আমি শীতকালে সাধারণত চামড়ার মোজা ব্যবহার করি। কখনো কখনো ঐ মোজার উপর চামড়ার জুরমুকও (মোজার উপর পরিধেয় ছোট মোজা) পরি। জানার বিষয় হল, ঐ জুরমুকের উপর কি মাসেহ করা যাবে?
আমি শীতকালে সাধারণত চামড়ার মোজা ব্যবহার করি। কখনো কখনো ঐ মোজার উপর চামড়ার জুরমুকও (মোজার উপর পরিধেয় ছোট মোজা) পরি। জানার বিষয় হল, ঐ জুরমুকের উপর কি মাসেহ করা যাবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যদি ওযু করে মোজা পরিধান করার পর ওযু ভঙ্গ হওয়ার আগে ঐ চামড়ার জুরমুক (মোজার উপর পরিধেয় ছোট মোজা) পরে থাকেন তাহলে এর উপর মাসেহ করতে পারবেন। আর যদি মোজা ওযু করার পর পরে থাকেন, কিন্তু জুরমুক পরে থাকেন ওযু ভঙ্গ হওয়ার পর তাহলে সেক্ষেত্রে জুরমুকের উপর মাসেহ করা বৈধ হবে না; বরং তখন ঐ জুরমুক খুলে মোজার উপর মাসেহ করবেন।
Sharable Link-কিতাবুল আছল ১/৮৩; বাদায়েউস সানায়ে ১/৮৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৯; ফাতহুল কাদীর ১/১৩৭; রদ্দুল মুহতার ১/২৬৮
কয়েকদিন আগে আমি এশার নামাযের উদ্দেশ্যে মসজিদের দিকে রওয়ানা দিই। মসজিদে প্রবেশের পূর্বে হঠাৎ দেখি, পায়ের ক্ষতস্থান থেকে রক্ত বের হয়ে গড়িয়ে পড়ছে। টিস্যু দিয়ে মুছে ফেলার পর রক্ত বন্ধ হয়ে গেলে আমি পুনরায় ওযু করে নামায আদায় করি। জানতে চাচ্ছি, পুনরায় ওযু করা প্রয়োজন ছিল কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।
হাঁ, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে পুনরায় ওযু করা ঠিক হয়েছে। কারণ ক্ষতস্থান থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ার দ্বারাই আপনার ওযু ভেঙে গেছে। মা‘মার রাহ. বলেন-
عَنْ قَتَادَةَ فِي الرَّجُلِ يَخْرُجُ مِنْهُ الْقَيْحُ وَالدَّمُ، فَقَالَ: تَوَضَّأُ مِنْ كُلِّ دَمٍ أَوْ قَيْحٍ سَالَ أَوْ قَطَرَ.
কাতাদাহ রাহ.-কে এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল, যার ক্ষতস্থান থেকে রক্ত, পুঁজ বের হয়েছে। তিনি বললেন, রক্ত, পুঁজ বের হয়ে গড়িয়ে পড়লে বা ফোঁটা ফোঁটা রক্ত পড়লে ওযু করতে হবে। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ৫৪৯)
Sharable Link-কিতাবুল আছল ১/৪৪; আলমাবসূত, সারাখসী ১/৭৬; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৩৬; বাদায়েউস সানায়ে ১/১২২; ফাতাওয়া সিরাজিয়া, পৃ. ২৯; আদ্দুররুল মুখতার ১/১৩৫
আমরা জানি, নামাযের প্রথম বৈঠকে তাশাহহুদের পর দরূদ শরীফ পড়া যায় না। পড়লে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়। আমি অনেকসময় নামাযের প্রথম বৈঠকে তাশাহহুদের পর ভুলে দরূদ শরীফ পড়া শুরু করি। এক্ষেত্রে কখনো কখনো দরূদ শরীফ পড়ে শেষ করার আগেই মনে পড়ে যায়। তখন আমি সঙ্গে সঙ্গে দাঁড়িয়ে যাই। মুহতারামের নিকট জানার বিষয় হল, এক্ষেত্রে দরূদ শরীফ পড়ে শেষ করার আগে মনে পড়লে এবং সঙ্গে সঙ্গে দাঁড়িয়ে গেলেও কি সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।
ফরয, ওয়াজিব ও সুন্নতে মুআক্কাদা নামাযের প্রথম বৈঠকে তাশাহহুদের পর কেউ যদি ভুলে দরূদ শরীফ اللّهُمَّ صَلِّ عَلى مُحَمَّدٍ পর্যন্ত বা এর বেশি পড়ে ফেলে তাহলে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে। তাই এমন ক্ষেত্রে সাহু সিজদা করতে হবে। আর নফল ও সুন্নতে গায়রে মুআক্কাদা (যেমন আসর ও ইশার আগের চার রাকাত) নামাযের প্রথম বৈঠকে দরূদ ও দুআ সবই পড়া উত্তম। তাই এসব নামাযে কেউ যদি তাশাহহুদের পর দরূদ শরীফ পড়ে তাহলে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে না।
Sharable Link-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৭৭; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১২১; দুরারুল হুক্কাম ১/১১৬; মাজমাউল আনহুর ১/১৯৭; ফাতহুল কাদীর ১/৩৯৬; রদ্দুল মুহতার ১/৫১০
মুহতারাম মুফতী সাহেব! আমি প্রায় সময় নামাযে কত রাকাত হয়েছে- এ নিয়ে সন্দেহে পড়ে যাই। এক্ষেত্রে কখনো কখনো লম্বা সময় চিন্তা করেও নিশ্চিত হতে পারি না যে, কত রাকাত হয়েছে? জানার বিষয় হল, এক্ষেত্রে করণীয় কী?
