মুহাম্মাদ শাহাদাত হুসাইন - ২১০-২১১ নবাবপুর রোড, ঢাকা

২৭৫২. Question

আমাদের এলাকার কিছু লোক উসীলা ধরে দুআ করাকে জরুরি মনে করে। তারা মনে করে, উসীলা ছাড়া আল্লাহ তাআলা গুনাহগারদের দুআ কবুল করেন না, গুনাহ মাফ করেন না। এ ধারণা কি ঠিক?

যদি ঠিক না হয় তাহলে কিছু আয়াত ও হাদীসের সরাসরি অনুবাদ উদ্ধৃতিসহ জানালে কৃতজ্ঞ হব।

 

 

 

Answer

প্রশ্নোক্ত ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। কুরআন কারীমের অনেক আয়াত এবং বহু হাদীস থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, আল্লাহ তাআলা কোনো প্রকার উসীলা ছাড়াই সরাসরি গুনাহগার বান্দার দুআ কবুল করেন এবং উসীলা ছাড়া গুনাহগারদের তাওবাও কবুল করেন ও গুনাহসমূহ মাফ করে দেন। এ সম্পর্কে কিছু আয়াত ও হাদীস নিম্নে পেশ করা হল-আল্লাহ  তাআলা কুরআন মজীদে বলেছেন, (তরজমা) হে নবী! আমার বান্দারা আমার সম্পর্কে আপনার কাছে জিজ্ঞাসা করে তখন আপনি তাদেরকে বলুন, আমি তো তাদের নিকটেই আছি। যখনই কোনো আহবানকারী আমাকে ডাকে তখনই আমি তার ডাকে সাড়া দিয়ে থাকি।-সূরা বাকারা : ১৮৬

অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, (তরজমা) হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর জুলুম করেছ, তোমরা আমার রহমত থেকে নিরাশ  হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিবেন।-সূরা যুমার : ৫৩

আবু যর গিফারী রা. কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে কুদসীতে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, হে আমার বান্দাগণ! তোমরা দিন রাত গুনাহ কর আর আমি সকল গুনাহ মাফ করি। তাই তোমরা আমার কাছে ক্ষমা চাও আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করব।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২৫৭৭

অন্য বর্ণনায় এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে সম্বোধন করে বলেছেন, হে যুবক! তুমি যদি কোনো কিছু চাও, তবে আল্লাহর নিকট চাইবে। আর যদি সাহায্য প্রার্থনা কর তবে আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাইবে ...।-জামে তিরমিযী, হাদীস : ২৫১৬

উপরোল্লেখিত আয়াত ও হাদীসসমূহ থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ তাআলা গুনাহগারদের তাওবা, ইস্তিগফার ও দুআ কোনো প্রকার উসিলা ছাড়াই সরাসরি কবুল করেন।

অবশ্য কেউ যদি দুআ কবুল হওয়ার জন্য উসীলাকে জরুরি মনে না করে তাহলে উসীলার কোনো কোনো প্রকার কিছু শর্তের সাথে বৈধ আছে। 

(বিস্তারিত জানার জন্য দেখা যেতে পারে-‘তাসাওউফ তত্ত্ব ও বিশ্লেষণ’, পৃ.: ১১৪-১১৫)-আলমওসূআতুল ফিকহিয়্যাহ ১৪/১৫১; তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম ৫/৬২৩-৬২৫

Sharable Link

মুহাম্মাদ বজলু খান - বাড্ডা, ঢাকা

২৭৫৩. Question

গত কয়েক দিন আগে মায়ের অসুস্থতার সংবাদ পেয়ে বাড়িতে যাই। দিনটি ছিল শুক্রবার। জুমআর নামাযের সময় হয়ে যাওয়ার কারণে দ্রুত মসজিদে চলে যাই। মসজিদে গিয়ে দেখি অযুখানায় পানি নেই। আশপাশেও পানি পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে জুমআর নামায শুরু হয়ে গেছে। তখন আমি অযুর পানির জন্য একটু দূরে চলে যাই। অযু শেষ করে এসে দেখি, নামায শেষ হয়ে গেছে। আমার প্রশ্ন হল, তখন কি আমার জন্য তায়াম্মুম করে জুমআর নামাযে শরিক হওয়া বৈধ ছিল?

 

Answer

অযু করার কারণে জুমআ ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা হলেও তায়াম্মুম করা জায়েয নয়। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি অযু করে সঠিক কাজই করেছেন। এমন ক্ষেত্রে অযু করে এসে জুমআর জামাত পাওয়া গেলে জামাতে শরিক হয়ে যাবে। জামাত না পেলে যোহর আদায় করতে হবে।

-হেদায়া ১/৫৪-৫৫; আলমুহীতুল বুরহানী ১/৩১৭; আদ্দুররুল মুখতার ১/২৪৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩১

Sharable Link

আহমদ আলী - হোসেনপুর, কিশোরগঞ্জ

২৭৫৪. Question

আমি যোহরের নামাযের শেষ বৈঠকে তাশাহুদ পড়ে ভুলে দাঁড়িয়ে যাই এবং পঞ্চম রাকাত পড়ার পর আমার স্মরণ হয়। তারপর আমি আরো এক রাকাত বাড়িয়ে ষষ্ঠ রাকাত পূর্ণ করি এবং সাহু সিজদা আদায় করি। এখন আমার জানার বিষয় হল, আমার যোহরের নামায আদায় হয়েছে কি?

