মাওলানা মুহিব্বুর রহমান - মানিকগঞ্জ

১৮৪৮. Question

আমার এক বন্ধু বিভিন্ন জিনিস আলু, পেয়াজ, তরকারির পাইকারি ব্যবসা করে। তাকে আমি কয়েক লক্ষ টাকা এই কথা বলে দিয়েছি যে, এতে যা লাভ হবে তা থেকে তুমি কিছু নিবে, আমাকে কিছু দিবে। সে আমাকে লভ্যাংশ থেকে কোনো মাসে দুই হাজার, কোনো মাসে সাতাইশ শ’, আবার কোনো মাসে একেক রকম অংকের টাকা সে আমাকে দিয়ে থাকে। জানার বিষয় এই যে, সে আমাকে মাসে মাসে যে টাকাগুলো দিয়েছে তা কি সুদ হবে?

Answer

এক পক্ষের পুঁজি আর অন্যের শ্রম এই কারবারের একটি মূলনীতি হল পুঁজিদাতা এবং ব্যবসায়ী উভয়ের লভ্যাংশ শতকরা হারে নির্ধারিত হতে হবে। যেমন লাভের ৬০% পাবে বিনিয়োগকারী আর ৪০% পাবে ব্যবসায়ী। অথবা কম বেশি কোনো অংশ। যেহেতু প্রশ্নোক্ত চুক্তিতে শতকরা হার নির্ধারণ করা হয়নি; বরং লাভের কিছু অংশ দেওয়ার চুক্তি হয়েছে তাই এক্ষেত্রে স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী আপনাদের মাঝে লাভ অর্ধাঅর্ধি হারে ভাগ করতে হবে। অতএব আপনাকে লাভ হিসাবে যা দেওয়া হয়েছে তা যদি অর্জিত মুনাফার ৫০% হয়ে থাকে তবে তা নেওয়া বৈধ হয়েছে। আর যদি কম হয়ে থাকে তবে বাকি অংশ আপনি নিয়ে নিতে পারবেন। আর ৫০% এর বেশি দিয়ে থাকলে আপনার ফেরত দিতে হবে। উল্লেখ্য, এ ধরনের ব্যবসার পুরো হিসাব সংরক্ষণ করা জরুরি। যেন লভ্যাংশের বণ্টন যথাযথ হয়।

বাদায়েউস সানায়ে ৫/১১১; মাজাল্লাহ, মাদ্দাহ : ১৪১১; শরহুল মাজাল্লা, খালিদ আতাসী ৪/৩৩৩; মাবসূত সারাখসী ২২/২৩; আলবাহরুর রায়েক ৭/২৬৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/২৮৫; রদ্দুল মুহতার ৫/৬৪৮

Sharable Link

মুহাম্মাদ জহিরুল ইসলাম বাবু - শান্তিনগর, ঢাকা

১৮৪৯. Question

আমরা তিন বন্ধু হলুদ, মরিচসহ বিভিন্ন মশলার ব্যবসা করার উদ্দেশ্যে ৫ লক্ষ টাকা করে ১৫ লক্ষ টাকা জমা করি। আমাদের চুক্তি হয় যে, যা লাভ হবে তিন ভাগ করে তিন জন নিব। পরবর্তীতে সমস্যা দেখা দেয় যে, তারা দু’জন চাকরি করার কারণে শ্রম দিতে প্রস্তুত নয় তাই তারা আমাকে বলেছে যে, তুমি ৮-১০ ঘণ্টা শ্রম দেবে। এ বাবদ তোমাকে লভ্যাংশ থেকে ৫ হাজার টাকা প্রথমে দেওয়া হবে। এরপর প্রথমোক্ত চুক্তি অনুযায়ী আমরা বাকি টাকা ভাগ করে নিব। জানার বিষয় এই যে, আমাদের চুক্তি কি শরীয়তসম্মত হয়েছে? না হলে এর বিকল্প কী হতে পারে?

Answer

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী আপনাদের কারবারটি শরীকানা কারবারের অন্তর্ভুক্ত। শরীকানা কারবারে কোনো অংশীদারের জন্য শ্রম বাবদ নির্দিষ্ট পারিশ্রমিক ধার্য করা বৈধ নয়। অবশ্য কোনো অংশীদারের দক্ষতা বা শ্রমের কারণে তার জন্য কিছু বেশি লভ্যাংশ ধার্য করা যেতে পারে। যেমন প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার জন্য লভ্যাংশের ৪০%, আর তাদের দু’জনের জন্য ৩০% করে ৬০%।

মাবসূত সারাখসী ১১/১৫৯; বাদায়েউস সানায়ে ৫/৭৭, ৮৩; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৪/২৪৪, ২৪৫; হিদায়া (ফাতহুল কাদীর) ৫/৩৯৭; আলবাহরুর রায়েক ৫/১৭৭; শরহুল মাজাল্লাহ ৪/২৬০, ২৬৮; রদ্দুল মুহতার ৪/৩১৬

Sharable Link

মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ - কুমিল্লা

১৮৫০. Question

জনাব ইসহাক সাহেব এ বছর পবিত্র হজ্ব আদায়ের উদ্দেশ্যে মক্কা মুকাররমায় গমন করেন। তিনি আল্লাহর মেহেরবানিতে হজ্বের সকল কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করেন। কিন্তু সর্বশেষ তওয়াফে যিয়ারতের পূর্বে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। যার দরুণ নির্দিষ্ট সময়ে তার পক্ষে তাওয়াফ করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে তিনি সৌদিতে এক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। কয়েক দিন পর তার দেশে ফিরতি ফ্লাইট। কিন্তু তিনি এখনও পূর্ণ সুস্থ হননি। তাকে তাওয়াফে যিয়ারত করতে হবে কি? তাওয়াফ না করে দম দেওয়া কি যথেষ্ট? বিলম্বের কারণে তার উপর দম ওয়াজিব হবে কি না?