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী আপনার যেহেতু প্রায়ই এমন সন্দেহ হয়ে থাকে তাই এক্ষেত্রে আপনার কর্তব্য হবে, কোনো নামাযে যখন এমন সন্দেহে পড়বেন তখন প্রবল ধারণার ভিত্তিতে কত রাকাত হয়েছে তা নির্ণয়ের চেষ্টা করবেন। এবং যত রাকাত হয়েছে বলে প্রবল ধারণা হবে তত রাকাত ধরে বাকি নামায পূর্ণ করবেন। এক্ষেত্রে নামায শেষে সাহু সিজদা করতে হবে না। আর যদি প্রবল ধারণার ভিত্তিতে রাকাত সংখ্যা নির্ণয় করতে না পারেন তাহলে কম সংখ্যা, উদাহরণস্বরূপ দুই রাকাত হয়েছে, না তিন রাকাত- এমন সন্দেহ হলে দুই রাকাত হয়েছে ধরে বাকি নামায পূর্ণ করবেন। এক্ষেত্রে প্রতি রাকাত শেষে বৈঠক করবেন এবং নামায শেষে সাহু সিজদা করবেন।
উল্লেখ্য, রাকাত সংখ্যা নিয়ে সন্দেহে পড়ার পর কেউ যদি চিন্তা করতে গিয়ে তিন তাসবীহ পরিমাণ সময় বিলম্ব করে তাহলে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে।
Sharable Link-খুুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৬৯; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪০২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৪২৯; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৪৬০; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী, পৃ. ২৫৮; রদ্দুল মুহতার ২/৯৩
নাবালেগ বাচ্চার পেছনে তারাবীর নামাযে এক্তেদা করলে কি তা সহীহ হবে? অনেক হেফয খানায় দেখা যায়, রমযান মাসে ছাত্ররা কয়েকজন করে ভাগ ভাগ হয়ে তারাবীর নামায পড়ে। এক্ষেত্রে যেহেতু মূল উদ্দেশ্য থাকে নামাযে পড়ার মাধ্যমে হেফয পাকা করা, তাই নাবালেগ ছাত্ররাও নামায পড়ায় এবং বড় ছাত্ররা তাদের পেছনে এক্তেদা করে। অনেক সময় নেগরানি করার জন্য উস্তাযও ছাত্রদের সাথে নামায পড়েন। আমার জানার বিষয় হল, এক্ষেত্রে শরীয়াতের বিধান কী?
নাবালেগ বাচ্চার পেছনে প্রাপ্তবয়স্কদের এক্তেদা সহীহ নয়। বিশুদ্ধমতে উক্ত বিধানটি ফরয-নফল সব ধরনের নামাযের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্ক কোনো ছাত্র বা উস্তাযের জন্য নাবালেগ ছাত্রের পেছনে তারাবীর নামাযে এক্তেদা করা জায়েয হবে না। হযরত আতা ও উমর ইবনে আবদুল আযীয রাহ. থেকে বর্ণিত, তাঁরা বলেন-
لاَ يَؤُمُّ الْغُلاَمُ قَبْلَ أَنْ يَحْتَلِمَ فِي الْفَرِيضَةِ وَلاَ غَيْرِهَا.
নাবালেগ বাচ্চা ফরয-নফল কোনো নামাযেই ইমামতি করবে না। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, বর্ণনা ৩৫২৪)
প্রকাশ থাকে যে, এক্ষেত্রে ছোট ছাত্র ও বড় ছাত্ররা আলাদা আলাদা জামাত করতে পারে। তাহলে তাতে মাসআলাগত সমস্যা থাকবে না।
Sharable Link-আলইখতিয়ার ১/২০২; ফাতহুল কাদীর ১/৩১০; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৩৭৫; ইমদাদুল ফাত্তাহ, পৃ. ৩৩১; রদ্দুল মুহতার ১/৫৭৬
গতকাল যোহরের জামাত না পেয়ে একা একা মসজিদে যোহরের নামায পড়ি। আমার কিছুটা দূরে হাফেয সাহেব তিলাওয়াত করছিলেন। নামাযের মাঝে হাফেয সাহেবের মুখ থেকে সিজদার আয়াত শুনতে পেয়ে তখনই সিজদায়ে তিলাওয়াত করি। নামায শেষে হাফেয সাহেব জিজ্ঞাসা করেন, আপনি কি আমার তিলাওয়াত শুনে সিজদা করেছেন?
আমি হা বললে তিনি বলেন, আপনার নামায ফাসেদ হয়ে গেছে। কারণ নামাযের বাইরের কারো তিলাওয়াত শুনে সিজদা করলে নামায নষ্ট হয়ে যায়।
মুহতারাম মুফতী সাহেবের কাছে জানার বিষয় হল, আসলেই কি আমার নামায নষ্ট হয়ে গেছে? জানালে উপকৃত হব।
নামাযের বাইরের কোনো ব্যক্তি থেকে সিজদার আয়াত শুনে নামাযের ভেতরে সিজদা তিলাওয়াত করা ঠিক হয়নি। তবে এ কারণে আপনার নামায নষ্ট হয়নি। কিন্তু নামাযের ভেতর অতিরিক্ত সিজদা করার কারণে মাকরূহে তাহরিমী হয়েছে। তাই উক্ত নামাযটি পুনরায় আদায় করে নিতে হবে। আর সিজদায়ে তিলাওয়াতও যেহেতু আদায় হয়নি তাই তা পরবর্তীতে আদায় করে নিতে হবে।
Sharable Link-আলজামিউস সাগীর, পৃ. ১০২; আলমুহীতুর রাযাবী ১/৪৩৩; আলইখতিয়ার ১/২৫৬; আলজাওহারাতুন নায়্যিরা ১/১০৫; আদ্দুররুল মুখতার ২/১১৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩৩
আমি রমযানে আমাদের মহল্লার মসজিদে তারাবীর নামায পড়াই। কখনো বাইরে গেলে বাসে বসে তারাবীর পড়া ইয়াদ করি। অনেক সময় একটি সিজদার আয়াত একাধিকবার তিলাওয়াত করা হয়। আমি জানি যে, একটি সিজদার আয়াত এক মজলিসে একাধিকবার তিলাওয়াত করলে একটি সিজদা ওয়াজিব হয়। কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন মজলিসে তিলাওয়াত করলে একাধিক সিজদা ওয়াজিব হয়।
মুহতারামের নিকট জানার বিষয় হল, চলন্ত বাসে বসে একটি সিজদার আয়াত একাধিকবার তিলাওয়াত করা হলে তো প্রতিবার ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় তিলাওয়াত করা হয়। তাই এক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন সিজদা ওয়াজিব হবে, না একটি সিজদা ওয়াজিব হবে? আশা করি জানাবেন।
বাসের ভেতর থাকা অবস্থায় একটি সিজদার আয়াত একাধিকবার তিলাওয়াত করলেও একটি সিজদাই ওয়াজিব হবে। চাই বাস চলন্ত হোক বা থেমে থাকুক। কারণ বাস চলতে থাকলেও যাত্রী বাসের ভেতরে থাকলে একই মজলিসে আছে বলে ধর্তব্য হবে।
Sharable Link-আলমাবসূত, সারাখসী ২/১৪; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৩৩; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫০৪; মাজমাউল আনহুর ১/২৩৫; আদ্দুররুল মুখতার ২/১১৭
জামাতে নামায আদায়ের সময় মাঝে মাঝে এমন হয় যে, আমি প্রথম বৈঠকে তাশাহহুদ শেষ করার আগেই ইমাম তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে যান। সঠিক মাসআলা জানা না থাকার কারণে এক্ষেত্রে বেশ সংশয়ে পড়তে হয়। তাই মুহতারামের কাছে বিষয়টির সঠিক সমাধান জানতে চাচ্ছি।
প্রথম বৈঠকে মুক্তাদীর তাশাহহুদ শেষ হওয়ার আগেই ইমাম দাঁড়িয়ে গেলে, মুক্তাদী নিজ তাশাহহুদ পূর্ণ করার পরই দাঁড়াবে। কেননা নামাযে উভয় বৈঠকে তাশাহহুদ পড়া ইমাম মুক্তাদী সকলের জন্যই ওয়াজিব। তাই তাশাহহুদ শেষ না করে দাঁড়াবে না।
Sharable Link-ফাতাওয়া খানিয়া ১/৯৬; আলমুলতাকাত, পৃ. ৪৯; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৩১; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ১/২৯৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৯০
আমাদের মাদরাসা মসজিদে মাঝে মাঝে মুসল্লীদের সামনে সুতরা হিসাবে তেপায়া রাখা হয়। যে তেপায়াগুলোর উচ্চতা ১৩/১৪ ইঞ্চি। হুজুরের কাছে জানতে চাই, এই তেপায়াগুলো দিয়ে কি সুতরার কাজ হবে? অন্যথায় সুতরার উচ্চতা কতটুকু হতে হবে?
