মুহাম্মাদ আমিরুল ইসলাম - সুজানগর, পাবনা

৪৩৯০. Question

আমাদের দুই ভাইয়ের একটি আমবাগান আছে। আমি ঢাকায় থাকি বিধায় সেটি দেখাশোনা করা আমার পক্ষে সম্ভব হয় না। তাই আমি আমার ভাইয়ের সাথে এভাবে চুক্তি করতে চাচ্ছি যে, সে এটি দেখাশোনা করবে। যা খরচ হবে তা আমাদের সম্মিলিত বলে গণ্য হবে। আর মোট লাভ থেকে তাকে নিচের দুই পদ্ধতির কোনো এক পদ্ধতিতে লাভ দেওয়া হবে।

১. ফল বিক্রয় বাবদ প্রাপ্ত লাভ থেকে ২০% তাকে দিয়ে বাকিটা আমরা দুই ভাগে ভাগ করে নেব।

২. সারা বছরের জন্য তাকে নির্ধারিত পরিমাণ টাকা পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া হবে। ফল বিক্রয় বাবদ প্রাপ্ত অর্থ থেকে তার পারিশ্রমিক প্রথমে প্রদান করা হবে। এরপর খরচ বাদে অবশিষ্ট টাকা দু’জন ভাগ করে নেব।

শরীয়তের দৃষ্টিতে উভয় পদ্ধতির বিধান কী? দয়া করে জানালে উপকৃত হব।

 

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার লিখিত প্রথম পদ্ধতিটি অবলম্বন করা যাবে না। দ্বিতীয় পদ্ধতি অর্থাৎ পারিশ্রমিক প্রদানের নীতিটি সংশোধন করে তা নি¤েœাক্ত পন্থায় অবলম্বন করা যেতে পারে। তা হল, আপনার অংশের দেখা-শোনার জন্য নির্দিষ্ট অঙ্কের পারিশ্রমিক আপনি তাকে প্রদান করবেন- এ মর্মে একটি চুক্তি হবে। সেক্ষেত্রে বাগানে ফল কম-বেশি যাই হোক সে তার নির্ধারিত পারিশ্রমিক পাবে। আর সম্পূর্ণ ফল আপনাদের মালিকানা অনুপাতে বণ্টন হবে। আপনি চাইলে তাকে আপনার ফল বিক্রি করে তা থেকে পূর্বে নির্ধারিত পারিশ্রমিক দিতে পারেন। আর ফল যদি তার চেয়ে কম হয় তাহলে নিজ থেকে আপনার ভাইয়ের পারিশ্রমিকের টাকা দিতে হবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ৫/২৭০; মাজমাউল আনহুর ৩/৫৪১; শরহুল মাজাল্লাহ, আতাসী ৪/৩৯৯; আদ্দুররুল মুখতার ৬/২৯২

Sharable Link

মারুফ হাসান - বেলকুচি, সিরাজগঞ্জ

৪৩৯১. Question

আমি দশ লক্ষ টাকা পুঁজি নিয়ে একটি দোকান শুরু করতে চাচ্ছি। আমার এক বন্ধু এবং আমি এটি দেখাশোনা ও পরিচালনা করব। আমি একটি চাকরি করি। তাই বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত দোকানে থাকব। ছুটির দিনেও থাকব। আর সে পুরো সময় থাকবে এবং যাবতীয় কাজ আঞ্জাম দেবে। চুক্তি হবে, খরচ বাদ দিয়ে যা লাভ থাকবে তা থেকে ৩০% নেবে সে, আর ৭০% নেব আমি। শরীয়তের দৃষ্টিতে আমাদের উক্ত চুক্তিতে কোনো সমস্যা আছে কি? দয়া করে জানাবেন।

 

Answer

প্রশ্নোক্ত পদ্ধতির চুক্তি শরীয়তসম্মত নয়। এক্ষেত্রে শতকরা হারে লাভ বণ্টনের চুক্তি সহীহ নয়। কেননা আপনার বন্ধু শুধু শ্রম দিচ্ছে। তাই এক্ষেত্রে আপনার বন্ধুর জন্য নির্ধারিত পারিশ্রমিক দেওয়ার পর আপনি চাইলে তাকে মুনাফা থেকেও শতকরা হারে একটি অংশ দিতে পারবেন।

-আলমাবসূত, সারাখসী ২২/৮৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪১২; আলমুহীতুল বুরহানী ১১/২১৭; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৫/৫২১; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৬৪৮