Answer

তাওয়াফে যিয়ারত ফরয। তাই যেভাবেই হোক বিলম্বে হলেও তা আদায় করতে হবে। অসুস্থ অবস্থায় পায়ে হেঁটে না পারলে হুইল চেয়ারে বা যেভাবে সম্ভব আদায় করা যাবে। অন্যথায় সুস্থ হওয়ার পর আদায় করবে। আর তাওয়াফে যিয়ারতের শেষ সময় হল ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত। অসুস্থতার কারণে এ সময়ের ভিতর তাওয়াফ সম্পন্ন করা কোনোভাবে সম্ভব না হলে পরে যখন সম্ভব হয় আদায় করবে। এক্ষেত্রে বিলম্বের কারণে কোনো দম বা কিছুই দিতে হবে না। কিন্তু যদি কোনোভাবে নির্ধারিত সময়ের ভেতর আদায় করা সম্ভব হয় তাহলে সেক্ষেত্রে বিলম্বের কারণে দম দিতে হয়।

সহীহ বুখারী ১/২২১; মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ৮/১৩২, হাদীস ১৩৩০৩; মাবসূত সারাখসী ৪/৪৪; বাদায়েউস সানায়ে ২/৩১১; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৪৪৯; মানাসিক, মোল্লা আলী কারী পৃ. ৩৪৮; গুনইয়াতুন নাসিক পৃ. ২৭৩; আলবাহরুর রায়েক ২/৩৪৮; রদ্দুল মুহতার ২/৫১৮, ৫১৯

Sharable Link

মুহাম্মাদ কাউসার - চাদপুর

১৮৫১. Question

আমাদের মহল্লার মসজিদে রমযান মাসে অনেক সময় গরমের কারণে তারাবীর নামায পড়া কষ্টকর হয়ে যায়। তখন মসজিদের ছাদে ঠাণ্ডা বাতাস প্রবাহিত হয়। এ অবস্থায় আমাদের জন্য মসজিদ ছেড়ে ছাদে গিয়ে তারাবীহর নামায পড়া জায়েয হবে কি না?

Answer

জামাতে নামায আদায়ের ক্ষেত্রে নিয়ম হল, মসজিদের ভিতরে মূল অংশে তা আদায় করা। বিনা ওজরে বা সামান্য ওজরে মসজিদের মূল অংশ খালি রেখে ছাদে জামাত করা অনুচিত। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সামান্য গরমের কারণে আপনাদের জন্য মসজিদ ছেড়ে ছাদে গিয়ে তারাবীহর জামাত করা ঠিক হবে না। তবে যদি গরম এত বেশি হয় যে, দীর্ঘ সময় ধরে নামায পড়তে গিয়ে মুসল্লীদের নামাযে একাগ্রতা ব্যাহত হওয়ার আশংকা থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে মসজিদের ছাদে গিয়ে তারাবীহর জামাত করা যেতে পারে।

আলমুহীতুল বুরহানী ২/২৬৪; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৪৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৬৫; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/৩০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৬৭০; শরহুল মুনইয়াহ পৃ. ৪১০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩২২; রদ্দুল মুহতার ১/৬৫৬; জামেউর রুমূয ১/১৬৮

Sharable Link

মুহাম্মাদ হারুন আহমদ - সিলেট

১৮৫২. Question

কিছু দিন আগে আমাদের বাসায় কাজ চলাকালীন অবস্থায় কুরআন মজীদের উপর ময়লা পড়ার আশঙ্কায় একটা ট্রাংকে রেখে তা খাটের নিচে রেখে দেওয়া হয়েছিল। আর আমরা উক্ত খাটের উপর ঘুমিয়েছি। জানার বিষয় হল, আমাদের জন্য উক্ত কাজটি করা কি ঠিক হয়েছে?

Answer

পবিত্র কাপড় বা এমন কিছু দিয়ে আবৃত করে টেবিল, আলমারি বা উপরে কোথাও রাখলে তা আরো ভালো হত। তবে ট্রাংকে করে ঐভাবে রাখার কারণে কোনো গুনাহ হয়নি।

ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/৩৮০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১০৫

Sharable Link

মুহাম্মাদ আবেদ খান - বনশ্রী, ঢাকা

১৮৫৩. Question

মৃত্যুর মুখে পতিত বক্তিকে কিভাবে শোয়াবে? দয়া করে বিস্তারিত জানাবেন।

Answer

কারো মৃত্যুর আলামত দেখা গেলে যেভাবে তার জন্য সহজ হয় সেভাবেই তাকে রাখা যাবে। যদি কষ্ট না হয় তবে উত্তম হল তাকে ডান কাতে কিবলামুখী করে শোয়ানো। অথবা চিত করে শুইয়ে মাথার নিচে উঁচু কিছু দিয়ে সিনা কিবলামুখী করে দিবে। এক্ষেত্রে পা লম্বাভাবে কিবলার দিকে ছড়ানো থাকবে। তবে এ অবস্থায় তাকে নাড়া চাড়া করার কারণে রোগীর কষ্ট হওয়ার আশঙ্কা হলে আপন অবস্থায় ছেড়ে দিবে।

