মাওলানা সফিউল্লাহ গাজী - নবীনগর, বি-বাড়িয়া

৪৬৭৩. Question

আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব কিছুদিন যাবৎ মেহরাব ছেড়ে এক কাতার পিছনে দাঁড়ান। আর মুসল্লিরা মসজিদের দ্বিতীয় কাতারে দাঁড়ান। বেশ কয়েকদিন যাবৎ এভাবে নামায পড়া হচ্ছে। কিন্তু গত দুদিন আগে এক আগন্তুক বললেন, এভাবে নামায পড়ে তো আপনারা হাদীসে বর্ণিত প্রথম কাতারের ফযীলত থেকে মাহরূম হচ্ছেন। কেননা এটা তো দ্বিতীয় কাতার; প্রথম কাতার নয়। তাই বিষয়টি নিয়ে বেশ দ্বিধায় আছি। তাছাড়া এ কথা শোনার পর অনেক মুসল্লি ইমাম সাহেবকে দোষারোপ করছে।

তাই মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাচ্ছি, হাদীস শরীফে যে প্রথম কাতারের ফযীলত বর্ণিত হয়েছে, এর দ্বারা কোন প্রথম কাতার উদ্দেশ্য? এবং প্রশ্নোক্ত অবস্থায় আমরা যে নামাযগুলো পড়েছি, তাতে প্রথম কাতারের ছাওয়াব পাব কি না? দয়া করে দলীলসহ বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ইমাম সাহেব প্রথম কাতারে দাঁড়ানোর কারণে মুসল্লিগণ প্রথম কাতারের ফযীলত থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন- একথা ঠিক নয়। কেননা হাদীস শরীফে নামাযের প্রথম কাতারের যে ফযীলত বর্ণিত হয়েছে, তার দ্বারা উদ্দেশ্য হল ইমামের সংলগ্ন পেছনের কাতার। চাই তা মসজিদের চিহ্নিত প্রথম কাতার হোক বা না হোক। বিখ্যাত হাদীস বিশারদ ইমাম নববী রাহ. বলেন, ‘হাদীস শরীফে যে প্রথম কাতারের ফযীলত বর্ণিত হয়েছে এবং এ ব্যাপারে (মুসল্লীদেরকে) উৎসাহিত করা হয়েছে, তা হল ইমামের সবচে নিকটবর্তী কাতার।’ -শরহে মুসলিম ৪/১৬০

এ প্রসঙ্গে আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রাহ. বলেন, ‘প্রথম কাতার হল ইমামের সংলগ্ন পেছনের কাতার, যার সামনে আর কোনো মুসল্লি নেই।’ -রদ্দুল মুহতার, (ফতোয়া শামী) ১/৫৭০

উল্লেখ্য যে, ওজর ছাড়া ইমামের জন্য এভাবে মেহরাব ছেড়ে দাঁড়ানো অনুচিত। ইমামের উচিত সাধারণ অবস্থায় মেহরাবেই দাঁড়ানো।

-উমদাতুল কারী ৫/২৫৫; মিরকাতুল মাফাতীহ ৩/১৫৭; বযলুল মাজহুদ ৪/৩৪৬; মাআরিফুস সুনান ২/২৯৪

Sharable Link

সাজেদুল ইসলাম - শরীয়তপুর

৪৬৭৪. Question

কবরের উপর কোনো কিছু লিখে রাখা কেমন? কোনো কোনো কবরের পাশে কুরআনের আয়াত, কালিমা, দুআ বা কোনো নসীহত লিখে রাখতে দেখা যায়। আবার কোনো কবরে মৃতের নাম ঠিকানা মৃত্যু তারিখ লেখা থাকে। এ ধরনের কোনো কিছু লেখার সুযোগ আছে কি?

Answer

কবরের উপর কুরআনের আয়াত লেখা জায়েয নয়। এতে কুরআন মাজীদের সম্মানহানী হয়। আর কালিমা বা অন্যান্য দুআ-দরূদও কবরে লেখা যাবে না। হাদীস শরীফে কবরে কিছু লিখতে নিষেধ করা হয়েছে। হযরত জাবের রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর চুনা করতে, কবরের উপর কিছু লিখতে, তার উপর কিছু নির্মাণ করতে ও কবর পাড়াতে নিষেধ করেছেন। -জামে তিরমিযী, হাদীস ১০৫২

আর কবরস্থ ব্যক্তির পরিচয়ের জন্য কবরের পাশে তার নাম লিখে রাখার অবকাশ আছে। কেননা অন্য দলিল দ্বারা প্রমাণিত যে, কবরের চিহ্ন রাখা জায়েয। তাই শুধু নাম ঠিকানা লিখতে পারবে। ফকীহগণ বলেন, নাম ঠিকানা লেখা হাদীসের নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত নয়।

-কিতাবুল আছার ১/২৬৬; মিরকাতুল মাফাতীহ ৪/১৬৬; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৬২৭; আলবাহরুর রায়েক ২/১৯৪; রদ্দুল মুহতার ২/২৩৭

Sharable Link

আবদুল করীম - টেকনাফ

৪৬৮৭. Question

কিছু দিন আগে ডাক্তারের নিকট গিয়ে কয়েকটি দাঁত ওয়াশ করাই। দাঁতের গোড়া থেকে রক্ত বের হচ্ছিল। ডাক্তারের কথা অনুযায়ী বাসায় এসে গরম পানি দিয়ে কুলি করলে বেশ সময় পর রক্ত বন্ধ হয়। নামাযের সময় হওয়ায় বাসা থেকে অযু করে মসজিদের উদ্দেশ্যে রওনা হই। মসজিদের কাছে গিয়ে থুথু ফেলে দেখি তা লালবর্ণ ধারণ করে ছিল। সন্দেহ হওয়ায় সতর্কতাবশত নতুন অযু করে নামায পড়ি।

এখন আমার জানার বিষয় হল, আসলেই কি তখন আমার অযু ভেঙ্গে গিয়েছিল? এক্ষেত্রে শরীয়তের মাসআলাটি জানালে কৃতজ্ঞ  হব।

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে নতুন করে অযু করা ঠিক হয়েছে। কেননা থুথুতে রক্তের পরিমাণ বেশি হলে তার কারণে অযু ভেঙ্গে যায়। অবশ্য যদি রক্তের পরিমাণ কম হয় অর্থাৎ থুথুতে রক্তের স্বাদ পাওয়া না যায় কিংবা লাল বর্ণের না হয় তাহলে সেক্ষেত্রে অযু নষ্ট হবে না।

-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ৫৭০; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১৩৪১; বাদায়েউস সানায়ে ১/১২৪; আততাজনীস ওয়াল মাযীদ ১/১৪৭; ফাতাওয়া খানিয়াহ ১/৩৮; রদ্দুল মুহতার ১/১৩৮

Sharable Link

ইমদাদুল্লাহ - কুমিল্লা

৪৬৮৮. Question

একবার আমার প্রস্রাব পরীক্ষা করতে হয়। ডাক্তার বলেছিলেন ঘুম থেকে উঠার পর প্রস্রাব করে একটি বোতলে নিয়ে আসবেন। আমি তা নিয়ে ল্যাবে যাচ্ছিলাম। পথিমধ্যে যোহরের নামাযের সময় হয়ে যাওয়ায় আমি বোতলটি পকেটে রেখেই নামায পড়ে ফেলি। পরে আমার সন্দেহ হল যে, পকেটে প্রস্রাব রেখে নামায আদায় হয়েছে কি না। মুফতী সাহেবের কাছে জিজ্ঞাসা, আমার উক্ত নামায কি হয়েছে?

