মুহাম্মাদ রুম্মান - হাতিয়া, নোয়াখালী

৩৯৭৩ . Question

 

আমি জনৈক আলেমকে বলতে শুনেছি যে, জুমা ঈদের সময় খতীব সাহেবের জন্য ডান-বাম দিকে চেহারা ফিরিয়ে খুতবা দেওয়া সুন্নত তরীকা নয়। সুন্নত তরীকা হল সামনের মুসল্লিদের দিকে ফিরে খুতবা দেওয়া। জানার বিষয় হল, আলেমের কথা কি ঠিক?


Answer

হাঁ আলেম ঠিক বলেছেন। খুতবার সময় ডানে বামে চেহারা না

 ঘুরিয়ে সামনের দিকে ফিরে খুতবাদেওয়া  সুন্নত।

-আলমুগনী, ইবনে কুদামা ৩/১৭৮; কিতাবুল উম্ম ১/২৩০; মাআরিফুস সুনান ৪/৩৬৫; উমদাতুল কারী ৬/২২১; রদ্দুল মুহতার ২/১৪৯

Sharable Link

আহমাদ কবীর - ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত

৩৯৭৪ . Question

 

মুসাফির ব্যক্তি যদি মুকীম ইমামের পিছনে মাসবুক হয় তবে সে দুই রাকাত পেলে কি আরো দইু রাকাত একাকী পড়বে, নাকি দইু রাকাতেই নামায শেষ করবে? আর যদি এক রাকাত পায় তাহলে কয় রাকাত পড়বে?


Answer

মুসাফির ব্যক্তি মুকীম ইমামের পিছনে ইক্তেদা করলে চার রাকাত পড়া জরুরি হয়ে যায়।

  তাই মুকীমইমামের পেছনে মাসবুক হলেও তাকে চার রাকাতই পড়তে হবে। 

 আবু মিজলায রাহবলেন,

قلت لابن عمر : ادركت ركعة من صلاة المقيمين وأنا مسافر؟ قال : صل بصلاتهم.

আমি আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.-কে জিজ্ঞাসা করলামমুসাফির অবস্থায় যদি আমি মুকীমের পেছনে এক রাকাত পাই তাহলে করণীয় কী

 জবাবে তিনি বললেনমুকীমের মতো (পুরানামায পড়বে।

-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ৪৩৮১; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৩৮৭৫; কিতাবুল আছল ১/২৫৬; বাদায়েউস সনায়ে ১/২৭৬

Sharable Link

ফুয়াদ হাসান - খুলনা

৩৯৭৫ . Question

 

গত রমযানের প্রথম দিন আমাদের মুয়াযযিন সাহেব ওয়াক্ত আসার আগেই ইশার নামাযের আযান দিয়ে দেন। আমাদের মসজিদে তাবলীগে এসেছেন এমন একজন আলেম ওয়াক্ত আসার পর মুয়াযযিন সাহেবকে পুনরায় আযান দিতে বললে তিনি অসম্মতি প্রকাশ করেন এবং বলেন, আযান একবার দিলেই হয়ে যায়। পুনরায় দিতে হবে না এবং তিনি পুনরায় আযান দেননি।

জানার বিষয় হল, ওয়াক্ত আসার পূর্বে আযান দেওয়ার বিধান কী? এক্ষেত্রে পুনরায় আযান দিতে হবে কি? 


 

Answer

 

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ওয়াক্ত হওয়ার পর পুনরায আযান দেওয়া কর্তব্য ছিল। 

 কারণ ওয়াক্ত হওয়ার আগে আযান দিলে তা সহীহ হয় না।

উল্লেখ্যমুয়াযযিনের উচিত নামাযের ওয়াক্ত সম্পর্কে সচেতন থাকা।

 হাদীস শরীফে এসেছেনবীকারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

الْمُؤَذِّنُ مُؤْتَمَن

মুয়াযযিন (নামাযের সময়ের ব্যাপারেনির্ভরতার প্রতীক। 

 

-মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৮৯০৯; কিতাবুল আছল ১/১১০; কিতাবুল হুজ্জাহ ১/৬১; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৮১; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/২৪৭; শরহুল মুনইয়াহ পৃ. ৩৭৭

Sharable Link

ফরীদুদ্দীন - বরিশাল

৩৯৭৬ . Question

আমি একদিন একাকী নামায পড়ার সময় রুকুতে গিয়ে ভুলে কিরাত পড়তে শুরু করি। দুয়েক আয়াত পড়ার পর মনে হওয়ামাত্র রুকুর তাসবীহ পড়ে যথানিয়মে বাকি নামায শেষে সাহু সিজদা করি। জানার বিষয় হল, উক্ত ভুলের কারণে সাহু সিজদা করে কি আমি ঠিক করেছি?


Answer

হাঁ, সাহু সিজদা করে ঠিক করেছেন। কেননা রুকুতে পরিমাণ কেরাত পড়ার কারণে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছে।

-সহীহ মুসলিম, হাদীস ৪৮০; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩১৩; শরহুল মুনইয়াহ ৪৬০; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৪৭৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৯৭; রদ্দুল মুহতার ২/৮১; হালাতুল মুজাল্লী ২/৪৪৪

Sharable Link

শরীফ - দাউদকান্দি, কুমিল্লা।

৩৯৭৭ . Question

 

আমি একদিন যোহরের আগের চার রাকাত সুন্নত নামাযের প্রথম বৈঠকে বসে ভুলে সূরা ফাতিহা পড়তে শুরু করি। কয়েক আয়াত পড়ার পর মনে হতেই তাশাহহুদ পড়ে নেই এবং যথানিয়মে বাকি নামায শেষে সাহু সিজদা করি। জানার বিষয় হল, উক্ত ভুলের কারণে কি আমার উপর সাহু সিজদা ওয়াজিব ছিল? এবং সাহু সিজদা করার দ্বারা কি আমার নামায হয়ে গেছে?


