আমি কিছুদিন আগে কুরআনের আয়াত লিখিত একটা কাগজ পকেটে নিয়ে বাথরুমে প্রবেশ করি। পরে এক ভাই বললেন যে, এভাবে কুরআন লিখিত কাগজ নিয়ে বাথরুমে প্রবেশ করা জায়েয নেই। জানার বিষয় হল, তার ঐ কথা কি ঠিক?
আমি কিছুদিন আগে কুরআনের আয়াত লিখিত একটা কাগজ পকেটে নিয়ে বাথরুমে প্রবেশ করি। পরে এক ভাই বললেন যে, এভাবে কুরআন লিখিত কাগজ নিয়ে বাথরুমে প্রবেশ করা জায়েয নেই। জানার বিষয় হল, তার ঐ কথা কি ঠিক?
কুরআনের আয়াত, আল্লাহ্র নাম বা যিকির লিখিত কোনো কাগজ বা বস্তু দৃশ্যমান অবস্থায় হাম্মামে (টয়লেটে) নিয়ে যাওয়া জায়েয নয়। কিন্তু পকেটে থাকলে যেহেতু তা আবৃত থাকে তাই এ অবস্থায় প্রবেশ করা নাজায়েয হবে না। অবশ্য যদি জামা বেশি পাতলা হয় এবং বাহির থেকে পকেটের লেখা দৃশ্যমান হয়, তাহলে তা বাইরে রেখে যাবে অথবা আরেকটি কাগজ দিয়ে আয়াতের লেখা কাগজ ঢেকে নিয়ে এরপর পকেটে রাখবে।
Sharable Link-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১০৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/২১৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫০; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী পৃ. ৩০; রদ্দুল মুহতার ১/৩৪৫; বযলুল মাজহুদ ১/৪৯
চট্টগ্রাম পার্বত্য অঞ্চলে আমার একটি আমের বাগান আছে। আমের সিজনে বাগানে থেকে দেখাশুনা করতে হয়। আমার এই বাগান দেখাশুনা করার জন্যে কয়েকজন শ্রমিকও রয়েছে। এবছর আমের সিজনে একবার আম পেড়ে যমিনে স্তুপ দেওয়া হয়। ঘটনাক্রমে একদিন শ্রমিকরা সবাই ছুটিতে ছিল। আমি ছাড়া আমের স্তুপ দেখার মতো কেউই ছিল না। তাই আমাকে বাগান দেখাশুনা করতে হল। এদিকে দেখাশুনা করতে করতে যোহরের নামাযের সময় হয়ে যায়। ঘটনাক্রমে আমার আশপাশে অযু করার মতো কোনো পানি ছিল না। যদি পানির সন্ধানে দূরে কোথাও বা পাহাড়ের নিচে যাই, তাহলে বাগানে রাখা সব আম ওঁত পেতে থাকা চোরেরা নিয়ে যাবে। তাই আমি ঐদিন যোহরের নামায শেষ সময়ে তায়াম্মুম করে পড়ি। জানার বিষয় হল, এভাবে যদি কেউ তার সম্পদ চুরির ভয়ে তায়াম্মুম করে নামায পড়ে, তাহলে কি তা সহীহ হবে?
বাস্তবেই যদি পানি আনতে গেলে উল্লেখযোগ্য সম্পদ চুরি হয়ে যাওয়ার প্রবল আশংকা থাকে এবং নামাযের সময়ও শেষ হয়ে যেতে থাকে, তাহলে সেক্ষেত্রে ঐ ওয়াক্তের নামায তায়াম্মুম করে পড়ে নেওয়ার অবকাশ রয়েছে। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বাস্তবেই যদি আপনার ঐরকম আশংকা হয়ে থাকে তাহলে আপনার জন্য তায়াম্মুম করে নামায আদায় করা সহীহ হয়েছে।
Sharable Link-বাদায়েউস সানায়ে ১/১৬৮; আলহাবিল কুদসী ১/১২৭; আলবাহরুর রায়েক ১/১৪২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৮; ইমদাদুল ফাত্তাহ পৃ. ১২০; আদ্দুররুল মুখতার ১/২৩৪
আমি ভুলে অযুতে কুলি না করে নামায আদায় করি। জানার বিষয় হল, কুলি করা ছাড়া আমার ঐ অযু হয়েছে কি?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে কুলি করা ছুটে গেলেও অযু হয়ে গেছে এবং নামাযও হয়ে গেছে। তবে লক্ষণীয় হল, অযুতে কুলি করা সুন্নাতে মুআক্কাদা। তা আদায়ের ব্যাপারে যতœবান হতে হবে। আর অযুর পূর্ণ ফযীলত পাওয়ার জন্য তা সুন্নত মোতাবেক যথাযথভাবে হওয়া উচিত। তাই অযু করা উচিত মনোযোগ সহকারে। যেন তা সকল সুন্নতসহ যথাযথভাবে আদায় হয়।
Sharable Link-কিতাবুল আছল ১/৩২; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ১/৩৩৮; আলহাবিল কুদসী ১/১১৭; ফাতহুল কাদীর ১/২৩; শরহুল মুনয়া পৃ. ৩২
সেদিন ফরয গোসল করতে গিয়ে বালতি থেকে মগ দিয়ে পানি ওঠানোর সময় হাতের আঙ্গুলের অংশে পানি লেগে যায়। এক্ষেত্রে যদিও আমার হাতে দৃশ্যত কোনো নাপাকি ছিল না; তথাপি যেহেতু ফরয গোসল তাই পরে আমার সন্দেহ হলে পাশের একজনকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আপনার আঙ্গুলের অংশ পানিতে লাগার কারণে ঐ পানি ব্যবহৃত পানির হুকুমে হয়ে গেছে। আর আপনার ঐ পানি দিয়ে গোসল ও পবিত্রতা অর্জন শুদ্ধ হয়নি। জানার বিষয় হল, তার কথাটি কি ঠিক?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ পানি দ্বারা আপনার গোসল ও পবিত্রতা অর্জন শুদ্ধ হয়েছে। আঙ্গুল বালতিতে ডুবে যাওয়ার দ্বারা ঐ পানি গোসল ও পবিত্রতা অর্জনের অনুপোযুক্ত হয়ে যায়নি। কেননা পবিত্রতা অর্জন বা হাত ধোয়ার উদ্দেশ্যে পানিতে হাত প্রবেশ না করালে পানি الماء المستعمل বা ব্যবহৃত পানি হয়ে যায় না।
Sharable Link-কিতাবুল আছল ১/২১; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৫; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ১/১৫৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২; হালবাতুল মুজাল্লী ১/৩১২; রদ্দুল মুহতার ১/২০০
কয়েকদিন আগে ফজরের সময় ঘুম ভাঙতে দেরি হয়ে যায়। চোখ খুলে দেখি, সূর্যোদয়ের ১০ মিনিট বাকি আছে। অযু করার জন্য দ্রুত ওয়াশরুমে গিয়ে দেখি লাইনে পানি নেই। তখন পানি খুঁজতে গেলে নামায কাযা হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় তায়াম্মুম করে নামায পড়ে নিই। জানার বিষয় হল, এক্ষেত্রে তায়াম্মুম করে নামায পড়া কি সহীহ হয়েছে?
