খুবাইব - মিরপুর, ঢাকা

৫৬০৪. Question

আমার চোখে এলার্জির সমস্যা আছে। চোখের ভেতর পানি গেলে খুব চুলকায়। এজন্য ডাক্তার চোখের ভেতর পানি প্রবেশ করাতে নিষেধ করেছেন।

মুহতারামের কাছে আমি জানতে চাই যে, চেহারা ধোয়ার সময় যদি চোখের ভেতর পানি প্রবেশ না করিয়ে শুধু উপরের অংশ ধৌত করি তাহলে কি আমার ওযু হয়ে যাবে? জানালে উপকৃত হব।

Answer

ওযুতে চেহারা ধোয়ার সময় চোখের ভেতর পানি পৌছানোর বিধান নেই। সুতরাং সাধারণ অবস্থাতেও চোখের ভেতর পানি প্রবেশ করাতে হয় না। চোখের পাতার উপর ও আশ পাশ বাহিরের অংশ যেন শুকনো না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রেখে চেহারা ধৌত করলেই চলবে।

-আলমাবসূত, সারাখসী ১/৬; আলমুহীতুল বুরহানী ১/১৬১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২১; আলইখতিয়ার ১/৪০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৪; আলবাহরুর রায়েক ১/১১

Sharable Link

মুহাম্মাদ রিদওয়ান - ঢাকা

৫৬০৫. Question

গতকাল মাগরিবের নামাযের জন্য ওযু করতে বসি। ওযু অবস্থায় জামাত শেষ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা হয়। তখন আমি দ্রুত ওযু করতে গিয়ে মাথা মাসেহ করার আগেই পা ধুয়ে ফেলি। পরে মাথা মাসেহ করি।  মুহতারামের কাছে জানতে চাই, উক্ত ওযু সহীহ হয়েছে, নাকি পুনরায় করতে হবে?

Answer

আপনার উক্ত ওযু শুদ্ধ হয়েছে। তবে মাথা মাসেহ করার পূর্বে পা ধোয়ার কারণে সুন্নাতের খেলাফ হয়েছে। ভবিষ্যতে ওযুর কাজগুলো সুন্নত অনুযায়ী করার প্রতি যত্নবান হবেন। আর ওযুতে তাড়াহুড়া করা ঠিক নয়। ওযু যথাযথ ও পরিপূর্ণভাবে করার ব্যাপারে হাদীসে তাকীদ এসেছে।

-কিতাবুল আছল ১/২৪; মুখতাসারুত তাহাবী, পৃ. ১৮; বাদায়েউস সানায়ে ১/১১২; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৪১; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ২৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/২২০

Sharable Link

সায়িম - রাজশাহী

৫৬০৬. Question

আমি এক শুক্রবার বাড়ি থেকে ঢাকায় আসি। রাস্তায় গাড়িতে বসে দেখি জুমার নামায হচ্ছে। তখন আমি ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বলি। তারপর গাড়ি থেকে নেমে জুমার নামায পড়তে যাই। কিন্তু গিয়ে দেখি যদি ওযু করতে যাই তাহলে জুমার নামায ছুটে যাবে। তাই আমি তায়াম্মুম করে জুমাতে শরীক হয়ে যাই। এখন আমার জানার বিষয় হল, তায়াম্মুম করে জুমাতে শরীক হওয়া কি আমার জন্য সহীহ হয়েছে?

Answer

প্রশ্নোক্ত অবস্থায় ওযু করাই জরুরি ছিল। তায়াম্মুম করা সহীহ হয়নি। কেননা জুমা ছুটে যাওয়ার আশঙ্কায় তায়াম্মুম করা বৈধ নয়। সুতরাং আপনার ঐ দিনের জুমার নামায আদায় হয়নি। আপনাকে এখন ঐ দিনের জুমার পরিবর্তে যোহরের নামায কাযা করে নিতে হবে।

-কিতাবুল আছল ১/৯৭; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ১/৭০; আলজাওহারাতুন নাইয়িরা ১/৩১; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৮৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৩৮৫; আদ্দুররুল মুখতার ১/২৪৬

Sharable Link

আবদুর রহমান - ফরিদপুর

৫৬০৭. Question

গত কয়েকদিন আগে আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব সিঁড়ি থেকে পড়ে ব্যথা পান। তারপর ডাক্তার তার হাতে ব্যান্ডেজ করে দেন। এখন ইমাম সাহেব ঐ ব্যান্ডেজের উপর মাসেহ করে নামায পড়ান। আমার জানার বিষয় হল, উক্ত ইমাম সাহেবের পেছনে আমাদের ইকতেদা করতে কি কোনো সমস্যা আছে?

Answer

ব্যান্ডেজের উপর মাসেহকারীর পেছনে ইকতেদা করা জায়েয। তাই উক্ত ইমামের পেছনে ইকতেদা করা যাবে।

-তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৩৬৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/২৫৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৮৪; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৬৩; আননাহরুল ফায়েক ১/২৫৪

Sharable Link

মুহাম্মাদ বেলাল - কুমিল্লা

৫৬০৮. Question

কয়েকদিন আগে আমার চোখ ওঠে। তারপর মোটা তোয়ালে দিয়ে কয়েকবার ডলে মোছার কারণে চোখ দুটি ফুলে প্রচ- ব্যথা শুরু হয় এবং মাঝে মাঝে পানি ও সামান্য পুঁজ পড়তে থাকে। ডাক্তারের নিকট গেলে কিছু ঔষধ দিয়ে বলেন, আপনার চোখের পাতলা পর্দা কিছুটা ফেটে গেছে ও হালকা ক্ষত হয়েছে। তাই চোখে হাত লাগাবেন না। এখন আমার জানার বিষয় হল, চোখ থেকে মাঝে মাঝে পানি এবং হালকা পুঁজ পড়ার দ্বারা কি আমার ওযু ভেঙ্গে যাবে?