Answer

পকেটে ঐ বোতলটি রেখে নামায পড়ার কারণে আপনার নামায আদায় হয়নি। পুনরায় তা পড়ে নিতে হবে।

-ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়্যাহ ১/৮৭; শরহুল মুনয়া পৃ. ১৯৭; আলবাহরুর রায়েক ১/২৬৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৬৩

Sharable Link

মুহাম্মাদ আবু বকর - শার্শা, যশোর

৪৬৮৯. Question

একদিন মসজিদে নামায পড়ছিলাম। নামাযের পর এক মুছল্লী বললেন, নামাযে সিজদা অবস্থায় উভয় হাতের আঙ্গুলসমূহ স্বাভাবিকভাবে রাখার নিয়ম। সিজদা অবস্থায় আপনার হাতের আঙ্গুলগুলো মিলানো ছিল। এটা নিয়মপরিপন্থী। হুযুরের কাছে জানার বিষয় হল, তার কথা কি ঠিক? জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

না, উক্ত ব্যক্তির কথা ঠিক নয়। নামাযে সিজদা অবস্থায় উভয় হাতের আঙ্গুলসমূহ মিলিয়েই রাখতে হয়। হযরত ওয়ায়েল বিন হুজর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

كَانَ إِذَا سَجَدَ ضَمّ أَصَابِعَهُ.

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সিজদা করতেন, আঙ্গুলসমূহ মিলিয়ে রাখতেন। (সহীহ ইবনে খুযায়মা, হাদীস ৬৪২)

-হালবাতুল মুজাল্লী ২/১৬৪; আলবাহরুর রায়েক ১/৩২১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৭৪; মারাকিল ফালাহ পৃ. ১৫৪

Sharable Link

আবদুর রহমান - চাটখিল, নোয়াখালী

৪৬৯০. Question

আযানে حي على الصلاةحي على الفلاح বলার সময় ডানে বামে মুখ ফেরানোর বিধান কী? আমাদের মসজিদের মুয়াযযিন সাহেব প্রায় সময় ডানে বামে মুখ ফেরান না। এতে কোনো সমস্যা হবে কি?

নবজাতকের কানে আযান দেওয়ার সময়ও কি ডানে বামে মুখ ফেরাতে হবে?

 

Answer

আযানে حي على الصلاة বলার সময় ডানে এবং حي على الفلاح বলার সময় বামে চেহারা ফেরানো সুন্নত। তাই ওজর না থাকলে ডানে-বামে চেহারা ফেরাবে। অবশ্য চেহারা না ফেরালেও আযান শুদ্ধ হবে। আর নবজাতকের কানে আযান দেওয়ার সময়ও ফিকহের কিতাবাদিতে একই নিয়মে ডানে-বামে চেহারা ফেরানোর কথা বলা হয়েছে।

-সহীহ মুসলিম, হাদীস ৫০৩; শরহে মুসলিম, নববী ৪/২১৯; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৮৮; আলবাহরুর রায়েক ১/২৫৮; শরহুল মুনয়া পৃ. ৩৭৪; রদ্দুল মুহতার ১/৩৮৭

Sharable Link

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক - খুলনা

৪৬৯১. Question

আমার এক ছেলে হেফজখানায় পড়ে। মাঝেমধ্যে সে বাড়িতে আসে। বাড়িতে সে অনেক সময় কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত করে। প্রায়ই আমি তার তিলাওয়াত শুনি। একদিন সে তিলাওয়াত করছিল। আর আমি পাশে বসে শুনছিলাম। তিলাওয়াতের মাঝে সে একবার বলে উঠল, আম্মু! সিজদার আয়াত পড়েছি। আপনাকেও সিজদা করতে হবে। মুফতী সাহেবের কাছে আমার জানার বিষয় হল, আমি ঐ সময় হায়েয অবস্থায় ছিলাম। এ অবস্থায় সিজদার আয়াত শোনার কারণে কি আমার উপর সিজদা ওয়াজিব হয়েছে? পবিত্র হওয়ার পর তা আদায় করতে হবে? এ ব্যাপারে শরীয়তের বিধান কী? জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

হায়েয অবস্থায় সিজদার আয়াত শুনলে সিজদা ওয়াজিব হয় না। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার উপর সিজদা ওয়াজিব হয়নি। অতএব পবিত্র হওয়ার পর তা আদায় করতে হবে না। প্রসিদ্ধ তাবেয়ী ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. থেকে বর্ণিত আছে-

عَنْ إبْرَاهِيمَ أَنّهُ كَانَ يَقُولُ فِي الْحَائِضِ تَسْمَعُ السّجْدَةَ، قَالَ: لاَ تَسْجُدُ، هِيَ تَدَعُ مَا هُوَ أَعْظَمُ مِنَ السّجْدَةِ، الصّلاَة الْمَكْتُوبَةَ.

অর্থাৎ তিনি বলতেন, হায়েয অবস্থায় সিজদার আয়াত শুনলে সিজদা করবে না। তার তো এর চেয়ে বড় বিধান ফরয নামাযই পড়তে হয় না। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৪৩৪৭

হাম্মাদ রাহ. বলেন-

سَأَلْتُ سَعِيدَ بْنَ جُبَيْرٍ وَإِبْرَاهِيمَ عَنِ الْحَائِضِ تَسْمَعُ السّجْدَةَ. فَقَالاَ: لَيْسَ عَلَيْهَا سُجُودٌ، الصّلاَة أَكْبَرُ مِنْ ذلِكَ.

অর্থাৎ আমি সাঈদ বিন জুবায়ের ও ইবরাহীম রাহ.-কে ঋতুমতী নারীর ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম, যে সিজদার আয়াত শোনে (তাকে কি সিজদা করতে হবে?) তাঁরা বললেন, ঋতুমতী নারীর উপর সিজদা অপরিহার্য নয়। নামায তো এর চেয়েও বড় বিধান (তা সত্ত্বেও নামায তার উপর ফরয নয়)। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৪৩৪৮)

-কিতাবুল আছল ১/২৭২; আলমাবসূত, সারাখসী ২/৫; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৬৫; আলবাহরুর রায়েক ২/১১৯; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৫৮১

Sharable Link

মুহাম্মাদ আবদুল ওহাব - গোড়াপাড়া, যশোর

৪৬৯২. Question

অনেক সময় আমি আসর ও এশার আগের চার রাকাত সুন্নত পড়ি। অন্যান্য নামাযের মত এ নামাযেও প্রথম বৈঠকে দরূদ শরীফ পড়ি না। কিছু দিন আগে আমার এক মাদরাসা পড়–য়া ছাত্র প্রতিবেশী বললেন, এসকল নামাযের প্রথম বৈঠকে দরূদ শরীফ পড়তে হয়। অনুরূপভাবে তৃতীয় রাকাতে দাঁড়ানোর পর পুনরায় সানা, আউযুবিল্লাহও পড়তে হয়। এখন মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাচ্ছি, তার কথা কি ঠিক? এ ব্যাপারে শরীয়তের সঠিক সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

হাঁ, মাদরাসার ছাত্রটি ঠিকই বলেছেন। নফল ও সুন্নতে গায়রে মুআক্কাদা নামাযের প্রথম বৈঠকে দরূদ শরীফ ও দুআ মাছুরা পড়া উত্তম। এরপর তৃতীয় রাকাতের শুরুতে সানা ও আউযুবিল্লাহও পড়া উত্তম। তবে আপনি যেভাবে পড়তেন সে নামাযও আদায় হয়েছে। যদিও তা মুস্তাহাব নিয়ম অনুযায়ী হয়নি। উল্লেখ্য যে, যোহর ও জুমার চার রাকাত সুন্নতে মুআক্কাদা নামাযের প্রথম বৈঠকে শুধু তাশাহহুদ পড়বে; দরূদ শরীফ পড়বে না। অনুরূপভাবে তৃতীয় রাকাতের শুরুতে সানা ও আউযুবিল্লাহও পড়বে না।