 

Answer

জী হাঁউক্ত ভুলের কারণে তাশাহহুদ পড়তে বিলম্ব হওয়ায় সাহু সিজদা করা ওয়াজিব হয়েছে। 

তাইআপনার সাহু সিজদা করা ঠিক হয়েছে এবং নামায শুদ্ধ হয়েছে। 

-আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩১৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২৬; আলবাহরুর রায়েক ২/৯৭; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৪৪৪

Sharable Link

মোস্তফা আলমাসউদ - নান্দাইল, মোমেনশাহী

৩৯৭৮ . Question

 

রমযান মাসে আমাদের মসজিদে খতম তারাবীহ হয়। হাফেয সাহেবগণ খুব ধীরে-সুস্থে তিলাওয়াত করেন। সময় দীর্ঘতার কারণে অনেক মুসল্লিই বসে বসে তারাবীহ আদায় করেন। জানার বিষয় হল, এভাবে কোনো প্রকার ওজর ছাড়াই বসে তারাবীহ পড়ার বিধান কী?


 

Answer

দীর্ঘ কিরাতের কারণে দাঁড়ানো বেশি কষ্টকর হলে তারাবীহ বসেও পড়া যাবে। 

বিশেষত বৃদ্ধ অসুস্থদের জন্য বসে পড়ার অবকাশ আছে। 

তবে কোনো প্রকার ওজর ছাড়া তারাবীহ বসে পড়াসুন্নাহপরিপন্থী 

এবং সালাফের স্বীকৃত নীতি পরিপন্থী।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৩৪২৯, ৩৪২৪, ৩৪২৫, ৩৪২৬; মাবসূত, সারাখসী ২/১৪৭; বাদায়েউস সানায়ে ১/৬৪৭; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৪৩; আলমুহীতুল বুরহানী ২/২৫৫; রদ্দুল মুহতার ১/৪৪৫

Sharable Link

আবদুল আযীয - মোমেনশাহী

৩৯৭৯ . Question

 

রমযানের পূর্বে ট্রেনে এক জায়গায় যাচ্ছিলাম। মাঝে ফজরের সময় এক স্টেশনে ট্রেনটি থামে। স্টেশনে ট্রেন সাধারণত একটু দীর্ঘ সময় অবস্থান করে। তাই আমি পস্নাটফরমের এক কামরায় ফজরের জামাতে শরিক হই। আমরা যখন বৈঠকে তাশাহহুদ পড়ছি তখন ট্রেন ছাড়ার জান্য সংকেত দেওয়া হয়। তাই আমি তাড়াহুড়ো করে ইমামের আগেই সালাম ফিরিয়ে ট্রেনে উঠি। ইমামের আগে সালাম ফিরানোর কারণে কি আমার নামায নষ্ট হয়ে গেছে? নামায কি পুনরায় আদায় করতে হবে?

 


 

Answer

আপনি যদি তাশাহহুদ পড়ার পর সালাম ফিরিয়ে থাকেন তাহলে আপনি যেহেতু ওজরবশতকরেছেন তাই আপনার নামায আদায় হয়ে গেছে। আর যদি তাশাহহুদ পড়ার পূর্বে সালাম ফিরিয়েথাকেন তাহলে  নামায আদায় হয়নি। তা পুনরায় আদায় করে নিতে হবে।

প্রকাশ থাকে যেমুকতাদির জন্য নামাযের সালামেও ইমামের অনুসরণ করা ওয়াজিব। বিনাওজরে ইমামের পূর্বে সালাম ফেরানো মাকরূহে তাহরীমী। বিনা ওজরে এমনটি করলে উক্ত নামাযপুনরায় আদায় করতে হবে। 

-হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ১৬৯; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৯৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১৯০; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাদ্দুর ১/২৩০; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫২৫

Sharable Link

আরিফ রেদওয়ান আমীন - বাইতুস সালাম মাদরাসা উত্তরা, ঢাকা

৩৯৮০. Question

গত রমযানে আমি একদিন জামাতের সাথে তারাবীতে নামায শেষ করে জরুরতে মসজিদের বাইরে যাই। ফিরে এসে ইমাম সাহেবকে বিতিরের তৃতীয় রাকাতে পাই। আমি তখন জামাতে শরিক হই। ইমাম সাহেব যখন তাকবীর বলে দুআ কুনূত পড়েন তখন আমিও তার সাথে দুআ কুনূত পড়ি। এরপর ইমাম সাহেব তৃতীয় রাকাত শেষ করে সালাম ফিরালে আমি দাঁড়িয়ে অবশিষ্ট দু রাকাত পূর্ণ করি। তাতে পুনরায় আর দুআ কুনূত পড়িনি। নামায শেষে একজন মুসল্লি আমাকে বলেন, আপনার নামায আদায় হয়নি। কেননা প্রথমবার আপনি যখন ইমামের সাথে দুআ কুনূত পড়েছেন তা ছিল আপনার প্রথম রাকাত। ইমামের অনুসরণে তখন মূলত তা পড়েছেন। এরপর আপনার তৃতীয় রাকাত যেটা ছিল তাতে দুআ কুনূত পড়া তো আপনার জন্য ওয়াজিব ছিল। ইচ্ছাকৃত ওয়াজিব ত্যাগ করার কারণে আপনার নামায নষ্ট হয়ে গেছে। হুজুরের কাছে বিষয়টির প্রকৃত সমাধান জানতে চাচ্ছি।

 


Answer

উক্ত মুসল্লির কথা ঠিক নয়। কেননা মাসবুক ইমাম সাহেবের সাথে দুআ কুনূত পড়লে কিংবা তৃতীয়রাকাত পেলে মাসবুকের দুআ কুনূতের ওয়াজিব আদায় হয়ে যায় এবং এটা তার জন্য তৃতীয়রাকাত হিসেবেই গণ্য হয়। তাই ইমামের সালামের পর পূর্বের দু রাকাত আদায় করতে হয়।সুতরাং আপনার বিতর নামায যথাযথভাবেই আদায় হয়েছে। 

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭১; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৩৮৫; শরহুল মুনইয়াহ ৪২১; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ২১১; আদ্দুররুল মুখতার ২/১০-১১

Sharable Link

আফীফ মিহসান - বাগেরহাট

৩৯৮১ . Question

কিছুদিন আগে বিশেষ এক প্রয়োজনে আমরা কয়েকজন খুলনা থেকে ঢাকায় আসি। এখানে আমার ভগ্নিপতির মাদরাসা আছে। জুমআর দিন তিনি উপস্থিত না থাকায় আমাদের সাথে আসা একজন জুমার নামায পড়িয়ে দেন। পরে আমার মনে হল, তিনি তো মুসাফির। তার নিজের উপরই যখন জুমা ওয়াজিব নয় তখন তিনি মুকীমদের ইমাম হবেন কীভাবে? তাই জানতে চাই, মুসাফিরের জন্য জুমার ইমামতি করার বিধান কী?

