এক ব্যক্তি কিছুদিন আগে ইন্তেকাল করে। মৃত্যুকালে সে তিন স্ত্রী, মা, বাবা ও চার বৈপিত্রেয় ভাই রেখে যায়। মৃতের পরিত্যক্ত সম্পদ তাদের মাঝে কী হারে বণ্টন করা হবে?
এক ব্যক্তি কিছুদিন আগে ইন্তেকাল করে। মৃত্যুকালে সে তিন স্ত্রী, মা, বাবা ও চার বৈপিত্রেয় ভাই রেখে যায়। মৃতের পরিত্যক্ত সম্পদ তাদের মাঝে কী হারে বণ্টন করা হবে?
এমতাবস্থায় মৃতের সম্পদ থেকে তার কাফন-দাফন সংক্রান্ত খরচাদির পর তার ঋণ বা মোহর অনাদায়ী থেকে থাকলে তা আদায় করতে হেব। এরপর সে কোনো জায়েয অসিয়ত করে থাকলে তা তার বাকি সম্পদের এক তৃতীয়াংশ থেকে আদায় করার পর অবশিষ্ট সম্পদ ওয়ারিশদের মাঝে নিম্নহারে বণ্টন করতে হবে-
১. তিন স্ত্রী পাবে = ২৫%; প্রত্যেক স্ত্রী ৮.৩৩৩৩%।
২. মা পাবে = ১৬.৬৬৬৬%।
৩. পিতা পাবে = ৫৮.৩৩৩৩%।
উল্লেখ্য, এক্ষেত্রে বৈপিত্রেয় ভাইয়েরা কিছুই পাবে না।
Sharable Link-সূরা নিসা : ১২; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৭৭০
রোযা রাখতে অক্ষম ব্যক্তির হুকুম তো হল সে প্রতি রোযার পরিবর্তে ফিদয়া প্রদান করবে; কিন্তু যে ফিদয়া দিতে অপারগ এমন একজনকে জনৈক ব্যক্তি বলল, তোমার রোযাই রাখতে হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সে ব্যক্তি যদি দরিদ্র হয়, ফিদয়া আদায়ের ক্ষমতা না রাখে তাহলে সে কী করবে?
বাস্তবেই যদি কেউ রোযা রাখতে অক্ষম হয় এবং পুরো ফিদয়া আদায়ে সমর্থ না হয় তাহলে যতটুকু সম্ভব আদায় করবে। তাও সম্ভব না হলে আদায় করতে হবে না এবং উভয় ক্ষেত্রেই আল্লাহ তাআলার দরবারে ইস্তিগফার করবে। তবে পরবতীর্ সময়ে কখনও সামর্থ্য হলে পেছনের ফিদয়া আদায় করে দিতে হবে।
Sharable Link-আদ্দুররুল মুখতার ২/৪২৮; আননাহরুল ফায়েক ২/৩২; আলবাহরুর রায়েক ২/২৮৬
আমাদের মসজিদে অনেক সময় দেখা যায়, জুমার দিন খুতবার সময় লোকজন কথাবার্তা বলতে থাকে। এ অবস্থায় খতীব সাহেবের জন্যে খুতবার মাঝে লোকদেরকে সতর্ক করার জন্য কিছু বলার অবকাশ আছে কি না? দয়া করে জানাবেন।
খতীব সাহেব খুতবা অবস্থায় শরীয়ত বিরোধী কোনো কাজ দেখলে সেটার উপর তৎক্ষণাৎ সতর্ক করতে পারবেন অথবা কোনো আদেশ দেওয়ার প্রয়োজন হলে তাও করতে পারবেন। এ কারণে খুতবার কোনো অসুবিধা হবে না এবং এতে দোষেরও কিছু নেই।
Sharable Link-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ২/২৫; বাদায়েউস সানায়ে ১/৫৯৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২০৬
মুহতারাম মুফতী সাহেবের কাছে নিম্নের বিষয়গুলোর শরীয়তসম্মত জবাব আশা করছি।
১. আপন ভাতিজির মেয়ে মাহরাম নাকি গায়রে মাহরাম? আপন ভাতিজির মেয়ের সঙ্গে বিয়ে জায়েয আছে কি?
২. আপন ভাগ্নির মেয়ে মাহরাম নাকি গায়রে মাহরাম? আপন ভাগ্নির মেয়ের সঙ্গে বিয়ে জায়েয আছে কি?
৩. আপন ভাগ্নের মেয়ে মাহরাম নাকি গায়রে মাহরাম? ভাগ্নের মেয়ের সঙ্গে বিয়ে জায়েয আছে কি?
৪. আপন ভাতিজার মেয়ে মাহরাম নাকি গায়রে মাহরাম? ভাতিজার মেয়ের সঙ্গে বিয়ে জায়েয আছে কি?