-ফাতহুল কাদীর ১/৩৯৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১৩২; শরহুল মুনয়াহ পৃ. ৩৯৪; আলবাহরুর রায়েক ২/৫৬; মারাকিল ফালাহ পৃ. ২১৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৬; ইমদাদুল আহকাম ১/৬১১

Sharable Link

মুহাম্মাদ আবদুস সামাদ - হেমায়েতপুর, সাভার

৪৬৯৩. Question

আমি আল্লাহ তাআলার তাওফীকে প্রতিদিন কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করি। তাই অনেক সময় সিজদার আয়াতও পড়া হয়। সাধারণত আমি সিজাদায়ে তিলাওয়াতে কোনো দুআ পড়ি না। কিছু দিন আগে আমাদের প্রতিবেশী এক আলেম বললেন, নামাযের সিজদার মত সিজদায়ে তিলাওয়াতেও তাসবীহ পড়তে হয়। এখন মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাচ্ছি, আসলেই কি নামাযের সিজদার ন্যায় সিজদায়ে তিলাওয়াতেও তাসবীহ পড়া নিয়ম? যদি পড়ার বিধান থাকে তাহলে سبحان ربي الأعلى ছাড়া অন্য কোনো দুআ পড়া যাবে কি না? দলীলসহ জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

উক্ত আলেম ঠিকই বলেছেন। নামাযের সিজদার ন্যায় সিজদায়ে তিলাওয়াতেও কমপক্ষে তিনবার উক্ত তাসবীহ পড়া সুন্নত। ফরয নামাযে যদি সিজদায়ে তিলাওয়াত আদায় করে তাহলে প্রসিদ্ধ তাসবীহ ছাড়া অন্য কোনো দুআ ইত্যাদি না পড়াই ভালো। আর নফল নামাযে কিংবা নামাযের বাইরে সিজদায়ে তিলাওয়াত আদায় করলে তখন তাসবীহ ছাড়াও হাদীসে বর্ণিত অন্যান্য দুআ ও তাসবীহ পড়তে পারবে।

-আলমাবসূত, সারাখসী ২/১০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৯০; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৬৩; ফাতহুল কাদীর ১/৪৭৭; আলবাহরুর রায়েক ২/১২৬; রদ্দুল মুহতার ২/১০৭

Sharable Link

মুহাম্মাদ আবদুল খালেক - বেনাপোল, যশোর

৪৬৯৪. Question

আমি বেনাপোলে থাকি। একদিন একটা প্রয়োজনে যশোর শহরে যাওয়ার দরকার হয়। শহরে পৌঁছার পর আব্বু ফোন করে বললেন, তোমার আপুর বাসা খুলনা থেকে ঘুরে আসো। তাই আমি যশোর থেকে খুলনায় যাই এবং সেখানে এক দিন অবস্থান করি।

মুফতী সাহেবের কাছে আমার জানার বিষয় হল, এক্ষেত্রে আমি খুলনায় গিয়ে কি কসর না পূর্ণ নামায পড়ব? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উল্লেখ্য যে, বেনাপোল থেকে যশোরের দূরত্ব সফর পরিমাণের চেয়ে অনেক কম। অনুরূপভাবে যশোর থেকে খুলনার দূরত্বও সফর পরিমাণ তথা ৭৮ কি. মি. নয়। কিন্তু বেনাপোল থেকে খুলনার দূরত্ব সফর পরিমাণের চেয়ে বেশি অর্থাৎ প্রায় ৮০/৮১ কি. মি. বা তার চেয়ে বেশি।

Answer

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী যেহেতু বেনাপোল থেকে বের হওয়ার সময় আপনার খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছা ছিল না; বরং যশোর পৌঁছার পর খুলনায় যাওয়ার নিয়ত করেছেন। আর যশোর থেকে খুলনার দূরত্ব সফর পরিমাণ নয়। তাই সফরসম দূরে যাওয়ার নিয়ত না করায় খুলনায় গিয়েও আপনি মুকিম থাকবেন এবং পূর্ণ নামায পড়বেন। তবে ফেরার পথে আপনি সরাসরি বেনাপোলে গেলে রাস্তায় মুসাফির গণ্য হবেন।

-বাদায়েউস সানায়ে ১/২৬৩; ফাতহুল কাদীর ২/২; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৬৪; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫০৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৯৭; রদ্দুল মুহতার ২/১২২

Sharable Link

মুহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম - যশোর

৪৬৯৫. Question

আমাদের এলাকায় মহিলা মারা গেলে সাধারণত দাফনের সময় কবর পর্দা দিয়ে ঘেরা হয় না। ইদানীং এক ভাইয়ের কাছে শুনলাম, মায়্যেত মহিলা হলে দাফনের সময় কবর পর্দা দিয়ে ঘিরে রাখতে হয়। কথাটি কতটুকু যথার্থ? দলীলসহ জানালে কৃতজ্ঞ হব।

Answer

মায়্যেত মহিলা হলে কবরে নামানোর সময়  থেকে নিয়ে মাটি দেওয়ার আগ পর্যন্ত চাদর বা এজাতীয় অন্য কিছু দ্বারা কবরকে আবৃত করে রাখা মুস্তাহাব। তবে মাটি দেওয়ার পর কাপড় উঠিয়ে নেবে। সাহাবী-তাবেঈদের বর্ণনা ও ফিকহের কিতাবাদীর বিভিন্ন বক্তব্য দ্বারা বিষয়টি প্রমাণিত।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১১৭৮৫; কিতাবুল আছল ১/৩৯৪; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৯০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২২৬; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী পৃ. ৩২৫; ইলাউস সুনান ৮/৩১৩

Sharable Link

মুহাম্মাদ সাদেক আলী - বরিশাল

৪৬৯৬. Question

মুহতারাম, আমি নিজ গ্রামে মৃতদের গোসল দিয়ে থাকি। কখনো কখনো গোসলের পর মৃত ব্যক্তির শরীর থেকে নাপাক বের হয়। তখন বেশ সমস্যায় পড়ি। কেউ বলে পুনরায় গোসল করাতে। আর কেউ বলে শুধু অযু করালে চলবে। এক্ষেত্রে আসলে শরীয়তের বিধান কী? দলীলসহ জানালে খুব উপকৃত হতাম।

Answer

মৃত ব্যক্তির শরীর থেকে কোনো নাপাক বের হলে শুধু নাপাকীর জায়গা ধুয়ে ফেলতে হবে। পুনরায় গোসল কিংবা অযু করানো লাগবে না।

শো‘বা রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

قُلْتُ لِحَمّادٍ : الْمَيِّتُ إذَا خَرَجَ مِنْهُ الشّيءُ بَعْدَ مَا يُفْرَغُ مِنْهُ. قَالَ: يُغْسَلُ ذلِكَ الْمَكَانُ.

আমি হাম্মাদকে জিজ্ঞাসা করলাম, গোসলের পর মৃত ব্যক্তির শরীর থেকে কোনো কিছু নির্গত হলে কী করণীয়? তিনি উত্তরে বললেন, সেই স্থানটা ধুয়ে ফেলতে হবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১১০৩৯)

হাসান বসরী রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

إن خَرَجَ مِنْهُ شَيْءٌ أُجْرِيَ عَلَيْهِ الْمَاءُ، وَلَمْ يُعَدْ وُضُوؤُهُ.