মুসতাদারাকে হাকেম হাদীস ১৩৪৫; মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১০৯৭৮; আলবাহরুর রায়েক ২/১৭০; বাদায়েউস সানায়ে ২/২২; ফাতহুল কাদীর ২/৬৮; আলমুগনী ইবনে কুদামা ৩/৩৬৩; রদ্দুল মুহতার ২/১৮৯

Sharable Link

মুহাম্মাদ ইমদাদুল্লাহ - কচুয়া, চাদপুর

১৮৫৪. Question

আমাদের দেশে বিভিন্ন ধাতুর তৈরি নানা প্রকারের মূর্তি-ভাষ্কর্য ইত্যাদি পাওয়া যায়। যা বাসা-বাড়িতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সাজিয়ে রাখা হয়। প্রশ্ন হল, এসব প্রতিকৃতি ভাষ্কর্য ক্রয় করা ও সাজিয়ে রাখা বৈধ হবে কি?

Answer

যে কোনো প্রাণীর মূর্তি, প্রতিকৃতি, ভাষ্কর্য ইত্যাদি তৈরি করা হারাম। এগুলো ক্রয়-বিক্রয় করা, প্রদর্শনী করা বা ঘরে দৃশ্যমান অবস্থায় সাজিয়ে রাখা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। হাদীস শরীফে এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা এসেছে। সুতরাং এসব থেকে বিরত থাকা জরুরি।

সূরা মায়েদা : ৯০; সহীহ বুখারী ২/৮৮০; ফাতহুল বারী ১০/৩৯৭; তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ৪/১৫৫; উমদাতুল কারী ২২/৭০; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩০৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/২১৫, ৫/৩৫৯; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭; আলমাদখাল, ইবনুল হাজ্জ ১/২৭৩; আলমুগনী ইবনে কুদামা ১০/২০২; রদ্দুল মুহতার ১/৬৪৭

Sharable Link

মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ - উত্তরা, ঢাকা

১৮৫৫. Question

আমার এক বন্ধু আছে। সে মেঘমালা, গাছপালা, নদী-নালা ইত্যাদি প্রাকৃতিক দৃশ্য আর্ট করে। এমনিভাবে বিভিন্ন আল্পনা ও নকশা তৈরি করে। তবে সে প্রাণীর ছবি আঁকে না। জানার বিষয় এই যে, প্রাণীর ছবিমুক্ত এ ধরনের চিত্রাঙ্কন করা বা এগুলো ঘরে সাজিয়ে রাখার শরঈ বিধান কী?

Answer

প্রাণীর ছবি অঙ্কন করা নাজায়েয। কিন্তু গাছ-তরুলতা ও প্রাণীর ছবিমুক্ত প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলি আঁকা নাজায়েয নয়। এ ধরনের চিত্র ঘরে সাজিয়ে রাখাও বৈধ।

সহীহ মুসলিম ২/২০২; শরহে মুসলিম নববী ২/২০১; তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ৪/১৬৫; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ১০/৪০০, হাদীস ১৯৪৯৩; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩০৫; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭-২৮; আল মুহীতুল বুরহানী ৮/৮৮; আলমুগনী ইবনে কুদামা ১০/১৯৯, ২০১; আদ্দুররুল মুখতার ১/৬৪৯

Sharable Link

মুহাম্মাদ খায়রুল ইসলাম - মোমেনশাহী

১৮৫৬. Question

এক ব্যক্তি শহরে থাকে। গ্রামে তার অনেক জমি রয়েছে। তা থেকে কিছু জমি সে এক দরিদ্রকে এক বছরের জন্য চাষ করে খাওয়ার জন্য দেয়। কিন্তু কিছু দিন পর জমির মালিক জমি বিক্রি করে দেয়। এদিকে ঐ জমিতে দরিদ্র ব্যক্তি ধান ক্ষেত করেছে যাতে এখনো ধান হয়নি। এখন ক্রেতা চাচ্ছে ধান ক্ষেত উঠিয়ে দিতে এবং তা উঠিয়ে নেওয়ার জন্য চাষীকে চাপ দিচ্ছে। আমার প্রশ্ন হল, উক্ত অবস্থায় কি জমি ক্রেতা ধান ক্ষেত উঠিয়ে দেওয়ার অধিকার রাখে?

