তাসলীম - দিনাজপুর

৬৩৫৪. Question

কিছুদিন আগে আমার একটা সমস্যা নিয়ে একজন বুযুর্গ আলেমের নিকট যাই। তিনি বেশি বেশি কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করতে বলেন এবং কিছু দুআ পড়তে বলেন। সাথে কুরআনের আয়াত লেখা একটি কাগজও দেন এবং বলেন, এটি সাথে রাখতে পারলে ভালো। তাই বাড়িতে এনে তা তাবিজের খোলে ভরে হাতে লাগাই। এখন আমার সন্দেহ হচ্ছে যে, ঐ তাবিজ নিয়ে আমি টয়লেটে যেতে পারব কি না? হুজুরের নিকট সঠিক সমাধান জানতে চাই।

Answer

কুরআন কারীমের আয়াত লেখা কাগজটি যেহেতু তাবিজে ভরে নিয়েছেন তাই ঐ তাবিজ নিয়ে টয়েলেটে যাওয়া নাজায়েয নয়। তবে সম্ভব হলে তা খুলে রেখে যাওয়া উত্তম।

তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/১৬৭; ফাতহুল কাদীর ১/১৫০; হালবাতুল মুজাল্লী ১/১৯১; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী, পৃ. ৩০

Sharable Link

উম্মে আমাতুর রাহমান - চট্টগ্রাম

৬৩৫৫. Question

এক মহিলা চার মাস আগে সন্তান প্রসব করেছে। সন্তান হওয়ার পর থেকে নামায আদায় করতে গেলে মনে হয়, যোনিপথ দিয়ে বাতাস নির্গত হচ্ছে বা বাতাস প্রবেশ করছে বিষয়টি পুরোপুরি বুঝতে পারে। একজনের সাথে আলোচনা করলে সে জানায়, জরায়ুর অভ্যন্তরটা (বাচ্চা প্রসবের পর) ফাঁকা থাকার কারণে যখন পেটে চাপ পড়ে তখন এরূপ হয়। তাই এতে নামাযের সমস্যা হবে না।

আমার জানার বিষয় হল, তার কথা কি ঠিক? নামায আদায় হবে কি না? নাকি আবার ওযু করে নামায পড়তে হবে? বিষয়টি বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে এ কারণে ঐ মহিলার ওযু ভাঙবে না। কেননা মহিলাদের সামনের রাস্তা দিয়ে বায়ু নির্গত হলে ওযু নষ্ট হয় না। তাই এক্ষেত্রে পুনরায় ওযু করতে হবে না; বরং ঐ ওযু দিয়েই নামায পড়া সহীহ হবে।

শরহু মুখতাসারিল কারখী ১/৯৬; বাদায়েউস সানায়ে ১/১২১; আলমুহীতুর রাযাবী ১/৮০; আলবাহরুর রায়েক ১/৩০; হালবাতুল মুজাল্লী ১/৩৬০

Sharable Link

রিয়াদ - নোয়াখালী

৬৩৫৬. Question

সিজদায় কাউকে দেখি, উভয় হাত যমীনে বিছিয়ে রাখে। আবার কেউ কনুই হাঁটুর সাথে, বাহু পাশর্^দেশের সাথে মিলিয়ে রাখে। কেউ যমীন ও হাঁটু থেকে হাত পৃথক করে রাখে। জানার বিষয় হল, এক্ষেত্রে সুন্নাহসম্মত পদ্ধতি কোন্টি?

Answer

পুরুষের জন্য সিজদায় উভয় হাতের তালু যমীনে রেখে বাহু যমীন থেকে উঁচু করে রাখা সুন্নত। কোনো ওজর ছাড়া যমীনে হাত বিছিয়ে দেওয়া মাকরূহে তাহরীমী। হাদীস শরীফে এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন

اعْتَدِلُوا فِي السُّجُودِ، وَلاَ يَبْسُطْ أَحَدُكُمْ ذِرَاعَيْهِ انْبِسَاطَ الكَلْبِ.

তোমরা সিজদায় ইতিদালঅবলম্বন করবে। (অর্থাৎ অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সামঞ্জস্য রক্ষা করবে) আর কেউ যেন সিজদায় কুকুরের ন্যায় তার উভয় বাহু বিছিয়ে না দেয়। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৮২২)

আরেক হাদীসে এসেছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন

إِذَا سَجَدْتَ، فَضَعْ كَفَّيْكَ وَارْفَعْ مِرْفَقَيْكَ.

যখন তুমি সিজদা করবে তখন তোমার উভয় হাতের তালু যমীনে রাখবে, আর উভয় কনুই (যমীন থেকে) উঠিয়ে রাখবে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ৪৯৪)

আর পুরুষের জন্য সিজদায় হাতের কনুই হাঁটু ও উরু থেকে পৃথক রাখা এবং বাহু পাশর্^দেশ থেকে আলাদা রাখাও সুন্নত। কোনো ওজর ছাড়া এর খেলাফ করা  সুন্নত পরিপন্থী। হাদীস শরীফে এসেছে, আবু হুমাইদ রা. বলেন

أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا سَجَدَ أَمْكَنَ أَنْفَه وَجَبْهَتَه مِنَ الأَرْضِ، وَنَحَّى يَدَيْهِ عَنْ جَنْبَيْهِ.

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সিজদা করতেন তখন নাক ও কপাল যমীনের ওপর রাখতেন এবং উভয় পাশর্^দেশ থেকে দুই হাত পৃথক করে রাখতেন। (জামে তিরমিযী, হাদীস ২৭০)

অপর একটি হাদীসে এসেছে, আবদুল্লাহ বিন মালিক বিন বুহাইনা রা. বলেন

أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا صَلَّى فَرَجَ بَيْنَ يَدَيْهِ، حَتَّى يَبْدُوَ بَيَاضُ إِبْطَيْهِ.

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নামায পড়তেন তখন (সিজদার সময়) দুই হাত এমনভাবে পৃথক করে রাখতেন যে, তার বগলের শুভ্রতা স্পষ্ট হয়ে উঠত। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৮০৭)

উল্লেখ্য, সিজদার উক্ত পদ্ধতি পুরুষদের জন্য। নারীরা সিজদার সময় কনুইদ্বয় মাটির সাথে মিশিয়ে রাখবে এবং উরুদ্বয় পেটের সাথে মিলিয়ে খুব জড়সড় হয়ে সিজদা করবে। হাদীসে এসেছে, ইয়াযীদ ইবনে আবী হাবীব রাহ. বলেন

أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَرَّ عَلَى امْرَأَتَيْنِ تُصَلِّيَانِ فَقَالَ:إِذَا سَجَدْتُمَا فَضُمَّا بَعْضَ اللَّحْمِ إِلَى الْأَرْضِ، فَإِنَّ الْمَرْأَةَ لَيْسَتْ فِي ذَلِكَ كَالرَّجُلِ.

একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযরত দুই মহিলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তাদেরকে বললেন, যখন তোমরা সিজদা করবে তখন শরীর যমীনের সাথে মিলিয়ে দেবেকেননা মহিলারা এক্ষেত্রে পুরুষের মতো নয়। (মারাসীলে আবু দাউদ, হাদীস ৮৭)

কিতাবুল আছল ১/৯; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৯৪; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৩৮; ফাতহুল কাদীর ১/২৬৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৭৫; রদ্দুল মুহতার ১/৬৪৪

Sharable Link

হুসাইন আহমাদ - কসবা, বি. বাড়িয়া

৬৩৫৭. Question

আমি একটি কোম্পানির জামে মসজিদে ইমামতি করি। কোম্পানিটি অনেক বড় এরিয়া নিয়ে গঠিত। নিরাপত্তার স্বার্থে এর সীমানায় কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। এ নিষেধাজ্ঞা নামাযের জন্য নয়; বরং কোম্পানির নিরাপত্তার স্বার্থে। তাই ভেতরের কাউকে নামায পড়তে বাধা দেওয়া হয় না। এমতাবস্থায় কোম্পানির উক্ত মসজিদে জুমার নামায সহীহ হবে কি?

