কিছুদিন ধরে এ বিষয়টি আমার অভ্যাসের মত হয়ে গেছে যে, অযু শেষ করে হাত বাঁকিয়ে কনুইয়ের দিকে তাকাই। কনুইয়ের উপরের অংশে কোথাও শুকনো দেখলে নতুন পানি না নিয়েই আশপাশের পানি দিয়ে ডলে ঐ জায়গা ভিজিয়ে দেই।
জানতে চাই, এভাবে আমার অযু সহীহ হচ্ছে কি না?
কিছুদিন ধরে এ বিষয়টি আমার অভ্যাসের মত হয়ে গেছে যে, অযু শেষ করে হাত বাঁকিয়ে কনুইয়ের দিকে তাকাই। কনুইয়ের উপরের অংশে কোথাও শুকনো দেখলে নতুন পানি না নিয়েই আশপাশের পানি দিয়ে ডলে ঐ জায়গা ভিজিয়ে দেই।
জানতে চাই, এভাবে আমার অযু সহীহ হচ্ছে কি না?
প্রশ্নের বিবরণে আপনার বিষয়টি ওয়াসওয়াসা তথা অমূলক সন্দেহ বলে মনে হচ্ছে। যদি সন্দেহ হয় তাহলে জেনে রাখা দরকার যে, এ ধরনের সন্দেহ ধর্তব্য নয়। তাই আপনার কর্তব্য হল, অযুর সময়ই কনুইসহ হাত ভালোভাবে ডলে ধুয়ে নেয়া। এভাবে ডলে ধুয়ে নিলে পরে আবারও কোথাও শুকনা আছে কি না তা দেখার প্রয়োজন নেই। অবশ্য কখনো যদি অযুর কোনো অংশ বাস্তবেই শুকনা থাকে তাহলে ওভাবে শুধু আশপাশের পানি দিয়ে ভিজিয়ে নিলে অযু সহীহ হবে না; বরং ভিন্ন পানি নিয়ে ঐ অংশ ধুয়ে নিতে হবে।
Sharable Link-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৮; বাদায়েউস সানায়ে ১/৬৫; হালবাতুল মুজাল্লী ১/৪৬; রদ্দুল মুহতার ১/১৫৯
একদিন আমি একটা দ্বীনী মাহফিলে গিয়েছিলাম। তো নামাযের বিরতিতে অযুখানায় গিয়ে দেখি প্রচ- ভীড়। এরই মাঝে এক লোক একটা মগ নিয়ে এসে তাতে পানি নিল, তারপর তাতে হাত ঢুকিয়ে পানি নিয়ে নিয়ে অযু শেষ করল। তো জানার বিষয় হল এভাবে অযু করা কি ঠিক আছে? এর দ্বারা উক্ত পানি কি ব্যবহৃত হয়ে যাবে না?
অযু করার জন্য পাত্রের ভেতর হাত দিয়ে পানি নিলে তা الماء المستعمل বা ব্যবহৃত পানির হুকুমে হয়ে যায় না। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তির অযু সহীহ হয়েছে। তবে যদি হাতে নাপাকী থাকে তাহলে পাত্রের ভেতর হাত দেওয়ার আগে অবশ্যই হাত ধুয়ে পাক করে নিতে হবে। অন্যথায় অপবিত্র হাত পাত্রে দিলে পাত্রের পানি নাপাক হয়ে যাবে।
Sharable Link-সহীহ বুখারী, হাদীস ১৯৯; কিতাবুল আছল ১/২১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/২০৮; আলবাহরুর রায়েক ১/১৬৪-১৬৬; রদ্দুল মুহতার ১/১১২
ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহায় ঈদগাহে যাওয়ার পথে উচ্চস্বরে তাকবীর বলবে না নিম্নস্বরে? অনেকে বলে, ঈদুল ফিতরে নিম্নস্বরে আর ঈদুল আযহায় উচ্চস্বরে তাকবীর বলতে হয়। উক্ত কথাটি কি ঠিক?
