫১, আল বাহরুর রায়েক ২/২৯, নুযহাতুল ফিকর ফী সাবহাতিয যিকর ...
আযান বা ইকামতের কোন বাক্য ভুলে ছুটে গেলে আযান বা ইকামত কি পুনরায় দিতে হবে?
আযান বা ইকামতের কোন বাক্য ছুটে গেলে আযান বা ইকামত চলা অবস্থায় অথবা আযান বা ইকামত শেষ হওয়ার পরক্ষণেই যদি স্মরণ হয়, তাহলে ছুটে যাওয়া বাক্য থেকে অবশিষ্টাংশ পুনরায় বলতে হবে। আর আযান বা ইকামত শেষ হওয়ার সাথে সাথে স্মরণ না হয়ে কিছু বিলম্বে স্মরণ হলে আযান বা ইকামত পুনরায় শুরু থেকে দিতে হবে। উল্লেখ্য, ছুটে যাওয়া বাক্যটি যদি ‘আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম’ হয় তাহলে তা আযানের ভেতরে কিংবা পরপর স্মরণ হলে ওই বাক্য থেকে পুনরায় আযান দেওয়া ভাল। কিন্তু যদি আযান শেষে বিলম্বে স্মরণ হয়, তবে এক্ষেত্রে পুনরায় আযান দোহরানোর দরকার নেই। বরং আগের আযানই যথেষ্ট হবে।
Sharable Link-মাবসুতে সারাখসী ১/১৩৯, বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৬৯, খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৪৯, ফাতাওয়া তাতার খানিয়া ১/৫২৩, শরহুল মুনিয়া ৩৭৫
১. বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে প্লেনে হজ্বে যাওয়া হয়। এক্ষেত্রে মীকাত কোথায় ধরা হবে?
২. ইহরামের যে তরতীব আছে, তা প্লেনের মধ্যে মীকাত আসার আগে বাঁধা সহজ নয়, তাই অনেকে প্লেনে চড়ার আগেই ইহরাম বাঁধে। কিন্তু ভুলে যদি ইহরামের কাপড় লাগেজে চলে যায় এবং প্লেনে কেবল সেলাই করা কাপড়ই থাকে, তবে ইহরামের সূরত কী?
৩. হজ্বের ইহরাম বাঁধার পর হজ্ব করতে কোনো শরীয়তসম্মত প্রতিবন্ধকতা এলে কুরবানী ও মাথা মুন্ডিয়ে হালাল হতে হয় এবং পরের কোনো বছর কাযা করতে হয়। এখন প্রশ্ন হল, বাংলাদেশ বিমান বন্দর থেকে ইহরাম বেঁধে প্লেনে উঠতে গিয়ে যদি জানা যায় যে, কোনো অনিবার্য কারণে এ বছর উক্ত ব্যক্তি হজ্বে যেতে পারবে না, তবে কুরবানী করবে কি করে, যদি সহায়ক কেউ না থাকে? সে বাড়িতে ফেরত এসে কুরবানী করতে ও মাথা মুন্ডাতে পারবে কি? এক্ষেত্রে হরমের সীমায় কুরবানীর পশু পৌঁছানোর হুকুম কি হবে?
১. বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান থেকে আকাশ পথে গমনকারীদের প্লেন ‘করনুল মানাযিল’ এবং ‘যাতু ইরক’-এ দুটি মীকাতের উপর দিয়ে জিদ্দায় প্রবেশ করে। তাই এ বরাবর আসার আগেই ইহরাম বেঁধে নিতে হবে। -আহকামে হজ্ব ৪১-৪২
২. এক্ষেত্রে সেলাইকরা কাপড় পরিহিত অবস্থাতেই মীকাত অতিক্রমের আগে ইহরাম বেঁধে নেবে। এরপর ইহরামের কাপড় হাতে পাওয়া মাত্র সেলাইযুক্ত কাপড় ছেড়ে ইহরামের কাপড় পরে নেবে। পূর্ণ এক দিন বা পূর্ণ এক রাত সেলাইকৃত কাপড় পরিধান করলে দম ওয়াজিব হয়। এর কম হলে এক ফিতরা সমপরিমাণ সাদকা করা ওয়াজিব। সুতরাং পরবর্তী সময়ে সেলাইকৃত কাপড় পরিধানের সময় অনুপাতে কাফ্ফারা [দম বা সদকা] আদায় করবে।
৩. এ ধরনের ব্যক্তির হালাল হওয়ার জন্য হেরেমের ভেতরেই পশু জবাই করা জরুরি। হেরেমের বাইরে পশু জবাই করা যথেষ্ট নয়। তাই তাকে যেকোন উপায়ে হোক কারো মাধ্যমে হেরেমেই পশু জবাইয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। এক্ষেত্রে পশু যবাইয়ের কোন দিন তারিখ নেই। যতদিন সেখানে দম দেওয়া না হবে ততদিন ইহরাম খুলতে পারবে না। অবশ্য সেখানে পশু জবাই করার সাথে সাথে সে হালাল হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে হালাল হওয়ার জন্য মাথা মুন্ডানো বা চুল কাটা জরুরি নয়। অবশ্য কেটে নিলে ভাল। -সূরা বাকারা ১৯৬, আহকামুল কুরআন জাস্সাস ১/২৭৬, মানাসিক ৪২৪, বাদায়েউস সানায়ে ২/৩৯৯, ফাতহুল কাদীর ৩/৫৪-৫৫, ফাতাওয়া খানিয়া ১/৩০৫
Sharable Link
আমি একটি সংস্থায় ৮ মাস কর্মরত ছিলাম। সংস্থার নিয়ম ছিল প্রভিডেন্ড ফান্ডে টাকা জমা রাখা সকলের জন্য বাধ্যতামূলক এবং প্রভিডেন্ড ফান্ড খোলার পর আগের বেতনের সাথে ১০০ [এক শ] টাকা বর্ধিত করা হবে এবং প্রতি বেতনে ২০০ [দুই শ] টাকা করে কর্তন করে রাখা হবে। তা ভাউচারে এভাবে লিখা হত বেতন ২৫০০, বর্ধিত প্রভিডেন্ড ১০০, সর্বমোট ২৬০০। আর ভাউচারের অপর পৃষ্ঠায় কর্তন করা হত এভাবে বেতন ২৬০০/- প্রভিডেন্ড ফান্ড ২০০/-।
উল্লেখিত নিয়ম অনুযায়ী প্রতি মাসে আমার নামে ২৮০০/- জমা হতে থাকে, যা আমার মতের সম্পূর্ণ বিরোধী ছিল। কিন্তু চাকরি ঠিক রাখার জন্য চেপে থাকতে বাধ্য হই। আমার জমাকৃত টাকার অংক প্রায় ১৬০০/- টাকা। কিছু দিন আগে আমি স্বেচ্ছায় উক্ত সংস্থা থেকে অব্যাহতি গ্রহণ করি এবং প্রভিডেন্ড ফান্ডে আমার নামে জমাকৃত টাকা উত্তোলন করতে যাই। তখন সংস্থার প্রধান শিক্ষক আমার নামে জমাকৃত সমুদয় টাকা না দিয়ে অর্ধেক টাকা দেবেন বলে জানান। তখন তার কাছে এটা শরীয়তসম্মত কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন যে, এটা শরীয়তসম্মত।
এখন আমার জানার বিষয় হল উক্ত সংস্থার পক্ষে আমাকে অর্ধেক বা আংশিক টাকা দেওয়া শরীয়তসম্মত হবে কি না?