Answer

হাঁ, উক্ত মসজিদে জুমা আদায় করা সহীহ হবে। কেননা এক্ষেত্রে সর্ব সাধারণের প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত হওয়ার বিষয়টি নিরাপত্তার স্বার্থে কোম্পানির এরিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট; মসজিদে নামায পড়ার সাথে নয়। তাই তাতে জুমা আদায়ে কোনো অসুবিধা নেই। তবে নিরাপত্তা বিঘ্নিত না হলে বাইরে থেকে কেউ যদি জুমার নামাযে শরীক হতে চায়, তাহলে তার জন্য সুযোগ করে দেওয়া উচিত।

আলমাবসূত, সারাখসী ২/১২০; মাজমাউল আনহুর ১/২৪৬; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ৩/৩৩৪; রদ্দুল মুহতার ২/১৫২

Sharable Link

মীযানুর রহমান - হবিগঞ্জ

৬৩৫৮. Question

গত শুক্রবার ফজরের সুন্নত নামায পড়ার সময় ভুলে আগে বাম দিকে সালাম ফিরিয়ে ফেলি। ঐ সময় আমার জন্য কী করা উচিত ছিলতা বুঝে উঠতে পারিনি। তাই পরক্ষণেই ডান দিকে সালাম ফিরিয়ে পুনরায় বাম দিকে সালাম ফিরাই।

মুহতারামের কাছে জানতে চাচ্ছি, নামাযে কখনো এমনটি হয়ে গেলে করণীয় কী? এক্ষেত্রে আমার কাজটি কি ঠিক হয়েছে?

Answer

নামাযে ভুলে বাম দিকে আগে সালাম ফিরিয়ে ফেললে পরে শুধু ডান দিকে সালাম ফিরিয়ে নেবে। পুনরায় বাম দিকে সালাম ফেরানোর প্রয়োজন নেই। আর উক্ত ভুলের কারণে সাহু সিজদাও ওয়াজিব হয় না। তাই এক্ষেত্রে সাহু সিজদা করতে হবে না।

বাদায়েউস সানায়ে ১/৫০২; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১২৩; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১২৮; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৩২৫; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫২৪

Sharable Link

মুহা. ইয়াসীন আরাফাত - মিরপুর, ঢাকা

৬৩৫৯. Question

আমরা নামাযে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর তাশাহহুদ পড়ে থাকি। এবং আমরা মাদরাসার ছাত্ররা কিতাবে আরো কয়েকজন সাহাবীর তাশাহহুদ পড়েছি। তো অন্য তাশাহহুদগুলো কি আমরা নামাযে মাঝে মাঝে ইচ্ছা করলে পড়তে পারব?

Answer

হাদীস-আসারে বিশুদ্ধসূত্রে তাশাহহুদের একাধিক পাঠ বর্ণিত হয়েছে। নামাযে সেগুলোর যেকোনোটিই পড়া যাবে। এতে অসুবিধা নেই, নামাযেরও কোনো ক্ষতি হবে না। তবে অধিকাংশ সাহাবী ও তাবেয়ী আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর সূত্রে বর্ণিত প্রসিদ্ধ তাশাহহুদটিই নামাযে পড়তেন। ইমাম তিরমিযী রাহ. তার সুনান গ্রন্থে উক্ত তাশাহহুদটি উল্লেখ করার পর বলেন

حديث ابن مسعود قد روي عنه من غير وجه. وهو أصح حديث عن النبي صلى الله عليه وسلم في التشهد. والعمل عليه عند أكثر أهل العلم من أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم، ومن بعدهم من التابعين.

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বর্ণিত এই হাদীসটি তাঁর থেকে একাধিক সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। তাশাহহুদ বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হাদীসসমূহের মধ্যে এটি সর্বাধিক সহীহ। অধিকাংশ সাহাবী ও পরবর্তী যুগের তাবেয়ী আলেমগণ এই হাদীস অনুসারেই আমল করেছেন। (জামে তিরমিযী ১/৩৭৬)

এ কারণেই হানাফী ফকীহগণ আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর সূত্রে বর্ণিত তাশাহহুদ পড়া উত্তম বলেছেন। ইমাম মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান রাহ. মুআত্তা’-এ বলেছেন

التشهد الذي ذكر كله حسن، وليس يشبه تشهد ابن مسعود، وعندنا تشهده لأنه رواه عن رسول الله صلى الله عليه وسلم، وعليه العامة عندنا.

অর্থ :  উল্লিখিত সব তাশাহহুদই সহীহ বটে, কিন্তু সেগুলো আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর তাশাহহুদের মতো নয়। আমাদের কাছে তার তাশাহহুদই সবচেয়ে পছন্দনীয়। কেননা এই তাশাহহুদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বর্ণনা করেছেন। এবং এর ওপরই অধিকাংশের আমল চলমান। (মুআত্তা মুহাম্মাদ, পৃ. ১৭২)

কিতাবুল হুজ্জাহ আলা আহলিল মাদীনাহ ১/৯৬; আততালীকুল মুমাজ্জাদ ১/৪৭২; মাজমাউল আনহুর ১/১৫১; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী, পৃ. ১৫৫

Sharable Link

সা‘দ মোহাম্মদ - কিশোরগঞ্জ

৬৩৬০. Question

আমি সায়দাবাদে একটি বাসায় ভাড়া থাকি। একদিন একটি কাজে সাভার আসি। এখানে এসে সিদ্ধান্ত হয় যে, এখান থেকে সরাসরি সিলেট সফরে যাব। তবে সিলেটের বাস সাধারণত সায়েদাবাদ থেকেই ছেড়ে যায়। তাই আমাকে সায়দাবাদ আসতে হবে। তো এক্ষেত্রে আমি কখন থেকে নামায কসর করা শুরু করব? দয়া করে জানালে উপকৃত হতাম।

Answer

আপনি যেহেতু সায়দাবাদে ভাড়া বাসায় থাকেন, তাই ঢাকা সিটি আপনার ওয়াতনে ইকামতের অন্তর্ভুক্ত। অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সাভার থেকে সিলেট সফরের নিয়তে বের হলেও আপনি যেহেতু ঢাকা সিটি হয়ে সিলেট যাবেন, তাই এক্ষেত্রে সাভারের পর থেকে আপনি মুসাফির গণ্য হবেন না; বরং ঢাকা সিটির এরিয়া অতিক্রম করার পর থেকে আপনি মুসাফির গণ্য হবেন এবং তখন থেকে কসর করা শুরু করবেন।

কিতাবুল আছল ১/২৬৭; আলমাবসূত, সারাখসী ১২/২৫১; ফাতহুল কাদীর ২/১৬; রদ্দুল মুহতার ২/১৩২

Sharable Link

হাবীবুর রহমান - সিরাজগঞ্জ

৬৩৬১. Question

আলহামদু লিল্লাহ আমি গত বছর কুরআন কারীমের হিফয শেষ করেছি। এ বছর এক অফিসে তারাবীর নামায পড়াচ্ছি। তো গত ষোলো রমযানে সূরা ফুরকানের সিজদার আয়াত পড়েও ভুলে সিজদা না দিয়ে ঐ পৃষ্ঠা শেষ করি। এরপর রুকু সিজদা আদায় করে নামায শেষ করি। তারাবীর নামাযের পর আমি দ্বিধায় পড়ে যাই যে, সবাইকে একাকী সিজদা আদায় করে নেওয়ার জন্য বলব কি বলব না? হযরতের কাছে জানার বিষয় হল, এক্ষেত্রে করণীয় কী? যেহেতু নামাযের ভেতরে তিলাওয়াতে সিজদাটি ভুলে করা হয়নি, তাই এখন কি সবাইকে একাকী সিজদাটি আদায় করতে বলা হবে?