হ্যাঁ, কথাটি সঠিক। ঈদুল আযহায় যাওয়ার সময় উচ্চস্বরে আর ঈদুল ফিতরে যাওয়ার সময় নিম্নস্বরে তাকবীর বলা মুস্তাহাব। আবদুল্লাহ বিন আব্বাস রা. ঈদুল ফিতরে লোকদেরকে উচ্চস্বরে তাকবীর বলতে শুনে বলেন, মানুষ কি পাগল হয়ে গেল? (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৫৬৭৬)
এই উক্তি থেকে ঈদুল ফিতরের তাকবীর যে নিম্নস্বরে পড়াই নিয়ম তা প্রমাণিত হয়। আর হানাশ বিন মু‘তামির রাহ. বলেন, আমি আলী রা.-কে ঈদুল আযহায় তাকবীর বলতে বলতে ময়দানে আসতে দেখেছি। (সুনানে দারাকুতনী ২/৪৪)
Sharable Link-বাদায়েউস সানায়ে ১/৬২৫; আততাজনীস ওয়াল মাযীদ ২/২৩৫; ফাতহুল কাদীর ২/৪১; ইমদাদুল ফাত্তাহ পৃ. ৫৭৯; রদ্দুল মুহতার ২/১৭০
অনেক সময় ইমাম সাহেব শেষ বৈঠকে থাকা অবস্থায় আমি জামাতে শরীক হই। কখনো কখনো আমি তাশাহহুদ শেষ করার আগেই ইমাম সাহেব সালাম ফিরিয়ে দেন। এমতাবস্থায় আমার কী করা উচিত? তাশাহহুদ শেষ করে দাঁড়াব, নাকি তাশাহহুদ শেষ না করে ইমাম সাহেব সালাম ফিরানোর সাথে সাথে দাঁড়িয়ে যাব?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ইমাম সাহেব সালাম ফিরিয়ে দেওয়ার পর আপনি তাশাহহুদ শেষ করেই দাঁড়াবেন। অবশ্য এক্ষেত্রে তাশাহহুদ শেষ না করে দাঁড়ালেও নামায হয়ে যাবে। তবে এটি নিয়মসম্মত নয়। তাই এমনটি করা উচিত নয়।
Sharable Link-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১৯২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৯০; রদ্দুল মুহতার ১/৪৬; ইমদাদুল আহকাম ১/৫৫১
আমার বড় ছেলের বয়স বার বছর। দশ বছর বয়স থেকেই ও নামায পড়ে। অল্প কিছু সূরা আর নামাযের অন্যান্য দুআ-দরূদ পারলেও এখনো দুআ কুনূত মুখস্থ করতে পারেনি।
জানতে চাই, ও কীভাবে বিতরের নামায পড়বে? একজন বলেছে, দুআ কুনূতের জায়গায় তিনবার সূরা ইখলাস পড়বে। এ বিষয়ে সঠিক মাসআলা জানিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন।
প্রসিদ্ধ দুআয়ে কুনূত অথবা এক্ষেত্রে হাদীসে অন্যান্য যে দুআ বর্ণিত আছে তা পড়াই ভালো। তা না জানলে এর জায়গায়
رَبّنَا آتِنَا فِي الدّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النّارِ.
অথবা তিনবার اللّهُمّ اغْفِرْ لِي পড়বে। সূরা ইখলাস যেহেতু দুআ নয় তাই সূরা ইখলাস না পড়াই ভাল।
উল্লেখ্য, দুআ কুনূত না জানলে যত শিঘ্র সম্ভব তা মুখস্থ করে নেয়া উচিত।
Sharable Link-আততাজনীস ওয়াল মাযীদ ২/৮৮; ফাতহুল কাদীর ১/৩৭৫; ফাতাওয়া সিরাজিয়া পৃ.১৯; আলমুহীতুল বুরহানী ২/২৭০; রদ্দুল মুহতার ২/৭
কখনো কখনো নামাযের পূর্ব প্রস্তুতি সত্ত্বেও জামাত শুরু হওয়ার পর প্রস্রাবের প্রয়োজন দেখা দেয়। তখনো আমি প্রয়োজন দাবিয়ে জামাতসহ নামায আদায় করি। এতে নামাযের ক্ষতি হবে কি না?
প্রস্রাবের চাপ যদি এত কম হয়, যার কারণে নামাযে খুশু-খুযু বিনষ্ট হয় না, তবে ঐ অবস্থায় নামায পড়া দোষণীয় নয়। কিন্তু যদি চাপ এত বেশি থাকে যে, মনোযোগ সহকারে নামায পড়া কঠিন হয়ে যায় তবে সেক্ষেত্রে জামাত ছেড়ে দিয়ে আগে জরুরত সেরে নিবে। এরপর অযু করে একাকী বা জামাতে নামায পড়বে। কারণ বেশি চাপ নিয়ে নামায পড়া মাকরূহ। এতে নামাযের খুশু-খুযু নষ্ট হয়। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
لَا يَحِلّ لِرَجُلٍ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ أَنْ يُصَلّيَ وَهُوَ حَقِنٌ حَتّى يَتَخَفّفَ.
আল্লাহ ও পরকালের বিশ্বাসী ব্যক্তির জন্য পেশাবের চাপ থেকে স্বস্তি লাভ করা পর্যন্ত নামায পড়া বৈধ নয়। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৯১)
অন্য বর্ণনায় এরশাদ হয়েছে-
إِذَا أَرَادَ أَحَدُكُمْ أَنْ يَذْهَبَ الْخَلَاءَ وَقَامَتِ الصّلَاةُ، فَلْيَبْدَأْ بِالْخَلَاءِ.