না, প্রশ্নোক্ত অবস্থায় তায়াম্মুম করে নামায পড়া সহীহ হয়নি। কারণ তৎক্ষণাৎ পানি না পেলেও পানি আপনার নিকটই আছে এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই আপনি তা পাচ্ছেন। সুতরাং ওয়াক্ত শেষ হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকলেও অযু করেই নামায পড়তে হবে।
Sharable Link-কিতাবুল আছল ১/১০৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৩১; বাদায়েউস সানায়ে ১/১৮৪; আলমাবসূত, সারাখসী ১/১১৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৫৪
কয়েকদিন আগে আসরের সময় মসজিদে অযু করছিলাম। চেহারা এবং হাত ধোয়ার পর পানি চলে যায়। আশপাশে পানি না পেয়ে মসজিদের ফিল্টার থেকে পানি নিয়ে অযু শেষ করি। ততক্ষণে আমার চেহারা এবং হাত শুকিয়ে যায়। জানার বিষয় হল, আমার এ অযু কি শুদ্ধ হয়েছে? এবং তার দ্বারা যে নামায পড়েছি তা কি আদায় হয়েছে?
আপনার উক্ত অযু সহীহ হয়েছে এবং তা দ্বারা আদায়কৃত নামাযও সহীহ হয়েছে। তবে অযুর জন্য মসজিদের ফিল্টারের পানি ব্যবহার করা ঠিক হয়নি। কেননা ফিল্টারের পানি পান করার জন্য; অন্য কোনো কাজে ব্যবহারের জন্য নয়।
Sharable Link-কিতাবুল আছল ১/২৪; আলমাবসূত, সারাখসী ১/৫৬; আলবাহরুর রায়েক ১/২৭; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ১/১৮৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৮; আদ্দুররুল মুখতার ১/১২২
আমার নাম রাশিদুল ইসলাম। অনেক দিন ধরে একটি মাসআলা নিয়ে খুব পেরেশানিতে আছি। সেটি হল, অনেক সময় বেখেয়ালিতে নামায শুরু করার পর ছানা পড়তে ভুলে যাই। তো আমাদের এলাকায় একজনকে জিজ্ঞাসা করি; তিনি বলেন, এমন অবস্থায় সাহু সিজদা করা ওয়াজিব। হুজুরের কাছে প্রশ্ন হল তার এ কথাটি কি ঠিক?
না, প্রশ্নোক্ত কথাটি ঠিক নয়। নামাযে ছানা পড়তে ভুলে গেলে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয় না। কারণ নামাযে ছানা পড়া সুন্নত। আর সুন্নত ছুটে গেলে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয় না। তবে সুন্নত যেন না ছুটে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
Sharable Link-কিতাবুল আছল ১/১৯৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৭৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২৬; শরহুল মুনয়া পৃ. ৪৫৫; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৭৩
একদিন যোহরের নামাযে মসজিদে যেতে দেরি হয়ে যায়, ফলে মাসবুক হই। যখন বাকি নামায আদায় করি তখন প্রথম রাকাতে সূরা ফাতেহা ভুলে যাই। আমার প্রশ্ন হল, এমন অবস্থায় কি আমার জন্য সাহু সিজদা করা আবশ্যক?
হাঁ, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সূরা ফাতেহা না পড়ার কারণে আপনার উপর সাহু সিজদা করা ওয়াজিব হয়েছে। মাসবুকের জন্যও ছুটে যাওয়া রাকাতগুলোর মধ্যে প্রথম দুই রাকাতে সূরা ফাতেহাসহ আরো একটি সূরা বা নির্ধারিত পরিমাণের আয়াত পড়া ওয়াজিব। তা ছুটে গেলে সাহু সিজদা দিতে হবে।
Sharable Link-কিতাবুল আছল ১/২০১; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪২০; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/১১২; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১২৪; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৪৬৪
যোহরের নামাযে ইমাম সাহেব দ্বিতীয় রাকাতে না বসে দাঁড়িয়ে যান। পিছন থেকে কয়েকজন মুকতাদী আল্লাহু আকবার বলেন। তখন ইমাম সাহেব বসে পড়েন এবং আত্তাহিয়্যাতু পড়ার পর শেষে সাহুসিজদা করেন। আমার জানার বিষয় হল, এ নামায কি হয়েছে, নাকি তা আবার পড়তে হবে?