আপন ভাতিজা, ভাতিজি, ভাগ্নে ও ভাগ্নির মেয়েরা মাহরামের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং তাদের সাথে বিয়ে হারাম।
Sharable Link-সূরা নিসা (৪) : ২৩; তাফসীরে মাজহারী ২/৫৬; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ২/১২৩; ফাতহুল কাদীর ৩/১১৭
তাবলীগের একজন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার। জাহাজে বিভিন্ন দেশে তার সফর হয়ে থাকে। একবার সুইজারল্যান্ড সফর হল। এক আরব তাকে ২০০ (দু’শ) ডলার দিয়ে বলল, আমি একবার বাংলাদেশ সফর করেছি। আমার সঙ্গে মাওলানা আব্দুল্লাহ নামে এক ভাই সময় লাগিয়েছেন; তাকে আমার পক্ষ থেকে এই ২০০ ডলার হাদিয়া পৌঁছে দিবেন। মাওলানা আব্দুল্লাহ বাংলাদেশের কোন শহরের অধিবাসী তাও তিনি উল্লেখ করেছেন।
খেঁাজ নিয়ে দেখা গেল, বাংলাদেশের সেই শহরে আব্দুল্লাহ তিনজন। তিনজনই আলেম। তারা সবাই সাল লাগিয়েছেন। আরবদের সঙ্গে সময়ও লাগিয়েছেন। ওই আরবকে তিনজনের কেউ চিনতে পারেননি। ওই আরব হাদিয়া দেওয়ার সময় নিজের কোনো নাম-ঠিকানা দেয়নি। এখন এই ২০০ ডলারের হুকুম কী হবে?
উক্ত বর্ণনা অনুযায়ী যদি কোনোক্রমেই সঠিক মালিক নির্ণয় করা সম্ভব না হয় এবং ডলারদাতা থেকেও তা জানার কোনো সুযোগ না থাকে, তবে ওই ডলারগুলো শরীয়তের দৃষ্টিতে ‘লুকতা’-এর হুকুমের অন্তভুর্ক্ত হবে। অর্থাৎ দাতার পক্ষ থেকে গরীব লোকদেরকে তা দান করে দিতে হবে। ওই মাওলানা সাহেবরা গরীব হলে তাদেরকেও দেওয়া যাবে।
উল্লেখ্য, ব্যাপক যাচাই-বাছাইয়ে যদি একথা প্রমাণিত হয় যে, ওই শহরে শুধু এ তিনজন আব্দুল্লাহ। এর কোনো একজনই ওই হাদিয়ার মালিক, তবে সেক্ষেত্রে এ পন্থা অবলম্বন করা যেতে পারে যে, উক্ত তিনজনকে একত্র করে তাদের সকলের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন নিয়ে তাদের কাউকে ওই টাকা দিয়ে দিবে অথবা তাদের সম্মতিতে এ তিনজনের মধ্যে টাকাগুলো ভাগ করে দিবে।
Sharable Link-সহীহ বুখারী ১/২৭৮; মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক ১/১৩৭; আদ্দুররুল মুখতার ৪/২৮৩, ২৭৬; আলবাহরুর রায়েক ৫/১৪৯; আননাহরুল ফায়েক ৩/২৮৩
আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব নামাযের তেলাওয়াতে হরকতের উচ্চারণ নাকের মধ্যে বাজিয়ে করেন। অর্থাৎ নাকে পড়েন, অথচ অক্ষরের উচ্চারণস্থল তথা মাখরাজ হচ্ছে মুখ। নাকের মধ্যে কোনো মাখরাজ নেই। এখন এই ইমাম সাহেবের পেছনে আমাদের নামায পড়া কি সহীহ হবে?
এ প্রশ্নের জবাবের জন্যে ওই ইমামের তেলাওয়াত শুনতে হবে। তাই স্থানীয় কোনো আলেমকে তার তেলাওয়াত শুনিয়ে মাসআলা জেনে নিন।
Sharable Link
জানাযা পড়িয়ে টাকা নেওয়া জায়েয আছে কি না এবং কবর যিয়ারত করে হাদিয়া গ্রহণ করা বৈধ কি না? ঈসালে সওয়াবের জন্য যেকোনো খতম পড়ে বা দুআ-দরূদ পড়ে খাওয়া বা টাকা গ্রহণ করা যাবে কি না? দলিল-প্রমাণসহ জানিয়ে আমাদেরকে উপকৃত করবেন। কারণ আমাদের সমাজে এগুলোর বেশ প্রচলন রয়েছে।
জানাযার ইমামতি করে বিনিময় নেওয়া নাজায়েয। এমনিভাবে কবর যিয়ারত করে এবং ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে কুরআন মাজীদ বা তাসবীহ-তাহলীল পড়ে পারিশ্রমিক নেওয়া নাজায়েয।
Sharable Link-মুসনাদে আহমাদ ৩/৪২৮; রদ্দুল মুহতার; ইলাউস সুনান ১৬/১৬৬; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৪৩০; ইমদাদুল ফাতাওয়া ৩/৩৩৪; ইমদাদুল আহকাম ৩/৫২৬; ফাতাওয়া মাহমুদিয়া ৪/২৭৩
মানুষ মৃত্যুর আগে খতমে তাহলীল (সত্তর হাজার বার কালেমা তাইয়েবা) পড়ে রাখে এবং বলে এটা আমার মৃত্যুর পরে কাজে আসবে। আবার অনেকে মৃতের জন্যে পড়ায়। এতে নাকি সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে। জানার বিষয় হল, এ আমলটি কতটুকু সহীহ এবং এ বিষয়ে কুরআন-হাদীসে কী আছে?