মৃতব্যক্তির শরীর থেকে কোনো কিছু বের হলে তা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। পুনরায় অযু করানো লাগবে না। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১১০৪০)

-আলমাবসূত, সারাখসী ২/১২৯; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৮৭; ফাতহুল কাদীর ২/৭৪; আলবাহরুর রায়েক ২/১৭৩; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৯৭

Sharable Link

মুহাম্মাদ আবু বকর - সদর, মোমেনশাহী

৪৬৯৭. Question

আমার স্বর্ণের এক দোকান আছে। প্রতি বছর রমযানের ১০ তারিখে আমার যাকাতবর্ষ পূর্ণ হয়। এ বছর মুহাররম মাসে আমার দোকানের সব স্বর্ণ চুরি হয়ে যায়। ফলে আমি অনেক অসহায় ও মানুষের কাছে ঋণী হয়ে যাই। আমার বড় মামা আমেরিকায় থাকেন। তিনি এ সংবাদ শুনে আমাকে কয়েক লক্ষ টাকা দিয়ে সাহায্য করেছেন। আমি  সেই টাকা দিয়ে পুনরায় ব্যবসা শুরু করি। আল্লাহর রহমতে বছর শেষে আমি আবার নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়ে যাই।

এখন মুফতী সাহেবের কাছে আমার জানার বিষয় হল, এ অবস্থায় কি আমার উপর যাকাত ফরয? নাকি পরবর্তী বছরে ফরয হবে?

উল্লেখ্য যে, উক্ত সম্পদ ছাড়া আমার কাছে যাকাতযোগ্য কোনো সম্পদ ছিল না।

Answer

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী বছরের মাঝখানে যেহেতু আপনার উক্ত সম্পদের পুরোটাই চুরি হয়ে গেছে। এমনকি আপনি ঋণী হয়ে গেছেন এবং ঐ সময়ে আপনার কাছে যাকাতযোগ্য কোনো সম্পদও ছিল না, তাই এ বছরের শেষে নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলেও আপনার উপর বিগত বছরের যাকাত ফরয নয়; বরং বছরের যে সময় থেকে আপনি পুনরায় নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছেন, তখন থেকে নতুন করে যাকাত বর্ষের হিসাব শুরু হবে এবং তখন থেকে এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনি যাকাত দিবেন।

-আলমাবসুত, সারাখসী ২/১৭২; বাদায়েউস সানায়ে ২/৯৮; ফাতহুল কাদীর ২/১৬৮; রদ্দুল মুহতার ২/৩০২; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/৭৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭৬

Sharable Link

মুহাম্মাদ মাইমুন আহমাদ - চরফ্যাশন, ভোলা

৪৬৯৮. Question

আমার পিতা একজন ব্যবসায়ী। প্রতি বছর তার যাকাতবর্ষ পূর্ণ হয় শাওয়ালের ৫ তারিখ। আর এ মাসেই তিনি যাকাত আদায় করে দেন। এ বছর রমযানে তার ব্যবসায় উল্লেখযোগ্য টাকা লাভ হয়েছে । তিনি বলেছেন, এ বছর রমযানে যে টাকা লাভ হয়েছে তার যাকাত আগামী রমযানে আদায় করব। আমি আব্বুকে বললাম, নিয়ম তো এ বছরই সব টাকার যাকাত আদায় করে দেওয়া। তিনি বলেন, রমযানের টাকার উপর তো বছর অতিবাহিত হয়নি, তাহলে তার উপর কেন যাকাত আসবে?

মুফতী সাহেবের কাছে আমার জানার বিষয় হল, আমার আব্বুর রমযানে যে টাকা অর্জিত হয়েছে, সেগুলোর যাকাত কি এ বছরই শাওয়ালে অন্যান্য সম্পদের সাথে আদায় করতে হবে? নাকি আগামী রমযানে যখন তার উপর বছর অতিবাহিত হবে? যদি এ বছরই তার উপর যাকাত ফরয হয় তাহলে সম্পদের উপর বছর অতিবাহিত হওয়ার অর্থ কী? দয়া করে বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে রমযানে অর্জিত টাকাও এ বছরের শাওয়ালের যাকাতের হিসাবের সাথে গণ্য হবে। যাকাতের ক্ষেত্রে বছর অতিবাহিত হওয়ার বিষয়টি শুধু নেসাব পরিমাণ সম্পদের সাথে সম্পৃক্ত। অর্থাৎ নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়ার পর বছর পূর্ণ হওয়ার পূর্বে যাকাতযোগ্য যত সম্পদ অর্জিত হবে বছর শেষে যা থাকবে তার পুরোটারই যাকাত দিতে হবে। বছরের মাঝে যোগ হওয়া টাকার জন্য পৃথক ভাবে বছর পুরো করার নিয়ম নেই।

-কিতাবুল হুজ্জাহ আলা আহলিল মাদীনাহ ১/২৭০; কিতাবুল আছল ২/৭৯; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ২/৩৩৮; ফাতহুল কাদীর ২/১৬৮; আলবাহরুর রায়েক ২/২০৩; ইলাউস সুনান ৯/৪৮

Sharable Link

আবদুল আলীম - নাটোর

৪৬৯৯. Question

আমার এক দরিদ্র প্রতিবেশীর নিকট তার প্রবাসী এক চাচাত ভাই যাকাতের কিছু টাকা পাঠায় গরিবদের বণ্টন করে দেওয়ার জন্য। সেই প্রতিবেশী উক্ত টাকা  থেকে নিজ স্ত্রী, বিবাহিত এক ছেলে ও ছোট এক মেয়ের জন্য কিছু টাকা রেখে বাকি টাকা অন্যান্য গরিবদের মাঝে বণ্টন করে দেয়, তবে সে নিজের জন্য কিছুই গ্রহণ করেনি।

তো আমার প্রশ্ন হল, উক্ত প্রতিবেশী প্রতিনিধি হিসেবে নিজ পরিবারের সদস্যদের জন্য কিছু রেখে যে বণ্টন করেছে তা কি সহীহ হয়েছে? দয়া করে জানালে উপকৃত হব।

Answer

যাকাত বণ্টনের প্রতিনিধি নিজ পরিবারের গরীব সদস্যদের যাকাত দিতে পারে। তাই প্রশ্নে বর্ণিত অবস্থায় আপনার যাকাত বণ্টনকারী প্রতিবেশীর স্ত্রী ও বিবাহিত ছেলে যদি যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত হয়, তাহলে উক্ত প্রতিবেশীর জন্য নিজ ছোট মেয়েকে এবং স্ত্রী ও বিবাহিত ছেলেকে যাকাতের টাকা দেওয়া বৈধ হয়েছে।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২২৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৬১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৮৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/২২৭; হশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ১/৩৯৪

Sharable Link

আবদুল কাইয়ূম - শামীমাবাদ, সিলেট

৪৭০০. Question

হজ্ব বা উমরাহ করার পর হালাল হওয়ার জন্য কতটুকু পরিমাণ চুল কাটা আবশ্যক? মাথার চারপাশের কয়েক জায়গা থেকে অল্প অল্প করে চুল কেটে নিলে তার দ্বারা কি হালাল হওয়া যাবে?