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু চোখে ক্ষত হয়ে গেছে এবং তা থেকে পুঁজও বের হচ্ছে, তাই এটি নাপাক বলে গণ্য হবে এবং চোখ থেকে বাইরে গাড়িয়ে পড়লে ওযু ভেঙ্গে যাবে। অবশ্য যদি ঐ ময়লা পানি বাইরে গড়িয়ে না পড়ে এবং চোখের মধ্যেই থাকে, তাহলে ওযুর ক্ষতি হবে না।

-আলমাবসূত, সারাখসী ১/৭৬; আততাজনীস ওয়াল মাযীদ ১/১৪৫; আলমুহীতুল বুরহানী ১/১৯৬; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৪৯; হালবাতুল মুজাল্লী ১/৩৭৮; ইমদাদুল ফাত্তাহ, পৃ. ৯২

Sharable Link

সিরাজুল ইসলাম - সিলেট

৫৬০৯. Question

আমাদের মসজিদের মুআযযিন সাহেব মাঝেমধ্যে আযান দেওয়ার পর ওযু করতে যান। আমরা তাঁকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, হাঁ, আমি ওযু ছাড়াই আযান দিয়েছি। তবে আযান ওযু ছাড়া দিলেও আদায় হয়ে যায়। এখন মুহতারামের কাছে জানার বিষয় হল, মুআযযিন সাহেবের উক্ত উত্তরটি কি সঠিক?

Answer

ওযু ছাড়া আযান দিলেও আযান সহীহ হয়ে যায়। হযরত ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন-

لَا بَأْسَ بِأَنْ يُؤَذِّنَ المُؤَذِّن، وَهُوَ عَلَى غَيْرِ وُضُوءٍ.

মুআযযিন যদি ওযু ছাড়া আযান দেয় এতে অসুবিধা নেই। (কিতাবুল আছার, বর্ণনা ৫৮)

তবে ওযু অবস্থায় আযান দেওয়া সুন্নত। তাই ওযুসহ আযান দেওয়ার প্রতি যত্নবান হওয়া উচিত। হযরত আতা রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

حَقّ، وَسُنّةٌ مَسْنُونَةٌ، أَنْ لَا يُؤَذِّنَ مُؤَذِّنٌ إِلّا مُتَوَضِّئًا.

আযানের সুন্নত তরীকা হল মুআযযিন ওযু অবস্থায়ই আযান দেবে। (মুসান্নাফে আব্দুর রায্যাক, বর্ণনা ১৭৯৯)

-কিতাবুল আছল ১/১১০; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৭৪; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/২৪৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৪৮; আলবাহরুর রায়েক ১/২৬৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৪

Sharable Link

আহমাদ - ঢাকা

৫৬১০. Question

আমি গতকাল একা একা ফজরের নামায আদায় করি। ফজরের দ্বিতীয় রাকাতে ভুলে সূরা ফাতিহা না পড়েই কেরাত পড়ে ফেলি। তাশাহহুদের সময় তা স্মরণ হয়। ফলে তাশাহহুদ পড়ে সাহু সিজদা করি। এখন আমার জানার বিষয় হল, আমার উক্ত নামায সহীহ হয়েছে, নাকি পুনরায় পড়তে হবে?

Answer

হাঁ, উক্ত নামায সহীহ হয়েছে। সূরা ফাতিহা ভুলে ছেড়ে দেওয়ার কারণে আপনার উপর সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছিল। যেহেতু সাহু সিজদার সাথে নামায শেষ করেছেন তাই সেটি আদায় হয়ে গেছে।

-মুখতাসারুত তাহাবী, পৃ. ৩০; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৪৭৩; আলহাবিল কুদসী ১/১৯০; আলবাহরুর রায়েক ২/৯৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২৬; আননাহরুল ফায়েক ১/৩২৩

Sharable Link

মুহাম্মাদ আলআমীন - সিলেট

৫৬১১. Question

আমি গতকাল আসরের নামাযের জন্য মসজিদে যাই। দূর থেকে দেখি, ইমাম সাহেব রুকুতে চলে গেলেন। আমি তাড়াহুড়া করে গিয়ে দাঁড়িয়ে তাকবীর বলে রুকুতে যাই। তবে তাকবীর বলার সময় হাত উঠাতে ভুলে যাই। এখন আমার জানার বিষয় হল, তাকবীরে তাহরীমা বলার সময় হাত না উঠানোর কারণে আমার নামায কি বাতিল বলে গণ্য হবে?

Answer

নামাযে তাকবীরে তাহরীমা বলা ফরয। আর এ সময় কান পর্যন্ত হাত উঠানো  সুন্নত। তাকবীর বলার সময় হাত না উঠালেও নামায হয়ে যায়। তাই আপনার উক্ত নামায সহীহ হয়েছে।

উল্লেখ্য, নামাযে যাওয়ার সময় তাড়াহুড়া করা বা দৌড়ে যাওয়া উচিত নয়। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

إِذَا أُقِيمَتِ الصَّلاَةُ، فَلاَ تَأْتُوهَا تَسْعَوْنَ، وَأْتُوهَا تَمْشُونَ، عَلَيْكُمُ السّكِينَةُ، فَمَا أَدْرَكْتُمْ فَصَلّوا، وَمَا فَاتَكُمْ فَأَتِمّوا.