Sharable Link

ওসমান গনী - রায়েরবাগ, ঢাকা

৪৩৯২. Question

আমার একটি নতুন জুব্বা দোকানে আয়রন করতে দিয়েছিলাম। কাপড় আনার পর দেখি, সেটির ৭/৮ জায়গা পুড়ে ছিদ্র হয়ে গেছে। সেটি ছিল পাতলা সুতি কাপড়ের। হালকা টান লাগলেই ছিদ্র বড় হয়ে যেতে থাকে। ফলে এখন আর সেটি পরার উপযুক্ত নেই। দোকানের মালিককে বিষয়টি জানানো হলে বলল, নতুন লোক কাজ করতে গিয়ে পুড়িয়ে ফেলেছে। তো জুব্বাটি বানাতে যত টাকা খরচ হয়েছে তার অর্ধেক টাকা আমি দিয়ে দেব। কিন্তু আমার কথা হল, তার তো সেটির পূর্ণ মূল্য পরিশোধ করা উচিত। কারণ, সেটি ছিল নতুন কাপড়। তো শরীয়তের দৃষ্টিতে এ ব্যাপারে কী বিধান তা জানতে চাই।

 

Answer

এক্ষেত্রে মাসআলা হল, পুড়িয়ে ফেলা পোষাকের বাস্তব মূল্য ক্ষতিপূরণ হিসেবে আদায় করা। এক্ষেত্রে মূল্য নির্ধারণের জন্য কোনো বিজ্ঞ ব্যক্তির সহযোগিতাও নেওয়া যেতে পারে। অবশ্য কাপড়ের মালিক যদি কম টাকা নিতে রাজি হয়ে যায় তবে তার অবকাশ আছে।

-শরহু মুখতাসারিত তহাবী ৩/৩৯৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৫০০; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যা, মাদ্দা : ৬১১; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৬৬

Sharable Link

মুহাম্মাদ মুহসিন - উত্তরা, ঢাকা

৪৩৯৩. Question

আমার দোকানের কর্মচারীরা অনেক সময় কোনো জিনিস নষ্ট করে ফেলে বা তাদের অনিচ্ছায় কিংবা অবহেলায় নষ্ট হয়ে যায়। এসব ক্ষেত্রে তাদের থেকে জরিমানা নেওয়ার বিধান কী? এক্ষেত্রে তাদেরকে ছাড় দেওয়া হলে তাদের অবহেলা বাড়তেই থাকে। তাই শরীয়তের দৃষ্টিতে কোন্ কোন্ ক্ষেত্রে তাদের থেকে জরিমানা নেওয়া যাবে এবং কখন যাবে না- বিস্তারিত জানালে খুবই উপকৃত হব।

 

Answer

দোকানের পণ্য কর্মচারীদের হাতে আমানত। সাধ্যমত এগুলো হেফাযতের চেষ্টা করা তাদের দায়িত্ব। এ ব্যাপারে তাদেরকে সবসময় সজাগ থাকতে হবে। তবে এরপরও যদি তাদের অবহেলা বা সীমালঙ্ঘন ছাড়াই কোনো কিছু নষ্ট হয়ে যায় তাহলে এর জন্য তাদের থেকে ক্ষতিপূরণ নেওয়া যাবে না। আর যদি তারা ইচ্ছাকৃত কোনো কিছু নষ্ট করে কিংবা দায়িত্বে অবহেলা বা সীমালঙ্ঘনের কারণে বা তাদেরকে যেভাবে বলা হয়েছে তার বিপরীত কাজ করার কারণে কোনো কিছু নষ্ট হয় তাহলে সেক্ষেত্রে বাস্তব ক্ষতিপূরণ নেওয়া যাবে। অর্থাৎ যে জিনিসটি নষ্ট করেছে এর মূল্য বা তার থেকে কম গ্রহণ করা যাবে।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ২০৮৬৭; শরহু মুখতাসারিত তহাবী ৩/৩৯৯; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/১৪৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৫০০

Sharable Link

মুহাম্মাদ আবদুল লতিফ - শায়েস্তাগঞ্জ, হবিগঞ্জ

৪৩৯৪. Question

আমি  আমার এক বন্ধুর সাথে ব্যবসায় শরীক হতে চাচ্ছি। অর্থাৎ ব্যবসায় সে দেবে আট লক্ষ টাকা, আর আমি দেব দুই লক্ষ টাকা। ব্যবসা সে-ই পরিচালনা করবে। মাঝে মধ্যে সুযোগ হলে আমিও কিছু কাজ করব। সে মোট লাভের ২০% আমাকে দেবে, আর বাকিটা তার থাকবে। এভাবে চুক্তি করতে কোনো সমস্যা আছে কি?