নামাযের জামাত শুরু হওয়ার পর তোমাদের কারো শৌচাগারে যাওয়ার প্রয়োজন দেখা দিলে সে যেন প্রথমে তা সেরে নেয়। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৮৮)
Sharable Link-সহীহ মুসলিম, হাদীস ৫৬০; শরহে মুসলিম, ইমাম নববী ৫/৪৬; আলবাহরুর রায়েক ২/৩৩; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী পৃ.১৯৭; রদ্দুল মুহতার ১/৬৪১
প্রাণীর ছবি সম্বলিত টি-শার্ট পরে নামায পড়ার দ্বারা নামায সহীহ হবে কি? জানিয়ে বাধিত করবেন।
যদি টি-শার্টে প্রাণীর ছবি দৃশ্যমান হয় এবং তা ঢাকা না থাকে তাহলে উক্ত টি-শার্ট পরে নামায আদায় করা মাকরূহ হবে। এছাড়া হাফ হাতা জামা বা শার্ট পরে নামায আদায় করা অনুত্তম।
Sharable Link-আলবাহরুর রায়েক ২/২৭; আলমাবসূত, সারাখসী ১/২১১; হালবাতুল মুজাল্লী ২/২৯৬; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী পৃ. ১৯৯; রদ্দুল মুহতার ১/৪৫৭
আমরা জানি যে, অন্যের হাঁচির জবাব দিলে নামায নষ্ট হয়ে যায়। এখন প্রশ্ন হল, নিজে হাঁচি দিয়ে আলহামদু লিল্লাহ বললে নামায নষ্ট হবে কি না?
নিজে হাঁচি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বললে নামায নষ্ট হবে না। তবে ইচ্ছাকৃত নামাযে এমনটি করা ঠিক নয়। নামায সেভাবেই পড়া উচিত, যেভাবে হাদীস-আসারে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।
Sharable Link-আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৪৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১২০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/২১৭; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৩৯৩
আমি এক মসজিদে ইমামতি করি। অনেক সময় রুকুতে যাওয়ার পর কোনো কোনো মুসল্লীর দ্রুতগতিতে মসজিদে প্রবেশের শব্দ শোনা যায়। এমতাবস্থায় আমি যদি উক্ত মুসল্লীর রাকাত পাওয়ার জন্য রুকুতে একটু দেরি করি তাহলে এতে শরয়ী কোনো সমস্যা হবে কি না?
ইমামের কর্তব্য, সুন্নাহসম্মত পন্থায় নামায আদায় করা। কোনো আগন্তুক মুসল্লীর রাকাত পাওয়ার জন্য রুকু কিংবা কেরাত লম্বা করা উচিত নয়। অবশ্য কেউ যদি মুসল্লীদের রাকাত পাওয়ার আশায় কিরাত বা রুকু লম্বা করে থাকে তাহলে এতে নামাযের ক্ষতি হবে না। কিন্তু বিশেষ কোনো মুসল্লীর মনোরঞ্জনের জন্য এমনটি করা জায়েয হবে না।
Sharable Link-আলমুহীতুল বুরহানী ২/১১৫; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়্যা ১/১০৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৫৫
সিজদায়ে সাহুর কথা ভুলে গিয়ে দুরূদের কিছু অংশ পড়ে ফেলি। এ ছাড়া কখনো এমন হয় যে, এক নামাযে দুটি ওয়াজিব ছুটে যায়। এমতাবস্থায় সিজদায়ে সাহুর কী হুকুম?
বিশুদ্ধ মতানুসারে তাশাহহুদের পর সালাম ফিরিয়ে সাহু সিজদা করা নিয়ম। তবে কেউ যদি দুরূদ শরীফ পড়ে সাহু সিজদার সালাম ফিরায় তাহলে সেক্ষেত্রেও তা আদায় হয়ে যাবে।
আর নামাযে একাধিক ওয়াজিব ছুটে গেলে সাহু সিজদা একবারই করতে হয়। একাধিক নয়। কেননা নামাযে একাধিক ভুলের কারণে একটি সাহু সিজদাই যথেষ্ট হওয়ার কথা হাদীসে এসেছে।
Sharable Link-মুসনাদে আবি ইয়ালা, হাদীস ৪৫৭৩; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪১৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৭৩; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৪৭২; কিতাবুল আছল ১/১৯৮; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪০৭
একদিন আমার এক বন্ধুর সাথে তাকবীরে তাশরীক নিয়ে কথা হয়। তখন সে বলল তাকবীরে তাশরীক নামাযের পর সাথে সাথেই বলতে হয়। নামাযের পর কোনো কথাবার্তা বলে ফেললে তখন আর তাকবীর বলা যায় না। জানার বিষয় হল, তার এ কথাটি কি ঠিক?
হ্যাঁ, তার কথা ঠিক। তাকবীর তাশরীক ফরয নামাযের পর সাথে সাথেই বলা নিয়ম। নামায শেষে কথাবার্তা বলে ফেললে কিংবা মসজিদ থেকে বের হয়ে গেলে তাকবীরে তাশরীক বলার সময় থাকে না। তাই এক্ষেত্রে ওয়াজিব ছেড়ে দেওয়ার গুনাহ হবে।
Sharable Link-বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৬০; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৫১০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২১৬; ফাতহুল কাদীর ২/৫০; আলবাহরুর রায়েক ২/১৬৫
এক ব্যক্তি ফজরের নামায অবস্থায় সূর্যোদয় হয়েছে কি না তা দেখার জন্য নিজের হাত ঘড়ির দিকে দেখে এবং কয়টা বাজে তাও মোটামুটি বুঝে ফেলে। এখন জানার বিষয় হল, নামাযে এভাবে ঘড়ি দেখার কারণে নামায নষ্ট হয়েছে কি না?
