মুহাম্মাদ জহিরুল ইসলাম - ফুলবাড়িয়া, উত্তরা, ঢাকা

৯০৯. Question

২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ব বানিজ্য কেন্দ্র ধ্বংস হওয়ার পর পত্র-পত্রিকায় এক চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশিত হয়। খবরে বলা হয় যে, কুয়েতের জনৈক গবেষক এই ঘটনার সাথে আলকুরআনের একটি আয়াতের মিল খুঁজে পেয়েছেন। আয়াতটি এই

اَفَمَنْ اَسَّسَ بُنْیَانَهٗ عَلٰی تَقْوٰی مِنَ اللّٰهِ وَ رِضْوَانٍ خَیْرٌ اَمْ مَّنْ اَسَّسَ بُنْیَانَهٗ عَلٰی شَفَا جُرُفٍ هَارٍ فَانْهَارَ بِهٖ فِیْ نَارِ جَهَنَّمَؕ    وَ اللّٰهُ    لَا یَهْدِی الْقَوْمَ الظّٰلِمِیْنَ.

১১ পারা ৯ম সূরা (সূরা তাওবা) এর ১০৯ নং আয়াত। গবেষক তার বিশ্লেষণে উল্লেখ করেন যে, ১১ হচ্ছে টুইন টাওয়ার ধ্বংশের তারিখ। ৯ হচ্ছে খৃস্টাব্দের নবম মাস তথা সেপ্টেম্বর। টুইন টাওয়ারের একটি ভবনের উচ্চতা ছিল ১০৯?। সূরাটির প্রথম থেকে ১০৯ নং আয়াত পর্যন্ত হরফ সংখ্যা গণণা করলে সমষ্টি হয় ২০০১, যা উক্ত ঘটনার বছর। আছাড়াও আয়াতে যুরুফিন হারিন শব্দ উল্লেখ রয়েছে। আর টুইন টাওয়ার যে রাস্তায় অবস্থিত তার নাম হল যুরুফিন হার

প্রশ্ন হল, সংখ্যাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে কুরআনের এ ধরনের ব্যাখ্যা কতটুকু সহীহ ও গ্রহণযোগ্য?

Answer

আলকুরআনের তাফসীরের স্বীকৃত উৎস ছয়টি।

১। কুরআন শরীফ, ২। হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, ৩। সাহাবায়ে কেরামের ব্যাখ্যা, ৪। তাবিয়ীনের ব্যাখ্যা, ৫। আরবী ভাষা ও ব্যাকরণ, ৬। আকলে সালীম বা সুস্থ চিন্তাধারা।

পর্যায়ক্রম অনুসারে এসকল উৎসের আলোকে কুরআনের তাফসীর করা এবং তা থেকেই কুরআনী হেদায়াত গ্রহণ করা জরুরি। আরবী বর্ণমালার গাণিতিক মান ও সংখ্যা গণনা তাফসীরের স্বীকৃত কোনো পন্থা নয় এবং এর মাধ্যমে আয়াতের সঠিক ব্যাখ্যা লাভ করা যায় না। তাই সংখ্যা হিসাব করে টুইন টাওয়ার ধ্বংসের সাথে সূরা তাওবার ১০৯ নং আয়াতের মিল প্রমাণ করা সঠিক নয়। এছাড়াও আয়াতে জুরুফিন হার শব্দটি তার নির্ধারিত আভিধানিক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। কোনো জিনিসের নাম হিসাবে নয়।

উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যার জন্য নির্ভরযোগ্য তাফসীরের কিতাব সমূহ দেখা যেতে পারে। বলা বাহুল্য, সেখানে এধরনের কোনো ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত নেই।

উল্লেখ্য, টুইন টাওয়ার ঘটনার শরয়ী হুকুমের জন্য এই আয়াত নয়; বরং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আয়াত-হাদীস ও ফিকহী নীতিমালা জানা প্রয়োজন।

-আলইতকান ৭৮ নং অধ্যয়; উলূমুল কুরআন, তাকী উসমানী পৃ.৩২৩

Sharable Link

আবু সায়েম - মোমেনশাহী

৯১০. Question

আমি একজন কম্পিউটার অপারেটর। আমি আরবী, বাংলা সবই কম্পোজ করি। তাই আমাকে প্রায়ই কুরআনের আয়াত কম্পোজ করতে হয়। জানতে চাই, কুরআনের আয়াত কম্পোজ করার সময় অজু করা জরুরি কি না? আর কখনো যদি সিজদার আয়াত কম্পোজ করি তখন কি আমাকে সিজদা দিতে হবে?

Answer

কুরআন মজীদের আয়াত কম্পোজ করার জন্য অজু থাকা জরুরি নয়। তবে কম্পোজের সময় যে কাগজ দেখে লিখা হচ্ছে সে কাগজের অধিকাংশ লিখা কিংবা পুরোটাই কুরআনের আয়াত হলে ওই কাগজ স্পর্শ করতে অজু থাকা জরুরি। অবশ্য যে কাগজে কুরআনের আয়াত কম আর অন্য লেখা বেশি সে কাগজে বিনা অজুতে হাত লাগানো জায়েয হলেও আয়াতের উপর হাত লাগাতে অজু থাকা জরুরি।

আর সিজদার আয়াত মুখে উচ্চারণ করা ব্যতীত শুধু কম্পোজ করলে সিজদা ওয়াজিব হয় না। সিজদা ওয়াজিব হওয়ার জন্য আয়াতে সিজদা মুখে উচ্চারণ করা তথা তিলাওয়াত করা জরুরি।

-ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৫৭; আলবাহরুর রায়েক ২/১১৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৮৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৭৭৩

Sharable Link

শে, মু, আব্দুর রহীম - ২৪৭/১, বছিলা রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা

