ইসমাইল হুসাইন - লালমনিরহাট

৪৩১৪. Question

আমি জালালাইন জামাতে পড়ার সময় আমার এক আত্মীয়ের কাছে কিতাব কেনার জন্য ৫০০০/- টাকা ঋণ চেয়েছিলাম। তিনি আমাকে ডেকে নিয়ে ৫০০০/- টাকা হাদিয়া দিয়েছেন এবং বলেছেন, এ টাকা তোমাকে হাদিয়া দিলাম কিতাব কেনার জন্য। কিন্তু এর দু’দিন পর একটি দুর্ঘটনার শিকার হয়ে আমার মুখে আঘাত পাই। এর চিকিৎসা বাবদ উক্ত টাকা খরচ হয়ে যায়। খরচ করার সময় ইচ্ছা ছিল পরে কিতাব কিনে নিব। কিন্তু এখনো সুযোগ হয়নি। মাঝে মধ্যে পেরেশানী হয় এবং ঐ আত্মীয়ের সামনে যেতে লজ্জাবোধ করি। কিছুদিন আগে এক ভাই বললেন, ঐ টাকার মালিক নাকি আমি। তাই আমি যে কোনো খাতে তা খরচ করতে পারব। জানতে চাচ্ছি তার কথা কি ঠিক?

 

 

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উক্ত হাদিয়ার টাকা চিকিৎসা বাবদ খরচ করা অন্যায় হয়নি। কিতাব ক্রয়ের কথা বললেও তিনি যেহেতু আপনাকে টাকাগুলোর মালিক বানিয়ে দিয়েছেন তাই নিজ প্রয়োজনে তা অন্যত্র ব্যয় করা বৈধ হয়েছে। তবে দাতা যেহেতু ঐ টাকা কিতাব ক্রয়ের জন্য দিয়েছেন তাই তা সে খাতে ব্যয় হলেই ভাল হত।

-আলমাবসূত, সারাখসী ১২/৯৬; আলবাহরুর রায়েক ৭/২৮৫; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৬৮৯

Sharable Link

ইসমাইল হুসাইন - লালমনিরহাট

৪৩১৫. Question

আমার বড় ভাইয়ের সাথে একটি বিষয়ে লেনদেন করার সময় আমার নিকট ১০০০/- টাকা বেশি আসে। আমি তা জানা সত্ত্বেও ফিরিয়ে দেইনি এবং আমাকে জিজ্ঞাসা করা হলে আমি বলেছি, হিসাব সব ঠিকঠাক আছে। বর্তমানে ঐ বিষয়টি নিয়ে আমার অনুশোচনা হচ্ছে। কিন্তু কী বলে ফিরিয়ে দিব- বুঝতে পারছি না। ঐ ঘটনা বললে তো অনেক লজ্জার বিষয়।

এক্ষেত্রে আমার কোনো এক বন্ধুকে বলতে শুনেছিলাম যে, হাদিয়ার কথা বলে দিলেও নাকি সেই টাকা পরিশোধ হয়ে যাবে। জানতে চাচ্ছি, এক্ষেত্রে হাদিয়ার কথা বলে দিলেও কি আদায় হয়ে যাবে?

 

 

Answer

হ্যাঁ, ‘হাদিয়া’ বলে দিলেও আদায় হয়ে যাবে। তবে আপনার ঐ কাজটি যে খুবই অন্যায় হয়েছে তা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। এজন্য তওবা-ইস্তেগফার করতে হবে।

-ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/১৭১; জামিউল ফুসূলাইন ২/৫১; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৯২; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যা, মাদ্দা : ৯৭, ৮৯৩; শরহুল মাজাল্লাহ, খালিদ আতাসী ১/২৬৪

Sharable Link

সফওয়ান মাহমূদ - রাজবাড়ি

৪৩১৬. Question

এ বছর আমরা দুই ভাই মিলে একটি গরু কুরবানী করার ইচ্ছা করেছি। তবে দুইজনের অংশ সমান নয়। একজনের সাড়ে তিন অংশ অপরজনের আড়াই অংশ। জানতে চাই, এমন অসমান শরীকানায় আমরা কুরবানী করতে পারব কি না?