প্রশ্নের বর্ণনা বাস্তবসম্মত হলে প্রভিডেন্ড ফান্ডে জমাকৃত পূর্ণ টাকা [প্রতি মাস ২০০ টাকা হিসাবে] আপনার প্রাপ্য। এ থেকে কম দেওয়া জায়েয হবে না। তাই জমা টাকার পুরো না দিয়ে থাকলে সংস্থা কর্তৃপক্ষের উপর বাকি অংশও পরিশোধ করে দেওয়া জরুরি।
Sharable Link-আদ্দুররুল মুখতার ৬/৭০, আলবাহরুর রায়েক ৮/২৯
হুজুর, বর্তমানে মোবাইলে কল ব্যবসায়ীরা অফিস থেকে তাদের মোবাইলে যে ফ্লেক্সি লোড আনে, আমার জানামতে তার নিয়ম হল এই যে, ব্যবসায়ী বা তাদের একটি নম্বর অফিসে জমা দিল এবং বলল যে, ওই নম্বরে আমাকে দশ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেবেন। তখন অফিস ওয়ালারা ওই নম্বরে দশ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেয়, পরে তারা ভাউচার করার সময় ব্যবসায়ীদের শতকরা ৮৩ পয়সা কমিশন দেয়। সেই হিসাবে ব্যবসায়ীরা অফিসের টাকা পরিশোধ করার সময় ৯৮৮০ টাকা অর্থাৎ অফিসের পাওনা টাকা থেকে ১২০ টাকা কম দেয়। এখন আমার প্রশ্ন হল, এখানে তো উভয় দিকে টাকাই বুঝা যাচ্ছে, আর ফেকহের মাসআলা হল, এক জিন্সের মধ্যে ব্যবসা করলে সমানভাবে করতে হবে। বেশকম করলে সুদ হয়ে যাবে। তাহলে উপরোল্লিখিত বিষয়টা শরীয়ত-সিদ্ধ কি না? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।
ফ্লেক্সি লোডের মাধ্যমে নির্ধারিত মূল্যের টেলি যোগাযোগ সুবিধা ক্রয়-বিক্রয় করা হয়ে থাকে। কোম্পানির পক্ষ থেকে যেসব ডিলার এই ফ্লেক্সি বিক্রি করে থাকে তাদেরকে নির্ধারিত হারে কমিশন দেওয়া হয়। এ কমিশন টাকার বিনিময়ে নয়। বরং মোবাইল কোম্পানির পক্ষ থেকে মূল্যসংযোজিত সেবা বিক্রয়ের পারিশ্রমিক। এতে সুদের কিছু নেই। আর কোম্পানি প্রদত্ত কমিশনের হিসাবে সম্ভবত প্রশ্নে ভুল রয়েছে, সে যাই হোক এ কাজটি শরীয়ত পরিপন্থী নয়।
Sharable Link
কোন ব্যক্তি জনৈক ব্যবসায়ীকে বিশ্বস্থতার খাতিরে বাইয়ে মুযারাবার জন্য কিছু টাকা দিল। দেওয়ার সময় ওই ব্যবসায়ী টাকার মালিককে লভ্যাংশের কত ভাগ দেবেন, তা বলেন নাই। বরং তা জিজ্ঞেস করার পর তিনি বললেন, অমুক ব্যক্তি আমার নিকট কয়েক লাখ টাকা বাইয়ে মুযারাবার জন্য দিয়েছে আমি তাকে ব্যবসায়ের লভ্যাংশ থেকে হিসেব করে প্রতি মাসে প্রতি ১ লক্ষ টাকায় প্রায় ১৮/১৯ শত টাকা করে দিয়েছি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে লভ্যাংশের কত ভাগ টাকার মালিককে দেবে