৯১১. Question

আমি এক ব্যক্তিকে ব্যবসার জন্যে মূলধন প্রদান করেছি। তিনি নিজস্ব শ্রম দিয়ে এবং কর্মচারী রেখে কাপড়ের ব্যবসা চালাচ্ছেন। ব্যবসায় তার কোনো মূলধন নেই। ব্যবসায় তার ও আমার লভ্যাংশ যথাক্রমে ৬৫ ও ৩৫ শতাংশ। শর্ত অনুযায়ী প্রতি মাসে নিজস্ব খরচের জন্যে তিনি দোকান থেকে কোনো অর্থ গ্রহণ করলে আমার অংশ হিসাবে আমাকেও টাকা প্রদান করবেন এবং বছর শেষে লাভ-ক্ষতির হিসাব অনুযায়ী উভয়ের গৃহীত টাকা সমন্বয় করা হবে। তবে তিনি ক্ষতির অংশীদার হবেন না। আমার আপত্তি সত্ত্বেও তিনি প্রায়শ দোকান থেকে টাকা নিলেও আমাকে কিছু প্রদান করেন না। হিসাবের সময় তিনি দোকান থেকে টাকা কর্জ নিয়েছেন বলে জানান। বছরান্তে হিসাবে দেখা যায় তিনি কর্জের নাম করে তার প্রাপ্য লভ্যাংশ থেকে অনেক বেশি গ্রহণ করেছেন কিন্তু আমাকে কিছুই দেননি। তিনি নিজের অভাবের কথা বলে তার গৃহীত অতিরিক্ত অর্থ ফেরত দিতে এবং আমার লভ্যাংশ প্রদানে অপারগ বলে জানান। এমনকি মূলধন ফেরত দিতেও অপারগ বলে জানান। আমি এ বিষয়ে আপত্তি করা সত্ত্বেও তিনি তা করে যাচ্ছেন। এভাবে দোকান থেকে তার কর্জ গ্রহণ বা আমাকে টাকা না দিয়ে লভ্যাংশ হিসাবে তার অর্থ গ্রহণ কি বৈধ হয়েছে?

Answer

আপনাদের মধ্যকার লেনদেনকে শরীয়তের পরিভাষায় মুদারাবা বলা হয়। এ লেনদেনের ভিতর শ্রমদাতার নিকট মূল পুঁজি এবং ব্যবসার লাভ সম্পূর্ণ আমানত হিসাবে গণ্য। সুতরাং পুঁজিদাতার স্বতস্ফূর্ত অনুমতি ব্যতীত শ্রমদাতার জন্য ব্যবসা থেকে কোনো টাকা বা অন্য কোনো সম্পদ নেওয়া জায়েয হবে না। এটি সুস্পষ্ট খেয়ানত তথা দুনীর্তি। করজের নিয়তেও বিনা অনুমতিতে নেওয়া জায়েয হবে না।

অবশ্য উভয়ের মধ্যকার চুক্তি অনুযায়ী ব্যবসায় কোনো লাভ হলে সেই লাভ থেকে শ্রমদাতা নিজের অংশ নিতে পারবে। তবে অঙ্গীকার অনুযায়ী শ্রমদাতা নিজের লভ্যাংশ নেওয়ার সময় অর্থদাতার লভ্যাংশও তাকে দিয়ে দেওয়া জরুরি। তার প্রাপ্য লভ্যাংশ তাকে না দেওয়া অন্যায় কাজ।

উল্লেখ্য, ব্যবসায় বাস্তবে লাভ না হলে শ্রমদাতার জন্য ওই ব্যবসা থেকে লভ্যাংশের নিয়তে কোনো কিছু নেওয়া জায়েয হবে না।

প্রকাশ থাকে যে, অর্থদাতা যদি কখনো তার মূলধন ফেরত চায় তবে শ্রমদাতাকে ব্যবসার সকল সম্পদ বিক্রি করে তার মূলধন ফেরত দেওয়া জরুরি। তদদ্রূপ অর্থদাতা ব্যবসার লাভ নিয়ম অনুযায়ী চাইলে তাও তাকে বুঝিয়ে দেওয়া জরুরি। কারণ এগুলো অর্থদাতার হক। এ হক আদায়ে বিলম্ব করা কিংবা গড়িমসি করা মারাত্মক গুনাহ।

অতএব, প্রশ্নের বর্ণনা যদি সঠিক হয়ে থাকে তবে অর্থদাতা ও শ্রমদাতা কোনো দ্বীনদার অভিজ্ঞ লোককে সালিস মেনে ওই কারবার ভেঙ্গে দিয়ে তাদের প্রত্যেকের প্রাপ্য অংশ বুঝে নেওয়াই উচিত হবে।

Sharable Link

রুম্মান - বুয়েট, ঢাকা

৯১২. Question

জামাতে নামায পড়াকালে অজু ছুটে গেলে পিছনের কাতারের মুসল্লীদের সামনে দিয়ে অতিক্রম করা যাবে কি? না গেলে এক্ষেত্রে করণীয় কী?

Answer

জামাত চলাবস্থায় অজু ছুটে গেলে অজু করে পুনরায় জামাতে শরীক হওয়ার উদ্দেশ্যে মুসল্লীদের সামনে দিয়েও বের হওয়া জায়েয। নামাযীর সামনে দিয়ে অতিক্রম করার যে গুনাহ তা এক্ষেত্রে হবে না। তথাপি মুসল্লীদের সামনে দিয়ে অতিক্রম করা ছাড়া অন্য কোনোভাবে সহজে কোনো মুসল্লীর বিঘ্ন না করে বের হওয়া যদি সম্ভব হয় তাহলে সেভাবেই বের হবে। মুসল্লীর সামনে দিয়ে বেরুবে না।

প্রকাশ থাকে যে, এ ব্যক্তি যদি এমন স্থানে থাকে যেখান থেকে বের হলে মুসল্লীদের নামাযের বিঘ্ন ঘটবে তাহলে এক্ষেত্রে তৎক্ষণাৎ বের না হয়ে উক্ত স্থানেই বসে থাকবে। এর পর নামায শেষে অজু একাকী নামায আদায় করে নিবে।

-মুআত্তা মালেক ১৩; তাতার খানিয়া ১/৬৮৬; কিফায়াতুল মুফতী ৩/৩৮৮

Sharable Link

রুম্মান - বুয়েট, ঢাকা

৯১৩. Question

বিনা প্রয়োজনে গায়রে মাহরাম আত্মীয়দের সাথে সৌজন্যমূলক কথা বলা যাবে কি?