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উক্ত তিলাওয়াতে সিজদাটি যেহেতু নামাযের ভেতর আদায় করা হয়নি, তাই এখন আর উক্ত সিজদায়ে তিলাওয়াতটি আদায়ের সুযোগ নেই। কেননা নামাযে সিজদার আয়াত পড়া হলে নামাযের ভেতরেই তা আদায় করা জরুরি। নামাযের বাইরে তা আদায় করা যায় না।

উল্লেখ্য, নামাযে সিজদার আয়াত পড়ার পর সিজদা করতে ভুলে গেলে নামাযের ভেতরেই স্মরণ হওয়া মাত্র তা আদায় করে নেবে এবং সিজদার আয়াত থেকে দুই আয়াতের বেশি বিলম্ব হয়ে গেলে নামায শেষে সাহু সিজদা করবে।

কিতাবুল আছল ১/২০৫; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৪১; ফাতহুল কাদীর ১/৪৭০; শরহুল মুনইয়া, পৃ.৫০১; আদ্দুররুল মুখতার ২/১০৯; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী, পৃ. ২৬৫

Sharable Link

রাহমাতুল্লাহ - কুমিল্লা

৬৩৬২. Question

জনাব, আমার জানার বিষয় হল, জানাযার পর পর দাফনের পূর্বে হাত উঠিয়ে সম্মিলিত দুআ করা জায়েয আছে কি না? আমাদের এলাকায় দেখা যায়, কোনো কোনো হুজুর জানাযার পর পর দাফনের পূর্বে হাত উঠিয়ে সম্মিলিত দুআ করে থাকেন। আবার কোনো হুজুর বলেন, জানাযার পর পর দাফনের পূর্বে হাত উঠিয়ে সম্মিলিত দুআ করা জায়েয নাই। তাই এটা করতে নিষেধ করে থাকেন ।

অতএব কুরআন-হাদিসের আলোকে সমাধান জানালে উপকৃত হব। জাযাকুমুল্লাহ খাইরান।

Answer

জানাযা নামাযের সালাম ফেরানোর পর প্রচলিত দুআ-মোনাজাত শরীয়ত কর্তৃক প্রমাণিত নয়। কেননা জানাযা নামাযই হচ্ছে মায়্যিতের জন্য দুআ। আর কোনো হাদীসে বা সাহাবা-তাবেয়ীন থেকে জানাযা নামাযের পর আবার দুআ করার কোনো প্রমাণ নেই। সেযুগে অসংখ্য সাহাবা-তাবেয়ীনের জানাযা নামায আদায় হয়েছে। কিন্তু তারা জানাযা নামাযের সালাম ফেরানোর পর সম্মিলিত বা একাকী দুআ করেননি এবং এসময় দুআ করার কোনো বক্তব্যও হাদীস-আছারে নেই। তাছাড়া ফকীহগণও স্পষ্টভাষায় জানাযা নামাযের পর দুআ করতে নিষেধ করেছেন। যেমন, হানাফী মাযহাবের ফিকহ-ফতোয়ার প্রসিদ্ধ কিতাব খুলাসাতুল ফাতাওয়ায় আছে

لا يقوم بالدعاء بعد صلاة الجنازة.

অর্থাৎ জানাযা নামাযের পর দুআর জন্য দাঁড়াবে না। (খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২২৫)

হানাফী মাযহাবে ফতোওয়ার প্রসিদ্ধ আরেক কিতাব ফতোয়া বায্যাযিয়ায় উল্লেখ হয়েছে

لا يقوم بالدعاء بعد صلاة الجنائز؛ لأنه دعا مرة؛ لأن أكثرها دعاء.

জানাযা নামাযের পর দুআর জন্য দাঁড়াবে না। কেননা (জানাযার নামাযে) একবার তো দুআ করেছেই। কারণ, জানাযার অধিকাংশটাই হচ্ছে (মৃতের জন্য) দুআ। (ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ৪/৮০)

সুতরাং জানাযা নামাযের পর দুআ করার যে প্রচলন কোথাও কোথাও লক্ষ করা যায় তা সুন্নাহ পরিপন্থী কাজ। তা পরিত্যাগ করা কর্তব্য।

অবশ্য মায়্যিতকে দাফন করার পর সেখানে কিছু সময় অবস্থান করে মায়্যিতের জন্য দুআ-ইস্তিগফার করা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। যেমন, হযরত উসমান রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন

كَانَ النّبِيّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ، إِذَا فَرَغَ مِنْ دَفْنِ الْمَيِّتِ وَقَفَ عَلَيْهِ، فَقَالَ: اسْتَغْفِرُوا لِأَخِيكُمْ، وَسَلُوا لَه بِالتّثْبِيتِ، فَإِنّهُ الْآنَ يُسْأَلُ.

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোনো মৃত ব্যক্তির দাফন সম্পন্ন করতেন তখন তিনি কবরের পাশে দাঁড়িয়ে বলতেন, তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য মাগফিরাতের দুআ কর এবং সে যেন (প্রশ্নের জবাবে) সুদৃঢ় থাকতে পারে সে দুআ কর। এখনই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩২১৩) 

শরহু সুনানে আবু দাউদ, আইনী ৪/২৭৫; আততাজনীস ওয়াল মাযীদ ২/২৭১; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/১০৯; ফাতাওয়া সিরাজিয়া, পৃ. ২৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৯০; মিরকাতুল মাফাতীহ ৪/১৪৯; ইমদাদুল মুফতীন, পৃ. ১৬৪; ইমদাদুল আহকাম ১/১৯৪

Sharable Link

আবেদুল হক - চট্টগ্রাম

৬৩৬৩. Question

রোযা অবস্থায় আমার সর্দি ছিল। নাকে অনবরত শ্লেষ্মা আসছিল। একবার নাক টান দিলে অনিচ্ছাকৃতভাবে শ্লেষ্মা গলার ভেতর চলে যায়। এতে কি আমার ঐ দিনের রোযা ভেঙে গেছে? তার কাযা-কাফফারা আসবে কি? জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

না, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার রোযা ভাঙেনি। কেননা রোযাবস্থায় নাকের শ্লেষ্মা গলার ভেতরে চলে গেলে রোযা ভাঙে না।

আলফাতাওয়া মিন আকাবীলিল মাশাইখ, পৃ. ১২৭; আলমুহীতুর রাযাবী ২/২৬; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ১/২১৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৭

Sharable Link

তাসনিম - বরিশাল

৬৩৬৪. Question

আমার চোখ উঠেছে। ডাক্তার দেখানোর পর তিনি একটি ড্রপ দেন। এটি ব্যবহারের পর গলায় তিক্ততা অনুভব হয়। জানার বিষয় হল, রোযা অবস্থায় এটি ব্যবহার করলে কি রোযার কোনো সমস্যা হবে? দয়া করে জানালে উপকৃত হতাম।

Answer

রোযা অবস্থায় চোখে ড্রপ ব্যবহার করা যাবে। এ কারণে রোযা ভাঙবে না। এমনকি গলায় এর স্বাদ অনুভূত হলেও রোযার সমস্যা হবে না।

আলমাবসূত, সারাখসী ৩/৬৭; আযযাখিরাতুল বুরহানিয়া ৩/৫৭; ফাতহুল কাদীর ২/২৫৭; মাজাল্লাতু মাজমাউল ফিকহিল ইসলামী, জেদ্দা ১০/২/৪৫৪

Sharable Link

সিনথিয়া আক্তার - মালিবাগ, ঢাকা

৬৩৬৫. Question

আমি একটি দ্বীনী বইয়ের রমযান অধ্যায়ে একটি মাসআলা পড়েছিরমযান মাসে কোনো কারণবশত কারো রোযা ভেঙে গেলে দিনের বেলা তার জন্য পানাহার করা জায়েয নয়; বরং সারাদিন রোযাদারের মতো পানাহারবিহীন থাকা ওয়াজিব। কিন্তু প্রশ্ন হল, রোযাবস্থায় কোনো মহিলার মাসিক শুরু হয়ে গেলে সেও কি দিনের বেলা বাকি সময় কিছু না খেয়েই থাকবে?