তা উল্লেখ না করে বর্ণিত সুরতে ব্যবসায়ীকে মুযারাবার শর্তে টাকা দিয়ে লভ্যাংশ গ্রহণ করা এবং ওই ব্যবসায়ীর জন্য এইভাবে বাইয়ে মুযারাবার জন্য টাকা নিয়ে ব্যবসা করা জায়েয হবে কি না? দলিল-প্রমাণসহ জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী উক্ত কারবার সহীহ হয়নি। কারণ মুযারাবা চুক্তি বৈধ হওয়ার জন্য বিনিয়োগকারী এবং ব্যবসায়ী উভয়ের লাভের পরিমাণ নির্ধারণ করা জরুরি। যেমন বিনিয়োগকারী পাবে নীট মুনাফার ৬০% এবং ব্যবসায়ী পাবে ৪০% ইত্যাদি। সম্ভাব্য অর্জিত মুনাফার অংশ নির্ধারিত না করে নির্দিষ্ট অংক বা বিনিয়োগকৃত টাকার শতকরা হার হিসাবে দেওয়ার শর্ত করলে কারবার সহীহ হয় না। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রেও যেহেতু নির্দিষ্ট অংকে মুনাফা দেওয়ার কথা হয়েছে, তাই উক্ত কারবার বৈধ হয়নি। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ী ব্যক্তি পুরনো চুক্তি ভেঙ্গে দেবে এবং তার ব্যবসার অবস্থা মূল্যায়ন করে অর্জিত মুনাফার কতভাগ লাভ বিনিয়োগকারীকে দিতে আগ্রহী তা ওই ব্যক্তিকে জানিয়ে দেবে। সে সম্মত হলে নতুনভাবে চুক্তি করে নেবে।
Sharable Link-আদ্দুররুল মুখতার ৫/৬৪৮, শরহুল মাজাল্লাহ ৪/৩৩৩, আলবাহরুর রায়েক ৭/২৬৪, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/২৮৭
কিছু দিন আগের কথা। যমুনা সেতুর পশ্চিম পার্শ্বে ট্রাক-বাসের সংঘর্ষে কেউ আহত কেউ নিহত হয়েছে। নিহতদের নিয়ে কেটে চোখ, মগজ, কিডনি ইত্যাদি রেখে দেওয়া হয়েছে। কারো অপমৃত্যু হলেই এ রকম করা হয়। এব্যাপারে শরীয়তের বিধান কী? জানালে উপকৃত হব।
মানুষ জীবিত অবস্থায় যেমন সম্মানী মৃত্যুবরণ করার পরও সম্মানের পাত্র। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, ‘মৃতের হাড় ভাঙ্গা জীবিত অবস্থায় ভাঙ্গার মতই।’ -সুনানে আবু দাউদ ৪৫৮
বর্তমানে ময়না তদন্তের নামে যাচ্ছে তাই করা হচ্ছে। বিশেষত যেখানে মৃত্যুর কারণ সুনির্ধারিত এবং দুর্ঘটনার স্থান থেকেই পুলিশ চূড়ান্ত রিপোর্ট নিয়ে লাশ দাফনের জন্য ছেড়ে দিতে পারে সেখানে ওই লাশ ময়না তদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়া শরীয়তের নির্দেশনা পরিপন্থী কাজ। এ ছাড়া যদি চোখ ও কিডনি ইত্যাদি রেখে দেওয়ার কথা সঠিক হয়ে থাকে তবে বিষয়টি আরো ভয়াবহ গোনাহের কাজ বলেই গণ্য হবে।
Sharable Link
....