নামায অবস্থায় ঘড়ি দেখার কারণে নামায মাকরূহ হয়েছে। নষ্ট হয়নি। ইচ্ছাকৃত এমনটি করা উচিত নয়।
Sharable Link-আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৫৯; ফাতাওয়া সিরাজিয়্যা পৃ. ১২; মারাকিল ফালাহ পৃ. ১৮২; মাজমাউল আরহুর ১/১৮২
বিতর নামাযে দুআয়ে কুনূতের পর দরূদ শরীফ পড়লে সিজদা সাহু ওয়াজিব হবে কি না?
না, বিতর নামাযে দুআয়ে কুনূতের পর দরূদ শরীফ পড়লে সাহু সিজদা আসবে না। বরং ফিকহের কিতাবাদীতে দুআয়ে কুনূতের সাথে দুরূদ শরীফ পড়া উত্তম বলা হয়েছে।
Sharable Link-খিযানাতুল আকমাল ১/১৭৮; বাদায়েউস সানায়ে ১/৬১৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৪৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/৬
গত রমযানে আমাদের পাশের মসজিদে ইমাম সাহেব আসরের নামাযে তিন রাকাত পড়ে ভুলে সালাম ফিরিয়ে দেন। পিছন থেকে কিছু মুসল্লী বলে উঠে, নামায তিন রাকাত হয়েছে। তা শুনে ইমাম সাহেব সোজা দাঁড়িয়ে যান। অবশিষ্ট রাকাতটি পূর্ণ করে সাহু সিজদা করে সালাম ফিরিয়ে দেন। জানার বিষয় হল, ইমাম সাহেবের উক্ত নামাযটি সহীহ হয়েছে কি না?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ইমাম সাহেব এবং তার অনুসরণকারী মুসল্লীদের নামায সহীহভাবে আদায় হয়েছে। তবে যেসব মুসল্লী ইমাম ভুলে সালাম ফিরানোর পর কথা বলে ফেলেছেন তাদের নামায নষ্ট হয়ে গেছে। তারা নামাযটি পুনরায় আদায় করে নিবে।
Sharable Link-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা: ৪৪৮৭ ; কিতাবুল আছল ১/২১১; আলমাবসূত, সারাখসী ১/২১১; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়্যা ১/১০০; খিযানাতুল আকমাল ১/৪৭; ফাতাওয়া কাযীখান ১/৭৯
মাসবুক হওয়ার ক্ষেত্রে কখনো কখনো ভুলে যাই- ইমামের সাথে কত রাকাত পেলাম। তখন আমার সাথেই নামাযে দাখেল হয়েছে এমন কোনো মাসবুকের প্রতি লক্ষ্য করে অবশিষ্ট নামায পড়ার দ্বারা নামায সহীহ হবে কি?
মাসবুক তার পাশের লোকের প্রতি খেয়াল করে ছুটে যাওয়া রাকাতের কথা স্মরণ করে নামায পড়লে তার নামায হয়ে যাবে। তবে নামাযে ভালোভাবে মনোযোগী হওয়া উচিত। যেন এমন ভুল না হয়।
Sharable Link-শরহুল মুনয়া, পৃ. ৪৬৭; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১০৪; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৭৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৯২; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৯৭
আমরা দেখি যে, বিশিষ্টজনদের জানাযার নামায কিংবা ঐতিহাসিক কোনো ঈদগাহে ঈদের নামাযের দৃশ্য কাভারেজ করতে ফটোসাংবাদিকদের ফটোসেশনের হিড়িক পড়ে। এতে অজ্ঞতাবশত কিংবা অবচেতনে কোনো কোনো মুসল্লি তাদের দিকে তাকিয়ে থাকেন। এখন প্রশ্ন হল তাদের নামাযের কোনো ক্ষতি হবে কি না?
নামাযরত অবস্থায় এভাবে কোনো জিনিসের দিকে তাকিয়ে থাকা মাকরূহ। এটি নামাযের খুশু-খুযু পরিপন্থী। আর ঘাড় বাঁকিয়ে এদিক ওদিক তাকালে তো নামায মাকরূহে তাহরীমী হবে।
উল্লেখ্য, ছবি উঠানো ও ভিডিও করার প্রচলিত এ রেওয়াজ অত্যন্ত গর্হিত ও বর্জনীয়। এতে অন্যান্য ক্ষতির পাশাপাশি মানুষের ইবাদতে বিঘœ ঘটে থাকে।
Sharable Link-সহীহ বুখারী, হাদীস ৭৫১; জামে তিরমিযী, হাদীস ৫৮৭; উমদাতুল কারী ৫/৩১০; আলবাহরুর রায়েক ২/২১; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/১৬৩; মাআরিফুস সুনান ৫/১১৭
আমি একদিন ভুলে নামাযে সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করে সিজদা না দিয়ে নামায শেষ করে ফেলি। এমতাবস্থায় আমার নামায কি সহীহ হয়েছে? এবং ঐ সিজদা পরে কিভাবে আদায় করব?