Answer

প্রশ্নোক্ত অবস্থায় মালিক যেহেতু নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঐ ব্যক্তিকে চাষ করতে দিয়েছে তাই এখন ফসল উঠিয়ে নিয়ে জমি খালি করে দিতে বাধ্য করলে বিক্রেতার জন্য চাষীকে এর ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

আলবাহরুর রায়েক ৭/২৮৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৩৩৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৩৭০; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/৪৩; ফাতহুল কাদীর ৭/৪৭৬; বাদায়েউস সানায়ে ৫/৩২২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/২৯৩; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/১৪৬; ফাতাওয়া খানিয়া ২/২৩৯; রদ্দুল মুহতার ৫/৬৮২

Sharable Link

মুহাম্মাদ আমান উল্লাহ - বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকা

১৮৫৭. Question

আমার পরিচিত বিশ্বস্ত এক ব্যবসায়ীকে আমি কিছু টাকা দিয়েছি। সে তা এক বছর ব্যবসায় খাটাবে। আমি বলেছি, ব্যবসার লভ্যাংশ থেকে আমাকে ভালো ও উন্নত (মাল্টি মিডিয়া) একটি মোবাইল সেটা দিতে হবে। আর কিছু দিতে হবে না। এভাবেই তার সাথে আমার চুক্তি হয়েছে। প্রশ্ন হল, উপরোক্ত পদ্ধতিতে চুক্তি করা শরীয়তসম্মত হয়েছে কি না? দয়া করে বিস্তারিত জানাবেন।

Answer

আপনাদের এ চুক্তি শরীয়তসম্মত হয়নি। কারণ এই ধরনের কারবারে লাভ হিসাবে নির্দিষ্ট বস্তু বা নির্ধারিত অংকের টাকা নেওয়া-দেওয়ার চুক্তি করা বৈধ নয়। তাই মোবাইল দেওয়ার চুক্তি জায়েয হয়নি। এ কারণে চুক্তিটি ফাসেদ হয়ে গেছে। সহীহভাবে চুক্তি করতে চাইলে উভয়ের লভ্যাংশ শতকরা হারে নির্ধারণ করতে হবে। যেমন আপনার জন্য লাভের ৫০% এবং ব্যবসা পরিচালনাকারীর জন্য ৫০% অথবা কম-বেশি।

ফাতাওয়া খানিয়া ৩/১৬১; আলবাহরুর রায়েক ৭/২৬৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/২৮৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/১৮৮; শরহুল মাজাল্লা, খালিদ আতাসী ৪/৩৩৩, মাদ্দাহ : ১৪১১; আলমুগনী ইবনে কুদামা ৭/১৪০, ১৪৬; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৬৪৮

Sharable Link

মুহাম্মাদ আমান - ঢাকা

১৮৫৮. Question

বাম হাতে পানি পান করার হুকুম কী? যদি ডান হাতে ওজর থাকে তখন কিভাবে পান করবে?

Answer

বিনা ওজরে বাম হাতে পানি পান করা মাকরূহ। একাধিক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাম হাতে পানাহার করতে নিষেধ করেছেন এবং ইরশাদ করেছেন যে, শয়তান বাম হাতে পানাহার করে। তবে ডান হাত ব্যবহারে অক্ষম হলে বাম হাতেও পানাহার করা যাবে।

সহীহ মুসলিম ২/১৭২; শরহে মুসলিম, ইমাম নববী ২/১৭২; ফাতহুল বারী ৯/৪৩৩; আততামহীদ, ইবনে আবদুল বার ১১/১১১

Sharable Link

মুহাম্মাদ শাহেদ - এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা

১৮৫৯. Question

কবলাল জুমআর চার রাকআত নামায জুমআর পরে আদায় করা যাবে কি না? যদি আদায় করে তবে কি বলে নিয়ত করবে?

Answer

হ্যাঁ, জুমআর আগের চার রাকাত সুন্নত ছুটে গেলে তা জুমআর পরে আদায় করা যাবে। ‘পূর্বের চার রাকাত সুন্নত পড়ছি’ এমন নিয়তই যথেষ্ট হবে।

শরহুল মুনইয়াহ পৃ. ৩৮৯; আলমুহীতুল বুরহানী ২/২৩৫; আলমুহীতুল বুরহানী ২/২৪; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪১৫

Sharable Link

মুহাম্মাদ আশরাফুজ্জামান - রায়েরবাগ, ঢাকা

১৮৬০. Question

আমার ব্যস্ততার কারণে কখনো দ্রুত নামায পড়তে গিয়ে রুকু সিজদায় তাসবীহ তিনবার পড়া হয় না; বরং কম হয়ে যায়। এতে নামাযে কোনো সমস্যা হবে কি? আবার কখনো জামাতে নামায পড়তে গিয়ে ইমামের সাথে রুকুতে শরিক হই। তখন দেখা যায় একবার বা দু’বার তাসবীহ পড়তেই ইমাম উঠে যান। তখন কী করণীয়?

Answer

রুকু সিজদায় কমপক্ষে তিনবার তাসবীহ পড়া সুন্নত। ইচ্ছাকৃত তিনবারের কম তাসবীহ পড়া সুন্নত পরিপন্থী। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, সবচেয়ে নিকৃষ্ট চোর ঐ ব্যক্তি, যে নামাযে চুরি করে। সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন, নামাযে কীভাবে চুরি করে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, নামাযের রুকু, সিজদা ঠিকভাবে আদায় না করা (ই হচ্ছে নামায চুরি করা) - মুসনাদে আহমদ ৩/৫৬। সুতরাং একাকী নামাযে এবং জামাতে উভয় ক্ষেত্রে অন-ত: তিনবার তাসবীহ পড়বে। তবে তিনবার পড়ার পূর্বেই যদি ইমাম উঠে যান তাহলে ইমামের অনুসরণের জন্য মুক্তাদীও উঠে যাবে। কারণ ইমামের অনুসরণ করা অধিক গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে ইমামের সাথে যতবার তাসবীহ পড়া যায় তাই যথেষ্ট। তিনবার পুরো করা লাগবে না।