Answer

পুরুষের জন্য হালাল হওয়ার সর্বোত্তম পদ্ধতি হলক অর্থাৎ পুরো মাথা মু-িয়ে ফেলা। আর কসর করার দ্বারাও হালাল হওয়া যায়। কসর হচ্ছে পুরো মাথার চুল আঙুলের এক গিরা পরিমাণ কেটে খাটো করা। হালাল হওয়ার সুন্নাহসম্মত নিয়ম এ দু’টিই। অবশ্য মাথার চার ভাগের একভাগের চুল হলক করলে বা ঐ পরিমাণ জায়গার চুল আঙুলের এক গিরা বরাবর করে ছেটে ফেললেও ইহরাম থেকে মুক্ত হয়ে যাবে। কারো মাথায় অসুস্থতা বা কোনো ওজর থাকলে সে এ পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারে। তবে ওজর ছাড়া এমনটি করা যাবে না। হাদীসে এক অংশের চুল কেটে অন্য অংশ রেখে দেওয়াকে নিষেধ করা হয়েছে। আর এক চতুর্থাংশের কম মু-ানো বা ছাটা হলে কোনোক্রমেই হালাল হবে না।

তাই মাথার কয়েক জায়গা থেকে অল্প অল্প করে চুল কেটে নিলে তা যদি মাথার এক চতুর্থাংশ পরিমাণ না হয় তাহলে তা দ্বারা সে ইহরাম মুক্ত হবে না।

-ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৯৬; আলবাহরুল আমীক ৩/১৭৯৪; বাদায়েউস সানায়ে ২/৩৩০; রদ্দুল মুহতার ২/৫১৫; গুনয়াতুন নাসিক পৃ. ১৭৩

Sharable Link

মুহাম্মাদ তানভীর - নীলক্ষেত, ঢাকা

৪৭০১. Question

আমাদের এলাকার একটি মেয়ে তার পছন্দের একটি ছেলেকে বিবাহ করতে চাচ্ছিল। কিন্তু তার মা-বাবা অন্যত্র বিয়ে ঠিক করেন। বিবাহের দিন তার মতামত জানতে চাইলে মেয়ে হাঁ-না কিছুই না বলে চুপ থাকে। তবে মনে মনে সে নারাজ ছিল। এ অবস্থায় তার আকদ হয়ে যায়। এবং মেয়েটি নারাজ থাকলেও মা-বাবার কথায় স্বামীর বাড়িতে চলে যায়। এবং দু‘মাস তার সাথে সংসার করে। এরপর একদিন হঠাৎ সে পালিয়ে গিয়ে পূর্বোক্ত ছেলেটির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে তার সাথে ঘর-সংসার শুরু করে। এটা নিয়ে এলাকায় অনেক তোলপাড় চলছে। মেয়েটির দাবি, সে প্রথম বিবাহে রাজি ছিল না। তাই তা সহীহ হয়নি। জানার বিষয় হল, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মেয়েটির কথা কি ঠিক? তার প্রথম বিবাহ সহীহ হয়েছে কি না? এবং সে যে দ্বিতীয় বিবাহ করল এর হুকুম কী?

Answer

প্রশ্নোক্ত প্রথম বিবাহটি সহীহ হয়েছে। কুমারী মেয়ের জন্য বিয়ের (ইযন) অনুমতি চাওয়ার পর চুপ থাকাই সম্মতির আলামত। এক্ষেত্রে বিয়ে সম্পর্কে মতামত জানতে চাওয়ার পর প্রত্যাখ্যান না করে চুপ থেকে সম্মতির প্রমাণ দিয়েছে। বিবাহ সহীহ হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট। এক্ষেত্রে মনে মনে নারাজ থাকা বিবাহ সহীহ হওয়ার জন্য প্রতিবন্ধক নয়। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

الْأَيِّمُ أَحَقّ بِنَفْسِهَا مِنْ وَلِيِّهَا، وَالْبِكْرُ تُسْتَأْذَنُ فِي نَفْسِهَا، وَإِذْنُهَا صُمَاتُهَا.

... কুমারী থেকে তার (বিবাহের) ব্যাপারে অনুমতি নিতে হবে। আর তার নীরব থাকাই তার সম্মতি। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৪২১)

এ বিয়েতে সে যদি বাস্তবেই সম্মত না থাকত তাহলে তার উচিত ছিল স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া। সে যেহেতু তা করেনি, বরং চুপ থেকেছে তাই প্রথম বিবাহ সহীহ হয়ে গেছে। অতএব প্রথম বিবাহে থাকা অবস্থায় তার দ্বিতীয় বিবাহ সহীহ হয়নি। এখন দ্বিতীয় ছেলের সাথে  মেয়েটির ঘর-সংসার করা সম্পূর্ণ হারাম ও ব্যাভিচারের শামিল হচ্ছে। বিষয়টির ভয়াবহতা উপলব্ধি করে মেয়েটির এই ছেলেকে ছেড়ে তার প্রকৃত স্বামীর কাছে ফিরে যাওয়া এবং আল্লাহ তাআলার কাছে তাওবা ইস্তেগফার করা কর্তব্য। আর যদি তার স্বামীর সাথে ঘর-সংসার না করতে চায় তবে তালাকের মাধ্যমে বিচ্ছেদ হতে হবে। তালাক ছাড়া এমনি আলাদা থাকলে বিবাহ ভেঙ্গে যাবে না।

-বাদায়েউস সানায়ে ২/৫০৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ২/২৬; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৩৩৫; ফাতাওয়া সিরাজিয়া পৃ. ৩৭

Sharable Link

আলতাফ হুসাইন - কুমিল্লা

৪৭০২. Question

জনৈক মহিলা তার স্বামীর সাথে ঝগড়া করে তার অনুমতি ছাড়া পিত্রালয়ে চলে যায়। কিছুদিন পর স্বামী পিত্রালয় থেকে স্ত্রীকে আনতে গেলে সে আসতে অস্বীকার করে এবং তালাকের দাবি করে। ফলে স্বামী তাকে এক তালাকে বায়েন দিয়ে দেয়। এখন স্ত্রী তার পিত্রালয়েই আছে।

জানতে চাই, এই ইদ্দতকালীন সময়ে স্ত্রী তার স্বামী থেকে ভরণ-পোষণ পাবে কি না?

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে স্ত্রী স্বামী থেকে ইদ্দতকালীন সময়ের ভরণ-পোষণ পাবে না। কারণ সে পূর্ব থেকেই স্বামীর অবাধ্য হয়ে পিত্রালয়ে চলে গেছে এবং সেখানে থেকেই স্বামী থেকে তালাক চেয়ে নিয়েছে। এবং ইদ্দতও সেখানেই পালন করছে। আর শরীয়তের দৃষ্টিতে স্বামীর অবাধ্য হয়ে স্ত্রী পিত্রালয়ে থাকলে ভরণ-পোষণ পায় না।

-বাদায়েউস সানায়ে ৩/৪২৩; আলবাহরুর রায়েক ৪/১৭৯; ফাতহুল কাদীর ৪/২১৬; রদ্দুল মুহতার ৩/৬০৯

Sharable Link

মুহাম্মাদ তারেক - বাঁশখালি, চট্টগ্রাম

৪৭০৩. Question

আমাদের পুরো গ্রামে মাত্র একটি মসজিদ। গ্রামটি অনেক বড় ও ঘনবসতিপূর্ণ। আর মসজিদটি গ্রামের একেবারে দক্ষিণ পাশে অবস্থিত। তাই উত্তর পাশের লোকদের নামাযে আসতে অনেক কষ্ট হয়। বর্ষাকালে বৃষ্টির কারণে মসজিদে আসা একেবারে কঠিন হয়ে যায়। এ কারণে এলাকার মুরুব্বীরা চাচ্ছেন উত্তর পাশে অবস্থিত মসজিদের একটি জমির উপর যা এক ব্যক্তি মসজিদের খরচ নির্বাহের জন্য দান করেছিল- এ পাশের লোকদের জন্য একটি পাঞ্জেগানা মসজিদ নির্মাণ করতে। যাতে তারা পাঁচ ওয়াক্ত নামায এখানে আদায় করতে পারেন। আর ঈদ ও জুমা মূল মসজিদে গিয়েই আদায় করবেন। জানার বিষয় হল, এলাকাবাসীর জন্য কি এমনটি করা জায়েয হবে? মসজিদের জায়গায় আরেকটি মসজিদ বানাতে কোনো অসুবিধা আছে কি না?