উক্ত তেপায়াগুলোর উচ্চতা যেহেতু এক হাতের কম, তাই এগুলো সুতরার জন্য যথেষ্ট হবে না। কেননা সুতরা কমপক্ষে এক হাত লম্বা হতে হবে। হাদীস শরীফে এসেছে, আয়েশা রা. বর্ণনা করেন-
سُئِلَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ سُتْرَةِ الْمُصَلِّي؟ فَقَالَ: مِثْلُ مُؤْخِرَةِ الرَّحْلِ.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মুসল্লীর সুতরা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল। তিনি বললেন, হাওদার (উটের পিঠের বিছানার) পিছনের কাঠের পরিমাণ। (সহীহ মুসলিম, বর্ণনা ৫০০)
তাবেয়ী আতা রাহ. বলেন-
آخِرَةُ الرَّحْلِ ذِرَاعٌ فَمَا فَوْقَهُ.
হাওদার পিছনের কাঠ এক হাত বা তার চেয়ে কিছুটা লম্বা হয়ে থাকে। (সুনানে আবু দাউদ, বর্ণনা ৬৮৬)।
Sharable Link-কিতাবুল আছল ১/১৬৯; বাদায়েউস সানায়ে ১/৫১০; আযযাখীরাতুল বুরহানিয়া ২/১৮৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/২৮৭; রদ্দুল মুহতার ১/৬৩৬
একদিন যোহর নামায আদায় করার জন্য মহল্লার মসজিদে যাই। গিয়ে দেখি, ইমাম সাহেব বাড়ীতে গিয়েছেন; তাই মুসল্লীরা আমাকে নামায পড়াতে বললেন। আমি নামায পড়ালাম এবং জামাত শেষ হওয়ার পর সেখানে দাঁড়িয়েই পরবর্তী সুন্নত নামায আদায় করলাম। উপস্থিত মুসল্লীদের মধ্যে একজন আলেমও ছিলেন। নামাযের শেষে তিনি আমার কাছে এসে বললেন, যেখানে দাঁড়িয়ে আপনি ইমামতি করেছেন সেখানে পরবর্তী সুন্নত নামায পড়া আপনার জন্য অনুত্তম হয়েছে।
আমি বললাম, আসলে বিষয়টি আমার জানা ছিল না।
আমি জানতে চাচ্ছি, তার কথা কি ঠিক?
হাঁ, উক্ত আলেম ঠিক বলেছেন। কেননা ইমাম যেখানে দাঁড়িয়ে ফরয নামায আদায় করেছেন, সেখানেই পরবর্তী সুন্নত ও নফল নামায আদায় করা অনুত্তম। হযরত আলী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
لَا يَصْلُحُ لِلْإِمَامِ أَنْ يُصَلِّيَ فِي الْمَكَانِ الَّذِي أَمَّ فِيهِ الْقَوْمَ حَتَّى يَتَحَوَّلَ أَوْ يَفْصِلَ بِكَلَامٍ.
ইমাম যেখানে দাঁড়িয়ে ইমামতি করেছে, সেখান থেকে (ডানে বামে কিংবা পেছনে) না সরে অথবা (কারো সাথে) কোনো কথা বলার আগে সেখানেই (সুন্নত-নফল) নামায পড়া তার জন্য অনুচিত। (মুসান্নাফে আবদুর রায্যাক, বর্ণনা ৩৯১৭)
ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন-
لَا يُصَلِّي الْإِمَامُ التَّطَوُّعَ حَيْثُ يُصَلِّي الْمَكْتُوبَةَ.
ইমাম যেখানে দাঁড়িয়ে ফরয নামায পড়েছে, সেখানে সুন্নত-নফল আদায় করবে না। (মুসান্নাফে আবদুর রায্যাক, বর্ণনা ৩৯১৯)
অতএব ফরয নামাযের পর ইমাম নিজ স্থান থেকে ডানে বা বামে কিংবা পিছনে সরে গিয়ে সুন্নত বা নফল আদায় করবেন।
Sharable Link-আলমাবসূত, সারাখসী ১/৩৮; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৩৫; জামিউল মুযমারাত ১/৩৫৫; হালবাতুল মুজাল্লী ২/২২৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৭৭
আমি কিছুদিন আগে চারজন পরীক্ষার্থীর তরজমাতুল কুরআন পরীক্ষা নিই। তাদেরকে কয়েকটি করে আয়াতের তরজমা জিজ্ঞাসা করি। এর মধ্যে একটি সিজদার আয়াতও ছিল। এবং এ সিজদার আয়াতটির তরজমা সকলকেই জিজ্ঞাসা করি। এজন্য চারজন থেকেই আয়াতটি শোনা হয়। মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাচ্ছি, এক্ষেত্রে আমাকে কয়টি সিজদা দিতে হবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে একটি সিজদা তিলাওয়াত আদায় করাই যথেষ্ট হবে। কেননা একই মজলিসে একটি সিজদার আয়াত একাধিক ব্যক্তি থেকে শুনলেও একটি সিজদাই ওয়াজিব হয়। অবশ্য মজলিস পরিবর্তন হয়ে যায় (যেমন কামরা থেকে বের হয়ে যাওয়া ইত্যাদি) এমন কোনো কাজ করলে দুই মজলিস ধরা হবে। সেক্ষেত্রে একটি সিজদা যথেষ্ট হবে না; বরং যতবার মজলিস পরিবর্তন করা হবে এবং পৃথক মজলিসে সিজদার আয়াত শোনা হবে সেটার জন্য পৃথকভাবে সিজদা দিতে হবে।
Sharable Link-ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৫৯; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী, ইসবিজাবী ১/৩৩৭; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ১/৩৬৫; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/৬৮; রদ্দুল মুহতার ২/১১৫, ১১৭
গত জুমাতে আমাদের মসজিদের খতীব সাহেব তার এক ছাত্রকে জুমার খুতবা দিতে বলেন। ঐ ছাত্র খুতবা দেওয়ার পর খতীব সাহেব নিজে নামায পড়ান। বিষয়টি আমার কাছে একটু খটকা লাগল। তাই হুজুরের কাছে জানতে চাচ্ছি, খতীব সাহেবের এই কাজটি কি ঠিক হয়েছে?