Answer

রমযান মাসে রোযা অবস্থায় কোনো মহিলার মাসিক শুরু হলে দিনের বাকি সময় তার জন্য পানাহার থেকে বিরত থাকা আবশ্যক নয়; বরং এক্ষেত্রে সে পানাহার করতে পারবে। তবে প্রকাশ্যে পানাহার করবে না।

হযরত ইবনে জুরাইয রাহ. হযরত আতা রাহ. থেকে বর্ণনা করেন

عَنْ عَطَاءٍ؛ فِي الْمَرْأَةِ تَحِيضُ أَوَّلَ النَّهَارِ فِي شَهْرِ رَمَضَانَ، فَقَالَ: تَأْكُلُ وَتَشْرَبُ.

অর্থাৎ আতা রাহ. বলেছেন, কোনো মহিলার রমযান মাসে দিনের শুরুতে মাসিক শুরু হলে সে পানাহার করতে পারবে। (মুসন্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৯৪৩১)

ফাতাওয়া খানিয়া ১/২১৮; আলমুহীতুর রাযাবী ২/৩৪; আলবিনায়া ৪/৩৫৯; ইমদাদুল ফাত্তাহ, পৃ. ৬৯৪; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী, পৃ. ৩৭০

Sharable Link

আবদুল ওয়াহহাব - খড়কী, যশোর

৬৩৬৬. Question

হুজুর! আমি নাকের এলার্জির কারণে ডাক্তারের পরামর্শে এক ধরনের স্প্রে ব্যবহার করি। নাকে স্প্রে করার পরই তার কিছু অংশ গলায় চলে যায় এবং গলায় তার স্বাদও অনুভূত হয়।

প্রশ্ন  হল, রোযা রেখে কি এই স্প্রে গ্রহণ করা যাবে?

Answer

উক্ত স্প্রে নাকে ব্যবহার করলে যেহেতু এর অংশবিশেষ গলায় চলে যায়, তাই এর দ্বারা রোযা ভেঙে যাবে এবং ঐ রোযা কাযা করে নিতে হবে। অতএব রমযানে তা ব্যবহার করতে চাইলে আপনি সাহরী ও ইফতারীর সময় ব্যবহার করতে পারেন।

আহকামুল কুরআন, জাস্সাস ১/১৯১; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৪৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৩৭৮; মাজাল্লাতুল মাজমাইল ফিকহিল ইসলামী, জেদ্দা ১০/২/৪৫৩

Sharable Link

খালেদ - চট্টগ্রাম

৬৩৬৭. Question

আমার মামা ২৫তম রোযার দিন সুবহে সাদিকের কিছু আগে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। আমাদের বাড়ি গ্রামে হওয়ায় এবং রমযান মাস হওয়ায় দিনে শুরুতে কোনো ডাক্তার ডাকতে পারিনি। আমরা বিভিন্ন উপায়ে হুঁশ ফেরানোর চেষ্টা করেছি; কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। তবে তাঁকে কোনো পানীয় বা খাদ্য খাওয়ানো হয়নি। বিকেলে ডাক্তার এসে পরীক্ষা করে দেখতে পায় যে, প্রেশার ফল্ট করার কারণে তিনি বেহুঁশ হয়েছেন। তাই তাঁকে তখন ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। মাগরিবের কিছু পরে তিনি হুঁশ ফিরে পান। এরপর অবশিষ্ট দিনগুলোর রোযা তিনি সুস্থতার সাথে আদায় করেন। রোযার পর এখন তিনি সুস্থ। প্রশ্ন হল, তাকে কি ঐ দিনের রোযার কাযা করতে হবে?

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যদি এমন হয় যে, বেহুঁশ হওয়ার আগে আপনার মামার ঐ দিনের রোযা রাখার ইচ্ছা ছিল (আর এমনটিই স্বাভাবিক), তাহলে যেহেতু তাকে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কোনো কিছু খাওয়ানো হয়নি, তাই তার ঐ দিনের রোযা আদায় হয়ে গেছে। তা আর কাযা করতে হবে না। কেননা রাতে অর্থাৎ সূর্যাস্ত থেকে সুবহে সাদিকের ভেতর পরবর্তী দিন রোযা রাখার নিয়ত থাকা অবস্থায় যদি কেউ পূর্ণ দিন বেহুঁশও থাকে এবং দিনে তাকে কিছু খাওয়ানো না হয়, তাহলে তার রোযা আদায় হয়ে যায়। সারাদিন বেহুঁশ থাকা রোযা সহীহ হওয়ার জন্য প্রতিবন্ধক নয়।

কিতাবুল আছল ২/১৫১; আলমাবসূত, সারাখসী ৩/৭০; বাদায়েউস সানায়ে ২/২২৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/২০৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৫

Sharable Link

মিসবাহ - দড়াটানা, যশোর

৬৩৬৮. Question

হুজুর! এ বছর শাবান মাসে আমার প্রথম যাকাতবর্ষ পূর্ণ হয়। যাকাতের টাকা হিসাবের সাথে সাথে আমি আমার ফিতরার টাকাও হিসাব করে আলাদা করে ফেলি। এরপর রমযানের আগেই যাকাত-ফিতরার সব টাকা গরিবদের দান করে দেই।

আমার জানার বিষয় হল, রমযানের আগে ফিতরার টাকা প্রদান করার দ্বারা তা কি আদায় হয়েছে?

Answer

রমযানের আগে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করে দিলে বিশুদ্ধমতে তা আদায় হয়ে যায়। তাই রমযানের আগে আদায়কৃত আপনার ঐ সাদাকাতুল ফিতর আদায় হয়ে গেছে। অবশ্য এ ব্যাপারে যেহেতু ভিন্নমতও আছে, তাই রমযানের পূর্বে আদায় না করাই উচিত। অগ্রিম দিয়ে দিতে চাইলে অন্তত রমযান আসার পরই তা আদায় করবে। রমযানে তা আদায় করে দেওয়া কোনো কোনো সাহাবী-তাবেয়ী থেকে প্রমাণিত আছে। আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. ঈদের দু-একদিন আগেই সাদাকাতুল ফিতর দিয়ে দিতেন। (সুনানে আবু দাউদ, বর্ণনা ১৬১০)। হযরত হাসান বসরী রাহ. থেকেও এধরনের কথা প্রমাণিত আছে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১০৮৯৬)

তবে এক্ষেত্রে মুস্তাহাব হল, সাদাকাতুল ফিতর ঈদের দিন ঈদগাহে যাওয়ার পূর্ব মুহূর্তে আদায় করা।

শরহু মুখতাসারিল কারখী ২/২৮৫; বাদায়েউস সানায়ে ২/২০৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৬৭; রদ্দুল মুহতার ২/৩৬৭

Sharable Link

মকবুল হোসেন - ডেমরা, ঢাকা

৬৩৬৯. Question

আমি ফ্ল্যাটের ব্যবসা করি। তিন বছর আগে একবার আমি ব্যবসার উদ্দেশ্যে কয়েকটি ফ্ল্যাট কিনি। এর মধ্যে একটি ফ্ল্যাট আমার এক বন্ধুর খুব পছন্দ হয়। সে ঐ ফ্ল্যাটটি নিতে চাইলে তার সাথে এভাবে চুক্তি হয় যে, সে এর বিনিময়ে আমাকে তার একটি ফ্ল্যাট দেবে এবং পাঁচ মাসের মধ্যে বিশ লাখ টাকা দেবে। মৌখিক ক্রয়-বিক্রয়ের পর কয়েক মাসের মধ্যে আমরা একে অপরকে ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রি করে দিই। কিন্তু ধার্যকৃত বিশ লাখ টাকা সে তিন বছর পর পরিশোধ করে। জানার বিষয় হল, এই বিশ লাখ টাকার বিগত তিন বছরের যাকাত কি আমাকে আদায় করতে হবে?