মুসনাদে আহমদ ৩/৫৬; শরহুল মুনইয়াহ পৃ. ২৮২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৭৪; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৯৪ ইমামের সঙ্গে রুকুতে শরিক হওয়া : ফাতাওয়া খানিয়া ১/৯৭; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১১৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৫৫৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৯০; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৯৫

Sharable Link

মুহাম্মাদ রেজাউল করীম - ঢাকা

১৮৬১. Question

সুদী ব্যাংকের একজন এমডির কয়েক সন্তানকে আমি পড়াই। এতে আমার মাসে ২০ হাজার টাকা ইনকাম হয়। যা দ্বারা আমার সংসার চলে। এছাড়া ইনকামের আমার আর কোনো ব্যবস্থা নেই। আমার জানা মতে তার ঐ সুদী চাকরি ছাড়া ইনকামের আর কোনো বিকল্প ব্যবস্থা নেই। জানার বিষয় যে, আমার জন্য কি ঐ টিউশনির টাকা বৈধ হবে?

Answer

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ঐ ব্যক্তির আয় যেহেতু হারাম, আর আপনি সে সম্পর্কে অবগত তাই তার হারাম উপার্জন থেকে দেওয়া বেতন আপনার জন্য গ্রহণ করা বৈধ হবে না। ঐ ব্যক্তির কর্তব্য, হালাল সম্পদ দ্বারা আপনার বেতন আদায় করা। যদি এ ব্যবস্থা না হয় তাহলে আপনি অন্য চাকরি খোঁজ করতে থাকেন এবং আল্লাহর কাছে ইসি-গফার করতে থাকেন। মোটামুটি চলার ব্যবস্থা হলেই এটা ছেড়ে দিতে হবে।

আহকামুল মালিল হারাম পৃ. ৩১৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৬৩; আযযাখীরা ১৩/৩১৭; আলবায়ান ওয়াত তাহসীল ১৮/৫১৪; বুহুছ ফী কাযায়া ফিকহিয়্যাহ মুআছিরা পৃ. ৪২৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩৫২; আলবাহরুর রায়েক ৮/২০১; রদ্দুল মুহতার ৪/১৯৩

Sharable Link

মুহাম্মাদ আবদুল কাদের - মিরপুর, ঢাকা

১৮৬২. Question

এক ব্যক্তি গত রমযানে রোযা রাখার নিয়তে রাত্রিবেলায় সাহরী খেয়েছে। দিনের বেলায় যখন সূর্য উদিত হয় এবং চারদিকে আলো ছড়িয়ে পড়ে তখন লোকটি ভাবল আজ আমি রোযা রাখব না। তাই আমি আমার রাত্রের নিয়ত ত্যাগ করলাম। এই বলে সে ইচ্ছাকৃত পানাহার করে ফেলে। জানার বিষয় এই যে, তার এই কাজটি ঠিক হয়েছে কি? এর কারণে তার উপর কাফফারা ওয়াজিব হবে কি? জানিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন।

Answer

লোকটির বিনা ওজরে এভাবে ইচ্ছাকৃত রোযা ভঙ্গ করা সম্পূর্ণ না-জায়েয হয়েছে। তাকে উক্ত রোযার কাযা ও কাফফারা উভয়টি আদায় করতে হবে এবং কায়মনোবাক্যে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে তওবা-ইসি-গফার করতে হবে।

ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৬১; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৮০, (ইচ্ছাকৃত রোযা ভঙ্গ করা :) সহীহ বুখারী ১/২৫৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৫; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪১২

Sharable Link

মুহাম্মাদ শাহজাহান খান - ঢাকা

১৮৬৩. Question

উমরা পালন করার সময় তাওয়াফের দুই রাকাত ওয়াজিব নামায তওয়াফের পর পর না পড়ে সায়ীর পর পড়লে দম ওয়াজিব হবে কি? বিস্তারিত জানালে কৃতজ্ঞ হব।

Answer

তাওয়াফের দুই রাকাত ওয়াজিব নামায মাকরূহ ওয়াক্ত না হলে তাওয়াফের পর পরই পড়া সুন্নত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আমল এমনই ছিল। বিনা ওজরে উক্ত দুই রাকাতকে বিলম্বে পড়া বা সায়ীর পর পড়া সুন্নত পরিপন্থী। তবে এ কারণে দম ওয়াজিব হবে না।

সহীহ বুখারী ১/২২০; মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ৮/১৫৮; ইলাউস সুনান ১০/৮৭, ৮৫; মানাসিক, মোল্লা আলী কারী পৃ. ১৫৫; আলকুরা লিকাছিদি উম্মিল কুরা পৃ. ৩৫৫; গুনইয়াতুন নাসিক পৃ. ১১৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২৬