নামাযের ইকামত হয়ে গেলে তোমরা দৌড়ে এসো না; বরং হেঁটে হেঁটে আসবে। তোমাদের উচিত, শান্তভাবে, স্বাভাবিক গতিতে আসা। তারপর যতটুকু ইমামের সাথে পাবে তা আদায় করবে। আর যা ছুটে যাবে ইমামের সালামের পর আদায় করবে। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৯০৮)

-আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩০; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৬৫; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ২৯৮; ফাতহুল কাদীর ১/২৪৪; আলবাহরুর রায়েক ১/৩০২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৭৩; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৭৪

Sharable Link

সাব্বির আহমেদ - দুপচাঁচিয়া, বগুড়া

৫৬১২. Question

মোবাইল ফোন ইত্যাদিতে কুরআন তিলাওয়াতের রেকর্ড শ্রবণকালে যদি কেউ সিজদার আয়াত শোনে তাহলে সিজদা ওয়াজিব হবে কি?

Answer

মোবাইল ইত্যাদিতে রেকর্ড থেকে সিজদার আয়াত শুনলে সিজদায়ে তিলাওয়াত ওয়াজিব হয় না। অবশ্য এ ক্ষেত্রে কেউ সিজদা করলে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু সরাসরি সম্প্রচার (লাইভ) থেকে সিজদার আয়াত শুনলে সিজদায়ে তিলাওয়াত ওয়াজিব হবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৪০; ফাতহুল কাদীর ১/৪৬৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩২; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৫০০; আলবাহরুর রায়েক ২/১১৯; রদ্দুল মুহতার ২/১০৮

Sharable Link

মুহাম্মাদ হেলাল - কুমিল্লা

৫৬১৩. Question

কয়েকদিন আগে বাড়ি থেকে আসার পথে মাগরিবের নামাযের সময় হয়ে যায়। তার কিছুক্ষণ পরে ফিলিং স্টেশনে বাস থামলে পাশের একটি মসজিদে আমি মাগরিবের নামায শুরু করি। দুই রাকাত নামায পড়ার পর তৃতীয় রাকাতে দাঁড়াতেই বাসের হর্ন বাজলে গাড়ি ছেড়ে দেবে মনে করে তৃতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহা না পড়ে দ্রুত রুকু-সিজদা এবং তাশাহহুদ পড়ে নামায শেষ করি। মুহতারামের নিকট জানার বিষয় হল, সূরা ফাতিহা পড়া ছাড়া আমার এই নামায কি সঠিক হয়েছে? না দ্বিতীয় বার পড়তে হবে?

Answer

হাঁ, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার নামায সহীহভাবে আদায় হয়েছে। তা পুনরায় পড়তে হবে না। কেননা মাগরিবের শেষ রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়া মুস্তাহাব। আর শেষ বৈঠকে দুরূদ শরীফ ও দুআয়ে মাছূরা পড়া সুন্নত। স্বাভাবিক অবস্থায় এগুলো ছাড়া যায় না। কিন্তু গাড়ি ছেড়ে যাওয়ার ওজর কিংবা এ ধরনের অন্য কোনো ওজরের ক্ষেত্রে এই মুস্তাহাব ও সুন্নত ছেড়ে দেওয়ার অবকাশ আছে।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৩৭৬৩; কিতাবুল আছল ১/১৩৮; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৯; বাদায়েউস সানায়ে ১/২৯৫; ফাতহুল কাদীর ১/৩৯৫; হালবাতুল মুজাল্লী ২/১৮২; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/২৭৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৩৯

Sharable Link

আসআদ - ফেনী

৫৬১৪. Question

আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব গতকাল ফজরের নামায পড়ানোর সময় প্রথম রাকাতে আউযুবিল্লাহ... ও বিসমিল্লাহ... জোরে পড়ে ফেলেন। আবার নামায শেষে সাহু সিজদাও করেননি। এভাবেই নামায পুরা করেন। তারপর ইমাম সাহেবকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, নামায সহীহ হয়ে গেছে। সাহু সিজদার কোনো প্রয়োজন নেই। এখন আমার জানার বিষয় হল, যদি কেউ নামাযে ভুলে আউযুবিল্লাহ... ও বিসমিল্লাহ... উচ্চ আওয়াজে পড়ে ফেলে এবং নামায শেষে সাহু সিজদাও না করে, তাহলে কি তার নামায সহীহ হবে?

Answer

উক্ত নামায সহীহ হয়েছে। আউযুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ জোরে পড়ার কারণে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয় না। সুতরাং ইমাম সাহেব সাহু সিজদা না করে ঠিকই করেছেন।

-ফাতাওয়া খানিয়া ১/১২২; আততাজনীস ওয়াল মাযীদ ২/১৪৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৯৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২৮

Sharable Link

ফারিহা আক্তার - উত্তরা, ঢাকা

৫৬১৫. Question

আমি শুনেছি নামাযের ভেতরে মহিলাদের মাথা ঢেকে রাখা ফরয। কিন্তু কিছু ওড়না আছে এতটা পাতলা, যা দ্বারা মাথা ঢাকার পরও মাথার চুল স্পষ্টভাবে দেখা যায়। কোনো মহিলা যদি এ ধরনের ওড়না পরে নামায পড়ে তাহলে কি তার নামাযে কোনো সমস্যা হবে?