Answer

না, কোন মসজিদের উন্নয়নের জন্য ওয়াকফকৃত জায়গায় পাঞ্জেগানা মসজিদ নির্মাণ করা বৈধ হবে না। কেননা ওয়াকফিয়া জায়গা যে উদ্দেশ্যে ওয়াকফ করা হয়েছে তা সে কাজেই ব্যবহার করা জরুরি। অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা জায়েয নয়। পাঞ্জেগানা মসজিদ নির্মাণের প্রয়োজন হলে আলাদা জমির ব্যবস্থা করতে হবে।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৪৫৫; আলইখতিয়ার ২/৫২৯; আলমুহীতুল বুরহানী ৯/১২৬

Sharable Link

আমীনুল ইসলাম - রাজবাড়ী

৪৭০৪. Question

সুদী ব্যাংকে সঞ্চয়ী হিসাব খুললে মাসে মাসে সুদ জমা হয় বলে তা হারাম। এখন কেউ যদি সুদের টাকা নিয়ে ভোগ না করে দরিদ্রদেরকে সদকা করার নিয়তে সঞ্চয়ী হিসাব খোলে তাহলে কি তার জন্য তা জায়েয হবে?

Answer

না, গরিবকে সুদের টাকা সদকা করে দেওয়ার নিয়তেও সুদী একাউন্ট খোলা জায়েয হবে না। কেননা সুদী ব্যাংকে সঞ্চয়ী হিসাব খোলার অর্থই হল সুদী চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়া। আর নিজে সুদ ভোগ করার ইচ্ছা না থাকলেও সুদী চুক্তিতে জড়িত হওয়া গোনাহ। হাদীসে সুদী কারবারে জড়িত সকলের উপর অভিসম্পাত করা হয়েছে।

জাবের রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

لَعَنَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ آكِلَ الرِّبَا، وَمُؤْكِلَهُ، وَكَاتِبَهُ، وَشَاهِدَيْهِ، وَقَالَ: هُمْ سَوَاءٌ .

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুদগ্রহীতা, সুদদাতা, সুদীচুক্তির লেখক ও এর স্বাক্ষীদয়ের উপর অভিসম্পাত করেছেন। এবং তিনি বলেছেন, তারা সবাই সমান। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৫৯৮)

উল্লেখ্য যে, সুদের টাকা সদকা করতে হয় হারাম থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য। সদকা করার নিয়তে সুদ কামাই করার বিধান শরীয়তে নেই।

Sharable Link

মুহাম্মাদ আবদুস সবুর - বগুড়া

৪৭০৫. Question

ইসলামী ব্যাংকে লেনদেন প্রসঙ্গে :

১. বর্তমানে বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংক নামে যেসমস্ত ব্যাংক পরিচালিত এই ব্যাংকগুলোতে যে কোনো মেয়াদী ডিপিএস রাখা, তার লভ্যাংশ গ্রহণ করা শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়েয কি না?

২. এফডিআর নির্দিষ্ট অংকের টাকা যে কোনো মেয়াদী জমা রেখে ব্যাংক কর্তৃক যে মুনাফা বা লভ্যাংশ দেয় তা নেওয়া যাবে কি না? শরীয়তের দৃষ্টিতে দলীলসহ  সমাধান দেওয়ার জন্য বিনীত অনুরোধ রইল।

Answer

আমাদের দেশে বর্তমানে শরীয়া মোতাবেক পরিচালিত হওয়ার দাবিদার ইসলামী ব্যাংকগুলো তাদের বিনিয়োগে যথাযথভাবে শরীয়তের নীতিমালা অনুসারণ করে না। তাই শরীয়তের এ সংক্রান্ত নীতিমালা যথাযথভাবে পালনের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া পর্যন্ত এসব ব্যাংকে ডিপিএস, এফডিআর বা অন্য কোনো সেভিং একাউন্টে টাকা রেখে অতিরিক্ত গ্রহণ করা যাবে না। হালাল-হারাম বেছে চলতে চায় এমন মানুষের জন্য এধরনের টাকা গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকাই বাঞ্ছনীয়। মুনাফার নামে দেওয়া এ ধরনের টাকা সদকা করে দেওয়াই নিরাপদ।

Sharable Link

মুহাম্মাদ মিজানুর রহমান - সন্দ্বীপ, চট্টগ্রাম

৪৭০৬. Question

আমাদের দেশে অনেক মসজিদে ইমাম সাহেবকে দুআর জন্য টাকা দেওয়া হয়। যেমন বলে হুযুর আমার ছেলে বিদেশ যাবে তার জন্য একটু দুআ করবেন। এই বলে কিছু টাকা দেয়  এই টাকা নেওয়া জায়েজ হবে?

কেউ কেউ বলেন এই টাকা নেওয়া নাজায়েয। আবার কেউ কেউ বলেন, যদি খতমে শেফা বা বরকতের জন্য ঘরে বা দোকানে খতমে কুরআন পড়ে টাকা নেওয়া জায়েয হয় তাহলে এই টাকা জায়েয হবে না কেন? বিস্তারিত জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।

Answer

হাদিয়ার একটি আদব হল, সব ধরনের বিনিময় ও উদ্দেশ্য থেকে মুক্ত হওয়া। তা হবে শুধু মহব্বত ও ইকরাম হিসেবে একমাত্র আল্লাহকে রাজি-খুশি করার জন্য। হাদিয়া প্রদান করে দুআ চাওয়ার প্রচলনটি আসলেই সংশোধনযোগ্য। তবে হাদিয়া প্রদান করে দুআ চাইলে এর অর্থ হয় না যে, হাদিয়াটি দুআর বিনিময় হিসেবে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে কারো নিয়ত যদি বাস্তবেই এমন হয়ে থাকে তাহলে তা খুবই আপত্তিকর। কারণ, দুআর কোনো বিনিময় হয় না। দুআ খালেছ ইবাদত। তা দুনিয়ার জন্য হোক বা আখেরাতের জন্য- সেটি ইবাদত। তাই দুআর বিনিময় হিসেবে কোনো কিছু নেওয়া যাবে না।

আর দুনিয়াবী বৈধ উদ্দেশ্যে খতম ইত্যাদি পড়ে পারিশ্রমিক নেওয়া জায়েয হওয়ার কথা ফিকহের কিতাবে উল্লেখ রয়েছে। সেটির সাথে দুআর বিনিময়কে তুলনা করা ঠিক নয়। দুআ করে পারিশ্রমিক নেওয়া বৈধ হওয়ার কথা কেউ বলেননি।

দুআ মুসলমানগণ একে অপরের জন্য বিনিময়হীনভাবেই করে থাকে এবং তাই করা উচিত।

-জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৩৭২; বাযলুল মাজহুদ ৭/৩২৪; মাজমুউ রাসাইলি ইবনি আবিদীন ১/১৫৪; রদ্দুল মুহতার ২/৫৯৫; ইমদাদুল ফাতাওয়া ৩/৩৩৪

Sharable Link

আমেনা খাতুন - ক্যান্টনমেন্ট, ঢাকা

৪৭০৭. Question

এক ভাড়াটিয়া বাড়িওয়ালাকে ৩ বছরের জন্য ৫ লাখ টাকা দিয়েছে এই চুক্তি স্বাপেক্ষে যে, ভাড়াটিয়া ঐ বাড়িওয়ালার বাড়িতে বিনা ভাড়ায় ৩ বছর থাকবে। ৩ বছর শেষ হয়ে গেলে বাড়িওয়ালা উক্ত ৫ লাখ টাকা ফেরত দিয়ে  দিবে।

অবশ্য ভাড়াটিয়ার মনে এই নিয়ত ছিল যে, বাড়িওয়ালা যেহেতু তার প্রতি অনুগ্রহ করেছে তাই সে কিছু টাকা কম নিবে।

তাদের পারস্পরিক এই লেনদেন বৈধ হবে কি না?