প্রশ্নোক্ত নামায আদায় হয়ে গেছে। তবে এক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে যাওয়ার পর পুনরায় বৈঠকের জন্য ফিরে না আসাই উচিত ছিল। বৈঠকে ফেরত না এসে স্বাভাবিক নিয়মে বাকি নামায পড়ে শেষে সাহু সিজদা করলেই হয়ে যেত। অবশ্য বৈঠকে ফিরে আসার কারণে নামায নষ্ট হয়ে যায়নি। বরং বিশুদ্ধ মতানুযায়ী তা সহীহভাবে আদায় হয়েছে।
Sharable Link-সহীহ বুখারী, হাদীস ৮৩০; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৪৫৩০; কিতাবুল আছল ১/১৯৩; ফাতহুল কাদীর ১/৪৪৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৪১৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/৮৩
আমার মাঝে মাঝে যোহরের নামাযের আগের চার রাকাত সুন্নত ছুটে যায়। জানার বিষয় হল, যোহরের সুন্নত ছুটে গেলে তখন করণীয় কী? কীভাবে তা আদায় করব? নামাযের পরের দু’রাকাত সুন্নতের আগে পড়ব, নাকি পরে?
যোহরের আগের চার রাকাত সুন্নত পড়তে না পারলে ফরয ও দুই রাকাত সুন্নতের পর তা পড়ে নেওয়া উত্তম। হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ إِذَا فَاتَتْهُ الْأَرْبَعُ قَبْلَ الظّهْرِ، صَلّاهَا بَعْدَ الرّكْعَتَيْنِ بَعْدَ الظّهْرِ.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো যোহরের আগের চার রাকাত সুন্নত না পড়তে পারলে তা ফরয ও দুই রাকাত সুন্নত আদায়ের পর পড়ে নিতেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১১৫৮)
Sharable Link-মুখতারাতুন নাওয়াযিল ১/৩০৭; ফাতহুল কাদীর ১/৪১৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৪৫৪; আলইখতিয়ার ১/২২৪; শরহুল মুনয়া পৃ. ৩৯৮; রদ্দুল মুহতার ২/৫৯
আমি অনেক সময় ইমামকে রুকুতে গিয়ে পাই। প্রশ্ন হল তখন আমি ছানা পড়ে রুকুতে যাবো না সরাসরি তাকবির বলে রুকুতে চলে যাবো? এ সময় ছানা পড়ার বিধান কী?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ছানা পড়বে না। বরং দাঁড়িয়ে তাকবীরে তাহরীমা বলে হাত ছেড়ে দেবে। অতপর রুকুর তাকবীর বলে ইমামের সাথে রুকুতে শরীক হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে তাকবীরে তাহরীমার পর ছানাও পড়বে না এবং হাতও বাঁধবে না।
Sharable Link-আলফাতাওয়া মিন আকাবিলিল মাশায়েখ পৃ. ৭৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৫৯; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৮৮; আলহাবিল কুদসী ১/১৮৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১৯৬; ফাতহুল কাদীর ১/৪২১
আমি কয়েকদিন আগে ফরয নামাযের প্রথম রাকাতে ভুলে সূরা ফাতিহা না পড়ে সূরা পড়া আরম্ভ করি। সূরা পড়া শেষ হওয়ার পর আমার স্মরণ হয় যে, আমি সূরা ফাতিহা পড়িনি। এ অবস্থায় আমার করণীয় কী?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে স্মরণ হওয়ার পর প্রথমে সূরা ফাতিহা পড়বে, অতপর পুনরায় সূরা মিলাবে এবং সাহু সিজদার মাধ্যমে নামায শেষ করবে।
Sharable Link-কিতাবুল আছল ১/১৯৪; আলমাবসূত, সারাখসী ১/২২০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৭৬; খিযানাতুল আকমাল ১/৫৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৯৫
আমি নামাযের প্রথম রাকাতে ভুলে এক সিজদা করি। নামায শেষ করে মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর স্মরণ হয় যে, আমি এক সিজদা করেছি। এখন আমার ঐ নামাযের হুকুম কী?
নামাযের প্রত্যেক রাকাতে দুুটি সিজদা করা ফরয। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি একটি সিজদা না করার কারণে আপনার ঐ নামায আদায় হয়নি। তা পুনরায় পড়ে নিতে হবে।
Sharable Link-কিতাবুল আছল ১/২০৭; আলহাবিল কুদসী ১/২১০; আলবাহরুর রায়েক ১/২৯৩; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়্যা ১/৯৫; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৪৭
আমার এক বন্ধুকে সাথে নিয়ে জামাত করে আসর নামায পড়ছিলাম। ভুলবশত চতুর্থ রাকাতকে তৃতীয় রাকাত মনে করে দাঁড়িয়ে যাই এবং পাঁচ রাকাতের পর সালাম ফিরাই। সালাম ফেরানোর পর সে বলল, নামায তো পাঁচ রাকাত হয়েছে; তখন আমি কথা না বলে সাহু সিজদা করি এবং পুনরায় সালাম ফিরাই। আমাদের এ নামায কি শুদ্ধ হয়েছে?
চার রাকাতের পর শেষ বৈঠক করা ফরয। যেহেতু তা করেননি তাই আপনার ঐ ফরয নামায সহীহ হয়নি। যদি আপনি পঞ্চম রাকাতের সিজদার আগে আগে বসে গিয়ে সিজদায়ে সাহুর মাধ্যমে নামায শেষ করতেন তাহলে নামাযটি সহীহ হয়ে যেত। এখন আপনাদেরকে ঐদিনের আসর নামায পুনরায় পড়ে নিতে হবে।
Sharable Link-কিতাবুল আছল ১/২০৮; আলবাহরুর রায়েক ২/১০৩; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪১৩; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৪৮০; ফাতহুল কাদীর ১/৪৪৫; আদ্দুররুল মুখতার ২/৮৫
কয়েকদিন আগে এশার জামাতের পর সুন্নত পড়ছিলাম। দ্বিতীয় রাকাতে রুকুতে গিয়ে মনে পড়ে- আমি উভয় রাকাতে একই সূরা পড়েছি। পরে সাহু সিজদাও করিনি। জানার বিষয় হল, আমার উপর কি সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছে এবং এ নামায কি সহীহ হয়েছে?