Answer

এমন পাতলা ওড়না, যা পরার পরও মাথার চুল দেখা যায় তা মাথায় দিয়ে নামায পড়লে নামায সহীহ হবে না। তাই ওড়না এমন মোটা হওয়া আবশ্যক, যা মাথায় দিলে চুল দেখা যায় না।

-আলমাবসূত, সারাখসী ১/৩৪; বাদায়েউস সানায়ে ১/৫১৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৭৩; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/২৫২; আলবাহরুর রায়েক ১/২৬৮; রদ্দুল মুহতার ১/৪১০

Sharable Link

আবদুল কারীম - চাঁদপুর

৫৬১৬. Question

আমার ছেলে ঢাকার বড় এক মাদরাসায় পড়াশোনা করে। প্রতি বছরই আমি তার মাধ্যমে তার মাদরাসার গুরাবা ফান্ডে আমার যাকাতের টাকার কিছু অংশ দান করে থাকি। গত বছর রমযানের পর সে মাদরাসায় যাওয়ার সময় তার নিকট তার মাদরাসার গুরাবা ফান্ডের জন্য কিছু টাকা দিই। কিন্তু এবার সে মাদরাসায় পৌঁছার আগেই টাকাগুলো হারিয়ে ফেলে। জানতে চাই, এমতাবস্থায় কি আমার ওই টাকার যাকাত আদায় হয়েছে, নাকি তা পুনরায় আদায় করতে হবে?

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ টাকার যাকাত আদায় হয়নি। তা পুনরায় আদায় করতে হবে। কেননা যাকাতদাতার প্রতিনিধির নিকট থেকে যাকাতের টাকা হারিয়ে গেলে তা লোকটির নিজের টাকা হারিয়েছে বলে ধর্তব্য হয়। মামার রাহ. বলেন-

عَنْ حَمّادٍ؛ فِي الرّجُلِ يَبْعَثُ بِصَدَقَتِهِ فَتَهْلِكُ قَبْلَ أَنْ تَصِلَ إلَى أَهْلِهَا، قَالَ : هِيَ بِمَنْزِلَةِ رَجُلٍ بَعَثَ إلَى غَرِيمِهِ بِدَيْنٍ، فَلَمْ يَصِلْ إلَيْهِ الْمَالُ حَتَّى هَلَكَ.

যে ব্যক্তি কারো মাধ্যমে যাকাতের সম্পদ যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত ব্যক্তির কাছে প্রেরণ করল, কিন্তু ওই ব্যক্তির কাছে যাকাতের অর্থ পৌঁছার আগেই তা খোয়া গেল। ওই ব্যক্তির যাকাতের হুকুম সম্পর্কে হাম্মাদ রাহ. বলেন, এটি ওই ব্যক্তির মত যে তার পাওনাদারের নিকট ঋণের অর্থ পাঠাল কিন্তু ওই অর্থ তার কাছে পৌঁছার আগেই খোয়া গেল। (অর্থাৎ এক্ষেত্রে যেমনিভাবে ওই ব্যক্তির ঋণ আদায় হয়নি

তেমনিভাবে পূর্বোক্ত ব্যক্তির যাকাতও আদায় হবে না)। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১০৫৯১)

-ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৬৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২১৪; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ১/১৭৯; আলবাহরুর রায়েক ২/২১১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৮২; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৭০

Sharable Link

ইয়াসির ইন্তাজ - আদাবর, ঢাকা

৫৬১৭. Question

হজ্বের সফরে আমার এক সফরসঙ্গী ১০ যিলহজ্ব কুরবানী করার পর ইহরাম ত্যাগ করার জন্য মাথা মুণ্ডাতে যান। কিন্তু সেখানে ভিড় থাকায় তিনি মাথা মুণ্ডানোর আগেই তার নখ-মোচ কাটতে শুরু করেন। আমি তাকে ইহরামের অবস্থায় থাকার কথা স্মরণ করিয়ে দিলে, তিনি বলেন, কোনো সমস্যা নেই। আমি কুরবানী করেছি। আমি মুহতারামের কাছে জানতে চাচ্ছি, ইহরাম ত্যাগ করার সময় হলক তথা মাথা মুণ্ডানোর আগে নখ-মোচ কাটা বা শরীরের অন্যান্য স্থানের পশম পরিষ্কার করা কি জায়েয আছে? কেউ যদি এমনটি করে তবে তার ওপর কোনো জরিমানা আসবে কি না?

Answer

হজ্বকারী কুরবানী করলেও মাথা মুণ্ডানোর আগে যেহেতু ইহরাম অবস্থায় থাকে, তাই এ সময়ে নখ-মোচ কাটা বা শরীরের অন্যান্য পশম পরিষ্কার করা নিষিদ্ধ। মাথা মুণ্ডিয়ে বা চুল ছোট করে ইহরাম থেকে হালাল হয়ে যাওয়ার পর এ কাজগুলো করা যাবে। তাই এ সময়ে হালাল হওয়ার আগে উক্ত কাজগুলো করলে নির্ধারিত জরিমানা দিতে হবে।

-আলমাবসূত, সারাখসী ৪/৭৭; খিযানাতুল আকমাল ১/৩৪০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৫৮৬; আলবাহরুল আমীক ৩/১৭৯০; রদ্দুল মুহতার ২/৫১৫; গুনইয়াতুন নাসিক, পৃ. ১৭৪