উত্তম হল, যিনি জুমার খুতবা দেবেন তিনিই নামায পড়াবেন। বিনা কারণে এর ব্যতিক্রম না করাই উচিত। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উক্ত নিয়মের খেলাফ করা ঠিক হয়নি। তবে এ কারণে নামাযে ত্রুটি হয়নি। নামায সহীহ হয়ে গেছে।
Sharable Link-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২০৫; আততাজনীস ওয়াল মাযীদ ২/২০৫; আলহাবিল কুদসী ১/২৩৯; আলমুহীতুল বুরহানী ২৩৫৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৫৭২; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৫৪২
আমি একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করি। কয়েকদিন আগে কোম্পানির পক্ষ থেকে প্রত্যেক কর্মচারিকে চারটি করে গেঞ্জি দেওয়া হয়। প্রতিটি গেঞ্জিতে বিড়ালের ছবি আছে। একদিন ডিউটির সময় ওই গেঞ্জি পরে নামায পড়তে যাই। তখন জনৈক মুসল্লী বলেন, ছবিওয়ালা গেঞ্জি পরিধান করে নামায পড়লে নামায হয় না। তাই মুহতারামের নিকট জানতে চাই, ছবিযুক্ত গেঞ্জি পরিধান করে নামায পড়লে কি নামাযের কোনো ক্ষতি হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।
কাপড়ে প্রাণীর ছবি যদি স্পষ্ট হয় এবং দৃশ্যমান হয়, তাহলে সেই কাপড় পরে নামায পড়া মাকরূহে তাহরীমি। তবে কোনো কাপড় দ্বারা ওই ছবি ঢাকা থাকলে নামায মাকরূহ হবে না।
প্রকাশ থাকে যে, কোনো প্রাণীর স্পষ্ট দৃশ্যমান ছবিযুক্ত কাপড় নামাযের বাইরেও পরিধান করা গুনাহের কাজ। তাই এ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। হাদীস শরীফে এসেছে, আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত-
أَنَّهَا اشْتَرَتْ نُمْرُقَةً فِيهَا تَصَاوِيرُ، فَقَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْبَابِ فَلَمْ يَدْخُلْ، فَقُلْتُ: أَتُوبُ إِلَى اللهِ مِمَّا أَذْنَبْتُ، قَالَ: مَا هَذِهِ النُّمْرُقَةُ؟ قُلْتُ: لِتَجْلِسَ عَلَيْهَا وَتَوَسَّدَهَا، قَالَ: إِنَّ أَصْحَابَ هَذِهِ الصُّوَرِ يُعَذَّبُونَ يَوْمَ القِيَامَةِ، يُقَالُ لَهُمْ: أَحْيُوا مَا خَلَقْتُمْ، وَإِنَّ المَلاَئِكَةَ لاَ تَدْخُلُ بَيْتًا فِيهِ الصُّورَةُ.
একবার আয়েশা রা. একটি ছবিযুক্ত গদি ক্রয় করলেন। (যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা দেখলেন) তখন তিনি দরজায় দাঁড়িয়ে গেলেন, ঘরের ভেতর প্রবেশ করলেন না। তখন আমি বললাম, আমি যে গুনাহ করেছি তা থেকে আল্লাহ তাআলার নিকট তাওবা করছি।
তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এই গদি কীসের জন্য?
আমি বললাম, আপনি এতে বসবেন ও হেলান দিবেন।
তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, নিশ্চয়ই যারা এসব ছবি নির্মাণ করে কিয়ামতের দিন তাদেরকে শাস্তি দেয়া হবে। তাদেরকে বলা হবে, তোমরা যা তৈরি করেছ তাতে জীবন দান করো। তিনি আরো বলেন, নিশ্চয়ই যে ঘরে ছবি থাকে সে ঘরে রহমতের ফিরিশতা প্রবেশ করে না। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৯৫৭)
Sharable Link-কিতাবুল আছল ১/১৮৫; আলআজনাস, নাতিফী ১/৭৬; আলহাবিল কুদসী ১/২০৯; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭; রদ্দুল মুহতার ১/৬৪৭
আমার কাছে সোনা ও রুপার কিছু অলংকার আছে। সেগুলোর মূল্য নেসাব পরিমাণ অর্থের বেশি। তবে আমার কাছে নগদ টাকা নেই। তাই যাকাতবর্ষ পূর্ণ হলে আমার স্বামীকে আমার পক্ষ থেকে যাকাত আদায় করে দিতে বলি। তিনি আমার পক্ষ থেকে যাকাত আদায় করে দেন। মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাই, এভাবে আমার স্বামী আমার পক্ষ থেকে যাকাত আদায় করে দিলে কি আমার যাকাত আদায় হয়ে যাবে, নাকি আমার যাকাত আমার নিজেকেই আদায় করতে হবে?
হাঁ, আপনার স্বামী আপনার যাকাত আদায় করে দিলেও আদায় হয়ে যাবে। কেননা যাকাতদাতার সম্মতিতে অন্য কেউ তার নিজের সম্পদ দ্বারা যাকাত আদায় করলেও যাকাত আদায় হয়ে যায়। এতে কোনো সমস্যা নেই।
Sharable Link-কিতাবুল আছল ২/১২৬; খিযানাতুল আকমাল ১/২৭৫; আলমুহীতুর রাযাবী ১/৫৪৬; আলবাহরুর রায়েক ২/২১০; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ১/৩৯৫
আমার মাছের বড় ব্যবসা আছে। গত বছর আমি আড়াই লক্ষ টাকার মাছের খাদ্য কিনি। কিন্তু সারা বছর মাছকে দেয়ার পরেও প্রায় ষাট হাজার টাকার খাদ্য বেঁচে যায়। মুহতারামের নিকট জানার বিষয় হল, এই বেঁচে যাওয়া খাদ্যের উপর কি যাকাত আসবে? জানালে উপকৃত হব।
না, উক্ত মজুদ খাবারের উপর যাকাত ফরয হবে না। কেননা তা আপনি মাছের খাবারের উদ্দেশ্যেই ক্রয় করেছেন; বিক্রির উদ্দেশ্যে কেনেননি। তাই তা ব্যবসার পণ্যের অন্তর্ভুক্ত হবে না এবং তাতে যাকাতও আসবে না। তবে যাকাতবর্ষ শেষে ব্যবসার মাছের যাকাত দিতে হবে।
Sharable Link-আলমাবসূত, সারাখসী ২/১২৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪০; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/১৬৬; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ১/১৮২; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/৭৮
আমি একজন ব্যবসায়ী। প্রতি বছর আমি রমযানে যাকাত দিয়ে থাকি। এবারও তাই করি। কিন্তু যাকাত দেয়ার পর হিসাব করে দেখি, আমার উপর যত টাকা যাকাত এসেছে তার চেয়ে কয়েক হাজার টাকা বেশি দেয়া হয়েছে।
মুহতারামের কাছে জানার বিষয় হল, এ বছর যে পরিমাণ টাকা বেশি দেয়া হয়েছে তা আগামী বছর যাকাত দেয়ার সময় হিসাবে ধরতে পারব কি না?