 

Answer

হ্যাঁ, প্রশ্নোক্ত অবস্থায় যোহর নামায আদায় হয়ে গেছে। চার রাকাতের পর তাশাহহুদ পরিমাণ বসার কারণে প্রথম চার রাকাত যোহরের ফরয হিসেবে আদায় হয়েছে। আর বাকি দুই রাকাত নফল হিসেবে আদায় হয়েছে।

-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৪০৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/৮৭; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪২৬; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩১৭; শরহুল মুনইয়াহ ৪৬৩

Sharable Link

মুহাম্মাদ দিদারুল আলম - চাটখিল, নোয়াখালি

২৭৫৫. Question

ক) এ বিভাগের মাধ্যমে আমরা জেনেছি, খতম তারাবীহর বিনিময়ে টাকা দেয়া-নেয়া নাজায়েয। কোনো কোনো মসজিদে এশার নামায ও বিতর নামায আদায় করার শর্ত রেখে হাফেয সাহেবগণকে টাকা দেওয়া হয় এবং এ পদ্ধতিকে জায়েয মনে করা হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, এভাবে হাদিয়া/টাকা দেওয়া জায়েয হবে কি? আর যে সমস্ত মসজিদে সূরা তারাবীহ হয় সে সমস্ত মসজিদেও তারাবীর হাদিয়া স্বরূপ টাকা পয়সা কালেকশন করা এবং টাকা দেওয়া হলে তা কি জায়েয হবে?

খ) মসজিদে ঘড়ি থাকলে এবং সময়সূচিতে জামাতের সময় নির্ধারিত থাকলে ঐ সময় অনুযায়ী নামায না পড়িয়ে ইমাম ২/৩ মিনিট দেরিতে নামায শুরু করার অথবা ইমামের জন্য ২/৫ মিনিট অপেক্ষা করার সুযোগ কি শরীয়তে আছে? একজন ইমাম সাহেব বলেছেন, ইমামের জন্য ৩/৫ মিনিট অপেক্ষা করার নিয়ম রয়েছে। কথাটি কি ঠিক?

 

 

Answer

ক) তারাবীহর হাফেয সাহেবদেরকে দিয়ে ইশা ও বিতর পড়িয়ে হাদিয়া দেওয়া-নেওয়া লেনদেনের একটি অপকৌশলমাত্র। একজন লোক শুধু এক ওয়াক্ত নামায পড়ালে তাকে এতগুলো টাকা বেতন দেওয়া হয় না-এ কথা সবাই বুঝে। এ ধরনের হীলা-বাহানার পথ পরিহার করাই কর্তব্য।-ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/৩২২; ইমদাদুল আহকাম ১/৬৬৪

আর আমাদের মতে সূরা তারাবীহর ইমামতির ক্ষেত্রেও একই বিধান প্রযোজ্য। সুতরাং এর জন্যও পৃথক কোনো হাদিয়া দেওয়া-নেওয়া যাবে না।

খ) জামাতের নির্ধারিত সময়ের রেয়ায়েত করা ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মুসল্লী সকলের দায়িত্ব। বিশেষ কোনো ওজর ছাড়া এর ব্যত্যয় ঘটানো এক ধরনের দায়িত্বে অবহেলার শামিল। তাই এ ব্যাপারে সকলের সচেতন থাকা উচিত। অবশ্য কোনো ইমাম সাহেব কখনো একটু বিলম্বে আসলে অথবা দেরিতে নামায শুরু করলে মুসল্লীগণের উচিত তা সহজে মেনে নেওয়া। এ নিয়ে ইমামের সাথে তর্কে লিপ্ত হওয়া মুসল্লীর জন্য অনাধিকার চর্চা। 

Sharable Link

খোরশেদ হাসান - পুরানা পল্টন, ঢাকা

২৭৫৬. Question

আমার ছোট মামার ছেলে গত বছর হেফয শেষ করেছে। বর্তমানে তার বয়স এগার বছর। গত রমযানে সে গ্রামের মসজিদে তারাবীহ পড়িয়েছে। সে বাড়িতে আসলে তাকে কেউ কেউ ওয়াক্তিয়া নামাযেও ইমামতি করতে বলে। কিন্তু আমি বাধা দেই। তাকে ইমাম বানানো যাবে কি? জানিয়ে বাধিত করবেন।

 

Answer

নাবালেগের ইমামতি সহীহ নয়। তারাবীহ এবং ওয়াক্তিয়া কোনো নামাযেই নাবালেগকে ইমাম বানানো যাবে না। হযরত আতা রাহ. এবং ওমর ইবনে আবদুল আযীয রাহ. থেকে বর্ণিত আছে যে, অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলে ইমামতি করবে না। ফরয নামাযেও নয় এবং অন্য নামাযেও নয়।