Sharable Link

সাজ্জাদ - সাভার

৫৬১৮. Question

গত বছর আমার চাচাত বোনের বিবাহ হয়। ছেলেদের বাড়ি রাজশাহী। তারা ঢাকায় থাকত। গত মাসে তারা সাবাই রাজশাহী চলে যায়। তাদের এলাকায় কাদিয়ানীরা খুব তৎপর। সেখানে যাওয়ার কিছুদিন পরই ছেলেটি কাদিয়ানীদের দ্বারা প্রভাবিত ও প্রলুব্ধ হয়ে ইসলামধর্ম ত্যাগ করে কাদিয়ানী হয়ে যায়। (নাউযুবিল্লাহ) সংবাদ পাওয়া মাত্রই আমার বোনকে সেখান থেকে নিয়ে আসা হয়। পরে এলাকার লোকজন এবং ছেলেটির পরিবার তাকে অনেক বুঝায় এবং বিভিন্ন হুজুরের কাছে নিয়ে যায়। দশ দিন পর অবশেষে গত সপ্তাহে সে তার ভুল বুঝতে পারে এবং পুনরায় ইসলামধর্ম গ্রহণ করে। অতঃপর আমার বোনকে নিতে আসে। হুজুরের কাছে জানতে চাই, এখন কি আমরা আমাদের বোনকে ঐ ছেলের সাথে দিয়ে দিতে পারব? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।

Answer

প্রশ্নোক্ত ব্যক্তি কাদিয়ানী হয়ে যাওয়ার কারণে সে মুরতাদ ও কাফের হয়ে গিয়েছিল। আর তখনই আপনার বোনের সাথে তার বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গিয়েছে এবং তারা একে-অপরের জন্য হারাম হয়ে গিয়েছে। সুতরাং ঐ ব্যক্তি পুনরায় ইসলাম গ্রহণের পর আপনার বোনকে নিতে চাইলে নতুন করে তাদের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে।

-আলমাবসূত, সারাখসী ৫/৪৯; বাদায়েউস সানায়ে ২/৬৫৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৪/১৯৫; ফাতহুল কাদীর ৩/২৯৬; আলবাহরুর রায়েক ৩/২১৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৩৯, ২/২৮৩; আলহীলাতুন নাজিযাহ, পৃ. ১৪৫

Sharable Link

মুনীরুল ইসলাম - পাবনা

৫৬১৯. Question

২০১৫ সালে আমি বিবাহ করি। পাঁচ বছর আমার স্ত্রীর সাথে ঘর-সংসার করার পর গত বছরের আগস্ট মাসে পারিবারিক কিছু জটিলতা নিয়ে আমাদের মাঝে খুব ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে রাগের মাথায় আমি তাকে তিন তালাক দিয়ে বসি। পরিবেশ শান্ত হলে আমি নিজের ভুলের জন্য খুবই অনুতপ্ত হই। কিন্তু তাকে ফিরিয়ে আনার কোনো সুযোগ না থাকায় আমরা পৃথক হয়ে যাই। গত মাসে তার ইদ্দত পূর্ণ হলে সে অন্যত্র বিবাহ বসে। বিয়ের প্রথম রাতে সে তার নতুন স্বামীর সাথে ছিল। কিন্তু তার বক্তব্য অনুযায়ী তাদের মাঝে স্বামী-স্ত্রী সুলভ কোনো আচরণ হয়নি। পরের দিন তার স্বামী মটর সাইকেল এক্সিডেন্ট করে মারা যায়। হুজুরের কাছে জানতে চাই, তার যেহেতু অন্যত্র বিয়ে হয়েছে এবং সে তার নতুন স্বামীর সাথে রাত্রি যাপনও করেছে সুতরাং এমতাবস্থায় আমি কি তাকে পুনরায় আমার বিবাহ বন্ধনে নিয়ে  আসতে পারব?

উল্লেখ্য, আমাদের তিন বছরের দুটি সন্তান রয়েছে। সুতরাং তাকে আমার খুবই প্রয়োজন।

Answer

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ঐ মহিলাকে আপনি এখনই বিবাহ করতে পারবেন না। কেননা তিন তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে পুনরায় বিবাহ করার জন্য ইদ্দতের পর ঐ মহিলা অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে হয় এবং নতুন স্বামীর সাথে সহবাস হওয়াও জরুরী। এরপর যদি ঐ স্বামী মৃত্যুবরণ করে অথবা তাকে তালাক দিয়ে দেয় তাহলে ঐ স্বামীর মৃত্যু বা তালাকের ইদ্দতের পর মহিলাটি আপনার সাথে নতুন করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র রাত্রি যাপন বা নির্জনবাস যথেষ্ট নয়। হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ عُرْوَةُ بْنُ الزّبَيْرِ، أَنّ عَائِشَةَ أَخْبَرَتْهُ: أَنّ امْرَأَةَ رِفَاعَةَ القُرَظِيِّ جَاءَتْ إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ، فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللهِ، إِنّ رِفَاعَةَ طَلّقَنِي فَبَتّ طَلاَقِي، وَإِنّي نَكَحْتُ بَعْدَهُ عَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ الزَّبِيرِ القُرَظِيّ، وَإِنّمَا مَعَهُ مِثْلُ الهُدْبَةِ، قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ: لَعَلّكِ تُرِيدِينَ أَنْ تَرْجِعِي إِلَى رِفَاعَةَ؟ لاَ، حَتّى يَذُوقَ عُسَيْلَتَكِ وَتَذُوقِي عُسَيْلَتَهُ.

হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, হযরত রিফাআ কুরাযী রা.-এর স্ত্রী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! রিফাআ আমাকে তিন তালাক দিয়েছে। অতঃপর আমি আব্দুর রহমান কুরাযীর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই। কিন্তু সে দুর্বল ব্যক্তি। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সম্ভবত তুমি রিফাআর কাছে ফিরে যেতে চাচ্ছো? তা পারবে না, যতক্ষণ না তোমাদের মাঝে সহবাস না হয়। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৫২৬০)উল্লেখ্য, তালাক হচ্ছে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্নকারী চূড়ান্ত পদক্ষেপ। দাম্পত্য জীবনের সমস্যা জটিল হয়ে পড়লে এবং সমস্যা সমাধানের আর কোনো উপায় না থাকলে তা থেকে নিষ্কৃতির পথমাত্র। তালাকের ব্যাপারে অত্যন্ত ভেবে-চিন্তে বিজ্ঞজনের সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত। রাগের বশবর্তী হয়ে তালাক দেওয়া অন্যায় আর একত্রে তিন তালাক দেয়া গুনাহের কাজ। মুসলমানদের এসব থেকে বেঁচে থাকা কর্তব্য।

-আলমাবসূত, সারাখসী ৬/৮; বাদায়েউস সানায়ে ৩/২৯৭; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/৫৫১আলবাহরুর রায়েক ৪/৫৬, ১৫৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩০৬; রদ্দুল মুহতার ৩/১১৯, ৪১০

Sharable Link

আবদুর রাহীম - খিলগাওঁ, ঢাকা

৫৬২০. Question

২০২০ সালের শেষের দিকে একটা মেয়ের সাথে আমার সম্পর্ক হয়। কিন্তু বিষয়টি আমরা আমাদের পরিবারের কাছে বলতে পারছিলাম না। আবার বিয়ে ছাড়া সম্পর্কটাকে এভাবে সামনে অগ্রসর হতে দেওয়াও ভালো মনে হচ্ছিল না। তাই আমি আমার বন্ধুদের নিয়ে কাজী অফিসে গিয়ে তাদের সাক্ষী রেখে উভয়ে কাবিন-নামায় স্বাক্ষর করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই। কাবিন-নামায় স্বাক্ষর ছাড়া মৌখিক কোনো ইজাব-কবুল হয়নি আমাদের মাঝে। কারণ কাজী অফিসে যাওয়ার আগে আমি তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম সে আমার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে কি না? সে বলল, হাঁ। তাই আমরা তখন এ বিষয়ে আর কথা না বলে শুধু স্বাক্ষর করে কাবিননামা পূর্ণ করে নিই। পরবর্তীতে আমাদের পরিবার সব জানতে পেরে বিষয়টি মেনে নেয়। আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠান। আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব বিস্তারিত শুনে বললেন, আমাদের ঐ বিবাহ নাকি সহীহ হয়নি। নতুন করে আবার বিবাহ করতে হবে। জানতে চাই, উক্ত কথা কি সঠিক?

Answer

হাঁ, ইমাম সাহেব ঠিকই বলেছেন। আপনাদের উক্ত বিবাহ সহীহ হয়নি। কেননা বিবাহ সংঘটিত হওয়ার জন্য সাক্ষীদের উপস্থিতিতে ইজাব-কবুল করা আবশ্যক। মৌখিক ইজাব-কবুল না করে শুধু কাবিননামায় স্বাক্ষর করার দ্বারা বিবাহ সম্পন্ন হয় না। তাই আপনাদের নতুন করে দুজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে। আর আপনাদের এতদিনে দেখা-সাক্ষাৎ সম্পূর্ণ অবৈধ ও হারাম হয়েছে। তাই আল্লাহর দরবারে উভয়কে তাওবা-ইস্তেগফার করতে হবে।

-ফাতহুল কাদীর ৩/১০২; আলবাহরুর রায়েক ৩/৮৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৭০; রদ্দুল মুহতার ৩/১

Sharable Link

মাহফুজ - লালবাগ

৫৬২১. Question

একদিন আমি আমার স্ত্রীর সাথে ঝগড়ার একপর্যায়ে বলে বসি, ‘যাও আজ থেকে তোমার হাতের রান্না আর খাব না, যদি খাই, তাহলে হারাম খাই।পরবর্তীতে ঝগড়া থামলে পরিবেশ শান্ত হওয়ার পর আমার স্ত্রীর জোরাজুরিতে একসাথে খাবার খাই। হুজুরের কাছে জানতে চাই, আমার স্ত্রীকে উক্ত কথা বলার পর পুনরায় তার হাতের রান্না খাওয়াতে কোনো সমস্যা হয়েছে কি? জানালে উপকৃত হব।

Answer

প্রশ্নোক্ত কথা বলার দ্বারা কসম সংঘটিত হয়েছে। এরপর স্ত্রীর হাতের রান্না খাওয়ায় সে কসম ভঙ্গ হয়ে গেছে। এখন আপনাকে কসমের কাফফারা দিতে হবে। কাফফরা হল, দশজন গরীব লোককে দুই বেলা খাবার খাওয়ানো অথবা দশজন গরীবকে এক জোড়া করে পরিধেয় বস্ত্র দেয়া। এ দুটির কোনোটির সামর্থ্য না থাকলে লাগাতার তিন দিন রোযা রাখা।

-ফাতহুল কাদীর ৪/৩৭২; আলবাহরুর রায়েক ৪/২৯২, ২৮৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৫৫, ৬১; রদ্দুল মুহতার ৩/৭২৯, ৭২৫

Sharable Link

রাকীব - জয়পুরহাট

৫৬২২. Question

আমাদের এলাকায় একটি ছোট জুমা-মসজিদ আছে। মসজিদ সংশ্লিষ্ট মসজিদের অতিরিক্ত আরো জায়গা আছে। মহল্লাবাসী মসজিদকে সম্প্রসারণ করতে চায়। মসজিদের পাশে একটি কবরস্থান আছে, যা খুবই ছোট। তাই মসজিদের অতিরিক্ত জায়গার অর্ধেক মসজিদ সম্প্রসারণের কাজে আর বাকি অর্ধেক কবরস্থানের সাথে যুক্ত করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমাদের এ কাজ কি শরীয়তসম্মত হয়েছে?