Answer

গায়রে মাহরাম পুরুষদের সাথে এমনভাবে কথাবাতার্ বলা নাজায়েয যা তাকে ওই নারীর প্রতি আকৃষ্ট করে। আর কথার কারণে আকর্ষণ সৃষ্টি না হলে প্রয়োজন বশত দুচারটি কথা বলার অবকাশ রয়েছে। যেমন, পদার্র ভিতর থেকে সালাম আদান-প্রদান, কুশলাদি জিজ্ঞাসা করা। তবে অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা সবার্বস্থায় এড়িয়ে চলাই কর্তব্য।

-সহীহ মুসলিম ২/১৩১; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ৩/৩৫৯; তাফসীরে ইবনে কাসীর ৩/৫৩১; রদ্দুল মুহতার ১/৪০৬; ফাতহুল কাদীর ১/২৭০

Sharable Link

রুম্মান - বুয়েট, ঢাকা

৯১৪. Question

জনৈক ব্যক্তি বিবাহের সময় স্ত্রীর জন্য দুই লক্ষ টাকা মহর ধার্য করে। কিন্তু পাঁচ বছর পর সে স্ত্রীকে টাকার পরিবর্তে চল্লিশটি ছাগল দেয়। এ অবস্থায় স্ত্রীকে গত পাঁচ বছরের যাকাত আদায় করতে হবে কি?

Answer

মহর হস্তগত হওয়ার আগে প্রাপ্য মহরের যাকাত স্ত্রীর উপর ফরয নয়। তাই প্রশ্নোক্ত অবস্থাতেও ওই মহিলাকে বিগত পাঁচ বছরের মহরের যাকাত দিতে হবে না।

Sharable Link

ফরহাদ - ঢাকা

৯১৫. Question

আমরা ৩০ জন সদস্য মিলে একটি সমিতি করেছি। এতে প্রত্যেক সদস্যকে এককালীন ১০০০/- টাকা করে জমা দিতে হয়েছে। ফলে মূলধন দাড়িয়েছে ৩০,০০০/- টাকা, বিগত দুবছর ব্যবসায় খাটিয়ে লাভ হয়েছে ১২০০/- টাকা। কিন্তু আমরা এ টাকার যাকাত পরিশোধ করিনি। এখন আমাদের জানার বিষয় হল, আমাদেরকে কি উক্ত টাকার যাকাত পরিশোধ করতে হবে?

Answer

যাকাত সমিতির উপর ফরয হয় না। যাকাত ফরয হয় ব্যক্তির উপর। তাই সমিতির সদস্যের মধ্যে যার সমিতিতে জমাকৃত অর্থসহ অন্যান্য সম্পদ মিলে যাকাতের নেসাব পরিমাণ হবে তার উপর যাকাত ফরয হবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ২/১২৩; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩০৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৮১; মাজমাউল আনহুর ১/২৯৯

Sharable Link

কফিকুল ইসলাম - মোহাম্মদপুর, ঢাকা

৯১৬. Question

আমি প্রায় সময় অফিস-আদালতের ঝামেলায় খুব ব্যস্ত থাকি। বাড়ির হাট-বাজার যথাসময়ে করতে পারি না। তাই বাড়ির পাশের একটি ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোরের সাথে চুক্তি করেছি যে, তোমার থেকে আমার বাসার কেউ মাল নিতে আসলে দিয়ে দিবে এবং লিখে রাখবে। আমি প্রতি মাসে বেতন পেয়ে তোমার পাওনা পরিশোধ করে দিব। সে সম্মত হয়েছে। ফলে সেই দোকান থেকে প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি আসি নিজে নিয়ে আসি আবার কখনো বাড়ির অন্যরা নিয়ে আসে। অধিকাংশ সময় দামদর উল্লেখ করা হয় না। দোকানী নিজেই একটা দাম লিখে রাখে। তার লিখা অনুযায়ী মাস শেষে মূল্য পরিশোধ করতে হয়। সে একজন বিশ্বস্ত মানুষ তাই সে খিয়ানত করে না। এখন আমার প্রশ্ন হল, এভাবে মূল্য নিধার্রণ করা ছাড়া পণ্য নিয়ে আসলে পণ্য ভোগ করা জায়েয হবে কি না?

Answer

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী দোকানীর সাথে মাস শেষে মূল্য পরিশোধের চুক্তি থাকলেও পণ্য গ্রহণের সময় মূল্য নিধার্রণ করে নেওয়াই নিয়ম। এতে কারবারটি নিষ্কন্টক থাকে। অবশ্য কেউ যদি মূল্য নিধার্রণ ছাড়াই পণ্য নিয়ে আসে এবং মাস শেষে দোকানীর লিখিত মূল্য পরিশোধ করে দেয় তবে ওই কারবার শুদ্ধ হয়ে যাবে। যদিও কাজটি অনুত্তম হবে।

-আলবাহরুর রায়েক ৫/২৫৯; রদ্দুল মুহতার ৪/৫১৬; মুগনীল মুহুতাজ ২/৫; বুহুস ফী কাযায়া ফিকহিয়্যাহ মুআসারা ১/৬৫-৬৮

Sharable Link

মুহাম্মাদ ছাইফুল্লাহ জহির - নেত্রকোনা

৯১৭. Question

আমার মা মাদরাসায় এক কাঠা জমির মূল্য দিবেন। তিনি যদি উক্ত জমির মূল্য এখন সরাসরি মাদরাসায় না দিয়ে কোনো ইসলামী সমিতির মাদরাসা ফাণ্ডে এই নিয়মে দেন যে, সমিতি উক্ত জমির মূল্য দিয়ে ব্যবসা করবে এবং প্রতি বছর যা লাভ আসবে তা সমিতির লভ্যাংশ হিসাবে তার অর্ধেক মুনাফা মাদরাসায় দিয়ে যাবে এবং প্রয়োজনে এক সময় আসল টাকাও দিয়ে দিবে। এভাবে উল্লেখিত জমির মূল্য সমিতির মাদরাসা ফান্ডে দেওয়া জায়েয হবে কি? জানালে উপকৃত হব।