-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৩৫২৪; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৫৯; হেদায়া ১/১২৪; রদ্দুল মুহতার ১/৫৭৭; আততাজরীদ ২/৮৫৮

Sharable Link

মুহাম্মাদ ওমর ফারূক - শরীয়তপুর

২৭৫৭. Question

অনেকে বলে, মৃত ব্যক্তিকে দাফনের পর কিছু সময় ধরে মৃতের জন্য দুআ ও ইস্তিগফার করতে হয়। আবার কেউ কেউ বলে, একটি উট জবাই করে তার গোশত কেটেকুটে বণ্টন করতে যতটুকু সময় লাগে কবরের পাশে ততটুকু সময় অপেক্ষা করতে হয়। সঠিক বিষয় জানিয়ে বাধিত করবেন।

 

Answer

প্রশ্নের উভয় বক্তব্যই সঠিক। দাফনের পর কবরের পাশে কিছু সময় পর্যন্ত মৃতের জন্য দুআ ও ইস্তিগফার করা মুস্তাহাব। এটি হাদীস দ্বারাই প্রমাণিত।

উসমান ইবনে আফফান রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাইয়্যেতকে দাফন করার পর সেখানে অবস্থান করতেন এবং বলতেন, তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর। এবং তার জন্য দৃঢ়তার দুআ কর। (অর্থাৎ আল্লাহ যেন তাকে ঈমানের উপর অটল রাখেন এবং সকল প্রশ্নের উত্তর দানের তাওফীক দান করেন।) কেননা এখনই সে জিজ্ঞাসিত হবে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৩২১৩)

আর উট জবাই করে গোশত বণ্টন করা পরিমাণ সময় অবস্থান করার কথা আমর ইবনুল আস রা. থেকে বর্ণিত আছে। সহীহ মুসলিমে এসেছে, আবদুর রহমান ইবনে শামাসাহ আলমাহরী বলেন, আমর ইবনুল আস রা. যখন মুমূর্ষু অবস্থায়  তখন আমরা উপস্থিত ছিলাম। তিনি আমাদের বললেন, আমি মৃত্যুবরণ করলে কোনো বিলাপকারিনী এবং আগুন যেন আমার সঙ্গী না হয়। অতঃপর তোমরা যখন আমাকে দাফন করবে তখন কবরে পর্যাপ্ত মাটি দিবে। এরপর একটি উট জবাই করে তার গোশত বণ্টন করতে যতটুকু সময় লাগে ততটুকু সময় আমার কবরের পাশে (দুআ, তিলাওয়াত ও

ইস্তিগফার করার জন্য) অপেক্ষা করবে। যেন তোমাদের (তিলাওয়াত ও ইস্তিগফার-এর) মাধ্যমে আমার নিঃসঙ্গতা দূর হয় এবং আমার রবের ফেরেশতাদের জবাব দিতে পারি।

 

-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১/৭৬; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৩২১৩; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৩৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৬; ফাতহুল মুলহিম ১/২৭৩

Sharable Link

মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম - বরিশাল

২৭৫৮. Question

এক ব্যক্তি সৌদি আরব থাকে। তার পরিবার-পরিজন সকলে দেশেই থাকে। ঈদুল ফিতরের সময় সে তার পিতাকে বলে দিয়েছে, তিনি যেন দেশেই তার পক্ষ থেকে সদকায়ে ফিতর আদায় করে দেন।

এখন প্রশ্ন হল, দেশে যদি তার পক্ষ থেকে সদকায়ে ফিতর আদায় করা হয় তাহলে কোন দেশের মূল্য ধরে তা আদায় করবে? সৌদি আরবের মূল্য হিসেবে, না এদেশের মূল্য হিসেবে? জানালে কৃতজ্ঞ হব।

 

Answer

সৌদি আরবে অবস্থানরত ঐ ব্যক্তির পক্ষ থেকে দেশে সদকায়ে ফিতর আদায় করতে চাইলে সৌদি আরবের হিসেবে সদকায়ে ফিতর আদায় করতে হবে। যেমন এ বছর সৌদি আরবে ন্যূনতম সদকায়ে ফিতরের মূল্য যদি হয়ে থাকে আট শত টাকা, তাহলে সৌদি প্রবাসীর পক্ষ থেকে এ দেশে সদকায়ে ফিতর আট শত টাকা করতে হবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ২/২০৮; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৮৭; আলবাহরুর রায়েক ২/২৫০; রদ্দুল মুহতার ২/৩৫৫

Sharable Link

সাঈদুর রহমান - সিলেট

২৭৫৯. Question

শাওয়াল মাসের ছয় রোযার নিয়ম কী? এগুলো একসাথে লাগাতার ছয় দিনে রাখা হবে, না মাঝে বিরতি দিয়ে রাখা যাবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

 