 

Answer

প্রশ্নোক্ত হারে লাভ বণ্টনের ভিত্তিতে চুক্তি করা সহীহ হবে। ব্যবসায় লাভ হলে আপনি চুক্তিকৃত হারে লাভ পাবেন। আর লোকসান হলে তা উভয়কে নিজ নিজ পুঁজি অনুপাতে বহন করতে হবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ৫/৮৩; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যা, মাদ্দা : ১৩৭০; শরহুল মাজাল্লাহ, খালিদ আতাসী ৪/২৯৪; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৪/২৪৫

Sharable Link

মুহাম্মাদ ফজলুর রহমান - তেজগাঁও, ঢাকা

৪৩৯৫. Question

আমার ভাগিনা একটি দোকান করেছে। তার পুঁজি ছিল তিন লক্ষ টাকা। পরবর্তীতে তার টাকা প্রয়োজন হলে আমি তার ব্যবসায় দুই লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করি। তার সাথে এভাবে চুক্তি হয়েছে, দোকানের সকল খরচ বাদ দিয়ে যা লাভ থাকবে তা দু’জনের মাঝে অর্ধার্ধি হারে বণ্টন হবে। আর লোকসান হলে উভয়ে মূলধন অনুপাতে তা বহন করবে।

আমার এ বিনিয়োগ শরীয়তসম্মত হয়েছে কি না? দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে অর্ধার্ধি হারে লভ্যাংশ বণ্টনের চুক্তি করা সহীহ হয়নি। কেননা, উক্ত কারবারে আপনার কেনো শ্রম নেই। আর যৌথ মূলধনী কারবারে শ্রম না দিয়ে শুধু মূলধন বিনিয়োগ করলে নিজ মূলধনের চেয়ে বেশি হারে লভ্যাংশ নেওয়া বৈধ নয়।

অতএব, আপনার জন্য বিনিয়োগকৃত মূলধনের আনুপাতিক হারে সর্বোচ্চ ৪০% লভ্যাংশ গ্রহণ করা বৈধ হবে। এর অতিরিক্ত গ্রহণ করা বৈধ হবে না। সুতরাং এ অনুযায়ী চুক্তিটি সংশোধন করে নিতে হবে।

উল্লেখ্য, শরীকানা বা যৌথমূলধনী কারবারের সাথে সংশ্লিষ্ট শরীয়তের অনেক মাসআলা রয়েছে। তাই এ ধরনের কোনো কারবার শুরু করার সময় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পারদর্শী বিজ্ঞ আলেমদের থেকে তা জেনে নেওয়া কর্তব্য।

-কিতাবুল আছল ৪/৫২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৩২০; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৩৮৬; বাদায়েউস সানায়ে ৫/৮৩; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যা, মাদ্দা : ১৩৭২

Sharable Link

ইবনে ছিদ্দিক - নারায়ণগঞ্জ

৪৩৯৬. Question

আমরা তিন ভাইয়ের দুই জন চাকরিজীবী এবং সচ্ছল। আর আমি পড়ালেখা করছি। আমার এক বিবাহিতা বোন আছে। তার পরিবারও সচ্ছল। আমার পিতা নিজের পক্ষ হতে সকলের ওয়াজিব কুরবানী আদায় করতে চান। শরীয়তে কি এর অনুমতি আছে?

 

Answer

হ্যাঁ, আপনার পিতা আপনাদের পক্ষ হতে কুরবানী করলে তা সহীহ হবে এবং আপনাদের ওয়াজিব কুরবানী আদায় হয়ে যাবে। আমাদের সমাজে পিতা কর্তৃক সন্তানদের কুরবানী ও ফিতরা দিয়ে দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। তাই এক্ষেত্রে ভিন্ন করে অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে যদি কোনো এলাকায় এমন রেওয়াজ না থাকে এবং সন্তান পিতার সাথে একান্নভুক্তও না হয় তাহলে সেক্ষেত্রে পিতা সন্তানের পক্ষ থেকে কুরবানী করলে সন্তানের অনুমতি নিয়ে নিবেন বা সন্তানদের অবগত করবেন। এতেই সকলের কুরবানী আদায় হয়ে যাবে।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৭৩; ফাতাওয়া কাযীখান ৩/৩৪৫; ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ৬/২৯৫; রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৫ 

Sharable Link