প্রশ্নোক্ত কারণে আপনার উপর সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়নি। আপনার নামায সহীহভাবে আদায় হয়েছে।
উল্লেখ্য, সুন্নত ও নফল নামাযে একই সূরা একাধিক রাকাতে পড়া দূষণীয় নয়। তবে ফরয নামাযে ইচ্ছাকৃত এমনটি করা অনুত্তম।
Sharable Link-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৯৬; ফাতহুল কাদীর ১/২৯৯; শরহুল মুনয়া পৃ. ৩৫৫; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৪৬; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী পৃ. ২০২
কয়েকদিন আগে আমি বাসায় নামায পড়ছিলাম। হঠাৎ আমার ছোট বাচ্চা পাশে এসে পেশাব করে দেয়। এদিকে নামাযে বিঘœতার আশঙ্কায় তার মা তাকে নিতে আসে। তখন আমি তার পেশাবের দিকে ইশারা করি। তবে জায়নামায এবং আমার গায়ে পেশাব লাগেনি। এই ইশারার কারণে কি নামায নষ্ট হয়ে গিয়েছে?
না, শুধু হাতের ইশারার কারণে নামায নষ্ট হয়নি। তবে নামাযে এমনটি করা খুশু-খুযু পরিপন্থী। যথা সম্ভব এ থেকে বিরত থাকতে হবে।
Sharable Link-সহীহ মুসলিম, হাদীস ৫৪০; শরহে মুসলিম, নববী ৫/২৭; কিতাবুল আছল ১/১৭৬; বাদায়েউস সানায়ে ১/৫৪৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৩৪; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৩৯৫
ঈদের নামাযের খুতবার সময় আমাদের মসজিদে একটি বিষয় লক্ষ্য করা যায়। তা হল খুতবার মাঝে ইমাম সাহেব যখন তাকবীর বলেন তখন অনেক মুসল্লিও তাঁর সাথে সাথে উচ্চস্বরে তাকবীর বলেন। আমি এক আলেমকে বলতে শুনেছিলাম, খুতবার সময় একেবারে চুপ থাকতে হয়। জানার বিষয় হল, এই বিধান কি শুধু জুমার খুতবার সাথেই খাস, নাকি ঈদের খুতবার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য? সঠিক বিষয়টি জানালে উপকৃত হব।
ঈদের খুতবায় তাকবীর বলার নিয়ম খতীবের জন্য, মুসল্লিদের জন্য নয়। জুমার খুতবার ন্যায় ঈদের খুতবা চলাকালীনও মুসল্লিগণ চুপ থাকবে। তাকবীর ইত্যাদি কিছুই বলবে না।
Sharable Link-মুসান্নাফে আবদুর রায্যাক, বর্ণনা ৫৬৪২; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৫৭৪০; কিতাবুল আছল ১/৩১৮; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৪৮৩; শরহুল মুনয়া পৃ. ৫৭১; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৬০
গত কুরবানী ঈদে এক মসজিদে ঈদের নামায পড়তে যাই। নামাযের আগে ইমাম সাহেব দ্বিতীয় রাকাতে অতিরিক্ত তাকবীর আদায়ের তরীকা বলেন, প্রথম দুই তাকবীরের পর হাত উঠিয়ে বেঁধে নিবে, তৃতীয় তাকবীরের পর হাত উঠিয়ে ছেড়ে দিবে এবং চতুর্থ তাকবীর বলতে বলতে রুকুতে যাবে। অথচ আমাদের মহল্লার মসজিদের ইমাম সাহেব প্রথম দুই তাকবীরেও হাত উঠিয়ে ছেড়ে দিতে বলেন। এক্ষেত্রে সঠিক পদ্ধতি কোন্টি জানালে উপকৃত হব।
আপনার মহল্লার মসজিদের ইমাম সাহেবের বর্ণিত পদ্ধতিটিই সঠিক। ঈদের নামাযের দ্বিতীয় রাকাতে অতিরিক্ত তাকবীর আদায়ের সময় প্রত্যেকবার তাকবীর বলে হাত উঠিয়ে ছেড়ে দিবে। চতুর্থবার তাকবীর বলতে বলতে রুকুতে যাবে। অবশ্য আপনার গত ঈদের নামায আদায় হয়ে গেছে। যদিও অতিরিক্ত তাকবীরগুলোতে হাত উঠানোর পর ছেড়ে না দেওয়া অনুত্তম হয়েছে।
Sharable Link-হালবাতুল মুজাল্লী ২/১০৮; আলবাহরুর রায়েক ২/১৬১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫০; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৭৪; শরহুল মুনয়া পৃ. ৫৬৭