Answer

এই ফ্ল্যাটটি যেহেতু আপনি ব্যবসার জন্য ক্রয় করেছিলেন, তাই এর বিক্রি বাবদ প্রাপ্ত বিশ লাখ টাকার বিগত তিন বছরের যাকাত আদায় করতে হবে। কেননা ব্যবসায়িক সম্পদের বকেয়া মূল্যের ওপরও যাকাত ফরয।

আর উক্ত বিশ লাখ টাকার যাকাত যেহেতু সময়মতো আদায় করা হয়নি, বরং তা আপনার যিম্মায় বকেয়া হয়ে গেছে তাই এখন এর যাকাত আদায়ের হিসাব হবে এরূপ যেপ্রথম বছর পূর্ণ বিশ লাখ টাকার যাকাত ২.৫% হিসেবে ৫০,০০০ টাকা দিবেন। দ্বিতীয় বছরের ক্ষেত্রে ৫০,০০০ টাকা বাদ দিয়ে অবশিষ্ট ১৯ লাখ ৫০ হাজার টাকার ২.৫% হিসাবে ৪৮,৭৫০ টাকা যাকাত, দেবেন। তৃতীয় বছরের ক্ষেত্রে আগের দুই বছরে যাকাত বাবদ আদায়যোগ্য ৯৮,৭৫০ টাকা বিশ লাখ থেকে বাদ দিয়ে বাকি ১৯,০১২৫০ টাকার ২.৫% অর্থাৎ ৪৭,৫৩১ টাকা যাকাত দেবেন।

কিতাবুল আছল ২/৯০, ৯৩; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী, জাস্সাস ২/৩৪১; বাদায়েউস সানায়ে ২/৯০; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৫৫; রদ্দুল মুহতার ২/৩০৬

Sharable Link

আরশাদ - কুমিল্লা

৬৩৭০. Question

আমার বিবাহের সময় সাত ভরি স্বর্ণ ধার্য হয় এবং তিন লক্ষ টাকা মহর ধার্য হয়, যা আমার স্বামী আমাকে নগদে প্রদান করে। আমার একাউন্টেও কিছু ক্যাশ টাকা ছিল। প্রতি বছর হিসাব করে এগুলোর যাকাত দিই। গত বছর আমার মায়ের অপারেশন হয়। তখন ২ ভরি স্বর্ণ বিক্রি করে মায়ের চিকিৎসার জন্য খরচ করি। পরে আমার সম্পদের ওপর যাকাতবর্ষ পূর্ণ হলে বিগত বছরগুলোর মতো অন্যান্য সম্পদের সাথে সাত ভরি স্বর্ণের হিসাব করে যাকাত দিয়ে দিই। দুই ভরি স্বর্ণ বিক্রি করার বিষয়টি বেমালুম ভুলে গিয়েছিলাম। কয়েকদিন আগে কোনো এক কাজে আলমারি থেকে স্বর্ণ বের করার পর তা মনে পড়ে। মুহতারামের কাছে জানার বিষয় হল, দুই ভরি পরিমাণ স্বর্ণের যে অতিরিক্ত যাকাত আদায় করে দিয়েছি, তা তো আমার ওপর ফরয ছিল না। আমি কি তা আগামী বছরের যাকাতের মধ্যে গণ্য করে নিতে পারব? জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ভুলে অতিরিক্ত যে দুই ভরি স্বর্ণের যাকাত আপনি আদায় করে দিয়েছেন, তা আগামী বছরের যাকাত হিসেবে গণ্য করতে পারবেন। তখন ঐ পরিমাণ যাকাত অগ্রিম দিয়ে দিয়েছেন বলে ধর্তব্য হবে।

আলমুহীতুর রাযাবী ১/৫৩৬; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৬৩; খুলাাসতুল ফাতাওয়া ১/২৪১

Sharable Link

রফিক হাসান - মিরপুর, ঢাকা

৬৩৭১. Question

আমি ও আমার কিছু ইন্ডিয়ান ব্যবসায়ী বন্ধু উমরায় যাওয়ার নিয়ত করি। সেমতে আমি ইহরাম ছাড়াই ইন্ডিয়া যাই। উদ্দেশ্য, সেখান থেকে ইহরাম করে তাদের সাথে মিলে উমরায় যাব। কিন্তু ইন্ডিয়া এসে জানতে পারি, তারা এবছর উমরায় যাবে না। তখন আমিও উমরার নিয়ত ত্যাগ করি। তবে আমার অন্য ব্যবসায়িক কাজ থাকায় আমি জেদ্দা যাই। এখানে এসে নিয়ত হয় যে, উমরাটা করেই ফেলি। জানতে চাই, এখন আমার উমরার প্রক্রিয়া কী হবে? ইহরাম কোত্থেকে করব? আমি ইহরাম ছাড়াই জেদ্দা চলে এসেছি এজন্য কি কোনো জরিমানা দিতে হবে?

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যেহেতু প্রথমে জেদ্দার উদ্দেশ্যেই এসেছেন, মক্কায় গমন বা উমরা পালনের কোনো নিয়ত তখন ছিল না, তাই এক্ষেত্রে ইহরাম ছাড়া জেদ্দায় আসা আপনার ঠিক হয়েছে। আর জেদ্দা যেহেতু মীকাতের ভেতরে হিলের অন্তর্ভুক্ত, তাই এখন আপনি উমরার জন্য জেদ্দা থেকেও ইহরাম করতে পারেন। এমনকি আরো সামনে অগ্রসর হয়ে হেরেমের এরিয়ায় প্রবেশের আগে হিলের অন্য যেকোনো জায়গা থেকেও ইহরাম করতে পারেন।

আলমাবসূতসারাখসী ৪/১৬৮; আলমুহীতুর রাযাবী ২/১৩৮; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/৩৯৭; রদ্দুল মুহতার ২/৪৭৭

Sharable Link

ফরহাদ - ঢাকা

৬৩৭২. Question

আলহামদু লিল্লাহ, গত সপ্তাহে এলাকার এক মেয়ের সাথে আমার বিয়ে হয়। তখন বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে অনেক বন্ধুকে দাওয়াত দেওয়ার সুযোগ হয়নি। তাই অনেকেই ফোন করে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কথাবার্তা বলে। গতকাল এক বন্ধু ফোন করে বলল, তুই নাকি বিয়ে করেছিস? তখন আমি তাকে দুষ্টমির সুরে বললাম, আমি এখনো বিয়ে করিনি। করলে তোকে অবশ্যই দাওয়াত দেবপরে এ কথাটি আমার মনে খটকা তৈরি করে।

তাই জানতে চাচ্ছি, উক্ত কথার কারণে বিয়ের কোনো সমস্যা হয়েছে কি? দয়া করে জানাবেন।

Answer

প্রশোক্ত কথার দ্বারা আপনাদের বৈবাহিক সম্পর্কের কোনো সমস্যা হয়নি; বরং তা পূর্বের মতোই বহাল আছে। কিন্তু স্পষ্ট বিষয় যে, ঐ কথাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা, যা কবীরা গোনাহের অন্তর্ভুক্ত। তাই এর জন্য তওবা-ইস্তেগফার করতে হবে এবং ভবিষ্যতে দুষ্টমির ছলে হলেও মিথ্যা বলা থেকে বিরত থাকতে হবে।

সহীহ বুখারী, হাদীস ২৬৫৪; আলমুহীতুর রাযাবী ৩/২২৭; বাদায়েউস সানায়ে ৩/১৭১; রদ্দুল মুহতার ৩/২৮৩

Sharable Link

আমাতুল্লাহ - যশোর

৬৩৭৩. Question

হুজুর, আমার কোনো সন্তান নেই। আমি একটি নবজাতক মেয়ে বাচ্চাকে পালক এনেছি। আমার যেহেতু বুকে দুধ নেই তাই বুকে দুধ আসার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ইনজেকশন গ্রহণ করি। এরপর বুকে দুধ আসে এবং ঐ মেয়েকে বুকের দুধ পান করাই। প্রশ্ন হল, এতে কি আমি ও আমার স্বামী ঐ বাচ্চার দুধ পিতা-মাতা সাব্যস্ত হব?