সত্তর হাজার বার কালেমা তাইয়েবা পাঠ করলে বা মৃতের নামে প্রেরণ করলে জাহান্নাম থেকে মুক্তিলাভ হয়- এটি রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস হিসাবে প্রমাণিত নয়।
শাইখ ইবনে তাইমিয়া রাহ.-কে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘এটি সহীহ বা যয়ীফ কোনো সনদেই বর্ণিত নেই।’ -মাজমাউল ফাতাওয়া, ইবনে তাইমিয়া ২৪/৩২৩
উল্লেখ্য, একথা স্বতঃসিদ্ধ যে, কালেমা তাইয়েবা পাঠ করা অনেক বড় সওয়াবের কাজ এবং হাদীসের ভাষ্য অনুযায়ী এটি সবচেয়ে উত্তম যিকির। তা নিজের জন্যেও পড়া যেতে পারে এবং অন্য কোনো মৃতের ঈসালে সওয়াবের জন্যেও। কিন্তু এ নির্দিষ্ট সংখ্যা এবং উক্ত সওয়াবের কথা কোনো দলিল দ্বারা প্রমাণিত নয় এবং তা রাসূল সাল্লস্নাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসও নয়।
Sharable Link
বাচ্চাদেরকে খতনা করানোর সময় কত বছর পর্যন্ত?
সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে বালেগ হওয়ার আগ পর্যন্ত যেকোন সময় খতনা করানো যেতে পারে। ফিকাহবিদদের ভাষ্য মতে সাত কিংবা দশ বছরের ভেতরেই খতনা করানো ভাল। এর চেয়ে অধিক বিলম্ব না করা উচিত। তবে যদি কোন কারণে বালেগ হওয়ার আগে কারো খতনা না করা হয় তবে বালেগ হওয়ার পরও খতনা করানো জরুরি।
Sharable Link-সহীহ বুখারী ২/৯৩৩; তবারানী আওসাত ১/৩৩৪; মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৪/৯৫; ফাতহুল বারী ১০/৩৫৫; তুহফাতুল মাওদূদ বি আহকামিল মাওলূদ ১৪৮; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৭৫১; আলবাহরুর রায়েক ৮/৪৮৫
বাচ্চাকে একবার খতনা করানোর পর কর্তিত চামড়া বৃদ্ধি হয়ে গুপ্তাঙ্গের মাথা ঢেকে গেলে আবার কি খতনা করানো দরকার?
ওই ক্ষেত্রে পুনরায় খতনা করাতে হবে।
Sharable Link-আদ্দুররুল মুখতার ৪/৪৯০; আলবাহরুর রায়েক ৮/৪৮৫
সন্তানের মঙ্গলের জন্য আল্লাহর নামে মান্নত করা কি জায়েয আছে? জোড়া প্রাণী (গরু) মান্নত করা হয়েছিল। সেটা কি এখন এক জোড়াই দিতে হবে?
হাঁ, সন্তানের মঙ্গল কামনা করে আল্লাহ তাআলার জন্য মান্নত করা জায়েয। যদি কেউ জোড়া গরু দেওয়ার মান্নত করে তবে তাকে এক জোড়া গরুই সদকা করতে হবে।
Sharable Link-রদ্দুল মুহতার ৩/৭৩৫, ৭৪০; ফাতহুল কাদীর ৪/৩৭৫; আলবাহরুর রায়েক ৪/২৯৬
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি কোন যুদ্ধে شَاهَتِ الْوُجُوهُ (কাফেরদের মুখ মলিন হোক) পড়ে কাফেরদের দিকে মুষ্টি পাথর নিক্ষেপ করেছিলেন? যদি করে থাকেন তবে এমন দু-একটি যুদ্ধের বিবরণ বরাতসহ জানাতে অনুরোধ করছি।
হাঁ, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম شَاهَتِ الْوُجُوهُ পড়ে একাধিক যুদ্ধে কাফেরদের প্রতি মুষ্টি পাথর নিক্ষেপ করেছিলেন। যেমন বদর ও হুনাইন যুদ্ধে এমনটি করেছিলেন বলে প্রমাণিত আছে। এর ফলে কাফেরদের চোখে বালিকণা ঢুকে যায়, তারা চোখ মলতে থাকে এবং তাদের সামনে সব কিছু অন্ধকার হয়ে যায়। এটি রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একটি মুজিযা।
Sharable Link-সহীহ মুসলিম ১/১০১; তাফসীরে তাবারী ৯/২০৪-২০৫; তাফসীরে ইবনে কাসীর ২/২৯৫-২৯৬; আদ্দুররুল মানসুর ৩/১৭৪