Answer

যে সমিতিতে টাকা জমা দিতে চাচ্ছেন তার সকল কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করার পর যদি কোনো বিজ্ঞ আলেম বা বিজ্ঞ মুফতী সেটির কার্যক্রমকে বৈধ বলেন তবে প্রশ্নোক্ত প্রক্রিয়ায় আপনার জন্য তা দেওয়া বৈধ হবে। তবে সরাসরি মাদরাসার হাতে দিয়ে দেওয়াই অধিক উত্তম।

Sharable Link

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক -

৯১৮. Question

হজ্বের মধ্যে ১২ তারিখ সূযার্স্ত হয়ে গেলে নাকি মিনা থেকে চলে আসা জায়েয নয়। আমাদের কাফেলার একজন হুজুর একথা বললেন। তাঁর কথা শুনে আমরা তড়িঘড়ি করে পাথর মেরে মিনা ত্যাগ করি। কিন্তু আমাদের কাফেলার প্রধান হুজুর বৃদ্ধ ও মেয়েদের নিয়ে মাগরিবের পর পাথর মেরে মক্কায় আসেন। মিনায় রাত্রি যাপন করেননি। এনিয়ে আমদের মধ্যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। জানতে চাই যারা ওই রাতে মিনায় থাকেনি তাদের উপর কি কোনো জরিমানা আসবে?

Answer

১২ই জিলহজ্ব সূর্য ডুবে গেলে ১৩ তারিখ পাথর না মেরে মিনা ত্যাগ করা মাকরূহ। কিন্তু কেউ যদি চলে যায় তবে কোনো জরিমানা আসবে না। অবশ্য ওজরবশত বেরুলে মাকরূহও হবে না। কিন্তু যদি মিনাতে ১৩ তারিখের সুবহে সাদিক হয়ে যায় তবে ১৩ তারিখ পাথর মারা ওয়াজিব। ১৩ তারিখ পাথর না মারলে দম ওয়াজিব হবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ২/১৩৭; মানাসিক মোল্লা আলী কারী ২৪৪; রদ্দুল মুহতার ২/৫২২; ফাতহুল কাদীর ২/৩৯২; গুনয়াতুন নাসিক ১৮০

Sharable Link

শহীদুল ইসলাম - ঠনঠনিয়া, বগুড়া

৯১৯. Question

প্রায় ৪ মাস আগের ঘটনা। একদিন একটি গুই সাপ আমাদের মুরগির একটি বাচ্চা নিয়ে চলে যায়। পরে খোঁজাখুঁজির করে গুই সাপের গর্তের মুখে পৌঁছি। সেখানে গিয়ে দেখি অলৌকিকভাবে অন্য একটি সুন্দর মুরগির বাচ্চা হাটাহাটি করছে। আমি সেটি ধরে নিয়ে আসি। এখনও বাচ্চাটি আমাদের বাড়িতে আছে। বেশ বড়  হয়েছে। জানতে চাই এটি কি আমাদের জন্য খাওয়া জায়েজ হবে? উল্লেখ্য, বাচ্চাটি আনার পর আশপাশের প্রায় সব বাড়িতে যথাসম্ভব খোঁজ লাগিয়েও কোনো মালিক পাওয়া যায়নি।

Answer

গুই সাপের বাসার নিকট থেকে যে বাচ্চাটি নিয়ে এসেছেন তার মালিক নিশ্চয়ই অন্য কেউ। তাই এখন যদি এর আসল মালিককে পাওয়া সম্ভব না হয় তবে মালিকের পক্ষ থেকে মুরগির বাচ্চাটি সদকা করে দিতে হবে।

Sharable Link

মুহাম্মাদ সাইফুল্লাহ জহির - নেত্রকোনা

৯২০.. Question

বর্তমান তাবলীগ জামাত শুধু মুসলমানদেরকে দাওয়াত দেয়। ভিন্ন কোনো ধমার্বলম্বীদের দাওয়াত দেয় না। আবার অনেকের কাছে শুনি, এখন নাকি মুসলমান ব্যতীত অন্য কোনো জাতিকে ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দেওয়া জায়েয নয়। আসলেই কি ভিন্ন জাতি অর্থাৎ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ইত্যাদি জাতির মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দেওয়া জায়েয নয়? নাকি গোপনে দাওয়াত দেওয়া জায়েয আছে? এই বিষয়ে বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।

Answer

কোনো বিধর্মীকে এখন দাওয়াত দেওয়া জায়েয নেই এ জাতীয় কথা ঠিক নয়। কুরআন-হাদীসের অসংখ্য দলীল তাদেরকেও ইসলামের দাওয়াত দিতে নির্দেশ করে। আর প্রশ্নে আপনি যে দাবি করেছেন যে, বর্তমান তাবলীগ জামাত বিধমীর্দের দাওয়াত দেয় না এ কথাটিও বাস্তবসম্মত নয়। ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিভিন্ন কাফের রাষ্ট্রেও অসংখ্য তাবলীগী জামাত সফর করে থাকে। তাদের দাওয়াতে অসংখ্য বিধমীর্ মুসলমানও হচ্ছে। অনেকের বাপ-দাদা মুসলমান ছিল কিন্তু তারা পরিবেশের কারণে ধমার্ন্তরিত হয়ে গেছে এমন অনেকে তাদের দাওয়াতে ইসলামে পুনদীক্ষিত হয়েছেন।