Answer

শাওয়ালের ছয় রোযা একত্রে ধারাবাহিকভাবেও রাখা যায়, আবার মাঝে বিরতি দিয়েও রাখা যায়। যেভাবেই রাখা হোক নির্ধারিত ফযীলত পাওয়া যাবে।

-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১১৬৪; মুসনাদে আহমদ ৩৭/৯৪; লাতায়েফুল মাআরিফ ৪৮৯; বাদায়েউস সানায়ে ২/২১৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৬২; ফাতহুল মুলহিম ৩/১৮৭; আলইনসাফ ৩/৩৪৩

Sharable Link

মুহাম্মাদ জহুরুল ইসলাম - কলাগাছি, চুয়াডাঙ্গা

২৭৬০. Question

 

আমি এবং আমার স্ত্রী দুজনেই সরকারী কর্মচারী ছিলাম। ১৯৯৭ সালে আমি অবসরপ্রাপ্ত হই। আমার উপর হজ্ব ফরয। ২০০০ সালে আমি হজ্বের প্রস্ত্ততি গ্রহণ করি। কিন্তু ঐ সময় আমার স্ত্রীর উপর হজ্ব ফরয ছিল না। যে সময় আমার স্ত্রীর উপর হজ্ব ফরয হবে তখন সে কোনো মাহরাম না-ও পেতে পারে -এ আশঙ্কা করে আমি আমার টাকা দিয়ে আমার সাথে হজ্ব করিয়ে নিয়ে আসি। এবং তার হজ্ব করার খরচের টাকার দাবি আমি ছেড়ে দিয়েছি। পরবর্তীতে আমার স্ত্রীর নিকট হজ্ব ফরয হওয়ার মতো অর্থকড়ি জমা হয়। এখন আমি জানতে চাই, আমার সাথে আমার স্ত্রীর আদায় করা হজ্বটি কি ফরয হজ্ব হয়েছে? নাকি স্ত্রীকে পুনরায় ফরয হজ্ব আদায় করতে হবে।

 

 

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ হজ্ব দ্বারাই আপনার স্ত্রীর ফরয হজ্ব আদায় হয়ে গেছে। অতএব এখন তাকে পুনরায় ফরয হজ্ব আদায় করতে হবে না।

-মানাসিক, পৃ. ৪১; গুনইয়াতুন নাসিক, পৃ. ১৯; রদ্দুল মুহতার ২/৬০৪

Sharable Link

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক - যাত্রাবাড়ি, ঢাকা

২৭৬১. Question

 

আমরা স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলে হজ্ব করতে গিয়েছি। ৮ যিলহজ্ব আমাদের মিনায় যাওয়া হয়নি। মক্কা থেকে সরাসরি আরাফা গিয়েছি। কিন্তু হজ্বের ইহরামের পর উকূফে আরাফার আগে আমাদের মাঝে স্বামী-স্ত্রীসূলভ আচরণ হয়ে গেছে। তবে এর পরের সকল আমল স্বাভাবিক নিয়মেই সম্পাদন করেছি। এখন জানতে চাই, এ অবস্থায় আমাদের কৃত হজ্বটি কি যথাযথভাবে আদায় হয়েছে? যদি না হয়ে থাকে তাহলে আমাদের করণীয় কী?

 

 

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ভুলের কারণে আপনাদের হজ্ব নষ্ট হয়ে গেছে। অবশ্য এরপরও হজ্বের বাকি কাজ সম্পন্ন করা নিয়মসম্মতই হয়েছে। পরবর্তীতে আপনাদেরকে ঐ হজ্ব কাযা করে নিতে হবে। আর ঐ ভুলের কারণে স্বামী-স্ত্রী উভয়কে একটি করে জরিমানা-দম ছাগল/দুম্বা হেরেমের এলাকায় জবাই করতে হবে। এবং কৃত অন্যায়ের কারণে আল্লাহ তাআলার দরবারে তওবা-ইস্তিগফারও করতে হবে।

-সুনানে বায়হাকী ৫/১৬৭; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১৩২৪৪, ১৩২৫৬; কিতাবুল আছল ২/৪৭১; রদ্দুল মুহতার ২/৫৫৮; মানাসিক ৩৩৭; বাদায়েউস সানায়ে ২/৪৬২

Sharable Link

মুহাম্মাদ হাসিবুল ইসলাম - মেহেরপুর

২৭৬২. Question

আমার দাদির ১০ কাঠা জমি আছে, যা তিনি তার পিতা থেকে পেয়েছেন। তিনি গত বছর ঐ দশ কাঠা জমি মসজিদে দেওয়ার জন্য বড় চাচাকে ওসিয়ত করেছিলেন। এর কিছুদিন পর ছোট চাচা ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে তার চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন হয়। দাদি এখনো জীবিত। তাই তিনি উক্ত জমিটা বিক্রি করে ছোট চাচার চিকিৎসার জন্য দিতে চাচ্ছেন। তিনি ঐ জমিটা বিক্রি করতে পারবেন কি?