হ্যাঁ, উক্ত নামায সহীহ হয়েছে। তবে সিজদায়ে তিলাওয়াত না করার কারণে অনুত্তম হয়েছে। আর ঐ সিজদা যেহেতু নামাযে আদায় করা হয়নি তাই তা আর আদায় করতে হবে না। কেননা নামাযের সিজদায়ে তিলাওয়াত নামাযের বাইরে আদায় করার বিধান নেই।
প্রকাশ থাকে যে, কেউ যদি নামাযে ভুলে সিজদায়ে তিলাওয়াত না করে সালাম ফিরিয়ে ফেলে, অতঃপর নামায পরিপন্থী কোনো কাজ করার আগে তা স্মরণ হয় তাহলে তৎক্ষণাৎ তা আদায় করে সাহু সিজদা দিয়ে নামায শেষ করবে।
Sharable Link-কিতাবুল আছল ১/২৭৬; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৩৩; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪১০; আলবাহরুর রায়েক ২/১২৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৬১
একদিন আমি একাকী নামায পড়ছি, আর আমার পাশে এক ব্যক্তি বসা ছিলেন, তো আমি ঠোঁট নাড়িয়ে আস্তে আস্তে কেরাত পড়ছি। নামায শেষে ঐ ব্যক্তি আমাকে বললেন, নামাযে আস্তে আস্তে পড়ার সর্বনিম্ন স্তর হল নিজের কানে শোনা, শুধু ঠোঁট নাড়ালে হবে না। এখন জানার বিষয় হল ঐ ব্যক্তির কথা কি ঠিক?
নামাযে নিম্নস্বরে তিলাওয়াতের ক্ষেত্রে এমনভাবে পড়তে হবে, যেন হরফগুলো ভালোভাবে উচ্চারিত হয়। এতেই নামায সহীহ হয়ে যাবে। কানে শোনা আবশ্যক নয়।
Sharable Link-কিতাবুল আছল ১/৬; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৯৭; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৩৬; ইলাউস সুনান ৪/১৩
মুহতারাম মুফতী সাহেব, আমার অনেকগুলো সিজদায়ে তিলাওয়াত একত্রিত হয়ে গেছে, যা আদায় করিনি। এখন এগুলো আদায়ের সঠিক পদ্ধতি কী? প্রত্যেক সিজদার জন্য আলাদা দাঁড়ানো লাগবে কি না?- জানিয়ে বাধিত করবেন।
সিজদায়ে তিলাওয়াত আদায়ের ক্ষেত্রে মুস্তাহাব হল, দাঁড়ানো অবস্থায় তাকবীর বলে সিজদায় যাওয়া। এভাবে প্রত্যেক সিজদার জন্য দাঁড়ানো মুস্তাহাব। তবে না দাঁড়িয়ে বসা থেকে সিজদায় গেলেও তা আদায় হয়ে যাবে।
উল্লেখ্য, আয়াতে সিজদা পড়ার পর সম্ভব হলে তখনি সিজদা করা উচিত। বিনা কারণে তা আদায়ে বিলম্ব না করাই ভালো।
Sharable Link-তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫০৫; ফাতহুল কাদীর ১/৪৭৭; আলবাহরুর রায়েক ২/১২৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩৫; রদ্দুল মুহতার ২/১০৭
আমাদের এলাকায় প্রচলন আছে, লাশ দাফন শেষে কবরের উপর পানি ছিটিয়ে দেয়া হয়। আমার জানার বিষয় হল, এ কাজটি কি শরীয়তসম্মত? এ সংক্রান্ত সঠিক মাসআলাটি জানানোর অনুরোধ রইল।
কবরের মাটি ভালোভাবে জমে যাওয়ার উদ্দেশ্যে নতুন কবরের উপর পানি ছিটিয়ে দেয়া জায়েয। এটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত আছে। তিনি নিজ সন্তান ইবরাহীমের কবরের উপর পানি ছিটিয়ে দিয়েছিলেন। (মারাসিলে আবূ দাউদ, হাদীস ৩৮৭) তবে এটাকে প্রথায় পরিণত করা বা জরুরি মনে করা যাবে না।
Sharable Link-কিতাবুল আছার, ইমাম মুহাম্মাদ, বর্ণনা : ২৫৪; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৯৩; বাদায়েউস সানায়ে ২/৬৫; ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ৪/৮০; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৬২৭
আমাদের এলাকায় একদিন জানাযার নামাযে ইমাম সাহেব ভুলবশত পঞ্চম তাকবীর দিয়ে ফেলেন। নামাযের পর মানুষ হৈচৈ শুরু করে দিলে উপস্থিত একজন আলেম বলেন, নামায হয়ে গেছে। আমার জানার বিষয় হল, ঐ নামাযটি কি আদায় হয়েছিল? আর এ ধরনের ক্ষেত্রে মুক্তাদির করণীয় কী হবে?