Sharable Link

মুহাম্মাদ আব্দুল হক চৌধুরী -

৯২১. Question

গত ঈদুল-আযহার নামাযের পূর্ব মুহূর্তে আমাদের ইমাম নামাযের নিয়তসহ নিয়ম কানুন বলে দেন। তিনি বলেন, প্রথম তিনবার আল্লাহু আকবার বলে তাকবীর দিয়ে হাত ছেড়ে চতুর্থ বারে হাত বাঁধতে হবে। আমি তাতে দ্বিমত পোষন করি এবং বলি যে, প্রথম তাকবীরের সাথে সাথেই হাত বাঁধতে হবে এবং সানা পড়ার পর তিন বার হাত ছেড়ে ছেড়ে তাকবীর দিতে হবে এবং পরবতীর্তে হাত বেঁধে ইমাম সূরা ফাতিহা এবং অন্য সূরা পড়বেন। ইমাম সাহেব আমার প্রস্তাবে সম্মত না হয়ে তার প্রস্তাবিত উপায়ে নামায আদায় করেন। আমাদের নামায হয়েছে কি না তা জানার জন্য বিভিন্ন আলেমের নিকট জিজ্ঞাসা করি। তাদের কেউ বলেছেন, নামায হয়েছে; কেউ বলেছেন, নামায হয়নি। এমতাবস্থায় আমাদের নামায হয়েছে, কি না? জানালে উপকৃত হব।

Answer

ঈদের নামাযে প্রথম তাকবীর হল তাকবীরে তাহরীমা। এই তাকবীরের পর সানা পড়তে হয়। তাই প্রথম তাকবীরের পর হাত বাঁধা সুন্নত। এর পরবর্তী দুই তাকবীর বলে হাত ছেড়ে দিবে তৃতীয় তাকবীরের পর, যা তাকবীরে তাহরীমার তাকবীরসহ হিসাব করলে চতুর্থ তাকবীর হয়, আবার হাত বাঁধবে। এসকল তাকবীরের মধ্যে উক্ত নিয়মে হাত বাঁধা ও হাত ছাড়া সুন্নত। প্রথম তাকবীর তথা তাকবীরে তাহরীমার পর হাত না বাঁধা ভুল। তদ্রূপ তাকবীরে তাহরীমার পর তৃতীয় তাকবীর বলে হাত বাঁধা নিয়ম। এখানে হাত না বেঁধে ছেড়ে দেওয়া ভুল। অনেকে তাকবীরের পর হাত ছেড়ে দিয়ে পরে বাঁধে-এটা ঠিক নয়। সুতরাং প্রথম তাকবীরের পর হাত না বেঁধে যদি ছেড়ে দেয় তাহলে নামায আদায় হয়ে যাবে, তবে সুন্নত ছেড়ে দেওয়ার কারণে অনুত্তম হবে।

উল্লেখ্য, কোনো বিষয়ে না জেনে কথা বলা দোষনীয়। এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।

Sharable Link

আবুল হাশেম হাওলাদার - হেসামদ্দি, বরিশাল

৯২৮. Question

বিবাহের মজলিসে কাবিননামার ১৮ নং ধারা তথা স্ত্রীকে তালাক প্রদানের অধিকার প্রদান সম্পর্কে কোনো আলোচনা হয়নি; বরং কাজী সাহেব ফরম পূরণ করে বরের স্বাক্ষর নিয়ে কাবিন শেষ করেন। এরপর শরয়ী নিয়মে বিবাহ সম্পন্ন হয়।

প্রায় দুই বছর যাবত আলাদা থাকার পর মেয়েপক্ষ বিবাহ ভঙ্গ করতে চাচ্ছে। প্রশ্ন হল, স্ত্রী এখন বিবাহ ভেঙ্গে দিতে পারবে কি না? অর্থাৎ বর্তমান সরকারি আইন অনুসারে সে ডিভোর্স করতে পারবে, শরয়ী দৃষ্টিতে এটা সহীহ হবে কি না?

Answer

প্রশ্নের মূল উত্তরের আগে জানা দরকার যে, শরীয়তের দৃষ্টিতে তালাকের ক্ষমতা রয়েছে শুধু স্বামীর। তবে স্ত্রীকে স্বামী কতৃর্ক তালাক গ্রহণের ক্ষমতা প্রদান করা হলেই স্ত্রীও নিজ নফসের উপর তালাক গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু যদি এধরনের ক্ষমতা না দেওয়া হয় তাহলে স্ত্রী নিজের উপর তালাক কার্যকর করতে পারবে না। স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে তালাক গ্রহণের ক্ষমতা অর্পণ করা হলে শরীয়তের পরিভাষায় একে তাফউইজ তালাক বলে। আর স্বামী তার স্ত্রীকে তালাক গ্রহণের ক্ষমতা তখনই দিতে পারবে যখন তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যাবে। তাই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার আগে কোনো পাত্র পাত্রীকে তালাক গ্রহণের অনুমতি দিলেও তা ধর্তব্য হবে না। কারণ, বিয়ের আগে পাত্র নিজেই তালাক প্রয়োগের ক্ষমতা রাখে না। সুতরাং সে অন্যকে কীভাবে অধিকার দিবে? শরীয়তের উপরোক্ত নীতির আলোকে সুস্পষ্টভাবে বোঝা গেল যে, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু কাবিননামাটি পূরণ এবং তাতে স্বাক্ষর হওয়ার কাজ বিবাহের আকদের পূর্বেই সংগঠিত হয়েছে তাই বিবাহের আগে কাবিননামার ১৮ নং ধারায় স্ত্রীকে তালাক গ্রহণের যে অধিকার দেওয়া হয়েছে শরীয়তের দৃষ্টিতে তা গ্রহণযোগ্য নয়। সুতরাং প্রশ্নের বর্ণনামতে সত্যই যদি কাবিননামাটি বিয়ের আগেই সম্পন্ন করা হয়ে থাকে তাহলে এই ক্ষমতাবলে স্ত্রী নিজে তালাক গ্রহণ করতে পারবে না, যদি করে তবে দেশীয় আইনে তা কার্যকর ধরা হলেও শরীয়তে সেই তালাক ধর্তব্য নয়। এতে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হবে না।