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে শিশুটিকে যেহেতু আপনি নিজের বুকের দুধই পান করিয়েছেন, যদিও তা ইনজেকশন গ্রহণের মাধ্যমে এসেছে, তাই এর দ্বারা আপনি তার দুধমা হয়ে গেছেন। তবে এক্ষেত্রে আপনার স্বামী তার দুধ পিতা সাব্যস্ত হবে না। অবশ্য যেহেতু মেয়েটি আপনার দুধমেয়ে হয়ে গেছে তাই এ কারণে আপনার স্বামী তার মাহরাম গণ্য হবেন। কেননা নিজ স্ত্রী, বিয়ের পর যার সাথে সহবাস হয়েছে তার দুধ সন্তান (নিজের সন্তান না হলেও) স্ত্রীর সন্তান হিসেবে স্বামীরও মাহরামের অন্তর্ভুক্ত।

তবে প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে এই শিশুটি যেহেতু আপনার স্বামীর দুধমেয়ে হয়নি, তাই সে আপনার দুধসন্তান হিসেবে আপনার স্বামীর মাহরাম হলেও এক্ষেত্রে আপনার স্বামীর অন্য কেউ (যেমন, পিতা-ভাই) তার মাহরাম গণ্য হবে না।

আলআজনাস, নাতিফী ১/২৩৯; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৪১৯; বাদায়েউস সানায়ে ২/৫৩৮; আলমুহীতুল বুরহানী ৪/৯৫; আলবাহরুর রায়েক ৩/২২৬; রদ্দুল মুহতার ৩/২২১

Sharable Link

ইলিয়াস আমীন - লালমনিরহাট

৬৩৭৪. Question

জনৈক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে মৌখিকভাবে তিন তালাক দেয়। কিন্তু মৌখিক তালাক দিলে তালাক হয় না এই ধারণাবশত তারা স্বাভাবিক ঘর-সংসার করতে থাকে। দুই বছর পর ঐ লোকের মাঝে দ্বীনের বুঝ আসে। তখন সে মাসআলা জেনে তার স্ত্রীকে বলে, দুই বছর আগেই আমাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। এখন আর আমরা একত্রে থাকতে পারব না। স্ত্রী এটি মানতে চাচ্ছিল না। পরে তার পরিবারকে বিষয়টি জানালে তারা তাকে বুঝিয়ে নিজেদের বাড়িতে নিয়ে আসে।

জানার বিষয় হল, উক্ত মহিলার এখন কোনো ইদ্দত পালন করতে হবে কি না? যদি ইদ্দত পালন করতে হয়, তাহলে তা কীভাবে পালন করবে?

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তিন তালাক দেওয়ার পরও যেহেতু মাসআলা না জানার কারণে তারা দাম্পত্য সম্পর্ক বহাল আছে মনে করে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে একত্রে থেকেছে, তাই এক্ষেত্রে তাদের সর্বশেষ মেলামেশার পর থেকে উক্ত মহিলার ওপর নতুন একটি ইদ্দত আবশ্যক হয়েছে। আর এই ইদ্দতের সময়সীমা হচ্ছে, মহিলা যদি ঋতুমতী হয়, তাহলে সর্বশেষ মেলামেশাহওয়ার পর থেকে তিনটি ঋতুস্রাব। আর অন্তঃসত্ত্বা হলে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত। এই সময়সীমা শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত উক্ত মহিলার জন্য কোথাও বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার সুযোগ নেই। তবে অন্যান্য ইদ্দতের মতো এই ইদ্দতের সময় ঘরে অবস্থান করা জরুরি নয়। অনুরূপভাবে স্বামীর ওপরও এই সময় তার খরচাদি বহন করা আবশ্যক নয়।

উল্লেখ্য, তিন তালাক হয়ে যাওয়ার পরও তাদের একত্রে থাকাটা গোনাহের কাজ হয়েছে। এজন্য তাদের উভয়ের আল্লাহ তাআলার দরবারে তওবা-ইস্তেগফার করা জরুরি।

আলমুহীতুর রাযাবী ৫/২৩৩; আলজাওহারাতুন নায়্যিরা ২/১০১; রদ্দুল মুহতার ৩/৫১৮৫ ও ৫২২

Sharable Link

সালাহুদ্দিন - ফরিদপুর

৬৩৭৫. Question

আমার এক বন্ধু আমার কাছে পঞ্চাশ হাজার টাকা ঋণ চায়। আমার কাছে টাকা থাকা সত্ত্বেও আমি তাকে ঋণ দিতে চাচ্ছিলাম না। একপর্যায়ে সে আমাকে বলে, তুমি আমাকে পঞ্চাশ হাজার টাকা ঋণ দাও; আমি তোমাকে পঁয়তাল্লিশ হাজার টাকা ফেরত দেব। আর পাঁচ হাজার টাকার পরিবর্তে দশ মণ ধান দেব। (যার মূল্য প্রায় দশ হাজার টাকা)

জানতে চাই, এভাবে ঋণ দেওয়া কি আমার জন্য বৈধ হবে?

Answer

প্রশ্নোক্ত চুক্তিটি বৈধ হবে না। কেননা এটি ঋণ লেনদেন করে ঋণদাতাকে অতিরিক্ত প্রদান করার একটি অবৈধ হীলা ও অপকৌশল, যা শরীয়তসম্মত নয়। তাই এমনটি করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ২১০৭৮; কিতাবুল আছল ৩/২৪; আলমুহীতুল বুরহানী ২১/৬৭; আলবাহরুর রায়েক ৬/১২৩; আদ্দুররুল মুখতার ৫/১৬৬

Sharable Link

সালমান মাসরুর - মিরপুর-১ ঢাকা

৬৩৭৬. Question

আমি হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করিআমরা আমাদের হোস্টেলের একটি রুমে ২৫ জন ছাত্র থাকি। আমার এক সহপাঠী তার দামি একটি ঘড়ি আমার কাছে হেফাজতের জন্য রাখে। আমি আমার ডেস্কে তালাবদ্ধ করে রাখি এবং চাবি সর্বদা আমার পকেটেই রাখতাম। কিন্তু একদিন ডেস্ক তালাবদ্ধ করে ভুলে চাবি ডেস্কের ওপর রেখেই দরসে চলে যাই। তখন ডেস্ক থেকে ঘড়িটি হারিয়ে যায়। এখন উক্ত সহপাঠী ঘড়ির জন্য আমাকে বারবার চাপ দিচ্ছে। তাই মুহতারাম মুফতী সাহেবের নিকট জানতে চাই, আমাকে উক্ত ঘড়ির ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

এই চুরির পেছনে আপনার অবহেলাই দায়ী। কেননা ডেস্কের ওপর চাবি ফেলে আসার কারণে ডেস্ক থেকে ঘড়িটি চুরি হয়ে গেছে। তাই আপনাকে উক্ত ঘড়ির ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে।

আলফাতাওয়া মিন আকাবীলিল মাশাইখ, পৃ. ৫১১; মুখতারাতুন নাওয়াযেল ৩/১২৪; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/২৯৬; ফাতাওয়া সিরাজিয়্যা, পৃ. ৮৩; রদ্দুল মুহতার ৫/৬৭৩

Sharable Link

ইবরাহীম হাওলাদার - কোটালীপাড়া, গোপালগঞ্জ

৬৩৭৭. Question

আমরা এজমালি বাড়িতে বসবাস করি। বাড়ির একপাশে আমরা দুই ভাই থাকি, আরেক পাশে আমাদের চাচাতো ভাইয়েরা থাকে। বেশ আগে থেকেই অনুমান করে এক ধরনের বোঝাপড়ার ভিত্তিতে আমরা জায়গা ভাগাভাগি করে বাড়ির জায়গা ভোগ করি। বেশ কয়েক বছর পূর্বে আমার এক চাচাতো ভাই বাড়িতে আমার ঘরের পাশে আট-দশটি গাছ লাগায়। তখন আমি তাকে বাধা দিয়ে বলেছিলাম যে, এই জায়গা আমাদের অংশে তাই তুমি এখানে গাছ লাগিও না। তখন সে বলেছিল, এখন লাগাই পরে মাপে তোমাদের অংশে পড়লে তোমরা গাছগুলো নিয়ে নিও; তখন তাতে আমি বাধা দিব না। কিছুদিন আগে বাড়ির জায়গা মাপা হয়। তখন ঐ গাছগুলো আমাদের অংশে পড়ে।