প্রসিদ্ধ আছে যে, تحيةالمسجد الحرام الطواف ‘মসজিদে হারামের তাহিয়্যাহ হল তাওয়াফ।’ এ আলোকে কেউ কেউ বলে থাকে, মসজিদে হারামে তাহিয়্যাতুল মসজিদের দুই রাকাত নামায পড়ার বিধান নেই। এই বিধান অন্যান্য মসজিদের জন্য। গত বছর আল্লাহ তাআলা আমাকে হজ্বে নিয়েছিলেন। সেখানে প্রবেশ করার পর তাহিয়্যাতুল মসজিদের দুই রাকাত নামায পড়তে গেলে আমাদের সাথের এক বাঙ্গালী আমাকে ওই মাসআলা জানালেন এবং বললেন, এখানে তাওয়াফই তাহিয়্যাতুল মসজিদ, নামায নয়। বিষয়টি নিয়ে আমি যথেষ্ট সন্দিহান ছিলাম। পরে আমার এক দূরসম্পর্কীয় আত্মীয়, সেখানে উম্মুল কুরা ভার্সিটিতে দাওয়াহ বিভাগে পড়েন, তিনি বিষয়টি শুনে উল্টো মন্তব্য করলেন। বললেন, মসজিদে হারামে প্রবেশকারীর জন্যও দুই রাকাত নামাযই তাহিয়্যাহ। এটি সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, মসজিদে হারামে প্রবেশকারী আগে তাহিয়্যাতুল মসজিদের দুই রাকাত নামায পড়বে এরপর তাওয়াফ করতে চাইলে করবে এবং অন্যান্য আমল করবে।
আলকাউসার প্রশ্নোত্তর বিভাগে এ বিষয়ের সমাধান চাই।
মসজিদে হারামে প্রবেশকারী তাওয়াফের ইচ্ছা করলে তার জন্য তাওয়াফটাই তাহিয়্যাহ হিসেবে গণ্য হবে। এ ব্যক্তির জন্য তাওয়াফের আগে দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল মসজিদ পড়ার হুকুম নেই। ফিকাহবিদদের প্রসিদ্ধ উক্তি تحية المسجد الحرام الطواف উদ্দেশ্য এটিই। সহীহ বুখারীতে এসেছে, আম্মাজান হযরত আয়েশা রা. ইরশাদ করেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মসজিদে হারামে তাশরীফ আনতেন তখন সর্বপ্রথম অযু করতেন তারপর তাওয়াফ করতেন। -সহীহ বুখারী ১/২১৯
এ হাদীসটি তাওয়াফের আগে তাহিয়্যাতুল মসজিদ না পড়ার সুস্পষ্ট প্রমাণ বহন করে।
অবশ্য যে প্রবেশকারীর তাওয়াফের ইচ্ছা নেই কিংবা এমন সময় প্রবেশ করেছে, যে সময়টা তাওয়াফের জন্য উপযোগী নয় সে ব্যক্তির তাহিয়্যাতুল মসজিদ হল দুই রাকাত নামায পড়া। অতএব মাকরূহ ওয়াক্ত না হলে এমন ব্যক্তির জন্য তাহিয়্যাতুল মাসজিদ আদায় করা উত্তম।
সুতরাং তাওয়াফ না করলে তাহিয়্যাতুল মসজিদের দুই রাকাতও পড়তে পারবে না- এধারণা ঠিক নয়। তদ্রূপ তাওয়াফের জন্য প্রস্তুত ব্যক্তিকে তাওয়াফের আগে তাহিয়্যাতুল মসাজিদ আদায় করতে হবে- এ কথাও ঠিক নয়।
Sharable Link-ফয়জুল কাদীর ১/৩৩৭; শরহু মুসলিম, নববী রাহ. ১/২৪৮; রদ্দুল মুহতার ২/৪৯২; আলমুগনী, ইবনে কুদামা রাহ. ৫/২১২; ইলামুস সাজিদ ১০৭; মানাসিক, মোল্লা আলী ক্বারী রাহ. ১২৯
আমাদের গ্রামের একজন যুবক ২০০০ সালে বিবাহ করেছে। কিন্তু কোন কারণে সে তার স্ত্রীকে তালাক দেয় এবং ২০০৩ সালে আরেকটি বিয়ে করে। বিয়ের পর সে তার দ্বিতীয় স্ত্রীকেও তালাক দিয়েছে। এরপর কাজি ও গ্রামের ইমামকে এনে পুনরায় প্রথম স্ত্রীকে বিয়ে করেছে। কিন্তু তার প্রথম স্ত্রীর অন্য কোথাও বিয়ে হয়নি। এ নিয়ে গ্রামবাসী দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে। কেউ বলছে, ওই স্ত্রীকে নিতে হলে তাকে অন্য কারো সঙ্গে বিয়ে দিতে হবে। এরপর সেই স্বামী যদি তাকে তালাক দেয় তবেই তার প্রথম স্বামী তাকে পুনরায় বিয়ে করতে পারবে। আবার কেউ বলছে, যেহেতু যুবকটি অন্য একটি বিয়ে করে সেই স্ত্রীর সঙ্গে দুই বছর ছিল তাই এবিয়ে সহীহ হয়েছে। এই নিয়ে গ্রামে দুই দলের মধ্যে ঝগড়া ফাসাদ লেগেই আছে। দয়া করে দলিলসহ এর সামাধান জানালে গ্রামবাসী সঠিক তথ্য জানতে পারবে।
লোকটি তার প্রথম স্ত্রীকে কয় তালাক দিয়েছিল এবং কীভাবে কোন শব্দে দিয়েছিল তা কিছুই উল্লেখ করেননি। প্রদত্ত তালাকের সংখ্যা ও বিবরণ জানালে এসম্পর্কে ফয়সালা দেওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ।