আমি ঢাকা মিরপুর ১২ এলাকায় থাকি। বাড়িতে যাওয়ার সময় অনেকক্ষেত্রে আমাকে আমার ছোট ভাইয়ের মাদরাসা (হযরতপুর, কেরানীগঞ্জ) যেতে হয়। ওখান থেকে তাকে নিয়ে আবার মিরপুর হয়ে এয়ারপোর্ট দিয়ে বাড়ি (সিলেট) যেতে হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, হযরতপুর তো সিটির বাইরে। তাই সেখানে গেলে কি আমি কসর করতে পারব। হযরতপুর থেকে মিরপুর হয়ে এয়ারপোর্ট যাওয়ার সময় আমি যদি মিরপুর ১, ১০ বা ১২ তে নামায পড়ি তাহলে আমি কসর করব, না পূর্ণ নামায পড়ব। দলীলসহ উত্তর জানালে কৃতজ্ঞ থাকব। জাযাকুমুল্লাহু খায়রান।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যেহেতু হযরতপুর থেকে আবার মিরপুর হয়ে বাড়ি যাচ্ছেন তাই হযরতপুর যাওয়ার সময় আপনার সফর শুরু ধরা হবে না। এক্ষেত্রে আপনি হযরতপুর এবং ঢাকা সিটিতে মুকীমের ন্যায় নামায পড়বেন। কসর করতে পারবেন না। কেননা সফরে বের হওয়ার পর সফর পরিমাণ দূরত্ব অতিক্রম করার আগেই কোনো কারণে নিজ শহরে ফিরে আসার ইচ্ছা থাকলে উক্ত স্থানে মুসাফির হয় না। এক্ষেত্রে পুনরায় সফরের উদ্দেশ্যে নিজ এলাকা অতিক্রম করার পরই সফরের হুকুম কার্যকর হবে। অবশ্য আপনার ভাই হযরতপুর এলাকা থেকে বের হওয়ার পর মুসাফির গণ্য হবে।
Sharable Link-কিতাবুল আছল ১/২৬৮; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৪০৩; আলমাবসুত, সারাখসী ২/১০৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৫১২
তাওয়াফের সময় যদি শরীরে কোনো নাপাকি লেগে থাকে তাহলে এতে করে তাওয়াফের কোনো ক্ষতি হবে কি? এবার ওমরা করার সময় আমার কোলে আমার আট মাস বয়সী বাচ্চাও ছিল। যদিও ডায়াপার পরিয়ে রেখেছিলাম, কিন্তু দীর্ঘক্ষণ পরে থাকার কারণে একসময় লক্ষ করি, বাচ্চার পেশাব লেগে আমার জামার বেশ খানিকটা জায়গা ভিজে উঠেছে। বুঝতে পারি, ডায়াপার অতিক্রম করে এ নাপাকি আমার কাপড়ে লেগেছে। এখন এ নাপাকসহ তাওয়াফ করাতে আমার তাওয়াফ শুদ্ধ হয়েছে কি? নামাযের মতো তাওয়াফেও কি কাপড়-চোপড় পাক থাকা জরুরি? জানালে উপকৃত হব।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার তাওয়াফ আদায় হয়েছে। তবে জেনে রাখা দরকার যে, পবিত্র কাপড়ে তাওয়াফ করা সুন্নত। জেনেশুনে নাপাক কাপড়ে তাওয়াফ করা মাকরূহ। তাই এ ব্যাপারে সচেতন থাকা উচিত।
Sharable Link-আলমাবসূত, সারাখসী ৪/৩৯; বাদায়েউস সানায়ে ২/৩১০; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৬৯; গুনয়াতুন নাসিক পৃ. ১১২
আমার এক আত্মীয় শহরে চাকরির খোঁজে এসে আমাদের বাড়ীতে উঠেছে প্রায় এক বছর হল। যতদিন চাকরি হচ্ছে না ততদিন আমাদের এখানেই সে থাকবে এবং আমাদের সঙ্গেই খাবে- একথা আমি তাকে বলেছি। কিন্তু দীর্ঘ একটা সময় পার হওয়ার পরও চাকরি পাবার ক্ষেত্রে তার কোনো অগ্রগতি হয়নি। এদিকে জীবন নির্বাহের জন্য সাধারণ কোনো পেশা গ্রহণেও সে আগ্রহী নয়। একপর্যায়ে গত কয়েক দিন আগে আমি তাকে বলেই ফেললাম, ‘আল্লাহর কসম, যদি তুমি নিজ পায়ে দাঁড়ানোর একটা উপায় না কর তাহলে আমি আর তোমার সাহায্য-সহযোগিতা করতে পারব না।’ তবে সেইসাথে আমি আমার এই কথার শেষে যুক্ত করে দিলাম, ‘ইনশাআল্লাহ’। এরপর আরো মাসখানেক সময় পার হয়েছে। সে এখনো তার কোনো গতি করতে পারেনি। আমি তো কসম করেছি, রোযগারের পথ করতে না পারলে তাকে আর সাহায্য করব না। কিন্তু এখন তার অবস্থা দেখে মায়া হচ্ছে। এ মুর্হূতে আমার কী করণীয়? আমি যদি আবারো তাকে সহযোগিতা করতে চাই তাতে কি আমার কসম ভঙ্গ করার কারণে কাফফারা দিতে হবে? জানালে উপকৃত হব।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে কসম বাক্যের সাথে যেহেতু ইনশাআল্লাহ বলেছেন তাই আপনার কসম সংঘটিত হয়নি। সুতরাং আপনি চাইলে তাকে সহযোগিতা করতে পারেন। সহযোগিতা করলে কসমের কাফফারা দেওয়া ওয়াজিব হবে না।
عَنِ ابْنِ عُمَرَ، يَبْلُغُ بِهِ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ، قَالَ: مَنْ حَلَفَ عَلَى يَمِينٍ، فَقَالَ: إِنْ شَاءَ اللهُ فَقَدْ اسْتَثْنَى.