জানার বিষয় হল, ঐ গাছগুলো এখন কে পাবে? তার পূর্বের কথা অনুযায়ী গাছগুলো যেহেতু আমাদের অংশে পড়েছে তাই আমরা গাছগুলো নিয়ে নিতে পারব কি? এক্ষেত্রে শরীয়তের বিধান জানতে চাই।

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে গাছগুলো আপনাদের অংশে পড়ার কারণেই আপনারা তা নিয়ে নিতে পারবেন না; বরং আপনার চাচাতো ভাই, যে গাছগুলো লাগিয়েছে সে-ই এগুলোর মালিক।

সুতরাং এখন যেহেতু বাড়ির জায়গা মাপার পর গাছগুলো আপনাদের অংশে পড়েছে, তাই আপনারা তাকে গাছগুলো কেটে নিয়ে আপনাদের জায়গা খালি করে দিতে বলতে পারবেন। অবশ্য আপনার চাচাতো ভাই তার আগের কথা অনুযায়ী গাছগুলো যদি এখন আপনাদেরকে দিয়ে দেন তাহলে আপনারা এর মালিক হয়ে যাবেন।

তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/৩২৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৩৪৬; রদ্দুল মুহতার ৪/৩০৪; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যাহ, মাদ্দাহ ৯০৭ ও ১০৮৯; শরহুল মাজাল্লাহ, আতাসী ৩/৪৪৪

Sharable Link

রুহুল আমীন - মিরপুর, ঢাকা

৬৩৭৮. Question

আমাদের মহল্লায় বৈধভাবে গ্যাস চালু হয়নি। তবে, কয়েক বছর আগে মহল্লার কিছু লোকজন অবৈধ গ্যাসের লাইন লাগিয়ে নিয়েছে। তারা বাড়িতে বাড়িতে যায়। প্রত্যেক বাড়ি থেকে ২-৫ হাজার টাকা জমা করে এবং সে টাকা দিয়ে এলাকার মেম্বার-মাতব্বরদের সাথে যোগাযোগ রেখে মহল্লায় গ্যাস সংযোগ দেয়। এভাবে কখনো এক-দুই বছর, কখনোবা পাঁচ-ছয় মাস চলে। এরপর গ্যাসের লাইন কেটে দেওয়া হয়। আবার উপরোক্ত নিয়মে টাকা উঠিয়ে গ্যাস সংযোগ নিতে হয়। আবার লাইন কেটে দেওয়া হয়। আবার সংযোগ নিতে হয়। এভাবে বেশ কয়েক বছর যাবৎ চলছে। এক্ষেত্রে বিভিন্নজন বিভিন্ন কথা বলছে

ক. কারো কারো মতে, আমরা গ্রামের সাধারণ মানুষ। লাইনের গ্যাস খুব দরকার। কেননা, সিলিন্ডার গ্যাসে প্রতি মাসে বড় অংকের খরচ লাগে। তাছাড়া পুরুষ বাড়িতে না থাকা অবস্থায় হঠাৎ সিলিন্ডার গ্যাস ফুরিয়ে গেলে রান্না বন্ধ হয়ে যায়; তাৎক্ষণিকভাবে গ্যাস আনা যায় না। ২-৪ ঘণ্টার একটা পেরেশানি ওঠাতে হয়। বর্তমানে লাকড়িতে রান্না করাও সম্ভব নয়। তাছাড়া গ্যাসের কর্মকর্তা, চেয়ারম্যান-মেম্বাররা অনেকেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হলেও বিষয়টি জানেন। সুতরাং মজবুরির কারণে গ্যাস আনা ও ব্যবহার বৈধ হবে।

খ. আবার কারো কারো মতে, গ্যাসের কর্মকর্তারা চেয়ারম্যান-মেম্বার অনেকে বিষয়টি জানলেও যেহেতু এটা অবৈধ লাইন, সরকার অনুমোদিত নয়; তাই এভাবে গ্যাসের লাইন নেওয়া ও ব্যবহার করা কোনো অবস্থায়ই বৈধ হবে না। চাই জনগণ বা ব্যক্তির যত কষ্টই হোক না কেন?

অতএব, আমার জানার বিষয় হল, উপরোক্ত পদ্ধতিতে সংযোগ নিয়ে গ্যাসের ব্যবহার করা কতটুকু শরীয়তসম্মত হবে? দলীলসহ জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

যথাযথ কর্তৃপক্ষের সরকারি বিধি মেনে প্রদত্ত বৈধ অনুমোদন ছাড়া গ্যাস সংযোগ নেওয়া জায়েয নয়। তা চুরি ও সরকারি সম্পদ আত্মসাতের শামিল। সুতরাং এভাবে অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেওয়া এবং অন্যদের জন্য তাদের থেকে সংযোগ নিয়ে ব্যবহার করা অন্যায় ও গোনাহের কাজ। এক্ষেত্রে গ্যাস সংযোগ নেওয়ার ক্ষেত্রে যে ওজরের কথা প্রশ্নপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, তা শরীয়ত স্বীকৃত নয়। এসবের কারণে অবৈধভাবে সংযোগ নেওয়া বৈধ হয়ে যাবে না। বাজারে তো অনেক কিছুর মূল্যই অস্বাভাবিকহারে মাঝে মাঝে বেড়ে যায়। তাহলে কি তখন না বলে অন্যের জিনিস ব্যবহার করা যাবে? এমনিভাবে স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বার, এমনকি গ্যাস অফিসের লোকদের জানার দ্বারাও বিষয়টি বৈধ হয়ে যাবে না। সরকারি অনুমোদন ব্যতীত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবগতি এক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়। মনে রাখতে হবে, এক্ষেত্রে জনগণ ঠেকায় পড়ে ব্যবহার করলেও যারা এ সংযোগ দিয়ে থাকে, তারা কিন্তু চুরির উদ্দেশ্যেই দিয়ে থাকে এবং দেশীয় আইন ও সাধারণ বিচারেও তা চুরির শামিল।

মোটকথা, অবৈধ সংযোগ নিয়ে এভাবে গ্যাস ব্যবহার মারাত্মক অন্যায় ও গোনাহের কাজ। এ থেকে বিরত থাকতে হবে। এতদিন অন্যায়ভাবে যে গ্যাস ব্যবহার করা হয়েছে, এর ন্যায্য বিল গ্যাস অফিসে যোগাযোগ করে বা অন্য কোনো পদ্ধতিতে সরকারি খাতে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে সমপরিমাণ টাকা গরিব-মিসকীনদের সদকা করে দিতে হবে। সহীহ বুখারী, হাদীস ৩১৮০; ফাতহুল বারী ৬/২৫৩; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/২৮০; আদ্দুররুল মুখতার ৪/২৮৩, ৬/১৮২; রদ্দুল মুহতার ৬/১৫৬

Sharable Link

নাঈম তালহা - ফেনী

৬৩৭৯. Question

মাদরাসা খোলার তারিখে যথাসময়ে ছাত্ররা উপস্থিত না হওয়ার কারণে কর্তৃপক্ষ কানুন করেছে যে, বিশেষ অপারগতা ছাড়া খোলার তারিখে কেউ নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত না হলে ৩০০ টাকা করে জরিমানা আদায় করতে হবে। এর পর থেকে যত দিন দেরি করবে, প্রত্যেক দিন ১০০ টাকা করে বাড়তে থাকবে।

মুহতারামের কাছে জানতে চাই, আমাদের উক্ত কানুনটি শরীয়তের দৃষ্টিতে কেমন? তা সঠিক হয়েছে কি না, জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