আমরা আপনার চিঠি মনোযোগ দিয়ে পড়েছি। নিঃসন্দেহে দুনিয়ার এই যিন্দেগিতে আপনাকে বহু কষ্ট স্বীকার করতে হবে। যার প্রতিদান আপনি পাবেন পরকালীন যিন্দেগিতে। অবশ্য ভবিষ্যতে দুনিয়াতেই এর বরকত ও ফল প্রত্যক্ষ করতে পারবেন।
আল্লাহ তাআলা আপনাকে হাফেয বানিয়েছেন এখন আপনি মাদরাসায়ও পড়ালেখা করছেন। এটা মামুলি কথা নয়, বরং তা আল্লাহ তাআলার মস্তবড় এক নেয়ামত। এর জন্য যতই শুকরিয়া আদায় করা হোক না কেন তা অতি নগন্য।
এখন আপনার যা করণীয় তা হচ্ছে, প্রথম ছুটি চাই তা সাপ্তাহিক ছুটিই হোক- বাড়িতে চলে যাবেন এবং মায়ের খেদমতে হাজির হয়ে এতদিনের অনুপস্থিতির জন্য ক্ষমা চাইবেন, তার কলিজা ঠান্ডা করবেন। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, আপনি যখন তাঁকে খুশি করতে পারবেন তখন আপনার জীবনের এক নতুন অধ্যায় শুরু হবে। আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহের দ্বার আপনি উন্মুক্ত দেখতে পাবেন।
আপনি প্রতিদিন ইশরাক বা চাশতের সময় চার রাকাত করে নফল নামায আদায় করবেন এবং যখনই সুযোগ আসে তখনই যে পরিমাণেই হোক দুআ ইউনূস حسبنا الله ونعم الوكيل، يا مغني، يا باسط এবং يا رزاق পাঠ করতে থাকবেন। এগুলোর মধ্যে যেকোন একটি দুআ নির্দিষ্ট করেও আমল করতে পারেন। পরিমাণ কম হোক কিন্তু মনোযোগের সাথে পড়া চাই। আমরা আপনার জন্য দুআ করছি এবং ভবিষ্যতেও অব্যাহত রাখব ইনশাআল্লাহ।
Sharable Link
‘প্রত্যেক জিনিসের যাকাত আছে, শরীরের যাকাত হল রোযা।’ এই হাদীসটি কোন কিতাবে আছে এবং হাদীসটির সনদ কেমন? জানতে চাই?
হাদীসটি সুনানে ইবনে মাজাহ [হাদীস ১৭৪৫] ও শুআবুল ঈমানে [হাদীস ৩৫৭৭] বর্ণিত হয়েছে। তবে হাদীসটির সনদ দুর্বল।
Sharable Link-মিসবাহুয যুজাজাহ ১/৩০৮, মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৩/১৮২, আলইলালুল মুতানাহিয়াহ ২/৫৪০, আলফাওয়াহিদুল মাজমূজা ১/১২৩, তাযকিরাতুল মাওযূআত ৭০
যখন সূরা রূমের কয়েকটি আয়াত অবতীর্ণ হল তখন হযরত আবু বকর [রা.] মুশরিকদের সাথে বাজি ধরেছিলেন। এ কথার উপর যে, কয়েক বছরের মধ্যেই রোম পারস্যের উপর বিজয়ী হবে। হাদীসে এ সম্পর্কে কোন আলোচনা আছে কি? থাকলে কোন কিতাবে আছে এবং তার সারসংক্ষেপ কী? দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন।
হাঁ; ঘটনাটি হাদীস, তাফসীর ও ইতিহাসের কিতাবে বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। ইমাম তবারী তাঁর তাফসীর গ্রন্থে ইকরিমা [রহ.] থেকে বর্ণনা করেছেন- ‘আযরুআত নামক স্থানে রোমান ও পারসিকদের মাঝে যুদ্ধ সংঘটিত হল এবং পারসিকরা বিজয়ী হল। মক্কার কাফেররা পারসিকদের বিজয়ই কামনা করত। [কেননা এরাও মুশরিক ওরাও মুশরিক, এরাও নবুওয়াত ও রিসালাত সম্পর্কে অজ্ঞ ওরাও অজ্ঞ]। তাই তারা আনন্দিত হল এবং বিদ্রুপ করল। এরপর সাহাবীদের নিকট গিয়ে বলল তোমরাও আসমানী গ্রন্থের কথা বল। ওরাও আসমানী গ্রন্থের নাম নেয়। আর আমরা হলাম উম্মি। অথচ আমাদের পারসিক বন্ধুরা রোমানদের উপর বিজয় লাভ করেছে। তেমনিভাবে তোমরাও যদি আমাদের সাথে লড়াই করো আমরাই বিজয়ী হব। তখন সূরা রূমের এ আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয়-