উল্লেখ্য, যদি ওই দম্পতির মাঝে সমঝোতা ও মনের মিল না হয় এবং মহিলাটি ওই ব্যক্তির কাছে থাকতে কিছুতেই ইচ্ছুক না হয় তাহলে স্বামীর জন্য উক্ত স্ত্রীকে আটকে রাখাও ঠিক হবে না; বরং এক্ষেত্রে তার উচিত হল মৌখিকভাবে মহিলাটিকে তালাক গ্রহণের ক্ষমতা দিয়ে দেওয়া। যদি সে তা না করে তাহলে ওই মহিলা আদালতের আশ্রয় নিয়ে এবং সঠিক ঘটনাবলী জানিয়ে বিষয়টির সুরাহা করতে পারে।

Sharable Link

এস, এম আলাউদ্দীন - ইমাম, দেউলীচৌড়া পাড়া জামে মসজিদ <br> নবীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ

৯২৯. Question

নিম্নের কয়েকটি পদ্ধতির ব্যবসা সম্পর্কে শরীয়তের ফয়সালা জানিয়ে বাধিত করবেন।

১ম প্রদ্ধতি : কোনো ব্যক্তি কারো থেকে ঋণ চাইলে তাকে নগদ অর্থ না দিয়ে ঋণ গ্রহীতার প্রয়োজনীয় মালামাল ক্রয় করে তা ঋণদাতার জিম্মায় আনা হয়। যেমন- ধান, চাল, সেলাই মেশিন ইত্যাদি। তারপর ঋণ গ্রহীতার কাছে এক বছর অথবা দুই বছর মেয়াদী মাসিক কিস্তির মাধ্যমে বাকিতে কিছু বেশি মূল্যে বিক্রি করা হয়। যেমন- শফিক সাহেব করীম সাহেবের কাছে পাঁচ হাজার টাকা ঋণের আবেদন করায় তাকে নগদ অর্থ না দিয়ে তার ইচ্ছানুযায়ী ৫০০০/- টাকার চাল ক্রয় করে করীমের জিম্মায় এনে শফিক সাহেবের কাছে উক্ত পাঁচ হাজার টাকার চাল এক বছর মেয়াদী ১২ কিস্তিতে আদায়ের শর্তে ছয় হাজার টাকায় বিক্রি করা হল।

২য় পদ্ধতি : কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে জমি ক্রয় করে উক্ত জমি মাটি ভরাট করে অধিক মূল্যে বিক্রি করা অথবা মার্কেট নির্মাণ করে দোকান ভাড়া দেওয়া।

৩য় পদ্ধতি : একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জমি ক্রয় করে উক্ত জমি মাটি ভরাট করে বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করে এক বছর বা দুই বছর মেয়াদে মাসিক কিস্তিতে পরিশোধ করার শর্তে বাকি টাকায় বিক্রি করা। যেমন- আব্দুর রহিম সাহেবের কাছ থেকে ২০ শতাংশ জমি ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ১০হাজার টাকা শতাংশ হিসাবে দুই লক্ষ টাকায় ক্রয় করে মাটি ভরাট করে এক বছর মেয়াদী ১২ কিস্তিতে আদায়ের শর্তে প্রতি শতাংশ ২০ হাজার টাকা দরে গ্রাহকদের কাছে বাকি তো বিক্রি করল।

৪র্থ পদ্ধতি : একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কৃষিপণ্য বা শিল্পজাত দ্রব্য অগ্রিম মূল্য পরিশোধে ক্রয় করা হয়। চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওই প্রতিষ্ঠান কতৃর্পক্ষ দাম পরিশোধ করে, কিন্তু পণ্য গ্রহণ করে নির্ধারিত মেয়াদের পর। যেমন- আব্দুল মালেকের কাছ থেকে কোনো প্রতিষ্ঠান ২০০/- টাকা মণ দরে ২০ মণ ধান নগদ ৪০০০/- টাকায় ক্রয় করে এই শর্তে যে, আব্দুল মালেক সাহেব তিন মাস পর ১৫ তারিখে ভালো মানের ২০ মণ বোরো ধান ওই প্রতিষ্ঠানকে প্রদান করবে।

৫ম পদ্ধতি : একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন শিল্প ও বানিজ্য অংশীদারির ভিত্তিতে মূলধন যোগায়। চুক্তিতে লিখিত হার অনুযায়ী বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান লাভ পায়। যেমন- কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আব্দুল করীমের শিল্প প্রতিষ্ঠানে দুই লক্ষ টাকা মূলধন বিনিয়োগ করল। এই শর্তে যে, লাভ-ক্ষতির ভিত্তিতে লভ্যাংশ থেকে শতকরা ২৫% বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান পাবে কিন্তু বর্তমানে আব্দুল করীম সাহেব প্রতি মাসে ৩০০০/- টাকা প্রতিষ্ঠানকে প্রদান করবে। বছর শেষে লাভ-ক্ষতি হিসাব করে বাকী টাকা প্রদান করবেন।

Answer

১ম পদ্ধতি, হিসাব করে বাকী প্রদান করবেন। প্রশ্নপত্রে প্রথম পদ্ধতিতে যে কারবারের কথা বলা হয়েছে তা ফিকহের পরিভাষায় বাইয়ে মুআজ্জাল কিংবা বাইয়ে মুরাবাহা মুআজ্জাল হিসাবে পরিচিত। এ দুটি কারবারে সামান্য কিছু পার্থক্য থাকলেও মূল শর্ত ও উদ্দেশ্যের বিবেচনায় দুটিতে তেমন ফারাক নেই। জানা প্রয়োজন যে, এ চুক্তিটি সুদমুক্ত শরীয়তসম্মত হওয়ার জন্য বেশ কিছু শর্ত রয়েছে। প্রশ্নপত্রে মাত্র দুএকটি শর্তের প্রতি ইঙ্গিত করা রয়েছে। বাকী শর্তের উল্লেখ নেই। যেগুলোর কোনো একটি ব্যতিক্রম ঘটলেই কারবারটি নাজায়েয হয়ে যাবে। নিম্নে এই কারবার বৈধ হওয়ার জন্য উল্লেখযোগ্য শর্তসমূহ পেশ করা হল :