 


Answer

মুসাফির ব্যক্তির উপর জুমা ফরয নয়। তবে সে জুমা আদায় করলে তা জুমা হিসেবেই সহীহ হবে।তাই সফর অবস্থায় তার জুমা আদায় করাও জায়েয এবং জুমার ইমামতি করাও জায়েয। সুতরাং ব্যক্তির জুমার ইমামতি করা যথাযথ হয়েছে।

-আলজামিউস সগীর ১১২; বাদায়েউস সানায়ে ১/৫৮৮; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৪৪৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৫৫৯; আলবাহরুর রায়েক ২/১৫২; শরহুল মুনইয়াহ ৫৫৭

Sharable Link

মুহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম - রাজাপুর, ঝালকাঠি।

৩৯৮২. Question

আমার পিতার উভয় কিডনী নষ্ট হয়ে গেছে। সপ্তাহে দুইবার ডায়ালাইসিস করতে হয়। ডায়ালাইসিসের জন্য অনেক সময় লাগে। সিরিয়াল লেগে থাকে। ডাক্তার যে সময় দেয় সে সময়ই করতে হয়। কোনো কোনো সময় মাগরিবের কিছু আগে শুরু হয়। একেবারে ইশার সময় শেষ হয়। কিংবা আসরের আগে শুরু হয় মাগরিবে শেষ হয়। জানার বিষয় হল, ডায়ালাইসিস চলাকালীন তিনি নামায পড়বেন, নাকি পরে কাযা করে নিবেন। ডায়ালাইসিস চলাকালীন শুয়ে থাকতে হয়। কেবলা ঠিক থাকে না। অযু করাও সম্ভব নয়। তবে তায়াম্মুম করা যায়। এক দিক দিয়ে শরীরের রক্ত বের করা হয়। আর অন্য দিক দিয়ে রক্ত প্রবেশ হয়। তার নামাযের হুকুম সবিস্তারে জানাবেন।

 


Answer

ডায়ালাইসিস চলা অবস্থায় নামায কাযা হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা হলে তায়াম্মুম করে শুয়ে যেদিকেফিরে সম্ভব নামায পড়ে নিবে। অসুস্থ অবস্থায় যেভাবে সম্ভব নামায পড়ে নিলে তা আদায় হয়েযায়। পরবর্তীতে তার কাযা করতে হবে না। 

-বাদায়েউস সানায়ে ১/২৮৪, ২৮৭; মাবসূত, সারাখসী ১/২১২-২১৩; আলবাহরুর রায়েক ১/২৮৬; আদ্দুররুল মুখতার ১/২৩৩, ২/৯৯-১০০

Sharable Link

মুহাম্মাদ রফিক আহমেদ - ঝালকাঠী

৩৯৮৩ . Question

মহিলাদের মাসিকের সময় আইয়ামে তাশরীকে তাকবীরে তাশরীক কীভাবে পড়বে? নামায না থাকলেও তাকবীরে তাশরীক পড়তে হবে কি?

 


Answer

মাসিকের সময় যেহেতু নামায নেই তাই  সময় তাদেরকে তাকবীরে তাশরীক পড়তে হবে না।তাকবীরে তাশরীকটা মূলত নামাযের সাথে সম্পৃক্ত।

-আলবাহরুর রায়েক ২/১৬৫; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ২৯৪

Sharable Link

মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ - ঢাকা

৩৯৮৪. Question

আলকাউসারের বিভিন্ন প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে, নামাযের জন্য মৌখিক নিয়্যত করা জরুরি নয়। মনে মনে নিয়ত করলেই যথেষ্ট। কিন্তু ফরয ওয়াজিব সুন্নত নফল এগুলোর ক্ষেত্রে কীভাবে নিয়ত করতে হবে তা কোনো প্রশ্নোত্তরে পাইনি। সব ক্ষেত্রে শুধু নামায পড়ছি এমন নিয়ত করা কি যথেষ্ট না কি ফরয-ওয়াজিব নিয়ত করতে হবে। আর কাযা নামায আদায়ের সময় কাযা কথা কি উল্লেখ করতে হবে? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

 


Answer

নিয়ত দিলে দিলে করাই যথেষ্ট। মৌখিক নিয়ত করা আবশ্যক নয়। তবে কোন নামায পড়ছেন তানির্দিষ্ট করে নিয়ত করতে হবে। যেমনফজরের ফরয নামায পড়ছিযোহরের ফরয নামাযপড়ছি। এভাবে কোন ফরয নামায তা নির্দিষ্টভাবে নিয়ত করতে হবে।

আর বিতর নামায পড়ছি এমন বললেই হবে। তদ্রূপ ফজরযোহরমাগরিব  ইশার সুন্নতেওনির্দিষ্ট নিয়ত করা ভালো। আর হাদীসে বর্ণিত নির্দিষ্ট নফল নামাযগুলোর ক্ষেত্রেও  নামাযেরনিয়ত করা উত্তম। যদিও শুধু নামায পড়ছি এমন নিয়ত করলেও তা আদায় হয়ে যাবে। এছাড়াঅন্যান্য নফলের ক্ষেত্রে শুধু নামায পড়ছি বা নফল নামায পড়ছি এমন নিয়ত করবে।

আর কাযা আদায়ের ক্ষেত্রেও অমুক দিনের যোহর পড়ছিঅমুক দিনের আসর পড়ছিএভাবেনিয়ত করলেও চলবে।

-আলইখতিয়ার ১/১৫৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১১৯; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ২০৫

Sharable Link

মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ - হবিগঞ্জ

৩৯৮৫. Question

আমাদের মসজিদে একদিন ইশার জামাতে ইমাম সাহেব চার রাকাত পর না বসে দাঁড়িয়ে যান। মুসল্লিরা লোকমা দিলেও তিনি ফিরে আসেননি। অতপর পঞ্চম রাকাতের সিজদা করে বৈঠক করেন এবং সাহু সিজদার মাধ্যমে নামায শেষ করেন। সাহু সিজদার সাথে নামায শেষ করার কারণে মুসল্লিরা মনে করেছে নামায হয়ে গেছে। কিন্তু আমার মনে সন্দেহ ছিল। সময় কাউকে জিজ্ঞাসা করার মতো পাইনি। পরে জানতে পারলাম যে, আমাদের নামায হয়নি। আসলেই কি আমাদের নামায হয়নি? কিন্তু আমাদের ইমাম সাহেবকে বললে তিনি বললেন, সাহু সিজদার কারণে নামায সহীহ হয়ে গেছে। কথা কি ঠিক? যদি না হয়ে থাকে তবে দিনের ইশা, সুন্নত বিতর সবাইকে কি কাযা করতে হবে?