 

Answer

হ্যাঁ, এভাবে আপনারা কুরবানী করতে পারবেন। কুরবানীর পশুতে সকলের অংশ সমান হওয়া আবশ্যক নয়। তবে কারো অংশ এক সপ্তমাংশের কম হওয়া জায়েয নয়। আর এক সপ্তমাংশের বেশি তা জোড়-বেজোড় বা ভগ্নাংশ যে কোনো পরিমাণেই হোক তাতে কোনো সমস্যা নেই। কুরবানী সহীহ হয়ে যাবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭; রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৬; আলবাহরুর রায়েক ৮/১৭৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০৫

Sharable Link

কাজী আবদুর রব - রংপুর

৪৩১৭. Question

আমি ঢাকায় একটি কমিউনিটি সেন্টারে কাজ করি। এখানে বিভিন্ন আয়োজনে প্রায় প্রতিদিনই বিশ ত্রিশটি মুরগী জবাই করতে হয়। বড় কোনো আয়োজন থাকলে তো আরো বেশি। আমার জানার বিষয় হল, একসাথে অনেক মুরগী জবাইয়ের ক্ষেত্রে প্রতিটির জন্য পৃথকভাবে বিসমিল্লাহ বলতে হবে, নাকি শুরুতে একবার বিসমিল্লাহ বলে নিলেই চলবে?

আশা করি দ্রুত জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

একসাথে অনেক মুরগী জবাই করলেও প্রত্যেকটি জবাইয়ের পূর্বে স্বতন্ত্রভাবে বিসমিল্লাহ বলতে হবে। শুরুতে একবার বিসমিল্লাহ বললে শুধু প্রথমটির জবাই সহীহ হবে। পরবর্তী মুরগীগুলোর জবাই সহীহ হবে না এবং সেগুলো খাওয়াও হালাল হবে না।

উল্লেখ্য, পশু-পাখি হালাল হওয়ার জন্য শরীয়তের নির্ধারিত নিয়ম মেনে জবাই করা আবশ্যক। তাই এ দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিকে অবশ্যই প্রতিটি জবাইয়ের পূর্বে বিসমিল্লাহ বলা এবং নির্ধারিত রগগুলো যথাযথভাবে কাটার ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।

-কিতাবুল আছল ৫/৩৯৮; আলমাবসূত, সারাখসী ১২/৪; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৫২; বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৭১; আলবাহরুর রায়েক ৮/১৬৯

Sharable Link

মারুফ বিল্লাহ - হোমনা, কুমিল্লা

৪৩১৮. Question

আমার বাবা মৃত্যুর পূর্বে তিন মাস ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। সে সময় তার ব্যবহারের মোটরসাইকেলটি তার দীর্ঘদিনের সহকর্মী আযাদ আংকেলের জন্য অসিয়ত করেন। ইতিমধ্যে আযাদ আংকেল হঠাৎ সড়ক দুর্ঘটনায় ইন্তেকাল করেছেন। এর কিছুদিন পর আমার বাবাও ইন্তেকাল করেছেন। এখন আযাদ আংকেলের ছেলেরা সেই মোটরসাইকেলটি দাবি করছে। কিন্তু আমার বড় ভাই বলছেন, বাবা তো মোটরসাইকেলটি আযাদ আংকেলের জন্য অসিয়ত করেছিলেন, তার ছেলেদের জন্য নয়। আর আযাদ আংকেল তো বাবার আগেই ইন্তেকাল করেছেন। তাই তার ছেলেদের এটা পাওয়ার কথা না। জানতে চাচ্ছি, এখন এটি কাদের প্রাপ্য? দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন।

 

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আযাদ সাহেব যেহেতু আপনার বাবার আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন তাই তার জন্য কৃত আপনার  বাবার অসিয়তটি বাতিল হয়ে গেছে। সুতরাং তার ছেলে বা অন্য ওয়ারিশরা মোটরসাইকেলটি দাবি করতে পারবে না। তা আপনার বাবার মিরাছ হিসেবেই গণ্য হবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ৬/৪৩৩; আলমাবসূত, সারাখসী ২৭/১৫৯; আলবাহরুর রায়েক ৮/৪০৩; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৬৪৮