 

Answer

অসিয়ত কার্যকর হয় মৃত্যুর পর। তাই অসিয়তকারী চাইলে জীবদ্দশায় তা প্রত্যাহার করতে পারে। সুতরাং প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী আপনার দাদি চাইলে ঐ জমিটি বিক্রি করে দিতে পারবেন। কেননা তার অসিয়ত এখনো কার্যকর হয়নি।

অবশ্য তার অন্য সম্পদ থাকলে মসজিদের জন্য কৃত অসিয়তটি বাতিল না করাই বাঞ্ছনীয় হবে।

-আলমুহীতুল বুরহানী ২২/৪২৮; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৬৫৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২০/৩

Sharable Link

যিকরুল হক - দিনাজপুর

২৭৬৩. Question

আমার এক প্রতিবেশী ফল বিক্রেতা। সে আমার কাছ থেকে তার ব্যবসার জন্য ৮০০০/- টাকা ঋণ নিয়েছে। এখন তার থেকে ফল কিনলে সে দাম কিছুটা কম রাখে। ঋণ নেওয়ার পর সে দু একবার হাদিয়া স্বরূপ আমার বাসায় ফলও পাঠিয়েছে। কিন্তু ইতিপূর্বে সে কখনো এমনটি করেনি। প্রশ্ন  হল, আমার জন্য তা গ্রহণ করা বৈধ হবে কি?

উল্লেখ্য, ঋণ প্রদানের সময় তার সাথে  অতিরিক্ত কিছু দেওয়ার কথা হয়নি।

 

Answer

ঋণ প্রদানের আগে আপনাদের মাঝে যদি হাদিয়া আদান-প্রদানের সম্পর্ক না থাকে তাহলে ঋণ দেওয়ার পর তার পাঠানো হাদিয়া গ্রহণ করা যাবে না। তদ্রূপ তার থেকে ফল কিনলে ন্যায্য মূল্য দিয়েই কিনতে হবে। কেননা এক্ষেত্রে এই ছাড় এবং হাদিয়া ঋণের কারণে হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে যদি কারো সাথে আগে থেকেই হাদিয়া দেওয়া-নেওয়ার সম্পর্ক থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে তার হাদিয়া ও ছাড় গ্রহণ করতে অসুবিধা নেই।

আবু বুরদা রাহ. বর্ণনা করেন, আমি মদীনায় এসে আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রা.-এর সাথে সাক্ষাত করলাম। তখন আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রা. বললেন, তুমি যদি আমার ঘরে একটু তাশরীফ আনতে, আমি তোমাকে ছাতু এবং খেজুর দ্বারা আপ্যায়ন করতাম। তিনি আরো বলেন, কারো কাছে যদি তোমার কোনো পাওনা থাকে এবং সে তোমাকে কিছু খড়, যব কিংবা ঘাস হাদিয়া দেয় তাহলে তুমি তা গ্রহণ করবে না। কারণ এটি সুদের অন্তর্ভুক্ত।

-সহীহ বুখারী ১/৫৩৮; উমদাতুল কারী ১৬/২৭৭; ফাতহুল বারী ৭/১৬৩; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদীস : ১৪৬৪৯; আলমুহীতুল বুরহানী ১০/৩৫১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৯/৩৯০; আলবাহরুর রায়েক ৬/১২৩

Sharable Link

মুহাম্মাদ নজরুল ইসলাম - সিরাজগঞ্জ

২৭৬৪. Question

আমি একজন সাধারণ মানুষ। সরকারি বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সাথে সম্পর্ক থাকার কারণে তাদেরকে মাধ্যম বানিয়ে আমি বিভিন্নজনকে চাকরির ব্যবস্থা করে দিতে পারি। এখন প্রশ্ন হল, কোনো ব্যক্তিকে চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়ার বিনিময়ে তার থেকে টাকা গ্রহণ করা আমার জন্য বৈধ হবে কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।

 

Answer

আপনার প্রশ্নের বিবরণ শুনে মনে হচ্ছে, আপনি নিজে সুপারিশ করে বা কারো মাধ্যমে সুপারিশ করিয়ে তাদের চাকরির ব্যবস্থা করবেন। আর সুপারিশ শরীয়তের দৃষ্টিতে বিনিময়যোগ্য নয়। সুতরাং এ কাজের জন্য আপনি কোনো টাকা গ্রহণ করতে পারবেন না।

-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১৫৩৫; বযলুল মাজহূদ ১৫/২২২; আল মওসূআতুল ফিকহিয়্যাহ, কুয়েত ২৬/১৩৪

Sharable Link

মাসউদ - মহেশখালী

২৭৬৫. Question

ফেরিওয়ালারা সিলভারের পুরাতন হাড়িপাতিলের বিনিময়ে সিলভারের নতুন হাড়িপাতিল বিক্রি করে। নতুন সিলভারের দাম যদি হয় ১৫০/- টাকা তবে পুরাতন সিলভারের দাম হয় ১০০/- টাকা বা তার কম। সুতরাং এক কেজি ওজনের হাড়িপাতিল নিতে হলে দেড় কেজি পরিমাণ পুরাতন সিলভার দিতে হয়। প্রশ্ন হল, এক কেজি নতুন সিলভার দেড় কেজি পুরাতন সিলভারের বিনিময়ে ক্রয় করা বৈধ কি? না হলে বৈধ উপায়ে লেনদেনের পদ্ধতি কী?