 

 

 

Answer

আপনাদের উক্ত ইশার নামায আদায় হয়নি। চার রাকাতের পর না বসে পঞ্চম রাকাত পূর্ণ করার দ্বারা অর্থাৎ ঐ রাকাতের সিজদা করার দ্বারাই ঐ ইশার নামায বাতিল হয়ে গেছে। তাই পরবর্তীতে সাহু সিজদা করলেও উক্ত ইশার নামায আদায় হয়নি। কারণ নামাযের মধ্যে কোনো ওয়াজিবে ত্রুটি হলে সাহু সিজদা করে নিলে ঐ নামায সহীহ হয়ে যায়। কিন্তু ফরয ছুটে গেলে সাহু সিজদা দ্বারা সে ক্ষতি পূরণ হয় না। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে  চার রাকাত পর শেষ বৈঠক করা ফরয ছিল তা করা হয়নি। সুতরাং এ ভুল সাহু সিজদা দ্বারা পূর্ণ হবে না। অতএব ঐ দিনের ইশার নামায আবার পড়তে হবে। তবে সুন্নত ও বিতর পড়তে হবে না। কেননা সুন্নতের কাযা নেই। আর বিতর নামায সহীহ হয়েছে। তাই তা আর পড়তে হবে না।  

-শরহুল মুনইয়াহ ২৮৯-২৯০; মুখতাসারুল কুদূরী ৭০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫১; রদ্দুল মুহতার ১/৩৬১

Sharable Link

সাঈদ - বাসাবো, ঢাকা

৩৯৮৬. Question

মাঝেমধ্যে আমি নামাযের কোনো রাকাতে একটি সিজদা করে অপর সিজদাটি করতে ভুলে যাই। এখন জানতে চাই, এমন হলে আমার কী করণীয়?

 

 

 

Answer

নামাযের কোনো রাকাত থেকে যদি একটি সিজদা ছুটে যায় তাহলে নামাযের মধ্যে যখনই স্মরণ হবে সিজদাটি আদায় করে নিবেন এবং নামায শেষে সাহু সিজদা করবেন। 

-শরহুল মুনইয়াহ ২৯৭; কিতাবুল আছল ১/২০৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৮১; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪০১; রদ্দুল মুহতার ১/৪৬২

Sharable Link

লাবীদ - বাসাবো, ঢাকা

৩৯৮৭. Question

মাঝেমধ্যে বিতর নামাযের তৃতীয় রাকাতে আমি দুআ কুনূত না পড়ে ভুলে রুকু করে ফেলি। এখন আমি জানতে চাই, এমন হলে আমার কী করণীয়?

 

 

Answer

বিতর নামাযে দুআ কুনূত না পড়ে ভুলে রুকুতে চলে গেলে দুআ কুনূতের জন্য ফিরে আসবে না।বরং বাকি নামায স্বাভাবিকভাবে পড়ে সাহু সিজদা করবে। 

অবশ্য কেউ যদি রুকু থেকে ফিরে এসেদুআ কুনূত পড়ে তাহলে নামায নষ্ট হবে না। যদিও এমনটি করা অনিয়ম। এক্ষেত্রে তাকে পুনরায় রুকু করতে হবে না। 

আর পুনরায় দুআ কুনূত পড়া হোক বা না হোক উভয় অবস্থায় সাহু সিজদাকরতে হবে। কেননা বিতর নামাযে রুকুর পূর্বে দুআ কুনূত পড়া ওয়াজিব।

আর দুআ কুনূত না পড়েরুকুতে চলে গেলে কুনূত পড়ার সময় শেষ হয়ে যায় এবং ওয়াজিব ছুটে যাওয়ার কারণে সাহুসিজদা করা আবশ্যক হয়ে যায়। তাই রুকু থেকে ফিরে এসে কুনূত পড়া নিয়মসম্মত নয়।

-কিতাবুল আসল ১/২২০; আদ্দুররুল মুখতার ২/৯-১০; বাদায়েউস সানায়ে ১/৬১৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১১১; আলবাহরুর রায়েক ২/৪২;

Sharable Link

সোহেল আহমদ - কলাবাগান, ঢাকা

৩৯৮৮. Question

 

আমি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। রাত ৮টা পর্যন্ত ডিউটি করে বাসায় ফিরতে ফিরতে প্রায় দশটা বেজে যায়। এরপর খাবার-দাবার অন্যান্য কাজ শেষ করে ইশার নামায পড়তে পড়তে প্রায় বারোটা, সাড়ে বারোটা বেজে যায়। এর আগে পড়াটা একটু কঠিন হয়। জানতে চাই, আমার জন্য এত দেরি করে নামায আদায় করায় কোনো সমস্যা আছে কি?

 


 

Answer

বিনা ওজরে ইশার নামায আদায়ে এত বিলম্ব করা মাকরূহ। ইশার নামায রাতের প্রথম একতৃতীয়াংশের মধ্যে আদায় করে নেওয়া উত্তম। অবশ্য মধ্যরাত পর্যন্ত পড়ে নিলে মাকরূহ হবে না।আমাদের দেশে মওসুমভেদে মধ্যরাত শুরু হয় কখনো এগারোটা থেকেকখনো সাড়ে এগারোটাথেকে বা এর কয়েক মিনিট আগে-পরে (ঢাকার সময়ানুযায়ী) তাই ওজর ছাড়া এর চেয়ে বিলম্বকরা মাকরূহে তানযীহী। সময়মতো নামায আদায়ের ব্যাপারে আরো যত্নশীল হওয়া কর্তব্য।