১) বিনিয়োগকারী বা বিক্রেতা যে মাল বিক্রি করতে চাচ্ছে, বিক্রির সময় সেটি তার মালিকানাধীন ও হস্তগত হতে হবে। সুতরাং গ্রাহক যে মাল খরিদ করতে আগ্রহী তা বিক্রেতার মালিকানায় না থাকলে মালটি আগে খরিদ করে নিজের হস্তগত করতে হবে।

২) মাল ক্রয় ও হস্তগত হওয়ার পর পূর্বের অঙ্গীকার অনুযায়ী গ্রাহকের নিকট ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি সম্পন্ন করতে হবে। অর্থাৎ বিক্রেতা বা তার প্রতিনিধি বলবে যে, এই মাল এত মূল্যে এই মেয়াদের জন্য আপনার নিট বিক্রি করলাম। তখন গ্রাহক খরিদ করলাম বলে তা গ্রহণ করবে।

৩) বিক্রেতা মাল ক্রয় ও হস্তগত হওয়ার আগে কোনো চুক্তি সম্পাদন করতে চাইলে সেখানে বিক্রির অঙ্গীকার হিসাবে তা সম্পাদিত হবে। এ ক্ষেত্রে কোনোক্রমেই ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি চুড়ান্ত ও সম্পাদন করা যাবে না।

৪) ক্রেতা ও বিক্রেতার মাঝে যে পণ্য আদান-প্রদান হবে কারবার শেষে পণ্যটি যার কাছে ছিল তার নিকটেই ফিরে না আসতে হবে। যেমন, কোনো কারবার এভাবে ঘটে যে, এক ব্যক্তির নিকট পণ্য রয়েছে। সে পণ্যটি গ্রাহকের নিকট বেশি মূল্যে বাকিতে বিক্রি করল। অতঃপর গ্রাহক আবার তা প্রথম ব্যক্তির নিকট কম মূল্যে নগদে বিক্রি করেদিল। অথবা প্রথম ব্যক্তি একজন থেকে পণ্য ক্রয় করল এ বলে যে, এ পণ্য আপনার নিকট আবার বিক্রি করে দেওয়া হবে। এভাবে ক্রয় করে তা গ্রাহকের নিকট বিক্রি  করে দিল। অতপর গ্রাহক ওই পণ্য যার কাছ থেকে প্রথম ব্যক্তি নিয়েছিল তার কাছেই পুনরায় বিক্রি করে দিল, যেহেতু আগের থেকেই কথা রয়েছে এ মাল তার নিকট ফিরে আসবে।

এধরনের কারবার জায়েয নয়। কারণ এতে কোনো পক্ষেরই ক্রয়-বিক্রয় উদ্দেশ্য থাকে না; বরং  ক্রয়-বিক্রয়কে সুদ গ্রহণের ছুতা হিসাবে অবলম্বন করা হয়ে থাকে মাত্র।

৫) পণ্যের মূল্য, মূল্য আদায়ের দিন তারিখ এবং ক্রয়-বিক্রয়ের সময় সুনির্ধারিত হতে হবে। মূল্য কিস্তিতে আদায়যোগ্য হলে প্রতিটি কিস্তি আদায়ের তারিখও তখনই চুড়ান্ত হতে হবে।

৬) নির্ধারিত মেয়াদে কিংবা কিস্তি আদায়ে বিলম্ব হলে পূর্ব নির্ধারিত মূল্যের অতিরিক্ত নেওয়া যাবে না। তদ্রূপ চুক্তিকালীন এ শর্তও করা যাবে না যে, নির্ধারিত মেয়াদের আগেই কিস্তি পরিশোধ করে দিলে মূল্য কম নেওয়া হবে। যেমন, পণ্যের নগদ মূল্য বিশ হাজার টাকা। এক বছর মেয়াদে বিক্রির জন্য এমূল্য ধরা হয়েছে একুশ হাজার টাকা। এখন এ শর্ত করা বৈধ হবে না যে, ছয় মাসের মধ্যে মূল্য পরিশোধ করে দিলে বিশ হাজার পাঁচশত টাকা নেওয়া হবে। অবশ্য চুক্তিকালীন কোনো প্রকার শর্ত ও পূর্বনির্ধারিত কোনো নিয়ম না থাকলে এ ক্ষেত্রে বিক্রেতার নৈতিক দায়িত্ব হল মেয়াদের কারণে বর্ধিত মূল্যের অর্ধেক ফেরত দেওয়া। তবে এটি কোনোভাবেই পূর্ব শর্তকৃত না হতে হবে।

৭) এই কারবারের সাথে শরীয়ত বিরোধী অন্য কোনো শর্ত জড়িত না হতে হবে।

উল্লেখ্য শরীয়ত কতৃর্ক নির্দেশিত এ ধরনের ক্রয়-বিক্রয় লেনদেন ওই গ্রাহকের জন্যই প্রযোজ্য, যে গ্রহাক মূলত পণ্যই গ্রহণ করতে চায়;নগদ অর্থ নেওয়া যার উদ্দেশ্য নয়। সুতরাং যে ব্যক্তি আসলে পণ্য গ্রহণ করতে চায় না; বরং নগদ অর্থ নিতে চায় তার নিকট কোনো পণ্য এ জন্য বিক্রি করা যে, সে তা বাজারে বিক্রি করে হলেও নগদ অর্থ হাসিল করবে -এটি শরীয়তের দৃষ্টিতে অপছন্দনীয় কাজ। এতে প্রকারান্তরে ইসলামী বিনিয়োগের নামে পূঁজিবাদী পদ্ধতিকেই জিইয়ে রাখা হয়। শরীয়ত এ ধরনের কারবারকে নিরুৎসাহিত করে। যে সকল লোক মাল না নিয়ে  নগদ অর্থই নিতে চায় উদ্দেশ্যের দিক দিয়ে তারা দুই প্রকার।