 

Answer

সিলভারের পুরাতন হাড়িপাতিল দিয়ে সিলভারের নতুন হাড়িপাতিল নিতে হলে উভয় দিকে ওজনে সমান সমান করে লেনদেন করতে হবে। এক্ষেত্রে ওজনে কমবেশ করা সুদের অন্তর্ভুক্ত। তাই পুরাতন হাড়িপাতিল বদলাতে চাইলে পুরাতনগুলি ফেরিওয়ালার কাছে টাকার বিনিময়ে বিক্রি করবে। আর সিলভারের নতুন হাড়িপাতিলও আলাদাভাবে টাকার বিনিময়ে ক্রয় করবে।

-তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ১/৫৭৮; তাফসীরে কুরতুবী ৩/২২৮; আদ্দুররুল মুখতার ৫/১৭২; হেদায়া ৩/৭৮-৭৯; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৪/৪৫৫

Sharable Link

মুহাম্মাদ হেলাল - নিউইয়র্ক, আমেরিকা

২৭৬৬. Question

আমি একজন আমেরিকা প্রবাসী। দীর্ঘদিন যাবত সপরিবারে এখানে আছি। কুরবানী দেশেই করে থাকি। এর একটা কারণ হল আমরা জানি যে, কুরবানীর গোশত তিন ভাগে ভাগ করতে হয়। এক ভাগ নিজের, এক ভাগ আত্মীয়স্বজনের আর এক ভাগ মিসকিনদের। আর মিসকিনদের অংশ কুরবানীদাতারা কেউ খেতে পারবে না। যদি খেতে হয় তাহলে ঐ পরিমাণ গোশতের মূল্য সদকা করে দিতে হবে।

উল্লেখ্য, আমাদের এখানে গরীবের অংশ গ্রহণ করার মতো কেউ নেই, তাই আমি এখানে কুরবানী না করে দেশে কুরবানী করে থাকি।

একজন আলেমের কাছে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের কুরবানী তিন ভাগে ভাগ করতেন। আবার আরেক হাদীসে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা যা ইচ্ছা দান কর, যা ইচ্ছা নিজেরা খাও। আমার জানার বিষয় হল-

ক) তিন ভাগ করাটা কি বাধ্যতামূলক?

খ) যদি বাধ্যতামূলক হয় তাহলে মিসকিনদের অংশের হুকুম কী?

গ) যদি বাধ্যতামূলক না হয় তাহলে কুরবানীদাতা কি মিসকীনদের অংশ খেতে পারবেন?

ঘ) আর উপরে উল্লেখিত উভয় হাদীসই কি সহীহ? সহীহ হলে দুই হাদীসের মাঝে সমন্বয় হবে কীভাবে?

আমার মতো এখানের অনেকেরই একই প্রশ্ন। দলীলসহ জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।

 

Answer

কুরবানীর গোশত তিন ভাগ করে একভাগ নিজের জন্য রাখা, এক ভাগ আত্মীয়-স্বজনকে আর এক ভাগ ফকীর মিসকীনকে দেওয়া মুস্তাহাব। তবে এভাবে তিন ভাগে বণ্টন করা জরুরি নয়। কেউ পুরো গোশত নিজের জন্য রেখে দিলেও তার কুরবানী আদায় হয়ে যাবে। তাই আপনি চাইলে যেখানে আছেন সেখানেই কুরবানী করতে পারেন। সেখানে গোশত দেওয়ার মতো কাউকে পাওয়া না গেলেও কোনো অসুবিধা হবে না।

আর প্রশ্নে যে দুটি হাদীসের কথা উল্লেখ করা হয়েছে উভয় হাদীসই নির্ভরযোগ্য সূত্রে বর্ণিত আছে। প্রথম হাদীসটি হল : হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কুরবানীর গোশত বণ্টন সম্পর্কে বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর গোশত তিন ভাগ করে একভাগ নিজ পরিবারের জন্য রাখতেন, এক ভাগ গরীব প্রতিবেশীকে দিতেন আর এক ভাগ অন্যান্য গরীব-মিসকীনকে দান করতেন।-আল ওযায়েফ, আবু মুসা আলআসবাহানী, মুগনী ইবনে কুদামা ১৩/৩৭৯-৩৮০

দ্বিতীয় হাদীসটি হল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা কুরবানীর গোশত যে পরিমাণ ইচ্ছা খাও, অন্যদেরকে খাওয়াও এবং যতটুকু ইচ্ছা জমা করে রাখ।-সুনানে তিরমিযী, হাদীস : ১৫১০