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ভাড়াটিয়াকে বিনা ভাড়ায় থাকতে দিয়েছে মূলত ৫ লক্ষ টাকা ঋণ দেওয়ার কারণে। ঋণ প্রদান করে ঋণ গ্রহিতা থেকে কোনো প্রকারের সুবিধা ভোগ করা সুদের অন্তর্ভুক্তত, যা সুস্পষ্ট হারাম। তাই অবিলম্বে উক্ত চুক্তি বাতিল করে দিয়ে সাধারণ ভাড়া নিয়মে ফিরে আসতে হবে এবং ভাড়াটিয়ার ঋণও ফেরত দিয়ে দিতে হবে।

-সুনানে বাইহাকী ৫/৩৫০; বাদায়েউস সানায়ে ৬/৫১৮; আননুতাফ ফিল ফাতাওয়া পৃ. ২৯৬; আলমুহীতুল বুরহানী ২৩/২১০

Sharable Link

শামীম আহমদ চৌধুরী - কুলাউড়া, সিলেট

৪৭০৮. Question

মুহতারাম মুফতী সাহেব, আমি একজন সিঙ্গাপুর প্রবাসী। সেখানে আমি একটি কোম্পানীর অধীনে শ্রমিক হিসাবে কাজ করি। অধিকাংশ সময় আমাকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেই কাজ করতে হয়। তাই অনেক সময় বিভিন্ন ব্যাংকের নতুন শাখার ইলেকট্রিকের পুরো কাজও করে থাকি। সেখানে এটিএম বুথ ও কম্পিউটারের ফিটিংসহ যাবতীয় ইলেকট্রিকের কাজও করতে হয়। তাই জানার বিষয় হল; সুদী ব্যাংকে শ্রমিক হিসাবে ইলেকট্রিকের কাজ করা কি শরীয়তসম্মত? এবং এর দ্বারা উপার্জিত আয়ের হুকুম কী?

Answer

প্রশ্নের বর্ণনায় মনে হচ্ছে আপনার কাজ হল বৈদ্যুতিক আসবাব পত্র ও মেশিনারিজ ঠিক করা। সে হিসাবে আপনি এটিএম বুথ বা কম্পিউটার সামগ্রীও মেরামত করে থাকেন। এগুলো ব্যাংকের পণ্য হলেও তা সরাসরি সুদী লেনদেনের সাথে সম্পৃক্ত নয়। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার জন্য উক্ত প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩৪৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৫/১৩২; ইমদাদুল আহকাম ৩/৫৫১

Sharable Link

ওমর ফারুক - মধ্যবাড্ডা, ঢাকা

৪৭০৯. Question

আমার কাকা বিদেশ থাকেন। তিনি টাকা-পয়সা আমার ব্যাংক একাউন্টে পাঠান। তিনি এ টাকা আমার একাউন্টে আমানত হিসাবে রাখেন।  ঐ টাকা আমার একাউন্টে দীর্ঘদিন থেকে যায়। ফলে আমি কাকার অনুমতি নিয়ে ঐ টাকা থেকে দুই লক্ষ টাকা আমার ব্যবসায় খরচ করি। এতে আমার কিছু লাভ হয়। কিন্তু প্রায় দুই মাস আগে আমার ব্যবসায় বিপুল পরিমাণে লস হলে মূলধনেরও অনেক ক্ষতি হয়। যার ফলে অনেকদিন ব্যবসা বন্ধ থাকে।

এখন মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাচ্ছি, আমার কাকা যেহেতু ঐ টাকা  আমার একাউন্টে আমানত হিসাবে রেখেছেন এবং আমি তার অনুমতি নিয়েই তা ব্যবসায় খরচ করেছি। আমাকে কি ঐ টাকা কাকাকে ফিরিয়ে দিতে হবে?  জানিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন।

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার কাকার টাকা তাকে ফিরিয়ে দিতে হবে। কেননা আপনার কাকা ঐ টাকা প্রথমে আমানত হিসাবে রাখলেও পরবর্তীতে যেহেতু তার অনুমতি নিয়েই আপনি তা নিজ ব্যবসায় লাগিয়েছেন তাই তা আর আমানত থাকেনি। বরং ঐ টাকা আপনার জিম্মায় করজ হয়ে গেছে। ফলে ব্যবসায় লাভ-লোকসান যাই হোক আপনাকে মূল টাকা ফিরিয়ে দিতে হবে।

-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৬/৫৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/২৮৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৩৬০; ইমদাদুল ফাতাওয়া ৩/১৪৪

Sharable Link

মুহাম্মাদ ইবনে মাহমুদ - সদর, সিলেট

৪৭১০. Question

আমার আব্বু এক দোকানির কাছে একটি স্টিলের আলমারির অর্ডার করেন। সে ১৫ তারিখে ডেলিভারি দিতে চায়।  পরে ৭ তারিখে সে ফোনে আব্বুকে বলে যে, আলমারী প্রস্তুত হয়ে গিয়েছে চাইলে নিয়ে যেতে পারবেন। আব্বু ব্যস্ততার কারণে ঐ দিন যেতে পারেননি। ১০ তারিখ তা আনতে গেলে জানতে পারেন যে, সে অতিরিক্ত দাম পেয়ে অন্যত্র তা বিক্রি করে দিয়েছে। এতে আব্বু রেগে যান। সে আব্বুকে পনের তারিখের ভিতর আরেকটি বানিয়ে দেওয়ার কথা বলে। আব্বু এতে রাজি হননি এবং তার কাছ থেকে আর আলমারি নিবেন না বলে জানিয়ে দেন। মুফতী সাহেবের কাছে আমার জিজ্ঞাসা হল, দোকানির জন্য এভাবে অর্ডারী বস্তু বিক্রি করা বৈধ হয়েছে কি না? এক্ষেত্রে পূর্ব নির্ধারিত টাকার চেয়ে অতিরিক্ত টাকা কি তার জন্য হালাল হবে? আর শুধু এ কারণে আব্বুর তার সাথে চুক্তি বাতিল করা কি ঠিক হয়েছে?

 

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার বাবাকে ফোন করে আলমারি নিয়ে যাওয়ার কথা বলার পর তা অন্যত্র বিক্রি করে দেওয়া ঠিক হয়নি। দোকানির জন্য আপনার বাবার আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিত ছিল। এখন তার নৈতিক দায়িত্ব হল, আপনার বাবার কাছে এ ভুলের কারণে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া। অবশ্য আপনার বাবা যেহেতু তখনো আলমারিটি দেখে চূড়ান্ত করেননি তাই আপনার বাবা সেটির মালিক হয়ে যাননি এবং এক্ষেত্রে পূর্ব নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি মূল্যে অন্যত্র বিক্রি করাও তার জন্য নাজায়েয হয়নি।

-বাদায়েউস সানায়ে ৪/৯৫; আলবাহরুর রায়েক ৬/১৭১; আদ্দুররুল মুখতার ৫/২২৫

Sharable Link

মুহাম্মাদ হুসাইন - মুসলিম বাজার, ভোলা

৪৭১১. Question

আমি ভার্সিটির ছাত্র। পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনি করি। টিউশনি থেকে প্রাপ্ত টাকা দিয়ে প্রয়োজন পূর্ণ করার পর অবশিষ্ট টাকা ব্যাংকে জমা করি। এভাবে ৫০ হাজার টাকা ব্যাংকে জমা হয়েছে। তিন মাস আগে মামার একটি বিপদে সে টাকাগুলো তাকে ঋণ দিয়েছি। বর্তমানে আমার কাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত কোনো সম্পদ নেই। কুরবানীর আগের জুমায় খতীব সাহেব মাসআলা বলেছেন, কেউ যদি ৪০ হাজার টাকা বা সে পরিমাণ সম্পদের মালিক হয় তাহলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব। তার কাছে যদি নগদ টাকা না থাকে তাহলে কিছু সম্পদ বিক্রি করে বা ঋণ নিয়ে হলেও কুরবানী দিতে হবে।