(ক) নগদ টাকা নিয়ে মিল ফ্যাক্টরি বা নিজের কোনো ব্যবসায় লাগাবে।

(খ) নগদ টাকা নিয়ে কোনো প্রয়োজন যেমন, চিকিৎসা, খানাপিনা ইত্যাদি কাজে খরচ করবে।

প্রথম প্রকার লোকের নিকট শরীয়তস্বীকৃত ব্যবসায়ি পন্থাসমূহ যথা মুদারাবা, মুসারাকা, ইসতিসনা এবং ইজারা ইত্যাদি পন্থায় কোনো প্রতিষ্ঠান অর্থলগ্নি করতে পারে। এধরনের লোকের কাছেও ওই সকল পন্থা অবলম্বন না করে তার চাহিদা বহির্ভূত কোনো পণ্য এ নিয়তে ক্রয়-বিক্রয় করা অনুত্তম যে, সে তা নিয়ে অন্যত্র বিক্রি করে টাকা ক্যাশ করবে, অতঃপর নিজে ব্যবসায় লাগাবে।

আর দ্বিতীয় প্রকারের লোকদের নিকট কোনো পণ্য উক্ত নিয়তে বিক্রি করা আরো খারাপ। এধরনের লোকের নিকট ব্যবসার নিয়তে টাকা লগ্নি করা শরয়ী মাসআলার খেলাপ। শরীয়ত বলে, এ লোক যদি যাকাত গ্রহণের যোগ্য হয় তাহলে সম্ভব অনুযায়ী যাকাত-ফিতরা, দান ও সদকা দিয়ে সহয়তা কর। আর যদি যাকাত গ্রহণের যোগ্য না হয় তাহলে সাধ্যানুযায়ী নফল সদকা দেওয়া কিংবা সম্ভব হলে কর্জে হাসানার ব্যবস্থা করা। কিন্তু আজকাল এধরনের লোকের নিকটও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে অর্থলগ্নি করতে দেখা যায়।

২য় ও ৩য় পদ্ধতি

এ দুটি পদ্ধতিতে জমি বিক্রি যে জায়েয তা কারো অজানা নয়, কিন্তু এ জানা কারবারেও শরয়ী নীতিমালা পালন না করলে কিংবা শরীয়ত পরিপন্থী কোনো শর্ত জুড়ে দিলে এ কারবারও অবৈধ হয়ে যাবে। তাই প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত এ বর্ণনা কারবারটি বৈধ উপায়ে হওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়; বরং কী কী প্রক্রিয়া এ কারবার সংঘটিত হয়েছে তা বিস্তারিত জানালেই উক্ত কারবারের হুকুম বলা যাবে।

৪র্থ ও ৫ম পদ্ধতি

৪নং কারবারটি হল বাইয়ে সালাম (আগাম খরিদ) আর ৫নং কারবারটি শিরকত (যৌথমূলধনী কারবার)। এ দুটি কারবারের বৈধতার জন্য রয়েছে অনেকগুলো শর্ত। শর্তগুলোর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণও বিস্তর, যার কিছুই প্রশ্নে উল্লেখ নেই। আর এভাবে পত্রিকার বিভাগের স্বল্প পরিসরে এত লম্বা আলোচনাও অনেকটা দুষ্কর। তাই এ সকল কারবার বৈধ  উপায়ে করতে চাইলে কোনো বিজ্ঞ আলেম কিংবা মুফতীর নিকট গিয়ে তার নিয়মাবলি জেনে নিয়ে সে অনুযায়ী করতে হবে।

Sharable Link

মুহাম্মাদ রুহুল আমীন - খুলনা

৯৩০. Question

...

Answer

আপনার প্রশ্নের উত্তর ফোনে বা সরাসরি জেনে নিন।

Sharable Link

ইবনে ইদ্রীস - মুহাম্মাদ নগর মাদরাসা, খুলনা

৯৩১. Question

জনৈক মাওলানা সাহেব জুমার বয়ানে বলেন, ইবাদতে সুন্নাত আদায় না করে শুধু ফরজ আদায় করলে ইবাদতই হবে না। উদাহরণস্বরূপ বলেন, অজুতে সুন্নত বাদ দিয়ে শুধু ফরজ আদায় করলে নামায হবে না। তবে এটা তখনই যখন পানি পরিপূর্ণ থাকবে। কেননা এখন সুন্নত আদায় করা আবশ্যক। আর যখন পানির সংকট দেখা দিবে তখন শুধু ফরজ আদায় করলে নামায আদায় হয়ে যাবে। তার এ বক্তব্য কতটুকু সঠিক?

Answer

সুন্নত প্রত্যেকটি আমলে পূর্ণতা আনে এবং তার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। সুন্নত সহ আদায় করা আমল আল্লাহ তাআলার দরবারে সহজেই কবুল হয়ে থাকে। কিন্তু সুন্নত আদায় না করলে ইবাদত বা আমল সহীহ হবেই না এ ধারণা ভুল। যেমন, পর্যাপ্ত পানি থাকা সত্ত্বেও কোনো ব্যক্তি যদি হাত বা মুখ শুধু একবার ধৌত করে, তিনবার ধোয়ার সুন্নত পালন না করে তবে সবাই বলবে তার অজু সহীহ হয়েছে এবং এই অজু দ্বারা নামায পড়া ও কুরআন মজীদ স্পর্শ করা যাবে। এই সুন্নত ছেড়ে দিলে অজু হবে না এমন ধারণা ঠিক নয়।

উল্লেখ্য, শরীয়তের প্রত্যেকটি হুকুম স্ব স্ব স্থানে রেখেই যথাযথভাবে আমল করতে হবে। প্রত্যেকটি আমল কবুল হওয়ার জন্য এবং আল্লাহ তাআলার নিকটে পছন্দনীয় হওয়ার জন্য সুন্নাত অনুযায়ী হওয়া বাঞ্ছনীয়। সুতরাং এ ব্যাপারে উদাসীনতার পরিচয় দেওয়া যেমন অন্যায় তদ্রূপ সুন্নতকে ফরয-ওয়াজিবতুল্য জ্ঞান করাও অযৌক্তিক। আল্লাহ তাআলা সকলকে দ্বীনের সহীহ বুঝ দান করুন। আমীন।

Sharable Link