দ্বিতীয় হাদীস দ্বারা বোঝানো হয়েছে যে, কুরবানীর গোশত বণ্টনের বিষয়টি কুরবানীদাতার ইচ্ছাধীন। অন্যকে না দিলেও গুনাহ হবে না। আর প্রথম হাদীসে কুরবানীর গোশত বণ্টনের উত্তম পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে। তাই উভয় হাদীসের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই।

-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৯৭২; মুয়াত্তা, ইমাম মুহাম্মাদ পৃ. ২৮১-২৮২; হিদায়া ৪/৪৫০; উমদাতুল কারী ১০/৫৭-৫৮; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪; আলবাহরুর রায়েক ৮/১৭৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০০; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২৭-৩২৮

Sharable Link

মুহিববুর রহমান - নেত্রকোণা

২৭৬৭. Question

খতমে কুরআন, খতমে ইউনুস ইত্যাদি পড়ে টাকা-পয়সা আদানপ্রদান জায়েয আছে কি? মৃতের জন্য ঈসালে সওয়াব করে কিংবা বালা-মুসিবতের জন্য বা রোগমুক্তির জন্য খতম পড়ে বর্তমানে টাকাপয়সার যে লেনদেন করা হয় তার হুকুম কী? বিস্তারিত জানতে চাই।

 

Answer

ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে কুরআন মজীদ খতম করে বা অন্য কোনো দুআ-দরূদ পড়ে বিনিময়ে টাকা-পয়সা বা কোনো কিছু আদান-প্রদান করা নাজায়েয়।

সুতরাং বর্তমান সমাজে ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে দুআ দরূদ ও কুরআন খতম করিয়ে বিনিময়ে টাকা-পয়সা আদান-প্রদানের যে প্রথা কোনো কোনো জায়গায় চালু আছে তা নাজায়েয ও কু প্রথার

অন্তর্ভুক্ত। এ থেকে বিরত থাকা জরুরি।

হ্যাঁ, খতমে কুরআন, খতমে ইউনুস বা অন্য কোনো দুআ-দরূদের খতম যদি কেবলমাত্র দুনিয়াবী উদ্দেশ্যে করা হয় (যেমন, রোগমুক্তি, বিপদ-আপদ থেকে হেফাযত, ব্যবসা-বাণিজ্যে উন্নতি ইত্যাদি) তবে সেক্ষেত্রে বিনিময় দেওয়া-নেওয়া জায়েয। অবশ্য এক্ষেত্রেও বিনিময়ে কোনো কিছু না নেওয়াই শ্রেয়। আর কারো জন্য এভাবে খতম পড়াকে পেশা হিসাবে অবলম্বন করা কিছুতেই সমীচীন নয়।

 

প্রকাশ থাকে যে, মুসলমানদের কর্তব্য হল, অসুখ-বিসুখ, বিপদ-আপদ ও প্রয়োজনের মুহূর্তে নিজেই নফল নামায, দুআ, দরূদ ও ইস্তিগফার দ্বারা আল্লাহ তাআলার সাহায্য প্রার্থনা করা, নফল সদকা দেওয়া। প্রয়োজনে পরিবারের সদস্যদেরকেও দুআ করতে বলা। আলেম, বুযুর্গ ব্যক্তিদের থেকে দুআ চাওয়া। সর্বোপরি সবর ও তাকওয়ার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার রহমত কামনা করা।

 

এমনিভাবে মৃত আত্মীয়-স্বজনের ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে নিজেরাই কুরআন খতম ও দুআ-দরূদ পড়বে। দান-সদকা করবে। মূলত এসবই হল শরীয়তের দৃষ্টিতে উত্তম পন্থা।

আর ব্যবসা-বাণিজ্যে বরকতের জন্য সবচে বড় করণীয় হল, বৈধ পন্থায় ব্যবসা করা, মিথ্যা, ধোঁকা, ভেজাল, মাপে কম দেওয়া, সুদ ইত্যাদি সকল ধরনের হারাম কাজ ও পন্থা থেকে বেঁচে থাকা এবং সততা ও সত্যবাদিতার প্রতি যত্নবান হওয়া।

-ইলাউস সুনান ১৬/১৭৩; রদ্দুল মুহতার ৬/৫৬; তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ৪/৩১৮; বযলুল মাজহূদ ১৫/৮৪; মজমূআতু রাসাইলি ইবনে আবেদীন ১/১৫৬-১৫৭, ২৭৪

Sharable Link

হারুনুর রশীদ - যশোর

২৭৬৮. Question

 

আমাদের এলাকায় মাদরাসার জন্য একটি জমি ক্রয় করা হয়। তাতে এখনো মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। ভবিষ্যতে মাদরাসা করার পরিকল্পনা রয়েছে। এর পাশেই একটি মসজিদ আছে। মাদরাসার জমিতে যে সকল ফলমূল হয় তা বিক্রি করে এর মূল্য মসজিদের জন্য ব্যয় করা হয়। ঐ জমির ফলমূল যেমন কলা, পেঁপে ইত্যাদি মসজিদের ভেতরে নিয়ে বিক্রি করা হয়। এখন প্রশ্ন হল-ক) এভাবে মসজিদের ভিতরে নিয়ে এসে ক্রয়বিক্রয় করার কী বিধান?