প্রশ্ন হল, এ অবস্থায় আমার উপর কি কুরবানী ওয়াজিব? খতীব সাহেবের কথা অনুযায়ী আমাকে ঋণ নিয়ে কুরবানী করতে হবে? দ্রুত মাসআলাটির সমাধান জানালে কৃতজ্ঞ হব।

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার কর্তব্য মামার কাছ থেকে এ পরিমাণ টাকা ফেরত চাওয়া যা দিয়ে আপনি একটি কুরবানী আদায় করতে পারবেন। যদি তিনি তা দেন তাহলে তা দিয়ে কুরবানী করা ওয়াজিব হবে। আর যদি  তিনি তা না দেন আর আপনার কাছে কোনো জায়গা থেকে কুরবানীর সমপরিমাণ টাকা হস্তগতও না হয় তাহলে কুরবানীর শেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন। শেষ পর্যন্ত যদি কুরবানী দেওয়ার মত কোনো সম্পদ আপনার হাতে না থাকে তাহলে আপনাকে ঋণ নিয়ে কুরবানী করতে হবে না। কেননা এক্ষেত্রে আপনার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। খতীব সাহেব যে মাসআলা বলেছেন তা প্রয়োজন অতিরিক্ত অন্য সম্পদ থাকার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

-বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬; ফাতাওয়া বাযযাযিয়াহ ৬/২৮৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪৬৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০৭; রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৬

Sharable Link

মোস্তফা জব্বার - কানাইঘাট, সিলেট

৪৭১২. Question

আমার আব্বুর এক ব্যক্তির সাথে খুবই আন্তরিক সম্পর্ক ছিল। কিছুদিন আগে তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে আব্বু আমাদের নিয়ে তাকে দেখতে যান। তিনি আব্বুকে দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে যান। এবং কান্নাজড়িত কণ্ঠে তার জীবনে আব্বুর বিভিন্ন অবদানের কথা স্মরণ করে আব্বুকে তার পেনশনের টাকা ওঠানোর পর এ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বলেন। উপস্থিত ছেলেরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে তা  আব্বুকে দিবে বলে জানায়। কিন্তু এর সপ্তাহখানেক পরই হঠাৎ আব্বু সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। এর কিছুদিন পর আব্বুর ঐ বন্ধুও মারা যান।

কয়েক মাস পর আমরা মৃতের ছেলেদের সাথে ওসিয়তের টাকার জন্য যোগাযোগ করলে তারা বলে, আমরা এ টাকা আঙ্কেলের নামে সদকা করে দিয়েছি। আব্বু তো তোমাদের জন্য ওসীয়ত করেননি। আঙ্কেলের জন্যই ওসীয়ত করেছিলেন।

হযরত মুফতী সাহেবের কাছে জিজ্ঞাসা হল, আব্বুর নামে ওসিয়তকৃত টাকা আমাদের প্রাপ্য ছিল কি না? আমাদের না জানিয়ে এভাবে সদকা করে দেওয়া কি জায়েয হয়েছে?

Answer

যার জন্য ওসিয়ত করা হয়েছে তিনি যদি ওসিয়তকারীর আগে মারা যান তাহলে ওসিয়তটি বাতিল হয়ে যায়। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু আপনার বাবা তার ওসিয়তকারী বন্ধুর আগেই মারা গিয়েছেন তাই তার জন্য কৃত ওসিয়তটি বাতিল হয়ে গিয়েছে। ওসিয়তকৃত টাকায় তার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি এবং উত্তরাধীকারী হিসাবে আপনারাও এর মালিক হননি। তাই আপনারা ঐ টাকার দাবি করতে পারবেন না।

সুতরাং ওসিয়তকারীর ছেলেদের জন্য তা সদকা করে দেওয়া অন্যায় হয়নি।

-বাদায়েউস সানায়ে ৬/৫১৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৭/৪১৭; আলবাহরুর রায়েক ৮/৪৫৩; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৬৯৩

Sharable Link

হাফেয শাহাদত করীম - কেরানীগঞ্জ, ঢাকা

৪৭১৩. Question

আমাদের এলাকায় কারো মৃত্যু হলে দূর-দূরান্ত থেকে আগত লোকদের জন্য মেহমানদারির ব্যবস্থা করা হয়। এবং জানাযার নামাযের পূর্বে মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেওয়ার সময় তাদেরকে খাবারের দাওয়াত দেওয়া হয়। এবং খাবার না খেয়ে চলে না যাওয়ার জন্য বিশেষভাবে

অনুরোধ করা হয়।

কিছুদিন আগে এক জানাযার পূর্বে মৃতের ছেলে এভাবে বললে স্থানীয় ইমাম সাহেব মাইক হাতে নিয়ে রাগতস্বরে বলেন, মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে খাবারের আয়োজন করা বিদআত। এটা পরিহার করতে হবে। শরীয়তের নিয়ম হল, অন্যরা মায়্যেতের বাড়িতে খাবার পাঠাবে। তার ঘরে আগুন জ¦লবে না। ঘটনাটি নিয়ে এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

হযরত মুফতী সাহেবের কাছে জানার বিষয় হল, এক্ষেত্রে শরীয়তের সঠিক নির্দেশনা কী? কেউ যদি অন্যদের চাপাচাপিতে বাধ্য হয়ে খাবারে শরীক হয় তবে কি সে গুনাহগার হবে?

Answer

জানাযায় শরীক লোকদের জন্য মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে খাবারের আয়োজন করা একটি গলদ প্রথা, যা বর্জন করা জরুরি। অবশ্য কেউ যদি অনেক দূর থেকে জানাযার জন্য আসে। তবে তার মেহমানদারি করা ভিন্ন বিষয়। আর ‘মৃতের ঘরে’ আগুন জালানোই যাবে না এ কথাটি ঠিক নয়। মৃতের পরিবার সর্বাবস্থায় নিজেদের প্রয়োজনে তাদের চুলায় রান্না-বান্না করতে পারবে। অবশ্য আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের কর্তব্য মৃতের বাড়ীতে মৃত্যুর দিন অন্তত খানা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা। হাদীসে এ ব্যাপারে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

-সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৬১২; ফাতহুল কাদীর ২/১০২; আলমুগনী, ইবনে কুদামাহ ৩/৪৯৬; ইলাউস সুনান ৮/৩৩০; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ১/৩৮৩

Sharable Link

তামীম আহমাদ - মুহাম্মাদপুর, ঢাকা

৪৭১৪. Question

শরীয়তের দৃষ্টিতে ছেলেদের খতনা করার হুকুম কী? ছোটকালে যদি কারো খতনা না করা হয়ে থাকে তাহলে বড় হওয়ার পরও কি খতনা করানো আবশ্যক? এক্ষেত্রে শরীয়তের বিধান জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

ছেলেদের খতনা করানোর বিধান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি ইসলামের শীআরের অন্তর্ভুক্ত। তাই বালেগ হওয়ার পূর্বেই ছেলেদের খতনা করিয়ে নেওয়া উচিত। অবশ্য কোনো কারণে যদি ছোটবেলায় খতনা না করা হয় আর এমতাবস্থায় বালেগ হয়ে যায় তাহলে বালেগ হওয়ার পরও খতনা করাতে হবে। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে যে, এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বলল, আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

أَلْقِ عَنْكَ شَعْرَ الْكُفْرِ وَاخْتَتِنْ.

তোমার থেকে কুফুরীর চুল কেটে ফেল এবং খতনা কর। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩৬০)

-মিরকাতুল মাফাতীহ ৮/২৭১; রদ্দুল মুহতার ৬/৭৫১-৭৫২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৫৭; ইমদাদুল আহকাম ৪/৪২৮

Sharable Link