উল্লেখ্যযে সকল দপ্তরে মুসলমান কর্মচারীগণ কাজ করে সেখানের কর্তৃপক্ষের উচিত নামাযেরনির্ধারিত সময়ে কর্মচারীদেরকে জামাতের সাথে নামায আদায়ের সুযোগ করে দেওয়া। তবেসেখানে যদি জামাতের সুযোগ নাও থাকে তবে ছুটির পর অফিসে কিংবা বাইরে কোথাও নামাযপড়ে নেওয়াই বাঞ্ছনীয় হবে। 

-তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/২২৬; মাবসূত, সারাখসী ১/১৪৭; শরহুল মুনইয়াহ ২৩৪; হালবাতুল মুজাল্লী ১/৬৪৬; রদ্দুল মুহতার ১/৩৬৮; কিতাবুল আছল ১/১২৩; শরহু মুখতাসারিত তহাবী ১/৫২২

Sharable Link

রশীদুযযামান - আসাদগেইট, ঢাকা

৩৯৮৯ . Question

 

আমার মাঝেমধ্যে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে যায়। মসজিদে গিয়ে দেখি ফজরের জামাত বেশ আগেই শুরু হয়ে গেছে। তখন জামাতে শরিক হয়ে যাই। সুন্নত আর পড়ার সুযোগ হয় না। জানতে চাই, আমাকে কি পরে সুন্নত কাযা করতে হবে?

 


 

Answer

ফজরের সুন্নত অন্যান্য সুন্নতে মুআক্কাদা থেকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। তাই চেষ্টা করতে হবে যেনজামাত 

শুরু হওয়ার আগেই তা আদায় করা যায়। কখনো ছুটে গেলে ঐদিন সূর্য ভালোভাবে উদিতহওয়ার পর

তা পড়ে নেওয়া উত্তম।

হাদীস শরীফে এসেছেআবু হুরায়রা রাথেকে বর্ণিততিনি বলেন,

أَنَّ النَّبِيَّ _ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ _ نَامَ عَنْ رَكْعَتَيِ الْفَجْرِ، فَقَضَاهُمَا بَعْدَ مَا طَلَعَتِ الشَّمْسُ

একবার নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমের কারণে ফজরের দু রাকাত সুন্নত পড়তেপারেননি। ফলে সূর্যোদয়ের পর তিনি তা আদায় করেছেন। -সুনানে ইবনে মাজাহহাদীস  ১১৫৫

যদি  দিন যোহরের ওয়াক্ত হওয়ার পূর্বে পড়া না হয় তাহলে এরপর আর তা পড়ার নিয়ম নেই।

-হালবাতুল মুজাল্লী ২/৫১৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৪৫৩; আলমুহীতুল বুরহানী ২/২৩৪-২৩৫

Sharable Link

ইবরাহীম হাবীব - ডেমরা, ঢাকা

৩৯৯০. Question

সেদিন বিতর নামায পড়ছিলাম। ৩য় রাকাতে দুআয়ে কুনূত না পড়েই রুকুর জন্য ঝুঁকে যাই। হাঁটুতে হাত লাগে না এত সামান্য ঝুঁকেছিমাত্র তখনই দুআর কথা স্মরণ হয়। তাই দাঁড়িয়ে দুআয়ে কুনূত পড়ি। এরপর সিজদায়ে সাহু ছাড়াই নামায শেষ করি। জানতে চাই, আমার নামায কি সহীহ হয়েছে?

 


Answer

জী হাঁআপনার নামায সহীহ হয়েছে। কারণ আপনি যেহেতু রুকুতে চলে যাননিবরং সামান্যঝুঁকেই উঠে গেছেন তাই আপনার দাঁড়িয়ে যাওয়া নিয়মসম্মতই হয়েছে। আর এক্ষেত্রে সিজদায়েসাহুও ওয়াজিব হয়নি। সুতরাং স্বাভাবিক নিয়মে নামায শেষ করা ঠিক হয়েছে। 

-বাদায়েউস সানায়ে ১/২৮৩; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৮৩; আলবাহরুর রায়েক ১/২৯৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১২৫; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৪৭

Sharable Link

আবদুর রহমান - সুজানগর, পাবনা

৩৯৯১. Question

কয়েক দিন আগে আমার বড় মামা মারা গিয়েছেন। গোসল দেওয়ার পর জানাযার নামাযের বেশ আগেই তার লাশ মসজিদের সামনে রাখা হয়। আমার এক মামাতো ভাই মাদরাসার কয়েকজন ছাত্রকে নিয়ে এলেন। কফিনের কাছে তাদেরকে তিলাওয়াত করতে বসালেন। আমার মনে একটু খটকা লাগল। কোথায় যেন শুনেছি, মৃত ব্যক্তির পাশে বসে তিলাওয়াত করা উচিত নয়। তবে স্পষ্ট কিছু মনে নেই। তাই সঠিক বিষয়টি জানতে চাই।

 


Answer

গোসল দেওয়ার পর লাশের কাছে কুরআন তিলাওয়াত করা জায়েয। কিন্তু গোসল দেওয়ার আগেমৃত ব্যক্তির নিকটে কুরআন তিলাওয়াত করা মাকরূহ। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মাইয়্যেতের গোসলের পরেযেহেতু তার কাছে তিলাওয়াত করা হয়েছে তাই এতে দোষের কিছু হয়নি।

প্রকাশ থাকে যেমাইয়্যেতের গোসলের আগে দূরে কোথাও যেমন অন্য ঘরে মৃতের ঈসালেসওয়াবের নিয়তে কুরআন তিলাওয়াত করতে কোনো অসুবিধা নেই।

-তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫৬৪; আলবাহরুর রায়েক ২/১৭১; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৫৯৭; রদ্দুল মুহতার ২/১৯৪