Sharable Link

মুহাম্মাদ নাঈম - মিরপুর-৬, ঢাকা

১৮৬৪. Question

সাধারণত আযানের পর শুধু দুআ পড়া হয়। দরূদ পড়া হয় না। তাই আমরা ঐভাবে আমল করতাম। একদিন এক আলোচনা মজলিসে আমার ভাই বলল যে, আযানের পর দরূদ পড়তে হয় এরপর দুআ। জানার বিষয় যে, কোনটি সঠিক? বরাতসহ জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

আযানের পর দুআর পূর্বে দরূদ পড়ার কথা হাদীসে আছে। সহীহ মুসলিমের এক বর্ণনায় এসেছে, (অর্থ) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আছ রা.-এর মাধ্যমে বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আযানের সময় মুয়াযযিন যা বলে উত্তরে তোমরা তা বল। অতঃপর আমার উপর দরূদ পড়। যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পড়বে তার উপর আল্লাহ তাআলা ১০টি রহমত অবতীর্ণ করেন। এরপর আল্লাহর কাছে আমার জন্য ‘ওছিলা’ লাভের দুআ কর। কারণ ওছিলা হল জান্নাতের এক সুউচ্চ মর্যাদা, যা শুধু একজনই পাবে। আমি আশা করি সে ব্যক্তি আমি হব। যে ব্যক্তি আমার জন্য ওছিলা’ লাভের দুআ করবে তার জন্য আমার সুপারিশ অবধারিত হয়ে যাবে।’- সহীহ মুসলিম ১/১৬৬ সুতরাং আযানের দুআর আগে দরূদ পড়ার আমলটিই সঠিক।

সুনানে আবু দাউদ ১/৭৭; শরহুত তাহযীব ৩/১২৪; শরহুন নুকায়া ১/১৩৪; রদ্দুল মুহতার ১/৩৯৮

Sharable Link

মুহাম্মাদ আমির হামযাহ - মাদারীপুর

১৮৬৫. Question

জনৈক রোযাদার ব্যক্তির রোযা অবস্থয় হঠাৎ অনিচ্ছায় অল্প পরিমাণ বমি মুখে চলে আসে। অতঃপর তা আবার ভিতরে চলে যায়। জানার বিষয় হল, উক্ত কারণে কি তার রোযা ভেঙ্গে গেছে?

Answer

না, ঐ ব্যক্তির রোযা নষ্ট হয়নি।

ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৬৩; ফাতহুল কাদীর ২/২৬০; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২১১; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৪৬; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৪৬; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪১৪

Sharable Link

মুহাম্মাদ আহনাফ - মালিবাগ, ঢাকা

১৮৬৬. Question

জনৈক অসুস্থ মাযূর ব্যক্তি যিনি রোযা রাখতে পারেন না তিনি তার রোযার ফিদয়া পুরা রমযানেরটা এক সাথে রমযানের শুরুতেই আদায় করে দিতে পারবেন কি না?

Answer

হ্যাঁ, রমযানের শুরুতেই পুরা রমযানের ফিদইয়া একত্রে আদায় করে দিতে পারবে।

আলবাহরুর রায়েক ২/২৮৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৭; হাশিয়া তাহতাবী আলালমারাকী পৃ. ৩৭৬; হাশিয়া তাহতাবী আলাদ্দুর ১/৪৬৫; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪২৭

Sharable Link

মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ - দনিয়া, ঢাকা

১৮৬৭. Question

আমার নানু তার একটি জায়গা মসজিদের জন্য ওয়াকফ করার নিয়ত করেছেন এবং তিনি এ কথাও বলেছেন, ধরে নাও আমি এ জায়গা মসজিদে দিয়ে দিয়েছি। কিন্তু পরবর্তীতে ঐ জায়গার পাশেই আরেকটি মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। বিধায় এ জায়গায় মসজিদ করার কোনো প্রয়োজন নেই। তাই তিনি নিয়ত করেছেন, এ জায়গা বিক্রি করে দেশে যেখানে মসজিদ নেই সেখানে মসজিদ নির্মাণ করবেন। আমার প্রশ্ন হল, বর্তমান জায়গা বিক্রি করে দেশে জায়গা ক্রয় করে মসজিদ নির্মাণ করা যাবে কি না?

Answer

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী আপনার নানু যেহেতু মৌখিক বা লিখিতভাবে ঐ জমি ওয়াকফ করে দেননি তাই শুধু নিয়তের কারণে বা ধরে নাও আমি এ জায়গা মসজিদের জন্য দিয়ে দিয়েছি’ বলার কারণে ঐ জমিটি ওয়াকফ হয়ে যায়নি। অতএব জমিটি বিক্রি করে অন্যত্র যেখানে প্রয়োজন আছে তা দ্বারা মসজিদ নির্মাণ করতে পারবেন।

হিদায়া ২/৬৪৪; ফাতহুল কাদীর ৬/২১৭

Sharable Link

মুহাম্মাদ ফাহিম সিদ্দীকী - ইসলামাবাদ, মতলব

১৮৬৮. Question

বর্তমানে রেডিও টেলিভিশনে যে আযান শোনা যায় তার জওয়াব দিতে হবে কি না?