হযরত ইবেন উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো কসমের বাক্য উচ্চারণ করে এবং বলে ‘ইনশাআল্লাহ’ তাহলে সে তার কসম প্রত্যাহার করে নিল। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩২৫৬; সুনানে কুবরা, বাইহাকী ৭/৩৬১)
Sharable Link-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৬/২৫৬; আলবাহরুর রায়েক ৪/২৯৭; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৭৪২
মুহতারাম, প্রায় সত্তর বছর আগে আমাদের এলাকায় মাদরাসার জন্য একটি জমি ওয়াকফ করা হয় এবং সেখানে একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়। মাদরাসার ছাত্ররা কাছের একটি পুরনো মসজিদে নামায আদায় করত। আনুমানিক চল্লিশ বছর আগে মসজিদ ও মাদরাসার মাঝে একটি হাইওয়ে রাস্তা নির্মাণ করা হয়। রাস্তা পার হয়ে মসজিদে যাওয়া ছাত্রদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। তাই মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ছাত্রদের নামায আদায়ের সুবিধার্থে মাদরাসার ওয়াক্ফকৃত জমির উত্তর কোণে একটি মসজিদ নির্মাণ করে। চল্লিশ বছর যাবৎ উক্ত মসজিদে নামায পড়া হচ্ছে। কিন্তু মাদরাসার নতুন কর্তৃপক্ষ পুরো এরিয়ার সুযোগ-সুবিধার প্রতি লক্ষ করে মসজিদটি উক্ত জমির অন্য এক পাশে স্থানান্তর করে নিচ তলায় দোকানপাট ও দোতলা থেকে মসজিদ নির্মাণ করতে চচ্ছে।
জানার বিষয় হল, এভাবে মসজিদ স্থানান্তর করা বৈধ হবে কি না? বৈধ হলে আগের মসজিদের জায়গা কী করা হবে? জানিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন।
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী মাদরাসার জায়গায় উক্ত মসজিদটি যেহেতু মাদরাসার প্রয়োজনে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নির্মিত হয়ে তাতে নামায আদায় করা হচ্ছে এবং দীর্ঘদিন যাবৎ তা মসজিদ হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে তাই এটি ‘শরয়ী মসজিদ’ হয়ে গেছে। অতএব এখন আর মসজিদটি স্থানান্তর করা জায়েয হবে না। কেননা কোনো স্থানে ‘শরয়ী মসজিদ’ হয়ে গেলে ওই জায়গাটি স্থায়ীভাবে মসজিদের জন্য নির্ধারিত হয়ে যায়।
Sharable Link-আলমুহীতুল বুরহানী ৯/১২৭; আলমাবসূত, সারাখসী ১২/৪২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৮/১৬৬; আলবাহরুর রায়েক ৫/২৫১; রদ্দুল মুহতার ৪/৩৫৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৪৫৮
কিছুদিন আগে একটি ফার্নিচারের দোকান থেকে আমি এক লক্ষ বিশ হাজার টাকার ফার্নিচার ক্রয় করি। তার মধ্যে এক লক্ষ টাকা নগদে পরিশোধ করি। বাকিটা কয়েকদিন পরে দেওয়ার কথা হয়। ফার্নিচারের দোকানদার বিক্রির সময় আমাকে বলেছিল, এগুলোর কেনা দাম এক লক্ষ টাকা। এর সঙ্গে মেরামত বাবদ অতিরিক্ত খরচসহ এর বিক্রয়মূল্য ধরা হয়েছে এক লাখ বিশ। কিন্তু ফার্নিচারগুলো দেখার পর অভিজ্ঞ বেশ কয়েকজন আমাকে বললেন, দোকানদার আপনাকে ঠকিয়েছে। এর কেনা দাম মোটেও সত্তর হাজারের বেশি হবে না। এ বিষয়ে দোকানদারকে জিজ্ঞেস করা হলে প্রথমে সে অস্বীকার করলেও পরে স্বীকার করে যে, তার কেনা দাম অন্তত এক লাখ না। তার চেয়ে কম। আপনার কাছে জানতে চাচ্ছি, তার এই প্রতারণার কারণে আমি কি তাকে বাদবাকি বিশ হাজার টাকা কম দিতে পারি? এক্ষেত্রে শরীয়তের নির্দেশনা কী?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উক্ত ব্যবসায়ী কর্তৃক মিথ্যা বলা, তার খরিদমূল্য বেশি শোনানো এবং অতিরিক্ত মুনাফা করেও সামান্য লাভ করার ভান করা অন্যায় হয়েছে এবং মিথ্যা ও প্রতারণার আশ্রয় নেওয়া সম্পূর্ণ নাজায়েয হয়েছে। হাদীসে এসব বিষয়ে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারিত হয়েছে।
হযরত হাকীম ইবনে হিযাম রা. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
فَإِنْ صَدَقَا وَبَيّنَا بُورِكَ لَهُمَا فِي بَيْعِهِمَا، وَإِنْ كَتَمَا وَكَذَبَا مُحِقَتْ بَرَكَةُ بَيْعِهِمَا.
ক্রেতা-বিক্রেতা যদি সত্য বলে এবং সবকিছু স্পষ্ট করে দেয় তাহলে তাদের ব্যবসায় বরকত হয়। আর যদি কোনো কিছু গোপন করে এবং মিথ্যা বলে, তাহলে ব্যবসার বরকত শেষ হয়ে যায়। (সহীহ বুখারী, হাদীস ২০৮২; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৫৩২)
অন্য এক হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
إِنّ التّجّارَ يُبْعَثُونَ يَوْمَ القِيَامَةِ فُجّارًا، إِلّا مَنْ اتّقَى اللهَ، وَبَرّ، وَصَدَقَ.