Sharable Link

আবুল কালাম আজাদ - মংলিপাড়া, সিলেট

৩৯৯২ . Question

আমার বড় ভাইজান ভালো আলেম বুযুর্গ ছিলেন। সমাজে তার বেশ সুনাম-সুখ্যাতি ছিল। বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে তিনি বাতিলের বিরুদ্ধে সাহসী বয়ান করতেন। এভাবে তার কিছু শত্রুও গড়ে ওঠেছিল। ভাইজান সিলেট শহরেই থাকতেন। একবার তিনি সীমান্ত পার্শ্ববর্তী গোয়াইঘাটে একটি দ্বীনী প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করার জন্য সফর করছিলেন। গাড়ি কোম্পানিগঞ্জ পার হয়ে সামনে এগুলে এক জনমানবহীন সড়কে পৌঁছলে একদল দুর্বৃত্ত ভাইজানের ওপর সশস্ত্র হামলা করে বসে। তারা বুলেটের আঘাতে ভাইজানের দেহ ঝাঁজরা করে দেয়। এম্বুলেন্সে করে লাশ এলাকায় আনা হলে ভাইজানকে গোসল দেওয়া হবে কি না নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক মতানৈক্য দেখা দেয়। অবশেষে ইমাম সাহেবের ফয়সালাক্রমে গোসল করিয়ে ভাইজানকে আলাদা কাফন পরানো হয়। এরপর জানাযা শেষে তাকে দাফন করা হয়। কিন্তু তারপরও গোসলের বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে কানাঘুষা চলতে থাকে। তাদের বক্তব্য, শহীদকে গোসল দেওয়ার কোনো বিধান নেই। তাকে তার রক্ত মাখা কাপড়ই দাফন করা নিয়ম। এখন মাননীয় মুফতী সাহেবের কাছে বিষয়টির প্রকৃত সমাধান জানতে চাচ্ছি। আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন।

 


Answer

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী আপনার ভাই শহীদের অন্তর্ভুক্ত। কেননা ডাকাত  দুর্বৃত্তদের হাতে নিহতব্যক্তি শহীদের হুকুমে। তাকে গোসল দিতে হয় না। তাই তাকে গোসল না দিয়ে পরিহিত পোশাকেদাফন করাই উচিত ছিল। ভুল হলেও যেহেতু দাফন হয়ে গেছে তাই এখন বিষয়টি নিয়ে বিতর্কেলিপ্ত হওয়া ঠিক হবে না।

عَنِ الشَّعْبِيِّ قَالَ: سُئِلَ عَنْ رَجُلٍ قَتَلَهُ اللُّصُوصُ فَقَالَ: لَا يُغَسَّلُ

শাবী রাহ.-কে এমন ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলযে চোরদের হাতে নিহত হয়েছে। তিনিবললেনতাকে গোসল দেওয়া হবে না। 

-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ৬৬৪৮, ৯৫৯৪; কিতাবুল আছল ১/৩৩৯; আলজামিউস সগীর ১১৮-১১৯; শরহুয যিয়াদাত ১/১৮৬-১৮৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৪৭-২৫০

Sharable Link

মুহাম্মাদ বিন আবদুর রাযযাক - সাভার, ঢাকা

৩৯৯৩. Question

কিছুদিন আগে আমার নানা ইন্তেকাল করেছেন। তিনি ঢাকায় বসবাস করতেন। তবে তার গ্রামের বাড়ি ছিল পাবনা। সেখানে তার ঘরবাড়ি এবং জায়গা-সম্পত্তি আছে। গ্রামে তিনি একটি মসজিদ মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন। সেগুলোর মুতাওয়াল্লি তিনিই ছিলেন। তাই কিছুদিন পরপরই সেখানে যেতেন। কয়েক দিন করে থাকতেন। মাদরাসাই ছিল তার সারা জীবনের স্বপ্ন এবং তার মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু। তার খুব তামান্না ছিল, উক্ত মাদরাসা-মসজিদের কাছেই তার কবর হবে। সন্তানদেরকে কথা বলেছেনও বিভিন্ন সময়। কিছুদিন আগে তিনি ঢাকায় ইন্তেকাল করেন। তখন তার দাফনের বিষয় নিয়ে মতভেদ হয়। গ্রামের লোকদের দ্বীনী মুরুবিক্ষ হওয়ায় তাদের চাওয়া ছিল তাকে গ্রামে দাফন করা হোক। ছাড়া বাবার কবর সেখানে থাকলে স্বভাবতই সন্তানদের মাদরাসার প্রতি বিশেষ মনোযোগ থাকার বিষয়টিও বিবেচনায় আনেন কেউ কেউ। আর তার নিজের তামান্না উপেক্ষা করাটাও সন্তানদের কাছে কষ্টকর হয়। তাই তাকে পাবনাতে নিয়েই দাফন করা হয়। কিন্তু আমি জানতাম, লাশ এত দূর নিয়ে দাফন করা মাকরূহে তাহরীমী নাজায়েয। এখন জানার বিষয় হল, উপরোক্ত অবস্থায় তাকে গ্রামে নিয়ে দাফন করাটা শরীয়তের দৃষ্টিতে উচিত ছিল কি না? আর এটি মাকরূহে তাহরীমী বা নাজায়েয কাজ হয়েছে কি না? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

 


Answer

মৃত ব্যক্তি যেখানে ইন্তেকাল করে তাকে সে এলাকার নিকটবর্তী কবরস্থানে দাফন করা উত্তম। বিনাকারণে বেশি দূরে নিয়ে দাফন করা অনুত্তম। দূরে নিয়ে যাওয়ার ফলে যদি দাফনে অধিক বিলম্ব নাহয় এবং লাশ বিকৃত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা না থাকে তাহলে দূরে নিয়ে দাফন করা নাজায়েয হবেনা।

সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে লাশ স্থানান্তরের কারণে যদি উপরোক্ত সমস্যা না হয়ে থাকে তাহলেস্থানান্তর নাজায়েয হয়নি। 

-মুয়াত্তা, ইমাম মালেক, ৮০; আততাজনীস ২/২৮১-২৮২; শরহু সিয়ারিল কাবীর, সারাখসী ১/১৬৪; মারাকিল ফালাহ ৩৩৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৬৬; আলইসতিযকার ২/৫৮৩-৫৮৫

Sharable Link

মুহাম্মাদ ইমরান - রায়পুর, লক্ষ্মীপুর

৩৯৯৪ . Question

এক ব্যক্তি নফল রোযা রেখেছিল। পরে রোযার কথা ভুলে গিয়ে খানা খেয়ে ফেলেছিল। স্মরণ হওয়ার পর আর খায়নি। তার রোযা কি হবে? একজন বলছে, ফরয রোযায় ভুলে খেলে রোযা নষ্ট হয় না। কিন্তু নফল রোযায় ভুলে খেয়ে নিলে রোযা হয় না। কথা কি সহীহ?