 

Answer

ওয়াকফকারী যে উদ্দেশ্যে ওয়াকফ করে ওয়াকফ সম্পত্তি সেই কাজের জন্য নির্ধারিত হয়ে যায়। অন্য কাজে তা ব্যবহার করা বৈধ হয় না। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মসজিদের জায়গায় কবরস্থান বানানো বৈধ হবে না। বরং মসজিদ সম্প্রসারণের পর অবশিষ্ট জায়গা মসজিদের জন্যই নির্ধারিত থাকবে। প্রয়োজনে মসজিদের কল্যাণে বা মসজিদ সংশ্লিষ্ট অন্য কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন ইমাম-মুআযযিনের বাসস্থান বা মসজিদের অধীনে দ্বীনী তালীমের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি। আর কবরস্থানের জন্য আরো জায়গার প্রয়োজন হলে, অন্য পাশ থেকে কবরস্থানের পক্ষে এলাকাবাসী ক্রয় করবে। কেননা এলাকার মৃতদের কবরস্থানের ব্যবস্থা করার দায়িত্ব এলাকায় বসবাসকারীদের। এটা মূলত নিজেদেরই প্রয়োজন। সুতরাং এজন্য মসজিদের জায়গা নেওয়া কোনো ক্রমেই বৈধ হবে না।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৪৯০; আলবাহরুর রায়েক ৫/২৪৫; তানকীহুল ফাতাওয়াল হামিদিয়্যা ১/১২৬

Sharable Link

শান্ত - বনশ্রী, ঢাকা

৫৬২৩. Question

আমাদের এলাকার এক লোকের কাছে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এক জোড়া খুব দামি কুকুর আছে। কুকুরগুলো মূলত সে কিনেছে নিজের ঘর পাহারা দেওয়ার জন্য। গত কয়েক দিন আগে ঐ কুকুরগুলো কয়েকটা বাচ্চা দিয়েছে। আর আমাদের এলাকাটা যেহেতু একটু গ্রামের দিকে এবং সেখানে বসতিও কম তাই পাহারার জন্য সেখানে আলাদা লোকও পাওয়া যায় না। এজন্য আমাদের এলাকার কিছু লোক চাচ্ছে, ঐ কুকুরগুলো বড় হলে কিনে নেবে। কারণ, ঐ জাতের কুকুর পাহারার কাজ ভালো করে। জানার বিষয় হল, ঐ ব্যক্তির জন্য কি কুকুরগুলো বিক্রি করা এবং তার মূল্য দ্বারা উপকৃত হওয়া বৈধ হবে?

Answer

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী কুকুরগুলো যেহেতু পাহারার কাজ ভালো করে আর পাহারার জন্য কুকুর রাখা এবং ক্রয়-বিক্রয় করা বৈধ, তাই পাহারার প্রয়োজনে কুকুরগুলো ক্রয়-বিক্রয় করা এবং মালিকের জন্য তার মূল্য ভোগ করা জায়েয হবে।

প্রকাশ থাকে যে, সখের বশবর্তী হয়ে কিংবা বিজাতীয় ফ্যাশন অবলম্বনে কুকুর রাখা বা লালন-পালন করা জায়েয নয়। হাদীসে এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

لاَ تَدْخُلُ المَلاَئِكَةُ بَيْتًا فِيهِ كَلْبٌ وَلاَ تَصَاوِيرُ.

যে ঘরে কুকুর থাকে অথবা কোনো ধরনের (প্রাণীর) ছবি থাকে সেখানে রহমতের ফিরিশতা প্রবেশ করে না। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৯৪৯)

তাই পাহারা বা শিকারের প্রয়োজন ছাড়া কুকুর পালা যাবে না।

-কিতাবুল আছল ৫/৪১৫; আলমাবসূত, সারাখসী ১১/২৩৪; ফাতাওয়া খানিয়া ২/১৩৩; ফাতহুল কাদীর ৬/২৪৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/১১৪; ইলাউস সুনান ১৪/৪৩১

Sharable Link

আবদুল্লাহ - রায়েরবাগ, ঢাকা

৫৬২৪. Question

আমি যাত্রবাড়ী আড়তে একটি সবজির দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করি। দোকানের মালিক থাকেন ঝালকাঠি। তিনি বিভিন্ন জায়গা থেকে সবজি পাঠান এবং তার মূল্যও বলে দেন। আমি সাধারণত সে দামেই বিক্রি করি। তবে মাঝেমধ্যে ক্রেতাদের সাথে দরদাম করে অথবা ক্রেতা বেশি হওয়ায় পণ্যের বাজারমূল্য বেড়ে গেলে মালিক কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যেও তা বিক্রি করা সম্ভব হয়। হুজুরের কাছে জানতে চাই, এক্ষেত্রে আমি কি মালিক কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যের চাইতে বেশি মূল্যে বিক্রি করতে পারব? যদি বেশি দামে বিক্রি করতে পারি তাহলে অতিরিক্ত মূল্য কি আমি নিজের কাছে রেখে দিতে পারব?