খ) মাদরাসার জমিতে উৎপাদিত ফসলাদি মসজিদের কাজে লাগানো জায়েয কি না? জানালে উপকৃত হব। 

 

 

Answer

 

ক) মসজিদ ইবাদতের জন্য নির্ধারিত স্থান। মসজিদে বেচাকেনা করার ব্যাপারে হাদীসে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। আমর ইবনে শুআইব তার পিতা থেকে, তিনি তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে ক্রয়বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন।-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১০৭২ 

তাই কোনো অবস্থায় মসজিদের ভিতর মালামাল হাজির করে বেচাকেনা করা যাবে না। 

খ) মাদরাসার জমির ফসল মাদরাসার জন্যই ব্যয় করতে হবে। মসজিদের জন্য ব্যয় করা যাবে না। তাই সেখানে এখনো মাদরাসা প্রতিষ্ঠা না হলেও ঐ জমির আয় মাদরাসার জন্যই সংরক্ষণ করতে হবে।-জামে তিরমিযী, হাদীস : ৩২২; রদ্দুল মুহতার ২/৪৪৯; আলবাহরুর রায়েক ২/৩০৪; হেদায়া ২/৩১২; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৩৬০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৪৬৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৯/১৫৯; ফাতাওয়া রহীমিয়া ৯/৮৮

 

Sharable Link

আবদুল জববার - নওগাঁ

২৭৬৯. Question

আমাদের এলাকায় কয়েকদিন আগে একজন মহিলা মারা গেছেন। দূর-দূরান্ত থেকে তার আত্মীয়স্বজনরা জানাযায় শরিক হওয়ার জন্য এসেছিলেন। মৃতের পরিবার অনেক বড়। আত্মীয়-স্বজন অনেক বেশি। আর তারা সম্পদশালীও। আগত আত্মীয়দের খানা খাওয়ানোর জন্য ঐ মহিলার স্বামী একটি গরু জবাই করে খানার ব্যবস্থা করেন। আর অনেকেই এখন এভাবে আয়োজন করে খানার ব্যবস্থা করে থাকে। কিন্তু কেউ কেউ বলছেন, মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে ঐ দিন আগত আত্মীয়দের জন্য এভাবে খানার আয়োজন করাটা বেদআত। তাদের এ কথা কতটুকু সঠিক? কুরআন-হাদীসের আলোকে প্রমাণসহ জানালে কৃতজ্ঞ হব।

 

Answer

জানাযা ও দাফনের উদ্দেশ্যে দূর থেকে আগত আত্মীয়স্বজনের জন্য মৃত ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে খানাপিনার ব্যবস্থা করা নাজায়েয নয়। তবে এ ব্যবস্থা গ্রহণ শুধু এ ধরনের আত্মীয়স্বজনের প্রয়োজনে মেহমানদারির উদ্দেশ্যেই হতে হবে। মৃত্যু উপলক্ষে যেয়াফতের উদ্দেশ্যে না হতে হবে। কেননা কারো মৃত্যু উপলক্ষে যেয়াফতের উদ্দেশ্যে খানাপিনার আয়োজন করা জায়েয নয়। হাদীস শরীফে এসেছে, জারীর ইবনে আবদুল্লাহ রা. বলেন, আমরা মৃতের বাড়িতে লোক সমাগম হওয়া এবং সমবেত লোকদের উদ্দেশ্যে মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে খাবার আয়োজন করাকে ‘নিয়াহা’ (জাহেলীযুগের নিষিদ্ধ শোক-বিলাপ) গণ্য করতাম।-সুনানে ইবনে মাজাহ ১/২৫২

প্রকাশ থাকে যে, দূর থেকে আগত আত্মীয়স্বজনের মেহমানদারির প্রয়োজনে খানাপিনার ব্যবস্থা করা যদিও জায়েয তথাপি এ সময় মৃতের পরিবার যেহেতু শোকাহত থাকে তাই মেহমানদারির দায়িত্ব তাদের উপর চাপানো উচিত নয়। বরং জানাযা ও দাফন শেষে দীর্ঘ সময় ঐ বাড়িতে অবস্থান না করাই বাঞ্ছনীয়। এ ধরনের ক্ষেত্রে আগত আত্মীয়স্বজনদের উচিত নিজ উদ্যোগে মৃতের শোকসন্তপ্ত পরিবারের জন্য সাধ্য অনুযায়ী খানাপিনার এন্তেজাম করা। যেন তারা নিজেদের খানা প্রস্ত্তত করার ঝামেলা থেকেও বাঁচতে পারে।

-সুনানে ইবনে মাজাহ ১/৫৫২; ফাতহুল কাদীর ২/১০২; আলমুগনী ইবনে কুদামা ৩/৪৯৬; ইলাউস সুনান ৮/৩৩০; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাদ্দুর ১/৩৮৩

Sharable Link