হ্যাঁ, আপনাদের উক্ত জানাযার নামায আদায় হয়েছে। জানাযার চার তাকবীরের অতিরিক্ত বলা ভুল। তবে এ ভুলের কারণে নামায নষ্ট হয়ে যায় না। তাই ইমাম পঞ্চম তাকবীর দিলে মুক্তাদি ইমামের অনুসরণ করবে না। বরং অপেক্ষায় থাকবে এরপর ইমামের সাথে সালাম ফিরাবে।
Sharable Link-ফাতহুল কাদীর ২/৮৭; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়্যা ১/১৫৫; আলমাবসূত, সারাখসী ২/৬৪; আলবাহরুর রায়েক ২/১৮৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৪২
রমযান মাসে জুমার নামাযের পর আমাদের মসজিদে একটি জানাযার নামায অনুষ্ঠিত হল। তো জানাযার নামাযে ইমাম সাহেব তিন তাকবির বলে ভুলে সালাম ফিরিয়ে দেন। পরে মুসল্লীগণ তাঁকে তা জানালে তিনি বললেন, ভাই! নামায তো হয়ে যাবে, তারপরও আমরা নামায আবার পড়ে নিই। জানার বিষয় হল, এভাবে জানাযার নামাযে এক তাকবীর ছুটে গেলে নামায কি হয়ে যাবে?
বহু হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, জানাযার তাকবীর চারটি। ফকীহগণ বলেন, এই চার তাকবীরই জানাযার রুকন ও ফরয। একটি তাকবীর ছুটে গেলেও জানাযা সহীহ হবে না। অবশ্য ভুলবশত তিন তাকবীর দিয়ে সালাম ফিরিয়ে দিলে নামায পরিপন্থী কোন কাজ করার আগেই যদি চতুর্থ তাকবীর দিয়ে দেয় অতপর আবার সালাম ফেরায় তাহলে জানাযা সহীহ হয়ে যাবে।
Sharable Link-সহীহ বুখারী, হাদীস ১৩৩৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৯৫২; আলবাহরুর রায়েক ২/১৮০; বাদায়েউস সানায়ে ২/৫২; শরহুল মুনয়া পৃ. ৫৭৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৪২
আমার বেশ কিছু টাকার উপর এ বছর যাকাত ওয়াজিব হয়েছে। ব্যবসার সম্পদও আছে প্রায় ৬ লাখ টাকার। তাই চিন্তা করেছি এলাকার প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী কাপড়ের মাধ্যমে আদায় করব। করা যাবে কি এটা?
নগদ টাকার মাধ্যমেই যাকাত আদায় করা উত্তম। যেন যাকাতগ্রহীতা নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী তা ব্যয় করতে পারে। গ্রহীতার প্রয়োজন বিবেচনা না করে ঢালাওভাবে শাড়ি-কাপড় ইত্যাদি দ্বারা যাকাত আদায়ের প্রচলনটি ঠিক নয়। এতে কখনও এমন হয় যে, এক গরীব একাধিক কাপড় পায় অথচ তার চাল-ডাল বা অন্য কিছুর প্রয়োজন। ফলে সে তার কাপড়টি অল্পমূল্যে বিক্রি করে। এতে করে প্রকৃত অর্থে গরীব পুরো টাকাটা পায় না। অবশ্য কেউ যদি যাকাতের টাকা দ্বারা কাপড় কিনে তা গরীবদেরকে দিয়ে দেয় তবে তাতেও যাকাত আদায় হয়ে যাবে। তবে কাপড় বা যে জিনিসই দেওয়া হোক এক্ষেত্রে গ্রহীতার কী ধরনের জিনিস প্রয়োজন সে বিষয়টি দৃষ্টিতে রাখা উচিত।
Sharable Link-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১০৫৩৯; কিতাবুল আছল ২/১০৪; বাদায়েউস সানায়ে ২/১৪৬; আলবাহরুর রায়েক ২/২২১; ফাতহুল কাদীর ২/১৪৫
আমার মরহুম পিতার ক্রয়কৃত কিছু শেয়ার আমার তত্ত্বাবধানে আছে। আমি যাকাত হিসাব করার সময় ঐ শেয়ারগুলোর তাৎক্ষণিক বাজারমূল্য ধরে যাকাত দেই। বর্ণিত পদ্ধতিতে যাকাত দিলে যাকাত আদায় হবে কি না? উল্লেখ্য, শেয়ারগুলো ক্রয়-বিক্রয় করা হয় না ; বরং কোম্পানী কর্তৃক প্রদত্ত বাৎসরিক ডিভিডেন্ড গ্রহণ করা হয়। বর্তমানে বর্ণিত শেয়ারগুলো এজমালী অবস্থায় আছে। এজমালী অবস্থায় শেয়ারগুলোর বাজারমূল্য প্রায় ২,৯০,৬৮০ টাকা। কিন্তু প্রত্যেক অংশীদারকে যদি অংশ দেওয়া হয় তাহলে-