জেনে রাখা দরকার যে, কেউ তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিলে ওই স্ত্রী তার জন্য সম্পূর্ণ হারাম হয়ে যায় এবং ওই স্ত্রীর সাথে তার বিবাহ সহীহ হয় না। কিন্তু যদি মহিলার অন্যত্র বিবাহ হয় এবং দ্বিতীয় স্বামীর সাথে তার সহবাসও হয় এরপর ওই দ্বিতীয় স্বামীর মৃত্যু ঘটে কিংবা দ্বিতীয় স্বামী তাকে তালাক দেয় তাহলে ইদ্দত শেষে সে ইচ্ছা করলে প্রথম তালাকদাতা স্বামীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে।
অতএব প্রশ্নোক্ত লোকটিও যদি তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়ে থাকে তবে ওই মহিলার অন্যত্র বিবাহ এবং সেই স্বামীর সঙ্গে সহবাস হওয়া ছাড়া তালাকদাতার সঙ্গে তার বিবাহ সহীহ হবে না। এক্ষেত্রে তালাকদাতা অন্যত্র বিাবহ করুক বা না করুক এতে কিছুই যায় আসে না। কারণ তালাকদাতা অন্যত্র বিবাহ করল কিন্তু তিন তালাকপ্রাপ্তা মহিলার অন্য কোথাও বিয়ে হল না, তাহলেও তালাকদাতার সাথে ওই মহিলার বিবাহ সহীহ হবে না। এসম্পর্কে কুরআন মজিদের সূরা বাকারার ২২৯ নং আয়াতে সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে।
Sharable Link-সুনানে দারাকুতনী ৪/৩১; ফাতহুল কাদীর ৪/৩১; আলবাহরুর রায়েক ৩/২৪৩
হজ্বের একটি ওয়াজিব হল, মুযদালিফায় অবস্থান করা। প্রশ্ন হচ্ছে, কেউ যদি মুযদালিফায় গিয়ে ভূমিতে অবতরণ না করে গাড়ির মধ্যে থাকে তবে তার ওয়াজিব আদায় হবে কি?
হাঁ, যিলহজ্বের দশ তারিখ সুবহে সাদিকের পর থেকে সূর্য উদিত হওয়ার আগে যে কোনভাবে মুযদালিফায় থাকলেই উকুফে মুযদালিফার ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। এই ওয়াজিব আদায়ের জন্য মুযদালিফার ভূমিতে অবতরণ করা জরুরি নয়। তবে মুযদালিফায় ‘কুজাহ’ পাহাড়ের পেছনের ভূমিতে অবস্থান করা উত্তম।
Sharable Link-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৩০; ফাতহুল কাদীর ২/৪৯৬; বাদায়েউস সানায়ে ২/৩২১; আলবাহরুর রায়েক ২/৬০০
আমাদের দেশের বিভিন্ন কোম্পানি তাদের পণ্য ক্রয়ের সময় স্ক্র্যাচ কার্ড, লাকি কুপন ইত্যাদি পন্থায় ক্রেতাদের জন্য নানা রকম পুরস্কারের আয়োজন করে। একজন সৌভাগ্যবান বিজয়ী হিসেবে এসব পুরস্কার গ্রহণ করা ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ হবে কি?
স্ক্র্যাচ কার্ড ও কুপনের মাধ্যমে ঘোষিত পুরস্কার ক্রেতার জন্য দুটি শর্তে গ্রহণ করা জায়েয। এক. শুধু পুরস্কার পাবার আশায় পণ্য ক্রয় না করতে হবে। দুই. পুরস্কারের কারণে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি না হতে হবে; বরং পণ্যের স্বাভাবিক মূল্যেই ক্রয়-বিক্রয় হতে হবে। বাজার দরের চেয়ে অতিরিক্ত মূল্যে পণ্য ক্রয় করলে অতিরিক্তটা পুরস্কারের বিনিময় হয়ে যাবে। আর পুরস্কার পাওয়া-না পাওয়া উভয়টির যেহেতু সম্ভাবনা রয়েছে তাই এটা জুয়া হয়ে যাবে। এই দুই শর্ত পাওয়া গেলে ক্রেতার জন্য ঘোষিত পুরস্কার গ্রহণ করা বৈধ হবে।
উল্লেখ্য, পণ্য বিপণন বা মার্কেটিং-এর পন্থা হিসাবে পুরস্কারের ব্যবহার শরীয়তে পছন্দনীয় নয়। পণ্যের গুণগত মান দ্বারা পণ্যের বিপণন ও চাহিদা সৃষ্টি করাই শরীয়তে কাম্য। আর একথা তো বলারই অপেক্ষা রাখে না যে, বিক্রেতা বা কোন কোম্পানির জন্য ত্রুটিযুক্ত পণ্য পুরস্কারের মাধ্যমে বাজারজাত করা নাজায়েয।
Sharable Link-বুহুস ফী কাযায়া ফিকহিয়্যা মুআসিরা ২/২৩২; ফাতাওয়া মুআসিরা, ইউসুফ কারযাভী ২/৪২০
খতম করার উদ্দেশ্যে কুরআন পড়ার সময় অজু ছাড়া মুখস্থ কয়েক পাতা পড়ে ফেলেছি। পরে অজুসহই বাকি খতম পূর্ণ করেছি। এখন জানার বিষয় হল, খতমের পূর্ণতার জন্য অজু ছাড়া যে পাতাগুলো পড়েছিলাম ওই পাতাগুলো আবার পড়তে হবে কি?