হাঁ, যে পরিমাণ টাকা যাকাত হিসেবে অতিরিক্ত দেওয়া হয়েছে তা আগামী বছরের অগ্রীম যাকাত হিসেবে ধরতে পারবেন। সুতরাং সে পরিমাণ টাকা আগামী বছরের যাকাত থেকে কর্তন করতে পারবেন।
Sharable Link-জামে তিরমিযী, হাদীস ৬৮৭; আলফাতাওয়া মিন আকাবীলিল মাশায়েখ, পৃ. ১২৩; আলমুহীতুর রাযাবী ১/৫৩৬; আততাজনীস ওয়াল মাযীদ ২/৩৩১; আলবাহরুর রায়েক ২/২২৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭৬; রদ্দুল মুহতার ২/২৯৩
আমার বাড়ী মোমেনশাহী। এবার রমযানে একদিন রোযা রেখে সকাল দশটার দিকে একটি কাজে বাড়ী থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা হই। পথে এক জায়গায় দুপুর দুইটার দিকে আমার বোনের বাসায় অবস্থান করি। আমার বোন আমাকে বলেন, সফর অবস্থায় তো রোযা না রাখার অনুমতি আছে। তাই কষ্ট হলে রোযা ভেঙে ফেলতে পার। তার কথা মতো আমি রোযা ভেঙে ফেললাম।
এখন মুহতারামের নিকট জানার বিষয় হল, ঐ অবস্থায় সফরের কারণে আমার রোযা ভেঙে ফেলাটা কি জায়েয হয়েছে? ঐ রোযার কি কাফফারা আদায় করতে হবে, নাকি শুধু কাযা আদায় করলেই চলবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐদিন সফরের অজুহাতে রোযা ভেঙে ফেলা ঠিক হয়নি। কেননা আপনি ঐ দিনটির শুরুতে মুকীম ছিলেন। আর দিনের শুরুতে মুকীম থাকলে সফরের অজুহাতে রোযা ভাঙা জায়েয নয়। তবে তা ভেঙে ফেলার কারণে কাফফারা আদায় করতে হবে না। শুধু ঐ দিনের রোযার কাযা আদায় করলেই চলবে।
Sharable Link-কিতাবুল আছল ২/১৬৭; ফাতহুল কাদীর ২/২৮৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৫৭; আলবাহরুর রায়েক ২/২৯০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৬; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৩১
তাওয়াফে কুদুম করার পর ভীড়ের কারণে তাওয়াফের দুই রাকাত নামায আমার পড়া হয়নি। পরে নামাযটির কথা ভুলে যাই। মক্কায় থাকাবস্থায় ঐ নামাযটির কথা আর স্মরণ হয়নি। পরবর্তীতে দেশে চলে আসার পর স্মরণ হয়েছে।
মুহতারামের নিকট জানার বিষয় হল, তাওয়াফের দুই রাকাত নামায পড়ার হুকুম কী? তা ছুটে যাওয়ার কারণে কি আমাকে কোনো জরিমানা দিতে হবে? এখন আমার করণীয় কী?
তাওয়াফের পর দুই রাকাত নামায পড়া ওয়াজিব। উক্ত দুই রাকাত নামায মাকামে ইবরাহীমের নিকট পড়া উত্তম। অবশ্য তা মসজিদে হারামের যে কোনো স্থানেও পড়া যায়। তেমনিভাবে তা হেরেমের এলাকায় পড়লেও মাকরূহ হবে না। কিন্তু হেরেমের এলাকার বাইরে পড়লে ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে, তবে মাকরূহ হবে। তাই আপনি যেহেতু তাওয়াফের দুই রাকাত নামায না পড়েই দেশে চলে এসেছেন তাই এখন দেশেই তা পড়ে নেবেন। যথাস্থানে না পড়া মাকরূহ হলেও এর দ্বারা ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। আর এ কারণে কোনো জরিমানা দিতে হবে না। হযরত আতা রাহ. থেকে বর্ণিত-
فِي رَجُلٍ طَافَ بِالْبَيْتِ وَنَسِيَ أَنْ يُصَلِّيَ الرَّكْعَتَيْنِ حَتَّى مَضَى، قَالَ : يُصَلِّيهِمَا إِذَا ذَكَرَ، وَلَيْسَ عَلَيْهِ شَيْءٌ.
যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহ্র তাওয়াফ করার পর তাওয়াফের দুই রাকাত নামাযের কথা ভুলে গিয়ে চলে যায় সে স্মরণ হওয়া মাত্র ঐ দুই রাকাত নামায পড়ে নেবে। আর এ কারণে তার উপর কোনো জরিমানা আসবে না। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, বর্ণনা ১৪৭৭৯)
Sharable Link-আলমাবসূত, সারাখসী ৪/১২; আলমাসালিক ফিল মানাসিক ১/৪১২-৪১৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৪৯৯; আলবাহরুল আমীক ২/১২৩৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৪৬৬; রদ্দুল মুহতার ২/৪৯৯
আমাদের গ্রামের একটি মেয়ে শিশুকে আমি কয়েকদিন দুধ পান করিয়েছিলাম। তখন তার বয়স ছিল এক বছর। সে এখন বড় হয়েছে। এখনো সে আমাকে তার মায়ের মতো সম্মান করে। কয়েকদিন আগে তার বিয়ে হয়েছে। মাঝে মাঝে সে তার স্বামীকে নিয়ে আমাদের বাড়ীতে বেড়াতে আসে। জানতে চাই, আমি কি তার স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে পারব?