উক্ত জরিমানা সংক্রান্ত আইনটি বৈধ নয়। তাই কোনো ছাত্র যথাসময়ে উপস্থিত না হলে কোনো জরিমানা নেওয়া জায়েয হবে না। অবশ্য কোনো ছাত্র যদি বিশেষ অপারগতা ছাড়া খোলার তারিখে মাদরাসায় উপস্থিত না হয়, তাহলে অন্য বৈধ কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যাবে। যেমন, মাদরাসার পক্ষ থেকে এমদাদী খানা জারি থাকলে তা মওকুফ করে মূল্য আদায় সাপেক্ষে জারি করা যেতে পারে। কিংবা যেসকল সুবিধা ফ্রি ছিল যেমন, কারেন্ট বিল, পানির বিল, কিতাবপত্র ইত্যাদি, এজাতীয় ফ্রি সুবিধা বাতিল করে দিয়ে এক বা একাধিক বিষয়ে মূল্য ধার্য করে দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু কোনো অবস্থায়ই বিলম্ব ফি বা জরিমানা আরোপ করা যাবে না।

আলমুহীতুল বুরহানী ৬/৪৭৯; ফাতহুল কাদীর ৫/১১২; আলবাহরুর রায়েক ৫/৪১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/১৬৭; রদ্দুল মুহতার ৪/৬১

Sharable Link

নিজাম আলমাহমুদ - ইশ্বরদী, পাবনা

৬৩৮০. Question

আমাদের এলাকার একটি মার্কেটের সকল দোকানদার মিলে একটি সমিতি গঠন করে। ঈদ উপলক্ষে সমিতির পক্ষ থেকে কুপন পদ্ধতি চালু করা হয়। কোনো ক্রেতা সর্বনিম্ন ৩০০ টাকার যেকোনো পণ্য ক্রয় করলে তাকে একটি কুপন দিতে প্রত্যেক দোকানদারকে সমিতির পক্ষ থেকে বাধ্য করা হয়। নির্দিষ্ট দিনে উক্ত কুপনের ড্র করা হয়। এই ড্র পদ্ধতির মাধ্যমে নির্দিষ্ট পরিমাণ লোককে মোটর সাইকেল, টিভি, ফ্রিজ ইত্যাদি দ্বারা পুরস্কৃত করা হয়, যা পূর্ব থেকেই সমিতি কর্তৃপক্ষ মানুষের মাঝে প্রচার করে দেয়।

উল্লেখ্য, সমিতির কাছ থেকে উক্ত কুপন গ্রহণ করার জন্য দোকান মালিক সমিতির প্রত্যেক সদস্যকে কুপন প্রতি দশ টাকা করে জমা দিতে হয়। কিন্তু কোনো ক্রেতা থেকেই এই কুপনের নামে কোনো টাকা নেওয়া হয় না। এই পদ্ধতি বৈধ কি না জানতে চাই।

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে কুপন বাবদ যেহেতু ক্রেতাদের থেকে অতিরিক্ত কোনো টাকা নেওয়া হয় না বরং দোকানিরাই এর আয়োজন করে থাকে তাই এটি দুটি শর্ত সাপেক্ষে বৈধ হতে পারে। একটি শর্ত বিক্রেতার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তা হল, পুরস্কারের কারণে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করা যাবে না। কিংবা পণ্যের গুণগত মান আগের চেয়ে কমানো যাবে না। কেননা এমনটি করা হলে তা প্রায় জুয়ার অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। দ্বিতীয় শর্তটি ক্রেতাদের জন্য। তা হল পুরস্কারের আশায় পণ্য ক্রয় না করা। কেননা পুরস্কারের আশায় পণ্য ক্রয় করলে পুরস্কার পাওয়া যেতেও পারে, নাও পারে। ফলে উদ্দেশ্যগত কারণে তা জুয়ার সাদৃশ হয়ে যায়।

উল্লেখ্য যে, এভাবে পুরস্কারের প্রলোভন দিয়ে পণ্য বাজারজাত করার পদ্ধতি শরীয়তের বাজারনীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তাই শর্ত পূরণ করে করলেও তা অপছন্দনীয় কাজ বলে বিবেচিত হবে। কেননা এর দ্বারা কৃত্রিম চাহিদা সৃষ্টি করা হয়। ফলে বাজারের স্বাভাবিক গতি প্রভাবিত হয় এবং একচেটিয়া ব্যবসার পথ সুগম হয়। তাই এধরনের কুপন ও পুরস্কারের আয়োজন থেকে বিরত থাকাই কাম্য। শরীয়তের দৃষ্টিতে পছন্দনীয় হল, পণ্যের গুণগত মান বৃদ্ধির মাধ্যমে কিংবা মূল্য কমিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে চাহিদা সৃষ্টি করা।

মাআলিমুস সুনান ৩/৪০০; আল মুগনী ১৩/৪০৮; ফিকহুন নাওয়াযিল ৩/১১৬

Sharable Link

মাসুদ চৌধুরী - সদরঘাট, ঢাকা

৬৩৮১. Question

মুহতারাম, আমাদের একটি লোকাল গার্মেন্ট আছে। এতে মেয়েদের থ্রী-পিছ, ফ্রকসহ বিভিন্ন আইটেমের পোশাক তৈরি করা হয়। যারা এ ব্যবসা করে, প্রায় সকলে তাদের পোশাকের গায়ে গার্মেন্টের নাম এবং এ কাপড়টি পরিহিতা একজন মেয়ের ছবি সম্বলিত একটি লেভেল লাগায়। আমার প্রশ্ন হল, ছবি সম্বলিত এধরনের লেভেল লাগানো কি বৈধ? সঠিক উত্তর জানতে চাই।

Answer

এভাবে প্যাকেটের ওপর নারীর ছবিযুক্ত লেভেল লাগানো সম্পূর্ণ নাজায়েয। এতে একে তো ছবির বিষয়টি আছেই। দ্বিতীয়ত নারীর ছবি প্রদর্শনের কারণে পর্দার বিধানও লঙ্ঘিত হয়। মানুষ বা অন্য কোনো প্রাণীর ছবি আঁকা ও তা দৃশ্যমান রাখার ব্যাপারে হাদীস শরীফে কঠিন ধমকি এসেছে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন

إِنَّ أَشَدَّ النَّاسِ عَذَابًا عِنْدَ اللَّهِ يَوْمَ القِيَامَةِ المُصَوِّرُونَ.

কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট সবচেয়ে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে ছবি অঙ্কনকারীরা। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৯৫০)

আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, অন্য এক হাদীসে এসেছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন

لَا تَدْخُلُ الْمَلَائِكَةُ بَيْتًا فِيهِ تَمَاثِيلُ أَوْ تَصَاوِيرُ.

ফেরেশতাগণ এমন ঘরে প্রবেশ করেন না, যে ঘরে কোনো প্রাণীর ছবি বা প্রতিকৃতি থাকে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ২১১২)

তাই পোশাকে বা প্যাকেটে মেয়েদের ছবি সম্বলিত লেভেল লাগানো যাবে না। মুসলমানদের উচিত, শরীয়তের বিধানের প্রতি যত্নশীল হওয়া। পুতুল বা ছবি ছাড়া শুধু পোশাকের ছবি ও ডিজাইন দেওয়া যেতে পারে। দ্বীনদার ব্যবসায়ীরা এটা চালু করলে অন্যদের জন্য তা আদর্শ ও অনুসরণীয় হতে পারে।

উমদাতুল কারী ২২/৭০; বাদায়েউস সনায়ে ১/৩০৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৫৮; জাওয়াহিরুল ফিকহ ৭/২৬৩

Sharable Link

মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম - নোয়াখালী

৬৩৮২. Question

স্বর্ণ-রুপার পেয়ালায় পানি পান করা জায়েয আছে কি?

Answer

স্বর্ণ বা রুপার পেয়ালায় পানি পান করা পুরুষ-মহিলা সকলের জন্য নাজায়েয। হাদীস শরীফে এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে।

হযরত হুযাইফা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে স্বর্ণ-রুপার পাত্রে পানাহার করতে, রেশমী কাপড় পরিধান করতে এবং তাতে বসতে নিষেধ করেছেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৮৩৭)

আলজামেউস সগীর, পৃ. ২৩২; মুখতাসারুত তহাবী, পৃ. ৪৩৬; আলইখতিয়ার ৪/১২৮; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩৭১ 

Sharable Link