কুরআন মাজিদ যত বেশি তিলাওয়াত করা হবে তত বেশি নেকী হবে। তাই বিনা অজুতে যতটুকু পড়া হয়েছে তা অজুসহ দেখে দেখে আবার পড়া যেতে পারে। এতে পূর্ণ কুরআন মাজিদ অজুসহ দেখে দেখে পড়ার সওয়াব ও ফযীলত লাভ হবে। অবশ্য ওই অংশগুলো অজুসহ দেখে দেখে না দোহরালেও ওই খতম পূর্ণ হয়েছে বলেই গণ্য হবে। উল্লেখ্য, অজুর শর্ত কুরআন মাজিদ স্পর্শের ক্ষেত্রে, তিলাওয়াতের জন্য অজু শর্ত নয়।
Sharable Link
ঢাকার প্রায় সকল মসজিদেই ঈদের নামায পড়া হয়। এটি দেখে আমাদের রাজশাহী শহরেও মসজিদে ঈদের নামায পড়ার প্রস্তাব উঠেছে। জানতে চাই, মসজিদে ঈদের নামায পড়ার বিধান কী?
ঈদের নামায মসজিদের বাইরে খোলা মাঠে পড়া সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। নববী যুগ ও সাহাবা-তাবেয়ীনের সময় থেকে ঈদের নামায খোলা মাঠেই পড়া হত। তাই মসজিদের বাইরে মাঠে ঈদের নামায পড়ার সুব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও মসজিদে ঈদের জামাত করা মাকরূহ। অবশ্য বিশেষ ওজরে (যেমন বৃষ্টি বা মাঠে পানি জমে থাকা, নামাযের উপযোগী খোলা স্থান না থাকা ইত্যাদি কারণে) মসজিদেও জামাত করা যাবে। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বৃষ্টির কারণে একবার মসজিদে নববীতে ঈদের জামাত করেছিলেন।
Sharable Link-উমদাতুল কারী ৬/২৮১; আলমাদখাল লিবনিল হাজ্ব ২/২৮০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫০; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/৭৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৬৯
জুমার নামাযের আগে ইমাম সাহেব বাংলায় বয়ান করতে পারবেন কি? আমাদের এলাকার মসজিদে বয়ান করার জন্য একজন আলেম রাখা হয়েছে। তিনি জুমার নামাযও পড়ান। অধিকাংশ মুসল্লী চান প্রতি জুমাতে বয়ান হোক, আবার কেউ কেউ একেবারেই বয়ান না করার পক্ষে। তারা বলেন, জুমার আগে বয়ান করা নাকি বিদআত। এ বিষয়ে সঠিক সমাধান জানানোর অনুরোধ করছি।
জুমার খুতবার আগে মাতৃভাষায় ওয়াজ নসীহত করা জায়েয। হযরত আবু হুরায়রা রা. খুতবার আগে সমবেত মুসল্লীদের হাদীস শোনাতেন। আর হযরত উমর রা.-এর যুগে হযরত তামীম দারী রা. ও জুমার দিন ওয়াজ করতেন বলে প্রামাণিত আছে।
Sharable Link-মুসনাদে আহমাদ ৩/৪৪৯; মুসতাদরাকে হাকেম ১/৬০; আল মাওয়ায়িযু ওয়াল ইতিবার ৩/১৯৯; ইকামাতুল হুজ্জাহ ৩২; ফাতাওয়া রহীমিয়া ১/১৬২
জনৈক হাজী সাহেব পাথর মারতে গিয়ে চারটি পাথর মারার পর ভিড়ের কারণে পেছনে সরে আসতে বাধ্য হন। প্রায় আধা ঘণ্টা পর ওই স্থানে কিছুটা ফাঁকা হলে অবশিষ্ট তিনটি পাথর নিক্ষেপ করেন। প্রশ্ন হচ্ছে, পরবর্তী পাথরগুলো বিলম্বে মারার কারণে পাথর মারার দায়িত্ব কি আদায় হয়েছে? এ কারণে তার উপর কি কোন জরিমানা আসবে?