প্রত্যেক ভাই পাবে- ৫০৮৬৯.০০
প্রত্যেক বোন পাবে- ২৫৪৩৪.৫০
মাতা পাবে- ৩৬৩৩৫.০০
উল্লেখ্য, আমরা ৪ ভাই, ২ বোন এবং মাতা জীবিত আছেন।
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী আপনারা যেভাবে যাকাত দিচ্ছেন তা দ্বারা আপনাদের যাকাত আদায় হয়ে যাবে। তবে আপনারা যেহেতু ক্যাপিটাল গেইন তথা শেয়ারের ব্যবসা করেন না; বরং কোম্পানী থেকে ডিভিডেন্ড গ্রহণ করার উদ্দেশ্যে তা আপনারা রেখেছেন। তাই যাকাতের হিসাবের ক্ষেত্রে আপনাদেরকে শেয়ারগুলোর বাজারমূল্য বিবেচনায় নিতে হবে না; বরং আপনারা যাকাত দিবেন কোম্পানীর ব্যালেন্সশীট দেখে। এক্ষেত্রে ফিক্সড্ এসেটস (Fixed Assets) অর্থাৎ বিল্ডিং, মেশিনারিজ ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি, যা যাকাতযোগ্য নয় সেগুলো বাদ দিয়ে অবশিষ্ট সম্পদ (যেমন, কাঁচামাল, বিক্রিয়যোগ্য পণ্য, নগদ টাকা ইত্যাদি) যাকাতযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। এবং সে টাকা ও সম্পদ থেকে আপনাদের শেয়ারের আনুপাতিক হারে যত হয় তার ২.৫% আপনারা যাকাত দিবেন।
উল্লেখ্য, এজমালী সম্পদের উপর সমষ্টিগতভাবে যাকাত ফরয হয় না; বরং মীরাছনীতি অনুযায়ী যে যতটুকু অংশ পাবে ততটুকুর যাকাত (যদি সে নেসাবের মালিক হয়) তাকে আদায় করতে হয়। তবে ওয়ারিশগণের সম্মতি থাকলে যৌথভাবেও যাকাত আদায় করা যাবে।
Sharable Link-মাআরিফুস সুনান ৫/১৮৮; মাজাল্লাতু মাজমাইল ফিকহিল ইসলামী, সংখ্যা ৪, ১/৮৮১; ফিকহুন নাওয়াযিল ২/২০১; ইমদাদুল ফাতাওয়া ২/২১
একদিন এহরাম অবস্থায় রাত্রে ঘুমানোর সময় ঠাণ্ডার কারণে কাঁথা গায়ে দিয়ে ঘুমিয়ে ছিলাম। প্রথমদিকে মুখ খোলা রেখেই ঘুমিয়ে ছিলাম। কিন্তু ঘুমে আমার অজান্তেই মাথা ঢেকে ফেলি। দেশে আসার পর এ বিষয়ে এক হাজ্বী সাহেবের সাথে কথা বললে তিনি বললেন, আপনাকে দম দিতে হবে। অবশ্য আমি রাত ১১ টায় ঘুমিয়েছি তিনটায় উঠে পড়েছি। এখন আমি এ বিষয়ে সঠিক মাসআলা জানতে চাই।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার উপর দম ওয়াজিব হয়নি। কারণ ১২ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় মুখ ঢেকে রাখলে দম ওয়াজিব হয়। এর কম হলে দম ওয়াজিব হয় না। তবে এক্ষেত্রে আপনাকে এক সদকয়ে ফিতর পরিমাণ খেজুর বা তার মূল্য সদকা করে দিতে হবে।
Sharable Link-আলমাবসূত, সারাখসী ৪/১২৮; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৪৩০; গুনয়াতুন নাসিক পৃ. ২৫৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৮০; মানিসক, মোল্লা আলী আলকারী পৃ. ৩০৭
জনৈক ব্যক্তি তার পুরাতন অভ্যাসের কারণে এহরাম অবস্থায়ও নাকের দুই-তিনটি পশম উপড়ে ফেলেছে। জানতে চাচ্ছি, এহরাম অবস্থায় তার এ কাজটি জায়েয হয়েছে কি? নাজায়েয হলে তার জরিমানা কী হবে?
এহরাম অবস্থায় শরীরের যে কোনো পশম কাটা বা উপড়ানো নাজায়েয। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তি দুই-তিনটি পশম উঠানো অন্যায় হয়েছে। এ কারণে সামান্য কিছু যেমন কয়েকটি রিয়াল সদকা করে দিলেই হবে।
Sharable Link-ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৮৯; রদ্দুল মুহতার ২/৪৮৯; মানাসিক, মোল্লা আলী আলকারী পৃ. ৩২৮; গুনয়াতুন নাসিক পৃ. ২৫৬
আসসালামু আলাইকুম। পিতা-মাতার চাচা ও মামা কি মেয়ের জন্য মাহরাম না গায়রে মাহরাম?