Sharable Link

মুরতাযা আবরার রাফি - মোমেনশাহী

৪৩১৯. Question

আমরা ছয় ভাই দুই বোন। বোনদের বিবাহ হয়ে গেছে। তিন ভাইয়ের আলাদা সংসারও আছে। আমরা দুই ভাই আলেম ও হাফেজ। আমরা তিন ভাই আব্বা-আম্মার সাথে আছি। আমাদের মধ্যে বড় ভাইয়ের আমল ভাল। তাই আব্বা-আম্মা তাকে নিয়ে হজে¦ গেছেন। আর তাকে ও ভাবিকে আর্থিক সহযোগিতাও করেন। আমাদের ভাইদের আবদারে আব্বা হজ¦ থেকে এসে আমাদের ৬ ভাইয়ের জন্য জমি ক্রয় করেছেন। তাতেও বড় ভাইকে অন্যদের থেকে বেশি দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, এগুলো ওয়ারিস সম্পত্তি হিসেবে নয়, যা মৃত্যুর পর সন্তানরা পায়। এখন জানার বিষয় হল, আব্বার শুধু বড় ভাইকে নিয়ে হজে¦ যাওয়া এবং তারা স্বচ্ছল হওয়া সত্ত্বেও তাদেরকে আর্থিক সহযোগিতা করা ও বিষয়-সম্পত্তি বেশি দেওয়া ঠিক হয়েছে কি না?

নতুন জমিতে আমাদের বোনেরা অংশিদার হবে কি না? যদি হয় তাহলে কীভাবে হবে? অনুগ্রহ করে শরয়ী সমাধান দিয়ে উপকৃত করবেন।

Answer

আপনার পিতার জন্য আমলদার ছেলেকে সফরসঙ্গী হিসেবে হজে¦ নিয়ে যাওয়া দোষের কিছু হয়নি। বাবা তার সন্তানদের যে কাউকে ইচ্ছা নিজের সঙ্গে হজে¦ নিয়ে যেতে পারেন। এতে অন্যদের আপত্তি করার কোনো অধিকার নেই। এ নিয়ে আপত্তি করা বা বাবাকে দোষারোপ করা অন্যায়। তবে আপনার পিতা যেভাবে আপনাদের জন্য পৃথক পৃথক নামে জমি কিনেছেন তেমনিভাবে আপনাদের বোনদেরকেও জমি দেওয়া কর্তব্য ছিল। মেয়েদেরকে না দিয়ে শুধু ছেলেদের দেওয়া অন্যায় হয়েছে। অবশ্য এখনো আনুপাতিক হারে মেয়েদের জন্য আলাদা জমি কিনে দিয়ে সে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। আপনার পিতার জন্য সেটিই এখন করণীয়। কারণ হাদীসে সন্তানদেরকে দান করার ক্ষেত্রে সমতা বজায় রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আর আপনার বড় ভাইকে যদি তার আমল-আখলাকের কারণে সম্পদ কিছু বেশি দেয়া হয়ে থাকে তবে তাতে দোষের কিছু হয়নি। বিশেষ কারণে কিছু কম-বেশি দেওয়ার অধিকার পিতার রয়েছে।

-সহীহ মুসলিম, হাদীস ৪০৫৬; বাদায়েউস সানায়ে ৫/১৮২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৪/৪৬২; আলবাহরুর রায়েক ৭/২৮৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৪০০; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/২৩৭

Sharable Link

আম্মার তাহের - উত্তরখান, ঢাকা

৪৩২০. Question

আমার আম্মুর হাই প্রেসার। মাথা সবসময় গরম হয়ে থাকে। তাই সর্বদা মাথায় কাপড় রাখতে কষ্ট হয়। জানতে চাচ্ছি, তিনি আমাদের সামনে এমনিভাবে অন্য মাহরাম পুরুষদের সামনে মাথা খোলা রাখতে পারবেন কি না? এবং মাথা খোলা রেখে কুরআন শরীফ ও হাদীসের কিতাব পড়তে পারবেন কি? দয়া করে জানালে উপকার হবে।

 

Answer

নারীদের জন্য মাহরাম পুরুষদের সামনে মাথা ঢেকে রাখা উত্তম। তবে খোলা রাখা জায়েয। বিশেষত অসুস্থতার ওজরে হলে অনুত্তমও নয়। আপনার আম্মা যেহেতু অসুস্থ তাই তার জন্য মাহরামদের সামনে মাথা খোলা রাখা দোষণীয় হবে না। আর একই ওজরের কারণে তিনি কুরআনুল কারীম তিলাওয়াতের সময়েও মাথা খোলা রাখতে পারবেন। তবে ওজর না থাকলে মাথা ঢেকে তিলাওয়াত করা উত্তম।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১৭৫৭; আহকামুল কুরআন, জাস্সাস ৩/৩১৬; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২৯১; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৪২৬; শরহুল মুনয়া পৃ. ৪৯৫; রদ্দুল মুহতার ৬/৩৬৭

Sharable Link