আপন মেয়ের স্বামীর মতো দুধ মেয়ের স্বামীও মাহরাম। সুতরাং আপনি আপনার দুধ মেয়ের স্বামীর সাথে দেখা করতে পারবেন।
Sharable Link-কিতাবুল আছল ১০/২৮৫; আলহাবিল কুদসী ১/৩৭৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/৪৬৩; আলবাহরুর রায়েক ৩/৯৪; রদ্দুল মুহতার ৩/৩১
কিছুদিন আগে আমি খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। তখন আমি মান্নত করেছিলাম, আল্লাহ যদি আমাকে সুস্থ করে দেন তাহলে আমি কয়েকটি নফল রোযা রাখব। তবে আমি রোযার কোনো সংখ্যা নির্দিষ্ট করিনি।
মুহতারামের নিকট জানতে চাই, এখন আমাকে মান্নত পুরা করার জন্য কয়টি রোযা রাখতে হবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনাকে মান্নতের তিনটি রোযা রাখতে হবে। কেননা রোযার মান্নত করার বিষয়ে যদি সংখ্যা নির্দিষ্ট করা না হয় তাহলে অন্তত তিনটি রোযা রাখতে হয়।
Sharable Link-কিতাবুল আছল ২/২৮০; আলমুহীতুর রাযাবী ৪/৫৪১; আলমুহীতুল বুরহানী৬/৩৫৪ ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ২/১৬০; আলবাহরুর রায়েক ৪/২৯৭
আমাদের জামে মসজিদের নিজস্ব একটি মার্কেট আছে। এর বাৎসরিক আয় থেকে মসজিদ কমিটি মসজিদের নামে আরেকটি মার্কেট করার জন্য বাজারের মধ্যে ২ কাঠা জমি ক্রয় করেছিল। সম্প্রতি বিভিন্ন কারণে মসজিদ কমিটি উক্ত জমিটি বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এখন প্রশ্ন উঠেছে যে, মসজিদ কমিটির জন্য মসজিদের এই সম্পতি বিক্রি করা জায়েয হবে কি না?
তাই মুহতারামের কাছে জানতে চাই, মসজিদেরই স্বার্থে মসজিদ কমিটির জন্য উক্ত জমিটি বিক্রি করা জায়েয হবে কি? আশা করি জানিয়ে বাধিত করবেন।
ওয়াকফের আয় দিয়ে ক্রয়কৃত জমি মূল ওয়াকফের সম্পত্তির মতো নয়। তাই এ ধরনের সম্পত্তি মসজিদের প্রয়োজনে বিক্রি করা জায়েয। সুতরাং মসজিদের কল্যাণে কমিটির জন্য প্রশ্নোক্ত জমিটি উপযুক্ত মূল্যে বিক্রি করা জায়েয হবে।
Sharable Link-আলহাবিল কুদসী ১/৫৫১; আলমুহীতুল বুরহানী ৯/১৩৮; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/২৯৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৮/১৮০; আলবাহরুর রায়েক ৫/২০৭; রদ্দুল মুহতার ৪/৪১৬
গত পাঁচ বছর আগে আমাদের এলাকার মসজিদটি যখন নতুন করে নির্মাণ করা হয় তখন আমি উক্ত নির্মাণকাজে কিছু টাকা দিই। আর আমার একটি ফসলী জমি, যা প্রায় সাড়ে চার বিঘা পরিমাণ, সেখান থেকে দশ কাঠা জমি মসজিদের জন্য ওয়াকফ করি। কিন্তু এখন আমি ঐ ফসলী জমিতে আমের বাগান করতে চাচ্ছি। তা এভাবে- যে দশ কাঠা জমি মসজিদের জন্য ওয়াকফ করেছিলাম তার পরিবর্তে আমি সমমানের অন্য আরেকটি জমি থেকে দশ কাঠা জমি বদল করব।
মুহতারামের কাছে জানতে চাই যে, এভাবে ওয়াকফিয়া জমি এওয়াজ-বদল করতে শরীয়তের দৃষ্টিতে কি কোনো অসুবিধা আছে? আশা করি বিষয়টি জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নোক্ত কারণে উক্ত ওয়াকফকৃত জমি অন্য জমি দ্বারা এওয়াজ-বদল করা যাবে না। তা সম্পূর্ণ নাজায়েয হবে। কেননা ওয়াকফ করার দ্বারা উক্ত জমি আপনার মালিকানা থেকে একেবারে বের হয়ে মসজিদের সম্পত্তি হয়ে গেছে। সুতরাং তাতে আপনার বা আপনার ওয়ারিসের মালিকানাসূলভ কোনো হস্তক্ষেপ যেমন বিক্রি, এওয়াজ-বদল বা দান ইত্যাদির কোনো সুযোগই নেই।
Sharable Link-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৪২৫; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩০৭; আলইসআফ, পৃ. ১১৫; ফাতহুল কাদীর ৫/৪৪০; জামিউর রুমূয ৩/২৯৩; রদ্দুল মুহতার ৪/৪৮৪
আমাদের ঈদগাহে তিন পাশ সীমানাদেয়াল দিয়ে ঘেরাও করা। আর এক পাশ খোলা থাকায় অনেকে সেখানে ঘাস খাওয়ানোর জন্য গরু বেঁধে রাখে। সেখানে গরু পেশাব পায়খানা করে একদম নষ্ট করে রাখে। ঈদের আগে তা পরিষ্কার করে নামায আদায় করা অনেক কষ্টকর হয়ে যায়। তাই ওয়াকফকারী এবং তার ছেলেরা এলাকার লোকদেরকে সেখানে গরু ছাগল চরাতে নিষেধ করেন। পরবর্তীতে এ নিয়ে এলাকায় অনেক তর্ক বিতর্ক হয়। একপর্যায়ে কেউ কেউ জায়েয নাজায়েযের প্রসঙ্গও টেনে নিয়ে আসে।