সাতটি পাথর একই সময় ধারাবাহিকভাবে মারা সুন্নত। ধারাবাহিকতা রক্ষা করা ওয়াজিব নয়। সুতরাং ওইভাবে পাথর মারার কারণে কোন ওয়াজিব ছুটেনি। তাই তার উপর কোন দম বা সদকা ওয়াজিব হয়নি। তাছাড়া এখানে সুন্নত তরক ইচ্ছাকৃত বা উদাসীনতার কারণেও হয়নি; বরং ওজরের কারণে হয়েছে, তাই এখানে ইচ্ছাকৃত সুন্নাত ছেড়ে দেওয়ার খারাবীও আসে না।
Sharable Link-মানাসিক, মোল্লা আলী ক্বারী ৩৪৯; বাদায়েউস সানায়ে ২/৩২৭
আমাদের বাসায় একজন মহিলা আসেন। তিনি একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ব্যবসার জন্য কয়েক হাজার টাকা রেখেছেন। প্রতি মাসে উক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে একটি নির্দিষ্ট অংকের টাকা লাভ মনে করে নেন। ওই টাকা দিয়ে বিভিন্ন পণ্য কিনে তা বিক্রি করেন। এভাবে তার সংসার চলে। আমরাও কয়েকবার তার কাছ থেকে কিছু পণ্য কিনেছি।
আমার প্রশ্ন, মহিলাটি যেভাবে উক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট অংকের অর্থ নিচ্ছেন তা কি সুদের অন্তর্ভুক্ত? আর সুদ হলে তা দ্বারা ক্রয়কৃত পণ্য আমাদের কেনা জায়েয হয়েছে কি? উক্ত পণ্য ব্যবহারে শরীয়তের কোন বাধা থাকলে জানাবেন।
মহিলাটি যে প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা আনেন সেখানে তিনি কী চুক্তিতে টাকা বিনিয়োগ করেছেন এবং ওই প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ পদ্ধতি কী- এসব কিছু সবিস্তারে জানালেই তার গৃহীত টাকার হুকুম বলা যাবে। শুধু সন্দেহের উপর ভিত্তি না করে পুরোপুরি জেনে বিস্তারিত লিখে প্রশ্ন করুন।
Sharable Link
আমার ভাই আব্দুল্লাহ এক বছর যাবৎ বিদ্যুৎ মিস্ত্রির কাজ করে। তার পারিশ্রমিক নেওয়ার নিয়ম হল, পাঁচ পয়েন্ট ১৫০ টাকা। কাজ করার পর দেখা যায়, কোন কোন মানুষ পুরো পারিশ্রমিক দেয়। কিন্তু কিছু মানুষ ১০০ টাকা দিয়ে বাকি ৫০ টাকা দেয় না। সেও লজ্জার কারণে চায় না। কিন্তু যখন তারা তাকে কোন বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম আনতে দেয়, তখন সে ১০ টাকার সরঞ্জামের দাম ১৫ টাকা ভাউচার করে পাঁচ টাকা নিজের জন্য রেখে দেয়। এভাবে সে তার বাকি ৫০ টাকা উসুল করে। আমার প্রশ্ন হল, এইভাবে টাকা নেওয়া জায়েয হবে কি না? জানালে উপকৃত হব।
না, ওই মিস্ত্রির কাজের পারিশ্রমিক প্রশ্নোক্ত পদ্ধতিতে নেওয়া জায়েয হবে না।
বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদির মূল্য যা তাই লিখতে হবে। বাস্তব মূল্যের অতিরিক্ত লেখা মিথ্যা। আর এভাবে লিখে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া (পারিশ্রমিক মনে করে নিলেও তা) আমানতের খেয়ানত ও চুরির শামিল হবে। তাই এ পন্থায় গৃহীত সকল টাকা মালিককে ফেরত দেওয়া জরুরি।
প্রকাশ থাকে যে, কাজের পারিশ্রমিক কাজ শুরু করার আগেই চূড়ান্ত করে নেওয়া জরুরি যেন কাজ শেষে তা নিয়ে মনোমালিন্য সৃষ্টি না হয় কিংবা কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
Sharable Link-আলবাহরুর রায়েক ৭/১৪১; বাদায়েউস সানায়ে ৫/৩৮
কোন বেগানা মহিলাকে সালাম দেওয়া জায়েয কি না? জানালে উপকৃত হব।
বেগানা মহিলার সাথে যেমন পর্দা করা জরুরি, বিনা প্রয়োজনে কথা বলা নিষেধ, তেমনি রাস্তায় চলাচলের সময় কিংবা অন্য কোন সময় বিনা প্রয়োজনে বেগানা মহিলাকে সালাম দেওয়াও নিষেধ। অবশ্য বিশেষ কোন প্রয়োজনে যখন তার সাথে কথা বলবে তখন কথার শুরুতে সালাম আদান-প্রদান করাও জায়েয। এমনিভাবে টেলিফোনে বেগানা মহিলার সাথে প্রয়োজনীয় কথা বলার শুরুতেও সালাম দিয়ে কথা শুরু করা জায়েয; বরং এটাই নিয়ম।
Sharable Link-মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা ৬/১৪৪; মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক ১/৩৮৮; ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ৬/৩৫৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩৩৪; তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম ৫/১৫৮-১৫৯
শুনেছি একটি হাদীস আছে যে, কোন ব্যক্তি যদি ইমামের আগে রুকু সেজদা থেকে উঠে যায় তবে তার চেহারা গাধার মত করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে একটি ঘটনাও শুনেছি যে, কোন ব্যক্তি নাকি এমন করায় তার চেহারা আল্লাহ গাধার মত করেও দিয়েছেন। কথাগুলো সঠিক কি না জানাবেন।
সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমসহ অনেক কিতাবেই এরকম একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে,
أَمَا يَخْشَى الَّذِي يَرْفَعُ رَأْسَهُ قَبْلَ الْإِمَامِ، أَنْ يُحَوِّلَ اللهُ رَأْسَهُ رَأْسَ حِمَارٍ.