কিয়ামতের দিন ব্যবসায়ীদের ওঠানো হবে পাপাচারী হিসাবে। তবে যারা আল্লাহকে ভয় করে সৎ ও সত্যবাদী থেকেছে (তারা বেঁচে যাবে)। (জামে তিরমিযী, হাদীস ১২১০)
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার কর্তব্য ছিল পণ্যের মূল্য যাচাই করে খরিদ করা। বিক্রেতার বলা দাম ন্যায্যমূল্য কি না- তা আপনি ফার্নিচার ক্রয়ের আগেই নিশ্চিত হয়ে নিতে পারতেন। এখন যেহেতু বিক্রয় সম্পন্ন হয়ে গেছে এবং সেটা মুরাবাহার শর্তে হয়নি। অর্থাৎ কেনা দামের উপর কত লাভ নেওয়া হবে তা লেনদেনের সময় সুনির্দিষ্টভাবে চুক্তি করা হয়নি; বরং সাধারণ বেচাকেনার পদ্ধতিতে হয়েছে তাই যে দামে বিক্রির কথা হয়েছে তা দিয়েই আপনাকে ফার্নিচারগুলো নিতে হবে। কমমূল্য নেয়ার জন্য বিক্রেতাকে বাধ্য করা যাবে না। তবে বিক্রেতার উচিত নিজে থেকে মূল্য কমিয়ে নেয়া। কারণ সে অসত্য বলে আপনাকে ঠকিয়েছে।
Sharable Link
আমি কিছুদিন আগে একটি ঘড়ি ক্রয় করি। কেনার পর ত্রুটি ধরা পড়লে আমি ঘড়িটি ফেরত দিতে যাই। তখন বিক্রেতা বলেন- আমি আপনাকে কিছু টাকা ফেরত দিচ্ছি, আপনি ঘড়িটি রেখে দিন। আমি কিছু টাকা ফেরত নিয়ে ঘড়িটি রেখে দিই। পরে ইমাম সাহেবকে বিষয়টি বললে তিনি বলেন- ত্রুটির কারণে কিছু টাকা ফেরত নিয়ে ঘড়িটি রেখে দেওয়া বৈধ হয়নি। আপনি ঘড়ি রাখতে চাইলে বিক্রেতা থেকে কোনো টাকা ফেরত নিতে পারবেন না। অন্যথায় ঘড়িটিই ফেরত দিতে হবে। হুযুরের কাছে জানার বিষয় হল, কিছু টাকা ফেরত নিয়ে ঘড়ি রেখে দেওয়া বৈধ হয়েছে কি না? আর ইমাম সাহেবের কথা ঠিক কি না? মাসআলাটির সমাধান জানালে খুবই উপকৃত হব।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বিক্রেতা যেহেতু নিজে থেকেই স্বেচ্ছায় আপনার সাথে এভাবে সমঝোতা করেছেন এবং কিছু টাকা ফেরত দিয়ে ঘড়িটি রেখে দিতে অনুরোধ করেছেন তাই আপনার জন্য সে প্রস্তাব গ্রহণ করা বৈধ হয়েছে। এটি মূলত মূল্য ছাড় দেয়ার মত বিষয়। আর ইমাম সাহেব যে মাসআলা বলেছেন তা প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না; বরং মাসআলাটি ঐক্ষেত্রে প্রয়োগ হবে, যেখানে ত্রুটি ধরা পড়ার পর বিক্রেতা সমঝোতা করতে সম্মত হবে না। তখন ক্রেতা পণ্যটি রাখতে চাইলে পুরো দাম দিয়েই রাখতে হবে। পণ্যও রাখবে আবার কিছু টাকাও ফেরত নেবে, বিক্রেতার সন্তুষ্টি ছাড়া এমনটি করা যাবে না।
Sharable Link-কিতাবুল আছল ১১/১৭০; আলমুহীতুল বুরহানী ১০/১৬৭; ফাতহুল কাদীর ৬/৪; আলবাহরুর রায়েক ৬/৬৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/৯৭; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৪৬
আমার বাবা-মা দুজনেই ইন্তিকাল করেছেন। একজন মেয়ে হিসাবে আমি নানীর অধীনে থাকি। আমার খাবার-দাবারসহ আনুষঙ্গিক সকল খরচ তিনিই বহন করেন। আমার জানামতে তার উপার্জনের একটা অংশ হারাম। তবে তা অর্ধেকের কম।
আমি ব্যক্তিগতভাবে হালাল-হারাম মেনে চলার চেষ্টা করি। তাই হারাম উপার্জন পরিহার করার ব্যাপারে নানীকে অনেক বুঝিয়েছি। প্রতিউত্তরে তার বক্তব্য হল, গুনাহ হলে আমার হবে, তুমি এ ব্যাপারে দায়মুক্ত।
এ অবস্থায় কি আমার জন্য তার পরিবারে খাওয়া ও তার থেকে ভরণ-পোষণ গ্রহণ করা জায়েয হবে?
উল্লেখ্য, বর্তমানে আমার বয়স ১৮ বছর। নিজ খরচ চালানোর মত এ ছাড়া আমার অন্য কোনো ব্যবস্থা নেই।
প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী যেহেতু আপনার নানীর অধিকাংশ উপার্জন হালাল আর আপনার নিজ খরচ চালানোর মত অন্য কোনো ব্যবস্থাও নেই তাই আপনি আপনার নানীর পরিবারে খাওয়া-দাওয়া এবং তার থেকে ভরণ-পোষণ গ্রহণ করতে পারেন।
Sharable Link-উয়ূনুল মাসাইল পৃ. ২২০; আলফাতাওয়া মিন আকাবীলিল মাশাইখ পৃ. ৪৮২; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়্যা ২/৩৩৬; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৪০০; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৭৩; ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ৬/৩৬০; আদ্দুররুল মুখতার ৬/১৯১, ৩৮৬
কুরবানীতে আমরা অনেক সময় গরু জবাই করার আগে অথবা গরু জবাই করার পর চামড়া ছাড়ানোর পূর্বেই চামড়া বিক্রি করে দিই। জানার বিষয় হল, এভাবে চামড়া বিক্রি করা শুদ্ধ কি না? জানিয়ে কৃতার্থ করবেন।