Answer

পণ্যের মালিক যদি পণ্যের বিক্রয়মূল্য বলে দেয় এবং তা যদি বাজারের স্বাভাবিক মূল্য হয়ে থাকে তাহলে আপনার জন্য সেই মূল্যেই বিক্রি করা উচিত। তবে মূল্য বলে দেওয়াটা যদি নূন্যতম পরিমাণ নির্ধারণের জন্য হয়ে থাকে তাহলে বাস্তবসম্মত যৌক্তিক বাজারমূল্য বৃদ্ধি পেলে বেশি দামে বিক্রি করতে পারবেন। তবে মূল্য নেয়ার ক্ষেত্রে যৌক্তিক বাজারমূল্য সর্বদাই বিবেচ্য ও লক্ষণীয়। আর মালিকের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করলে পুরো মূল্যই মালিকের প্রাপ্য হবে। মালিকের অনুমতি ছাড়া এ থেকে আপনি কিছুই নিতে পারবেন না।

-বাদায়েউস সানায়ে ৫/২৬; আলমুহীতুল বুরহানী ১৫/৮১; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৯; ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ২/৪৭৭; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৫২১; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যাহ, মাদ্দা ৫৭৮

Sharable Link

হাসীবুর রাহমান - খুলনা

৫৬২৫. Question

আমাদের গ্রামে বছরের বিশেষ দিনগুলোতে গরু জবাই করা হয়ে থাকে। এলাকার কিছু যুবক এই কাজ করে। তারা গরু কেনার পর বাড়ি বাড়ি গিয়ে কে কত ভাগ নেবে সে হিসাব নিয়ে অগ্রিম টাকা উসূল করে নেয়। সে সময় তারা শুধু গরুর দাম বলে আর কত ভাগ করা হবে তা বলে। প্রতি ভাগে কী পরিমাণ গোশত থাকবে তা তারা বলে না। তবে কেউ জানতে চাইলে অনুমান করে একটা পরিমাণ বলে। এরপর নির্ধারিত সময়ে তারা গরু জবাই করে এবং পূর্বের ওয়াদা অনুযায়ী গোশত ভাগ করে দেয়।

হুজুরের কাছে জানতে চাই, এভাবে অগ্রিম টাকা নিয়ে গোশতের পরিমাণ নির্দিষ্ট না করে গোশত ক্রয়-বিক্রয় করা বৈধ হবে কি?

Answer

প্রশ্নোক্ত পন্থায় গরু জবাই করে নির্ধারিত পরিমাণ টাকায় তা ভাগ করে করে নেয়া জায়েয। যারা এসব কাজের আয়োজনে থাকবে তাদের পরিশ্রমিকের জন্য প্রত্যেক ভাগের প্রকৃত মূল্য থেকে কিছু বেশি টাকাও নেয়া যেতে পারে। আর গোশতের পরিমাণ আগে থেকে সুনির্ধারিত না হলেও যখন ভাগ হয়ে যায় এবং বুঝিয়ে দেয়া হয় তখন তো প্রকৃত ওজন সুস্পষ্ট হয়ে যায়। তাই এতে অসুবিধা নেই।

-ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ৩/১৪৯; ফাতাওয়া খানিয়া ২/১১৬; আলবাহরুর রায়েক ৫/২৭৪; রদ্দুল মুহতার ৪/৫১৬

Sharable Link

মনযুর আহমাদ - রাজশাহী

৫৬২৬. Question

আমাদের প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের একটি সমিতি আছে। সমিতির টাকা দিয়ে আমরা প্রতিষ্ঠানের ভেতর একটা ক্যান্টিন পরিচালনা করি। ইদানীং কোনো কোনো সদস্য নির্ধারিত তারিখে টাকা আদায়ে গড়িমসি করছে। যা সমিতির জন্য ক্ষতিকর। তাই আমরা চাচ্ছি, এখন থেকে যারা নির্ধারিত তারিখে টাকা আদায় না করবে তাদের থেকে বিলম্ব ফি উসূল করব। হুজুরের কাছে জানতে চাই, আমাদের এই পদ্ধতি শরীয়তসম্মত হবে কি না? আর এই টাকা সমিতির সদস্যদের কল্যাণে ব্যয় করা যাবে কি না?

Answer

সমিতির সকল সদস্যের কর্তব্য, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তার চাঁদা পরিশোধ করে দেয়া। কারণ সংস্থার সদস্যপদ নেয়ার মানে হল তার নিয়মনীতি মানার একটি অঙ্গিকার প্রদান। আর অঙ্গিকারের খেলাফ করা মুমিনের জন্য জায়েয নয়। তথাপি কেউ যদি চাঁদা আদায়ে বিলম্ব করে তবে এ কারণে অতিরিক্ত ফি নেয়া বৈধ নয়। কারো কাছ থেকে নিয়ে থাকলে সমিতির জন্য তা ব্যবহার করা বৈধ হবে না। বরং এটা উক্ত সদস্যকে ফেরত দিয়ে দিতে হবে।

উল্লেখ্য, যার টাকা যতদিন খাটবে সে সেই অনুপাতে লাভ পাবে। এমন নিয়ম করা যেতে পারে। এছাড়া নিম্নের দুটি পদ্ধতি অবলম্বন করেও দেখা যেতে পারে-

১. এক মাস কিস্তি বিলম্ব করলে পেছনের বকেয়া, চলতিমাসসহ আরো এক মাসের অগ্রীম আদায় করা বাধ্যতামূলক করে দেয়া। এর ব্যতিক্রম হলে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে।

২. সদস্যপদ বাতিল করণ প্রক্রিয়া। একাধারে ছয় মাস (অথবা অন্য কোনো সংখ্যা) বাকি হয়ে গেলে সদস্যপদ বাতিল হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে বার্ষিক হিসাব শেষে তার অংশের লভ্যাংশসহ তার সকল পাওনা দিয়ে দিতে হবে।

-আলবাহরুর রায়েক ৫/৪১; ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ৩/৪২৭; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৬১ 

Sharable Link