 


Answer

রোযা নফল হোক বা ফরয ভুলে খেয়ে নিলে রোযা ভাঙ্গে না। নফল রোযায় ভুলে খেলে রোযা ভেঙ্গেযায় প্রশ্নের  কথা ঠিক নয়। তাই  ব্যক্তির রোযাটি সহীহ হয়েছে। 

-মাবসূত, সারাখসী ৩/৬৫; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৯৪, ৪০০

Sharable Link

বিনতে তাহমীদ - সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ

৩৯৯৫ . Question

সাধারণত প্রতি ২৭ দিন পরপর আমার স্রাব শুরু হয়। এটা আমার অনেক দিনের অভ্যাস। নিয়ম অনুযায়ী ১৪ রমযান আমার স্রাব শুরু হওয়ার দিন ছিল। তাই ১৩ রমযান দিবাগত রাতে আমি সাহরী খাইনি এবং পরের দিন রোযার নিয়তও করিনি। ফলে ১৪ রমযান সকাল থেকে আমি স্বাভাবিকভাবেই পানাহার করতে থাকি। কিন্তু সেদিন আমার স্রাব শুরু হয় রাত থেকে।

এখন জানার বিষয় হল, আমার উক্ত রোযার কী হুকুম? শুধু কাযা করলেই হবে, নাকি কাফফারাও আদায় করতে হবে? অনুগ্রহ করে জানালে উপকৃত হব।

 


Answer

অভ্যাস অনুযায়ী দিনের যে কোন সময় স্রাব শুরু হয়ে যেতে পারে এই আশঙ্কায় রোযার নিয়তথেকে বিরত থাকা জায়েয নয়। তাই আপনার কাজটি মারাত্মক ভুল হয়েছে।  জন্য আল্লাহতাআলার নিকট তওবা ইসতেগফার করতে হবে। তবে প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যেহেতু  দিনরোযার নিয়তই করেননি তাই আপনাকে উক্ত রোযার শুধু কাযা করতে হবে। কাফফারা আদায়করতে হবে না।

-ফাতাওয়া খানিয়া ১/২০৩; আলবাহরুর রায়েক ২/২৮২

Sharable Link

আবদুল্লাহ সরকার - ভেদরগঞ্জ, শরীয়তপুর

৩৯৯৬. Question

 গত রমযানের পনের তারিখে আমাদের বাড়ির অনেকগুলো গাছ কাটা হয়। সকাল ৭টা থেকে কাজ শুরু করি। যোহর পর্যন্ত একটানা কাজ করি। আর রোদের তেজও ছিল প্রখর। ৩টার দিকে হঠাৎ মাথা ঘোরানো শুরু হয়। আমি আর সহ্য করতে পারিনি। ফলে রোযা ভেঙ্গে ফেলি।

আমার প্রশ্ন হল, এখন আমার কী করণীয়? শুধু কাযা করলেই হবে, নাকি কাফফারাও আদায় করতে হবে? অনুগ্রহ করে জানালে উপকৃত হব।

 


Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যেহেতু অসুস্থতার ওজরেই রোযা ভেঙ্গেছেন তাই উক্ত রোযার শুধু কাযাকরতে হবে। কাফফারা আদায় করতে হবে না।

প্রকাশ থাকে যেরমযানে রোযা রেখে এমন কাজ করা উচিত নয়যা রোযাদারকে বেশি দুর্বলকরে দেয়। আর রোযা থেকে এমন কাজ করা মাকরূহে তাহরীমীযার কারণে রোযা ভাঙ্গার মতোপরিস্থিতি হয়ে যায়।

-বাদায়েউস সানায়ে ২/২৪৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪২০-৪২১

Sharable Link

মেহবুবা আইরিন - উত্তরা, ঢাকা

৩৯৯৭. Question

আমার বাবার ইন্তেকালের পর একমাত্র উত্তরাধিকারী হিসেবে বেশ কিছু সম্পদ আমার মালিকানায় আসে। যার সবই প্রায় বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার। আমার স্বামী আর্থিকভাবে ততটা স্বচ্ছল নন। আমি চাচ্ছি, ব্যবসা করার জন্য তাকে মোটামুটি বড় একটা মূলধনের মালিক বানিয়ে দিতে। কিন্তু কোম্পানি থেকে আমার যে লাভ আসে তার অধিকাংশই আমার অলঙ্কারাদি অন্যান্য সম্পদের যাকাত হিসেবে আদায় করে দিতে হয়।

জানার বিষয় হল, আমি যাকাতের অংশসহ পুরো লভ্যাংশের টাকা আমার স্বামীকে দিতে পারব কি? না যাকাতের অংশ তাকে দেওয়া যাবে না?

 

 

 

Answer

স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে যাকাত দেওয়া জায়েয নয়। তাই আপনার স্বামী অসচ্চল হলেও তাকে আপনি যাকাতের টাকা দিতে পারবেন না।

-শরহু মুখতাসারিত তহাবী ২/৩৯৫; মুখতাসারুল কুদূরী ১২৭; বাদায়েউস সানায়ে ২/১৬২; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২১২; আলবাহরুর রায়েক ২/২৪৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৮৯; রদ্দুল মুহতার ২/২৫৮

Sharable Link

জুয়েল - বরুড়া, কুমিল্লা

৩৯৯৮. Question

আমার দোকানে পণ্য আছে মোট লক্ষ ৮০ হাজার টাকার। সাথে মানুষের কাছে ভাড়া দেওয়ার জন্য ছোট-বড় মিলে ১৫টি সাইকেলও আছে। প্রশ্ন হল, এখন আমি কীভাবে যাকাত আদায় করব? দোকানের মোট পুঁজির সাথে সাইকেলগুলোর মূল্য যোগ করে, নাকি পৃথক পৃথকভাবে আদায় করব? দ্রম্নত জানালে উপকৃত হব।

 


Answer

ভাড়ার বস্ত্তর মূল্যের উপর যাকাত আসে না। বরং তা থেকে অর্জিত আয় উদ্বৃত্ত থাকলে তারযাকাত দিতে হয়। তাই আপনাকে  তিন লক্ষ ৮০ হাজার টাকার সাথে শুধু সাইকেলগুলো থেকেভাড়া বাবদ প্রাপ্ত আয়ের যা জমা আছে তার যাকাত দিতে হবে। 

-ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৫০; আলফাতাওয়াল ওয়ালওয়ালিজিয়্যাহ ১/১৮২; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/১৬৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৮০