পশুর চামড়া ছিলার আগে ক্রয়-বিক্রয় জায়েয নয়। তাই চামড়া ছিলার পরেই ক্রয়-বিক্রয় করবে। তবে চামড়া ছিলার আগে ক্রেতাদের সাথে বিক্রি সংক্রান্ত আলোচনা বা ওয়াদা করা যেতে পারে। তাতে সম্ভাব্য দাম নিয়েও কথা হতে পারে। কিন্তু প্রকৃত ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন হবে পশু জবাইয়ের পরে তার শরীর থেকে চামড়া পৃথক করার পর।
Sharable Link-সুনানে কুবরা, বাইহাকী ৫/৩৪০; কিতাবুল আছল ২/৪৩৮; ফাতহুল কাদীর ৬/৫১; তাবয়ীনু হাকায়েক ৪/৩৬৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/১২৮
আমাদের এলাকায় কৃষকরা সেলোমেশিনের মালিকদের সাথে এই মর্মে চুক্তি করে যে, তারা পুরো সিজনে মেশিন দিয়ে কৃষকদের জমিতে পানি দেবে। এর বিনিময়ে কৃষকরা তাদেরকে বিঘা প্রতি পাঁচ হাজার টাকা দেবে। আবার কখনো কখনো কৃষকরা ঘণ্টা হিসাবে তাদের থেকে পানি ক্রয় করে। যেমন এক ঘণ্টা পানি নিলে ৫০ টাকা। দুই ঘণ্টা নিলে ১০০ টাকা।
মুফতী সাহেবের কাছে আমার জানার বিষয় হল, শরীয়তের আলোকে এ ধরনের লেনদেন বৈধ কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।
হাঁ, সেলোমেশিনের মালিকের সাথে প্রশ্নে বর্ণিত পন্থায় নির্দিষ্ট সময় হিসাবে ভাড়া নির্ধারণ করে চুক্তি করা জায়েয। তদ্রƒপ বিঘা প্রতি পানি দেয়ার চুক্তিটিও বৈধ। কারণ কৃষক ও মেশিন মালিকগণ সাধারণত এক বিঘা জমিতে কতটুকু পানি লাগবে- সে বিষয়ে মোটামুটি অবগত থাকে। আর এসব ক্ষেত্রে সাধারণত ঝগড়া-বিবাদ হতেও দেখা যায় না। তবে বিঘা প্রতি পানি দেওয়ার ক্ষেত্রে কী পরিমাণ পানি দেবে তা আরো সুস্পষ্টভাবে বলে নেওয়া ভালো।
Sharable Link-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২৪, ২৯; আলমুহীতুল বুরহানী ১১/২১৭; আলবাহরুর রায়েক ৭/২৯৯; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৬
আজকাল বড় বড় হোটেলে বয়দেরকে বখশিশের নামে টাকা দেওয়ার প্রচলন আছে। এটা না দিলে কেমন যেন খারাপ লাগে। অবশ্য না দিলেও কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এখন জানার বিষয় হল, উক্ত টাকা ঘুষের অন্তভুর্ক্ত হবে কি না?
হোটেল বয়দেরকে স্বেচ্ছায় যে বখশিশ দেওয়া হয় তা জায়েয। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বখশিশ দিয়ে অতিরিক্ত সুবিধা গ্রহণ করা হয়ে থাকে। এমনটি হলে তা উৎকোচের শামিল হবে। বয়ের জন্যও উক্ত বখশিশ গ্রহণ করা জায়েয হবে না এবং গ্রাহকের জন্যও এর বিনিময়ে অবৈধ সুবিধা নেয়া হালাল হবে না।
Sharable Link-ফাতহুল কাদীর ৬/৩৫৮; আলবাহরুর রায়েক ৬/২৬২; ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ৫/১৪০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১১/৭৯; রদ্দুল মুহতার ৫/৩৬২
যারা মসজিদ-মাদরাসার খেদমতে নিয়োজিত আছেন, তারা যদি বেতনের পাশে বছরের দুই ঈদে বোনাস গ্রহণ করেন তাহলে সেটা কি বৈধ হবে?
মসজিদ-মাদরাসা বা দ্বীনী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিকে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নির্ধারিত মাসিক বেতনের পাশাপাশি ঈদ বোনাস দেওয়া এবং তাদের জন্য তা গ্রহণ করা জায়েয। উক্ত সম্মানি এবং বোনাস দুটোই হালাল।
Sharable Link-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ২১২২৮, ২১২৩৬; আলমুহীতুল বুরহানী ১১/৩৪৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৫/১২৭; এলাউস সুনান ১৬/১৭৬
আমার পিতা তার পরিচিত এক ব্যক্তিকে এক লক্ষ টাকা ঋণ দিয়েছিলেন এবং আমাদেরকে মৃত্যুর সময় ওসিয়ত করেছিলেন যে, আমরা যেন এক বছর অতিবাহিত হওয়ার আগে তার থেকে ঋণ উসুল না করি। এক বছর পর ধীরে ধীরে উসুল করি। আমাদের জানা ছিল যে, ঋণ পরিশোধের সময় নির্ধারণ করার পরও নির্ধারিত সময়ের আগে টাকা উসুলের দাবি করা যায়। হুযুরের কাছে জানার বিষয় হল, আমরা যে কোনো সময় ঋণ উসুলের দাবি করতে পারব, নাকি পিতার ওসিয়ত অনুযায়ী এক বছর পরই ধীরে ধীরে উসুল করতে হবে? মাসআলাটির সমাধান জানালে খুবই উপকৃত হব।
প্রশ্নোক্ত ঋণ যদি আপনার পিতার রেখে যাওয়া সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ বা তার থেকে কম হয় তাহলে আপনার পিতার ওসিয়ত পূর্ণ করতঃ এক বছর পরই ধীরে ধীরে ঋণ উসুল করতে হবে। বছর পূর্ণ হওয়ার আগে ঋণ উসুলের দাবি করতে পারবেন না। কেননা শরীয়তের দৃষ্টিতে এটি ওসিয়তের অন্তর্ভুক্ত হবে এবং তা পালন করা ওয়ারিশদের উপর ওয়াজিব হবে।
Sharable Link-তাবয়ীনুল হাকায়েক ৪/৪৪৫; ফাতহুল কাদীর ৬/১৪৬; আলবাহরুর রায়েক ৬/১২২; মাজমাউল আনহুর ৩/১১৭; আদ্দুররুল মুখতার ৫/১৫৯; দুরারুল হুক্কাম ২/১৮৫