তাই মুহতারামের কাছে জানতে চাই, আসলে এক্ষেত্রে শরীয়তের বিধান কী? সেখানে গরু ছাগল চরানো কি ঠিক? আশা করি জানিয়ে বাধিত করবেন।
ওয়াকফিয়া ঈদগাহ নামাযের জন্য নির্ধারিত স্থান। তার পবিত্রতা রক্ষা করা এবং যথাযথ সম্মান করা জরুরি। গরু-ছাগল চরানোর কারণে ঈদগাহ অপবিত্র হয়ে যায়; যা ঈদগাহের সম্মানেরও পরিপন্থী। তাই ওয়াকফিয়া ঈদগাহে গরু ছাগল চরানো যাবে না।
Sharable Link-আলফাতাওয়া মিন আকাবীলিল মাশায়েখ, পৃ. ৭৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৮/১৬২; জামিউল মুযমারাত ২/১৬৬; আলইসআফ, পৃ. ৮৮; রদ্দুল মুহতার ১/৬৫৭
আমার ৮টি সাইকেল আছে। সেগুলো আমি গ্রামের ছেলেদের কাছে ভাড়া দিয়ে থাকি। প্রতি ঘণ্টা ৩০ টাকা করে। এক ঘণ্টার জন্য সাইকেল নেওয়ার পর সে চালাক বা না চালাক তাকে ৩০ টাকা দিতে হবে এ ধরনের শর্ত থাকে। আর আমি সাধারণত সাইকেল দেওয়ার আগেই ভাড়া নিয়ে নিই। কিন্তু কখনো ঘণ্টা শেষ হওয়ার আগেই সাইকেল নষ্ট হয়ে যায়। যেমন চেইন ছিঁড়ে যায়, হাওয়া চলে যায় ইত্যাদি। তখন ওদের বাকি টাকা আর ফেরত দিই না।
জানতে চাই, এক্ষেত্রে ঘণ্টার বাকি সময়ের টাকা ফেরত দেওয়া কি আমার জন্য জরুরি? আশা করি জানিয়ে বাধিত করবেন।
পূর্ণ ভাড়া বৈধ হওয়ার জন্য ভাড়ার পুরো সময় সাইকেল ব্যবহার উপযোগী হতে হবে। তাই ভাড়ার সময়ের মধ্যে সাইকেল নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে ব্যবহার উপযোগী না থাকলে বাকি সময়ের ভাড়ার টাকা ফেরত দেওয়া কিংবা বাকি সময়ের জন্য আরেকটি সাইকেল দেওয়া আপনার জন্য আবশ্যক। কেননা, ভাড়ায় প্রদত্ত সাইকেলটি যতটুকু সময় ব্যবহার উপযোগী থাকবে, ততটুকু সময়ের ভাড়াই আপনার প্রাপ্য। এর অতিরিক্ত ভাড়া গ্রহণ করা আপনার জন্য বৈধ হবে না। তবে সাইকেলটি ব্যবহার উপযোগী হওয়া সত্ত্বেও কেউ যদি ঘণ্টা শেষ হওয়ার আগেই স্বেচ্ছায় সাইকেল জমা দিয়ে দেয় কিংবা ব্যবহার উপযোগী হওয়া সত্ত্বেও ব্যবহার না করে তবে পুরো টাকাই আপনার প্রাপ্য হবে।
Sharable Link-আলমাবসূত, সারাখসী ১৫/১১১; আলমুহীতুর রাযাবী ৬/৫০৬; আলমুহীতুল বুরহানী ১১/২২৩, ২২৫; আলবাহরুর রায়েক ৭/৩০৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪৫৮; আদ্দুররুল মুখতার ৬/১২
বাজারে আমার একটি কাপড়ের দোকান আছে। কাপড় কেনার সময় প্রায়ই কাস্টমারকে বলে দেই, এখনই ভালোভাবে দেখে নিন; পরবর্তীতে কোনো সমস্যার কারণে কিন্তু পণ্য ফেরত নেওয়া হবে না।
মুহতারামের কাছে জানতে চাই, এভাবে শর্তের সাথে পণ্য বিক্রি করা জায়েয আছে কি? শরীয়তের দৃষ্টিতে এতে কোনো অসুবিধা নেই তো? আশা করি জানিয়ে বাধিত করবেন।
হাঁ, এভাবে শর্তের সাথে পণ্য বিক্রি করা জায়েয আছে। এতে কোনো অসুবিধা নেই। ক্রেতা এ শর্ত মেনে নিয়ে পণ্য ক্রয় করলে পরবর্তীতে পণ্যে কোনো সমস্যা দেখা দিলে ক্রেতার জন্য পণ্যটি ফেরত দেওয়ার সুযোগ থাকবে না।
Sharable Link-মুআত্তা ইমাম মুহাম্মাদ, বর্ণনা ৯৬৪; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ৩/৭৫; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৫৪৬; আলমুহীতুল বুরহানী ১০/১৫৬; আলবাহরুর রায়েক ৬/৬৬; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৪২
ফরিদপুর শহরে অবস্থিত ‘নিউ মাকের্টে’ আমার একটি দোকান আছে। আমার অন্যান্য ব্যস্ততা থাকার কারণে আমি দোকানটিতে কোনো ব্যবসা করতে পারছি না। এদিকে আমার এক খালাতো ভাই কিছুদিন আগে অসুস্থ হয়ে বিদেশ থেকে এসেছে। অসুস্থতার কারণে এখন সে আর বিদেশে যেতে সক্ষম নয়। তাই সে চাচ্ছে, আমি আমার দোকানটি তাকে এই চুক্তিতে ভাড়া দেব যে, সে তাতে ব্যবসা করে যা লাভ করবে তার ২০% আমাকে দেবে। এ ছাড়া দোকানের ভিন্ন কোনো ভাড়া বা অ্যাডভান্স থাকবে না।
মুহতারামের কাছে জানতে চাই যে, উল্লিখিত চুক্তিতে আমি কি তাকে দোকান ভাড়া দিতে পারব?