Answer

হাদীস শরীফে আযানের উত্তর দেওয়ার যে নির্দেশ এসেছে তা সরাসরি মুআযযিন থেকে শোনা আযানের ব্যাপারে বলা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যখন তোমরা মুআযযিনকে বলতে শুনবে তখন তোমরাও তার অনুরূপ বল। তাই রেকর্ডকৃত আযান প্রচারিত হলে তার জবাব দেওয়া মাসনূন বলে বিবেচিত হবে না।

সহীহ মুসলিম ১/১৬৬; বাদায়েউস সানায়ে ১/২৭৩; ফাতহুল কাদীর ১/২১৬, ২১৭; আলফিকহ আলাল মাযাহিবিল আরবাআহ পৃ. ১৮২

Sharable Link

মুহাম্মাদ হেদায়াতুল্লাহ - তাকমীল, মাদানীনগর

১৮৬৯. Question

পুরান ঢাকায় শবে বরাত উপলক্ষে বিভিন্ন ধরনের মিষ্টান্ন পদার্থ দ্বারা বিভিন্ন প্রকার প্রাণীর আকৃতিতে পাউরুটি, কেক, সন্দেশ ইত্যাদি বানাতে দেখা যায়। এসব প্রাণীর মধ্যে হারাম প্রাণী যেমন কুমির, ভোদর, গুই সাপ ইত্যাদি এবং হালাল প্রাণী যেমন বিভিন্ন জাতের মাছও থাকে। এগুলোকে শবে বরাতের বিশেষ খাবার বলে গণ্য করা হয় এবং খুব চড়া মূল্যে তা বিক্রি হয়। প্রশ্ন হল, প্রাণীর আকৃতিতে এসব খাবার তৈরি করা এগুলোর ক্রয়-বিক্রয় করা জায়েয আছে কি না?

Answer

শবে বরাত উপলক্ষে খাবারের প্রশ্নোক্ত আয়োজন এবং প্রাণীর আকৃতিতে তা তৈরির প্রচলনটি সম্পূর্ণ নাজায়েয। শরীয়তের দৃষ্টিতে এতে দু’টি আপত্তিকর বিষয়ের সমন্বয় ঘটেছে। এক. কোনো প্রাণীর প্রতিকৃতি তৈরি করা হারাম ও কবীরা গুনাহ। হাদীস শরীফে এ ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে এবং প্রতিকৃতি প্রস্তুতকারীর জন্য আখেরাতে কঠিন শাস্তির কথা ঘোষণা করা হয়েছে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, প্রতিকৃতি প্রস্তুতকারীরা আল্লাহ তাআলার নিকট সবচেয়ে কঠিন আযাবের মুখোমুখি হবে।-সহীহ বুখারী ২/৮৮০ অপর হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লানত করেছেন, সুদ ভক্ষণকারী ও সুদ প্রদানকারীর উপর, উল্কি অঙ্কন কারীনী নারী ও উল্কি গ্রহণকারীনী নারীর উপর এবং প্রতিকৃতি প্রস্তুতকারীর উপর।-সহীহ বুখারী ২/৮৮১ অন্য হাদীসে আরো বর্ণিত হয়েছে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ফেরেশতারা ওই ঘরে প্রবেশ করে না যাতে মূর্তি বা ছবি রয়েছে।-সহীহ মুসলিম ২/২১১২ দুই. শবে বরাতকে উপলক্ষ করে এ ধরনের খাবারের আয়োজন করাকে দ্বীনী বা নেকের কাজ মনে করা হয়, যা সুস্পষ্ট বিদআত ও কুসংস্কার। অতএব শবে বরাত বা অন্য কোনো উপলক্ষে প্রাণীর আকৃতিতে কোনো ধরনের খাবার তৈরি করা হারাম। এথেকে বিরত থাকা সকল মুসলমানের জন্য জরুরি। আর এ ধরনের প্রাণীর আকৃতি সম্বলিত খাবারের ক্রয়-বিক্রয়ও জায়েয নেই। কেননা, এর দ্বারা ওই নাজায়েয কাজে প্রস'তকারীদের সহযোগিতা করা হয়।

সহীহ বুখারী ২/৮৮০-৮৮১; শরহে মুসলিম নববী ১৪/৮১; আলমাদখাল ইবনে হাজ্জ্ব ১/২৯১; কিতাবুল হাওয়াদিছ ওয়ালবিদা’ পৃ. ১১৮; ইকতিযাউস সিরাতিল মুস্তাকীম ২/৬৩২

Sharable Link

মুহাম্মাদ সালমান - ত্রিশাল, মোমেনশাহী

১৮৭০. Question

গত ঈদুল ফিতরের দিন আমাদের শহরে প্রচণ্ড বৃষ্টি হয়। ফলে মুসল্লীগণ ঈদগাহে না গিয়ে নামাযের জন্য জামে মসজিদে একত্রিত হয়। কিন' সে সময় এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলে ঈদের নামায মসজিদে পড়া ঠিক নয়; বরং বৃষ্টির কারণে ঈদগাহে পড়া সম্ভব না হলে দ্বিতীয় দিন ঈদগাহে পড়তে হবে। মাননীয় মুফতী সাহেবের কাছে আমার জানার বিষয় হল বৃষ্টির কারণে কি ঈদের নামায জামে মসজিদে পড়া বৈধ? প্রথম দিন মসজিদে পড়ে নেওয়া উত্তম হবে না দ্বিতীয় দিন ঈদগাহে পড়া উত্তম হবে?