যে ব্যক্তি ইমামের আগে মাথা উঠিয়ে ফেলে তার কি ভয় হয় না যে, আল্লাহ তার আকৃতি গাধার মত করে দিতে পারেন!
ব্যাখ্যা : হাদীসের উদ্দেশ্য হল, যে ব্যক্তি নামায আদায়ের সময় ইমামের অনুসরণ করার পরিবর্তে তার আগে আগে রুকু-সেজদায় চলে যায় এবং রুকু-সেজদা থেকে উঠে যায়, সে এত বড় অন্যায় করল, যার শাস্তিস্বরূপ তার মানবাকৃতি বিকৃত করে দেওয়া যেতে পারে। হাদীসের অর্থ এমন নয় যে, কেউ এ অন্যায় কাজ করলেই তার আকৃতি গাধার আকৃতি হয়ে যাবে; বরং এ শাস্তি আল্লাহ ইচ্ছা করলে কাউকে দুনিয়াতেই দিতে পারেন, আবার কাউকে আখেরাতেও দিতে পারেন।
আপনি এ প্রসঙ্গে যে ঘটনাটির প্রতি ইঙ্গিত করেছেন, এমন একটি ঘটনা মেশকাত শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ মেরক্বাতে উক্ত হাদীসের আলোচনায় আল্লামা ইবনে হাজার মক্কী রাহ.-এর বরাতে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে ঘটনাটির কোন সনদ উল্লেখ করা হয়নি।
ঘটনাটি হচ্ছে, এক ব্যক্তি বলেন, আমি যখন এই হাদীসটি পেলাম তখন আমি বিষয়টিকে দূরূহ মনে করলাম এবং হাদীসের বিরুদ্ধাচরণ করলাম। তখন আল্লাহ আমার চেহারা গাধার মত করে দিলেন। -মেরকাত ৩/৯৮
বলা বাহুল্য, এটা অসম্ভবের কিছু নয়। বিশেষ করে লোকটি যেহেতু হাদীসের বিধানটি অমান্য করেই ক্ষান্ত হয়নি; বরং রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথায় সন্দেহ পোষণও করেছে তাই তার এমন শাস্তি হওয়াই স্বাভাবিক।
Sharable Link
একজন আলেম আমার বিয়ের সময় আমাকে ইস্তিখারা করার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু আমার বাড়ির পার্শ্বের এক ভাই বললেন, ইস্তিখারা আবার কী? হাদীসে এমন কিছু নেই। আলকাউসারের নিকট জানতে চাই, আসলে ইস্তিখারা সম্পর্কে কোন হাদীস আছে কি না? শরীয়তের দৃষ্টিতে ইস্তিখারার অবস্থান কী?
ওই ব্যক্তির কথা ঠিক নয়। ইস্তিখারার নামায ও দুআ সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। এ সম্পর্কে একটি সহীহ হাদীস এখানে উল্লেখ করা হল।
অর্থ : হযরত জাবের রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল কাজে ইস্তিখারা করতে বলতেন এবং ইস্তিখারার দুআ কুরআন মাজীদের সূরার মত করে শেখাতেন।
তিনি বলতেন, যখন তোমরা কোন কাজের ইচ্ছা কর তখন দুই রাকাত নামায পড়ে এই দুআ পড়বে-
أَللَّهُمَّ إِنّي أَسْتَخِيرُكَ بِعِلْمِكَ، وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ، وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ العَظِيمِ، فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلاَ أَقْدِرُ، وَتَعْلَمُ وَلاَ أَعْلَمُ، وَأَنْتَ عَلَّامُ الغُيُوبِ، اللَهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنّ هَذَا الأَمْرَ خَيْرٌ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي فَاقْدُرْهُ لِي، وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنّ هَذَا الأَمْرَ شَرٌّ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي فَاصْرِفْهُ عَنّي وَاصْرِفْنِي عَنْهُ، وَاقْدُرْ لِي الخَيْرَ حَيْثُ كَانَ، ثُمَّ رَضِّنِي بِهِ.
এরপর নিজের প্রয়োজনের কথা আল্লাহ তাআলার নিকট চাইবে। -সহীহ বুখারী ২/৯৪৪
উল্লেখিত হাদীস এবং এসম্পর্কিত অন্যান্য হাদীসের ভিত্তিতে ইস্তিখারাকে মুস্তাহাব বলা হয়েছে। এসম্পর্কে আরো দেখুন : সুনানে আবু দাউদ ১/২১৫; জামে তিরমিযী ১/১০৯; সুনানে কুবরা, বাইহাকী ৩/৫২; আলমুগনী ২/৫৫২; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৬
Sharable Link