Sharable Link

হাবীবুল্লাহ - কুড়িগ্রাম

৩৯৯৯ . Question

প্রতি বছর আমি লুঙ্গি, শাড়ি ইত্যাদির মাধ্যমে যাকাত আদায় করি। বছরও যাকাতের নিয়তে ঢাকা ইসলামপুর থেকে ৪০০টি লুঙ্গি ৩০০টি শাড়ি ক্রয় করে কুড়িগ্রামগামী একটি বাসের ছাদে এগুলো উঠিয়ে দেই। বাস কর্তৃপক্ষ কুড়িগ্রাম জেলা বাস টার্মিনালে এগুলো নামিয়ে দেয়। কিন্তু সেখানে আমার পৌঁছাতে কিছুটা বিলম্ব হয়ে যায়। গিয়ে দেখি, কাপড়ের গাঁটরিটি খুলে পড়ে আছে। তাতে ৬০/৭০টি লুঙ্গি, শাড়িও নেই।

প্রশ্ন হল, আমাকে এখন আবার নতুন করে ক্রয় করে যাকাত দিতে হবে, নাকি প্রথমবার যাকাতের নিয়তে ক্রয় করার দ্বারাই যাকাত আদায় হয়ে গেছে? 

 


Answer

যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত ব্যক্তি বা তার প্রতিনিধির নিকট যাকাতের মাল পৌঁছে দেওয়ার আগেযাকাত আদায় হয় না। এক্ষেত্রে যাকাতের নিয়তে ক্রয় করা বা কোনো স্থানে পৃথক করে রাখাযাকাত আদায়ের জন্য যথেষ্ট নয়। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে হারিয়ে যাওয়া কাপড়গুলো যাকাতহিসেবে কর্তন হবে না।  পরিমাণ যাকাত আপনাকে আদায় করতে হবে। 

-আলবাহরুর রায়েক ২/২১১; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৬৩; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ৩৯০; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৭০

Sharable Link

দেওয়ান সিরাজী - চকবাজার, ঢাকা

৪০০০. Question

আল্লাহর রহমতে আমার ছোটখাটো একটা ব্যবসা আছে। প্রতি রমযানের শেষের দিকে আমি ব্যবসার বাৎসরিক হিসাব সম্পন্ন করি। কিন্তু রমযানের শুরু থেকে যাকাত দেওয়া শুরু করে দেই। বছর ঈদের আগের দিন হিসাব শেষে দেখলাম, আমার যে পরিমাণ যাকাত ওয়াজিব হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি আদায় করা হয়েছে।

আমি জানতে চাই, যাকাত হিসেবে অতিরিক্ত যে অংশ আমি আদায় করেছি তা কি আমি আগামী বছরের যাকাত হিসেবে গণ্য করতে পারব?

 


Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে  বছর যে পরিমাণ যাকাত ফরয ছিল তার অতিরিক্ত যা যাকাত হিসেবে দিয়েছেনতা আপনি আগামী বছরের যাকাতের মধ্যে গণ্য করতে পারবেন।

-কিতাবুত তাজনীস ২/৩৩১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭৬; আলবাহরুর রায়েক ২/২৫২; রদ্দুল মুহতার ২/২৯২

Sharable Link

আবু মুআয - মোমেনশাহী

৪০০১. Question

একদিন নফল তাওয়াফ করার পর তাড়াহুড়োর কারণে তাওয়াফের দুই রাকাত ওয়াজিব নামায পড়া হয়নি। মক্কায় থাকা অবস্থায় আর নামাযের কথা স্মরণ হয়নি। পরবর্তীতে দেশে আসার পর স্মরণ হয়। এখন কি নামাযের কাযা আদায় করতে হবে? আর কারণে কোনো জরিমানা বা কাফফারা দিতে হবে কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।

 


Answer

তাওয়াফের পর দুই রাকাত নামায পড়া ওয়াজিব। মসজিদে হারামে কিংবা হেরেমের এলাকায়পড়া মুস্তাহাব। কোনো কারণে হেরেমের এলাকায় পড়তে না পারলে অন্যত্র হলেও পড়ে নিতে হবে।তাই আপনি দেশেই  দুই রাকাত নামায পড়ে নিতে পারবেন।  কারণে কোনো জরিমানা দিতেহবে না।

আতা রাহথেকে বর্ণিততিনি বলেন,

عَنْ عَطَاءٍ ؛ فِي رَجُلٍ طَافَ بِالْبَيْتِ وَنَسِيَ أَنْ يُصَلِّيَ الرَّكْعَتَيْنِ حَتَّى مَضَى ، قَالَ : يُصَلِّيهِمَا إِذَا ذَكَرَ ، وَلَيْسَ عَلَيْهِ شَيْءٌ.

যে ব্যক্তি বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করার পর (তাওয়াফেরদুই রাকাত নামাযের কথা ভুলে গিয়ে চলেযায় সে পরবর্তীতে স্মরণ হওয়ামাত্র  দুই রাকাত নামায পড়ে নিবে। আর  কারণে তার উপরকোনো জরিমানা আসবে না।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১৪৭৭৯; গুনইয়াতুন নাসিক ১১১; মানাসিক, মোল্লা আলী কারী ১৫৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৯২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৪৯৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২৬

Sharable Link

মুহাম্মাদ আল আমিন - বাকেরগঞ্জ, বরিশাল

৪০০২. Question

আমাদের কাফেলার কয়েকজন মুযদালিফা থেকে মিনায় না গিয়ে সরাসরি মক্কায় চলে গেছে। মক্কায় গিয়ে তাওয়াফে যিয়ারত করেছে। অথচ তারা কংকর মারেনি, হালালও হয়নি। কারণে তাদের কি দম দিতে হবে? তাদের তাওয়াফে যিয়ারত কি আদায় হয়েছে?

 


Answer

হাঁতাদের তাওয়াফে যিয়ারত আদায় হয়েছে। তবে কংকরকুরবানী  হলক করার আগেতাওয়াফ করার কারণে মাকরূহ হয়েছে। সুন্নত হলমুযদালিফা থেকে এসে আগে কংকর মারাএরপর কুরবানী করে হলক করে তাওয়াফে যিয়ারত করা। 

-মানাসিক, মোল্লা আলি আলকারি পৃ. ২৩৩; গুনয়াতুন নাসিক পৃ. ১৭৮; রদ্দুল মুহতার ২/৫১৭

Sharable Link