Answer

স্বাভাবিক অবস্থায় ঈদের নামায ঈদগাহে পড়াই সুন্নত। তবে ওজরের কারণে মসজিদে আদায় করতে কোনো অসুবিধা নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার বৃষ্টির কারণে মসজিদে ঈদের নামায আদায় করেছেন বলে হাদীস শরীফে আছে। তাই ১ম দিন মসজিদে ঈদের নামায না পড়ে দ্বিতীয় দিনের জন্য বিলম্বিত করা জায়েয হবে না।

সুনানে আবু দাউদ ১/১৬৪; ইলাউস সুনান ৮/১১৩; বযলুল মাজহুদ ৬/২০৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫১; আলবাহরুর রায়েক ২/১৬২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৮৯; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৮৫; বাদায়েউস সানায়ে ১/৬১৯; আলমুগনী ইবনে কুদামা ২/১১৪; কিতাবুল উম্ম ১/২৮৬; কিতাবুল মাজমূ’ ৫/৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৭৬

Sharable Link

মুহাম্মাদ আশরাফুল ইসলাম - হেমায়েতপুর, পাবনা

১৮৭১. Question

শুনেছি, কিয়ামতের পূর্বে যখন দাজ্জালের আবির্ভাব হবে তখন সে গোটা পৃথিবী চষে বেড়াবে। শুধু মক্কা-মদীনায় যেতে পারবে না। এ সম্পর্কিত কোনো হাদীস থাকলে তা সবিস্তারে জানাবেন।

Answer

প্রশ্নোক্ত কথাটি সঠিক। দাজ্জাল মক্কা মুকাররমা এবং মদীনা মুনাওয়ারায় প্রবেশ করতে পারবে না। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত দীর্ঘ হাদীসে তা বিদ্যমান রয়েছে। হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, এমন কোনো ভূখণ্ড নেই, যা দাজ্জালের পদভারে মথিত হবে না। তবে মক্কা ও মদীনায় সে প্রবেশ করতে পারবে না। সে কোনো দিক দিয়ে মদীনায় যাওয়ার সুযোগ পাবে না। যেদিকেই যাবে সেদিকেই ফেরেশতাগণকে সারিবদ্ধভাবে মদীনার হেফাযতে প্রহরারত থাকবেন। এরপর মদীনা তার অধিবাসীসহ তিনবার প্রকম্বিত হবে। যার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা মদীনা থেকে সকল কাফের এবং মুনাফিককে বের করে দিবেন। (সহীহ বুখারী ১/২৫৩)

আরো দেখুন : সহীহ বুখারী, হাদীস ৭১২৪; ফাযাইলুল মদীনা ১/২৫৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২৯৪২; মাজমাউয যাওয়াইদ ৩/৬৬০

Sharable Link

মুহাম্মাদ সাব্বির আহমদ - বেড়া, পাবনা

১৮৭২. Question

রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়টি উমরা করেছেন এবং কয়টি হজ্ব করেছেন? বিদায় হজ্ব কত সনে হয়েছিল?

Answer

রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চারটি উমরা করেছেন। প্রত্যেকটি যিলকদ মাসে। প্রথমটি হুদায়বিয়ার উমরা, যা ষষ্ঠ হিজরীতে হয়েছে। কাফেরদের প্রতিরোধের কারণে বাইতুল্লাহ শরীফে এ বছর যাওয়া হয়নি। হুদায়বিয়াতেই ইহরাম ত্যাগ করেছিলেন। দ্বিতীয় উমরা পরবর্তী বছর হয়েছে। তৃতীয় উমরাতুল জি’রানা। হুনাইন থেকে ফেরার পথে জি’রানা থেকে ইহরাম বেঁধে ছিলেন। চতুর্থটি বিদায় হজ্বের সাথে করেছেন। তাহলে সর্বমোট উমরা চারটি হলেও পৃথক সফরে পূর্ণ উমরা হয়েছে মোট দুইটি। আর হিজরতের পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি মাত্র হজ্ব করেছেন। সেটি হল বিদায় হজ্ব। বিদায় হজ্ব দশম হিজরীতে হয়েছে। হিজরতের আগে কয়টি হজ্ব করেছেন এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা বলা যায় না। জামে তিরমিযীর এক বর্ণনায় দুইটির কথা আছে। তবে অন্যান্য দলীল দ্বারা তাবেয়ীন ও মুহাদ্দিসগণ আরো বেশি সংখ্যক হজ্বের কথা উল্লেখ করেছেন। এমনকি ইবনুল আমীর রাহ. বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজরতের আগে প্রতি বছরই হজ্ব করতেন। এটাই স্বাভাবিক। এর সঠিক সংখ্যা আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন।

সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ ৮/৪৪৪-৪৪৯; শরহুল মাওয়াহিবিল লাদুন্নিয়াহ ৪/১৪১; আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া ৭/৪০৬; সহীহ বুখারী ১/২৩৮; সহীহ মুসলিম ১/৩৯৪; জামে তিরমিযী ১/১৬৮; সুনানে ইবনে মাজাহ পৃ. ২২০; মাআরিফুস সুনান ৬/২০; ফাতহুল বারী ৩/৭০২; উমদাতুল কারী ১০/১১৩; যাদুল মাআদ ৩/২৫৬; আল কামিল ফিততারীখ ২/৩০৫

Sharable Link