الٓمّٓۚ۱ غُلِبَتِ الرُّوْمُۙ۲ فِیْۤ اَدْنَی الْاَرْضِ وَ هُمْ مِّنْۢ بَعْدِ غَلَبِهِمْ سَیَغْلِبُوْنَۙ۳ فِیْ بِضْعِ سِنِیْنَ ؕ۬ لِلّٰهِ الْاَمْرُ مِنْ قَبْلُ وَ مِنْۢ بَعْدُ ؕ وَ یَوْمَىِٕذٍ یَّفْرَحُ الْمُؤْمِنُوْنَۙ۴ بِنَصْرِ اللّٰهِ ؕ یَنْصُرُ مَنْ یَّشَآءُ ؕ وَ هُوَ الْعَزِیْزُ الرَّحِیْمُ
‘‘রোমানরা পরাজিত হয়েছে নিকটবর্তী অঞ্চলে, কিন্তু তারা এ পরাজয়ের পর শীঘ্রই বিজয়ী হবে। কয়েক বছরের মধ্যেই। আগে ও পরের ফয়সালা আল্লাহরই। আর সেদিন মুমিনরা আনন্দিত হবে। আল্লাহর সাহায্যে। তিনি যাকে ইচ্ছা সাহায্য করেন এবং তিনি পরাক্রমশালী পরম দয়ালু।’’ -সূরা রূম
তখন আবু বকর [রা.] কাফেরদের নিকট গিয়ে বললেন, পারসিকদের বিজয়ের কারণে আনন্দ করছ? তোমাদের এ আনন্দ অহেতুক। আল্লাহ তাআলা তোমাদের চোখকে ঠান্ডা করবেন না। আল্লাহর শপথ অবশ্যই রোমানরা পারসিকদের উপর বিজয়ী হবে। আমাদের নবী এ সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। তখন উবাই ইবনে খলফ দাঁড়িয়ে বলল, হে আবুল ফযল [আবু বকর রা.-এর একটি উপনাম] তুমি মিথ্যে বলেছ। আবু বকর [রা.] বললেন, হে আল্লাহর দুশমন! তুমিই বড় মিথ্যেবাদী। উবাই ইবনে খালফ বলল, তাহলে আমি তোমার সাথে দশটা উটনীর বাজি ধরতে চাই। তিন বছরের মধ্যে যদি রোমানরা বিজয়ী হতে পারে তাহলে আমি আদায় করব। অন্যথায় তুমি আদায় করবে।
আবু বকর [রা.] নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ঘটনাটি অবহিত করলে তিনি বললেন, আমি তো এমনটি বলিনি। শব্দটি তো তিন থেকে নয় পর্যন্ত সংখ্যা বুঝায়। সুতরাং তুমি যাও, সময় বাড়িয়ে নাও। আবু বকর [রা.]কে আসতে দেখে উবাই বলল, সম্ভাবত অনুতপ্ত হয়েছ? তিনি উত্তর দিলেন, না; বরং পণ্য বেশি ধরে সময় বাড়িয়ে নিতে এসেছি। এখন উটনী ধার্য কর একশটি আর সময় নির্ধারণ কর নয় বছর। উবাই বলল তাই করা হল।’’ -তাফসীরে ত্ববারী ১০/১৬৪
উল্লেখ্য, এটি বাজি হারাম হওয়ার আগের ঘটনা। অবশ্য মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই বাজি হারাম হয়ে গেছে। সে জন্যই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আবু বকরের বাজি জিতে পাওয়া উটনীগুলো সদকা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
Sharable Link-জামে তিরমিযী, হাদীস ৩১৯৪, তাফসীরে ইবনে আবী হাতেম ৯/৩০৮৬