প্রশ্নে উল্লিখিত চুক্তি সহীহ নয়। কেননা শুধু দোকান দিয়ে ব্যবসার অংশিদার হওয়া যায় না। আর যদি লাভের ২০%-কে দোকানের ভাড়া হিসেবে গণ্য করা হয় তবুও নাজায়েয হবে। কেননা শরীয়তের দৃষ্টিতে ভাড়া নির্দিষ্ট হওয়া জরুরি। এজন্য লাভের একটি অংশ ভাড়া হিসেবে দেওয়ার চুক্তি সহীহ নয়। তাই চুক্তিটি সহীহভাবে করতে চাইলে ভাড়ার পরিমাণ টাকার অংকে নির্ধারণ করে নিতে হবে।
Sharable Link-আযযাখীরাতুল বুরহানিয়া ১১/৫১০; ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ৫/২৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৫/১১৫; আলবাহরুর রায়েক ৫/১৮১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪৪৫; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৫
আমি শ্রমিক ভিসা নিয়ে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করছিলাম। ভিসা পেতে দেরি হওয়ায় আমি ছয় মাসের জন্য আমাদের বাজারে একটি দোকান ভাড়া নিই। কিন্তু ভাড়া নেওয়ার কয়েকদিন পরই আমার ভিসা এসে যায়। এদিকে দোকানটি যেভাবে ভাড়া নিয়েছিলাম সেভাবেই ছিল। তাতে ডেকোরেশান বা অন্য কোনো কাজ করিনি এবং ব্যবসাও শুরু করতে পারিনি। এসময় আমার এক পরিচিতজন ঐ বাজারেই ভাড়া নেওয়ার জন্য একটি দোকানের সন্ধান করছিল। তাই আমি তার সাথে কথা বলি। সে তখন আমার থেকে উক্ত দোকানটি ভাড়া নিতে চাইলে আমি তাতে রাজি হই। তবে যে ভাড়ায় আমি দোকানটি নিয়েছিলাম তার চেয়ে ভাড়া একটু বেশি চাই।
মুহতারামের কাছে জানার বিষয় হল, আমি যে দোকান ভাড়া নিয়েছি, তা কি আমি আবার অন্যকে ভাড়া দিতে পারব? এক্ষেত্রে তার থেকে বেশি ভাড়া নেওয়াতে কি কোনো অসুবিধা আছে? আশা করি বিষয়টি জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মালিকের অনুমতি থাকলে আপনি তা অন্যকে ভাড়া দিতে পারবেন। তবে যত টাকায় আপনি তা ভাড়া নিয়েছিলেন সে পরিমাণ টাকাই ভাড়াটিয়া থেকে নিতে পারবেন। যেহেতু দোকানটিতে আপনি সংস্কারমূলক কোনো কাজ করেননি, তাই মালিকের নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি নেওয়া জায়েয হবে না।
Sharable Link-কিতাবুল আছল ৩/৪৬৩; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৬৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৩/১১৮; আলমুহীতুল বুরহানী ১১/২৬৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪২৫; আদ্দুররুল মুখতার ৬/২৮; রদ্দুল মুহতার ৬/৯১
কয়েকদিন আগে আমি একজন বিকাশ দোকানদারকে একটি নাম্বারে দুই হাজার টাকা পাঠাতে বলি এবং তাকে দুই হাজার চল্লিশ টাকা দিয়ে দিই। আর যেই নাম্বারে টাকা পাঠাবে ঐ নাম্বারটি সঠিকভাবে একটি কাগজে লিখে দিই। বিকাশ দোকানদার নাম্বার ভুল করে টাকাগুলো অন্য কারো কাছে পাঠিয়ে দেয়। সে অনেক চেষ্টা করেও ঐ টাকাগুলোর ফেরত আনতে সক্ষম হয়নি।
এখন জানার বিষয় হল, আমি কি ঐ বিকাশ দোকানদার থেকে ঐ টাকা নিতে পারব?
হাঁ, বাস্তবেই যদি বিকাশ এজেন্ট আপনার দেয়া নাম্বারে টাকা পাঠিয়ে না থাকে, তাহলে আপনি ঐ পুরো টাকা তার থেকে ফেরত নিতে পারবেন। ভিন্ন নাম্বারে টাকা প্রেরণের খেসারত সে দেবে। তা আপনাকে বহন করতে হবে না।
Sharable Link-ফাতাওয়া খানিয়া ২/৩৪০; আলমুহীতুর রাযাবী ৬/৫৫৮; আলমুহীতুল বুরহানী ১২/৮১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৫/৩২০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৫০৬; শরহুল মাজাল্লা, আতাসী ২/৭৩৪
আমি কিছুদিন আগে একটি লন্ড্রির দোকানে আমার কয়েকটি নতুন জামা ইস্ত্রি করতে দেই। কিন্তু দোকানদার ইস্ত্রি করতে গিয়ে একটি জামার বেশ কিছু অংশ পুড়িয়ে ফেলে। তখন আমি তার কাছে ক্ষতিপূরণ চাইলে সে তা দিতে অস্বীকার করে।
মাননীয় মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাই, শরীয়তের দৃষ্টিতে উক্ত দোকানদার থেকে ঐ জামার ক্ষতিপূরণ নেওয়ার অধিকার আমার আছে কি?
হাঁ, উক্ত দোকানদার থেকে আপনি জামার ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবেন। কেননা দোকানদারের কর্তব্য ছিল ত্রুটিমুক্তভাবে ইস্ত্রি করা। কিন্তু যেহেতু তাদের হাতেই পুড়েছে তাই এর ক্ষতিপূরণ তাদেরকে দিতে হবে।
Sharable Link-কিতাবুল আছল ৩/৫৬১; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৭৪; আলমুহীতুল বুরহানী ১২/৩৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৫/২৮৩; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/১৩৭; রদ্দুল মুহতার ৬/৬৬
আমি রড ও সিমেন্টের ব্যবসা করি। সাইড ব্যবসা হিসেবে প্রতি বছর নতুন ইট বের হওয়ার আগে বাইয়ে সালাম (অগ্রিম খরিদ) হিসেবে কিছু কম দামে ইটখোলার মালিক থেকে এক নাম্বার ১ লক্ষ ইট ক্রয় করে রাখি। নতুন ইট বের হওয়ার পর বিভিন্ন ক্রেতার কাছে উক্ত ইট বিক্রি করে থাকি। আমার নিজস্ব কোনো খালি জায়গা না থাকায় আমার উক্ত ক্রয়কৃত ইট সাধারণত ইটখোলার মালিকের ইটের সাথে থাকে। যখন কোনো ক্রেতা আমার কাছে ইট ক্রয় করার জন্য আসে, তখন আমি ক্রেতার কাছ থেকে মূল্য নিয়ে নিই এবং আমার দোকানের প্যাড খাতায় ইটের সংখ্যা লিখে দেই এবং ইটখোলার মালিকের মোবাইলে মেসেজ করে দেই। আর ক্রেতাকে বলে দেই। আপনি এই কাগজ অমুক ইট খোলার মালিককে দেখাবেন। ইট খোলার মালিক আপনাকে ইট দিয়ে দেবে।
জানার বিষয় হল, এভাবে ক্রয়-বিক্রয় করা কি ঠিক?
না, ইটখোলা থেকে ইট ক্রয় করার পর তা নিজের দখলে নেওয়ার পূর্বে এভাবে অন্যত্র বিক্রি করা জায়েয নয়। কেননা পণ্য হস্তগত হওয়ার পূর্বে অন্যত্র বিক্রি করা নিষেধ। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
أَمَّا الَّذِي نَهَى عَنْهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَهُوَ الطَّعَامُ أَنْ يُبَاعَ حَتَّى يُقْبَضَ، قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ: وَلاَ أَحْسِبُ كُلَّ شَيْءٍ إِلَّا مِثْلَهُ.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করার পর হস্তগত হওয়ার পূর্বে অন্যত্র বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, আমি অন্যান্য সকল বিষয়ে এমনই মনে করি। (সহীহ বুখারী, বর্ণনা ২১৩৫)
Sharable Link-মুসান্নাফে আব্দুর রায্যাক, বর্ণনা ১৪১০৯; আলমাবসূত, সারাখসী ১২/১৬৩; ফাতহুল কাদীর ৬/৪৩০; মাজমাউল আনহুর ৩/১৪৫; আলবাহরুর রায়েক ৬/১৬৪; আদ্দুররুল মুখতার ৫/২১৮