এমনিভাবে পিতা-মাতার খালা ও ফুফু কি ছেলের জন্য মাহরাম না গায়রে মাহরাম?
ওয়া আলাইকুমুস সালাম। পিতা-মাতার চাচা ও মামা মাহরাম। এমনিভাবে পিতা-মাতার খালা ও ফুফুও মাহরামের অন্তর্ভুক্ত।
Sharable Link-কিতাবুল আছল ৪/৩৫৮; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৩৬০; বাদায়েউস সানায়ে ২/৫৩০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৭৩
মুহতারাম, হানিফ ছোটবেলায় যে মহিলার দুধ পান করেছিল তার স্বামীর ছোট বোন অর্থাৎ সে মহিলার ননদ ফারজানার সাথে হানিফের বিবাহের আলোচনা চলছে। গ্রামের এক মুরুব্বী বললেন, এ বিবাহ শুদ্ধ হবে না। কারণ এ মেয়ে তো হানিফের মাহরাম। আবার অন্য এক মুরুব্বী বললেন, এত দূরের সম্পর্কে বিবাহ হতে কোনো সমস্যা নেই। শরীয়তের দৃষ্টিতে এ বিবাহের হুকুম কী? দুধ মা’র ননদের সাথে বিবাহ কি শুদ্ধ হবে?
ফারজানার সাথে হানিফের বিবাহ বৈধ হবে না। কারণ, ফারজানা হানিফের দুধ সম্পর্কীয় ফুফু। আর আপন ফুফুর মত দুধ ফুফুর সাথেও বিবাহ হারাম। হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
يَحْرُمُ مِنَ الرّضَاعَةِ مَا يَحْرُمُ مِنَ الْوِلَادَةِ
অর্থাৎ জন্মসূত্রের কারণে যাদের সাথে বিবাহ হারাম, দুধ সম্পর্কের কারণেও তাদের সাথে বিবাহ হারাম। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৪৪৪)
Sharable Link-শরহে মুসলিম, ইমাম নববী ১০/১৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৪/৩৬৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৪/৯৩; আলবাহরুর রায়েক ৩/২২৬
কয়েকদিন আগে আমার সন্তান খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। তখন আমি মান্নত করেছিলাম, যদি আমার সন্তান সুস্থ হয় তবে আমি ফকীরদেরকে খানা খাওয়াবো। এখন আল্লাহর রহমতে আমার সন্তান সুস্থ হয়েছে। আমি জানতে চাচ্ছি যে, আমাকে কয়জন ফকীরকে খানা খাওয়াতে হবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার মান্নত আদায়ের জন্য অন্তত দশজন ফকীর মিসকীনকে দুই বেলা খানা খাওয়াতে হবে।
Sharable Link-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২৪৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ২/১২৯; আলমুহীতুল বুরহানী ৬/৩৫৩; আলবাহরুর রায়েক ৪/২৯৬
মুহতারাম, আমার এক কলিগ তার স্ত্রীর সাথে অনেকদিন আগে একবার এভাবে কসম করেছিল যে, ‘যাও! মক্কা মদীনার কসম করে বলছি, আমি আর কখনো ইচ্ছা করে নামায ছাড়ব না। সর্বদা নামায পড়ব।’ কিন্তু সে এর পরও অনেকবার নামায ছেড়ে দিয়েছে।
এখন তার করণীয় কী? তাকে কি এর কাফফরা আদায় করতে হবে? কীভাবে আদায় করবে? বিষয়গুলো জানানোর অনুরোধ রইলো।
প্রশ্নের ঐ কথা দ্বারা কসম সংঘটিত হয়নি। আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো কিছুর কসম করা জায়েয নয়। হাদীস শরীফে এসেছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مَنْ حَلَفَ بِغَيْرِ اللّهِ فَقَدْ أَشْرَكَ
‘যে আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো কিছুর কসম করল সে (যেন) আল্লাহর সাথে শিরক করল’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩২৫১)
সুতরাং প্রশ্নোক্ত ব্যক্তির এভাবে কসম করা জায়েয হয়নি। এজন্য তাকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। আর তার উক্ত কথার দ্বারা যেহেতু কসম সংঘটিত হয়নি তাই এর কারণে তাকে কোনো কাফফারাও আদায় করতে হবে না। তবে ইচ্ছাকৃত নামায ছেড়ে দেওয়ার কারণে মারাত্মক কবীরা গুনাহ হয়েছে। এজন্য তাওবা-ইস্তিগফার করতে হবে এবং উক্ত নামাযগুলোর কাযা পড়ে নিতে হবে।
প্রকাশ থাকে যে, নামায ইসলামের অন্যতম রুকন। ইচ্ছাকৃত নামায ছেড়ে দেওয়াকে হাদীসে কুফুরী গুনাহ বলা হয়েছে। অতএব, প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য নামাযের ব্যাপারে পরিপূর্ণ যত্মবান হওয়া।
Sharable Link-বাদায়েউস সানায়ে ৩/১৬; ফাতহুল কাদীর ৪/৩৫৬; রদ্দুল মুহতার ৩/৭১২